বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সালাতের ফজিলত সম্পর্কে আলেমদের অজ্ঞতা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম তাঁর বান্দা
থেকে সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। সালাত যথাযথভাবে আদায় হয়ে থাকলে সে সফল হবে ও মুক্তি
পাবে। সালাত যথাযথ আদায় না হয়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪৬৬, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৪১৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৫, ১৪২৬,
সুনান আন নাসায়ী ৪৬৫-৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ৮৬৪, আহমাদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে এই ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত অনেক বর্ণনা রয়েছে।
যার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা ছালাতের প্রতি মনোযোগী হতে পারে এবং বিশুদ্ধতা ও একাগ্রতার
সাথে একনিষ্ঠচিত্তে ছালাত সম্পাদন করতে পারে। এক কথায় ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অমীয় বাণীই যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে সেই অভ্রান্ত বাণী
ছেড়ে যঈফ ও জাল হাদীছ, মিথ্যা, উদ্ভট ও কাল্পনিক কাহিনী শুনিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বই-পুস্তক লিখে ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো মানুষের হৃদয়ে কোন প্রভাব
ফেলে না। আমরা এই অধ্যায়ে সেগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি ছহীহ দলীলগুলোও উল্লেখ করার
চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
ছালাত জান্নাতের চাবি
কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত। অনেকে বুখারীতে
আছে বলেও চালিয়ে দেয়। অথচ এর সনদ ত্রুটিপূর্ণ।
(১) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হলো ছালাত। আর ছালাতের চাবি হলো পবিত্রতা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৪, মুসনাদে আহমাদ ১৪৭০৩; তিরমিযী
৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ২৭৪, ২/৪৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৮)।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটির প্রথম
অংশ যঈফ। (যঈফুল জামে ৫২৬৫; সিলসিলা যঈফাহ ৩৬০৯; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ২১২)।
আর দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত
হয়েছে।
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের চাবি হলো উযূ, আর সালাতের ’তাহরীম’
হলো ’তাকবীর’ (অর্থাৎ- আল্লা¬-হু আকবার বলা) এবং তার ’তাহলীল’ হলো (সালাতের শেষে) সালাম
ফিরানো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১২, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৬১৮, সুনান আততিরমিযী ৩, আহমাদ ১/১২৯, দারিমী ৭১৪)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
প্রথম অংশ যঈফ হওয়ার কারণ হলো- উক্ত সনদে দু’জন
দুর্বল রাবী আছে।
(ক) সুলায়মান বিন করম ও
(খ) আবু ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তাত। (আলবানী, মিশকাত হা/২৯৪-এর টীকা দ্রঃ ১/৯৭ পৃঃ; শু‘আইব আরনাঊত্ব,
তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩-এর আলোচনা দ্রঃ)।
জ্ঞাতব্য: জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারী
(রহঃ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্ত্ত আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) থেকে
যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করা হলো-
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ (আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত
কোন মা’বূদ নেই)- এ বাক্য কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি (ওয়াহব) বললেন, নিশ্চয় (এটা চাবি)!
কিন্তু প্রত্যেক চাবির মধ্যেই দাঁত থাকে। তুমি যদি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও তবেই তো
তোমার জন্য (জান্নাতের দরজা) খুলে দেয়া হবে, অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩, ফাতহুল বারী ১/৪১৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahi।
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম। তাঁর পরনে তখন সাদা পোশাক ছিল।
তখন তিনি ছিলেন নিদ্রিত। কিছুক্ষণ পর আবার এলাম, তখন তিনি জেগে গেছেন। তিনি বললেনঃ
যে কোন বান্দা ’লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং এ অবস্থার উপরে মারা যাবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে। আমি বললামঃ সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে? তিনি বললেনঃ যদি সে যিনা
করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও?
তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও। আমি বললামঃ যদি সে যিনা
করে, যদি সে চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আবূ
যারের নাক ধূলি ধুসরিত হলেও। আবূ যার যখনই এ হাদীস বর্ণনা করতেন তখন আবূ যারের নাসিকা
ধূলাচ্ছন্ন হলেও বাক্যটি বলতেন। আবূ ’আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী) বলেনঃ এ কথা প্রযোজ্য
হয় মৃত্যুর সময় বা তার পূর্বে যখন সে তওবা করে ও লজ্জিত হয় এবং বলে ’লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’,
তখন তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৬, আহমাদ ২১৪৬৬, সহীহ আল জামি
৫৭৩৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শেষ কথা, লা- ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২১, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩১১৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৯৯, ইরওয়া ৬৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৪৮০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’
জান্নাতের চাবি আর শরী‘আতের অন্যান্য আমল-আহকাম অর্থাৎ ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি
ঐ চাবির দাঁত।
এক ওয়াক্ত ছালাত ছুটে গেলে এক হুকবা বা দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর জাহান্নামে
শাস্তি দেওয়া হবে
(২) নবী (ছাঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি এক ওয়াক্ত
ছালাত ছেড়ে দেয় আর ইতিমধ্যে ঐ ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং ছালাত আদায় করে নেয়,
তবুও তাকে এক হুকবা জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল, ৮০ বছর। আর প্রত্যেক
বছর ৩৬০ দিন। আর প্রত্যেক দিন এক হাযার বছরের সমান, যেভাবে তোমরা গণনা কর। উল্লেখ্য,
উক্ত হিসাব অনুযায়ী সর্বমোট দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর হয়। (ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। উক্ত বক্তব্য
তাবলীগ জামা‘আতের অনুসরণীয় গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল-এর ফাযায়েলে নামায অংশে উল্লেখ করা
হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, كَذَا
فِىْ
مَجَالِسِ
الْأَبْرَارِ
قُلْتُ
لَمْ
أَجِدْهُ
فِيْمَا
عِنْدِىْ
مِنْ
كُتُبِ
الْحَدِيْثِ
‘এভাবেই ‘মাজালিসুল আবরারে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোনো হাদীছ গ্রন্থে এর প্রমাণ পাওয়া
যায়নি’। (ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬)।
লেখক নিজেই যেহেতু স্বীকার করেছেন, সেহেতু
আর মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। তবে দুঃখজনক হল, স্পষ্ট হওয়ার পর কেন তা রাসূল (ছাঃ)-এর
নামে বর্ণনা করতে হবে? এটা নিঃসন্দেহে তাঁর নামে মিথ্যাচারের শামিল।
জ্ঞাতব্য: ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকেও কথাটি সঠিক নয়।
কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঘুম বা ভুলের কারণে যে ব্যক্তির ছালাত ছুটে যাবে, তার কাফ্ফারা
হল যখন স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেয়া’।
হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ কোনো সালাতের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে,
তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে সালাতের অন্য কোনো কাফ্ফারা নেই। (কেননা, আল্লাহ্
তা‘আলা ইরশাদ করেছেন) ‘‘আমাকে স্মরণের উদ্দেশে সালাত কায়িম কর’’- (সূরাহ্ ত্বা-হা ২০/১৪)।
মূসা (রহ.) বলেন, হাম্মাম (রহ.) বলেছেন যে,
আমি তাকে [কাতাদাহ (রহ.)] পরে বলতে শুনেছি, ‘‘আমাকে স্মরণের উদ্দেশে সালাত কায়িম কর।’’
(সূরাহ্ ত্বা-হা ২০/১৪)
হাববান (রহ.) বলেন, আনাস (রাযি.)-এর সূত্রে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৪, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৬০৩, সুনান আবূ দাঊদ ৪৪২, সুনান আননাসায়ী ৬১৩, সুনান আততিরমিযী ১৭৮, সুনান
ইবনু মাজাহ্ ৬৯৬, আহমাদ ১১৫৬১, ১২৮৫০, ১৩১৩৮, ১৩৪১০, ১৩৪৩৬, ১৩৫৯৫; দারিমী ১২২৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ১৫৫৬, ইরওয়া ২৬৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৭০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
এছাড়া রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম খন্দকের
যুদ্ধের দিন সূর্য ডুবার পর আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন।
হাদিসঃ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত
যে, খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) এসে কুরাইশ গোত্রীয়
কাফিরদের ভৎর্সনা করতে লাগলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখনও ‘আসরের সালাত
আদায় করতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে
তিনি সালাতের জন্য উযূ করলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে ‘আসরের সালাত
আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬, ৫৯৮, ৬৪১, ৯৪৫, ৪১১২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩১৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৬৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
তাছাড়া ফজর ছালাতও একদিন তাঁরা সূর্যের তাপ
বাড়ার পরে পড়েছেন।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন।
এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ রাতে বিশ্রাম
গ্রহণ করলেন। বিলাল (রাঃ)-কে বলে রাখলেন, সালাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল,
তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সালাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফজরের (ফজরের) সালাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের
দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল
(অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলালও জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে
লাগলো।
এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) ব্যতিব্যাস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হলো তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন,
রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চলো। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ
করলেন। বিলালকে তাকবীর দিতে বললেন, বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ফজরের (ফজরের) সালাত
আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের
কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ’’সালাত ক্বায়িম
কর আমার স্মরণে’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৬৮০, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৬৯৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ২০৬৯,
সুনান আততিরমিযী ৩১৬৩, সুনান আননাসায়ী ৬১৮-২০, ৬২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
তাহলে তাঁদের শাস্তি কত বছর হবে? (নাঊযুবিল্লাহ)।
যে ব্যক্তি ছালাতের সংরক্ষণ করবে ক্বিয়ামতের দিন তা তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ
ও মুক্তির উপায় হবে
(৩) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে
বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযাত করবে, তা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য জ্যোতি,
দলীল ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযাত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি,
দলীল ও মুক্তির কারণ হবে না। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে ক্বারূন, ফির্’আওন, হামান
ও উবাই বিন খালাফ-এর সাথে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৭৮, আহমাদ ৬৫৪০, দারিমী ২৭২১, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৩১২, বায়হাক্বী- শু‘আবুল ঈমান ২৫৬৫)।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩১২; তারাজুউল আলবানী হা/২৯)।
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিল সে যেন প্রকাশ্য কুফুরী করল
(৪) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে
ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিল সে যেন প্রকাশ্য কুফুরী করল। (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৩৩৪৮)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ ২৫০৮ ও ৫১৮০; যঈফুল জামে ৫৫২১; যঈফ আত-তারগীব
ওয়াত তারহীব ৩০৪)।
ইমাম ত্বাবারাণী হাদীছটি যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত
করে বলেন, আবু জাফর রাযী থেকে হাশেম বিন কাসেম ছাড়া কেউ হাদীছটি বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ
ইবনু আবুদাঊদ তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে। (আল-মু‘জামুল
আওসাত ৩৩৪৮; সিলসিলা যঈফাহ ২৫০৮)।
ছালাত হল দ্বীনের খুঁটি
(৫) ‘ছালাত হল দ্বীনের খুঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি
ছালাত কায়েম করল সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করল। আর যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে
ধ্বংস করল’। (কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃঃ; তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত,
পৃঃ ৩৮; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯)।
তাহক্বীক্বঃ সমাজে হাদীছটি সমধিক প্রচলিত থাকলেও
ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার। (কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃঃ)।
ছালাত মুমিনের মি‘রাজ
(৬) ‘রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত মুমিনের মি‘রাজ’।
(তাফসীরে রাযী ১/২১৪ পৃঃ; তাফসীরে হাক্কী ৮/৪৫৩ পৃঃ; মিরক্বাতুল
মাফাতীহ ১/১৩৪ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়)।
তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নেই। এটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
ছালাত মুমিনের নূর
(৭) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাত
মুমিনের নূর’। (মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩৬৫৫; ফাযায়েলে আমল,
পৃঃ ২৯)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। মুহাদ্দিছ হুসাইন সালীম
আসাদ বলেন, উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। (তাহক্বীক্ব
মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩৬৫৫)।
উক্ত সনদে ঈসা ইবনু মায়সারা নামে একজন দুর্বল
রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ ১৬৬০।
উল্লেখ্য, ছালাত নূর এবং ছাদাক্বা দলীল মর্মে
ছহীহ মুসলিমে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ছহীহ।
হাদিসঃ
আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা হলো ঈমানের
অর্ধেক। ’আলহামদু লিল্লা-হ’ মানুষের ’আমলের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং ’সুবহানাল্লাহ-হি
ওয়াল হাম্দু লিল্লা-হ’ সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও জমিনের
মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। সালাত হলো নূর বা আলো। দান-খয়রাত (দানকারীর
পক্ষে) দলীল। সবর বা ধৈর্য হলো জ্যোতি। কুরআন হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক
মানুষ ভোরে ঘুম হতে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে- হয় তাকে সে আযাদ
করে দেয় অথবা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।
আর এক বর্ণনায় এসেছে, ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা¬-হু
আল্লা¬-হু আকবার’ আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপূর্ণ করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৩, আহমাদ ৫/৩৪২-৪৩, দারিমী ৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করে সে যেন আদম (আঃ)-এর
সাথে ৫০ বার হজ্জ করে
(৮) ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায়
করে সে যেন আদম (আঃ)-এর সাথে ৫০ বার হজ্জ করে এবং যে ব্যক্তি যোহরের ছালাত জামা‘আতের
সাথে পড়ে সে যেন নূহ (আঃ)-এর সাথে ৪০ কিংবা ৩০ বার হজ্জ করে। এভাবেই অন্যান্য ওয়াক্ত
সে আদায় করে’। (হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আছ-ছাগানী, আল-মাওযূ‘আত
হা/৪৮, পৃঃ ৪২)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। (আল-মাওযূ‘আত হা/৪৮, পৃঃ ৪২)।
যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল
(৯) সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল। আর
যে ভোরে (ছালাত আদায় না করে) বাজারের দিকে গেল, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৩৪,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪০)।হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/২২৩৪)।
এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবী রয়েছে।
ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছেন। ইবনু হিববান বলেন,
সে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির নাম দিয়ে ধারণা পূর্বক বহু জাল হাদীছ বর্ণনা করেছে। (মিশকাত হা/৬৪০-এর টীকা দ্রঃ)।
যাকে তার ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার ছালাত হয় না
(১০) ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে
একদা জিজ্ঞেস করা হল আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে- ‘নিশ্চয়ই ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ
থেকে বিরত রাখে’। তখন তিনি বললেন, যাকে তার ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে
না, তার ছালাত হয় না। (তাফসীরে ইবনে কাছীর; সিলসিলা যঈফাহ
৯৮৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭২)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু
জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। মুহাদ্দিছগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫)।
যার ছালাত তাকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তাকে উহা ইসলাম
থেকে দূরে সরে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না
(১১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
যার ছালাত তাকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে
সরে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না। (ফাযায়েলে আমল,
পৃঃ ১৭৩; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১০৮৬২)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লাইছ
ইবনু আবী সালীম নামক ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/২, ১/৫৪ পৃঃ)।
জ্ঞাতব্য: উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে ত্রুটিপূর্ণ কোন
ব্যক্তি ছালাত আদায় করলে ছালাত কবুল হয় না। সুতরাং ছালাত আদায় করে কোন লাভ নেই। কিন্তু
উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং ছালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ
ছেড়ে দিবে। ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলো এবং তাঁকে
বলল, অমুক লোক রাত্রে সালাত আদায় করে কিন্তু
ভোরে উঠে চুরি করে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খুব তাড়াতাড়ি
তার সালাত তাকে এ ’আমল থেকে বাধা দিবে, তার যে ’আমলের কথা তুমি বলছ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩৭, আহমাদ ৯৭৭৮, ইবনু হিব্বান
২৫৬০, শু‘আবুল ঈমান ২৯৯১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩৪৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
একদা ছালাতে ঝুঁকতে দেখে অত্যন্ত জোরে ধমক দিলেন
(১২) উম্মু রূমান বলেন, আবুবকর (রাঃ) আমাকে একদা
ছালাতে ঝুঁকতে দেখে অত্যন্ত জোরে ধমক দিলেন। ফলে আমি ছালাত ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হলাম।
তারপর তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালাতে
দাঁড়ায়, তখন সে যেন তার শরীরকে স্থির রাখে। ইহুদীদের মত যেন না ঝুঁকায়। কারণ ছালাতের
মধ্যে শরীরে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা ছালাত পরিপূর্ণ হওয়ার অংশ। (হিলইয়াতুল আওলিয়া; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭০)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/২৬৯১)।
এর সনদে হাকাম ইবনু আব্দুল্লাহ নামে একজন মিথ্যুক
রাবী আছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, এর সমস্ত হাদীছই জাল। (সিলসিলা
যঈফাহ ৬/২১৪ পৃঃ)।
যে ব্যক্তি ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করে, ভালভাবে ওযূ করে, পূর্ণ ক্বিয়াম,
