Search This Blog

Wednesday, January 8, 2020

নারীদের মুখমন্ডল কি পর্দা করতে হবে?


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
নারীদের মুখমন্ডল কি পর্দা করতে হবে?
https://mshrc.blogspot.com/2019/12/blog-post.html
1. ভূমিকা:
ইসলামে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র শরীর ঢেকে রাখাই পর্দা আর পর্দা বোধহয় শুধুমাত্র নারীদের জন্য নির্ধারিত। বিষয়টা আসলে তা নয়। নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। পুরুষ নারীর থেকে এবং নারী পুরুষের থেকে কথার মাধ্যমে, দেখার মাধ্যমে, স্পর্শের মাধ্যমে যতটুকু ব্যাবধান বজায় রাখতে হবে বা রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেটিকেই পর্দা বলে। যেমন ধরুন একটি মেয়ে বোরকা পড়লো ঠিকই কিন্তু মাহরাম ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে মোবাইল এ কথা বললো। তাহলে সেই মেয়েটির শরীরের পর্দা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কথার মাধ্যমে একজন পুরুষের থেকে তার যে দুরত্ব বজায় রাখতে হবে সেটা রক্ষা হচ্ছে না। তাই বলা যায় শরীয়তের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মধ্যে যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে না।
পুরুষ পুরুষ এর সামনে যতটুকু শরীর ঢেকে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে পুরুষের এর ছতর আর নারী নারীর সামনে যতটুকু শরীর ঢেকে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে নারীদের ছতর। সুতরাং ছতর শুধুমাত্র সমগোত্রীয় এর মধ্যে সম্পর্কিত।
আবার নামাজের মধ্যে একজন পুরুষ বা মহিলার যতটুকু শরীর ঢেকে রাখতে হবে সেটাকেও ছতর বলা হয়।
বর্তমান লেখনীতে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো “মেয়েদের মুখমন্ডল পর্দার অন্তরভুক্ত কিনা” বা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আল কোরান এবং হাদিস শরীফ অনুযায়ী এটা আবৃত করার হুকুম কি সেই বিষয়ে।
আলোচ্য প্রবন্ধে আল কোরআনের আয়াত, হাদিস শরীফ, চার মাজহাবের ইমামগণের মত, পূর্বের ও পরবর্তী যুগের মুত্তাকী আলেমগণের মত দ্বারা প্রমাণ করা হবে মেয়েদের মুখমন্ডল ঢাকা জরুরি কিনা কিংবা শরঈ পর্দার অন্তর্ভুক্ত কিনা।
আজকের আলোচনায় আমরা যেসকল জানতে পারবো::
• মেয়েদের অন্য পুরুষের সামনে (মাহরাম ব্যাতিত) মুখমন্ডল অনাবৃত/ উন্মুক্ত রাখা সম্পূর্ণ নিষেধ। ঢেকে রাখা ফরজ বা ওয়াজিব এর অন্তর্ভুক্ত
• বৃদ্ধা মহিলারা শুধুমাত্র অন্য পুরুষের সামনে মুখমন্ডল খুলে রাখতে পারবে। তবে তাদের ক্ষেত্রেও যদি সৌন্দর্য প্রকাশ পাবার সম্ভাবনা থাকে তবে সেটিও নিষেধ
• পর্দার আয়াত নাজিল হবার পর উম্মুল মুমিনীন সকলে মুখ আবৃত করে বের হতেন।
• মহিলা সাহাবী গণ মুখমন্ডল আবৃত করে অন্য পুরুষদের সামনে যেতেন এবং ইহরাম রত অবস্থায় তারা মুখমন্ডল আবৃত করতেন।
• বিশেষ করে আয়িশা (রাঃ) এর স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায় যেখানে উনি মেয়েদের মুখমন্ডল আবৃত করার জন্য বলেছেন।
• আল কোরআনের ৮টি আয়াত এবং হাদিস শরীফ এবং ৪ মাজহাবের ইমাম দ্বারা প্রমান করা হয়েছে মুখমন্ডল আবৃত করার দলিল দেয়া হয়েছে
যেসব বিষয় এখানে আলোচনা করা হয়নি:
• পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের পরিপূর্ণ পর্দা বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হয়নি। এখানে শুধুমাত্র মেয়েদের মুখমন্ডল আবৃত করার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথমে আল কোরানের আয়াত পর্যালোচনা করা যাক:
2. আল কোরআনের আয়াত দ্বারা দলিল:
আল কোরআনের যেসব আয়াত বা আয়াত এর অংশবিশেষ দ্বারা দলিল দেয়া হবে তার তালিকা দেয়া হলো:
১। হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের (জিলবাব) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
[সূরা আল আহযাব ৩৩:৫৯]
২। তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে ।
[সূরা আন-নূর ২৪:৩১]
৩। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে
[সূরা আন-নূর ২৪:৩১]
৪। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।
[সুরাহ আহযাব ৩৩: ৩৩]
৫। বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা আন-নূর ২৪:৬০]
৬। তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
[সূরা আন-নূর ২৪:৩১]
৭। হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না যাতে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সেই ব্যক্তি কুবাসনা পোষণ করে ফেলতে পারে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।
[সুরাহ আহযাব ৩৩:৩২]
৮। তোমরা তাঁর (নবীর) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। [সূরা আহযাব : ৩৩:৫৩]
উপরের আয়াতসমূহের তফসীরে মুফাসসিরে কেরাম কি বলেছেন আসুন আমরা সেটা পর্যালোচনা করি:
3. চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়া [সূরা আল আহযাব-৩৩:৫৯]
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের (জিলবাব) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।“ [ সূরা আল আহযাব ৩৩:৫৯ ]
এখানে আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে বলেছেন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এখন কেউ বলতে পারেন চাদর দিয়ে শরীর ঢাকতে বলা হয়েছে কিন্তু কিভাবে ঢাকতে হবে সেটা তো বলা হয়নি? তাছাড়া শরীর আবৃত করলেও মুখ যে ঢাকতে হবে সেটা তো বলা নেই। আসুন দেখি এই বিষয়ে মুফাসসিরে কিরাম এবং পূর্বের ওলামায়ে কিরাম কি বলেছেন।
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ তায়ালা আরবি শব্দ জিলবাব ব্যবহার করেছেন যার বাংলা অর্থ করা হয়েছে “চাদর” । জিলবাব এর অনুবাদ মুফাসসিরে কেরাম করেছেন “ওড়না”। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “জিলবাব দ্বারা ঐ ওড়না উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে শরীরের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢেকে যায়।” ইমাম ইবনে হাজম (রহঃ) তার কিতাব আল মুহাল্লা’য় উল্লেখ করেছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিলবাব বা ওড়না সম্পর্কে বলেন এটা সেই ধরণের ওড়নাকে বলা হয়, যা সম্পূর্ণ শরীরকে ঢেকে দেয়, আংশিক শরীরকে নয়।
প্রসিদ্ধ তফসির গ্রন্থ রুহুল মা’আনি এর ২২তম খন্ডে বলা হয়েছে, “মুহাম্মদ ইবনে শিরিন বলেন আমি উবাইদা সালমানী (রহঃ) এর কাছে এই আয়াতের ব্যাখ্যা (তারা যেন তাদের চাদরের (জিলবাব) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়) জানতে চেয়েছিলাম। তখন তিনি নিজের চাদরে নিজেকে এমনভাবে জড়িয়ে নিলেন যে, তার পুরো দেহ এমনকি নিজের চেহারা ও চোখের পলক পর্যন্ত ঢেকে গেলো। অবশ্য নিজের বাম চোখ বাম পাৰ্শ্ব দিয়ে বের করে দিলেন। (অর্থাৎ শুধুমাত্র বাম চোখ খোলা রেখেছিলেন)
তাফসিরে জালালাইন এর লেখক ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) এই আয়াতের তফসীরে লিখেন, “এটা পর্দার আয়াত, যা সকল নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য” । বিগত কয়েক শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য আলেমগণের নাম উল্লেখ করা হলো যারা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন অথবা অতীতের কোনো আলেমগণের সাথে সহমত পোষণ করে বলেছেন যে এই আয়াত দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত করা বুঝানো হয়েছে এবং এর মধ্যে মুখমন্ডল অন্তর্ভুক্ত:
১। সাহাবী এবং প্রখ্যাত মুফাস্সির ইবনে আব্বাস (রাদি:) [ ইন্তেকাল : ৬৮ হিজরী ]
২। সাহাবী আবিদা আস সীমানি [ ইন্তেকাল : ৭২ হিজরী ]
৩। ইমাম দায়লামী (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ২০৭ হিজরী ]
৪। ইমাম জরির তাবারী (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ৩১০ হিজরী ]
৫। হাফিজ ইবনে হাতিম [ ইন্তেকাল : ৩২৭ হিজরী ]
৬। ইমাম রাজী (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ৩৭০ হিজরী ]
৭। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ৬৭০ হিজরী ]
৮। ইমাম বায়জাভি (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ৭৯১ হিজরী ]
৯। বিখ্যাত মুফাস্সির ইবনে কাসীর (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ৭৭৪ হিজরী ]
১০। তাফসীর জালালাইন এর ওমর স্রষ্টা ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) [ ইন্তেকাল : ৯১১ হিজরী ]
১১। আল্লামাহ জাহিদ আল কাওসারী ( মিশরী আলেম ইন্তেকাল : ১৩৭১ হিজরী ]
১২। শায়েখ মুস্তাফা আল আদাবি ( সমসাময়িক মিশরী আলেম )
১৩। মুফতি মোহাম্মদ শফি (রহঃ)
বি: দ্রঃ উপরোক্ত দলীল নেয়া হয়েছে বর্তমান মুসলিম জাহানের অন্যতম যোগ্যতাসম্পন্ন মুফতি ইব্রাহিম দেশাই (দামাত বারাকাতুম) এর লেখা থেকে।[রেফারেন্স: ৮]
হজরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, যখন কোরআন কারীমের এই আয়াত (নারীরা ওড়না দ্বারা নিজেদের আবৃত করে নিবে) নাজিল হয়, তখন মদিনার আনসারী নারীরা নিজেদের ঘর থেকে এমনভাবে বের হতে লাগলেন যে, নড়চড়হীন হবার কারণে মনে হত যেন তাদের মাথায় পাখি বসে আছে। আর তারা মাথায় কালো কাপড় জড়িয়ে বের হতেন। (মুখমন্ডল আবৃত করে বের হতেন)
[রুহুল মাআনি : খন্ড-২২ ]
ইমাম আবু বকর জাস্সাস (রহঃ) তার অতুলনীয় সৃষ্টি “আহকামুল কোরআন” গ্রন্থে এই আয়াত قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء…. ‘তারা নিজেদের শরীর ওড়না দ্বারা আবৃত করে নিবে” এই আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন, – “এই আয়াতটি এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছে যে, যুবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নির্দেশ হল, তারা ঘর থেকে বের হবার পর অপরিচিত পুরুষদের থেকে মুখমন্ডল গোপন রাখবে।”
এই আয়াতের শানে নজুল-এ আরো একটি হাদিস শরীফ উল্লেখ করা যেতে পারে। হজরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ তায়ালা আনসারী মহিলাদের প্রতি রহম করুন”। যখন কোরআন এর এই আয়াত নাজিল হয়, তখন তারা তাদের চাদর ছিড়ে ওড়না বানিয়ে নেন, অতঃপর তারা রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর পিছনে এমন অবস্থায় নামাজ আদায়রত হন যেন তাদের মাথার ওপর কাক বসে আছেন।
[রুহুল মআনি : খন্ড-২২]
এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, মদিনার সমস্ত আনসারী মহিলা সাহাবীগণ এই আয়াত নাজিল হবার পর এর ওপর আমল করা শুরু করে দেন। তারা আমাদের মত প্রশ্ন করেননি “বোরকা পড়তে হবে কিনা, মুখ ঢাকতে হবে কিনা, এগুলো ফরজ না নফল?” ইত্যাদি। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম থেকে একটিমাত্র আয়াত শ্রবণ করেই মুখমন্ডল সহ সমস্ত শরীর কাপড় দিয়ে আবৃত করে পর্দা শুরু করে দিলেন। এটা ছিল তাদের তাকওয়া। তাদের পরহেজগারী এমন ছিল যে পরিপূর্ন পর্দা করার জন্য এই একটা আয়াতই ছিল যথেষ্ঠ। সেইক্ষেত্রে আমাদের বৈশিষ্ট হল আমল করার কোন আয়াত বা হাদিস শরীফ দৃষ্টিগোচর হলে এই আমল যাতে না করতে হয় তার জন্য অন্য আয়াত বা হাদিস শরীফ খুঁজতে থাকি। আর শেষ পর্যন্ত কোনো দলিল না পেলে বলে থাকি বর্তমান জামানায় এতো পর্দা লাগে না।
আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, সম্মানিত আনসারী মহিলা সাহাবীদের এই পর্দা আবৃত করার পন্থা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পছন্দ করেছেন। বর্তমানে কিছু কিছু মুসলমানকে দেখা যায় মহিলাদের মুখমন্ডল আবৃত করে বোরকা পড়াকে তারা সমালোচনা করে থাকেন। অনেকে এটাকে ভ্রাম্যমান তাবু উল্লেখ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যে বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সেই বিষয়টি আমরা সমালোচনা করছি!! এতে আমাদের ঈমানের কি পরিমান ক্ষতি হচ্ছে সেটা কি আমরা ভেবেছি? এরপরও কি কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) থেকে আমরা শাফায়াত আশা করতে পারি?
4. মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখা – সূরা আন-নূর (২৪:৩১)
তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে । [ সূরা আন-নূর ২৪:৩১ ]
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে বলেছেন তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং এটা বুঝাতে যেয়ে “খিমার” শব্দ ব্যবহার করেছেন। খিমার এমন কাপড়কে বলা হয় যা দিয়ে চেহারা, ঘাড়, বুক ইত্যাদি ঢেকে রাখা হয়। তাই নেশাজাতীয় দ্রব্যকে খিমার বলা হয় যেহেতু এটা বিবেকের ওপর পর্দা ফেলে দেয়। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আয়েশা (রাঃ) একটি হাদিস বলতেন, তা হলো “যখন কোরানের এই আয়াত নাজিল হল -তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে- নারীরা তখন তাদের ইজার (এক ধরণের পোশাক) নিয়ে মুখমন্ডল সহ সমস্ত শরীর আবৃত করলেন। [ বুখারী শরীফ , ৪৪৮১, আবু দাউদ শরীফ , ৪১০২]
ইবনে আলকামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) এর কাছে এলেন। তিনি এমন উড়না পড়েছিলেন যে তার ললাট/কপাল দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) সেই ওড়নাটি নিয়ে টেনে ছিড়ে ফেললেন। তারপর ধমকের স্বরে বললেন, আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরে কি বলেছেন তা কি তুমি জানো না? একথা বলে তিনি আরেকটি ওড়না এনে হজরত হাফসাকে পরিয়ে দিলেন। [ তবকাতে ইবনে সাদ ৮/৭২ ]
হজরত হাফসা (রাঃ) কপাল এবং ললাট অনাবৃত রেখেছিলেন সেটা আয়িশা (রাঃ) পছন্দ করেননি বিধায় অন্য একটি ওড়না দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন এবং দলিল হিসেবে সুরা নূরের এই আয়াত উল্লেখ করেন।
5. সৌন্দর্য প্রদর্শন করোনা সূরা আন-নূর (২৪:৩১)
এবার আমরা আরো একটি আয়াতের দিকে দৃষ্টিপাত দেব। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আল কোরানের সূরা নূরে উল্লেখ করেছেন:
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে – [সূরা আন-নূর ২৪:৩১]
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের বলেছেন সাধারণভাবে যা প্রকাশ পায় সেটা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য যেন প্রকাশ না করা হয়। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি) , ইব্রাহিম নাখয়ী(রহঃ), ইবনে শিরিন (রহঃ) এই আয়াতের তফসীরে সৌন্দর্য প্রকাশ না করার অর্থ বুঝিয়েছেন মেয়েদের যেকোনো ধরণের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না অর্থ্যাৎ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে এবং এর মধ্যে মুখমন্ডলও অন্তর্ভুক্ত। আর সাধারণভাবে যা প্রকাশমান সেটা বলতে বুঝিয়েছেন একটি মেয়ে যত পর্দাই করুক কিছু বিষয় ঢেকে রাখতে পারবে না যেমন তার পোশাকের রং, সে খাটো না লম্বা, মোটা না চিকন ইত্যাদি। সুতরাং এগুলো স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পাবেই এবং এর জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। আলোচ্য আয়াতে এটাই বুঝানো হয়েছে এবং এই ব্যাখ্যা করেছেন রসুলুল্লাহর সম্মানিত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ। ইনি সেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ যাকে খলীফাতুল মুসলিমিন উমর (রাঃ) কুফাতে পাঠিয়েছিলেন কুফাবাসীকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেবার জন্য এবং পাঠানোর সময় বলেছিলেন “তোমরা দ্বীনি সমস্ত বিষয় তাকে অনুসরণ করে চলবে”। তদুপরি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছিলেন মুজতাহিদ সাহাবীগণের মধ্যে অন্যতম, যাদের অন্যান্য সাহাবীরা পর্যন্ত অনুসরণ করতেন।
কেউ কেউ বলে থাকেন সাধারণভাবে যা প্রকাশমান সেটা বলতে আসলে “হাত” ও “মুখ” বুঝিয়েছেন যা সাধারণত প্রকাশ পেয়ে থাকে। তাদের এই যুক্তি যদি সঠিক হয় তাহলে কিন্তু একটি মেয়ে যেকোনো অশ্লীল পোশাক পরেও বলতে পারেন যে আমার দ্বারা এটাই সাধারণভাবে প্রকাশ পায়। তখন আপনি তাকে কোন যুক্তিতে বুঝাবেন?
আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবে যা প্রকাশমান তা ছাড়া সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। এখন ধরে নিলাম “সাধারণভাবে প্রকাশমান” বলতে “হাত” , “মুখ” বুঝিয়েছে। কিন্তু আপনি যদি আয়াতের পরের অংশ গভীরভাবে খেয়াল করেন তাহলে কিন্তু আপনার নিকট প্রথম অংশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করার জন্য। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মেয়েদের সৌন্দর্যের মধ্যে মুখমন্ডলকে প্রধান ধরা হয়ে থাকে। কোনো ছেলে একটি মেয়ের দিকে তাকালে তার মুখমন্ডল দেখে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়ে থাকে। এইজন্য দেখা যায় বিবাহের সময় শুধুমাত্র মুখমন্ডল দেখেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় এখানে বিবাহ করা হবে কি হবে না। সুতরাং সৌন্দর্যের মধ্যে যদি ভোটাভুটি হয় তাহলে নিঃসন্দেহে নারীদের মুখমন্ডল প্রথম পর্যায়ে পড়বে। পৃথিবীতে কবি-সাহিত্যিকেরা মেয়েদের যে সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা লিখেছেন সেগুলো যদি আপনি যাচাই বাছাই করেন তাহলে দেখবেন ৯০% কবিতাই তাদের মুখমন্ডলের সৌন্দর্য, চোখ, হাসি ইত্যাদি নিয়ে লেখা হয়েছে। এই আয়াতের তফসীরে অধিকাংশ তফসীরকারক মুখমন্ডলকে অবশ্যই আবৃত করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
রইসুল মুফাস্সিরীন বা সমস্ত তফসীরকারকদের সর্দার হজরত ইবনে আব্বাস (রাদি) এর মত এই যে একজন নারী বাসায় থাকলে মুখ খোলা রাখতে পারবে কিন্তু যখন বাসার বাহিরে যাবে তখন হিজাব পরে নিবে বা মুখমন্ডল আবৃত করে নিবে। তফসীরের কিতাবসমূহে এই আয়াতের তফসীরে বলা হয়েছে নামাজের মধ্যে যে সমস্ত অঙ্গ ঢেকে রাখার হুকুম রয়েছে হাত ও মুখ তার অন্তর্ভুক্ত নয়। এটাই ইল্লা মা যাহারা দ্বারা বোঝানো হয়েছে। এবং এই আয়াত দ্বারাই অনেকে বলেছেন, “মাহরামের সামনে হাত ও মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই।” সুতরাং এই আয়াতকে সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কোনো যুক্তি নেই।
আল কোরানে নারীদের পর্দা বিষয়ে যদি আর কোনো আয়াত না থাকতো শুধুমাত্র এই আয়াত দ্বারাই প্রমান করা যেত যে নারীদের সমস্ত শরীর আবৃত করে পর্দা করা ফরজ। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যেহেতু সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন আর একথা সর্জনবিদিত যে নারীদের সমস্ত শরীর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। আসলে নারীদের সমস্ত শরীর শুধু নয়, তাদের চালচলন, কথাবার্তা ইত্যাদি সকল কিছুই সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। এইজন্য দেখা যায় কোনো নারীর একটি কথাতেই একটি ছেলের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। কোনো নারী নুপুর বাজিয়ে হেটে চলে গেলে ২/৩ ঘন্টা পর্যন্ত অনেক তরুনের হৃদয়ের মধ্যে নুপুর বাজতে থাকে। এইজন্য নারীদেহের সমস্ত শরীর আবৃত করার মাধ্যমে, পরপুরুষের সাথে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলার মাধ্যমে, সংযত চলার মাধ্যমে তথা ইসলাম যত উপায় দেখিয়ে দিয়েছে তার সমস্ত কিছু পালন করলেই সেটাকে প্রকৃত শরঈ পর্দা বলা যেতে পারে।
6. মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।
[ সুরাহ আহযাব ৩৩: ৩৩ ]
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ তায়ালা মূর্খতা যুগের মত সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। আর আপনি আরবের প্রাচীন ইতিহাস দেখলে বুঝতে পারবেন নারীরা অনাবৃত হয়ে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতো। আমরা সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে আধুনিকতার লক্ষণ বললেও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এটাকে মূর্খতা যুগের লক্ষণ বলে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে আমরা নারী স্বাধীনতার নামে, নারীর অধিকার এর নামে সিনেমা, নাটক, খেলাধুলা, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একসাথে অভিনয় করা, এড প্রদর্শন করা, লাক্স ফটো সুন্দরী, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ডাল-ভাত এর পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এতে মেয়েদের মর্যাদা বাড়েনি বরং তাদের পরিশ্রম দ্বিগুন হবার সাথে সাথে তাদের মর্যাদা তলানিতে এসে থেমেছে। মেয়েদের যতদিন সৌন্দর্য আছে ততদিন এই সব কর্পোরেট গ্রূপ, অ্যাড ফার্ম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তাদের সমীহ করে থাকে। এইজন্য দেখা যায় একসময় মিডিয়াতে জনপ্রিয় থাকলেও শেষ বয়সে তাদের দেখার জন্য, আর্থিক সহযোগিতার জন্য কেউ পাশে থাকে না। অনেক তারকাকে দেখা যায় হাসপাতালের আইসিইউ তে জীবনের শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন কিন্তু তাদের পাশে কেউ থাকে না। কিছুদিন আগে এক নায়িকাকে দেখা গেছে মারা যাবার পর পত্রিকায় খবর আসার কারণে সবাই জানতে পেরেছে এমন একজন নায়িকা একসময় জনপ্রিয় ছিল। বাস্তব এটাই। যতদিন তাদের সৌন্দর্য ছিল ততদিন তাদের প্রয়োজন ছিল। এটা কেমন স্বাধীনতা যার দরকার শুধুমাত্র যতদিন সৌন্দর্য থাকবে শুধুমাত্র ততদিন ?
7. বৃদ্ধা নারীদের ক্ষেত্রে পর্দা শিথিল
“বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”।
[সূরা আন-নূর ২৪:৬০]
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি:) এই আয়াতে ব্যাবহৃত “কাপড়” শব্দের তফসির ‘ওড়না’ বা ‘চাদর’ করেছেন যা সাধারণত অতিরিক্ত পোশাক হিসেব ধরা হয়। কোনো নারী যদি সালোয়ার-কামিজ পরিধান করে তাহলে কখনো সেটাকে অতিরিক্ত কাপড় বলা হবে না। বরং এর ওপর ওড়না বা চাদর বা বোরকা আবৃত করলে সেটাকেই শুধুমাত্র বলা হবে পোশাকের ওপর অতিরিক্ত কাপড়। আল্লাহ তায়ালা এটাই এখানে বলেছেন যে কোনো বৃদ্ধা মহিলা যদি এই অতিরিক্ত কাপড় খুলে রাখে তাহলে তার গোনাহ হবে না। যেহেতু বলা হয়েছে বৃদ্ধা মহিলার ক্ষেত্রে এটা গোনাহ হবে না তাই স্বাভাবিকভাবেই এটা প্রমাণিত হয় যে বৃদ্ধা না হয়ে কম বয়সের হলে সেইসকল নারীর ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই গোনাহ হবে।
নিম্নলিখিত সাহাবী, তাবেয়ী গণ উপরোক্ত কাপড়কে ওড়না হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
১। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)
২। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
৩। হজরত মুজাহিদ (রহঃ)
৪। হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহঃ)
৫। হজরত আবুশ শাসা (রহঃ)
৬। হজরত ইব্রাহিম নখয়ী (রহঃ)
৭। হজরত হাসান (রহঃ)
৮। হজরত কাতাদাহ (রহঃ)
৯। হজরত ইমাম যুহরী (রহঃ)
১০। ইমাম আওযায়ী (রহঃ) সহ আরো অনেকে।
এই আয়াত শরীফে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বৃদ্ধা নারীদের ক্ষেত্রে বলেছেন যে যদি তারা অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে তাহলে দোষ নেই কিন্তু তারপরেও ১টি শর্ত দিয়েছেন। শর্তটি হলো তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না।
“বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই”
এর অর্থ হলো যদি অতিরিক্ত পোশাক খুললে কোনো বৃদ্ধা মহিলার সৌন্দর্য প্রকাশ পাবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার ক্ষেত্রে সেটাও নিষেধ। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই কথাগুলো বুঝতে না পারেন তাহলে আবার আয়াতটি পড়ুন এবং উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি পড়ুন। বৃদ্ধা মহিলার ক্ষেত্রেও যদি সৌন্দর্য প্রকাশ করা নিষেধ থাকে তাহলে কিভাবে সম্ভব কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে মুখমন্ডল খোলা রেখে সৌন্দর্য প্রকাশ করা জায়েজ হতে পারে?
8. গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।
“তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”। [ সূরা আন-নূর - ২৪:৩১ ]
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন মেয়েরা পায়ের মাধ্যমে জোরে শব্দ করে যেন চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ পায়। বোঝা গেলো পায়ের মাধ্যমে জোরে শব্দ করলে সেটাও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহ তায়ালা তা পছন্দ করেনি। অনেক সময় দেখা যায় মেয়েরা জুতা পরে শব্দ করে চলতে থাকলে পুরুষরা ঠিকই তাদের দিকে প্রলুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ বলে থাকেন আসলে মেয়েদের পায়ের আঘাতের শব্দ শুধু মাটিতে নয় আমাদের হৃদয়েও হচ্ছে। বিষয়টা আসলেই তেমনিই। যাদের সত্য প্রকাশের সাহস আছে তারা এগুলো অবশ্যই স্বীকার করবেন। এখন কথা হল শুধুমাত্র পায়ের মাধ্যমে জোরে শব্দ করে চলাচল করা হলে সেটা যদি সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে তাহলে “মুখমন্ডল” খোলা রেখে চলাচল করলে সেটা আরো কয়েকশ গুন্ সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়ে থাকবে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন নিশ্চয়ই কেউ বলবে না যে পায়ের শব্দ সৌন্দর্য হলেও মুখমন্ডল সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যেহেতু মেয়েদের সমস্ত রকম সৌন্দর্য গায়রে মাহরামদের সম্মুখে প্রকাশ করা নিষেধ তাই এই হিসেবে মুখমন্ডল প্রকাশ করাও এই নিষেধের আওতাভুক্ত হবে, যেহেতু মুখমন্ডলও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন একজন বাবা তার সন্তানকে বাজার করতে পাঠাচ্ছেন এবং বাজারে যাবার সময় সন্তানকে উপদেশ দিলেন “তুমি কখনো কারো সাথে ঝগড়া করবে না, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না”। ছেলেটি বাবার কথায় রাজি হয়ে বাজার করতে চলে গেল। পথিমধ্যে এলাকার একটি দুষ্টু ছেলেকে সে মারধর করলো। মারামারি শেষ করে সে বাসায় ফেরত আসলো। বাবা জানতে পেরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে ছেলেটিকে মেরেছে? ছেলেটি বলল আপনি তো আমাকে খারাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন কিন্তু মারতে তো নিষেধ করেননি? তাই ঝগড়া না করে ছেলেটিকে আমি প্রহার করেছি। এই হাস্যকর উক্তি শুনে বাবা বললেনঃ কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা সেটা একটা অপরাধ কিন্তু কারো গায়ে আঘাত দেওয়া এর চেয়ে অনেক বড় অপরাধ। তোমাকে যেহেতু ছোট অপরাধ (খারাপ ব্যবহার) করতে নিষেধ করেছি তাই স্বাভাবিকভাবেই এটা বোঝা যায় যে এর চেয়ে অনেক বেশি অপরাধ কারো গায়ে আঘাত করা এবং সেটা অবশ্যই আরো বেশি করে নিষেধ। সুতরাং এটা তোমার স্বাভাবিকভাবেই বোঝা উচিত ছিল।
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মেয়েদের পায়ের শব্দ সৌন্দর্য-এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং এই কারণে এই সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবে এর চেয়ে আরো অনেক বেশি সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত মেয়েদের মুখমন্ডল সেটা প্রকাশ করাও যে স্বাভাবিকভাবে নিষেধ হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
9. অন্য পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলা
“হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, এর ফলে সেই ব্যক্তি খারাপ ধারণা করবে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে”। [ সুরাহ আহযাব ৩৩:৩২]
একটি মেয়ে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বললে ছেলেরা যেমন প্রলুব্ধ হয় এর চেয়ে অনেক বেশি প্রলুব্ধ হবে তার মুখমন্ডল দর্শন করে। তাই স্বাভাবিকভাবে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা যেহেতু নিষেধ তাহলে ঠিক একই যুক্তিতে মুখমন্ডল প্রকাশ করাও নিষেধ। সূরা আন-নূর এর ৩১ নং আয়াতের “তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।” এর যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ঠিক একই ব্যাখ্যায় এই আয়াত দ্বারাও প্রমান করা যায় মুখমন্ডল অবশ্যই আবৃত করা ফরজ/ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক।
এবং এই আয়াতের মাধ্যমে এটাও প্রমানিত হয়, গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে মেয়েদের মোবাইল ফোন এ কথা বলা, চ্যাটিং করা, ফেইসবুক এ কথা আদান প্রদান করা, ভিডিও কনফারেন্সিং, নাটক বা সিনেমায় অভিনয় ইত্যাদি সবকিছু নিষেধ হয়ে যায়।
10. পর্দার আড়াল থেকে চাওয়া
“তোমরা তাঁর (নবীর) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে”।
[সূরা আহযাব : ৩৩:৫৩]
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, অপারগ অবস্থায় পর্দার হুকুম কিছুটা শিথিল হয়ে থাকে। যেমন ধরুন ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হলে এবং যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলা ডাক্তার না পাওয়া গেলে নারীরা পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে পারবেন। পর্দা করেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং সেক্ষেত্রে শরীরের যতটুকু অংশ না দেখালেই নয় ততটুকুই শুধুমাত্র দেখাতে পারবেন। আবার ধরুন এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো কোনো পুরুষকে কোনো নারীর হয়তো কোন একটি জিনিস দেবার প্রয়োজন হলো। তখন সে সেই বস্তুটি ঠিকই হস্তান্তর করবে কিন্তু পর্দার সহিত। উপরোক্ত আয়াত শরীফ এর দলিল।
আরো একটু মনোযোগের সাথে উপরোক্ত আয়াত শরীফ নিয়ে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারবো আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কিন্তু বলেননি পুরুষের সামনে পর্দা করে তাদেরকে যেকোনো কিছু দিতে পারো। বরং এখানে প্রথম অংশে বলা হয়েছে যদি কিছু দিতেই হয় অর্থাৎ নিতান্ত অপারগ হলে দিতে পারো। আর দ্বিতীয অংশে বলেছেন যদি সম্ভব হয় সামনে এসে নয় বরং পর্দার আড়াল থেকে দাও যেটা হচ্ছে সর্বোচ্চ ধরণের পর্দা। তাই যারা বলে থাকে বোরকা পরে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায় তাদের ক্ষেত্রে এই আয়াত হচ্ছে দলিল যে অপারগ না হলে মেয়েদের বোরকা পরেও পুরুষদের সামনে বিনা কারণে যাওয়া নিষেধ। । ইচ্ছেমত বোরকা পরে স্টেডিয়াম এ খেলা দেখতে গেলেও সেটাও এই আয়াত দ্বারা নিষেধ হয়ে যায়। শর্ত হচ্ছে “নিতান্ত অপারগ হলে” ।
আর একটি বিষয় খেয়াল করুন এখানে আল্লাহ তায়ালা “তোমরা” বলতে সাহাবীদের বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ সাহাবীদের বলেছেন “তোমরা” নবী পত্নীদের কাছে কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল হতে চাও। সাহাবীদের মধ্যে ছিল হজরত আবু বকর (রাঃ), হজরত ওমর (রাঃ) , হজরত ওসমান (রাঃ), হজরত আলী (রাঃ) সহ সমস্ত পুরুষ সাহাবী আর নবী পত্নীদের মধ্যে ছিলেন হজরত আয়িশা (রাঃ) , হাজরাত জয়নব (রাঃ) সহ সকল নবী পত্নী গণ।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হজরত ওমর রাঃ এর ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। তখন সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ তখন আবু বকর (রা) কোথায় থাকবে?” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন “এর আগেই ফেরেশতারা আবু বকরকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে। “ (৯) এমনি ছিল সাহাবীদের মর্যাদা ।
শুধুমাত্র পুরুষ সাহাবী নন, উম্মুল মুমিনীনগণের পবিত্রতা ও মর্যাদার সাক্ষী আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরান শরীফে উল্লেখ করেছেন। উধাহরণত: আয়িশা (রাঃ) এর পবিত্রতার সাক্ষী দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইফকের ঘটনায় আল কোরানের আয়াত নাজিল করেছেন যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে। উম্মুল মুমিনীন গণ হলেন সমস্ত উম্মতের সম্মানিত মা এবং তাদেরকে রসূলের ইন্তেকালের পরে বিবাহ করা ছিল নিষেধ।
চিন্তা করুন একদিকে হজরত আবু বকর (রাঃ), হজরত ওমর (রাঃ) এর মত সম্মানিত সাহাবীগণ যারা দুনিয়াতে থাকতেই বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন এবং অপরদিকে উম্মুল মুমিনীন যাদের পবিত্রতা আল কোরান দ্বারা প্রমাণিত তাদের উভয় দলকেই আল্লাহ তায়ালা পর্দা করতে বলেছেন!!!
