বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে-
যিকির কি? ভন্ডামী যিকির
বনাম সহিহ যিকির। সহিহ পথ কোনটি?
ভুমিকাঃ যিকির
বলতে সাধারনত আমরা যা দেখে বুঝি তাহলো, কোনো পিরের দরবারে, মাজারে, ওয়াজ মাহফিলে কিংবা
মসজিদে দলগতভাবে বা একাকি উচ্চ স্বরে মাথা ঝাকিয়ে, কোমর দোলায়ে, গানের সুরে কিংবা নাচের
তালে তালে শুধু আল্লাহু আল্লাহু, হু হু বা শুধু ইল্লাল্লাহ শব্দের মাধ্যমে ইশকে যিকিরে
নিমগ্ন হওয়া।
বাংলাদেশে
অনেক শিক্ষিত আলেম যারা নিজেদের নামের আগে পির, মুফতি, মাওলানা, আলহাজ, আল্লামা ইত্যাদি
টাইটেল লাগানো পির বা ওয়াজকারী যেমন.“দাওয়াতে ঈমানী বাংলাদেশ” নামের একটি সংগঠনের
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পির মুফতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরী,যিনি নরসিংদীর রায়পুরার
মাস্তানগঞ্জ নামক একটি মহল্লায় খাজা বাবার দরবার নাম দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি আস্তানা
গড়ে তুলেছেন তাহেরী, তার ওয়াজ মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মেয়েলি সাজে সজ্জিত হয়ে
হেলে দুলে বিভিন্ন হিন্দি গানের সুরে ও তালে তালে মাশআল্লাহ যিকির করা।
তাহেরী
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন-
(১) তাহেরীর
বিভিন্ন স্টাইলের যিকির দেখতে এদের উপর ক্লিক করুন। (সামা যিকির)
এরকম চরমোনাই পির বা তার প্রধান মুরিদরা যখন
যিকিরে মশগুল হয় তখন দেখা যায় এক শ্রেণির আশেক বাঁশ বেয়ে উপরে ওঠে। আবার কেউ স্টেজে
উঠে দাপাদাপি, লাফালাফি শুরু করে দেয়। অনেকে বুক চাপড়ায়ে চিল্লাতে চিল্লাতে বেহুঁশ
হয়ে যায়। চরমোনাই পিরের যিকিরের মূল উপপাদ্য বিষয় হচ্ছে “ইল্লাল্লাহ” যিকির। ইল্লাল্লাহ
যিকির জায়েজ কি নাজায়েজ তা বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো।
(২) চরমোনাই
পিরের এশকে যিকির দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৩) উজানী
পিরের এশকে যিকির দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৪) মাইজভান্ডারীর
যিকির দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৫) আটরশি
পিরের যিকির দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৬) বিভিন্ন
তরীকার যিকির দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
এখানে বাংলাদেশী কয়েকজন পিরের তরীকার যিকিরের
নমূনা দেয়া হয়েছে মাত্র। এছাড়াও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরো অসংখ্য পির বা
তরীকাপন্থী মুসলমান আছে যারা অনুরুপভাবে যিকির করে থাকে।
সম্মানিত মুসলমান ভাইয়েরা-উল্লেখিত ভিডিও ও আলোচানার
প্রেক্ষিতে আমরা জানতে পারলাম যে, যিকির শুধু আল্লাহু আর ইল্লাল্লাহ শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
উল্লেখিত যিকিরে ইশকে
দিওয়ানা পির ও মুরিদরা কোরআন ও হাদিস হতে পাক্কা
দলীল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় যে, এভাবে যিকির করা যাবে। দলীলগুলো পরে পর্যালোচনা করছি। তার
আগে জেনে নেই ইশক
কাকে বলে?
১. হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. তাঁর ‘লামআ’ত’ নামক
কিতাবে ইশকের হাকিকত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন,
“খাঁটি মুমিন বান্দা, যার দৃঢ় বিশ্বাস হল,
আল্লাহ তাআলা যাবতীয় পূর্ণাঙ্গ গুণে গুণান্বিত; তাই সে তাঁর জিকির ও স্মরণের ওপর নিজের
কামালাত বা পূর্ণতাকে মৌকুফ মনে করে এবং সর্বদা সে আল্লাহর নামের জিকির (স্মরণ) করে
তার সমস্ত নেয়ামত ও সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করে। এবং এসব স্থায়ীভাবে সার্বক্ষণিক করার কারণে
তার হৃদয়ে চাঞ্চল্য, অস্থিরতা ও ছটফটানির এক আবেগময় অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে
তা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে এসে সে আল্লাহ তাআলার বরকতময় নাম পর্যন্ত মুখে
উচ্চারণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। মনে হয় যেন তার প্রাণ-বায়ু এক্ষুণি বের হয়ে যাবে। কবির
ভাষায়,
و
يدركني
في
ذكرها
قشعر
ير
لها
بين
جلدي
والعظام
دبيبُ
“আমার প্রিয়তমাকে স্মরণ করার সময় আমার মাঝে
এক ধরণের কম্পন সৃষ্টি হয় এবং আমার চামড়ার অস্থির মাঝে মৃদু স্পন্দন অনুভুত হতে থাকে।’
মোটকথা, অন্তরে যখন এমন অবস্থা স্থায়ী হয়ে
যায় তখন তাতে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এক বিশেষ বস্তু প্রবিষ্ট হয়ে তাকে বিশেষ রঙে রাঙিয়ে
তোলে। এটিকেই ইশক বলে আখ্যাায়িত করা হয়।
২. শায়েখ আবুল কাসেম জুনাইদ বাগদাদী রহ. বর্ণনায়,
العشق
إلفة
رحمانية
وإلهام
شوقى
أوجبهما
كرم
الإله
على
كل
ذى
روح
لتحصل
به
اللذة
العظمى
التى
لا
يقدر
على
مثلها
إلا
بتلك
الإلفة
وهى
موجودة
فى
الأنفس
بقدر
مراتبها
عند
أربابها،
فما
أحد
إلا
عاشق
لأمر
يستدل
به
على
قدر
طبقته
من
الخلق،
ولأجل
ذلك
كان
أشرف
المراتب
فى
الدنيا
مراتب
الذين
زهدوا
فيها
مع
كونها
معاينة،
ومالوا
إلى
الأخرى
مع
كونه
مخبرا
لهم
عنها
بصورة
اللفظ
“ইশক হল, পরম দয়াময় আল্লাহ পাকের রহমানী ভালবাসা।
ইলহামী আসক্তি। যা তিনি প্রতিটি প্রাণীর মাঝে অবধারিত করে দিয়েছেন। যাতে করে অপরিমেয়
মজা অনুভূব করা যায়, যা তারা অন্য কিছুর মাধ্যমে অর্জণ করতে সক্ষম হত না। আর এটি অন্তরে
প্রোথিত। প্রেমিকগণের কাছে এর স্তর ও শ্রেণি বিন্যাসিত রয়েছে। তাই এমন কোনো ব্যক্তি
নেই যে কেউ না কারও প্রতি আশেক নয়। তবে তার মান নির্নয় হয় স্বীয় মাশুকের স্তর অনুসারে।
তাই যে ব্যক্তি দুনিয়ার সব কিছু ছেড়ে শুধু আখেরাতের প্রতি আশেক হবে সে সর্বশ্রেষ্ঠ
এবং মর্যাদাবান বলে গণ্য হবে।’
৩. ইমামগাজালী রহ. বলেন,
“মানুষের করণীয় হল, সে ইশকের সাগরে ঝাঁপ দেবে।
সাগরের ঢেউ যদি তাকে ধাক্কিয়ে তীরে পৌঁছিয়ে দেয়
فَقَدْ
فَازَ
فَوْزًا
عَظِيمًا
তাহলে সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। আর যদি সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ তাকে গভীর তলদেশে
ডুবিয়ে দেয় فَقَدْ
وَقَعَ
أَجْرُهُ
عَلَى
اللَّهِ
তাহলে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়।। ইশক হৃদয়ে প্রবেশ করলে রক্তাক্ত করে
ছাড়ে। নয়ন যুগলে স্বর্শ করলে তাকে সমুদ্র বানিয়ে দেয়। কাপড়ে লাগলে তাকে ছিড়ে ফেলে।
আর প্রাণে প্রবেশ করলে তাকে মাটি বানিয়ে দেয়। এবং সম্পদে প্রবেশ করলে তাকে বমি বানিয়ে
দেয়। মূলত: ইশক হচ্ছে জুনুনে ইলাহি তথা আল্লাহর জন্য পাগলামী।
৪. হযরত শিবলী রহ. বলেন,
العشق
نار
يقع
في
القلب
فأحرقت
ماسوى
المحبوب
‘ইশক হল এক ধরণের আগুন। তা কারো অন্তরে প্রবেশ
করলে তার মাশুক ছাড়া সব কিছু পুড়ে ছারখার করে দেয়।’
৫. আল্লামা রুমী রহ. বলেন,
عشق
و عاشق محوگردد ز ریں مقا م
خود
ہماں
معشوق
مانندوالسلام
“আশেক ইশকের মাঝে বিলীন হয়ে যায় আর ইশক বিলীন
হয়ে যায় মাশুকের মাঝে। এক্ষেত্রে কেবল মাশুকই টিকে থাকে।’
৬. হযরত আলী হিজবিরী রহ. বলেন,
عشق
ازمواهب
است
نہ
از
مكاسب
“ইশক হচ্ছে একমাত্র আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত।
তা কখনও নিজ বাহু বলে বা প্রচেষ্টায় উপার্জন করা যায় না।’
কবি মির্জা গালিব রহ. উক্ত কথা এভাবে প্রকাশ
করেছেন,
عشق
پر
زور
نہیں
ہے
یہ
وہ
آتش
غالبؔ
کہ
لگائے
نہ لگے اور بجھائے نہ بنے
“ইশকের প্রতি জোর-জবরদস্তি চলে না। এটি সেই
প্রবল শক্তিসম্পন্ন অনল শিখা। যা কিছুতে লাগাতে গেলে যেমন লাগে না, তেমনি তা নেভাতে
গেলেও নিভে না।’
৭. বান্দা নেওয়াজ গেছুদারাছ রহ. বলেন, ‘ইশক হচ্ছে আল্লাহপ্রদত্ত এক
বিশেষ বস্তু এবং তাঁর সবিশেষ পুরস্কার।’
عشق با زی اختيار ما نہ بود
ہر كہ ایں اخواہند بر سرمی نہند
“ইশক-আশেকি কারও এখতিয়ারাধীন বস্তু নয়। যে
এতে পতিত হয়েছে তাকে সে মাথায় তুলে নিয়েছে।’
৮. হযরত মাসউদ বেগ চিশতি নিজামী রহ. ইশকের ব্যাখ্যা এভাবে প্রদান করেছেন,
“হে প্রিয়! ইশক যখন হৃদয়ে হানা দেয় তখন তাকে
রক্তাক্ত বানিয়ে দেয়। যখন আঁখি যুগলে প্রবেশ করে তখন তাকে সিন্ধু-সাগরে পরিণত করে।
কাপড়ে লাগলে ছিঁড়ে ফেলে। অন্তরে প্রবেশ করলে মাটি বানিয়ে দেয়। আর সম্পদে ঢুকে পড়লে
তাকে বমি বানিয়ে ছাড়ে। প্রকৃত পক্ষে ইশক হচ্ছে এক ধরণের ‘জুনুনে ইলাহি’।’
জনৈক কবি বলেন,
كشته تیغ عشق را غسل و چه حاجت است
زا ںكہ شہید شوق توباركفن نمی شود
“ইশকের তলোয়ারের আঘাতে শহিদ ব্যক্তির জন্য
গোসল ও নতুন কাফনের প্রয়োজন নেই। কেননা, এই পথে জীবন দানকরী শহিদ কাফনের বোঝা বরদাশত
করে না।’
৯. একবার জুন্নুন মিসরী রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘প্রকৃত এবং খাঁটি আশেক
কে?’ তিনি জবাবে বলেন,
إذا رأيت رجلا خزين الوجه مفقودالقلب مغلوب
العقل،. شديد البكاء ، طالب الموت و الفناء ومع ذلك يراعي الادب و يَتَّفِقُ الأَوْقَات
فهو عاشق صادق
“যখন তুমি এমন ব্যক্তিকে দেখবে যার চেহারা
উদাসীন, অন্তর ভঙ্গুর, বিবেক জ্ঞানশূন্য , সদা ক্রন্দরত, মৃত্যু কামনাকরী। এত কিছুর
পরও সে সভ্য রুচিশীল, সময়ের অনুগামী তাহলে বুঝে নিবে সেই বক্তিই নিরেট ‘আশেক’।
১০. মাখদুম শরফুদ্দিন আহমাদ ইয়াহইয়া রহ.-কে কেউ একজন কিজ্ঞেস করল,
‘হযরত! ইশক কী জিনিস?’
তিনি বলেন, ‘মহব্বতের চরম আধিক্যকে ইশক বলে।
অর্থাৎ মহব্বতের চূড়ান্ত স্তর অতিক্রম করলে ইশকের জগতে পদার্পন করা যায়।’
অন্য একজন জানতে চাইল, ‘হুজুর এশকের রং কেমন?’
উত্তর দেন, ‘গোটা জগৎ ইশক থেকে রং ধরে নিয়ে
নিজের রূপ ধারণ করেছে।’ অর্থাৎ গোটা জগতটাই ইশকের রঙে রঙিন। এরপর তিনি নিচের কবিতাগুলো
আবৃত্তি করেন,
عشق ام كہ دردوكون ومكانم پديد نيست
عنقائےمغربم كہ نشانم پديد نيست
با آبرو وبہ غمزده جہا ں صيدكرده ام
منكرمداں كہ تيركمانم پديد نيست
چوں آفتاب دررخ ہر ذره ظاهرم
ازغايت ظهورعيانم پديد نيست
گويم بهر زبان وبهرگوش بشنوم
ايں طرفہ تركہ گوش وزبانم پديد نيست
چوں ہرچہ ہست درہمہ عالم ہمہ مانم
مانند در دو عالم از انم پديد نيست
“আমি হলাম সেই ইশক, যা উভয় জাহানে প্রকাশিত
নয়। আমি গধুলিলগ্নের (রূপকথার) আনকা পাখি, যার কোনো আকৃতি নেই। আমার নাজ ও রূপের ঝলকে
উভয় জগতকে আমি শিকার করে নিয়েছি। হে আমার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী! একথা কখনই মনে কর
না যে, তীর ধনুক কখনই প্রকাশিতব্য নয়। (প্রকৃত পক্ষে) আমি প্রতিটি অনু পরমানুতে সূর্যের
মত উদ্ভাসিত। আমি চূড়ান্তভাবে প্রতীয়মান তবে প্রকাশিত নয়। আমি সব ভাষাতেই কথা বলি সব
ভাষাতেই কথা শুনি, তবে আজব ব্যাপার হল, আমার যবান এবং কান প্রকাশ্য নয়। গোটা সৃষ্টিজগতে
যা কিছু আছে আমি সবকিছুর সমষ্টি। উভয় জাহানের তামাম কিছু আমাকে ঘিরেই, কিন্তু প্রকাশমান
নয়।’
এরপর তিনি বলেন,
“অনেকে বলে, ইশক মানে আগুন। কিন্তু তাই যদি
হয় তাহলে আশেকের চেহারা অশ্রু-পানি দ্বারা সিক্ত থাকে কিভাবে? কেউ কেউ বলে, ইশকের অপর
নাম পানি। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে হাজার হাজার
আশেকের হৃদয় এই ইশকের কারণে শুস্ক কেন? কেন জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যায় তাদের কলিজা? দগ্ধ
কেন হয় তাদের অন্তর? অনেকে মনে করে ইশক এক ধরণের গরল বিষ । কিন্তু আমি জানতে চাই তাই
যদি হয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ আশেক এমন প্রাণোচ্ছল সজীব ও জীবন্ত কেন? যারা বলে ইশক মানে
কষ্ট। তাদের কাছে জানতে চাইব, তাহলে হাজার হাজার মানুষ প্রাণের বিনিময়ে কেন তা খরিদ
করে? কেউ কেউ বলে, ইশক মানে প্রশান্তি। তাদের বলব, তাহলে এর তীব্র দহনে মানুষ দাহ্য
হয় কেন? মোট কথা, সকলেই নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ইশকের সংজ্ঞা প্রদানের চেষ্টা করেছে।
তবে প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ভাষা দিয়ে এর সংজ্ঞা যা ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। এটা
কেবলই হৃদয় দিয়ে অনুভবের বিষয়।
তরিকতপন্থী মাশায়েখগণ এব্যাপারে একমত যে, ইশক
হৃদয়কে প্রিয়তমের এই বাণী পৌছিয়ে দেয়, তুমি কখনও স্থির ও প্রশান্ত হয়ো না। আর প্রাণকে
এই পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয় যে, তুমি আনন্দ উপভোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও। সম্পর্ক ছিন্ন
করে দাও। মাথাকে বলে, তুমি শান্তি থেকে দূরে থাক। চেহারাকে বলে, তোমার আকৃতি-অবয়ব মলিত
ও বিবর্ণ করে নাও। শরীরকে বলে, তোমার শক্তিকে ছুটি দিয়ে দাও। চক্ষুকে বলে, তুমি অশ্রু
বিসর্জন দিতে থাক। আর অবস্থাকে বলে, তুমি অন্ধকার হয়ে যাও। জিহ্বাকে ধ্বংস করে দাও।
বন্ধু মহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও। উভয় জাহানকে তালাক দাও এবং সব কিছু থেকে বিমুখ হয়ে
যাও।
(১১) কবির দৃষ্টিতে ইশক ওই শক্তি যা সিনাই
পর্বতকে আভ্যন্তরিন জ্যোতি দান করে। তবে সে জন্য প্রয়োজন আল্লাহওয়ালার অন্তর থাকা।
ইশক জ্ঞানীদেরকে মুজিজা স্বাদৃশ শক্তি ও যোগ্যতা দান করে। ইশকের শক্তির সামনে সব কিছু
মাথা নুয়ে দেয়। এমন মনে করবেন পৃথীবরি সমস্ত কিছুই তিতা, তবে একমাত্র মিষ্টি বস্তু
হচ্ছে ইশক। ইশকের আগুনেই আমাদের চিন্তা প্রখর হয়। জীবন বিসর্জন দেয়া সম্ভব হয়। মানুষ
ও প্রাণী সবার জন্যই ইশক যথেষ্ট। যদি সত্য জানতে চাও, তাহলে উভয় জাহানের জন্য একমাত্র
ইশকই সব কিছু। নিচের কবিতাগুলো একটু আবৃত্তি করে অপার্থিব মিষ্টতা অনুভব করুন,
عشق صیقل می زند فرهنگ را
جوهر آئینه بخشد سنگ را
اهل دل را سینهٔ سینا دهد
با هنرمندان ید بیضا دهد
پیش او هر ممکن و موجود مات
جمله عالم تلخ و او شاخ نبات
گرمی افکار ما از نار اوست
آفریدن جان دمیدن کار اوست
عشق مور و مرغ و آدم را بس است
عشق تنها هر دو عالم را بس است
“ইশক জ্ঞানীদের আলোকিত করে দেয়। আর পাথরকে
আয়না বানানোর যোগ্যতা দান করে। দিলওয়ালাদের সিনাই পর্বতের মত আলোকিত অন্তর দান করে।
আশেকদের শুভ্র হাতের ক্ষমতার মত বগলে হাত দিলে তা সাদা হয়ে যাওয়ার শক্তি দান করে। তার
সামনে সব কিছু ‘ফানা’ হয়ে যায়। গোটা সৃষ্টিজগত তিক্ত আর সে মিছরির টুকরো। তার আগুন
থেকেই সৃষ্ট হয় আমাদের চিন্তার উত্তাপ। প্রাণ সৃষ্টি করাই তার কাজ। পিপড়া, পক্ষীকুল
আর মানুষের জন্য ইশকই যথেষ্ট। বরং উভয় জাহানের জন্যই শুধু ইশকই যথেষ্ট।’
১২. এই ফকিরের মতে ইশক হচ্ছে, সেই জজবা তথা আকর্ষণ।
যার কাছে পরাজিত হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। এর শুরুটাই যখন জীবন বিসর্জন দিতে উদ্বুদ্ধ
হওয়া তাহলে এর শেষ বা চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে নিজেই কল্পনা করুন। কেউ যদি ইশকের দর্শণ
করতে চান তাহলে ‘ব্যথিত হৃয়ের’ আশেকদের তালাশ করুন। তাদের যেখানেই পাবেন সেখানেই ইশকের
দর্শণ লাভ হবে। ইরাকী কত সুন্দর করে বলেছেন,
بعالم هركجاكہ درد دل بود
بہم كردندوعشقش نام كردند
“ব্যাথিত হৃদয়ের মানুষগুলো পৃথিবীর যেখানেই
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সেখান তেকে তাদের একত্রিত করে তার নামকরণ করা হয়েছে ‘ইশক’।’
আর কবি হালী এই ভাবটাকে এভাবে প্রকাশ করেছেন,
عشق سنتے تھے جسے ہم وہ یہی ہے شاید
خود بخود دل میں ہے اک شخص سمایا جاتا
“যাকে ইশক বলা হয় শোনা যেত, হয়ত এটিই নিজে
নিজে হৃদয়ে অবস্থিত এক ব্যক্তি।’
সুপ্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা- ইশকের যে দলীলগুলো দেয়া
হয়েছে সবগুলো দলীলই কিন্তু তরীকা বা মারেফতপন্থী লোকের নিজস্ব মতামত ও কবির ভাষা। এথানে
কোরআন-হাদিস থেকে কোনো দলীল নেই। মূলত পিরপন্থীরা কোরআন- হাদিস বাদ দিয়ে তাদের দাদার
দাদা বা মুরুব্বীদের দলীল দিয়েই অন্যদের মগজ ধোলাই করে থাকে।
প্রখ্যাত এইসব আলেমদের কোরআন ও হাদিস ব্যতীত
নিজম্ব মতামত ও কবির ভাষায় ইশকের দলীল দেওয়াতে তাদের নাতীরা আজ ঐ দলীলের প্রেক্ষিতে
মুসলিম সমাজে বিদআতী যিকিরের প্রচলন করেছে। বিদআতী পির-অলি ও আলেমগণ বলছে যে, যিকিরের
সময় ঝাকুনি, কাঁপুনি, লাফালাফি, চিল্লাচিল্লি তথা জিনে ধরা রোগীর মতো করতেই পারে। এখানে
একটা জিনিস পরিস্কার যে, যিনি যিকিরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি কিন্তু এরকম করছে না।
আপনারা ভিডিওতে খেয়াল করবেন, যারা লাফালাফি করছে তারা স্বল্প শিক্ষিত ও নিম্ন শ্রেণি আয়ের কিছু সংখ্যক লোক।