রুকূ, সিজদা করে ও নম্রতা অবলম্বন করে তার ছালাত আলোকোজ্জ্বল হয়ে বের হয়
(১৩) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে
ব্যক্তি ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করে, ভালভাবে ওযূ করে, পূর্ণ ক্বিয়াম, রুকূ, সিজদা
করে ও নম্রতা অবলম্বন করে তার ছালাত আলোকোজ্জ্বল হয়ে বের হয় এবং বলে, আল্লাহ তোমাকে
হেফাযত করুন যেভাবে তুমি আমাকে হেফাযত করলে। আর যে ব্যক্তি ওয়াক্ত মত ছালাত আদায় করবে
না, সুন্দরভাবে ওযূ করবে না, রুকূ-সিজদা করবে না তার ছালাত কালো কুৎসিত হয়ে বের হবে
এবং বলবে, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন যেভাবে তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ। অতঃপর সেই ছালাতকে
পুরান কাপড়ের মত জড়িয়ে তার মুখে মারা হবে। (ত্বাবারাণী,
আল-আওসাত্ব হা/৩০৯৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬২-১৬৩)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি অত্যন্ত দুর্বল। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২২১)।
উক্ত বর্ণনার সনদে আব্দুর রহমান ও আবু উবায়দাহ
নামে দু’জন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে। (ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব
৩০৯৫)।
যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিত, তখন তিনি তাদেরকে ছালাত
আদায় করার নির্দেশ করতেন
(১৪) আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, যখন নবী
করীম (ছাঃ)-এর পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিত, তখন তিনি তাদেরকে ছালাত আদায় করার নির্দেশ
করতেন। অতঃপর পড়তেন, ‘আর আপনি আপনার পরিবারকে ছালাতের নির্দেশ দিন এবং আপনিও তার প্রতি
অটল থাকুন (সূরা ত্বো-হা ১২৩)। (ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব
৮৮৬)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫১)।
ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, আব্দুল্লাহ বিন সালাম
ছাড়া এই হাদীছ আর কেউ বর্ণনা করেননি। মা‘মার এককভাবে এটা বর্ণনা করেছে। (ত্বাবারাণী আল-আওসাত্ব হা/৮৮৬)।
যে ব্যক্তি দিনে ছিয়াম পালন করে এবং রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামা‘আতে
এবং জুম‘আর ছালাতে শরীক হয় না সে জাহান্নামী
(১৫) মুজাহিদ বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তি
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যে ব্যক্তি দিনে ছিয়াম পালন করে এবং রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়ে
কিন্তু জামা‘আতে এবং জুম‘আর ছালাতে শরীক হয় না তার কী হবে? তিনি উত্তরে বললেন, সে জাহান্নামী।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৮, ফাযায়েলে আমল, পৃঃ
১৪০)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ তিরমিযী ২১৮; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩৬ ও ৪৪৬)।
উক্ত হাদীছের সনদে লাইছ ইবনু আবী সুলাইম নামে
একজন দুর্বল রাবী আছে। (তাহক্বীক্ব জামেউল উছূল হা/৩৮১১
-এর টীকা দ্রঃ; আত-তুয়ূরুইয়াত ৫/২১ পৃঃ)।
ঐ লোকের কাজ অত্যন্ত যুলুম, কুফর ও শঠতাপূর্ণ যে ছালাত ও কল্যাণের দিকে
আহবানকারীর ডাক শুনল কিন্তু মসজিদে উপস্থিত হল না
(১৬) সাহল ইবনু মু‘আয (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ঐ লোকের কাজ অত্যন্ত যুলুম, কুফর ও শঠতাপূর্ণ যে ছালাত ও
কল্যাণের দিকে আহবানকারীর ডাক শুনল কিন্তু মসজিদে উপস্থিত হল না। (মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৬৬৫; ত্বাবারাণী হা/১৬৮০৪; ফাযায়েলে আমল,
পৃঃ ১৩৮)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। (যঈফ আত-তাগীব ওয়াত তারহীব ২৩৩; যঈফুল জামে‘ ২৬৫০)।
উক্ত হাদীছের সনদে ইবনু লাহিয়া ও যুবান ইবনু
ফায়েদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে। (তাহক্বীক্ব মাজমাউয
যাওয়ায়েদ হা/২১৫৯, ২/৫৪ পৃঃ; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৫২)।
যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে, দুই হাত ও মুখ ধৌত করে, মাথা ও কান মাসাহ করে
অতঃপর ফরয ছালাতে দাঁড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা তার ঐ দিনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন
(১৭) আবু মুসলিম বলেন, আমি আবু উমামা (রাঃ)-এর নিকট
গেলাম। তখন তিনি মসজিদের পোকা-মাকড় দূর করছিলেন এবং আবর্জনা ফেলে দিচ্ছিলেন। আমি বললাম,
আপনার নিকট থেকে আমার কাছে এক ব্যক্তি এই হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে, দুই হাত ও মুখ ধৌত করে, মাথা ও কান মাসাহ করে অতঃপর ফরয
ছালাতে দাঁড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা তার ঐ দিনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। যা সে হাত, কান,
চোখ, চলাফেরা এবং অন্তরের কল্পনার মাধ্যমে করেছে। অতঃপর আবু উমামা বলেন, আল্লাহর কসম!
আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে অসংখ্য বার এই হাদীছ শুনেছি। (মুসনাদে আহমাদ হা/২২৩২৬; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৭৭)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু মুসলিম নামে
মিথ্যুক বর্ণনাকারী রয়েছে। (সিলসিলা যঈফাহ ৬৭১১, ১৪/৪৬৫
পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১৩৪)।
কোন ওযর ছাড়াই যদি কেউ দুই ছালাত একত্রিত করে পড়ে, তাহলে সে কাবীরা গোনাহের
যে সমস্ত দরজা রয়েছে, তার একটিতে উপনীত হল
(১৮) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
কোন ওযর ছাড়াই যদি কেউ দুই ছালাত একত্রিত করে পড়ে, তাহলে সে কাবীরা গোনাহের যে সমস্ত
দরজা রয়েছে, তার একটিতে উপনীত হল। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৮৮, ত্বাবারাণী ১১৩৭৫; বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা ৫৭৭১; হাকেম ১০২০; ফাযায়েলে
আমল, পৃঃ ১০০)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি অত্যন্ত দুর্বল। (সিলসিলা যঈফাহ ৪৫৮১)।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এর সনদে হানাশ নামে একজন রাবী আছে। ইমাম আহমাদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে যঈফ বলেছেন। (তিরমিযী ১৮৮, ১/৪৮ পৃঃ)।
যার ছালাত নেই ইসলামে তার কোন অংশ নেই
(১৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, যার ছালাত নেই ইসলামে তার কোন অংশ নেই এবং যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না। (মুসনাদে বাযযার ৮৫৩৯; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১১৮)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ। (যঈফ
আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৩০১)।
উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু
আবু সাঈদ নামে একজন রাবী আছে। সে সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে যঈফ। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩৬৪ পৃঃ, ১৬১২)।
উল্লেখ্য যে, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না
মর্মে অংশটুকু ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ ব্যক্তির সালাত হয় না যে (সঠিকভাবে)
অযু করে না এবং ঐ ব্যক্তির অযু হয় না যে তাতে আল্লাহর নাম নেয় না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯, আহমাদ
২/৪১৮, সুনান আততিরমিযী ২৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যার আমানত নেই তার ঈমান নেই, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না, যে ছালাত আদায়
করে না তার দ্বীন নেই
(২০) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
যার আমানত নেই তার ঈমান নেই, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না, যে ছালাত আদায় করে না
তার দ্বীন নেই। মূলতঃ দ্বীনের মধ্যে ছালাতের স্থান অনুরূপ যেমন শরীরের মধ্যে মাথার
স্থান। (ত্বাবারাণী আওসাত্ব ২/৩৮৩ পৃঃ; আল-মু‘জামুছ ছাগীর
১৬২; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯০)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন,
মিনদিল ছাড়া উবায়দুল্লাহ বিন ওমর থেকে এই হাদীছ কেউ বর্ণনা করেনি। আর হাসান তার থেকে
এককভাবে বর্ণনা করেছে। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১৩;
যঈফুল জামে‘ ৬১৭৮)।
উল্লেখ্য যে, যার আমানত নেই তার ঈমান নেই মর্মে
অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ খুৎবা খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে,
যার আমানাতদারী নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়া’দা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীনও নেই।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫, আহমাদ ৩/১৩৫, ১২৪০৬, সহীহুত্
তারগীব ৩০০৪, শু‘আবুল ঈমান ৪০৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যে ব্যক্তি কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দিল সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে
যখন তিনি ঐ ব্যক্তির উপর রাগান্বিত থাকবেন
(২১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, যে ব্যক্তি কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দিল সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন তিনি
ঐ ব্যক্তির উপর রাগান্বিত থাকবেন। (ত্বাবারাণী কাবীর ১১৬১৭;
মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯১)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে সিমাক ও সাহল
ইবনু মাহমূদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ
৪৫৭৩)।
এমন তিন ব্যক্তি আছে, যাদের জন্য ক্বিয়ামতের কঠিন কষ্টের ভয় নেই
(২২) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, এমন তিন ব্যক্তি আছে, যাদের জন্য ক্বিয়ামতের কঠিন কষ্টের ভয় নেই। অন্যান্য মাখলূকের
হিসাব না হওয়া পর্যন্ত তাদের হিসাব দিতে হবে না। এর পূর্বে তারা মেশকের টিলায় ভ্রমণ
করবে। এক- যে আল্লাহর জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছে, এমনভাবে ইমামতি করেছে যে মুক্তাদীরা
তার উপর সন্তুষ্ট। দুই- ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ছালাতের দিকে
আহবান করে। তিন- ঐ ব্যক্তি, যে তার মনীবের সাথে ও আয়ত্বাধীন লোকদের সাথে সুসম্পর্ক
বজায় রাখে। (ত্বাবারাণী ১১১৬; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯৫)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। এর সনদে উছমান ইবনু ক্বায়েস আবুল ইয়াকযান
ও বাশীর ইবনু আছেম নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/৬৮১২; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৮৬৩)।
