বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পর্দা, বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন
ভূমিকা
বিশুদ্ধ শরয়ী জ্ঞান-স্বল্পতা,
বিশুদ্ধ শরীয়তের উপর আমল করার প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা, স্বার্থানেবষিতা এবং দেশীয় পরিবেশের
বিশেষ কুপ্রভাবের ফলে মুসলিম সমাজে বিভিন্ন কুসংস্কার, কুপ্রথা, কুআচার ও অনাচারের
প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। পরকালের প্রতি ক্ষীণ ঈমান তথা অসৎ পরিবেশ ও পারিপাশির্বকতার কারণে
অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা নেই নিজেকে কুসংস্কার-মুক্ত করার, মন নেই আত্মশুদ্ধির, চেষ্টা
নেই দ্বীন শিক্ষার, ভ্রূক্ষেপ নেই ধর্মীয় বাণীর প্রতি, নেই সমাজকে কুপ্রথা ও অনাচারমুক্ত
করার কোন সৎসাহস!
কাজ যেহেতু একা কারো নয়।
প্রয়োজন যৌথ প্রচেষ্টার। ব্যাপারটাও কেবল মুখ ও কলমের নয়; বরং আমল ও কাজের। তাই আমূল
সংস্কার ও পরিবর্তন সাধনের জন্য চাই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সম্মিলিত ঐকান্তিক প্রচেষ্টা;
যার শীর্ষে থাকবে আল্লাহ-ভীতি, পরকালের প্রতি পূর্ণ ঈমান, হিসাব-নিকাস ও জবাবদিহির
ভয়, দোযখের শঙ্কা এবং বেহেশ্তের লোভ।
বিবাহ ও দাম্পত্য মুসলিমদের
এক শুভ ও সুখদ সন্ধিক্ষণ, আবার অশুভ ও যন্ত্রণাপ্রদ সময়কালও। এই শুভাশুভ নির্বাচন করায়
তারও হাত আছে। যেমন বিবাহ করা অর্ধ ঈমান। দাম্পত্য-জীবন তার অর্ধেক ধর্মীয় জীবন। তাছাড়া
দাম্পত্যের সফরও বড় লম্বা। যার সঙ্গীও চিরসঙ্গী। তাই তো অর্ধ ঈমান যাতে অবলীলায় এসে
অবহেলায় বরবাদ না হয়ে যায় এবং এই লম্বা সফর যেন কষ্টকর তথা তার সাথী যেন কুজন ও কুসাথী
না হয়, তার জন্য সফর শুরু করার পূর্বে, জীবন-সমুদ্রে তার দাম্পত্যের তরণী অবতারণ করার
আগে আগে তাকে একটু ভেবে নিতে হয়, কিছু জেনে ও পড়ে নিতে হয়। নচেৎ আনাড়ী মাল্লা মাঝ সমুদ্রে
ফাঁপরে পড়তে বাধ্য।
বিবাহের পূর্বে অনেক যুবক-যুবতী
বহু রতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করে থাকেন; কিন্তু কোন ধর্মীয় রীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করার
প্রয়োজন মনে করেন না। অথচ প্রেম ও প্রেমের ধরন তথা যৌনসুখ তো যে কোন প্রকারে লাভ হতেই
পারে। পরন্তু লাভ যা হয় না, তা হল প্রেম ও যৌবনে নীতি-নৈতিকতা, সংযমশীলতা, দাম্পত্য
ও সাংসারিক পরম শান্তি এবং সৃষ্টিকর্তার চরম সন্তুষ্টি।
আসুন ইসলামী পবিত্র সম্পর্ক,
আদর্শ বিবাহ ও সুখী-দাম্পত্য গড়ার উদ্দেশ্যে আমরা অত্র পুস্তিকার অধ্যায়গুলি বারবার
আলোচনা করি, আর দৃঢ়সংকল্প হই যে, আমরা আমাদের জীবন ও দাম্পত্য গড়ব ইসলামী সোনার ছাঁচে।
কোন দেশাচার, লোকাচার বা স্ত্রী-আচারের তুফানে আমরা বিচলিত হব না। আমরা চাই ইহকালে
অনাবিল শান্তি ও পরকালে অনন্ত সুখ।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে
সেই তওফীক ও প্রেরণা দান কর, যাতে আমরা তোমার ও তোমার রসূলের আনুগত্যপূর্ণ জীবন ও সুখী
দাম্পত্য গড়তে পারি। আর দাম্পত্যের ঐ বিশাল আমানতে যেন খেয়ানত না করে বসি। আমীন।
যৌনাচার ও ব্যাভিচার
আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী আবাদ
রাখার জন্য মানুষকে খলীফারূপে সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে এমন প্রকৃতি ও প্রবৃত্তি দান
করেছেন যাতে সে অতি সহজে নিজের বংশ বৃদ্ধি ও আবাদ করতে পারে। ক্ষুধা-নিবৃত্তি করে যেমন
তার নিজের অস্তিত্ব অবশিষ্ট থাকে, তদ্রূপ যৌনক্ষুধা নিবৃত্তি করলে তার বংশ বাকী থাকবে।
এই যৌনক্ষুধা এমন এক ক্ষুধা,
যার তাড়নায় ক্ষুধার্ত মানুষ নিজেকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ ও আয়ত্তে রাখতে পারে না। ক্ষুধা
উপশান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতিস্থ হতে পারে না।
অবশ্য উক্ত ক্ষুধা নিবারণের
জন্য পৃথিবীতে সাধারণতঃ তিনটি রীতি রয়েছে ;
প্রথমতঃ ‘ফ্রী-সেক্স’-এর পশুবৎ রীতি; যাতে ধর্মীয়, নৈতিক বা লৌকিক কোন
প্রকারের বাধা ও নিয়ন্ত্রণ নেই, যখন যেভাবে ইচ্ছা কামপিপাসা দূর করা যায়। যাতে সমাজে
সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলতা এবং বংশে আসে কত শত জারজ।
দ্বিতীয়তঃ সংযম রীতি; যাতে মানুষ ইন্দ্রিয় বাসনাকে নিগৃহীত রাখে। কোন প্রকারের
বীর্যক্ষয়কে পাপ মনে করে। এরূপ বৈরাগ্যবাদ প্রকৃতি-ধর্মেরও বিরোধী।
তৃতীয়তঃ নিয়ন্ত্রিত রীতি; গন্ডি-সীমার অভ্যন্তরে থেকে কাম-বাসনাকে মানুষ চরিতার্থ
করতে পারে। ঐ সীমা উল্লংঘন করে নিয়ন্ত্রণ-হারা হতে পারে না। এই রীতিই হল মানুষের জন্য
প্রকৃতিসিদ্ধ ও ন্যায়পরায়ণ। বিবাহ-বন্ধনের মাঝে সীমিত ও রীতিমত যৌনাচার ও কামবাসনা
চরিতার্থ করা যায়। কিন্তু বল্গাহীনভাবে ব্যভিচার করা যায় না। এই নীতিই সমস্ত ঐশীধর্মের
নীতি এবং ইসলামের আদর্শ। ইসলাম বিবাহকে বৈধ করেছে এবং ব্যভিচারকে অবৈধ ও হারাম ঘোষণা
করেছে। নারী-পুরুষের এই মিলনকে যদি নিয়ন্ত্রিত না করা হত, তাহলে পৃথিবীতে সুশৃঙ্খল
সমাজ ও সংসার গড়ে উঠত না। স্থায়ী হত না প্রেম ও সম্প্রীতি। সেই দাম্পত্য গড়ে উঠত না,
যাতে থাকে একের অন্যের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থত্যাগ ও উৎসর্গ।
তাইতো প্রয়োজন ছিল ব্যভিচারকে
কঠোরভাবে দমন করা। যাতে সমাজের মানুষরা অসভ্য ও উচ্ছৃঙ্খল না হয়ে উঠে, লাগামহীন
যৌনাচারে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব না ঘটে এবং মানুষ পশুর পর্যায়ে
নেমে না যায়।
তাই তো ইসলামে রয়েছে ব্যভিচারীর
জন্য কঠোর শাস্তি-ব্যবস্থা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
‘‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী---ওদের
প্রত্যেককে একশত কশাঘাত কর; যদি তোমরা আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাসী হও, তাহলে আল্লাহর
বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে। আর মু’মিনদের একটি
দল যেন ওদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’’[1]
আর এরপর তাদেরকে এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কার অথবা কারাদন্ডে দন্ডিত
করা হবে।[2]
এ তো হল অবিবাহিত
ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর শাস্তি। বিবাহিতদের শাস্তি হল তাদেরকে কোমর অবধি মাটিতে পুঁতে
পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা।[3]
তদনুরূপ সমকাম বা সমলিঙ্গী-ব্যভিচারকেও
ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। প্রকৃতিগতভাবে পুরুষ নারীর প্রতি এবং নারী পুরুষের প্রতি
আসক্ত এবং উভয়েই একে অপরের মিলন লাভের আকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এই প্রকৃতির সীমা উল্লংঘন
করে এবং দ্বীনী নিয়ন্ত্রণের বেড়া ডিঙ্গিয়ে যারা নির্লজ্জভাবে পুরুষে-পুরুষে ও নারীতে-নারীতে
সমকামে নিজেদের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে তাদেরও শাস্তি হত্যা।[4]
কৃত্রিম-মৈথুন বা হস্তমৈথুন
অত বড় মহাপাপ না হলেও যা স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুন ক্ষতি ও হানিকর এবং তা হারাম। আল্লাহ
তাআলা বলেন,
অর্থাৎ, ‘‘যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে
সংযত রাখে, তবে নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ([5]) ক্ষেত্রে অন্যথা করলে
তারা নিন্দার্হ হবে না এবং তাছাড়া অন্যান্য পথ অবলম্বন করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী।’’[6]
সুতরাং কৃত্রিম মৈথুন এক প্রকার সীমালংঘন; যা মহাপাপ। তাছাড়া আল্লাহর
রসূল (সাঃ) যখন সামর্থ্যবান যুবকদেরকে বিবাহ করতে বললেন, তখনই অসামর্থ্যবান যুবককে
রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। যাতে যৌন-তাড়নায় যুবকদল কোনরূপ বেয়াড়া না হয়ে যায়। পক্ষান্তরে
এতে হয়তো ক্ষণিকের যৌনস্বাদ আছে কিন্তু এর পশ্চাতে আছে মহালাঞ্ছনা, মহাপরিতাপ।
শরীয়ত যেমন সর্বপ্রকার ব্যভিচারকে
হারাম ঘোষণা করেছে তেমনি ব্যভিচারের কাছ ঘেঁসতে, অবৈধ যৌনাচারের নিকটবর্তী হতে নিষেধ
এবং এর সমস্ত ছিদ্র-পথ বন্ধ করতে আদেশ করেছে। কারণ, যে পথ হারামে নিয়ে যায় সে পথে চলাও
হারাম।
[1] (সূরা আন-নূর (২৪) : ২)
[2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫, ৩৫৫৭নং)
[4] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৭৫নং)
([5]) অধিকারভুক্ত দাসী বলে ক্রীতদাসী ও কাফের যুদ্ধবন্দিবনীকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কাজের মেয়ে, দাসী। খাদেমা বা চাকরানী উদ্দেশ্য নয়।
[6] (সূরা আল-মু’মিনূন (২৩) : ৫-৭)
[2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৫৫, ৩৫৫৭নং)
[4] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫৭৫নং)
([5]) অধিকারভুক্ত দাসী বলে ক্রীতদাসী ও কাফের যুদ্ধবন্দিবনীকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কাজের মেয়ে, দাসী। খাদেমা বা চাকরানী উদ্দেশ্য নয়।
[6] (সূরা আল-মু’মিনূন (২৩) : ৫-৭)
নারী-পুরুষের নির্জনবাস
বেগানা ([1]) নারী-পুরুষের
কোন নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছু ক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে,
পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের
নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনী
হয়।’’[2]
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য
পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক।
কারণ ‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী (সাঃ) মহিলাদের পক্ষে
তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।’’[3]
অতএব দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি,
ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোন বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা
এক মারাত্মক বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।
তদনুরূপ তাদের সাথে কোন কামরা
বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের
ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃতবাস, বাগদত্ত বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে
নির্জনবাস, লিফ্টে কোন বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের
একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জনবাস ও পড়াশোনা, স্বামীর
অবর্তমানে কোন বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জনবাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের
সাথে বা রিক্সায় রিক্সাচালকের সাথে নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরীদের একান্তে বায়াত
ও তা’লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুট্নী সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা
জাগ্রত করে কোন পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।[4]
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে
বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দপ্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা
মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং
চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দবোধ করে থাকে।
অনুরূপ কোন বেগানা মহিলার
সাথে নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।[5]
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট
নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোন কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর
স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ
করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।[6]
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আপোসে বা তাদের
সাথে যুবতী-যুবকের নির্জনবাস, কোন হিজড়ে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপোষে বা তাদের সাথে
যুবক-যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোন একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার,
কোন সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জনবাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না
পাওয়া গেলে কোন মহিলার জামাআতে একজন পুরুষ থেকে সফর আদি করায় অনেকের নিকট অনুমতি
রয়েছে।[7]
প্রকাশ যে, মহিলার সাথে কোন
নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার থেকে সমাজকে
দূরে রাখার জন্যই ইসলামে নারী-পুরুষে অবাধ মিলা-মিশা, একই অফিসে, মেসে, ক্লাশরুমে,
বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে জমায়েত অবৈধ।[8]
মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ
এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতিগঠনের
জন্য, সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই
যথেষ্ট; যদিও তা ঘরে বসেই হয়। তা ছাড়া পৃথক গার্ল্স স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে
মুসলিম নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়া’র ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর
সবনির্ভরশীল হয়ে জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে
আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লংঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা
আনা যায় ঠিকই; কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর
প্রেম, ভালোবাসা ও আনুগত্যে। পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম
রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা
বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে
উঠবে। যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন
ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?[9]
ব্যভিচারের প্রতি নিকটবর্তী
হওয়ার আর এক পদক্ষেপ মহিলাদের একাকিনী কোথাও বাইরে যাওয়া-আসা। তাই ‘সুন্দরী চলেছে একা
পথে, সঙ্গী হইলে দোষ কি তাতে?’ বলে বহু লম্পট তাদের পাল্লায় পড়ে থাকে, ধর্ষণের হাত
হতে অনেকেই রক্ষা পায় না, পারে না নিজেকে ‘রিমার্ক’ ও ‘টিস্’ এর শিলাবৃষ্টি হতে বাঁচাতে।
এর জন্যই তো সমাজ-বিজ্ঞানী রসূল (সাঃ) বলেন,
‘‘মহিলা যেন এগানা পুরুষ
ছাড়া একাকিনী সফর না করে।’’ (বুখারী
৫২৩৩, মুসলিম ১৩৪১ন)
‘‘রমণী গুপ্ত জিনিস; সুতরাং যখন সে (বাড়ি হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে
পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয় করে দেখায়।’’[10]
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোন এমন মহিলার নিকট কোন গম্য
আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে নেই, বিদেশে আছে। কারণ
এমন স্ত্রীর মনে সাধারণতঃ যৌনক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী
বা ঐ পুরুষ যতই পরহেযগার হোক, তবুও না। এ বিষয়ে নীতি-বিজ্ঞানী (সাঃ) বলেন,
‘‘তোমরা সেই মহিলাদের নিকট
গমন করো না যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্তশিরায় প্রবাহিত
হয়।’’[11]
সাহাবী (রাঃ) বলেন, ‘‘আল্লাহর নবী (সাঃ) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে,
আমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি।’’[12]
অনুরূপ কোন প্রকার সেন্ট
বা পারফিউমড্ ক্রিম অথবা পাওডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও)
যাওয়া ব্যভিচারের নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু যুবকের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলার
নিকট হতে সুগন্ধ পেলে তার যৌন-চেতনা উত্তেজনায় পরিণত হয়। যার জন্যই সংস্কারক নবী (সাঃ)
বলেন,
‘‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী।
আর রমণী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে
সে এক বেশ্যা।’’[13]
এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ।[14]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যে মহিলা সেন্ট্ ব্যবহার
করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোন নামায কবুল হবে না।’’ (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৩নং)
কোন গম্য পুরুষের সাথে মহিলার প্রগল্ভতার সাথে কিংবা মোহনীয় কণ্ঠে সংলাপ
ও কথোপকথন করাও ব্যভিচারের নিকটবর্তীকারী পথসমূহের অন্যতম ছিদ্রপথ। এ বিপজ্জনক বিষয়ে
সাবধান করে আল্লাহ তা’আলা মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয়
কর তবে পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরের
মানুষ প্রলুব্ধ হয়।’’[15]
এই জন্যই ইমাম ভুল করলে পুরুষ মুক্তাদীরা তসবীহ বলে স্মরণ করাবে, আর
মহিলারা হাততালির শব্দে, তসবীহ বলেও নয়! যাতে নারীর কণ্ঠসবরে কতক পুরুষের মনে যৌনানুভূতি
জাগ্রত না হয়ে উঠে। সুতরাং নারী-কণ্ঠের গান তথা অশ্লীল গান যে কি, তা রুচিশীল মানুষদের
নিকট সহজে অনুমেয়।
এমন বহু হতভাগী মহিলা
আছে, যারা স্বামীর সাথে কর্কশসবরে কথা বলে কিন্তু কোন উপহাসের পাত্রের (?) সাথে
মোহন-সূরে সংলাপ ও উপহাস করে। এরা নিশ্চয়ই পরকালেও হতভাগী।
তদনুরূপ বেগানা নারীর সাথে
মুসাফাহা বৈধ নয়। হাতে মোজা, দস্তানা বা কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কামমনে হলে তা হাতের
ব্যভিচার।[16]
করতল চেপে ধরা এবং সুরসুরি
দেওয়াও হল তার ইঙ্গিত! কোন গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে
প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা প্রভৃতি
ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। সমাজ সংস্কারক নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ
সুচ দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়।’’[17]
বাইরে বের হয়ে রমণীর রমণীয়, মোহনীয় ও সৌন্দর্য-গর্বজনক চপল মধুর চলনও
ব্যভিচার ও যৌন উত্তেজনার সহায়ক কর্ম। এরা সেই নারী যাদের প্রসঙ্গে নবী (সাঃ) বলেছেন,
‘‘তারা পুরুষকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হয়; তারা জাহান্নামী।’’ [18]
অনুরূপ খট্খট্ শব্দবিশিষ্ট
জুতো নিয়ে চট্পটে চলন, দেহের অলঙ্কার যেমন চুড়ি, খুঁটকাটি, নুপুর, তোরা প্রভৃতির বাজনা
বাজিয়ে লাস্যময় চলনও যুবকের মনে যৌন-আন্দোলন আনে। সুতরাং এ কর্ম যে হারাম তা বলাই বাহুল্য।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
‘‘তারা যেন তাদের গোপন আভরণ
প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে----।’’[19]
যেমন পথে চলার সময় পথের মাঝে চলা নারীর জন্য বৈধ নয়।[20]
মহিলাদের জন্য সবগৃহে গোসলখানা
(বাথরুম) করা ওয়াজেব (সিমেন্টের হওয়া জরুরী নয়) এবং ফাঁকা পুকুরে, নদীতে, ঝর্ণায়, সমুদ্রতীরে
বা সাধারণ গোসলখানায় গোসল করা তাদের জন্য হারাম। যেহেতু সমাজ-বিজ্ঞানী নবী (সাঃ) বলেছেন,
‘‘যে নারী সবগৃহ ( স্বামীগৃহ
বা মায়ের বাড়ি) ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) আল্লাহ তার পর্দা ও
লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেন। (অথবা সে নিজে করে দেয়।)[21]
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে সাধারণ
গোসলখানায় যেতে না দেয়।’’[22]
সবগৃহ ছেড়ে পরকীয় গৃহে বাস, বান্ধবী বা বান্ধবীর স্বামীর বাড়িতে
রাত্রিবাস ইত্যাদিও বিপজ্জনক ব্যভিচারের ছিদ্রপথ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে মহিলা নিজের স্বামীগৃহ ছাড়া অন্য গৃহে নিজের কাপড় খোলে সে আল্লাহ
আয্যা অজাল্লা ও তার নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে।’’[23]
একই কারণে অপরের লজ্জাস্থান
(নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত স্থান) দেখা এবং একই কাপড়ে পুরুষে-পুরুষে বা মহিলায়-মহিলায়
শয়ন করাও নিষিদ্ধ।[24]
পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার
সর্বশরীর লজ্জাস্থান। বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অঙ্গ যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি
থেকে শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই ছোট্ট অঙ্গার টুকরা থেকেই সূত্রপাত হয় সর্বগ্রাসী
বড় অগ্নিকান্ডের। দৃষ্টির কথাই কবি বলেন,
‘‘আঁখি ও তো আঁখি নহে, বাঁকা ছুরি গো
কে জানে সে কার মন করে চুরি গো!’’
প্রেম জগতে চক্ষু কথা ব’লে
এমন বিষয় বুঝিয়ে থাকে যা জিহ্বা প্রকাশ করতে অক্ষম। চোখের কোণেই আছে যাদুর রেখা।
‘‘নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি ইশারায়
লক্ষ যুগের মহা-তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়!’’
‘নজরবান’ মেরে অনেকে অনেককে
ঘায়েল করে থাকে। চোরা চাহনিতে অনেকেই বুঝিয়ে থাকে গোপন প্রণয়ের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
‘‘--গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি; ছল করে দেখা অনুখন,
--চপল মেয়ের ভালোবাসা তার কাঁকন চুড়ির কন্কন্।’’
সুতরাং এ দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক
বিপত্তি। যার জন্যই আল্লাহপাক বলেন,
‘‘মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা
যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে (নজর ঝুকিয়ে চলে) এবং তাদের যৌনাঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে;
এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল,
তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষা করে---।’’[25]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘(কোন রমণীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি)
বারবার দৃক্পাত করো না। বরং নজর সত্বর ফিরিয়ে নিও।’’[26]
যেহেতু ‘‘চক্ষুও ব্যভিচার
করে এবং তার ব্যভিচার হল (কাম)দৃষ্টি।’’[27]
সুতরাং এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও
সংযত করতে হবে এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয়ই বাজবে না।
আর এই বড় বিপদ সৃষ্টিকারী অঙ্গ চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয়, তাই তো নারীর
জন্য জরুরী তার চেহারাকেও গোপন করা।
অত্যন্ত সখীত্বের খাতিরে
হলেও বিনা পর্দায় সখীতে-সখীতে দৃঢ় আলিঙ্গন ও একে অপরকে নিজ নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন করা
বৈধ নয়। কারণ এতে সাধারণতঃ প্রত্যেক সখী তার সখীর দেহ-সৌষ্ঠব নিজের স্বামীর নিকট
বর্ণনা করলে স্বামী মনের পর্দায় তার স্ত্রীর ঐ সখীর বিলক্ষণ রূপ-দৃশ্য নিয়ে মনোতৃপ্তি
লাভ করে থাকে।[28] হয়তো বা মনের অলক্ষ্যেই এই পুরুষ তার হৃদয়ের কোন কোণে ঐ মহিলার জন্য
আসন পেতে দেয়। আর পরবর্তীতে তাকে দেখার ও কাছে পাওয়ার মত বাসনাও জাগ্রত করে তোলে।
নোংরা পত্র-পত্রিকা পাঠ,
অশ্লীল ছায়াছবি ও থিয়েটার-যাত্রা দর্শনও একই পর্যায়ের; যাতে ধবংস হয় তরুণ-তরুণীর চরিত্র,
নোংরা হয়ে উঠে পরিবেশ।
স্বামী-স্ত্রীর মিলন-রহস্য
প্রভৃতি জানার জন্য সঠিক সময় হল বিবাহের পর অথবা বিবাহের পাকা দিন হওয়ার পর। নচেৎ এর
পূর্বে রতি বা কামশাস্ত্র পাঠ করে বিবাহে দেরী হলে মিলনতৃষ্ণা যে পর্যায়ে পৌঁছায় তাতে
বিপত্তি যে কোন সময়ে ঘটতে পারে।
কারো রূপ, দ্বীনদারী প্রভৃতির
প্রশংসা শুনে তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলা দূষণীয় নয়। তাকে পেতে বৈধ উপায় প্রয়োগ করা
এবং বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ করে সুখের সংসার গড়া উত্তম। কিন্তু অবৈধভাবে তাকে দেখা, পাওয়া,
তার কথা শোনা ও তার সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করা অবশ্যই সীমালংঘন। অবৈধ বন্ধুত্ব ও প্রণয়ে
পড়ে টেলিফোনে সংলাপ ও সাক্ষাৎ প্রভৃতি ইসলামে হারাম।
যুবক-যুবতীর ঐ গুপ্ত ভালোবাসা
তো কেবল কিছু দৈহিক সুখ লুটার জন্য। যার শুরুতেও চক্ষে অশ্রু ঝরে এবং শেষেও। তবে শুরুতে
ঝরে আনন্দাশ্রু, আর শেষে উপেক্ষা ও লাঞ্ছনার। কারণ, ‘কপট প্রেম লুকোচুরি, মুখে মধু,
হূদে ছুরি’ই অধিকাংশ হয়। এতে তরুণী বুঝতে পারে না যে, প্রেমিক তার নিকট থেকে যৌনতৃপ্তি
লাভ ক’রে তাকে বিনষ্ট ক’রে চুইংগামের মত মিষ্টতা চুষে নিয়ে শেষে আঠাল পদার্থটিকে ছুঁড়ে
ফেলে দেবে।
‘‘বন্ধু গো যেও ভুলে-
প্রভাতে যে হবে বাসি, সন্ধ্যায় রেখো না সে ফুল তুলে।
উপবনে ত্ব ফোটে যে গোলাপ প্রভাতেই তুমি জাগি,
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা লাগি।’’
সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া
উচিৎ মুসলিম তরুণীকে এবং তার অভিভাবককেও। কারণ, ‘বালির বাঁধ, শঠের প্রীতি, এ দুয়ের
একই রীতি।’
([1]) যাদের সহিত চিরতরের জন্য বিবাহ অবৈধ তাদেরকেই মাহরাম, অগম্য বা
এগানা এবং এছাড়া অন্যান্য সকলকে গায়র মাহরাম, গম্য বা বেগানা বলা হয়।
[2] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১১৮নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১০২নং)
[4] (ইলা রাববাতিল খুদূর, আবু আনাস আলী ৩৫পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান ১৬৭-১৬৮ পৃঃ)
[5] (জামিউ আহকামিন নিসা, মুস্তাফা আল আদাবী ১/৩৬০)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/২৭০)
[7] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/২৪৫-২৭০)
[8] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৪১-৪২পৃঃ)
[9] (রাকানি ৩১পৃঃ, খামসূনা যুহরাহ মিন হাক্বলিন নুস্হ, আব্দুল আযীয আলমুকবিল১৬পৃঃ)
[10] (সহীহ তিরমিযী ৯৩৬নং)
[11] (সহীহ তিরমিযী ৯৩৫নং, সহীহ ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী ১৭৭৯নং)
[12] (সহীহ তিরমিযী ২২৩০নং)
[13] (সহীহ তিরমিযী, আল্লামা আলবানী ২২৩৭নং)
[14] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, আল্লামা আলবানী ২৭০২নং)
[15] (সূরা আল-আহযাব (৩৩) : ৩২)
[16] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৪১২৬নং)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী ২২৬ নং)
[18] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৪নং, ফামু ১৯-২০পৃঃ)
[19] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩১)
[20] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৮৫৬নং)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৮নং, আদাবুয যিফাফ, শায়খ আলবানী ১৩৯পৃঃ)
[22] (হাকেম, মুস্তাদরাক, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৯পৃঃ)
[23] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭১০নং)
[24] (সহীহ তিরমিযী ২২৪৩নং)
[25] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩০-৩১)
[26] (সহীহ তিরমিযী ২২২৮, ২২২৯নং)
[27] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৮৬নং)
[28] (সহীহ তিরমিযী ২২৪৩নং)
[2] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১১৮নং)
[3] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১০২নং)
[4] (ইলা রাববাতিল খুদূর, আবু আনাস আলী ৩৫পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান ১৬৭-১৬৮ পৃঃ)
[5] (জামিউ আহকামিন নিসা, মুস্তাফা আল আদাবী ১/৩৬০)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/২৭০)
[7] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/২৪৫-২৭০)
[8] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৪১-৪২পৃঃ)
[9] (রাকানি ৩১পৃঃ, খামসূনা যুহরাহ মিন হাক্বলিন নুস্হ, আব্দুল আযীয আলমুকবিল১৬পৃঃ)
[10] (সহীহ তিরমিযী ৯৩৬নং)
[11] (সহীহ তিরমিযী ৯৩৫নং, সহীহ ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী ১৭৭৯নং)
[12] (সহীহ তিরমিযী ২২৩০নং)
[13] (সহীহ তিরমিযী, আল্লামা আলবানী ২২৩৭নং)
[14] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ, আল্লামা আলবানী ২৭০২নং)
[15] (সূরা আল-আহযাব (৩৩) : ৩২)
[16] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৪১২৬নং)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী ২২৬ নং)
[18] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৪নং, ফামু ১৯-২০পৃঃ)
[19] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩১)
[20] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৮৫৬নং)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৮নং, আদাবুয যিফাফ, শায়খ আলবানী ১৩৯পৃঃ)
[22] (হাকেম, মুস্তাদরাক, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৯পৃঃ)
[23] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭১০নং)
[24] (সহীহ তিরমিযী ২২৪৩নং)
[25] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩০-৩১)
[26] (সহীহ তিরমিযী ২২২৮, ২২২৯নং)
[27] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৮৬নং)
[28] (সহীহ তিরমিযী ২২৪৩নং)
পর্দা
ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ
করার আর এক উপায় হল পর্দা। রমণীর দেহ-সৌষ্ঠব প্রকৃতিগতভাবেই রমণীয়। কামিনীর রূপলাবণ্য
এবং তদুপরি তার অঙ্গরাগ বড় কমনীয়; যা পুরুষের কামানল প্রজ্জলিত করে। তাই পুরুষের দৃষ্টির
অন্তরালে থেকে নিজের মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে নারী জাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর
এই বিধান এল। এই জন্যই কোন গম্য (যার সাথে নারীর কোনও সময়ে বিবাহ বৈধ হতে পারে এমন)
পুরুষের দৃষ্টিতে তার সৌন্দর্য ও লাবণ্য প্রকাশ করতে পারে না। পক্ষান্তরে যার সাথে
নারীর কোনও কালে বিবাহ বৈধ নয় এমন পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। কারণ এদের
দৃষ্টিতে কাম থাকে না। আর যাদের থাকে তারা মানুষ নয়, পশু। (কাদের সাথে কোনও কালে বিবাহ
বৈধ নয় তাদের কথা পরে আলোচিত হবে।) অনুরূপ নারীর রূপ বিষয়ে অজ্ঞ বালক, যৌনকামনাহীন
পুরুষ এবং অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসের সাথে মহিলা দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে।
পর্দার ব্যাপারে আল্লাহর
সাধারণ নির্দেশঃ-
‘‘(হে নারী জাতি!) তোমরা
সবগৃহে অবস্থান কর এবং প্রাক্-ইসলামী (জাহেলিয়াতী) যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে
বেড়িও না।’’[1]
‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী,
কন্যা ও মুসলিম রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর
টেনে নেয়। এতে (ক্রীতদাসী থেকে) তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে
না। (লম্পটরা তাদেরকে উত্যক্ত করবে না।)’’[2]
‘‘মুমিন নারীদেরকে বল, তারা
যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে ও লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যা প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের
(অন্যান্য) আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (উড়না অথবা
চাদর) দ্বারা আবৃত করে।[3]
‘‘(হে পুরুষগণ!) তোমরা তাদের
(নারীদের) নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের
হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।’’[4]
সুতরাং মুসলিম নারীর নিকট পর্দাঃ- আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য।
পর্দা, প্রেম ও চরিত্রের
পবিত্রতা, অনাবিলতা ও নিষ্কলঙ্কতা।
পর্দা, নারীর নারীত্ব, সতীর
সতীত্ব, সম্ভ্রম ও মর্যাদা।
পর্দা, লজ্জাশীলতা,
অন্তর্মাধুর্য ও সদাচারিতা।
পর্দা, মানবরূপী শয়তানের
দৃষ্টি থেকে রক্ষাকবচ।
পর্দা, ইজ্জত হিফাযত করে,
অবৈধ প্রণয়, ধর্ষণ, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার দূর করে, নারীর মান ও মূল্য রক্ষা করে। জিনিস
দামী ও মূল্যবান হলেই তাকে গোপনে লুকিয়ে রাখা হয়। যত্রেতত্রে কাঁচ পাওয়া যায় বলেই তার
কোন কদর নেই। কিন্তু কাঞ্চন পাওয়া যায় না বলেই তার বড় কদর। পর্দানশীন নারী কাঁচ নয়;
বরং কাঞ্চন, সুরক্ষিত মুক্তা।
পর্দা, নারীকে কাফের ও ক্রীতদাসী
থেকে বাছাই করে সম্ভ্রান্তা মুসলিম নারীরূপে চিহ্নিত করে।
পর্দা, আল্লাহর গযব ও জাহান্নামের
আগুন থেকে পর্দা।
নারীদের প্রধান শত্রু তার
সৌন্দর্য ও যৌবন। আর পর্দা তার লালকেল্লা।
ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে
নারীর পর্দা ও সভ্য লেবাসের কয়েকটি শর্ত নিম্নরূপঃ-
১- মুসলিম মহিলা
যে পোশাক ব্যবহার করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া যায়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা দেহকে
আবৃত করে। সুতরাং যে লেবাসে নারীর কেশদাম, গ্রীবা, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন,
শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও জাং (যেমন, স্ক্যার্ট্, ঘাগরা, ফ্রক্
ইত্যাদিতে) প্রকাশিত থাকে তা (সাধারণতঃ গম্য পুরুষদের সম্মুখে) পরিধান করা হারাম।
২- এই লেবাস
যেন সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। সুতরাং কামদার (এমব্রয়ডারি করা) চকচকে রঙিন
বোরকাও পরা বৈধ নয়।
৩- এমন পাতলা
না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব পাতলা শাড়ি, ওড়না প্রভৃতি মুসলিম মহিলার
ড্রেস নয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের
অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম শ্রেণী (অত্যাচারীর দল)
যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্বারা তারা লোককে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয়
শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্ত্ততঃ উলঙ্গ থাকবে,
যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যাদের মস্তক (খোপা
বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার গন্ধও
পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।’’[5]
৪- এমন টাইট্ফিট বা আঁট-সাঁট না হয় যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা
ও নীচতা এবং আকার ও আকৃতি কাপড়ের উপরেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত্ ও ফ্যাশনের লেবাস
মুসলিম রমণী পরিধান করতে পারে না, যাতে তার সুডৌল স্তনযুগল, সুউচ্চ নিতম্ব, সরু কোমর
প্রভৃতির আকার প্রকাশ পায়।
টাইট্ফিট ইত্যাদি লেবাস যে
বড় ফিতনা সৃষ্টিকারী ও হারাম তা বিভিন্ন লেডীস অন্তর্বাস কোম্পানীর নামই সাক্ষ্য দেয়।
যেমন, Look me, Take me,
Follow me, Buy me, Touch me, Kiss me প্রভৃতি। অবশ্য যে মহিলারা
এই ধরনের বেলেল্লাপনা পোশাক পরে নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়ায়, তাদের মনও ঐ কথাই বলে।
৫- এই লেবাস
যেন পুরুষদের অনুকৃত বা অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট প্রভৃতি পুরুষদের মত পোশাক
কোন মুসলিম মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু ‘‘পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর
অভিশাপ থাকে।’’[6]
৬- তদনুরূপ তা
যেন কাফের মহিলাদের অনুকৃত বা অনুরূপ না হয়।
প্রকাশ যে, ঢিলে ম্যাক্সি
ও শেলোয়ার কামীস এবং তার উপর অস্বচ্ছ চাদর বা ওড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি
আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম রমণীর লেবাস। কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা তার
উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক্ বা ভাঁজ করা ওড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি
সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ থাক্ করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও
পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে---তা অমুসলিম মহিলাদের লেবাস। আর প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ
করবে, সে সেই জাতির দলভুক্ত।’’[7]
৭- এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধিজনক
না হয়।[8]
৮- লেবাস যেন
সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে যায়,
সে বেশ্যা নারী।
প্রকাশ যে, নারীদেহে
যৌবনের চিহ্ন দেখা দেওয়া মাত্রই এই শর্তের পোশাক পরা ওয়াজেব।[9]
[1] (সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৩)
[2] (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৯)
[3] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩১)
[4] (সূরা সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
[5] (মুসলিম,বাইহাকী,মুসনাদে আহমদ,আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৩২৬নং)
[6] (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪২৮-৪৪২৯নং)
[7] (আবু দাঊদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৯নং)
[8] (মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৬নং)
[9] (আদাবুয যিফাফ ১৭৭পৃঃ, আফাই ১৩-১৮পৃঃ, মাসঊলিয়াতুল মারআতিল মুসলিমাহ, আব্দুল্লাহ আল-জারুল্লাহ ৫৮-৫৯পৃঃ)
[2] (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৯)
[3] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩১)
[4] (সূরা সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
[5] (মুসলিম,বাইহাকী,মুসনাদে আহমদ,আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৩২৬নং)
[6] (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪২৮-৪৪২৯নং)
[7] (আবু দাঊদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৯নং)
[8] (মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৬নং)
[9] (আদাবুয যিফাফ ১৭৭পৃঃ, আফাই ১৩-১৮পৃঃ, মাসঊলিয়াতুল মারআতিল মুসলিমাহ, আব্দুল্লাহ আল-জারুল্লাহ ৫৮-৫৯পৃঃ)
কোন কোন্ অঙ্গ দেখানো চলবে
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন
পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক।[1]
উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ দেখতে
পারে। তবে সর্বদা নগ্ন পোশাকে থাকা উচিৎ নয়।[2]
মা-বেটার মাঝে পর্দা ও গোপনীয়
কেবল নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত।
অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের
সাথে চিরকালের জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে পর্দা ও গোপনীয় হল গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।[3]
অবশ্য কোন চরিত্রহীন এগানা
পুরুষের কথায় বা ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে, মহিলা তার নিকটেও যথাসম্ভব অন্যান্য
অঙ্গও পর্দা করবে।[4]
মহিলার সামনে মহিলার পর্দা
নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলা কাফের হলে তার সামনে হাত ও চেহারা ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ
খোলা বৈধ নয়। যেমন, কোন নোংরা ব্যভিচারী মেয়ের সামনেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিৎ
নয়। অনুরূপ এমন কোন মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা নিষিদ্ধ; যে তার কোন বন্ধু বা
স্বামীর নিকট অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা যায় বা আশঙ্কা হয়। এমন মহিলার
সাথে মুসলিম মহিলার সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ নয়।[5]
মা-বাপের চাচা ও মামা, মেয়ের
চাচা ও মামা এবং মাহরাম। সুতরাং চাচাতো দাদো বা নানার সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।[6]
তালাকের পর ইদ্দত পার হয়ে
গেলে ঐ স্বামী এই স্ত্রীর জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার নিকটে পর্দা ওয়াজেব।
তার ছেলে দেখতে এলে কোন অঙ্গ ঐ পুরুষকে দেখাবে না।
পালিত পুত্র থেকে পালয়িত্রী
মায়ের এবং পালয়িতা বাপ থেকে পালিতা কন্যার পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের
প্রথার কোন অনুমতি নেই।
অনুরূপ পাতানো ভাই-বোন,
মা-বেটা, বাপ-বেটির মাঝে, পীর ভাই-বোন (?) বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর স্বামী বা স্ত্রীর
মাঝে পর্দা ওয়াজেব। যদিও তাদের চরিত্র ফিরিশ্তার মত হয়, তবুও দেখা দেওয়া হারাম। পর্দা
হবে আল্লাহর ভয়ে তাঁর আনুগত্যের উদ্দেশে, মানুষের ভয়ে বা লোক প্রদর্শনের জন্য নয়। এতে
মানুষের চরিত্র ও সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ, পরহেযগার, মৌলবী সাহেব
প্রভৃতি পর্দায় সকলেই সমান। আল্লাহর ফরয মানতে কোন প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার খেয়াল
অথবা কারো মনোরঞ্জনের খেয়াল নিশ্চয় বৈধ নয়।
দৃষ্টিহীন অন্ধ পুরুষের সামনে
পর্দা নেই। অবশ্য মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি সংযত করতে হবে।[7]
পৃথক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান
না থাকলে বেপর্দায় ছেলেদের সাথে পাশাপাশি বসে শিক্ষা গ্রহণ বৈধ নয়। স্বামী-সংসার
উদ্দেশ্য হলে বাড়িতে বসে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-সংসার শিখার শিক্ষাই
যথেষ্ট। অন্যান্য শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে শিখতে হবে। পর্দার
চেষ্টা না করে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-অভিভাবক সকলেই পাপী হবে।[8]
চিকিৎসার প্রয়োজনে মহিলার
জন্য ডাক্তার খোঁজা ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা যথাবিহিত চিকিৎসা তার নিকট না
হলে বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের নিকট যেতে পারে। তবে শর্ত হল মহিলার সাথে তার
স্বামী অথবা কোন মাহরাম থাকবে। একাকিনী ডাক্তার-রুমে যাবে না। পরন্তু ডাক্তারকে
কেবল সেই অঙ্গ দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো প্রয়োজন। লজ্জাস্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো
অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না।[9]
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ﴾
‘‘তোমরা আল্লাহকে যথাসম্ভব
ভয় কর।’’ (সাধ্যমত ভয় করার চেষ্টা কর।)[10]
একাকিনী হলেও নামাযে আদবের লেবাস জরুরী। এই সময় কেবল চেহারা ও হাত খুলে
রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল বের হয়ে গেলে নামায হয় না। যেমন, সম্মুখে বেগানা
পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।[11]
সেলোয়ার-কামিস বা ম্যাক্সিতে
নামায পড়লে চাদর জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা খুলে গেলে ক্ষতি নেই। এতে ওযুও নষ্ট
হয় না।[12]
‘‘বৃদ্ধা নারী; যারা বিবাহের
আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে যদি বহির্বাস খুলে রাখে, তাহলে তা
দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য উত্তম।’’[13] যেহেতু কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরও
বর্তমান।
পর্দায় থাকলে বাড়ির
লোক ঠাট্টা করলে এবং কোন প্রকার অথবা সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে মহিলার উচিৎ যথাসম্ভব
নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা নেই বলে ওজর গ্রহণযোগ্য
নয়। স্বামী পর্দায় থাকতে না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায় হয়ে বেপর্দা
হতে হয়, তবুও যথাসাধ্য নিজেকে সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর দেখবেন। যারা
সহায়তা করে না বা বাধা দেয়, তাদের পাপ তাদের উপর।
পক্ষান্তরে বেগানা পুরুষ
দেখে ঘর ঢুকলে বা মুখ ঢাকলে যারা হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ হানে অথবা
অসমীচীন মন্তব্য করে বা টিস্ মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে যারা উপহাস করে---তারা কাফের। এই
পর্দানশীন মহিলারা কাল কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে দেখে হাসবে।[14]
সুতরাং মুমিন নারীর দুঃখ
করা উচিৎ নয়, একাকিনী হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়। সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল।
মরতে সকলকেই হবে, প্রতিফল সকলেই পাবে।
‘মরে না মরে না কভু সত্য যাহা, শত শতাব্দীর বিস্মৃতির তলে
নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে হয় না চঞ্চল, আঘাতে না টলে।’
পর্দায় থাকার জন্য দেওর-ভরা
সংসার থেকে পৃথক হয়ে আলাদা ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি তার স্বামীকে তাকীদ
করে, তবে তা স্বামীর মানা উচিৎ; বরং নিজে থেকেই হওয়া উচিৎ। বিশেষ করে তার ভাইরা
যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে এটা জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই সংসারে থাকতে
হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা, আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ
ও সহায়তা-সহানুভূতি রাখা, সকলে মিলে পিতা-মাতার যথাসাধ্য সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে
প্রেম ও বিদ্বেষ করতে গিয়ে মানুষের মাঝে মানুষকে দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে।
যেহেতু, আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে?
পর্দা নিজের কাছে নয়।
কোন ইঁদুর নিজের চোখ বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল থেকে নিরাপদ, তবে এ তার
বোকামী নয় কি? তেঁতুল দেখে মুখে পানি আসা মানুষের এক প্রকৃতিগত দুর্দম সবভাব। অনুরূপ
নারীর সৌন্দর্য দেখে বদ্খেয়াল ও কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব হাত, চোখ
ও মুখের সামনে তেঁতুল থাকলে, তেঁতুলের টক গন্ধ নাকে এসে প্রবেশ করলে জিবে পানি আসাকে
কেউ কি রুকতে পারবে? পর্দা না করে কি কামলোলুপতা ও ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব?
নারীর মোহনীয়তা, কমনীয়তা
ও মনোহারিত্ব লুকিয়ে থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর লজ্জাশীলতা তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা
বেশী আকর্ষণীয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা
যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে ফেলে; পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে
থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে তোলে।’’[15]
সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের হওয়া নারী-সবাধীনতার যুগে পর্দা বড় বিরল।
এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা, লজ্জাশীলতা নারীর ভূষণ। ভূষণ হারিয়ে নারী তার বসনও
হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম নেই নারী ও তার অভিভাবকের মনে। পরন্তু সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন
হয়ে গেলে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা বন্যার মত প্রবাহিত হয়। তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র,
সবই অনায়াসে ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং এই লজ্জাহীনতাই এক নতুন ‘ফ্যাশন’
রূপে ‘সভ্য’ ও ‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতি লাভ করে। সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ ও
ছাঁটা চুল না হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষঃস্থল, ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি
গোপন অঙ্গে দিনের আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্তা’ হওয়া যায়?!
বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম
নারী-শিক্ষার ‘সুবেহ সাদেক’ চায়, নারী-দেহের নয়। মুসলিম নারী-বিদ্বেষী নয়, নারী-শিক্ষার
দুশমনও নয়। মুসলিম বেপর্দা তথা অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা, প্রগতি, নৈতিকতা
তথা পর্দা সবই মুসলিমের কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না; চায় বেলেল্লাপনা
ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ করতে।
পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের অবাধ্যতা।
পর্দাহীনতা; নগ্নতা, অসভ্যতা,
অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা, ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।
পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি,
ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ।
পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার
সহায়ক। মানবরূপী শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।
পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের
নয়নাভিরাম।
পর্দাহীনতা; কেবল ধর্মীয়
শৃঙ্খল থেকে নারী-সবাধীনতা নয়, বরং সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ
ও দেহমুক্তির নামান্তর।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা
ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী
ও জাহেলিয়াতি প্রথা। বরং সভ্য যুগের এই নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা
পাবে।
বেপর্দার জন্য জাহান্নামের
আগুন থেকে কোন পর্দা নেই।
[1] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)
[2] (ফাতাওয়াল মারআহ, ইবনে উসাইমীন, আব্দুল্লাহ বিন আল-জিবরীন ৫৪ পৃঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ২৩৯পৃঃ)
[3] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭৪)
[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৫০)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৪১)
[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭১)
[7] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭২পৃঃ)
[8] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮৪পৃঃ)
[9] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৫-১০৬পৃঃ)
[10] (সূরা আত্-তাগাবুন (৬৪) : ১৬)
[11] (কিতাবুদ দাওয়াহ, ইবনে বায২/৯৪)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৩৭, মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/২৮৪)
[13] (আল কুরআন কারীম ২৪/৬০)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসায়্যিাহ, ইবনে বায ৬০পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৭৬পৃঃ)
[15] (সহীহ তিরমিযী ১৬০৭নং, ইবনে মাজাহ)
[2] (ফাতাওয়াল মারআহ, ইবনে উসাইমীন, আব্দুল্লাহ বিন আল-জিবরীন ৫৪ পৃঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ২৩৯পৃঃ)
[3] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭৪)
[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৫০)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৪১)
[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭১)
[7] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭২পৃঃ)
[8] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮৪পৃঃ)
[9] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৫-১০৬পৃঃ)
[10] (সূরা আত্-তাগাবুন (৬৪) : ১৬)
[11] (কিতাবুদ দাওয়াহ, ইবনে বায২/৯৪)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৩৭, মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৫/২৮৪)
[13] (আল কুরআন কারীম ২৪/৬০)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসায়্যিাহ, ইবনে বায ৬০পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৭৬পৃঃ)
[15] (সহীহ তিরমিযী ১৬০৭নং, ইবনে মাজাহ)
প্রসাধন ও অঙ্গসজ্জা
নারীর রূপমাধুরী ও সৌন্দর্যলাবণ্য
নারীর গর্ব। তার এ রূপ-যৌবন সৃষ্টি হয়েছে একমাত্র কেবল তার স্বামীর জন্য।
স্বামীকে সে রূপ উপহার না দিতে পারলে কোন মূল্যই থাকে না নারীর। এই রূপ-যৌবন
স্বামীকে উপহার দিয়ে কত যে আনন্দ, সে তো নারীরাই জানে। সুন্দর অঙ্গের উপর অঙ্গরাগ
দিয়ে আরো মনোহারী ও লোভনীয় করে স্বামীকে উপহার দিয়ে উভয়েই পরমানন্দ ও প্রকৃত
দাম্পত্য-সুখ লুটতে পারে পার্থিব সংসারে।
সুতরাং অঙ্গ যার জন্য নিবেদিত
অঙ্গরাগও তার জন্যই নির্দিষ্ট। স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য অঙ্গসজ্জা করা ও
তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়।
যুগের তালে তালে নারীদের
অঙ্গরাগ, মেকআপ ও প্রসাধন-সামগ্রী অতিশয় বেড়ে উঠেছে। যার হালাল ও হারাম হওয়ার কষ্টিপাথর
হল এই যে, ঐ প্রসাধনদ্রব্য ব্যবহারে যেন অঙ্গের বা ত্বকের কোন ক্ষতি না হয়। ঐ দ্রব্যে
যেন কোন প্রকার অবৈধ বা অপবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত না থাকে, তা যেন বিজাতীয় মহিলাদের বৈশিষ্ট্য
না হয়। (যেমন সিন্দুর, টিপ প্রভৃতি) এবং তা যেন বেগানার সামনে প্রকাশ না পায়।[1]
সুতরাং শরীয়তের সীমার মাঝে
থেকে নারী যে কোন প্রসাধন কেবল স্বামীর মন আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
পরিধান করতে পারে যে কোন পোশাক তার সামনে, কেবল তাকেই ভালো লাগানোর জন্য। এই সাজ-সজ্জাতেও
লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার রহস্য। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য অঙ্গসজ্জা
না করে; পরন্তু বাইরে গেলে বা আর কারো জন্য প্রসাধন করে, তবে নিশ্চয়ই সে নারী প্রেম-প্রকৃতির
বিরোধী। নচেৎ সে স্বামীর প্রেম ও দৃষ্টি আকর্ষণকে জরুরী ভাবে না। - এমন নারী
হতভাগী বৈ কি? সে জানে না যে, তার নিজের দোষে স্বামী অন্যাসক্ত হয়ে পড়বে।
টাইট ফিট চুশ্ত পোশাক কেবল
স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য কোন এগানা ও
মহিলার সামনে, এমন কি পিতা-মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও ব্যবহার উচিৎ নয়।[2]
কেবল স্বামীর দৃষ্টি
আকর্ষণের জন্য ব্রা ব্যবহার বৈধ। অন্যের জন্য ধোঁকার উদ্দেশ্যে তা অবৈধ।[3]
যে পোশাকে অথবা অলঙ্কারে
কোন প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম
ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।[4]
যে লেবাস বা অলঙ্কারে ক্রুশ,
শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোন বিজাতীয় ধর্মীয় প্রতীক চিত্রিত থাকে, মুসলিমের জন্য তাও
ব্যবহার করা বৈধ নয়।[5]
নিউ মডেল বা ফ্যাশনের পরিচ্ছদ
ব্যবহার তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোন হিরো-হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ
হবে না।[6]
স্ক্যার্ট-ব্লাউজ বা স্ক্যার্ট-গেঞ্জি
মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার সামনে সেই ড্রেস পরা উচিৎ; যাতে গলা থেকে পায়ের
গাঁট পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা বোরকায়) বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো নিঃসন্দেহে
তা পরা হারাম।[7]
প্যান্ট-শার্ট মুসলিমদের
ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পরা বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে না; যদিও তা
ঢিলেঢালা হয় এবং টাইটফিট না হয়। এই জন্য যে, তা হল পুরুষদের ড্রেস। আর পুরুষের
বেশধারিণী নারী অভিশপ্তা।[8]
কেশবিন্যাসে মহিলার সিঁথি
হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক পাশে সিঁথি করতে পারে না।[9]
সাধারণতঃ এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।
বেণী বা চুঁটি গেঁথে মাথা
বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের উপর যদি কাপড়ের
উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী বা লম্বা আছে--এ কথা
যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য; যা কোন প্রকারে
বেগানার সামনে প্রকাশ করা হারাম।[10]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘আমার শেষ যামানার উম্মতের
মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি)তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায়
নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্ন; যাদের মাথা কৃশ
উঁটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!’’[11]
এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য---তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
মাথার ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে
পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন
কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে যাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই উচিৎ।[12]
মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য
সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়।
মহিলারা চুলে খেযাব বা কলপ
ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী, লালচে প্রভৃতি
কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে তাতে যেন কোন হিরোইন বা কাফের নারীর অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য
না হয়।[13]
সৌন্দর্যের জন্য সামনের কিছু
চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে কোন হিরোইন বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের
মত করে ছেঁটে ‘সাধনা-কাট’, বা ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি হারাম।[14]
তাছাড়া সুদীর্ঘ কেশদাম সুকেশিনীর
এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট না করাই উত্তম।[15]
স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের
উদ্দেশ্যে---অর্থের অপচয় না হলে---মেশিন দ্বারা চুল কুঁচকানো বা থাক্থাক্ করা বৈধ।[16]
তবে তা কোন পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়। মহিলা সেলুনে মহিলার নিকট এসব বৈধ। তবে গুপ্তাঙ্গের
লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে) পরিষ্কার করতে কোন মহিলার কাছেও লজ্জাস্থান খোলা বৈধ
নয়।[17]
কৃত্রিম চুল বা পরচুলা (টেসেল)
আদি কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো
যাবে না। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যে নারী তার মাথায় এমন
চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে।’’[18]
যে মেয়েরা মাথায় পরচুলা লাগিয়ে বড় খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল
(সাঃ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।[19]
অবশ্য কোন মহিলার মাথায় যদি
আদৌ চুল না থাকে, তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য তার পক্ষে পরচুলা ব্যবহার বৈধ।[20]
ভ্রূ চেঁছে সরু চাঁদের মত
করে সৌন্দর্য আনয়ন বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রূ ছেঁড়া বা চাঁছাতে আল্লাহর
সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়; যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া নবী (সাঃ) এমন মেয়েদেরকেও
অভিশাপ করেছেন।[21] অনুরূপ কপাল চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ।[22]
মহিলার গালে বা ওষ্ঠের উপরে
পুরুষের দাড়ি-মোচের মত দু-একটা বা ততোধিক লোম থাকলে তা তুলে ফেলায় দোষ নেই। কারণ, বিকৃত
অঙ্গে স্বাভাবিক আকৃতি ও শ্রী ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের অনুমতি আছে।[23]
নাক ফুড়িয়ে তাতে কোন অলঙ্কার
ব্যবহার বৈধ।[24]
দেগে মুখে-হাতে নক্সা করা
বৈধ নয়। এরূপ দেগে নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো হয় উভয়কেই নবী (সাঃ) অভিসম্পাত
করেছেন।[25]
স্বামীর দৃষ্টি ও মন
আকর্ষণের জন্য ঠোঁট-পালিশ, গাল-পালিশ প্রভৃতি অঙ্গরাগ ব্যবহার বৈধ; যদি তাতে কোন প্রকার
হারাম বা ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত না থাকে।[26]
দাঁত ঘষে ফাঁক-ফাঁক করে চিরনদাঁতীর
রূপ আনা বৈধ নয়। এমন নারীও নবী (সাঃ) এর মুখে অভিশপ্ত।[27]
অবশ্য কোন দাঁত অস্বাভাবিক
ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা তুলে ফেলা বৈধ।[28]
নখ কেটে ফেলা মানুষের এক
প্রকৃতিগত রীতি। প্রতি সপ্তাহে একবার না পারলেও ৪০ দিনের ভিতর কেটে ফেলতে হয়।[29]
কিন্তু এই প্রকৃতির বিপরীত করে কতক মহিলা নখ লম্বা করায় সৌন্দর্য আছে মনে করে। নিছক
পাশ্চাত্যের মহিলাদের অনুকরণে অসভ্য লম্বা ধারালো নখে নখ-পালিশ লাগিয়ে বন্য সুন্দরী
সাজে। কিন্তু ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে, সে সেই জাতির দলভুক্ত।’’[30]
নখে নখপালিশ ব্যবহার অবৈধ
নয়, তবে ওযুর পূর্বে তুলে ফেলতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।[31] অবশ্য এর জন্য উত্তম সময়
হল মাসিকের কয়েক দিন। তবে গোসলের পূর্বে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে।
মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে
মেহেন্দী ব্যবহার মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং মহিলাদের নখ সর্বদা মেহেন্দী দ্বারা রঙ্গিয়ে
রাখাই উত্তম।[32] এতে
এবং অনুরূপ আলতাতে পানি আটকায় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে যাবে।[33]
রঙ ব্যবহার পুরুষদের জন্য
বৈধ নয়। অবশ্য চুল-দাড়িতে কলপ লাগাতে পারে; তবে কালো রং নয়।
পায়ে নুপুর পরা বৈধ; যদি
তাতে বাজনা না থাকে। বাজনা থাকলে বাইরে যাওয়া অথবা বেগানার সামনে শব্দ করে চলা হারাম।
কেবল স্বামী বা এগানার সামনে বাজনাদার নুপুর বা তোড়া আদি ব্যবহার দোষের নয়।[34]
অতিরিক্ত উঁচু সরু হিল-তোলা
জুতা ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ এতে নারীর চলনে এমন ভঙ্গি সৃষ্টি হয়, যা দৃষ্টি-আকর্ষী;
যাতে পুরুষ প্রলুব্ধ হয়। তাছাড়া এতে আছাড় খেয়ে বিপদগ্রস্ত বা লাঞ্ছিতা হওয়ার আশঙ্কাও
থাকে।[35]
স্বামীর জন্য নিজেকে
সর্বদা সুরভিতা করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে। ভালোবাসায় যাতে ঘুণ না ধরে; বরং
তা যাতে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় সে চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর উভয়কেই রাখা উচিৎ। তবে মহিলা
কোন সেন্ট্ বা সেন্ট্জাতীয় প্রসাধন ব্যবহার ক’রে বাইরে বেগানার সামনে যেতে পারে না।
কারণ, তার নিকট থেকে সেন্ট্ যেমন স্বামীর মন ও ধ্যান আকর্ষণ ক’রে সুপ্ত যৌনবাসনা
জাগ্রত করে, কামানল প্রজ্বালিত করে ঠিক তেমনিই পরপুরুষের মন, ধ্যান, যৌবন প্রভৃতি আকৃষ্ট
হয়। তাই তো যারা সেন্ট্ ব্যবহার করে বাইরে বেগানা পুরুষের সামনে যায় তাদেরকে শরীয়তে
‘বেশ্যা’ বলা হয়েছে।[36]
এখানে খেয়াল রাখার বিষয় যে,
সেন্টে যেন কোহল বা স্পিরিট মিশ্রিত না থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের নিকট) বৈধ নয়।[37]
কোন বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য
আনয়নের জন্য অপারেশন বৈধ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার
করা বৈধ নয়।[38] পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা গোশত হাতে বা দেহের কোন অঙ্গে লটকে
থাকলে তা কেটে ফেলা বৈধ।[39]
কোন আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার
জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার দূষণীয় নয়। যেমন, সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার
করা যায়।[40]
সতর্কতার বিষয় যে, অলঙ্কার
ও পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে মহিলামহলে মহিলাদের আপোসে গর্ব করা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য
ক্ষণে ক্ষণে ‘ড্রেস চেঞ্জ্’ করা বা অলঙ্কার বদলে পরা বা ডবল সায়া ইত্যাদি পরা ভালো
মেয়ের লক্ষণ নয়। গর্ব এমন এক কর্ম যাতে মানুষ লোকচক্ষে খর্ব হয়ে যায়। প্রিয় নবী (সাঃ)
বলেন,
ªতোমরা খাও, পান কর, পরিধান
কর, দান কর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব।«
আর ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
‘‘যা ইচ্ছা খাও-পর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে;
অপচয় ও গর্ব।’’[41]
আল্লাহ তাআলা সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। কিন্তু
এতে সময় ও অর্থের অপচয় করা বৈধ নয়। কারণ, তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। পরন্তু
অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই-বোন।
পক্ষান্তরে, ফুলের সৌরভ ও রূপের গৌরব থাকেও না বেশী দিন।
‘সৌন্দর্য-গর্বিতা ওগো রানী!