রাসুল সাঃ ও সাহাবীগণ কি কম আশেক ছিলেন? তাদের লাফালাফি, ঝাপাঝাপি,
কাঁপুনির কথা তো হাদিসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
যিকির সংক্রান্ত যেসব দলীল পেশ করা হয় তা নিম্নরুপঃ
(১) মহান আল্লাহ বলেন,
“অতএব তোমরা আমাকে
স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং আমার
প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা আল-বাকারাহ্: ১৫২)
(২) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে
স্মরণ কর”। ( সূরা আল-আহযাব: ৪১)
(৩) “নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) পুরুষ ও
আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত
নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ
ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী,
যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) নারী, আল্লাহকে অধিক
স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান
রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)।
(৪) “আর আপনি আপনার রব্বকে স্মরণ করুন মনে মনে,
মিনতি ও ভীতিসহকারে, অনুচ্চস্বরে; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন
না।” (সূরা আল-আ‘রাফ: ২০৫)
(৫) কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) আল্লাহকে
অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।-সূরা আনফাল : ৪৫
(৬) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর
প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই
অন্তরসমূহ শান্তি পায়।-সূরা রা’দ : ২৮
(৭) যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে
আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে।-সূরা আনফাল : ২
(৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত
হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে।-সূরা হজ্ব : ৩৫
(৯) অন্য আয়াতে বলেন, (তরজমা) আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।-সূরা
আনকাবুত : ৪৫
(১০) মুমিনদের সর্ম্পকে বলেছেন, যারা আল্লাহ তাআলাকে
স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির
বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।-সূরা আলে ইমরান : ১৯৯
(১১) মুনাফিকদের বিষয়ে বলেছেন, যখন তারা নামাযে
দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ
করে।-সূরা নিসা : ১৪২
(১২) আরো বলেন, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের আশা রাখে
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।-সূরা
আহযাব : ২০
(১৩) অন্য আয়াতে বলেন, যে তার পালনকর্তার নাম স্মরণ
করে অতপর নামায আদায় করে।-সূরা আ’লা : ১৫
(১৪) ‘যখন হজের যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি সমাপ্ত
করে সারবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে;
বরং তার চেয়েও বেশী স্মরণ করবে। (সূরা বাকারা : ২০০)।
(১৫) আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে আমার স্মরণ থেকে
মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত
করব।’ (সূরা ত্বহা : ১২৪)।
(১৬) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময়
আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর
সে-ই হয় তার সহচর।’ (সূরা জুখরুফ : ৩৬)।
(১৭)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমাদের ধন-স¤পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর
স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত।’
(সূরা মুনাফিকূন : ৯)।
(১) তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র (স্মরণ) করে, আর যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র করে
না— তারা যেন জীবিত আর মৃত”। (বুখারী, ফাতহুল
বারীসহ ১১/২০৮, নং ৬৪০৭; মুসলিম, ১/৫৩৯, নং ৭৭৯, আর তার শব্দ হচ্ছে,
«مَثَلُ الْبَيْتِ
الَّذِي
يُذْكَرُ
اللهُ
فِيهِ،
وَالْبَيْتِ
الَّذِي
لَا
يُذْكَرُ
اللهُ
فِيهِ،
مَثَلُ
الْحَيِّ
وَالْمَيِّتِ»
“যে ঘরে আল্লাহ্র যিক্র হয়, আর যে ঘরে আল্লাহ্র যিক্র
হয় না— তার দৃষ্টান্ত যেন জীবিত আর মৃত।”
(২) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে তা জানাবো না-আমলের মধ্যে যা সর্বোত্তম, তোমাদের মালিক
(আল্লাহ্র) কাছে যা অত্যন্ত পবিত্র, তোমাদের জন্য যা অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, (আল্লাহ্র
পথে) সোনা-রূপা ব্যয় করার তুলনায় যা তোমাদের জন্য উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের
মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা এবং তারা তোমাদের হত্যা করার চাইতেও অধিকতর শ্রেষ্ঠ?” সাহাবীগণ
বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ। তিনি বললেন, “আল্লাহ্ তা‘আলার যিক্র” (তিরমিযী ৫/৪৫৯, নং ৩৩৭৭;
ইবন মাজাহ্ ২/১৬৪৫, নং ৩৭৯০; আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্ ২/৩১৬; সহীহ তিরমিযী ৩/১৩৯।)
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেরূপ ধারণা করে, আমাকে
সে তদ্রূপই পাবে; আর যখন সে আমাকে স্মরণ করে, তখন আমি তার সাথে থাকি। সুতরাং যদি সে
মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও আমার মনে তাকে স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো সমাবেশে আমাকে
স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে এর চাইতে উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি। আর সে যদি আমার দিকে
এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী হয়, তাহলে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ নিকটবর্তী হই। সে এক
হাত পরিমাণ নিকটবর্তী হলে আমি তার দিকে এক বাহু পরিমাণ নিকটবর্তী হই। আর সে যদি আমার
দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দ্রুতবেগে যাই। (বুখারী ৮/১৭১, নং ৭৪০৫; মুসলিম ৪/২০৬১,
নং ২৬৭৫। তবে শব্দটি বুখারীর।)
(৪) আব্দুল্লাহ ইবন বুসর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! ইসলামের বিধিবিধান আমার জন্য বেশি
হয়ে গেছে। কাজেই আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ের খবর দিন, যা আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরব। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা জিহ্বা যেনো সর্বক্ষণ আল্লাহ্র যিক্রে
সজীব থাকে”। (তিরমিযী ৫/৪৫৮, নং ৩৩৭৫; ইবন মাজাহ্ ২/১২৪৬, নং ৩৭৯৩। আর শাইখ আলবানী
একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ আত-তিরমিযী, ৩/১৩৯; সহীহ ইবন মাজাহ্ ২/৩১৭।)
(৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কিতাব (কুরআন) থেকে একটি হরফ পাঠ করে, সে তার বিনিময়ে
একটি সওয়াব পায়; আর একটি সওয়াব হবে দশটি সওয়াবের সমান। আমি আলিফ, লাম ও মীমকে একটি
হরফ বলছি না। বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ এবং ‘মীম’ একটি হরফ”। (তিরমিযী ৫/১৭৫, নং ২৯১০। শাইখ আলবানী
একে সহীহ বলেছেন; দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/৯; সহীহ জামে সগীর-৫/৩৪০।)
(৬) উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একবার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। আমরা তখন সুফ্ফায় (মসজিদে নববীর
আঙ্গিনায়) অবস্থান করছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে প্রতিদিন সকালে
বুতহান বা আকীক উপত্যকায় গিয়ে সেখান থেকে কোনো প্রকার পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন
না করে উঁচু কুঁজবিশিষ্ট দু’টো উষ্ট্রী নিয়ে আসতে পছন্দ করে”? আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র
রাসূল! আমরা তা পছন্দ করি। তিনি বললেন: “তোমাদের কেউ কি এরূপ করতে পার না যে, সকালে
মসজিদে গিয়ে মহান আল্লাহ্র কিতাব থেকে দুটো আয়াত জানবে অথবা পড়বে; এটা তার জন্য দু’টো
উষ্ট্রীর তুলনায় উত্তম। আর তিনটি আয়াত তিনটি উষ্ট্রী থেকে উত্তম, চারটি আয়াত চারটি
উষ্ট্রী থেকে উত্তম। আর (শুধু উষ্ট্রীই নয়, বরং একইসাথে) সমসংখ্যক উট লাভ করা থেকেও
তা উত্তম হবে।” (মুসলিম, ১/৫৫৩; নং ৮০৩।)
(৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন: “যে ব্যক্তি এমন কোনো বৈঠকে (মজলিসে) বসেছে যেখানে সে আল্লাহ্র যিক্র করে
নি, তার সে বসাই আল্লাহ্র নিকট থেকে তার জন্য আফসোস ও নৈরাশ্যজনক হবে। আর যে ব্যক্তি
এমন কোনো শয়নে শুয়েছে যেখানে সে আল্লাহ্র যিক্র করে নি, তার সে শোয়াই আল্লাহ্র নিকট
থেকে তার জন্য আফসোস ও নৈরাশ্যজনক হবে।” (আবূ দাউদ ৪/২৬৪, নং ৪৮৫৬ ও অন্যান্য। দেখুন,
সহীহুল জামে‘ ৫/৩৪২।)
(৮) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন: “যদি কোনো দল কোনো বৈঠকে বসে আল্লাহ্র যিক্র না করে এবং তাদের নবীর ওপর
দরূদও পাঠ না করে, তাহলে তাদের সেই বৈঠক তাদের জন্য কমতি ও আফসোসের কারণ হবে। আল্লাহ
ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, অথবা তিনি চাইলে তাদের ক্ষমা করবেন।” ( তিরমিযী,
৫/৪৬১, নং ৩৩৮০। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৪০।)
(৯) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন : “যদি কোনো একদল লোক এমন কোনো বৈঠক থেকে উঠল, যেখানে তারা আল্লাহ্র নাম
স্মরণ করে নি, তবে তারা যেন গাধার লাশের কাছ থেকে উঠে আসল। আর এরূপ মজলিস তাদের জন্য
আফসোসের কারণ হবে”। (আবূ দাউদ ৪/২৬৪, নং ৪৮৫৫; আহমদ
২/৩৮৯ নং ১০৬৮০। আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৫/১৭৬।)
সুধী পাঠকবৃন্দ- উল্লেখিত দলীলগুলো ছাড়াও জাল-জইফ হাদিস হতে আরো অনেক দলীল আছে। পির-অলি বা অনুরুপ আলেমগণ যারা সবসময়
যিকিরের পক্ষে তারা যিকিরকে জায়েজ করতে উপরোল্লিখিত দলীলগুলো পেশ করে থাকেন। এখানে
একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো আমরা ভিডিওগুলোতে যিকিরের যে পদ্ধতি দেখেছি তা কিন্তু উল্লেখিত
দলীলগুলোতে নেই তথা কোরআন-হাদিসে নেই। জাল-জইফ হাদিসেও অনুরুপ যিকির করার পদ্ধতি বর্ণিত
নেই। তাদের দলীল আছে শুধুই ইশক বিষয়ে আলোচিত পূর্ব পুরুষদের নিকট থেকে। অথচ তারা নয়
কোনো সাহাবী, নয় কোনো তাবেই বা তাবে-তাবেই।
ভন্ডরা যেভাবে যিকির করে তা সম্পূর্ণ নতুন
উদ্ভাবিত একটি পদ্ধতি। হাদিসের ভাষায় যাকে বলে বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতীর স্থান হবে
জাহান্নামে।
মূল কথা হলো বিদআতী পির-অলী আর আলেমগণ যিকিরের
সংজ্ঞাই জানে না। অথবা জানলেও তারা সঠিকটা মুরিদের সামনে তুলে ধরে না। তারা যে পদ্ধতিতে
যিকির করে তা চমৎকার একটা মজলিশ। যে মজলিশে শযতানও নাচে, মুরিদও নাচে। আসলে এভাবে যিকির
না করলে লোকজন তাদের দিকে আকৃষ্টও হবে না বা দরবার মুখীও হবে না। মূলত তাদের ধর্ম ব্যবসায়
ভাটা পড়বে বিধায় কোরআন ও সহিহ হাদিস মোতাবেক
যিকির করে না।
আসুন যিকিরের সংজ্ঞা ও যিকির করার সহিহ নিয়ম জেনে নেই।
যিকিরঃ একজন মুমিনের সকল কাজকর্ম
যা সে তার রবকে কেন্দ্র করে সম্পন্ন করে থাকে তাই যিকির । কোরআন ও হাদিসে যিকিরকে এভাবে ব্যাপক অর্থে দেখানো হয়েছে। যিকির অর্থ স্মরণ করা বা
করানো। আল্লাহর স্মরণ অথবা যিকির মুসলমানদের জন্য
শক্তির একটি উৎস। যিকিরের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীর ও মনকে যেমন প্রফুল্ল রাখতে পারি
তেমনি মহান আল্লাহর সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, যেমনটি আমাদের রব চেয়ে থাকেন।
আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে আল্লাহকে
স্মরণ করি বা যিকির করি। যেমন: ইমান আনা, সলাত আদায় করা, কোরআন তিলোয়াত করা, সিয়াম
পালন করা, হজ্জ আদায়, হালাল-হারাম বেছে চলা, যাকাত আদায়, সকল প্রকার দোয়া- দরুদ পড়া
ইত্যাদি তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ
তায়ালার আদেশ নিষেধমুলক সকল প্রকার ইবাদত যিকিরের মধে গণ্য। অর্থাৎ ঘুম থেকে ওঠা আবার
ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সকল কাজে কর্মে বা সর্বাবস্থায় যে যেভাবে আল্লাহকে ডেকে থাকে
বা স্মরণ করে থাকে তাই যিকির।
এগুলো ছাড়াও এর অতিরিক্ত
তাকবির -আল্ল-হু আকবার, তাসবিহ-সুবহা-নাল্ল-হ এবং তাহলীল- লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ ইত্যাদিও
যিকিরের মধ্যে গণ্য।
যিকির হলো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মূল নিদর্শন। যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করলো
না সে তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলো না। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানীত সেই ব্যক্তি যার
জিহবা সর্বদা আল্লাহর যিকিরে সিক্ত থাকে।
উম্মুল মুমিনিন আয়িশা
(রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) সর্বদা আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকতেন। (সহীহ বুখারী,হা/৩৭৩,
সহীহ মুসলিম, হা/২২৭, সুনান ইবনু মাজাহ, হা/ ৩০২)।
সর্বদা আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকার অর্থ এই নয় যে, সর্বদা, মুখে তাসবীহ, তাহলীল, সলাত, ইবাদত ইত্যাদিতে
লিপ্ত থাকা। বরং এর অর্থ হলো, সকল কাজে আল্লাহকে স্মরণ রাখা। যেমন: দৈনন্দিন বিভিন্ন
কাজের বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দরুদ আছে, সেগুলো পাঠ করা।
প্রতিদিনের যিকিরের অন্যতম একটি উদারণ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত। মহান আল্লাহ
বলেন,
“আমার যিকিরের জন্য সলাত প্রতিষ্ঠা করো।” ( সুরা ত্বহা-আয়াত:১৪)।
আবু সাইদ খুদরী রা: বলেন, রাসুল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে উঠে তার স্ত্রীকে জাগাবে এবং দুজনেই দুরাকাত
তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করবে, আল্লাহর দরবারে তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীগণের
অন্তর্ভুক্ত হবেন। ( সুনান আবু দাউদ -১৪৫১)
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তাহাজ্জুদের সলাত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক যিকিরকারী হওয়ার মর্যাদা লাভ করতে পারি। সলাতে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের রবের সাথে কথা বলে থাকি।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সলাতে আমরা পাঁচ বার আল্লাহর নিকট মনের আবেগ উপস্থাপন করে নিজের
চাহিদা পূরণের সুযোগ পেয়ে থাকি।
সলাতের ন্যায় কোরআন তিলাওয়াত অন্যতম একটি যিকির। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমার প্রতি যিকির
নাযিল করেছি যেনো তুমি মানবজাতিকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণণা করে দাও তাদের ওপর যা নাযিল
হয়েছে তা”। ( সুরা আম্বিয়া, আয়াত:৫০)।
কোরআন ও সহীহ হাদিস হতে
যিকির করার দলীল
কোরআন হতে দলীল
দুনিয়াতে যিকির বা আল্লাহর স্মরণ হলো সবচেয়ে বড় ইবাদত। যে ব্যক্তি সব
সময় আল্লাহর যিকিরে নিয়োজিত থাকে, তার দ্বারা গোনাহ করা সম্ভব হয় না। আর কোনো কারণে
গোনাহ হয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর স্মরণ তাকে গোনাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকের অনেক জায়গায় যিকিরের নির্দেশ, নসিহত ও ফজিলত
বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলার সে সব নির্দেশ, নসিহত ও ফজিলতের কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা
হলো-
(১) অতঃপর তোমরা আমাকে স্মরণ
কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং আমার নেয়ামতে
অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
(২) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে
বেশি বেশি স্মরণ কর।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৪১)
(৩) “নিশ্চয়ই
আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার
নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও
ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী
পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী
(সংযমী) নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের
জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)
(৪)“হে নবি!
