Search This Blog

Thursday, March 12, 2020

আলেমদের নিকট বহুল প্রচলিত কতিপয় জাল-জইফ হাদিস


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আলেমদের নিকট বহুল প্রচলিত কতিপয় জাল-জইফ হাদিস
সালাত জান্নাতের চাবি কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত । অনেকে বুখারিতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়াই পছন্দ করে। আসলে এর কোন ভিত্তি নাই।
হাদিস নং ১। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছা) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল সালাত। আর সালাতের চাবি হল পবিত্রতা।(মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩ তিরমিজি হা/৪ মিস্কাত হা/২৪৯ ফাজায়েলে আমাল ৮৮ পৃ)।
তাহকিকঃ হাদিস এর প্রথম অংশ জঈফ (জঈফুল জামে হা/৫২৬৫,সিলসিলা ই জঈফা হা/৩৬০৯) দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদ এছহিহ সুত্রে বর্ণিত আছে। (আবু দাউদ হা/৬১, তিরমিজিহা/৩)হাদিসটির প্রথম অংশ জঈফ হবার কারন হল- উক্ত সনদ এ দুইজন দুর্বল রাবি আছে। (ক) সুলাইমান বিন করম ও (খ) আবু ইয়াহিয়া আল-কাত্তাত। (আলবানি, মিস্কাত হা/২৯৪ এর টিকা দ্রষ্টব্য) জ্ঞাতব্যঃ জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাব্ববিহ (রহ) থেকে যে বর্ণনা এসেছে তা হল-“লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” কি জান্নাতের চাবি? তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আসো যার দাঁত রয়েছে,তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথায় খোলা হবে না। (বুখারি ১/১৬৫ পৃ হা/১২৩৭ এর পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য) এছাড়াও আরও অন্যান্য ছহিহ হাদিস দারাও এটা প্রমানিত। (বুখারি হা/৫৮২৭, মুসলিম হা/২৮৩, ) তাই, “লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” হল জান্নাতের চাবি আর শরিয়াতের অন্যান্য আমল-আহাকাম অর্থাৎ সালাত, সিয়াম,হাজ, যাকাত ইত্যদি ওই চাবির দাঁত।
হাদিস নং ২। সালাত হল দিনের খুঁটি। সুতারাং যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করলো সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করলো। আর যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল।(কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃ, তাযকিরাতুল মউজুয়াত পৃ ৩৮,ফাজায়েলে আমাল ২৯ পৃ)
তাহকিকঃ সমাজে হাদিসটির সমাধিক প্রসার থাকলেও হাদিসটি গ্রহনযোগ্য নয়। ইমাম নাবাবি (রহ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার।(কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃ,)
হাদিস নং ৩। রসুল (সা) বলেছেন, সালাত মুমিনের মিরাজ। (তাফসিরে রাযি ১/২১৮ পৃ, তাফসিরে হাক্কি ৮/৪৫৩ পৃ,মিরকাতুল মাফাতিহ ১/১৩৪ পৃ, “ইমান” অধ্যায়)
তাহকিকঃ উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নাই। এটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
হাদিস নং ৪। আনাস (রা) বলেন, রসুল (সা) বলেছেন, “সালাত মুমিনের নুর” (মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫, ফাজায়েলে আমাল ২৯পৃ)
তাহকিকঃ বর্ণনাটি জইফ। মুহাদ্দিস হুসাইন সালিম আসাদ (রহ) বলেন, উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।(তাহকিক মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫,) উক্ত হাদিসের সনদে ইসা ইবনু মাইসারা নামে একজন দুর্বল রাবি আছে।(সিলসিলাই জইফা হা/১৬৬০)উল্লেখ্য, ছলাত নুর, সাদাকা দলিল মর্মে মুসলিমে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা ছহিহ।(মুসলিম হা/৫৫৬, মিস্কাত হা/২৮১)