তোমার এ কমনীয় রম্য দেহখানি,
এই তব যৌবনের আনন্দ বাহার
জান কি গো, নহে তা তোমার?’
তোমার এ কমনীয় রম্য দেহখানি,
এই তব যৌবনের আনন্দ বাহার
জান কি গো, নহে তা তোমার?’
এক বৃদ্ধার মুখমন্ডলে ঔজ্জ্বল্য
দেখে একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করল, তোমার চেহারায় এ বৃদ্ধ বয়সেও লাবণ্য ফুটছে, রূপ যেন
এখনো যুবতীর মতই আছে। তুমি কোন্ ক্রিম ব্যবহার কর গো?
বৃদ্ধা সহাস্যে বলল, দুই
ঠোঁটে ব্যবহার করি সত্যবাদিতার লিপষ্টিক, চোখে ব্যবহার করি (হারাম থেকে) অবনত দৃষ্টির
কাজল, মুখমন্ডলে ব্যবহার করি পর্দার ক্রিম ও গোপনীয়তার পাওডার, হাতে ব্যবহার করি পরোপকারিতার
ভেজলীন, দেহে ব্যবহার করি ইবাদতের তেল, অন্তরে ব্যবহার করি আল্লাহর প্রেম, মস্তিষ্কে
ব্যবহার করি প্রজ্ঞা, আত্মায় ব্যবহার করি আনুগত্য এবং প্রবৃত্তির জন্য ব্যবহার করি
ঈমান।
সত্যই কি অমূল্য ক্রিমই না
ব্যবহার করে বৃদ্ধা। তাই তো তার চেহারায় ঈমানী লাবণ্য ও জ্যোতি।
[1] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৭১)
[2] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৫)
[3] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ, সঞ্চয়নে আশরাফ আব্দুল মাকসূদ ১/৪৭০)
[4] (আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৪০পৃঃ)
[5] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ। ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৭পৃঃ)
[6] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১২পৃঃ)
[7] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২১পৃঃ)
[8] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৩০-৩১পৃঃ)
[9] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৭)
[10] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩০, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[11] (মুসনাদ আহমাদ ২/২২৩, ইবনে হিববান, সহীহ, ত্বাবারানী, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৬৮৩নং)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯৯পৃঃ)
[13] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২৫পৃঃ,তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩০পৃঃ)
[14] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৬-৮৩১, ফাতাওয়াল মারআহ ১০৭-১১১পৃঃ)
[15] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫১২-৫১৫)
[16] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[17] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৩পৃঃ)
[18] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৫নং)
[19] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[20] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৬, ফাতাওয়াল মারআহ ৮৩পৃঃ)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়াল মারআহ ৭২,৯৪পৃঃ)
[22] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬/৬৯২)
[23] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮২পৃঃ)
[25] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৯পৃঃ)
[26] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[27] (সহীহুল জামে ৫১০৪নং, আদাবুয যিফাফ ২০৩পৃঃ)
[28] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৮পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[29] (মুসলিম, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২০৬পৃঃ)
[30] (আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ২০৫পৃঃ)
[31] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০১পৃঃ)
[32] (আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং)
[33] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৬পৃঃ)
[34] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮০পৃঃ)
[35] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৮৬পৃঃ)
[36] (মিশকাতুল মাসাবীহ ১০৬৫নং)
[37] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৮৫, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২০৩)
[38] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)
[39] (যীনাতুল মারআতিল মুসলিমাহ, ড. ফাতিমা সিদ্দীক নুজূমঃ ১২২ পৃঃ)
[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৩)
[41] (বুখারী)
[2] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৫)
[3] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ, সঞ্চয়নে আশরাফ আব্দুল মাকসূদ ১/৪৭০)
[4] (আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৪০পৃঃ)
[5] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ। ইবনে বায, ইবনে উসাইমীন ৭পৃঃ)
[6] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১২পৃঃ)
[7] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২১পৃঃ)
[8] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৩০-৩১পৃঃ)
[9] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৭)
[10] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩০, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[11] (মুসনাদ আহমাদ ২/২২৩, ইবনে হিববান, সহীহ, ত্বাবারানী, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৬৮৩নং)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯৯পৃঃ)
[13] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২৫পৃঃ,তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩০পৃঃ)
[14] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৬-৮৩১, ফাতাওয়াল মারআহ ১০৭-১১১পৃঃ)
[15] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫১২-৫১৫)
[16] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[17] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৩পৃঃ)
[18] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৫নং)
[19] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[20] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৬, ফাতাওয়াল মারআহ ৮৩পৃঃ)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, ফাতাওয়াল মারআহ ৭২,৯৪পৃঃ)
[22] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬/৬৯২)
[23] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮২পৃঃ)
[25] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫১০৪নং, তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৯পৃঃ)
[26] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)
[27] (সহীহুল জামে ৫১০৪নং, আদাবুয যিফাফ ২০৩পৃঃ)
[28] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ২৮পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)
[29] (মুসলিম, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২০৬পৃঃ)
[30] (আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ২০৫পৃঃ)
[31] (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০১পৃঃ)
[32] (আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং)
[33] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৬পৃঃ)
[34] (ফাতাওয়াল মারআহ ৮০পৃঃ)
[35] (ইলা রাববাতিল খুদূর ৮৬পৃঃ)
[36] (মিশকাতুল মাসাবীহ ১০৬৫নং)
[37] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৮৫, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২০৩)
[38] (ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)
[39] (যীনাতুল মারআতিল মুসলিমাহ, ড. ফাতিমা সিদ্দীক নুজূমঃ ১২২ পৃঃ)
[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮৩৩)
[41] (বুখারী)
বিবাহের প্রয়োজনীয়তা
মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সমাজবদ্ধ
হয়ে বাস করতে অভ্যস্ত। একাকী বাস তার সবভাব-সিদ্ধ নয়। তাই প্রয়োজন পড়ে সঙ্গিনীর ও কিছু
সাথীর; যারা হবে একান্ত আপন। বিবাহ মানুষকে এমন সাথী দান করে।
মানুষ সংসারে সবয়ংসম্পূর্ণ
নয়। বিবাহ মানুষকে দান করে বহু আত্মীয়-সবজন, বহু সহায় ও সহচর।
মানুষের প্রকৃতিতে যে যৌন-ক্ষুধা
আছে, তা দূর করার বৈধ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা হল বিবাহ।
বিবাহ মানুষকে সুন্দর চরিত্র
দান করে, অবৈধ দৃষ্টি থেকে চক্ষুকে সংযত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে।
বিবাহের মাধ্যমে আবির্ভাব
হয় মুসলিম প্রজন্মের। এতে হয় বংশ বৃদ্ধি, রসূল (সাঃ) এর উম্মত বৃদ্ধি।
পৃথিবী আবাদ রাখার সঠিক ও
সুশৃঙ্খল বৈধ ব্যবস্থা বিবাহ। বিবাহ আনে মনে শান্তি, হৃদয়ে স্থিরতা, চরিত্রে পবিত্রতা,
জীবনে পরম সুখ। বংশে আনে আভিজাত্য, অনাবিলতা। নারী-পুরুষকে করে চিরপ্রেমে আবদ্ধ। দান
করে এমন সুখময় দাম্পত্য, যাতে থাকে ত্যাগ ও তিতিক্ষা, শ্রদ্ধা, প্রেম, স্নেহ ও উৎসর্গ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ, তাঁর নিদর্শনাবলীর
মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি
করেছেন; যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও স্নেহ
সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।[1]
ইসলামে
বৈরাগ্যের কোন স্থান নেই।
‘‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়,
অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ----।’’
‘‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়,
অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ----।’’
এই হল মুসলিমের জীবন। তাই
তো বিবাহ করা প্রত্যেক নবীর সুন্নত ও তরীকা। বিবাহ করা এক ইবাদত। স্ত্রী-সঙ্গম করা
সদকাহ্তুল্য।[2] যেহেতু এই পরিণয়ে মুসলিমের বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে ব্যভিচার থেকে
রক্ষা করা, স্ত্রীর অধিকার আদায় করা এবং তাকেও ব্যভিচারের হাত হতে রক্ষা করা, নেক সন্তান
আশা করা, অবৈধ দৃষ্টি, চিন্তা প্রভৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা। প্রিয় নবী (সাঃ)
বলেন,
‘‘(মুসলিম) বান্দা যখন বিবাহ
করে, তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দ্বীন) পূর্ণ করে, অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে
ভয় করে।’’[3]
ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য ও পবিত্র জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে বিবাহ করলে
দাম্পত্যে আল্লাহর সাহায্য আসে।[4]
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত
তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত
হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।[5]
জগদ্গুরু মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
‘‘হে যুবকদল! তোমাদের মধ্যে
যে ব্যক্তি (বিবাহের অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ ও রতিক্রিয়ার) সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ
করে। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে দস্ত্তরমত সংযত করে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে। আর যে ব্যক্তি
ঐ সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা রাখে। কারণ, তা যৌনেন্দ্রিয় দমনকারী।’’[6]
তিনি আরো বলেন,
‘‘বিবাহ করা আমার সুন্নত
(তরীকা)। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নত (তরীকা) অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত
নয়।’’[7]
সুতরাং বিয়ের বয়স হলে, যৌন-পিপাসায় অতিষ্ঠ হলে এবং নিজের উপর ব্যভিচারের
অথবা গুপ্ত অভ্যাসে স্বাস্থ্য ভাঙ্গার আশঙ্কা হলে বিলম্ব না করে যুবকের বিবাহ করা ওয়াজেব।
বাড়ির লোকের উচিৎ, এতে তাকে সহায়তা করা এবং ‘ছোট’ বা ‘পড়ছে’ বলে বিবাহে বাধা না দেওয়া।
যেমন পূর্বে আরো অবিবাহিত ভাই বা বোন থাকলে এবং তাদের বিয়ের ব্যবস্থা বা ইচ্ছা না হলে
এই যুবককে বিবাহে বাধা দেওয়ার অধিকার পিতা-মাতার বা আর কারো নেই। আল্লাহর আনুগত্যে
গুরুজনের আনুগত্য ওয়াজেব। যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতার ভয় ও আশঙ্কা হবে, সেখানে আর কারো
আনুগত্য নেই। বরং এই সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে ‘মনমত পণ’ না পাওয়ার জন্য বিয়ে না দিলে
মা-বাপের আনুগত্য হারাম। সুতরাং যুবকের উচিৎ, যথাসময়ে বিনা পণে মা-বাপ রাজী না হলেও
রাজী করতে চেষ্টা করে বিবাহ করা। নচেৎ তার অভিভাবক আল্লাহ।
অনেক সময় দ্বীনদার-পরহেজগার
পরিবেশের পুণ্যময়ী সুশীলা তরুণীর সাথে বিবাহে মা-বাপ নিজস্ব কোন স্বার্থে রাজী হয় না।
অথবা এমন পাত্রী দিতে চায়; যে দ্বীনদার নয়। দ্বীনদার যুবকের এ ক্ষেত্রেও মা-বাপের কথা
না মানা দ্বীনদারী।[8]
বৈবাহিক জীবন দু-একদিনের
সফর নয়; যাতে দু-একদিন পর সহজভাবে সঙ্গী পরিবর্তন করা যাবে। সুতরাং এখানে ছেলে-মেয়ে
সকলেরই বুঝাপড়া ও পছন্দের অধিকার আছে।
পক্ষান্তরে দ্বীন ছাড়া অন্য
স্বার্থে ছেলে যদি মা-বাপের কথা না মেনে তাদেরকে নারাজ করে বিবাহ করে, তবে এমন ছেলে
নিশ্চয়ই অবাধ্য। অবাধ্য মাতা-পিতার এবং অবাধ্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। এ বিষয়ে আরো কিছু
আলোচনা আসবে ‘বিবাহ প্রস্তাব ও তার শর্তাবলী’তে।
[1] (সূরা আর-রূম (৩০) : ২১)
[2] (মুসলিম ১০০৬নং)
[3] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৮নং)
[4] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩০৫০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৯নং)
[5] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩২)
[6] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮০নং)
[7] (ইবনে মাজাহ ১৮৪৬নং)
[8] (আল-লিকাউশ শাহরী ৩/৪২পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৫৬পৃঃ)
[2] (মুসলিম ১০০৬নং)
[3] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৬১৪৮নং)
[4] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩০৫০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৯নং)
[5] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩২)
[6] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮০নং)
[7] (ইবনে মাজাহ ১৮৪৬নং)
[8] (আল-লিকাউশ শাহরী ৩/৪২পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৫৬পৃঃ)
অবৈধ বিবাহ
বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নারী-পুরুষ
বৈধভাবে যৌনসুখ উপভোগ করতে পারে। কিন্তু কোন্ পুরুষ নারীর জন্য বৈধ এবং কোন্ নারী পুরুষের
জন্য অবৈধ বা অগম্যা তার বিস্তারিত বিধান রয়েছে ইসলামে।[1]
অবৈধ নারীকে অথবা অবৈধ নিয়মে
বিবাহ করে সংসার করলে ব্যভিচার করা হয়।
এমন কতকগুলি কারণ রয়েছে যার
কারণে নারী-পুরুষের আপোসে কোন সময়ে বিবাহ বৈধ নয়।
প্রথম কারণ, রক্তের সম্পর্কঃ
নারী-পুরুষের মাঝে রক্তের
সম্পর্ক থাকলে যেহেতু এক অপরের অংশ গণ্য হয় তাই তাদের আপোসে বিবাহ হারাম। এরা হল;
১- পুরুষের পক্ষে;
তার মা, দাদী, নানী এবং নারীর পক্ষে; তার বাপ, দাদো ও নানা।
২- পুরুষের পক্ষে;
তার কন্যা (বেটী) এবং নাতিন ও পুতিন, আর নারীর পক্ষে; তার পুত্র (ছেলে) এবং নাতি ও
পোতা।
৩- পুরুষের পক্ষে;
তার (সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী ও বৈমাত্রেয়ী) বোন, বুনঝি, ভাইঝি ও তাদের মেয়ে, ভাইপো ও বুনপোর
মেয়ে। আর নারীর পক্ষে; তার (সহোদর, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয়) ভাই, ভাইপো, বুনপো ও তাদের
ছেলে এবং ভাইঝি ও বুনঝির ছেলে।
৪- পুরুষের পক্ষে;
তার ফুফু (বাপের সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী বা বৈমাত্রেয়ী বোন) এবং নারীর পক্ষে; তার চাচা
(বাপের সহোদর, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় ভাই)।
৫- পুরুষের পক্ষে;
তার খালা (মায়ের সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী বা বৈমাত্রেয়ী বোন) এবং নারীর পক্ষে; তার মামা
(মায়ের সহোদর, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় ভাই)।
প্রকাশ যে, সৎ মায়ের বোন
(সৎ খালা) পুরুষের জন্য এবং সৎ মায়ের ভাই (সৎ মামা) নারীর জন্য হারাম বা মাহরাম নয়।
এদের আপোসে বিবাহ বৈধ।
৬- পুরুষের পক্ষে;
তার বাপ-মায়ের খালা বা ফুফু এবং নারীর পক্ষে তার বাপ-মায়ের চাচা বা মামা অবৈধ।[2]
প্রকাশ যে, পুরুষের জন্য
তার খালাতো, ফুফাতো, মামাতো, চাচাতো বোন ও (তাদের মেয়ে) বুনঝি বৈধ ও গম্য। অনুরূপ নারীর
জন্য তার খালাতো, ফুফাতো, মামাতো, চাচাতো ভাই ও ভাইপো বৈধ ও গম্য।
আবার পুরুষের পক্ষে; তার
(মামার মৃত্যু বা তালাকের পর) মামী, (চাচার মৃত্যু বা তালাকের পর) চাচী এবং নারীর পক্ষে
তার (খালার মৃত্যু বা তালাকের পর) খালু (ফুফুর মৃত্যু বা তালাকের পর) ফোফা গম্য। পূর্বোক্ত
গম্য-গম্যার মাঝে বিবাহ বৈধ ও পর্দা ওয়াজেব।
রক্তের সম্পর্ক যদি কৃত্রিম
হয়, তবে বিবাহ হারাম নয়। সুতরাং (রোগিনীকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে তাকে বিবাহ করা রক্তদাতা
পুরুষের জন্য অবৈধ নয়। অনুরূপ স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে রক্ত
দান করলে বিবাহের কোন ক্ষতি হয় না।[3]
দ্বিতীয় কারণঃ বৈবাহিক সম্পর্ক
:
১- পুরুষের জন্য
(স্ত্রী ও শবশুরের মৃত্যু বা তালাকের পরেও) শাশুড়ী, নানশাশ ও দাদশাশ। (স্ত্রীর সাথে
মিলন না হলেও) চিরতরে হারাম। অনুরূপ নারীর পক্ষে তার শবশুর, দাদোশবশুর ও নানাশবশুর
অগম্য।
২- রমিতা (যার
সাথে সঙ্গম হয়েছে এমন) স্ত্রীর (অপর স্বামীর) কন্যা ও তার বংশজাত কন্যা ও পুতিন
বা নাতিন। (স্ত্রীর সাথে মিলন হলে তবে। নচেৎ মিলনের পূর্বে মারা গেলে বা তালাক দিলে
তার মেয়ে অবৈধ বা অগম্যা নয়।) তদনুরূপ নারীর জন্য তার স্বামীর (অপর স্ত্রীর)
ছেলে ও তার বংশজাত ছেলেও অবৈধ।
৩- পুরুষের জন্য
তার সৎমা (বাপ তার সাথে মিলন করুক অথবা না করুক। বাপ মারা গেলে বা তালাক দিলেও) হারাম।
অনুরূপ সৎ দাদী এবং নানীও।
নারীর জন্য তার সৎবাপ (মায়ের
সাথে তার মিলন হলে) অগম্য। অনুরূপ সৎ দাদো এবং নানাও হারাম।
৪- পুরুষের জন্য
তার নিজের পুত্রবধূ (আপন ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী) অনুরূপ পুতবউ ও নাতবউ এবং
নারীর জন্য তার নিজের গর্ভজাত কন্যার স্বামী
(জামাই) অনুরূপ নাতজামাই ও পুতজামাই অবৈধ।
সুতরাং পুরুষের জন্য তার
সৎশাশুড়ী, স্ত্রীর দুধমা, (বিতর্কিত) এবং পালয়িত্রী মা হারাম নয়। অনুরূপ নারীর জন্য
তার সৎশ্বশুর, স্বামীর দুধবাপ (বিতর্কিত) এবং পালয়িতা বাপ অবৈধ নয়।
স্বামীর এক স্ত্রীর
ছেলে-মেয়ের সাথে দ্বিতীয়া স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত ছেলে-মেয়ের বিবাহ বৈধ।[4]
প্রকাশ যে, বৈবাহিক সূত্রে
মিলনের ফলে যাদের সাথে বিবাহ অবৈধ, ব্যভিচার সূত্রে মিলনের ফলে তাদের সাথে বিবাহ অবৈধ
কি না--তা নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। অর্থাৎ যেমন বিবাহের পূর্বে কোন নারীর সাথে ব্যভিচার
করলে তার মা বা মেয়েকে বিবাহ করা হারাম হবে কি না এবং বিবাহের পরে ব্যভিচার করলে ঐ
নারীর মা বা মেয়ে (যে এই পুরুষের স্ত্রী) তার পক্ষে হারাম হয়ে যাবে কি না, শবশুর-বউ-এ
ব্যভিচার করলে ছেলের উপর তার ঐ স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে কি না, ব্যভিচারজাত কন্যাকে বিবাহ
করা যাবে কি না, -এসব বিষয়ে বড্ড মতভেদ রয়েছে। অবশ্য কোন পক্ষের নিকটেই সহীহ কোন দলীল
নেই। যদিও অনুমান, অভিরুচি ও বিবেকমতে হারাম সাব্যস্ত হওয়াই উচিৎ।[5]
পরন্তু বহু উলামা বলেন, কারো
সাথে ব্যভিচার করলেই সে স্ত্রী এবং তার মা শাশুড়ী হয়ে যায় না। সুতরাং এতে ব্যভিচারের
কোন প্রভাব নেই।[6]
নৈতিক শৈথিল্যের এমন অশ্লীলতা,
পশুত্ব ও সমস্যা থেকে আল্লাহ মুসলিম সমাজকে মুক্ত ও পবিত্র রাখুন। আমীন।
পক্ষান্তরে বৈধরূপে স্ত্রী
মনে করে সহবাস করলে সম্পর্কে প্রভাব পড়ে। যেমন; বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধ না হয়েই সহবাস করলে
অথবা সহবাস করার পর জানা গেল যে, ঐ স্ত্রীর সাথে স্বামীও কোন দুধ-মায়ের দুধ পান
করেছে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী হারাম সাব্যস্ত হবে এবং তার মা ও মেয়েকে বিবাহ করা ঐ পুরুষের
জন্য হারাম হবে।[7]
তৃতীয় কারণঃ দুধের সম্পর্ক
:
যদি কোন শিশু (ছেলে অথবা
মেয়ে) কোন ভিন্ন মহিলার দুধ পান করে থাকে, তবে সে তার দুধমা। অবশ্য ‘দুধমা’ সাব্যস্তের
জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে;
১। ঐ দুধপান শিশুর ২বছর বয়সের
ভিতরে হতে হবে। দু’বছর পার হয়ে দুধপান করলে ‘মা’ সাব্যস্ত হবে না।[8]
২। তৃপ্তিসহকারে পাঁচ অথবা
ততোধিক বার দুধপান করবে।[9] স্তনবৃন্ত চুষে অথবা মাইপোষ, চামচ কিংবা নলের সাহায্যে
দুধ পেটে গেলে তবেই ‘মা’ সাব্যস্ত হবে।[10]
‘দুধমা’ সাব্যস্ত হলে তার
সাথে এবং রক্ত-সম্পর্কীয় অন্যান্য আত্মীয়র ন্যায় ঐ মায়ের বংশের সকলের সাথে বিবাহ অবৈধ
হবে।[11]
সুতরাং রীতিমত দুধপানকারী
পুরুষ তার দুধ-মা, দুধ-বোন, দুধ-খালা, দুধ-ভাইঝি, দুধ-বোনঝি প্রভৃতিকে চিরদিনের জন্য
বিবাহ করতে পারবে না। তদনুরূপ দুধপানকারী মহিলার তার দুধ-বাপ, দুধ-ভাই, দুধ-চাচা, দুধ-মামা,
দুধ-ভাইপো, দুধ-বুনপো প্রভৃতির সাথে বিবাহ বৈধ নয়।
অবশ্য যে দুধ পান করেছে তার
অন্য ভাই-বোনেরা ঐ মায়ের পক্ষে এবং তার ছেলেমেয়ে বা অন্যান্য আত্মীয়র পক্ষে হারাম
নয়।[12]
কোন পুরুষ যদি (শিশুবেলায়)
তার দাদীর দুধ রীতিমত পান করে থাকে, তবে তার পক্ষে রক্ত-সম্পর্কীয় মহিলা ছাড়াও চাচাতো,
ফুফাতো এবং নানীর দুধ পান করে থাকলে মামাতো খালাতো বোনও হারাম। কারণ, এই বোনেরা তখন
দুধ-ভাইঝি ও দুধ-বোনঝিতে পরিগণিত হয়ে যায়।[13]
উল্লেখ্য যে, শৃঙ্গারের সময়
স্ত্রীর দুধ মুখে গেলে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ-বন্ধনে কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, এটা
রীতিমত দুধ পান নয়।
চতুর্থ কারণঃ লিআন :
স্বামীর সংসারে থেকে যদি
স্ত্রী ব্যভিচার ক’রে তা অস্বীকার করে এবং এই ব্যভিচারের উপর যদি স্বামী ৪ জন
সাক্ষী কাজীর সামনে উপস্থিত না করতে পারে, তবে কাজী প্রত্যেককে কসম করাবেন; প্রথমে
স্বামী বলবে, ‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমি আমার স্ত্রী অমুককে যে ব্যভিচারের
অপবাদ দিয়েছি তাতে সত্যবাদী।’
এইরূপ চারবার বলার পর পঞ্চমবারে
তাকে থামিয়ে কাজী বলবেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর, এই (শেষ কসম)টাই আল্লাহর আযাব অনিবার্যকারী।
(সত্য বল। কারণ,) আখেরাতের আযাব হতে দুনিয়ার আযাব (মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার শাস্তি) সহজতর।’
এরপরেও যদি সে বিরত না হয়,
তবে পঞ্চমবারে বলবে, ‘আমি আমার স্ত্রী অমুককে যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছি, তাতে যদি
আমি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আমার উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক!’
অতঃপর স্ত্রী অনুরূপ বলবে,
‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাকে আমার স্বামী অমুক যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে
তাতে ও মিথ্যাবাদী।’
এইরূপ চারবার বলার পর পঞ্চমবারে
থামিয়ে কাজী তাকে বলবেন, আল্লাহকে ভয় কর, এটাই আল্লাহর আযাব অনিবার্যকারী, (সত্য বল।
কারণ,) আখেরাতের আযাবের চেয়ে দুনিয়ার আযাব (ব্যভিচারের শাস্তি) সহজতর।’
এরপরেও যদি বিরত না হয়, তাহলে
পঞ্চমবারে সে বলবে, ‘আমাকে আমার স্বামী অমুক যে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে, তাতে
যদি ও সত্যবাদী হয়, তাহলে আমার উপর আল্লাহর গযব হোক!’
এতদূর করার পর কাজী
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ করে দেবেন। আর এতে কারো শাস্তি হবে না।[14]
এই ধরনের লা’নত ও অভিশাপের
বিচ্ছেদকে ‘লিআন’ বলে। এই বিচ্ছেদ হওয়ার পর ঐ স্ত্রী ঐ স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম
হয়ে যায়। কোন প্রকারে আর পুনর্বিবাহ বৈধ নয়।[15]
প্রকাশ যে, রক্ত, দুধ ও বৈবাহিক
সম্পর্কের ফলে যাদের আপোসে চিরতরে বিবাহ অবৈধ কেবল তাদের সামনেই মহিলার পর্দা নেই।
বাকী বন্ধুত্ব, পাতানো, বা পীর ধরার (?) ফলে কেউ হারাম হয় না। সুতরাং বন্ধুর বোন, পাতানো
বোন এবং পীর-বোনের (?) সাথেও বিবাহ হালাল এবং পর্দা ওয়াজেব।
আরো এমন কতকগুলি কারণ রয়েছে
যাতে নারী-পুরুষের বিবাহ চিরতরে হারাম নয়; তবে সাময়িকভাবে হারাম। সেই নির্দিষ্ট সময়
অতিবাহিত হলে বিবাহ বৈধ। এমন কারণও কয়েকটিঃ-
প্রথম কারণঃ কুফর
ও শির্ক।
কোন মুসলিম (নারী-পুরুষ)
কোন কাফের বা মুশরিক (নারী-পুরুষ)কে বিবাহ করতে পারে না। অবশ্য ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত
হলে তার সাথে বিবাহ বৈধ। এ ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আর অংশীবাদী রমণী যে পর্যন্ত
মুসলমান না হয়, তোমরা তাকে বিবাহ করো না। মুশরিক নারী তোমাদের পছন্দ হলেও নিশ্চয়ই মুসলিম
ক্রীতদাসী তার চেয়ে উত্তম। আর মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত অংশীবাদী পুরুষের সাথে কন্যার
বিবাহ দিও না। অংশীবাদী পুরুষ তোমাদের পছন্দ হলেও মুসলিম ক্রীতদাস তার চেয়ে উত্তম।
কারণ, ওরা তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে আহবান করে এবং আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ অনুগ্রহ
ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন।’’[16]
‘‘মু’মিন নারীগণ কাফের পুরুষদের জন্য এবং কাফের পুরুষরা মু’মিন নারীদের
জন্য বৈধ নয়।’’[17]
শিয়া, কাদেয়ানী, কবুরী, মাযারী এবং মতান্তরে বেনামাযী প্রভৃতি পাত্র-পাত্রীর
সাথে কোন (তওহীদবাদী) মুসলিম পাত্র-পাত্রীর বিবাহ বৈধ নয়।[18]
পক্ষান্তরে আসমানী কিতাবধারী
ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান সচ্চরিত্র নারীকে (ইসলাম গ্রহণ না করলেও) মুসলিম পুরুষ বিবাহ করতে
পারে।[19]
তবে এর চেয়ে মুসলিম নারীই
যে উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন মুসলিম নারীর সাথে কোন কিতাবধারী পুরুষের
বিবাহ বৈধ নয়; যতক্ষণ না সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। যেহেতু ইসলাম চির উন্নত, অবনত হয় না।
তাছাড়া মুসলিমরা সকল নবীর প্রতি ঈমান রাখে, কিন্তু কিতাবধারীরা ইসলামের সর্বশেষ নবী
(সাঃ)-এর প্রতি ঈমান রাখে না।[20]
প্রকাশ যে, মুসলিম নামধারী
মুশরিকরা (যারা আল্লাহ ছাড়া পীর, কবর বা মাযারের নিকট প্রয়োজনাদি ভিক্ষা করে, তারা)
আহলে কিতাবের মত নয়। তাদের সাথে বিবাহ-শাদী বৈধ নয়।[21]
কোন পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করলেও
চট্ করে তার সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ দেওয়া উচিৎ নয়। মুসলিম হয়ে নামায-রোযা ও অন্যান্য
ধর্মীয় বিষয় পালন করছে কি না, তা দেখা উচিৎ। নচেৎ এমনও হতে পারে (বরং অধিকাংশ এমনটাই
হয়) যে, মুসলিম যুবতীর রূপ ও প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কেবল তাকেই পাবার উদ্দেশ্যে নামে মাত্র
মুসলিম হয়ে ইসলামে ফাঁকি দেয়।[22]
কোন মুসলিম পুরুষ অমুসলিম
নারীকে বিবাহ করতে চাইলে তাকে প্রকৃত মুসলিম করে ইদ্দত দেখে তারপর বিবাহ করবে। নামায-রোযা
প্রভৃতিতে যত্নবান না হলে বিবাহ বৈধ হবে না।[23]
দ্বিতীয় কারণঃ- অপরের
স্বামীত্বঃ
অপরের বিবাহিতা স্ত্রী তার
স্বামীত্বে থাকতে আর অন্য পুরুষের জন্য বৈধ নয়। সে মারা গিয়ে অথবা তালাক দিয়ে
ইদ্দতের যথা সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ঐ রমণীকে বিবাহ করা হারাম। সুতরাং ঐ মহিলা
আসলে গম্যা, কিন্তু অপরের স্বামীত্বে থাকার জন্য সাময়িকভাবে অন্যের পক্ষে অবৈধ।
এমন বিবাহিত সধবাকে কেউ বিয়ে করলেও বিবাহ-বন্ধনই হয় না। সে প্রথম স্বামীরই অধিকারভুক্ত
থাকে, আর দ্বিতীয় স্বামী ব্যভিচারী হয়। পরন্তু একটি মহিলা একাধিক স্বামী
গ্রহণ করতে পারে না। কারণ এতে বংশ ও সন্তানের অবস্থা সর্বহারা হয়। পক্ষান্তরে একজন
পুরুষ একাধিক স্ত্রী (৪টি পর্যন্ত) গ্রহণ করতে পারে।[24] কারণ, এতে ঐ ভয় থাকে না।
তাছাড়া বলাই বাহুল্য যে,
ইসলাম মানবপ্রকৃতির জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্ম। জীবনের সর্বপ্রকার সমস্যার সমাধান খুঁজে
মিলে এই ধর্মে। মানবকূলের সকল মানুষের প্রকৃতি, যৌনক্ষুধা বা কামশক্তি সমান নয়। স্ত্রী
তার বীর্যবান স্বামীর সম্পূর্ণ ক্ষুধা নাও মিটাতে পারে; বিশেষ করে যদি সে রোগা
হয় অথবা তার ঋতুর সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়। পক্ষান্তরে ব্যভিচারও মানবচরিত্রের প্রতিকূল।
স্ত্রী বন্ধ্যা হলে বংশে
বাতি দেবার জন্য সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে অথবা একজন বিধবা বা পরিত্যক্তার সৌভাগ্য ফিরিয়ে
আনতে এবং আরো অন্যান্য যুক্তিযুক্ত কারণে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিবাহ সংসারে প্রয়োজন
হয়। আর এটা নৈতিকতার পরিপন্থী নয়। চরিত্র ও নৈতিকতার প্রতিকূল তো এক বা একাধিক উপপত্নী
বা ‘গার্ল্স ফ্রেন্ড্’ গ্রহণ করা।[25]
পক্ষান্তরে একাধিক
বিবাহের শর্ত আছেঃ
১- একই সঙ্গে
যেন চারের অধিক না হয়।
২- স্ত্রীদের
মাঝে যেন ন্যায়পরায়ণতা থাকে। ভরণ-পোষণ, চরিত্র-ব্যবহার প্রভৃতিতে যেন সকলকে সমান চোখে
দেখা হয়। সকলের নিকট যেন সমানভাবে রাত্রি-বাস বা অবস্থান করা হয়। নচেৎ একাধিক বিবাহ
হারাম।[26]
অবশ্য অন্তরের গুপ্ত প্রেমকে
সকলের জন্য সমানভাবে ভাগ করা অসম্ভব।[27]
তাই অন্তর যদি কাউকে অধিক
পেতে চায় বা ভালোবাসে তবে তা দূষণীয় নয়। কিন্তু প্রকাশ্যে সকলের সাথে সমান ব্যবহার
প্রদর্শন ওয়াজেব।
একাধিক বিবাহ করলে কোন স্ত্রীর
মন্দ-চর্চা অন্য স্ত্রীর নিকট করবে না। কোন স্ত্রীকে অন্য স্ত্রী প্রসঙ্গে কুমন্তব্য
বা কুৎসা করতে সুযোগ দেবে না। তাদের আপোষে যাতে ঈর্ষাঘটিত কোন মনোমালিন্য বা দুর্ব্যবহার
না হয়, তার খেয়াল রাখবে। পৃথক-পৃথক বাসা হলেই শান্তির আশা করা যায়। নচেৎ ‘নিম তেঁতো,
নিষিন্দি তেঁতো, তেঁতো মাকাল ফল, তাহারও অধিক তেঁতো দু’ সতীনের ঘর।’ বিশেষ করে বেপর্দা
পরিবেশ হলে তো তিক্তময় নরক সে সংসার।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয়
বিবাহ করার সময় প্রথম স্ত্রীর অনুমতি জরুরী নয়।[28]
কুফরীর কারণে স্বামীর
অধিকার থেকে ছিন্ন হয়ে মুসলিমদের যুদ্ধবন্দিনীরূপে কোন মুজাহিদের ভাগে এলে এক মাসিক
পরীক্ষার পর অথবা গর্ভ হলে প্রসব ও নেফাসকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পর অধিকারভুক্ত হবে;
যদিও তার স্বামী বর্তমানে জীবিত আছে।[29]
কোন মহিলার স্বামী
মারা গেলে অথবা তালাক দিলে সে তার ইদ্দতকাল পর্যন্ত ঐ স্বামীর অধিকারে থাকে।
অতএব কোন রমণীকে তার ইদ্দতকালে বিবাহ করা অবৈধ।[30]
ইদ্দতের বিস্তারিত বিবরণ
পরে আসবে ইনশাআল্লাহ।
কোন মহিলা গর্ভবতী থাকলে
গর্ভকাল তার ইদ্দত। গর্ভাবস্থায় বিবাহ বৈধ নয়। অবৈধ গোপন প্রেমে যার ব্যভিচারে গর্ভবতী
হয়েছে সেই প্রেমিক বিবাহ করলেও গর্ভাবস্থায় আক্দ সহীহ নয়। প্রসবের পরই আক্দ সম্ভব।[31]
কোন মহিলার স্বামী
নিখোঁজ হলে নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পূর্ণ চার বছর অপেক্ষা করার পর আরো চার মাস দশদিন
স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালন করে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে। এই নির্ধারিত
সময়ের পূর্বে তার বিবাহ হারাম। বিবাহের পর তার পূর্ব স্বামী ফিরে এলে তার এখতিয়ার হবে;
স্ত্রী ফেরৎ নিতে পারে অথবা মোহর ফেরৎ নিয়ে তাকে ঐ স্বামীর জন্য ত্যাগ করতেও
পারে।[32]
স্ত্রী চাইলে আর নতুনভাবে
বিবাহ আক্দের প্রয়োজন নেই। কারণ, স্ত্রী তারই এবং দ্বিতীয় আক্দ তার ফিরে আসার পর বাতিল।
তবে তাকে ফিরে নেওয়ার পূর্বে ঐ স্ত্রী (এক মাসিক) ইদ্দত পালন করবে।[33]
গর্ভবতী হলে প্রসবকাল পর্যন্ত
অপেক্ষা করবে। আর সে সময়ে দ্বিতীয় স্বামী থেকে পর্দা ওয়াজেব হয়ে যাবে।
তৃতীয় কারণঃ- দুই নিকটাত্মীয়র
জমায়েত
সাধারণতঃ একাধিক বিবাহে অশান্তি
বেশীই হয়। সতীন তার সতীনকে সহজে সইতে পারে না। সতীনে-সতীনে বিচ্ছিন্নতা থাকে। অতএব
সতীন একান্ত নিকটাত্মীয় হলে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয়, যা হারাম। তাছাড়া নিকটাত্মীয়
সতীনের কথায় গায়ে ঝালা ধরে বেশী, দ্বন্দ্ব বাড়ে অধিক। কথায় বলে ‘আনসতীনে নাড়ে চাড়ে,
বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে।’ তাই ইসলাম এমন একান্ত নিকটাত্মীয়দেরকে একত্রে স্ত্রীরূপে জমা
করতে নিষেধ করেছে। সুতরাং স্ত্রী থাকতে তার (সহোদরা, বৈপিত্রেয়ী, বৈমাত্রেয়ী বা দুধ)
বোন (অর্থাৎ, শালী) কে বিবাহ করা হারাম। তদনুরূপ স্ত্রীর বর্তমানে তার খালা বা বোনঝি,
ফুফু বা ভাইঝিকে বিবাহ করা অবৈধ। স্ত্রী মারা গেলে বা তালাক দিলে ইদ্দতের পর তার ঐ
নিকটাত্মীয়র কাউকে বিবাহ করতে বাধা নেই।
স্ত্রীর কাঠবাপের (বা মায়ের
স্বামীর) অন্য স্ত্রীর মেয়েকে বিবাহ করতে দোষ নেই।[34]
চতুর্থ কারণঃ ইহরাম
হজ্জ বা উমরায় ইহরাম বাঁধা
অবস্থায় বিবাহ ও বিবাহের পয়গাম হারাম। এই অবস্থায় কারো বিবাহ হলেও তা বাতিল।[35]
পঞ্চম কারণঃ চারের অধিক সংখ্যা
চার স্ত্রী বর্তমান থাকতে
পঞ্চম বিবাহ হারাম।[36] চারের মধ্যে কেউ ইদ্দতে থাকলে তার ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত
অন্য বিবাহ করা যাবে না।
ষষ্ঠ কারণঃ তিন তালাক।
স্ত্রীকে তিন তালাক তিন পবিত্রতায়
দিলে অথবা জীবনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তিনবার তালাক দিলে ঐ স্ত্রীকে পুনঃ বিবাহ করা
বৈধ নয়। যদি একান্তই তাকে পুনরায় ফিরে পেতে চায়, তবে ঐ স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামী
ও তার যৌনস্বাদ গ্রহণের পর সে সেবচ্ছায় তালাক দিলে অথবা মারা গেলে তবে ইদ্দতের পর তাকে
পুনর্বিবাহ করতে পারে। নচেৎ তার পূর্বে নয়।[37]
স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার
পর লজ্জিত হয়ে ভুল বুঝতে পেরে তাকে ফিরে পেতে ‘হালালা’ পন্থা অবলম্বন বৈধ নয়। অর্থাৎ,
স্ত্রীকে হালাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কোন বন্ধু বা চাচাতো-মামাতো ভায়ের সাথে বিবাহ
দিয়ে এক রাত্রি বাস করে তালাক দিলে পরে ইদ্দতের পর নিজে বিবাহ করা এক প্রকার ধোঁকা
এবং ব্যভিচার। যাতে দ্বিতীয় স্বামী এক রাত্রি ব্যভিচার করে এবং প্রথম স্বামী
ঐ স্ত্রীকে হালাল মনে করে ফিরে নিয়েও তার সাথে চিরদিন ব্যভিচার করতে থাকে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে
স্ত্রী ঐভাবে তার জন্য হালাল হয় না।
যে ব্যক্তি হালাল করার জন্য
ঐরূপ বিবাহ করে, হাদীসের ভাষায় সে হল ‘ধার করা ষাঁড়।’[38] এই ব্যক্তি এবং যার জন্য
হালাল করা হয় সে ব্যক্তি (অর্থাৎ প্রথম স্বামী) আল্লাহ ও তদীয় রসূলের অভিশপ্ত।[39]
জায়বদলী বা বিনিময়-বিবাহ
বিনা পৃথক মোহরে বৈধ নয়। এ ওর বোন বা বেটিকে এবং ও এর বোন বা বেটীকে বিনিময় ক’রে পাত্রীর
বদলে পাত্রীকে মোহর বানিয়ে বিবাহ ইসলামে হারাম।[40] অবশ্য বহু উলামার নিকট উভয় পাত্রীর
পৃথক মোহর হলেও জায়বদলী বিয়ে বৈধ নয়। (যদি তাতে কোন ধোকা-ধাপ্পা দিয়ে নামকে-ওয়াস্তে
মোহর বাঁধা হয় তাহলে।[41]
মুত্আহ বা সাময়িক বিবাহও
ইসলামে বৈধ নয়। কিছুর বিনিময়ে কেবল এক সপ্তাহ বা মাস বা বছর স্ত্রীসঙ্গ গ্রহণ করে বিচ্ছিন্ন
হওয়ায় যেহেতু ঐ স্ত্রী ও তার সন্তানের দুর্দিন আসে, তাই ইসলাম এমন বিবাহকে হারাম ঘোষণা
করেছে।[42]
অনুরূপ তালাকের নিয়তে বিবাহ
এক প্রকার ধোঁকা। বিদেশে গিয়ে বা দেশেই বিবাহ-বন্ধনের সময় মনে মনে এই নিয়ত রাখা যে,
কিছুদিন সুখ লুটে তালাক দিয়ে দেশে ফিরব বা চম্পট দেব, তবে এমন বিবাহও বৈধ নয়। (এরূপ
করলে ব্যভিচার করা হয়।) কারণ, এতেও ঐ স্ত্রী ও তার সন্তানের অসহায় অবস্থা নেমে আসে।[43]
যাতে নারীর মান ও অধিকার খর্ব হয়।
কোন তরুণীর বিনা সম্মতিতে
জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া হারাম। এমন বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধই হয় না।[44]
বাল্য-বিবাহ বৈধ।[45] তবে
সাবালক হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর এক অপরকে পছন্দ না হলে তারা বিবাহবন্ধন ছিন্ন
করতে পারে।[46]
সববংশ বা সবগোত্রের আত্মীয়
গম্য পাত্র-পাত্রীর বিবাহ বৈধ। তবে ভিন্ন গোত্রে অনাত্মীয়দের সাথেই বৈবাহিক-সূত্র
স্থাপন করা উত্তম।[47]
বিশেষ করে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি
ও মনোমালিন্য নিয়ে বাড়াবাড়ি অধিক হয় সবগোত্রে ঘরে-ঘরে বিবাহ হলে। অভিজ্ঞরা বলেন, ‘ঘরে-ঘরে
বিয়ে দিলে, ঘর পর হয়ে যায়। আত্মীয়তা বাড়াতে গিয়ে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একেবারেই।’ অবশ্য
সর্বক্ষেত্রে দ্বীনদারীই হল কষ্টিপাথর।
কোন মুসলিম কোন ব্যভিচারিণী
নারীকে বিবাহ করতে পারে না। বরং এ ব্যাপারে ঐরূপ নারী মনোমুগ্ধকর সুন্দরী রূপের ডালি
বা ডানা-কাটা পরি হলেও মুসলিম পুরুষের তাতে রুচি হওয়াই উচিৎ নয়। একান্ত প্রেমের নেশায়
নেশাগ্রস্ত হলেও তাকে সহধর্মিনী করা হারাম।
এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
‘‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী
অথবা অংশীবাদিনীকে এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা অংশীবাদী পুরুষকে বিবাহ করে
থাকে। আর মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হল।’’[48]
সুতরাং অসতী নারী মুশরিকের উপযুক্ত; মুসলিমের নয়। কারণ উভয়েই অংশীবাদী;
এ পতির প্রেমে উপপতিকে অংশীস্থাপন করে এবং ও করে একক মা’বূদের ইবাদতে অন্য বাতিল মা’বূদকে
শরীক। (অবশ্য অসতী হলেও কোন মুশরিকের সাথে কোন মুসলিম নারীর বিবাহ বৈধ নয়।)
পক্ষান্তরে ব্যভিচারিণী যদি
তওবা করে প্রকৃত মুসলিম নারী হয়, তাহলে এক মাসিক অপেক্ষার পর তবেই তাকে বিবাহ করা বৈধ
হতে পারে। গর্ভ হলে গর্ভাবস্থায় বিবাহ-বন্ধন শুদ্ধ নয়। প্রসবের পরই বিবাহ হতে হবে।[49]
[1] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৩)
[2] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৭৩)
[3] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭০, ৪/৩৩২)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/২৬২, ৯/৬৭)
[5] (সিলসিলা যয়ীফাহ ১/৫৬৬, ইখতিয়ারাত ইবনে তাইমিয়্যাহ ৫৮৫-৫৮৮পৃঃ, ফাতাওয়া মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম ১০/১৩০)
[6] (মুমঃ ৭/৪৪)
[7] (ঐ ৭/৪৫)
[8] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৩)
[9] (মুসলিম)
[10] (আহকামু খিতবাতিন নিকাহি ফিল ইসলাম, ডক্টর শওকত উলাইয়্যান)
[11] (বুখারী ৫০৯৯নং, মুসলিম)
[12] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬৩)
[13] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬৬)
[14] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৬-৯, বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৩০৭নং)
[15] (আহকামু খিতবাতিন নিকাহি ফিল ইসলাম ১১৬পৃঃ)
[16] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২১)
[17] (সূরা আল-মুমতাহিনা (৬০) : ১০)
[18] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১১৫,১৭/৬১, ২৮/৯৩)
[19] (সূরা আল-মায়িদা (৫) : ৫)
[20] (ইসলাম মেঁ হালাল অ হারাম, ইউসুফ ক্বারযাবী, অনুবাদ, শাম্স পীরযাদাহঃ ২৪৫পৃঃ)
[21] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/৯৩)
[22] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৬পৃঃ)
[23] (বুখারী ৫২৮৬নং, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ ২/৩৫৭)
[24] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩)
[25] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ৬৭-৭৫পৃঃ দ্রঃ)
[26] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩)
[27] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১২৯)
[28] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৬৭)
[29] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৮)
[30] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৫)
[31] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৪,৭২)
[32] (মানারুস সাবীল ২/৮৮পৃঃ)
[33] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬)
[34] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৭)
[35] (যাদুল মাআদ ৪/৬)
[36] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) :৩)
[37] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩০)
[38] (ইরওয়াউল গালীল ৬/৩০৯)
[39] (ইরওয়াউল গালীল ১৮৯৭ নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৯৬)
[40] (বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি)
[41] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৪/৩২৮, ৯/৬৮)
[42] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৪৭নং)
[43] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৯পৃঃ)
[44] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৮ পৃঃ)
[45] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১২৯নং)
[46] (বুখারী ৫১৩৮নং, আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩৬নং)
[47] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৭পৃঃ)
[48] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩)
[49] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৮০)
[2] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৭৩)
[3] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭০, ৪/৩৩২)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/২৬২, ৯/৬৭)
[5] (সিলসিলা যয়ীফাহ ১/৫৬৬, ইখতিয়ারাত ইবনে তাইমিয়্যাহ ৫৮৫-৫৮৮পৃঃ, ফাতাওয়া মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম ১০/১৩০)
[6] (মুমঃ ৭/৪৪)
[7] (ঐ ৭/৪৫)
[8] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৩)
[9] (মুসলিম)
[10] (আহকামু খিতবাতিন নিকাহি ফিল ইসলাম, ডক্টর শওকত উলাইয়্যান)
[11] (বুখারী ৫০৯৯নং, মুসলিম)
[12] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬৩)
[13] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬৬)
[14] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৬-৯, বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৩০৭নং)
[15] (আহকামু খিতবাতিন নিকাহি ফিল ইসলাম ১১৬পৃঃ)
[16] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২১)
[17] (সূরা আল-মুমতাহিনা (৬০) : ১০)
[18] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১১৫,১৭/৬১, ২৮/৯৩)
[19] (সূরা আল-মায়িদা (৫) : ৫)
[20] (ইসলাম মেঁ হালাল অ হারাম, ইউসুফ ক্বারযাবী, অনুবাদ, শাম্স পীরযাদাহঃ ২৪৫পৃঃ)
[21] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৮/৯৩)
[22] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৬পৃঃ)
[23] (বুখারী ৫২৮৬নং, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ ২/৩৫৭)
[24] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩)
[25] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ৬৭-৭৫পৃঃ দ্রঃ)
[26] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩)
[27] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১২৯)
[28] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৬৭)
[29] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৮)
[30] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৫)
[31] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৪,৭২)
[32] (মানারুস সাবীল ২/৮৮পৃঃ)
[33] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬)
[34] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৭)
[35] (যাদুল মাআদ ৪/৬)
[36] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) :৩)
[37] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩০)
[38] (ইরওয়াউল গালীল ৬/৩০৯)
[39] (ইরওয়াউল গালীল ১৮৯৭ নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৯৬)
[40] (বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি)
[41] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৪/৩২৮, ৯/৬৮)
[42] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৪৭নং)
[43] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৯পৃঃ)
[44] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৮ পৃঃ)
[45] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১২৯নং)
[46] (বুখারী ৫১৩৮নং, আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩৬নং)
[47] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৭পৃঃ)
[48] (সূরা আন-নূর (২৪) : ৩)
[49] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৮০)
পাত্রী পছন্দ
পত্নী পুরুষের সহধর্মিনী,
অর্ধাঙ্গিনী, সন্তানদাত্রী, জীবন-সঙ্গিনী, গৃহের গৃহিণী, সন্তানের জননী, হৃদয়ের শান্তিদায়িনী,
রহস্য রক্ষাকারিণী, তার সুখী সংসারের প্রধান সদস্যা। সুতরাং এমন সাথী নির্বাচনে পুরুষকে
সত্যই ভাবতে হয়, বুঝতে হয়। শুধুমাত্র প্রেম, উচ্ছৃঙ্খলতা ও আবেগে নয়; বরং বিবেক ও দিমাগে
সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়।
সাধারণতঃ মানুষ তার ভাবী-সঙ্গিনীর
প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-যশ-খ্যাতি, ধন-সম্পদ, কুলীন বংশ, মনোলোভা রূপ-সৌন্দর্য প্রভৃতি
দেখে মুগ্ধ হয়ে তার জীবন-সঙ্গ লাভ করতে চায়; অথচ তার আধ্যাত্মিক ও গুণের দিকটা গৌণ
মনে করে। যার ফলে দাম্পত্যের চাকা অনেক সময় অচল হয়ে রয়ে যায় অথবা সংসার হয়ে উঠে তিক্তময়।
কিন্তু জ্ঞানী পুরুষ অবশ্যই খেয়াল রাখে যে,
‘‘দেখিতে পলাশ ফুল অতি মনোহর,
গন্ধ বিনে তারে সবে করে অনাদর।
যে ফুলের সৌরভ নাই, কিসের সে ফুল?
কদাচ তাহার প্রেমে মজেনা বুলবুল।
গুণীর গুণ চিরকাল বিরাজিত রয়,
তুচ্ছ রূপ দুই দিনে ধূলিসাৎ হয়।’’
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘রমণীকে তার অর্থ, আভিজাত্য,
রূপ-সৌন্দর্য ও দ্বীন-ধর্ম দেখে বিবাহ করা হয়। কিন্তু তুমি দ্বীনদারকে পেয়ে কৃতকার্য
হও। তোমার হস্ত ধূলিধূসরিত হোক।’’[1]
তিনি আরো বলেন,
‘‘তোমাদের প্রত্যেকের শুক্রকারী
অন্তর ও যিক্রকারী জিহ্বা হওয়া উচিৎ। আর এমন মুমিন স্ত্রী গ্রহণ করা উচিৎ; যে
তার আখেরাতের কাজে সহায়তা করবে।’’[2]
সুতরাং এমন পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ, যে হবে পুণ্যময়ী, সুশীলা, সচ্চরিত্রা,
দ্বীনদার, পর্দানশীন; যাকে দেখলে মন খুশীতে ভরে ওঠে, যাকে আদেশ করলে সত্বর পালন করে,
স্বামী বাইরে গেলে নিজের দেহ, সৌন্দর্য ও ইজ্জতের এবং স্বামীর ধন-সম্পদের
যথার্থ রক্ষণা-বেক্ষণা করে।[3]
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘সুতরাং সাধবী নারী তো তারা, যারা (তাদের
স্বামীদের অনুপস্থিতিতে ও লোক চক্ষুর অন্তরালে) অনুগতা এবং নিজেদের ইজ্জত
রক্ষাকারিণী; আল্লাহর হিফাযতে (তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে।’’[4]
এরপর দেখা উচিৎ, ভাবী-সঙ্গিনীর পরিবেশ। শান্ত প্রকৃতির মেজাজ, মানসিক
সুস্থতা ইত্যাদি; যাতে সংসার হয় প্রশান্তিময়। জবালাময়তা থেকে দূর হয় বাক্যালাপ, লেন-দেন
ও সকল ব্যবহার।
বিবাহের একটি মহান উদ্দেশ্য
হল সন্তান গ্রহণ । এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্ত্রী নির্বাচন বাঞ্ছনীয়। প্রিয়
নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘অধিক প্রেমময়ী, অধিক সন্তানদাত্রী রমণী বিবাহ কর।
কারণ, আমি তোমাদেরকে নিয়ে কিয়ামতে অন্যান্য উম্মতের সামনে (সংখ্যাধিক্যের ফলে) গর্ব
করব।’’[5]
অতঃপর সাথীর রূপ-সৌন্দর্য তো মানুষের প্রকৃতিগত বাঞ্ছিত বাসনা। যেহেতু
স্ত্রী সুন্দরী হলে মনের প্রশান্তি ও আনন্দ অধিক হয়। অন্যান্য রমণীর প্রতি কখনই মন
ছুটে না। পরন্তু ‘‘আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’’[6]
অনেক যুবক আছে যারা ভুল করে
মহিলার চেহারাকে বিবাহ করে, কিন্তু সংসার করে তার সবকিছু নিয়ে! ফলে অশান্তি দেখা দেয়
সংসারে।
অতঃপর দেখার বিষয় সঙ্গিনীর
কৌমার্য। কুমারীর নিকট যে সুখ আছে অকুমারীর নিকট তা নেই। এটা তো মানুষের প্রকৃতিগত
পছন্দ। যেহেতু ভালোবাসার প্রথম উপহার তার নিকট পেলে দাম্পত্যে পূর্ণ পরিতৃপ্তি আসে।
নচেৎ যদি তার মনে ভালোবাসার নিক্তি পূর্ব ও বর্তমান স্বামীর প্রেম ওজন করতে শুরু
করে, তবে সেই তুলনায় তার হৃদয় কখনো পূর্ব স্বামীর দিকে ঝুঁকে বর্তমান স্বামীকে
তুচ্ছজ্ঞান করে। আবার কখনো নিজের ভাগ্যের এই পরিবর্তনকে বড় দুর্ভাগ্য মনে ক’রে ভালোবাসার
ডালি খালি ক’রে রসহীন সংসার করে বর্তমান স্বামীর দেহপাশে। কিন্তু মন থাকে সেই
মৃত অথবা সেই তালাকদাতা স্বামীর নিকট। ফলে দাম্পত্য জীবন মধুর হয়ে গড়ে উঠতে পারে
না। অবশ্য বর্তমান স্বামী পূর্ব স্বামী হতে সর্ববিষয়ে উত্তম হলে সে কথা
ভিন্ন। পরন্তু প্রকৃত দাম্পত্য-সুখ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে প্রিয় নবী (সাঃ) এক সাহাবীকে
কুমারী নারী বিবাহ করতে উদ্বুদ্ধ করে বলেছিলেন,
‘‘কেন কুমারী বিবাহ করলে না? সে তোমাকে নিয়ে এবং
তুমি তাকে নিয়ে প্রেমকেলি করতে।’’[7]
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘‘তোমরা কুমারী বিবাহ কর।
কারণ কুমারীদের মুখ অধিক মিষ্টি, তাদের গর্ভাশয় অধিক সন্তানধারী, তাদের যোনীপথ অধিক
উষ্ণ, তারা ছলনায় কম হয় এবং সবল্পে অধিক সন্তুষ্ট থাকে।’’[8]
উর্বর জমিতে যে ফসলের বীজ সর্বপ্রথম রোপিত হয় সেই ফসলই ফলনে অধিক ও
উত্তম হয়। ফসল তুলে সেই জমিতেই অন্য ফসল রোপন করলে আর সেই সোনার ফসল ফলে না। অনুরূপ
ভালোবাসার বীজও।
অবশ্য যার সংসারে পাক্কা
গৃহিণীর প্রয়োজন, যে তার ছোট ছোট ভাই-বোন ইত্যাদির সঠিক প্রতিপালন চায়, তাকে অকুমারী
বিধবা বিবাহ করাই উচিৎ।[9]
পরন্তু যদি কেউ কোন বিধবা
বা পরিত্যক্তার প্রতি এবং তার সন্তান-সন্ততির প্রতি সদয় হয়ে তাকে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ
ক’রে তার দুর্দিন দূর ক’রে সুদিন আনে, তবে নিশ্চয় সে ব্যক্তি অধিক সওয়াবের অধিকারী।[10]
সর্বদিক দিয়ে নিজের মান যেমন,
ঠিক সেই সমপর্যায় মান ও পরিবেশের পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ। এতে কেউ কারোর উপর গর্ব প্রকাশ
না করতে পেরে কথার আঘাতে প্রেমের গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে না। পজিশন, শিক্ষা, সভ্যতা, অর্থনৈতিক
অবস্থা, বংশ প্রভৃতি উভয়ের সমান হলে সেটাই উত্তম। যেমন উভয়ের বয়সের মধ্যে বেশী তারতম্য
থাকা উচিৎ নয়। নচেৎ ভবিষ্যতে বিভিন্ন জোয়ার-ভাটা দেখা দিতে পারে।
উপর্যুক্ত সর্বপ্রকার গুণ
ও পজিশনের পাত্রী পেলেই সোনায় সোহাগা। এমন দাম্পত্য হবে চিরসুখের এবং এমন
স্বামী হবে বড় সৌভাগ্যবান। পক্ষান্তরে কিছু না পেলেও যদি দ্বীন পায়, তবে তাও
তার সৌভাগ্যের কারণ অবশ্যই।
সুতরাং বউ ও জামাই পছন্দের
কষ্টিপাথর একমাত্র দ্বীন ও চরিত্র। বংশের উচ্চ-নীচতা কিছু নেই। যেহেতু মানুষ সকলেই
সমান। সকল মুসলিম ভাই-ভাই। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে
এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি। পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে;
যাতে তোমরা এক অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর
নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে ব্যক্তি অধিক সংযমী (মুত্তাকী ও পরহেযগার)।’’[11]
তাছাড়া ‘ভালো-মন্দ কোন গোষ্ঠী-বর্ণের মধ্যে নির্দিষ্ট নয়। প্রত্যেক
বস্ত্তর উত্তম, মধ্যম ও অধম আছে।’ আর ‘কাকের ডিম সাদা হয়, পন্ডিতের ছেলে গাধাও হয়।’
সুতরাং বিবেচ্য হল, যে মানুষকে নিয়ে আমার দরকার কেবল তারই চরিত্র ও ব্যবহার। অবশ্য
পারিপাশির্বক অবস্থা দেখাও দরকার নিশ্চয়ই। কারণ, তাতেও কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকতে
পারে।
অতএব বর-কনে নির্বাচনের সময়ঃ
১। পাত্র বা পাত্রী কোন্
স্কুলে পড়েছে জানার আগে কোন্ পরিবেশে মানুষ হয়েছে--তা জানার চেষ্টা করুন। কারণ, অনেক
সময় বংশ খারাপ হলেও পরিবেশ-গুণে মানুষ সুন্দর ও চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠে।
২। পাত্র বা পাত্রীর চরিত্র
দেখার আগে তার বাপ-মায়ের চরিত্রও বিচার্য। কারণ, সাধারণতঃ ‘আটা গুণে রুটি আর মা গুণে
বেটি’ এবং ‘দুধ গুণে ঘি ও মা গুণে ঝি’ হয়ে থাকে। আর ‘বাপকা বেটা সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ
না হো তো থোড়া থোড়া।’
৩। বিবাহ একটি সহাবস্থান
কোম্পানী প্রতিষ্ঠাকরণের নাম। সুতরাং এমন সঙ্গী নির্বাচন করা উচিৎ যাতে উভয়ের পানাহার
প্রকৃতি ও চরিত্রে মিল খায়। নচেৎ অচলাবস্থার আশঙ্কাই বেশী।[12]
অবশ্য কারো বাহ্যিক দ্বীনদারী
দেখেও ধোঁকা খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ, সকাল ৭ টায় কাউকে নামায পড়তে দেখলেই যে সে চাশ্তের
নামায পড়ে--সে ধারণা ভুলও হতে পারে। কেননা, হতে পারে সে চাশ্তের নয়, বরং ফজরের কাযা
আদায় করছিল।
অনুরূপ কারো বাপের দ্বীনদারীর
মতো কথা শুনে অথবা কেবল কারো ভাইয়ের বা বুনায়ের দ্বীনদারীর কথা শুনে তার দ্বীনদারী
হওয়াতে নিশ্চিত হয়ে ধোঁকা খাওয়াও অনুচিত। খোদ পাত্র বা পাত্রী কেমন তা সর্বপ্রথম ও
শেষ বিচার্য।
অনুরূপ মাল-ধন আছে কি না,
কিছু পাব কি না পাব---তাও বিচার্য নয়। কারণ, তা তো আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। আবার
আজ না থাকলে কাল এসে যেতেও পারে। আমি যেমন ঠিক তেমনি ঘরে বিবাহ করা বা দেওয়াই উচিৎ।
বিশেষ করে ঘুষ (মোটা টাকা পণ) দিয়ে বড় ঘরে ঢুকতে যাওয়া ঠিক নয়।
জ্ঞানীরা বলেন, ‘তোমার চেয়ে
যে নীচে তার সঙ্গ গ্রহণ করো না। কারণ, হয়তো তুমি তার মূর্খতায় কষ্ট পাবে এবং তোমার
চেয়ে যে উচেচ তারও সাথী হয়ো না। কারণ, সম্ভবতঃ সে তোমার উপর গর্ব ও অহংকার প্রকাশ করবে।
তুমি যেমন ঠিক তেমন সমমানের বন্ধু, সঙ্গী ও জীবন-সঙ্গিনী গ্রহণ করো, তাতে তোমার মন
কোন প্রকার ব্যথিত হবে না।’
হাতি-ওয়ালার সাথে বন্ধুত্ব
করলে হাতি রাখার মত ঘর নিজেকে বানাতে হবে। নতুবা ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে
দড়ি ক্ষণে চাঁদ।’
এ কথা ভাবা যায় যে, বড় বাড়িতে
মেয়ে পড়লে তার খেতে-পরতে কোন কষ্ট হবে না; সুখে থাকবে। কিন্তু তার নিশ্চয়তা কোথায়?
