বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
মহিলা ও পর্দা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর
কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া বৈধ কি?
না। গাড়ী, রিক্সা বা বাইকে এমন কোন পুরুষের সাথে
মহিলার একাকিনী যাওয়া বৈধ নয়, যার সাথে কোনও সময় তার বিবাহ বৈধ।
বৈধ নয় বাস, ট্রেন বা জলজাহাজের কোন সফরে একাকী
যাওয়া, এমনকি কোন ইবাদতের সফরেও নয়। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি
যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর বৈধ
নয়।” ৪৯৩ (বুখারী, মুসলিম ৩৩৩১ নং)
তিনি আরও বলেন, “কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর
সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে
কোন নারী যেন সফর না করে।” এক ব্যক্তি আবেদন করল, ‘হে আল্লাহ্র রাসুল! আমার স্ত্রী
হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি।’ তিনি বলেন, “যাও,
তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।” ৪৯৪ (বুখারী, মুসলিম ৩৩৩৬ নং)
তিনি আর বলেছেন, “যখনই কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে
নির্জনতা অবলম্বন করে, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয় সাথী (কোটনা)হয়।” ৪৯৫ (তিরমিযী, সহীহ
তিরমিযী ৯৩৪ নং)
স্থানীয় কোথাও গেলে সঙ্গে যদি অন্য কোন সাবালক
ছেলে, পুরুষ বা মহিলা থাকে, তাহলে যাওয়া চলে। কিন্তু সফর হলে সঙ্গে মাহরাম ছাড়া মোটেই
যাওয়া বৈধ নয়; যদিও সাথে অন্য মহিলা বা পুরুষ থাকে। ৪৯৬ (ইবনে বায, ইবনে উষাইমীন)
মহিলাদের জন্য পর্দা করা উত্তম, নাকি তা ফরয?
মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরয। করলে উত্তম, না করলেও
চলে---এমন নয়। আর পর্দা বলতে চেহারা ঢাকা পর্দা। মহানবী (সঃ)এর যুগে পর্দায় মহিলাদের
চেহারা ঢাকার ব্যাপারে দুই শ্রেণীর আমল ছিল। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরে সকলেই
চেহারা ঢেকে পর্দা করত। কোন কোন হাদীসে চেহারা না ঢাকার যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা পর্দার
বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেকার। ৪৯৭ (ইবনে উষাইমীন)
পত্র-পত্রিকা, টিভি বা নেটের ছবিতে মহিলা দেখা কি হারাম?
হ্যাঁ। ছবিতেও গম্য মহিলা দেখা হারাম। যেহেতু তাতেও
ফিতনা আছে। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, “বিশ্বাসীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত
করে এবং তাদের যৌন অঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে; এটিই তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ওরা যা
করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।” (নূরঃ ৩০) ৪৯৮ (ইবনে বায)
বেগানা মহিলা দেখা হারাম। কিন্তু টিভি ইত্যাদির পর্দায় বা ছাপা কাগজে
তার ছবিও দেখা কি হারাম?
বেগানা মহিলার প্রতি তাকিয়ে দেখতে নিষেধ যে কারণে
করা হয়েছে, সে কারণে তার ছবি দেখাতেও রয়েছে। তাছাড়া মহান আল্লাহ বলেছেন, “বিশ্বাসীদেরকে
বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌন অঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে; এটিই
তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ওরা যা করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।” (নূরঃ ৩০)
এ নির্দেশ জীবিত, মৃত মূর্তি বা ছবি সর্ব প্রকার মহিলা দেখার ব্যাপারে ব্যাপক। ৪৯৯ (ইবনে বায)
এ নির্দেশ জীবিত, মৃত মূর্তি বা ছবি সর্ব প্রকার মহিলা দেখার ব্যাপারে ব্যাপক। ৪৯৯ (ইবনে বায)
আপন মামাত, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, চাচী, মামি, স্ত্রীর বোন বা
ভাবীর সাথে মুসাফাহাহ বৈধ কি?
যার সাথে পুরুষের কোন কালে বিবাহ বৈধ, তার সাথে
মুসাফাহাহ করা অথবা তার চেহারা দেখা বৈধ নয়। কাপড় বা কভারের উপরেও তার হাত ধরে মুসাফাহাহ
হারাম। মহিলা বুড়ি অথবা পুরুষ বুড়ো হলেও আপোষের মুসাফাহাহ নাজায়েয। বায়াআতের সময় মহানবী
(সঃ) কোন মহিলার হাত স্পর্শ করতেন না, ৫০০ (আহমাদ ২৬৪৬৬, বুখারী ৫২৮৮, মুসলিম ১৮৬৬,
নাসাঈ ৪১৮১, ইবনে মাজাহ ২৮৭৪)
পরন্ত তিনি বলেছেন, “যে মহিলা (স্পর্শ করা) হালাল
নয়, তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারো মাথায় লোহার সুচ গেঁথে যাওয়া অনেক ভাল।” ৫০১(ত্বাবারানী,
শাহীহুল জামে ৫০৪৫ নং)
বলা বাহুল্য, মহিলার জন্য তার মামাতো, খালাতো,
চাচাতো ফুফাতো ভাই, ফোফা, খালু, স্বামীর ভাই (দেওর), বুনাই বা নন্দাইয়ের সাথে মুসাফাহাহ
করা বৈধ নয়।
মাহরাম মহিলাদের মাথা চুম্বন করা কি বৈধ?