অধিক লাভবান হওয়া যায়, ফরয ছালাতের পর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা
(২৩) উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী তার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, আমরা যখন খায়বার বিজয় করলাম,
তখন তারা তাদের গণীমত সমূহ বের করে দিল। যার মধ্যে বিভিন্ন রকমের সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী
ছিল। লোকেরা তাদের নিকট থেকে গণীমত ক্রয় করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর
নিকট এসে বলল, এই ব্যবসায় আমার যা লাভ হয়েছে অন্য কারো এত লাভ হয়নি। রাসূল (ছাঃ) তাকে
জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কত লাভ হয়েছে? সে বলল, আমি সমানে ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম তাতে ৩০০
উকিয়া লাভ হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় এমন
কথা বলব? সে বলল, সেটা কী হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ফরয ছালাতের পর দুই
রাক‘আত ছালাত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৭৮৫, ফাযায়েলে
আমল, পৃঃ ৮৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে উবায়দুল্লাহ ইবনু
সালমান নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ ২৯৪৮)।
সাতটি বিষয়ে অছিয়ত করা
(২৪) উবাদা ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, আমার বন্ধু
রাসূল (ছাঃ) আমাকে সাতটি বিষয়ে অছিয়ত করেছেন। তিনি বলেন, (১) তোমরা শিরক করবে না যদিও
তোমাদেরকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে পোড়ানো হয় অথবা শূলীতে চড়িয়ে হত্যা
করা হয় (২) তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিও না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ছালাত
ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। (৩) অবাধ্যতার নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ এটা আল্লাহর
অসন্তুষ্টির কারণ। (৪) মদ্যপান করো না। কারণ উহা প্রত্যেক পাপের উৎস (৫) মৃত্যু কিংবা
জিহাদ থেকে পলায়ন করো না, যদি তার মধ্যে পড়ে যাও (৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। যদি
তারা তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে তবুও তুমি তা থেকে বিরত থাক (৭)
তুমি তোমার পরিবার থেকে আদর্শের লাঠি তুলে নিও না এবং তোমার পক্ষ থেকে তাদের উপর ইনছাফ
করো। (আল-আহাদীছিল মুখতারাহ হা/৩৫১; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ
৯৬)।
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি
যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে সালামাহ ইবনু শুরাইহ ও ইয়াযীদ ইবনু ক্বাওযুর নামে দু’জন অপরিচিত
রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও যাহাবী তাদের অপরিচিত বলেছেন। (সিলসিলা
যঈফাহ ৫৯৯১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৩০০)।
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে দশটি নছীহত
করেছিলেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ ছহীহ।
মু’আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দশটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত বা উপদেশ দিয়েছেন। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও
তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি
মাতা-পিতা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন বা ধন সম্পদ ছেড়ে দেয়ার হুকুমও দেয়। (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে
কখনও কোন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দিও না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
ফারয্ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তা’আলা তার থেকে দায়িত্ব উঠিয়ে
নেন। (৪) মদ পান হতে বিরত থাকবে। কেননা তা সকল অশ্লীলতার মূল। (৫) সাবধান! আল্লাহর
নাফরমানী ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাক, কেননা নাফরমানী দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ অবধারিত হয়ে
যায়। (৬) জিহাদ হতে কখনো পালিয়ে যাবে না, যদিও সকল লোক মারা যায়। (৭) যখন মানুষের মধ্যে
মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তুমি সেখানেই রয়েছ, তখন সেখানে তুমি অবস্থান করবে (পলায়নপর হবে
না)। (৮) শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে (কার্পণ্য করে
তাদের কষ্ট দিবে না)। (৯) পরিবারের লোকেদেরকে আদাব-কায়দা শিক্ষার জন্য কক্ষনও শাসন
হতে বিরত থাকবে না এবং (১০) আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬১, আহমাদ ২১৫৭০, ২২১২৮,সহীহুত্
তারগীব ২৩৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
তোমরা ছালাতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। এটা তিনবার বললেন
(২৫) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর
সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা ছালাতের ব্যাপারে আল্লাহকে
ভয় কর। এটা তিনবার বললেন। অতঃপর তোমাদের দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর এবং দুই শ্রেণীর
দুর্বল লোকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর- বিধবা নারী ও ইয়াতীম বালক। তারপর তিনি বারবার
বলতে থাকলেন, ছালাতের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আত্মা বের হওয়া পর্যন্ত তিনি
এই ছালাতের কথা বলতেই থাকলেন। (বায়হাক্বী হা/১১০৫৩; ফাযায়েলে
আমল, পৃঃ ৮৭)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি অত্যন্ত যঈফ। উক্ত
বর্ণনার সনদে আম্মার ইবনু যুরাবী নামে মাতরূক ও মিথ্যুক রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ ৩২১৬)।
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ কথা ছিল ছালাত
ও নারী জাতি সম্পর্কে- উক্ত মর্মে যে হাদীছ ইবনু মাজাহতে এসেছে তা ছহীহ।
হাদিসঃ
আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষ কথা ছিলঃ ’’নামায পড়বে এবং
তোমাদের দাস-দাসীর সাথে সদাচার করবে’’। (সুনান ইবনু মাজাহ
২৬৯৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৫৬, আহমাদ ৫০৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাতের ফযিলত সংক্রান্ত উদ্ভট ও মিথ্যা কাহিনীসমূহ
জনগণকে ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ‘ফাযায়েলে
আমলের’ মধ্যে এমন কিছু তথ্য ও কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট,
আজগুবি ও অবাস্তব। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ
(১) যে
ব্যক্তি ফরয ছালাত সমূহের যথাযথ হেফাযত করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে পাঁচ দিক থেকে সম্মানিত
করবেন। যেমন- (ক) সংসারের অভাব-অনটন দূর করবেন (খ) কবরের আযাব মাফ করবেন (গ) বিচারের
দিন ডান হাতে আমলনামা দিবেন (ঘ) পুলছিরাতের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে পার হয়ে যাবে (ঙ)
বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ছালাতের ব্যাপারে অলসতা করবে
তাকে পনের প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে। তার মধ্যে পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার, মৃত্যুর
সময় তিন প্রকার, তিন প্রকার কবরে, কবর হতে উঠার পর তিন প্রকার। পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার
হল- (ক) তার জীবনে কোন কল্যাণ আসে না (খ) তার চেহারা হতে জ্যোতি দূর করা হয় (গ) তার
সৎ আমলের কোন প্রতিদান দেওয়া হয় না (ঘ) তার দু‘আ কবুল হয় না (ঙ) সৎ ব্যক্তিদের দু‘আর
মাঝে তার কোন অংশ থাকে না।
মৃত্যুর সময়ের তিন প্রকার শাস্তি হল- (ক) সে
লাঞ্ছনার সাথে মৃত্যুবরণ করে (খ) ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (গ) এমন তৃষ্ণার্ত
হয়ে মৃত্যু বরণ করে যে, সমুদ্র পরিমাণ পানি পান করলেও তার পিপাসা দূর হবে না। কবরে
তিন প্রকার শাস্তি হল- (ক) তার জন্য কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে, তার বুকের একদিকের হাড়
অপরদিকে ঢুকে যাবে (খ) কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে (গ) এমন একটি সাপ তার কবরে রাখা
হবে যার চক্ষুগুলো আগুনের এবং নখগুলো লোহার। সাপটি এত বড় যে, একদিনের পথ চলার পর শেষ
পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। এর হুংকার বজ্রের মত। সাপটি বলবে, আমার প্রভু তোমার জন্য আমাকে
নির্ধারণ করেছেন, যেন ফজরের ছালাত ত্যাগ করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোমাকে দংশন করতে
পারি, যোহরের ছালাত না পড়ার কারণে যেন আছর পর্যন্ত এবং আছরের ছালাত না পড়ার কারণে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত দংশন করতে পারি। অনুরূপ মাগরিবের ছালাত না পড়ার কারণে এশা পর্যন্ত এবং এশার
ছালাত নষ্ট করার কারণে সকাল পর্যন্ত দংশন করতে পারি। এই সাপ একবার দংশন করলে সত্তর
হাত মাটির নীচে মুর্দা ঢুকে যাবে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার শাস্তি হতে থাকবে।
কবর হতে উঠার পর তাকে তিন প্রকারের শাস্তি
দেওয়া হবে। (ক) কঠিনভাবে তার হিসাব নেওয়া হবে (খ) আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন
(গ) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। পনের নম্বরটি পাওয়া যায় না। তবে অন্য বর্ণনায়
রয়েছে, তার মুখমন্ডলে তিনটি লাইন লেখা থাকবে : (ক) আল্লাহর হক বিনষ্টকারী (খ) ওহে আল্লাহর
অভিশাপে অভিশপ্ত (গ) দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক বিনষ্ট করেছ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে
নিরাশ হয়েছে’। (ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে নামায অংশ (উর্দূ),
পৃঃ ৩১-৩৩; (বাংলা), পৃঃ ১০৪-১০৬; ইবনু হাজার হায়ছামী, আল-যাওয়াজির আন ইক্বতিরাফিল
কাবাইর, (বৈরূত: ১৯৯৯), পৃঃ ২৬৪)।
পর্যালোচনা: পুরো বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল। কারণ এর
কোন সনদ নেই, বর্ণনাকারীও নেই। (আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল
হাদীছ, ৪১/১১৬)।
ফাযায়েলে আমলের মধ্যেই বর্ণনাটির পর্যালোচনায়
এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘এই হাদীছ মিথ্যা’। (ফাযায়েলে আমল,
(উর্দূ) পৃঃ ৩৪; বাংলা, পৃঃ ১০৬)।
(২) জামা‘আতের সাথে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে
তিন কোটি পঁয়ত্রিশ লক্ষ চুয়ান্ন হাযার চারশ‘ বত্রিশ গুণ নেকী হবে। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১২৫; (উর্দূ), ফাযায়েলে নামায অংশ, পৃঃ ৪৫)।
পর্যালোচনা: হাদীছে বলা হয়েছে যে, জামা‘আতে ছালাত
আদায় করলে একাকী পড়ার চেয়ে ২০ গুণ, ২৫ গুণ বা ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যাবে।
হাদিসঃ