আর সেক্ষেত্রে আমাদের হুকুম তাহলে কি হওয়া উচিত? আমরা কি তাদের চেয়েও মুত্তাকী পরহেজগার হয়ে গেছি যে আমাদের পর্দা করতে হবে না? আমাদের তো অবস্থা এমন সাধারণ মুসলমান থেকে শুরু করে দ্বীনি লাইন এ জড়িত ব্যাক্তিগণও দৃষ্টির হেফাজত করতে পারিনা। অনেক তরুনের শুধুমাত্র বিবাহিত নারীদের পছন্দ আবার অনেক বিবাহিত পুরুষের নিজ স্ত্রী ছাড়া আর সবাইকেই ভালো লাগে। সকালে কোনো মেয়ের দিকে দৃষ্টি গেলে প্রতি বসন্তে তার কথা মনে হয়। আর আমরাই বলি এই আয়াত তো নবী পত্নীদের জন্য নাজিল হয়েছে আমাদের জন্য নয়। যেন বলতে চাই ওনাদের পর্দা দরকার ছিল আমাদের নয়।
একজন সম্মানিত শায়খ আমাকে একটি ঘটনা বলেছিলেন। তার এক ছাত্র তার কাছে চিঠি লিখে একটি সমস্যা জানিয়েছিল। চিঠিতে সেই ছাত্র উল্লেখ করেছিল চোখ বন্ধ করে জিকির করার সময় তার এতো মেয়েদের কথা মনে হয় যে একবার গোছল ফরজ হয়ে গিয়েছিল। এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান সমাজের চিত্র। আমাদের তাকওয়া। খুব কম মুমিন আছে যে বর্তমানে চোখের দৃষ্টি থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পারেন।
বর্তমানে চারিপাশে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় শুধুমাত্র ধর্ষণ আর ধর্ষণ। যুবক যুবতী তো দূরের কথা চাচা দ্বারা ভাতিজি ধর্ষণ, মামা দ্বারা ভাগ্নি ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ কিছু আর বাদ নেই। জামাই শাশুড়ির সাথে পলায়ন। বিয়াই বিয়াইন এর সাথে পলায়ন এমন ঘটনাও বাদ যাবে কেন? এখন পরিবেশ এমন গায়রে মাহরাম তো দূরের কথা মাহরাম এর ক্ষেত্রেও অনেক সময় পর্দা করা ফরজ হয়ে যায়।
বর্তমানে এই ধরণের পর্দার কথা শুনলেও অধিকাংশ নারী/পুরুষ নির্বিশেষে বলে থাকেন “এটা এযুগে সম্ভব না”। “মেয়েদেরকে ঘরে বন্দি করার শামিল”, “মেয়েদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল”। বিষয়টি আসলে তা নয়। বরং বলা যায় এটা মেয়েদেরকে সম্মানিত করেছে। আমাদের ঈমান দুর্বল দেখে আমরা সুন্নত পালন করার মধ্যে আনন্দ পাই না। কোনো জিনিস ভালো না খারাপ সেটা নির্ভর করছে আপনি তার প্রতি কতটা আসক্ত তার ওপর। যাদের হৃদয়ে আল্লাহ এবং তার রসূল এবং সাহাবীদের মর্যাদা, ভালোবাসা অংকিত আছে সেই সকল মেয়েদের নিকট এক মুহূর্ত কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা সমগ্র আসমান তার মস্তকে ভেঙে পড়ার শামিল। পৃথিবীর সমস্ত কিছুর বিনিময়েও সে বেপর্দা হওয়া পছন্দ করবে না।
11. হাদিস শরীফের দলিল:
এখন আমরা হাদিস শরীফ দ্বারা দেখবো মহিলা সাহাবীগণ কিভাবে মুখমন্ডল আবৃত করে পর্দা করতেন:
12. ইহরামরত অবস্থায় আয়েশা (রাঃ) মুখমন্ডল আবৃত করা
হজরত আয়শা (রাঃ) বলেন, “যখন আমরা নবী করিম (সাঃ) এর সাথে ইহরাম রত অবস্থায় ছিলাম সে সময় পুরুষরা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় আমরা আমাদের মুখমন্ডলের ওপর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতাম। যখন তারা চলে যেত তখন আমরা মুখমন্ডল অনাবৃত করে ফেলতাম। [ ১। মুসনাদে ইবনে হাম্বল (রহঃ) ৩০/৬, ২। সুনানে ইব্নে আবু দাউদ ১০৪/২ , ৩। সুনানে ইবনে মাজাহ ৯৭৯/২ ]
অধিকাংশ আলেমদের মত হল, ইহরাম অবস্থায় মহিলারা মুখ ঢাকতে পারবে না কিংবা বলা যায় মুখমন্ডল নিকাব স্পর্শ করে এমনভাবে মুখ ঢাকতে পারবে না। অথচ এখানে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে আয়িশা (রাঃ) ইহরামরত অবস্থায় গায়রে মাহরাম পুরুষদের সম্মুখে মুখমন্ডল আবৃত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সময়ের সুপ্রসিদ্ধ সম্মানিত সালাফি শায়খ আল মুনাজ্জিদ সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা নিম্নরূপ:
“ইহরামরত অবস্থায় মহিলাদের মুখমন্ডল অনাবৃত রাখা বাধ্যতামূলক যা অধিকাংশ আলেম বলছেন। এবং অন্য কোনো হুকুম এই হুকুমকে বাতিল করতে পারে না যদি না সেই হুকুমও বাধ্যতামূলক হয়। যদি গায়রে মাহরাম এর সামনে মুখমন্ডল আবৃত করা বাধতামূলক না হতো তাহলে ইহরাম রত অবস্থায় অবশ্যই মুখমন্ডল অনাবৃত রাখতে হত। সহিয়াইন (বুখারী ও মুসলিম শরীফ এর হাদিস) দ্বারা প্রমাণিত ইহরাম অবস্থায় মুখমন্ডল স্পর্শ করে মুখ আবৃত করা নিষেধ। (যেহেতু দুটো নিষেধ সামনে এসেছে এবং একসাথে দুটোই পালন করা সম্ভব নয় তাই আয়িশা (রাঃ) মুখমন্ডল আবৃত করাটা বেছে নিয়েছেন)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইয়িমা (রহঃ) বলেন, “এই বিষয়টি ইঙ্গিত করে ইহরামরত ছাড়া অন্য অবস্থায়ও নিকাব এবং হাত-মোজা সাধারণভাবে প্রচলিত ছিল। এতে বোঝা যায় (তৎকালীন সময়ে মুসলিম মেয়েরা) মুখ ও হাত আবৃত করতো।” (৭)
13. শাহাদৎ প্রাপ্ত সন্তানের মায়ের মুখে নেকাব থাকা
উম্মে খাল্লাদ নামক একজন মহিলা সাহাবী রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর দরবারে নেকাব আবৃত করে আসলেন। এসেই তিনি তার নিহত সন্তান বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। এক সাহাবী বললেন, “আপনি আপনার নিহত সন্তান বিষয়ে প্রশ্ন করতে এসেছেন। এই মুহূর্তেও আপনি নেকাব দিয়ে মুখমন্ডল আবৃত করে এসেছেন?” জবাবে মহিলা সাহাবী বললেন, “আমার সন্তান মারা যেতে পারে কিন্তু আমার বিবেক তো মারা যায়নি” [ আবু দাউদ শরীফ ]
আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীদের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করে দিন। তাদের মজবুত ঈমান দেখলে বিস্ময়ে শুধু হতবাক হতে হয়। মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যু- এরচেয়ে কঠিন বিপদ পৃথিবীতে কোনো মায়ের জন্য হয়তো নেই। এই মুহূর্তেও তাদের ঈমানের দৃঢ়তা দেখে অবাক হতে হয়। এই মুহূর্তেও তিনি শুধু নেকাব দিয়ে আসেননি, কত সুন্দর জবাব দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। সাহাবীরা যেকোনো অসীলা খুঁজে আমল করতেন, আর আমরা যেকোন অসীলায় আমল পরিত্যাগ করার উপায় খুঁজি। মা তার সন্তানের মৃত্যুর সময়ও পর্দা করতে ভোলেনি, আর বর্তমানে দেখা যায় সচরাচর পর্দা করে এমন মা তার সন্তানের বিয়ের সময় পর্দা না করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়।
14. আবু বকর (রাঃ) এর কন্যা ও মুখমন্ডল আবৃত করা
ইসমাইল বিন আবি খালিদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আমরা উম্মুল মুমিনীন এর কাছে তারবিয়ার দিন গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “হে বিশ্বাসীদের মাতা, একজন মহিলা এখানে আছেন যিনি ইহরাম অবস্থায় মুখ আবৃত করতে অস্বীকার করেছেন। আয়িশা (রাঃ) তার বুকের কাপড়- এর খানিকটা নিয়ে সেই মহিলার মুখমন্ডল আবৃত করে দিলেন।
কেউ কেউ বলে থাকেন মুখমন্ডল আবৃত করা শুধুমাত্র নবী পত্নীদের জন্য নির্ধারিত ছিল, অন্যান্য মহিলারা বা মহিলা সাহাবীগণ এটা পালন করতেন না। তাদের এই যুক্তি নিঃসন্দেহে উপরোক্ত হাদিস শরীফ খণ্ডন করে দেয়। কেননা আইয়িশা (রা:) কে অভিযোগ করা হয়েছিল একজন মহিলা সমন্ধে যিনি ইহরাম অবস্থায় মুখ আবৃত করেনা। সেই মহিলা উম্মুল মুমিনীনদের কেউ ছিল না। তথাপি আয়িশা (রাঃ) কাপড়ের একটি অংশ দিয়ে তার মুখ ডেকে দেন।
শুধু তাই নয়, আয়িশা (রা:) এর কাছে বলা হল “একজন মহিলা মুখ ঢাকছে না” এর কথার দ্বারা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে সেই মহিলা ছাড়া অন্য সবাই মুখমন্ডল ঢেকে রেখেছিলেন। অধিকাংশ মহিলা মুখ অনাবৃত রাখলে তখন নিশ্চয়ই বলা হতো অনেকে মুখ ঢাকছে না। সুতরাং যারা বলে থাকেন তৎকালে আরব মহিলাদের মধ্যে মুখ ঢাকার প্রচলন ছিল না বা উম্মুল মুমিনীন ছাড়া অন্য কেউ মুখ ঢাকতো না তাদের এই কথা বা দাবি উপরোক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা খণ্ডন হয়ে যায়।
15. আবু বকর রাঃ এর কন্যা
ফাতিমাহ বিনতে আল মুনযির বর্ণনা করেন “যখন আমরা ইহরাম অবস্থায় আবু বকর রাঃ এর কন্যা আসমা (রাঃ) এর সঙ্গী ছিলাম, তখন আমরা মুখমন্ডল আবৃত করতাম।“
এই হাদিস শরীফ প্রমান করে তৎকালীন মহিলা সাহাবীরা শুধুমাত্র নিকাব দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করতেন তা নয়, বরং ইহরামরত অবস্থায় মুখমন্ডল আবৃত করা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সেই সময় তার মুখ ঢাকতেন।
16. মহিলাদের পা ঢেকে রাখার হুকুম
ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, “কেউ যদি অহংকারের সাথে কাপড় হেচড়িয়ে চলাচল করে, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টি দিবেন না।” উম্মে সালামাহ বললেন, “মহিলারা তাহলে কাপড়ের প্রান্ত কিভাবে রাখবে?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তখন বলেন, “তারা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখবে”, তিনি বললেন, “কিন্তু তাতেও যদি তাদের পা বের হয়ে যায়?” তিনি বললেন “তাহলে আরো ১ বিঘৎ পরিমান তারা ঝুলিয়ে দিবে, কিন্তু এর বেশি নয়” [ তিরমিযী শরীফ ]
যারা মুখমন্ডল খোলা রাখা জায়েজ বলেন তাদের কাছে একটি জিজ্ঞাসা “যদি সাধারণ ভাবে শুধুমাত্র “পা” বের করে রাখা মহিলাদের জন্য নিষেধ হয়ে থাকে যা উপরোক্ত হাদিস শরীফে আমরা দেখলাম তাহলে কোন যুক্তিতে আরো বেশি ফেতনার আশংকাযুক্ত “মুখমন্ডল” বের করে রাখা অনুমোদিত হতে পারে? মহিলাদের পা এর দিকে দৃষ্টি খুব কম পুরুষই দিয়ে থাকেন তারপরও যদি সেটা নিষেধ হতে পারে তাহলে যে মুখমন্ডল দেখে অধিকাংশ পুরুষ আকৃষ্ট হয় তাহলে কোনো যুক্তিতে সেটা নিষেধ হবে না? আপনি কি মনে করেন এমন স্ববিরোধিতা ইসলাম অনুমোদন করবে? সাধারণ বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো ব্যাক্তির এ বিষয়টি না বোঝার কথা না।
17. চুল দেখানোর শাস্তি
একবার হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবং হযরত আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সাক্ষাত করতে যেয়ে দেখলেন তিনি ক্রন্দন করছেন এবং ওনার দাড়ি মোবারাক ভিজে যাচ্ছে। তারা জিজ্ঞেস করলেন, “হে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনি কাঁদছেন কেন?” তিনি বললেন “হে ফাতেমা, আমি যখন মেরাজে গিয়েছিলাম তখন কিছু নারীকে জাহান্নামে শাস্তি পেতে দেখলাম। তাদের কথা স্মরণ করে আমি কাঁদছি। প্রথমে এক নারীকে দেখলাম তাকে জাহান্নামে তার চুল এর সাথে বেঁধে লটকিয়ে রাখা হয়েছে, সে দগ্ধ হচ্ছে এবং তার মাথার মগজ ফুটন্ত গরম পানির মতো টগবগ করে ফুটছে। (শুধুমাত্র চুল ধরে টান দিলে কি প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয়, সেক্ষেত্রে চুল এর সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলে তার কি হবে?)