‘বড় গাছের তলায় বাস, ডাল ভাঙ্গলেই সর্বনাশ।’
মেয়ের অভিভাবকের উচিৎ, মেয়ের
রুচি ও পছন্দের খেয়াল রাখা। অবশ্য তার হাতে ডোর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। পরন্তু দ্বীনের
ডোর কোন সময়ই ছাড়ার নয়। কারণ, সাধারণতঃ মেয়েদের কল্পনায় থাকে,
‘রসের নাগর, রূপের সাগর, যদি ধন পাই,
আদর ক’রে করি তারে বাপের জামাই।’
বাস্! এই হল ভোগবাদিনী ও
পরলোক সম্বন্ধে অন্ধ নারীদের আশা। এরা কেবল বাহ্যিক দৃষ্টির সৌন্দর্য পছন্দ ও কামনা
করে; কিন্তু অন্তর্দৃষ্টির সৌন্দর্য অপ্রয়োজনীয় ভাবে! তারা জানে না যে, কুৎসিত মনের
থেকে কুৎসিত মুখ অনেক ভালো।
অতএব এ কাজে অভিভাবককে তার
মেয়ের সহায়ক হওয়া একান্ত ফরয। তাই তো মেয়ের বিবাহে অভিভাবক থাকার শর্তারোপ করা হয়েছে।
আবু অদাআহ বলেন, আমি সাঈদ
বিন মুসাইয়েবের দর্সে বসতাম। কিছু দিন তিনি আমাকে দেখতে না পেয়ে যখন আমি তাঁর নিকট
এলাম, তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি ছিলে কোথায়?’ আমি বললাম, ‘আমার স্ত্রী মারা
গেল; সেই নিয়ে কিছুদিন ব্যস্ত ছিলাম।’ তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে খবর দাওনি কেন? তার জানাযা
পড়তাম।’ তারপর উঠে চলে আসার ইচ্ছা করলে তিনি আমাকে বললেন, ‘দ্বিতীয় বিবাহ করলে না কেন?’
আমি বললাম, ‘আল্লাহ আপনাকে রহম করুন! কে আমাকে মেয়ে দেবে? আমি তো দুই কি তিন দিরহামের
মালিক মাত্র।’ তিনি বললেন, ‘যদি আমি দিই, তবে তুমি করবে কি?’ আমি বললাম, ‘জী
হ্যাঁ।’
সঙ্গে সঙ্গে খোৎবা পাঠ করে
২ কি ৩ দিরহাম মোহরের বিনিময়ে তাঁর মেয়ের সাথে আমার বিবাহ পড়িয়ে দিলেন। তারপর
আমি উঠে এলাম। তখন খুশীতে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঘরে এসে লাগলাম চিন্তা করতে; ঋণ করতে
হবে, কার নিকট করি? মাগরিবের নামায পড়লাম। রোযায় ছিলাম সেদিন। ইফতার ক’রে রাতের খানা
খেলাম। খানা ছিল রুটি ও তেল। ইত্যবসরে কে দরজায় আঘাত করল। আমি বললাম, ‘কে?’ আগন্তুক
বলল, ‘আমি সাঈদ।’ ভাবলাম, তিনি কি সাঈদ বিন মুসাইয়েব? তাঁকে তো চল্লিশ বছর যাবৎ ঘর
থেকে মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও যেতে দেখা যায়নি। উঠে দরজা খুলতেই দেখি উনিই। ধারণা করলাম,
হয়তো বা মত পরিবর্তন হয়েছে। আমি বললাম, ‘আবু মুহাম্মাদ! আপনি নিজে এলেন! আমাকে ডেকে
পাঠাতে পারতেন? আমি আপনার নিকট আসতাম।’ তিনি বললেন, ‘না। এর হকদার তুমি।’ আমি বললাম,
‘আদেশ করুন।’ তিনি বললেন, ‘ভাবলাম, বিপত্নীক পুরুষ তুমি; অথচ তোমার বিবাহ হল। তাই তুমি
একাকী রাত কাটাও এটা অপছন্দ করলাম। এই নাও তোমার স্ত্রী!’
দেখলাম, সে তাঁর সোজাসুজি
পশ্চাতে সলজ্জ দন্ডায়মানা। অতঃপর তিনি তাকে দরজা পার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রস্থান
করলেন। লজ্জায় সে যেন দরজার সাথে মিশে গেল। আমি বাড়ির ছাদে চড়ে প্রতিবেশীর সকলকে হাঁক
দিলাম। সকলেই বলল, ‘কি ব্যাপার?’ আমি বললাম, ‘সাঈদ তাঁর মেয়ের সঙ্গে আমার বিবাহ দিয়েছেন।
হঠাৎ করে তিনি তাঁর মেয়েকে আমার ঘরে দিয়ে গেলেন। ঐ ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’
সকল মহিলা তাকে দেখতে এল।
আমার মায়ের কাছে খবর গেলে
তিনি এসে বললেন, ‘তিন দিন না সাজানো পর্যন্ত যদি তুমি ওকে স্পর্শ করো, তবে আমার চেহারা
দেখা তোমার জন্য হারাম।’ অতএব তিন দিন অপেক্ষার পর তার সাথে বাসর-শয্যায় মিলিত হলাম।
দেখলাম সে অন্যতমা সুন্দরী, কুরআনের হাফেয, আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ বিষয়ে সুবিজ্ঞা
এবং স্বামীর অধিকার বিষয়ে সবজান্তা।
এরপর একমাস ওস্তাদ সাঈদের
নিকট আমার যাওয়া-আসা ছিল না। অতঃপর একদিন তাঁর মসজিদে গিয়ে সালাম দিলে তিনি উত্তর দিলেন।
কিন্তু কোন কথা বললেন না। তৎপর সমস্ত লোক যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল, তখন একা পেয়ে
আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। ‘ঐ লোকটার খবর কি?’ আমি বললাম, ‘তার খবর এমন; যা বন্ধুতে পছন্দ
আর শত্রুতে অপছন্দ করবে।’ তিনি বললেন, ‘যদি তার কোন বিষয় তোমাকে সন্দিহান করে, তবে
লাঠি ব্যবহার করো।’ অতঃপর বাড়ি ফিরে এলাম।
সাঈদের মেয়ে; যাকে খলীফা
আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান তাঁর ছেলে অলীদের জন্য পয়গাম দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাজপরিবারে
মেয়ের বিবাহ দিতে অস্বীকার করেছিলেন। অবশেষে পছন্দ করলেন এক দ্বীনদার গরীবকে![13]
মুবারক আবু আব্দুল্লাহর ব্যাপারে
কথিত আছে যে, তিনি তাঁর প্রভু (মনীব) এর বাগানে কাজ করতেন। তাঁর প্রভু বাগান-মালিক
হামাযানের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। একদিন বাগানে এসে দাসকে বললেন, ‘মুবারক! একটি মিষ্টি
বেদানা চাই।’
মুবারক গাছ হতে খুঁজে খুঁজে
একটি বেদানা প্রভুর হাতে দিলেন। প্রভু তো ভেঙ্গে খেতেই চটে উঠলেন। বললেন, ‘তোমাকে মিষ্টি
দেখে আনতে বললাম, অথচ টক বেছেই নিয়ে এলে? মিষ্টি দেখে নিয়ে এস।’
মুবারক অন্য একটি গাছ থেকে
আর একটি বেদানা এনে দিলে তিনি খেয়ে দেখলেন সেটাও টক। রেগে তৃতীয়বার পাঠালে একই অবস্থা।
প্রভু বললেন, ‘আরে তুমি টক আর মিষ্টি বেদানা কাকে বলে চেন না?’ বললেন, ‘জী না। আপনার
অনুমতি না পেয়ে কি করে খেতাম?’
দাসের এই আমানতদারী ও সততা
দেখে প্রভু অবাক হলেন। তাঁর চোখে তাঁর কদর ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেল।
প্রভুর ছিল এক সুন্দরী কন্যা।
বহু বড় বড় পরিবার থেকেই তার বিয়ের সম্বন্ধ আসছিল। একদা প্রভু মুবারককে ডেকে বললেন,
‘আমার মেয়ের সাথে কেমন লোকের বিয়ে হওয়া উচিৎ বল তো?’ মুবারক বললেন, ‘জাহেলিয়াত যুগের
লোকেরা বংশ ও কুলমান দেখে বিয়ে দিত, ইয়াহুদীরা দেয় ধন দেখে, খ্রীষ্টানরা দেয় রূপ-সৌন্দর্য
দেখে। কিন্তু এই উম্মত কেবল দ্বীন দেখেই বিয়ে দিয়ে থাকে।’
এ ধরনের জ্ঞানগর্ভ কথা প্রভুর
বড় পছন্দ হল। মুবারকের কথা প্রভু তাঁর স্ত্রীর নিকট উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি তো মেয়ের
জন্য মুবারকের চেয়ে অধিক উপযুক্ত পাত্র আর কাউকে মনে করি না।’
হয়েও গেল বিবাহ। পিতা উভয়কে
প্রচুর অর্থ দিয়ে তাঁদের দাম্পত্যে সাহায্য করলেন। এই সেই দম্পতি যাঁদের ঔরসে জন্ম
নিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, যাহেদ, বীর মুজাহিদ আব্দুল্লাহ বিন মুবারক।[14]
এই ছিল মেয়ের বাবাদের তাদের
মেয়েদের আখেরাত বানানোর প্রতি খেয়াল রেখে পাত্র পছন্দ করার পদ্ধতি। দুনিয়াদারীর প্রতি
খেয়াল রেখে নয়।
এক ব্যক্তি হাসান বাসরী
(রঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার একটি মেয়ে আছে। বহু জায়গা হতে তার বিয়ের কথা আসছে। কাকে
দেব বলতে পারেন?’
হাসান বললেন, ‘সেই
পুরুষ দেখে মেয়ে দাও; যে আল্লাহকে ভয় করে (যে পরহেযগার)। এতে যদি সে তাকে ভালোবাসে,
তাহলে তার যথার্থ কদর করবে। আর ভালো না বাসলে সে তার উপর অত্যাচার করবে না।’[15]
শুধু অভিভাবকই নয় বরং খোদ
মেয়েদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিৎ।
আবূ তালহা তখন ইসলাম গ্রহণ
করেননি। তিনি উম্মে সুলাইমকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আপনার মত
যুবক স্বামী হওয়ার যোগ্য; রদ্যোগ্য নন। কিন্তু আপনি তো কাফের। আর আমি হলাম একজন
মুসলিম নারী। তাই আমাদের মধ্যে বিবাহ শুদ্ধ নয়।’ আবূ তালহা ধন-দৌলতের লোভ দেখিয়ে বললেন,
‘তুমি কি সোনা-চাঁদি ও অর্থ পেয়ে খুশী হতে পারবে না?’
উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আমি
সোনা চাঁদি কিছুই চাই না। কিন্তু আপনি এমন মানুষ; যে শুনতে পায় না, দেখতে পায় না এবং
কোন উপকার করতে পারে না এমন কোন হাবশী দাসের গড়া কাঠের (মূর্তি) পূজা করেন। এতে কি
আপনার বিবেকে বাধে না? শুনুন, যদি আপনি মুসলমান হন, তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করব। আর
ইসলাম হবে আমার মোহর! এ ছাড়া অন্য কিছু আমি মোহররূপে চাই না!’ [16]
উল্লেখ্য যে, আমার এক ছাত্রী
মুখ খুলে কয়েকটি বিবাহ প্রস্তাব রদ্ করলে তাকে রাজী করাবার জন্য তার অভিভাবক আমাকে
দায়িত্ব দেন। রদের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে আদবের সাথে জানাল। ‘জী, ওরা মাযার পূজা
করে।’ অন্য এক প্রস্তাবের জবাবে বলল, ‘আমি শুনেছি ওদের বাড়িতে টি-ভি আছে। আমার ভয় হয়
যে, আমি খারাপ হয়ে যাব?!’
এরূপ দ্বীনদারী জবাব শুনে
আমি অবাক না হয়ে এবং তাকে শত ধন্যবাদ ও দুআ না দিয়ে পারিনি।
সঊদী আরবের আল-মাজমাআহ শহরে
এককালে আমি বিবাহ রেজিষ্ট্রীর মুহরী (লেখক) ছিলাম। এক বিবাহ মজলিসে পাত্রীর শর্ত লিখার
সময় ১ম শর্ত ছিল, সে কলেজের অধ্যয়ন শেষ করবে। ২য় শর্ত ছিল, পাত্র সিগারেট খায়, তাকে
সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে!
উক্ত শর্ত পালনে বর সম্মত
কি না, তা জানতে তাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলল, ‘ছাড়ার চেষ্টা করব।’ কনের কাছে তা বলা
হলে সে বলল, ‘চেষ্টা নয়; শর্তে লিখুন, আজ থেকেই ছাড়বে এবং যেদিন সে পুনরায় সিগারেট
খাবে সেদিন আমার এক তালাক বলে গণ্য হবে!’
মজলিসে যে বাহবা ও দুআর শোর
উঠেছিল তা বলাই বাহুল্য। পরিশেষে এই শর্তে বর স্বাক্ষর করেছিল। আমি নিজ হাতে সেই শর্ত
লিখেছিলাম। আজ সমাজে দরকার আছে এমন গুণবতী কন্যার।
কিন্তু হায়! নারীর মূল্যমান
কমে যাওয়ার ফলে এবং পণের চাপের মুখে বহু গুণবতী কনে অমত সত্ত্বেও অযোগ্য পাত্রের প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। করলে হয়তো অভিভাবকদের কথার জবালা সহ্য করাই দায় হয়ে উঠবে।
পক্ষান্তরে পাত্রের দাড়ি আছে বলে অথবা মেলা-খেলায় নিয়ে যাবে না বলে পাত্র রদ্ করলে
তখন অভিভাবকের কোন অসুবিধা হয় না। বরং ‘এখন ছোট মেয়ে, শক-আহ্লাদ থাকতে হবে বৈ কি’---বলে
দ্বীনদার পাত্র ফিরিয়ে দিতে এতটুকু লজ্জাবোধ হয় না। অথচ দাবী করে, ‘তারা নাকি মুসলমান!’
সুতরাং দ্বীনদারী ও চরিত্র
ব্যতীত আভিজাত্য, নাম করা বংশ, যশ, সম্পদ, পদ প্রভৃতি বিবেচনা করে বিবাহ দিলে বা করলে
দাম্পত্য-সুখের সুনিশ্চিত আশা করা যায় না। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘তোমাদের নিকট যখন এমন ব্যক্তি
(বিবাহের পয়গাম নিয়ে) আসে; যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা মুগ্ধ তখন তার সাথে (মেয়ের) বিবাহ
দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিৎনা ও মহাফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যাবে।’’[17]
তিনি আরো বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার
সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে কিছু দান করে, কিছু দেওয়া হতে বিরত থাকে, কাউকে ভালোবাসে
অথবা ঘৃণাবাসে এবং তাঁরই সন্তুষ্টিলাভের কথা খেয়াল করে বিবাহ দেয়, তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ
ঈমান।’’[18]
অতএব দ্বীন ও চরিত্রেই পাত্র-পাত্রীর সমতা জরুরী। কারণ, সকল প্রকার
বর্ণ-বৈষম্য, বন্ধন ও উচ্চতা-নিচুতার প্রাচীর চুরমার করে দেয় দ্বীন ও তাকওয়া।
কোন দ্বীনদার পর্দা-প্রেমী
পাত্র-পাত্রীর জন্য ফাসেক বেপর্দা-প্রেমী পাত্র-পাত্রী হতে পারে না। কোন তেŠহীদবাদী
পাত্র-পাত্রীর জন্য কোন বিদআতী বা মাযারী পাত্র-পাত্রী হতে পারে না। মিঠাপানির মাছের
সাথে অনুরূপ মাছের বিবাহ শোভনীয় এবং নোনাপানির মাছের সাথে অনুরূপ মাছের বিবাহই মানানসই।
নতুবা মিঠা পানির মাছের নোনা পানিতে এসে এবং নোনা পানির মাছের মিঠা পানিতে এসে বাস
করা কঠিনই হবে। আর মানানসই তখনই হয়; যখন ‘য্যায়সন কা ত্যায়সন শুকটি কা ব্যায়গন’-এর
ঘর পড়ে। এতে স্বামী-স্ত্রীর মান-অপমানের ব্যাপারটা সমান পর্যায়ে থাকে। নচেৎ এই
অসমতার কারণেই কারো স্ত্রী প্রভু হয় অথবা দাসী। পক্ষান্তরে সমতার স্ত্রী হয় বন্ধু।
গেঁয়ো পাত্র-পাত্রীর পক্ষে শহুরে, শিক্ষিতের পক্ষে অশিক্ষিত, দরিদ্রের পক্ষে ধনী পাত্র-পাত্রী
খুব কমই সুখ আনতে পারে।
তদনুরূপ বেপর্দা পরিবেশের
পাত্রী পর্দা পরিবেশে এলে তার দম বন্ধ হয়ে যায়! কারণ, জঙ্গলের পাখীকে সোনার খাঁচা দিলেও
তার মন পড়ে থাকে জঙ্গলে। কেননা, সে পর্দার পরিবেশকে খাঁচাই মনে করে! তাই সে নিজেও এমন
পরিবেশে শান্তি পায় না এবং ঈর্ষাবান স্বামীও তাকে নিয়ে অশান্তি ভোগ করে। বন থেকে
বাঘ তুলে এনে তার যতই তরবিয়ত দেওয়া হোক এবং পোষ মানানো যাক না কেন, তবুও তার মন থেকে
কিন্তু বন তুলে ফেলা যায় না। তাই সে সদা ফাঁক খোঁজে, ফাঁকি দিতে চেষ্টা করে; এমনকি
ধোঁকাও দিয়ে বসে অনেক সময়।
অবশ্য এসব কিছু হয় দ্বীনদারী
তরবিয়ত ঢিলে হওয়ার ফলেই। দ্বীন ও তাকওয়া থাকলে স্বামী-স্ত্রী কারোই অসুবিধা হয়
না।
একটা বিষয় খেয়াল রাখার যে,
কোন পাত্র বা পাত্রী সম্পর্কে জানতে তার দ্বীন বিষয়ে প্রথমে প্রশ্ন করা উচিৎ নয়। নচেৎ
এরপর সৌন্দর্যাদি পছন্দ না হয়ে তাকে রদ্ করলে দ্বীনদার রদ্ করা হয় এবং তাতে মহানবী
(সাঃ) এর বিরোধিতা হয়। অতএব কর্তৃপক্ষের উচিৎ যে, অন্যান্য বিষয়ে প্রথমে পছন্দ
হয়ে শেষে দ্বীন বিষয়ে প্রশ্ন (অবশ্যই) করে দ্বীন থাকলে গ্রহণ করবে, নতুবা রদ্ করে দেবে;
যখন শরীয়তের বিপরীত চলা হতে বেঁচে যাবে। কথায় বলে, ‘আগে দর্শন ধারি, শেষে গুণ বিচারি।’
প্রকাশ যে, পাত্রী পছন্দের
জন্য জোড়া-ভ্রূ, কুপগাল ইত্যাদি শুভ-অশুভের কিছু লক্ষণ নয়।
পাত্র বা পাত্রপক্ষ পারিপাশির্বক
অবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদি দেখে ও জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন পাত্রী পছন্দ হলে তার অভিভাবককে
বিবাহের প্রস্তাব দেবে। তবে তার পূর্বে দেখা উচিৎ যে, সেই পাত্রী এই পাত্রের জন্য গম্যা
কি না। অগম্যা বা অবৈধ হলে তাকে বিবাহ প্রস্তাব দেওয়া হারাম।
অনুরূপ যদি তার পূর্বে অন্য
পাণিপ্রার্থী ঐ পাত্রীর জন্য প্রস্তাব দিয়ে থাকে, তাহলে সে জবাব না দেওয়া পর্যন্ত তার
প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব বা (দর কষাকষি করে) প্রলোভন বৈধ নয়। অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ
করা এবং এতে বিদ্বেষ গড়ে তোলা মুসলিমের কাজ নয়।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের
ভাই। সুতরাং তার জন্য তার ভায়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় এবং বিবাহ-প্রস্তাবের
উপর বিবাহ প্রস্তাব -তার ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত - হালাল নয়।[19]
পাত্রী যদি কারো তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হয়, তবে তার ইদ্দতে তাকে বিবাহ-পয়গাম
দেওয়া হারাম। স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দতে থাকলে স্পষ্টভাবে প্রস্তাব দেওয়া নিষিদ্ধ।
ইঙ্গিতে দেওয়া চলে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আর যদি তোমরা আভাসে-ইঙ্গিতে
উক্ত রমণীদেরকে বিবাহ-প্রস্তাব দাও অথবা অন্তরে তা গোপন রাখ, তবে তাতে তোমাদের দোষ
হবে না। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা
ছাড়া গোপনে তাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করো না। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত
বিবাহকার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না এবং জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন।
অতএব তাঁকে ভয় কর।’’[20]
অনুরূপ হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় কোন নারীকে বিবাহ প্রস্তাব
দেওয়া অবৈধ।[21]
বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রীর
রক্ত, বীর্য প্রভৃতি পরীক্ষা করে তারা রোগমুক্ত কি না তা দেখে নেওয়ার সমর্থন রয়েছে
ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমরা কুষ্ঠরোগ হতে দূরে থেকো; যেমন বাঘ হতে দূরে
পলায়ন কর।’’[22]
‘‘চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক
যেন সুস্থ উট দলে তার উট না নিয়ে যায়।’’[23]
‘‘কারো জন্য অপরের কোন প্রকার
ক্ষতি করা বৈধ নয়। কোন দু’জনের জন্য প্রতিশোধমূলক পরস্পরকে ক্ষতিগ্রস্ত করাও বৈধ নয়।’’[24]
[1] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮২নং)
[2] (ইবনে মাজাহ ১৮৫৬নং, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২১৭৬নং)
[3] (নাসাঈ ৩২৩১নং, হাকেম ২/১৬১, মুসনাদে আহমদ ২/২৫১)
[4] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[5] (আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯১নং)
[6] (সিলসিলা সহীহাহ ১৬২৬নং)
[7] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৮নং)
[8] (ইবনে মাজাহ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৩নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৪০৫৩নং)
[9] (বুখারী ২৯৬৭নং)
[10] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৮/১১৯)
[11] (সূরা আল-হুজুরাত (৪৯) : ১৩)
[12] (তুহফাতুল আরূস, ৪৯পৃঃ)
[13] (অফিয়াতুল আ’ইয়ান ২/৩৭৭)
[14] (অফায়াতুল আ’ইয়ান, ইবনে খাল্লেকান ২/২৩৮)
[15] (উয়ূনুল আখবার, ইবনে কুতাইবাহ ৪/১৭)
[16] (তুহফাতুল আরূস, ৫২-৫৩পৃঃ)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১০২২নং)
[18] (মুসনাদে আহমদ, হাকেম , বাইহাকী, সহীহ তিরমিযী, আল্লামা আলবানী ২০৪৬ নং)
[19] (বুখারী, মুসলিম ১৪১৪নং)
[20] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৫)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৭৮০৯নং)
[22] (বুখারী ৫৭৯৭নং)
[23] (বুখারী ৫৭৭১নং)
[24] (মুসনাদে আহমদ, মাঃ, ইবনে মাজাহ ২৩৪০, ২৩৪১ নং)
[2] (ইবনে মাজাহ ১৮৫৬নং, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২১৭৬নং)
[3] (নাসাঈ ৩২৩১নং, হাকেম ২/১৬১, মুসনাদে আহমদ ২/২৫১)
[4] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[5] (আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯১নং)
[6] (সিলসিলা সহীহাহ ১৬২৬নং)
[7] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৮৮নং)
[8] (ইবনে মাজাহ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৩নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৪০৫৩নং)
[9] (বুখারী ২৯৬৭নং)
[10] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৮/১১৯)
[11] (সূরা আল-হুজুরাত (৪৯) : ১৩)
[12] (তুহফাতুল আরূস, ৪৯পৃঃ)
[13] (অফিয়াতুল আ’ইয়ান ২/৩৭৭)
[14] (অফায়াতুল আ’ইয়ান, ইবনে খাল্লেকান ২/২৩৮)
[15] (উয়ূনুল আখবার, ইবনে কুতাইবাহ ৪/১৭)
[16] (তুহফাতুল আরূস, ৫২-৫৩পৃঃ)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১০২২নং)
[18] (মুসনাদে আহমদ, হাকেম , বাইহাকী, সহীহ তিরমিযী, আল্লামা আলবানী ২০৪৬ নং)
[19] (বুখারী, মুসলিম ১৪১৪নং)
[20] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৫)
[21] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৭৮০৯নং)
[22] (বুখারী ৫৭৯৭নং)
[23] (বুখারী ৫৭৭১নং)
[24] (মুসনাদে আহমদ, মাঃ, ইবনে মাজাহ ২৩৪০, ২৩৪১ নং)
পাত্রী দর্শন
পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ
হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ
বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে সবচক্ষে যাচাই করে
নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে,
অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে
হয় না।
পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র
যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা
বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃক্পাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে
যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।
এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে
যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া
বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।
পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি
কামনজরে না দেখে।[1] আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।
পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা
বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ
তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ
নয়।[2]
পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা,
রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ
দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।
এই সময় পাত্রীর মন বড় করার
জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। কারণ,
‘‘স্মৃতি দিয়ে বাঁধা থাকে প্রীতি, প্রীতি দিয়ে বাঁধা থাকে মন,
উপহারে বাঁধা থাকে স্মৃতি, তাই দেওয়া প্রয়োজন।’’
অবশ্য পাত্রীর গলে নিজে হার
পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি অথবা আংটি পরানো হারাম। পরন্তু পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন
অঙ্গুরীয়কে শুভাশুভ কিছু ধারণা করা বিদআত ও শির্ক। যা পাশ্চাত্য-সভ্যতার রীতি।[3]
এরপর পছন্দ-অপছন্দের কথা
ভাবনা-চিন্তা করে পরে জানাবে।
অনুষ্ঠান করে ক্ষণেকের দেখায়
পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোঁকাও হতে পারে। তাই
যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে
লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার
একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়র বাড়িতে থেকেও
দেখা যায়।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়,
তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’[4]
সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব
দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম যা আমাকে
বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।[5]
পাত্রী দেখার সময় কালো কলপে
যুবক সেজে তাকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের
সাথে পাত্রের বিয়ে দেওয়া। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যে (কাউকে) ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (ইর ১৩১৯নং)
পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ-বন্ধনের সময় অন্যের
সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে দেওয়া
হবে।[6]
পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা
বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়।
সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা। পাত্রী
ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ, একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো।
নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়, সে (টোঁ-টোঁ
কোম্পানী) নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়।
পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে
বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে
নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন
পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে
পাত্রী ও তার অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিৎ।
অবশ্য প্রগতিশীল (দুর্গতিশীল)
অভিভাবকের কাছে এসব ধর্মীয় বাণী হাস্যকর। কিন্তু আল্লাহর আযাব তার জন্য ভয়ংকর।
‘‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের
বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’’[7]
পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে
পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য বর্ধন এবং ত্রুটি গোপন করা যায় সে কথা হয়তো প্রায় সকলেই
জানে।
পাত্রীরও পছন্দ-অপছন্দের
অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে। (বিবাহের দিন বিবাহবন্ধনের পূর্বে বাড়িতে
দেখায় বিশেষ লাভ হয় না।) তার পছন্দ না হলে সেও রদ্ করতে পারে।[8]
বিশেষ করে অপাত্র, বিদআতী,
মাযারী, বেনামাযী, ফাসেক, ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, বদমেজাজী প্রভৃতি দেখে ও শুনে তাকে বিয়ে
করতে রাজী না হওয়াই ওয়াজেব। কিন্তু হায়! সে সুপাত্র আর ক’জন সুশীলার ভাগ্যে জোটে। আর
সে সুশীলাই বা আছে ক’জন? পক্ষান্তরে দ্বীন ও চরিত্রের অনুকূল কোন বিষয় অপছন্দ করে অমত
প্রকাশ করা আধুনিকাদের নতুন ফ্যাশান। তাই তো কেউ পাত্র অপছন্দ করে এই জন্যে যে, পাত্রের
দাড়ি আছে! অথবা বোরকা পরতে হবে। বাইরে যেতে পাবে না! সিনেমা ও মেলা-খেলা দেখতে পাবে
না। পাত্র প্যান্ট্ পরে না, পাত্রের হিপ্পি নেই, সোজা টাইপের তাই -যদিও সে খোজা নয়!
তাই তো যুবকরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের প্রিয়তমা ও প্রণয়িনীদের
একান্ত অনুগত হতে শুরু করেছে। নচেৎ হয়তো বিয়েই হবে না অথবা প্রেয়সীর মনসঙ্গ পাবে না!
পণের গরম বাজারেও এরূপ উদাহরণ যথেষ্ট পরিদৃষ্ট হয়! কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরের অভাব
নেই কোথাও! বরং এই বেগুন ও তার খদ্দের দিয়েই হাটের প্রায় সমস্ত স্থান পূর্ণ। সুতরাং
আল্লাহর পানাহ।
একশ্রেণীর সভ্য (?) মানুষ
যারা বউ দেখতে গিয়ে দ্বীন বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না। ‘নামায পড়ে কি না, কুরআন পড়তে জানে
কি না’--এসব বিষয় জানার কোন প্রয়োজনই মনে করে না। পক্ষান্তরে নাচ-গান জানে কি না, সেতারা-বেহালা
বাজাতে পারে কি না---সে সব বিষয়ে প্রধান প্রশ্ন থাকে! আহা! পাঁচজনকে খোশ করতে পারলে
তবেই তো বউ নিয়ে গর্ব হবে! এই শ্রেণীর মানুষ সভ্য (?) হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ‘মুসলিম’
নয়।
পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র
বা পাত্রপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরূপে
পাত্রীর কোন দোষ-ত্রুটি তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার
দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে
যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা (ব’লে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রীপক্ষের
তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য।[9]
পরন্তু সামান্য ত্রুটির কারণে
বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকের
লক্ষণ।[10]
যেমন কোন ‘থার্ড পার্টি’র
কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা
উচিৎ নয়।
অনুরূপ মনে পছন্দ হলেও ‘পণে’
পছন্দ না হয়ে পাত্রীর কোন খুঁত বের করে বিয়েতে জবাব দেওয়া নির্ঘাত ডবল অন্যায়। নও-সম্বন্ধের
ভোজের ডালে লবণ কম হয়েছিল বলে ‘ওরা মানুষের মান জানে না’ দুর্নাম দিয়ে দ্বীনদার পাত্রী
রদ্ করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পেটুকের মত খেয়ে বেড়ানো অভ্যাস হলে, বিয়ের পাক্কা ইরাদা
না নিয়ে (যে মেয়ে হারাম সে) পাত্রী দেখে বেড়ালে, নিশ্চয় তা সচ্চরিত্রবান মানুষের রীতি
নয়।
বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার
ব্যাপারে কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ-গুণ
খুলে বলা অবশ্যই উচিৎ।[11] যেহেতু মুসলিম ভাই যদি তার সমক্ষে, তার জানতে-শুনতে কোন
বেদ্বীন বা বিদআতী ও নোংরা পরিবেশে প্রেমসূত্র স্থাপন করে বিপদে পড়ে তবে নিশ্চয় এর
দায়িত্ব সে বহন করবে। যেহেতু সঠিক পরামর্শ দেওয়া এক আমানত। অবশ্য অহেতুক নিছক কোন ব্যক্তিগত
স্বার্থে বা হিংসায় অতিরঞ্জন করে বা যা নয় তা বলে বিয়ে ভাঙ্গানোও মহাপাপ। তাছাড়া পরহিতৈষিতা
দ্বীনের এক প্রধান লক্ষ্য।[12] এ লক্ষ্যে পৌঁছনো সকল মুসলিমের কর্তব্য।
পরন্তু ‘‘যে ব্যক্তি কোন
মুসলিম ভায়ের কোন বিপদ বা কষ্ট দূর করে আল্লাহ কিয়ামতে তার বিপদ ও কষ্ট দূর করবেন।’’[13]
কন্যাদায় আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে এক চরম বিপদ। এ বিপদেও মুসলিম ভাইকে সাহায্য করা
মুসলিমের কর্তব্য। অর্থ, সুপরামর্শ ও সুপাত্রের সন্ধান দিয়ে উপকার, বড় উপকার। অবশ্য
এমন উপকারে নিজের ক্ষতি এবং বদনামও হতে পারে। কারণ, পাত্র দেখে দিয়ে মেয়ের সুখ হলে
তার মা-বাবা বলবে, ‘আল্লাহ দিয়েছে।’ পক্ষান্তরে দুখ বা জবালা-জবলন হলে বলবে, ‘অমুক
দিলে বা বিপদে ফেললে।’ অথচ সুখ-দুঃখ উভয়ই আল্লাহরই দান; ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া জেনে-শুনে
কেউ কষ্টে ফেলে দেয় না। কিন্তু অবুঝ মানুষ অনিচ্ছাকৃত এসব বিষয়ে উপকারীকেও অপকারীরূপে
দোষারোপ করে থাকে; যা নির্ঘাত অন্যায়। আর এ অন্যায়ে সবর করায় উপকারীর অতিরিক্ত সওয়াব
লাভ হয়।
দ্বীনদার সুপাত্র পেলে অভিভাবকের
উচিৎ বিলম্ব না করা। বাড়িতে নিজেদের খিদমত নেওয়ার উদ্দেশ্যে, আরো উঁচু শিক্ষিতা করার
উদ্দেশ্যে (যেহেতু বিয়ের পরও পড়তে পারে) অথবা তার চাকুরির অর্থ খাওয়ার স্বার্থে অথবা
গাফলতির কারণে মেয়ে বা বোনের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া বা ‘দিচ্ছি-দিব’ করা তার জন্য বৈধ নয়।[14]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘তোমাদের নিকট যদি এমন ব্যক্তি (বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে) আসে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা
সন্তুষ্ট তবে তার (সাথে কন্যার) বিবাহ দাও। যদি তা না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা ও বড় ফাসাদ
সৃষ্টি হয়ে যাবে।’’[15] তখন ঐ মেয়ের পদস্খলন ঘটলে কোর্টকাছারি বা দাঙ্গা-কলহও হতে পারে।
প্রকাশ যে, যুবতীর বয়স হলে
উপযুক্ত মোহর, সুপাত্র ও দ্বীনদার বর থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক নিজস্ব স্বার্থের খাতিরে
অন্যায়ভাবে তার বিবাহে বাধা দিলে সে নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করে বিবাহ করতে পারে।[16]
নচেৎ কেবলমাত্র কারো প্রেমে পড়ে, কোন অপাত্রের সাথে অবৈধ প্রণয়ে ফেঁসে বের হয়ে গিয়ে
কোর্টে ‘লাভ ম্যারেজ’ করা এবং অভিভাবককে জানতেও না দেওয়া অথবা তার অনুমতি না নিয়ে বিবাহ
করা হারাম ও বাতিল। সাধারণতঃ ব্যভিচারিণীরাই এরূপ বিবাহ করে চিরজীবন ব্যভিচার করে থাকে।[17]
পরন্তু প্রেম হল ধূপের মত;
যাতে সুবাসের আমেজ থাকলেও তার সূত্রপাত হয় জবলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই
দিয়ে। তাই প্রেমে পড়ে আগা-পিছা চিন্তা না করে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচন করায়
ঠকতে হয় অধিকাংশে।
ছেলের বয়স হলেও সত্বর বিবাহ
দেওয়া অভিভাবকের কর্তব্য। ছেলেকে ছোট ভেবে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। ছেলে ‘বিয়ে করব
না’ বললেও তারা কর্তব্যে পিছপা হবে না। কারণ, ‘‘পুরুষের একটা বয়স আছে; যখন নারী-নেশা
গোপনে মনকে পেয়ে বসে। অবস্থার চাপে সে বিয়ে করবে না বললেও, সত্যি সত্যি ‘না’ করলেও
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নারী-সান্নিধ্যের কথা পরের মুখ দিয়ে শুনতেও মন্দ লাগে না। মন বলে, ‘চাই
চাই’, মুখ বলে, ‘চাইনে।’’ অবস্থা এই হলে তার বন্ধু-বান্ধবের নিকট থেকেও সে রহস্য উদ্ঘাটিত
হতে পারে। সুতরাং অভিভাবক সতর্ক হলে পাপ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে অভিভাবক যদি যুবককে
বিয়েতে বাধা দেয় অথবা দ্বীনদার সুপাত্রীকে বিয়ে করতে না দিয়ে তার কোন আত্মীয় অপাত্রীকে
বউ করে আনতে চায় অথবা পণে পছন্দ না হয়ে বিয়েতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেই যায় তবে সে ক্ষেত্রে
মা-বাপের অবাধ্য হওয়া পাপ নয়। ব্যভিচারের ভয় হলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বাধ্য হওয়াই
মুসলিম যুবকের উচিৎ।
তবে নিছক কারো প্রেমে পড়ে
সুপাত্রী দ্বীনদার যুবতী ছেড়ে মা-বাপের কথা না মেনে নিজের ইচ্ছামত অপাত্রী বিবাহ করা
বা ‘লাভ ম্যারেজ’ করায় পিতামাতার তথা আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা হয়। আল্লাহ যাতে রাজী,
তাতে মা-বাপ বা সাতগুষ্ঠি রাজী না হলেও কোন ক্ষতি হয় না। পক্ষান্তরে যাতে আল্লাহ রাজী
নন, তাতে মা-বাপ ও চৌদ্দগুষ্ঠিকে রাজী করা যুবকের আত্মীয় ও মাতৃপিতৃভক্তি নয় বরং প্রবৃত্তি
ও আত্মতৃপ্তির পরিচয়।
কোন পাত্রের ব্যাপারে পাত্রী
বা পাত্রীপক্ষের অথবা কোন পাত্রীর ব্যাপারে পাত্র বা পাত্রপক্ষের সন্দেহ হলে এবং সম্পর্ক
গড়তে সংশয় ও দ্বিধা হলে ইস্তিখারা করলে ফল লাভ হয়। আল্লাহ তাঁর দ্বীনদার বান্দা-বান্দীকে
সঠিক পথ নির্দেশ করেন।[18]
সুপাত্রে কন্যা পড়লে সত্যিই
সৌভাগ্যের বিষয়। ‘দশ পুত্রসম কন্যা; যদি সুপাত্রে পড়ে।’
পাত্র-পাত্রী পছন্দ এবং বাগদানের
পর তাদের আপোসের মধ্যে আসা-যাওয়া, পত্রালাপ, টেলিফোনে দূরালাপ, একান্তে ভ্রমণ, একে
অপরকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করার জন্য অবাধ মিলামিশা, কোর্ট্শিপ বা ইউরোপীয় প্রথায় তাদের
আপোসের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া প্রভৃতি ইসলামে বৈধ নয়। ‘বিয়ে তো হবেই’ মনে ক’রে বিবাহ-বন্ধনের
পূর্বে বাগদত্তার সাথে স্ত্রীরূপ ব্যবহার, নির্জনতা অবলম্বন, একাকী কুরআন শিক্ষা দেওয়া
প্রভৃতিও হারাম।[19] অবশ্য বিবাহ আক্দ সম্পন্ন হয়ে থাকলে তার সাথে (সারার পূর্বেও)
স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে এবং কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা ইত্যাদি দিতে পারে। সমাজে তা নিন্দনীয়
হলেও শরীয়তে নিন্দনীয় নয়।[20]
বিবাহের পূর্বে ভালোরূপে
ভেবে নিনঃ-
আপনি কি ভালোবাসার মর্মার্থ
জানেন? কেবল যৌন-সুখ লুটাই প্রকৃত সুখ নয়---তা জানেন তো? আপনি কি আপনার তাকে সুখী ও
খুশী করতে পারবেন?
আপনি তাকে চিরদিনের জন্য
নিজের অর্ধেক অঙ্গ মনে করতে পারবেন? আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার চেয়ে দাম্পত্য-সুখ রক্ষা
করতে কি অধিক সচেষ্ট হতে পারবেন?
আপনাদের উভয়ের মাঝে কোন ভুল
বুঝাবুঝির সময় সন্ধির উদ্দেশ্যে একটুও নমনীয়তা স্বীকার করতে পারবেন তো? বিবাহ আপনার
বহু স্বাধীনতা হরণ করে নেবে, সে কথা জানেন তো? দাম্পত্য কেবল কয়েক দিনের সফর নয় তা
জানেন তো?
বলা বাহুল্য, বিবাহ কোন মজার
খেলা নয়। বিবাহ কাঁধের জোঁয়াল। বিবাহ একটি অনুষ্ঠানের নাম, যাতে কনের আঙ্গুলে আংটি
এবং বরের নাকে লাগাম পরানো হয়। স্ত্রীর গলায় হার এবং স্বামীর গলায় বেড়ি পরানো
হয়। বিবাহ ‘দিল্লী কা লাড্ডু; (হাওয়া-মিঠাই) যো খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা, আওর যো নেহীঁ
খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা!
[1] (মুগনী ৬/৫৫৩)
[2] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নযরিল খাত্বিব, মুসাইদ আল-ফালিহ২৮পৃঃ)
[3] (আফরাহুনা, অজ্ঞাতদ ১০ পৃঃ, আজিঃ ২১২পৃঃ)
[4] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭নং)
[5] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৯নং)
[6] (হাশিয়াতু রওযিল মুরাববা’ ৬/২৫৪)
[7] (সূরা আন-নিসা (২৪) : ৬৩)
[8] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নাযারিল খাত্বিব,৩৫পৃঃ)
[9] (ই’লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)
[10] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৫৬নং)
[11] (মিশকাতুল মাসাবীহ৩৩২৪)
[12] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৯৬৬নং)
[13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৪নং)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসাইয়্যাহ, ইবনে বায ৫৫পৃঃ, ইসলাম মেঁ হালাল অ হারামঃ ২৩৬পৃঃ)
[15] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯০নং)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবেক ২/১২৮)
[17] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৪০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩১নং)
[18] (সহীহ নাসাঈ, আল্লামা আলবানী ৩০৫০নং)
[19] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/১৩৬)
[20] (ফাতাওয়া উসাইমীনঃ২/৭৪৮)
[2] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নযরিল খাত্বিব, মুসাইদ আল-ফালিহ২৮পৃঃ)
[3] (আফরাহুনা, অজ্ঞাতদ ১০ পৃঃ, আজিঃ ২১২পৃঃ)
[4] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭নং)
[5] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৯নং)
[6] (হাশিয়াতু রওযিল মুরাববা’ ৬/২৫৪)
[7] (সূরা আন-নিসা (২৪) : ৬৩)
[8] (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নাযারিল খাত্বিব,৩৫পৃঃ)
[9] (ই’লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)
[10] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৫৬নং)
[11] (মিশকাতুল মাসাবীহ৩৩২৪)
[12] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৯৬৬নং)
[13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৪নং)
[14] (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসাইয়্যাহ, ইবনে বায ৫৫পৃঃ, ইসলাম মেঁ হালাল অ হারামঃ ২৩৬পৃঃ)
[15] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৯০নং)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবেক ২/১২৮)
[17] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৪০নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩১নং)
[18] (সহীহ নাসাঈ, আল্লামা আলবানী ৩০৫০নং)
[19] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/১৩৬)
[20] (ফাতাওয়া উসাইমীনঃ২/৭৪৮)
পণ ও যৌতুক
এ তো গেল কনে ও মনের কথা;
কিন্তু আসল ও পণের কথাটা বাকীই থেকে গেছে; যা বর্তমান বিবাহের মূল স্তম্ভ! বউ কেমন
হবে না হবে, তার দ্বীন ও চরিত্র কেমন সে তো গৌণ বিষয়। মুখ্য বিষয় হল, ‘কত কি
দিতে পারবে?’ তাই তো নতুন জামাই শবশুর বাড়ি গেলে ‘জামাইটা কার?’ প্রশ্নের উত্তরে একই
কথা বলা হয় ‘জামাই টাকার!’
পণ? পণ এক আশ্চর্য যাদু!
পণের ‘সোনার কাঠি’ ও যৌতুকের ‘রূপার কাঠি’ দ্বারা মেয়ে শবশুরবাড়িতে ইচ্ছাসুখ পেতে পারে।
পণ; জাহান্নামকে জান্নাত
এবং জান্নাতকে জাহান্নাম বানাতে পারে!
পণ; নারীর অবমাননা, নারীর
মর্যাদায় কুঠারাখাত, তার অধিকার হরণ।
পণ; যুবজীবনের অভিশাপ। অশান্তির
বিষাক্ত দাবানল।
পণ; স্ত্রীর নিকট ব্যক্তিত্ব
বিক্রয়ের মূল্য।
পণ; ইসলামী বিধানের নির্লজ্জ
বিরুদ্ধাচরণ।
পণ; অর্থ-লোলুপতা, শোষণ ও
পীড়ন।
পণ; এক প্রকার ঘুষ। আর প্রিয়
নবী (সাঃ) ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই অভিশাপ করেছেন।’’[1]
পণ; অসৎ উপায়ে অন্যের অর্থ
আত্মসাৎ। আর আল্লাহ বলেন,
‘‘তোমরা অন্যায় ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না
এবং জেনে-শুনে লোকেদের ধন সম্পদের কিয়দংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে
উৎকোচ দিও না।[2]
বরপণের মাল হারামের মাল। কন্যাপক্ষের কথায় ‘হারামের মাল হারামে যাক।’
কারণ, সাধারণতঃ তা হয়, পূর্ব থেকেই ‘ফিক্স্ড ডিপোজিট’ করা সূদের অর্থ অথবা চুরি বা
হরফ করা অথবা ভিক্ষা করা যাকাতের টাকা। পণে দেওয়া হালাল টাকা খুব কমই হয়। হালাল হলেও
পণের নর্দমায় পড়ে তা হারামে পরিণত হয়ে যায়।
কিন্তু এই সর্বনাশী বিষজীবাণু
এল কোত্থেকে? অর্ধাঙ্গিনী পেতে গেলে তো অর্থ প্রদান করতে হয়; যেমন বহু মুসলিম দেশে
আজও প্রচলিত। কিন্তু এ সমাজে এর প্রাদুর্ভাবের কারণ কি? এর কারণ কি বিজাতির অনুকরণ
নয়? পণপ্রথার কারণ, মুসলিমের দ্বীন থেকে ঔদাসিন্য, নারী প্রগতির নামে বেলেল্লাপনা ও
পর্দাহীনতা। পারা খসে পড়লে আয়নার এবং ছিলা থাকলে কলার মূল্য ও কদর অবশ্যই থাকে না।
পাত্রীপক্ষের উচ্চ আশা; ঘুষ,
হাদিয়া, বখশিশ্ বা পারিতোষিক দিয়েও বড় ঘর ঢোকা। উচ্চ শিক্ষিত সরকারী চাকুরী-জীবি পাত্রের
জন্য কন্যা সহ লাখ টাকার নিলাম ডাকা!
কিছু না নিয়ে বিয়ে করতে বা
দিতে চাইলে পাত্রীপক্ষ ভাবে, পাত্রের নিশ্চয় কোন ‘খুঁত- টুঁত’ আছে। একথা কানে এলে সদিচ্ছা
নিমেষে মোটা পণে পরিণত হয়।
পণ না নিয়ে থাকলে সামান্য
কলহ-দ্বনেদ্বর ফলে পাত্রীপক্ষ সন্ধির বদলে সহজে তালাক (খোলা) নিতে প্রস্ত্তত হয়। তালাক
হলে দ্বিতীয় বিবাহে মোটা টাকার পণ নেওয়ার এরাদা পাক্কা হয়েই থাকে।
মেয়েকে বঞ্চিতা করে ছেলের
নামে জমি-ভিটে ইত্যাদি রেজিষ্ট্রী করে দেওয়াও পণ প্রথার এক কারণ। তবে এইভাবে বঞ্চিতা
করার এক কারণও পণ-প্রথা। যেহেতু মেয়ের বিবাহের সময় পণ ও যৌতুকের জন্য ২/৩ বিঘা জমি
বিক্রয় করে অথবা না করে সর্বমোট প্রায় ৪/৫ বিঘা জমির মূল্য যদি ব্যয় হয়ে থাকে, তবে
তার আর অন্যান্য অংশীদাররা কেন বাকী জমির ভাগ ঐ মেয়েকে দেবে? যদিও এরূপ বুঝা ও আচরণ
আল্লাহর ভাগ-বণ্টন আইনে অবৈধ হস্তক্ষেপ।
সমাজে বিশেষ করে বিবাহ-শাদীতে
উপহার উপঢৌকন দেওয়া-নেওয়ার প্রথা ও লৌকিকতার রেওয়াজ বড়। উপহারে প্রেম ও ভালোবাসা বর্ধিত
হয়। নববধূর মন যেমন এই শুভ মুহূর্তে নতুন মানুষদের নিকট থেকে উপহার রূপে কিছু পেতে
আকাঙ্ক্ষী হয়, তেমনি হয় নব জামাতার মন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনুভূতিহীন পাত্রীপক্ষের
জবাব থাকে ‘চায় না তো কি দোব? চাক্ তবে দোব।’ ফলে সেই আকাঙিক্ষত লৌকিকতার সামান্য উপহারটুকু
‘চাওয়া’র ছাঁচে পড়ে ভবিষ্যতে অসামান্য পণরূপে প্রকাশ পায়।
আবার পাড়ার ‘শাঁকচুন্নী’দের
কথায় নিজেদের সম্ভ্রম রাখতে গিয়ে অনেক বরের মা দেখাদেখি পণ চেয়ে বসে। কনে সুন্দরী হলেও
অনেকে পণে টাকা, জমি, টিভি, গাড়ি না নিয়ে চালাকী করে জামাই-বেটীকে সাজিয়ে দিতে বলে!
‘করেছিনু পণ, লইব না পণ বৌ যদি হয় সুন্দরী,
কিন্তু আমায় বলতে হবে সবর্ণ দেবে কয় ভরি?’
কিন্তু এই পণপ্রথার অনিবার্য
পরিণতি কি?
এই বরপণ দিতে না পারলে শবশুরবাড়িতে
কন্যার ভাগ্যে জোটে অকথ্য নির্যাতন, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, গঞ্জনা, ভৎর্সনা। স্বামী
বা তার বাড়ির লোকের পাশবিক অত্যাচার, অনাদর, অবহেলা। কমপক্ষে হতে হয় স্বামীর
সোহাগহারা। পরিশেষে বিবাহ-বিচ্ছেদ; নচেৎ বধূর আত্মহত্যা অথবা লোভী পাষন্ডদের পরিকল্পিত
বধূহত্যা।
এই ভয়েই নারী নারীর দুশমন।
মাতৃজঠরে কন্যা-ভ্রূণ হত্যা করা হয়। জন্মের পরও কন্যাহত্যা করা হয়। পরপর কন্যা জন্মালে
স্বামী ও তার বাড়ির লোক বধূর প্রতি বেজার হয়ে যায়। এদের অবস্থা হয় সেই জাহেলী
যুগের মানুষদের মত; যাদের-
‘‘কাউকেও যখন কন্যা-সন্তানের
সুসংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।
ওকে যে সংবাদ দেওয়া হয় তার গ্লানি-হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। (সে চিন্তা
করে,) অপমান সহ্য করে ওকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে! সাবধান! ওরা যা সিদ্ধান্ত
করে তা অতি নিকৃষ্ট।’’[3]
এই পণের কারণে স্বামীর ভাগ্যে মনমত স্ত্রী জোটে না। স্ত্রীর নির্মল
প্রেম ও শ্রদ্ধা থেকে হয় বঞ্চিত। ‘তীর-বিঁধা-পাখী’ কখনো কি গান গাইতে পারে? নিজ পিতাকে
যে পথে বসিয়েছে তাকে সুখ-সিংহাসনে কোন চক্ষে দেখবে? এর ফলে স্বামী স্ত্রীর দেহের
স্পর্শ পায়, কিন্তু মনের নাগাল পায় না। কাজ পায় কিন্তু ‘খিদমত’ পায় না। যেমন শবশুর-বাড়িতেও
সে হয় মানহারা, ওজনহীন।
আর পাত্রীপক্ষের কথা? কত
মেয়ের বাপ এই পণ-বন্যায় হচ্ছে ধবংস, পথের ভিখারী। পণের অভিশাপে নেমে-আসা দারিদ্র ও
সহায়-সম্বলহীনতা তাকে ঠেলে দিচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির পথে। বর বা তার বর্বর বাপ নিজের বিলাস-উদ্যান
গড়তে উজাড় করে দিচ্ছে কনের বাপের ক্ষুদ্র নীড় খানিকে!
এতে কি ঐ লোভাতুর সংসারে
শান্তির কিরণ থাকে? নেমে আসে নিরন্তর অশান্তি ও কলহের ছায়া।
এই সর্বগ্রাসী যৌতুক প্রথার
ভয়ানক আক্রমণের ফলে সমাজে কত বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। পণ দিতে না পারায় বিবাহ না হলে
অথবা বিলম্ব হলে বেড়ে চলে অবৈধ প্রণয়, ব্যভিচার, বেশ্যাবৃত্তি। পণ আনে অন্যান্য পাপ।
গানবাজনার কথা বলতে গেলে পণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলে, ‘গান-বাজনা হারাম, আর পণ নেওয়া
হারাম নয়? গান-বাজনা হলে বিয়েতে থাকবে না, আর পণ-নেওয়া বিয়েতে কি করে অংশগ্রহণ করেছ?’
পণপ্রথার মহামারীর কারণেই
নারী-শিক্ষার গুরুত্ব যাচ্ছে কমে। কারণ বিয়ের সময় টাকাই যখন লাগবে তখন আবার শিক্ষা-দীক্ষা,
আদব দানে কি লাভ? মেয়ের চরিত্র ও ধর্মের দিকটা খেয়াল করার প্রয়োজন কি? বরং টাকার অভাবেই
কত শিক্ষিতার বিবাহ হচ্ছে অধম নিরক্ষরের সাথে। তাই বহু মূর্খ অভিভাবকের মন বলে,
‘কন্যা ঘরের আবর্জনা, পয়সা দিয়ে ফেলতে হয়,
রক্ষণীয়া পালনীয়া শিক্ষণীয়া আদৌ নয়।’
পণ থেকে বাঁচার জন্য অভিভাবক
মেয়েকে করছে মেহনতী, সবনির্ভরশীলা, ঠেলে দিচ্ছে পর্দাহীনতার পথে। নারী-পুরুষের অবাধ
মিলামিশার চাকুরী ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যভিচারের পথে। ঘরে-বাইরে তাকে সুযোগ দিচ্ছে অবৈধ
প্রণয়ে; ভাবছে, ‘ঘটে তো ঘটে যাক, পটে তো পটে যাক!’ কারণ, মেয়ে নিজেই স্বামী নির্বাচন
করে নিতে পারলে তাদের রেহাই! কিন্তু ফল তাতে বিপরীত হয়ে কেবলমাত্র দুর্নাম এবং শবশুরবাড়িতে
অকথ্য নির্যাতন ও দুঃখ তার সাথী হয়। আর সর্বশেষে পণ বা যৌতুক দিতে না পারলে বিচ্ছেদ
ছাড়া আর কি?