বৈধ, যদি তাতে কাম বাসনা না থাকে। ৫০২ (ইবনে উষাইমীন)
মহিলাদের চাকুরী করা কি বৈধ?
বৈধ কর্ম ক্ষেত্রে মহিলাদের চাকুরী করা বৈধ। শর্ত
হল, সে কর্ম ক্ষেত্র কেবল মহিলাদের জন্য খাস হবে। পুরুষ মহিলা একই স্থলে কর্ম হলে,
সে চাকুরী বৈধ নয়। যেহেতু তাতে ফিতনা আছে। নারী মোহিনী ও আকর্ষণময়ী। মহানবী (সঃ) আর
বলেছেন, “ আমার গত হওয়ার পরে পুরুষের পক্ষে নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা অন্য
কোন কিছু ছেড়ে যাচ্ছি না।” ৫০৩ (আহমাদ, বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৭৪০ নং, তিরমিযী, ইবনে
মাজাহ)
সুতরাং পরপুরুষ থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকতে হবে
মহিলাকে। নামাযের কাতারের ব্যাপারে তিনি বলেন, “পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার
এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং
নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।” ৫০৪ (আহমাদ, মুসলিম ৪৪০, সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১০৯২
নং)
বলা বাহুল্য যে, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মিশ্র
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও চাকরি মুসলিম মহিলার জন্য বৈধ নয়। ৫০৫ (ইবনে উষাইমীন)
চিকিৎসার জন্য কি বেপর্দা হওয়া বৈধ?
মহিলার চিকিৎসার জন্য প্রথমতঃ মহিলা ডাক্তার খোঁজা
জরুরী। না পাওয়া গেলে পুরুষ ডাক্তারের কাছে স্বামী ও কোন মাহরামের উপস্থিতিতে চিকিৎসা
করানো জরুরী। মহিলা ডাক্তার থাকতে পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানো হারাম। যেমন
পুরুষ ডাক্তারের কাছে প্রয়োজনীয় অঙ্গ ছাড়া অন্য অঙ্গ প্রকাশ করা অবৈধ।
মহিলারা সেন্ট ব্যবহার করে বাড়ীর বাইরে যেতে পারে কি?
পর্দার সাথে হলেও মহিলা পারফিউম বা সেন্ট জাতীয়
কোন সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যেতে পারে না। কারণ তাতে ফিতনা আছে। মহানবী (সঃ) বলেছেন,
“প্রত্যেক চক্ষুই ব্যাভিচারী। আর মহিলা যদি (কোন প্রকার) সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন
(পুরুষের)মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তবে সে ব্যভিচারিণী (বেশ্যার মেয়ে)।” ৫০৬
(আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহুল জামে, ৪৫৪০
নং)
এমন কি মসজিদে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে যেতেও সে সেন্ট
ব্যবহার করতে পারে না। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহ্র বান্দীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ
করো না, তবে তারা যেন খোশবূ ব্যবহার না করে সাধাসিধাভাবে আসে।” ৫০৭ (আহমাদ, আবূ দাঊদ,
সঃ জামে ৭৪৫৭ নং)
“যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যাবে, সে মহিলার
গোসল না করা পর্যন্ত কোন নামায কবুল হবে না।” ৫০৮ (ইবনে মাজাহ ৪০০২, সঃ জামে ২৭০৩ নং)
স্বামী যদি পর্দা করতে বাঁধা দেয়, তাহলে স্ত্রীর করণীয় কি?
স্বামীর জন্য ওয়াজেব স্ত্রীকে পর্দার ব্যবস্থা
করে দেওয়া। তাকে বেপর্দার দিকে ঠেলে দেওয়া নয়। বন্ধু বান্ধব এর সামনে দেখা সাক্ষাৎ
করতে নিয়ে নিজের জন্য তথা তার সর্বনাশ আনায়ন করা মোটেই বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি থেকে,
যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফিরিশতাগণ,
যারা আল্লাহ যা তাঁদেরকে নির্দেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়,
তাই করে।” (তাহরীমঃ ৬)
আর স্ত্রীর জন্য উচিৎ নয়, বেপর্দা হওয়ার ব্যাপারে
স্বামীর আনুগত্য করা। স্বামীর আনুগত্য ওয়াজেব। কিন্তু গোনাহর বিষয়ে তার অনুগত্য বৈধ
নয়। মহানবী (সঃ) বলেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির বাধ্য হওয়া বৈধ নয়।”৫০৯
(আহমাদ, হাকেম, সঃ জামে ৭৫২০ নং)
কিন্তু পর্দা করার জন্য যদি কোন হতভাগা স্বামী
তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়, তাহলে তাও গ্রহণ করতে পারে সে। হয়তো বা মহান আল্লাহ তার
জীবনে উত্তম স্বামী মিলিয়ে দেবেন, যাকে নিয়ে সে ইহ-পরকাল সুখী হবে। ৫১০ (ইবনে বায)
ডাক্তারের সাথে নার্সের এবং ম্যানেজারের সাথে মহিলা প্রাইভেট সেক্রেটারির
নির্জনতা অবলম্বন বৈধ কি?