হযরত ফাতেমা (রাঃ) একথা শুনে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ কেন তাদের এরূপ শাস্তি হচ্ছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন “এসকল নারী নিজেদের চুল কাটতো এবং চুল খোলা রেখে ঘুরে বেড়াতো।”
[আল কাবায়ের, আল্লামাহ জাহাবী (রহঃ)]
নারীদের চুল পুরুষদেরকে দেখানোর শাস্তি উপরক্ত হাদিস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে। যদি চুল দেখালে এই শাস্তি হয়, তাহলে মুখমন্ডল দেখালে কেমন শাস্তি হতে পারে? নিশ্চয়ই এর চেয়ে বহুগুন বেশি যেহেতু মুখমন্ডলের সৌন্দর্য চুলের সৌন্দর্যের চেয়ে অনেকগুন বেশি যেটা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং এটাই পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করে থাকে অত্যধিক। প্রিয় পাঠক খেয়াল করুন কেহ যদি বলে চুল দেখালে গোনাহ হবে কিন্তু “মুখমন্ডল” দেখালে গোনাহ হবে না তাহলে কি সেটা হাস্যকর যুক্তি হয়ে যাবে না। চুল দেখানোর কারণে শাস্তি হলে মুখমন্ডল তো আরো বড়ধরণের পর্দার আওতায় পড়বে এবং তার শাস্তিও হবে আরো বেশি।
18. ইফকের ঘটনা এবং মুখমন্ডল আবৃত করা
এখন আমরা একটি ঘটনা বর্ণনা করব যে ঘটনার মাধ্যমে পর্দার বেশ কয়েকটি স্তর আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঘটনাটি আয়েশা (রাঃ) কে নিয়ে এবং ইফকের ঘটনা নামে এটি বেশ প্রসিদ্ধ। ষষ্ঠ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বনু মুস্তালিকদের যুদ্ধে যাবার সময় সাথে উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রাঃ) ছিলেন। ইতিপূর্বে নারীদের পর্দার বিধান অবতীর্ন হয়েছিল। তাই হজরত আয়েশা(রাঃ) উঠের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনের মধ্যে বসা ছিলেন। (সম্মানিত পাঠক, এখানে একটি বিষয় খেয়াল করুন, উম্মুল মুমিনীনগন সম্পূর্ণ শরীর পর্দা দ্বারা আবৃত করার পরও শুধুমাত্র উঠের পিঠে বসে থাকতেন না। পৃথকভাবে পর্দাবৃত আসনের ব্যবস্থা করা হত। প্রথমে সেই আসনে সওয়ার হতেন এরপর সাহাবীরা সেই আসনকে উটের পিঠে বসিয়ে দিতেন।)
যাহোক ঘটনাটি অনেক বড় এবং এখানে শেষ অংশটি বলা হচ্ছে যেটা আমাদের আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক। আয়েশা (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে জঙ্গলের দিকে গেলেন এবং এসে দেখলেন কাফেলা চলে গেছে। উনি সেখানেই অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লেন। সাহাবী সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল (রাঃ) কাফেলার পিছনে দেখতে লাগলেন কিছু ফেলে যাওয়া হয়েছে কিনা। তিনি একজনকে শুয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে হজরত আয়িশা (রাঃ) কে চিনতে পারলেন। কেননা পর্দার আয়াত নাজিল হবার পূর্বে তিনি আয়েশা (রাঃ) কে চিনতেন।
চেনার পর তিনি বিচলিত কণ্ঠে বললেন “ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন” । এই বাক্য হজরত আয়িশা (রাঃ) এর কানে যাবার সাথে সাথে তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে গেলেন এবং মুখমন্ডল ঢেকে ফেললেন। অবশেষে তিনি উটে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর কাছে চলে গেলেন।
আমাদের ঘটনাটি বলার উদ্দেশ হলো এই ঘটনার শেষ অংশ। যখন হজরত আয়িশা (রাঃ) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে পুরুষ সাহাবীকে দেখলেন সাথে সাথে কাপড় দ্বারা মুখমন্ডল ঢেকে ফেললেন।
[তফসীরে মাআরিফুল কোরআন : খন্ড ৬ ]
বুখারী শরীফ এবং মুসলিম শরীফে এই ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং সেখানে আয়িশা (রাঃ) এর এমন বর্ণনা এসেছে যে “তিনি মুখমন্ডল জিলবাব বা ওড়না দ্বারা আবৃত করেন এবং সাফওয়ান (রাঃ) সাহাবীর সাথে একটি কথাও বলেননি।”
19. আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)
হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা পরপুরুষদের সামনে নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।
[ আল-মুস্তাদরাক আল হাকিম ১/৪৫৪ ]
20. চার মাজহাব ও অন্নান্য বিশ্ববরেন্য আলেমদের অভিমত:
হানাফী মাজহাব:
হানাফী মাজহাবের যে সকল মুজতাহিদ আলেমগণ মনে করেন নারীদের মুখমন্ডল ঢাকতে হবে তাদের কয়েকজনের তালিকা নিম্নে দেয়া হল:
১। আবু মানসুর আল মাতুরিদী ( ৩৩৩ হিজরী)
২। হাকিম আল শহীদ ( ৩৩৪ হিজরী)
৩। আল রাজী ( ৩৭০ )
৪। আল নাতিফি ( ৪৪৬ )
৫। কাজী খান ( ৫৯২ )
৬। আল মার্গহীনানি – হেদায়া কিতাবের লেখক ( ৫৯৩)
৭। আল-কিরমানি ( ৬০০ হিজ)
৮। মাহমুদ আল-বুখারী – আল-মুহিত কিতাবের লিখক ( ৬১৬ হি:)
৯। আল-সুন্নামী ( ৭০০ হিঃ)
১০। আল-সিগনাকি ( ৭১৪ হিঃ)
১১। আল-কুরাশি (৮৫৪ )
১২। ইবনে আল হুমাম ( ৮৬১ )
১৩। আল কুস্তানি ( ৯৫০)
১৪। ইবনে নুজায়েম ( ৯৭০ )
১৫। সিনান আল-খালয়াতি ( ৯৮৯ )
১৬। উমর ইবনে নুজায়েম ( ১০০৫ )
১৭। মোল্লা আলী ক্বারী (১০১৪ হিঃ)
১৮। আল-সুরুণবালালি ( ১০৬৯ )
১৯। শেখ জাদা আল আফিন্দি ( ১০৭৮)
২০। আব্দ আল হালিম ( ১০৮৮)
২১। আল-হাসকাফী (১০৮৮)
২৩। আল তাহতাভি (রহঃ) ( ১২৩১ )
২৪। ইবনে আবিদীন ( ১২৫২ )
২৫। আব্দ আল হায় লাখনভী ( ১৩০৪)
২৬। আল সুয়ূতী ( ১৩৪৬)
২৭। আল নাহলাভি ( ১৩৫০)
মালিকী মাজহাব:
মালিকী মাজহাবের নিম্নলিখিত আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে মেয়েদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে:
১। আবু বকর ইবনে আল আরবি ( ৫৪৩)
২। ইমাম কুরতুবী ( ৬৭১ )
৩। আত তারাবালুসী আল মাগরিবী ( ৯৫৪)
৪। ইউসুফ আজ জারগানি ( ১০৯৯)
৫। ঘুনাঈম অন নাফরাবী ( ১১২৬)
৬। আলী বিন আহমদ আল আদাবি ( ১১৮৯)
৭। মুহাম্মদ বিন আহমদ আল আদাবি আদ দিরদার ( আল-আজহার বিশ্ব-বিদ্যালয়ের বিখ্যাত আলেম ১২০১ হিঃ)
৮। মুহাম্মদ এস সায়ী ( ১২৪১ )
শাফেয়ী মাজহাব:
শাফেয়ী মাজহাবের নিম্নলিখিত আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে মেয়েদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে:
১। ইমাম আল নববী ( ৬৭৬)
২। আবি বকর ইবনে অন নাকিব আল মিশরী ( ৭৪৫)
৩। ইবনে হাজার আল হায়তামী আল মক্কী ( একজন মহান লেখক যিনি দফা আল মুহ্তাজ কিতাবের লেখক )
৪। আল খতিব আল শীর্বানী ( ৯৭৭)
৫। আল কাশিম আল আবাদি ( ৯৯২)
৬। হামজা আল রামিলি
৭। শায়েখ সুলাইমান আল জামাল ( যান আজহারী ১২০৪)
৮। আল মাক্কী আশ শারওয়ানি ( ১৩০১)
৯। মুহাম্মদ আদ-দিমওয়াতি (১৩০২)
হাম্বলী মাজহাব:
হাম্বলী মাজহাবের নিম্নলিখিত আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে মেয়েদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে:
১। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ( রহঃ) – ( ২৪১)
২। মুহাম্মদ বিন কুদামাহ আল মাকদিসি ( ৬২০)
৩। আব্দুর রহমান মুহাম্মদ আল মাকদিসি ( ৬৮২)
৪। মুফলিহ আল মাকদিসি (৭৬৩)
৫। মুসা বিন আহমদ আল হাজাবী ( ৯৬০)
৬। ইদ্রিস আল বাহুতি ( ১০৫১)
৭। মুস্তাফা এস সুয়ূতী আর রূহইবাই ( ১২৪৩)
৮। আব্দ আল আজিজ আল আনকারী ( ১৩৭৩) (৮)
21. পর্দা ও সতরের পার্থক্য
আমরা সবাই একটি বিষয় জানি যে পর্দা ও সতর ভিন্ন জিনিস। একজন মেয়ে আর একজন মেয়ের সামনে কতটুকু খোলা রাখতে পারবে সেটাই সতর। এখন কেউ যদি বলে একজন মেয়ে একটি গায়রে মাহরামের সামনে “হাত” ও “মুখ” খোলা রাখতে পারবে তাহলে তাকে প্রশ্ন করা যায় একজন মেয়ে একজন মাহরামের সামনে কি খোলা রাখতে পারবে? নিশ্চয়ই এর বেশি? কেননা গায়রে মাহরমকে যদি হাত ও মুখ দেখাতে পারে তাহলে যারা মাহরাম যেমন ভাই, শশুর, চাচা এদের সামনে হাত ও মুখ ছাড়া নিশ্চয়ই আরো শরীরের অন্যান্য অংশও দেখাতে পারবে? তাই নয় কি? আপনি কি নিজেই মনে করেন এই ব্যাখ্যা সঠিক?
22. প্রচলিত কিছু ভুল ধারণার বা অভিযোগের উত্তর
কিছু কিছু আলেম বলেছেন নারীদের “মুখমন্ডল” ও “হাত” পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়, তার ব্যাখ্যা:
যে সকল আলেমগণ বলেছেন মেয়েদের “মুখমন্ডল” ও হাত পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের সম্পূর্ণ বর্ণনা যদি আপনি পড়েন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা সবাই শর্তসাপেক্ষে এই ফতোয়া দিয়েছেন। অর্থাৎ কোনো জায়গায় যদি ফেতনা হবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে এমন সমস্ত ক্ষেত্রে সেটা নিষেধ হয়ে যাবে। সুতরাং পূর্বেকার কোনো কোনো আলেম যারা “মুখ” ও “হাত” পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয় বা খোলা রাখা যাবে বলেছিলেন তারা সবাই শর্তসাপেক্ষে বলেছিলেন। অর্থাৎ কোনো জায়গায় যদি ফেতনা হবার সম্ভাবনা না থাকে শুধুমাত্র সেক্ষেত্রে খোলা রাখা যাবে। কিন্তু এই শর্ত এখন কোনো জায়গায় পাওয়া যাবে না। এবং যে জায়গায় এই শর্ত পাওয়া যাবে না এমন সমস্ত জায়গায় মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে।
এটাই ছিল তাদের মত যা মুফতি মুহম্মদ শফি (রহঃ) মাআরিফুল কোরান তফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এইসকল আলেমগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর কে না বলবে বর্তমান যুগ হল হাইব্রিড ফেতনার যুগ।
কিছু কিছু মহিলা মুখমন্ডল খোলা রেখে প্রশ্ন করেছেন:
মুহাদ্দিসগণ হাদিস শরীফকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন। তার মধ্যে একধরণের বিভাজন হচ্ছে “কওলী” ও “ফে’লী” । কোনো হাদিস শরীফ-এ কোনো একটি কাজ বা ঘটনার বর্ণনা থাকলে সেটাকে বলা হয় “ফে’লী” হাদিস শরীফ । আবার কোনো হাদিস শরীফ-এ ঘটনা বা কাজ নয় শুধুমাত্র আদেশ/ নিষেধ বা উক্তি আসলে সেই ধরণের হাদিস শরীফকে বলা হয় “কওলী” হাদিস শরীফ।
যেমন ধরুন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ঘুমালে ওনার ওযু ভাঙতো না। এটা ওনার জন্য বিশেষ হুকুম ছিল। সুতরাং এই সংক্রান্ত বর্ণনা থাকলে সেই হাদিস শরীফকে ফেলী হাদিস শরীফ বলা হয়। এখন আপনি যদি ওনার এই কাজ বা আমল সংক্রান্ত হাদিস শরীফ দেখে নিজে আমল করতে শুরু করেন তাহলে আপনার ঘুম থেকে উঠে ওযু ছাড়া যত নামাজ পড়বেন তার কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হবে না। সেক্ষেত্রে আপনার রসূলের কথার যে হাদিস শরীফ আছে সেটা অনুসরণ করতে হবে। সেই হাদিস শরীফ হলো যেখানে রসূল আমাদের জন্য বলেছেন “ঘুমালে ওযু ভেঙে যায়” .