(১) একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায়
বিশ গুণ বেশি সাওয়াব রয়েছেঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামাআতে সালাত তার
ঘরে বা বাজারে পড়া সালাত অপেক্ষা বিশ গুণের অধিক মর্যাদাপূর্ণ। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৭,
৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৪৭১৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৬৫, ১৩৬৬, সুনান আততিরমিযী ২১৬,
সুনান আননাসায়ী ৪৮৬, ৮৩৮; সুনান আবূ দাঊদ ৫৫৯, আহমাদ ৭৩৮২, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৮১৪৯, ৮৯০৫,
৯৫৫১, ৯৭৬২, ৯৭৯৯, ৯৯২৬, ১০১২৬, ১০৪১৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৯১, দারিমী ১২৭৬, মাজাহ
৭৮৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায়
সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব রয়েছেঃ
(ক) ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কোন ব্যাক্তির জামাআতের সালাত তার একাকী পড়া সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫০, সুনান আততিরমিযী
২১৫, সুনান আননাসায়ী ৮৩৭, আহমাদ ৪৬৫৬, ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫, ৬৪১৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৯০,
দারিমী ১২৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা সালাত একাকী আদায় করা সালাত
থেকে সাতাশগুণ অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী),১৩৬৩, ১৩৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৫০, ইসলামীক সেন্টার ১৩৬২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(৩) কোনো কোনো হাদীসে আবার পঁচিশ গুণ সাওয়াবের
কথাও বলা হয়েছেঃ
(ক)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
জামাআতের ফযীলাত তোমাদের কারো একাকী সালাত পড়ার তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৮৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৪৭১৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
১৩৫৮, সুনান আততিরমিযী ২১৬, সুনান আননাসায়ী ৪৮৬, ৮৩৮; সুনান আবূ দাঊদ ৫৫৯, আহমাদ ৭৩৮২,
৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৮১৪৯, ৮৯০৫, ৯৫৫১, ৯৭৬২, ৯৭৯৯, ৯৯২৬, ১০১২৬, ১০৪১৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক
২৯১, দারিমী ১২৭৬, সুনান ইবনে মাজাহ ৭৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা'আতের সাথে সালাত আদায় করা একাকী সালাত
আদায় করার চেয়ে পচিশগুণ বেশী উত্তম। তিনি আরো বলেছেনঃ রাতের কর্তব্যরত মালায়িকাহ
(ফেরেশতাগণ) এবং দিনের কর্তব্যরত মালায়িকাহ ফজরের সালাতের সময় একত্র হয়। এ কথা বলে
আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) বললেন, এক্ষেত্রে তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের আয়াতটি পাঠ করো-
وَقُرْآنَ
الْفَجْرِ
إِنَّ
قُرْآنَ
الْفَجْرِ
كَانَ
مَشْهُودًا
অর্থাৎ- "ফজরের ওয়াক্তের কুরআন পাঠে উপস্থিত থাকে"- (সূরাহ ইসরা ১৭/৭৮)।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৫৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১৩৪৬, ইসলামীক সেন্টার ১৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কানাব (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ওয়াক্ত সালাত জামা'আতের
সাথে আদায় করা পঁচিশ ওয়াক্ত একাকী সালাত আদায় করার সমান। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৬১, ১৩৬২, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১৩৪৮, ইসলামীক সেন্টার. ১৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামাআতের সালাত তার বাড়িতে পড়া সালাত অপেক্ষা পঁচিশ
গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। (সুনান ইবনু মাজাহ,৭৮৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ৫৬০, আহমাদ ১১১২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উক্ত হাদিসগুলোর ফযীলতের উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে
কোটি কোটি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
(৩) সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রহঃ) পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত
এশা ও ফজরের ছালাত একই ওযূ দ্বারা পড়েছেন। (ফাযায়েলে আমল,
পৃঃ ১৬০; (উর্দূ), পৃঃ ৬৮)।
(৪) চল্লিশ জন তাবেঈ সম্পর্কে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত
হয়েছে যে, তারা এশা ও ফজর একই ওযূতে পড়তেন। (ফাযায়েলে
আমল, পৃঃ ১৬০, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮)।
(৫) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ত্রিশ বছর কিংবা চল্লিশ
বছর কিংবা পঞ্চাশ বছর এশা ও ফজর ছালাত একই ওযূতে পড়েছেন। (ফাযায়েলে
আমল, পৃঃ ১৬০, (ঊর্দূ), পৃঃ ৬৮)।
তাঁর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, ওযূর পানি ঝরার
সময় তিনি বুঝতে পারতেন এর সাথে কোন্ পাপ ঝরে যাচ্ছে। (ফাযায়েলে
আমল (বাংলা), পৃঃ ৭৮)।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া)-এর অধীন ফাযিল
স্নাতক প্রথম বর্ষের আল-আক্বাঈদ বইয়ে আবু হানীফা (রহঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে,
‘তিনি একাধারে ৩০ বছর রোযা রেখেছেন এবং ৪০ বছর যাবত রাতে ঘুমাননি। ইবাদত বন্দিগীতে
রজনী কাটায়ে গিয়েছেন। প্রতি রামাযানে ৬১ বার কুরআন মাজীদ খতম করতেন। অনেক সময় এক রাক‘য়াতেই
কুরআন মাজীদ এক খতম দিতেন। তিনি ৫৫ বার হজ্জ করেছেন। জীবনের শেষ হজ্জের সময় কা‘বা শরীফে
দু’রাক‘য়াত নামায এভাবে পড়েন যে, প্রথম রাক‘য়াতে এক পা ওঠায়ে প্রথম অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ
পাঠ করেন। তারপর দ্বিতীয় রাক‘য়াতে অপর পা ওঠায়ে বাকি অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন।
যে স্থানে তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে, সেখানে এক হাজার বার কুরআন মাজীদ খতম করেছেন। তিনি
৯৯ বার আল্লাহ তা‘য়ালাকে স্বপ্নে দেখেছেন’। (রচনা ও সম্পাদনা
: মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউসুফ খান, আল-আকাইদ আল-ইসলামিয়্যাহ (ঢাকা : আল-বারাকা লাইব্রেরী,
৩৪, নর্থব্রূক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০), পৃঃ ৪৫)।
(৬) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) রামাযান মাসে ছালাতের মধ্যে
পবিত্র কুরআন ৬০ বার খতম করতেন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১,
(উর্দূ), পৃঃ ৬৮)।
(৭) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) দৈনিক ৩০০ রাক‘আত
ছালাত আদায় করতেন। ৮০ বছর বয়সে তিনি দৈনিক ১৫০ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, ১৫৮, (উর্দূ), পৃঃ ৬৬ ও ৬৮)।
(৮) সাঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) এক রাক‘আতে পুরা কুরআন
খতম করতেন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৮, (উর্দূ), পৃঃ ৬৬)।
(৯) আবু আত্তার সুলামী (রহঃ) চল্লিশ বছর পর্যন্ত
সারা রাত ক্রন্দন করে কাটাতেন এবং দিনে সর্বদা ছিয়াম পালন করতেন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮)।
(১০) বাকী ইবনু মুখাল্লাদ (রহঃ) দৈনিক তাহাজ্জুদ
ও বিতর ছালাতের তের রাক‘আতে কুরআন খতম করতেন। (ফাযায়েলে
আমল, পৃঃ ১৬০, (উর্দূ), পৃঃ ৬৭)।
(১১) মুহাম্মাদ ইবনু সালামা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ
(রহঃ)-এর ছাত্র ছিলেন । তিনি ১০৩ বছর বয়সে মারা যান। ঐ বয়সে তিনি প্রতিদিন ২০০ রাক‘আত
করে ছালাত আদায় করতেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর তার একটানা তাকবীরে তাহরীমা ছুটেনি। মায়ের
মৃত্যুর কারণে মাত্র একবার ছুটে গিয়েছিল। জামা‘আতে না পড়ার জন্য তিনি ঐ ছালাত ২৫ বার
পড়েন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১২৫-১২৬, (উর্দূ), পৃঃ ৪৬)।
(১২) ওমর ইবনু আব্দুল আযীয (রহঃ) সারা রাত্রি ইবাদতে
মশগুল থাকতেন। এমনকি খেলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার ফরয গোসলের প্রয়োজন হয়নি। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৭, (উর্দূ), পৃঃ ৬৫-৬৬)।
(১৩) জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তির পায়ে ফোঁড়া হয়েছিল।
ডাক্তারগণ পরামর্শ দিলেন, পা না কাটা হলে জীবনের হুমকি রয়েছে। তখন তার মা বললেন, যখন
ছালাতে দাঁড়াবে, তখন কেটে নিতে হবে। অতঃপর তিনি যখন ছালাতে দাঁড়ালেন তখন তারা তার পা
কেটে ফেললে তিনি মোটেও টের পেলেন না। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ
১৫৬, (উর্দূ), পৃঃ ৬৫)।
উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ) সম্পর্কে এধরনের একটি
কাহিনী প্রচার করা হয় যে, যুদ্ধে তার পায়ে তীর বিদ্ধ হয়েছিল। সেই তীর বের করা যাচ্ছিল
না। অবশেষে তিনি ছালাতে দাঁড়ালে তার পা থেকে তীর বের করা হল, অথচ তিনি টের পেলেন না।
এই কাহিনীও মিথ্যা।
পর্যালোচনা: সুধী পাঠক! উক্ত কাহিনীগুলো মুসলিম
বিশ্বের বরেণ্য মনীষীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, তারা কি আদৌ এভাবে
তাদের ইবাদতী জীবন অতিবাহিত করেছেন? তাদের দ্বারা কি এ ধরনের বাড়াবাড়ি সম্ভব? যেমন-
(ক) দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর যাবৎ এশার ছালাতের ওযূ দ্বারা ফজরের ছালাত আদায় করা। বছরের পর
বছর একটানা ছিয়াম পালন করা ইত্যাদি। মানবীয় কারণ উল্লেখ না করে যদি প্রশ্ন করা হয়-
শরী‘আতে এভাবে সারা রাত ধরে ইবাদত করার অনুমোদন আছে কি? রাসূল (ছাঃ) ও তার ছাহাবীদের
পক্ষ থেকে এরূপ কি কোন নযীর আছে? আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে রাত্রের কিছু অংশ বাদ
দিয়ে ইবাদত করতে বলেছেন (মুয্যাম্মিল ২-৪)। রাসূল (ছাঃ) ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর
ইবনু আছ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন,
‘তুমি ছিয়াম পালন কর আবার ছিয়াম ছেড়ে দাও,
তুমি রাত্রে ইবাদত কর আবার ঘুমাও। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার
দুই চোখের হক আছে, অনুরূপ তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে’।
মূল হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে ’আবদুল্লাহ! আমি
জানতে পেরেছি, তুমি দিনে সওম রাখো ও রাত জেগে সালাত আদায় করো। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে
আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, (এরূপ) করো না। সওম
রাখবে, আবার ছেড়ে দেবে। সালাত আদায় করবে, আবার ঘুমাবে। অবশ্য অবশ্যই তোমার ওপর তোমার
শরীরের হক আছে, তোমার চোখের ওপর হক আছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। তোমার মেহমানদেরও