হাদিস নং ৫। যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করে সে যেন আদম (আ) এর সাথে পঞ্চাশ বার হজ করে এবং যে ব্যক্তি জামাতের সাথে যোহরের সালাত আদায় করে সে যেন নুহ (আ) এর সাথে চল্লিশ কিংবা ত্রিশ বার হজ করে। এভাবেই অন্যান্য ওয়াক্ত সে আদায় করে।(হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আস-ছাগানি, আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ৪২)
তাহকিকঃ বর্ণনাটি জাল ও মিথ্যা। (আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)
হাদিস নং ৬। সালমান ফারসি (রা) বলেন, আমি রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে আগিয়ে গেলো সে ইমানের পতাকা নিয়ে গেলো। আর যে ব্যক্তি ভোরে (ফজরের সালাত আদায় না কওরে) বাজারের দিকে আগিয়ে গেলো সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেলো। (ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, বঙ্গানুবাদ মিস্কাত হা/৫৮৯)
তাহকিকঃ উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবি রয়েছে। ইমাম বুখারি (রহ)সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ গন তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছে। ইবনু হিব্বান (রহ) বলেন, সে নির্ভরশীল ব্যক্তির নাম দিয়ে ধারনা পূর্বক বহু জাল হাদিস বর্ণনা করেছে।(আলবানি, জইফ ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, মিস্কাত হা/৬৪০ টিকা দ্রষ্টব্য)
হাদিস নং ৭। ইমরান ইবনু হুসাইন (রা) বলেন, রাসুল (সা) কে একদা জিজ্ঞাস করা হল, আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে-“নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” তখন তিনি বললেন, যাকে তার সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না“ তার সালাত হয় না”।(তাফসির ইবনে কাসির; সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫,ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭২)
তাহকিকঃ হাদিসটি জইফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবি রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন। (সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫৫)
হাদিস নং ৮। ইবনু আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন, যার সালাত তাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেয়া ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না। (ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭৩, তাবারানি, আল-মুজামুল কাবিরহা/১০৮৬২)
তাহকিকঃ বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লইস ইবনু আবি সালিম নামক ত্রুটিপূর্ণ রাবি রয়েছে। (সিলসিলা ই জইফা হা/২)
জ্ঞাতব্যঃ উক্ত বর্ণনা প্রমান করে ত্রুটিপূর্ণ কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করলে সালাত কবুল হয়না। সুতারাং সালাত আদায় করে কোন লাভ নাই। কিন্তু উক্ত ধারনা সঠিক নয়। বরং সালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরাইরা (রা) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা) এর নিকটে এসে বললেন, অমুক ব্যক্তি রাতে সালাত আদায় করে আর সকাল হলে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, সালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত রাখবে।(আহামাদ হা/৯৭৭৭, মিস্কাত হা/১২৩৭, সনদ ছহিহ)
যয়ীফ হাদিস অথচ মানুষ এগুলোই সবচেয়ে বেশী আমল করে!
১- যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় আউজু বিল্লাহিস সামি’ইল আলিমি মিনাশ সাইতনির রজিম বলে সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা দুয়া করবেন ও ঐ দিন তার মৃত্যু হলে শহীদী মৃত্যু হবে। (হাদিস জয়ীফ- জয়ীফ আত তিরমিজি-২৯২২) ২- যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন ১বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে ১০বার কুরআন খতমের নেকী দিবেন। (এর সনদ খুবই দুর্বল- সিলসিলাহ যয়িফাহ ১৩৩৬)