তোমার রবকে স্মরণ করো সকাল সাঁঝে মনে মনে কান্না জড়িত স্বরে ও ভীতি বিহবল চিত্তে এবং
উচ্চ আওয়াজের পরিবর্তে নিচু স্বরে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা গাফলতির মধ্যে
ডুবে আছে।’ (সুরা আ’রাফ : আয়াত ২০৫)।
উল্লেখিত আয়াতে কারীমার আলোকে বুঝায় যায়, আল্লাহ তাআলা বান্দাদের কাছ
থেকে সব সময় তার স্মরণ ও গুণগান পছন্দ করেন। যার কারণে তিনি তাদের গোনাহ মাফ এবং মহা
প্রতিদান দানের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে জারিকৃত বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে
তার স্মরণ এবং তাঁর সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল আদায় করার
তাওফিক দান করুন। জিকিরের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ ও সফলতা লাভের তাওফিক দান
করুন। আমিন।
সহীহ হাদিস হতে দলীল
(১) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র (স্মরণ) করে, আর
যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র করে না- তারা যেন জীবিত আর মৃত।” ( বুখারী, ফাতহুল বারীসহ
১১/২০৮, নং ৬৪০৭; মুসলিম, ১/৫৩৯, নং ৭৭৯, আর তার শব্দ হচ্ছে, «مَثَلُ
الْبَيْتِ
الَّذِي
يُذْكَرُ
اللهُ
فِيهِ،
وَالْبَيْتِ
الَّذِي
لَا
يُذْكَرُ
اللهُ
فِيهِ،
مَثَلُ
الْحَيِّ
وَالْمَيِّتِ»
“যে ঘরে আল্লাহ্র যিক্র হয়, আর যে ঘরে আল্লাহ্র যিক্র হয় না— তার দৃষ্টান্ত যেন
জীবিত আর মৃত।”)
(২) রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে তা জানাবো না-আমলের মধ্যে
যা সর্বোত্তম, তোমাদের মালিক (আল্লাহ্র) কাছে যা অত্যন্ত পবিত্র, তোমাদের জন্য যা
অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, (আল্লাহ্র পথে) সোনা-রূপা ব্যয় করার তুলনায় যা তোমাদের জন্য
উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা এবং তারা তোমাদের হত্যা
করার চাইতেও অধিকতর শ্রেষ্ঠ?” সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ। তিনি বললেন, “আল্লাহ্
তা‘আলার যিক্র।” (তিরমিযী ৫/৪৫৯, নং ৩৩৭৭; ইবন মাজাহ্ ২/১৬৪৫, নং ৩৭৯০; আরও দেখুন,
সহীহ ইবন মাজাহ্ ২/৩১৬; সহীহ তিরমিযী ৩/১৩৯)।
(৩) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমার বান্দা আমার সম্পর্কে
যেরূপ ধারণা করে, আমাকে সে তদ্রূপই পাবে; আর যখন সে আমাকে স্মরণ করে, তখন আমি তার সাথে
থাকি। সুতরাং যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও আমার মনে তাকে স্মরণ করি। আর যদি
সে কোনো সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে এর চাইতে উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি।
আর সে যদি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী হয়, তাহলে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ
নিকটবর্তী হই। সে এক হাত পরিমাণ নিকটবর্তী হলে আমি তার দিকে এক বাহু পরিমাণ নিকটবর্তী
হই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দ্রুতবেগে যাই।”( বুখারী ৮/১৭১, নং
৭৪০৫; মুসলিম ৪/২০৬১, নং ২৬৭৫। তবে শব্দটি বুখারীর )।
(৪)
আব্দুল্লাহ ইবন বুসর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহ্র
রাসূল! ইসলামের বিধিবিধান আমার জন্য বেশি হয়ে গেছে। কাজেই আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ের
খবর দিন, যা আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমরা জিহ্বা যেনো সর্বক্ষণ আল্লাহ্র যিক্রে সজীব থাকে।” ( তিরমিযী ৫/৪৫৮, নং ৩৩৭৫;
ইবন মাজাহ্ ২/১২৪৬, নং ৩৭৯৩। আর শাইখ আলবানী একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ আত-তিরমিযী,
৩/১৩৯; সহীহ ইবন মাজাহ্ ২/৩১৭)।
(৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কিতাব (কুরআন) থেকে একটি হরফ পাঠ
করে, সে তার বিনিময়ে একটি সওয়াব পায়; আর একটি সওয়াব হবে দশটি সওয়াবের সমান। আমি আলিফ,
লাম ও মীমকে একটি হরফ বলছি না। বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ এবং ‘মীম’ একটি
হরফ।” (তিরমিযী ৫/১৭৫, নং ২৯১০। শাইখ আলবানী একে সহীহ বলেছেন; দেখুন, সহীহুত তিরমিযী,
৩/৯; সহীহ জামে সগীর-৫/৩৪০) ।
(৬) উকবা
ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বের হলেন। আমরা তখন সুফ্ফায় (মসজিদে নববীর আঙ্গিনায়) অবস্থান করছিলাম। তিনি বললেন,
“তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে প্রতিদিন সকালে বুতহান বা আকীক উপত্যকায় গিয়ে সেখান থেকে
কোনো প্রকার পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে উঁচু কুঁজবিশিষ্ট দু’টো উষ্ট্রী নিয়ে
আসতে পছন্দ করে”? আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা তা পছন্দ করি। তিনি বললেন:
“তোমাদের কেউ কি এরূপ করতে পার না যে, সকালে মসজিদে গিয়ে মহান আল্লাহ্র কিতাব থেকে
দুটো আয়াত জানবে অথবা পড়বে; এটা তার জন্য দু’টো উষ্ট্রীর তুলনায় উত্তম। আর তিনটি আয়াত
তিনটি উষ্ট্রী থেকে উত্তম, চারটি আয়াত চারটি উষ্ট্রী থেকে উত্তম। আর (শুধু উষ্ট্রীই
নয়, বরং একইসাথে) সমসংখ্যক উট লাভ করা থেকেও তা উত্তম হবে।”
(মুসলিম,
১/৫৫৩; নং ৮০৩)।
(৭) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “যে ব্যক্তি এমন কোনো বৈঠকে (মজলিসে) বসেছে
যেখানে সে আল্লাহ্র যিক্র করে নি, তার সে বসাই আল্লাহ্র নিকট থেকে তার জন্য আফসোস
ও নৈরাশ্যজনক হবে। আর যে ব্যক্তি এমন কোনো শয়নে শুয়েছে যেখানে সে আল্লাহ্র যিক্র
করে নি, তার সে শোয়াই আল্লাহ্র নিকট থেকে তার জন্য আফসোস ও নৈরাশ্যজনক হবে।” (আবূ
দাউদ ৪/২৬৪, নং ৪৮৫৬ ও অন্যান্য। দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৫/৩৪২)।
(৮) রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “যদি কোনো দল কোনো বৈঠকে বসে আল্লাহ্র যিক্র
না করে এবং তাদের নবীর ওপর দরূদও পাঠ না করে, তাহলে তাদের সেই বৈঠক তাদের জন্য কমতি
ও আফসোসের কারণ হবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, অথবা তিনি চাইলে তাদের
ক্ষমা করবেন।” ( তিরমিযী, ৫/৪৬১, নং ৩৩৮০)।
(৯) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন : “যদি কোনো একদল লোক এমন কোনো বৈঠক থেকে উঠল, যেখানে তারা
আল্লাহ্র নাম স্মরণ করে নি, তবে তারা যেন গাধার লাশের কাছ থেকে উঠে আসল। আর এরূপ মজলিস
তাদের জন্য আফসোসের কারণ হবে”। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, অথবা তিনি
চাইলে তাদের ক্ষমা করবেন।” সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৪০।
(১০)
হাদিসে কুদসী-তে আছে আল্লাহ পাক বলেন, “আমি আমার বান্দার সঙ্গে ততোক্ষণ থাকি যতোক্ষণ
সে আমাকে স্মরণ করে”। (সহীহ বুখারী, হা/৬৮৫৬)।
যিকির শব্দটি কোরআনে বিভিন্ন
অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে;-
আল
কোরআন আল কারীম:- “ইন্না নাহনু নাজ্জালনা-য্যিকরা
ওয়া ইন্না লাহু লাহা ফিজু’না”
অর্থ:
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ (আল-কোরআন) অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক”। (১৫:৯)।
সুতরাং যিনি কোরআন তেলোয়াত করছেন তিনি মূলত যিকির করছেন।
২। উপদেশ / নসিহাত করা:-
“ফাজাক্কির
বিল কুরআনী মাইয়্যা খাফু ওয়া ইদ”
অর্থ:-
অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন। (৫০:৪৫)।
“
ওয়া যাক্কির ফাইন্নায্যিকরা তানফায়ুল মুমিনিনা”
অর্থ:
এবং আপনি নসিহাত করতে থাকুন, কেনন নসিহাত মুমিনদের
উপকারে আসবে”। (৫১:৫৫)।
সুতরাং প্রত্যেকটি কোরআনের মজলিস বা আসর বা ওয়াজ মাহফিল মূলত যিকিরের
মাহফিল।
৩। সালাত:
“মুমিনগণ,
জুমআর দিনে যখন সলাতের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরের (সলাতের) পানে ত্বরা
করো এবং বেচা কেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝো। (৬২:৯)
৪। আল্লাহর বিধান:-
“এবং
যে আমার স্মরণ থেকে / বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করবো।
(২০:১২৪)।
৫। স্মরণ করা বা উল্লেখ
করা:-
“এই
কিতাব মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকে
এক স্থানে আশ্রয় নিল।” (১৯-১৬)।
৬। মর্যাদা:-
“আমি
তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, এতে তোমাদের জন্য যিকির (মর্যাদা) রয়েছে।
তোমরা কি বোঝ না?” (২১:১০)
৭। আল্লাহকে ডাকা, স্মরণ
করা, যিকির করা:-
অতঃপর
যখন তোমরা সলাত সম্পন্ন করো, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ
করো। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন সলাত ঠিক করে পড়ো। নিশ্চয় সলাত মুসলমানদের উপর
ফরজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে”। (৪:১০৩)।
৮। “মুমিনগণ
তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (৩৩:৪১)।
৯।
“অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, (তাহলে) আমিও তোমাদের স্মরণ করবো, তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা
আদায় করো এবং কখনো তোমরা আমার অকৃতজ্ঞ হয়ো না”। (সুরা বাকারা: ১৫২)।
উপরোক্ত কোরআন ও সহীহ হাদিসের
আলোকে এটাই প্রমাণিত যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন দরবার, মাজার, ওয়াজ মাহফিল ও
মসজিদে যে হলকায়ে নামক আল্লাহ আল্লাহ বা ইল্লাল্লাহ যিকির করা হয় তা কোরআন ও সহীহ হাদিস
ভিত্তিক যিকির নয়। এটা সমাজে প্রচলিত একটা বিদআত। যা বর্জনীয়। যিকির হচ্ছে ইসলামের
সামগ্রিক বিষয়। যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে রাজি খুশি রাখতে পারি। আমাদের
দেশের কথিত জাকের পার্টি বা পির আউলিয়াদের দরবারে যে পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসারে তাদের
অনুসারী বা মুরিদগণ উচ্চ স্বরে বিভিন্ন ছন্দ মিলিয়ে যিকির করে তা কোরআন ও সহীহ হাদিস
বহির্ভুত। এটা সহজ সরল সাধারণ মুসলমানদেরকে ফাঁদে ফেলে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একটা
ধোকাবাজি কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
যিকির করার বিধান বা পদ্ধতি:
আমরা
আল্লাহ তায়ালাকে কিভাবে স্মরণ করবো বা কিভাবে যিকির করবো তা আল্লাহ তায়ালা কোরআনে আমাদেরকে
জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
কোরআন হতে-
কোরআন হতে-
(১) “হে নবি! তোমার রবকে
স্মরণ করো সকাল সাঁঝে মনে মনে কান্না জড়িত স্বরে ও ভীতি বিহবল চিত্তে এবং উচ্চ আওয়াজের
পরিবর্তে নিচু স্বরে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা গাফলতির মধ্যে ডুবে আছে।’
(সুরা আ’রাফ : আয়াত ২০৫)।
উক্ত আয়াতের মাধ্যমে যিকিরের
চারটি অবস্থা বুঝা যায়ঃ-
ক। যিকির মনের মধ্যে হতে হবে, মুখে যা উচ্চারিত হচ্ছে তা অন্তরে আন্দোলিত
আলোড়িত হতে হবে।
খ। বিনীতভাবে যিকির করতে হবে।
গ। মহান রবের মর্যাদার প্রতি পূর্ণ অনুভূতি ও আস্থা রেখে ভীত ও সন্ত্রস্থ
চিত্তে যিকির করতে হবে।
ঘ। যিকিরের শব্দ মুখে উচ্চারিত হবে তবে তা হবে অনুচ্চ শব্দে।
প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আমরা মুসলমান হয়ে কিভাবে কোরআন ও সহীহ হাদিস এর হুকুম বাদ দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে নিজেদের ইমান আমল সব কিছুই দুনিয়াতেই নষ্ট করে দিচ্ছি, সেদিকে আমরা খেয়াল করেও দেখছি না। আসলে শয়তান এখানেই সফল যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমানকে বিপদগামী করতে সক্ষম হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)। মূলত সঠিক আকিদাহ ভিত্তিক প্রচার প্রচারনা না থাকায় শয়তান এখানে সুযোগ পেয়েছে। আমাদের সমাজে দেখা যায়, মসজিদ, ওয়াজ মাহফিল কিংবা পির/অলি-আউলিয়াদের দরবারে সম্মিলিতভাবে উচ্চ স্বরে ছয় লতিফা বা বারো লতিফা তথা ক্বলবের যিকির করতে গিয়ে আল্লহু আল্লহু বলতে বলতে শেষে হু হু, আবার অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, কেহ স্টেজে উঠে মাইক ভাংচুর করে, কেহ পির বাবাকে ধরে চুমু খায়, কেহ খুঁটি বেয়ে উপরে উঠে, আবার অনেকে গানের সুরে যিকির করে থাকে যা সম্পূর্ণ বিদআত, বিদআত। এসব যিকির সম্পূর্ণ কোরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী। তওবা না করলে এসব কর্মকান্ডের মহানায়ক তথা যিকিরে নেতৃত্বদানকারী যেমন সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে তেমনি তার অন্ধ অনুসারীরাও তার পথেই হাঁটবে।
প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আমরা মুসলমান হয়ে কিভাবে কোরআন ও সহীহ হাদিস এর হুকুম বাদ দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে নিজেদের ইমান আমল সব কিছুই দুনিয়াতেই নষ্ট করে দিচ্ছি, সেদিকে আমরা খেয়াল করেও দেখছি না। আসলে শয়তান এখানেই সফল যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমানকে বিপদগামী করতে সক্ষম হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)। মূলত সঠিক আকিদাহ ভিত্তিক প্রচার প্রচারনা না থাকায় শয়তান এখানে সুযোগ পেয়েছে। আমাদের সমাজে দেখা যায়, মসজিদ, ওয়াজ মাহফিল কিংবা পির/অলি-আউলিয়াদের দরবারে সম্মিলিতভাবে উচ্চ স্বরে ছয় লতিফা বা বারো লতিফা তথা ক্বলবের যিকির করতে গিয়ে আল্লহু আল্লহু বলতে বলতে শেষে হু হু, আবার অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, কেহ স্টেজে উঠে মাইক ভাংচুর করে, কেহ পির বাবাকে ধরে চুমু খায়, কেহ খুঁটি বেয়ে উপরে উঠে, আবার অনেকে গানের সুরে যিকির করে থাকে যা সম্পূর্ণ বিদআত, বিদআত। এসব যিকির সম্পূর্ণ কোরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী। তওবা না করলে এসব কর্মকান্ডের মহানায়ক তথা যিকিরে নেতৃত্বদানকারী যেমন সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে তেমনি তার অন্ধ অনুসারীরাও তার পথেই হাঁটবে।
আল্লাহ বলেন,
হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক
পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার
করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল
নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো
আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ
করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।
আল্লাহ আরো বলেন,
সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত
অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য ও বিরোধিতা
করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে
তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)।
আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে
আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার
নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার
পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (আধুনিক প্রকাশনী-
৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সালামাহ (রাঃ)থেকে
বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী
১০৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে (বিদআতী পির-অলি ও আলেম), যারা
তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি
সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫),হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না),
যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর
শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
যখন খাইবার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা রাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) যখন খাইবারের দিকে যাত্রা করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে
এই বলে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করল-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।
(আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই)। তখন রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। কারণ তোমরা
এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত। বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি
শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। [আবূ মূসা আশ‘আরী
(রাঃ) বলেন] আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাওয়ারীর পেছনে
ছিলাম। তিনি আমাকে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলতে শুনে বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ
ইবনু কায়স! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বললেন, আমি তোমাকে এমন
একটি কথা শিখিয়ে দেব কি যা জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভাণ্ডার? আমি বললাম,
হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল। আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। তখন রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা হল ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।
(বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২০২; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৩ হাঃ ২৭০৪, আল লুলু ওয়াল
মারজান, হাদিস নং-১৭২৮)।। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
উক্ত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, আল্লাহকে ডাকতে বা স্মরণ করতে
(যিকির) চিৎকার দিতে হয় না। মনে মনে বা আস্তে আস্তে ডাকলেও আল্লাহ তায়ালা শোনেন।
(৩) হাদিস হতে- আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ, সে যদি ধারণা রাখে
যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে
তাই করি।) আর আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ (যিকির) করে। সুতরাং সে যদি তার
মনে আমাকে স্মরণ (যিকির) করে, তাহলে আমি তাকে আমার মনে স্মরণ (যিকির) করি, সে যদি কোন
সভায় আমাকে স্মরণ (যিকির) করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের)
সভায় স্মরণ (যিকির) করি।”
(সহীহুল বুখারী ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, মুসলিম ২৬৭৫,
তিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭,
১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬, ১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, রিয়াদুস সালেহীন,
হাদিস নং-১৪৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
বিদআতী আলেমরা উক্ত হাদিসের শেষাংশের. “সে
যদি কোন সভায়/ মজলিশে/ ওয়াজ মাহফিলে আমাকে স্মরণ (যিকির) করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায়/মজলিশে/ওয়াজ
মাহফিলে স্মরণ (যিকির) করি।” এই অংশটুকু বলে এযাবত সাধারণ মুসলমানদেরকে বুঝিয়ে আসছে
যে, যিকির করা জায়েজ।
এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয় যে, উক্ত হাদিসে কিন্তু বিদআতীরা যেভাবে যিকির
করে (সংযুক্ত ভিডিও) সেভাবে বলা নেই। অতএব এই হাদিস দিয়ে তাদের ভন্ডামী যিকির জায়েজ
নেই।
(৪) হাদিস হতে- আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর যিকর করতেন।’
(মুসলিম ৩৭৩, তিরমিযী ৩৩৮৪, আবূ দাউদ ১৮, ইবনু মাজাহ ৩০২,
আহমাদ ২৩৮৮৯, ২৪৬৭৪, ২৫৮৪৪, রিয়াদুস সালেহীন, হাদিস নং-১৪৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
উক্ত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, আমাদেরকে সবসময় সর্বাবস্থায়
আল্লাহর যিকির করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো সবসময় যিকির কি দিয়ে করবো?