মোটেই না। কারণ শরীয়তের নির্দেশ হল, অর্থাৎ, “কোন
পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন
না করে।” ৫১১ (বুখারী ও মুসলিম)
আর, “যখনই কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনতা
অবলম্বন করে, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয় সাথী (কোটনা) হয়।” ৫১২(তিরমিযী, সহীহ তিরমিযী
৯৩৪ নং)
সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ বলেছেন, “নারী এর প্রতি
আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে।” (আলে ইমরানঃ ১৪)
আর এই কারণেই কোন মুসলিম মহিলার জন্য এমন চাকরি
নেওয়া বৈধ নয়, যেখানে পর পুরুষের সাথে ওঠাবসা করতে বা নির্জনতায় থাকতে হবে।
মহিলা কি ড্রাইভিং করতে পারে?
শরীয়তের দুটি নীতি আছেঃ
১। যে বৈধ কাজ অবৈধ কোন কাজকে টেনে নিয়ে যায়, তা
অবৈধ।
২। মঙ্গল আনয়ন অপেক্ষা অমঙ্গল দূর করা অধিক প্রাধান্যযোগ্য।
এই নীতির আলোকে বলা যায় যে, মহিলা ড্রাইভিং করতে
পারে না। যেহেতু তারা ড্রাইভিং করলে পর্দায় তাঁদেরকে চেহারা খুলতে হবে। তেল ভরতে হবে,
টায়ার ইত্যাদি পরিবর্তন করতে, চেক পয়েন্টে, পথে গাড়ী বিকল হলে পুরুষদের সাথে কথা বলতে
হবে। নির্জন জায়গায় বিকল হলে তাকে বিপদে পড়তে হবে। তার যৌবন তাকে অজানা সর্বনাশের দিকে
নিয়ে যাবে। এ ছাড়া আরো অনেক কারণে মহিলাদের জন্য ড্রাইভিং বৈধ নয়। ৫১৩ (ইবনে উষাইমীন)
অন্ধ শিক্ষকের সামনে ছাত্রীর বেপর্দা হয়ে কি পড়া যায়?
পরিপূর্ণ অন্ধ হলে তার সামনে পর্দার প্রয়োজন নেই।
কারণ সে তো দেখতেই পায় না। নবী (সঃ) ফাতেমা বিনতে ক্বাইসকে অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ
বিন উম্মে মাকতূমের বাড়িতে ইদ্দত পালন করতে অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, “সে একজন অন্ধ লোক।
তুমি তার কাছে নিজের চাদর খুলে রাখবে (সে তোমাকে দেখতে পাবে না)।” ৫১৪ (মুসলিম ১৪৮০
নং)
তাছাড়া নবী (সঃ) এর পিছনে লুকিয়ে থেকে মা আয়েশা
হাবশীদের খেলা দেখেছেন। ৫১৫ (বুখারী ৯৫০, মুসলিম ৮৯২ নং)
পক্ষান্তরে আবূ দাঊদ ও তিরমিযীর “তোমরা দুজনেও
কি অন্ধ?”---এ হাদীস সহীহ নয়।
তবে শর্ত হল, মহিলা অন্ধের প্রতি (অনুরূপ কোন পুরুষের
প্রতি) কামনাদৃষ্টিতে তাকাবে না। কারণ মহান আল্লাহ মহিলাকেও নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
“বিশ্বাসী নারীদের বল্ যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে।”
(নূরঃ ৩১)
বিবাহের পূর্বে কি বাগদত্তা স্বামী স্ত্রীর অবাধ মেলামেশা বা ফোনে কথাবার্তা
বলা বৈধ?
যতক্ষণ না বিবাহ বন্ধন কায়েম হয়েছে, ততক্ষণ আপোসের
দেখা সাক্ষাৎ, অবাধ মেলামেশা বা যৌনজীবনের কথাবার্তা বলা হারাম। অভিভাবকের জন্যও হারাম
ছেলেমেয়েকে এমন অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। অবশ্য বিবাহের পূর্বে এক নজর দেখে
নেওয়া বৈধ। যেমন আকদের পরে ও বিয়ে সারার আগে স্বামী স্ত্রী আপোষে দেখা সাক্ষাৎ ও অবাধ
মেলামেশা করা বা যৌনজীবনের কথাবার্তা বলা, বরং যৌন মিলন করাও বৈধ।
কোন যুবতীকে বোন বা বন্ধু বানিয়ে কি তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও অবাধ মেলামেশা
করা বা কথাবার্তা বলা ও পত্রালাপ করা বৈধ?