৩- যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করবে, তাকে কখনো অভাব অনটন গ্রাস করবে না। (হাদিস জয়ীফ, সিলসিলাহ যয়িফাহ ২৮৯)
৪- সূরা যিলযাল কুরআনের অর্ধেকের সমান। (এই হাদিসের সনদে ইয়ামান রয়েছে, এই ব্যক্তির ব্যাপারে ইমাম বুখারি (রঃ) বলেন তিনি মুনকারুল হাদিস, ইমাম নাসাই বলেন তিনি নির্ভরযোগ্য নন, ইমাম হাকিম সহিহ বলাতে ইমাম জাহাবি তার বিরোধিতা করে দুর্বল বলেন) এগুলো ছাড়াও বাজারে বহুল প্রচলিত মানুষের ঈমান ধ্বংসকারী কিছু বই যেমন-
১। মুকসেদুল মুমিনিন,
২। নিয়ামুল কুরআন,
৩। নূরানি পাঞ্জেগানা আরও কতো কি রয়েছে যা মানুষের ঘরে ঘরে পাওয়া যাবে,
দেখুন এই বইগুলোর অবস্থা-
১- সূরা মূলক জাফরানের কালি দিয়ে লিখে তাবিজ আকারে গলায় পরিধান করলে যাবতীয় মনবাঞ্ছা পূর্ণ হবে। (নূরানি পাঞ্জেগানা) নাউজুবিল্লাহ নিঃসন্দেহে তাবিজ- কবজ শিরক।
২- যে বেক্তি কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করে মৃত্যু ব্যক্তিগনের রুহের উপর বখসিয়ে দেয়, সেই ব্যক্তি কবর স্থানের সকল কবর বাসীগনের সম-সংখ্যক নেকী লাভ করে। (নিয়ামুল কুরআন) কি সুন্দর মনগড়া ফযিলত, কবর স্থানে গিয়ে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করলে কবর স্থানে মৃত্যু সব ব্যক্তি জীবনে যতো আমল করেছে সমস্ত আমলের সমান নেকী সে পেয়ে যাবে। এজন্যই তো দেখা যায় কবরের পাশে গিয়ে অনেক হুযুররা নিজে তো পড়ছে অন্যদেরকে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করতে বলে। আমাদের দেশের একদল মানুষ বলে থাকে, হাদিস আবার জাল- জইফ হয় নাকি! হাদিস তো হাদিসই। তাদেরকে বলবো এটাও যদি হাদিস হয় তবে সারা জীবন যারা সলাত, যাকাত, সিয়াম আদায় করেনি তারা শুধু রাসুল (সাঃ)-এর কবরের পাশে গিয়ে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করলেই তো খেল খতম, পেয়ে গেলো রাসুল (সাঃ)-এর সব আমল। এইসব ঈমান ধ্বংসকারী বই,
১। মুকসেদুল মুমিনিন,
২। নিয়ামুল কুরআন,
৩। নূরানি পাঞ্জেগানা ঘরে থাকলে এখনই পুরিয়ে বা ছিড়ে ফেলুন।
সালাতুল আওয়াবীন
আওয়াবীনের নামায আসলে চাশতের নামাযের অপর নাম। মহানবী (সাঃ) বলেন, “চাশতের নামায হল আওয়াবীনের নামায।” (জামে ৩৮২৭নং) আর এ হাদীস এ কথারই দলীল যে, মাগরেবের পর উক্ত নামের নামাযটি ভিত্তিহীন ও বিদআত। যেমন এই নামাযের খেয়ালী উপকার বর্ণনায় বলা হয়ে থাকে যে, সৃষ্টিজগৎ ঐ নামাযীর অনুগত হয়ে যায় এবং
১২ বছরের কবুল হওয়া ইবাদতের সওয়াব লিখা হয়।
যে হাদীসে মাগরেব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাযকে আওয়াবীনের নামায বলা হয়েছে, তা সহীহ নয়; যয়ীফ। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬১৭, যইফ জামে ৫৬৭৬নং)
তিরমিযী ও ইবনে মাজাতে যে ৬ রাকআত নামায মাগরেবের পর পড়লে ১২ বছর ইবাদতের সমান হওয়ার কথা বলা হয়েছে তা সহীহ নয়। বরং তা খুবই দুর্বল হাদীস। (তিরমিযী, সুনান ৬৬, সিযা: ৪৬৯, যইফ জামে ৫৬৬১নং) যেমন ৫০ বছরের গুনাহ মাফ হওয়ার হাদীসও দুর্বল। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৮, যইফ জামে ৫৬৬৫নং)
তদনুরুপ এই সময়ে ২০ রাকআত নামাযে বেহেশ্তে একটি গৃহ্‌ লাভের হাদীসটিও জাল ও মনগড়া। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৭, যইফ জামে ৫৬৬২নং)
অবশ্য সাধারণভাবে নফল নামায যেমন নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ে পড়া যায়, তেমনি মাগরেব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সাধারণ নফল অনির্দিষ্টভাবে পড়া যায়। মহানবী (সাঃ) এই সময়ে নফল নামায পড়তেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। (জামে ৪৯৬২নং)