যেহেতু যিকির অর্থ হচ্ছে স্মরণ করা। যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া
সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত অনেক দোয়া আছে যা নিচে দেয়া হলো।
কোনো বৈঠকে বা মজলিশে বা
ওয়াজ মাহফিলে আল্লাহর যিকির করার ফজিলত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিক&র
খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা
একে অপরকে আহ্বান ক‘রে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে
উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন।
অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা
কি বলছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা
করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে
দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা
ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে বেহেশতো
চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম!
হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা
করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশতারা বলেন,
‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন,
‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা
তা দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী
ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ ক‘রে
দিলাম।’ ফিরিশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়।
সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম!
কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪০৮, মুসলিম ২৬৮৯, তিরমিযী ৩৬০০, আহমাদ
৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯, রিয়াদুস সালেহীন, হাদিস নং-১৪৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(২) হাদিস হতে-
আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিকিরেরত হয়, তখনই তাদেরকে ফিরিশতাবর্গ
ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ
তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।”
(মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ
দাউদ ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪, রিয়াদুস সালেহীন
হাদিস নং-১৪৫৬)।। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সবসময় যিকির করার বাক্য
বা দোয়াসমূহঃ
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪১৬
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, “দু’টি কলেমা (বাক্য) রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে
(উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী,
সুবহানাল্লাহিল আযীম।’ অর্থাৎ, , আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা
ঘোষণা করেছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী
৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪১৭
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, “আমার এই বাক্যমালা (সুবহানাল্লাহি অলহামদুলিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
অল্লাহু আকবার। (অর্থাৎ, , আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ
ছাড়া (সত্যিকার) কোনো ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সব চাইতে মহান) পাঠ করা সেই সমস্ত বস্তু
অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী
৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪১৮
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা
কুলি শাইয়িন ক্বাদীর।’
অর্থাৎ, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য উপাস্য
নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা
এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান।
যে ব্যক্তি এই দু'আটি দিনে একশবার পড়বে, তার দশটি গোলাম
আজাদ করার সমান নেকী অর্জিত হবে, একশ’টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, তার একশ’টি গুনাহ মোচন
করা হবে, উক্ত দিনের সন্ধ্যা অবধি তা তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষামন্ত্র হবে এবং
তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার চেয়ে বেশী আমল করে
তবে।”
তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘সুবহানাল্লাহি
অবিহামদিহ’ পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়।” (বুখারী
- মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, আবূ দাউদ ৫০৯১, ইবনু
মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬, ৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬,
৪৮৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪১৯
আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা
কুলি শায়ইন ক্বাদীর’ দিনে দশবার পাঠ করবে, সে ব্যক্তি ইসমাঈলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত
করার সমান সওয়াব লাভ করবে।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪০৪, মুসলিম ২৬৯৩, তিরমিযী ৩৫৫৩, তিরমিযী
৩৫৫৩, আহমাদ ২৩০০৫, ২৩০০৭, ২৩০৩৪, ২৩০৫৬, ২৩০৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪২০
আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) আমাকে বললেন, "আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথা তোমাকে জানাব না কী?
আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কথা হল, ‘সুবহানাল্লা-হি অবিহামদিহ’ (অর্থাৎ, আল্লাহর
সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।)” (মুসলিম ২৭৩১, তিরমিযী ৩৫৯৩, আহমাদ ২০৮১৩, ২০৯১৯, ২১০১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪২১
আবূ মালেক আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে
ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা
পূর্ণ করে দেয়।”
(মুসলিম ২২৩, তিরমিযী ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২৩৯৫,
২২৪০১, দারেমী ৬৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪২৩
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায
থেকে সালাম ফিরার পর ঘুরে বসতেন, তখন তিনবার ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন আর
পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু অমিনকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল-জালালি অল-ইকরাম।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, তোমার নিকট থেকেই শান্তি আসে। তুমি বরকতময় হে মহিমান্বিত
ও মহানুভব।
এ হাদীসটির অন্যতম বর্ণনাকারী আওযায়ী (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা
হল, ‘ইস্তিগফার’ কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, বলবে, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’
(অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।) (মুসলিম ৫৯১, তিরমিযী ৩০০, আবূ দাউদ ১৫১২, ইবনু মাজাহ ৯২৮,
আহমাদ ২১৯০২, দারেমী ১৩৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪২৬
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা গরীব মুহাজির (সাহাবাগণ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা
ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে, যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা
রোযা রাখছে, যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তাদের উদ্বৃত্ত মাল আছে, ফলে তারা হজ্জ করছে,
উমরাহ করছে, জিহাদ করছে ও সাদকাহ করছে, (আর আমরা করতে পারছি না)।’ এ কথা শুনে তিনি
বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের
মর্যাদা লাভ করবে, তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে
করবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর হতে পারবে না?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই
হে আল্লাহর রসূল! (আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক (ফরয) নামাযের
পরে ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠ করবে।”
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী আবূ সালেহ বলেন, ‘কিভাবে
পাঠ করতে হবে, তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও
‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে। যেন প্রত্যেকটি বাক্য ৩৩ বার করে হয়।
(সহীহুল বুখারী ৮৪৩, মুসলিম ৫৯৫, আবূ দাউদ ১৫০৪, আহমাদ
৭২০২, দারেমী ১৩৫৩)
মুসলিমের বর্ণনায় এ কথা বাড়তি আছে যে, অতঃপর গরীব মুহাজিরগণ
পুনরায় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আমরা
যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু করে দিয়েছে? (এখন
তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।” হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪২৭
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরয) নামায বাদ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ
ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং একশত পূর্ণ করতে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকালাহু
লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর’ পড়বে, তার গুনাহসমূহ মাফ
করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়।
(মুসলিম ৫৯৭, আবূ দাউদ ১৫০৪, আহমাদ ৮৬১৬, ৯৮৯৭, মুওয়াত্তা
মালিক ৮৪৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
মুআয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর
হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন,
“হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দু‘আটি পড়া অবশ্যই
ত্যাগ করবে না, ‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিক্রিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র (স্মরণ), শুক্র
(কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” (আবূ দাউদ, সহীহ সানাদ) (আবূ দাউদ
১৫২২, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ২১৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৩২
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন
নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ,
সালাম ফিরবার আগে) এই দু‘আ পড়তেন, “আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু
অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু
অ আন্তাল মুআখ্খিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি
পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত
করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য
উপাস্য নেই।
(মুসলিম ৭৭১, তিরমিযী ৩৪২২, ৩৪২৩, আবূ দাউদ ৭৬০, ১৫০৯,
নাসায়ী ১৬১৯, ইবনু মাজাহ ১৩৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৩৩
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় (নামাযের)
রুকু ও সিজদাতে এই তাসবীহটি অধিক মাত্রায় পড়তেন, ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাববানা অবিহামদিক,
আল্লাহুম্মাগফিরলী।’ অর্থাৎ, হে আমাদের প্রভু আল্লাহ! তোমার প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা
ঘোষণা করছি, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।
(সহীহুল বুখারী ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৪, ৪৯৬৭, ৪৯৬৮, মুসলিম ৪৮৪,
নাসায়ী ১০৪৭, ১১২২, ১১২৩, আবূ দাউদ ৮৭৭, ইবনু মাজাহ ৮৮৯৯, আহমাদ ২৩৬৪৩, ২৩৭০৩, ২৪১৬৪,
২৫০৩৯, ২৫৩৯৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয়
(নামাযের) রুকু ও সিজদাতে পড়তেন, ‘সুব্বূহুন ক্বুদ্দূসুন রাববুল মালা-ইকাতি অর্রূহ।’
অর্থাৎ, অতি নিরঞ্জন, অসীম পবিত্র ফেরেশ্তামন্ডলী ও জিবরীল (আঃ)-এর প্রভু (আল্লাহ)
।
(মুসলিম ৪৮৭, নাসায়ী ১০৪৮, ১১৩৪, আবূ দাউদ ৮৭২, আহমাদ ২৩৫৪৩,
২৪১০৯, ২৪৩২২, ২৪৬২২, ২৪৬৩৮, ২৪৯০৬, ২৫০৭৮, ২৫১১০, ২৫৫৩৯, ২৫৭৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদা
করার সময় এই দু‘আ পড়তেন, ‘আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী যামবী কুল্লাহ, দিক্বাহু অজিল্লাহ,
অআউওয়ালাহু অ আ-খিরাহ, অ আলা-নিয়্যাতাহু অসির্রাহ।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমার কম ও বেশী, পূর্বের ও পরের,
প্রকাশিত ও গুপ্ত সকল প্রকার পাপকে মাফ করে দাও। (মুসলিম ৪৮৩, আবূ দাউদ ৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৩৯
সা'দ ইবনে আবূ অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদের কোন ব্যক্তি প্রত্যহ এক হাজার
নেকী অর্জন করতে অপারগ হবে কি?” তাঁর সাথে উপবিষ্ট ব্যক্তিদের একজন জিজ্ঞাসা করল,
‘কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করবে?’ তিনি বললেন, “একশ’বার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়বে।
ফলে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
(মুসলিম ২৬৯৮, তিরমিযী ৩৪৬৩, আহমাদ ১৪৯৯, ১৫৬৬, ১৬১৫)
হুমাইদী বলেন, মুসলিম গ্রন্থে এ রকম يُحَطُّ
أَوْ
(অথবা --- মিটিয়ে দেওয়া হবে) এসেছে। বারক্বানী বলেন, এটিকে শু’বাহ, আবূ আওয়ানাহ ও ইয়াহয়্যা
আলক্বাত্তান সেই মূসা হতে বর্ণনা করেছেন, যাঁর সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। এঁরা
বলেছেন, وَيُحَطُّ
(এবং --- মিটিয়ে দেওয়া হবে।) অর্থাৎ, তাতে ‘ওয়াও’-এর পূর্বে ‘আলিফ’ বর্ণ নেই। (আর তার
মানে হল, তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে এবং এক হাজার গুনাহও মিটিয়ে দেওয়া হবে।)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ
রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহ্মীদ (আলহামদু
লিল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক
তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ
করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশ্তের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।”।(মুসলিম ৭২০, আবূ দাউদ ১২৮৫, ১২৮৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “সর্বশ্রেষ্ঠ যিক্র হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”
(তিরমিযী ৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ ৩৮০০)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৪৮
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “মি’রাজের রাতে ইব্রাহীম عليه
السلام
-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি বললেন, ‘হে মুহাম্মদ! তুমি তোমার উম্মতকে আমার সালাম
পেশ করবে এবং তাদেরকে বলে দেবে যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও উৎকৃষ্ট, তার পানি মিষ্ট।
আর তা বৃক্ষহীন একটি সমতল ভূমি। আর ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদু লিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
ও ‘আল্লাহু আকবার’ হল তার রোপিত বৃক্ষ।”। (তিরমিযী ৩৪৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
আবূ মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আমাকে বললেন, “তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা বলে দেব না কি?” আমি বললাম,
‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “তা হল, ‘ লা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ।”
(সহীহুল বুখারী ২৯৯২, ৪২০৫, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৬৬১০, মুসলিম ২৭০৪,
তিরমিযী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, আবূ দাউদ ১৫২৬, ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯০৮২, ১৯১০২,
১৯১০৮, ১৯১৫১, ১৯২৪৬, ১৯২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৫৯
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ একশবার পাঠ করবে, কিয়ামতের
দিনে ওর চাইতে উত্তম আমল কেউ আনতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার সমান বা তার থেকে বেশি
সংখ্যায় ঐ তাসবীহ পাঠ করে থাকে (তাহলে ভিন্ন কথা)।”
(মুসলিম ২৬৯১, ২৬৯২, সহীহুল বুখারী ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিযী
৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, আবূ দাউদ ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬,
৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬০
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
কাছে এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! গত রাতে বিছার কামড়ে আমি যে কত কষ্ট পেয়েছি,
(তা বলার নয়) ।’ তিনি বললেন, “শোন! যদি তুমি সন্ধ্যাবেলায় এই দুআ পাঠ করতে,
‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’
অর্থাৎ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর অসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার মন্দ হতে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি।
তাহলে তা তোমার ক্ষতি করতে পারত না।”। (মুসলিম ২৭০৯, আহমাদ ৮৬৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬১
উক্ত রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে এই দুআ পড়তেন,
‘আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা অবিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল হল এবং তোমারই
হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হয়, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু
বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন।
আর সন্ধ্যায় এই দুআ পড়তেন,
‘আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু
অইলাইকান নুশূর।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হল, তোমারই
হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের
পুনর্জীবন।
(আবূ দাউদ ৫০৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৮, আহমাদ ৮৪৩৫, ১০৩৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
উক্ত রাবী (রাঃ) , আবূ বক&র সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু বাক্য বাতলে দিন, যেগুলি
সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে থাকব।’ তিনি বললেন, “বল, ‘আল্লা-হুম্মা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি
অল আরয্বি আ-লিমাল গায়বি অশশাহা-দাহ, রাব্বা কুলি শাইয়িন অমালীকাহ, আশহাদু আল লা ইলা-হা
ইল্লা আন্তা আঊযু বিকা মিন শার্রি নাফসী অশার্রিশ শায়ত্বা-নি অশির্কিহ।’
অর্থাৎ, হে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকর্তা, উপস্থিত ও
অনুপস্থিত পরিজ্ঞাতা, প্রত্যেক বস্তুর প্রতিপালক ও অধিপতি আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আমার আত্মার মন্দ হতে এবং শয়তানের মন্দ ও
শিক© হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
সকাল-সন্ধ্যা তথা শোবার সময় পাঠ করো।।(তিরিমিযী ৩৩৯২, আহমাদ ৭৯০১, দারেমী ২৬৮৯)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সন্ধ্যাবেলায় এই দুআ পড়তেন,
‘আমসাইনা অ আমসাল মুলকু লিল্লা-হ, অলহামদু লিল্লা-হ, লা
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ&দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা
কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। রাব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ খাইরা মা বা’দাহা,
অ আঊযু বিকা মিন শার্রি মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ শার্রি মা বা’দাহা, রাবিব আঊযু বিকা
মিনাল কাসালি অ সূইল কিবার, রাবিব আঊযু বিকা মিন আযা-বিন ফিন্না-রি অ আযা-বিন ফিল ক্বাবর।’
অর্থাৎ, আমরা এবং সারা রাজ্য আল্লাহর জন্য সন্ধ্যায় উপনীত
হলাম। আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, (বর্ণনাকারী
বলেন, আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাতে বললেন,) তাঁর
কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই জন্য যাবতীয় স্তুতি, এবং তিনি সকল বস্তুর
উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট এই রাতে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং
তার পরেও যে কল্যাণ আছে তাও প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট এই রাত্রে যে অকল্যাণ
আছে তা এবং তারপরেও যে অকল্যাণ আছে তা হতে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার
নিকট অলসতা এবং বার্ধক্যের মন্দ হতে পানাহ চাচ্ছি। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের
এবং কবরের সকল প্রকার আযাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি।
তিনি যখন সকালে উঠতেন তখনও এই দুআ পাঠ করতেন; বলতেন ‘আসবাহনা
ও আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ--।’।(মুসলিম ২৭২৩, তিরমিযী ৩৩৯০, আবূ দাউদ ৫০৭১, আহমাদ ৪১৮১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬৪
আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আমাকে বললেন, “সকাল-সন্ধ্যায় ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) এবং ‘ক্বুল আঊযু
বিরাবিবল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবন্নাস’ তিনবার করে পড়। তাহলে প্রতিটি (ক্ষতিকর)
জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে।”। (তিরমিযী ৩৫৭৫, আবূ দাউদ ৫০৮২, নাসায়ী ৫৪২৮, ৫৪২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬৫
উসমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই দুআ তিনবার করে পড়বে,
‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা য়্যাযুর্রু মাআসমিহী শাইউন ফিল
আরয্বি অলা ফিসসামা-ই অহুওয়াস সামীউল আলীম।’
অর্থাৎ আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যার নামের সাথে
পৃথিবীর ও আকাশের কোন জিনিস ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।
কোন জিনিস সে ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবে না।”। (তিরমিযী ৩৩৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, আহমাদ ৪৪৮, ৫২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬৬
হুযাইফা ও আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শোবার সময়
এই দুআ পড়তেন, ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা আহ্ইয়াহ অ আমূতু।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামেই
আমি বাঁচি ও মরি) ।
(সহীহুল বুখারী ৬৩১২, ৬৩১৪, ৬৩২৪, ৭৩৯৪, তিরমিযী ৩৪১৭,
আবূ দাউদ ৫০৪৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৮০, আহমাদ ২২৭৩৩, ২২৭৬০, ২২৭৭৫, ২২৮৬০, ২২৯৪৯, দারেমী
২৬৮৬)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬৭
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা তাঁকে
ও ফাতেমাকে বললেন, “যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন ৩৩ বার ‘আল্লাহ আকবার’, ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’
এবং ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করবে।” অন্য এক বর্ণনা অনুপাতে ৩৪ বার ‘সুবহানাল্লাহ’,
আর এক বর্ণনা অনুপাতে ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়তে আদেশ করেছিলেন।
(সহীহুল বুখারী ৩১১৩, ৩৭০৫, ৫৩৬১, ৫৩৬২, ৬৩১৮, মুসলিম ২৭২৭,
তিরমিযী ৩৪০৮, ৩৪০৯, আবূ দাউদ ২৯৮৮, ৫০৬২, আহমাদ ৬০৫, ৭৪২, ৮৪০, ৯৯৯, ১১৪৪, ১২৩৩, ১২৫৩,
১৩১৫, দারেমী ২৬৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৬৯
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শয্যা-গ্রহণ
করতেন, তখন নিজ হাত দু’টিতে ‘মুআউবিযাত’ (তিন ক্বুল) পড়ে ফুঁ দিতেন এবং তার দ্বারা
নিজ সমগ্র শরীরে বুলাতেন।
(সহীহুল বুখারী ৪৪৩৯, ৫০১৬, ৫০১৮, ৫৭৩৫, ৫৭৪৮, ৫৭৫১, ৬৩১৯,
মুসলিম ২১৯২, ৩৯০২, ইবনু মাজাহ ৩৫৯২, আহমাদ ২৪২০৭, ২৪৩১০, ২৪৪০৬, ২৪৮০৭, ২৪৯৫৫, ২৫৬৫৭,
২৫৭৩১, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৫৫)
এক অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
প্রত্যেক রাতে যখন ঘুমাবার জন্য শয্যা গ্রহণ করতেন তখন দু’ হাতের চেটো একত্রে জমা করতেন
এবং তাতে তিন ক্বুল পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর তার দ্বারা দেহের ওপর যতদূর সম্ভব বুলাতেন;
মাথা, চেহারা ও দেহের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এরূপ তিনি তিনবার করতেন। (বুখারী,
মুসলিম)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৭১
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন
তখন এই দুআ পড়তেন, ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্বআমানা অ সাক্বা-না অকাফা-না অ আ-ওয়া-না,
ফাকাম মিম্মাল লা কা-ফিয়া লাহু অলা মু’বী।’
অর্থাৎ, সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে পানাহার
করিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ কত এমন লোক আছে যাদের
যথেষ্টকারী ও আশ্রয়দাতা নেই।
(মুসলিম ২৭১৫, তিরমিযী ৩৩৯৬, আবূ দাউদ ৫০৫৩, আহমাদ ১২১৪২,
১২৩০১, ১৩২৪১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং- ১৪৭২
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমাবার
ইচ্ছা করতেন, তখন স্বীয় ডান হাতটি গালের নিচে স্থাপন করতেন, তারপর এই দুআ পাঠ করতেন।
‘আল্লাহুম্মা ক্বিনী আযাবাকা য়্যাওমা তাব্আসু ইবাদাকা।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! সেই দিনের
আযাব থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দাও, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবে।
(তিরমিযী ৩৩৯৮, আহমাদ ২২৭৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সম্মানীত মুসলমান ভাইয়েরা-আপনারা দেখছেন
যে, উল্লেখিত হাদিসগুলো সকল হাদিস গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোথাও বিদআতী যিকির
করার মতো কোনো পদ্ধতি বর্ণিত নেই। সকাল সাঁঝে, সালাতে, শোয়ার সময় কখন কোন যিকির করতে
হবে তার পুরো বর্ণনা হাদিসে দেয়া আছে।
কালিমা, সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত, রাসুল সাঃ এর উপর দরুদ পাঠসহ ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বিছানায় শোয়া পর্যন্ত এই সময়ের
মধ্যে কখন, কোন্ সময় কি কি দোয়া দরুদ পড়তে হবে তা রাসুল সাঃ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন,
সেসব পাঠের মাধ্যমে আল্লাহকে সার্বক্ষণিক স্মরণ করার নামই হচ্ছে যিকির। আল্লাহু আল্লাহু
আর ইল্লাল্লাহ জপের নাম যিকির নয়। এটা সম্পূর্ণ বিদআত।
আরো অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়া বা যিকির জানতে
চাইলে এখানে ক্লিক করে ১০ নং অধ্যায়ের ফজিলতপূর্ণ দোয়া বা যিকিরসমূহ পড়ুন।
আল্লাহর বিশেষ কোনো নাম
ধরে কি তার যিকির করা জায়েয আছে?