তাই কোনো বিষয়ে “আমল” (কাজ) এবং কওল (কথা) দুইধরনের বর্ণনা থাকলে সেক্ষেত্রে “কথা/কওল” গ্রহণযোগ্য হবে। কাজ বা আমল নয়। যদি সেটা পরস্পরবিরোধী হয়।
এবার আসা যাক পর্দা সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদিস শরীফ এর ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী বর্ণনার ক্ষেত্রে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, কিছু ঘটনা হাদিস শরীফে পাওয়া যায় যে মহিলারা রসূলের বা উমর (রাঃ) এর সম্মুখে এসেছেন মুখমন্ডল খোলা থাকা অবস্থায় এবং ইসলাম বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। যেমন
প্রথম হাদিস শরীফ :
জায়েদ ইবনে আসলাম তার পিতা আসলাম থেকে বলেন “আমি উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে বাজারে গেলাম। সেখানে তার কাছে একজন যুবতী এসে বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আমার স্বামী ছোট বাচ্চা রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। উমর (রাঃ) তাকে অতিক্রম না করে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তাকে বললেন, “তোমার নিকট আত্মীয়দেরকে ধন্যবাদ।”
কিন্তু এর বিপরীতে নিম্নোক্ত স্পষ্ট হাদিস শরীফ দেখুন:
দ্বিতীয় হাদিস শরীফ :
“হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা পরপুরুষদের সামনে নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম। “ [ আল-মুস্তাদরাক আল হাকিম ১/৪৫৪ ]
প্রথম হাদিস শরীফে একজন যুবতী মহিলার মুখমন্ডল খোলা আছে কিন্তু তিনি বলেননি যে আমরা সেইসময় মুখমন্ডল খোলা রেখে চলাফেরা করতাম। কিংবা এ বলেনি মুখমন্ডল খোলা রেখে মহিলাদের বের হওয়া জায়েজ। এবং সেই মহিলা কোনো সাহাবী নয় যে তার আমল দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে দ্বিতীয় হাদিস শরীফ দেখুন। সেখানে হাজরত আবু বকর (রাঃ) এর সম্মানিত কন্যা স্পষ্ট করে বলেছেন “আমরা পরপুরুষদের সামনে নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম। ” সুতরাং ২য় কওলী হাদিস শরীফ সেটা ১ম ফেলি হাদিস শরীফকে খণ্ডন করে দেয়।
পরবর্তী আমল পূর্ববর্তী আমলকে রহিত করে দেয়:
কোনো বিষয়ে যদি দুইধরনের বর্ণনা পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে মুজতাহিদ আলেমগণ শেষের আমলটি গ্রহণ করেন। এইজন্য দেখা যায় আয়িশা (রাঃ) হাবশীদের খেলা দেখার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটা উম্মে মাখতুম (রাঃ) সংক্রান্ত যে হাদিস শরীফ যেখানে রসূল (সাঃ) স্পষ্টত পুরুষদের দিকে তাকাতে মহিলাদের নিষেধ করেছেন সেটা দ্বারা খন্ডন হয়ে যায় বা রহিত হয়ে যায়। ঠিক সেভাবে রসূলের বিদায়ের পর বা শেষের দিকে কোনো উম্মুল মুমিনীন মুখ খোলা রেখে বাহিরে বের হয়েছেন এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই শেষের দিকের এই আমলগুলো প্রথম দিককার আমল গুলোকে রহিত করে দেয়।
ঠিক সেইভাবে প্রথমদিকে নামাজ এর মধ্যে কথা বলা যেত যেটা পরবর্তীতে নিষেধ হয়ে গেছে।
প্রথম দিকে নামাজের মধ্যে শরাব পান করা নিষেধ ছিল, পরবর্তীতে সমস্ত সময়ের জন্য এটা নিষেধ হয়ে যায়।
তাই কোনো বিষয়ে দুইরকম বর্ণনা থাকলে সেক্ষেত্রে শেষের আমল গ্রহণ যোগ্য হবে। আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রথমদিকে বায়তুল মুকাদ্দাস এর দিকে কিবলা করে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে কাবা ঘরের দিকে কেবলা করে নামাজ আদায়ের হুকুম অবতীর্ন হয়। তাই কেউ যদি প্রথমদিকের আমল অনুসরণ করতে যায় তাহলে সে বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। কেননা পরবর্তী হুকুম “কাবার দিকে কেবলা” পূর্বরিত হুকুম “বায়তুল মুকাদ্দিস এর দিকে কেবলা” রোহিত বা বাতিল করে দেয়।
তাই সম্মানিত মহিলা সাহাবীগণের “পর্দার” আয়াত নাজিল হবার আগের আমল দলিল হতে পারে না। তাই পর্দার আয়াত নাজিল হবার পর তারা যে আমল করতেন সেটাই গ্রহণযোগ্য হবে। পূর্বের আমল নয়।
23. পর্যালোচনা ১
আল কোরআন এর বর্ণনাভঙ্গি সমন্ধে যাদের অল্প-বিস্তর জ্ঞান আছে তারা জানেন কিছু কিছু বিষয় আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন এবং সেটার কারণ ও উল্লেখ করেছেন। কি কারণে সেটা নিষেধ হয়েছে সেটা উল্লেখ করেছেন। যেমন ধরুন: আল কোরানে “মদ” বা “শরাব” কে নিষেধ করা হয়েছে। মদিনা শরীফে সূরা মায়েদের ৯০-৯১ নং আয়াত নাজিল হবার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন যে আজ থেকে শরাব পান নিষেধ। তখন মদিনার অলিতে গলিতে শরাব এর বন্যা বয়ে গেলো। যার কাছে যা ছিল সব তারা রাস্তায় ফেলে দিলেন। তখন শরাব বলতে তরল জাতীয় নেশাকর বস্তুকে বলা হত। এখন কেউ যদি বলে “শরাব” বা “মদ” ছিল তরল বস্তু সেগুলো নিষেধ কিন্তু “গাঁজা” , “চরশ” , “হেরোয়িন” কিংবা যেকোন ড্রাগস এগুলো তো শুকনা- এগুলো নিষেধ হবে কেন? এর ব্যাখ্যায় মুজতাহিদ আলেমগণ বলেন শরাব খেলে যেহেতু চেতনা নাশ পায়, বুদ্ধি বিলুপ্ত হয় তাই এমন যেকোন বস্তু যা খেলে বা নিলে চেতনা নাশ পাবে এমন সমস্ত বস্তুই হারাম। যে কারণে শরাব হারাম এমন যেকোন কারণ যেকোন বস্তুর মধ্যেই পাওয়া গেলে সেটাও হারাম হবে।
ঠিক সেভাবে, নারীদের পর্দা না করলে কি ক্ষতি হতে পারে সেটা আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। যেমন পুরুষকে প্রলুব্ধ করে, তাদের উত্তেজিত করে কিংবা তাদের সান্নিধ্যে আসা হয় এমন যেকোন কাজকেই নিষেধ করা হয়েছে। তাই এমন কোনো আচরণ বা পোশাক মেয়েরা যদি পরিধান করে যার মাধ্যমে পুরুষদের আকর্ষিত করা হয় তাহলে সেটা হারাম হবে। তাই শর্ত হচ্ছে তাদেরকে উত্তেজিত/প্রলুব্ধ/আকর্ষিত করা হচ্ছে কিনা। তাই সাধারণভাবে কোনো মেয়ে চলাচল করার পরিবর্তে জোড়ে পদশব্দ করে, হাই-হিল পরে যদি চলাফেরা করে সেটাও আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করে দিয়েছেন। এমন সুগন্ধি শরীরে দেয়া হলো যে কারণে পুরুষ উত্তেজিত হলো, তাতে বিমোহিত হল সেটাও নিষেধ করা হয়েছে। এবং এটাই যে নারীর জন্য নিরাপদ কল্যানকর সেটা বলা হয়েছে। সামান্য সুগন্ধি, জোরে পদ শব্দ যদি নিষেধ করা হয়ে থাকে তাহলে যে মুখমন্ডল সমস্ত সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু সেটা নিষেধ হবে এটাই স্বাভাবিক। সামান্য যুক্তিতেও এটা প্রমান করা যায় যদিও কোরানের আয়াত এবং হাদিস শরীফ এর অসংখ্য দলিল দিয়ে ইতিমধ্যেই প্রমান করা হয়েছে।
যারা মাহরাম যেমন ভাই, বাবা, শশুর, দুধ-ভাই এদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা যায় অর্থাৎ পর্দা না করলেও চলে। কিন্তু আল্লাহ না করুন এমন যদি হয় কারো শশুর দুশ্চরিত্র হয়ে এবং ছেলের-বৌ এর দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকায় এবং ছেলের বৌ সেটা বুঝতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে শ্বশুর থেকে তার পর্দা করতে হবে। কেননা যে প্রধান কারণ বলা হয়েছে সেই কারণ এখানে উপস্থিত। পুরুষগণ উত্তেজিত হয় কিংবা প্রলুব্ধ এমন যেকোন পরিস্থিতে পর্দা করতে হয়। তাই এখানে মাহরাম হলেও যেহেতু সেই কারণগুলো উপস্থিত তাই এখানেও পর্দা করতে হবে। ইসলামী ফেকাহশাস্ত্র বা জুরিসপ্রুডেন্স নিয়ে যেসকল মুজতাহিদ, মুজতাহিদ ফিল মাজহাব যোগ্যতাসম্পন্ন আলেমগণ আছেন তারাই এগুলো গবেষণা করে বের করেছেন। আমাদের কাজ ভুল ধরা না, তাদের মতামতকে সন্মান করে অনুসরণ করা। কোরান হাদিসে এমনি নির্দেশই দেয়া হয়েছে।
24. পর্যালোচনা ২:
প্রিয় পাঠক আপনি যদি আল কোরানের তাফসীর পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা অনেক গুরুত্তপূর্ণ হুকুম আহকাম আল কোরানে বর্ণনা করেছেন কিন্তু অল্প কথায় সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেমন মদ বা নেশা জাতীয় বস্তু সম্পূর্ণ হারাম হওয়ার বিষয়ে মাত্র ৩টি আয়াত উল্লেখ করে সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছেন। বিস্তারিত এসেছে হাদিস শরীফ এর মাধ্যমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে কোনো হুকুম এর আদেশ/ নিষেধ আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন কিন্তু এর ধরণ কি হবে, কত রকম ভাবে সেটা নিষেধ কোন কোন পরিস্থিতিতে নিষেধ ইত্যাদি হাদিস শরীফ এর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু পর্দা-সংক্রান্ত আয়াত শরীফ যদি আপনি গভীরভাবে খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা অতি বিস্তারিভাবে উপরে উল্লিখিত ৮টি আয়াত বা আয়াতের অংশবিশে এর মাধ্যমে এর বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। মেয়েরা ছেলেদের সাথে কোন ধরণের আওয়াজ এর মাধ্যমে কথা বলবেন এমন সূক্ষ্ণ বিষয়ও আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করা থেকে বাদ দেননি। এতেই বোঝা যায় পর্দার গুরুত্ত কতটুকু। অনেক হুকুম আছে যা করতে হবে এটা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন কিন্তু কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি। কিন্তু পর্দা কিভাবে করতে হবে সেটা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পর্যায়ক্রমে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে করতে হবে সেগুলো সবই বলেছেন।
25. রসূলের যুগে স্বাধীনতা বই এবং এর লেখক আবুল হালিম আবু শুক্কাহ
সম্প্রতি “রসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা” এই নাম একটি বই বের হয়েছে। লেখক আব্দুল হালিম শুক্কহ। আনুমানিক ৩৫০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে প্রমান করার চেষ্টা করা হয়েছে “মেয়েদের মুখমন্ডল আবৃত না করলেও চলে”। বই এর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত স্ববিরোধি বক্তব্যে পরিপূর্ণ। সবগুলোর উত্তর দেবার প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র ২টি উদাহরণ দিলেই পাঠক বুঝতে পারবেন কি ধরণের গোঁজামিল দিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। লেখক বইতে নিম্নলিখিত ২টি উক্তি উল্লেখ করেছেন:
১) মুখমন্ডল খোলা রাখার প্রচলন ফিতনার তীব্রতা হ্রাস করে – ( ৪র্থ খন্ড – পৃষ্ঠা ১৬৭)
২) চেহারা খোলা নারীকে লজ্জাবতী হতে ও দৃষ্টি অবনত করতে সাহায্য করে (৪র্থ খন্ড – পৃষ্ঠা ১৬৭)
যে আলেম বলেন মেয়েরা মুখ খোলা রাখলে ফেতনা হ্রাস পায় সে কতটুকু বাস্তবজ্ঞান বর্জিত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার এইসকল উক্তি খণ্ডন করতে যেয়ে সময় ব্যায় করা সময় অপচয় করারই শামিল।
26. উপসংহার
শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, “প্রাচীন ও বর্তমান কালের নারীরা সর্বদাই পুরুষদের সামনে চেহারা ঢেকে রেখে এসেছে। [ ফতহুল বারী ৩৩৯/৯ ]
ইমাম গাজালী (রহঃ) বলেছেন “যুগ যুগ ধরেই পুরুষেরা তাদের চেহারা খোলা রাখতো আর নারীরা নেকাব পরে বাহিরে বের হত। [ ফতহুল বারী ৩৩৯/৯]
ইমাম তাহাবী (রহঃ) বলেন “যুবতী নারীরা ওপর পুরুষের সামনে খোলা মুখে যেতে পারবে না” [রুদ্দুল মুখতার ১/২৭২]
পাকিস্তানের মুফতীয়ে আজম এবং মাআরিফুল কোরানের লেখক যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ) বলেন, -”সব মাজহাবের ফকীহগণ এবং অধিকাংশ আলেমগণ এ কথার ওপর একমত যে, তরুণী মেয়েদের গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে চেহারা ও হস্তদ্বয় খোলা রেখে গমন করা জায়েজ নাই। তবে বৃদ্ধা নারীগণ এ হুকুমের আওতাভুক্ত নয়। [ আল মারআতুল মুসলিমাহ ]
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ বলে থাকেন বর্তমানে মেয়েরা পোশাক ঠিকমত পরে না, সেক্ষেত্রে “মুখমন্ডল” ঢাকার কথা বলে লাভ কি। এই বক্তব্যের প্রথম অংশের সাথে আমি একমত। এখনকার অধিকাংশ মেয়েরা পর্দা করে না এবং কিছু কিছু মেয়ে অশ্লীলতার শেষ পর্যায় পৌঁছে গেছে এবং নিজেকে প্রদর্শন করার জন্য যতটুকু নিচে নাম যায় ততটুকু নামতে তারা দ্বিধা করে না। তাদের পোশাক অর্ধ-উলঙ্গ থাকার শামিল।