পণ চাই। নগদ চাই। ধারের কারবার
নাই। এত খরচ, এত কিছুর পর বিয়ে ঘুরে যাবে। বর উঠে যাবে বিবাহ মজলিস থেকে; যদি কিছু
টাকা বাকী থেকে যায় আক্দের সময়! এই ধৃষ্টতার ফলে কনে ও তার বাপ-মায়ের মাথায় কত বড় বজ্রাঘাত
যে হয় তা অনুমেয়। কিন্তু সে আঘাত সমাজের মুখে কেবল ‘আহা’ হয়েই থেকে যায়। কনের আত্মহত্যার
খবর শুনেও মনে আতঙ্ক আসে না। নিস্তেজ জড় সমাজের অভ্যন্তরে কোন চেতনা, কোন অনুভূতি,
কোন আন্দোলন আনতে পারে না। এর কারণ অনেকটা এই যে, এই আঘাত যে খায় সেই এর জবাবে আরো
বড় আঘাত দেয়। সুতরাং মার খেয়ে ও মার দিয়ে সমাজের অবস্থা হয়েছে মার-প্রতিযোগিতার মারমুখী
কুশ্তীগীরদের মত। তাই শক্ত মাশুলে তা কোন আসরই করে না। কিন্তু এই মারে মারা পড়ে তারাই,
যারা কুশ্তীগীর নয়। অর্থাৎ যারা কেবলমাত্র কন্যার পিতা অথবা যার কন্যার সংখ্যা তুলনামূলক
বেশী।
অনেক ক্ষেত্রে পণ নেওয়ার
মত পাপের দায়িত্ব বর অথবা বরের বাপ স্বীকার করতে ইতস্ততঃ করে। একটু দ্বীনদরদী যুবক
হলে নিজে পণ চায় না, কিন্তু মা-বাপ চায়। সে যদি তাদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে মা-বাপের
নাকি নাফরমান হয়ে যায়। কারণ, ‘মা-বাপ নারাজ হলে খোদা নারাজ!’ তাদেরকে নারাজ না করে
মাতৃ-পিতৃভক্তির পরিচয় দেয় এবং স্রষ্টার অবাধ্য ও সৃষ্টির বাধ্য হয়ে পরের গলায় ছুড়ি
চালায়। পক্ষান্তরে অন্যান্য ক্ষেত্রে মা-বাপের কথায় কোন আমলই দেয় না।
আবার মা-বাপকে বললে বলে,
‘ছেলে মানে না, নিতে চায়।’ কিন্তু এই বলে তারা ছেলের কাছে অসহায়তা ও পিতামাতা হবার
অযোগ্যতার প্রমাণ দেয়। প্রকৃতপক্ষে এসব কিছুই লুটেরাদের একটা পরিকল্পিত ছলনা মাত্র।
পরের টাকা আত্মসাৎ করে সমাজের চোখ থেকে আত্মগোপন করার এক অপকৌশল।
অনেকে এ বড় অঙ্কের অর্থকে
‘পণ’ ব’লে নিতে লজ্জাবোধ করে। তাই ঋণ, সাহায্য বা ব্যবসার পুঁজি ইত্যাদি নাম
দিয়ে সমাজের চোখে ধূলো দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে তো আর ফাঁকি দেওয়া যায় না।
চিরসাথী, শয্যাসঙ্গিনী ও
অর্ধাঙ্গিনীকে টোপ বানিয়ে তাকে নানারূপ যন্ত্রণা দিয়ে অর্থ শিকারের বুদ্ধি, একটি
নারীকে পণবন্দিনী করে সন্ত্রাসীর মত তার বাপের নিকট মুক্তিপণ চাওয়ার কৌশল, নিরীহ নারীকে
জুয়ার গুটি করে অর্থলুটার ধান্দা, নির্লজ্জ বেহায়া ভিখারীর মত অন্যের নিকট হাত পেতে
অর্থ আদায়ের মত ধৃষ্টতা কি কোন মুসলিম, কোন মানুষের হতে পারে?
শীতের শাল চাই, ঈদের সেলামী
চাই, মেলা দেখতে (?!) হাতখরচ চাই, বর্ষায় জামাই ও তার চোদ্দগুষ্ঠির জন্য গামছা চাই,
সাতশ পরিবারে বিতরণযোগ্য আম-কাঁঠাল চাই, এ চাই, ও চাই। কোন্ অধিকারে এত চাই-চাই? শুধু
এই জন্য নয় কি যে, বিয়াই-বাড়ির একটা মানুষ (বউ)কে খোরপোশ সহ তারা তাদের পদতলে অনুগ্রহ
করে আশ্রয় দিয়েছে তাই?!
অথচ একটি জীবন; যে তার যথাসর্বসব,
আত্মীয়-সবজন, মা-বাপ সকলকে ছেড়ে তার দৈহিক খিদমতকে শবশুর-শাশুড়ীর এবং তার দেহ-যৌবনকে
স্বামীর পদতলে উৎসর্গ করার কোন মূল্য নেই?
বাকী থাকল যদি কোন মা-বাপ
তার মেয়ে-জামাইকে কিছু যৌতুক, কিছু উপহার খুশী হয়ে সেবচ্ছায় দেয়, তবে তা দূষণীয় নয়;
না দেওয়া, না নেওয়া। নবী (সাঃ) তাঁর কন্যা ফাতেমাকে কিছু যৌতুক দিয়ে স্বামীর
বাড়ি পাঠিয়েছিলেন। যৌতুক হিসাবে তাঁকে দিয়েছিলেন একটি পশম-নির্মিত সাদা রঙের চাদর বা
বিছানা, একটি ইযখির ঘাস-নির্মিত বালিশ এবং একটি চর্ম-নির্মিত পানির মশক।[4]
তবে জামায়ের মনে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা
এবং না পেলে অন্তরে ব্যথা বা কারো নিকট অভিযোগ ও কথা যেন না হয়।[5]
মুসলিম সমাজে পণ এক মহামারী।
একে রুখবো কিভাবে?
একে রুখার সবচেয়ে বড় ও একমাত্র
উপায় হল পাক্কা ঈমান আনা। সমাজ যদি ঈমানের ছায়ায় আশ্রয় নেয় তাহলে এমন আরফার রোদের তাপ
হতে সকলেই রেহাই পাবে। পরকালের উপর পূর্ণ বিশ্বাস না এলে এবং আল্লাহর কঠোর শাস্তিকে
প্রকৃত ভয় না করলে পণ রুখা সম্ভব নয়। অর্থলোভ বড় মারাত্মক। যত পাওয়া যায় তত পেতে চায়
আরো মন। কোন আইন, কোন সংগঠন পারে না এ মনের গতি রোধ করতে। কারণ, আকাশে ফাঁদ পেতে বনের
পাখি ধরা অসম্ভব।
দ্বীন ও আল্লাহ-ভীতির মাধ্যমেই
সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক শৈথিল্যের প্রগতি (!) বন্ধ হতে পারে। আর তা হলেই মানুষের মন
থেকে রিপুর তাড়না দূরীভূত হবে। লোভ ও লিপ্সা কমে গেলে পরের ধনের প্রতি দৃক্পাত হবে
না।
আল্লাহর আইন পর্দাপ্রথা প্রচলিত
হলে, নারীদেহ নিয়ে অশ্লীল ও নোংরা ছবি, নারীদেহ নিয়ে ব্যবস্যা-বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বন্ধ
ক’রে, নারী-সৌন্দর্য দুর্লভ ক’রে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করলে নারীকে পুরুষ পণ দিয়ে
নয় বরং মন ও ধন দিয়ে খুঁজে আনবে।
সমাজের সকল সদস্যের ঐকান্তিক
সত্যাগ্রহ ও প্রচেষ্টা যদি ‘পণ নেব না, পণ দেবও না’ এই শ্লোগানকে কর্মে রূপায়িত করা
হয়, তবে পণ ‘হাড়োল’ এ বন হতে পলায়ন করে বাঁচবে।
সামাজিক যৌথ-বয়কটের মাধ্যমে
পণ গ্রহীতাদেরকে অপদস্থ করলে পণপ্রথার বিলোপ সাধন হতে পারে। ‘পণ নেওয়া বিয়েতে অংশ গ্রহণ
করব না, সে বিয়ে খাবও না, তার বরযাত্রীও যাব না’ -এই সংকল্প হতে হবে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা
ব্যতীত তাতেও জয়লাভ সম্ভব নয়।
মসজিদের ইমামগণ পণ নেওয়া
বরের বিয়ে না পড়ালে কিছুটা কাজ হতে পারে। তবে এর পরিণাম শুভ নয়। এতেও ভোট হবে আর সে
ভোটে জিতে উঠাও কঠিন। কারণ, বর্তমানে সমাজের মানুষ ইমামদের উপদেশ অনুযায়ী চলে খুব কম;
পরন্তু ইমামদেরকেই সমাজের নির্দেশ ও আদেশানুসারে বেশীর ভাগই চলতে হয়! তাছাড়া বিয়ে পড়াবার
জন্য আরো কত নিম-মোল্লা কাযী বর্তমান।
সুতরাং দ্বীন, দ্বীনদার ও
আলেম-ইমামদের যে সমাজে কোন মূল্যায়ন নেই, সে সমাজের ভ্রষ্টতার জন্য কেবল আলেম-ইমামদেরকে
দায়ী করা ন্যায্য বিচার হবে না।
এক বড় আশা আছে ভাবী প্রজন্ম
কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর উপর। এদের মধ্যে যদি দ্বীনী চেতনা ফিরিয়ে আনতে পারা যায়,
তবে এরা, এই নওজোয়ানেরাই পারবে সমাজের এই দুর্গতির পথ অবরোধ করতে।
(হে মানুষ!) ‘‘তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর। আর নিঃসন্দেহে জেনে রাখ যে, আল্লাহর আযাব বড় কঠিন।’’[6]
অতএব হে যুবক বন্ধু! পণ দেখে নয়, বরং দ্বীন ও মন দেখে বিয়ের কথা পাকাপাকি
করে ফেল। হ্যাঁ, তবে শুভকাজে দেরী করো না। আর তোমার এই শুভসন্ধিক্ষণে অশুভকে মোটেই
স্থান দিও না। তবেই পাবে সেই সঙ্গিনী; যে হবে,
পতিপ্রাণা সতী অনুরাগমতি সবর্গসুষমা-সিক্তা,
প্রীতি-বন্ধনে আসিবে তোমার আপনারে করি রিক্তা।
[1] (ইরওয়াউল গালীল ২৬২১নং)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৮)
[3] (সূরা আন-নাহল (১৬) : ৫৮-৫৯)
[4] (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, সহীহ ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী ৩৩৪৯নং)
[5] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/৯৯)
[6] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৯৬)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৮)
[3] (সূরা আন-নাহল (১৬) : ৫৮-৫৯)
[4] (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, সহীহ ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী ৩৩৪৯নং)
[5] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/৯৯)
[6] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৯৬)
দেনমোহর
এতক্ষণ এমন এক স্বপ্নজগৎ
ও আজব দেশের কথা বলছিলাম যেখানে ‘রাত্তিরেতে বেজায় রোদ, দিনে চাঁদের আলো।’ যে দেশে
কিছু কিনতে গেলে ক্রীতবস্ত্তর বিনিময়ে কোন অর্থ দিতে হয় না; বরং বস্ত্তর সাথে ইচ্ছামত
অর্থ পাওয়া যায়! এখন বাস্তব-জগতের কথায় আসা যাক।
বিবাহ এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি।
স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অন্যের কাছে উপকৃত ও পরিতৃপ্ত। কিন্তু স্বামীর
অধিকার বেশী। তাই স্ত্রীর কর্তব্য অধিক। স্ত্রী তার দেহ-যৌবন সহ স্বামীর বাড়িতে
এসে বা সদা ছায়ার ন্যায় স্বামী-পাশে থেকে তার অনুসরণ ও সেবা করে। তাই তো এই চুক্তিতে
তাকে এমন কিছু পারিতোষিক প্রদান করতে হয় যাতে সে সন্তুষ্ট হয়ে স্বামীর বন্ধনে
আসতে রাজী হয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা সবয়ং মানুষকে এ বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘‘উল্লেখিত (অবৈধ) নারীগণ
ব্যতীত অন্যান্য নারীগণকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তোমাদের সবীয়
অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়।
তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা উপভোগ করবে তাদেরকে নির্ধারিত মোহর অর্পণ করবে।’’[1]
তিনি অন্যত্র বলেন,
‘‘এবং তোমরা নারীদেরকে তাদের
মোহর সন্তুষ্টমনে দিয়ে দাও।’’[2]
আর প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ
শর্ত যা পূরণ করা জরুরী, তা হল সেই বস্ত্ত যার দ্বারা তোমরা (স্ত্রীদের) গুপ্তাঙ্গ
হালাল করে থাক।’’[3]
সুতরাং স্ত্রীকে তার ঐ প্রদেয় মোহর প্রদান করা ফরয। জমি, জায়গা, অর্থ,
অলঙ্কার, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি মোহরে দেওয়া চলে। বরং প্রয়োজনে (পাত্রীপক্ষ রাজী হলে) কুরআন
শিক্ষাদান, ইসলাম গ্রহণও মোহর হতে পারে।[4]
মোহর কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
তবে সেবচ্ছায় বেশী দেওয়া নিন্দনীয় নয়। মহানবী (সাঃ) তাঁর কোন স্ত্রী ও কন্যার মোহর
৪৮০ দিরহাম (১৪২৮ গ্রাম ওজনের রৌপ্যমুদ্রা) এর অধিক ছিল না।[5] হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর
মোহর ছিল একটি লৌহবর্ম।[6] হযরত আয়েশা বলেন, তাঁর মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম (১৪৮৭,৫ গ্রাম
ওজনের রৌপ্য মুদ্রা)।[7] তবে কেবল উম্মে হাবীবার মোহর ছিল ৪০০০ দিরহাম (১১৯০০ গ্রাম
রৌপ্য মুদ্রা)। অবশ্য এই মোহর বাদশাহ নাজাশী মহানবী (সাঃ) এর তরফ থেকে আদায় করেছিলেন।[8]
তাছাড়া তিনি বলেন, ‘‘নারীর
বর্কতের মধ্যে; তাকে পয়গাম দেওয়া সহজ হওয়া, তার মোহর সবল্প হওয়া এবং তার গর্ভাশয়ে সহজে
সন্তান ধরা অন্যতম।’’[9]
হজরত মূসা (আঃ) তাঁর প্রদেয়
মোহরের বিনিময়ে শ্বশুরের আট অথবা দশ বছর মজুরী করেছিলেন।[10]
মোহর হাল্কা হলে বিবাহ সহজসাধ্য
হবে; এবং সেটাই বাঞ্ছিত। পক্ষান্তরে পণপ্রথার মত মোহর অতিরিক্ত বেশী চাওয়ার প্রথাও
এক কুপ্রথা।
মোহরের অর্থ কেবলমাত্র স্ত্রীর
প্রাপ্য হক; অভিভাবকের নয়। এতে বিবাহের পরে স্বামীরও কোন অধিকার নেই। স্ত্রী
বৈধভাবে যেখানে ইচ্ছা সেখানে খরচ করতে পারে।[11] অবশ্য স্ত্রী সন্তুষ্টচিত্তে সেবচ্ছায়
স্বামীকে দিলে তা উভয়ের জন্য বৈধ।[12]
স্ত্রীকে মোহর না দিয়ে বিবাহ
করলে অনেকের নিকট বিবাহ বাতিল।[13]
আক্দের সময় মোহর নির্ধারিত
না করলেও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মিলনের পর স্ত্রী সেই মহিলার
সমপরিমাণ চলতি মোহরের অধিকারিণী হবে, যে সর্বদিক দিয়ে তারই অনুরূপ। মিলনের পূর্বে
স্বামী মারা গেলেও ঐরূপ চলতি মোহর ও মীরাসের হকদার হবে।[14]
মোহর নির্দিষ্ট না করে বিবাহ
হয়ে মিলনের পূর্বেই স্বামী তালাক দিলে স্ত্রী মোহরের হকদার হয় না। তবে তাকে সাধ্যমত
অর্থাদি খরচ-পত্র দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।[15]
বিবাহের সময় মোহর নির্ধারিত
করে সম্পূর্ণ অথবা কিছু মোহর বাকী রাখা চলে। মিলনের পর স্ত্রী সে ঋণ মওকুফ করে দিতে
পারে। নচেৎ ঋণ হয়ে তা স্বামীর ঘাড়ে থেকেই যাবে।
মোহর নির্ধারিত করে বা কিছু
আদায়ের পর বিবাহ হয়ে মিলনের পূর্বে স্বামী মারা গেলেও স্ত্রী পূর্ণ মোহরের হকদার
হবে। স্ত্রী মারা গেলে স্বামী মোহর ফেরৎ পাবে না।[16]
মোহর নির্দিষ্ট করে আদায়
দিয়ে মিলন করার পর স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে মোহর ফেরৎ পাবে না। মহান আল্লাহ
বলেন,
‘‘আর যদি এক স্ত্রীর স্থলে
অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে
কিছুই গ্রহণ করো না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচারণ দ্বারা তা গ্রহণ
করবে? কিভাবে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা পরস্পর সহবাস করেছ এবং তারা তোমাদের কাছ
থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে?’’[17]
মোহর ধার্য হয়ে আদায় না করে মিলনের পূর্বেই তালাক দিলে নির্দিষ্ট মোহরের
অর্ধেক আদায় করতে হবে। অবশ্য যদি স্ত্রী অথবা যার হাতে বিবাহবন্ধন সে ( স্বামী) মাফ
করে দেয়, তবে সে কথা ভিন্ন। তবে মাফ করে দেওয়াটাই আত্মসংযমের নিকটতর।[18]
মিলনের পূর্বে যদি স্ত্রী
নিজের দোষে তালাক পায় অথবা খোলা তালাক নেয়, তবে মোহর তো পাবেই না এবং কোন খরচ-পত্রও
না।[19] মোহর আদায় দিয়ে থাকলে মিলনের পরেও যদি স্ত্রী খোলা তালাক চায়, তাহলে
স্বামীকে তার ঐ প্রদত্ত মোহর ফেরৎ দিতে হবে।[20]
কোন অবৈধ বা অগম্যা নারীর
সাথে ভুলক্রমে বিবাহ হয়ে মিলনের পর তার অবৈধতা (যেমন গর্ভ আছে বা দুধ বোন হয় ইত্যাদি)
জানা গেলে ঐ স্ত্রী পূর্ণ মোহরের হকদার হবে। তবে তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ওয়াজেব।[21]
একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে
সকল স্ত্রীর মোহর সমান হওয়া জরুরী নয়।[22]
স্ত্রীর মোহরের অর্থ খরচ
করে ফেলে স্বামী যদি তার বিনিময়ে স্ত্রীকে তার সমপরিমাণ জমি বা জায়গা লিখে দেয়
তবে তা বৈধ।[23] পক্ষান্তরে অন্যান্য ওয়ারেসীনরা রাজী না হলে কোন স্ত্রীর নামে (বা
কোন ওয়ারেসের নামে) অতিরিক্ত কিছু জমি-জায়গা উইল করা বৈধ নয়। কারণ, কোন ওয়ারেসের জন্য
অসিয়ত নেই।[24]
পাত্রীর নিকট থেকে ৫০ হাজার
(পণ) নিয়ে ১০ বা ২০ হাজার তাকে মোহর দিলে অথবা নামে মাত্র মোহর বাঁধলে এবং আদায়ের নিয়ত
না থাকলে অথবা দশ হাজারের দশ টাকা আদায় ও অবশিষ্ট বাকী রেখে আদায়ের নিয়ত না রাখলে;
অর্থাৎ স্ত্রীর ঐ প্রাপ্য হক পূর্ণমাত্রায় আদায় দেওয়ার ইচ্ছা না থাকলে এই ধোঁকায় বিবাহ
হবে কি না সন্দেহ। অবশ্য একাজ যে আল্লাহর ফরয আইনের বিরুদ্ধাচরণ তাতে কোন সঃন্দেহ নেই।
প্রকাশ যে, মোহর বিজোড় বাঁধা
বা এতে কোন শুভলক্ষণ আছে মনে করা বিদআত।
(হে মানুষ!) ‘‘তোমাদের প্রতিপালকের
নিকট থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাঁকে ছাড়া ভিন্ন অভিভাবকদের অনুসরণ
করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।’’[25]
[1]
(সূরা আল-বাক্বারা (৪) : ২৪)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) : ৪)
[3] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ১৫৪৭নং)
[4] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২০২-৩২০৯নং)
[5] (ইরওয়াউল গালীল ১৯২৭নং)
[6] (সহীহ আবু দাউদ, আল্লামা আলবানী ১৮৬৫নং, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ১/৮০)
[7] (সহীহ আবু দাউদ ১৮৫১নং)
[8] (সহীহ আবু দাউদ ১৮৫৩)
[9] (সহীহুল জামে ২২৩৫নং)
[10] (সূরা স-দ (২৮) : ২৭)
[11] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৫-১০৯পৃঃ)
[12] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৪)
[13] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৯)
[14] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৯-১৫০)
[15] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৬)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৮)
[17] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২০-২১)
[18] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৭)
[19] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৫১-১৫২)
[20] (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৭৪নং)
[21] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৯)
[22] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬২)
[23] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৪৭)
[24] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৪৭নং, ইরঃ ১৬৫৫নং)
[25] (সূরা আল-আ‘রাফ (৭) : ৩)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) : ৪)
[3] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ১৫৪৭নং)
[4] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২০২-৩২০৯নং)
[5] (ইরওয়াউল গালীল ১৯২৭নং)
[6] (সহীহ আবু দাউদ, আল্লামা আলবানী ১৮৬৫নং, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ১/৮০)
[7] (সহীহ আবু দাউদ ১৮৫১নং)
[8] (সহীহ আবু দাউদ ১৮৫৩)
[9] (সহীহুল জামে ২২৩৫নং)
[10] (সূরা স-দ (২৮) : ২৭)
[11] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৫-১০৯পৃঃ)
[12] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৪)
[13] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৯)
[14] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৯-১৫০)
[15] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৬)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৮)
[17] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২০-২১)
[18] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৭)
[19] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৫১-১৫২)
[20] (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৭৪নং)
[21] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৪৯)
[22] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৬/২৬২)
[23] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৪৭)
[24] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩০৪৭নং, ইরঃ ১৬৫৫নং)
[25] (সূরা আল-আ‘রাফ (৭) : ৩)
বিবাহের পূর্বে দেশাচার
কথা পাকাপাকি হলে বিবাহের
দিন হবে। তবে কেবল দিন করার জন্য ঘটা ও আড়ম্বরপূর্ণ মজলিস করা এবং রাজকীয় পান-ভোজনের
বিপুল আয়োজন ও ব্যবস্থা করা অপব্যয়ের পর্যায়ভুক্ত। বরপক্ষের উচিৎ, তা খেয়াল রাখা এবং
সর্বোত্তম খাওয়ার ব্যবস্থা না হলে দুর্নাম না করা। কেবলমাত্র একজন লোক গিয়ে অথবা না
গিয়ে টেলিফোনের মাধ্যমেও বিবাহের দিন ঠিক করা যায়। নিজেদের সুবিধামত যে কোন দিনে যে
কোন মাসে দিন স্থির করতে কোন বাধা নেই। আল্লাহর দিন সবই সমান। পঞ্জিকা দেখে শুভাশুভ
দিন নির্বাচন বিদআত এবং বিজাতির অনুকরণ।
নিমন্ত্রণ করার সময় নিমন্ত্রণপত্রের
কোণে হলুদ লাগিয়ে দেওয়া বিদআত। এতে কোন শুভলক্ষণ আছে বলে মনে করা শির্ক।
এরপর পৃথক করে হলুদ মাখার
কাপড় পাঠানো এবং বিবাহ-বন্ধনের ৫/৭ দিন পূর্বে কনের বাড়ি ‘লগন’ পাঠানোর প্রথা
ইসলামী প্রথা নয়। তারপর এর সঙ্গে যায় বরের ভাই-বন্ধু ও বুনাইরা। সাজ-পোশাক, প্রসাধন-সামগ্রীর
সাথে পুতুল জরুরী, অনেকে পাঠায় লুডু এবং তাসও! তার সাথে চিনি, পান-সুপারি, মাছ, মুদ্রা,
হলুদ মাখার শাড়ি থাকবেই। এই ‘লগন-ধরা’ ও মুখ দেখার অনুষ্ঠান এক ব্যয়বহুল ব্যাপার। এতে
যা খরচ হয়, তা একটা ইসলামী বিবাহ মজলিসের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু হায় রে! পরের কান খোলামকুচি
দিয়ে মললেও তাতে নিজের ব্যথা কোথায়?
দিনের শেষে অনুষ্ঠিত হয় মুখ
দর্শনের অনুষ্ঠান। পাত্রীকে সুসজ্জিতা করে ‘আলম তালা’র (পাত্র-পাত্রীর বসার জন্য বিশেষ
সুসজ্জিত বিছানা বা) আসনে বসানো হয়। এরপর অঙ্গরাগে সজ্জিত সেই চেহারা দর্শন করে পাত্রের
ঐ ভাই-বন্ধুরা। আঙ্গুলে বা টাকায় চিনি নিয়ে পাত্রীর অধরে স্পর্শ করে! অঙ্গুরীয়র উপহার
তার সুসজ্জিত আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়, ঘড়ি পরিয়ে দেয় সুদর্শন হাতখানি টেনে! এর ফাঁকে দু’চারটি
ঠাট্টা-উপহাস তো চলেই। কারণ, এরা দেওর, নন্দাই, বন্ধু---উপহাসের পাত্র তাই!
অতঃপর সুগোল কব্জিখানিতে
সুতো বাঁধে, ললাটে লাগায় হলুদ বাঁটা এবং হাতে দেয় জাঁতি বা কাজললতা! অথচ এদেরকে চেহারা
দেখানোও হারাম। প্রিয় নবী (সাঃ) সত্যই বলেছেন,
‘‘লজ্জা না থাকলে যা মন তাই
কর।’’[1] অর্থাৎ নির্লজ্জ বেহায়ারাই ইচ্ছামত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে পারে। পক্ষান্তরে
কোন মু’মিন নির্লজ্জ হয় না। কারণ, ‘‘লজ্জা ঈমানের অংশবিশেষ।’’[2]
প্রকাশ যে, এর পর থেকে হাতে বা কপালে সুতো বেঁধে রাখা ও কাজললতা বা
জাঁতি সর্বদা সাথে রাখা বিদআত। বরং এর মাধ্যমে যদি কোন মঙ্গলের আশা করা হয়, তবে তা
শির্ক।
পাত্র-পাত্রীকে এরপর দিনগুলিতে
বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়া। এই দিনে মসজিদ বা পীরের থানে সিন্নি বিতরণ করা প্রভৃতি
বিদআত ও শির্ক।
এবার রইল গায়ে হলুদ, তেল
চাপানো, সাতুশী ও নাপিতের নখ কাটা প্রভৃতি প্রথা। তেল চাপানোতে সধবা নারী হতে হবে।
বিধবা আসতে পাবে না। নির্দিষ্ট কাপড়ে কাবা-মুখে বসিয়ে হলুদ মাখাবে। কাপড়ে লিখা পাত্র-পাত্রীর
নাম। পাত্রকে এমন মহিলারা হলুদ মাখাবে যাদের ঐ পাত্রকে দেখা দেওয়া হারাম! পাত্রের এমন
অঙ্গে (জাঙ্গে, নাভীর নীচে) হলুদ মাখায় যে অঙ্গ পুরুষকে দেখানোও হারাম। সুতরাং এমন
প্রথা ইসলামে কি হতে পারে?
পক্ষান্তরে পুরুষ রঙ ব্যবহার
করতে পারে না। তাই হাতে-পায়ে মেহেন্দি লাগাতে পারে না। হলুদ ব্যবহার করাও তার জন্য
শোভনীয় নয়। বিশেষ করে হলুদ রঙের পোশাক তার জন্য নিষিদ্ধ।[3]
একদা সাহাবীর গায়ে হলুদ রঙ
দেখে নবী (সাঃ) বুঝেছিলেন, তিনি নব-বিবাহিত।[4] সেটা হলুদের রঙ নয়। বরং স্ত্রীর দেহের
(মহিলাদের ব্যবহার্য্য একপ্রকার সুগন্ধি) ‘খালুক’এর রঙ; যা তাঁর কাপড়ে লেগে গিয়েছিল।[5]
সুতরাং এটাকে পাত্র-পাত্রীর জন্য হলুদ মাখার বৈধতার দলীল মানা যায় না। হ্যাঁ, তবে যদি
কেউ দেহের রঙ ‘কাঁচা সোনার মত উজ্জ্বল’ করার উদ্দেশ্যে নিজ হাতে মেখে ধুয়ে ফেলে, তবে
সে কথা ভিন্ন। তাছাড়া বিয়ের পাত্র-পাত্রীর জন্য এই দিয়ে লগ্ন শুরু করা বিদআত।
অবশ্য পাত্রী হাতে-পায়ে মেহেন্দি
ব্যবহার করতে পারে। বরং মহিলাদের হাতে সর্বদা মেহেন্দি লাগিয়ে রাখাই বিধিসম্মত।[6]
এরপর রাত্রে ক্ষীর মুখে দেওয়ার
দেশাচার। সাধারণতঃ এ প্রথা পাশর্ববর্তী পরিবেশ থেকে ধার করা বা অনুপ্রবেশ করা প্রথা।
আর প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই দলভুক্ত।’’[7]
তাছাড়া এমন মহিলারা পাত্রের
ওষ্ঠাধর স্পর্শ করে তার মুখে ক্ষীর-মিষ্টি দেয়, যাদের জন্য ঐ পাত্রকে দেখা দেওয়াও হারাম!
অনেক সময় উপহাসের পাত্রী (?) ভাবী, নানী হলে হাতে কামড়েও দেওয়া হয়! বরং পাত্রও ভাবীর
মুখে তুলে দেয় প্রতিদানের ক্ষীর! অথচ এই ‘‘স্পর্শ থেকে তার মাথায় সুচ গেঁথে যাওয়াও
উত্তম ছিল।’’[8]
অনুরূপ করে পাত্রীর
সাথেও তার উপহাসের পাত্ররা! বরং যে ক্ষীর খাওয়াতে যায় তার সাথেও চলে বিভিন্ন মস্করা।
আর তার সাথে চলে ‘গীত-পার্টি’
যুবতীদের গীত। শুধু গীতই নয় বরং অশ্লীল গীত ও হাততালি সহ ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে গীত। এর
সঙ্গে থাকে ‘লেডি ড্যান্স’ বা নাচ। আর শেষে বিভিন্ন অশ্লীল ও অবৈধ অভিনয় বা ‘কাপ’!
এমন পরিস্থিতি দেখে-শুনে প্রত্যেক রুচিবান মুসলিম তা ঘৃণা করতে বাধ্য। কিন্তু বহু রুচিহীন
গৃহকর্তা এসব দেখে-শুনেও শুধু এই বলে ভ্রূক্ষেপ করে না যে, ‘আম কালে ডোম রাজা, বিয়ে
কালে মেয়ে রাজা।’ ফলে ইচ্ছা করেই অনুগত প্রজা হয়ে তাদেরকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেয় অথবা
মেয়েদের ধমকে বাধ্য হয়েই চুপ থাকে। তাই নিজ পরিবারকে নির্লজ্জতায় ছেড়ে দিয়ে বাড়ির বাইরে
রাত কাটাতেও লজ্জা করে না। অথচ ‘‘গৃহের সমস্ত দায়িত্ব সম্পর্কে কিয়ামতে গৃহকর্তার নিকট
কৈফিয়ত তলব করা হবে।’’[9]
এই ধরনের অসার ও অশ্লীল মজলিসে
কোন মুসলিম নারীর উপস্থিত হওয়া এবং ক্ষীর খাওয়ানো নিঃসন্দেহে হারাম। যেমন মহিলাদের
এই কীর্তিকলাপ দর্শন করা বা নাচে ফেরি দেওয়া পুরুষদের জন্য বিশেষভাবে হারাম। এমন নাচিয়েকে
ফেরি দেওয়ার বদলে তার কোমর ভেঙ্গে দেওয়া উচিৎ মুসলিমের---বিশেষ করে তার অভিভাবকের।
কিন্তু হায়! ‘শাশুড়ী যদি দাঁড়িয়ে মুতে, তাহলে বউ তো পাক দিয়ে দিয়ে মুতবেই!’
আইবুড়ো বা থুবড়া ভাতের (অবিবাহিত
অবস্থার শেষ অন্নগ্রহণের) অনুষ্ঠানও বিজাতীয় প্রথা। এই দিনের ক্ষীর-সিন্নি বিতরণও বিদআত।
বরং পীরতলায় বিতরণ শির্ক। আর এই দিন সাধারণতঃ পাকান বা বাতাসা বিতরণ (বিক্রয়ের) দিন।
যাদেরকে এই পাকান বা মিষ্টি দেওয়া হবে তাদেরকে পরিমাণ মত টাকা দিয়ে ‘ভাত’ খাওয়াতেই
হবে। না দিলে নয়। এই লৌকিকতায় মান রাখতে গিয়েও অনেকে লজ্জিত হয়। সুতরাং এসব দেশাচার
ইসলামের কিছু নয়।
তারপর আসে তেল নামানোর পালা।
ঝোমর ডালা হয় পাত্র বা পাত্রীকে কেন্দ্র করে হাততালি দিয়ে গীত গেয়ে ও প্রদক্ষিণ করে!
এ ছাড়া আছে শিরতেল ঢালার
অনুষ্ঠান। সধবাদের হাতের উপরে হাত, স্বার উপর নোড়া, তার উপর তেল ঢালা হয় এবং তা পাত্রীর
মাথায় গড়িয়ে পড়ে। এই সঙ্গে আরো কত কি মেয়েলি কীর্তি। তাছাড়া এ প্রথা সম্ভবতঃ শিবলিঙ্গ
পূজারীদের। কারণ, অনেকেই এই প্রথাকে ‘শিবতেল ঢালা’ বলে থাকে। তাছাড়া এর প্রমাণ হল শিবলিঙ্গের
মত ঐ নোড়া!
সুতরাং যে মুসলিম নারীরা
মূর্তিপূজকদের অনুরূপ করে তারা রসুলের বাণীমতে ওদেরই দলভুক্ত। আর এদের সঙ্গে দায়ী হবে
তাদের অভিভাবক ও স্বামীরাও।
এই দিনগুলিতে ‘আলমতালায়’
বসার আগে পাত্র-পাত্রীর কপাল ঠেকিয়ে আসনে বা বিছানায় সালাম বিদআত। কোন বেগানা (যেমন
বুনাই প্রভৃতির) কোলে চেপে আলম-তালায় বসা হারাম। নারী-পুরুষের (কুটুম্বদের) অবাধ মিলা-মিশা,
কথোপকথন মজাক-ঠাট্টা, পর্দাহীনতা প্রভৃতি ইসলাম বিরোধী আচরণ ও অভ্যাস। যেমন রঙ ছড়াছড়ি
করে হোলী (?) ও কাদা খেলা প্রভৃতি বিজাতীয় প্রথা। এমন আড়ম্বর ও অনুষ্ঠান ইসলামে অনুমোদিত
নয়।
সুতরাং মুসলিম সাবধান! তুলে
দিন ‘আলমতালা’ নামক ঐ ‘রথতালা’কে পরিবেশ হতে। পাত্র-পাত্রীও সচেতন হও! বসবে না ঐ ‘রথতালা’তে।
ক্ষীর খাবে না এর-ওর হাতে। কে জানে ওদের হাতের অবস্থা কি? ছিঃ!
[1] (বুখারী ৩৪৮৪নং)
[2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৫নং)
[3] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৭নং)
[4] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২১০নং)
[5] (ফাতহুল বারী- ইবনে হাজার আল-আসকালানী ৯/১৪৪)
[6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং)
[7] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৭নং)
[8] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২২৬নং)
[9] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৬৮৫নং)
[2] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৫নং)
[3] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৭নং)
[4] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২১০নং)
[5] (ফাতহুল বারী- ইবনে হাজার আল-আসকালানী ৯/১৪৪)
[6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৪৬৭নং)
[7] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৭নং)
[8] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২২৬নং)
[9] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৬৮৫নং)
বিবাহের দিন
বিবাহ বন্ধন ও মজলিসের জন্য
বর, কনে ও অভিভাবক ছাড়া আর মাত্র দুটি লোকের প্রয়োজন। তাও তো মিনিট কয়েকের ব্যাপার।
কিন্তু এত বিপুল আয়োজন, এত ঘটা কিসের? এগুলো লোক প্রদর্শন নয় কি? ১০/২০টা ডুলার বিবি,
৮০/১০০টা বরযাত্রী; তাতে অমুসলিমও থাকবে! এত লোকের রাখা ও খাওয়ানোর দায়িত্ব পাত্রীপক্ষের
ঘাড়ে। কোন অধিকারে? ‘এত জন পারব না’ বললেও উপায় নেই। সমস্ত কুটুম্বের মান রাখতেই হবে।
জোর করে যাবে ১০০ জন বরযাত্রী। পাত্রীপক্ষ বাধ্য হয়েই রাজী হয়। এটা কি যুলুম নয়? যুলুম
করে কি কারো বাড়িতে নিমন্ত্রণ খাওয়া চলে? এমন পেটুকেরা কি লুটেরা নয়? কুটুম বুঝাতে
নিজে খাওয়াও। পরের ঘাড়ে কেন কুটুমের মান রাখ? নাকি ‘পরের লেজে পা পড়লে তুলোপানা ঠেকে,
আর নিজের লেজে পা পড়লে ক্যঁাক করে ডাকে।’ তাই না?
জোরের বরযাত্রী ভোর থেকেই
প্রস্ত্তত। গতকাল পাত্র-পাত্রী সোঁদা ও আটা মেখে গায়ের হলুদ তুলে (আমপাতা দেওয়া) পানিতে
গোসল করেছে। বর তার দাড়িগুলোকে বেশ তেল পারা করে চেঁছে মসৃণ গাল বের করেছে! আজ তাদের
নবজীবনের নতুন প্রভাত। চারিদিক খুশীতে ডগমগ। কিন্তু কার খেয়াল থাকে যে, ‘কারো পৌষমাস,
আর কারো বা সর্বনাশ।’ ‘কারো মোজ হয়, কেউ আমাশয় যায়।’
বর সাজানোর ধুম চলছে বাড়ির
এক প্রান্তে। (নিজের অথবা সরকারী) ভাবীরা বরকে ঘিরে পরম আদরে কপালে চুন-কুমকুমের ফোটা,
মাথায় মুকুট, গলায় ফুলের মালা, আঙ্গুলে সোনার অঙ্গুরীয়, গলায় সোনার হার, জামায় সোনার
বোতাম, গায়ে রেশমের বা হলুদ কিংবা জাফরানী রঙের রুমাল বাঁধা হচ্ছে। যার প্রত্যেকটিই
হারাম।
অন্য দিকে শাড়ি দেওয়া হয়নি
বলে বড় ভাবী রাগ করেছে; তাই ডুলার বিবি যাবে না। ছোট বুনুইকে জামা-প্যান্ট দেওয়া হয়নি
বলে রাগ করেছে; তাই বরযাত্রী যাবে না। বন্ধুকে বরযাত্রী না নিয়ে গেলে সেজো ভাইও বিয়েতে
যাবে না বলছে। ও পাড়ার সাজু রাগ করেছে, সেও বরযাত্রী যাবে না। কারণ, তার চাচাকে বরযাত্রী
বলা হয়নি তাই! ওদের সকলের রাগ মানাবার চেষ্টা চলছে।
বরকে কোলে তুলে পাল্কি বা
গাড়িতে বসালো তার বুনাই অথবা চাচাতো ভাই। মা এল তেলের ভাঁড় ও পানির বদনা হাতে ছেলের
কাছে। কয়জন মেয়ে মা-বেটাকে দিল কাপড় ঢেকে। মা ছেলের পায়ে তেল দিয়ে পানি দ্বারা
পা ধুয়ে দিল! সস্নেহে জিজ্ঞাসা করল, ‘কোথায় যাচ্ছ বাবা?’ ছেলে সত্বর জবাব দিল, ‘তোমার
জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি মা!’ এরপর গাড়ি বা পাল্কি ছুটে পাত্রীর গ্রাম বা শহরের
দিকে।
বলাই বাহুল্য যে, পূর্বের
ঐ কীর্তিগুলো ইসলামের কিছু নয়। পরন্তু পয়সা নিয়ে দাসী আনার প্রভাব বহু সংসারেই বহু
বধূর উপর পড়ে থাকে।
বরযাত্রীর গাড়ি পূর্বেই ছুটেছিল।
থামল গ্রামের বাইরে। কেউ কোত্থাও নেই। ব্যাপার কি? এত অসামাজিক পাত্রীপক্ষ! নিমন্ত্রণ
করতে বা আগে বাড়িয়ে (সংবর্ধনা জানিয়ে) নিতে আসে নি কেউ! দাওয়াত না দিলে কি কারো বাড়ি
মেহেমান যাওয়া হয়। এত নীচ ও ছোঁচা নয় বরপক্ষ। তবে জালেম নিশ্চয় বটে। কারণ, জোরপূর্বক
তো এত লোক সঙ্গে এনেছে তারা। জোর করে মেহেমান এসে আবার দাওয়াতের অপেক্ষা কেন? জালেমের
মত ঢুকে পড়, আর লুটেরার মত পেটে ভর। দোষ কি তাতে? দেশাচার তো! নির্মম শোষণ হলেই বা
ক্ষতি কি?
রাগ নিয়েই প্রবেশ করে বরযাত্রী।
কনেপক্ষ ভুল স্বীকার করে কত কষ্টে রাগ মানায়। তবুও অসংগত মন্তব্য থেকে রেহাই পায় না।
আবার এখানে তো ‘বাবু যত বলে, পারিষদ্ দলে বলে তার শতগুণ।’ কে কার মুখে হাত দেবে? যদি
বিয়ে ঘুরে যায়!
বরানুগমন হলে সসম্মানে তাকে
কোলে করে নামানো হয়। প্রথমে মসজিদে সালাম (?) অথবা দুই রাকআত নামায পড়ানো হয়। (এটি
বিদআত, অবশ্য মসজিদে গেলে বা মসজিদে বিয়ে রাখলে সকলকেই তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু’রাকআত
পড়তে হয়। প্রকাশ যে, মসজিদে বিয়ে রেখে বরযাত্রীদের ধুমপান, অসংগত কথাবার্তা প্রভৃতি
দ্বারা তার পবিত্রতা হানি করা অবশ্যই হারাম।) এরপর পীরতলায়, ইমামতলায় সালাম (?) করানো
হয়। তারপর (কোন কোন এলাকায়) শবশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে বরাসন সাত চক্র তওয়াফ করিয়ে বসানো
হয়। এই সময় নাকি কনে লুকিয়ে কোন ফাঁক থেকে বরকে দেখে (পছন্দ করে) থাকে। কিন্তু এ সময়
অপছন্দ হলেও কি বিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারবে?
অতঃপর বর আসে বিবাহ মজলিসের
‘আলম তালায়।’ বড় বিনীত হয়ে রুমাল হাতে নিয়ে ঝুঁকে বিছানায় সালাম (?) করে। কি জানি,
‘আসসালামু আলাইকুম’ ব’লে সালাম হয়তো জানেও না। এরপর কেবলা মুখে নামাযে বসার মত (প্রায়
সর্বদাই বসে)।
এই সময় অনেক জায়গায় প্যান্ডেলের
গেটে দাঁড়িয়ে দুই প্রসাধিকা যুবতী কপালে চন্দনের ফোটা দিয়ে এবং গলায় ফুলের মালা
পরিয়ে বর ও বরযাত্রী বরণ করে!
তারপর শুরু খাওয়া-দাওয়া ও
ভুঁড়িভোজন; অর্ধেক খাওয়া, অর্ধেক ফেলা। মিষ্টিখোরের দল তো গোনা-গাঁথা ৭০/৮০ টা রসগোল্লা
খাবেই। না পারলে নিংড়ে-নিচুরে, চুরি করে লঙ্কা কামড়ে বা লেবু চুসেও পেটে ভরবে। পরে
বমি হয়ে গেলেও ছাড়বে কেন? পয়সা তো লাগছে না।
এর পরেও যদি কিছু আনতে বা
দিতে একটু বিলম্ব হয় তাহলে প্লেট উবুর হবে অথবা ফেলা হবে ছুঁড়ে! আরো কত অশালীন আচরণ
এই বদ্যাত্রীদের! কিসের এত দাপ্, কেন এত বাপুত্তি অধিকার ফলানো? কারণ, হয়তো পাত্রীর
বাপ চোরের দায়ে ধরা পড়েছে তাই। কন্যাদায় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বরপক্ষের এত পায়ে
ধরা। খাইয়ে-দাইয়েও যদি তারা গালে চড়ও মারে, তবুও গাল পেতে নীরবে সহ্য করে নিতে হবে।
নচেৎ যদি বিয়ে ঘুরে যায়! নিহাতই মজবুর পাত্রীপক্ষ!
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘তোমরা পানাহার কর, কিন্তু
অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’’[1]
‘‘আর তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না। যারা অপব্যয় করে তারা অবশ্যই শয়তানের
ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’’[2]
‘‘তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির)
ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অহেতুক বিদ্রোহাচরণ
করে বেড়ায়।’’[3]
‘‘আর তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন না।’’[4]
দয়ার নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের
ভাই। কেউ কারো প্রতি যুলুম করবে না এবং কেউ কাউকে অসহায় ছেড়ে দেবে না। তাকওয়া হল হৃদয়ের
জিনিস। আর কোন মানুষের মন্দের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা করে।
পরন্তু প্রত্যেক মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হারাম করা হয়েছে।[5]
পাঠকমাত্রেই আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে, উপর্যুক্ত কর্মকান্ড ও বিভিন্ন
আচার-অনুষ্ঠানের সপক্ষে কোন সমর্থনই ইসলামে নেই। তাছাড়া পাত্রীপক্ষের প্রতি এমন অভদ্র
আচরণ শুধু ইসলাম বিরোধীই নয়; বরং অমানবিকও।
এখানে পাত্রীপক্ষেরও উচিৎ
নয় কষ্ট স্বীকার করে নাম কিনতে যাওয়া এবং অপব্যয় করে বিভিন্ন খাদ্যের ভ্যারাইটিজ প্রস্ত্তত
করা। কারণ, ‘‘অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’’[6] যেমন মেহেমানদের অসম্মান হতে না দেওয়াও
তাদের কর্তব্য।
ওদিকে ডুলার (দোলার) বিবিরাও
পর্দার ডুলি থেকে বের হয়ে বেগানা পুরুষের হাতে খাওয়া-দাওয়ার কর্তব্য (?) পালন করছে।
আর মনে মনে চিন্তা করছে ‘কে কেমন কাপড় উপহার পাবে।’ কাপড় খারাপ হলে তো রেহাই নেই।
[1] (সূরা আল-আ‘রাফ (৭) : ৩১)
[2] (সূরা আল-ইসরা (১৭) : ২৬-২৭)
[3] (সূরা আশ-শূরা (৪২) : ৪২)
[4] (সূরা আশ-শূরা (৪২) : ৪০)
[5] (মুসলিম ২৫৬৪নং)
[6] (সূরা আল-ইসরা (১৭) : ২৭)
[2] (সূরা আল-ইসরা (১৭) : ২৬-২৭)
[3] (সূরা আশ-শূরা (৪২) : ৪২)
[4] (সূরা আশ-শূরা (৪২) : ৪০)
[5] (মুসলিম ২৫৬৪নং)
[6] (সূরা আল-ইসরা (১৭) : ২৭)
বিবাহ-বন্ধন
ইসলাম এক সুশৃঙ্খল জীবন-ব্যবস্থা।
বিবাহ কোন খেলা নয়। এটা হল দু’টি জীবনের চির-বন্ধন। তাই এই বন্ধনকে সুশৃঙ্খলিত ও শক্ত
করার উদ্দেশ্যে ইসলামে রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি।
ইসলামী বিবাহ-বন্ধনের জন্য
প্রথমতঃ শর্ত হল পাত্র-পাত্রীর সম্মতি। সুতরাং তারা যেখানে বিবাহ করতে সম্মত নয় সেখানে
জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া তাদের অভিভাবকের জন্য বৈধ নয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘অকুমারীর
পরামর্শ বা জবানী অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীর সম্মতি না নিয়ে তাদের বিবাহ দেওয়া যাবে
না। আর কুমারীর সম্মতি হল মৌন থাকা।[1]
সুতরাং অকুমারীর জবানী অনুমতি
এবং কুমারীর মৌনসম্মতি বিনা বিবাহ শুদ্ধ হয় না। এই অনুমতি নেবে কনের বাড়ির লোক।
নাবালিকার বিবাহ তার অভিভাবক
দিতে পারে। হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বিবাহ হয়েছিল ৬ বছর বয়সে এবং বিবাহ-বাসর হয়েছিল ৯ বছর
বয়সে।[2] সম্মতি না নিয়ে অভিভাবক অপাত্র, ফাসেক, শারাবী, ব্যভিচারী, বিদআতী বা কোন
অযোগ্য পুরুষের হাতে তুলে দিলে মহিলা সাবালিকা হওয়ার পর নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করতে
পারে। ইচ্ছা করলে বিবাহ অটুট রেখে ঐ স্বামীর সাথেই সংসার করতে পারে, নচেৎ বাতিল
করাতেও পারে।[3]
পাত্রীর জন্য তার অলী বা
অভিভাবক জরুরী। বিনা অলীতে বিবাহ বাতিল।[4]
এই অলী হবে সাবালক, সুস্থমস্তিষ্ক
ও সুবোধসম্পন্ন সচেতন মুসলিম পুরুষ। যেমন পাত্রীর পিতা, তা না হলে দাদো, না হলে ছেলে
বা পোতা, না হলে সহোদর ভাই, না হলে বৈমাত্রেয় ভাই, না হলে আপন চাচা, নচেৎ পিতার বৈমাত্রেয়
ভাই, না হলে চাচাতো ভাই অনুরূপ নিকটাত্মীয়।
সুতরাং বৈপিত্রেয় ভাই, ভাইপো,
নানা, মামা অলী হতে পারে না। অনুরূপ মা বা অন্য কোন মহিলার অভিভাবকত্বে বা আদেশক্রমে
বিবাহ হবে না।[5] যেমন, নিকটের অলী থাকতে দূরের অলীর; যেমন বাপ থাকতে দাদোর বা দাদো
থাকতে ভায়ের অভিভাবকত্বে নারীর বিবাহ হয় না।
অনুরূপ পালয়িতা বাপ কোন অলীই
নয়। যার কোন অলী নেই তার অলী হবে কাজী।[6]
বাপ নাস্তিক বা কবরপূজারী
হলে মেয়ের অলী হতে পারে না।[7]
অভিভাবক ছাড়া নারীর বিয়ে
হয় না। যেহেতু পুরুষের ব্যাপারে তার মোটেই অভিজ্ঞতা থাকে না। আবেগ ও বিহ্বলতায়
স্বামী গ্রহণে ভুল করাটাই তার স্বাভাবিক, তাই পুরুষ অভিভাবক জরুরী। তবে
অবৈধ অভিভাবকত্ব কারো চলবে না।[8] সাধ্যমত সুপাত্র ও যোগ্য স্বামী নির্বাচন ছাড়া
খেয়াল-খুশী মত যার-তার সাথে মেয়ের বিবাহ দিতে পারে না। যেহেতু অভিভাবকত্ব এক
বড় আমানত। যা নিজের স্বার্থে যেখানে খুশী সেখানে প্রয়োগ করতে বা নিজের কাছে ভরে রাখতে
পারে না। যথাস্থানে তা পৌঁছে দেওয়া ফরয। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে
আল্লাহ ও রসূলের খেয়ানত করো না এবং তোমাদের (গচ্ছিত) আমানতেরও নয়।’’[9]
‘‘তিনি কোন খেয়ানতকারী (বিশ্বাসঘাতক)
অকৃতজ্ঞকে ভালোবাসেন না।’’[10]
‘‘আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানত তার যথার্থ মালিককে
প্রত্যর্পণ কর---।’’[11]
তাছাড়া ‘‘প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব প্রসঙ্গে কিয়ামতে
কৈফিয়ত দিতে হবে।’’[12]
সুতরাং যেমন অপাত্রে কন্যাদান
হারাম। অনুরূপ সুপাত্র পাওয়া সত্ত্বেও কন্যাদান না করাও হারাম। কন্যার সম্মতি সত্ত্বেও
নিজস্ব স্বার্থে বিবাহ না দেওয়া অভিভাবকের অবৈধ কর্তৃত্ব। অলী এমন বিবাহে বাধা
দিলে পরবর্তী ওলী বিবাহ দেবে। নচেৎ বিচার-বিবেচনার পর কাজী তার বিবাহের ভার নেবেন।[13]
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আর তোমরা যখন স্ত্রীদের
বর্জন কর এবং তারা তাদের ইদ্দত পূর্ণ করে, তখন তাদেরকে তাদের স্বামী গ্রহণ করতে বাধা
দিও না।’’[14]
ইসলামী বিবাহে আকদের সময় ২টি সাক্ষী অবশ্য জরুরী।[15]
পাত্র-পাত্রী যদি বিবাহে
কোন শর্ত লাগাতে চায় তাহলে তা লাগাতে পারে। তবে সে শর্ত যেন কোন হালালকে হারাম বা হারামকে
হালাল না করে। এরূপ হলে সে শর্ত পালন ওয়াজেব নয়। সুতরাং পাত্রপক্ষ যদি মোহর না দেওয়ার
শর্ত আরোপ করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য ও পালনীয় নয়। বরং অনেকের মতে আক্দ শুদ্ধই হবে না।
কারণ, মোহর দেওয়া ওয়াজেব, যদিও তা সামান্যই হোক না কেন। অনুরূপ যদি পাত্রীপক্ষের নিকট
থেকে কিছু (পণ) পাওয়ার শর্ত লাগিয়ে পাত্র বিবাহ করে, তবে সে শর্ত পালন পাত্রীপক্ষের
জন্য ওয়াজেব নয়।[16]
[1] (বুখারী, মুসলিম, সহীহ নাসাঈ ৩০৫৮নং, সহীহ ইবনে মাজাহ ১৫১৬নং)
[2] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২১২৯নং)
[3] (আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩৬নং)
[4] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৩৯,১৮৪০নং)
[5] (আয-যিওয়াজ, ইবনে উসাইমীন ১৬ পৃঃ)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৫)
[7] (ঐ ২৬/১৩৮)
[8] (সুলূকুল মারআতিল মুসলিমাহ, সাইয়িদী মুহাম্মদ শানক্বীত্বী ৭০পৃঃ)
[9] (সূরা আল-আনফাল (৮) : ২৭)
[10] (সূরা আল-হাজ্জ (২২) : ৩৮)
[11] (সূরা অন-নিসা (৪) : ৫৮)
[12] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৬৮৫নং)
[13] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৯নং)
[14] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩২)
[15] (ইরওয়াউল গালীল ১৮৪৪নং)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/৪৭)
[2] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ২১২৯নং)
[3] (আবু দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩১৩৬নং)
[4] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইরঃ ১৮৩৯,১৮৪০নং)
[5] (আয-যিওয়াজ, ইবনে উসাইমীন ১৬ পৃঃ)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৫)
[7] (ঐ ২৬/১৩৮)
[8] (সুলূকুল মারআতিল মুসলিমাহ, সাইয়িদী মুহাম্মদ শানক্বীত্বী ৭০পৃঃ)
[9] (সূরা আল-আনফাল (৮) : ২৭)
[10] (সূরা আল-হাজ্জ (২২) : ৩৮)
[11] (সূরা অন-নিসা (৪) : ৫৮)
[12] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৬৮৫নং)
[13] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৯নং)
[14] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩২)
[15] (ইরওয়াউল গালীল ১৮৪৪নং)
[16] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/৪৭)
আক্দ কিভাবে হয়?
মোহরাদি ধার্য ইত্যাদি হয়ে
থাকলে কাজী বা ইমাম সাহেব সূক্ষ্মভাবে খোঁজ নেবেন যে, অলী কে এবং শরয়ী কিনা? বরের চার
স্ত্রীর বর্তমানে এটা পঞ্চম বিবাহ তো নয়? বর মুসলিম তো? পাত্রী ইদ্দতের মধ্যে তো নয়?
গর্ভবতী তো নয়? পাত্রের দ্বিতীয় বিবাহ হলে পূর্বের স্ত্রীর বর্তমানে এই পাত্রী তার
বোন, ফুফু, বুনঝি বা ভাইঝি তো নয়। এই পাত্রী সধবা হয়ে কারো স্বামীত্বে নেই তো?
পাত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ হলে তার পূর্ব স্বামী যথারীতি তালাক দিয়েছে তো? পাত্রী রাজী
আছে তো? পাত্রীর কোন বৈধ শর্ত তো নেই? দু’জন সঠিক ও উপযুক্ত সাক্ষী আছে কিনা? ইত্যাদি।
অতঃপর সহীহ হাদীসসম্মত খুৎবা
পাঠ করবেন। খুতবায় উল্লেখিত আয়াত আদির অনুবাদ পাত্রকে বুঝিয়ে দেওয়া উত্তম। প্রকাশ যে,
এ খুৎবা আক্দের জন্য জরুরী নয়, সুন্নত। অতঃপর অলীকে বলতে বলবেন অথবা তার তরফ থেকে উকীল
হয়ে বরের উদ্দেশ্যে একবার বলবেন, ‘এত টাকা দেনমোহরের বিনিময়ে অমুক গ্রামের অমুকের কন্যা
অমুকের (স্পষ্ট নাম উল্লেখ করে) তোমার সাথে বিবাহ দিচ্ছি।’
পাত্র বলবে , ‘আমি এই বিবাহ
কবুল করছি।’
এরপর সকলে বরের উদ্দেশ্যে
একাকী এই দুআ করবে,
بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ.