বাংলাদেশসহ
ভারত উপমহাদেশে বিশেষ করে বিভিন্ন মসজিদ, ওয়াজ-মাহফিল ও কথিত পির-আউলিয়াদের দরবারে
শুধু “আল্লাহ
আল্লাহ” অথবা “ইয়া গাফুরু, ইয়া গাফুরু” ইত্যাদি বলে যিকির করতে দেখা যায়।
আমি জানি, “আল্লাহ
আল্লাহ” বলে যিকির করা বিদআত। কিন্তু “হা” অক্ষরে পেশ দিয়ে “আল্লাহু আল্লাহু”
বলার হুকুম কি?
“আল্লাহ”
শব্দ দ্বারা যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে এই ইবাদতে রাসুল (সাঃ) এর হেদায়েত কি ছিল তা আমাদের জানা দরকার। যেমনটি অন্যান্য ইবাদতের ইবাদতের নিয়মও জানা দরকার। রাসুল
(সাঃ) এর সুন্নাতে যিকির ও দুয়ার ক্ষেত্রে শুধু “আল্লাহ” শব্দ ব্যবহারের কোনো প্রমাণ
নেই বা কোনো হাদিস নেই। চাই আল্লাহ শব্দের “হা” অক্ষরে পেশ দিয়ে হোক বা জযম দিয়ে হোক-রাসুল
(সাঃ) এর যুগে, সাহাবীদের যুগে এবং তৎপরবর্তী ছয়শ বছরের মধ্যে এর কোনো প্রমাণ নেই।
অনুরুপভাবে শুধূ আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ধরে তাঁকে ডাকারও কোনো দলীল নেই। যেমন, লোকেরা
বলে থাকে ইয়া রাজ্জাকু, ইয়া রাজ্জাকু, ইয়া মালিকু ইয়া মালিকু, ইয়া গাফুরু, ইয়া গাফুরু---
ইত্যৈাদি। এই যিকিরগুলোকে অর্থবোধক বাক্য বা
কথা বলা হয় না। আর এতে উপাকারী কোনো অর্থও প্রকাশ পায় না। এটা একক শব্দ যাতে কোনো উপকার
পাওয়া যায় না। কেননা এই নামগুলো উল্লেখ করে ডেকে যদি কোনো আবেদন বা প্রার্থনা পেশ না
করা হয়, তবে এই ডাকাটাই অনর্থক হয়ে য়ায়।
আমাদের
সমাজে দেখা যায়, সলাত আদায় করার পর একা বা সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে আল্লাহ বা আল্লাহু
কখনো শুধু ইল্লাল্লাহ যিকির করতে করতে পাগল হয়ে যায়। অথচ এটা পুরোটাই বিদআত।
প্রশ্ন হতে পারে তাহলে
কিভাবে যিকির করবো?
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা
মোতাবেক (সুরা আ’রাফ : আয়াত ২০৫) আমরা যিকির করবো।
যিকিরের
প্রথমেই বলা হয়েছে, যিকির অর্থ স্মরণ করা বা করানো। একজন মুমিনের সকল কাজকর্ম যা সে
তার রবকে কেন্দ্র করে সম্পন্ন করে থাকে তাই যিকির। যিকিরের মধ্যে কালিমা, সলাত, সিয়াম,
হজ্জ, যাকাত, বিভিন্ন দোয়া-দরুদ সবই যিকিরের মধ্যে গণ্য। এগুলো ছাড়াও এর অতিরিক্ত তাকবির,তাসবিহ
ও তাহলীল বলে যিকির করতে চাইলে আল্লাহ বা আল্লাহু
না বলে এর অর্থবোধক বাক্য যেমন: আল্ল-হু আকবার, সুবহা-নাল্ল-হ এবং শুধু ইল্লাল্ল-হ
না বলে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” বলে যিকির করতে হবে। অর্থবোধক বাক্যের আরো যিকির যেমন,
“ইয়া আল্লাহ ইরহামনী” অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে দয়া করো। ইয়া গাফুরু ইগফির লী” অর্থাৎ
হে ক্ষমাশীল আমাকে ক্ষমা করো, ইয়া রাজ্জাকু উরযুকনী” হে রিযিকদাতা আমাকে রিযিকদান করো,
এভাবে যিকির করলে তখন হবে অর্থবোধক বাক্য এবং সেটা হবে বৈধ যিকির।
এখানে
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, আমরা যখন যিকির ও দোয়া পাঠ করবো তখন আমাদেরকে ইহকালীন ও পরকালীন
চাওয়া-পাওয়াগুলোকে সামনে রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ যিকির ও দোয়াগুলো পাঠ করতে হবে। শুধু
আল্লাহু আল্লাহু যিকির করছেন, কিন্তু আল্লাহ
আপনাকে কি দিবে আর কেনই বা চিল্লাচিল্লি করছেন?
আপনি যে উদ্দেশ্যে যিকির ও দোয়া পাঠ করছেন সেই উদ্দেশ্যের কথা আল্লাহকে জানাতে হবে,
তবেই না আল্লাহ আপনার মকসুদ পূর্ণ করবেন।
শুধু ইল্লাল্ল-হ যিকির করা
কি যাবে?
পবিত্র
কোরআনে আল্লহ তায়ালা বলেছেন, “তোমরা আল্লহর যিকির করো, যেমনিভাবে তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন।”
(সুরা বাকারাহ-২৩৯)।
আল্লহ
প্রদত্ত ওহীর মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) কিভাবে আল্লহর যিকির করতে হয় তা উম্মতকে সবিস্তারে
শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর দেয়া শিক্ষার বাহিরে কোনো ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়: তেমনি যিকিরও
নয়। তিনি শিখিয়েছেন, সুবহা-নাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লহু আকবর, সুবহা-নাল্লাহি
ওয়া বিহামদিহি সুবহা-নাল্লাহিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর। এভাবে আরো
নানা রকম যিকর। তাঁর শিখানো কোনো যিকরকে ভেঙ্গে আলাদা করার প্রবণতা নিঃসন্দেহে সুন্নাতের
বিকৃতি তুল্য। রাসুল (সাঃ) বলেছেন-শ্রেষ্ঠ যিকর হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। (তিরমিযি,
ইবনে মাজাহ, মিশকাত-পৃ: ২০১)।
পবিত্র
এ কালিমাটিকে ভেঙ্গে শুধু “ইল্লাল্লাহ“ যিকর
করার রীতি হাদিস দিয়ে সাব্যস্ত নয়। রাসুল (সাঃ) শুধু “ইল্লাল্লাহ “ যিকর করেছেন
বা সাহাবাগণকে এভাবে যিকর শিখিয়েছেন এমন একটি
হাদিসও নেই।
অনেকে
যুক্তি দিয়ে “ইল্লাল্লাহ“ যিকর করা জায়েয সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা করে থাকেন। আসলে যুক্তি
দিয়ে কোনো জিনিসকে শরিয়তের অংশ বানানো উম্মতের কাজ হতে পারে না। প্রত্যেকটি ইবাদতের
ক্ষেত্রে সুন্নাতই হলো একমাত্র অনুসরণীয় রীতি।
পির,
ওলি-আউলিয়া, বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল ও মসজিদে দেখা যায় কথিত আশেকে রাসুল তথা ভন্ডদের মুরিদগণ
“আল্লহু” বাদ দিয়ে মাথা ঝুকিয়ে পাগলের মতো শুধু হু, হু, হু করে। এটাও নাকি যিকর। তাদের যুক্তি হলো, পবিত্র
কোরআনে আছে, “হুয়াল্লাহুল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা-হু”
এ আয়াতের শেষ অংশে (হু) তাই তারা হু, হু, হু শব্দে যিকর করে। বর্তমানে অনুরুপ অনেক
যিকর আবিষ্কার হয়েছে। যা সম্পূর্ণই বিদআত বিদআত।
চর্মনাই পির ইল্লাল্লাহ
যিকির সম্পর্কে কোরআন হতে যে দলীল পেশ করেছেন তা কোরআনের অপব্যাখ্যা। আর অপব্যাখ্যাকারী
হবে জাহান্নামী।
অতএব, কেবল ‘লা ইলাহা’
(কোনও উপাস্য নাই) হলো নাস্তিকতাবাদি ও কুফরি যিকির। শুধু ‘ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ
ছাড়া) হল বিদআতি যিকির।
সঠিক ও সুন্নতি যিকির
হলো, দুটি বাক্যের সমন্বিত যিকির তথা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া সত্য
কোন উপাস্য নাই)।
সুতরাং যে ব্যক্তি
পরিপূর্ণ বাক্য ছাড়া কেবল ১ম অংশ যিকির করবে
তা হবে কুফরি আর শেষ অংশ যিকির
করলে বিদআত করবে।
(৭) শুধু
ইল্লাল্লাহ যিকির জায়েজ কি নাজায়েজ তার ভিডিও দেখতে চাইলে ১ নং
ভিডিও ও ২ নং ভিডিও এর উপর ক্লিক করুন।
প্রশ্ন : আল্লাহর নামে
যিকির করার ছহীহ পদ্ধতি কোনটি? উচ্চৈস্বরে ‘ইল্লাল্লাহ’ ‘ইল্লাল্লাহ’ বলে যিকির
করা যাবে কি?