 প্রশ্ন: যইফ / দুর্বল হাদিস কাকে বলে এবং দুর্বল হাদিস কি আমলযোগ্য?

উত্তরঃ যঈফ অর্থ দুর্বল। যে হাদীসের মধ্যে সহীহ হাদীসের শর্তাবলী থেকে এক বা একাধিক শর্তের ঘাটতি রয়েছে সেটিকে যঈফ হাদীস বলা হয়। যেমন সনদ বা বর্ণনাসূত্রের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, বর্ণনাকারী عدل ন্যায়পরায়নতা, দ্বীনদারী, তাকওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া, অথবা এটা প্রামাণিত হওয়া যে, বর্ণনকারী হাদীস যথার্থভাবে সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে- তা স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে হোক বা তার কাছে সংরক্ষিত হাদীসের কিতাবগুলো কোন কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে হোক।
এটি অত্যন্ত সুক্ষ্ম বিষয়। তাই হাদীস শাস্ত্রের বিদগ্ধ মুহাদ্দিসগণ সার্বিক দিক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কোনও হাদীস সহীহ না কি যঈফ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।
দুর্বল হাদীস অনুযায়ী কি আমল করা বৈধ? ফযীলতের ক্ষেত্রে কি দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য?
দুর্বল হাদীস সাধারণভাবে অগ্রহনযোগ্য। তবে কিছু মুহাদ্দিস কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার বৈধতার পক্ষে মত দিয়েছেেন। যেমন:
– যদি হাদীসটি অতিরিক্ত দূর্বল না হয়
– বা শরীয়তের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক না হয়
– বা হালাল-হারাম সংক্রান্ত না হয় তাহলে দুর্বল হাদীসের প্রতি আমল করা জায়েয রয়েছে। অন্যথায় জায়েয হবে না।
ইমাম মুসলিম, ইমাম আলবানীসহ আরও বহু আলেম কোন ধরণের যঈফ হাদীসের প্রতি আমল না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এটিই অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য মত ইনশাআল্লাহ।
অপরপক্ষে একদল মুহাদ্দিস পূর্বোক্ত শর্তাবলী সাপেক্ষে ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার বৈধতার পক্ষে মত দিয়েছেন। এদের মতে ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস আমলযোগ্য। যেহেতু তা ইসলামের হালাল-হারাম ইত্যাদি বিধিবিধান সংক্রান্ত নয়।
কিন্তু প্রথম মতটি অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য। অর্থাৎ যঈফ হাদীস কখনোই আমলযোগ্য নয়। চাই তা হালাল-হারাম সংক্রান্ত হোক অথবা ফযীলত সংক্রান্ত হোক। কেননা, উক্ত দুর্বল হাদীসটি প্রকৃতপক্ষে রাসুল সা. থেকে অনুমদিত কি না সেটাই সন্দেহপূর্ণ। সুতরাং বিশুদ্ধ সূত্রে সুসাব্যস্ত হাদীস (সহীহ বা হাসান হাদীস) ছাড়া সন্দেহপূর্ণ যঈফ হাদীস আমলযোগ্য হতে পারে না।
প্রকৃতপক্ষে আমলের ফযীলতে যত সহীহ হাদীস বিদ্যামান রয়েছে একজন মুসলিম যদি সারা জীবন সেগুলোর প্রতি আমল করে তারপরও তা শেষ করতে পারবে না। তাহলে যঈফ বা দুর্বল হাদীসের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন কি?
(সমাপ্ত)
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:     
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে  এর উপর ক্লিক করুনঃ


PLEASE SHARE ON

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...