তোমার ওপর হক আছে। যে সবসময় সওম রাখে সে (যেন) সওমই রাখল না। অবশ্য প্রতি মাসে তিনটি
সওম সবসময়ে সওম রাখার সমান। অতএব প্রতি মাসে (আইয়্যামে বীযে অথবা যে কোন দিনে তিনদিন)
সওম রাখো। এভাবে প্রতি মাসে কুরআন পড়বে। আমি নিবেদন করলাম, আমি তো এর চেয়ে বেশী করার
সামর্থ্য রাখি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে উত্তম দাঊদ (আঃ)-এর
সওম রাখো। একদিন রাখবে, আর একদিন ছেড়ে দেবে। আর সাত রাতে একবার কুরআন খতম করবে। এতে
আর মাত্রা বাড়াবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৫৪,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৭৫, ১৯৭৬, ৫০৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬১৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৭৩২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩২০,
ইরওয়া ২০১৫, আহমাদ ৬৮৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৮৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৯৪২, ইবনু খুযায়মাহ্
২১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল (ছাঃ) অন্য হাদীছে বলেন, ‘যে ব্যক্তি
সর্বদা ছিয়াম পালন করে তার ছিয়ামের কোন মূল্য নেই। একথা তিনি দুইবার কিংবা তিনবার বলেন’।
মূল হাদিসঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছে যে, আমি একটানা সওম পালন
করি এবং রাতভর সালাত আদায় করি। এরপর হয়ত তিনি আমার কাছে লোক পাঠালেন অথবা আমি তাঁর
সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি এ কথা ঠিক শুনিনি যে, তুমি সওম পালন করতে
থাক আর ছাড় না এবং তুমি (রাতভর) সালাত আদায় করতে থাক আর ঘুমাও না? (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন)ঃ তুমি সওম পালন কর এবং মাঝে মাঝে তা ছেড়েও দাও। রাতে সালাত
আদায় কর এবং নিদ্রাও যাও। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের হক রয়েছে এবং তোমার নিজের শরীরের
ও তোমার পরিবারের হক তোমার উপর আছে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি
রাখি। তিনি [আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেনঃ তাহলে তুমি দাঊদ
(আঃ)-এর সিয়াম পালন কর। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ
দাঊদ (আঃ) একদিন সওম পালন করতেন, একদিন ছেড়ে দিতেন এবং তিনি (শত্রুর) সম্মুখীন হলে
পলায়ন করতেন না। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এ শক্তি কে যোগাবে?
বর্ণনাকারী ‘আত্বা (রহ.) বলেন, (এ হাদীসে) কিভাবে সব সময়ের সিয়ামের প্রসঙ্গ আসে সে
কথাটুকু আমার মনে নেই (অবশ্য) এতটুকু মনে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দু’বার এ কথাটি বলেছেন, সব সময়ের সওম কোন সওম নয়। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৭৭, ১১৩১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৮৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) প্রতিদিন
৩০০, ২৫০ কিংবা ২০০ রাক‘আত ছালাত আদায় করা। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের কোন
ইবাদত করেছেন মর্মে প্রমাণ নেই। জানা আবশ্যক যে, রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বা ব্যতীত যেকোন
ইবাদত প্রত্যাখ্যাত।
হাদিসঃ
আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবদুল্লাহ
ইবনু আওন হিলালী (রহঃ).....আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় কাজের বিষয়ে এমন বিষয় উদ্ভাবন
করে যা তাতে নেই (দলীলবিহীন), তা পরিত্যাজ্য। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৭১৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৬৯৭, আহমাদ ২৬০৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
বরং শরী‘আতের বিধিবদ্ধ নিয়মকে অবজ্ঞা করে যে
বেশী বেশী ইবাদত করবে নিঃসন্দেহে সে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত থেকে বহিষ্কৃত হবে। কারণ
রাসূল (ছাঃ) ইবাদতের কথা জেনে তিন ব্যক্তি খুব কম মনে করেছিল এবং তারা বেশী বেশী ইবাদত
করতে চেয়েছিল। এদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলে দিলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে
মুখ ফিরিয়ে নিল, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়’।
মূল হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিন
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’ইবাদাতের অবস্থা জানার জন্য তাঁর স্ত্রীগণের
নিকট এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’ইবাদাতের খবর শুনে তারা যেন তাঁর
ইবাদাতকে কম মনে করলেন এবং পরস্পর আলাপ করলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সঙ্গে আমাদের তুলনা কোথায়, আল্লাহ তা’আলা তাঁর আগের-পরের (গোটা জীবনের) সমস্ত গুনাহ
ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি কিন্তু সারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন
করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে
করবো না। তাদের এ পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে
পড়লেন এবং বললেন, তোমরা কী এ ধরনের কথাবার্তা বলছিলে? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের
চেয়ে বেশি ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশি পরহেয করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন
করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন করা ছেড়ে দেই। রাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমিয়েও থাকি। আমি বিয়েও করি। সুতরাং
এটাই আমার সুন্নাত (পথ), যে ব্যক্তি আমার পথ থেকে বিমুখ হবে সে আমার (উম্মাতের) মধ্যে
গণ্য হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৫, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৩২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৭, ইরওয়া ১৭৮২, সহীহ
আল জামি‘ ১৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৯১৮, বুলুগুল মারাম ৯৭৫, আহমাদ ১৩৭২৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
জনৈক ছাহাবী সাত দিনের কমে কুরআন খতম করতে
চাইলে রাসূল (ছাঃ) তাকে অনুমতি দেননি।
হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি কুরআন মুখস্থ করেছি এবং তা প্রতি রাতে সম্পূর্ণ তিলাওয়াত করি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার আশংকা যে, তুমি দীর্ঘজীবী হবে এবং বার্ধক্যে
দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই তুমি এক মাস অন্তর কুরআন খতম করো। আমি বললাম, আমাকে আমার শক্তিমত্তা
ও যৌবন দ্বারা উপকৃত হতে দিন। তিনি বলেনঃ তাহলে তুমি দশ দিন অন্তর কুরআন খতম করো। আমি
বললাম, আপনি আমাকে আমার শক্তিমত্তা ও যৌবন দ্বারা উপকৃত হতে দিন। তিনি বলেন: তাহলে
তুমি সাত দিন অন্তর খতম করো। আমি বললাম, আমার শক্তিমত্তা ও যৌবন দ্বারা আমাকে উপকৃত
হতে দিন। তখন তিনি তা অস্বীকার করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ
১৩৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৭৮, ৫০৫২-৫৪; সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৯৪৯, সুনান আননাসায়ী ১৩৮৮-৯১, ১৩৯৪; ২৩৯০, ২৪০০, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৭০, ৬৪৮০, ৬৪৯১, ৬৫০৯,
৬৭২৫, ৬৭৩৬, ৬৭৭১, ৬৮০২, ৬৮৩৪, ৬৮৩৭, ৬৯৮৪; দারিমী ১৪৯৩, ৩৪৮৬, ৩৪৮৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তিনি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করেছেন।
(ক) আবদুল্লাহ
ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন পড়েছে, সে কুরআন বুঝেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২০১, সুনান আততিরমিযী ২৯৪৯, সুনান
ইবনু মাজাহ ১৩৪৭, শু‘আবূল ঈমান ১৯৪১, সুনান আবূ দাঊদ ১৩৯৪, আহমাদ ৬৫৩৫, দারিমী ১৫৩৪,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি প্রতি
মাসে তিন দিন সওম পালন কর। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি করার শক্তি রাখি।
এভাবে তিনি বৃদ্ধির আবেদন করতে লাগলেন, অবশেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ একদিন সওম পালন কর আর একদিন ছেড়ে দাও এবং আরো বললেনঃ প্রতি মাসে (এক খতম) কুরআন
পাঠ কর। তিনি বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি শক্তি রাখি। এভাবে বলতে লাগলেন, অবশেষে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তিন দিনে (পাঠ কর)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৭৮, ১১৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাছাড়া আয়েশা (রাঃ) বলেন,
রাসূল (ছাঃ) কোন এক রাত্রিতে পুরো কুরআন খতম
করেছেন, কোন রাত্রে পুরো রাত ছালাত আদায় করেছেন এবং রামাযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে
সম্পূর্ণ মাস ছিয়াম পালন করেছেন মর্মে আমি জানি না’।
হাদিসঃ
‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (এত অধিক) সওম পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি
করতাম, তিনি আর সওম পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) সওম পালন না করা অবস্থায়
একাধারে কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) সওম পালন করবেন না। আমি আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রমাযান ব্যতীত কোন পুরা মাসের সওম পালন করতে
দেখিনি এবং শা‘বান মাসের চেয়ে কোন মাসে অধিক (নফল) সওম পালন করতে দেখিনি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৬৯, ১৯৭০, ৬৪৬৫, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৬০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৬, আহমাদ ২৫১৫৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৩০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এই নিয়মতান্ত্রিক নির্ধারিত ইবাদত করার মাধ্যমেই
তিনি হয়েছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তাক্বওয়াশীল। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৪০১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৫, আহমাদ ১৩৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রশ্ন হল- যে সমস্ত মহা মনীষী সম্পর্কে উক্ত
অলীক কাহিনী রচনা করা হয়েছে, তারা কি শরী‘আতের এই বিধানগুলো জানতেন না? তারা কি রাসূল
(ছাঃ) ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবীদের চেয়ে বেশী পরহেযগার হতে চেয়েছিলেন? (নাঊযুবিল্লাহ)।
বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে যে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে তা আসলেই দুঃখজনক।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বইয়ে কিভাবে তা সম্পৃক্ত হতে পারে?