উত্তর : আল্লাহর যিকির করতে হবে নীরবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আপনি আপনার প্রভুকে সকাল-সন্ধ্যায় আপন মনে
অত্যন্ত বিনীত ও ভীত সন্ত্রস্তভাবে স্মরণ করুন, উচ্চ শব্দে নয়’ (আ‘রাফ ২০৫)। তিনি
আরো বলেন, ‘তোমাদের প্রভুকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এবং সংগোপনে ডাক’ (আ‘রাফ ৫৫)।
একদা এক সফরে ছাহাবীগণ আওয়াজ করে তাসবীহ পাঠ করলে রাসূল (ছাঃ) তাদের চুপে চুপে
তাসবীহ পাঠ করতে বলে বলেন ‘তোমরা এমন সত্তাকে ডাকছ যিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০৩)।
গোলাকার
হয়ে একত্রে যিকর করা যাবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) একদল মুছল্লীকে মদীনার
মসজিদে গোলাকার হয়ে তাসবীহ-তাহলীল করতে দেখে বলেন, ‘হে মুহাম্মাদের উম্মতগণ! কত
দ্রুত তোমাদের ধ্বংস এসে গেল’? (দারেমী, সনদ ছহীহ)। ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ বা
‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দে কোন যিক্র নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি রয়েছে তার অর্থ হ’ল ‘লা
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫১৬)। শায়খ আলবানী বলেন, ‘শুধু আল্লাহ
শব্দে যিকর করা বিদ‘আত। সুন্নাতে যার কোন ভিত্তি নেই’ (মিশকাত ১৫২৭ পৃঃ ১ নং
টীকা)। সর্বোত্তম যিক্র হচ্ছে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/২৩০৬)।
গানের সুরে ছন্দের তালে তালে
বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিমায় যিকর করা ও ইসলামি গজলে বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার- যেনো শয়তানের
এক আড্ডা কারখানাঃ
যিকির
অর্থ স্মরণ করা বা করানো। আমরা আল্লহ তায়ালাকে বিভিন্নভাবে স্মরণ করতে পারি। যেমনঃ
পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করার মাধ্যমে, সিয়াম পালনের মাধ্যমে, হজ্জ কিংবা যাকাত আদায়ের
মাধ্যমে, ইক্বামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দাওয়াতী কাজ করার মাধ্যমে, কোরআন পাঠের
মাধ্যমে, বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পাঠ করার মাধ্যমে ইত্যাদ। আবার এগুলো ছাড়াও এর অতিরিক্ত
তাকবির আল্লাহু আকবার, তাসবিহ-সুবহা-নাল্ল-হ এবং তাহলীল- লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ ইত্যাদি
যিকির করার মাধ্যমে আল্লহকে স্মরণ করে থাকি ।
যিকির
করার বিভিন্ন মাধ্যম থাকা সত্বেও বর্তমানে আমাদের সমাজের বিদআত পন্থী এক শ্রেণির লোক
যারা নিজেদেরকে পির, ওলি, গাউস-কুতুব কিংবা বিভিন্ন তরিকা পন্থী পরিচয়ে যিকর করার জন্যে
কিছু নতুন কথা বার্তা সংযোজন করে গানের সুরে ছন্দের তালে তালে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিমাতে
আবার অনেকে বাদ্য যন্ত্র (ঢোল, তবলা, বাঁশী, সানাই, হারমোনিয়াম ইত্যাদি) ব্যবহার করেও
কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী নতুন পদ্ধতিতে যিকিরের প্রচলন করেছে।
বিদআত
পন্থী এইসব যিকিরের প্রচলনকারীরা কোরআন ও সহীহ হাদিস থেকে যিকিরের ফজিলত সম্পর্কিত দলীল
দিয়ে সাধারণ মুসলমানকে যিকির করতে উৎসাহিত করে থাকেন। কিন্তু কোরআন ও সহীহ হাদিস থেকে
উল্লেখিত দলীল দ্বারা তাদের বিদআত পন্থী যিকিরকে সমর্থন করে না।
পিরের দরবারের
যিকিরের প্রকারভেদ
বাংলাদেশে
অসংখ্য পির-আউলিয়ার দরবার আছে। প্রত্যেক দরবার হতে তাদের নিজেস্ব চিন্তা ধারায় আধ্যাত্বিকমূলক
অনেক বই পুস্তক বের করা হয়েছে। কিন্তু সেই বইগুলো ৯০% জাল-জইফ হাদিসে ভরপুর। আমি এ সংক্রান্ত
অনেক বই পড়েছি, যেমন ফাজায়েলে আমল,ফাজায়েলে নামাজ ফাজায়েলে যিকির,ফাজায়েলে হজ্জ, নেয়ামুল কোরআন, মোকছেুদল
মোমেনীন ও বেহেস্তি জেওর যা মোমিনদের জন্যে পড়া হারাম সেইসব বই থেকে কথিত পির-অলি ও বিদআতী আলেমরা দলীল দিয়ে মুরিদকে
বুঝায় যে অমুক বই এ আছে। যখন বই এর নাম উল্লেখ করে তখন মুর্খ মুরিদরা নির্দিধায় বিশ্বাস করে নেয়।
যাই হোক, পিরের দরবার হতে রচিত যতো বই বের করা হয় তার মধ্যে সকল মুরিদকে বাধ্যতামূলক “ওয়াজিফা” নামক বইটি পড়তে বলা হয়। ওয়াজিফায় একজন মুরিদ দৈনন্দিন কি কি আমল করবে, কি কি যিকির করবে, যিকিরের নিয়মাবলী সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে।
যাই হোক, পিরের দরবার হতে রচিত যতো বই বের করা হয় তার মধ্যে সকল মুরিদকে বাধ্যতামূলক “ওয়াজিফা” নামক বইটি পড়তে বলা হয়। ওয়াজিফায় একজন মুরিদ দৈনন্দিন কি কি আমল করবে, কি কি যিকির করবে, যিকিরের নিয়মাবলী সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে।
এখন
আসুন সেই ওয়াজিফা মোতাবেক যিকিরের প্রকারভেদ সংক্ষেপে জেনে নেই।
(১)
লতিফায়ে ক্বালব।
(২)
লতিফায়ে রুহ।
(৩)
লতিফায়ে ছের।
(৪)
লতিফায়ে খফি।
(৫)
লতিফায়ে আখফা।
(৬)
লতিফায়ে নফস।
(৭) নফি এছবাত।উল্লেখিত ছয় লতিফায় এক সাথে যিকির করাকে নফি এছবাত বলা হয়। এ সবকে ছয় লতিফায় একই সাথে
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” যিকির করতে হয়।
নিয়মঃ
(লা) শব্দ নাভী হতে আরম্ভ করে মাথার তালু পর্যন্ত গিয়ে (ই) (লা) (হা) –যথাক্রমে নফস,
খফি ও রুহ লতিফা। অতপর “এল”, “লাল”, “লা”, “হু” যথাক্রমে রুহ, আখফা, ক্বালব, ও ছের
লতিফায় গিয়ে শেষ হবে। এভাবে ছয় লতিফাব্যাপী নফি এছবাত করার সময় নিঃশ্বাস বন্ধ করে জিহবা
তালুর সাথে লাগিয়ে তিন, পাঁচ, নয় ইত্যাদি বেজোড় সংখ্যক যিকির করার পর ক্বালবে খেয়াল
করে “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” বলে শেষ করতে হয়।
(৮)
লতিফায়ে বাদ।
(৯)
লতিফায়ে আব।
(১০)
লতিফায়ে আতশ।
(১১)
লতিফায়ে খাক।
(১২) সর্ব শরীরে যিকির।
মানুষের
দশ লতিফায় এক সাথে যিকির করাকে সর্ব শরীরে যিকির
বলা হয়। এ লতিফায় মোরাকাবায় খেয়ালের সাথে আপন মোর্শেদের ক্বালব, রুহ, ছের,
খফি, আখফা, নফস, বাদ, আব, আতশ ও খাক এবং ছুতে
আছলি, ছুরতে মেছালী, ছুরতে জেসমানী, ছুরতে রুহানী, ছুরতে জাহেরী, ছুরতে বাতেনী অর্থাৎ নিজের জাহের,বাতেন সবকিছুর
সাথে আপনন মোর্শেদের জাহের-বাতেন সবকিছু মিশিয়ে সর্ব শরীরে “আল্লাহ” “আল্লাহ” যিকির
খেয়াল করতে হয়। এ লতিফায় কেহ কেহ সরিষা ফুলের মতো রং দেখতে পায়। সর্ব শরীরে যিকিরের
সবকে পবিত্র কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের মোরাকাবা করতে হয়ঃ
“ছুম্মা তালিনু জুলুদুহুম ওয়া কুলুবুহুম ইলা যিকরিল্লাহ”
অর্থঃ
পূনরায় তাদের চামড়া ও দিল আল্লাহর যিকিরে নরম হয়ে থাকে।” অর্থাৎ সর্ব শরীরে আল্লাহ,
আল্লাহ যিকির জারী হয়ে থাকে। (সুরা-যুমার-আয়াত-২৩)।
উক্ত আয়াতের সহিহ তাফসীর
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
(সুরা-যুমার-আয়াত-২৩)ঃ
আল্লাহ
অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণী সম্বলিত এমন এক গ্রন্থ, যাতে পারস্পরিক সাদৃশ্যপূর্ণ একই
কথা নানাভাবে বার বার বলা হয়েছে।[1] এতে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে[2] তাদের চামড়ার
(লোম) খাড়া হয়, অতঃপর তাদের দেহ-মন আল্লাহর স্মরণের প্রতি নরম হয়ে যায়।[3] এটিই আল্লাহর
পথনির্দেশ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে পথপ্রদর্শন করেন। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন,
তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।
[1]أَحْسَنُ
الْحَدِيْثِ
(উত্তম বাণী)এর অর্থ হল কুরআন কারীম। متشابها
এর অর্থ, কুরআনের শ্রুতিমধুর ও সুখপাঠ্য বাণী, তার সাহিত্য-শৈলী, শব্দালঙ্কার, অর্থ-সত্যতা
ইত্যাদি গুণাবলীতে পারস্পরিক সাদৃশ্যপূর্ণ। অথবা কুরআন পূর্ব আসমানী গ্রন্থসমূহের সাথে
সাদৃশ্যপূর্ণ। অর্থাৎ, কুরআন অন্য সকল আসমানী কিতাবের অনুরূপ। مَثَانِيَ
অর্থাৎ, এই কুরআনে বর্ণিত ইতিহাস ও কাহিনী, আদেশ-উপদেশ ও বিধি-বিধানগুলিকে বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
[2]
কারণ, তারাই ঐ সকল আযাব ও শাস্তির ধমক, সতর্কবাণী বুঝতে পারে, যা অবাধ্যদের জন্য তাতে
বর্ণনা করা হয়েছে।
[3]অর্থাৎ, যখন আল্লাহর করুণা, ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের আশা তাদের মনে জাগে তখন তাদের অন্তর
নরম হয়ে যায় এবং আল্লাহর স্মরণে মগ্ন হয়ে পড়ে। ক্বাতাদা (রঃ) বলেন ‘‘এতে আল্লাহর আওলিয়াগণের
গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে; আল্লাহর ভয়ে তাঁদের অন্তর কম্পিত হয়, তাঁদের চক্ষু অশ্রুসিক্ত
হয়ে যায় এবং আল্লাহর যিকর দ্বারা তাঁরা মনে শান্তি পান। যিকর করতে গিয়ে তাঁরা নেশাগ্রস্ত
মাতালদের মত এবং সংজ্ঞাহীন বেহুঁশের মত হয়ে যান না। (যেমন তাঁরা নেচেও উঠেন না।) কারণ
এসব হল বিদআতীদের আচরণ এবং তাতে শয়তানের হাত থাকে। (ইবনে কাসীর) যেমন বর্তমানেও বিদআতীদের
কাওয়ালী-গান বা যিকরের আসর অনুরূপ শয়তানী কার্যকলাপে পরিপূর্ণ; যাতে বিভিন্ন অবস্থার
তারা উন্মত্ততা, মূর্ছা, অচৈতন্য, মোহিত, আত্মহারা, বিভোর, ধ্যানমগ্ন, বেহুঁশী, মস্তী
ইত্যাদি নাম দিয়ে থাকে। ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, এই বিষয়ে মু’মিনগণ কাফেরদের থেকে
কয়েক দিক দিয়ে স্বতন্ত্র।
প্রথম এই
যে, মু’মিনগণের শ্রাব্য বস্তু হল কুরআন কারীম, আর কাফেরদের শ্রাব্য বস্তু হল নির্লজ্জ
গায়িকাদের গান-বাজনা।(যেমন বিদআতীদের শ্রাব্য বস্তু হল শিরকী অতিরঞ্জনমূলক না’ত, গজল
ও কাওয়ালী গান।)
দ্বিতীয় এই
যে, মু’মিনগণ কুরআন শ্রবণ করে আদব ও ভীতি, আশা ও মহব্বত এবং অনুধাবন ও উপলব্ধির সাথে
ক্রন্দন করেন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে কাফেররা হৈ-হাল্লা করে এবং খেলাধূলায়
ব্যস্ত থাকে।
তৃতীয় এই
যে, মু’মিনগণ কুরআন শ্রবণের সময় আদব ও বিনয় প্রকাশ করেন; যেমন সাহাবায়ে কিরামগণের বরকতময়
অভ্যাস ছিল। যার ফলে তাঁদের দেহ শিউরে উঠত এবং তাঁদের অন্তর আল্লাহর প্রতি আসক্ত হয়ে
যেত। (ইবনে কাসীর)
মানবদেহের
জাহের ও বাতেনের প্রতিটি অনু-পরমানুতে যিকির হওয়াকে সুলতানুল আজগার বলা হয়। এমতাবস্থায়
সাধক নিজের দেগের জাহের-বাতেন সব কিছুতেই আল্লাহর যিকির উপলব্ধি করে থাকেন। অধিকন্তু
পবিত্র কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতসমূহের বাস্তবতা উপলব্ধি করেনঃ
(১)
“ইউ ছাব্বিহু লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ”।
অর্থঃ
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সব কিছুই আল্লাহর যিকির করে। (সুরা-তাগাবুন, আয়াত-১)
(২) “অইম মিন শাইয়্যিন ইল্লা ইউসাব্বিহু বিহামদিহী ওয়ালাকিল্লা তাফক্বাহুনা
তাসবীহাহুম”
অর্থঃ
এমন কোনো সৃষ্ট বস্তু নেই, যা আল্লাহর প্রশংসার পবিত্রতা বর্ণনা করে না, কিন্তু তোমরা
তাদের তাসবীহ্ বুঝতে সক্ষম হও না। (বনি ইসরাইল (ইসরা), আয়াত-৪৪)।
অর্থাৎ
যতো সৃষ্ট বস্তু রয়েছে, সবই আল্লাহর যিকির করছে কিন্তু যাদের বাতেনী কর্ণ পরিস্কার
হয়নি, তারা তা শুনতে পায় না। সুলতানুল আজগার যিকির জারি হলে শরীরের অভ্যন্তরে পবিত্রতা
ও স্বাচ্ছন্দতা অনুভুত হয়।
সহিহ তাফসীর
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
(বনি ইসরাইল-ইসরা, আয়াত-৪৪)ঃ
সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে
এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু ওদের পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। [1] নিশ্চয় তিনি অতীব সহনশীল, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
[1]অর্থাৎ, সকলেই তাঁর অনুগত এবং তারা স্ব স্ব নিয়মে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণায় ও প্রশংসায়
লিপ্ত আছে। যদিও আমরা তাদের পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করার কথা বুঝতে পারি না। এর সমর্থন
কুরআনের আরো কিছু আয়াত দ্বারাও হয়। যেমন, দাঊদ (আঃ)-এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,﴿إِنَّا
سَخَّرْنَا
الْجِبَالَ
مَعَهُ
يُسَبِّحْنَ
بِالْعَشِيِّ
وَالْإِشْرَاقِ﴾ অর্থাৎ, আমি পর্বতসমূহকে তাঁর অনুগামী করে দিয়েছিলাম,
তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। (সূরা সাদ ১৮ আয়াত) কোন কোন পাথরের
ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّ مِنْهَا
لَمَا
يَهْبِطُ
مِنْ
خَشْيَةِ
اللَّهِ﴾
অর্থাৎ, কোন কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে খসে পড়ে। (সূরা বাকারাহ ৭৪ আয়াত) কোন কোন সাহাবী
থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা রসূল (সাঃ)-এর সাথে খাবার খাওয়ার সময় খাবার থেকে ‘তসবীহ’ পড়ার
ধ্বনি শুনেছেন। (বুখারী, কিতাবুল মানাকিব ৩৫৭৯নং) অপর একটি হাদীসে এসেছে যে, পিঁপড়েরাও
আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। (বুখারী ৩০১৯, মুসলিম ১৭৫৯নং) অনুরূপ খেজুর গাছের যে গুঁড়িতে
হেলান দিয়ে রসূল (সাঃ) খুৎবা দিতেন, যখন কাঠের মিম্বর তৈরী হল এবং সেই গুঁড়িকে তিনি
ত্যাগ করলেন, তখন তা থেকে শিশুর মত কান্নার শব্দ এসেছিল। (বুখারী ৩৫৮৩নং) মক্কায় একটি
পাথর ছিল, যে রসূল (সাঃ)-কে সালাম দিত। (মুসলিম ১৭৮২নং) এই আয়াত এবং হাদীসসমূহ হতে
স্পষ্ট হয় যে, জড় পদার্থ এবং উদ্ভিদ জিনিসের মধ্যেও এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি (জীবন)
আছে, যদিও তা আমরা বুঝতে পারি না। তারা কিন্তু এই অনুভূতির ভিত্তিতে আল্লাহর পবিত্রতা
ঘোষণা করে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ, প্রামাণ্য তসবীহ। অর্থাৎ, এই জিনিসগুলো প্রমাণ
করে যে, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা এবং সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান কেবল মহান আল্লাহ। وَفِي
كُلِّ
شَيْءٍ
لَهُ
آيَةٌ
* تَدُلُّ
عَلَى
أَنَّهُ
وَاحِدٌ
‘প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন, যা প্রমাণ করে যে, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। (শুআবুল
ঈমান বাইহাকী) তবে সঠিক কথা এটাই যে, ‘তসবীহ’ তার প্রকৃত ও মূল অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
সম্মানীত মুসলমান ভাইয়েরা-
এখানে পিরের দরবারে ওয়াজিফা নামক বই থেকে ১৩ প্রকার যিকিরের
বর্ণনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। তবে পিরের দরবারভেদে যিকিরের প্রকার কম বেশী হয়ে থকে।
যেমন, অনেকে শুধু প্রথম ছয়টির যিকির করে থাকে। তাবলীগ জামাতীরা এই ছয় প্রকার যিকির
করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত যিকিরসমূহ কোরআন-হাদিসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে
যে ভাষাগুলো ব্যবহার করা হয় তা অনেকের নিকট অপরিচিত শব্দ। যাই হোক যিকিরের সংজ্ঞা অনুযায়ী
বা কোরআন-হাদিসে যেভাবে যিকির করতে বলা হয়েছে তার সাথে এরকম যিকিরের কোনো সম্পর্ক নেই।
এটা পিরদের সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবিত যিকিরের
পদ্ধতি। এভাবে যিকির করলে নাকি তাদের ক্বলব পরিস্কার হয়ে যায়। তারা পাপমুক্ত
হয়ে জান্নাতবাসী হয়। আর এভাবে যিকির না করলে তার দিল জিন্দা না তারা মহাপাপী।
যিকির নীরবে না উচ্চ স্বরে
করতে হবে
(পক্ষে/বিপক্ষে দলীলসমূহ)
যিকির উচ্চ স্বরে করার পক্ষের আলেম ও তাদের দলীলসমূহঃ
(১)
প্রশ্ন:
কেউ কেউ বলে বলে যে, জিকির জোরে করা জায়েজ নেই। আসলে কি
তাই? কুরআন ও হাদীসের এবং ফিক্বহের দলীলসহ জানতে চাই।
নামায, কুরআন তিলাওয়াত বা কারো ঘুমের ক্ষতি না হলে জিকির
জোরে করা জায়েজ। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক ফলপ্রসু। মনের গোনাহের আস্তরণ তোলার জন্য
জিকির জোরে করলেই প্রভাব বেশি হয়। আস্তে নয়। আর জোরে জিকির করা সবক দেয়া হয় মনের রোগের
চিকিৎসা হিসেবেই। জোরে জিকিরকে আবশ্যকীয় মনে করাটা যেমন বিদআত। তেমনি কারণ ছাড়া অহেতুক
এটাকে বেদআত বলাটাও নিষিদ্ধ। তবে সর্বাবস্থায়ই জিকির আস্তে করাই উত্তম।
হাদীসে এসেছে-
عن أبي
سعيد
الخدري
عن
رسول
الله
صلى
الله
عليه
و
سلم
قال
: أكثروا
ذكر
الله
عز
و
جل
حتى
يقال
إنه
مجنون(مسند
عبد
بن
حميد،
من
مسند
أبي
سعيد
الخدري،
رقم
الحديث-925)
অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ
ইরশাদ করেছেন-তোমরা অধিক পরিমাণ আল্লাহর জিকির কর যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। (মুসনাদে
আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৯২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৮১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস
নং-১১৬৫৩, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৫২৩}
এ হাদীসে লক্ষ্য করুন-জিকির এমনভাবে করতে বলা হয়েছে যে,
লোকেরা যেন পাগল বলতে শুরু করে দেয়, আর কোন ব্যক্তি যদি মনে মনে জিকির করে তাহলে কোন
ব্যক্তি তাকে কোনদিন পাগল বলবে? মনের খবর কে রাখে? তাহলে পাগল বলবে কিভাবে? পাগল বলবে
তাকেই যে জোরে জোরে পাগলের মত সর্বদা জিকির করতেই থাকে। এ হাদীস দ্বারা একথাই স্পষ্ট
প্রমাণ করছে যে, জিকির জোরে করতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে। সব সময় চুপ চাপ নয়।
وأجمع العلماء
سلفا
وخلفا
على
استحباب
ذكر
الله
تعالى
جماعة
في
المساجد
وغيرها
من
غير
نكير
إلا
أن
يشوشجهرهم
بالذكر
على
نائم
أو
مصل
أو
قارىء
قرآن
كما
هو
مقرر
في
كتب
الفقه
(حاشية
الطحطاوى
على
مراقى
الفلاح،
باب
الإمامة،
فصل
في
صفة
الأذكار-185)
وكذا فى
رد
المحتار-
كتاب
الحظر
والإباحة،
فصل
فى
البيع-9/570
والله اعلم
بالصواب
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার
ঢাকা।
ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী সাহেবের উক্ত প্রশ্নোত্তর ইন্টারনেটে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন।
(২) যিকির উচ্চ স্বরে করার পক্ষের আলেম ও তাদের দলীলসমূহঃ
জবাব:শাইখুল মুফতি তাকী উসমানী দা. বা. -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি লিখেছেন–
‘আলোচ্য
বিষয়ে মুহাক্কিক আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি এই যে, উভয় পদ্ধতির জিকির জায়েয। তবে পরিবেশ ও
স্থানভেদে ফজিলতে ভিন্নতা আছে। অনেক পরিবেশে উচ্চস্বরে জিকির করা উত্তম এবং অনেক পরিবেশে
নীচুস্বরে জিকির করা উত্তম। সুতরাং যদি কোনো হক্কানী পীর মুরিদের অবস্থা নির্ণয় করে
তাকে উচ্চস্বরে জিকির করার অযীফা দেন, তাহলে তার জন্য উচ্চস্বরে জিকির করা জায়েয। তবে
এক্ষেত্রে দুটি শর্ত আছে।
(এক) উচ্চস্বরে
জিকির করার কারণে যেন কারো ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে কিংবা এটি যেন কারো যৌক্তিক কষ্টের
‘কারণ’ না হয়।
(দুই) উচ্চস্বরে
জিকির মৌলিক ইবাদত মনে করা যাবে না; বরং এটাকে চিকিৎসা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। (ফাতাওয়া
উসমানি ১/২৬০)
আল্লাহ
তাআলা বলেন,
وَمَنْ
أَظْلَمُ
مِمَّن
مَّنَعَ
مَسَاجِدَ
اللّهِ
أَن
يُذْكَرَ
فِيهَا
اسْمُهُ
‘যে
ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে আল্লাহর নামের জিকির করা থেকে বাধা দেয়, সে বড় জালিম।’
(সূরা বাকারা ১১৪)
বলা
বাহুল্য, জিকির থেকে বাধা প্রদান করা তো তখনই সম্ভব হবে যখন জিকির সম্পর্কে অবহিত হবে।
এছাড়া
সহিহ মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযের পর উচ্চস্বরে পড়তেন–
لَا
إِلَهَ
إِلَّا
اللَّهُ
وَحْدَهُ
لَا
شَرِيكَ
لَهُ
،
لَهُ
الْمُلْكُ
وَلَهُ
الْحَمْدُ
وَهُوَ
عَلَى
كُلِّ
شَيْءٍ
قَدِيرٌ
‘আল্লাহ
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই। সকল ক্ষমতা এবং
প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতা রাখেন।’ (মুসলিম 1য১/১২১৮)
অনুরূপভাবে আরো কিছু বর্ণনা
থেকে উচ্চস্বরে জিকির করার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিস্তারিত প্রমাণাদি
হযরত থানবী রহ. ইমদাদুল ফাতাওয়াতে কিতাবুস সুলূক-এর অধীনে লিপিবদ্ধ করেছেন।
উত্তর
দিয়েছেন-মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
যিকিরে পাগল হওয়ার হাদিসটি
কি সহিহ হাদিস?