তবে এই উক্তির শেষ অংশ “মুখমন্ডল ঢাকার কথা বলে লাভ কি” এই বক্তব্যের সাথে আমি একমত না। এখনো এমন অনেক পরিবার পাওয়া যাবে যাদের কাছে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী বিলাসিতার চেয়ে আল্লাহ এবং তার রসূলের হুকুম অনেক বেশি মূল্যবান। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য উদগ্রীব। অনেকে শরঈ পর্দা করতে চায় কিন্তু জানেনা মুখমন্ডল ঢাকতে হবে কিনা। তাদের জন্যই আমার এই লেখা। আমার এই লেখা পরে কারো মা কারো বোন কিংবা কারো স্ত্রী যদি মুখমন্ডল আবৃত করে পর্দা করা শুরু করে তাহলেই সেটা একটি বিরাট সফলতা। যার পুরস্কার তারা পাবেন কিয়ামতের কঠিন দিনে যেদিন আমল ছাড়া আর কিছু আমাদের সাহায্য করবে না। অনেকেই যদি এই লেখা পরে সমালোচনা করে আর তার বিপরীতে ১ জন তার জীবনের দিক নির্দেশনা পেয়ে যায় তাহলে আপনারা বলুন কোনটি বেশি মূল্যবান? তাছাড়া সত্য পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত একজন মুসলিমের দায়িত্ব। কেউ পালন করুক বা না করুক সেটা দেখার বিষয় না। “আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়” এবং দাওয়াতের কাজ, লেখনীর কাজ হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্নেষণ করা।
আরো একটি কথা আমরা প্রায়শই শুনতে পাই। “এতো পর্দা লাগে না”, “বর্তমান জামানায় পর্দা করা সম্ভব না”, “মনের পর্দা বড় পর্দা” ইত্যাদি। এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে “আল্লাহ এবং তার রসূলের বিধান” এক জিনিস আর আমি আমল করতে পারি না সেটা ভিন্ন জিনিস। আমরা কেউ সঠিকভাবে পরিপূর্ন এখলাস এবং তাকওয়ার সাথে কোনো হুকুম আদায় করতে পারিনা। এরজন্য আমাদের অনুতপ্ত হয়ে বেশি বেশি তওবা করা উচিত। কিন্তু অনুতপ্ত না হয়ে অহংকার করে বিধানকে অস্বীকার করা সেটা চরম অধপতনের লক্ষণ। নামাজ পড়তে না পারা এক জিনিস আর নামাজ অস্বীকার করা ভিন্ন জিনিস- যা কুফরীর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। পর্দা না করা অবশ্যিই বড় গোনাহ, কিন্তু তার সাথে সাথে এটাকে জায়েজ প্রমান করার চেষ্টা এবং পর্দা না করলেও হয় এগুলো বলা আল্লাহর হুকুমকে অবজ্ঞা করারই শামিল। যেটা আরো বড় গোনাহ। গোনাহ করা এবং গোনাহের পক্ষে সাফাই গাওয়া উভয়ই গোনাহ। বরং শেষেরটি আরো বড় গোনাহ।
তাই আসুন, আমি যদি প্রকৃত পর্দা নাও করতে পারি অন্তত অন্তরের মধ্যে অনুশোচনা জাগ্রত করে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার দরবারে বেশি বেশি দোয়া এবং ইস্তিগফার করতে থাকি — যাতে তিনি আমাদের এই আমল করার তৌফিক দান করেন।
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্য
পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।“
[সুরাহ আহযাব: ৩৩:৩৬]
27. পর্দা রক্ষা করার ঈমানদীপ্ত কাহিনী:
এতক্ষন আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা করার হুকুম কি এবং মুখ ঢাকার শরঈ বিধান কি সেটা পর্যালোচনা করে দেখলাম। এবার আমরা দেখবো একজন নওমুসলিম নারী কিভাবে পর্দা রক্ষা করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছেন।
খিষ্টানধর্মের অনুসারী রাশিয়ার এক তরুণী। একজন রুশ ব্যাবসায়ী তাকে উপসাগরীয় অঞ্চলে কোনো এক ব্যাবসায়ী সফরে যাবার প্রস্তাব করেন। সঙ্গে আরো তরুণী থাকবে এবং এটা দেশভ্রমণের এক সুযোগ ছাড়া কিছুই নয়। সবাই একসঙ্গে রওনা হয় এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ব্যাবসায়ীর আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যায়। সে তরুণীকে একান্তে পেতে চায় এবং অগাধ অর্থকরী, বিষয় সম্পদের লোভ দেখায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত হবার লোভ দেখায়। তার এই লোভনীয় প্রলোভনে সবাই গা ভাসিয়ে দিলেও সেই তরুণী ঘৃণাভরে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো। সে যতই ব্যাবসায়ীর কাছে তার পাসপোর্ট ফেরত চায় কিন্তু ব্যাবসায়ীর একই কথা “তার শয্যাসঙ্গিনী না হলে তাকে কোনো সুযোগই দেয়া হবে না।”
অন্য সব মেয়েরা ব্যাবসায়ীর কথায় রাজি হয়ে নিজের চরিত্র, সতীত্ব বিসর্জন দিলেও সেই মেয়েটি ছিল তার সিদ্ধান্তে অটল। সে সুযোগ খুঁজতে থাকে পালিয়ে যাবার। অবশেষে একদিন সেই সুযোগ এসে গেলো। সেই ব্যাবসায়ী ও অন্য মেয়েরা বেড়াতে গেলে এই সুযোগে সে হোটেল থেকে পালিয়ে যায়। প্রথমে সে বুঝে উঠতে পারে না কোথায় যাবে। এই পথ এবং এলাকা কোনোটাই তার চেনা নয়। কিন্তু নিজেকে পবিত্র রাখার অদম্য আগ্রহ এই বিপদেও তাকে মানসিক শক্তি যোগায়।
কিছুদূর যাবার পর এক যুবকের সাথে দেখা হয় যার সাথে ৩টি বোরকা পড়া মহিলাকে সে দেখতে পায়। রাশিয়ান ভাষায় সেই যুবককে সে কিছু বললে যুবকটি কিছুই বুঝতে পারে না। অবশেষে যুবকটি ইংরেজি ভাষা জানার কারণে ইংরেজিতে মেয়েটি তার সমস্ত বৃত্তান্ত খুলে বলে। যুবকের নাম খালেদ এবং তার সাথে তার মা ও দুই বোন। মেয়েটি যুবকের কাছে সব কিছু বলে তার সাহায্য প্রার্থনা করে এবং বলে ২/৩দিন তাকে থাকার সুযোগ দিলে এরমধ্যে সে তার বাবা মা এর সাথে যোগাযোগ করে চলে যাবে। খালেদ তার মা বোনদের সাথে আলোচনা করে অবশেষে রাজি হয়।
সবাই বাসায় চলে আসলে খালেদের পরিবার জানতে পারে মেয়েটি খ্রিষ্টান। এতে তাদের ব্যবহার -এ কোনো পরিবর্তন আসেনি। মেয়েটি যেহেতু অনেক দূরে চলে এসেছিল তাই অনেক চেষ্টা করেও ফোনে তার বাবা মা কে পাচ্ছিল না। খালেদের বোনদের সাথে এরই মধ্যে মেয়েটির সক্ষতা গড়ে উঠলো। তারা মেয়েটিকে ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিলেও মেয়েটি সেটা গ্রহণ করলে না কেননা সে ছিল নিষ্ঠাবান খ্রিষ্টান।
খালেদ কিছু না বলে পার্শ্ববর্তী ইসলামিক সেন্টার থেকে তার জন্য কিছু ইসলামিক বই নিয়ে আসে। মেয়েটি ধীরে ধীরে পড়া শুরু করে এবং একসময় ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরে। সত্যকে যার জানার আগ্রহ আছে সে নিজেকে মিথ্যা দিয়ে আশস্ত করতে পারে না। . অবশেষে সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং কিছুদিন পর খালেদের সাথে তার বিয়ে হয়ে যায়। এরইমধ্যে একদিন সেই তরুণী স্বামী খালেদের সাথে একটি বিপণিবিতানে যান। সেখানে হিজাব পরিহিত একটি মহিলাকে দেখে তরুণী অবাক হয়ে যান। সে খালেদকে জিজ্ঞেস করে মেয়েটির মুখে কোনো সমস্যা আছে কিনা যে কারণে সে মুখ ঢেকে রেখেছে। খালেদ বলে “না, এটাই ইসলামের প্রকৃত পর্দা। এবং এভাবেই আল্লাহ তার রসূল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তরুণী তখনই প্রতিজ্ঞা করেন যে আজ থেকে সে পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করবে। খালেদের পরিবার তখন মুখ খোলা রেখে বোরকা পরে চলাফেরা করতো এবং সে চাচ্ছিলো আরো কিছুদিন পরে তার স্ত্রী মুখ ঢাকুক। কিন্তু ঈমানের আলোয় উজ্জীবিত মেয়েটি তাতে রাজী হলো না এবং সেদিন থেকেই সে মুখ ঢাকা শুরু করে দিল।
এরমধ্যে তরুণী দেখলো তার পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং রিনিউ করার জন্য রাশিয়ায় যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মাহরাম ছাড়া যেহেতু সফর করা নিষেধ তাই খালেদ স্ত্রীকে নিয়ে রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বাবা মা এর কাছে যাবার সিদ্ধান্ত তরুণী পরিবর্তন করলেন। তার পরামর্শ হল যেহেতু আমার বাবা মা কট্টর খিষ্টান তাই আমার মুসলিম হবার বিষয়টি তারা স্বাভাবিকভাবে না-ও নিতে পারে। তাই আগে পাসপোর্ট ঠিক করে তারপর তাদের সাথে দেখা করা হোক। সেই পরামর্শ মোতাবেক তারা একটি বাসা ভাড়া নিল এবং পরের দিন পাসপোর্ট অফিসে দেখা করতে গেলো। সব শুনে অফিসার পুরান পাসপোর্ট এবং সদ্য তোলা রঙিন ছবি চাইলেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেই ছবিতে চেহারা, কাঁধ এবং চুল খোলা রাখতে হবে।
কিন্তু খালেদের স্ত্রী সাদা কালো ছবি ছাড়া আর কোনো ছবি দিতে রাজি নয়। এবং অফিসার সেটা মানতে রাজি নয়। এভাবে ৩ জন অফিসার তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিলেন। এই অবস্থায় খালেদের স্ত্রী বলেন “আমি কোনোভাবেই অনাবৃত রঙিন ছবি দিতে পারবো না” । আর অফিসার বললেন তাহলে আপনাকে পাসপোর্ট নবায়ন করে দেয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর তারা বিভাগীয় প্রধান একজন মহিলা তার কাছে গেলেন এবং খালেদের স্ত্রী বিভাগীয় প্রধান মহিলাকে বললেন “আপনি আমাকে এই ছবির সাথে মিলিয়ে দেখুন। দুটো এক দেখালে সমস্যা কোথায়? কেন নতুন রঙিন ছবি তুলতে হবে?” তিনি বললেন এর সমাধান দিতে পারে একমাত্র মস্কোর প্রধান পাসপোর্ট অফিস এর মহাপরিচালক, আমার হাতে এর কোনো সমাধান নেই।
সেই অফিস থেকে বের হয়ে খালেদের স্ত্রী বললেন “চলো আমরা মস্কো যাই” । তখন খালেদ বললেন “মস্কো যাবার দরকার নেই, তুমি বরং রঙিন ছবি তুলে দাও। তুমি যেহেতু অপারগ আর আল্লাহ তায়ালা সাধ্যের অতিরিক্ত কোনোকিছু চাপিয়ে দেন না, তাই বাড়াবাড়ির প্রয়োজন নেই।” খালিদের স্ত্রীর পরিষ্কার জবাব “না, আমি এখন হিজাব বুঝি। পর্দা আল্লাহর হুকুম। কয়েকজন অবিশ্বাসীর কারণে আমি আল্লাহ তায়ালার হুকুম অমান্য করতে পারি না।”
পরদিন খালেদ সস্ত্রীক মস্কোর উদ্দেশে রওনা হন। পাসপোর্ট অফিস এ যেয়ে প্রধানের সাথে দেখা করে তাদের আবেদন পেশ করেন। ৩/৪ জন অফিসার এর কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সবচেয়ে বড় অফিসার এর কাছে উপস্থিত হন। তিনি খালেদের স্ত্রীর পূর্বের পাসপোর্ট দেখে বলেন এটা যে আপনার ছবি তার প্রমান কি? এবং তার হিজাব সরাতে বলেন। খালেদের স্ত্রী বলেন আমরা মুসলিমরা অন্য পুরুষের সামনে মুখের নিকাব সরাই না এবং এখানে যদি কোনো মহিলা অফিসার থাকে তার সম্মুখে আমি খুলতে পারি, আপনার সম্মুখে নয়।
এই কথা শুনে সেই অফিসার প্রচন্ড খেপে যান এবং পুরানো পাসপোর্ট, ছবি সব কিছু একটি ড্রয়ার এ তালা দিয়ে বলেন, “আমাদের শর্ত মোতাবেক নতুন ছবি না দিলে এখন এগুলোও আপনি পাবেন না” । খালেদের স্ত্রী তাকে অনেক বোঝানো সত্ত্বেও সেই অফিসার কিছুতেই রাজি হল না। তখন খালেদ তার স্ত্রীকে বললেন, “দেখো এই মুহূর্তে তুমি অসহায়। পর্দা রক্ষা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছ তুমি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এমনকি তুমি তোমার সাধ্যাতীত চেষ্টাও করেছো। আল্লাহ এখন ক্ষমা করে দেবেন তোমাকে। ওদের শর্ত মেনে নাও। আর কত জায়গায় আমরা ছোটাছুটি করবো। অফিসারদের দ্বারে দ্বারে আর কত ঘুরবো। স্ত্রী তখন আমাকে বললেন:
 “এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। [ সূরা তালাক ২:৩ ]
প্রিয় পাঠক! খেয়াল করুন একজন সদ্য মুসলিম হওয়া নারীর আল্লাহ এবং তার রসূলের বিধানের প্রতি কি প্রগাঢ় ভালোবাসা। কি অসম্ভব ঈমানের দৃঢ়তা। শুধুমাত্র মুখ ঢাকার জন্য, পর্দা রক্ষা করার জন্য কি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আর আমরা মুখমন্ডল অনাবৃত রেখে বরং অহংকার করে বলি “মুখমন্ডল” না ঢাকলেও চলে। বিনা কারণেই শত শত পুরুষের সামনে মুখমন্ডল খোলা রেখে ঘুরে বেড়াই।
যাহোক, খালেদ এবং তার স্ত্রী বাসায় চলে আসেন। খালেদ রাত্রে বিছানায় শুয়ে পড়লে তার স্ত্রী খালেদকে বলেন এখন ঘুমানো যাবে না। এটা ঘুমানোর সময় না। ওঠো এবং আল্লাহর সাহায্য চাও। খালেদ উঠে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং বেশ কিছুক্ষন নামাজ পরে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু খালেদের স্ত্রী সারারাত আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চায়। কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো সেজদায় কখনো মোনাজাত রত অবস্থায়। এভাবে ফজর সালাত আদায়ের পর সে কিছুটা ঘুমিয়ে নেয়।
সকালে আবার দুজন মিলে পাসপোর্ট অফিসে গেলে একজন অফিসার বলে অমুক মহিলা কোথায়? খালেদের স্ত্রী বলেন “অমুক মহিলা তো আমিই”
সেই অফিসার বলেন “নিন আপনার পাসপোর্ট”
খালেদ দেখতে পেলেন “সদ্য নতুন পাসপোর্ট”.
তার স্ত্রী খুশি হয়ে বলেন “আমি কি তোমাকে বলিনি, আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ তাকে মুক্তির পথ বের করে দেন” এভাবে হঠাৎ পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবে খালেদ ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করেনি।
পাসপোর্ট এর সব কাজ সমাধা করে খালেদ এবং তার স্ত্রী তার বাবা মা এর সাথে দেখা করতে যায়। বাসার সবাই প্রথমে আনন্দিত হলেও বোরকা পড়া অবস্থায় দেখে তারা বিস্মিত হয়ে যায়। খালেদের স্ত্রী বাসার ভেতরে চলে যায় এবং কিছুক্ষন পর চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে যায়। খালেদ ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করতে থাকেন এবং এর মধ্যে তার শশুর এবং তার ৩ ছেলে এসে প্রচন্ড মারধর করতে শুরু করেন। খালেদ কোনোমতে বাসার থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসে নিজ বাসায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়েন।
সম্পূর্ণ শরীর রক্তাক্ত অবস্থা। নাক দিয়ে পর্যন্ত রক্ত বের হতে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে খালেদের মনে হতে থাকে তিনি তো বেঁচে গেলেন কিন্তু তার স্ত্রীর কি অবস্থা হবে? তাকে কি তারা মেরে ফেলবে? সে আবার ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করবে না তো? এমন বিভিন্ন চিন্তা খালেদকে অস্থির করে তুললো। খালেদের ভাষায় ঘটনাটা শুনুন:
“আমি পরেরদিন আমার শশুড়বাড়ির কাছে যেয়ে নজরদারি শুরু করে দেই। এমনভাবে অবস্থান করি যাতে বাসায় কে যাওয়া আসা করছে সেটা দেখতে পারি কিন্তু তারা আমাকে যেন দেখতে না পায়। হঠাৎ দেখি ঘর থেকে আমার শশুর বের হল সাথে তার ৩ ছেলে। এরা সবাই আমাকে পিটিয়েছিল। ঘর থেকে বের হয়ে তারা একটি বড় তালা লাগিয়ে দেয়। সারাদিন অপেক্ষা করার পর কাউকে দেখলাম না। কয়েকঘন্টা পর দেখলাম শশুর আবার তার ৩ ছেলে সহ ফিরে আসছে। বুঝলাম তারা কাজে গিয়েছিল এবং এখন ফিরে আসছে। এভাবে ৩ দিন অতিবাহিত হল এবং আমি একই ঘটনা দেখতে পেলাম। আমি সমস্ত আশা ছেড়ে দিলাম। আমার ধারণা হল হয়তো শাস্তির কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়ে গেছে।”
৪র্থ দিন। আমি আগের মতোই ছুটে গেছি তাদের বাসার কাছে। নিরাপদ জায়গার থেকে অবলোকন করছি তাদের দরজার দিকে। ঠিক আগের মতোই বাপ্ এবং তার ৩ ছেলে বাসার থেকে বের হয়ে তালা দিয়ে চলে গেলো। আমি শুধু সেই বাসাটার দিকে তাকিয়ে আছি পূর্ববৎ। হঠাৎ দেখি ফটক খুলে গেছে। আর দেখি আশ্চর্য হলেও সত্য ফটকের মুখ দিয়ে আমার স্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে। আমার সারা শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। আমি চমকে উঠে তার দিকে দেখতে থাকি। তার চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সীমাহীন অত্যাচার তার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে।
তার পরনের কাপড় হয়ে আছে রক্তের মতো লাল। তার মুখের ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত ঝরছে। পা বাধা আছে শিকলে। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠি এবং তার নাম ধরে ডাক দেই। সে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলে, “আমি সত্যের ওপর অবিচল আছি। আমার জন্য তুমি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ো না। কসম আল্লাহর। নবী রসূল সাহাবা এবং তাবেয়িনরা যে কষ্ট সহ্য করেছেন তার তুলনায় আমার এই কষ্ট কিছুই না। সাবধান তুমি ভুলেও আমার পরিবারের সম্মুখীন হয়ো না। তুমি বাসায় চলে যাও। আমি আসবো ইনশাল্লাহ। তুমি আমার জন্য দোয়া করো এবং নফল সালাত বাড়িয়ে দাও।
আমি বাসায় চলে যাই এবং এভাবে ৩ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। দিন শেষে রাত নেমে আসে। হঠাৎ গভীর রাতে কে যেন দরজা নক করে। আমি দরজা খুলে দেখি বিধস্ত অবস্থায় আমার স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে। সারা দেহ ক্ষতবিক্ষত। তৎক্ষণাৎ সে বলে আর এক মুহূর্ত দেরি করা যাবে না। আমাদের এখনই চলে যেতে হবে। যেকোন মুহূর্তে আমার পরিবার খবর পেয়ে এখানে চলে আসতে পারে। আমি কালবিলম্ব না করে রওনা দিলাম। একটি ট্যাক্সি ডেকে এয়ারপোর্ট এ যেতে চাইলাম। আমার স্ত্রী সাথে সাথে বললো, “এখন এয়ারপোর্ট এ যাওয়া যাবে না, কেননা তারা পিছু ধাওয়া করে প্রথমে এয়ারপোর্ট এ চলে আসতে পারে।” তাই আমরা কাছের এয়ারপোর্ট এ না যেয়ে পরবর্তী শহর এ যেয়ে সেখানকার এয়ারপোর্ট থেকে টিকিট ক্রয় করে আমাদের দেশে চলে আসি।
সে আমাকে তার যে ঘটনা বললো তার সারাংশ হলো, “আমার স্ত্রী তার বাবা মা এর সাথে দেখা করার জন্য যখনই ঘরে প্রবেশ করে তখন তারা তার পোশাক দেখে জিজ্ঞেস করে এগুলো কি? তখন আমার স্ত্রী বলে এগুলো হিজাব এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর সাথে আছে আমার স্বামী। তার এগুলো শুনে প্রচন্ড রাগান্নিত হয় এবং বলে আজ থেকে তুমি আমাদের বন্দি। সাথে সাথে তাকে বেঁধে ফেলে এবং বলে যদি তুমি খ্রিষ্টান ধর্মে ফিরে না এস তাহলে তোমার মুক্তি নেই এবং এখানে লাশ হয়ে থাকতে হবে। তারপর শুরু হয় নিষ্ঠূর বেত্রখাত। প্রতিদিন নতুন নতুন বেত ব্যবহার করা হতো। আমার বাবা এবং ৩ ভাই বিকেলে কাজ থেকে ফিরে এসে বেত্রাঘাত শুরু করতো এবং গভীর রাত্রি পর্যন্ত এই অত্যাচার চলত।
তাদের একটাই দাবি আমি যেন ইসলাম ছেড়ে দেয়।
বাসায় থাকতো শুধু মা এবং আমার বোন। দিনের বেলায় শুধু একটু নিষ্কৃতি পেতাম যখন বাবা এবং ভাইরা কাজে যেত। একদিন ছোট বোন এসে বললো কেন তুমি আমাদের কথা মেনে নিচ্ছো না? কেন বাপ্ দাদার ধর্মে ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করেছো? আমি আমার বোনের এই কৌতুহুলকে কাজে লাগলাম। ধীরে ধীরে তার সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করলাম। তাকে ইসলাম বিষয়ে বুঝাতে লাগলাম। ইসলামের ইতিহাস বললাম। তৌহিদ ও রেসালাত সুন্দরভাবে ও বিশদভাবে বুঝিয়ে বললাম। ধীরে ধীরে সে আমার কোথায় প্রভাবিত হয়ে ইসলামের দিকে ঝুঁকতে লাগলো। একদিন সে বললো “আপু তুমি সত্যের ওপর আছো। ইসলাম ই একমাত্র সত্য ধর্ম।
সে ধীরে ধীরে ইসলাম কবুল করে এবং আমাকে মুক্ত করার জন্য ফন্দি আটতে থাকে। আমার পায়ের শিকলের চাবি ছিল আমার ভাইদেড় কাছে। একদিন সবাইকে সে ঝাঁঝালো মদ পরিবেশন করে এবং সবাই অচেতন হয়ে গেলে সে গোপনে চাবি নিয়ে এসে আমাকে মুক্ত করে দেয়। (৯)
28. তথ্যসূত্র:
1. ফিকহী মাকালাত (৪র্থ খন্ড) – শায়খুল ইসলাম মুফতি তাকী ওসমানী (দামাত বারাকাতুম)
2. তফসীরে মাআরিফুল কোরআন- মুফতি মোহাম্মদ শফী (রহঃ)
3. আহকামুল কোরআন – আবু বকর জাস্সাস (রহঃ)
4. পর্দা কি ও কেন – আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)
5. সারখাতু ফী মাতআমীল জামিয়া – ড:মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান আরিফী
6. https://islamqa.info/en/answers/11774/ruling-on-covering-the-face-with-detailed-evidence
7. http://www.askimam.org/public/question_detail/18325
8. খলিফা ওমর – মিশরীয় লেখক ওমর তিলমিসানি
9. এস নারী পর্দা করি : মুফতি মুহাম্মদ নুমান ইদ্রিস
** অপর পুরুষ বলতে সবক্ষেত্রে গায়রে মাহরাম কে বুঝানো হয়েছে যাদের সামনে পর্দা করা ফরজ।
(সমাপ্ত)
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে  
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...