উচ্চারণঃ- বা-রাকাল্লা-হু লাকা অবা-রাকা আলাইকা অজামাআ বাইনাকুমা ফী খাইর।
অর্থাৎ, আল্লাহ তোমার প্রতি বর্কত বর্ষণ করুন, তোমাকে প্রাচুর্য দান
করুন এবং তোমাদের উভয়কে মঙ্গলের মাঝে একত্রিত করুন।[1]
বাহ্যিক আড়ম্বরহীন ইসলামে
এইখানে বিবাহের আসল কর্ম শেষ।
জ্ঞাতব্য বিষয় যে, আক্দের
সময় কনে মাসিকাবস্থায় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। তবে সেই সময়ে বাসরশয্যায় না পাঠানোই উচিৎ।
বর বোবা হলে ইশারা ও ইঙ্গিতে
কবুল গ্রহণযোগ্য।[2] হাতের লিখা পরিচিত হলে চিঠি আদান-প্রদান করে আক্দ সম্ভব। তবে চিঠি
দেখিয়ে প্রস্তাব ও কবুলের উপর ২জন সাক্ষী রাখা জরুরী।[3] বর জ্ঞানশূন্য বা নেশাগ্রস্ত
অবস্থায় থাকলে আক্দ সহীহ নয়।[4] টেলিফোনে ধোঁকার আশঙ্কা থাকার জন্য আক্দ শুদ্ধ
নয়।[5]
পাত্র-পাত্রী দেখাদেখি না
হয়ে কোন ইজতেমায় চোখবন্ধ করে কেবল আবেগবশে বিবাহ যুক্তিযুক্ত নয়।
পাকা দলীল রাখার জন্য বিবাহের
বর, কনে, অলী, সাক্ষী প্রভৃতির নাম ও স্বাক্ষর এবং মোহর, শর্ত ইত্যাদি (কাবিল বা কবুলনামা)
লিখে নেওয়া দোষের নয়।
বরের দ্বিতীয় বিবাহ হলে প্রথমা
স্ত্রীর অনুমতি জরুরী নয়।[6]
এ ছাড়া বর্তমানের ইয্ন নেওয়ার
অনুষ্ঠান এবং উকীল ও সাক্ষী সহ কনের ইয্ন আনতে যাওয়ার ঘটার সমর্থন শরীয়তে মিলে না।
বিবাহ আক্দের জন্য সাক্ষী জরুরী, কনের ইয্নের জন্য নয়। এর জন্য কনের অভিভাবকই যথেষ্ট।
অবশ্য অভিভাবকের পক্ষ থেকে ধোঁকা বা খেয়ানতের আশঙ্কা থাকলে কাযী নিজে অথবা তাঁর প্রতিনিধি
পর্দার আড়াল থেকে কনের মতামত জানবে।
এছাড়া ইয্ন নেওয়ার জন্য কনেকে
যেখানে বসানো হবে সেখানে লাতা দেওয়া, কনেকে উল্ট করে শাড়ি-সায়া-ব্লাউজ পরানো, কনের
হাতে চুড়ি না রাখা, মাথার খোঁপা বা বেণী না বাঁধা, (অনেক এলাকায়) সুতির শাড়ি পরা জরুরী
মনে করা, কনেকে পিঁড়ের উপর মহিলা-মজলিসের মাঝে পশ্চিম-মুখে বসানো এবং পর্দার আড়াল থেকে
তিন বার ‘হুঁ’ নেওয়া, এই সময় কাঁসার থালায় গোটা পান-সুপারী (দাঁড়া-গুয়া-পান) (!) সহ
জেওর-কাপড় বিবাহ মজলিস ও কনের কাছে নিয়ে যাওয়া-আসা, বিবাহ না পড়ানো পর্যন্ত কনের মায়ের
রোযা রাখা (না খাওয়া) ইত্যাদি বিদআত ও অতিরিক্ত কর্ম।
যেমন আক্দের পর হাত তুলে
জামাআতী (সাধারণ) দুআ। আক্দের পূর্বে বা পরে মীলাদ (জামাআতী দরূদ) পড়া, বরের দুই রাকআত
নামায পড়া, উঠে মজলিসের উদ্দেশ্যে সালাম ও মুসাফাহা করা, নিজের হাতে ইমাম, উকীল ও সাক্ষীদেরকে
ওলীমাহ (?) দেওয়া, শরবত ও পান হালাল করা, আক্দে তিন-তিন বার কবুল করানো, বরকে পশ্চিমমুখে
বসানো, মাথায় টুপী জরুরী মনে করা ইত্যাদি বিদআত।[7]
বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বরকে
কলেমা পড়ানোও বিদআত এবং বরের প্রতি কুধারণা। মুসলিম হওয়ায় সন্দেহ থাকলে পূর্বেই খবর
নেওয়া দরকার। কারণ, তার সাথে কোন মুসলিম মেয়ের বিবাহ বৈধই নয়। তাছাড়া মুখে কলেমা পড়িয়ে
কাজে যেমনকার তেমনি থাকলে মুসলিম হয় কি করে? পক্ষান্তরে পাত্রী কলেমা জানে কি না, তাও
তো দেখার বিষয়? কিন্তু তা তো কই দেখা হয় না।
প্রকাশ থাকে যে, স্বামী-স্ত্রী
উভয়ে একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করলে অথবা কুফরী বা রিদ্দাহ থেকে তওবা করলে ইসলাম বা তওবার
পূর্বের বিবাহ-বন্ধন পরেও বজায় থাকবে। পক্ষান্তরে দুজনের ইসলাম বা তওবা যদি আগে-পরে
হয়, তবে সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর আগে স্বামী ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করলে তার কিতাবিয়াহ
(সাধবী ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান) স্ত্রী ছাড়া বাকী অন্য ধর্মাবলম্বী স্ত্রীর সাথে যে বৈবাহিক
সম্পর্ক ছিল, তা ছিন্ন হয়ে যাবে। অতঃপর (বিবাহের পর মিলন হয়ে থাকলে) সে তার ইদ্দতের
মাঝে ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করলে আর পুনর্বিবাহের প্রয়োজন হবে না। প্রথম বন্ধনেই
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় থাকবে। কিন্তু স্ত্রী যদি ইদ্দত পার হওয়ার পর ইসলাম
গ্রহণ বা তওবা করে, তাহলে স্বামীর কাছে ফেরৎ যাওয়ার জন্য নতুন আক্দের প্রয়োজন
হবে। অন্যথায় স্ত্রী যদি স্বামীর আগে ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করে, তাহলে তার
স্বামী যে ধর্মাবলম্বীই হোক তার পক্ষে হারাম হয়ে যাবে। অতঃপর তার ইদ্দতকালের
মধ্যে স্বামী ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করলে তাদের পূর্ব বিবাহ বহাল থাকবে। নচেৎ ইদ্দত
পার হয়ে গেলে নতুন আক্দের মাধ্যমেই স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে ফিরে পাবে।
ইমাম বা কাজীকে খুশী হয়ে
আক্দের পর কিছু উপহার দেওয়া যায়। এখানে দাবী ও জোরের কিছু নেই।[8] দাই-নাপিত বিদায়ের
সময় জোরপূর্বক পয়সা আদায়ের প্রথা ইসলামী নয়। বিবাহের সময় তাদের কোন কর্ম বা হক
নেই।[9]
কাযায়ী গ্রহণও এক কুপ্রথা।
বিশেষ করে এ নিয়ে ঝগড়া-কলহ বড় নিন্দার্হ। গ্রাম্য চাঁদা হিসাবে যদি এমন অর্থের দরকারই
হয়, তবে নিজের গ্রামের বিয়ে-বাড়ি থেকে কিছু চাঁদা বা ভাড়া নেওয়া যায়। যেটা অন্য গ্রামে
দিতে হয় সেটা নিজ গ্রামে দিলে ঝামেলা থাকে না।
বিবাহ মজলিসে বরের বন্ধু-বান্ধবদের
তরফ থেকে অশ্লীল প্রশ্নোত্তর সম্বলিত হ্যান্ড্বিল প্রভৃতি বিতরণ করা ঈমানী পরিবেশের
চিহ্ন নয়।
[1] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ১৭৫পৃঃ)
[2] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/৩৫)
[3] (ঐ ২/৩৬)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৪/৩৪২)
[5] (ঐ ৩/৩৭০)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৬৭)
[7] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৭১৪)
[8] (ইসলামী তা’লীম, আব্দুস সালাম বাস্তবী ৬২৫-৬২৬ পৃঃ)
[9] (ঐ ৬২৬ পৃঃ)
[2] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/৩৫)
[3] (ঐ ২/৩৬)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৪/৩৪২)
[5] (ঐ ৩/৩৭০)
[6] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৫/৬৭)
[7] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৭১৪)
[8] (ইসলামী তা’লীম, আব্দুস সালাম বাস্তবী ৬২৫-৬২৬ পৃঃ)
[9] (ঐ ৬২৬ পৃঃ)
আকদের পর দেশাচার
এরপর জামাইকে কোলে তুলে আনা
হয় শ্বশুর বাড়িতে। বসানো হয় সুসজ্জিত বরাসনে বা বিছানায়। বসার আগে কপালে হাত ঠেকিয়ে
‘আলমতালায়’ সালাম করে বর। নিজের শালীর তরফ হতে উপহার আসে দোলাভায়ের গলায় ফুলের
মালা, পাড়া-সম্বন্ধে শালী দেয় বিস্কুটের মালার উপহার। শালা দেয় টাকার মালা গলায় পরিয়ে।
এরপর একটা একটা করে মেয়েরা আসে এবং বিভিন্ন উপহার দিয়ে ‘জামাই দর্শন’ করে যায়। অবৈধ
হলেও দেখা দেয় জামাইকে, জামায়ের ভাই-বন্ধু-বুনাইকে! বাড়ি তখন তো খোলা-মেলা হাসপাতাল।
অনেক মহিলা আবার জামাই দেখার সময় জামাইকে চুম্বনও দেয়!
নব পরিণীতা কন্যাকে সুসজ্জিতা
করে মশারীর মত পাতলা ওড়নার পর্দায় বরের পাশে বসানো হয়; এত লোক, এত মহিলার মাঝে! চট্
করে শালীরা গাঁটছড়া বাঁধে। চিনি আনা হয়। নানী অথবা দাদী আসে। সামনে বসে কনের ডান হাতের
কনিষ্ঠা আঙ্গুল নিয়ে চিনিতে চুবিয়ে বরের অধরে স্পর্শ করায় এবং বরের ঐ আঙ্গুল নিয়ে অনুরূপ
কনের অধরে স্পর্শ করায়। অতঃপর আয়নায় এক অপরের মুখ প্রদর্শন করা হয়। বরকে নানী বা দাদী
রহস্যচ্ছলে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি দেখলে ভাই?’ বর পাকা হলে (অমাবস্যা দেখলেও) বলে ‘চাঁদ
দেখলাম।’ কিছু না বললে শিখিয়ে দেয় পাকা বুড়িরা। আর এর মাঝে পাড়ার ডাঁপালীরাও সারা মজলিস
হাসিতে ও খুশীতে মুখরিত করে তোলে।
এরপর শাশুড়ী বর-কনের পিছন
দিকে এসে দাঁড়ায়। চিনির পাত্রের এক দিকে বরের হাত অপর দিকে কনের হাত সহ নানী বা দাদী
শাশুড়ীকে সেই পাত্র তুলে দেয়। সকলে ছেড়ে দেয়, কিন্তু পাকা জামাই ছাড়ে না। উপহার চাই।
জামায়ের পাশের্ব তার চতুর বুনাই চোখ টিপে এসব শিক্ষা দেয়। শাশুড়ী কিছু টাকা ফেলে দিলেও
জামায়ের পছন্দ না হলে প্লেট না ছাড়লে চলে শাশুড়ী-জামায়ের প্লেট নিয়ে নির্লজ্জ টানাটানি!
পুনরায় কিছু টাকা বেশী পড়লে প্লেট ছাড়ে অর্থলোভী জামাই। হাসিতে মজলিস মুখরিত হয়। লজ্জায়
মুখ ঢাকে মুসলিমরা। এই নির্লজ্জতা ও ধৃষ্টতা কোন কোন মুসলিম নামধারী ঘরেও ঘটে থাকে।
অতঃপর শাশুড়ী তার জামাই-বেটি,
বিয়াই-বিয়ান ও অন্যান্যের হাত একত্রে ধরে ডুকরে কেঁদে কন্যা সঁপে দেয়; ‘উপরে খোদা আর
নামোতে দশ, এতদিন মেয়ে আমাদের ছিল। এখন তোমাদের হল। শান্তিতে রেখো। মারধোর করো না।
করলে আল্লাহ-আল্লাহর রসূলকে করা হবে----।’ যাতে রয়েছে কথার শির্ক।
এরপর কনে তোলার পালা। কনের
দোলাভাই এসে কনেকে তোলে। কিন্তু তার কাপড় বরের কাপড়ের সঙ্গে শালীরা বেঁধে রেখেছে। উপহার
ছাড়া খুলবে না। উপহারের জুয়ো খেলায় দোলাভাই একা জিতে যাবে, তা হবে না। টানাটানির পর
পছন্দমত টাকা পেলে তবেই গাঁট খোলা হয়। এর মাঝে বিয়াই-বিয়ানে ও আরো অন্যান্য উপহাসের
পাত্র-পাত্রীদের মাঝে উপহাসের কত যে ফুলঝুরি ফোটে এবং নজরবাজদের কত যে নজরবাজীর লড়াই
চলে, তা তো প্রত্যক্ষদর্শীরাই জানে। একান্ত নির্লজ্জ না হলে এমন পরিবেশ গড়া সত্যই কঠিন।
কোন কোন এলাকায় ঐ মজলিস থেকে
বর নিজে নিজ পাত্রীকে কোলে তুলে কোন নির্জন রুমে প্রবেশ করে! আরো কত রকম কীর্তি কত
এলাকায় নতুন নতুন রঙে ও ঢঙে দেখতে পাওয়া যায়। যার প্রায় সবগুলিই বিজাতির অনুকরণে অথবা
খেয়ালবশে কৃত আচার। পক্ষান্তরে মজলিসের মাঝে বর কনে একঠাঁই করাই নির্লজ্জতা ও হারাম।[1]
অতঃপর কিছু নাস্তা করে জামাই
এর হাত ধোয়া নিয়ে উপহার আব্দার করে শালা বা শালী। কি জানি ঐ জুয়াতে কে হারে আর কেই
বা জিতে?
এরপর বর-কনে উভয়কে কোলে করে
গাড়িতে তুলে বিদায় দেওয়া হয়। এর চেয়ে বড় নির্লজ্জতা আর কি হতে পারে যে, একজন সুসজ্জিতা,
সুবাসিতা, নব পরিণীতা, লাবণ্যময়ী যুবতীকে তার কোন বেগানা পুরুষ তার গায়ে হাত রেখে,
কোলে ভরে, বাহুতে চেপে গাড়িতে তুলবে বা গাড়ি থেকে নামাবে?! এটা বরেরই বা কি করে রুচি
হয়?!
বরকনে নিজে পায়ে হেঁটে গাড়ি
চাপবে-নামবে। বিকলাঙ্গ হলে মেয়েরা কেউ কনেকে এবং পুরুষে বরকে তুলবে। একান্ত যদি সম্মানের
দরকার হয় তবে এই ভাবেই কনেকে মহিলা এবং বরকে পুরুষে চড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া ঐ প্রথা বেহায়ামী
ও অবৈধ।
[1] (ফাতাওয়াল মারআহ ৪৬পৃঃ,
রাকানিঃ ৪৭পৃঃ)
কন্যা বিদায়
কন্যা বিদায় করার পূর্বে
পিতা-মাতার উচিৎ, তাকে আল্লাহ-ভীতি ও নতুন সংসারের উপর বিশেষ উপদেশ দান করা। যেমন উচিৎ
ছিল তার জীবনকে সুন্দর ও আদর্শময় করে গড়ে তোলা।
এক কন্যাকে তার মাতার উপদেশ
নিম্নরূপঃ
‘বেটী! তোমাকে যে শিক্ষা
দিয়েছি তাতে অতিরিক্ত উপদেশ নিষ্প্রয়োজন। তবুও উপদেশ বিস্মৃত ও উদাসীনকে স্মরণ ও সজাগ
করিয়ে দেয়।
বেটী! মেয়েদের যদি
স্বামী ছাড়া চলত এবং তাদের জন্য মা-বাপের ধন-দৌলত ও স্নেহ-ভালোবাসাই যদি যথেষ্ট
হত, তাহলে নিশ্চয় তোমাকে শবশুরবাড়ি পাঠাতাম না। কিন্তু মেয়েরা পুরুষ ( স্বামী)দের
জন্য এবং পুরুষরা মেয়েদের (স্ত্রী)দের জন্য সৃষ্টি হয়েছে।
বেটী! তুমি সেই পরিবেশ ত্যাগ
করতে চলেছ, যেখানে তুমি জন্ম নিয়েছ। সেই গৃহ ত্যাগ করতে চলেছ, যাতে তুমি লালিত-পালিত
হয়েছ এবং এক নতুন কুটীরে গমন করতে চলেছ, যেখানে তোমার কেউ পরিচিত নয়। এমন সঙ্গীর
সাথে বসবাস করতে যাচ্ছ, যার সাথে তোমার কোনদিন আলাপই হয়নি। সে তোমাকে তার স্বামীত্বে
নিয়ে তোমার তত্ত্বাবধায়ক ও মালিক হয়েছে। সুতরাং তুমি তার সেবিকা হয়ো, সে তোমার সেবক
হয়ে যাবে।
বেটী! স্বামীর জন্য
তোমার মায়ের এই ১০টা কথা সর্বদা খেয়াল রেখো, চিরসুখিনী হবে ইনশাআল্লাহঃ-
১- অল্পে তুষ্ট হয়ে সদা তার
নিকট বিনীতা থাকবে।
২- খেয়াল করে তার সকল কথা
শ্রবণ করবে এবং তার সকল আদেশ পালন করবে।
৩- তার চক্ষে সদাই সুদর্শনা
হয়ে থাকবে। তোমার কোন অঙ্গ ও কাজ যেন তার চক্ষে অপ্রীতিকর না হয়।
৪- তার নাকের কাছেও যেন তুমি
ঘৃণ্য না হও। বরং সদা সে যেন তোমার নিকট হতে সৌরভ-সুঘ্রাণ গ্রহণ করতে পারে। (নচেৎ,
যেন কোন প্রকারের দুর্গন্ধ না পায়।)
৫- তার নিদ্রা ও আরামের কথা
সদা খেয়াল রাখবে। কারণ, নিদ্রা ভাঙ্গার ফলে বিরক্তি ও রাগ সৃষ্টি হয়।
৬- তার আহারের কথাও সর্বদা
মনে রাখবে। যথাসময়ে খাবার প্রস্ত্তত রাখবে।
৭- তার ধন-সম্পদের হিফাযত
করবে, খেয়ানত করো না। অপচয় ও অপব্যয় করো না এবং স্বামীকে তা করতে বাধ্য করো না।
৮- তার পরিজনের যথার্থ সেবা
করবে। শত সতর্কতার সাথে সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।
৯- খবরদার! তার কোন কথার
অবাধ্য হয়ো না। নচেৎ তার হৃদয় থেকে তোমার ভালোবাসা দূর হতে থাকবে।
১০- তার কোন গোপন রহস্য ও
ভেদ কারো নিকট প্রকাশ করো না, নচেৎ তুমি তার নিকট বিশ্বাসঘাতিনী হয়ে যাবে।
আর সাবধান! স্বামী
যদি কোন বিষয়ে চিন্তিত বা শোকাহত থাকে, তবে তার সামনে কোন প্রকার আনন্দ প্রকাশ করো
না। আর যদি আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকে, তবে তার সামনে তোমার কোন শোকের কথা প্রকাশ করো
না।[1]
আদর্শ মায়ের আদর্শ উপদেশই
বটে! মানতে পারলে সুখের দাম্পত্যই লাভ হয় সৌভাগ্যবান দম্পতির।
অতঃপর বেটীজামায়ের উদ্দেশ্যে
এই দুআ পঠনীয়ঃ-
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা বা-রিক ফীহিমা, অবা-রিক লাহুমা ফী বিনা-ইহিমা।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! ওদের দু’জনের জন্য বরকত দান কর এবং ওদের বাসরে মঙ্গল
দান কর।[2]
[1] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৯)
[2] (তাবারানী, আদাবুয যিফাফ ১৭৪পৃঃ)
[2] (তাবারানী, আদাবুয যিফাফ ১৭৪পৃঃ)
বধু বরণ
নববধূ এল শ্বশুর বাড়িতে।
বাড়িতে পড়েছে হৈচৈ। এরই ফাঁকে শাশুড়ি বরণডালায় সিঁদুর, ধান, পান, চিনি, দুর্বাঘাস প্রভৃতি
নিয়ে দরজায় হাজির। জামাই (নন্দাই) নববধূকে কোলে তুলে নিয়ে এল। ইতিমধ্যে বাড়ির প্রবেশপথে
নতুন শাড়ি বিছানো হয়েছে। নববধূ আলতারাঙা পায়ে তার উপর হেঁটে বাড়িতে শুভাগমন করল। শাশুড়ীকে
দেখেই বা চিনতে পেরেই বধূ ঝুঁকে তার পায়ে হাত ঠেকিয়ে সালাম (কদমবুসি) জানাল। শাশুড়ী
উপর উপর বলল, ‘আল্লাহকে সালাম কর মা। সুখী হও!’ তারপর সিঁথিতে সিঁদুর ও মুখে চিনি দিয়ে,
ধান-ঘাস এদিক ওদিক ছড়িয়ে, বধূর গায়ে সস্নেহে হাত রেখে বাড়িতে তুলল। এ শুভক্ষণে
মুখে চিনি দিলে নাকি বধূ সংসারে চিনির মত মধুর হয়ে থাকে; যেমন সবজীর বীজ রোপনের
সময় মুখে গুড় রেখে রোপন করলে সবজী বা ফল নাকি মিষ্টি হয়!
হয়তো অনেকের বিশ্বাস হবে
না যে, মুসলিম পরিবেশেও এমন হয়ে থাকে! কারণ এগুলো নিছক বিজাতীয় আচার।
অতঃপর শরবত-পানির ধুমধাম।
কিন্তু প্রথম দিন শ্বশুরবাড়িতে খেতে নেই (?) কোন আত্মীয়র বাড়িতে খেতে হয়! তাই
খাবার সময় খাদ্যের সাথে লোহা বা কাঁচা মরিচ রেখে (?) অন্য বাড়ি হতে নিয়ে আসা হয়?
কোন কোন এলাকায় স্বামী-স্ত্রীকে
এক পাত্রে আত্মীয়-সবজন সকলের সামনে ক্ষীর-মালিদা খাওয়ানোর অনুষ্ঠানও পালিত হয়!
এর পূর্বে বা পরে শুরু হয়
‘বধূদর্শন’ বা ‘মুখ দেখা’র ধুম। উপহার-সামগ্রী সহ ছেলে-মেয়ে, বন্ধু-বান্ধব সকলেই এক
এক করে বউ দেখে, দুআ দেয়। বন্ধুরা করে কত রকম রসালাপ, ঠাট্টা ও নোংরা প্রশ্নোত্তর।
দেওর এলে ভাবীর সাথে রসালাপ করতে সুযোগ দিয়ে বড় ভাই (বর) সরে যায়!
হায়রে পুরুষ! তোমার দ্বীন,
ঈর্ষা ও পৌরুষ কোথায়?
বিবাহের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত
ভিডিও ক্যামেরা দ্বারা অথবা ফটোগ্রাফী দ্বারা স্মারক ছবি তুলে রাখায় দুই পাপ; ছবি তোলার
পাপ এবং বিভিন্ন মহিলাদেরকে দেখা ও দেখানোর পাপ।
ইসলামী প্রথায় এই (বাসরের)
দিন বা রাত্রে বিবাহের প্রচার বিধেয়। ‘দুফ্’ (আটা-চালা চালুনের মত দেখতে ঢপ্ঢপে আওয়াজবিশিষ্ট
এক প্রকার ঢোলক) বাজিয়ে ছোট ছোট বালিকা মেয়েরা শ্লীলতাপূর্ণ গীত গাইবে। কিন্তু অন্য
বাদ্যযন্ত্র দ্বারা অথবা অশ্লীল, প্রেম-কাহিনীমূলক, অসার, অর্থহীন গীত বা গান গাওয়া
ও শোনা হারাম। এই দিনে ইসলামী গজল গেয়ে আনন্দ করাই বিধিসম্মত; তবে তাতেও যেন শির্ক
ও বিদ্আতের গন্ধ না থাকে। এই খুশীতে রেকর্ডের গান, মাইকের গান, সিডি বা ভিডিওতে অশ্লীল
ছবি প্রদর্শন প্রভৃতি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।[1]
আতশ বা ফটকাবাজীও বৈধ নয়।
কারণ, আগুন নিয়ে খেলা অবৈধ, এতে বিপদের আশঙ্কা অনেক, তাছাড়া এতে অপব্যয় হয় অথচ উপকার
কিছু হয় না। উল্টে লোককে ভীত-সন্ত্রস্ত ও বিরক্ত করে তোলে। সুতরাং মুসলিম হুশিয়ার!
উল্লাসে নাচলে কোন বালিকা
বা মহিলা নাচতে পারে; তবে তা যেন কেবল মহিলার দৃষ্টিতে বিনা ঘুঙুরে পুরুষ-চক্ষুর অন্তরালে
হয় এবং অশ্লীল নাচ না হয়।[2] অবশ্য একাজ সেই মেয়েরাই পারে যাদের আত্মমর্যাদা, গাম্ভীর্য
ও শালীনতার অভাব আছে। উলুউলু দেওয়াও (আমাদের দেশে) বিজাতীয় আচরণ। মুসলিমদের জন্য সে
হর্ষধ্বনি বৈধ নয়।[3]
[1] (আদাবুয যিফাফ ১৭৯-১৮০পৃঃ)
[2] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৬৫১)
[3] (ঐ ২/৬৫০)
[2] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৬৫১)
[3] (ঐ ২/৬৫০)
শুভ বাসর
শুভ বাসর রজনী। জীবনের মধুরতম
রাত্রি। রোমাঞ্চকর পুলকময়ী যামিনী। নব দম্পতির, নব দুই প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম সাক্ষাৎ
ও প্রথম মিলনের শুভ সন্ধিক্ষণ। এই বাসর-কক্ষটি হবে মনোরম, সৌরভময়, সুসজ্জিত ও আলোকমন্ডিত।
(অবশ্য এতে অপব্যয় করা উচিৎ নয়।) কক্ষের একপাশের্ব থাকবে কিছু ফলফ্রুট, দুধ অথবা মিষ্টান্ন
ও পানি। বর ওযু করে বাসরে নব সাথীর অপেক্ষা করবে। নববধূকে ওযু করিয়ে সুসজ্জিতা ও সুরভিতা
করে ভাবীরা এবং অন্যান্য মহিলারাও এই দুআ বলবে,
উচ্চারণঃ- আলাল খাইরি অলবারাকাহ, অআলা খাইরিন তবা-ইর।
অর্থাৎ, মঙ্গল ও বর্কতের উপর এবং সৌভাগ্যের সাথে (তোমার নবজীবনের সূচনা
হোক)।[1]
অতঃপর তাকে বাসর ঘরে ছেড়ে
আসবে। পূর্ব হতেই স্বামী বাসরে থাকলে স্ত্রী সশ্রদ্ধ সালাম করে কক্ষে প্রবেশ
করবে। স্বামী সস্নেহে উত্তর দেবে এবং উঠে মুসাফাহা করে শয্যায় বসাবে। কুশলাদি
জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে ২ রাকআত নামায পড়বে। তবে স্ত্রী দাঁড়াবে
স্বামীর পশ্চাতে। মুসলিম দম্পতির নবজীবনের শুভারম্ভ হবে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের
মাধ্যমে। স্বামীর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর নামায পড়াতে তার (বৈধ বিষয়ে) আনুগত্য
করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। সুতরাং প্রথমতঃ আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিতীয়তঃ স্বামীর
আনুগত্য ও খিদমত হল নারীর ধর্ম।
অতঃপর স্বামী দুআ করবে,
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা বা-রিকলী
ফী আহ্লী, অবা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লা-হুম্মাজমা’ বাইনানা মা জামা’তা বিখাইর, অফার্রিকব
বাইনানা ইযা ফাররাকব্তা ইলা খাইর।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাকে আমার পরিবারে বর্কত ও প্রাচুর্য দান কর এবং
ওদের জন্যও আমার মাঝে বর্কত ও মঙ্গল দান কর। হে আল্লাহ! যতদিন আমাদেরকে একত্রিত রাখবে
ততদিন মঙ্গলের উপর আমাদেরকে অবিছিন্ন রেখো এবং বিছিন্ন করলে মঙ্গলের জন্যই আমাদেরকে
বিছিন্ন করো।[2]
অতঃপর উঠে শয্যায় বসে
স্বামী স্ত্রীর ললাটে হাত রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে এই দুআ পাঠ করবে;
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা
মিন খাইরিহা অখাইরি মা জাবালতাহা আলাইহি, অআঊযু বিকা মিন শার্রিহা অশার্রি মা জাবালতাহা
আলাইহ।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এর মঙ্গল এবং এর মধ্যে তোমার
সৃষ্ট প্রকৃতির মঙ্গল প্রার্থনা করছি। আর তোমার নিকট এর অমঙ্গল এবং এর মাঝে তোমার সৃষ্ট
প্রকৃতির অমঙ্গল হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।[3]
অতঃপর সপ্রেমে কোলে টেনে
নিয়ে একটা চুম্বন দিয়ে স্বামী স্ত্রীকে বলবে, ‘আমাকে পেয়ে খুশী হয়েছ তো প্রিয়ে?’
স্ত্রী লজ্জা ও ভয় কাটিয়ে
বলবে, ‘আলহামদু লিল্লাহ, খুব খুশী হয়েছি। আপনি খুশী তো?’
স্বামী বলবে, ‘আলহামদু লিল্লাহ,
শত খুশী।’
তারপর দুধ, ফল বা মিষ্টি
নিয়ে একে অপরকে খাইয়ে দেবে। এই ভাবে নববধূর মন থেকে ভয় ও লজ্জা ধীরে ধীরে দূরীভূত হবে।
উদ্বেলিত হবে প্রেমের তরঙ্গমালা।
প্রকাশ যে, একজনের পাত্রে
হাত রেখে অপরজনের খাওয়া কুপ্রথা।
এই সময় শুধু যৌন চিন্তাই
নয় বরং ভাবী জীবনের বহু পরিকল্পনার কথাও উভয়ে আলোচনা করবে। একে অপরকে বিশেষ উপদেশ ও
পরামর্শ দেবে।
আবু দারদা তাঁর স্ত্রীকে
উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘যখন আমাকে দেখবে যে, আমি রেগে গেছি, তখন তুমি আমার রাগ মিটাবার
চেষ্টা করবে। আর তোমাকে রেগে যেতে দেখলে আমিও তোমার রাগ মিটাব।’[4]
আবুল আসওয়াদ তাঁর স্ত্রীকে
বলেছিলেন, ‘প্রিয়ে আমি ভুল করে ফেললে আমার কাছে বদলা নেবার চেষ্টা না করে আমাকে ক্ষমা
করে দিও। আর আমি ক্রোধাw¦বত হয়ে কথা বললে তুমি আমার মুখের উপর মুখ দিও না। এতে আমাদের
ভালোবাসা চিরস্থায়ী ও মধুর হবে।’
এক স্ত্রী বলেছিল, ‘প্রিয়!
মেয়েদের মন ঠুনকো কাঁচের পাত্র। সামান্য (কথার) আঘাতে তাই ভেঙে যায়। তাই হয়তো
স্বামীর উপরেও মুখ চালায়। তাই একটু মানিয়ে চলবেন।’
স্বামী বলল, ‘তা ঠিক,
তাই কাঁচের টুকরা স্বামীর মর্যাদায় বিঁধে কষ্ট দেয়। তাছাড়া মেয়েদের মন কাঁচের
হলেও মুখখানা কিন্তু পাকা ইস্পাতের। তাই সব ভেঙে গেলেও মুখ অক্ষত অবস্থায় সবেগে চলমান
থাকে। অথচ মুখখানা কাঁচের ও মনখানা লোহার হলে আগুনে ঘি পড়ে না। দাম্পত্যও হয় মধুর।’
‘‘বিবাহের রঙে রাঙা আজ সব; রাঙা মন, রাঙা আভরণ,
বল নারী ‘এই রক্ত আলোকে আজ মম নব জাগরণ।’
পাপে নয় পতিপুণ্যে সুমতি
থাকে যেন হয়ো পতির সারথি
পতি যদি হয় অন্ধ হে সতী!
বেঁধোনা নয়নে আবরণ;
অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন তোমার সত্য আচরণ।’’
সতর্কতার বিষয় যে, এই রাত্রে
বা অন্য কোন সময়েও পরস্পরের পূর্বেকার ইতিহাস জানতে না চাওয়াই উভয়ের জন্য উত্তম। নচেৎ
মধুরাত্রি বিষরাত্রিতে পরিণত হবে।
উল্লেখ্য যে, বাসরে বর-কনের
কথোপকথনে কানাচি পাতা হারাম। কানাচি পেতে গোপন কথা যে শোনে, কিয়ামতে তার কানে গলিত
সীসা ঢালা হবে।[5]
নব-দম্পতির প্রেমের জোয়ার
পল্লবিত করুক তাদের জীবন ও যৌবনের উভয় কুলকে; এতে অপরের কাজ কি?
‘বাতি আনে রাতি আনার প্রীতি,
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি।
বিজন ঘরে এখন যে গায় গীতি।।
একলা থাকার গানখানি সে গা’বে
উদাস পথিক ভাবে।’
কিন্তু মিলন-তৃষ্ণার্ত
স্বামী কি ধৈর্য রাখতে চাইবে? মন তার গাইবেঃ-
‘গুণ্ঠন খোল এই নির্জনে আফোটা প্রেমের গুঞ্জ,
এনেছি পরাতে অলকে তোমার আলো ক’রে হূদিকুঞ্জ।
রত্ন প্রবাহ আনিয়া সবপনে,
সপিব তোমারে দখিনা পবনে-
মন ফাগুনের ফাগ মেখে সই নাচিবে কামনাপুঞ্জ।’
[1] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ১৭৪ পৃঃ)
[2] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ, আব্দুর রাযাযাক, মুসান্নাফ, তাবঃ, প্রভৃতি ,আদাবুয যিফাফ ৯৪-৯৬পৃঃ)
[3] (আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম , বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ৯২-৯৩পৃঃ)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৮)
[5] (বুখারী ৭০৪২নং)
[2] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ, আব্দুর রাযাযাক, মুসান্নাফ, তাবঃ, প্রভৃতি ,আদাবুয যিফাফ ৯৪-৯৬পৃঃ)
[3] (আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম , বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ৯২-৯৩পৃঃ)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৮)
[5] (বুখারী ৭০৪২নং)
মধু-মিলন
হৃদয়ের আদান-প্রদানের এই
প্রথম সাক্ষাতে যৌন-মিলন করতে চেষ্টা না করাই স্বামীর উচিৎ। অবশ্য স্ত্রী রাজী
ও প্রস্ত্তত থাকলে সে কথা ভিন্ন। স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর ইঙ্গিতে সাড়া দেওয়া।
এমন কি গোসলের পানি না থাকলেও স্ত্রীর ‘না’ করার অধিকার নেই।[1]
যেহেতু স্বামী যখন
তার স্ত্রীকে বিছানার দিকে ডাকে, তখন স্ত্রী যেতে অস্বীকার করলে এবং স্বামী রাগান্বিত
অবস্থায় রাত্রি কাটালে প্রভাতকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ স্ত্রীর উপর অভিশাপ করে থাকেন।[2]
স্ত্রী রান্নাশালে রান্নার
কাজে ব্যস্ত থাকলেও (অথবা সফরের জন্য সওয়ারীর পিঠে থাকলেও) স্বামীর ডাকে উপস্থিত
হওয়া ওয়াজেব।[3]
এই মিলনে রয়েছে সদকার সম-পরিমাণ
সওয়াব।[4]
একটানা নফল ইবাদত ত্যাগ করেও
স্ত্রী-মিলন করা ইসলামের বিধান।[5]
এই জন্যই স্বামী উপস্থিত
থাকলে তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে না।[6]
সুতরাং অন্যান্য ব্যস্ততা
ত্যাগ করে সঙ্গমের মাধ্যমে উভয়ের মনে মহাশান্তি আনয়ন একান্ত কর্তব্য।
মিলনে কেবল স্বামীর
নিজের যৌনতৃষ্ণা নিবারণই যেন উদ্দেশ্য না হয়। কেবল নিজের উত্তেজনা ও কামাগ্নি নির্বাপিত
করতে এবং স্ত্রীর মানসিক, শারীরিক, প্রভৃতি অবস্থা খেয়াল না করে অথবা তাকে উত্তেজিতা
না করে অথবা তার বীর্যস্খলন বা পূর্ণতৃপ্তির কথা না ভেবে কেবল নিজের বীর্যপাত ও তৃপ্তিকেই
প্রাধান্য দিয়ে মিলন মধু-মিলন নয়। উভয়ের পূর্ণ তৃপ্তিই হল প্রকৃত মধুর মিলন। সুতরাং
সঙ্গমের পূর্বে বিভিন্ন শৃঙ্গার; আলিঙ্গন, চুম্বন, দংশন, মর্দন প্রভৃতির ভূমিকা জরুরী।
নচেৎ স্ত্রী এই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলে তার নিকট প্রেমের কোন স্বাদই থাকবে না। পতি পেয়েও
উপপতির চিন্তায় দিনপাত করবে। অতএব সচেতন যুবক যেন এতে ভুল না করে বসে। নচেৎ বিয়ের আসল
উদ্দেশ্য (ব্যভিচার উৎখাত) বিফল হয়ে যাবে।[7]
প্রকাশ যে, শৃঙ্গারের সময়
স্ত্রীর স্তনবৃন্ত দংশন ও চোষন কোন দোষের নয়।[8]
অবশ্য একে অন্যের লজ্জাস্থান
লেহন ও চোষণ অবশ্যই ঘৃণিত আচরণ।
মিলনের জন্য কোন নির্দিষ্ট
দিন-ক্ষণ বা সময় নেই। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং মনের চাহিদা থাকলে তা করা যায়।
অবশ্য অধিক নেশায় স্বাস্থ্য হারানো উচিৎ নয়। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বিনা স্পর্শ ও যৌন
চিন্তায় যখন যৌনাঙ্গ স্ফীত হয়ে উঠে ঠিক সেই সময়েই করা উচিৎ। তবে মনে রাখার কথা যে,
একে অপরের যৌনক্ষুধা মিটাতে অসমর্থ হলে এবং যৌনবাজারে একজন গরম ও অপরজন ঠান্ডা হলে
সংসারে কলহ নেমে আসে।
যেমন সঙ্গমের নির্দিষ্ট কোন
পদ্ধতিও ইসলামে বর্ণিত হয়নি। এই সময় করলে সন্তান নির্বোধ হয়, ঐভাবে করলে সন্তান অন্ধ,
বধির বা বিকলাঙ্গ হয় ইত্যাদি কথার স্বীকৃতি ইসলামে নেই।
আল্লাহ পাক বলেন,
‘‘তোমাদের স্ত্রী তোমাদের
শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের শষ্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।[9]
অতএব সমস্ত রকমের আসন বৈধ। সমস্ত বৈধ সময়ে সঙ্গম বৈধ। অমাবস্যা-পূর্ণিমা
প্রভৃতি কোন শুভাশুভ দিন বা রাত নয়। এতে সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় না।[10]
স্ত্রীর মাসিক হলে সঙ্গম
হারাম। কারণ, এই স্রাব অশুচি। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীর নিকট সঙ্গমের জন্য
যাওয়া নিষিদ্ধ।[11]
মাসিকাবস্থায় সঙ্গম করা এক
প্রকার কুফরী।[12]
সহবাস করে ফেললে এক দ্বীনার
(সওয়া চার গ্রাম পরিমাণ সোনা অথবা তার মূল্য, না পারলে এর অর্ধ পরিমাণ অর্থ) সদকাহ
করে কাফ্ফারা দিতে হবে।[13]
এ ছাড়া এই অবস্থায় সঙ্গমে
স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যগত বিশেষ ক্ষতিও রয়েছে অনেক।[14]
অবশ্য মাসিকাবস্থায় সঙ্গম
ছাড়া অন্যান্যভাবে যৌনাচার বৈধ।[15]
যেমন, এই সময় বা অন্যান্য
সময় স্ত্রীর ঊরুমৈথুন বৈধ। এতে বীর্যপাত হলেও দোষ নেই।[16]
তবে স্ত্রীর পায়ুপথে (মলদ্বারে)
সঙ্গম হারাম। যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে অভিশপ্ত।[17] এমন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ কিয়ামতের
দিন তাকিয়েও দেখবেন না।[18] এমন কাজও এক প্রকার কুফরী।[19] সুতরাং এই সঙ্গমে স্ত্রীর
সম্মত না হওয়া ফরয।
উল্লেখ্য যে, নেফাসের অবস্থাতেও
সঙ্গম হারাম। গর্ভাবস্থায় যদি ভ্রূণের কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে খুবই
সতর্কতার সাথে বৈধ।[20]
নির্জন কক্ষে কোন পর্দার
ভিতরেই মিলন করা লজ্জাশীলতার পরিচয়। অবশ্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ
নগ্নাবস্থায় দেখতে পারে।[21]
এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও
নেই। ‘ স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রাঃ) কখনও
স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস
করলে সন্তান অন্ধ হয়। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে
সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়।[22]
পক্ষান্তরে আল্লাহ বলেন,
‘‘ওরা (স্ত্রীরা) তোমাদের
লেবাস এবং তোমরা তাদের লেবাস।’’[23]
ঘুমন্ত হলেও নিজ সন্তান বা অন্য কেউ কক্ষে থাকলে সঙ্গম করা উচিৎ নয়।
তবে শিশু একান্ত অবোধ হলে ভিন্ন কথা।
প্রকাশ যে, মেয়েদের
যৌন-মিলন না করার সাধারণ ধৈর্য-সীমা চার মাস। তাই পর্যাপ্ত কারণ
ছাড়া এবং উভয়ের সম্মত চুক্তি ব্যতীত এর অধিক সময় বিরহে কাটানো বৈধ নয়।[24]
সঙ্গমের পূর্বে নিম্নের দুআ
পাঠ কর্তব্য;
উচ্চারণঃ- বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা
মা রাযাক্বতানা
অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের নিকট থেকে
শয়তানকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তার নিকট থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।
এই দুআ পাঠ করে সহবাস করলে
উক্ত সহবাসের ফলে সৃষ্টি সন্তানের কোন ক্ষতি শয়তান করতে পারে না।[25]
প্রকাশ যে, শয়তানও মানুষের
সন্তান-সন্ততিতে অংশগ্রহণ করে থাকে; যদি সঙ্গমের পূর্বে আল্লাহর নাম না নেওয়া
হয় তাহলে।[26]
সঙ্গম বা বীর্যপাতের পর গোসল
(মাথা শুদ্ধ সর্বশরীর ধোয়া) ফরয। তবে নগ্নাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী আলিঙ্গনাদি করলে,
বীর্যপাত না হলে এবং মযী (বীর্যের পূর্বে নির্গত আঠাল তরল পদার্থ) বের হলেও গোসল ফরয
নয়। লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।
লিঙ্গাগ্র যোনী-মুখে প্রবেশ
করালে বীর্যপাত না হলেও উভয়ের উপর গোসল ফরয। অনুরূপ লিঙ্গাগ্র যোনীপথে প্রবেশ না করিয়েও
যে কোন প্রকারে বীর্যপাত করলে গোসল ফরয।[27]
স্ত্রীর ঊরু-মৈথুন করে বীর্যপাত
করলে স্বামী গোসল করবে। স্ত্রী (বীর্যপাত না হলে) গোসল করবে না। ঊরু ধুয়ে ওযু
যথেষ্ট।[28]
একাধিক বার সঙ্গম অথবা গোসল
ফরযের একাধিক কারণ হলেও শেষে একবার গোসলই যথেষ্ট।[29] স্বামী-সঙ্গম করার পর-পরই
স্ত্রীর মাসিক শুরু হয়ে গেলে একেবারে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর গোসল করতে পারে।[30] অর্থাৎ
মাসিকাবস্থায় পূর্ব-সঙ্গমের জন্য গোসল জরুরী নয়।
প্রথমে স্বামী গোসল
করে স্ত্রীর গোসল করার পূর্বে শীতে তার দেহের উত্তাপ নেওয়া কোন দোষের নয়।[31]
একই রাত্রে বা দিনে একাধিকবার
সহবাস করতে চাইলে দুই সহবাসের মাঝে ওযু করে নেওয়া উচিৎ। অবশ্য গোসল করলে আরো উত্তম।
এতে পুনর্মিলনে অধিকতর তৃপ্তি লাভ হয়।[32]
নিদ্রার পূর্বে সঙ্গম করে
ফজরের পূর্বে গোসল করতে চাইলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু অথবা তায়াম্মুম করে শয়ন করা উত্তম।[33]
অবশ্য সর্বোত্তম হলো ঘুমাবার
পূর্বেই গোসল করে নেওয়া।[34] কারণ, দীর্ঘক্ষণ নাপাকে না থাকাই শ্রেয়। তবে গোসল
না করে যেন কোন নামায নষ্ট না হয়। যেহেতু যথাসময়ে নামায আদায় করা ফরয।
রোযার দিনে স্ত্রীচুম্বন
ও শৃঙ্গারাচারে বীর্যপাত না হলে রোযা নষ্ট হয় না।[35] যদিও প্রেমকেলিতে মযী স্খলন হয়
তবুও কোন ক্ষতি নেই।[36]
স্ত্রীর হস্তমৈথুনে
বা সমকামে বীর্যপাত করলে রোযা নষ্ট হয়।[37]
স্বামী-স্ত্রী কোন
প্রকার ভুলে রোযার দিনে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়লে মনে পড়া মাত্র পৃথক হয়ে যাবে। এর জন্য
কাযা কাফ্ফারা নেই।[38]
ইচ্ছাকৃত সঙ্গম করলে তওবা,
রোযা কাযা এবং কাফ্ফারা ওয়াজেব; একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে, না পারলে (যথার্থ ওজর
ছাড়া) নিরবচ্ছিন্নভাবে দুই মাস একটানা রোযা পালন করবে, তা না পারলে ষাটজন গরীবকে (মাথাপিছু
১কিলো ২৫০ গ্রাম করে) খাদ্য (চাল) দান করতে হবে।[39]
অবশ্য স্ত্রী সম্মত না হলে
জোরপূর্বক সহবাস করলে স্ত্রীর রোযা নষ্ট হয় না।[40]
ই’তিকাফ অবস্থায় সঙ্গম বৈধ
নয়।[41]
হজ্জ করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায়
সঙ্গম করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। হজ্জের সমস্ত কাজ পূর্ণ করতে হবে, মক্কায় অতিরিক্ত
একটি উট ফিদয়াহ দিতে হবে এবং নফল হলেও ঐ হজ্জ আগামীতে কাযা করতে হবে।[42]
মিলনের গুপ্ত রহস্য বন্ধু-সখী
বা আর কারো নিকট প্রকাশ করা হারাম। স্ত্রী-সঙ্গমের কথা যে অপরের নিকট খুলে বলে সে ব্যক্তি
কিয়ামতে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ের লোকেদের দলভুক্ত হবে।[43]
এমন ব্যক্তি তো সেই শয়তানের
মত, যে কোন নারী-শয়তানকে রাস্তায় পেয়ে সঙ্গম করতে লাগে, আর লোকেরা তার দিকে চেয়ে চেয়ে
দেখে।[44]
উল্লেখ্য যে, বিবাহ-বন্ধনের
পর সারার পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ ও মিলন বৈধ।[45]
প্রকাশ থাকে যে, বাসর রাত্রির
শেষ প্রভাতে দুধ ইত্যাদি দিয়ে বাসর ঠান্ডা করার আচার ইসলামী নয়।
বরের জন্য বাসর-সকালে উঠে
বাড়িতে উপস্থিত আত্মীয়-সবজনকে সালাম দেওয়া এবং তাদের জন্য দুআ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-সবজনেরও
মুস্তাহাব, তার জন্য অনুরূপ সালাম-দুআ করা। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এমনটি করেছেন।[46]
[1] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৯৬পৃঃ)
[2] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩২নং)
[3] (নাসাঈ, ত্বাহাবী, মুশকিলুল আসার, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৭নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩৪নং)
[4] (মুসলিম, নাসাঈ)
[5] (বুখারী মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৪৫নং)
[6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৬৯নং)
[7] (অকাফাত মাআল উসরাহ, সাবরী শাহীন ৫০-৫১পৃঃ)
[8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৫৭)
[9] (সূরা বাক্বারা ২/২২৩)
[10] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ৯৯-১০০পৃঃ)
[11] (আলকুরআন কারীম ২/২২২)
[12] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১২০-১২১)
[13] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আযি ১২২পৃঃ)
[14] (তুহফাতুল আরূস, ১৩৯ পৃঃ)
[15] (মুসলিম, আবু দাঊদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২১-১২২পৃঃ)
[16] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০)
[17] (আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ)
[18] (নাসাঈ, তিরমিযী)
[19] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ১০১-১০৪পৃঃ)
[20] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ)
[21] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬)
[22] (দেখুন, তুহফাতুল আরূস, ১১৮-১১৯পৃঃ)
[23] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)
[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭৭পৃঃ)
[25] (বুখারী, আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ৯৮পৃঃ)
[26] (সূরা ইসরা (১৭) : ৬৪, তফসীর ইবনে কাসীর ৩/৫৪)
[27] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/৮৯)
[28] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০পৃঃ)
[29] (ঐ ১/১২৫পৃঃ)
[30] (ঐ ১/১২৪)
[31] (আদাবুয যিফাফ ১০৫ পৃঃ)
[32] (মুসলিম, ইবনে আবী শাইবাহ , মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তাবঃ, আদাবুয যিফাফ ১০৮পৃঃ)
[33] (আদাবুয যিফাফ ১১৩,১১৭-১১৮ পৃঃ)
[34] (ঐ১১৮পৃঃ)
[35] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৫)
[36] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১০৪)
[37] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৭)
[38] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১৩)
[39] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪১৩-৪১৪)
[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫৪২)
[41] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)
[42] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/২৩২)
[43] (ইবনে আবী শাইবাহ , মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪২ পৃঃ)
[44] (মুসনাদে আহমদ,ইবনে আবী শাইবাহ ,আবু দাঊদ,বাইহাকী,প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪৩-১৪৪ পৃঃ)
[45] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/২০৬)
[46] (নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৮-১৩৯ পৃঃ)
[2] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩২নং)
[3] (নাসাঈ, ত্বাহাবী, মুশকিলুল আসার, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৭নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩৪নং)
[4] (মুসলিম, নাসাঈ)
[5] (বুখারী মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৪৫নং)
[6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৬৯নং)
[7] (অকাফাত মাআল উসরাহ, সাবরী শাহীন ৫০-৫১পৃঃ)
[8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৫৭)
[9] (সূরা বাক্বারা ২/২২৩)
[10] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ৯৯-১০০পৃঃ)
[11] (আলকুরআন কারীম ২/২২২)
[12] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১২০-১২১)
[13] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আযি ১২২পৃঃ)
[14] (তুহফাতুল আরূস, ১৩৯ পৃঃ)
[15] (মুসলিম, আবু দাঊদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২১-১২২পৃঃ)
[16] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০)
[17] (আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ)
[18] (নাসাঈ, তিরমিযী)
[19] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ১০১-১০৪পৃঃ)
[20] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ)
[21] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬)
[22] (দেখুন, তুহফাতুল আরূস, ১১৮-১১৯পৃঃ)
[23] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)
[24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭৭পৃঃ)
[25] (বুখারী, আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ৯৮পৃঃ)
[26] (সূরা ইসরা (১৭) : ৬৪, তফসীর ইবনে কাসীর ৩/৫৪)
[27] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/৮৯)
[28] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০পৃঃ)
[29] (ঐ ১/১২৫পৃঃ)
[30] (ঐ ১/১২৪)
[31] (আদাবুয যিফাফ ১০৫ পৃঃ)
[32] (মুসলিম, ইবনে আবী শাইবাহ , মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তাবঃ, আদাবুয যিফাফ ১০৮পৃঃ)
[33] (আদাবুয যিফাফ ১১৩,১১৭-১১৮ পৃঃ)
[34] (ঐ১১৮পৃঃ)
[35] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৫)
[36] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১০৪)
[37] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৭)
[38] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১৩)
[39] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪১৩-৪১৪)
[40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫৪২)
[41] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)
[42] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/২৩২)
[43] (ইবনে আবী শাইবাহ , মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪২ পৃঃ)
[44] (মুসনাদে আহমদ,ইবনে আবী শাইবাহ ,আবু দাঊদ,বাইহাকী,প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪৩-১৪৪ পৃঃ)
[45] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/২০৬)
[46] (নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৮-১৩৯ পৃঃ)
অলীমাহ
অলীমাহ বা বউভোজ করা ওয়াজেব।[1]
যদিও বা একটি মাত্র ছাগল যবেহ করা হয়।[2] এই ভোজ অনুষ্ঠান তিন দিন পর্যন্ত করা চলে।[3]
এই ভোজের অধিক হকদার দ্বীনদার
পরহেযগার মুসলিমরা। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘মুমিন ছাড়া কারো সঙ্গী
হয়ো না এবং পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া তোমার খাদ্য যেন অন্য কেউ না খেতে পায়।’’[4]
অলীমার জন্য গোশত হওয়া জরুরী নয়। যে কোন খাদ্য দ্বারা এই মিলনোৎসব পালন
করা যায়।[5]
গরীব মানুষদের অলীমা-ভোজে
অর্থ বা খাদ্যাদি দিয়ে অংশ গ্রহণ করা ধনী মানুষদের জন্য মুস্তাহাব।[6]
এই ভোজে বেছে বেছে ধনীদেরকে
নিমন্ত্রণ করা এবং গরীব মানুষদের (যারা অপরকে খাওয়াতে পারে না তাদের)কে বাদ দেওয়া হলে
এর খাদ্য নিকৃষ্টতম খাদ্যে পরিগণিত হয়।[7]
অলীমার জন্য আমন্ত্রিত হলে
উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব। যে ব্যক্তি বিনা ওজরে এমন ভোজে উপস্থিত হয় না, সে ব্যক্তি আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের অবাধ্য।[8]
এমন কি রোযা রেখে থাকলেও
উপস্থিত হয়ে তাদের জন্য দুআ করতে হবে।[9]
রোযা নফল হলে এবং নিমন্ত্রণকারী
খেতে জোর করলে রোযা ভেঙ্গেও খেতে পারে।[10]
আর এই ভাঙ্গা রোযা কাযা করতে
হবে না। (আদাবুয যিফাফ ১৫৯পৃঃ)
কিন্তু যে অলীমা অনুষ্ঠানে
অশ্লীল বা অবৈধ কর্মকীর্তি (গান-বাজনা, ভিডিও, মদ প্রভৃতি) চলে সে অলীমায় উপস্থিত হয়ে
যদি উপদেশের মাধ্যমে তা বন্ধ করতে পারে, তবে ঐ ভোজ খাওয়া বৈধ। নচেৎ না খেয়ে ফিরে যাওয়া
ওয়াজেব। এ ব্যাপারে বহু হাদীস রয়েছে। তার দু-একটি নিম্নরূপঃ-
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে
বিশ্বাস রাখে সে যেন কখনই সেই ভোজ-মজলিসে না বসে যাতে মদ্য পরিবেশিত হয়।’’[11]
একদা হযরত আলী (রাঃ) নবী (সাঃ) কে নিমন্ত্রণ করলে তিনি তাঁর গৃহে ছবি
দেখে ফিরে গেলেন। আলী < বললেন, ‘কি কারণে ফিরে এলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার মা-বাপ
আপনার জন্য কুরবান হোক।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘গৃহের এক পর্দায় (প্রাণীর) ছবি রয়েছে।
আর ফিরিশ্তাবর্গ সে গৃহে প্রবেশ করেন না যে গৃহে ছবি থাকে।’’[12]
ইবনে মাসঊদ <-কে এক ব্যক্তি
দাওয়াত দিল। তিনি লোকটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঘরে মূর্তি (বা টাঙ্গানো ফটো) আছে
নাকি?’ লোকটি বলল, ‘হ্যাঁ আছে।’
অতঃপর সেই মূর্তি (বা ফটো)
নষ্ট না করা পর্যন্ত তিনি প্রবেশ করলেন না। দূর করা হলে তবেই প্রবেশ করলেন।[13]
ইমাম আওযাঈ বলেন, ‘যে অলীমায়
ঢোল-ত্বলা ও বাদ্যযন্ত্র থাকে সে অলীমায় আমরা হাজির হই না।’[14]
জিজ্ঞাস্য যে, পণ নেওয়া যদি
ঘুষ ও হারাম মাল নেওয়া হয়, তাহলে সেই মাল থেকে কৃত অলীমা-ভোজ খাওয়া বৈধ কি? অবশ্য যার
মাল হারাম ও হালালে সংমিশ্রিত তার নিমন্ত্রণ খাওয়ার বিষয়টিও বিতর্কিত। হারাম খাদ্য
ভক্ষণ থেকে বাঁচতে না পারলে দুআ গ্রহণযোগ্য হবে কোত্থেকে?
যারা বৈধ অলীমা খাবে তাদের
জন্য উচিৎ, খাওয়ার পর নিমন্ত্রণ খাওয়ার সাধারণ দুআ পড়া এবং বর্কতের জন্য বিশেষ দুআ
করা।[15]
‘যে দু’টি কুসুম ফুটিয়াছে আজি প্রেমের কুসুম বাগে,
নির্মল তাদের করগো প্রভু আপনার অনুরাগে।’
অলীমা বা অন্য দাওয়াত যে
খাওয়াবে তার মনে মনে এই নিয়ত হওয়া উচিৎ নয় যে, আজ যাদেরকে আমি খাওয়াচ্ছি, কাল তারা
আমাকে অবশ্যই খাওয়াবে। যেমন, যে খায় তাকেও ঋণ বা বোঝা মনে করা উচিৎ নয়। অবশ্য খাওয়ানোর
বদলে খাওয়ানো, উপহার বা উপকারের বিনিময়ে উপহার ও উপকার করা কর্তব্য। তবে তা প্রত্যেকের
নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী। না পারলে শুকরিয়া জ্ঞাপন ও দুআ করা কর্তব্য। খাওয়ানোর পর শুকরিয়া-দুআ
নিয়ে তারপর খোঁচা বা তুলনা মারার অভ্যাস নিশ্চয় মুসলিমের নয়।
বিয়ে পড়িয়ে রেখে (আকদের পর)
আসা-যাওয়া মিলনাদি হওয়ার পর বিনা অনুষ্ঠানে বউ ঘরে আনা যদি শবশুরের খরচ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে
হয়, তাহলে তা এক মহৎ কাজ। কিন্তু এতে নিজেরও খরচ বাঁচানোর উদ্দেশ্য সঠিক নয়। কারণ,
অলীমা-ভোজ (অল্প খরচে হলেও) করতেই হবে। তা হল ওয়াজেব।
অবশ্য এখানেও অপচয় বৈধ নয়।
কেননা, অপচয়কারী শয়তানের ভাই। তাছাড়া নাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে লোককে দেখিয়ে অর্থ না থাকলে
ঋণ করেও বিশাল ধুমধাম করা বৈধ নয়।[16]
পরন্তু প্রতিদ্বনিদ্বতা করে
গর্বের সাথে যে ভোজ-অনুষ্ঠান করা হয়, সে ভোজ খাওয়া নিষিদ্ধ।[17]
[1] (মুসনাদে আহমদ, তাবঃ, ত্বাহাবী , প্রভৃতি,আদাবুয যিফাফ ১৪৪পৃঃ)
[2] (বুখারী, মুসলিম, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৪৯ পৃঃ)
[3] (আবু ইয়া’লা প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৪৬ পৃঃ)
[4] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম , মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ১৬৪ পৃঃ)
[5] (আদাবুয যিফাফ ১৫১ পৃঃ)
[6] (বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি, আদাবুয যিফাফ ১৫২ পৃঃ)
[7] (মুসলিম, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৩পৃঃ)
[8] (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৪পৃঃ)
[9] (মুসলিম, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৫পৃঃ)
[10] (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৫পৃঃ)
[11] (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, হাকেম , আদাবুয যিফাফ ১৬৩-১৬৪ পৃঃ)
[12] (ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৬১পৃঃ)
[13] (বাইহাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ)
[14] (আদাবুয যিফাফ ১৬৫-১৬৬পৃঃ)
[15] (আদাবুয যিফাফ ১৬৬-১৭৫ পৃঃ)
[16] (তুহফাতুল আরূস,১১৯পৃঃ)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৬ নং)
[2] (বুখারী, মুসলিম, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৪৯ পৃঃ)
[3] (আবু ইয়া’লা প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৪৬ পৃঃ)
[4] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম , মুসনাদে আহমদ, আদাবুয যিফাফ ১৬৪ পৃঃ)
[5] (আদাবুয যিফাফ ১৫১ পৃঃ)
[6] (বুখারী, মুসলিম ইত্যাদি, আদাবুয যিফাফ ১৫২ পৃঃ)
[7] (মুসলিম, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৩পৃঃ)
[8] (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৪পৃঃ)
[9] (মুসলিম, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, বাইহাকী, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৫পৃঃ)
[10] (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৫৫পৃঃ)
[11] (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, হাকেম , আদাবুয যিফাফ ১৬৩-১৬৪ পৃঃ)
[12] (ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৬১পৃঃ)
[13] (বাইহাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ)
[14] (আদাবুয যিফাফ ১৬৫-১৬৬পৃঃ)
[15] (আদাবুয যিফাফ ১৬৬-১৭৫ পৃঃ)
[16] (তুহফাতুল আরূস,১১৯পৃঃ)
[17] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৬ নং)
অন্যান্য লোকাচার
বরযাত্রীর অর্ধেক সংখায় কনেযাত্রী
আসে বরের বাড়ি কনে-জামাই নিতে। অপ্রয়োজনে কনের বাপও এর মাধ্যমে বহু কুটুমের মান রক্ষা
বা বর্ধন করে থাকে। যাই বা হোক বরের বাপের কাছে হাফ প্রতিশোধ তো নেওয়া হয়!
কোন কোন অঞ্চলে নববধূর মাতৃলয়
যাত্রার পূর্বের রাত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে অনুষ্ঠান করে ‘চৌথী গোসল’ দেওয়া
হয়। অতঃপর স্বামী তার স্ত্রীকে কোলে তুলে কোন ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে বখশিশের
লোভে দরজা আগলে দাঁড়ায় স্বামীর কিংবা স্ত্রীর কোন উপহাসের (?) পাত্র বা পাত্রী।
বখশিশ পেলে তবেই দরজা ছাড়া হয়!
বিদায়ের পূর্বে বধূ সকলের
হাতে মিষ্টি, চিনি বা (পিতৃলয় হতে আসা) গুড় বিতরণ করে। এতে সে নাকি সকলের কাছে মিষ্টি-মধুর
হয়ে সংসার করতে পারে! অতঃপর এগানা-বেগানা সকলের পা স্পর্শ করে অথবা সালাম মুসাফাহা
করে বিদায় ও দুআ নেয়। অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পায়ে সালাম নেওয়ার সময় ‘আল্লাহকে সালাম কর
মা’ ব’লে থাকে। কিন্তু তা যে হারাম, তা কেউ তাকে জানায় না। বরং না করলে বধূর বেআদবীর
চর্চা হয়ে থাকে!
অতঃপর কনে সহ জামাই শ্বশুর
বাড়িতে গেলে প্রথম সাক্ষাতে শালী বা শালাজদের তরফ হতে মজাকের এক কঠিন পরীক্ষার আপ্যায়ন
গ্রহণ করতে হয়। ‘ট্রে’-তে উবুড় করা গ্লাসে শরবত-পানি, তা জামাইকে সিধা করে পান করতে
হয়। অথবা লবণ, চিনি ও সাদা পানির রঙিন শরবত; তাকে সঠিক শরবত চিনে খেতে হয়! এখান হতেই
শুরু হয় উপহাসের পাত্র-পাত্রীদের সামনা-সামনি হাসি-আমোদ ও মান-অপমানের মাধ্যমে পরিবেশ
নোংরা করার পালা। যে উপহাস স্বামী-স্ত্রীতে করলে বুড়িরা বলে, ‘ছিঃ ছিঃ একেবারে
বউ পাগলা! কথায় বলে, দিনে ভাশুর আর রাতে পুরুষ!’
এরপর শুরু হয় অষ্টমঙ্গলা।
অষ্টমঙ্গলার সাজ-পোশাক নিয়ে রাগ-অনুরাগ। অনুরূপ ন’দিন, হলুদ মঙ্গলা, ঢেঁকি মঙ্গলা,
বাদগস্তি, খ্যান প্রভৃতি বিজাতীয় আচার ও অনুষ্ঠান!
এ ছাড়া রয়েছে হানিমুন ও বিবাহ-বার্ষিকী
পালন---যা পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে তথাকথিত সভ্যশ্রেণীর মানুষেরা ক’রে অর্থের অপচয়
ঘটিয়ে থাকে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুরূপ
আচরণ ক’রে থাকে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত।’[1]
[1] (ফাতাওয়াল মারআহ ৫০পৃঃ, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৫৯)
দাম্পত্য ও অধিকার
‘‘এ জগতে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষমী নারী।’’
নারী পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী,
সমাজের সচল জোড়া চাকার অন্যতম। পরিবারের ভিত্তি ও শিক্ষার প্রথম স্কুল এই নারী। প্রত্যেক
মহান পুরুষের পশ্চাতে কোন না কোন নারী লুক্কায়িত থাকে অথবা পুরুষের মহত্বের পিছনে এই
নারীর হাত অবশ্যই থাকে।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী
উভয়েই উভয়ের মুখাপেক্ষী। প্রত্যেকের সব-সব অধিকার রয়েছে অপরের উপর। ইসলামে এই হল ভারসাম্যমূলক
পারস্পরিক সহায়তাভিত্তিক প্রেম-প্রীতির সুন্দরতম জীবন ব্যবস্থা।
মানুষ হিসাবে সমান অধিকার
সকলের। কিন্তু তাহলেও সমাজে সুশৃঙ্খলার জন্য নেতা ও মান্যব্যক্তির বিশেষ প্রয়োজন। নচেৎ
স্বাই ‘মোড়ল’ হলে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। নারী-পুরুষের ভূমিকা সমান হলেও নারীর
উপর পুরুষের কর্তৃত্ব রয়েছে। নারী জাতিকে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরূপে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর
ঘোষণাঃ-
অর্থাৎ, ‘‘তারা তোমাদের পোশাক
এবং তোমরা তাদের পোশাক।’’[1]
‘‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের।
কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছু মর্যাদা আছে।’’[2]
‘‘পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ
আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ শ্রেষ্ঠত্ব এজন্য যে, পুরুষ
(তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে থাকে।’’[3]
সুতরাং নারী পুরুষদের নেত্রী হতে পারে না। নেতার অর্ধাঙ্গিনী, রানী
বা রাজমাতা হয়েই তো নারীর বিরাট গর্ব।
‘অতএব জাগো জাগো গো ভগিনী,
হও বীরজায়া বীর-প্রসবিনী।’
ইবাদতেও স্বামী স্ত্রীর
ইমাম। স্বামী অশিক্ষিত এবং স্ত্রী পাকা হাফেয-কবারী হলেও ইমামতি স্বামীই
করবে।[4]
পরন্তু স্ত্রী স্বামীর
পশ্চাতে দাঁড়িয়ে (জামাআত করে) নামাজ পড়বে।[5]
স্বামীর উপর স্ত্রীর
অনস্বীকার্য অধিকারঃ-
স্বামীর উপর স্ত্রীর
বহু অধিকার আছে, যা পালন করা স্বামীর পক্ষে ওয়াজেব। সেই সমস্ত অধিকার নিম্নরূপঃ-
১- আর্থিক অধিকারঃ-
ক- স্বামী
বিবাহ-বন্ধনের সময় বা পূর্বে যে মোহর স্ত্রীকে প্রদান করবে বলে অঙ্গীকার করেছে তা পূর্ণভাবে
আদায় করা এবং তা হতে স্ত্রীকে বঞ্চিতা করার জন্য কোন প্রকার টাল-বাহানা না করা। মহান
আল্লাহ বলেন,
‘‘সুতরাং তাদেরকে তাদের ফরয
মোহর অর্পণ কর।’’[6]
খ- আর্থিক অবস্থানুযায়ী স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করা। নিজে যা
খাবে তাকে খাওয়াবে এবং যা পরিধান করবে ঠিক সেই সমমানের লেবাস তাকেও পরিধান করাবে।[7]
অবশ্য নেকীর নিয়তে এই ব্যয়িত
অর্থ স্বামীর জন্য সদকার সমতুল্য হবে।[8]
অন্যান্য সকল ব্যয়ের চেয়ে
স্ত্রীর পশ্চাতে ব্যয়ের নেকীই অধিক।[9]
এমন কি তাকে এক গ্লাস পানি
পান করালেও তাতে নেকী লাভ হয় স্বামীর।[10]
২- ব্যবহারিক অধিকারঃ-
ক- স্ত্রীর সাথে
সদ্ভাবে বাস করা ওয়াজেব। দুই-একটি গুণ অপছন্দ হলেও সদাচার ও সদ্ব্যবহার বন্ধ করা মোটেই
উচিৎ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আর তাদের সাথে সদ্ভাবে
জীবন-যাপন কর। তোমরা যদি তাদেরকে ঘৃণা কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা যা ঘৃণা করছ,
আল্লাহ তার মধ্যেই প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’’[11]
সুতরাং সদ্ভাব ফুটিয়ে তুলতে স্বামী সর্বদা নিজের প্রেমকে স্ত্রীর
মনের সিংহাসনে আসীন করে রাখবে। তাকে সুন্দর প্রেমময় নামে ডাকবে, সে যা চায় তাই তাকে
সাধ্যমত প্রদান করবে। হৃদয়ের বিনিময়ে হৃদয় এবং শক্তি নয় বরং ভক্তি দ্বারাই সাথীর
মন জয় করা কর্তব্য।
স্ত্রীর মন পেতে হলে আগে
প্রেম দিতে হবে। ‘একটি পাখীকে ধরতে হলে তাকে ভয় দেখানো চলে না। তাকে আদর ক’রে, ভালোবাসা
দিয়ে কাছে আনতে হয়। অতঃপর একদিন সে আপনিই পোষ মেনে নেয়। কারণ, স্নেহ ও ভালোবাসা বড়ই
পবিত্র জিনিস।’
স্ত্রীর নিকট তার মাতৃলয়ের
প্রশংসা করবে। সময় মত তাকে সেখানে নিয়ে যাবে বা যেতে-আসতে দেবে।
কোন কারণে স্ত্রী রেগে গেলে
ধৈর্য ধরবে। মুর্খামি করলে সহ্য করে নেবে। যেহেতু পুরুষ অপেক্ষা নারীর আবেগ ও প্রতিক্রিয়া-প্রবণতা
অধিক এবং পুরুষের চেয়ে নারীর ধৈর্য বহুলাংশে কম। সুতরাং দয়া করেই হোক অথবা ভালোবাসার
খাতিরেই হোক তার ভুল ক্ষমা করবে। ‘যত ভুল হবে ফুল ভালোবাসাতে।’ তার ছোটখাট ত্রুটির
প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবে না। অনিচ্ছাকৃত ভুলের উপর তাকে চোখ রাঙাবে না। অন্যায় করলে অবশ্য
শাসন করার অধিকার তার আছে। তবে-
‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে,
ত্রুটির উপর প্রীতির সাথে সহন ধরে সে।’
তাছাড়া ভুল হওয়া মানুষের
প্রকৃতিগত সবভাব। ভুল-ত্রুটি দিয়ে সকলেরই জীবন গড়া। কিন্তু সেই ভুলকে প্রাধান্য দিয়ে
বাকী জীবনে অশান্তি ডেকে আনার কোন যুক্তি নেই।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘তোমরা নারীদের জন্য হিতাকাঙক্ষী
হও। কারণ, নারী জাতি বঙ্কিম পঞ্জরাস্থি হতে সৃষ্ট। আর তার উপরের অংশ বেশী বঙ্কিম (সুতরাং
তাদের প্রকৃতিই বঙ্কিম ও টেরা।) অতএব তুমি সোজা করতে গেলে হয়তো তা ভেঙ্গেই ফেলবে। আর
নিজের অবস্থায় উপেক্ষা করলে বাঁকা থেকেই যাবে। অতএব তাদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’[12]
সুতরাং স্ত্রীর নিকট থেকে যত বড় আদর্শের ব্যবহারই আশা করা যাক না কেন,
তার মধ্যে কিছু না কিছু টেরামি থাকবেই। সম্পূর্ণভাবে স্বামীর মনে অঙ্কিত সরল
পথে সে চলতে চাইবে না। সোজা করে চালাতে গেলে হাড় ভাঙ্গার মত ভেঙ্গে যাবে; অর্থাৎ মন
ভেঙ্গে দাম্পত্য ভেঙে (তালাক হয়ে) যাবে।[13]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘কোন মু’মিন পুরুষ যেন কোন
মু’মিন স্ত্রীকে ঘৃণা না বাসে। কারণ সে তার একটা গুণ অপছন্দ করলেও অপর
আর একটা গুণে মুগ্ধ হবে।’’[14]
সুতরাং পূর্ণিমার সুদর্শন চন্দ্রিমারও কলঙ্ক আছে। সুদর্শন সৌরভময় গোলাপের
সাথেও কণ্টক আছে। গুণবতীর মধ্যেও কিছু ত্রুটি থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
কথিত আছে যে, একদা এক ব্যক্তি
তার ঠোঁটকাটা স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে হযরত উমারের নিকট উপস্থিত হয়ে বাড়ির দরজায় তাঁকে
ডাক দিয়ে অপেক্ষা করতেই শুনতে পেল হযরত ওমরের স্ত্রীও তাঁর সাথে কথা-কাটাকাটি করছেন
এবং তিনি নীরব থেকে যাচ্ছেন। লোকটি আর কোন কথা না বলে প্রস্থান করতে করতে মনে মনে বলতে
লাগল, ‘আমীরুল মু’মিনীনের যদি এই অবস্থা হয় অথচ তিনি খলীফা, কত কড়া মানুষ, তাহলে আমার
আর কি হতে পারে?’ হযরত উমার দরজায় এসে লোকটিকে যেতে দেখে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার
প্রয়োজন না বলেই তুমি চলে যাচ্ছ কেন?’ লোকটি বলল, ‘যার জন্য এসেছিলাম তার জবাব আমি
পেয়ে গেছি হুজুর! আমার স্ত্রী আমার সাথে লম্বা জিভে কথা বলে। তারই অভিযোগ নিয়ে আপনার
কাছে এসেছিলাম। কিন্তু দেখছি আপনারও আমার মতই অবস্থা?’ উমার বললেন, ‘আমি সহ্য করে নিই
ভাই! কারণ, আমার উপর তার অনেক অধিকার আছে; সে আমার খানা পাক করে, রুটি তৈরী করে, কাপড়
ধুয়ে দেয়, আমার সন্তানকে স্তনদুগ্ধ পান করিয়ে লালন-পালন করে, আমার হৃদয়ে শান্তি আনে,
ইত্যাদি। তাই একটু সহ্য করে নিই।’ লোকটি বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন! আমার স্ত্রীও তো অনুরূপ।’
উমার বললেন, ‘তবে সহ্য করে নাও গে ভাই! সে তো সামান্যক্ষণই রাগান্বিতা থাকে।’
সুতরাং সুন্দর সৌরভময় গোলাপ
তুলে তার সুঘ্রাণ নিতে হলে দু-একটা কাঁটা হাতে-গায়ে ফুঁড়বে বৈ কি? কাঁটার জন্য কেউ
কি প্রস্ফুটিত গোলাপকে ঘৃণা করে? নারী গোলাপের মত সুন্দর ও কোমল বলেই কাঁটার ন্যায়
কথা দ্বারা নিজেকে রক্ষা করতে চায়।[15]
পক্ষান্তরে রাগের মাথায় একজন
পুরুষকে ক্ষান্ত করতে হলে তার বিবেক-বুদ্ধির খেই ধরে, একজন নারীকে ক্ষান্ত করতে হলে
তার হৃদয় ও আবেগের খেই ধরে এবং সমাজকে ক্ষান্ত করতে হলে তার প্রকৃতিকে জাগ্রত
করে সফল হওয়া যায়। তাছাড়া ‘স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কোন লাভও নেই; আঘাত করলেও কষ্ট,
আর আঘাত পেলেও কষ্ট।’
স্ত্রী কোন ভাল কথা বললে
উপেক্ষার কানে না শুনে খেয়ালের সাথে শোনা, কোন উত্তম রায়-পরামর্শ দিলে তা সাদরে গ্রহণ
করাও সদ্ভাবে বাস করার শামিল।
যেমন, তার সাথে হাসি-তামাসা
করা, সব সময় পৌরুষ মেজাজ না রেখে কোন কোন সময় তার সাথে বৈধ খেলা করা, শরীরচর্চা বা
ব্যায়ামাদি করা ইত্যাদিও স্বামীর কর্তব্য। প্রিয় নবী (সাঃ) স্ত্রী আয়েশার সাথে
দৌড় প্রতিযোগিতা করে একবার হেরেছিলেন ও পরে আর একবারে তিনি জিতেছিলেন।[16]
তদনুরূপ স্ত্রীকে কোন বৈধ
খেলা দেখতে সুযোগ দেওয়াও দূষণীয় নয়।[17] তবে এসব কিছু হবে একান্ত নির্জনে, পর্দা-সীমার
ভিতরে।
স্ত্রী ভালো খাবার তৈরী করলে,
সাজগোজ করলে বা কোন ভালো কাজ করলে তার প্রশংসা করবে স্বামী। এমনকি স্ত্রীর হৃদয়কে লুটে
নেওয়ার জন্য ইসলাম মিথ্যা বলাকেও বৈধ করেছে।[18] তবে যে মিথ্যা তার অধিকার হরণ করে
ও তাকে ধোঁকা দেয়, সে মিথ্যা নয়।
সদ্ভাবে বাস করতে চাইলে
স্বামী স্ত্রীর গৃহস্থালি কর্মেও সহায়তা করবে। এতে স্ত্রীর মন স্বামীর
প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রেমে আরো পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রিয় নবী (সাঃ); যিনি দুজাহানের বাদশাহ
তিনিও সংসারের কাজ করতেন। স্ত্রীদের সহায়তা করতেন, অতঃপর নামাযের সময় হলেই মসজিদের
দিকে রওনা হতেন।[19]
তিনি অন্যান্য মানুষের মত
একজন মানুষ ছিলেন; সবহস্তে কাপড় পরিষ্কার করতেন, দুধ দোয়াতেন এবং নিজের খিদমত নিজেই
করতেন।[20]
স্বামী যেমন স্ত্রীকে সুন্দরী
দেখতে পছন্দ করে তেমনি স্ত্রীও স্বামীকে সুন্দর ও সুসজ্জিত দেখতে ভালোবাসে। এটাই
হল মানুষের প্রকৃতি। সুতরাং স্বামীরও উচিৎ, স্ত্রীকে খোশ করার জন্য সাজগোজ করা।
যাতে তারও নজর অন্য পুরুষের ( স্বামীর কোন পরিচ্ছন্ন আত্মীয়ের) প্রতি আকৃষ্ট না হয়।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য সাজসজ্জা করি, যেমন সে আমার জন্য সাজসজ্জা
করে।’ আর আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
‘‘নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত
অধিকার আছে, যেমন তাদের উপর আছে পুরুষদের--।’’[21]
বলাই বাহুল্য যে, এই অবহেলার ফলেই বহু আধুনিকা স্বামী ত্যাগ করে
অথবা অন্যাসক্তা হয়ে পড়ে।
খলীফা উমার <-এর নিকট
একটি লোক উষ্কখুষ্ক ও লেলাখেপা বেশে উপস্থিত হল। সঙ্গে ছিল তার স্ত্রী। স্বামীর
বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তার নিকট থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করল। দূরদর্শী খলীফা সব
কিছু বুঝতে পারলেন। তিনি তার স্বামীকে পরিচ্ছন্নতা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে
দিলেন। অতঃপর সে তার চুল, নখ ইত্যাদি কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ফিরে এলে তিনি তাকে
তার স্ত্রীর নিকট যেতে আদেশ করলেন। স্ত্রী পরপুরুষ ভেবে তাকে দেখে সরে যাচ্ছিল। পরক্ষণে
তাকে চিনতে পেরে তালাকের আবেদন প্রত্যাহার করে নিল!
এ ঘটনার পর খলীফা উমার
< বললেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীর জন্য সাজসজ্জা কর। আল্লাহর কসম! তোমরা যেমন তোমাদের
স্ত্রীগণের সাজসজ্জা পছন্দ কর; অনুরূপ তারাও তোমাদের সাজসজ্জা পছন্দ করে।[22]
স্ত্রীর এঁটো খাওয়া অনেক
স্বামীর নিকট অপছন্দনীয়। কিন্তু শরীয়তে তা স্বীকৃত। রসূল (সাঃ) পান-পাত্রের ঠিক
সেই স্থানে মুখ রেখে পানি পান করতেন, যে স্থানে হযরত আয়েশা (রাঃ) মুখ লাগিয়ে পূর্বে
পান করতেন। যে হাড় থেকে হযরত আয়েশা গোশ্ত ছাড়িয়ে খেতেন, সেই হাড় নিয়েই ঠিক সেই জায়গাতেই
মুখ রেখে আল্লাহর নবী (সাঃ) গোশ্ত ছাড়িয়ে খেতেন।[23]
তাছাড়া স্ত্রীর রসনা ও ওষ্ঠাধর
চোষণের ইঙ্গিতও শরীয়তে বর্তমান।[24]
এমন প্রেমের প্রতিমার এঁটো
এবং চুম্বন তারাই খেতে চায়না, যারা একান্ত প্রেমহীন নীরস পুরুষ অথবা যাদের স্ত্রী অপরিচ্ছন্ন
ও নোংরা থাকে তারা অথবা যাদের নিকট কেবল লৈঙ্গিক যৌনসম্ভোগই মূল তৃপ্তি।
স্ত্রীকে বিভিন্ন উপলক্ষে
(যেমন ঈদ, কুরবানী প্রভৃতিতে) ছোটখাট উপহার দেওয়াও সদ্ভাবে বাস করার পর্যায়ভুক্ত। এতেও
স্ত্রীর হৃদয় চিরবন্দী হয় স্বামীর হৃদয় জেলে।
মোট কথা স্ত্রীর সাথে বাস
তো প্রেমিকার সাথে বাস। সর্বতোভাবে তাকে খোশ রাখা মানুষের প্রকৃতিগত সবভাব। প্রেমিককে
কষ্ট দেওয়া কোন মুসলিম, কোন মানুষের, বরং কোন পশুরও কাজ নয়।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি
সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি নিজ স্ত্রীর নিকট তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি।’’[25]
‘‘সবার চেয়ে পূর্ণ
ঈমানদার ব্যক্তি সে, যার চরিত্র স্বার চেয়ে সুন্দর এবং ওদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম
ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’’(আহমদ)
‘‘সাবধান! তোমরা নারী (স্ত্রী)দের জন্য মঙ্গলকামী হও। যেহেতু তারা তো
তোমাদের হাতে বন্দিনী।’’[26]
‘‘তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে
ভয় কর। যেহেতু তাদেরকে তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বরণ করেছ এবং আল্লাহর
বাণীর মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান হালাল করে নিয়েছ।’’[27]
অবশ্যই স্ত্রীর যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করার নাম ‘আঁচল ধরা’
বা ‘বউ পাগলামি’ নয়।
খ- স্বামীর
উপর স্ত্রীর অন্যতম অধিকার এই যে, বিপদ আপদ থেকে স্বামী তাকে রক্ষা করবে। স্ত্রীকে
রক্ষা করতে গিয়ে যদি স্বামী শত্রুর হাতে মারা পরে, তবে সে শহীদের দর্জা পায়।[28]
অনুরূপ স্ত্রীকে জাহান্নাম
থেকে রক্ষা করাও তার এক বড় দায়িত্ব। তাকে দ্বীন, আকীদা, পবিত্রতা, ইবাদত, হারাম, হালাল,
অধিকার ও ব্যবহার প্রভৃতি শিক্ষা দিয়ে সৎকাজ করতে আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দিয়ে আল্লাহর
আযাব থেকে রেহাই দেবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে
এবং নিজ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও; যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর --।’’[29]
গ- স্ত্রীর ধর্ম, দেহ, যৌবন ও মর্যাদায় ঈর্ষাবান
হওয়া এবং এ সবে কোন প্রকার কলঙ্ক লাগতে না দেওয়া স্বামীর উপর তার এক অধিকার।
সুতরাং স্ত্রী এক উত্তম সংরক্ষণীয় ও হিফাজতের জিনিস। লোকের মুখে-মুখে, পরপুরুষদের চোখে-চোখে
ও যুবকদের মনে-মনে বিচরণ করতে না দেওয়া; যাকে দেখা দেওয়া তার স্ত্রীর পক্ষে হারাম তাকে
সাধারণ অনুমতি দিয়ে বাড়ি আসতে-যেতে না দেওয়া সুপুরুষের কর্ম।
আর এর নাম রক্ষণশীলতা বা
গোঁড়ামী নয়। বরং এটা হল সুপুরুষের রুচিশীলতা ও পবিত্রতা। নারী-সবাধীনতার নামে যারা
এই বল্গাহীনতা ও নগ্নতাকে ‘প্রগতি’ মনে ক’রে আল্লাহ-ভক্তদের ‘গোঁড়া’ বলে থাকে, শরীয়ত
তাদেরকেই ‘ভেঁড়া’ বলে আখ্যায়ন করে। আর ‘ভেঁড়া’ বা স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষাহীন
পুরুষ জান্নাতে যাবে না।[30]
নিজের ইচ্ছামত এ ঘর-ও ঘর,
এ পাড়া-ও পাড়া, এ মার্কেট সে মার্কেট যেতে স্বামী তার স্ত্রীকে বাধা দেবে। কোন
প্রকার নোংরামী, অশ্লীলতা, গান-বাজনা, সিনেমা-থিয়েটারে নিজে যাবে না, স্ত্রীকেও যেতে
দেবে না। নোংরা টেলিভিশন ও ভিডিও বাড়িতে রাখবে না। রেডিওতে গান-বাজনা শুনতে দেবে না।
পর্যাপ্ত কারণ বিনা এবং আপোসের চুক্তি ও সম্মতি ছাড়া চার মাসের অধিক স্ত্রী ছেড়ে বাইরে
থাকবে না। যেহেতু পুরুষের যৌনপ্রবৃত্তি যেমন, ঠিক তেমনি নারীরও। পুরুষের যেমন নারীদেহ
সংসর্গলাভে পরমতৃপ্তি, অনুরূপ নারীও পুরুষের সংসর্গ পেয়ে চরম তৃপ্তি উপভোগ করে থাকে।
অতএব প্রেমে অনাবিলতা বজায় রাখতে নারীকে হিফাযত করা পুরুষের জন্য ফরয এবং তা এক সুরুচিপূর্ণ
কর্ম। পানি বা শরবতে সামান্য একটা পোকা বা মাছি পড়লে তা পান করতে কারো রুচি হয় না;
আর নিজ স্ত্রীর সৌন্দর্য ও প্রেমে অপরের কাম বা কুদৃষ্টি, মন্তব্যের মুখ ও কামনার মন
পড়লে তাতে কি করে রুচি হয় সুপুরুষের? সুতরাং যে পুরুষের অনুরূপ সুরুচি নেই সে কাপুরুষ
বৈ কি?
হিজরী ২৮৬ সনে ‘রাই’এর কাযীর
নিকট এক মহিলা মুকাদ্দামা দায়ের করল। তার অভিভাবকের সাথে মিলে স্বামীর বিরুদ্ধে
সে তার মোহরানা বাবদ ৫০০ দিরহাম আদায় না দেওয়ার অভিযোগ করল। কাযী সাক্ষী তলব করলে সাক্ষী
উপস্থিত করা হল। কিন্তু সাক্ষিদাতারা মহিলাটিকে চেনার জন্য তার চেহারা দেখাতে অনুরোধ
জানালো। এ খবর স্বামীর কানে গেলে কাযীর সামনে বলল, ‘আমি স্বীকার করছি যে, ৫০০
দিরহাম আমার স্ত্রীর পাওনা। আমি যথাসময়ে তাকে তা আদায় করে দেব। সাক্ষীর দরকার নেই।
ও যেন চেহারা না খোলে!’
এ খবর স্ত্রীর নিকট গেলে
সেও আল্লাহ অতঃপর কাযীকে সাক্ষী রেখে বলল, ‘আমিও আমার স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্য
উক্ত মোহরানার দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ওকে ক্ষমা করে
দিচ্ছি!’
এ শুধু এ জন্য যে, পর্দার
মান ও মূল্য আছে নারীর কাছে, আর স্বামীর আছে যথাযথ ঈর্ষা। তাই চেহারা খুলে বেআবরু
করতে সকলেই নারাজ। এটাই তো সুরুচিপূর্ণ মুসলিম দম্পতির পরিচয়।
একটি সত্য কথা এই যে, মহিলা
ঈর্ষাবান পুরুষকে অপছন্দ করে। কিন্তু যে তার ব্যাপারে ঈর্ষাবান নয়, তাকে সে আরো বেশী
অপছন্দ করে।
স্ত্রীকে খামাখা সন্দেহ করাও
স্বামীর উচিৎ নয়। বৈধ কর্মে, চিকিৎসার জন্য বা অন্যান্য জরুরী কাজের জন্য পর্দার
সাথে যেতে না দিয়ে তাকে অর্গলবদ্ধ করে রাখাই হল অতিরঞ্জন ও গোঁড়ামী। তাছাড়া এমন অবরোধ
প্রথায় ইসলামের কোন সমর্থন নেই।
পক্ষান্তরে স্ত্রীকে সন্দেহ
করলে দাম্পত্য জীবন তিক্ত হয়ে উঠে। কারণ দাম্পত্য সুখের জন্য জরুরী; স্বামী-স্ত্রীর
উভয়ের আমানতদারী, হিতৈষিতা, সত্যবাদিতা, অন্তরঙ্গতা, অনাবিল প্রেম, বিশ্বস্ততা, নম্রতা,
সুস্মিত ব্যবহার ও বাক্যালাপ, একে অপরের গুণ স্বীকার। আর সন্দেহ এসব কিছুকে ধবংস করে
ফেলে। কারণ সন্দেহ এমন জিনিস যার সূক্ষমতম শিকড় একবার মনের মাটিতে সঞ্চালিত হয়ে গেলে
তাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না টেনে-ছিঁড়ে ফেলা হয়, ততক্ষণ সে প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করতে থাকে
এবং সম্প্রীতি ও সুখের কথা ভাবতেই দেয় না।
এই সন্দেহের ফলশ্রুতিতেই
বহু হতভাগা স্বামী তাদের স্ত্রীদেরকে ভাতের চাল পর্যন্ত তালাবদ্ধ রেখে রান্নার
সময় মেপে রাঁধতে দেয়! বলাই বাহুল্য যে, কথায় কথায় এবং কাজে কাজে স্ত্রীকে সন্দেহ করলে
সে স্বামীর সংসার নিশ্চয় এক প্রকার জাহান্নাম।
পরিশেষে, মহান আল্লাহর এই
বাণী প্রত্যেক স্বামীর মনে রাখা উচিৎ; তিনি বলেন,
‘‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয় তোমাদের
স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের (পার্থিব ও পারলৌকিক বিষয়ের) শত্রু।
অতএব তাদের ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো। অবশ্য (দ্বীনী বিষয়ে অন্যায় থেকে তওবা করলে
ও পার্থিব বিষয়ক অন্যায়ে) তোমরা যদি ওদেরকে মার্জনা কর, ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর
এবং ওদেরকে ক্ষমা করে দাও তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[31]
[1]
(সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮)
[3] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১/৩৮২)
[5] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৪১৬)
[6] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৪)
[7] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইনাঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৪৭পৃঃ)
[8] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৯৩০নং)
[9] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৩১নং)
[10] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৭৩৬নং, ইরওয়াউল গালীল ৮৯৯ নং)
[11] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১৯)
[12] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৮নং)
[13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৯নং)
[14] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৪০নং)
[15] (হুক্বূক্বুল মারআতিল মুসলিমাহ, কওসর আল-মীনাবী ৫২ পৃঃ)
[16] (মুসনাদে আহমদ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৫০পৃঃ)
[17] (বুখারী, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ২৭৫পৃঃ)
[18] (বুখারী, মুসলিম, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪৫নং)
[19] (বুখারী, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২৯০পৃঃ)
[20] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৭০নং, আদাবুয যিফাফ ২৯১পৃঃ)
[21] (সূরা আল-বাক্বারাহ (২) : ২২৮)
[22] (তুহফাতুল আরূস, ১০৩-১০৪পৃঃ)
[23] (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৭৭পৃঃ)
[24] (বুখারী ৫০৮০নং, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৩নং)
[25] (ত্বাহাবী , হাকেম , দাঃ, আদাবুয যিফাফ ২৬৯পৃঃ)
[26] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ২৭০পৃঃ)
[27] (মুসলিম)
[28] (তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৯নং)
[29] (সূরা আত্তাহরীম (৬৬) : ৬)
[30] (নাসাঈ, দাঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৫৫পৃঃ)
[31] (সূরা তাগাবুন (৬৪) : ১৪ আয়াত)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮)
[3] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১/৩৮২)
[5] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৪১৬)
[6] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২৪)
[7] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইনাঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৪৭পৃঃ)
[8] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৯৩০নং)
[9] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯৩১নং)
[10] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৭৩৬নং, ইরওয়াউল গালীল ৮৯৯ নং)
[11] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১৯)
[12] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৮নং)
[13] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৯নং)
[14] (মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৪০নং)
[15] (হুক্বূক্বুল মারআতিল মুসলিমাহ, কওসর আল-মীনাবী ৫২ পৃঃ)
[16] (মুসনাদে আহমদ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৫০পৃঃ)
[17] (বুখারী, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ২৭৫পৃঃ)
[18] (বুখারী, মুসলিম, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪৫নং)
[19] (বুখারী, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২৯০পৃঃ)
[20] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৭০নং, আদাবুয যিফাফ ২৯১পৃঃ)
[21] (সূরা আল-বাক্বারাহ (২) : ২২৮)
[22] (তুহফাতুল আরূস, ১০৩-১০৪পৃঃ)
[23] (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৭৭পৃঃ)
[24] (বুখারী ৫০৮০নং, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬২৩নং)
[25] (ত্বাহাবী , হাকেম , দাঃ, আদাবুয যিফাফ ২৬৯পৃঃ)
[26] (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ২৭০পৃঃ)
[27] (মুসলিম)
[28] (তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসাঈ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৫২৯নং)
[29] (সূরা আত্তাহরীম (৬৬) : ৬)
[30] (নাসাঈ, দাঃ, আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৫৫পৃঃ)
[31] (সূরা তাগাবুন (৬৪) : ১৪ আয়াত)
স্ত্রীর উপর স্বামীরও অনস্বীকার্য অধিকার
স্ত্রীর উপর স্বামীরও অনস্বীকার্য
অধিকার রয়েছেঃ-
প্রথম অধিকার হল বৈধ কর্মে
ও আদেশে স্বামীর আনুগত্য। স্বামী সংসারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সংসার ও
দাম্পত্য বিষয়ে তার আনুগত্য স্ত্রীর জন্য জরুরী। যেমন কোন স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক,
অফিসের ম্যানেজার বা ডিরেক্টর প্রভৃতির আনুগত্য অন্যান্য সকলকে করতে হয়।
স্ত্রী সাধারণতঃ স্বামীর
চেয়ে বয়সে ছোট হয়। মাতৃলয়ে মা-বাপের (বৈধ বিষয়ে) আদেশ যেমন মেনে চলতে ছেলে-মেয়ে বাধ্য,
তেমনি শবশুরালয়ে স্বামীর আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলাও স্ত্রীর প্রকৃতিগত আচরণ। তাছাড়া
ধর্মেও রয়েছে স্বামীর জন্য অতিরিক্ত মর্যাদা। অতএব প্রেম, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলতা
বজায় রাখতে বড়কে নেতা মানতেই হয়। প্রত্যেক কোম্পানী ও উদ্যোগে পার্থিব এই নিয়মই অনুসরণীয়।
অতএব স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে তা নারী-পরাধীনতা হবে কেন। তবে অন্যায় ও অবৈধ বিষয়ে
অবশ্যই স্বামীর আনুগত্য অবৈধ। কারণ যাদেরকে আল্লাহ কর্তৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে
অবৈধ ও অন্যায় কর্তৃত্ব দেননি। কেউই তার কর্তৃত্ব ও পদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারে
না। তাছাড়া কর্তা হওয়ার অর্থ কেবলমাত্র শাসন চালানোই নয়; বরং দায়িত্বশীলতার বোঝা সুষ্ঠুভাবে
বহন করাও কর্তার মহান কর্তব্য।
যে নারী স্বামীর একান্ত
অনুগতা ও পতিব্রতা সে নারীর বড় মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের
নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী
করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।[1]
‘‘শ্রেষ্ঠ রমণী সেই, যার
প্রতি তার স্বামী দৃকপাত করলে সে তাকে খোশ করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে
এবং তার জীবন ও সম্পদে স্বামীর অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না।’’[2]
স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে
ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা
জাহান্নাম।’’[3]
‘‘যদি আমি কাউকে কারো জন্য
সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা
করে।’’[4]
‘‘স্ত্রীর কাছে স্বামীর
এমন অধিকার আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেঁটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ
হক আদায় করতে পারবে না।’’[5]
‘‘মহিলা যদি নিজ স্বামীর
হক (যথার্থরূপে) জানতো, তাহলে তার দুপুর অথবা রাতের খাবার খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত
সে (তার পাশে) দাঁড়িয়ে থাকতো।’’[6]
‘‘তাঁর শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের
প্রাণ আছে! নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত
না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও যদি স্বামী তার
মিলন চায় তবে সে বাধা দিতে পারবে না।’’[7]
‘‘দুই ব্যক্তির নামায তাদের
মাথা অতিক্রম করে না (কবুল হয় না) ; সেই ক্রীতদাস যে তার প্রভুর নিকট থেকে পলায়ন করেছে,
সে তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে,
সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত (নামায কবুল হয় না।)’’[8]
‘‘তিন ব্যক্তির নামায
কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ)
লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে
স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়।[9]
‘‘ স্বামী যখন তার
স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর
সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর
অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি
সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’[10]
স্বামীর আনুগত্য স্ত্রীর জন্য আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য।
সুতরাং স্বামীকে সন্তুষ্ট করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। বলাই বাহুল্য যে, অধিকাংশ
তালাক ও দ্বিতীয় বিবাহের কারণ হল স্বামীর আহ্বানে স্ত্রীর যথাসময়ে সাড়া না দেওয়া।
উক্ত অধিকার পালনেই স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন মজবুত ও মধুর হয়ে গড়ে উঠে, নচেৎ না।
২- স্বামীর
মান-মর্যাদা ও চাহিদার খেয়াল রাখা স্ত্রীর জন্য জরুরী। স্বামী বাইরে থেকে এসে
যেন অপ্রীতিকর কিছু দেখতে, শুনতে, শুঁকতে বা অনুভব করতে না পারে। পুরুষ বাইরে কর্মব্যস্ততায়
জবলে-পুড়ে বাড়িতে এসে যদি স্ত্রীর স্মিতমুখ ও দেহ-সংসারের পারিপাট্য না পেল, তাহলে
তার আর সুখ কোথায়? সংসারে তার মত দুর্ভাগা ব্যক্তি আর কেউ নেই, যাকে বাইরে মেহনতে জবলে
এসে বাড়িতে স্ত্রীর তাপেও জবলতে হয়।
সে নারী কত আদর্শ পতিভক্ত,
যে তার স্বামীকে মিলন দিয়ে খুশী ও সন্তুষ্ট করার জন্য কারো মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ
করে না। অতি ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে এমনটি করা অনুপম পতিভক্তির পরিচয়। পরন্তু এরূপ
করার পশ্চাতে প্রভূত কল্যাণের আশা করা যায়। যেমন ঘটেছিল উম্মে সুলাইম রুমাইসা (বিবি
রমিসা) ও তাঁর স্বামী আবু তালহা (রাঃ) এর সাংসারিক জীবনে। তাঁদের একমাত্র সন্তান
ব্যাধিগ্রস্ত ছিল। আবু তালহা প্রায় সময় নবী (সাঃ) এর নিকট কাটাতেন। এক দিন সন্ধ্যায়
তিনি তাঁর নিকট গেলেন। এদিকে বাড়িতে তাঁর ছেলে মারা গেল। উম্মে সুলাইম সকলকে নিষেধ
করলেন, যাতে আবু তালহার নিকট খবর না যায়। তিনি ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে ঢেকে রেখে দিলেন।
অতঃপর স্বামী আবু তালহা রসূল (সাঃ) এর নিকট থেকে বাড়ি ফিরলে বললেন, ‘আমার বেটা
কেমন আছে?’ রুমাইসা বললেন, ‘যখন থেকে ও পীড়িত তখন থেকে যে কষ্ট পাচ্ছিল তার চেয়ে এখন
খুব শান্ত। আর আশা করি সে আরাম লাভ করেছে!’
অতঃপর পতিপ্রাণা স্ত্রী
স্বামী এবং তাঁর সাথে আসা আরো অন্যান্য মেহমানদের জন্য রাত্রের খাবার পেশ করলেন।
সকলে খেয়ে উঠে গেল। আবু তালহা উঠে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। (স্ত্রীর কথায় ভাবলেন,
ছেলে আরাম পেয়ে ঘুমাচ্ছে।) ওদিকে পতিব্রতা রুমাইসা সব কাজ সেরে উত্তমরূপে সাজ-সজ্জা
করলেন, সুগন্ধি মাখলেন। অতঃপর স্বামীর বিছানায় এলেন। স্বামী স্ত্রীর নিকট
থেকে সৌন্দর্য, সৌরভ এবং নির্জনতা পেলে উভয়ের মধ্যে যা ঘটে তা তাদের স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে (মিলন) ঘটল। তারপর রাত্রির শেষ দিকে রুমাইসা স্বামীকে বললেন, ‘হে আবু তালহা!
যদি কেউ কাউকে কোন জিনিস ধার স্বরূপ ব্যবহার করতে দেয়, অতঃপর সেই জিনিসের মালিক যদি
তা ফেরৎ নেয় তবে ব্যবহারকারীর কি বাধা দেওয়া বা কিছু বলার থাকতে পারে?’ আবু তালহা বললেন,
‘অবশ্যই না।’ স্ত্রী বললেন, ‘তাহলে শুনুন, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল আপনাকে যে ছেলে ধার
দিয়েছিলেন তা ফেরৎ নিয়েছেন। অতএব আপনি ধৈর্য ধরে নেকীর আশা করুন!’
এ কথায় স্বামী রেগে
উঠলেন; বললেন, ‘এতক্ষণ পর্যন্ত কিছু না বলে চুপ থেকে, এত কিছু হওয়ার পর তুমি আমাকে
আমার ছেলে মরার খবর দিচ্ছ?!’ অতঃপর তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি----’ পড়লেন ও আল্লাহর প্রশংসা
করলেন। তারপর আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট ঘটনা খুলে বললে তিনি তাঁকে বললেন, ‘‘তোমাদের
উভয়ের ঐ গত রাত্রে আল্লাহ বর্কত দান করুন।’’ সুতরাং ঐ রাত্রেই রুমাইসা তাঁর গর্ভে আবার
একটি সন্তান ধারণ করেন।[11]
৩- স্বামীর
দ্বীন ও ইজ্জতের খেয়াল করা ওয়াজেব। বেপর্দা, টোঁ-টোঁ কোম্পানী হয়ে, পাড়াকুঁদুলী হয়ে,
দরজা, জানালা বা ছাদ হতে উঁকি ঝুঁকি মেরে, স্বামীর অবর্তমানে কোন বেগানার সাথে
দেখা-সাক্ষাৎ করে অথবা কোথাও গেয়ে-এসে নিজের তথা স্বামীর বদনাম করা এবং আল্লাহকে
অসন্তুষ্ট করা মোটেই বৈধ নয়। স্বামী-গৃহে হিফাযতের সাথে থেকে তার মন মতো চলা
এক আমানত। এই আমানতের খেয়ানত স্বামীর অবর্তমানে করলে নিশ্চয়ই সে সাধবী নারী নয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘সুতরাং সাধবী নারীরা অনুগতা
এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেদের ইজ্জত রক্ষাকারিণী। আল্লাহর হিফাযতে
তারা তা হিফাযত করে।’’[12]
স্বামীর নিকট স্বামীর ভয়ে বা তাকে প্রদর্শন করে পর্দাবিবি
বা হিফাযতকারিণী সেজে তার অবর্তমানে গোপনে আল্লাহকে ভয় না ক’রে কুটুমবাড়ি, বিয়েবাড়ি
প্রভৃতি গিয়ে অথবা শ্বশুরবাড়িতে পর্দানশীন সেজে এবং বাপের বাড়িতে বেপর্দা হয়ে নিজের
মন ও খেয়াল-খুশীর তাবেদারী ক’রে থাকলে সে নারী নিশ্চয় বড় ধোঁকাবাজ। প্রিয় নবী (সাঃ)
বলেন,
‘‘তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কোন
প্রশ্নই করো না; যে জামাআত ত্যাগ করে ইমামের অবাধ্য হয়ে মারা যায়, যে ক্রীতদাস বা দাসী
প্রভু থেকে পলায়ন করে মারা যায়, এবং সেই নারী যার স্বামী অনুপস্থিত থাকলে---তার
সাংসারিক সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বন্দোবস্ত করে দেওয়া সত্ত্বেও---তার অনুপস্থিতিতে বেপর্দায়
বাইরে যায়।’’[13]
শ্রেষ্ঠা রমণী তো সেই যে কোন পরপুরুষকে নিজের মুখ দেখায় না এবং বেগানার
মুখ নিজেও দেখে না। স্বামী বাড়িতে না থাকলে গান-বাজনা শুনে নয়; বরং কুরআন ও দ্বীনী
বই-পুস্তক পড়ে নিজের মনকে ফ্রী করে। কারণ গান শুনে মন আরো খারাপ হয়। স্বামীকে
কাছে পেতে ইচ্ছা হয়। যৌন ক্ষুধা বেড়ে উঠে। তাইতো সলফগণ বলেন, ‘গান হল ব্যভিচারের মন্ত্র।’[14]
পক্ষান্তরে-
‘‘আল্লাহর যিকরেই মুমিনদের
চিত্ত প্রশান্ত হয়।’’[15]
৪- স্বামীর বৈয়াক্তিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিও বিশেষ
খেয়াল রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। সুতরাং তার ব্যক্তিগত কাজ-কারবার, পড়াশুনা প্রভৃতিতে ডিস্টার্ব
করা বা বাধা দেওয়া হিতাকাঙিক্ষনী স্ত্রীর অভ্যাস হতে পারে না। স্বামীর নিকট এমন
বিষয়, বস্ত্ত বা বিলাস-সামগ্রী স্ত্রী চাইবে না, যার ফলে সে বাধ্য হয়ে অবৈধ অর্থোপার্জনের
পথ অবলম্বন করে ফেলে। হারাম উপার্জন ও অসৎ ব্যবসায় মোটেই তার সহায়তা করবে না। সাধবী
স্ত্রী তো সেই; যে তার স্বামীকে ব্যবসায় বের হলে এই বলে সলফের স্ত্রীর মত অসিয়ত
করে, ‘‘আল্লাহকে ভয় করবেন, হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকবেন। কারণ, আমরা না খেয়ে ক্ষুধায়
ধৈর্য ধরতে পারব; কিন্তু জাহান্নামে ধৈর্য ধরতে পারব না!’’[16]
‘‘--পতি যদি হয় অন্ধ হে সতী বেঁধোনা নয়নে আবরণ,
অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন তোমার সত্য আচরণ।’’
৫- স্বামীর
ঘর সংসার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখা স্ত্রীর কর্তব্য।
স্বামীর যাবতীয় খিদমত করা, ছেলে-মেয়েদেরকে পরিষ্কার ও সভ্য করে রাখাও তার দায়িত্ব।
সর্বকাজ নিজের হাতে করাই উত্তম। এতে তার স্বাস্থ্য ভালো এবং দেহে স্ফূর্তি থাকবে। একান্ত
চাপ ও প্রয়োজন না হলে দাসী ব্যবহার আলসে মেয়ের কাজ। সাহাবী মহিলাগণ সবহস্তে ক্ষেতেরও
কাজ করতেন। একদা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কাজের চাপের এবং নিজের মেহনত ও কষ্টের কথা আব্বার
নিকট উল্লেখ ক’রে কোন খাদেম চাইলে প্রিয় নবী (সাঃ) তাঁকে সবহস্তে কর্ম সম্পাদন করতে
নির্দেশ দিলেন এবং অলসতা কাটিয়ে উঠার ঔষধও বলে দিলেন; বললেন, ‘‘যখন তোমরা শয়ন
করবে তখন ৩৪ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ এবং ৩৩ বার ‘আলহামদু লিল্লা-হ’
পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদেম থেকেও উত্তম হবে!’’[17]
তাই তো একজন বাদশাহর কন্যা
হয়েও তিনি সবহস্তে চাকি ঘুরিয়ে আটা পিষতেন। তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত, তবুও আব্বার
কথামত কোন দাস-দাসী ব্যবহার না করেই সংসার করেছেন।
‘‘আত্মাহারা না হইয়া সৌভাগ্য সোহাগে
পরন্তু যে করে কাম সবকরে যতনে,
পরিজন প্রীতি হেতু প্রেম অনুরাগে
আদর্শ রমণী সেই যথার্থ ভূবনে।’’
পক্ষান্তরে দাস-দাসী ব্যবহারে
বিপত্তি আছে। এদের মাধ্যমে ঘরের রহস্য বাইরে যায়, বাড়ির কোন সদস্যের সাথে অবৈধ প্রণয়
গড়ে উঠতে পারে। তাদের ব্যবহার, চরিত্র, বিশ্বাস প্রভৃতি শিশুদের মনে প্রভাব বিস্তার
করে ইত্যাদি। বিলাসের আতিশয্যে নিজের স্বামী ও সন্তানের সেবাযতন ত্যাগ করে সব
কিছু দাস-দাসীর উপর নির্ভর করলে সংসারে ইচ্ছাসুখ মিলে না।
‘‘বিলাসিনী যে রমণী গৃহস্থালি কার্য
সম্পাদন আপন ভাবিয়া না করে,
হউক তাহার পতি রাজ-অধিরাজ
অধমা সে নারী এ সংসার ভিতরে।’’
৬- স্বামী
তার স্ত্রীকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে থাকে। যথাসাধ্য উত্তম আহার-বসনের ব্যবস্থা করে
থাকে। তবুও ত্রুটি স্বাভাবিক। কিন্তু সামান্য ত্রুটি দেখে সমস্ত উপকার, উপহার ও প্রীতি-ভালোবাসাকে
ভুলে যাওয়া নারীর সহজাত প্রকৃতি। কিছু শিক্ষা বা শাসনের কথা বললে মনে করে, স্বামী
তাকে কোনদিন ভালোবাসে না। স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার মনে নিদারুণ ব্যথা
দিয়ে থাকে। এটি এমন একটি কর্ম যার জন্যও মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে অধিক সংখ্যায় জাহান্নামবাসিনী
হবে।[18]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘আল্লাহ সেই রমণীর
দিকে তাকিয়েও দেখেন না (দেখবেন না) যে তার স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না,
অথচ সে স্বামীর মুখাপেক্ষিনী।[19]
আসলেই ‘মেয়ে লোকের এমনি সবভাব, হাজার দিলেও যায় না অভাব।’ সে দেখে না
যে, তার স্বামী তার জন্য কত কি করছে। সে শুধু তাই দেখে, যা তার জন্য করা হয় না।
৭- স্ত্রী
হয় সংসারের রানী। স্বামীর ধন-সম্পদ সর্বসংসার হয় তার রাজত্ব এবং স্বামীর
আমানতও। তাই তার যথার্থ হিফাযত করা এবং যথাস্থানে সঠিকভাবে তা ব্যয় করা স্ত্রীর কর্তব্য।
অন্যায়ভাবে গোপনে ব্যয় করা, তার বিনা অনুমতিতে দান করা বা আত্মীয়-সবজনকে উপঢৌকন দেওয়া
আমানতের খেয়ানত। এমন স্ত্রী পুণ্যময়ী নয়; বরং খেয়ানত-কারিণী। অবশ্য স্বামী ব্যয়কুণ্ঠ
কৃপণ হলে এবং স্ত্রী ও সন্তানের জন্য যথার্থ খরচাদি না দিলে, স্ত্রী গোপনে শুধু ততটুকুই
নিতে পারবে যতটুকু নিলে তার ও তার সন্তানের প্রয়োজন মিটানোর জন্য যথেষ্ট হবে। এর বেশী
নিলে অবৈধ মাল নেওয়া হবে।[20]
অবশ্য স্বামী দানশীল
হলে এবং দানের জন্য সাধারণ অনুমতি থাকলে স্ত্রী যদি তার অনুপস্থিতিতে দান করে, তাহলে
উভয়েই সমান সওয়াবের অধিকারী হবে।[21]
৮- স্বামীর
বিনা অনুমতিতে বাইরে, মার্কেট, বিয়েবাড়ি, মড়াবাড়ি ইত্যাদি না যাওয়া পতিভক্তির পরিচয়।
এমনকি মসজিদে (ইমামের পশ্চাতে মহিলা জামাআতে) নামায পড়তে গেলেও স্বামীর অনুমতি
চাই।[22]
এই পরাধীনতায় আছে মুক্তির
পরম স্বাদ। মাতৃক্রোড় উপেক্ষা করে ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষেম যেমন শিশু নিজেকে বিপদে ফেলে,
তা-এর কোল ছেড়ে ডিম যেমন ঘোলা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি নারীও স্বামীর এই স্নেহ-সীমাকে
উল্লংঘন করে নিজের দ্বীন ও দুনিয়া নষ্ট করে।
রুচিতে যা রুচে তাই যদি খাওয়া
পরা, বলা, চলা হয় এবং রুচিতে যা বাধে তাই যদি না খাওয়া, না পরা, না বলা, না চলা হয়,
তাহলে নৈতিকতাই বা কি? মানবিকতাই বা কি? তাও মানুষের রুচির ব্যাপার নয় কি? তাহলে থাকল
আর কি? বন্ধন, শৃঙ্খল ও সীমাবদ্ধতা ছাড়া কি কোন নৈতিকতা, কোন শান্তি ও সুখ আছে?
পক্ষান্তরে ইসলামী নৈতিকতা
ও গন্ডী-সীমার ভিতরে থেকেও নারী কর্ম, চাকুরী ও উপার্জন করতে পারে। যেখানে দ্বীনের
কোন বাধা নেই, নারীত্ব ও সতীত্বের কোন আঁচড় নেই, সেখানে স্বামীরও কোন বাধা থাকতে
পারে না। মহিলা কেবল মহিলা কর্মক্ষেত্রে, শিশু ও মহিলা শিক্ষাঙ্গনে অফিস বা শিক্ষকতার
কাজ, বাড়িতে বসে শিশু ও মহিলা পোষাকের দর্জিকাজ অথবা কোন হাতের শিল্পকাজ বা ম্যাকানিকেল
কাজ দিব্যি করতে পারে; যাতে পরপুরুষের সাথে কোন সংস্রবই নেই। অন্যথা পর পুরুষের পাশাপাশি
কর্মক্ষেত্রে অবাধভাবে মিলেমিশে কর্ম করা নারী স্বাধীনতা নয়, বরং নারীর হীনতা এবং
স্বামীর দ্বীনতা।[23]
অবশ্য যারা স্বামীর
পরম সুখ ও ভালোবাসা পেয়ে ধন্য হয়েছে তারা কোন দিন ঐ সকল চাকুরী মরীচিকার পশ্চাতে ছুটে
না। যেখানে জলভ্রম প্রদর্শন করে নারীকে পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে আকর্ষণ করে এনে তারা
নারীকেই জলখাবার বানিয়ে থাকে। ঘরের ও বাইরের উভয় কাজ উভয়কেই করতে হলে সুখ কোথায়? এই
অবস্থায় সন্তান-সন্ততির লালন পালন ও তরবিয়ত কোত্থেকে কেমন করে হবে?
বলাই বাহুল্য যে, ধর্ম ও
নৈতিকতাকে কবর দিয়ে উচ্চ শিক্ষিতা হয়ে, প্রতিষ্ঠিতা হয়ে, চাকুরী করে মোটা টাকা উপার্জন
করে, স্বামীর তোয়াক্কা না করে, পার্থিব সুখ লুটা ভোগবাদী, বস্ত্তবাদী এবং পরকালে
অবিশ্বাসিনীদের লক্ষ্য। পক্ষান্তরে ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতা বজায় রেখে পার্থিব বিষয়াদি
পরকালে বিশ্বাসিনী মুসলিম নারীর উপলক্ষ্য মাত্র। মুসলমানের মূল লক্ষ্য হল পরকাল। মুসলিম
দু’দিনের সুখস্বপ্নে সন্তুষ্ট নয়। সে চায় চিরস্থায়ী উপভোগ্য অনন্ত সুখ।
এ জন্যই প্রিয় নবী (সাঃ)
দুআ করতেন,
অর্থাৎ, দুনিয়াকে আমাদের
বৃহত্তম চিন্তার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা (মূল লক্ষ্য) করে দিও না।[24]
৯- স্বামীর
অনুমতি না হলে তার উপস্থিতিতে স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে না। যেহেতু তার সাংসারিক
কর্মে বা যৌন-সুখে বাধা পড়লে আল্লাহ সে রোযায় রাযী নন।[25]
১০- কোন
বিষয়ে স্বামী রাগান্বিত হলে স্ত্রী বিনীতা হয়ে নীরব থাকবে। নচেৎ ইঁটের বদলে পাটকেল
ছুঁড়লে আগুনে পেট্রল পড়বে। যে সোহাগ করে, তার শাসন করার অধিকার আছে। আর এ শাসন স্ত্রী
ঘাড় পেতে মেনে নিতে বাধ্য হবে। ভুল হলে ক্ষমা চাইবে। যেহেতু স্বামী বয়সে ও মর্যাদায়
বড়। ক্ষমা প্রার্থনায় অপমান নয়; বরং মানুষের মান বর্ধমান হয়; ইহকালে এবং পরকালেও। তাছাড়া
অহংকার ও ঔদ্ধত্যের সাথে ‘বেশ করেছি, অত পারি না’ ইত্যাদি বলে অনমনীয়তা প্রকাশ সতী
নারীর ধর্ম নয়। সুতরাং স্বামীর রাগের আগুনকে অহংকার ও ঔদ্ধত্যের পেট্রল দ্বারা
নয় বরং বিনয়ের পানি দ্বারা নির্বাপিত করা উচিৎ।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘তোমাদের স্ত্রীরাও জান্নাতী
হবে; যে স্ত্রী অধিক প্রণয়িণী, সন্তানদাত্রী, বার-বার ভুল করে বার-বার স্বামীর
নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে
বলে, আপনি রাজি (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাবই না।’’[26]
নারী হয়ে একজন পুরুষের মন জয় করতে না পারা বড় আশ্চর্যের ব্যাপার!
‘‘তুফানে হাল ধরতে নারে সেইবা কেমন নেয়ে,
আর মরদের মন যোগাতে নারে সেই বা কেমন মেয়ে?!’’
খেয়াল রাখার বিষয় যে,
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে শয়তান বড় তৎপর। সমুদ্রের উপর নিজ সিংহাসন
পেতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তার ‘স্পেশাল ফোর্স’ পাঠিয়ে দেয়। সবচেয়ে যে বড় ফিৎনা সৃষ্টি
করতে পারে সেই হয় তার অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। কে কি করেছে তার হিসাব নেয় ইবলীস। প্রত্যেকে
এসে বলে, ‘আমি অমুক করেছি, আমি অমুক করেছি। (চুরি, ব্যভিচার, হত্যা প্রভৃতি সংঘটন করেছি)।
কিন্তু ইবলীস বলে, ‘কিছুই করনি তুমি!’ অতঃপর যখন একজন বলে ‘আমি স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে রাগারাগি সৃষ্টি করে উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছেড়েছি’ তখন শয়তান উঠে এসে তাকে
আলিঙ্গন করে বলে, ‘হ্যাঁ, তুমিই কাজের ব্যাটা কাজ করেছ![27]
সুতরাং রাগের সময় শয়তানকে
সহায়তা ও খোশ করা অবশ্যই কোন মুসলিম দম্পতির কাজ নয়।
১১- পতিপ্রাণা
নারীর সদা চিন্তা স্বামীর মনোসুখ, তার পরম আনন্দ ও খুশী। যেহেতু তার আনন্দেই
স্ত্রীর পরমানন্দ। স্বামীর আনন্দ না হলে নিজের আনন্দ কল্পনাই করতে পারে না স্ত্রী।
বাইরে থেকে রোদে-গরমে এলে সবতঃস্ফূর্তভাবে তার সামনে পানি পেশ করা, হাওয়া করে দেওয়া
ইত্যাদি সতীর ধর্ম। তাছাড়া স্বামী সালাম দিয়ে যখন বাড়ি প্রবেশ করে, তখন উত্তর
দিয়ে হাসিমাখা ওষ্ঠাধরের স্পর্শ উপহার যদি উভয়ে বিনিময় করে, তবে এর মত দাম্পত্য সুখ
আর আছে কোথায়?