হাদিসঃ এমনভাবে জিকির কর যেনো লোকে পাগল বলে ?
عن
أبى
سعيدن
الخدرى
أن
رسول
الله
صلى
الله
عليه
وسلم
قال
اكثروا
ذكر
الله
حتى
يقولوا
مجنون
رواه
احمد
‘‘হুজুর
পাক (ছঃ) এরশাদ করেন। এত বেশী পরিমাণ আল্লাহর জিকির করিতে থাক যেন লোকে তোমাকে পাগল
বলিতে থাকে। (আহমাদ)
অন্য
হাদীছে বর্ণিত আছে, এত বেশী জিকির করিতে থাক যেন মোনাফেকগণ তোমাকে রিয়াকার বলিয়া আখ্যা
দেয়।’’
ফায়েদাঃ এই
হাদিছ দ্বারা বুঝা গেল যে, মোনাফেক এবং বেওকুফ লোক যদি জিকিরকারীকে রিয়াকার এবং পাগল
বলে তবুও জিকির হইতে বিরত থাকিবে না বরং এত বেশী এবং গুরুত্ব সহকারে জিকির করিতে থাকিবে
যেন বাস্তবিকই লোকে পাগল বলিয়া ছাড়ে। এবং পাগল তখনই বলা হয় যখন খুব বেশী এবং জোরে জোরে
জিকির করা হয়, আস্তে আস্তে জিকির করিলে কেহ পাগল বলে না।’’ (ফাজায়েলে জিকির- ২৯৭ পৃঃ)
সম্মানিত
মুসলিম ভ্রাতাগণ! জনাব শায়খ উপরোল্লিখিত হাদীস দু’টির কোন সনদ বর্ণনা করেননি আমাদের
তাহক্বীক্ব মতে হাদীস দু'টোই যঈফ (যা আমরা রিজাল এর মানদন্ডে যাচাইকৃত বিষয়টি আপনাদের
সামনে তুলে ধরব।) আর উক্ত যঈফ হাদীস দ্বারা শাইখ জলি যিকিরও প্রমাণ করতে চেয়েছেন। যা
সম্পূর্ণ কুরআন ও হাদীস পরিপন্থী। আমার ধারণা শাইখ যেহেতু চিশতীয়া খান্দানের লোক আর
চিশতীয়া তরীকার যিকর হলো জোরে জোরে, তাই তিনি সেটা প্রমাণ করার জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীসে
দলীল না পেয়ে উল্লিখিত যঈফ হাদীসের আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যায়ে আমরা প্রথমে হাদীস দু’টির
মান পাঠকের সামনে তুলে ধরব এবং জলি যিকরের ব্যাপারে কুরআন হাদীসের দলীল তুলে ধরব। এবার
লক্ষ্য করুন, হাদীস দু’টির অবস্থা।
এটি
হাকিম (১/৪৯৯), ইমাম আহমাদ (৩/৬৮), আবদুল্লাহ ইবনু হুমায়দ ‘আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ’
(১/১০২) গ্রন্থে, আস-সালাবী ‘আত-তাফসীর’ (৩/১১৭-১১৮) গ্রন্থে, অনুরূপ আল-ওয়াহেদী ‘আল-ওয়াসীত’
(৩/২৩০/২) গ্রন্থে এবং ইবনু আসাকির (৬/২৯/২) দাররাজ আবুস সামহে সূত্রে আবুল হায়সাম
হতে তিনি আবূ সাঈদ খুদরী হতে মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেন, সনদটি
সহীহ। যাহাবী তার সমালোচনা করেছেন নাকি তাকে সমর্থন করেছেন, তা আমার নিকট স্পষ্ট হয়
নি। তবে তিনি দুর্বল বলেছেন এরূপই তার কথায় মিলছে দু’টি কারণে :
১।
এ দাররাজের এ হাদীসটি ছাড়া অন্য হাদীসগুলোর ক্ষেত্রে যখন হাকিম সহীহ বলেছেন, তখন তিনি
দাররাজকে উল্লেখ করে তার (হাকিমের) সমালোচনা করে বলেছেন যে, তার বহু মুনকার হাদীস রয়েছে।
২।
তার সম্পর্কে তিনি ‘আল-মীযান’ গ্রন্থে বলেছেন, ইমাম আহমাদ বলেছেন, তার হাদীসগুলো মুনকার
এবং দুর্বল। ইয়াহইয়া বলেন, তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। তার থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে,
তিনি নির্ভরযোগ্য।
নাসাঈ
বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীস। আবূ হাতিম বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনু আদী তার কতিপয় হাদীস
উল্লেখ করে বলেছেন, তার অধিকাংশ হাদীস অনুসরণযোগ্য নয়। ইমাম যাহাবী তার কতিপয় মুনকার
হাদসি উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। এ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, হাফিয কর্তৃক হাদীসটিকে
হাসান বলা সঠিক হয় নি। যেমনটি তার থেকে মানাবী নকল করেছেন। (দেখুন যঈফ ও জাল হাদীস,
সিরিজ- ২য় খন্ড, ৭৭ পৃষ্ঠা)
শাইয়
বর্ণিত দ্বিতীয় হাদীসটির অবস্থাও ঐ একই কথা আল্লামা আলবানীর তাহক্বীক্ব আমরা আপনাদের
সম্মুখে তুলে ধরছি। হাদীসটি পেশ করা হল :
‘তোমরা
আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে করে মুনাফিকরা বলে যে, তোমরা দেখানোর জন্য তা করছ।’
হাদীসটি
দুর্বল। এটিকে ইবনুল মুবারাক ‘আয-যুহুদ’ (১/২০৪/১০২২) গ্রন্থে এবং ‘অবদুল্লাহ ইবনু
আহমাদ ‘যাওয়ায়েদুয যুহুদ’ (১০৮ পৃঃ) গ্রন্থে সাঈদ ইবনু যায়দ সূত্রে ‘আমর ইবনু মালিক
হতে তিনি আযুব জাওযা হতে মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এ
সনদটি দুর্বল। মুরসাল এবং সাঈদ ইবনু যায়দ দুর্বর হওয়ার কারণ। আবুয জাওযা সূত্রে ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) হতে মারফূ‘ মুত্তাসিল হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তার সনদটি খুবই দুর্বল।
سلسله
الاحاديث
الضعيفة
و
الموضوعة
(বাংলা
যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খন্ড, ৭৬ পৃঃ)
এই
ছিল শায়খের লিখিত হাদীসের অবস্থা। এবার লক্ষ্য করুন শায়খ উল্লিখিত হাদীসের ফায়দায় যা
লিখিছেন।
‘‘এবং
পাগল তখনই বলা হয় যখন খুব বেশি এবং জোরে জোরে যিকর করা হয়, আস্তে আস্তে যিকর করলে কেউ
পাগল বলে না’’ এর দ্বারা তিনি যিকর জলির প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এখন আমরা লক্ষ্য করব
এ বিষয়ে কুরআন হাদীসের সমাধান কি?
যিকর
সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন :
‘‘তোমরা
আল্লাহর যিকর ঐ নিয়মে কর যেভাবে তিনি তোমাদের পথ দেখিয়েছেন।’’ (সূরা বাকারাহ ১৯৮)
সূরা
আহযাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেন :
‘‘তোমরাদের
জন্য আল্লাহর রসূলকে উত্তম আদর্শ নির্ধারণ করা হয়েছে, ঐ সমস্ত লোকের জন্য যারা আল্লাহ
ও পরকালের আশা রাখে এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহর যিকর করতে চায়। (আহযাব ২১)
সুতরাং
আল্লাহ যিকর যা বান্দাগণকে তিনি তাঁর রসূল (সাঃ)’র মাধ্যমে বাতলে দিয়েছেন তার মধ্যে
আছে হিদায়াত, নূর এবং পরকালে পরিত্রাণের উপায়। মহান আল্লাহ বলেন :
“তোমার
প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে
এবং তুমি উদাসীন হবে না। (সূরা আ‘রাফ ২০৫)
এছাড়া
দেখুন এই সূরার ৫৫-৫৬ নং আয়াতে বিনীতভাবে ও গোপনে যিকর করার নির্দেশ করা হয়েছে। মহান
আল্লাহ আরো বলেন, তোমরা আল্লাহর যিকর স্মরণ কর আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো। অতএব আল্লাহ
যিকর অপেক্ষা বান্দার জন্য উত্তম কাজ আর কিছুই নেই। এটাই বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামাত।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন :
“নিশ্চয়ই
আল্লাহর যিকরই সবচেয়ে বড় মূল্যবান।
কেননা
এ যিকরের বদৌলতে বান্দা তার মালিক তার জীবনের সবকিছু আরাধ্য সেই মহান সত্তার সঙ্গ লাভ
করে। বান্দা ঐ যিকরের কারণে তার মহান প্রতিপালক, সর্ব কাজের ব্যবস্থাপকের নিকট স্মরণীয়
হয়। নেমে আসে তার জীবনের উপর অপূর্ব তৃপ্তি। মানুষ চায় তার জীবনে শান্তি ও মনের তৃপ্তি
এবং এমন এক সঙ্গ ও সাহর্চয যার কারণে সে হয়ে যায় সবচেয়ে মানসিক অভাবমুক্ত। মিটে যার
যাবতীয় চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। দূর হয় নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব। কিন্তু এটা একমাত্র ঐ
তরীকার অনুসরণে হয় যে তরীকা তার প্রভু তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর ঐ তরীকাই হলো মুহাম্মাদ
(সাঃ)’র তরীকা। সুতরাং যারা যিকর ও ওযিফা ‘আমালে মুহাম্মাদী তরীকার অনুসরণ না করে বিভিন্ন
(অর্থাৎ চিশতিয়া, সাবেরীয়া, ক্বাদেরিয়া, নকশা বন্দীয়া, মুজাদ্দেদীয় ইত্যাদির) তরীকা
মতে যিকর করে এবং ঐ নিয়মের তালকীন দেয়, তারা বিদ‘আত নীতির অনুসারী। যারা মুহাম্মাদী
তরীকার ওযীফা’ ও জিকর করতে আগ্রহী তাদেরকে এ বান্দার লেখা মুসলিমের দু‘আ বইটি সংগ্রহ
রাখতে বলছি। দ্বীন ইসলাম তথা উম্মাতে মুসলিমার মধ্যে সর্বপ্রথম ফিতনা আত্মপ্রকাশ পায়
ঐ (জোরে জোরে) হালকায়ে যিকরওয়ালাদেরই নব আবিষ্কারের মাধ্যমে। কুফার মাসজিদে কিছু মানুষ
জমায়েত হয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থাৎ একশত বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, একশত বার ‘সুবহানাল্লাহ’
একশত বার ‘আল্লাহু আকবার’ সকলে মিলে একই আওয়াজে পড়তে থাকে এবং তা একটা নেকীর কাজ মনে
করে একই সাথে সূল মিলিয়ে ঐ যিকর করতে থাকলে সহাবী ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) (মৃত্যু ৩২ হিজরী)
তাদেরকে মাসজিদ থেকে বিদ‘আতী বলে বের করে দেন এবং বলেন : এরূপ নিয়মে যিকর করার নিয়ম
আল্লাহর রসূল (সাঃ) ও সহাবাগণের নয়। সুতরাং তোমরা বিদ‘আতী, তোমরা বিদ‘আতী, তোমরা রসূল
(সাঃ)’র তরীকার পরিপন্থী নিয়মের আবিষ্কারক বিদ‘আতী দল। ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তাদের বলতেন,
তোমরা কি মুহাম্মাদ (সাঃ)’র সহাবাগণ অপেক্ষা অধিক দ্বীনদার? না, না তোমরা বিদ‘আতী,
তোমরা বিদ‘আতী। তারা বলতে লাগল, ‘আমরা’ তো ভাল মনে করে নেকীর আশায় তা করছি। ইবনু মাস‘উদ
(রাঃ) বললেন : ‘‘অনেক মানুষ ভাল মনে করে অনেক কাজ-কর্ম করবে, কিন্তু সেগুলো ভাল নয়,
কিংবা নেকীর কাজও নয়। তোমরা এতে এমন এক নিয়ম আবিষ্কার করছ যা ইতোপূর্বে ছিল না। সুতরাং
তোমরা বিদ‘আতেরই এক পথ খুলেছ।
এ
হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন স্পেনে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়াবাহ (মৃত্যু ২৭৬
হিঃ)। এ সম্পর্কে তার অতি মূল্যবান গ্রন্থ ‘আলবিদ ‘আওয়ান নাহিয়ি আনহু’ যা মিশরে ছাপিয়েছে
ঐ অর্থের হাদীস সুনান দারিমীতেও বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া দেখুন আল্লামা হারূন ইবনু বাহাউদ্দিন
আল হানাফী ‘নাযরাতুল হাক’ হক নীতির ঠেলিস্কোপ নামক কিতাবের ইবনু আবী শায়বার বরাতে উল্লেখ
করেছেন। এছাড়া ইবনুল মুবারা’র কিতাবুর রিকাক; ১৭৩ পৃষ্ঠা, বাংলায় দেখুন- ‘ফিরকাবন্দীর
মূল্য উৎস, ৩৩ পৃৎ ইসলাম ও তাসাওউফ, ২৭-২৮ পৃঃ, সত্যের পথে প্রতিবন্ধকতা, ২৩-২৪।
উল্লেখ্য
যে, যদিও তাবলীগী ভাইয়েরা এভাবে হালকায়ে যিকর আমভাবে করে না তথাপিও বাংলাদেশের এক বিশেষ
পীর যিনি চিশতিয়া, সাবেরিয়া তরীকার সাথে সম্পর্ক রাখেন তাকে শায়খের বর্ণিত উল্লিখিত
যঈফ হাদীস দ্বারা এবং তার লিখিত ফায়দা দ্বারা বার বার দলীল দিতে দেখা গেছে এবং তারা
এ ধরনের যিকরে অভ্যস্ত। আল্লাহ আমাদের হক বুঝবার তাওফীক দান করুন। সর্বশেষ বলতে চাই,
উল্লেখিত যঈফ হাদীসখানা কুরআন মাজীদেরও খিলাফ। কারণ যিকর হল ‘ইবাদাত আর ইবাদাতের ক্ষেত্রে
পাগলামীর কোন গুনজায়েশ নেই। কেননা পাগল জ্ঞানহীনের ‘ইবাদাত সঠিক হয় না এবং তা কবূল
করাও হবে না।
মহান
আল্লাহ বলেন :
‘‘যতক্ষণ
না তোমরা বুঝতে পারবে যে, তোমরা কি বলছ?’’ (আন নিসা ৪৩)
(ড.
আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী- ইসলামের ‘ইবাদাতের পরিধি, ৩৮-৩৯ পৃঃ)
নীরব ও সরব জিকিরের বিধান
আল্লাহ বলেন, “আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রভুকে স্মরণ করতে
থাকো মনে মনে একান্ত বিনয়ের সঙ্গে, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এবং অনুচ্চ স্বরে (এমন স্বরে,
যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম) আর তুমি উদাসীন হয়ো না।” (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৫)।
তাফসির : আগের আয়াতে কোরআন শরিফ শোনার আদব ও রীতিনীতি
বিষয়ে আলোচনা ছিল। এ আয়াতে আল্লাহর জিকির ও তার আদব-কায়দা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এতে অবশ্য কোরআন তেলাওয়াতও অন্তর্ভুক্ত।
নীরব ও সরব জিকিরের বিভিন্ন আহকাম :
আলোচ্য আয়াত থেকে জিকিরের তিনটি পদ্ধতি জানা যায়।
প্রথমতঃ আধ্যাত্মিক জিকির। অর্থাৎ যে জিকির কল্পনা
ও চিন্তার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এর সঙ্গে জিহ্বার সামান্য স্পন্দনও হবে না।
দ্বিতীয়তঃ যে জিকিরে আত্মার চিন্তা-কল্পনার সঙ্গে
সঙ্গে জিহ্বাও নড়বে। তবে তাও আওয়াজ অন্যরা শুনতে পাবে না। আর তৃতীয় পদ্ধতি হলো অন্তরে
উদ্দিষ্ট সত্তার উপস্থিতি ও ধ্যান করার পাশাপাশি জিহ্বার স্পন্দনও হবে এবং সেই সঙ্গে
শব্দও বের হবে, কিন্তু এ ক্ষেত্রেও আওয়াজকে অধিক উচ্চ করবে না। তবে সরব ও নীরব জিকিরের
মধ্যে কোনটি উত্তম, তার ফয়সালা ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারো জন্য
জোরে, আর কারো জন্য আস্তে জিকির করা উত্তম। এ আয়াতে মূলত জিকিরের তিনটি বিশেষ আদব তুলে
ধরা হয়েছে।
এক. জিকির মনে মনে করা।
দুই. জিকির নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে করা।
তিন. ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অর্থাৎ জিকিরের সময় অন্তরে
আল্লাহর ভয়ভীতি সঞ্চারিত হতে হবে। আর সুরা আরাফে নীরবে ও গোপনে জিকির করার কথা বলা
হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা নিজ পালনকর্তাকে ডাকো বিনীতভাবে ও সংগোপনে। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)
জিকিরের উত্তম পদ্ধতি : কোরআন ও হাদিসের বহু স্থানে
আল্লাহর জিকির করার প্রতি বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিকির আস্তে করবে, না জোরে
করবে এ নিয়েও সমাজে মতপার্থক্য দেখা যায়। সুরা আরাফের আয়াত থেকে আস্তে জিকির করা উত্তম
বলে প্রমাণিত হয়। খায়বর যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামের তাকবির ধ্বনি উচ্চস্বরে হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেন, 'হে জনগণ, নরম হও, বিনম্র আওয়াজে ডাকো...তোমরা কোনো বধির বা অনুপস্থিত
কাউকে ডাকছ না।' (মুসলিম)
হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, 'পূর্ববর্তী মনীষীরা বেশির
ভাগ সময় আল্লাহর জিকির ও দোয়ায় মশগুল থাকতেন; কিন্তু কেউ তাঁদের আওয়াজ শুনতে পেত না।'
তবে শরিয়তে যেসব স্থানে সরব ও উচ্চস্বরে জিকির করার নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে সরব জিকির
উত্তম। যেমন-আজান, ইকামত, কোরআন তিলাওয়াত, নামাজের তাকবির, তাকবিরে তাশরিক ও হজের
'লাব্বাইকা' ইত্যাদি উচ্চস্বরে বলা উত্তম।
আর অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চস্বরে জিকির করার জন্য কয়েকটি
শর্ত রয়েছে।
এক. এতে লোক দেখানো মনোভাব থাকতে পারবে না।
দুই.
নিজের জিকিরের শব্দে অন্যের নামাজ, তেলাওয়াত, কাজকর্ম বা বিশ্রামে ক্ষতি করা যাবে না।
তিন.
জিকিরের এ পদ্ধতিকেই একমাত্র সঠিক পদ্ধতি হিসেবে জ্ঞান করা যাবে না।
জিকিরের প্রকারভেদ : আসলে কেবল মুখে উচ্চারণের
নামই জিকির নয়। জিকির সাধারণত তিন প্রকার।
প্রথমত- জিকিরে লিসানি বা মৌখিক জিকির।
দ্বিতীয়ত- জিকিরে কালবি বা আন্তরিক জিকির।
তৃতীয়ত- জিকিরে আমালি বা কর্মগত জিকির।
জিকিরে লিসানি হচ্ছে মুখে মুখে আল্লাহু, আল্লাহু আকবার,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ প্রভৃতি উচ্চারণ করা। এ প্রকার জিকির মুখ-জিহ্বা অন্য কোনো শব্দ
উচ্চারণে ব্যস্ত না থাকলে অধিকাংশ সময় করা যায়। তবে খাদ্য গ্রহণকালে, মুখে খাদ্য চিবানো
অবস্থায় এবং প্রস্রাব-পায়খানাকালে জিকির করা যায় না।
জিকিরে কালবি আক্ষরিক অর্থেই সার্বক্ষণিক জিকির। মোমিন
তার কলবে আল্লাহর স্মরণ সদা জাগরূক রেখে এবং মনেপ্রাণে আল্লাহকে অবিস্মৃত রেখে পার্থিব-অপার্থিব
সব কাজ করতে পারেন। যে কলবে আল্লাহর জিকির জারি থাকে, সে কলব অনুক্ষণ প্রশান্তময় থাকে।
জিকিরে আমালি হচ্ছে মোমিনের ফরজ-নফলসহ সব ধরনের ইবাদত-বন্দেগি।
এ অর্থে যেকোনো নামাজ, হজ, ওমরাহ বা যেকোনো দোয়া-মোনাজাত প্রভৃতিও জিকির বা আল্লাহর
জিকির। মুমিনদের জন্য জীবনের সর্বক্ষেত্রে কোনো না কোনো উপায়ে আল্লাহকে স্মরণ করতেই
হবে। আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হওয়ার সুযোগ নেই।
(তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)
শেষ কথাঃ যারা জোড়ে যিকিরের পক্ষে
তারা যিকির বলতে শুধু বোঝে স্টেজে জমায়েত হয়ে বা ওয়াজ মাহফিলে একত্রিত লোকজন একজনের
নেতৃত্বে শ্লোক গাঁথা কিছু কথার মাধ্যমে শেষে আল্লাহু আল্লাহু বা ইল্লাল্লাহ যিকির
করা, যা কোরআন-হাদিস বহির্ভুত। ইসলাম এই জাতীয় যিকির স্বীকৃতি দেয় না।
ইসলামের যাবতীয় বৈধ কর্মকান্ডের
মাধ্যমে আল্লাহকে সার্বক্ষণিক স্মরণ করার নামই হচ্ছে যিকির। মাধ্যমগুলো হতে পারে কালিমা,
সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত, দরুদ পাঠ ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোয়া পাঠ।
সংযুক্ত ভিডিও ও পিরের
দরবারে ওয়াজিফা মোতাবেক যিকির সম্পূর্ণ বিদআত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কুফরি।
যারা কুফরি আর বিদআতের
পক্ষে তাদের পরিনতি হবে করুন। তাদের কোনো তওবা বা কোনো দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে
না, যতোক্ষণ না সে তার কুফরি বা বিদআতী কর্মকান্ড পরিত্যাগ না করবে।
যিকিরে লাফালাফি ব্যক্তিদের
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা কেহই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে ও সহিহভাবে পড়তে
জানে না। এদের পির বাবার পুরো সালাতই বিদআতী সালাত। অধিকন্তু হালাল হারাম বেছে চলে
না। বাড়ীতে পর্দার কোনো বিধান নেই। সুদ, ঘুষ, বেহাপনা ও অশ্লীলতার সাথে অনেকেই জড়িত।
আমলের ক্ষেত্রে ৯৫% বিদআতের উপর প্রতিষ্ঠিত। কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যাকারী। এমন ব্যক্তিরা
একত্রিত হয়ে আল্লাহু যিকির করে কিন্তু তাদের অন্ন, বস্ত্র ও পানী হারাম তাদের দোয়া
আল্লাহ কিভাবে কবুল করবেন।
রাসুল সাঃ বলেন,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ
পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। (এবং সর্বক্ষেত্রে পাক-পবিত্রতার আদেশই
তিনি করেছেন। সেই সম্পর্কে) আল্লাহ রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশই
করেছেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উল্লেখ করলেন, এক ব্যক্তি
দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি। এমতাবস্থায় ঐ
ব্যক্তি উভয় হস্ত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে।
কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ
হারাম, কিভাবে তার দো’আ কবুল হবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।
২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (নূর-৬৩)।
৩। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)।
৪। “তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন। (বাকারা-৮৫)।
৫। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।
৬। আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৪৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৭। সাহ্ল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হবে।
আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) । এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম) দূর হোক, দূর হোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৮। “হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)।
৯। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে- যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।” (মেশকাত)।
১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিতঃ
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)।
১১। আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০,আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।
১২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
তিরমিযী ২৬৪৯, ইবনু মাজাহ ২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮।
১৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)-আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২।
১৪। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী ১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী ২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯)
১৫। কা’ব বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ) কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৬। আলী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে প্রবেশ করল।” (বুখারী ১০৬, মুসলিম ২)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৭। সালামাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী ১০৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৮। মুগীরাহ বিন শু’বাহথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন এমন হাদীস বর্ণনা করে যার বিষয়ে সে মনে করে যে তা মিথ্যা, তাহলে সে (বর্ণনাকারী) মিথ্যাবাদীদের একজন।” (মুসলিম, সহীহুল জামে’ ৬১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১৯। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে (বিদআতী পির-অলি ও আলেম), যারা তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২০। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম ১৬) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২১। উক্ত আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ১১০, ৬১৯৭, মুসলিম ৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২২। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “বিনা ইল্মে যাকে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফতোয়া দ্বারা সে ভুল কর্ম করে) তবে তার পাপ ঐ মুফতীর উপর এবং যে ব্যক্তি তার ভাইকে এমন পরামর্শ দেয় অথচ সে জানে যে তার জন্য মঙ্গল অন্য কিছুতে আছে, তবে সে ব্যক্তি তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে।” (আবূ দাঊদ ৩৬৫৯, হাকেম ৩৫০, সহীহুল জামে’ ৬০৬৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৩। আবূ সাঈদ খুদরীথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার দ্বারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর, তাদের পূর্বে পূর্বে যারা কুরআন শিক্ষা করে তার দ্বারা দুনিয়া যাচনা করবে। যেহেতু কুরআন তিন ব্যক্তি শিক্ষা করে; প্রথমতঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা বড়াই করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা উদরপূর্তি করবে এবং তৃতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তেলাঅত করবে।’ (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিঃ সহীহাহ ২৫৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪। আবু দারদা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক তার গলায় লটকাবেন।” (বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল জামে’ ৫৯৮২) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২৫। জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে, যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন শাস্তি ভোগ করান।” (আহমাদ ৪/৩৬৪, আবূ দাউদ ৪৩৩৯, ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৬। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহবান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।” (মুসলিম ৬৯৮০ প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৭। আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (বুখারী ৩২৬৭, মুসলিম ৭৬৭৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৮। আনাস (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৯। উমার বিন খাত্তাব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “ইসলাম বিজয় লাভ করবে। যার ফলশ্রুতিতে বণিকদল সমুদ্রে বাণিজ্য-সফর করবে। এমন কি অশ্বদল আল্লাহর পথে (জিহাদে) অবতরণ করবে। অতঃপর এমন একদল লোক প্রকাশ পাবে; যারা কুরআন পাঠ করবে (দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে ক্বারী ও আলেম হবে)। তারা (বড়াই করে) বলবে, ‘আমাদের চেয়ে ভালো ক্বারী আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় আলেম আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় ফকীহ (দ্বীন-বিষয়ক পন্ডিত) আর কে আছে?’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের মধ্যে কি কোন প্রকারের মঙ্গল থাকবে?” সকলে বলল, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক জানেন।’তিনি বললেন, “ওরা তোমাদেরই মধ্য হতে এই উম্মতেরই দলভুক্ত। কিন্তু ওরা হবে জাহান্নামের ইন্ধন।”(ত্বাবারানীর আউসাত্ব ৬২৪২, বাযযার, সহীহ তারগীব ১৩৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩০। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
“তোমরা অনুসরণ কর, নতুন কিছু রচনা করো না। কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন পন্থাই অবলম্বন কর।” (সহীহ, সিলসিলা যায়ীফাহ ২/১৯),হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৩১। আলী বিন আবী তালেব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।” (মুসলিম ৫২৪০নং), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৩২। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ---ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মুসলিম ৪০৩), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৩৩। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী ৪৮, ৬০৪৪, মুসলিম ২৩০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৪। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর-পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাঊদ ২০৪৪ নং, বিশুদ্ধ সূত্রে, সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৫। সুহাইল থেকে বর্ণিতঃ
একদা (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে কবরের নিকট দেখলেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন, ‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’ আমি বললাম, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফেরেশতার মাধ্যমে) পৌঁছে যায়। আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের লোকেরা সমান।’ (সুনান সাঈদ বিন মানসূর, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২২০পৃঃ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৬। আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন) অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮ নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৭। আরফাজাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে বড় ফিতনা ও ফাসাদের প্রার্দুভাব ঘটবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতিকে (নষ্ট করে) বিচ্ছিন্নতা আনতে চাইবে সে ব্যক্তিকে তোমরা তরবারি দ্বারা হত্যা করে ফেলো; তাতে সে যেই হোক না কেন।” (মুসলিম ৪৯০২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৮। ষাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি আমার উম্মতের উপর ভ্রষ্টকারী ইমাম (আলেম ও নেতা প্রভৃতি)র দলকেই ভয় করি।” (আহমাদ ২২৩৯৩, আবূ দাঊদ ৪২৫৪, তিরমিযী ২২২৯ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৯। আবূ সাঈদ (রাঃ)ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে মতবিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। একদল হবে যাদের কথাবার্তা সুন্দর হবে এবং কর্ম হবে অসুন্দর। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের গলদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা (সেইরূপ দ্বীনে) ফিরে আসবে না, যেরূপ তীর ধনুকে ফিরে আসে না। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। শুভ পরিণাম তার জন্য, যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং যাকে তারা হত্যা করবে। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে মানুষকে আহবান করবে, অথচ তারা (সঠিকভাবে) তার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, সে হবে বাকী উম্মত অপেক্ষা আল্লাহর নিকটবর্তী। তাদের চিহ্ন হবে মাথা নেড়া।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৩৬৬৮ নং), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৪০। আবূ বাকরাহ থেকেবর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “----- এক জাতি হবে যারা গরুর লেজ ধরে চাষবাস করবে এবং জিহাদে বিমুখতা প্রকাশ করবে, তারা হবে ধ্বংস।” (আবূ দাঊদ ৪৩০৬, মিশকাত ৫৪৩২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪১। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম ৫০৪০, আবূ দাঊদ ২৫০৪ নং), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৪২। মাসরূক থেকে বর্ণিতঃ
আমি আয়েশা (রাঃ)র নিকট হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘হে আবূ আয়েশা! যে ব্যক্তি তিনটের মধ্যে একটি কথা বলে, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করেঃ
(ক) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ তাঁর প্রতিপালক (আল্লাহ)কে দেখেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। যেহেতু আল্লাহ বলেন, “দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, কিন্তু দৃষ্টিসমূহ তাঁর আয়ত্বে আছে এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী; সম্যক পরিজ্ঞাত।” (আনআমঃ ১০৩)
(খ) “কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।”
(শূরাঃ ৫১)
(শূরাঃ ৫১)
(গ) বর্ণনাকারী মাসরূক বলেন, আমি হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। এ কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম, ‘হে উন্মুল মু’মিনীন! একটু থামুন, আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবেন না। আল্লাহ তাআলা কি বলেননি যে,
“নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।” (নাজ্মঃ ১৩) “অবশ্যই সে তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দর্শন করেছে।” (তাকভীরঃ ২৩)
মা আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন,
“তিনি হলেন জিব্রীল। তাঁকে ঐ দুইবার ছাড়া অন্য বারে তার সৃষ্টিগত আসল রূপে দর্শন করিনি। যখন তিনি আসমানে অবতরণরত ছিলেন, তাঁর বিরাট সৃষ্টি-আকৃতি আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল!”
(২) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ আল্লাহর অবতীর্ণ কিছু অহী গোপন করেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর (যদি তা না কর, তাহলে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।)” (সূরা মাইদাহ ৬৭ আয়াত)
(৩) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ ভবিষ্যতের খবর জানেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” (নাম্লঃ ৬৫), (মুসলিম ৪৫৭নং, তিরমিযী ৩০৬৮নং, প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৩। বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধঃ
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ, সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)
(খ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ক্রটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)
(গ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ, কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।
(ঘ) তিনি অন্যত্র বলেছেন,
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)
(ঙ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
৪৪। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(ক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” (বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ৪৫৮৯নং)
(খ) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।” (৪৫৯০নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৪৫। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)
বিদআতী
পির-অলি ও আলেমদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন
(গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব
৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুপ্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরাঃ আমাদের সমাজে সম্প্রতি হাজার হাজার বিদআতী পির-অলি ও আলেমের আবির্ভাব
ঘটেছে। এই সব ভন্ড আলেম আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ইতিমধ্যে ভন্ডরা
হাদিস নামে মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনী বলে বলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এক সময় তারা
যা বলতো সাধারন মুসলমান তাই বিশ্বাস করতো। কিন্তু বর্তমানে কোরআন ও হাদিসের সহিহ চর্চার
কারনে বিশেষ করে ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাদিস গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করায় সকল
শিক্ষিত মুসলমানরা যখন আদ্যোপান্ত পড়ে বুঝতে পারল যে, এতোদিন ভন্ড আলেমরা শুধুই মনগড়া
মিথ্যে ওয়াজ করেছে আর বর্তমানে এসবের বিরোধীতা করায় তথা বিদআতীদের গোপন রহস্য ফাঁস
করায় এই সব ভন্ড আলেমদের ধর্ম ব্যবসায় ধ্বস নামা শুরু হয়েছে। আফসোসের বিষয়
এদের মধ্যে আছে কোরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ বা মুফতি, মুহাদ্দিস, পির, অলি আবার অনেকে
আছে ডক্টরেট পাশ। কিন্তু এরা সকলেই জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক যেমন ওয়াজ করে তেমনি বিভিন্ন
বিদআতী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এরা এক দিকে যেমন গোমরাহী হয়ে জাহান্নামী
হচ্ছে তেমনি এদের সাগরেদ বা মুরিদ কিংবা অনুসারীদেরকেও জাহান্নামী বানাচ্ছে। ইমান আমল
নষ্ট করে দিচ্ছে।
এই দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশের
তথা কথিত ভন্ড পির বা অলি এবং আরেক শ্রেণির ওয়াজকারী ধর্ম ব্যবসায়ী।
আপনারা একটা কথা মনে রাখবেন,
আল্লাহকে ডাকতে কোনো মাধ্যম লাগে না। কোরআন আছে পড়বেন, জানবেন, মানবেন আর সহিহ হাদিস
কোথায় পাবেন? বোখারীতেও জাল হাদিস, মিশকাতেও জাল হাদিস, এখন সাধারন মুসলমানরা বুঝবে
কেমনে? অনেক শিক্ষিত আলেম যারা মুফতি, মাওলানা, হাফেজ ইত্যাদি তাদেরও দেখা যায় জাল-জইফ হাদিস নির্ণয় করার অভিজ্ঞতা নেই, তাদেরকে সঠিক তথ্য দেয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। আপনারা আমার ব্লগে নিয়মিত
অধ্যায়ন করতে থাকুন, দেখবেন ধাপে ধাপে সব পেয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ।
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর
কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২,
ঢাকা, বাংলাদেশ।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের
(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ
থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর
কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ
মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি
আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব
থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি
আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর
কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২,
ঢাকা, বাংলাদেশ।
ইসলামি সকল পর্ব এক সাথে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক
করুন-
No comments:
Post a Comment