বলা যায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল এ সমস্ত অলীক
কাহিনী আবিষ্কার করেছে।
(১৪) ছাবেত আল-বুনানী (রহঃ) আল্লাহর সামনে অধিক
ক্রন্দন করতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ কবরে যদি কাউকে ছালাত আদায় করার অনুমতি দান করে
থাকেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন। আবু সিনান বলেন, আল্লাহর কসম! ছাবেতকে যারা দাফন করেছেন
তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। দাফনের সময় কবরের একটি ইট পড়ে গেল। আমি দেখতে পেলাম তিনি দাঁড়িয়ে
ছালাত আদায় করছেন। তার কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, আব্বা ৫০ বছর যাবৎ রাত্রি জাগরণ
করেছেন এবং উক্ত দু‘আ করেছেন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৯,
(উর্দূ), পৃঃ ৬৭)।
(১৫) একজন স্ত্রীলোককে দাফন করা হল । তার ভাই দাফনের
কাজে শরীক ছিল। এ সময় তার টাকার থলি কবরের মাঝে পড়ে যায়। পরে বুঝতে পেরে চুপে চুপে
কবর খুলে বের করার চেষ্টা করে। যখন সে কবর খুলল তখন কবরটি আগুনে পরিপূর্ণ ছিল। সে কাঁদতে
কাঁদতে মায়ের নিকট আসল এবং ঘটনা বর্ণনা করল। তখন তার মা উত্তরে বলল, সে ছালাতে অলসতা
করত এবং ছালাত ক্বাযা করত। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১১৮)।
পর্যালোচনা: কবর জীবন মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী
জীবন। এই জীবন মানুষের বাস্তব জীবনের বিপরীত। দুনিয়ার কোন মানুষ বারযাখী জীবন সম্পর্কে
খবর রাখে না। কবরের শান্তি বা শাস্তি কোনকিছু কেউ টের পায় না। সেখানকার অবস্থা দেখা
তো দূরের কথা, মানুষ ও জিনের পক্ষে কানে শুনাও সম্ভব নয়।
হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সঙ্গীগণ (আত্মীয়-স্বজন,
পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব) সেখান থেকে চলে আসে, আর তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে
পায়। তার নিকট (কবরে) দু’জন মালাক (ফেরেশতা) পৌঁছেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, তুমি
দুনিয়াতে এই ব্যক্তির (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) ব্যাপারে কী জান?
এ প্রশ্নের উত্তরে মু’মিন বান্দা বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, ঐ দেখে
নাও, তোমার ঠিকানা জাহান্নাম কিরূপ (জঘন্য) ছিল। তারপর আল্লাহ তা’আলা তোমার সে ঠিকানা
(জাহান্নামকে) জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে বান্দা দু’টি ঠিকানা (জান্নাত-জাহান্নাম)
একই সঙ্গে থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও কাফিরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি
(মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কী ধারণা পোষণ করতে? তখন
সে উত্তর দেয়, আমি বলতে পারি না (প্রকৃত সত্য কী ছিল)। মানুষ যা বলতো আমিও তাই বলতাম।
তখন তাঁকে বলা হয়, তুমি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েও বুঝতে চেষ্টা করনি এবং (আল্লাহর কুরআন)
পড়েও জানতে চেষ্টা করনি। এ কথা বলে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে কঠিনভাবে মারতে থাকে, এতে
সে তখন উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ চীৎকারের শব্দ (পৃথিবীর) জিন আর মানুষ ছাড়া নিকটস্থ
সকলেই শুনতে পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৬, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৮৭০, সুনান আননাসায়ী ২০৫১, আহমাদ ১২২৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১২০, সহীহ আল জামি‘ ১৬৭৫,
সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৬)
শায়খ আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ) ছিলেন বিখ্যাত বুযুর্গের একজন। তিনি বলেন, আমার একবার খুব
ঘুমের চাপ হল। ফলে রাত্রের নিয়মিত তাসবীহগুলো পড়তে ছুটে গেল। তখন স্বপ্নে আমি সবুজ
রেশমী পোশাক পরিহিতা এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতীকে দেখলাম। তার পায়ের জুতাগুলো পর্যন্ত
তাসবীহ পাঠ করছে। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, তুমি আমাকে পাওয়ার চেষ্টা কর, আমি তোমাকে
পাওয়ার চেষ্টা করছি। অতঃপর সে কয়েকটি প্রেমমূলক কবিতা পাঠ করল। এই স্বপ্ন দেখে আমি
প্রতিজ্ঞা করলাম, রাত্রে আর কখনো ঘুমাব না। অতঃপর তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার
ওযূ দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫২,
(উর্দূ), পৃঃ ৬২)।
(১৭) জনৈক বুযুর্গ বলেন, এক রাত্রিতে গভীর ঘুমের
কারণে আমি জেগে থাকতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়েকে দেখলাম।
এমন মেয়ে আমি কখনো জীবনে দেখিনি। তার দেহ থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। এমন সুগন্ধি
আমি কখনো অনুভব করিনি। সে আমাকে একটি কাগজের টুকরা দিল। তাতে কবিতার তিনটি চরণ লেখা
ছিল। যেমন- তুমি নিদ্রার স্বাদে বিভোর হয়ে জান্নাতের বালাখানা সমূহ ভুলে গেছ, যেখানে
তোমাকে চির জীবন থাকতে হবে, যেখানে কখনো মৃত্যু আসবে না। তুমি ঘুম হতে উঠ, কুরআন তেলাওয়াত
কর, তাহাজ্জুদ ছালাতে কুরআন তেলাওয়াত করা ঘুম হতে অনেক উত্তম। তিনি বলেন, এই ঘটনার
পর হতে আমার কখনো ঘুম আসে না। কবিতাগুলো স্মরণ হয় আর ঘুম দূরিভূত হয়ে যায়। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৩, (উর্দূ), পৃঃ ৬৩)।
পর্যালোচনাঃ কী চমৎকার রোমাঞ্চকর উপন্যাস! সুন্দরী
মেয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসার কী সুন্দর অভিনব কৌশল! আল্লাহর
ভয় ও ইসলামী বিধানের আনুগত্যের কোনই প্রয়োজন নেই। শুধু সুন্দরী নর্তকীকে পাওয়ার জন্য
সে ইবাদত করবে। এটা কি কোন ইসলামী সভ্যতা?
সুধী পাঠক! ফাযায়েলে আমলে এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা কাহিনী
রয়েছে। এই মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকা দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে প্রতারণার জালে আবদ্ধ
করা হচ্ছে। যে সমস্ত ভাইয়েরা ফাযায়েলে আমল পড়েন ও আমল করেন তারা কি একটিবার চিন্তা
করবেন? আমরা সরলপ্রাণ মুমিন ভাইদেরকে উক্ত মরণ ফাঁদ থেকে বের হয়ে প্রমাণসহ ছহীহ দলীলের
অনুসরণ করার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ রাববুল আলামীন মুসলিম উম্মাহকে উক্ত
মিথ্যা ও কাল্পনিক ধর্ম থেকে রক্ষা করুন-আমীন!!