‘‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
রমণী সুন্দর হয় সতীত্ব রক্ষণে।’’
এমনিতেই স্ত্রী স্বামীর
জন্য হয়ে থাকবে ফুটন্ত গোলাপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়, অঙ্গসজ্জা এবং বেশভূষায়
স্বামীর চক্ষুশীতল করবে। সৌন্দর্য ও সৌরভে ভরা গোলাপের দিকে একবার তাকিয়ে যেমন
মন-প্রাণ আকৃষ্যমাণ হয়, ঠিক তেমনি হবে স্বামীর মন তার স্ত্রীকে দেখে। স্বামী-স্ত্রীর
এ পরম সুখ থাকলে, কোন নারী সংগঠন বা নারী-সবাধীনতা ও নারী-মুক্তির আন্দোলনের প্রয়োজনই
নেই।
নারী-পুরুষের মধুর সহাবস্থান
ও মধুর মিলনে পরম সুখ, এই শান্তিই পরম শান্তি। কিন্তু এমন স্বর্গীয় সংসার আছে কয়টা?
‘‘কোথায় গেলে তারে পাই?
যার লাগি এ বিশাল বিশেব নাই মোর কোন শান্তি নাই।’’
বলাই বাহুল্য যে, যে
স্বামী তার স্ত্রীর প্রগাঢ় ভালোবাসা পায়, বিপদে সান্ত্বনা, কষ্টে সেবাযত্ন, যৌবনে
পরম মিলন পায়, রাগ-অনুরাগ বা অভিমান করলে যাকে তার স্ত্রী মানিয়ে নেয় এমন স্বামীর
মত সৌভাগ্যবান স্বামী আর কে হতে পারে? পিতা-মাতার দুআ ও স্ত্রীর প্রেমেই তো রয়েছে
স্বামীর প্রকৃত পৌরুষ। এমন নারী না হলে পুরুষের জীবন বৃথা।
‘‘প্রেমের প্রতিমা স্নেহের সাগর
করুণা-নির্ঝর দয়ার নদী,
হত মরুময় সব চরাচর
জগতে নারী না থাকিত যদি।’’
স্বামীকে সন্তুষ্ট
ও রাজী করবার জন্য ইসলাম এক প্রকার মিথ্যা বলাকেও স্ত্রীর জন্য বৈধ করেছে। স্ত্রীর
মনে যতটুকু পরিমাণ স্বামীর ভালোবাসা বর্তমান, স্বামীকে অধিক খুশী করার
জন্য তার দ্বিগুণ ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করা, বরং স্বামীর কোন কুসবভাবের কারণে
ভালোবাসায় আবিলতা এলেও তা গোপন করে স্বামীকে যদি তার প্রাণঢালা ভালোবাসার কথা
মিথ্যা ক’রে ব’লে জানায় তাহলে তা দোষের নয়। তবে তার কর্ম যেন এ কথার অসত্যতা প্রমাণ
না করে।
খুব কমসংখ্যক পরিবারই এমন
আছে যাদের দাম্পত্য অনাবিল প্রেমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। নচেৎ অধিকাংশ সংসারই তাসের
ঘর। প্রায় সব সংসারের গাড়িই চলে টানে, নচেৎ ঠেলায়। বেশীর ভাগ দাম্পত্যই সন্তান, ইসলাম
অথবা সামাজিক, নৈতিক নতুবা কোন অন্য চাপের ফলে টিঁকে থাকতে বাধ্য হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে
যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে উভয়কে মোটেই ভালো না বাসলেও যদি ‘খুব ভালোবাসি’ বলে এক
অপরকে রাজী করে সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে তা মিথ্যা নয়।[28]
তবে হ্যাঁ, এ মিথ্যা যেন
অন্য উদ্দেশ্যে, ধোঁকা প্রদান বা অধিকার নষ্ট করার উদ্দেশ্যে স্বামীকে বলা না
হয়। নচেৎ সে মিথ্যা প্রমাণিত হলে সামান্য প্রেমেরও শীশমহলটুকু ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
১২- স্বামীর সংসারে
তার পিতামাতা ও বোনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য। স্বামীর
মা-বাপ ও বোনকে নিজের মা-বাপ ও বোন ধারণা করে সংসারের প্রত্যেক কাজ তাদের পরামর্শ নিয়ে
করা, যথাসাধ্য তাদের খিদমত করা এবং তাদের (বৈধ) আদেশ-নিষেধ মেনে চলা পুণ্যময়ী সাধবী
নারীর কর্তব্য।
১৩- নিজের এবং
অনুরূপ স্বামীর সন্তান-সন্ততির লালন-পালন, তরবিয়ত ও শিক্ষা দেওয়া স্ত্রীর শিরোধার্য
কর্তব্য। এর জন্য তাকে ধৈর্য, স্থৈর্য, করুণা ও স্নেহের পথ অবলম্বন করা একান্ত উচিৎ।
বিশেষ করে স্বামীর সামনে সন্তানের উপর রাগ না ঝাড়া, গালিমন্দ, বদ্দুআ ও মারধর
না করা স্ত্রীর আদবের পরিচয়। তাছাড়া বদ্দুআ করা হারাম। আর তা কবুল হলে নিজের ছেলেরই
ক্ষতি।[29]
স্ত্রীর উচিৎ, সন্তান-সন্ততিকে
পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, সচ্চরিত্রতা, বীরত্ব, সংযমশীলতা, বিষয়-বিতৃষ্ণা, দ্বীন-প্রেম,
ন্যায়-নিষ্ঠা, আল্লাহ-ভীরুতা, প্রভৃতি মহৎগুণের উপর প্রতিপালিত ও প্রতিষ্ঠিত
করা। কারণ,
মায়ের হাতেই গড়বে মানুষ মা যদি সে সত্য হয়,
মা-ই তো এ জাহানে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়।
এই মা-ই তো পরমা, সত্তমা।
এই মায়ের পদতলেই জান্নাতের আশা করা যায়। এই মা তার সন্তানকে এমন মানুষ করে তুলবে; যাতে
তারা বাঁচবে ইসলাম নিয়ে ও ইসলামের জন্য এবং মরবে তো তারই পথে। যাদের মাধ্যমে সমাজে
সাধিত হবে প্রভূত কল্যাণ। এরা হবে তারাই, যাদেরকে নিয়ে রসূল (সাঃ) কিয়ামতে গর্ব করবেন।
[1] (ত্বাবারানী, ইবনে হিববান, সহীহ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, মিশকাতুল
মাসাবীহ ৩২৫৪নং)
[2] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৮৩৮নং)
[3] (ইবনে আবী শাইবাহ ,নাসাঈ, তাবারানী, হাকেম , প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৫পৃঃ)
[4] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৫নং)
[5] (হাকেম , ইবনে হিববান, ইবনে আবী শাইবাহ , সহীহুল জামে ৩১৪৮ নং)
[6] (ত্বাবারানী, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫২৫৯নং)
[7] (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিববান , আদাবুয যিফাফ ২৮৪পৃঃ)
[8] (ত্বাবারানী, হাকেম , আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৮নং)
[9] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৫০নং)
[10] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৩পৃঃ)
[11] (ত্বায়ালিসী ২০৫৬, বাইহাকী ৪/৬৫-৬৬, ইবনে হিববান ৭২৫নং, মুসনাদে আহমদ ৩/১০৫-১০৬ প্রভৃতি। দেখুন, আহকামুল জানায়েয ২৪-২৬ পৃঃ)
[12] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[13] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪২নং)
[14] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৬২পৃঃ)
[15] (সূরা আর র‘দ (১৩) : ২৮)
[16] (আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৬৯পৃঃ, সিফাতুল মু’মিনাতিস সা-দিক্বাহ, নাওয়াল বিন্ত্ আব্দুল্লাহ ৫০-৫১পৃঃ)
[17] (মুসলিম ২৭২৭নং)
[18] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯ নং)
[19] (নাসাঈ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৯নং)
[20] (ইরওয়াউল গালীল ২৬৪৬নং,ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)
[21] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, প্রভৃতি, সহীহ আত্তারগীব অত্তারহীব, আল্লামা আলবানী ৯২৬-৯৩০নং)
[22] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/২৭৫-২৭৬)
[23] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৩১-১৩৩পৃঃ)
[24] (তিরমিযী ৩৪৯৭নং)
[25] (বুখারী, মুসলিম, সহীহ আত্তারগীব অত্তারহীব ৯২৭নং)
[26] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৭ নং)
[27] (মুসলিম ২৮১৩নং)
[28] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৮৫)
[29] (আবু দাঊদ, আল মারআতুল মুসলিমাহ ১৭৬পৃঃ)
[2] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৮৩৮নং)
[3] (ইবনে আবী শাইবাহ ,নাসাঈ, তাবারানী, হাকেম , প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৫পৃঃ)
[4] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৫নং)
[5] (হাকেম , ইবনে হিববান, ইবনে আবী শাইবাহ , সহীহুল জামে ৩১৪৮ নং)
[6] (ত্বাবারানী, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫২৫৯নং)
[7] (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিববান , আদাবুয যিফাফ ২৮৪পৃঃ)
[8] (ত্বাবারানী, হাকেম , আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৮নং)
[9] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৫০নং)
[10] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৩পৃঃ)
[11] (ত্বায়ালিসী ২০৫৬, বাইহাকী ৪/৬৫-৬৬, ইবনে হিববান ৭২৫নং, মুসনাদে আহমদ ৩/১০৫-১০৬ প্রভৃতি। দেখুন, আহকামুল জানায়েয ২৪-২৬ পৃঃ)
[12] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[13] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪২নং)
[14] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৬২পৃঃ)
[15] (সূরা আর র‘দ (১৩) : ২৮)
[16] (আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৬৯পৃঃ, সিফাতুল মু’মিনাতিস সা-দিক্বাহ, নাওয়াল বিন্ত্ আব্দুল্লাহ ৫০-৫১পৃঃ)
[17] (মুসলিম ২৭২৭নং)
[18] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯ নং)
[19] (নাসাঈ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৯নং)
[20] (ইরওয়াউল গালীল ২৬৪৬নং,ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)
[21] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, প্রভৃতি, সহীহ আত্তারগীব অত্তারহীব, আল্লামা আলবানী ৯২৬-৯৩০নং)
[22] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/২৭৫-২৭৬)
[23] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৩১-১৩৩পৃঃ)
[24] (তিরমিযী ৩৪৯৭নং)
[25] (বুখারী, মুসলিম, সহীহ আত্তারগীব অত্তারহীব ৯২৭নং)
[26] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৭ নং)
[27] (মুসলিম ২৮১৩নং)
[28] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৮৫)
[29] (আবু দাঊদ, আল মারআতুল মুসলিমাহ ১৭৬পৃঃ)
স্বামী-স্ত্রীর যৌথ অধিকার
১- ব্যবহারিক অধিকারঃ- পরস্পর পরস্পরকে ক্ষমার
নজরে দেখবে। ভুল হওয়া মানুষের সহজাত প্রকৃতি। মানুষ যে কাজ করে সে কাজেই নিজেকে অনেক
সময় ভ্রান্ত রূপে পায়। কিন্তু তখন নিজেকে তো শাস্তি দেওয়া যায় না। বড়জোর আক্ষেপ করা
যায়। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী যদি উভয়ের দুই মন এবং দুই অর্ধাঙ্গ মিলে এক দেহের
মত নিজেদেরকে মনে করতে পারে তবেই ‘যত ভুল হবে ফুল ভালোবাসাতে।’
অনুরূপ একে অপরকে খুশী করবে,
আল্লাহর আনুগত্যের উপদেশ দেবে, সংসারের যৌথ দায়িত্ব পালন করবে, কেউ কাউকে কারো সামনে
লজ্জিত করবে না, কারো রহস্য ও গুপ্ত ত্রুটি প্রকাশ করবে না। কেউ কারো গুপ্ত দোষের কথা
নিজের আত্মীয়দের নিকট ফাঁস করবে না।
২- বৈষয়িক অধিকারঃ- এতে স্বামীর পিতা
স্ত্রীর জন্য এবং স্ত্রীর মাতা স্বামীর জন্য আপন পিতা-মাতার ন্যায় হয়ে যায়। এর
ফলে আপোসে বিবাহ হারাম হয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের ওয়ারেস হয়।
সর্বশেষ ও প্রধান অধিকার
হল উভয়ের ইচ্ছা ও খুশীমত একে অপরের দেহ ব্যবহার ও (বৈধভাবে) চির যৌনতৃপ্তি আস্বাদন।
পুরুষের ভাগ্যে সাধারণতঃ তিন প্রকার স্ত্রী
জোটে
১। কারো ভাগ্যে জোটে প্রভু!
ফলে সে স্ত্রীর নিকট স্ত্রৈণ হয়। নিহাতই বিবির গোলাম হয়ে তার আঁচল ধরে সংসার করে। বিবি
যেমন বলে ঠিক তেমনি চলে। দাড়িকে ‘ছিঃ’ করলে চট্ ক’রে গাল তেল পারা করে। সিনেমায় যাওয়ার
বায়না ধরলে শতখুশী হয়ে স্ত্রীর পশ্চাতে পশ্চাতে চলে। দ্বীন শিখতে, লেখাপড়া করতে বাধা
দিলে তাই মানে। মা-বাপকে দেখতে মানা করলে তাই শোনে। ঘরে থাকে সে, আর বাজার করে বিবি।
মাছ ধরে সে, ভাগ করে বিবি! আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করেও বিবির বাধ্য থেকে সুখানুভব করে।
কোন বিষয়ে স্ত্রীকে শাসন করার কথা কল্পনাই করা যায় না, উল্টে সেই স্বামীকে দস্ত্তরমত
শাসিয়ে থাকে; এমন মেয়ে কোকিলবধূ হয়, এমনকি নিজেরও যত্ন নেয় না সে।
এমন স্ত্রী স্বামীকে
যা বলে স্বামী তা ধ্রুব সত্য বলে মেনে তাকে ফিরিশ্তার মত বিশ্বাস করে এবং যার
বিরুদ্ধে বলে তাকে পাকা দুশমন মনে করে। স্বামীর সুস্থ বিবেককে একেবারে হজম করে
ফেলে। কোন ভুল হলে কথায় এবং কখনও দৈহিক আঘাতও দিয়ে থাকে স্বামীকে! অথচ এমন গোবেচারী
মুসলিম হলে সেই কষ্ট দেখে তার বেহেশ্তী স্ত্রী (হুর)গণ ঐ স্ত্রীকে অভিশাপ দিয়ে বলতে
থাকে ‘ওকে কষ্ট দিস্ না, আল্লাহ তোকে ধবংস করুক! ও তো তোর নিকট ক’দিনকার মেহমানমাত্র।
অদূর ভবিষ্যতে তোকে ছেড়ে ও আমাদের কাছে এসে যাবে।’’[1]
এমন সংসারে শান্তি কোথায়?
কথায় বলে, ‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট প্রজা কষ্ট পায়, আর নারীর দোষে সংসার নষ্ট শান্তি
চলে যায়।’
২। কারো ভাগ্যে স্ত্রী হয়
নিহাতই চরণের দাসী। ফুটবলের মত যে দিকেই লাথি খায়, সে দিকে গড়িয়ে যায়। কত নির্যাতন
সহ্য করে দাসীর মতই। স্বামী ছাড়া স্বামীর মা-বোনও তাকে কষ্ট দিয়ে থাকে।
‘তোমার জন্য দাসী আনতে চললাম মা’ কথাকে বাস্তবায়ন করে স্বামী। সময়ে খেতে পায়
না কাজের চাপে, সুন্দর পরতে পায় না কথার চোটে। অথচ স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব থাকলেও অবৈধ
কর্তৃত্ব নেই। এর জন্যও জবাবদিহি করতে হবে স্বামীকে।
৩। তৃতীয় প্রকার স্ত্রী
স্বামীর জন্য অপেক্ষাকৃত বয়োকনিষ্ঠ বন্ধু। এমন স্ত্রীর নিকট স্বামী শ্রদ্ধা
ও সমীহ পায়, ভক্তি ও ভালোবাসা পায়, পরামর্শ ও সদুপদেশ পায়। এই হল সেই আদর্শ স্ত্রী,
যার জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘‘জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ।’’[2]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের
বিষয় হল চারটি; সাধবী নারী, প্রশস্ত বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর
দুখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী স্ত্রী, অচল সওয়ারী (গাড়ি) এবং
সংকীর্ণ বাড়ি।[3]
‘‘সৌভাগ্যের স্ত্রী সেই; যাকে দেখে স্বামী মুগ্ধ হয়। সংসার ছেড়ে
বাইরে গেলে স্ত্রী ও তার সম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকে। আর দুর্ভাগার স্ত্রী হল
সেই; যাকে দেখে স্বামীর মন তিক্ত হয়, যে স্বামীর উপর জিভ লম্বা করে (লানতান
করে) এবং সংসার ছেড়ে বাইরে গেলে ঐ স্ত্রী ও তার সম্পদের ব্যাপারে সে নিশ্চিন্ত হতে
পারে না।’’[4]
সত্যিই তো ‘ছ্যাঁদা ঘটি চোরা
গাই, চোর পড়শী, ধূর্ত ভাই। মূর্খ ছেলে, স্ত্রী নষ্ট, এ কয়টি বড় কষ্ট।’
উপযুক্ত স্ত্রীর ব্যবহার
সকল অধিকারের ঊর্ধে। দাবীর বাইরে অতিরিক্ত তার দান। স্বামীর জন্য ত্যাগ স্বীকার
করতে তার কোন দ্বিধা নেই। তার মনে-প্রাণে শুধু এই ধারণাই থাকেঃ-
‘‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’’
এই তো পতিব্রতা সতী। ‘পতি
সেবায় থাকে মতি, তবেই তাকে বলি সতী।’ স্বামীর খিদমত হয় তার ব্রত। এমন স্ত্রীই
হয় বড় ধৈর্যশীল। যে হালে স্বামীর সাথে থাকে সেই হালেই আল্লাহর শুক্র ও প্রশংসা
করে। স্বামী সুশ্রী না হলেও নিজ ভাগ ও ভাগ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়। ধৈর্যের ফল বড়
মিঠা। ধৈর্য ও সবর এক অমূল্য সম্পদ। যদ্বারা ধনী না হলেও ধনীর মত জীবন-যাপন করা যায়।
সবর ও শুক্রের ফলে উভয় জগতে রত্নলাভ হয়।
সবর ৩ প্রকার; আল্লাহর ফরযকৃত
কর্মসমূহের উপর সবর ও ধৈর্যধারণ; তা নষ্ট না করা। তাঁর নিষিদ্ধ হারামের উপর ধৈর্যাবলম্বন;
তাতে লিপ্ত না হওয়া। আর তাঁর লিখিত তকদীরের উপর ধৈর্যধারণ; তাতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং
তার উপর ক্ষুব্ধ না হওয়া। যার মধ্যে এই তিন প্রকার সবরই বিদ্যমান সে ফকীর হলেও রাজা।
গরীবী হাল হলেও সবর ও শুক্রের বলে তার মন থাকে সবল।
এ স্ত্রীর মনে কোন অভিযোগ
নেই। কারণ, যেমন স্বামী, যেমন শ্বশুর-শাশুড়ী ও যেমন শ্বশুরবাড়ি সে পেয়েছে---তা
তার ভাগ্যের জিনিস।
উত্বী বলেন, ‘‘একদা বসরার
এক রাস্তায় পথ চলছিলাম। পথিমধ্যে দেখলাম, এক অপূর্বা সুন্দরী একজন কুশ্রী বৃদ্ধের সাথে
উপহাস ও হাসাহাসির সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলছে। আমি যুবতীর নিকটবর্তী এসে জিজ্ঞাসা
করলাম, ‘ঐ লোকটি তোমার কে?’ বলল, ‘আমার স্বামী।’ আমি অবাক হয়ে তাকে বললাম, ‘তোমার
এত সুন্দর রূপ-যৌবন থাকা সত্ত্বেও ঐ কুশ্রী বৃদ্ধকে নিয়ে কি করে সংসার কর?! এটা সত্যই
আশ্চর্যজনক ব্যাপার!!’
কিন্তু মহিলাটি আমাকে উত্তর
করল, ‘তাতে কি আছে? সম্ভবতঃ উনি আমার মত সুন্দরী পেয়ে আল্লাহর শুক্র আদায় করছেন। আর
আমি উনার মত কুশ্রী পেয়েও সবর করে আছি। আর শুক্রকারী এবং সবরকারী উভয়ে জান্নাতবাসী
হবে! আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা জুটিয়েছেন তা পেয়ে সন্তুষ্ট হওয়া উচিৎ নয় কি?!’
এই জবাবে আমি হতবাক হলাম।
অতঃপর কিছু না বলে প্রস্থান করলাম।’’
এমন জবাব সত্যিই এক মু’মিন
নারীর। পক্ষান্তরে কারো স্ত্রীকে অনুরূপ প্রলোভন, কুমন্ত্রণা ও ফুস্মন্তর দিয়ে তার
সংসার নষ্ট করা অবশ্যই কোন মানুষের কাজ নয়; তার পশ্চাতে থাকে শয়তান। পরন্তু প্রিয় নবী
(সাঃ) বলেন.
‘‘যে ব্যক্তি কারো স্ত্রী
অথবা ক্রীতদাসকে তার ( স্বামী বা প্রভুর বিরুদ্ধে) প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত
নয়।’’[5]
অবশ্য যে দম্পতি তকদীরে পূর্ণ ঈমান রাখে তারা কোন দিন বিচলিত হয় না।
এমন দম্পতি মু’মিন দম্পতি।
এমন চরিত্রবাণ আদর্শ দম্পতির লক্ষণ; লজ্জাশীল হয়, অপরকে কোন প্রকার ব্যথা দেয় না। শান্তি
ও শৃঙ্খলতাকামী হয়। পরোপকারী ও হিতাকাঙক্ষী হয়। সত্যবাদী, মিতভাষী, মিষ্টভাষী, ধৈর্যশীল,
কৃতজ্ঞ, অল্পে তুষ্ট, সহনশীল, অঙ্গীকার পালনকারী, আমানতদার, সংযমী, জিতেন্দ্রিয়, ভদ্র,
শিষ্টাচারী, বিনয়ী, স্মিতমুখো হয়। কাউকে লানতান বা অভিশাপ করে না, শীতল মেজাজী হয়।
কাউকে গালাগালি করে না, কারো চুগলী, লাগান-ভাজান, কারো গীবত, পরচর্চা, পরনিন্দা করে
না। অধীর হয় না। হিংসুটে, বখীল, পরশ্রীকাতর হয় না। যে আল্লাহর জন্য সব কিছুকে পছন্দ
করে ও ভালোবাসে, তাঁরই জন্য সকল কিছুকে ঘৃণা করে ও মন্দ বাসে। তাঁরই সন্তুষ্টলাভের
উদ্দেশ্যে সন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়।
উমার বিন খাত্তাব < বলেন,
‘নারী তিন প্রকার; প্রথম প্রকার নারী; যারা হয় সরলমতী, সতী এবং আত্মসমর্পণকারিণী, অর্থের
ব্যাপারে স্বামীকে সাহায্য করে, স্বামীর অর্থের অপচয় ঘটতে দেয় না। দ্বিতীয়
প্রকার নারী সন্তানের আধার। আর তৃতীয় প্রকার নারী হল সংকীর্ণ বেড়ি; আল্লাহ যে বান্দার
জন্য ইচ্ছা তার গর্দানে তা লটকিয়ে দেন।’[6]
এই ধরনের স্ত্রীরা হল
স্বামীর গলার গাব। এরা কেবল ‘হাম করে খায় আর ধুম করে শোয়।’ এদের না আখেরাতের
চিন্তা থাকে, আর না-ই দুনিয়ার কোন চিন্তা!
এক প্রকার স্ত্রী আছে; যারা
স্বামীর আদেশ-পালনে গড়িমসি, কুঁড়েমি ও গয়ংগচ্ছ করে। বরং তার সে হুকুম তা’মীল
না করতে বাহানা খোঁজে। কখনো বা নাক সিঁটকে উপেক্ষাও করে বসে। দ্বিতীয় প্রকার স্ত্রী;
যারা আদেশ শোনামাত্র নিমেষে পালন করে। কোন প্রকারের ওজর পেশ বা গড়িমসি করে না, তারা
হুকুমে হাজির হয়। কিন্তু আর এক প্রকার স্বামী-প্রাণা স্ত্রী আছে; যারা হুকুমের
আশা করে না। হুকুমের পূর্বে স্বামীর প্রয়োজন অনুমান করে পূর্ণ করে রাখে।
অনুরূপ স্বামীও তিন
প্রকার। শেষোক্তের দম্পতির যে স্বর্গীয় সুখ জগতেই উপভোগ হয় তা কল্পনাতীত!
[1] (তিরমিযী, ইমা, প্রভৃতি,আযি ২৮৪পৃঃ)
[2] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩৪১৩নং)
[3] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮২নং)
[4] (ঐ ১০৪৭নং)
[5] (আবু দাঊদ, নাসাঈ, তুহফাতুল আরূস, ১৪৬-১৪৭পৃঃ)
[6] (আল ইকদুল ফারীদ ৬/১১২)
[2] (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩৪১৩নং)
[3] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮২নং)
[4] (ঐ ১০৪৭নং)
[5] (আবু দাঊদ, নাসাঈ, তুহফাতুল আরূস, ১৪৬-১৪৭পৃঃ)
[6] (আল ইকদুল ফারীদ ৬/১১২)
ঘর-সংসার
নববধূ যখন সংসারে আসে তখন
সে একেবারে অপরিচিতা অনভিজ্ঞা থাকে। সাংসারিক কাজে থতমত খাওয়া তার স্বাভাবিক। কোন কাজ
ঠিকভাবে না পারাটাই প্রকৃতি। কারণ সকলে মায়ের বাড়ি থেকে পাকা গিন্নী হয়ে শবশুরালয় আসতে
পারে না, তাছাড়া শিক্ষিতা হলে তো মোটেই না। কারণ, তার অধিকাংশ সময় শিক্ষালাভেই ব্যয়
হয়ে থাকে। তাই শাশুড়ী-ননদের উচিৎ, তা মেনে নিয়ে নববধূকে স্নেহের সাথে কাজ শিক্ষা দেওয়া,
সংসার বুঝিয়ে দেওয়া। কাঁধে জোঁয়াল দিলেই যে সব গরু গাড়ি টানবে--তা নয়। অতএব নববধূর
প্রতি কোন প্রকার ভৎর্সনা, কটাক্ষ ও ব্যঙ্গোক্তি প্রয়োগ করা এবং এ নিয়ে তার সামনে তার
মা-বাপকে গঞ্জনা দেওয়া মানবিক খাতিরেও উচিৎ ও বৈধ নয়।
তাছাড়া নববধূ বাড়িতে এলে
তাকে নিজের মেয়ে বলে মনে করা শ্বশুর-শাশুড়ীর কর্তব্য। ‘বেটা দাসী এনেছে’ মনে করা হীন
লোকেদের পরিচয়। পরন্তু এই সময় তার কর্মক্ষমতা, কর্মপটুতা ও কর্মনিপুণতা দেখার সময় নয়।
প্রথমতঃ দেখার সময় ও বিষয় হল বেটা-বউয়ের প্রেম, তাদের মনের মিল। হৃদয়ের আদান-প্রদানের
সুযোগ দিয়ে তাদের মধ্যে প্রগাঢ় ভালোবাসা এলে তবে অন্য কিছু বিচার্য। নচেৎ ঘর ঢুকতেই
চালে মাথা লাগলে নববধূ সবভাবতঃই ঘাবড়ে যাবে। আর এর জন্য দায়ী হবে বাড়ির কর্ত্রী।
প্রীতিহীন সংসারে বধূনির্যাতন
চলে। যেখানে স্বামী তার পৌরুষ খেয়ে বসে। কেউ ভালো না বাসলেও যদি স্বামীই
কেবল ভালোবাসে, তাহলেও কোন প্রকার চোখ বুজে সহ্য করে সুদিনের আশা করা যায়। কিন্তু তার
কাছেও নিরাশ হলে স্ত্রীর আর কোন্ পথ খোলা থাকে? সকল পথ বন্ধ দেখে অবশেষে পাপ ও আত্মহত্যার
পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
শ্বশুর-শাশুড়ীর খিদমত বধূ
সাধ্যমত করবে। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি না বুঝেই খিদমতের (গায়ে তেল, পায়ে তেল নেওয়ার)
আকাঙক্ষা ও তা একান্ত অধিকার মনে করে থাকলেই কলহের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে আসে।
স্বামীর হৃদয়ে স্ত্রীর
আসন পৃথক। পিতা-মাতার আসন ভিন্ন। সকলকে সব-সব অধিকার প্রদান করতে পুরুষকে পৌরুষের বড়
কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। স্ত্রীর কথা নিয়ে যেমন মা-বাপের উপর খামাখা খাপ্পা
হওয়া বৈধ নয়, তেমনিই মা-বাপের কথা শুনে স্ত্রীর উপর নাহক অত্যাচার বৈধ নয়। এই উভয় সঙ্কটের
ঘূর্ণাবর্তে পুরুষকে নিজের বিবেক এবং শরীয়তের সাহায্য নিতে হয়। গোপনে স্ত্রীকে সান্ত্বনা
দিয়ে মা-বাপের (দোষ হলেও) তাদের বাহ্যতঃ বাধ্য হয়ে থাকাই শ্রেয়ঃ। তবে একান্ত সীমাহীন
পরিস্থিতিতে শরীয়তই এর ফায়সালা দিতে পারে। মা-বাপের কথামত চলা ফরয হলেও, নাহক বা অবৈধ
নির্দেশমত চলা হারাম। অকারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে তাদের কথা মেনে তালাক দেওয়া
মা-বাপের খিদমত ও আনুগত্যের পর্যায়ভুক্ত নয়।[1]
কতক মা-বাপ আছে, যারা তাদের
ছেলে তার স্ত্রীকে ভালোবাসুক---তা চায় না। পক্ষান্তরে ঐ ভালোবাসাই আবার নিজেদের মেয়ের
জন্য তাদের জামাইয়ের নিকট থেকে আশা করে। অতএব বিনা দোষে নিছক হিংসায় ‘দেখতে লারি চলন
বাঁকা’ বলে স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে ছেলের সে হুকুম মানা বৈধ নয়। উভয়কে রাজী ও শান্ত
করা তার কর্তব্য।
এক ব্যক্তি ইমাম আহমদের নিকট
এসে বলল, ‘আমার বাপ আমাকে আমার স্ত্রী তালাক দিতে আদেশ করছে, আমি কি করব?’ তিনি বললেন,
‘তালাক দিও না।’ লোকটি বলল, ‘হযরত উমার তাঁর ছেলে ইবনে উমারকে তাঁর স্ত্রী তালাক দিতে
বললে আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাঁকে (ইবনে উমারকে) তালাক দিতে আদেশ করেননি কি?’ ইমাম আহমদ
বললেন, ‘তোমার বাপও কি উমারের মত?’ কারণ, উমার (রাঃ) কারো প্রতি যুলুম করবেন---তা কল্পনার
বাইরে। হয়তো তিনি ঐ মেয়েটির ব্যাপারে এমন কিছু জানতেন যার কারণে তালাক দেওয়া জরুরী
ছিল। তাই নবী (সাঃ) ইবনে উমারকে তাঁর পিতার কথা অনুসারে তালাক দিতে আদেশ করেছিলেন।
সুতরাং স্ত্রীর সবভাব মন্দ হলে অবশ্যই মা-বাপের কথায় তালাক দিতে হবে।[2]
অনুরূপ বলা যায় হযরত ইবরাহীম
(আঃ)এর তাঁর পুত্র ইসমাঈলকে দরজার চৌকাঠ বদলাতে আদেশ করার ব্যাপারেও।
সুপুরুষ সংসারে বিবেক নিয়ে
চলে। অতএব ‘বোন ভাত পায় না, আর শালীর পাতে মোন্ডা’ দেওয়া তার উচিৎ নয়। পক্ষান্তরে স্ত্রীর
দুর্নাম রটলে তাতে কোন বিচার-বিবেচনা না করেই তার ও তার আত্মীয়র প্রতি খাপ্পা হওয়াও
উচিৎ নয়। সমস্ত সামঞ্জস্য বজায় রেখে তাকে সংসার-তরী আগে বেয়ে নিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে
‘বউ ভাঙ্গলে সরা, হবে পাড়া পাড়া, আর গিন্নী ভাঙ্গলে নাদা, ও কিছু নয় দাদা’ কথার খেয়াল
রেখে এমন উপায় অবলম্বন করবে; যাতে ‘সাপও মরে এবং লাঠিও না ভাঙ্গে।’ কিন্তু হায়! যেখানে
বিবেক বিবেকের কদর করে না, সেখানে আর কি আশা করা যাবে?
বাড়ির কথা বাইরে গেলেই বিপত্তি
অধিক বেড়ে যায়। হিংসুটে শাঁকচুন্নীদের পরামর্শে বা কান-ভাঙানিতে শাশুড়ীর মন বিষ হয়ে
উঠে। বেপর্দা পরিবেশেই এমন পরিস্থিতি অধিকতর সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বিভিন্ন উপন্যাস ও রূপকথার
প্রেমকাহিনীতে যে কাল্পনিক প্রেম ও ভালোবাসার বর্ণনা পাওয়া যায় স্বামী-স্ত্রী
বা শ্বশুর-শাশুড়ী পরস্পরের নিকট থেকে সেরূপ আশা করলে অবশ্যই মন আঘাত পাবে; যা মহাভুল।
কারণ, কাল্পনিক প্রেম কেবল কল্পনা ও খেয়ালের জগতে মানুষের মানসপটেই বিচরণ করে। বাস্তবজগতে
তার কোন অস্তিত্ব ও উদাহরণই নেই, আর থাকলেও তা বিরল।
পক্ষান্তরে সংসারে কলহ হয়
অভাবে, নচেৎ সবভাবে। দরজা দিয়ে সংসারে অভাব প্রবেশ করলে জানালা দিয়ে প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-মমতা
সব লুকিয়ে পলায়ন করে। অর্থ থাকলে বন্ধু অনেক হয়, প্রীতির উপর প্রীতির গীতি কানে ঝালা
ধরায়। কিন্তু অভাব দেখা দিলেই স্বাই আপন রাস্তা ধরে। মা-বাপ, ভাই-বন্ধু এমন কি শেষে
স্ত্রীও ‘ছাড়ব-ছাড়ব’ হয়। এমন না হলে সবভাবগুণেই একে অপরের প্রতি দোষারোপ করে কলহ বাধিয়ে
থাকে।
আড়ি পাতা (অভিমান করা) মেয়েদের
এক সহজাত কু-অভ্যাস। এতে তাদের কেউ কারো খাতির করে না। প্রয়োজনমত শাসন বা সোহাগ না
পেলে এরা মাথায় উঠে গিয়ে সর্বনাশ আনে। এ সমস্যার সমাধানও পুরুষ নিজের পৌরুষ দ্বারা
করতে পারে। কিন্তু যে শাসনাধীনা নয় তাকে মাথা থেকে নামাবে কে? আল্লাহর ভয় না থাকলে
সংসারে শান্তির বিহঙ্গ স্থায়ী নীড় বাঁধবে কিভাবে? তাছাড়া কথাতেই আছে ‘পীর মানে না গাঁয়ে,
পীর মানে না মায়ে। পীর মানে না গরুতে, পীর মানে না জরুতে।’ সুতরাং গরুর মত বিবেকের
মাথা খাওয়া ছাড়া সম্মানার্হের সাথে অপমানের আচরণ করা সহজ নয়।
ভালোবাসা এমন এক বস্ত্ত যা
জাত-পাত মানে না, শত্রুতা মানে না। প্রেমিকার পিতা ঘোর শত্রু হলেও প্রেমিক তাকে বর্জন
করতে পারে না। প্রাণের বদলেও তাকে উদ্ধার করে আনে। তাই তো শ্বশুরবাড়ির কারো সাথে কলহ
করে অথবা শ্যালক তথা ভগ্নিপতি অথবা তার বাড়ির লোক বোনকে জবালায় বলে নিজেদের স্ত্রীর
উপর যারা প্রতিশোধমূলক নির্যাতনের রুলার চালায় তারা নিশ্চয়ই নীরস প্রাণের প্রেমহীন
স্বামী; যারা প্রেমের মর্ম ও মূল্য সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ অথবা উদাসীন।
‘‘চেনে তাহা প্রেম, জানে শুধু প্রাণ-
কোথা হতে আসে এত অকারণে প্রাণে-প্রাণে বেদনার টান।’’
তাছাড়া বিবেকহীনতার প্রতিশোধে
বিবেকহীনতা নয় বরং বিবেক ব্যবহার করলেই সাফল্য লাভ হয়।
স্বামী ভালো হলে এবং
শ্বশুর-শাশুড়ী ভালো না হলেও স্বামী-সুখের জন্যই ধৈর্যের সাথে মহিলার সংসার করা
উচিৎ। কারণ, ‘ স্বামী-সুখে বনবাস।’ স্বামীর সুখ থাকলে বনেও বাস করতে সতীর দ্বিধা
নেই। নচেৎ স্বামী উদাসীন হলে তার স্ত্রী বিধবার মত জীবন-যাপন করে।
পরিশেষে একটি কথা সংসারের
সকলকে খেয়ালে রাখা উচিৎ যে,
‘আছে এমন পূর্বাপর সকল ঘরে কথান্তর,
তাতে কি কেউ হয় গো পর?
নিত্যি কিত্যি নিত্যি লেঠা গৃহধর্মের ধর্ম সেটা,
ভালোমন্দ হয় কথাটা-
তা শুনলে কি চলে ঘর?’
[1] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ
২/৭৫৬)
[2] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ
২/৭৫৫-৭৫৬)
ঘর জামাই
পুত্র পোষার মত জামাই পোষার
রেওয়াজও একান্ত নিরুপায় বা শখের ক্ষেত্রে কোন কোন লোকে মেনে থাকে। আর সাধারণতঃ কোন
নিরুপায় অথবা আদরলোভী যুবকই ঘর-জামাই গিয়ে থাকে। অবশ্য ইসলামের নীতি হল, স্বামী
তার স্ত্রী নিজের কাছে রাখবে। অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও বাসস্থানের দায়িত্ব
স্বামীর উপর।[1]
এর বিপরীত হলে সাধারণতঃ ফলও
বিপরীত হয়। অর্থাৎ দ্বীনদারী না থাকলে অথবা কম থাকলে স্ত্রীই স্বামী সেজে বসে।
তাছাড়া একজন গরীব লোক যদি ধনীর মেয়ে বিয়ে করে এবং তারই বাসস্থান ও ভরণ-পোষণে
স্বামী অনুগৃহীত হয়, তাহলে সে স্ত্রী পায় না বরং পায় একজন শাসক। আর তখন সেই জামাইয়ের
অসম্মান, অনাদর ও অশান্তির কথা সীমা অতিক্রম করে যায়। সমাজে ঘর-জামাই প্রসঙ্গে যে সকল
প্রবাদ প্রচলিত আছে তা এ কথারই বাস্তবতা প্রমাণ করে।
যেমন বলা হয়, ‘ঘর-জামায়ের
মান নাই।’
‘ঘর-জামাইরাই বদ হয়।’
‘ঘর-জামাই উড়নচন্ডেই হয়।
কারণ, ধন-মাল তার নিজের কামাই নয় তো।’
‘আহমক নম্বর ছয়,
যে পরের বাড়ি ঘর জামাই রয়।’
‘কালো বামন, কটা শুদ্র, বেঁটে মুসলমান,
ঘর-জামাই পোষ্যপুত্র পাঁচজনাই সমান!’
‘ঘর জামায়ের পোড়ার মুখ,
মরা-বাঁচা সমান সুখ!’
‘বাইরের জামাই নুরুল আলম, ঘরের জামাই নুরো,
ভাত খেয়ে নাও নুরুল আলম, ভাত খেসেরে নুরো!’
‘রুয়ের মুড়ো কাষ্ঠ মুড়ো দাও আমার পাতে,
আড়ের মুড়ো ঘৃত মুড়ো দাও জামায়ের পাতে!’
‘যা ছিল আমানী-পান্তা মায়ে-ঝিয়ে খেনু,
ঘর-জামাই শামুর তরে ধান শুকাতে দিনু!’
সুতরাং এমন সংসারে যে সুখ
নেই তা বলাই বাহুল্য।
[1] (সূরা আত-ত্বলাক (৬৫)
: ৬)
মনোমালিন্য
‘‘সংসার সাগরে দুঃখ-তরঙ্গের খেলা,
আশা তার একমাত্র ভেলা।’’
কিন্তু সেই ভেলা ডুবে গেলে
আর কার কি সাধ্য? স্বামী যদি স্ত্রীকে না চায়। তার কোন ত্রুটির কারণে তাকে উপেক্ষা
করে, তবে স্ত্রী চাইলেও কি করতে পারে? মহান আল্লাহ তার সমাধান দিয়েছেনঃ-
‘‘স্ত্রী যদি তার স্বামীর
দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা আপোস-নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোন
দোষ নেই। বস্ত্ততঃ আপোস করা অতি উত্তম।[1]
স্ত্রী নিজের কিছু অধিকার
বিসর্জন দিয়ে সন্ধির মাধ্যমে স্বামীর সংসর্গ গ্রহণ করাই একমাত্র পথ।
কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে
উপেক্ষা করতে চাইলে এবং স্বামী তাকে প্রাণ দিয়ে চাইলে তার সমাধান কি? স্ত্রীর
এই উপেক্ষা যদি সংগত কারণে হয়; অর্থাৎ স্বামীর ভরণ-পোষণ বা সঙ্গমের অযোগ্যতা
যথার্থভাবে প্রমাণিত হয় অথবা আরোপিত শর্তাদি পালন না করে থাকে, তাহলে এ বিষয়ে আল্লাহ
বলেন,
‘‘তবে যদি তাদের উভয়ের আশংকা
হয় যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না এবং তোমরা যদি আশংকা কর যে,
তারা আল্লাহর সীমারেখা (বাস্তবিকই) রক্ষা করে চলতে সক্ষম নয়। তবে সে অবস্থায় স্ত্রী
কোন কিছুর বিনিময়ে (মোহর ফেরৎ বা অতিরিক্ত কিছু অর্থদন্ড দিয়ে) ( স্বামী থেকে) নিষ্কৃতি
পেতে চাইলে তাতে ( স্বামী-স্ত্রীর) কারো পাপ নেই। এ সব আল্লাহর গন্ডীসীমা। অতএব তোমরা
তা লঙ্ঘন করো না, আর যারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা উল্লংঘন করে তারাই অত্যাচারী।’’[2]
সুতরাং স্বামী মোহর ফেরৎ নিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেবে। না দিলে স্ত্রী
কাজীর নিকট অভিযোগ করে ‘খোলা তালাক’ নিতে পারে।
পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি অকারণে
বা সামান্য ত্রুটির কারণে; যেমন পর্দায় থাকতে পারবে না বলে, স্বামী লজেন্স কিনে
খাওয়ায় না বলে অথবা প্যান্ট পরে না বলে ‘খোলা’ চায় তবে তার উপর জান্নাতের সুগন্ধিও
হারাম।[3]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘খোলা তালাক প্রার্থিনী
এবং বিবাহ বন্ধন ছিন্নকারিণীরা মুনাফিক মেয়ে।’’[4]
তালাক বৈধ হলেও তা কোন খেল-তামাশা নয়। পর্যাপ্ত কারণ বিনা তালাক দেওয়া
বা নেওয়ার উপর জবাবদিহি করতে হবে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গকে।
পক্ষান্তরে স্ত্রী একান্ত
অবাধ্য হলে স্বামীর উচিৎ, প্রথমতঃ তাকে সদুপায়ে উপদেশ দেওয়া ও বুঝানো। আল্লাহ
ও তাঁর আযাবের ভয় প্রদর্শন করা। তাতেও বিরত না হলে তার শয্যাত্যাগ করা। তবে কক্ষ ত্যাগ
করা উচিৎ নয়। কিন্তু শয্যাত্যাগ করাকে যদি স্ত্রী ভালো মনে করে এবং তাতে কোন ফললাভ
না হয়, তাহলে এরপর সে তাকে প্রহার করতে পারে। তবে চেহারায় নয় বা এমন প্রহার নয়; যাতে
কেটে-ফুটে যায়।[5]
এতে যদি স্ত্রী স্বামীর
অনুগতা হয়ে সোজা পথে এসে যায়, তাহলে আর অন্য কোন ভিন্নপথ অবলম্বন করা (তালাক দেওয়া)
স্বামীর জন্য উচিৎ নয়।[6]
প্রকাশ যে, স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে প্রেম বা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে কোন প্রকার যোগ-যাদু ইত্যাদি অভিচার ক্রিয়ার সাহায্য
নেওয়া বৈধ নয়। কারণ যাদু এক প্রকার কুফরী।[7]
৪ মাস অপেক্ষা কম সময়ের জন্য
স্বামী তার স্ত্রীর নিকট না যাওয়ার কসম খেয়ে সেই সময়ের ভিতরে স্ত্রী-মিলন চাইলে
কসমের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। মেয়াদ পূর্ণ করলে কাফ্ফারা লাগবে না। পক্ষান্তরে ৪ মাসের
অধিক সময়ের জন্য স্ত্রী-স্পর্শ না করার কসম খেলে কসমের কাফ্ফারা দিয়ে ৪ মাসের পূর্বেই
স্ত্রীর নিকট যাওয়া জরুরী। নচেৎ ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে স্ত্রীর তালাক হয়ে যাবে বা
স্ত্রী কাজীর নিকট অভিযোগ করে স্বামীকে তার সংসর্গে আসতে অথবা তালাক দিতে বাধ্য
করতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘যারা নিজেদের স্ত্রীর কাছে
না যাওয়ার শপথ (ঈলা) করে তারা চার মাস অপেক্ষা করবে; অতঃপর তারা যদি মিলে যায়, তবে
নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যদি তারা তালাকই দিতে সংকল্প করে, তবে আল্লাহ
সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’’[8]
স্ত্রী পছন্দ না হলে যদি স্বামী তালাক দেয়, তবে প্রদত্ত মোহর
সে ফেরৎ পাবে না। স্ত্রী ‘খোলা’ নিলে স্বামী মোহর ফেরৎ পাবে। সুতরাং এই মোহর
বা অতিরিক্ত অর্থদন্ডের লোভে স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালিয়ে তাকে ‘খোলা’ নিতে বাধ্য করা
স্বামীর জন্য বৈধ নয়। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘হে মুমিনগণ! জোর-জুলুম
করে নারীদের ওয়ারেস হওয়া তোমাদের জন্য হালাল নয়। তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার
কিয়দংশ আত্মসাৎ করার (ফিরিয়ে নেবার) উদ্দেশ্যে তাদের উপর উৎপীড়ন করো না (বা আটক রেখো
না); যদি না তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়।’’[9]
তিনি আরো বলেন,
‘‘আর যদি এক স্ত্রীর স্থলে
অন্য স্ত্রী গ্রহণ করারই ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থ দিয়ে থাক, তবুও তা
থেকে কিছুই গ্রহণ করো না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপাচরণ দ্বারা তা গ্রহণ
করবে?’’[10]
স্বামীর এরূপ দুরভিসন্ধি বুঝা গেলে সে মোহর ফেরৎ পাবে না।[11]
স্বামীর জন্য বৈধ নয়
যে, সে নিছক জব্দ করা ও কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে লটকে রাখবে।
আল্লাহর আদেশ,
‘‘তাদের উপর নির্যাতন বা
বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না। যে ব্যক্তি এমন করে সে নিজেরই ক্ষতি
করে। আর তোমরা আল্লাহর নির্দেশসমূহকে ঠাট্টা-তামাশার বস্ত্ত মনে করো না।--।’’[12]
বনিবনাও চরম স্পর্শকাতর পর্যায়ে পৌঁছে গেলে, প্রহারাদি করেও স্ত্রী
স্বামীর অনুগতা না হলে আর এক উপায় আল্লাহ বলে দিয়েছেন,
‘‘যদি উভয়ের মধ্যে বিরোধ
আশঙ্কা কর তবে তোমরা এর ( স্বামীর) পরিবার হতে একজন ও ওর (স্ত্রীর) পরিবার হতে একজন
সালিস নিযুক্ত কর; যদি তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চায় তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল
অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন।’’[13]
এ উপায় ফলপ্রসূ না হলে তিক্তময় জীবন থেকে নিষ্কৃতি পেতে শেষ পন্থা হল
তালাক। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘তিন ব্যক্তি দুআ করে কিন্তু
কবুল হয় না; যে তার অসৎ চরিত্রের স্ত্রীকে তালাক দেয় না। যে ঋণ দিয়ে সাক্ষী রাখে না
এবং যে নির্বোধকে নিজের অর্থ প্রদান করে; অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা নির্বোধদেরকে
তোমাদের অর্থ প্রদান করো না।’’[14]
তালাক কোন বিধেয় কর্ম নয়, বরং বৈধ কর্ম। বড় হতভাগারাই তালাকের আশ্রয়
নিয়ে থাকে। আসলে তালাক হল ইমারজেন্সী গেটের মতো। যখন চারিদিকে আগুন লাগে এবং সমস্ত
গেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন নিরুপায়ে ঐ গেট ব্যবহার না করলে জীবন বাঁচে না।
[1] (সূরা আন-নিসা (৪) : ১২৮)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৯)
[3] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে হিববান , সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৬নং)
[4] (নাসাঈ, বাইহাকী, মুসনাদে আহমদ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৩২নং)
[5] (আবু দাঊদ)
[6] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[7] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/১৪৮)
[8] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৬-২২৭, ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৭৮-১৭৯)
[9] (সূরা আন-নিসা (৪) :১৯)
[10] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২০)
[11] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৬৮)
[12] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩১)
[13] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) : ৩৫)
[14] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২) (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩০৭৫নং)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৯)
[3] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে হিববান , সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ২৭০৬নং)
[4] (নাসাঈ, বাইহাকী, মুসনাদে আহমদ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৩২নং)
[5] (আবু দাঊদ)
[6] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[7] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/১৪৮)
[8] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৬-২২৭, ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৭৮-১৭৯)
[9] (সূরা আন-নিসা (৪) :১৯)
[10] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২০)
[11] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৬৮)
[12] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩১)
[13] (সূরা আল-বাক্বারা (৪) : ৩৫)
[14] (সূরা আন-নিসা (৪) : ২) (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৩০৭৫নং)
ত্বালাক্ব
স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে অথবা
পবিত্রা থাকলে এবং ঐ পবিত্রতায় কোন সঙ্গম না করে থাকলে এক তালাক দেবে।[1]
আর এর ব্যাপারে দুই ব্যক্তিকে
সাক্ষী রাখবে।[2]
অতঃপর স্বামী স্ত্রীকে
ঘর থেকে যেতে বলবে না এবং স্ত্রীও স্বামী-গৃহ ত্যাগ করবে না। বরং গর্ভকাল বা
তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এই ইদ্দতের মাঝে স্ত্রী ভরণ-পোষণও পাবে। মহান আল্লাহ
বলেন,
‘‘হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের
স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর তখন ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও, ইদ্দতের
হিসাব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। তোমরা ওদেরকে সবগৃহ হতে বের করো না এবং
ওরাও যেন সে ঘর হতে বের না হয়; যদি না ওরা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এ হল আল্লাহর
বিধান, যে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো
আল্লাহ এরপর কোন উপায় বের করে দেবেন।’[3]
অতঃপর ভুল বুঝে স্বামীর মন ও মতের পরিবর্তন ঘটলে যদি স্ত্রী ত্যাগ
করতে না চায়, তাহলে ইদ্দতের ভিতরেই (তিন মাসিকের পূর্বে পূর্বেই) তাকে ফিরিয়ে নিতে
পারে। তবে ফিরিয়ে নেবার সময়ও দুই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখবে।
উল্লেখ্য যে, স্ত্রী প্রত্যানীতা
করার সময় তার সম্মতি জরুরী নয়।[4]
কিন্তু মন বা মতের পরির্বতন
না হলে ও স্ত্রীকে তার জীবন থেকে আরো দূর করতে চাইলে দ্বিতীয় পবিত্রতায় দ্বিতীয় তালাক
দেবে এবং অনুরূপ সাক্ষী রাখবে। এরপরও স্ত্রী স্বামীগৃহ ত্যাগ করবে না এবং
স্বামীও তাকে বের করতে পারবে না। পরন্তু তাকে উত্যক্ত করে সংকটে ফেলাও বৈধ নয়।[5]
এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর উচিৎ,
নানা অঙ্গসজ্জা ও বিভিন্ন প্রেম-ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে স্বামীর মনকে নিজের দিকে
আকর্ষণ করার চেষ্টা করা।
এখনও যদি মত পরিবর্তন হয়,
তাহলে স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে পারে। নচেৎ একেবারে চিরতরে বিদায় করতে চাইলে তৃতীয়
পবিত্রতায় তৃতীয় তালাক দিয়ে বিবাহ চিরতরে বিচ্ছেদ করবে এবং যথানিয়মে সাক্ষী রাখবে।
এরপর স্ত্রী স্বামীগৃহ ত্যাগ করবে, আর তার জন্য কোন ভরণ-পোষণ নেই।[6]
তৃতীয় তালাকের পর স্বামী
চাইলেও স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে আনতে পারে না। নতুন মোহর ও বিবাহ আকদেও নয়। হ্যাঁ, তবে যদি
ঐ স্ত্রী সেবচ্ছায় দ্বিতীয় বিবাহ করে, স্বামী-সঙ্গম করে এবং সে স্বামী
সেবচ্ছায় তালাক দেয় অথবা মারা যায়, তবে ইদ্দতের পর পুনরায় প্রথম স্বামী
নব-বিবাহ-বন্ধনে ঐ স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারে। এর পূর্বে নয়।[7]
এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে
যদি কেউ ঐ নারীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যে বিবাহ ক’রে ২/১ রাত্রি
সহবাস ক’রে তালাক দেয়, তবুও পূর্ব স্বামীর জন্য সে বৈধ হবে না। কারণ, এ কাজ পরিকল্পিতভাবেই
করা হয় এবং স্ত্রীও অনেক ক্ষেত্রে এ কাজে রাজী থাকে না। পরন্তু হাদীস শরীফে এই হালালকারী
দ্বিতীয় স্বামীকে ‘ধার করা ষাঁড় ও অভিশপ্ত বলা হয়েছে।’[8]
পক্ষান্তরে এক অথবা দুই তালাক
দেওয়ার পর ফিরিয়ে না নিলে এবং তার বাকী ইদ্দত তালাক না দিয়ে অতিবাহিত হলে স্ত্রী হারাম
হয়ে যায় ঠিকই; কিন্তু তারপরেও যদি স্বামী-স্ত্রী পুনরায় সংসার করতে চায়, তবে
নতুন মোহর দিয়ে নতুনভাবে বিবাহ (আক্দ) পড়ালে এই পুনর্বিবাহে উভয়ে একত্রিত হতে পারে।
আর এ ক্ষেত্রে ঐ শাস্তি নেই।
কিন্তু পূর্বে যে এক অথবা
দুই তালাক সে ব্যবহার করেছে, তা ঐ স্ত্রীর পক্ষে সংখ্যায় গণ্য থাকবে। সুতরাং দুই তালাক
দেওয়ার পর ফিরিয়ে নিয়ে থাকলে বা ইদ্দত পার হয়ে যাওয়ার পর পুনর্বিবাহ করে থাকলে সে আর
একটিমাত্র তালাকের মালিক থাকবে। আর একটিবার তালাক দিলে স্ত্রী এমন হারাম হবে যে, সে
দ্বিতীয় বিবাহের স্বামী তাকে সেবচ্ছায় তালাক না দিলে বা মারা না গেলে পূর্ব
স্বামী আর তাকে (বিবাহের মাধ্যমে) ফিরে পাবে না।
অতএব সারা জীবনে একটি
স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী মাত্র ৩ বার তালাকেরই মালিক হয়। ১০ বছর পর পর ৩ বার
তালাক দিলেও শেষ বারে পূর্ব অবস্থা ছাড়া আর ফিরিয়ে নিতে বা পুনর্বিবাহ করতে পারে না।[9]
অবশ্য দ্বিতীয় স্বামী
গ্রহণ করার পর তালাক বা মৃত্যুর কারণে ইদ্দতের পর প্রথম স্বামী যখন নতুন মোহর
সহ পুনর্বিবাহ করে, তখন আবার সে নতুন করেই তিন তালাকের মালিক হয়।[10]
তালাকপ্রাপ্তা নারী যদি বিধিমত
তার স্বামীকে পুনর্বিবাহ করতে চায় বা অন্য স্বামী গ্রহণ করতে চায়, তবে
কোন স্বার্থ, রাগ বা বিদ্বেষবশতঃ তাকে এতে বাধা দেওয়া তার অভিভাবকের জন্য বৈধ নয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আর তোমরা যখন স্ত্রী বর্জন
কর এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল অতিবাহিত করে তখন তাদেরকে তাদের
স্বামী গ্রহণ করতে বাধা দিও না; যদি তারা আপোসে খুশীমত রাজী
হয়ে যায়।’’[11]
স্ত্রীর মাসিকাবস্থায় তালাক দিলে স্বামী গোনাহগার হবে এবং সে
তালাক গণ্য হবে না। পবিত্রাবস্থায় তালাক দিলেই তবে তা গণ্য হবে। স্ত্রীর মাসিকের খবর
না জেনে তালাক দিলে গোনাহগার হবে না এবং তালাকও নয়। পক্ষান্তরে জেনে-শুনে দিলেই গোনাহগার
হবে।[12]
অনুরূপ এক মজলিসে তিন তালাক
হারাম। সুতরাং যদি কেউ তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে ‘তোমাকে তালাক, তালাক, তালাক, অথবা
‘তোমাকে তিন তালাক’ বলে বা এর অধিক সংখ্যা উল্লেখ করে, তবে তা কেবল এক তালাকই গণ্য
হবে। এইভাবে এক সঙ্গে তিন তালাক দেওয়ার পর ভুল বুঝে পুনরায় যথারীতি ইদ্দতে স্ত্রীকে
ফিরিয়ে নিতে চাইলে বা ইদ্দতের পর যথানিয়মে পুনর্বিবাহ করতে কোন বাধা নেই।[13]
কিন্তু অনুরূপ তিনবার করে
থাকলে পূর্বোক্ত নিয়মানুযায়ী চাইলে পুনঃ সংসার করতে পারে। নচেৎ না।
অনিয়মে তালাক দেওয়া আল্লাহর
নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করার অন্তর্ভুক্ত।[14]
সুতরাং সময় ও সংখ্যা বুঝে
তালাক দেওয়া তালাকদাতার জন্য ফরয।
যদি স্বামী তার স্ত্রীকে
বলে ‘যদি তুমি অমুক কাজ কর বা অমুক জায়গায় যাও, তাহলে তোমাকে তালাক’ এবং এই বলাতে যদি
সত্য সত্যই তালাকের নিয়ত থাকে, তবে এমন লটকিয়ে রাখা তালাক স্ত্রীর ঐ কাজ করার সাথে
সাথে গণ্য হয়ে যায়।
অবশ্য তালাকের নিয়ত না থেকে
যদি স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে কেবল ঐ কাজে কঠোর নিষেধ করাই উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তালাক গণ্য
হবে না। তবে স্ত্রীর ঐ কাজ করার পর স্বামীকে কসমের কাফ্ফারা লাগবে।[15]
অনুরূপ তালাকের উপর কসম খেলেও।
যেমন যদি কেউ তার ভাইকে বললে, ‘তুই যদি এই করিস, তাহলে আমার স্ত্রী তালাক’ বা ‘আমি
যদি তোর ঘর যাই, তাহলে আমার স্ত্রী তালাক’, তবে এ ক্ষেত্রেও নিয়ত বিচার্য। তালাকের
প্রকৃত নিয়ত হলে তালাক হবে; নচেৎ না। তবে কসমের কাফ্ফারা অবশ্যই লাগবে। অনুরূপ তর্কের
সময়ও যদি কেউ বলে ‘এই যদি না হয় তবে আমার স্ত্রী তালাক’ অথচ বাস্তব তার প্রতিকূল হয়,
তাহলে ঐ একই বিধান প্রযোজ্য। তবে তালাক নিয়ে এ ধরনের খেল খেলা স্বামীর জন্য উচিৎ
নয়।[16]
কেউ যদি স্বামীকে তালাক
দিতে বাধ্য করে, তবে এই জোরপূর্বক অনিচ্ছাকৃত তালাক গণ্য নয়। অনুরূপ নেশাগ্রস্ত মাতালের
তালাক।[17]
চরম রেগে হিতাহিত জ্ঞানহীন
ক্রুদ্ধ ব্যক্তির তালাক।[18]
ভুল করে তালাক, অতিশয় ভীত-বিহ্বল
ব্যক্তির তালাক গণ্য নয়।[19]
মরণ-শয্যায় শায়িত স্বামী
তার মীরাস থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে তালাক দিচ্ছে বলে জানা গেলে তাও ধর্তব্য
নয়।
সুতরাং সে তার ওয়ারেস হবে
এবং স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালন করবে।[20]
স্বামী তালাকের ব্যাপারে
স্ত্রীকে এখতিয়ার দিলে এবং স্ত্রী তালাক পছন্দ করলে তালাক হয়ে যাবে।
বিবাহ ও তালাক নিয়ে কোন ঠাট্টা-মজাক
নেই। মজাক করেও স্ত্রীকে তালাক দিলে তা বাস্তব।[21]
বিবাহ প্রস্তাবের পর কোন
মনোমালিন্য হলে স্বামী তার বাগদত্তা স্ত্রীর উদ্দেশ্যে যদি তালাক বা হারাম বলে
উল্লেখ করে, তবে তা ধর্তব্য নয়। অবশ্য বিবাহের পর তাকে কসমের কাফ্ফারা লাগবে।[22]
তালাকের খবর স্ত্রী না পেলেও
তালাক গণ্য হবে।[23]
আল্লাহ, তাঁর রসূল বা দ্বীনকে
স্বামী গালি দিলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। ফিরে নিতে চাইলে তওবা করে নতুন মোহরে
পুনর্বিবাহ করতে হবে।[24]
চিঠির মাধ্যমে তালাক দিলে
তা গণ্য হবে। অনুরূপ বোবা যদি ইঙ্গিতে তালাক দেয় তবে তাও গণ্য। অবশ্য লিখতে জানলে তার
ইঙ্গিত গণ্য নয়।[25]
[1] (বুখারী, মুসলিম)
[2] (সূরা আত্-ত্বলাক (৬৫) : ২, সআবু দাঊদ ১৯১৫নং)
[3] (আলকুরআন কারীম ৬৫/১)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৬৬)
[5] (সূরা আত-ত্বলাক্ব (৬৫) : ৬)
[6] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৬৭)
[7] (সূরা আল-বাক্বারা (২ ) : ২৩০)
[8] (ইরঃ ৬/৩০৯, ইবনে মাজাহ ১৯৩৬নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৯৬নং)
[9] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৪৭)
[10] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৪৯)
[11] (সূরা আল-বাক্বারাহ (২) : ২৩২)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৬৩-৬৪ পৃঃ)
[13] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩/১৭১-১৭৩, ২৬/১৩৩, তুহফাতুল আরূস, ১৪৮ ও ২২৮ পৃঃ)
[14] (সূরা আল-বাক্বারা (২) ; ২২৯, ৬৫/১)
[15] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৫/৯৪)
[16] (কিতাবুদ দাওয়াহ২/২৪২, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯১)
[17] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩২/২৫২)
[18] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/৩৪৭, ২৬/১৩৩)
[19] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২২১)
[20] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৪৯)
[21] (ইরুওয়াউল গালীল ১৮২৬নং)
[22] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৮, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/৭৮৭)
[23] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮০৪)
[24] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৮৩)
[25] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২২৯)
[2] (সূরা আত্-ত্বলাক (৬৫) : ২, সআবু দাঊদ ১৯১৫নং)
[3] (আলকুরআন কারীম ৬৫/১)
[4] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৬৬)
[5] (সূরা আত-ত্বলাক্ব (৬৫) : ৬)
[6] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৬৭)
[7] (সূরা আল-বাক্বারা (২ ) : ২৩০)
[8] (ইরঃ ৬/৩০৯, ইবনে মাজাহ ১৯৩৬নং, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৯৬নং)
[9] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৪৭)
[10] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৪৯)
[11] (সূরা আল-বাক্বারাহ (২) : ২৩২)
[12] (ফাতাওয়াল মারআহ ৬৩-৬৪ পৃঃ)
[13] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩/১৭১-১৭৩, ২৬/১৩৩, তুহফাতুল আরূস, ১৪৮ ও ২২৮ পৃঃ)
[14] (সূরা আল-বাক্বারা (২) ; ২২৯, ৬৫/১)
[15] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৫/৯৪)
[16] (কিতাবুদ দাওয়াহ২/২৪২, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯১)
[17] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৩২/২৫২)
[18] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/৩৪৭, ২৬/১৩৩)
[19] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২২১)
[20] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৪৯)
[21] (ইরুওয়াউল গালীল ১৮২৬নং)
[22] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ৯/৫৮, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/৭৮৭)
[23] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮০৪)
[24] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৮৩)
[25] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২২৯)
ইদ্দত
স্বামী তালাক দিলে স্ত্রী
ইদ্দত পালন না করে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে না। এতে স্বামী-স্ত্রীকে
বিবাহ-বিচ্ছেদের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে সেই সুযোগে স্ত্রী
প্রত্যানীতা করতে পারে। তাছাড়া ইদ্দত বিধিবদ্ধ করায় এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিবাহ
কোন ছেলেখেলার বিষয় নয়। এর আগে-পিছে রয়েছে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি ও সীমা-সময়।
পরন্তু ইদ্দতের মাঝে নারীর
গর্ভাশয় পরীক্ষা হয়। যাতে দুই স্বামীর তরফ থেকে বংশের সংমিশ্রণ না ঘটে।
তালাকপ্রাপ্ত নারী যদি অরমিতা
হয় বা তার বাসরই না হয়ে থাকে, তবে তার কোন ইদ্দত নেই।[1]
রমিতা মহিলা যদি ঋতুমতী হয়,
তবে তার ইদ্দত তিন মাসিক; তিন মাস নয়। সুতরাং সন্তানকে দুধ পান করাবার সময় যদি ২/৩
বছরও মাসিক না হয়, তবে তিন মাসিক না হওয়া পর্যন্ত সে ইদ্দতেই থাকবে।[2]
ঋতুহীনা কিশোরী বা বৃদ্ধা
হলে তার ইদ্দত তিন মাস।[3]
কিন্তু ইদ্দত শুরু করে কিছু
দিন পরে তার ঋতু শুরু হলে, ঋতু হিসাবেই তাকে তিন ইদ্দত পালন করতে হবে।[4]
কোন জানা কারণে মাসিক বন্ধ
থাকলে বা হবার সম্ভাবনা না থাকলে তার ইদ্দতও তিন মাস। কিন্তু হবার র্সম্ভাবনা
থাকলে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তিন মাসিক ইদ্দত পালন করবে। অবশ্য যদি অজানা কারণে
মাসিক বন্ধ থাকে তাহলে ১ বছর অর্থাৎ গর্ভের ৯ মাস এবং ইদ্দতের তিন মাস অপেক্ষা করে
তবে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে।[5]
গর্ভবতীর ইদ্দত প্রসবকাল
পর্যন্ত।[6]
মাস অথবা মাসিক হিসাবে ইদ্দত
শুরু করার কিছু দিন পর গর্ভ প্রকাশ পেলে প্রসবকাল পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে।
তালাকপ্রাপ্ত মহিলা তার তালাকের
খবর তিন মাসিক পর পেলে তার ইদ্দত শেষ। আর নতুন করে ইদ্দত নেই।[7]
খোলা তালাকের ইদ্দত এক মাসিক।
মাসিকের পর দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে।[8]
অনুরূপ স্বামী মারা
গেলে বিরহবিধুরা বিধবা স্ত্রীকেও ইদ্দত ও শোকপালন করতে হবে। (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২৩৪)
এতে স্ত্রীর গর্ভাশয় গর্ভ
থেকে খালি কি না তা পরীক্ষা হবে; যাতে বংশে সংমিশ্রণ না ঘটে। তাছাড়া এতে
স্ত্রীর নিকট স্বামীর যে মর্যাদা ও অধিকার তার অভিব্যক্তি ঘটে।
সুতরাং বিধবা গর্ভবতী হলে
প্রসবকাল পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। (আর তা ২/১ ঘন্টাও হতে পারে।) অতঃপর সে ভিন্ন
স্বামী গ্রহণ করতে পারে। তবে গর্ভবতী না হলে ৪ মাস ১০ দিন অপেক্ষা করে ইদ্দত
পালন করবে।[9]
বিধবার বিবাহের পর বাসর না
হয়ে থাকলেও ঐ ইদ্দত পালন করবে। যেমন, নাবালিকা কিশোরী অথবা অতিবৃদ্ধা হলেও ইদ্দত পালন
করতে হবে।[10]
রজয়ী তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী
(ইদ্দতে থাকলে; যাকে স্বামী ফিরিয়ে নিতে পারে) তার স্বামী মারা গেলে নতুন
করে স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালন করবে।[11]
কোনও কারণে ইদ্দতের সময় পিছিয়ে
দেওয়া যায় না। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত পালন শুরু করতে হবে।[12]
স্বামীর মৃত্যুর খবর
৪ মাস পর জানলে তার ইদ্দত মাত্র ঐ বাকী ১০দিন। ৪ মাস দশ দিন পর জানলে আর কোন ইদ্দত
নেই।[13]
ইদ্দতের ভিতরে বিধবার শোকপালন
ওয়াজেব। এই শোক পালনে বিধবা ত্যাগ করবেঃ-
১- প্রত্যেক
সুন্দর পোশাক। তবে এর জন্য কোন নির্দিষ্ট ধরনের বা রঙের কাপড় নেই। যে কাপড়ে সৌন্দর্য
নেই সেই কাপড় পরিধান করবে। সাদা কাপড়ে সৌন্দর্য থাকলে তাও ব্যবহার নিষিদ্ধ।[14] নির্দিষ্টভাবে
কালো পোষাক ব্যবহারও বিধিসম্মত নয়।[15]
২- সর্বপ্রকার
অলঙ্কার। অবশ্য সময় দেখার জন্য হাতে ঘড়ি বাঁধায় দোষ নেই।[16] হ্যাঁ, তবে বাইরে
গেলে টাইম দেখার জন্য প্রয়োজন না হলে বা রাখার মত পকেট বা ব্যাগ থাকলে হাতে বাঁধবে
না। কারণ, ঘড়িতেও সৌন্দর্য আনে।
৩- সর্বপ্রকার
প্রসাধন ও অঙ্গরাগ; সুরমা, কাজল, যে কোন রং ইত্যাদি।
৪- সর্বপ্রকার
সুগন্ধি; সুবাসিত সাবান বা তৈলাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ।[17]
এমন কি নিজের ছেলেমেয়ে বা
অন্য কাউকে সেন্ট জাতীয় কিছু লাগিয়ে দিতেও পারে না। যেহেতু সুগন্ধি হাতে এসে যাবে তাই।[18]
অবশ্য মাসিক থেকে পবিত্রতার
সময় দুর্গন্ধ দূরীকরণার্থে কিছু সেন্ট লজ্জাস্থানে ব্যবহার করতে পারে।[19]
৫- স্বামীগৃহের
বাইরে যাওয়া। যেহেতু স্বামীগৃহেই ইদ্দত পালন ওয়াজেব। তবে একান্ত প্রয়োজন বা অগত্যায়
(পর্দার সাথে) বাইরে যাওয়া বৈধ। যেমন, ছাত্রী বা শিক্ষিকা হলে স্কুল-কলেজ যেতে পারে।[20]
কেউ না থাকলে গরু-ছাগল, ফসলাদির দেখাশোনা করতে পারে ইত্যাদি।
অনুরূপ স্বামীর বাসস্থানে
কোন আত্মীয় না থাকলে ভয়ের কারণে কোন অন্য আত্মীয়র বাড়িতে ইদ্দত পালন করা যায়।[21]
এ ছাড়া কুটুমবাড়ি, সখীর বাড়ি
বা আর কারো বাড়ি বেড়াতে যাওয়া নিষিদ্ধ।[22] এমনকি হজ্জও করতে পারে না। অবশ্য মায়ের
বাড়িতে থাকা অবস্থায় স্বামীর মৃত্যু-সংবাদ পৌঁছলে স্ত্রী সেখানেই ইদ্দত পালন
করবে।
ইদ্দতের সময় অতিবাহিত হলে
এসব বিধি-নিষেধ শেষ হয়ে যাবে। এর পর রীতিমত সব কিছু ব্যবহার করতে পারে এবং বিবাহও করতে
পারে। বরং যারা ধৈর্যহারা হয়ে ব্যভিচারের পথে পা বাড়িয়ে ‘রাঁড়ের ঘরে ষাঁড়ের বাসা’ করে
তাদের পক্ষে বিবাহ ফরয।
ইদ্দতের মাঝে বোগল ও গুপ্তাঙ্গের
লোম এবং নখাদি কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মাছ-গোশত, ফল ইত্যাদি উত্তম খাদ্য খাওয়া
দূষণীয় নয়। যেমন চাঁদের মুখ দেখতে নেই, বিয়ের কনে স্পর্শ করতে নেই প্রভৃতি ধারণা ও
আচার কুসংস্কার।[23]
এই বিধবা স্বামীর ওয়ারেস
হবে। রজয়ী তালাকপ্রাপ্তা হলে এবং ইদ্দতের ভিতরে বিধবা হলে ওয়ারেস হবে। বাতিল বিবাহ,
খোলা তালাক প্রভৃতির ইদ্দতে ওয়ারেস হবে না। এদের শোক পালনের ইদ্দতও নেই। অনুরূপ তালাকপ্রাপ্তা
তার ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর স্বামী মারা গেলে ওয়ারেস হবে না। হ্যাঁ, যদি
স্বামী তার মরণ-রোগে স্ত্রীকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে তালাক দিয়েছে
বলে জানা যায়, তবে তার ইদ্দত পার হয়ে গেলেও (১ বা ২ তালাকের পর; যাতে পুনর্বিবাহ সম্ভব)
ঐ স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহ না করে থাকলে ওয়ারেস হবে। যথানিয়মে তিন তালাকপ্রাপ্তা হলে অথবা
ইদ্দতের পর বিবাহ করে থাকলে সে আর ওয়ারেস হবে না।[24] মিলন না হয়ে স্বামী মারা
গেলেও স্ত্রী ওয়ারেস হবে।[25]
[1] (সূরা আল-আহযাব (৩৩) : ৪৯)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৯)
[3] (সূরা আল-আহযাব (৬৫) : ৪)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৯৭)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৯)
[6] (সূরা আল-আহযাব (৬৫) : ৪)
[7] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮০৪)
[8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৯)
[9] (আল-বাক্বারা (২) : ২৩৪)
[10] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১১৪,১২০,১৩২)
[11] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/ ৮২০)
[12] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/৮১৫, ফাতাওয়াল মারআহ ৬৫পৃঃ)
[13] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮০৪)
[14] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৯/১৫৮)
[15] (ফাতাওয়াল মারআহ ৬৫পৃঃ)
[16] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ১৯/১৫৮)
[17] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮১৩)
[18] (কিতাবুদ দাওয়াহ২/১৪৩)
[19] (লিকাউল বা-বিল মাফতুহ, ইবনে উসাইমীন ২৪/১৩)
[20] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১৩১)
[21] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৯/১৬৮)
[22] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৫৪পৃঃ)
[23] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৫৪-১৫৫ পৃঃ)
[24] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২০, কিতাবুদ দাওয়াহ২/২০৫, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৭-৯৮)
[25] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২১)
[2] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮, ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৯)
[3] (সূরা আল-আহযাব (৬৫) : ৪)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৯৭)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৯)
[6] (সূরা আল-আহযাব (৬৫) : ৪)
[7] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮০৪)
[8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৯)
[9] (আল-বাক্বারা (২) : ২৩৪)
[10] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১১৪,১২০,১৩২)
[11] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/ ৮২০)
[12] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২/৮১৫, ফাতাওয়াল মারআহ ৬৫পৃঃ)
[13] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮০৪)
[14] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৯/১৫৮)
[15] (ফাতাওয়াল মারআহ ৬৫পৃঃ)
[16] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ১৯/১৫৮)
[17] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮১৩)
[18] (কিতাবুদ দাওয়াহ২/১৪৩)
[19] (লিকাউল বা-বিল মাফতুহ, ইবনে উসাইমীন ২৪/১৩)
[20] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৬/১৩১)
[21] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৯/১৬৮)
[22] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৫৪পৃঃ)
[23] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৫৪-১৫৫ পৃঃ)
[24] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২০, কিতাবুদ দাওয়াহ২/২০৫, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৭-৯৮)
[25] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২১)
স্ত্রী হারাম করলে
‘যদি টেলিভিশনে দ্বীনী প্রোগ্রাম
ছাড়া অন্য কিছু দেখ, তবে তুমি হারাম’ বলে স্ত্রী হারাম করলে বা কোন অন্য কারণে ‘তুমি
আমার জন্য হারাম’ ইত্যাদি বললে এবং তালাকের নিয়ত না হলে তালাক হবে না। বরং স্ত্রী সহবাস
হারাম করার নিয়ত হলে তার সঙ্গে সঙ্গম অবৈধ হয়ে যাবে। বৈধ করতে চাইলে কসমের কাফ্ফারা
জরুরী। আল্লাহ বলেন,
‘‘হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য
যা বৈধ করেছেন তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্য তা তোমার উপর অবৈধ করে নিচ্ছ
কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লাহ তোমাদের সহায়। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’[1]
প্রকাশ যে, কসমের কাফ্ফারা (প্রায়শ্চিত্ত) দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের
খাদ্য-দান (মাথা পিছু ১ কিলো ২৫০ গ্রাম করে চাল দিলে চলে) অথবা ঐ দশজনকে বস্ত্র (গেঞ্জি-লুঙ্গি)
দান কিংবা একজন ক্রীতদাস মুক্তি। আর এ সবে সামর্থ্য না থাকলে ৩ দিন রোজা পালন।[2]
স্ত্রীকে ‘তুমি আমার মায়ের
পিঠের মত’ বা ‘তুমি আমার মা’ বা বোন ইত্যাদি বলে হারাম করলে একে ‘যিহার’ বলে। এমন বলা
বা করা হারাম। করলে কাফ্ফারা ওয়াজেব এবং এর পূর্বে সহবাস ও তার ভূমিকা অবৈধ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের
স্ত্রীগণের সাথে যিহার করে তারা জেনে রাখুক, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। যারা তাদেরকে
ভূমিষ্ঠ করে কেবল তারাই তাদের মাতা, ওরা তো ঘৃণ্য ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ
পাপমোচনকারী ও ক্ষমাশীল, যারা নিজেদের স্ত্রীগণের সাথে যিহার করে অতঃপর ওদের উক্তি
প্রত্যাহার করে নিতে চায়, তবে তাদের প্রায়শ্চিত্ত (কাফ্ফারা) হল যৌন কামনায় একে অপরকে
( স্বামী স্ত্রীকে) স্পর্শ করার পূর্বে ১টি ক্রীতদাস স্বাধীন। এ নির্দেশ তোমাদের দেওয়া
হল। তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন। কিন্তু যার এ সামর্থ্য নেই তার প্রায়শ্চিত্ত
হল যৌন-কামনায় একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দু’মাস রোযা পালন। যে এতে অসমর্থ
সে ৬০ জন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য (মাথাপিছু ১ কিলো ২৫০ গ্রাম করে চাল) দান করবে। এটা এজন্য
যে তোমরা যেন আল্লাহ ও তদীয় রসূলে বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা।
আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’’[3]
তালাকের নিয়তে যিহার করলে (স্ত্রীকে মা বা মায়ের মত বললে) তালাক হবে
না যিহারই হবে। পক্ষান্তরে যিহারের নিয়তে তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে।[4]
স্ত্রীর তরফ থেকে যিহার হয়
না। তবে স্বামীকে ‘বাপ’ বললে স্বামী সহবাস হারাম এবং এর মান কসমের সমান।
অতএব কসমের কাফ্ফারা দিলেই তবে স্বামী-সঙ্গম বৈধ হবে।[5]
স্বামী যদি তার স্ত্রীকে
কোন গুণ, রূপ, বা কর্মপটুতা ইত্যাদিতে তার মায়ের সাথে তুলনা করে বলে ‘তুমি আমার মায়ের
মত’ (অর্থাৎ গুণে বা কর্মে) এবং অনুরূপ স্ত্রী যদি তার স্বামীকে বলে ‘আপনি আমার
বাপের মত’ (অর্থাৎ কোন গুণে বা কর্মে) তবে কেউ কারো পক্ষে হারাম হয় না।[6]
[1] (আলকুরআন কারীম ৬৬/১-২,মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৮/৭৬)
[2] (সূরা আল-মায়িদা (৫): ৮৯)
[3] (আল-মুজাদালাহ (৫৮) : ২-৪)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৭৬)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৩)
[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৩)
[2] (সূরা আল-মায়িদা (৫): ৮৯)
[3] (আল-মুজাদালাহ (৫৮) : ২-৪)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৭৬)
[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৩)
[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৩)
অশুচিতা
যুবতী নারীর সৃষ্টিগত প্রকৃতি
মাসিক রক্তস্রাব তার ইদ্দত ইত্যাদির হিসাব দেয়, গর্ভের খবর জানা যায়। আর ঐ স্রাবই তার
গর্ভস্থিত ভ্রূণের আহার হয়।
গর্ভাবস্থাতেও মাসিক আসতে
পারে। এমন হলে এই মাসিকে তালাক হারাম নয়। কারণ, তার ইদ্দত হল গর্ভকাল।[1]
অভ্যাসগত দিনে আগে-পিছে হয়ে
মাসিক হলেও তা মাসিকের খুন, অভ্যাস ৭ দিনের থাকলে যদি ৬ দিনে পবিত্রা হয় তবে সে পবিত্রা,
৮ম দিনেও খুন বিদ্যমান থাকলে তা মাসিকের খুন।[2]
মাসিকের খুন সাধারণতঃ রক্তের
ন্যায়। কিন্তু মাঝে বা শেষের দিকে যদি মেটে বা গাবড়া রঙের খুন আসে, তবে তাও মাসিকের
শামিল। অবশ্য পবিত্রা হওয়ার পর যদি ঐ ধরনের খুন আসে, তবে তা মাসিক নয়।[3]
কোন স্ত্রীলোকের ১দিন খুন
পরদিন বন্ধ; অনুরূপ একটানা সর্বদা হতে থাকে তবে তা মাসিক নয় বরং ইস্তিহাযা। (এর বর্ণনা
পরে আসছে।)
অভ্যাসমত ঋতুর কয়দিনের ভিতরে
যদি একদিন খুন একদিন বন্ধ থাকে, তবে তার পুরোটাই মাসিক ধর্তব্য। খুন বন্ধ থাকলেও পবিত্রতা
নয়।[4]
তবে মাঝের ঐ দিনগুলিতে যদি
পবিত্রতার সাদাস্রাব দেখা যায়, তবে তা পবিত্রতা।[5]
মাসিকের এই অশুচিতায় যে সব ধর্মকর্মাদি
নিষিদ্ধ তা নিম্নরূপঃ-
১। নামাযঃ মাসিকাবস্থায় নামায
পড়া বৈধ নয়। পবিত্রা হলে গোসল করে তবেই নামায পড়বে। যে অক্তে কেবল এক রাকআত নামায পড়ার
মত সময়ের পূর্বে পবিত্রা হবে গোসলের পর সেই অক্তেরও নামায কাযা পড়তে হবে। যেমন যদি
কেউ সূর্যাস্তের ২ মিনিট পূর্বে পবিত্রা হয় তবে (সূর্যাস্তের পর) গোসল করে আসরের নামায
কাযা পড়বে অতঃপর মাগরিবের নামায আদায় করবে। যে অক্তে গোসল করবে কেবল সেই অক্ত থেকে
নামায পড়া যথেষ্ট নয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি নামাযের এক
রাকআত পায়, সে নামায (নামাযের সময়) পেয়ে যায়।’’[6]
‘‘যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের
পূর্বে আসরের এক রাকআত পেয়ে যায়, সে আসর পেয়ে নেয় এবং যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে
ফজরের এক রাকআত নামায পেয়ে যায়, সে ফজর পেয়ে নেয়।’’[7]
সুতরাং কোন ওয়াক্তে প্রবেশ হওয়ার পর অথবা ঐ নামায পড়তে পড়তে মাসিক শুরু
হলে পবিত্রতার পর ঐ ওয়াক্তের নামাযও কাযা পড়তে হবে। যেমন যদি কারো সূর্যাস্তের ২ মিনিট
পর ঋতু শুরু হয় (যাতে ১ রাকআত নামায পড়া যায়), তাহলে পবিত্রতার গোসলের পর মাগরিবের
ঐ নামায কাযা পড়বে।[8]
২। কুরআন স্পর্শ
ও পাঠঃ
নাপাকে কুরআন স্পর্শ অবৈধ।[9]
অনুরূপ মুখে উচ্চারণ করে
ঋতুমতী কুরআন তেলাঅত করবে না। মনে মনে পড়তে দোষ নেই। অবশ্য যদি ভুলে যাওয়ার ভয় হয় অথবা
শিক্ষিকা ও ছাত্রীর কোন আয়াত উল্লেখ করা জরুরী হয়, তবে উচ্চারণ করতে প্রয়োজনে বৈধ।[10]
পক্ষান্তরে দুআ দরূদ, যিকর,
তসবীহ তহলীল, ইস্তেগফার, তওবা, হাদীস ও ফিক্হ পাঠ, কারো দুআয় আমীন বলা, কুরআন শ্রবণ
ইত্যাদি বৈধ।[11]
কুরআন মাজীদের তফসীর বা অনুবাদ
স্পর্শ করে পড়া দোষের নয়। সিজদার আয়াত শুনে সিজদা করাও বৈধ।[12]
ঋতুমতীর কোলে মাথা রেখে তার
সন্তান অথবা স্বামী কুরআন তেলাঅত করতে পারে।[13]
৩। রোযা পালনঃ
মাসিকাবস্থায় রোযা পালন নিষিদ্ধ।
তবে রমযানের ফরয রোযা পরে কাযা করা জরুরী। (কিন্তু ঐ অবস্থায় ছাড়া নামাযের কাযা নেই।)[14]
রোযার দিনে সূর্যাস্তের ক্ষণেক
পূর্বে মাসিক এলে ঐ দিনের রোযা বাতিল; কাযা করতে হবে। সূর্যাস্তের পূর্বে মাসিক আসছে
বলে মনে হলে; কিন্তু প্রস্রাবদ্বারে খুন দেখা না গেলে এবং সূর্যাস্তের পর দেখা দিলে
রোযা নষ্ট হবে না।
ফজর উদয় হওয়ার ক্ষণেক পরে
মাসিক শুরু হলে ঐ দিনে রোযা হবে না। ফজর উদয়ের ক্ষণেক পূর্বে খুন বন্ধ হলে গোসল না
করলেও ঐ দিনের রোযা ফরয।[15]
ফজরের পর গোসল করে নামায
পড়বে, অনুরূপ স্বামী-স্ত্রী সঙ্গম করে সেহরী খেয়ে পরে ফজরের আযান হয়ে গেলেও
রোযার কোন ক্ষতি হয় না। গোসল করে নামায পড়া জরুরী।[16]
রোযা রেখে দিনের মধ্যভাগে
খুন এলে রোযা নষ্ট ও পানাহার বৈধ। যেমন মাসিকের দিনগুলিতে মহিলা পানাহার করতে পারবে
এবং দিনে মাসিক বন্ধ হলেও দিনের অবশিষ্ট সময়ে পানাহার বৈধ।[17]
৪। তওয়াফঃ
ফরয, নফল সর্ব প্রকার তওয়াফ
অবৈধ। অবশ্য সায়ী এবং মিনা, মুযদালিফাহ ও আরাফাতে অবস্থান, পাথর মারা ইত্যাদি বৈধ।
যেমন বিদায়ী তওয়াফের পূর্বে মাসিক শুরু হলে ঐ তওয়াফ করা ওয়াজেব থাকে না।[18]
কিন্তু হজ্জ বা উমরার তওয়াফ
পাক হওয়ার পর করতেই হবে। নচেৎ হজ্জ বা উমরা হবে না।[19]
৫। মসজিদ ও ঈদগাহে অবস্থানঃ
মাসিক অবস্থায় মসজিদে বা
ঈদগাহে বসা অবৈধ।[20] অবশ্য মসজিদের বাইরে থেকে মসজিদের ভিতরে স্থিত কোন বস্ত্ত উঠিয়ে
নেওয়া অবৈধ নয়।[21]
৬। স্বামী-সঙ্গমঃ
মাসিকাবস্থায় সঙ্গম হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘ওরা তোমাকে রজঃস্রাব (কাল
ও স্থান) প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে, তুমি বল উহা অশুচি। সুতরাং রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংসর্গ
থেকে দূরে থাক এবং পবিত্রা না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকট (সঙ্গমের উদ্দেশ্যে) যেও না।
অতঃপর যখন তারা পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর যেভাবে আল্লাহ
তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদেরকে এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকে
ভালোবাসেন।’’[22]
মাসিকাবস্থায় সঙ্গম করে ফেললে এক দ্বীনার (সওয়া ৪ গ্রাম সোনা বা তার
মূল্য) অথবা অর্ধ দ্বীনার সদকা করতে হবে।[23]
অবশ্য অসময়ে যৌনক্ষুধা নিবারণের
জন্য স্ত্রী জাঙ্গিয়া পরে লজ্জাস্থান (প্রস্রাব ও পায়খানাদ্বার) পর্দা করে অন্যান্য
স্থানে বীর্যপাত ইত্যাদি সর্বপ্রকার যৌনাচার বৈধ।[24]
যেমন, পায়ু ও যোনীপথে সঙ্গম
করার আশঙ্কা না থাকলে বা ধৈর্য রাখতে পারলে স্ত্রীর ঊরু-মৈথুনও বৈধ।
প্রকাশ যে, ঋতুমতী স্ত্রীর
এটো কিছু বা তার মুখের লালা নাপাক নয়।
৭। তালাক দেওয়াঃ
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে,
মাসিকাবস্থায় তালাক দেওয়া বৈধ নয়। আর দিয়ে ফেললেও ঐ তালাক বাতিল; ধর্তব্য নয়। অবশ্য
স্ত্রীর সাথে বাসর করার পূর্বে, গর্ভকালে, অথবা খোলা তালাক প্রার্থনাকালে মাসিকাবস্থায়
থাকলে তালাক দেওয়া অবৈধ নয়।[25]
মাসিকাবস্থায় বিবাহ আক্দ
(বিয়ে পড়ানো) বৈধ। তবে বাসর না করাই উত্তম। বর মিলন না করে ধৈর্য রাখতে পারলে বাসর
করবে; নচেৎ না।[26]
মাসিক বন্ধ হলেই গোসল ফরয।
যে সময়েই হোক গোসল করতে হবে। দেশীয় প্রথা অনুযায়ী অথবা লজ্জার খাতিরে নির্দিষ্ট সময়
থেকে গোসল পিছিয়ে নামায নষ্ট করলে গোনাহগার হবে। আরো খুন আসবে সন্দেহে কোন নামায পিছিয়ে
দিলে কাযা পড়ে নেবে।
মহিলা গোসল নিম্নরূপে করবেঃ
প্রথমে সাবানাদি দিয়ে লজ্জাস্থান
ভালোরূপে ধুয়ে হাত পরিষ্কার করে নেবে। অতঃপর গোসলের নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পূর্ণ
ওযু করবে, তারপর ৩ বার মাথায় পানি নিয়ে ভালো করে এমনভাবে ধৌত করবে, যেন চুলের গোড়ায়-গোড়ায়
পানি পৌঁছে যায়। অতঃপর সারা শরীর ধুয়ে নেবে। পরে বস্ত্রখন্ডে বা তুলোর মধ্যে
কোন সুগন্ধি লাগিয়ে লজ্জাস্থানে রেখে নেবে।
গোসলের পর আবার খুন দেখা
দিলে যদি মেটে বা গাবড়া রঙের খুন হয়, তাহলে কোন ক্ষতি হবে না। মাসিকের মত হলে পুনঃ
বন্ধ হলে আবার গোসল করবে।[27]
নামাযের অক্তে সফরে মাসিক
বন্ধ হলে, অথবা পানি না থাকলে, অথবা পানি ব্যবহার ক্ষতিকর হলে তায়াম্মুম করে নামায
পড়বে।
সবাস্থ্যের ক্ষতি না হলে
পরিজনের সাথে একই সঙ্গে হজ্জ বা রোযা পালনের উদ্দেশ্যে বা অন্য কোন প্রয়োজনে মাসিক
বন্ধ রাখার ঔষধ ব্যবহার বৈধ। তবে এতে যেন স্বামীকে (ইদ্দতে) ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্য
না হয়।[28]
[1] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, শায়খ মুহাঃ আল-উসাইমীন১৩পৃঃ)
[2] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা,১৪পৃঃ)
[3] (আবু দাঊদ ৩০৭ নং)
[4] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২০৭-২০৮পৃঃ)
[5] (ঐ ২০৭পৃঃ)
[6] (বুখারী,মুসলিম)
[7] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৬০১নং, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা,১৯পৃঃ)
[8] (ঐ১৮পৃঃ)
[9] (সূরা আল-ওয়াক্বিয়া (৫৬) : ৭৯)
[10] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২০-২১পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৬পৃঃ)
[11] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ১৯পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৮পৃঃ)
[12] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৭৪)
[13] (বুখারী, মুসলিম, জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৬৩)
[14] (বুখারী ৩২১নং, মুসলিম ২৬৫নং, আবু দাঊদ ২৬৩নং)
[15] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৭৩)
[16] (বুখারী, মুসলিম, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২২পৃঃ)
[17] (মুমঃ ৪/৫৪১-৫৪২)
[18] (বুখারী, মুসলিম)
[19] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৩-২৪পৃঃ)
[20] (বুখারী,মুসলিম)
[21] (মুসলিম, আবু দাঊদ প্রভৃতি, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৭পৃঃ)
[22] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২২)
[23] (আবু দাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২২পৃঃ)
[24] (বুখারী, মুসলিম, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৫পৃঃ)
[25] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৭পৃঃ)
[26] (ঐ ২৮ পৃঃ)
[27] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪০)
[28] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৩, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪১)
[2] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা,১৪পৃঃ)
[3] (আবু দাঊদ ৩০৭ নং)
[4] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২০৭-২০৮পৃঃ)
[5] (ঐ ২০৭পৃঃ)
[6] (বুখারী,মুসলিম)
[7] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৬০১নং, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা,১৯পৃঃ)
[8] (ঐ১৮পৃঃ)
[9] (সূরা আল-ওয়াক্বিয়া (৫৬) : ৭৯)
[10] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২০-২১পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৬পৃঃ)
[11] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ১৯পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৮পৃঃ)
[12] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৭৪)
[13] (বুখারী, মুসলিম, জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৬৩)
[14] (বুখারী ৩২১নং, মুসলিম ২৬৫নং, আবু দাঊদ ২৬৩নং)
[15] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/১৭৩)
[16] (বুখারী, মুসলিম, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২২পৃঃ)
[17] (মুমঃ ৪/৫৪১-৫৪২)
[18] (বুখারী, মুসলিম)
[19] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৩-২৪পৃঃ)
[20] (বুখারী,মুসলিম)
[21] (মুসলিম, আবু দাঊদ প্রভৃতি, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৩৭পৃঃ)
[22] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২২)
[23] (আবু দাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২২পৃঃ)
[24] (বুখারী, মুসলিম, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৫পৃঃ)
[25] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ২৭পৃঃ)
[26] (ঐ ২৮ পৃঃ)
[27] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪০)
[28] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৩, আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪১)
ইস্তিহাযা
মাসিকের খুন একটানা আসতেই
থাকলে অথবা ২/১ দিন ছাড়া সারা মাসে খুন বন্ধ না হলে এমন খুনকে ইস্তিহাযার খুন বলে।
আর যে নারীর এমন খুন আসে তাকে মুস্তাহাযা বলে।
মুস্তাহাযার তিন অবস্থা হতে
পারেঃ-
১- একজন মহিলার
পূর্বে যথানিয়মে মাসিক হত। কিন্তু পরে ধারাবাহিক খুন এসে আর বন্ধ হয় না। সুতরাং এমন
মহিলার অভ্যাসগতভাবে যে ক’দিন খুন আসত সেই ক’দিনকে মাসিক ধরে বাকী পরের দিনগুলিকে ইস্তিহাযার
খুন ধরে নেবে। সুতরাং পরের এই দিনগুলিতে গোসলাদি করে নামায-রোযা করবে।[1]
২- একজন মহিলার
শুরু থেকেই একটানা খুন আসে। মাসিক ও ইস্তিহাযার দিন তার অজানা। এমন মহিলা কোন লক্ষণ
বুঝে মাসিক ও ইস্তিহাযার মাঝে পার্থক্য নির্বাচন করবে। যেমন যদি ১০ দিন কালো এবং বাকী
মাসে লাল খুন, অথবা ১০দিন মোটা এবং বাকী মাসে পাতলা খুন, অথবা ১০ দিন দুর্গন্ধময় এবং
বাকী মাসে গন্ধহীন খুন দেখে তবে ঐ কালো মোটা ও দুর্গন্ধময় খুনকে মাসিকের এবং
বাকী ইস্তিহাযার খুন ধরে নিয়ে পবিত্রা হয়ে নামায-রোযা করবে।[2]
৩- এমন মহিলা
যার মাসিকের কোন নির্দিষ্ট দিন জানা নেই এবং কোন লক্ষণও বুঝতে পারে না, সে যখন থেকে
প্রথম খুন দর্শন করেছে তখন থেকে হিসাব ধরে ঠিক সেই সময় করে প্রত্যেক মাসে ৬ বা ৭ দিন
(সাধারণ মহিলাদের অভ্যাসমত) অশুচিতার জন্য অপেক্ষা করে গোসল করবে এবং বাকী দিনগুলিতে
নামায-রোযা করবে।[3]
কোন ব্যাধির ফলে গর্ভাশয়
তুলে ফেললে বা কোন এমন অপারেশন করলে যাতে মাসিক চিরদিনের মত বন্ধ হয়ে যায়; যদি তার
পরেও কোনক্রমে খুন দেখা যায়, তবে সে খুন মাসিক বা ইস্তিহাযার নয়। বরং সেই খুন পবিত্রতার
পর মেটে বা গাবড়া বর্ণের খুনের সমপর্যায়ের। এতে মহিলা অপবিত্রা হয় না এবং নামায রোযাও
বন্ধ করা বৈধ নয়। এতে গোসলও ফরয নয়। খুন ধুয়ে নামাযের জন্য অযু যথেষ্ট। অনুরূপ যোনীপথে
সর্বদা সাদাস্রাব দেখা দিলেও একই নির্দেশ।[4]
সুতরাং উক্ত প্রকার মহিলারা
(মুস্তাহাযাগণ) পবিত্রা মহিলার মত। অতএব এদের জন্য নামায, রোযা, হজ্জ, স্বামী-সহবাস
ইত্যাদি সকল কর্ম পবিত্রতার মতই পালন করা ফরয ও বৈধ। তবে সর্বদা খুন থাকলে পবিত্রতার
জন্য প্রথম গোসলের পর প্রত্যেক নামাযের জন্য অন্তর্বাস বদলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু করবে।
খুন বাইরে আসার ভয় থাকলে কাপড় বা তুলা বেঁধে নেবে।[5]
[1] (বুখারী, মুসলিম)
[2] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৪পৃঃ)
[3] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৫পৃঃ)
[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/২৯৮)
[5] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৭-৩৮পৃঃ)
[2] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৪পৃঃ)
[3] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৫পৃঃ)
[4] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/২৯৮)
[5] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৭-৩৮পৃঃ)
নিফাস
প্রসবের ২/১ দিন পূর্ব থেকে
বা প্রসবের পর থেকেই লাগাতার ক্ষরণীয় খুনকে নিফাসের খুন বলে। এই খুন সর্বাধিক ৪০ দিন
ঝরতে থাকে এবং এটাই তার সর্বশেষ সময়। সুতরাং ৪০ দিন পর খুন দেখা দিলেও মহিলা গোসল করে
নামায-রোযা করবে। অবশ্য ৪০ দিনের মাথায় যদি প্রসূতির মাসিক আসার সময় হয় এবং খুন একটানা
থেকে যায়, তবে তার অভ্যাসমত মাসিককালও অপেক্ষা করে তারপর গোসল করবে।
৪০ দিন পূর্বে এই খুন বন্ধ
হলেও গোসল সেরে নামায-রোযা করবে। স্বামী সহবাসও বৈধ হবে। কিন্তু ২/৫ দিন বন্ধ
হয়ে পুনরায় (৪০ দিনের পূর্বেই) খুন এলে নামায-রোযা ইত্যাদি বন্ধ করবে এবং পরে যখন বন্ধ
হবে অথবা ৪০ দিন পূর্ণ হলে গোসল করে পাক হয়ে যাবে। মাঝের ঐ দিনের নামায-রোযা শুদ্ধ
হয়ে যাবে এবং স্বামী সঙ্গমেরও পাপ হবে না।[1]
৪০ দিনের ভিতরে খুন মেটে
বা গাবড়া রঙের হলেও তা নিফাসের খুন।[2]
মানুষের আকৃতি আসার পর (সাধারণতঃ
৮০ দিন পর) গর্ভপাত হলে বা ঘটালে যে খুন আসবে তা নিফাসের খুন। এর পূর্বে হলে তা নিফাস
নয় বরং ইস্তিহাযার খুন। এতে নামায-রোযা করতে হবে।[3]
[1] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৩৯-৪০পৃঃ, তামবীহাতুল
মু’মিনাত ৪৯পৃঃ, জামিউ আহকামিন নিসা, ২৪৪পৃঃ, মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৭৭)
[2] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৩পৃঃ)
[3] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪৩,২৪৫, ফাতাওয়াল মারআহ ২৪পৃঃ)
[2] (ফাতাওয়াল মারআহ ২৩পৃঃ)
[3] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ১/২৪৩,২৪৫, ফাতাওয়াল মারআহ ২৪পৃঃ)
আত্মাশুদ্ধি
এতো গেল দেহশুদ্ধির কথা।
কিন্তু এর পূর্বে আত্মাশুদ্ধিও একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়; যা না হলে দেহ ইবাদত কিছুই শুদ্ধ
নয়। আল্লাহ বলেন,
﴿يَوْمَ لا يَنْفَعُ مَالٌ وَلا بَنُونَ- إِلاَّ مَنْ أَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ﴾
‘‘যেদিন ধন-সম্পদ
সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। সেদিন উপকৃত হবে কেবল সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিকট
বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে উপস্থিত হবে।’’[1]
‘‘যে আত্মা পরিশুদ্ধ করবে, সেই সফলকাম হবে এবং সে ব্যর্থ হবে, যে আত্মাকে
কলুষিত করবে।’’[2]
সুতরাং যে ব্যক্তি অমূলক বিশ্বাস, শির্ক, বিদআত, বাতিল অভিমত, সন্দেহ
ও সংশয়, বৈষয়িক আসক্তি (ধন, নারী, গদি, যশ প্রভৃতির লোভ) রিপুর আক্রমণ, শরয়ী জ্ঞান
শূন্যতা, অধিক বিলাসিতা ও হাসি, নোংরা ও কদর্যgআচরণ এবং পাপাচরণ থেকে নিজ আত্মা ও মনকে
পবিত্র ও বিশুদ্ধ রাখবে এবং আল্লাহর উপর সঠিক ঈমান ও বিশ্বাস রাখবে, তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ
করবে, তাঁরই উপর সদা ভরসা করবে, তাঁরই নিকট সকল চাওয়া চাইবে, তাঁরই স্মরণ ও ধ্যানে
সদা হৃদয় জাগরিত থাকবে, তাঁর রসূলের তরীকা সদা তার পথ ও হৃদয়ের আলোকবর্তিকা হবে। অধিকাধিক
তেলাঅত দুআ, প্রার্থনা, যিক্র ও ইস্তিগফার তথা দরূদ পাঠ করবে। দ্বীনী মজলিসে অংশগ্রহণ,
দ্বীনী বই-পুস্তক পঠন-পাঠন এবং সত্যকে চিনে তা সাদরে গ্রহণ করবে, মুসলিম তথা সারা সৃষ্টির
জন্য যার হৃদয় দয়ার্দ্র থাকবে, তার হৃদয় পরিশুদ্ধ হৃদয়। মোটকথা পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী
একজন মুসলিমের হৃদয় বিশুদ্ধ হৃদয়। এমন না হলে মুক্তি ও সফলতার আশা করা যায় না।[3]
[1] (আলকুরআন কারীম ২৬/৮৮-৮৯)
[2] [সূরা আশ্শামস ( ৯১) : ৯-১০]
[3] (জামিউ আহকামিন নিসা, ২৪৬-২৬৯পৃঃ)
[2] [সূরা আশ্শামস ( ৯১) : ৯-১০]
[3] (জামিউ আহকামিন নিসা, ২৪৬-২৬৯পৃঃ)
গর্ভ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ
সন্তান এক সম্পদ। নিঃস্ব
হলেও সন্তানের আকাঙ্ক্ষা প্রত্যেক মা-বাপের। তাই তো নিঃসন্তান পিতা-মাতা চিকিৎসার্থে
কিনা খায়, কোথা না যায়? অবশ্য বৈধভাবে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া দূষণীয় নয়।
দূষণীয় হল সন্তানলোভে কোন পীর-ঠাকুর-মাযারের নিকট গেয়ে নযরাদি মেনে সন্তান-কামনা; বরং
এ হল খাঁটি শির্ক। আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সন্তান দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা রাখেন। সুতরাং
মুসলিমের উচিৎ, তাঁরই নিকট এই বলে সন্তান চাওয়াঃ-
অর্থাৎ, হে প্রভু! আমাকে
নেক সন্তান দান কর।[1]
অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক!
তুমি তোমার তরফ থেকে আমাকে সৎ বংশধর দান কর, নিশ্চয় তুমি অত্যাধিক প্রার্থনা শ্রবণকারী।[2]
চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে গর্ভসঞ্চারণ পদ্ধতির মাধ্যমে
সন্তান লাভ করতে হলে যদি স্বামীরই বীর্য নিয়ে স্ত্রীর গর্ভাশয়ে কৃত্রিম উপায়ে
রেখে প্রজনন সম্ভব হয়, তাহলে এমন সন্তানভাগ্য লাভ করা বৈধ। পক্ষান্তরে স্বামী
ব্যতীত অন্য কারো বীর্য দ্বারা এমন প্রজনন হারাম। সে সন্তান নিজের বৈধ সন্তান হবে না;
বরং সে জারজ গণ্য হবে।
সন্তান-পিপাসা দূরীকরণার্থে
অপরের সন্তান নিয়ে (পালিতপুত্র হিসাবে) লালন-পালন করায় ইসলামের সমর্থন নেই।[3]
কোন পদ্ধতিতে আল্লাহর ইচ্ছা
ব্যতীত কারো নিজ ইচ্ছামত পুত্র বা কন্যা জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর
সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা, তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান
এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা
তাকে বন্ধ্যা রাখেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’’[4]
‘‘তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা
সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। এতে ওদের কোন হাত নেই। আল্লাহ মহান এবং ওরা
যাকে তাঁর অংশী করে তা হতে তিনি ঊর্ধে।[5]
সুতরাং পুত্র-কন্যা জন্মদানের ব্যাপারে স্ত্রীরও কোন হাত বা ত্রুটি
নেই। তাই কেবল কন্যাসন্তান প্রসব করার ফলে যারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়,
তারা নিছক মুর্খ বৈ কি? সবই তো আল্লাহর হাতে। তাছাড়া বীজ তো স্বামীর। স্ত্রী
তো উর্বর শস্যক্ষেত্র। যেমন বীজ তেমনি ফসল। সুতরাং দোষ হলে বীজ ও বীজ-ওয়ালার
দোষ হওয়া উচিৎ, জমির কেন?
পক্ষান্তরে ২/৩টি
কন্যা বা বোনের যথার্থ প্রতিপালন করলে পরকালে মহানবী (সাঃ) এর পাশাপাশি বাসস্থান লাভ
হবে।[6]
পরন্তু যে ছেলের আশা করা
যায় তা ‘ব্যাটা না হয়ে ব্যথা, ল্যাঠা বা কাঁটা’ও তো হতে পারে। তবে সব কিছুই ভাগ্যের
ব্যাপার নয় কি? তকদীরে বিশ্বাস ও সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর উপর যথার্থ ভরসা থাকলে পরম
শান্তি লাভ করা যায় সংসারে।
মিলনে যার বীর্যপাত আগে হবে
তার বা তার বংশের কারো মতই সন্তানের রূপ-আকৃতি হবে। স্বামীর বীর্যস্খলন আগে হলে
সন্তান তার পিতৃকুলের কারো মত এবং স্ত্রীর বীর্যস্খলন আগে ঘটলে সন্তান তার মাতৃকুলের
কারো মত হয়ে জন্ম নেবে।[7]
সুতরাং মাতা-পিতা গৌরবর্ণ
হলেও সন্তান কৃষ্ণ বা শ্যামবর্ণ অথবা এর বিপরীতও হতে পারে।[8]
কারণ, ঐ সন্তানের পিতৃকুল
বা মাতৃকুলে ঐ বর্ণের কোন পুরুষ বা নারী অবশ্যই ছিল যার আকৃতি-ছায়া নিয়ে তার জন্ম হয়েছে।
মিলনের ছয়মাস পর সন্তান ভূমিষ্ঠ
হওয়া সম্ভব। এতে স্ত্রীর প্রতি সন্দেহপোষণ বৈধ নয়। কারণ সন্তানের গর্ভাশয়ে অবস্থান
এবং তার দুধপানের সর্বমোট সময় ত্রিশ মাস।[9] আর তার দুধপানের সময় হল দুই বছর (২৪ মাস)।[10]
অতএব অবশিষ্ট ছয়মাস গর্ভের ন্যুনতম সময় নির্ধারণ করতে কোন সন্দেহ নেই।
২/৩ বছর পূর্বে স্বামী-মিলনে
সতী-সাধবীর সন্তান অবৈধ নয়। যেহেতু বহু মহিলার গর্ভকাল স্বাভাবিক সময় হতেও অধিক
হয়ে থাকে।
গর্ভের সময় সাধভাত, পাঁচভাজা
ইত্যাদির উৎসব ও অনুষ্ঠান বিজাতীয় প্রথা। ইসলামে এসব বৈধ নয়। অনুরূপ পোত পাঠানো ইত্যাদি
প্রথাও।
গর্ভকালে গর্ভিণী নিজের অথবা
তার ভ্রূণের কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে রোযা কাযা করতে পারে।[11]
দাই ও সাহায্যকারিণী ব্যতীত
অন্যান্য মহিলাদের সন্তানভূমিষ্ঠ করা দেখা (গর্ভিণীর গুপ্তাঙ্গ দর্শন) বৈধ নয়।[12]
প্রসূতিগৃহে লোহা, ছেঁড়াজাল,
মুড়ো ঝাঁটা প্রভৃতি রাখা শির্ক। বৈধ নয় গর্ভিণীর দেহে তাবীয বাঁধা।
প্রসবযন্ত্রণা যতই দীর্ঘ
হোক না কেন (খুন না ভাঙ্গলে) নামাযের সময় নামায মাফ নেই। যেভাবে সম্ভব সেইভাবেই নামায
পড়তে হবে।[13]
সন্তান-কাঙ্গালী দম্পতির
বিপরীত আর এক দম্পতি রয়েছে, যারা সুখী পরিবার গড়ার স্বপ্নে পরিবার-পরিকল্পনা তথা জন্মনিয়ন্ত্রণের
সাহায্য নিয়ে থাকে। তাদের শ্লোগান হল ‘আমরা দুই আমাদের দুই’ ইত্যাদি। কিন্তু এইভাবে
নির্দিষ্ট-সংখ্যক সন্তান নিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা ইসলাম পরিপন্থী কর্ম। যেহেতু ইসলাম
অধিক সন্তানদাত্রী নারীকে বিবাহ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইসলামের কাম্য।
পরন্তু কেন এ জন্মনিয়ন্ত্রণ?
খাওয়াতে-পরাতে পারবে না এই ভয়ে অথবা মানুষ করতে পারবে না এই ভয়ে? প্রথম ভয় যাদের হয়,
তারা আল্লাহর প্রতি কুধারণা রাখে। আল্লাহ যাকে সৃষ্টি করেন, তাকে তার রুজীও নির্দিষ্ট
করে দেন। আল্লাহ বলেন,
‘‘পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের
জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই।’’[14]
‘‘এমন বহু জীব আছে যারা নিজেদের
খাদ্য জমা রাখে না (সংগ্রহ করতে অক্ষম), আল্লাহই ওদেরকে এবং তোমাদেরকে জীবনোপকরণ দান
করে থাকেন। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’’[15]
সুতরাং ভয় কিসের? বহু জাতক তো জনককেই যথাসময়ে সুখসামগ্রী দান করে থাকে,
তবে জনকের উল্টো ভয় কেন? বরং এইভাবে আল্লাহ উভয়কেই রুজী দিয়ে থাকেন, তবে হত্যা কি জন্য?
আল্লাহ বলেন,
‘‘তোমাদের সন্তানকে দারিদ্র্য-ভয়ে
হত্যা করো না, ওদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রুজী দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই ওদেরকে হত্যা করা
মহাপাপ।’’[16]
আর মানুষ করার ভয় কোন ভয় নয়। মানুষ করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করলে আল্লাহ
সাহায্য করবেন।
‘‘আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ
তার জন্য সমাধান সহজ করে দেন।’’[17]
তাছাড়া কত সন্তান অমানুষের ঘরেও মানুষরূপে গড়ে উঠে। কোন্ অসীলায় কে
মানুষ হয়ে যায়, কে বলতে পারে? আবার কত বাপের একমাত্র ছেলেও অমানুষ হয়েই থেকে যায়। বাস্তবই
তার প্রমাণ।
সুতরাং টিউবেক্ট্যামি বা
ভ্যাসেক্ট্যামির মাধ্যমে বা গর্ভাশয় তুলে ফেলে জন্মের পথ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া বৈধ
নয়। অবশ্য যদি মহিলার প্রসবের সময় দমবন্ধ হওয়ার (প্রাণ যাওয়ার) ভয় থাকে অথবা সীজ্যার
ছাড়া তার প্রসবই না হয়, তবে এমন সঙ্কটের ক্ষেত্রে অগত্যায় জন্ম-উপায় নির্মূল করা বৈধ
হবে।
কিন্তু একেবারে নির্মূল না
করে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা যায় কি না? স্ত্রী যদি প্রত্যেক বৎসর সন্তান দিয়ে দুর্বল
ও রোগা হয়ে যায় বা ঘন-ঘন সন্তান দানের ফলে কোন স্ত্রীরোগ তাকে পীড়িতা করে তোলে, তাহলে
ট্যাবলেট আদি ব্যবহার করে দুই সন্তানের মাঝের সময়কে কিছু লম্বা করা বৈধ। এর বৈধতা রসূল
(সাঃ) এর যুগে কিছু সাহাবীর আয্ল (সঙ্গমে বীর্যস্খলনের সময় যোনীপথের বাইরে বীর্যপাত
করা) থেকে প্রমাণিত হয়।[18]
গর্ভবতীর জীবন যাওয়ার আশঙ্কা
না হলে গর্ভের ৪/৫ মাস পর ভ্রূণ নষ্ট করা বা গর্ভপাত করা হারাম। কারণ, তা জীবিত এক
প্রাণহত্যার শামিল। ৪ মাস পূর্বে কোন রোগ বা ক্ষতির আশঙ্কায় একান্ত প্রয়োজনে বৈধ।
সীজ্যার করে সন্তান প্রসবও
বৈধ। মায়ের জান বাঁচাতে মৃত ভ্রূণ অপারেশন করে বের করা ওয়াজেব। যেমন মৃতগর্ভিণীর গর্ভে
যদি জীবিত ভ্রূণ থাকে এবং সীজ্যার করে বের করলে তার বাঁচার আশা থাকে, তবে মৃতার সীজ্যার
বৈধ; নচেৎ নয়।[19]
ভ্রূণের বয়স ৪ মাস পূর্ণ
হয়ে নষ্ট হলে বা করলে তার আকীকা করা উত্তম।[20]
পরিশেষে, আল্লাহ সকল দম্পতিকে
চিরসুখী করুন। পরিবার হোক সুখের। পিতা-মাতা হোক আদর্শের। সন্তান হোক বাধ্য। সংখ্যায়
শুধু নয়, বরং জ্ঞান-বিজ্ঞান, দ্বীন ও চরিত্রে এক কথায় সর্বকল্যাণে উম্মতের শ্রীবৃদ্ধি
হোক।
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের
স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং পরহেযগারদের জন্য আমাদেরকে আদর্শস্বরূপ
বানাও।’’
[1]
(সূরা আস্সফফাত (৩৭) : ১০০)
[2] (সূরা আলু ‘ইমরান (৩) : ৩৮)
[3] (সূরা আল-আহযাব (৩৩) : ৪)
[4] (সূরা আশ-শূরা (৪২) : ৪৯-৫০)
[5] (সূরা স-দ (২৮) : ৬৮)
[6] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৯৬ নং)
[7] (বুখারী ৩৩২৯নং, মুসলিম ৩১৫নং)
[8] (বুখারী ৬৮৪৭,মুসলিম ১৫০০)
[9] (সূরা আল-আহকাফ (৪৬) : ১৫)
[10] (সূরা লুক্বমান (৩১): ১৪)
[11] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১০)
[12] (মুসলিম ৩৩৮নং)
[13] (ফাতাওয়াল মারআহ ৩৫পৃঃ)
[14] (সূরা হূদ (১১) : ৬)
[15] (সূরা আল-‘আনকাবূত (২৯) : ৬০)
[16] (সূরা আল-ইসরা (বানী ইসরাঈল (১৭) : ৩১)
[17] (সূরা আত-ত্বলাক (৬৫) : ৪)
[18] (আয-যিওয়াজ ৩১-৩৩পৃঃ, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৪পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৫২,৯৩পৃঃ, লিকাউল বা-বিল মাফতুহ ২৬/১৮,২১)
[19] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৬পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৫৩-৫৭পৃঃ)
[20] (লিকাউল বা-বিল মাফতুহ ২৬/৩৪)
[2] (সূরা আলু ‘ইমরান (৩) : ৩৮)
[3] (সূরা আল-আহযাব (৩৩) : ৪)
[4] (সূরা আশ-শূরা (৪২) : ৪৯-৫০)
[5] (সূরা স-দ (২৮) : ৬৮)
[6] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৯৬ নং)
[7] (বুখারী ৩৩২৯নং, মুসলিম ৩১৫নং)
[8] (বুখারী ৬৮৪৭,মুসলিম ১৫০০)
[9] (সূরা আল-আহকাফ (৪৬) : ১৫)
[10] (সূরা লুক্বমান (৩১): ১৪)
[11] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১০)
[12] (মুসলিম ৩৩৮নং)
[13] (ফাতাওয়াল মারআহ ৩৫পৃঃ)
[14] (সূরা হূদ (১১) : ৬)
[15] (সূরা আল-‘আনকাবূত (২৯) : ৬০)
[16] (সূরা আল-ইসরা (বানী ইসরাঈল (১৭) : ৩১)
[17] (সূরা আত-ত্বলাক (৬৫) : ৪)
[18] (আয-যিওয়াজ ৩১-৩৩পৃঃ, রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৪পৃঃ, ফাতাওয়াল মারআহ ৫২,৯৩পৃঃ, লিকাউল বা-বিল মাফতুহ ২৬/১৮,২১)
[19] (রিসালাতুন ফী দিমাইত ত্বাবীইয়্যাতি লিন্নিসা, ৪৬পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ৫৩-৫৭পৃঃ)
[20] (লিকাউল বা-বিল মাফতুহ ২৬/৩৪)
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook,
Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে
শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে।
তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে,
নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা
আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার
প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ
থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে
(আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর,
তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস)
আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি
কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
No comments:
Post a Comment