কোন যুবতীর সাথে কোন যুবকের নিষ্কাম বন্ধুত্ব অসম্ভব।
পরন্ত সেই বন্ধুত্বের জোরে দেখা সাক্ষাৎ ও অবাধ মেলামেশা করা বা কথাবার্তা বলা ও পত্রালাপ
করা নিঃসন্দেহে হারাম। তেমনি কোন যুবতীকে ‘বোন’ বানিয়েও অনুরূপ দেখা সাক্ষাৎ ও অবাধ
মেলামেশা করা বা কথাবার্তা বলা ও পত্রালাপ করা বৈধ নয়। কারণ ‘বোন’ বলতে বলতেই বান আসে।
‘বোন’ বলতে বলতেই মনের বন তুফান তোলে। বরং কারো সাথে ‘মা’ পাতিয়েও অনুরূপ দেখা সাক্ষাৎ
ও অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি বৈধ নয়। যেহেতু কাউকে ‘বউ’ বললেই যেমন সে নিজের ‘বউ’ হয়ে যায়
না। তেমনি কাউকে ‘মা’ বা ‘বোন’ বললেই নিজের মাহরাম হয়ে যায় না; যতক্ষণ না তাদের সাথে
রক্ত, দুগ্ধ বা বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম হয়েছে।
মহিলা কি পর পুরুষের সাথে কথা বলতে পারে?
মহিলা প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে কথা বলতে পারে।
তবে সে কথা যেন স্বাভাবিক হয়; না রুক্ষ না কর্কশ হয়, আর না মধুময় আকর্ষণীয় হয়। মহান
আল্লাহ বলেছেন, “হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভয়
কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে
সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা সদালাপ কর।(স্বাভাবিকভাবে কথা বল।)” (আহযাবঃ ৩২)
পরপুরুষের সাথে পার্থিব ও দ্বীনী কথা বলাও কি হারাম?
পর্দার আড়াল থেকে পরপুরুষের সাথে পার্থিব ও দ্বীনী
কথা বলা হারাম নয়। তবে তাতে শর্ত আছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে নবী পত্নীগণ! তোমরা
অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে
কথা বল না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা সদালাপ কর।(স্বাভাবিকভাবে
কথা বল)” (আহযাবঃ ৩২)
তবে নামাযের জামাআতে ইমামের ভুল সংশোধন করতে মহিলা
তসবীহ বলবে না, বরং হাত দ্বারা শব্দ করবে।
মুসলিম মহিলা কি নার্সের কাজ করতে পারে?
কেবল মহিলা রোগীর ক্ষেত্রে করতে পারে। কোন বেগানা
পুরুষের সেবা শুস্রষা করা তার জন্য বৈধও নয়। অনুরূপ পুরুষ নার্স কেবল পুরুষ রোগীর খিদমত
করতে পারে। ৫১৬ (ইবনে বায)
অনেকে বলে মহিলা সতী হলে, তার মন পবিত্র হলে তার পর্দার দরকার হয় না।
মহিলা যতই সতী ও পবিত্র মনের হোক না কেন, তার জন্য
পর্দা ওয়াজেব। কোন মহিলার মন কোন সাহাবী মহিলার মনের থেকে বেশি পবিত্র হতে পারে না।
অথচ তাদেরকেই পর্দার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পরন্ত কেউ সতী হলে সে নিজেকে পবিত্র রাখতে
পারবে ঠিকই, কিন্তু পর পুরুষের নজর ও মনকে কি পবিত্র রাখতে পারবে? সে নিজের মনকে পবিত্র
রেখে নিজ রূপ সৌন্দর্য দ্বারা পর পুরুষের মনকে প্রলুব্ধ করলে কি পর্দার উদ্দেশ্য সফল
হবে? সুতরাং পর্দা সতী অসতী সকলের জন্য। বরং অসতী মেয়ে পর্দা করলেও পর্দার ভিতরে তার
অসতীত্ব বজায় থাকবে। ঘোমটার ভিতরে খেমটার নাচ দেখিয়ে পরিবেশ নোংরা করবে। আর তার হিসাব
তো ভিন্ন আল্লাহ্র কাছে।
কিছু পুরুষ আছে, যারা নিজের সকল দায়িত্ব স্ত্রীর ঘাড়ে চাপিয়ে স্বস্তি
নেয়। এমনকি মার্কেট পর্যন্ত স্ত্রী নিজেই করে। এমন পুরুষ সম্বন্ধে শরীয়তের বিধান কি?
কিছু পুরুষ প্রকৃতিগতভাবে ‘দাইয়ূস’ বা ‘ভেড়া’ হয়।
যারা স্ত্রীর বেপর্দা নোংরামিতেও সায় দিয়ে থাকে। তাদের ব্যাপারে রাসুল (সঃ) বলেছেন,
“ভেড়া (স্ত্রী কন্যার পর্দাহীনতা ও নোংরামির ব্যাপারে ঈর্ষাহীন) ব্যক্তির দিকে আল্লাহ
কিয়ামতের তাকিয়েও দেখবেন না।” ৫১৭ (নাসাঈ ২৫৬১ নং)
আর কিছু পুরুষ ততোটা না হলেও স্ত্রীর আঁচল ধরা।
সে ‘গাড়ল’ হয়ে স্ত্রীকে ‘মোড়ল’ বানায়। এমন অসফল পুরুষ জানতে অথবা অজান্তে নিজেকে প্রভু
স্ত্রীর ‘বাধ্য গোলাম’ বানায়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, “পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ, আল্লাহ
তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয়
করে।” (নিসাঃ ৩৪)
পাশ্চাত্য সভ্যতা ঘেঁষা এমন পুরুষরা কোনদিন দ্বীন দুনিয়ায় সফল হতে পারে না। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সে জাতি কোন দিন সফলকাম হতে পারে না, যে জাতি তাদের শাসন ক্ষমতা একজন নারীর হাতে তুলে দেয়।” ৫১৮ (বুখারী ৪৪২৫ নং)
পাশ্চাত্য সভ্যতা ঘেঁষা এমন পুরুষরা কোনদিন দ্বীন দুনিয়ায় সফল হতে পারে না। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “সে জাতি কোন দিন সফলকাম হতে পারে না, যে জাতি তাদের শাসন ক্ষমতা একজন নারীর হাতে তুলে দেয়।” ৫১৮ (বুখারী ৪৪২৫ নং)
সেন্ট বা সেন্ট জাতীয় কোন ক্রিম বা পাউডার লাগিয়ে মহিলা বাড়ীর বাইরে
যেতে পারে কি?
সেন্ট বা সেন্ট জাতীয় কোন ক্রিম বা পাউডার লাগিয়ে
মহিলা বাড়ীর বাইরে যেতে পারে না। শরিয়তে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। নবী (সঃ)
বলেছেন, “প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর মহিলা যদি (কোন প্রকার) সুগন্ধ ব্যবহার করে
কোন (পুরুষদের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে সে ব্যভিচারিণী (বেশ্যার মেয়ে)”
৫১৯ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, ইবনে খিযাইমাহ, হাকেম, সহীহুল জামে ৪৫৪০
নং)
এমন কি মহিলা সেন্ট লাগিয়ে মসজিদে নামায পড়তে গেলেও
তার নামায শুদ্ধ হবে না। আবু হুরায়রা (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা চাশতের সময় তিনি মসজিদ
থেকে বের হলেন। দেখলেন, একটি মহিলা মসজিদে প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ বা লেবাস থেকে উৎকৃষ্ট
সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল। আবু হুরায়রা মহিলাটির উদ্দেশ্য বললেন, “আলাইকিস সালাম”। মহিলা
সালামের উত্তর দিল। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, “কোথায় যাবে তুমি?” সে বলল, “মসজিদে।”
তিনি বললেন, “কি জন্য এমন সুন্দর সুগন্ধি মেখেছ তুমি?” সে বলল, “মসজিদের জন্য।”
তিনি বললেন, “আল্লাহ্র কসম?” সে বলল, “আল্লাহ্র কসম।” পুনরায় তিনি বললেন, “আল্লাহ্র
কসম?” সে বলল, “আল্লাহ্র কসম।” তখন তিনি বললেন, “তবে শোন, আমাকে আমার প্রিয়তম আবুল
কাসেম (রঃ) বলেছিলেন যে, ‘কোন মহিলার কোন নামায কবুল হয় না, সে তার স্বামী ছাড়া অন্য
কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকির গোসল করার মত গোসল করে নেয়।’
অতএব তুমি ফিরে যাও, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেল। তারপর ফিরে এসে নামায পড়ো।” ৫২০ (আবূ
দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৩১ নং)
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেছেন, “ আল্লাহ্র বান্দিদেরকে
মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তারা যেন খোশবু ব্যবহার না করে সাদাসিধাভাবে আসে।” ৫২১
(আহমাদ, আবূ দাঊদ, সহীহুল জামে ৭৪৫৭ নং)
পৃথক গার্লস স্কুল বা কলেজে না থাকলে মেয়েদেরকে যৌথ প্রতিষ্ঠানে পড়তে
পাঠানো কি বৈধ হবে?
ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশার যৌথ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
মেয়েদেরকে পড়তে পাঠানো বৈধ নয়। মুসলিমদের জন্য ওয়াজেব হল, পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
ব্যবস্থা করা এবং নিজেদের মেয়ে বোনকে পর পুরুষের আকর্ষণে আসতে বাঁধা দেওয়া। ৫২২ (ইবনে
উষাইমীন)
এমন পর্দাহীন দেশ বা পরিবেশেও কি পর্দা ওয়াজেব, যেখানে পর্দাটাই মানুষের
কাছে দৃষ্টি আকর্ষক হয়?
এমন দেশ ও পরিবেশ, যেখানে পর্দা নেই অথবা বিরল,
সেখানে মহিলারা দিনেও নাইট ড্রেস পরে থাকে অথবা প্রায় নগ্ন থাকে, সেখানে মুসলিম মহিলার
জন্য পর্দা ওয়াজেব। যদিও চাদর বা বোরখা সেখানকার বেদ্বীন মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এ হল আল্লাহ্র বিধান। এ বিধান সর্বত্র বহাল থাকবে।
বাড়ীর দাসী কি বাড়িতে পর্দা করবে?
বর্তমান দাসী যেহেতু ক্রীতদাসী নয়, সেহেতি সাধারণ
মুসলিম নারীর মত তার জন্যও পর্দা ওয়াজেব। বাড়ীর লোকেদের সামনে সে পর্দা করবে এবং কোন
পুরুষের সাথে নির্জনতা অবলম্বন করবে না। ৫২৩ (ইবনে বায)
অনুরূপ বাড়ীর মহিলারাও বাড়ীর দাস, চাকর, ড্রাইভার
ইত্যাদিকে পর্দা করবে।
বাড়ীর চাকরকে কি পর্দা করতে হবে? হাউস বয়, হাউস ড্রাইভার এর সামনে পর্দা
করা তো বড় কঠিন। আমার মা বলে, ‘মাথায় কাপড় থাকলে সমস্যা নেই।’ তার কথা কি ঠিক?
বাড়ীর চাকর ক্রীতদাস নয়। চাকর, ড্রাইভার প্রভৃতি
সেবক হলেও তারা পুরুষ। আর যে পুরুষ মাহরাম নয়, তার সামনে মহিলার পর্দা ওয়াজেব। এ ব্যাপারে
আপনার মায়ের কথা ঠিক নয়। কারন মাথায় কাপড় দিলেই পর্দা হয়ে যায় না। চেহারা হল আসল সৌন্দর্যের
জিনিস। আর তা খোলা রাখলেই মিষ্টি হাসি ও চোখাচোখির ফলে বিপদ আসন্ন হতে পারে। মহান আল্লাহ
বলেছেন, “তোমরা তোদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাও। এ বিধান তোমাদের
এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।” (আহযাবঃ ৫৩)
মহানবী (সঃ) বলেন, “যখনই কোন পুরুষ কোন মহিলার
সাথে নির্জনতা অবলম্বন করে, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয় সাথী।” ৫২৪ (তিরমিযী, সহীহ তিরমিযী
৯৩৪ নং)
আমি আমাদের বাড়ীর হাউস ড্রাইভার এর সাথে একাকিনী কলেজে যাই। কখনো মার্কেট
করতেও যাই তাকে নিয়ে। আমার মন তার প্রতি আকৃষ্ট না হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে কি কোন সমস্যা
আছে তাতে?
যে ড্রাইভার মহিলার মাহরাম নয়, তার সাথে একাকিনী
কলেজে বা মার্কেটে যাওয়া কোন মহিলার জন্য বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “কোন
পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন
না করে। আর মাহরাম ব্যাতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে।” ৫২৫ (বুখারী ৫২৩৩, মুসলিম
১৩৪১ নং)
আমি আমাদের বাড়ীর হাউস ড্রাইভার এর সাথে একাকিনী কলেজে যাই। কখনো মার্কেট
করতেও যাই তাকে নিয়ে। নির্জনতা দুর করার জন্য আমি আমার ছোট ভাইকে সাথে নেই। তাহলে কি
আমার জন্য তা বৈধ হবে?
আপনার ছোট ভাই যদি সাবালক হয়, তাহলে বেগানা হাউস
ড্রাইভারের সাথে আসা যাওয়া চলবে। পক্ষান্তরে যদি নাবালক হয়, তাহলে তার আপনার সঙ্গে
থাকা না থাকা উভয়ই সমান।
আমরা আমাদের বাড়ীর হাউস ড্রাইভারের সাথে দুই বোন কলেজে যাই। কখনো মার্কেট
করতেও যাই তাকে নিয়ে। শরীয়তের দৃষ্টিতে কি কোন সমস্যা আছে তাতে?
একাধিক মহিলা হলে বেগানা হাউস ড্রাইভার এর সাথে
শহরের ভিতরে আসা যাওয়া চলবে। তবে নিরাপত্তার শর্তসাপেক্ষে। কিন্তু দুরের সফর বৈধ নয়,
যদিও তা ইবাদতের হয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেছেন, “কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে
তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন
নারী যেন সফর না করে।” এ ব্যক্তি আবেদন করল, “হে আল্লাহ্র রাসুল! আমার স্ত্রী হজ্জ
পালন করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি।” তিনি বললেন, “যাও, তুমি
তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।” ৫২৬ (বুখারী, মুসলিম)
বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহা করা হারাম। কিন্তু হাতে কাপড় রেখে সরাসরি
স্পর্শ না করে মুসাফাহা বৈধ কি? বুড়িদের সাথে মুসাফাহাতেও সমস্যা আছে কি?
সর্বপ্রকার বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহ অবৈধ। হাতে
কোন আবরকে রেখেও তা বৈধ নয়। কারণ তাতে ফিতনার ভয় আছেই আছে। মহানবী (সঃ) সকল মহিলার
শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি (বেগানা)কারো সাথে মুসাফাহা করতেন না। ৫২৭ (আহমাদ
৬/৩৫৭, নাসাঈ ৭/১৪৯, ইবনে মাজাহ ২৮৭৪ নং) বায়আতের সময়েও তিনি কোন মহিলার হাত স্পর্শ
করতেন না। ৫২৮(বুখারী ৫২৮৮, মুসলিম ১৮৬৬ নং) আর তিনি বলেছেন, “যে মহিলা (স্পর্শ করা)
হালাল নয়, তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারো মাথায় লোহার ছুঁচ গেঁথে যাওয়া অনেক ভালো।”
৫২৯ (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে ৫০৪৫ নং)
স্ত্রীর চাকরি করাতে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলি কি কি?
পুরুষ মহলে চাকরি করলে অবাধ মেলামেশার সমস্যা,
বেপর্দা হওয়ার সমস্যা, চরিত্র খারাপ হওয়ার সমস্যা, সন্তান পালনের সমস্যা, বাড়িতে আয়ার
সাথে স্বামীর পালনের সমস্যা, বাড়িতে আয়ার সাথে স্বামীর নির্জনতা অবলম্বনের সমস্যা ইত্যাদি।
অবরোধ প্রথা কি ইসলামে স্বীকৃত?
ইসলামে অবরোধ প্রথা নেই। ইসলামে আছে পর্দার বিধান।
মহিলার কর্মস্থল মাঠে-ঘাটে, কল-কারখানায়, অফিস-ক্লাবে নয়। ইসলাম মহিলাকে বাড়িতে থাকতে
নির্দেশ দেয়। কুরআন বলে, “তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর এবং
(প্রাক ইসলাম) জাহেলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না।” (আহযাবঃ ৩৩) হাদিস
বলে, “তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম।” ৫৩০ (আবূ দাঊদ ৫৭৬ নং)
তার মানে এই নয় যে, তারা ঘরের ভিতরে অর্গলবদ্ধ
ও অবরুদ্ধ থাকবে। বরং তারা প্রয়োজনে পর্দার সাথে বের হতে পারবে। তবে তারা (প্রাক ইসলাম)
জাহেলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াতে পারবে না। তাঁদেরকে মসজিদে যেতে
বাঁধা দেওয়া যাবে না। তবে তারা সুগন্ধি বিলিয়ে বের হতে পারবে না। তারা প্রয়োজনে মাঠে
ঘাটে ও বাজারে যেতে পারে। তবে ‘ছল করে জল আনতে যাওয়া’র মতো মামুলী প্রয়োজনে বাজারে
বাজারে ফিরে বেড়াবে না।
মহিলা হেরেমের বন্দিনি নয়। যদিও কোন কোন পরিবেশে বাড়াবাড়ি করে তাকে বন্দিনী করে রাখা হয়। স্বামী স্ত্রী কর্তা বলে কোন কোন পুরুষ তার উপর অবৈধ কর্তৃত্ব করে।
মহিলা হেরেমের বন্দিনি নয়। যদিও কোন কোন পরিবেশে বাড়াবাড়ি করে তাকে বন্দিনী করে রাখা হয়। স্বামী স্ত্রী কর্তা বলে কোন কোন পুরুষ তার উপর অবৈধ কর্তৃত্ব করে।
যে অন্ধ বেগানা পুরুষ মোটেই দেখতে পায় না, তার সামনেও কি পর্দা জরুরী?
দৃষ্টিহীন পুরুষের সামনে পর্দা নেই। যেহেতু পর্দা
কেবল পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যই। তাছাড়া মহানবী (সঃ) ফাতেমা বিনতে ক্বাইসকে
অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতূমের বাড়িতে ইদ্দত পালন করতে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, “কারণ
সে অন্ধ মানুষ। তুমি তার নিকট বহির্বাস খুলে রাখবে, সে তোমাকে দেখতে পাবে না।” ৫৩১
(মুসলিম ১৪৮০ নং)
বেগানা মহিলার উপর আচমকা দৃষ্টি পড়ে গেলে হাদীসে বলা হয়েছে, “তুমি তোমার
দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।” ৫৩২ (মুসলিম) মহিলাদের ক্ষেত্রেও কি একই নির্দেশ? তাঁরাও কি বেগানা
পুরুষদের দিকে তাকাতে পারবে না?
হ্যাঁ, নির্দেশে সবাই সমান। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানে রক্ষা
করে।”(নুরঃ ৩১)
তবে কামদৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন বৈধ দৃষ্টিতে তাকান
যাবে। মা আয়েশা (রঃ) হাবশীদের খেলা দেখেছেন। নবী (সঃ) তাকে আড়াল করে তা দেখিয়েছেন।
৫৩৩ (বুখারী ৯৫০, মুসলিম ৮৯২ নং) টিভি প্রভৃতির পর্দায় বা ছবিতে পুরুষ দেখার ক্ষেত্রেও
একই বিধান। কামনজর নিয়ে তাকান যাবে না। ৫৩৪ (ইবনে উষাইমীন)।
যুবক যুবতীর মাঝে বন্ধুত্ব অতঃপর পোস্ট, এসএমএস, ইমেল প্রভৃতির মাধ্যমে
চিঠি লেখালিখি করে হৃদয়ের আদান প্রদান করা কি বৈধ? যদি তাদের মাঝে বিবাহের ইনগেইজমেন্ট
হয়ে থাকে, তাহলে কি কোন সমস্যা আছে?
বেগানা যুবক যুবতীর মাঝে নিষ্কাম বন্ধুত্ব অসম্ভব।
কারো দ্বারা বিরলভাবে সম্ভব হলেও শরীয়তের তা হারাম। তাদের আপোষে পত্রালাপ ও রসালাপ
বৈধ নয়। ইনগেইজমেন্ট (বাগদান) হয়ে গেলেও বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যেমন
তাদের মাঝে দেখা সাক্ষাৎ হারাম, তেমন চিঠির মাধ্যমে হৃদয়ের আদান প্রদানও। যেহেতু তাতে
ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। আর ফিতনা ও দাজ্জাল থেকে পাকা মুমিনকেও দূরে থাকতে নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে। ৫৩৫ (আহমাদ ৪/৪৩১, ৪৪১, আবূ দাঊদ ৪৩১৯ নং)।
বিবাহের পূর্বে যুবক যুবতীর একে অপরকে বুঝে নেওয়ার, পছন্দ করে নেওয়ার,
ভালোবাসা করে নেওয়ার সুযোগ ইসলামে আছে কি?
বিবাহের পূর্বে বর কনের একে অপরকে এক নজর দেখে
নেওয়ার ও পছন্দ করে নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তার পর চিঠি, ফোন বা নেটের মাধ্যমে অথবা
তাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসা করে নেওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই। বিবাহ
বন্ধন কায়েম করা বা বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার পর বিবাহ সারার পূর্বে সে সব চলবে। বন্ধনের আগে
নয়। ৫৩৬ (ইবনে উষাইমীন)।
বিএ পরীক্ষা দেওয়ার আগে হয়তো টেস্ট পরীক্ষা আছে।
কিন্তু বিয়ে করার আগে কোন টেস্ট পরীক্ষা নেই।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার বাসা থেকে বের হওয়া স্ত্রীর জন্য বৈধ নয়। কিন্তু
অনেক সময় সে বাড়িতে না থাকলে পাশের বাসা অথবা কাছের মার্কেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তখন
কি তার বিনা অনুমতিতে গেলে গোনাহ হবে?
স্ত্রীর উচিৎ, এ ক্ষেত্রে স্বামীর নিকট থেকে আম
অনুমতি নিয়ে রাখা। অতঃপর শরয়ী আদবের সাথে নিজের বা ছেলেমেয়ের প্রয়োজনে বাইরে কোথাও
গেলে কোন ক্ষতি হবে না ইন শাআল্লাহ। ৫৩৭ (ইবনে জিবরীন)
সত্তর আশি বছরের বৃদ্ধ যদি বেগানা পুরুষকে পর্দা না করে, তাহলে কোন
ক্ষতি আছে কি?
সত্তর আশি বছরের বৃদ্ধার জন্য পর্দা ফরয থাকে না।
সে বেগানা পুরুষকে দেখা দিতে পারে। তবে শর্ত হল, সে যেন সেজেগুজে প্রসাধন করে বের না
হয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “বৃদ্ধা নারী; যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ
নেই; যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে।” (নূরঃ ৬০)।
তবে বৃদ্ধের পর্দা করাটাই উত্তম। যেহেতু মহান আল্লাহ
বলেছেন, “তবে এ থেকে তাদের বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
(নূরঃ ৬০)।
শরয়ী পর্দা করলে স্বামী তালাক দিতে চায়। সুতরাং আমি কি করতে পারি?
বুঝানোর পরেও যদি না মানে, তাহলে সন্তান হওয়ার
আগে আগেই এমন হতভাগা স্বামীর নিকট থেকে তালাক নেওয়াই ভালো। ইন শা আল্লাহ পরবর্তীতে
তার চেয়ে ভালো স্বামী জুটে যাবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ
তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন।” (ত্বালাক্বঃ ২)।
কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, দ্বীন মানার জন্য স্ত্রীকে
তালাক এর হুমকি দেওয়া। ৫৩৮ (ইবনে বায)।
আল্লাহ্র নবী (সঃ) আমাদেরকে দ্বীনদার মেয়ে বিয়ে
করতে বলেছেন। অথচ ভাগ্যের ব্যাপার এমন যে, যে চায়, সে পায় না। পরন্ত সে পায়, যে চায়
না। ফাল্লাহুল মুস্তাআন।
(সমাপ্ত)
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে
এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ
অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের
আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের
(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ
থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি
হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের
মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি
আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব
থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি
আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি
চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
No comments:
Post a Comment