ছালাতের ছহিহ ফযীলতসমূহ
ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর কয়েকটি
বাণী নিম্নে পেশ করা হল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর আপনি ছালাত আদায় করুন। নিশ্চয় ছালাত
অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ’। (আনকাবূত ৪৫)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আপনি দিনের দুই প্রান্তে
এবং রাত্রির কিছু অংশে ছালাত আদায় করুন। নিংসন্দেহে সৎকর্ম সমূহ মন্দ কর্মসমূহকে দূর
করে দেয়’। (সুরা হূদ ১১৪)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্
হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্
হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি‘
৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো
তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার
গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন
ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৭, সুনান আননাসায়ী
৪৬২, সুনান আততিরমিযী ২৮৬৮, আহমাদ ৮৯২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৬, ইরওয়া ১৫, সহীহ আত্
তারগীব ৩৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
’উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের
উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত আদায় করে।
আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার
দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী
থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাঊদ ১২০৩, সুনান
আননাসায়ী ৬৬৬, ‘ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আমর ইবনু আবাসা (রা) হতে বর্ণিত, ...আমি বললাম,
হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! ওযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন পানি সংগ্রহ
করে কুলি করে এবং নাকে পানি দেয় অতঃপর নাক ঝাড়ে, নিশ্চয়ই তখন তার মুখমন্ডল, মুখের ভিতরের
ও নাকের ভিতরের গোনাহ সমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন চেহারা ধৌত করে যেরূপ আল্লাহ নির্দেশ
দান করেছেন, তখন তার মুখমন্ডলের পানির সাথে পাপগুলো দাড়ির কিনারা দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর
যখন সে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের পাপ সমূহ আঙ্গুলের ধার দিয়ে
পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথার পাপসমূহ চুলের পাশ
দিয়ে ঝরে পড়ে। অবশেষে যখন সে দুই পা ধৌত করে দুই গিরা পর্যন্ত তখন তার গোনাহ সমূহ তার
আঙ্গুল সমূহের কিনারা দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর সে যখন ছালাতের জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহর
প্রশংসা ও গুণগান করে এবং তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করে তিনি যেমন মর্যাদার অধিকারী। সেই
সাথে নিজের অন্তরকে আল্লাহর জন্য নিবিষ্ট করে, তখন সে তার পাপ হতে অনুরূপ মুক্ত হয়ে
যায় যেন তার মা তাকে সেদিন জন্ম দিয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১০৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার
উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হতে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি
দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব সালাতের হিফাযাত করবে তাকে আমি জান্নাতে
প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করবে না তার জন্য আমার পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি
নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩০, সুনান ইবনু মাজাহ
১৪০৩, জামি সগীর ৪০৪৫, সহীহা ৪০৩৩, সহীহ আবী দাউদ ৪৫৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা পঁচিশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার ন্যায়। যখন উক্ত ছালাত
কোন নির্জন ভূখন্ডে আদায় করে অতঃপর রুকূ ও সিজদা পূর্ণভাবে করে, তখন সেই ছালাত পঞ্চাশ
ছালাতের সমপরিমাণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬০,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৬, হাকিম ১/২০৮) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
ছালাত সংক্রান্ত আরো অনেক ফযীলত ছহীহ হাদীছ
সমূহে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখেই আমাদেরকে আমল করতে হবে। যঈফ ও জাল
হাদীছ এবং কাল্পনিক মিথ্যা কাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধভাবে ছালাত
আদায় করার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
ছালাত পরিত্যাগকারীর হুকুম
ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা
করছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫৬)।
আর শ্রেষ্ঠ ও প্রধান ইবাদত হল ছালাত। ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য মহান আল্লাহ ও রাসূল
(ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তারা যদি তওবা করে, ছালাত
কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবেই তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই’। (সুরা তওবা ১১)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাদের পর আসল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা ছালাত
নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ধ্বংসে (জাহান্নামের গভীরে)
পতিত হবে’ (মারইয়াম ৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে,
তোমাদের কিসে সাক্বার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায়কারী
ছিলাম না’। (সুরা মুদ্দাছ্ছির ৪১-৪৩)।
উক্ত আলোচনা প্রমাণ করে ছালাত পরিত্যাগকারী
ব্যক্তি মুসলিম ভাই হতে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি মুসলিম হিসাবে আগামী কাল আল্লাহর
সাথে মুলাক্বাত করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যথাযথভাবে আদায় করে।
যেখানেই উক্ত ছালাতের আযান দেয়া হোক’।
হাদিসঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দেখেছি জামা’আতে সালাত আদায় করা থেকে শুধু মুনাফিক্বরাই বিরত
থাকত যাদের মুনাফিক্বী অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল অথবা রুগ্ন লোক। তবে যে রুগ্ন লোক দু’ব্যক্তির
ওপর ভর করে চলতে পারতো সেও জামা’আতে আসত। এরপর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিদায়াতের পথসমূহ শিখিয়ে দিয়েছেন।
তাঁর শিখানো হিদায়াতের পথসমূহ থেকে একটি এই যে, যে মসজিদে আযান দেয়া হয় সেটাতে জামা’আতের
সাথে সালাত আদায় করা।
অপর একটি বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সাথে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে সাক্ষাৎ করে
আনন্দিত হতে চায়, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত উপযুক্ত সময়ে আদায় করার প্রতি যত্নবান হয়ে
যেখানে সালাতের জন্যে আযান দেয়া হয় সেখানে সালাত আদায় করে। কারণ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের
রসূলের জন্যে ’সুনানুল হুদা’ (হিদায়াতের পথ) নির্দিষ্ট করেছেন। জামা’আতের সাথে এ পাঁচ
বেলা সালাত আদায় করাও এ ’সুনানুল হুদার’ মধ্যে একটি অন্যতম। তোমরা যদি তোমাদের ঘরে
সালাত আদায় কর, যেভাবে এ পিছে পড়ে থাকা লোকগুলো (মুনাফিক্ব) তাদের বাড়িতে সালাত আদায়
করে, তবে তোমরা অবশ্যই তোমাদের নবীর সুন্নাতকে ছেড়ে দিলে। যদি তোমরা তোমাদের নবীর হিদায়াতসমূহ
ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে।
তোমাদের মধ্যে যারা ভাল করে পাক-পবিত্রতা অর্জন
করে, তারপর এসব মসজিদের কোন মসজিদে সালাত আদায় করতে যায়, তবে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি
কদমে একটি করে নেকী দান করবেন, তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করবেন এবং তার একটি পাপ মাফ
করে দেন। আমি আমাদেরকে দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক্বরা ছাড়া অন্য কেউ সালাতের জামা’আত
থেকে পিছে থাকতো না বরং তাদেরকে দু’জনের কাঁধে হাত দিয়ে এনে সালাতের সারিতে দাঁড় করিয়ে
দেয়া হত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৭২, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৩৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
বুসর ইবনু মিহজান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (তার পিতা মিহজান) এক সভায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। এমন সময় আযান হয়ে গেল। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্যে দাঁড়িয়ে গেলেন ও সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে
ফিরে আসলেন। দেখলেন মিহজান তার স্থানে বসে আছে। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন। মানুষের সঙ্গে
(জামা’আতে) সালাত আদায় করতে তোমাকে কোন জিনিস নিষেধ করেছিল? তুমি কি মুসলিম না। মিহজান
বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমি মুসলিম। কিন্তু আমি আমার পরিবারের সঙ্গে সালাত আদায়
করে এসেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার বাড়িতে সালাত
আদায় করে আসার পরে মসজিদে এসে সালাত হচ্ছে দেখলে লোকদের সঙ্গে (জামা’আতে) সালাত আদায়
করবে তুমি (এর পূর্বে) সালাত আদায় করে থাকলেও। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৩, সুনান আননাসায়ী ৮৫৭, ইবনু হিব্বান ২৪০৫, মুসনাদ আশ্ শাফি‘ঈ
১০৪৩, মালিক ৪৩৫, আহমাদ ১৬৩৯৩, দারাকুত্বনী ১৫৪১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৯০, সুনান আল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৬৩৮, সহীহাহ্ ১৩৩৭, সহীহ ১৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব উক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে- ছালাত আদায়
করা মুসলিম ব্যক্তির মূল পরিচয়।
অন্য হাদীছে আরো কঠিন বক্তব্য এসেছে,
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো
সালাত পরিত্যাগ করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৯,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, সুনান
আননাসায়ী ৪৬৪, সুনান আততিরমিযী ২৬২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৭৮, আহমাদ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২;
দারিমী ১২৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি
রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করলো (অর্থাৎ-
কাফির হয়ে যাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৪, সুনান
আততিরমিযী ২৬২১, সুনান আননাসায়ী ৪৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৭৯ সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৪,
আহমাদ ২২৯৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিন বান্দা ও শিরক-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত বর্জন
করা। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮০, সহীহ তারগীব ৫৬৫, ১৬৬৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
’আবদুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সালাত ছাড়া অন্য
কোন ’আমল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৯, সুনান আততিরমিযী ২৬২২, সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অতএব যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে না, সে নিঃসন্দেহে
কুফুরী করবে। অলসতা ও অবহেলায় কোন মুসলিম নামধারী যদি ছালাত আদায় না করে তাহলে উক্ত
অপরাধের কারণে জাহান্নামে যাবে। শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় কালেমা ত্বাইয়েবার
বরকতে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হাদিসঃ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা (কিয়ামতের
দিন) মুমিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, তখন ঈমানদারগণ
তাদের জাহান্নামী ভাইদের ব্যাপারে তাদের প্রতিপালকের সাথে এত প্রচন্ড তর্ক-বিতর্কে
লিপ্ত হবে যে, তারা দুনিয়াতে অবস্থানকালে তাদের কেউ তার বন্ধুর পক্ষে ততটা প্রচন্ড
বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে
সালাত আদায় করতো, সাওম রাখতো এবং হাজ্জ (হজ্জ) করতো। অথচ আপনি তাদেরকে জাহান্নামে দাখিল
করেছেন।
তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তোমরা যাও এবং তাদের
মধ্যে যাদেরকে তোমরা চিনতে পারো, তাদের বের করে নিয়ে এসো। অতএব তারা তাদের কাছে যাবে
এবং তাদের আকৃতি দেখে তাদের চিনতে পারবে। জাহান্নামের আগুন তাদের দৈহিক গঠনাকৃতি ভক্ষণ
(নষ্ট) করবে না। আগুন তাদের কারো পদদ্বয়ের জংঘার অর্ধাংশ পর্যন্ত এবং কারো পদদ্বয়ের
গোছা পর্যন্ত স্পর্শ করবে। তারা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে এনে বলবে, হে আমাদের
প্রভু! আপনি আমাদেরকে যাদের বের করে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাদের বের করে এনেছি।
অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ যাদের অন্তরে এক দ্বীনার
পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে
সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তোমরা তাদেরকেও বের করে নিয়ে এসো। আবূ সাঈদ বলেন, যার
এ কথা বিশ্বাস না হয় সে যেন তিলাওয়াত করে (অনুবাদ) আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না।
কোন উত্তম কাজ হলে আল্লাহ তা দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার
প্রদান করেন- (সূরাহ নিসা ৪: ৪০)।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৬০, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৬০, ৭৪৪০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৪, সহীহাহ ৩০৫৪, যিললুল জান্নাহ ৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিলে বা
অস্বীকার করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। (হুকমু তারিকিছ ছালাহ, পৃঃ ৬)।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment