বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল-জইফ হাদিসের প্রচারক ও বাস্তবায়নকারী কারা?
হাদিস অবমাননার শেষ পরিনতি।
ভূমিকাঃ হাদিস জালকারী ইসলামের দূশমনদের কারনেই
আজ অবধি কোটি কোটি মানুষ জাল হাদিসের কবলে পড়েছে এবং ঈমান হারা হয়েছে এবং ঈমান হারাচ্ছে।
বর্তমান যুগে এসে দেখা যাচ্ছে, জাল হাদিসগুলো বুখারী শরিফসহ মাদ্রাসা কিংবা জেনারেল
লাইনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধর্মীয় বইগুলোতে স্থান পেয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই জাল হাদিসগুলো
শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শ্রুতি মধুর জাল হাদিসের কারনেই মানুষ কুরআন
ও সহিহ হাদিস বাদ দিয়ে জাল হাদিস আমল করছে। আর এটাই হল শয়তানের সফল মিশন।
যে
সব আলেম বা হুজুর সারা জীবন কষ্ট করে এই জাল হাদিসগুলো মুখস্থ করেছেন তাদেরকে কোনোভাবেই
সহিহ পথে আনা যাচ্ছে না। এইসব আলেমগণ যুক্তি দেখায়, যারা এই পুস্তকগুলো লিখেছেন তারা
তো বিখ্যাত আলেম বা মাওলানা বা মৌলভী। তারা কি না জেনেই লিখেছেন? ইত্যাদি কথা। যাই
হোক সব কিছুর তথ্য আমরা এখানে জানবো ইন শা আল্লাহ।
প্রথমে জেনে নেই সাহাবীদের
যুগে প্রথম জাল হাদিসের প্রচলনকারী কারা?
হাদিস
জালকারীদের মধ্য হতে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিলঃ
(১) আব্দুল করিম ইবনে আবিল আওজা। তিনি
৪ (চার) হাজার জাল হাদীস রচনা করেছে।
কুফার
গভর্নর মুহাম্মদ ইবনে সুলায়মান ইবনে আলী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।
(২) বয়ান ইবনে সাম আন। খালিদ ইবন আব্দুল্লাহ
আন কাসরী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।
(৩) মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল মাসলুব। আবু
জাফর আল মানসূর তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।
জাল হাদীস রচনা করে যারা
স্বীকার করেনঃ
(১) আবুল করিম ইবনে আবিল আওজা স্বীকার করে
যে, সে ৪ (চার) হাজার হাদিস জাল করেছে।
(২) নূহ ইবনে আবু মরিয়াম স্বীকার করে বলে
যে, লোকেরা পবিত্র কুরআন পড়া ছেড়ে দিয়েছে, আর মশগুল হয়েছে ইমাম আবু হানিফা(রঃ)-এর ফিকহ
ও ইবনে ইসহাকের যুদ্ধ বিষয়ক রচনাতে। তখন আমি লোকদেরকে কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য
জাল হাদিস রচনা করেছি। তিনি কুরআনের বিভিন্ন সুরার ফযীলত সম্পর্কে মিথ্যা হাদিস রচনা
করেন ৫৮। কুরতুবী পৃ: ১০১।
(৩) অন্যজন ছিল গোলাম খলিল। তিনি ছিলেন
সংসার ত্যাগী সুফী, তার ওফাতের দিনে শোকে বাগদাদের সকল দোকান পাঠ বন্ধ ছিল। তিনি যিকর
ও বিভিন্ন প্রকার অযীফার ফযীলত সম্বন্ধে বহু জাল হাদিস রচনা করেন। তারই অনুকরনে বর্তমানে
মুর্খ সুফীরা নতুন নতুন পদ্ধতিতে অজিফা ও যিকর আবিষ্কার করছে। সুফীদের এরুপ গ্রন্থেরও
অভাব নেই, নিয়ামুল কোরআন, নাফায়েল খানায়েক, মুকছেদুল মুমিনীন ও সুফিদের অন্যান্য গ্রন্থে
বাজার ভর্তি হয়ে আছে।
(৪) আবান ইবনে জাফার আল-নুজাইরামী, ইনি
ইমাম আবু হানীফা(রঃ) সম্পর্কে তিনশত- এর বেশী জাল হাদিস রচনা করেন।
হাদিস জালকারীদের মধ্যে যারা
তওবা করেনঃ
(১) ইবনে উবাইদুল্লাহ আবুল আয ইবনে কাদিম।
(২) শায়খ ইবনে আবু খালিদ।
(৩) নাসর ইবনে তারীফ আবুজাযা আল বাসার।
হাদিস জালকারীদের মধ্যে যারা
নিজেকে সাহাবী দাবী করেছেঃ
একদল
মিথ্যাবাদী নিজেদেরকে সাহাবী দাবী করেছে এবং সাথে সাথে তারা তাদের নিজস্ব ভক্তি বা
তাদের মনগড়া কথাকে রাসুলের নামে বানিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। তাদের কয়েকজন হলঃ-
(১) আল আসাজ্জ। এ ব্যক্তি রাসুল (সাঃ)-এর
৫ শত বৎসর পরে জন্ম গ্রহন করেও নিজেকে সাহাবী দাবী করে বসে।
(২) জুবাইর ইবনুল হারিস। এ ব্যক্তি হিজরী
ষষ্ঠ শতকের লোক হয়েও নিজেকে সাহাবী দাবী করে!
অথচ
প্রথম হিজরী শতকের পর তথা ১১০ হিজরীর পরে কোন সাহাবীই দুনিয়াতে জীবিত ছিলেন না।
(৩) রতন আল হিন্দী। এ ব্যক্তি রাসুল(সাঃ)-
এর ছয়শত বৎসর পরে জন্মগ্রহন করে নিজেকে সাহাবী দাবী করে! তাকেই খাজা রতন অথবা বাবা
রতন বলা হত।
হাদিস জালকারীদের সংখ্যাঃ
মুহাদ্দিসগন
হাদিস জালকারীদেরকে চিহ্নিত ও জাল হাদিস প্রতিরোধ কল্পে অক্লান্ত চেষ্টা ও সাধনা করে
হাদিস জালকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে গেছেন।
ডঃ
জামাল উদ্দিন রীজাল শাস্ত্র ও জাল হাদীসের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে ৪২৪ জন জালকারীর নাম তালিকাভূক্ত
করেছেন।
এখন আসুন আমরা সমাজে বহুল প্রচলিত কতিপয় জাল-জইফ হাদিস সম্পর্কে জেনে
নেই।
ছালাত জান্নাতের
চাবিঃ
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে ছালাতের ফযীলত
সংক্রান্ত অনেক বর্ণনা রয়েছে। যার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা ছালাতের প্রতি মনোযোগী হতে
পারে এবং বিশুদ্ধতা ও একাগ্রতার সাথে একনিষ্ঠচিত্তে ছালাত সম্পাদন করতে পারে। এক কথায়
ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অমীয় বাণীই যথেষ্ট। কিন্তু
বর্তমানে সেই অভ্রান্ত বাণী ছেড়ে যঈফ ও জাল হাদীছ, মিথ্যা, উদ্ভট ও কাল্পনিক কাহিনী
শুনিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বই-পুস্তক লিখে ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো
মানুষের হৃদয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। আমরা এই অধ্যায়ে সেগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি ছহীহ
দলীলগুলোও উল্লেখ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
ছালাত জান্নাতের চাবিঃ
কথাটি
সমাজে বহুল প্রচলিত। অনেকে বুখারীতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়। অথচ এর সনদ ত্রুটিপূর্ণ।
(১) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল ছালাত। আর ছালাতের চাবি হল পবিত্রতা।[1]
তাহক্বীক্বঃ হাদীছটির প্রথম অংশ যঈফ।[2] আর দ্বিতীয়
অংশ পৃথক সনদে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[3]
প্রথম
অংশ যঈফ হওয়ার কারণ হল- উক্ত সনদে দু’জন দুর্বল রাবী আছে। (ক) সুলায়মান বিন করম ও
(খ) আবু ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তাত।[4]
জ্ঞাতব্য: জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারী
(রহঃ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্ত্ত আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) থেকে
যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করা হল-
‘লা
ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কি জান্নাতের চাবি নয়? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির
দাঁত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আস যার দাঁত রয়েছে, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা
হবে। অন্যথা খোলা হবে না’।[5] এছাড়াও আরো অন্যান্য হাদীছ দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়।
[6] বুঝা যাচ্ছে যে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ জান্নাতের চাবি আর শরী‘আতের অন্যান্য
আমল-আহকাম অর্থাৎ ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ঐ চাবির দাঁত।
হাদিসের উৎসঃ
[1] মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩; তিরমিযী হা/৪; মিশকাত হা/২৯৪, পৃঃ ৩৯;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৪, ২/৪৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৮।
[2] যঈফুল জামে‘ হা/৫২৬৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৬০৯; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত
তারহীব হা/২১২।
[3] আবুদাঊদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩; মিশকাত হা/৩১২, পৃঃ ৪০;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ১/৫১।
[4] سنده ضعيف فيه سليمن بن قرم عن أبى يحيى القتات وهما ضعيفان لسوء حفظهما -আলবানী, মিশকাত হা/২৯৪-এর টীকা দ্রঃ ১/৯৭ পৃঃ; শু‘আইব আরনাঊত্ব, তাহক্বীক্ব
মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩-এর আলোচনা দ্রঃ।
[5] ছহীহ বুখারী ১/১৬৫ পৃঃ; হা/১২৩৭-এর পূর্বের আলোচনা দ্রঃ, (ইফাবা
হা/১১৬৫-এর পূর্বের আলোচনা, ২/৩৫৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[6] ছহীহ বুখারী হা/৫৮২৭, ২/৮৬৭ পৃঃ, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩;
ছহীহ মুসলিম হা/২৮৩, ১/৬৬ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪২; মিশকাত হা/২৬; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/২৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৬, ১/৪৫ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২;
মিশকাত হা/৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫।
একদিন
নবী মোস্তফায়, রাস্তা দিয়া হাইটা যায়, হরিণ একখান বান্ধা ছিল গাছেরই তলায় এ ঘটনার সত্যতা
কতটুকু
প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ও একটি হরিণীর মাঝে কথোপকথন এর একটি ঘটনা খুব প্রসিদ্ধ। তা হল, এক ইহুদী (বা বেদুঈন)
একটি হরিণ শিকার করে তার তাঁবুর সাথে বেধে রেখে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় হরিণীটি তার কাছে তাকে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য মুক্ত করার
অনুরোধ করে, যেন সে মরুভূমিতে ফেলে আসা তার বাচ্চাদের দুধ পান করাতে পারে।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হরিণীকে প্রশ্ন করেন, তাকে ছেড়ে দিলে সে কি পুনরায়
ফিরে আসবে? হরিণী ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি তাকে ছেড়ে দেন এবং জামিন হিসেবে
নিজে সেখানে অবস্থান করেন। পরে মা হরিণীটি তার বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ফিরে আসে…।
এ
দৃশ্য দেখে শিকারি ব্যক্তিটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের সত্যতা
বুঝতে পরে কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যায়।
এ
ঘটনাটির সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর:
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হরিণীর মাঝে কথোপকথন সংক্রান্ত উক্ত ঘটনাটি সাধারণ
মানুষের মধ্যে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। আমাদের দেশের ওয়াজ মাহফিলগুলোতে অনেক বক্তা কান্না
জড়িত সুরেলা কণ্ঠে এ ঘটনা বয়ান করে থাকেন। মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে কিছু খতিব সাহেব
মুসল্লিদেরকে এ সব গল্প শুনিয়ে থাকে। অথচ তারা হাদিসের সত্য-মিথ্যা-সহিহ-যঈফ হওয়ার
বিষয়ে মোটেও গবেষণা করে না-যা খুবই দু:খ জনক।
তাছাড়াও
রাস্তা-ঘাট, চা ও মুদির দোকান থেকে কানে ভেসে আসে এই গান/গজলের সুর:
“একদিন
নবী মোস্তফায় রাস্তা দিয়া হাইটা যায় হরিণ একখান বান্ধা ছিল গাছেরই তলায়।”
মোটকথা,
আমাদের দেশের মানুষ প্রচলিত এই কিচ্ছার সাথে বহুকাল থেকে পরিচিত।
যাহোক,
এ পর্যায়ে আমরা উক্ত ঘটনটির সনদগত ভিত্তি কতটুকু আছে তা পর্যালোচনা করে দেখবো।
মূলত:
এ ঘটনাটি একাধিক হাদিসের কিতাবে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবু নুআইম দালায়েলুন্ন
নবুওয়াহ (নবুওয়তের প্রমাণপঞ্জি) গ্রন্থে এ মর্মে একটি লম্বা হাদিস বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে
সুনানে বায়হাকীতেও এ বর্ণনাটি উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কিতাবে এটি পাওয়া যায়।
নিম্নে
এ হাদিস সম্পর্কে মুহাক্কিক হাদিস বিশারদদের মন্তব্য তুলে ধরা হল:
আল্লামা
মোল্লা আলী ক্বারি রহ. বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসায় হরিণীর
ঘটনা লোকমুখে ব্যাপক প্রসিদ্ধি রয়েছে। এ ব্যাপারে হাফেয ইবনে কাসীর রহঃ বলেন:
“এ
ঘটনার কোনো ভিত্তি নেই। যে এটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ
করল সে মিথ্যা বলল।” (উৎস: আল মাসনু’ ফী মারিফাতিল হাদিসিল মাউযু, পৃষ্ঠা নং ৮০)
সাখাবী
রহঃও প্রায় একই মন্তব্য করেছেন।
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন:
“আর
হরিণী কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য প্রকাশের ঘটনার ব্যাপারে
আমরা শক্তিশালী কিংবা দুর্বল কোনো সনদ (বর্ণনা সূত্র) পাই নি। আল্লাহ ভালো জানেন।”
(ফাতহুল বারী ৭/৪০৪)।
এছাড়াও
তিনি এ হাদিসটিকে লিসানুল মীযান গ্রন্থে ‘বাতিল ও বানোয়াট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
(লিসানুল মীযান, ৬/৩১১)
হাফেয
যাহাবী মীযানুল ইতিদাল গ্রন্থে এটিকে একটি ‘ভ্রান্ত ঘটনা’ হিসেবে ইঙ্গিত দেন। (মিযানুল
ইতিদাল ৪/৪৫৬)
শাইখ
আলবানী এ হাদিসকে যঈফ (দুর্বল) হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন: এ ঘটনাটি একাধিক
সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সেগুলোর একটিও সহীহ নয় এবং এক বর্ণনায় যেভাবে ঘটনার বিবরণ
এসেছে অন্য বর্ণনায় তা নেই।
মোটকথা,
উক্ত ঘটনাটি অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে বানোয়াট (কারো মতে দুর্বল।) সুতরাং হাদিসের নামে
এ জাতীয় কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা বা বিশ্বাস কোনো দায়িত্বশীল মানুষের কাজ হতে পারে
না। বক্তা, ইমাম, খতীব ও লেখকদের দায়িত্ব হল, যথাসাধ্য গবেষণা ও যাচায়-বাছায় পূর্বক
মানুষের নিকট হাদিস বর্ণনা করা। অন্যথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
নামে মিথ্যাচার করার কারণে জাহান্নামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে ইসলামের নামে সব ধরণের মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন
বিষয়াদি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
ফজরের ছালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী
সকলে মিলে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করা কি শরী‘আত সম্মত? কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
উক্ত
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ হওয়ায় আমলযোগ্য নয় (তিরমিযী হা/২৯২২; মিশকাত হা/২১৫৭; যঈফুত
তারগীব হা/৩৭৯)। এর সনদে খালিদ বিন ত্বাহমান নামে একজন শী‘আ রাবী রয়েছে (তাকরীবুত তাহযীব
১৬৪৯, ১/২৫৯)। উল্লেখ্য যে, ঘুমানোর পূর্বে সূরা হাশর পাঠের বিশেষ ফযীলত ও শেষ ছয় আয়াতকে
ইসমে আযম বলে যে বর্ণনাগুলো রয়েছে তার সবগুলো জাল ও যঈফ (যঈফাহ হা/২৭৭৩, ২২১৭; যঈফুল
জামে‘ হা/৩০৭)।
জাল-যয়ীফ হাদিসের-আমল-সবই
বৃথাঃ
যয়ীফ
হাদিস অথচ মানুষ এগুলোই সবচেয়ে বেশী আমল করে।
(১) যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় আউজু বিল্লাহিস
সামি’ইল আলিমি মিনাশ সাইতনির রজিম বলে সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ৭০
হাজার ফেরেশতা দুয়া করবেন ও ঐ দিন তার মৃত্যু হলে শহীদী মৃত্যু হবে। (হাদিস জয়ীফ- জয়ীফ
আত তিরমিজি-২৯২২)
(২) যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন ১বার পাঠ করবে,
আল্লাহ তাকে ১০বার কুরআন খতমের নেকী দিবেন। (এর সনদ খুবই দুর্বল- সিলসিলাহ যয়িফাহ ১৩৩৬)
(৩) যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ
পাঠ করবে, তাকে কখনো অভাব অনটন গ্রাস করবে না। (হাদিস জয়ীফ, সিলসিলাহ যয়িফাহ ২৮৯)
(৪) সূরা যিলযাল কুরআনের অর্ধেকের সমান।
(এই হাদিসের সনদে ইয়ামান রয়েছে, এই বেক্তির ব্যাপারে ইমাম বুখারি (রঃ) বলেন তিনি মুনকারুল
হাদিস, ইমাম নাসাই বলেন তিনি নির্ভরযোগ্য নন, ইমাম হাকিম সহিহ বলাতে ইমাম জাহাবি তার
বিরোধিতা করে দুর্বল বলেন)
এগুলো
ছাড়াও বাজারে বহুল প্রচলিত মানুষের ঈমান ধ্বংসকারী কিছু বই যেমন-
১।
মুকসেদুল মুমিনিন,
২।
নিয়ামুল কুরআন,
৩।
নূরানি পাঞ্জেগানা আরও কতো কি রয়েছে যা মানুষের ঘরে ঘরে পাওয়া যাবে, দেখুন এই বইগুলোর
অবস্থা-
(ক)
সূরা মূলক জাফরানের কালি দিয়ে লিখে তাবিজ আকারে গলায় পরিধান করলে যাবতীয় মনবাঞ্ছা পূর্ণ
হবে। (নূরানি পাঞ্জেগানা) নাউজুবিল্লাহ নিঃসন্দেহে তাবিজ- কবজ শিরক।
(খ)
যে বেক্তি কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করে মৃত্যু বেক্তিগনের রুহের উপর বখসিয়ে
দেয়, সেই বেক্তি কবরস্থানের সকল কবরবাসিগনের সম-সংখ্যক নেকী লাভ করে। (নিয়ামুল কুরআন)
কি সুন্দর মনগড়া ফযিলত, কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করলে কবরস্থানে মৃত্যু
সব বেক্তি জীবনে যতো আমল করেছে সমস্ত আমলের সমান নেকী সে পেয়ে যাবে। এজন্যই তো দেখা
যায় কবরের পাশে গিয়ে অনেক হুযুররা নিজে তোঁ পড়ছে অন্যদেরকে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করতে
বলে। আমাদের দেশের একদল মানুষ বলে থাকে, হাদিস আবার জাল- জইফ হয় নাকি! হাদিস তোঁ হাদিসই।
তাদেরকে বলবো এটাও যদি হাদিস হয় তবে সারাজীবন যারা সলাত, যাকাত, সিয়াম আদায় করেনি তারা
শুধু রাসুল (সাঃ)-এর কবরের পাশে গিয়ে সূরা ইখলাস ১১বার পাঠ করলেই তোঁ খেল খতম, পেয়ে
গেলো রাসুল (সাঃ)-এর সব আমল (আউজুবিল্লাহ, এইসব ঈমান ধ্বংসকারী বই, ১। মুকসেদুল মুমিনিন,
২। নিয়ামুল কুরআন, ৩। নূরানি পাঞ্জেগানা ঘরে থাকলে এখনই পুরিয়ে বা ছিরে ফেলুন এবং সেইসাথে
বিদআতি, যারা আপনাকে সঠিক ইসলাম থেকে দূরে রাখে তাদের থেকেও দূরে থাকুন)।
সাদা মোরগ এর ফযিলতে বর্ণিত
জাল ও জঈফ হাদিসঃ
ফেসবুকের
কিছু পেইজ, বিভিন্ন পোর্টাল, ওয়েব সাইট এবং ইউটিউবে সাদা মোরগের ফযিলতে কতিপয় হাদিস
চোখে পড়ল। দুর্ভাগ্য বশত: একদল জাহেল সেগুলো প্রচার করছে আর আরেকদল জাহেল সত্যমিথ্যা
যাচায়-বাছায় না করে সুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আমীন ইত্যাদি কমেন্ট করে যাচ্ছে!
দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা এ সব হাদিস কতটুকু সঠিক বা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত সে
বিষয়ে কোনো জ্ঞানই রাখে না বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনও অনুভব করে না। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে জাল ও বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করা মারাত্মক ভয়াবহ। কেউ জেনেবুঝে
এমনটি করলে তার পরিণতি জাহান্নাম। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)
তাই
এ সম্পর্কে বিভ্রান্তি নিরসন এবং জাহেলদের মুখোশ উন্মোচনেরে লক্ষ্যে এখানে মোরগের ফযিলত
সংক্রান্ত মোটামুটি প্রসিদ্ধ কতিপয় জাল-জঈফ হাদিস নিয়ে আলোচনা করা হল:
মোরগের
হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ. এর মূল্যবান বক্তব্য:
ইমাম
ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন:
“একটি
হাদিস ছাড়া মোরগ সংক্রান্ত সকল হাদিস মিথ্যা । সে হাদিসটি হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“তোমরা
যখন মোরগে ডাক শুনো তখন আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কারণ সে ফেরেশতা দেখে।”
(উৎস: المنارالمنيف
في الصحيح و الضعيف
আল মানারুল মুনিফ, হা/৭৯- মূলত: এ হাদিসটি সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে )
তবে
তিনি মোরগ সংক্রান্ত আরেকটি হাদিসকে সহিহ বলেছেন তার যাদুল মাআদ গ্রন্থে। তা হল:
“তোমরা
মোরগকে গালি দিও না। কারণ সে সালাতের জন্য ঘুম থেকে জাগায়।” (উৎস: যাদুল মাআদ: ২/৪৩১।
শাইখ আলবানী রহ.ও উক্ত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন: দ্রষ্টব্য: সহিহ তারগিব: ২৭৯৭ )
ইমাম
ইবনুল কাইয়েম রহঃ এর উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে বলা যায়, মাত্র দুটি হাদিস ছাড়া মোরগ
বিষয়ে কোনও সহিহ হাদিস নাই। যা আছে সব বানোয়াট ও দুর্বল।
নিম্নে সাদা মোরগ সংক্রান্ত ৫টি বানোয়াট
ও দুর্বল হাদিস তুলে ধরা হল (হাদিস বিশেষজ্ঞ সম্মানিত মুহাদ্দিসদের বক্তব্য সহ):
◉ হাদিস-১ (বানোয়াট):
“তোমরা
সাদা মোরগ পালন করো। কারণ সে আমার বন্ধু, আমিও তার বন্ধু। তার যে শত্রু সে আমারও তার
শত্রু। যেই বাড়িতে সাদা মোরগ থাকবে শয়তান এবং জাদুকর সেই বাড়ির কাছেও যেতে পারব
না।”
(মউযু
বা বানোয়াট হাদিস। সূত্র: শাইখ আলবানীর সিলসিলা যঈফা, হা/১৬৯৫)
◉ হাদিস-২ (বানোয়াট):
“তোমরা
সাদা মোরগকে র্ভৎসনা করো না। কারণ সে আমার বন্ধু, আমিও তার বন্ধু। তার যে শত্রু সে
আমারও তার শত্রু। সে স্বত্বার কসম, যিনি আমাকে সত্য (দ্বীন) সহকারে পাঠিয়েছেন, আদম
সন্তানরা যদি জানত যে, তার আওয়াজে কী আছে তাহলে তার পাখা ও গোশত স্বর্ণ-রৌপ্য দিয়ে
হলেও ক্রয় করত। তার আওয়াজ যতদূর পৌছায়, তত দূর পর্যন্ত তা জিনকে তাড়িয়ে দেয়।”
মউযু
বা বানোয়াট হাদিস: আল মানারুল মুনীফ-ইবনুল জাউযী (৪৭), মউযুআতে ইবনুল জাউযী ৩/১৩৪,
আল ফাওয়ায়িদুল মাজমূআহ-শাওকানী (১৭১)
◉ হাদিস-৩ (বানোয়াট):
“তোমরা
সাদা মোরগ পালন করো। কেননা যে বাড়িতে সাদা মোরগ থাকে শয়তান ও জাদুকর তার পাশে যেতে
রে না- এমনকি চারপাশের বাড়ি-ঘরেও।”
[এটি
মাউযু বা বানোয়াট হাদিস। সূত্র: সূয়ূতী কর্তৃক বানোয়াট হাদিস সংকলন: আল লাআলী আল মাসনূআহ
ফিল আহাদিসিল মাউযুআহ ২/১৪২, মাউযু-শাইখ আলবানীর যঈফুল জামে হা/৯১]
◉ হাদিস-৪ (বানোয়াট):
“ঝুঁটিওয়ালা
সাদা মোরগ আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধু জিবরাঈলেরও বন্ধু। এটি (ঝুঁটিওয়ালা সাদা মোরগ)
নিজের বাড়ি হেফাজত করার পাশাপাশি তার প্রতিবেশীর ষোলটি ঘর হেফাজত করে। চারটি ডানদিক
থেকে, চারটি বামদিক থেকে, চারটি সামনে থেকে এবং চারটি পেছন থেকে।”
[এটি
মউযু বা বানোয়াট হাদিস: উৎস: মউযূআতে ইবনুল জাউযী, ৩/১৩৮, আল ফাওয়াইদুল মাজমুআহ-শাওকানী
১৭২, সিলসিলা যঈফাহ-আলবানী ৩০২৪]
◉ হাদিস-৫ (দুর্বল):
“মোরগ
নামাযের জন্য আযান দেয়। যে ব্যক্তি সাদা মোরগ রাখে তাকে তিনটি জিনিস থেকে হিফাজত করা
হয়: শয়তানের অনিষ্ট থেকে, জাদুকরের অনিষ্ট থেকে এবং জ্যোতিষীর অনিষ্ট থেকে।”
এটি
যঈফ বা দুর্বল হাদিস। সূত্র: যঈফুল জামে-আলবানী (৩০৩০) মূল হাদিসটি সুনানুল বাইহাকীর
শুআবুল ঈমানে বর্ণিত হয়েছে। হাদিস নং ৪৮১৪)
এ
বিষয়ে আরও কিছু হাদিস নেট জগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু এখানে কেবল প্রসিদ্ধ কয়েকটি
তুলা ধরা হল। মনে রাখতে হবে যে, পূর্বোল্লিখিত দুটি হাদিস ছাড়া মোরগের ফযিলতে কোন হাদিস
বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়-যেমনটি ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহ. উল্লেখ করেছেন।
পরিশেষে
বলব, কোন ঈমানদারের জন্য জেনে-বুঝে কোন হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের পূর্বে তা প্রচার
করা হারাম। তবে যদি মানুষকে সতর্ক করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে হাদিসের মান বর্ণনা পূবর্ক
তা আলোচনা করায় দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম জাতিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যাচার থেকে
হেফাজত করুন। আমীন।
সালাতের ফজিলত সম্পর্কে জঈফ
ও জাল হাদিসমূহঃ
হাদিস নং ১-
সালাত
হল দিনের খুঁটি। সুতারাং যে ব্যাক্তি সালাত কায়েম করলো সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করলো। আর
যে ব্যাক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল। (কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃ, তাযকিরাতুল মউজুয়াত পৃ ৩৮, ফাজায়েলে আমাল ২৯ পৃ)।
তাহকিকঃ
সমাজে
হাদিসটির সমাধিক প্রসার থাকলেও হাদিসটি গ্রহন যোগ্য নয়। ইমাম নাবাবি (রহ) বলেন, এটি
বাতিল ও মুনকার। (কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃ,)।
হাদিস নং ২-
রসুল
(সা) বলেছেন, সালাত মুমিনের মিরাজ।
(তাফসিরে
রাযি ১/২১৮ পৃ, তাফসিরে হাক্কি ৮/৪৫৩ পৃ, মিরকাতুল মাফাতিহ ১/১৩৪ পৃ, “ইমান” অধ্যায়)।
তাহকিকঃ
উক্ত
বর্ণনার কোন সনদ নাই। এটি ভিত্তিহিন ও বানোয়াট।
হাদিস নং ৩-
আনাস
(রা) বলেন, রসুল (সা) বলেছেন, “সালাত মুমিনের নুর”
(মুসনাদে
আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫, ফাজায়েলে আমাল ২৯ পৃ)।
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি
জইফ। মুহাদ্দিস হুসাইন সালিম আসাদ (রহ) বলেন, উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।
(তাহকিক
মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫)।
উক্ত
হাদিসের সনদে ইসা ইবনু মাইসারা নামে একজন দুর্বল রাবি আছে।
(সিলসিলাই
জইফা হা/১৬৬।
উল্লেখ্য,
ছলাত নুর, সাদাকা দলিল মর্মে মুসলিমে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা ছহিহ। (মুসলিম হা/৫৫৬,
মিস্কাত হা/২৮১)।
হাদিস নং ৪-
যে
বাক্তি জামাতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করে সে যেন আদম (আ) এর সাথে পঞ্চাশ বার হজ করে
এবং যে বাক্তি জামাতের সাথে যোহরের সালাত আদায় করে সে যেন নুহ (আ) এর সাথে চল্লিশ কিংবা
ত্রিশ বার হজ করে। এভাবেই অনন্যা ওয়াক্ত সে আদায় করে।
(হাসান
ইবনু মুহাম্মাদ আস-ছাগানি, আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি
জাল ও মিথ্যা। (আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)
হাদিস নং ৫-
সালমান
ফারসি (রা) বলেন, আমি রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছি, যে বাক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে
আগিয়ে গেলো সে ইমানের পতাকা নিয়ে গেলো। আর যে বাক্তি ভোরে (ফজরের সালাত আদায় না কওরে)
বাজারের দিকে আগিয়ে গেলো সে শয়তানের পতাকা
নিয়ে গেলো।
(ইবনু
মাজাহ হা/২২৩৪, বঙ্গানুবাদ মিস্কাত হা/৫৮৯)।
তাহকিকঃ
উক্ত
হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবি রয়েছে। ইমাম বুখারি
(রহ) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ গন তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছে। ইবনু হিব্বান (রহ) বলেন,
সে নির্ভরশীল বাক্তির নাম দিয়ে ধারনা পূর্বক বহু জাল হাদিস বর্ণনা করেছে।
(আলবানি,
জইফ ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, মিস্কাত হা/৬৪০ টিকা দ্রষ্টব্য)।
হাদিস নং ৬-
ইমরান
ইবনু হুসাইন (রা) বলেন, রাসুল (সা) কে একদা জিজ্ঞাস করা হল, আল্লাহর এই বানি সম্পর্কে-“নিশ্চয়ই
সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” তখন তিনি বললেন, যাকে তার সালাত অশ্লীল ও
মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না “তার সালাত হয় না”।
(তাফসির
ইবনে কাসির; সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫, ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭২)।
তাহকিকঃ
হাদিসটি
জইফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবি রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ বর্ণনাটিকে
মুনকার বলেছেন। (সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫৫)।
হাদিস নং ৭-
ইবনু
আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন, যার সালাত তকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত
রাখে না তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেয়া ছারা আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।
(ফাজায়েল
এ আমাল পৃঃ ১৭৩, তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির হা/১০৮৬২)।
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি
বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লইস ইবনু আবি সালিম নামক ত্রুতিপূর্ণ রাবি রয়েছে।
(সিলসিলা
ই জইফা হা/২)।
জ্ঞাতব্যঃ
উক্ত
বর্ণনা প্রমান করে ত্রুটিপূর্ণ কোন বাক্তি সালাত আদায় করলে সালাত কবুল হয়না। সুতারাং
সালাত আদায় করে কোন লাভ নাই। কিন্তু উক্ত ধারনা সঠিক নয়। বরং সালাত আদায়ের মাধ্যমে
এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহিহ হাদিসে বর্ণিত হইছে,
আবু
হুরাইরা (রা) বলেন, জনৈক বাক্তি রাসুল (সা) এর নিকটে এসে বললেন, অমুক বাক্তি রাতে সালাত
আদায় করে আর সকাল হলে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, সালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত
রাখবে। (আহামাদ হা/৯৭৭৭, মিস্কাত হা/১২৩৭, সনদ ছহিহ)।
যঈফ-হাদিসের দোয়া বা আমলসমূহ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
/ গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ / অধ্যায়ঃ ২৮/ দোয়া
পরিচ্ছেদঃ ২৮/২. রাসূলুল্লাহ
ﷺ -এর দোয়া
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪/৩৮৩৩। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে জ্ঞান দান করেছো,
তার দ্বারা আমাকে উপকৃত করো, আমার জন্য উপকারী জ্ঞান আমাকে শিখিয়ে দাও এবং আমার জ্ঞান
বৃদ্ধি করো। সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর! আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে আল্লাহর
আশ্রয় প্রার্থনা করি’’।
তিরমিযী
৩৫৯৯। তাহকীক আলবানীঃ ......وَالْحَمْدُ ব্যাতিত সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুসা বিন উবাদাহ সম্পর্কে
আবু আহমাদ বিন আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু বাকর আল-বাযযার
বলেন, তিনি ভালো ব্যাক্তি তবে হাফিয নয়। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু
যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইমাম তিরমিযি ও আবু মুহাম্মাদ বিন হাযম বলেন,
তিনি দুর্বল। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা আমার মতে বৈধ নয়। আহমাদ
বিন শু'আয়ব ও ইমাম যাহাবী তাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, মাতালিবুল
আলায়ায় তাকে দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম মুসলিম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায়
দুর্বল। ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় খুবই দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ
রাবী নং ৩৫০৬, ২৯/১০৪ নং পৃষ্ঠা) ২. মুহাম্মাদ বিন সাবিত আল-আবদী সম্পর্কে আবু আহমাদ
আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী
বলেন, আমভাবে তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি সত্যবাদী।
আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ
বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী
তবে তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন,
তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান বলেন, তিনি সিকাহ। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব
এর লেখক বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫১০৪, ২৪/৫৫৪ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের
মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/২. রাসূলুল্লাহ
ﷺ -এর দোয়া
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৭/৩৮৩৬। আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লাঠিতে ভর দিয়ে আমাদের নিকট বেরিয়ে
এলেন। আমরা তাঁকে দেখামাত্র দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বলেনঃ পারস্যবাসীরা তাদের নেতাদের
সাথে যেরূপ করে, তোমরা তদ্রূপ করো না। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আমাদের
জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। তিনি বলেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের
প্রতি দয়া করো, আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকো, আমাদের দোয়া কবুল করো,আমাদেরকে জান্নাতে
প্রবেশ করাও, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দাও, আমাদের অবস্থা সংশোধন করে দাও সম্পুর্নভাবে
এবং আমাদের জন্য আরো অধিক দোয়া করবেন। তখন তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাদের সকল প্রয়োজন একত্র
করে দেইনি?
আবূ
দাউদ ৫২৩০, আহমাদ ২১৬৭৭, ২১৬৯৭, যইফাহ ২৪৬। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী
আবু ওয়াইল (তুবায় বিন সুলায়মান) সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল
ও সংমিশ্রণ করেন। ইমাম যাহাবী ও ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মাজহুল। আল-হাফিয
আল-ইরাকী বলেন, তিনি ত্রুটিপূর্ণভাবে হাদিস বর্ণনা করেন। আল-মুনযিরী বলেন, তিনি হাদিস
বর্ণনায় অন্যমনস্ক, তার মাঝে জাহালাত রয়েছে। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭৯৫, ৪/৩১২ নং
পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/৩. যা থেকে
আশ্রয় চেয়েছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৭/৩৮৪৪। উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আশ্রয় প্রার্থনা করতেন ভীরুতা, কাপুরুষতা, কার্পণ্য, অথর্বজনক বার্ধক্য, কবরের শাস্তি
ও অন্তরের বিপর্যয় থেকে। ওয়াকী (রাঃ) বলেন, অন্তরের বিপর্যয়ের অর্থ হলো যে ব্যক্তি
তার পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা না করে মারা যায়।
নাসায়ী
৫৪৪৩, আবূ দাউদ ১৫৩৯, মিশকাত ২৪৬৬। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/৫. ক্ষমা ও
নিরাপত্তা লাভের দোয়া
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১/৩৮৪৮। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ দোয়া
সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা
প্রার্থনা করো। অতঃপর সে দ্বিতীয় দিন তাঁর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেন্ দোয়া
সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি তোমার প্রভুর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা
প্রার্থনা করো। অতঃপর সে তৃতীয় দিন তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর নবী! কোন্ দোয়া
সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি তোমার রবের নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা
প্রার্থনা করো। যদি তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা দান করা হয়, তাহলে
তুমি পরম সাফল্য লাভ করলে।
তিরমিযী ৩৫১২, যইফাহ ২৮৫১। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত
হাদিসের রাবী সালামাহ বিন ওয়ারদান সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল।
আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি আনাস (রাঃ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এ মর্মে আমা জানা
নেই। আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নায়সাবুরী বলেন, তিনি আনাস (রাঃ) থেকে একাধিক হাদিস
মুনকার ভাবে বর্ণনা করেছেন। আবু নুআয়ম আল-আসবাহানী বলেন, তিনি আনাস (রাঃ) থেকে মুনকার
সুত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আহমাদ
বিন শু'আয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি দুর্বল অন্যত্র বলেন, তিনি সিকাহ নয়। আহমাদ বিন সালিহ
আল-জায়লী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনু হাজার আল-আসকালানী ও ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল।
ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান সুফইয়ান কর্তৃক সালামাহ বিন ওয়ারদান থেকে হাদিস বর্ণনা
করেননি। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৪৭৩, ১১/৩২৪ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/৬. দোয়াকারী
প্রথমে নিজের জন্য দোয়া করবে
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১/৩৮৫২। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ আমাদেরকে এবং আদ জাতির ভাই (হূদ আ)-কে
দয়া করুন।
হাদিসটি
ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। যইফাহ ৪৮২৯, যাইফ আল-জামি ৬৪২৭। তাহকীক আলবানীঃ
যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী যায়দ ইবনুল হুবাব সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সত্যবাদী
কিন্তু হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আলী ইবনুল মাদীনী ও উসমান বিন আবু শায়বাহ তাকে
সিকাহ বলেছেন। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেছেন।
(তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২০৯৫, ১০/৪০ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/৯. আল্লাহর
মহান নাম (ইসমে আযম)
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৬/৩৮৫৯। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার
পবিত্র, উত্তম, বরকতপূর্ণ এবং আপনার অধিক প্রিয় নামের উসীলায় আপনার নিকট প্রার্থনা
করছি, যে নামের উসীলায় আপনাকে ডাকলে আপনি সাড়া দেন, যে নামের উসীলায় প্রার্থনা করলে
আপনি দান করেন, যে নামের উসীলায় রহমত প্রার্থনা করা হলে আপনি রহমত নাযিল করেন এবং যে
নামের উসীলায় বিপদমুক্তি কামনা করা হলে আপনি বিপদমুক্ত করেন ’’। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
একদিন তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি কি জানো, আল্লাহ আমাকে সেই নামটি বলে দিয়েছেন, যে
নামের উসীলায় ডাকলে তিনি সাড়া দেন? আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!
আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক, তা আমাকে শিখিয়ে দিন।
তিনি
বলেনঃ হে আয়েশা! তা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, তখন আমি সরে গিয়ে কিছুক্ষণ
বসে থাকলাম, অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর মাথায় চুমা দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তা আমাকে
শিখিয়ে দিন। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! তা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না। আমি যদি তোমাকে শিখিয়ে
দেই তবে সেই নামের উসীলায় পার্থিব জগতের কিছু প্রার্থনা করা তোমার জন্য সংগত হবে না।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি উঠে গিয়ে উযু করার এবং দু’ রাক‘আত নামায পড়ার পর বললাম,
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমাকে ‘আল্লাহ’ নামে ডাকছি, আমি তোমাকে রহমান নামে ডাকছি, আমি তোমাকে
‘বাররুর রহীম’ নামে ডাকছি এবং আমি তোমাকে আমার জানা-অজানা তোমার যাবতীয় সর্বোত্তম নামে
ডাকছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া করো’’।
আয়েশা
(রাঃ) বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অকৃত্রিম হাসি দিলেন,
অতঃপর বললেনঃ তুমি যেসব নামে ডাকলে, সেই নামটি অবশ্যই এগুলোর মধ্যে আছে।
হাদিসটি
ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আত-তালীকুর রাগীব ২/২৭৫। তাহকীক আলবানীঃ যইফ।
উক্ত হাদিসের রাবী আবু শায়বাহ সম্পর্কে আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি মিথ্যুক। ইমাম
বুখারী বলেন, তার হাদিসের মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭৪৩১, ৩৩/৪১০
নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/১০. মহান আল্লাহর
নামসমূহ
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ২/৩৮৬১। আব হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর নিরানব্বই নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। নিশ্চয় তিনি
বেজোড় এবং তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি এই নামগুলোর হেফাজত করবে সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে। সেগুলো এইঃ
যুহাইর
(রাঃ) বলেন, আমরা একাধিক বিশেষজ্ঞ আলেমের অভিমত অবহিত হয়েছি যে, উক্ত নামগুলো নিম্নোক্তভাবে
শুরু করতে হবেঃ
(আল্লাহ
ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নাই, তাঁর জন্য রাজত্ব, তাঁর জন্য সমস্ত
প্রশংসা, তাঁর হাতে যাবতীয় কল্যাণ নিহিত, তিনি সবকিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তাঁর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ)
সহীহুল
বুখারী ২৭৩৬, মুসলিম ২৬৭৭, তিরমিযী ৩৫০৬, ৩৫০৭, ৩৫০৮, আহমাদ ৭৪৫০, ৭৫৬৮, ২৭৩৬৩, ৯২২৯,
১০১০৩, ১০১৫৪, ১০৩০৭, মিশকাত ২২৮৮। তাহকীক আলবানীঃ নাম গননা ব্যতিত সহীহ। উক্ত হাদিসের
রাবী আবদুল মালিক বিন মুহাম্মাদ আস-সানআনী সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি এককভাবে
জাল (বানিয়ে) হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি যাচাই-বাচাই ছাড়া
হাদিস গ্রহন করেন ও তা বর্ণনা করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫৫৭, ১৮/৪০৫ নং পৃষ্ঠা)।
হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/১১. পিতার দোয়া
ও মজলুমের দোয়া
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ২/৩৮৬৩। উম্মু হাকীম বিনতে ওয়াদ্দাআ আল-খুযাইয়্যা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ
পিতার দোয়া (আল্লাহর নূরের) পর্দা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
হাদিসটি
ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আত-তালীকুর রাগীব ২/২২৭, যইফ আল-জামি' ২৯৭৭।
তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. হুবাবাহ বিনতু আজলান সম্পর্কে ইবনু হাজার
আল-আসকালানী বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। ইমাম যাহাবী বলেন, তার অবস্থা
সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭৮০৯, ৩৫/১৪৭ নং পৃষ্ঠা) ২. উম্মু
হাফস সম্পর্কে ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায়না।
(তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭৯৬৮, ৩৫/৩৪৭ নং পৃষ্ঠা) ৩. সাফিয়্যাহ বিনতু জারীর সম্পর্কে
ইবনু হাজার আল-আসকালানী ও ইমাম যাহাবী বলেন, তার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়না।
(তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭৮৭১, ৩৫/২০৯ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/১৩. দোয়া করতে
দু’ হাত তোলা
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ২/৩৮৬৬। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যখন আল্লাহর নিকট দোয়া করবে, তখন তোমার
দু’ হাতের তালু উপর দিকে রেখে দোয়া করবে, দু’ হাতের পিঠ উপর দিকে রেখে দোয়া করবে না।
তুমি দোয়া শেষ করে হাতের তালুদ্বয় তোমার মুখমন্ডলে মাসেহ করবে।
আবু
দাউদ ১৪৮৫। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী সালিহ আল-হাসসান সম্পর্কে আবু বাকর
আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী
বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু নুআয়ম আল আসবাহানী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
আহমাদ বিন শু'আয়ব আন-নাসায়ী ও ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মিথ্যা বলার অভিযোগে
অভিযুক্ত। আল-বুসায়রী বলেন, তিনি দুর্বল। আল-খাতীবুল বাগদাদী বলেন, তার দুর্বলতার ব্যাপারে
সকলে একমত। ইমাম যাহাবী বলেন, একটি জামাআত তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম বুখারী বলেন, তিনি
কুফরী নয় এমন কওলী বা আমলী কোন ফিসক এর সাথে জড়িত। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৮০০,
১৩/২৮ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/১৪. কেউ সকাল
ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে যে দোয়া পড়বে
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪/৩৮৭০। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খাদেম আবূ সাল্লাম
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন মুসলমান বা কোন মানুষ
বা কোন বান্দা সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে ‘‘আল্লাহ আমার প্রভু, ইসলাম আমার দীন এবং
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রাসূল হওয়ায় আমি সর্বান্তঃকরণে সন্তুষ্ট
আছি ’’ এ কথা বললে, কিয়ামতের দিন তার উপর সন্তুষ্ট হওয়া আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়।
আবূ
দাউদ ৫০৭২, আত-তালীকুর রাগীব ১/১২৮, ২২৯, যইফাহ ২০৫০। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের
রাবী সাবিক সম্পর্কে ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মাকবুল। তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব
এর লেখক বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। তার থেকে হাশিম বিন বিলাল এককভাবে হাদিস বর্ণনা
করেছেন। ইবনু হিব্বান ব্যাতিত তাকে কেউ সিকাহ বলেনি। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২১৪০,
১০/১২৫ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/১৮. কোন ব্যক্তি
তার ঘর থেকে বের হওয়ার প্রাক্কালে যে দোয়া পড়বে
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ২/৩৮৮৫। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর ঘর থেকে বের হতেন তখন বরতেনঃ ‘‘আল্লাহর নামে, আল্লাহ ছাড়া ক্ষতি
রোধ করা বা কল্যাণ হাসিল করার শক্তি কারো নেই। ভরসা আল্লাহর উপর’’।
হাদিসটি
ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। যইফাহ ৪২৪৩। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের
রাবী ১. ইয়াকুব বিন হুমায়দ বিন কাসিব সম্পর্কে আবু জা'ফার আল-উকায়লী বলেন, তার হাদিসের
অনুসরণ করা যাবে না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনু হাজার
আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী
নং ৭০৮৬, ৩২/৩১৮ নং পৃষ্ঠা) ২. আবদুল্লাহ বিন হুসায়ন বিন আতা বিন ইয়াসার সম্পর্কে আবু
হাতিম বিন হিব্বান বলেন, যারা হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন তিনি তাদের একজন। আবু যুরআহ আর-রাযী
বলেন, তিনি দুর্বল। ইমাম বুখারী বলেন, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। ইবনু হাজার আল-আসকালানী
বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩২২৬, ১৪/৪১৯ নং পৃষ্ঠা) ৩. সুহায়ল বিন
আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন,
সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার বর্ণিত হাদিস সহিহ নয়। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা
নেই। ইবনু আদী বলেন, তার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ
তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২২৩
নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
পরিচ্ছেদঃ ২৮/১৮. কোন ব্যক্তি
তার ঘর থেকে বের হওয়ার প্রাক্কালে যে দোয়া পড়বে
সুনানে
ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৩/৩৮৮৬। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কোন লোক তার ঘরের বা বাড়ির দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়, তখন দু’জন
ফেরেশতাকে তার সঙ্গী হিসাবে তার জন্য নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর যখন সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে
তখন ফেরেশতাদ্বয় বলেন, তোমাকে হেদায়াত দান করা হয়েছে। যখন সে বলে আল্লাহ ব্যতীত ক্ষতি
রোধ করার বা কল্যাণ লাভ করার শক্তি কারো নাই, তখন ফেরেশতাদ্বয় বলেন, তোমাকে রক্ষা করা
হয়েছে। যখন সে বলে, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম, তখন তারা বলেন, তোমার জন্য (আল্লাহ)
যথেষ্ট হয়েছেন। অতঃপর তার সাথে তার জন্য নিযুক্ত দু’ সাথী সাক্ষাত করে। তখন ফেরেশতাদ্বয়
বলেন, এমন ব্যক্তির ব্যাপারে তোমরা কী করতে চাও, যাকে হেদায়াত দান করা হয়েছে, যাকে
রক্ষা করা হয়েছে এবং যার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট হয়েছেন।
হাদিসটি
ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। যইফাহ ২৫৫৪। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের
রাবী হারুন বিন হারুন সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল-জুরজানী বলেন, তার একাধিক হাদিস
আছে যার অনুসরণ করা যায় না। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি কুফরী নয় এমন কওলী বা আমলী
কোন ফিসক এর সাথে জড়িত, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ বিন শু'আয়ব আন-নাসায়ী, ইবনু হাজার
আল-আসকালানী, ইমাম দারাকুতনী ও ইমাম যাহাবী তার সকলে বলেন, তিনি দুর্বল। ইমাম বুখারী
বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৩১, ৩০/১১৯ নং পৃষ্ঠা)।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক
বর্ণিত জাল হাদিসসমূহ
আমি
আপনাদের কখনই বলবনা হাদীস বইগুলো একেবারে পরিত্যাগ করতে। হাদীস অবশ্যই পড়বেন এবং যে
হাদীসগুলো সুন্দর, উপকারী, মহৎ সেগুলো মেনে চলবেন। তবে সহিহ বুখারী/ সিহাহ সিত্তাহ
শুনলেই অন্ধ বিশ্বাস করে উদ্ভট, অবাস্তব, ভয়ঙ্কর, ক্ষতিকর হাদীসগুলো মেনে চলা একেবারেই
উচিৎ নয়। হাদিসের সনদ ঠিক থাকলেই আর কোরআনের সাথে সরাসরি বিরোধীতা না থাকলেই আজকাল
হাদীসটি সহিহ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। কিন্তু আসলে দেখা যায় কোরআনের সাথে বিরোধীতার
পরেও সহিহ হাদীস গুলোকে রুপক হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে সেটাকে সহিহ হিসেবেই মর্যাদা
দেয়া হয়। আর বেশীরভাগ হাদীসই কোরানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক না হলেও কোরআনের সাথে
যে ছন্দময় তা নয়। সেই সব হাদীস ভয়ঙ্কর হলেও আর বাতিল হয়না। হাদীসের বইতে এমন হাদীসের
সংখ্যাই সর্বাধিক। আমি আপনাদের আহবান জানাই, আপনারা কোরান বুঝে পড়ুন, এবং হাদীসগুলোকে
সেই কোরান দিয়েই এবং হাদীসের বক্তব্য দিয়ে যাচাই করে নিন সেগুলো সত্য কিনা। হাদীসের
সনদ ঠিক থাকলেই সেটা সহিহ এমন উদ্ভট ভয়ঙ্কর কথা পরিত্যাগ করুন। প্রমাণ করে দিচ্ছি
যে সহিহ বুখারী আর মুসলিম শরীফের সিংহভাগ হাদীসই অগ্রহণযোগ্য।
ইমাম
বুখারী এবং ইমাম মুসলিম হাদীস সত্যাসত্য করার কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছিলেন। হাদিস
হিসেবে গ্রহণীয় হওয়ার জন্য সাধারণতঃ হাদীসটির সনদে চারটি প্রধান বিষয়ের প্রতি সবার
আগে নজর দিতে হবে। আমি নিচে তার দুটি উল্লেখ করলামঃ
(১) আগা গোড়া প্রতিটি সাক্ষিই জ্ঞানী,
খাঁটি সত্যবাদী, সৎ চরিত্র, মোত্তাকীম পরহেজগার শালীনতা ও ভদ্রতা সম্পন্ন স্বভাবের
হতে হবে। কোন ব্যক্তি জীবনে মাত্র একবার হাদিস সংক্রান্ত ব্যাপারে মিথ্যা উক্তির জন্য
ধরা পড়লে এ ব্যক্তির শুধু মিথ্যা হাদিসই নহে, বরং তাহার সারা জীবনের সমস্ত হাদিসই
অগ্রাহ্য হইবে। তওবা করিলেও তাহার বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য হইবে না। উহা ছাড়া অন্য
কোন বিষয় ও মিথ্যাবাদী বলে পরিচিত হলে বা শরিয়ত বিরোধী আকিদা বা কার্যকলাপে লিপ্ত
প্রমাণিত হলে বা অসৎ প্রকৃতির লম্পট ও নীচ স্বভাবের লোক হলে তাহার বর্ণিত হাদিস গ্রহণীয়
হবে না।
(২) প্রত্যেক সাক্ষী তার স্মরণ শক্তি সম্বন্ধে
অতিশয় পাকাপোক্ত সুদক্ষ ও সুদৃঢ় সংরক্ষক বলিয়া পরিচিত হতে হবে। এবং ইহাও প্রমাণিত
হওয়া আবশ্যক যে, প্রতিটি সাক্ষী তার পূর্ববর্তী সাক্ষ্যদাতা অর্থাৎ ওস্তাদের নিকট
হইতে হাদিসখানা পূর্ণ মনোযোগের সহিত শ্রবণ করতঃ সবিশেষ মনোযোগের সহিত মূখস্ত করে বা
লিপিবদ্ধ করিয়া রেখেছেন। এই বিশেষ প্রমাণ এরূপ হবে যে, উক্ত সাক্ষী যে হাদিস আজীবন
শত শতবার বর্ণনা করে আসতেছেন।
কোন
সময়ই তার বর্ণনার মধ্যে এরূপ গরমিল দেখা যাইবে, তখন হইতে আর ঐরূপ স্বাক্ষীর বর্ণনার
কোন হাদিস সঠিক প্রমাণিত বলিয়া গণ্য হইবে না।
আমরা
জানি বুখারী এবং মুসলিম শরীফের সিংহভাগ হাদীসের বর্ণনাকারী হচ্ছেন আবু হুরায়রা। তিনি
রাসূল (সঃ) এর সাথে মাত্র তিন বছরের চাইতেও কম সময় থাকলেও সর্বাধিক প্রায় পাঁচ হাজার
হাদীস বর্ণনা করেছেন। অথচ প্রধান চার খলিফা সহ আর কোন সাহাবীই সারাজীবন নবী (সাঃ) এর
সাহচর্যে থাকার পরেও এত অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেননি।
হাদীস
বেত্তাগণ মনে করেন, বুখারী আর মুসলিম শরীফের সকল হাদীসই সহিহ। এবার আমি সহিহ হাদীস
দিয়েই প্রমাণ দিব যে আবু হুরায়রা উপরে উল্লিখিত ২ টি নিয়মেই হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে
বাদ পড়ে যান। তিনি ভুল হাদীস বলেছেন আবার তাঁর স্মৃতি শক্তিও নির্ভরযোগ্য ছিলনা।
মূল বিষয়ে যাবার আগে
প্রথমেই একটি হাদীস জেনে নেইঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নিজেই
স্বীকার করেছেন যে, তিনি হাদীস ভুলে যেতেন-
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি
বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে
দেয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর
আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি। (১১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২০)
ইবরাহীম
ইবনুল মুনযির (রহ.)…..ইবনু আবূ ফুদায়ক (রহ.) সূত্রে একইরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে
বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্যে
(কিছু) দিলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২১)।
হাদিস গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী)
হাদিস
নম্বরঃ [119] অধ্যায়ঃ ৩/ আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান)
পরিচ্ছদঃ
৩/৪২. ইলম আয়ত্ত করা।
(১) আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে
যাই।’ তিনি বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে
কিছু ঢেলে দেয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম।
অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি। (১১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২০)।
(২) ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহ.).....ইবনু
আবূ ফুদায়ক (রহ.) সূত্রে একইরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যে, আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্যে (কিছু) দিলেন। (ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১২১)।
Narrated
Abu Huraira: I said to Allah's Messenger (sallallahu ‘alaihi wa sallam) "I
hear many narrations (Hadiths) from you but I forget them." Allah's
Apostle said, "Spread your Rida' (garment)." I did accordingly and
then he moved his hands as if filling them with something (and emptied them in
my Rida') and then said, "Take and wrap this sheet over your body." I
did it and after that I never forgot any thing. Narrated Ibrahim bin
Al-Mundhir: Ibn Abi Fudaik narrated the same as above (Hadith...119) but added
that the Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) had moved his hands as if
filling them with something and then he emptied them in the Rida' of Abu
Huraira. হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ব্যাখ্যাঃ
দেখুন
আবু হুরায়রা নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি হাদীস ভুলে যেতেন। পরে নবী (সাঃ) এর মজেজায়
আর জীবনেও নবী (সাঃ) (সাঃ)র হাদীস সহ কোন কিছুই ভুলেন নাই বলে দাবী করেছেন। এই সম্পর্কে আরেকটি হাদীস-
(৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, তোমরা বলে থাক, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আবূ হুরাইরাহ্
(রাঃ) বেশি বেশি হাদীস বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মুহাজির ও আনসারদের কী হলো যে,
তারা তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস বর্ণনা করে না? আমার
মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত থাকত আর আমি কোন প্রকারে আমার পেটের চাহিদা
মিটিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে পড়ে থাকতাম। তাঁরা
যখন অনুপস্থিত থাকত আমি তখন উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেত আমি তা মুখস্থ করতাম।
আর আমার আনসার ভাইয়েরা নিজেদের ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আমি ছিলাম সুফ্ফার
মিসকীনদের একজন মিসকীন। তাঁরা যা ভুলে যেতো, আমি তা মুখস্থ রাখতাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক বর্ণনায় বললেন, আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার
কাপড় বিছিয়ে দিবে এবং পরে নিজের শরীরের সাথে তার কাপড় জড়িয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা
স্মরণ রাখতে পারবে। [আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন] আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম
যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি
তা আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সে কথার কিছুই ভুলে যাইনি। (১১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯০৪ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৯১৯)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) এত বেশী
হাদীস বলতেন বলে তখন অনেকেই সন্দেহ করেছেনঃ
দেখুন
আবু হুরায়রা এত বেশী হাদীস বলতেন বলে তখন অনেকেই সন্দেহ করেছেন। সেই সময় এই হাদীস
প্রচারিত হলে আবু হুরায়রা’র কথা শুনে সকল সাহাবীই এই কাজটা করতেন। তাতে তারাও আর জীবনে
হাদীস ভুলতেননা। সকলেই ৫০০০ এর উপর হাদীস বর্ণনা করতে পারতেন। এত কষ্ট করে মুখস্তও
রাখতে হতনা, বা কোথাও লিখেও রাখতে হতনা। নবী (সাঃ) প্রধান চার খলিফাকেও এই পদ্ধতি শিখাতে
পারতেন, সেক্ষেত্রে খলিফারা আর ভয়ের কারণে হাদীস নষ্ট করতে যেতেননা। অবাক ব্যাপার
হলো এই হাদীসটি তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন যেখানে প্রেক্ষাপট
আর ঘটনার ধারা এক রকম নয়। এতে করেই তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ীই বুঝা যায় তিনি
ভুলোমনা ছিলেন। এক হাদীসের বর্ণনাতে তিনি বলেছিলেন তার গায়ে একটা মাত্র কাপড় ছিল,
এতে করে কাপড় মেলে ধরার সময় আর বুকে মাখার সময় যে তার লজ্জাস্থান প্রকাশ পেয়ে যায়
সেটা বোধয় তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।
আবু হুরায়রা রাঃ ভুল বলেছিলেন
এবং দূর্বল স্মৃতির মানুষ ছিলেনঃ
”আমি
অস্বীকার করলাম, আমি এমন কিছুই বলি নাই”।
(৪)
আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) … আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ (-এর অস্তিত্ব) নেই।
তিনি আরও হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
অসুস্থ উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলিকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) কাছে আনবে না।
আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ দুংটি হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন। পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর (প্রথম হাদীসের)
‘সংক্রমণ…. নেই’ বলা থেকে নীরব থাকেন এবং অসুস্থ উটপালের মালিক সুস্থ উটপালের মালিকের
কাছে আনবেনা এর বর্ণনায় দৃঢ় থাকেন।
রাবী
বলেনঃ (একদিন) হারিস ইবনু আবূ যুবাব (রহঃ), তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর চাচাত ভাই, বললেন,
হে আবূ হুরায়রা! আমি তে শুনতে পেতাম যে, আপনি এ হাদীসের সাথে আরও একটি হাদীস আমাদের
কাছে রিওয়াত করতেন যা বর্ণনায় আপনি এখন নীরব থাকছেন। আপনি বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ …… নেই। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) তা মেনে নিতে অস্বীকার
করলেন এবং বললেন, অসুস্থ পালের মালিক সুস্থপালের মালিকের কাছে নিয়ে যাবে না। তখন হারিস
(রহঃ) এ ব্যাপারে তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। ফলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাগাম্বিত হয়ে
হাবশী ভাষায় কিছু বললেন।
তিনি
হাবিস (রহঃ) কে বললেন, তুমি কি বুঝতে পেরেছো, আমি কি বলেছি? তিনি বললেন, না। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বললেন, আমি বলেছি, আমি অস্বীকার করছি। আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আমার জীবনের শপথ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) অবশ্যই আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘সংক্রমণ…. নেই’। এখন আমি জানি না যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ)
ভুলে গেলেন, নাকি একটি অপরটিকে (মানসুখ) রহিত করে দিয়েছে।
এই
হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে আবু হুরায়রা আগে নবী (সাঃ) এর নামে নিয়মিত বলতেন যে দুনিয়াতে
সঙ্ক্রামক ব্যাধী বলে কিছু নেই। কিছুদিন পরে তিনি আর এই হাদীস বর্ণনা করতেন না, বরং
সত্য হাদীস বলেছেন যে অসুস্থ রোগীকে সুস্থ লোকের কাছে নিয়ে যেতে না করেছিলেন নবী
(সাঃ)। তখন হযরত আবু সালামা অভিযোগ করলেন যে আপনি তো আগে অন্য হাদীসটিও বর্ণনা করতেন
এখন করেননা কেন? আবু হুরায়রা অস্বীকার করলেন যে তিনি এমন কিছু বলেন নাই , বরং তিনি
নাকি বলেছেন অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের কাছে নিয়ে না যেতে (সম্পূর্ন ভুল কথা, নিচে হাদীস
দেখুন)। আবু হুরায়রার এই কথা শুনে হারিথ সরাসরি অসম্মতি জানানোর কারণে আবু হুরায়রা
ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করে বললেন এই ভাষার অর্থ হচ্ছে ”আমি অস্বীকার করলাম, আমি এমন কিছুই
বলিনাই”। তখন হযরত আবু সালামা জীবনের কসম খেয়ে বলেছিলেন যে আবু হুরায়রা এই কথা বলেছেন।
এইবার
দেখি আবু হুরায়রা সত্যি এই কথা বলেছিলেন কিনা
(৫) মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও হাসান হুলওয়ানী
ও আবূ সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ,
(ক্ষুধায় পেট কামড়ানো) কীট ও পাখির (পেঁচার) কুলক্ষণ (মৃতের পেঁচার রূপ ধারনের কুসংস্কার)
এর অস্তিত্ব নেই। তখন এক বেদুঈন আরব বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! …… পূর্বোক্ত ইউনুস (রহঃ)
বর্ণিত উক্ত হাদীসের অনুরূপ।
অর্থাৎ
হযরত আবু সালামার কথাই সত্য, আবু হুরায়রা সত্যিই এই হাদীসটি বর্ণনা করতেন।
উপরের
আলোচনার ভিত্তিতে এবার নিম্ন লিখিত অনুসিদ্ধান্তে সহজেই আসা যায়ঃ
(১) হয়তো আবু হুরায়রা মিথ্যা বলেছেন
(সূত্র উপরের ৩ নং হাদীস)। তাহলে হাদীস সংগ্রহের নীতিমালার এই পোস্টের শুরুতে বর্ণিত
১ নং পয়েন্ট অনুযায়ী আবু হুরায়রা বর্ণিত সকল হাদীস বাদ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস
করি এমন একজন সাহাবী মিথ্যা বলতে পারেননা। তাই…
(২) হয়তো তিনি হাদীসটি ভুলে গিয়েছিলেন।
সেক্ষেত্রে হাদীস সংগ্রহের নীতিমালার এই পোস্টের শুরুতে বর্ণিত ২ নং পয়েন্ট অনুযায়ী
আবু হুরায়রা বর্ণিত সকল হাদীস বাদ হয়ে যায়। এখন কেউ যদি বলেন একটা মাত্র ভুলের জন্য
তো তার সকল হাদীস বাদ দিয়ে দেয়া যায়না তাহলে নিচের পয়েন্টগুলো দেখুন যে তিনি মাত্র
একটা ভুলই করেননি। এছাড়া সঙ্ক্রামক ব্যাধী বলে যে কিছু নেই এমন ভুল কথা কি নবী (সাঃ)
কোনদিন বলতে পারেন? আবু হুরায়রা ই নবী (সাঃ) এর নামে ভুল কথা বলেছেন।
(৩) উপরের ২ অনুযায়ী আবু হুরায়রা হাদীস
ভুলে গিয়ে থাকলে বলা যায় নবী (সাঃ) মিথ্যা বলেছিলেন (যেহেতু নবী (সাঃ) হাদীস মনে
থাকবে এমন কথা বলেছিলেন কিন্তু তা কাজে লাগেনি, সূত্র উপরের ১ নং হাদীস)। কিন্তু নবী
(সাঃ) মিথ্যা বলবেন এটা কোনভাবেই সম্ভব না তাই নির্দ্বিধায় এই পয়েন্ট বাদ দিয়ে দেয়া
যায়।
(৪) যেহেতু নবী (সাঃ) মিথ্যা বলেননি তাই
অবশ্যই তিনি ভুল বলেছিলেন। আর নবী (সাঃ) এর যে ভুল হওয়া সম্ভব তা কোরআন এবং হাদীস
সমর্থিত। সেক্ষেত্রে প্রমাণ হয়ে যায় যে আবু হুরায়রা নিয়মিত ভাবেই হাদীস ভুলে যেতেন
(আবু হুরায়রা’র নিয়মিত হাদীস ভুলে যাবার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এবং নবী (সাঃ)
এর সেই ভুল মিরাকল ভুলোমনা আবু হুরায়রা’র অবস্থার উন্নতি করতে পারেনি অনুযায়ী)।
অতএব
আমাদের যত খারাপই লাগুক না কেন আবু হুরায়রা কে হয় মিথ্যাবাদী অথবা ভুলোমনা এই দুটোর
অন্তত একটা স্বীকার করে নিতে হবেই, নাহলে বলতে হবে বুখারী আর মুসলিম শরীফের হাদীস মোটেই
নির্ভরযোগ্য নয়। তাই অত্যন্ত প্রিয় হলেও আবু হুরায়রা’র বর্ণিত হাদীস ইমাম বুখারী
এবং ইমাম মুসলিম অনুসৃত নিয়ম অনুযায়ী মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়না।
এবার
চলুন দেখি ভুলোমনা স্বভাবের আবু হুরায়রা আর কি কি সন্দেহজনক হাদীস প্রচার করেছেন।
আমি মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করছি। এমন আরও বহু সংখ্যক হাদীস আছে যাতে প্রমাণীত হয় আবু
হুরায়রা ভুল বলেছেন।
এক হাদিসে দু’কথা
(১) আসরের পর কাযা বা অনুরূপ কোন সালাত
আদায় করা। কুরাইব (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসরের পর দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন এবং বললেন, আবদুল কায়স গোত্রের
লোকেরা আমাকে যুহরের পরবর্তী দু’রাকআত সালাত আদায় থেকে ব্যাস্ত রেখেছিল।
(২) মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন অবস্থাতেই ছাড়তেন না। তা হল ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর
আগের দু’রাকাআত ও আসরের পরের দু’রাকাআত।
আমরা
দেখলাম হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন যে নবী (সাঃ) আসরের পর দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। এবার
এটা দেখুনঃ
মুহাম্মদ
ইবনু সালাম (রহঃ)…… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর
সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
আবু
হুরায়রা বললেন যে আসরের পর নামাজ পড়তে নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন।
সুলাইমান (আঃ) কে যে কিভাবে
অপমান করলেন আবু হুরায়রাঃ-
একই
ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সংখ্যাতে তালগোল পাকিয়েছেন আবু হুরায়রা। সুলাইমান(আঃ) কে
যে কিভাবে অপমান করলেন আবু হুরায়রাঃ
(১) মুআল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ)…আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সুলায়মানের ষাটজন স্ত্রী ছিল। একদা সুলায়মান
(আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আজ বাতে আমার সব স্ত্রীর কাছে যাব। যার ফলে স্ত্রীরা সবাই গর্ভবতী
হয়ে এক একজন সন্তান প্রসব করবে, যারা অশ্বারোহী অবস্থায় আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। অতএব
সুলায়মান (রাঃ) তাঁর সব স্ত্রীর কাছে গেলেন, তবে তাদের থেকে একজন স্ত্রী ছাড়া আর কেউ
গর্ভবতী হলো না। সেও প্রসব করলো একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) ইনশা আল্লাহ বলতেন, তাহলে স্ত্রীরা
সবাই গর্ভবতী হয়ে যেতো এবং প্রসব করতো এমন সন্তান যারা অশ্বারোহী অবস্থায় আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করত।
(২) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) …… আবূ হুরাইরাহ
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুলাইমান ইবনু দাউদ (আঃ) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি
আজ রাতে সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাব। এতে তাদের প্রত্যকেই এমন সব সন্তান জন্ম দেবে যারা
আল্লাহর পথে লড়াই করবে। তখন তাকে বলা হলো যে, আপনি ইনশা আল্লাহ’ বলুন। কিন্তু তিনি
(ভুলক্রমে) তা বলেননি। অতঃপর তিনি সকল স্ত্রীর কাছে গমন করলেন। তাতে কোন স্ত্রী গর্ভবতী
হলেন না, একজন স্ত্রীর একটি অর্ধ মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) সন্তান প্রসব করা ব্যতীত।
রাবী বলেন যে, এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তিনি
তখন ইনশা-আল্লাহ’ বলতেন, তবে তিনি শপথ ভঙ্গকারী হতেন না। আর উদ্দেশ্য পূরণে তিনি সফলতা
পেতেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৪২, ইসলামিক সেন্টার ৪১৪১)
(৩) আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) একদা বলেছিলেন যে, অবশ্যই
আজ রাতে আমি নব্বইজন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব। তারা প্রত্যেকেই পুত্র সন্তান প্রসব করবে
যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তার সাথী (রাবী সুফিয়ান সাথী দ্বারা ফেরেশতা
বুঝিয়েছেন) বলল, আপনি ইনশাআল্লাহ বলুন। কিন্তু তিনি তা ভুলে গেলেন এবং সকল স্ত্রীর
সাথে মিলিত হলেন। তবে একজন ব্যতীত অন্য কোন স্ত্রীর গর্ভ থেকেই কোন সন্তান পয়দা হল
না; তাও ছিল অপূর্ণাঙ্গ।
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তিনি কসমের মাঝে যদি ইনশাআল্লাহ বলতেন তাহলে তার কসময় ভঙ্গ হত না আবার উদ্দেশ্যও
সাধিত হত। একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) এরূপ বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি যদি “ইস্তিসনা” করতেন (অর্থাৎ ইনশাআল্লাহ বলতেন)। আবূ
যিনাদ আরাজের মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
(৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, দাউদ আঃ)-এর পুত্র সুলায়মান আঃ) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আজ রাতে আমি আমার একশ’
স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব এবং তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পুত্র সন্তান প্রসব করবে, যারা
আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এ কথা শুনে একজন ফিরিশিতা বলেছিলেন, আপনি ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলুন;
কিন্তু তিনি এ কথা ভুলক্রমে বলেননি। এরপর তিনি তার স্ত্রীগণের সঙ্গে মিলিত হলেন; কিন্তু
তাদের কেউ কোন সন্তান প্রসব করল না। কেবল এক স্ত্রী একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করল।
নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, যদি সুলায়মান আঃ) ‘ইন্শাআল্লাহ্’ বলতেন, তাহলে
তাঁর শপথ ভঙ্গ হত না। আর তাতেই ভালভাবে তার আশা মিটত। আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৪৮৫৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৪৮৬২)।
আবু হুরায়রার কল্প বিলাসী
মনঃ কথা বলা গরু আর নেকড়েঃ
(১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত শেষে লোকজনের দিকে ঘুরে
বসলেন এবং বললেন, একদা এক লোক একটি গরু হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে এটির পিঠে চড়ে
বসলো এবং ওকে প্রহার করতে লাগল। তখন গরুটি বলল, আমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমাদেরকে
চাষাবাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এতদশ্রবণে লোকজন বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ্! গরুও কথা
বলে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আবূ বাকর ও ‘উমার তা বিশ্বাস
করি। অথচ তখন তাঁরা উভয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আর এক রাখাল একদিন তার ছাগল পালের
মাঝে অবস্থান করছিল, এমন সময় একটি চিতা বাঘ পালে ঢুকে একটি ছাগল নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের
পিছনে ধাওয়া করে ছাগলটি উদ্ধার করে নিল। তখন বাঘটি বলল, তুমি ছাগলটি আমার থেকে কেড়ে
নিলে বটে তবে ঐদিন কে ছাগলকে রক্ষা করবে যেদিন হিংস্র জন্তু ওদের আক্রমণ করবে এবং আমি
ব্যতীত তাদের অন্য কোন রাখাল থাকবে না। লোকেরা বলল, সুবহানাল্লাহ! চিতা বাঘ কথা বলে!
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আবূ বাকর ও ‘উমার তা বিশ্বাস করি
অথচ তাঁরা উভয়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত।….আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। (২৩২৪)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২২২)
এইখানে
নবী (সাঃ) এর ভাবখানা এমন যে লোকে যখন বিশ্বাস করতে চাইছে না তখন নবী (সাঃ) বলছেন উমর/হযরত
আবু বকর থাকলে তারা বিশ্বাস করত। খুব স্বাভাবিক যুক্তিতেই বুঝা যায় নবী (সাঃ) এই কথা
আসলে কোনদিনই বলেননি। বরং লোকে আবু হুরায়রা’র কথা বিশ্বাস করবেনা বলে আবু হুরায়রা
নিজেই নবী (সাঃ) এর সাথে উমর/ আবু বকরের নাম জুড়িয়েছেন। আচ্ছা পাঠক,আমাদের ইসলাম
পালনের সাথে এই হাদীসের কি সম্পর্ক? ইমাম বুখারী কেন এইসব আজেবাজে অদরকারী হাদীস দিয়ে
বই ভর্তি করেছিলেন?
অবিশ্বাস্য/অকল্পনীয়/আজগুবী/রহস্যময়
ইত্যাদি ঘটনা বর্ণনা করতে আবু হুরায়রা খুবই পছন্দ করতেন তা তার বর্ণিত বহু হাদীস দেখলেই
বুঝা যায়।
আবু হুরায়রার স্মৃতি বিভ্রাটঃ
Abu-Hassan
reports that two people came to Aishah and said to her that Abu Hurayrah
narrates that the Prophet used to say that bad luck is to be found only in
women, horses and houses. At this Aishah replied: By the God who revealed the
Qur’an to the Prophet ! The Prophet never said this; what he did say was that
the People of the Jahilliyyah hold this opinion. Musnad of Ahmad ibn Hanbal,
6/246।
দেখুন
আবু হুরায়রা নবী (সাঃ) এর নাম দিয়ে বলেছেন যে নারীরা অপয়া। এই কথা শুনে হযরত আয়েশা
বলেছেন যে আবু হুরায়রা ভুল বলেছেন। নবী (সাঃ) এই কথা বলেননি বরং নবী (সাঃ) বলেছিলেন
বহু আগের যুগের মানুষের ভুল ধারণা। আবু হুরায়রা কে বাঁচানোর জন্য বা তার স্মৃতি দূর্বল
এই কথা অস্বীকার করার জন্য সনদে দূর্বল একটি হাদীস উল্লেখ করে বলা হয় যে আবু হুরায়রা
নবী (সাঃ) এরপুরো কথাটি শুনেননি। সেক্ষেত্রে তো আবু হুরায়রা আরও বড় ভুল করেছেন। সম্পূর্ণ
কথা না শুনেই তিনি এমন আরও কত হাদীস ছড়িয়েছেন তা কে বলে দিবে?
আবু হুরায়রা কি এত দ্রুত
ভুলে যেতেন?
(১) আবূ
হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম সদকা হলো যা দান করার পরে মানুষ অমুখাপেক্ষী থাকে।
উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদের আগে
দাও। কেননা) স্ত্রী বলবে, হয় আমাকে খাবার দাও, নইলে তালাক দাও। গোলাম বলবে, খাবার দাও
এবং কাজ করাও। ছেলে বলবে, আমাকে খাবার দাও, আমাকে তুমি কার কাছে ছেড়ে যাচ্ছ? লোকেরা
জিজ্ঞেস করলঃ হে আবূ হুরাইরা! আপনি কি এ হাদীস রাসূলুল্লাহ থেকে শুনেছেন? তিনি উত্তরে
বললেন, এটি আবূ হুরাইরাহর থলে থেকে পাওয়া নয় বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে)। [১৪২৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫১)।
লক্ষ
করুন আবু হুরায়রা প্রথমে দাবী করেছেন যে নবী (সাঃ) এটা বলেছেন। পরে স্বীকার করেছেন
যে এটা তার নিজের কথা। নবী (সাঃ) এর নামে এইভাবে ভুল কথা বলার পরেও তার কথায় নির্ভর
করা যায় কোন যুক্তিতে? এই হাদীসের দূর্বলতা ঢাকতে হাদীসের পক্ষের লোকজন বলেন যে –
এই হাদিসে হযরত আবু হুরাইরার গোটা ন্যারেশন ডাবল ইনভার্টেড কমার ভেতরে রাখা, এবং রাসুল
সা.-এর বক্তব্যটা সিঙ্গেল ইনভার্টেড কমার ভিতরে। তাই নবী (সাঃ) এর বক্তব্য শেষ হবার
পর অর্থাৎ সিঙ্গেল ইনভার্টেড কমা শেষ হবার পর যেটুকু থাকে সেটাই হযরত আবু হুরাইরার
নিজের বক্তব্য।
কিন্তু
এটা যে কত ভুল যুক্তি তা পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন। কারণ ইনভার্টেড কমার ভেতর নবী (সাঃ)
এরবক্তব্য আছে, ওয়াইফের বক্তব্য আছে, স্লেভ এর বক্তব্য আছে আর সানের বক্তব্য আছে।
আবু হুরায়রায় নিজের বক্তব্য একেবারেই নাই। পিপল যেখানে পরিষ্কার শুনল যে ওয়াইফ আর
সানের বক্তব্য বলা হয়েছে সেখানে এই অংশটা নবী (সাঃ) এরবক্তব্য কিনা জিজ্ঞেস করাটা
অবান্তর। বরং নবী (সাঃ) এরনামে যেটা বলা হয়েছে সেটাই পিপল জিজ্ঞেস করেছে। আর স্বাভাবিক
ভাবে চিন্তা করে দেখেন কোন দাসী/স্ত্রী/সন্তান এর কোটেশন দেয়া বক্তব্য কোনক্রমেই আবু
হুরায়রার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারেনা।
খুবই আজব এক হাদীস-এইখানে
শয়তানের আচরণ কোরানের বর্ণনার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিকঃ
(১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানের যাকাত হিফাযত করার
দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে আঞ্জলা ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল।
আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্ত,
আমার যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে
দিলাম। যখন সকাল হলো, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
হে আবূ হুরাইরা, তোমার রাতের বন্দী কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র
অভাব ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। ‘সে আবার আসবে’
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম
যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্র সামগ্রী
নিতে লাগল। আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং
আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং
আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরাইরাহ! তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!
সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি
তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, খবরদার সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে।
তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী
নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব। এ হলো তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেকবার
বল যে, আর আসবে না, কিন্তু আবার আস। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা
শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি
রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী {اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ} আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহর
তরফ হতে তোমার জন্যে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে
পারবে না। কাজেই তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে বললেন, গত রাতের তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে আমাকে
বলল যে, সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই
আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, এই বাক্যগুলো কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলল,
যখন তুমি তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী { اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ } প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে
এবং সে আমাকে বলল, এতে আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর
পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের জন্য বিশেষ লালায়িত
ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য
বলেছে। কিন্তু হুশিয়ার, সে মিথ্যুক। হে আবূ হুরাইরাহ! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি
কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান।
(৩২৭৫, ৫০১০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ কিতাবুল ওয়াকালাহ অনুচ্ছেদ-১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
অনুচ্ছেদ ১৪৩৮)।
এই হাদীসের সমস্যাগুলো খেয়াল
করুনঃ
(১) হযরত আবু আবু হুরায়রা নবী (সাঃ) এরকথা
হয় বিশ্বাস করতেননা, না হয় মনে রাখতেন না,অথবা সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন না। যেখানে
নবী (সাঃ) দুই দুই বার সতর্ক করে দিয়েছেন যে সেই লোক মিথ্যাবাদী সেখানে আবু হুরায়রা
বারবার নবী (সাঃ) এরকথায় গুরুত্ব না দিয়ে সেই মিথ্যাবাদীর কথা বিশ্বাস করে তাকে ছেড়ে
দিয়েছেন! এর মানে এও দাঁড়ায় যে আবু হুরায়রা শয়তানের প্ররোচনায় খুব সহজেই ঘায়েল
হয় স্বয়ং নবী (সাঃ) এরসান্নিধ্যেও তা রোধ হয়না। নবী (সাঃ) এরমৃত্যুর পর আবু হুরায়রা
যে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে হাদীস বর্ণনা করেননি তার গ্যারান্টি দিতে পারবেন কি?
(২) শয়তানের উদ্দেশ্য এইখানে বুঝা গেলনা।
যেখানে শয়তানের উদ্দেশ্য হল মানুষকে বিপথে পরিচালনা করা সেইখানে শয়তান সামান্য সদকা
চুরি করতে এসেছিল! তাও একবার নয় পরপর তিন রাত। সেই চুরির মাল দিয়ে শয়তান কি করবে
তাও এক বিরাট প্রশ্ন! আচ্ছা নাহয় চুরি করলই, তারপর শয়তান এমন পন্থা শিখিয়ে দিল যাতে
করে শয়তান নিজের পথ রুদ্ধ করে দিল। শয়তান এখন নিজের মাথা চাপড়াচ্ছে নিশ্চই যে আবু
হুরায়রা হাদীসের মাধ্যমে সকল মুসলিমকে এই উপায় শিখিয়ে দিয়ে শয়তানের মহা সর্বনাশ
করেছে। শয়তান খামাখা এত সময় নষ্টই বা করল কেন আর নিজের ক্ষতিই বা করল কেন তার কোন
জবাব নাই।
(৩) যদিও কোরান দাবী করে যে নবী (সাঃ) ভবিষ্যত
জানে না, কিন্তু এইখানে নবী (সাঃ) বলে দিয়েছেন যে প্রিজনার আবার আসবে। আপনি হয়তো
দাবী করবেন এটা ভবিষ্যতবানী নয় বরং অনুমান। কিন্তু সম্পূর্ণ হাদীস পড়লে এটা অনুমান
মনে করার কোন কারণ নেই, কারণ এটা যে শয়তান সেটা নবী (সাঃ) শুরুতেই জানতেন। এছাড়া
আবু হুরায়রা কিছু বলার আগেই নবী (সাঃ) প্রিজনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। আবু হুরায়রা
এতে বিন্দুমাত্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেনাই যে নবী (সাঃ) কিভাবে প্রিজনারের কথা জানলেন।
(৪) নবী (সাঃ) শয়তানের কথা জেনেও আগেই
কেন আবু হুরায়রা কে সাবধান করে দিলেননা? যে খাবারগুলো শয়তান নিয়ে গেল তার দায় দায়িত্ব
কে নিবে? পাহারাদার হিসেবে আবু হুরায়রার ব্যর্থতার জন্য তখনই তাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ
করে দেয়াটাই স্বাভাবিক ছিলনা? নাকি কিভাবে শয়তানের দাগা থেকে মুক্ত থাকা যায় সেটা
শুনার জন্য নবী (সাঃ) অপেক্ষায় ছিলেন? সেক্ষেত্রে এই উপায় নবী (সাঃ) শয়তানের কাছ
থেকে না জেনে আল্লাহর কাছ থেকে জানতে চাইতে পারতেননা?
(৫) আল্লাহর নামে শপথ করেও আবু হুরায়রা
শপথ ভংগ করেছেন।
(৬)
নবী (সাঃ) আবু হুরায়রাকে বিশ্বাস করে রমজানের যাকাত পাহাড়া দিতে বলেছিলেন, কিন্তু
নিজের মাল না হওয়া সত্বেও বিনা অনুমতিতে তা বিলিয়ে দিয়ে সেই বিশ্বাস ভংগ করেছেন
আবু হুরায়রা।
কি
আজব!!! আমরা এতটাই অন্ধ!! ছোটবেলায় এক সময় এই হাদীস পড়ে আমার মনে একটি প্রশ্নও জাগে
নাই!! হাদীস কিভাবে আমাদের মাথা দখল করে কোরানকে ভুলিয়ে রেখেছে তা আমরা নিজেরাও বুঝতে
পারিনা!
মুসা নবী (সাঃ)কে নগ্ন করিয়ে
ছেড়েছেনঃ
(১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা (আঃ) অত্যন্ত লজ্জাশীল
ছিলেন, সব সময় শরীর ঢেকে রাখতেন। তাঁর দেহের কোন অংশ খোলা দেখা যেত না, তা থেকে তিনি
লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাঈলের কিছু লোক তাঁকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে
এত অধিক ঢেকে রাখেন, তার একমাত্র কারণ হলো, তাঁর শরীরে কোন দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ
অথবা একশিরা বা অন্য কোন রোগ আছে। আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলেন মূসা (আঃ) সম্পর্কে তারা
যে অপবাদ ছড়িয়েছে তা হতে তাঁকে মুক্ত করবেন। অতঃপর একদিন নিরালায় গিয়ে তিনি একাকী হলেন
এবং তাঁর পরণের কাপড় খুলে একটি পাথরের ওপর রাখলেন, অতঃপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যেমনই
তিনি কাপড় নেয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তাঁর কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। অতঃপর মূসা
(আঃ) তাঁর লাঠিটি হাতে নিয়ে পাথরটির পেছনে পেছনে ছুটলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড়
হে পাথর! হে পাথর! শেষে পাথরটি বনী ইসরাঈলের একটি জন সমাবেশে গিয়ে পৌঁছল। তখন তারা
মূসা (আঃ)-কে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখল যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্যে
ভরপুর এবং তারা তাঁকে যে অপবাদ দিয়েছিল সে সব দোষ হতে তিনি পুরোপুরি মুক্ত। আর পাথরটি
থামল, তখন মূসা (আঃ) তাঁর কাপড় নিয়ে পরলেন এবং তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে জোরে
জোরে আঘাত করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার, কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ
পড়ে গেল। আর এটিই হলো আল্লাহর এ বাণীর মর্মঃ ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা
মূসা (আঃ)-কে কষ্ট দিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা হতে যা তারা
রটিয়েছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর নিকট মর্যাদার অধিকারী।’’ (আল-আহযাবঃ ৬৯) (২৭৮) (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩১৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৬২)।
পাঠক খেয়াল করুনঃ
(১) লাজুক হযরত মুসাকে আল্লাহ এইভাবে হেনস্তা
করতে পারলেন? লজ্জা, নম্রতা, মোডেস্ট আচরণ, আশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা এই সকল আদেশ করাই
আল্লাহর সুন্নত,আর আল্লাহর সুন্নতে কখনো পরিবর্তন হয়না। এই হাদীস অনুযায়ী কি আমরা
আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ( কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক) ধারণা পাচ্ছিনা?
(২) কোরানের যেই আয়াতের ব্যাখ্যা হিসেবে
আবু হুরায়রা এই হাদীস বলেছিলেন সেই আয়াতটা দেখুনঃ “O you who believe! Be you
not like those who annoyed Moses, But Allah proved his innocence of that which
they alleged, and he was honorable In Allah’s Sight.” (33.69)
‘‘হে
মুমিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা মূসা (আঃ)-কে কষ্ট দিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁকে
নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা হতে যা তারা রটিয়েছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর নিকট মর্যাদার
অধিকারী।’’ (আল-আহযাবঃ ৬৯)
এবার
আপনিই বলুনঃ হযরত মুসা নবী কে নগ্ন করে জনপদের সামনে দৌড়িয়ে তার দেহসুষ্ঠব দেখিয়ে
কিভাবে হযরত মুসার সরলতা প্রমাণ করা হল? পাঠক নিজের মাথাটা কি একটুও খাটাবেন না? আর
কারো শরীরে খুঁত থাকলে সেটা তার দোষ না যে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করা লাগবে। আল্লাহ যেখানে
এই আয়াতেই বলেছেন যে আল্লাহর দৃষ্টিতে মুসা সম্মানিত,সেখানে মুসাকে নগ্ন করিয়ে কিভাবে
মুসার সম্মান রক্ষা করলেন সেটা আমি বুঝতে পারিনাই।
(৩) এই ঘটনা সত্যি ঘটে থাকলে ইহুদীরা বলত
হে মুসা তুমি কিসের নবী (সাঃ)? সামান্য পাথর তোমাকে মানেনা, আর আমরা মানব? তাই আল্লাহ
কখনো এমন ঘটনা ঘটাতেন না।
(৪) কোরানের
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা স্বয়ং কোরানই দিয়েছে। সেই ব্যাখ্যার জন্য মিথ্যা হাদীসের
দারস্থ হবার কোন প্রয়োজন নেই। কোরানের (৭/১২৯, ২/৬১, ৭/১৩৮, ২/৫৫, ৫/২৪, ৬১/৫, ৫/২৫)
আয়াতগুলো পরিষ্কার ভাবে ৩৩/৬৯ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করে। নিজেই যাচাই করে নিন।
আবু হুরায়রা’ (রাঃ)-র অন্যায়
আচরণঃ
(১) আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি পেট ভরার জন্য যা পেতাম
তাতে সন্তুষ্ট হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সব সময় লেগে থাকতাম।
সে সময় রুটি খেতে পেতাম না, রেশমী কাপড় পরতাম না, কোন চাকর-চাকরাণীও আমার খিদমতে ছিল
না। আমি পাথরের সঙ্গে পেট লাগিয়ে রাখতাম। আয়াত জানা সত্ত্বেও কাউকে তা পাঠ করার জন্য
বলতাম, যাতে সে আমাকে ঘরে নিয়ে যায় এবং আহার করায়। মিসকীনদের প্রতি অত্যন্ত দরদী ব্যক্তি
ছিলেন জা‘ফর ইবনু আবূ তালিব। তিনি আমাদের নিয়ে যেতেন এবং ঘরে যা থাকত তাই আমাদের খাওয়াতেন।
এমনকি তিনি আমাদের কাছে ঘি’র পাত্রটিও বের করে আনতেন, যাতে ঘি থাকত না। আমরা ওটাই ফেড়ে
ফেলতাম আর যা থাকত তাই চাটতাম। [৩৭০৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫০২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯২৫)
আলোচ্য অংশটুকুঃ
I
used to accompany Allah’s Apostle to fill my stomach……..
I
used to …. ask somebody to recite a Quranic Verse for me though I knew it, so
that he might take me to his house and feed me.
আবু
হুরায়রা নিজেই বলছেন যে তিনি রাসুলের সাথে থাকতেন উদর পূর্তির আশায়। এছাড়া কোরানের
আয়াত জানা থাকার পরেও তিনি অন্য লোকের কাছে তা জানতে চাইতেন এই আশায় যে সেই লোক আবু
হুরায়রাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়াবে। এইখানে লক্ষনীয় বিষয় এটাই যে আবু হুরায়রা
সরাসরি কাউকে বলতেন না যে আমি ক্ষুধার্ত আমাকে খেতে দিন। বরং তিনি এই মিথ্যা অভিনয়
করতেন যে তিনি কোরানের আয়াত শিখতে বড়ই আগ্রহী তাই সেটা শিখার জন্যই বাড়িতে যেতে
আগ্রহী, অন্য উদ্দেশ্যে নয়। আবু হুরায়রার অসততা বুঝতে এর বেশী কিছু লাগে না।
আবু
হুরায়রা বড়ই ক্ষুধার্ত ছিলেন, পেটে পাথর বাঁধতে হত। এই রকম একটা ক্ষুধার্ত লোককে
অতি অবশ্যই সাহাবাগণ নিজের জীবন দিয়ে হলেও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবেন তা স্বাভাবিক
চিন্তাতেই বুঝা যায়। স্বয়ং কোরানেই বহুবার নির্দেশ দেয়া আছেপ্রতিবেশী/ এতীম/ মিসকিন/
ক্ষুধার্তকে খাবার না দিয়ে নামাজ পড়লে তা কবুল হবেনা। সুরা মাউন দেখে নিতে পারেন।
তো সাহাবারা কি কোরানের নির্দেশ জানতেন না?
যাই
হোক হযরত উমরের সাথে এই রকম করতে গিয়ে একদিন আবু হুরায়রা লাভবান হতে পারেন নাই। নিচের
হাদীস দেখুনঃ
(১) ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ)…আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার
তার ইন্তেকাল অবধি একাধারে তিন দিন আহার করে পরিতৃপ্ত হন নি।
আরেকটি
বর্ণনায় আবূ হাযিম আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, একদা আমি প্রচণ্ড
ক্ষুধার যন্ত্রনায় আক্রান্ত হই। তখন উমর ইবনু খাত্তারের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং মহান
আল্লাহ (কুরআনের) একটি আয়াতের পাঠ তার থেকে শুনতে চাইলাম। তিনি আয়াতটি পাঠ করে নিজ
গৃহে প্রবেশ করলেন। এদিকে আমি কিছু দূর চলার পর ক্ষুধার যন্ত্রনায় উপুড় হয়ে পড়ে গেলাম।
একটু পরে দেখি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথার কাছে দাঁড়ানো।
তিনি বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা। আমি লাব্বাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ ওয়া সাদায়কা (আমি হাযীর!
ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার সমীপে) বলে সাড়া দিলাম। তিনি আমার হাত ধরে তুললেন এবং আমার
অবস্থা বুঝতে পারলেন।
তিনি
আমাকে খেতে নিয়ে গেলেন এবং আমাকে এক পেয়ালা দুধ দেওয়ার জন্য আদেশ করলেন। আমি কিছু পান
করলাম। তিনি বললেনঃ আবূ হুরায়রা! আরো পান কর। আবার পান করলাম। তিনি পুনবায় বললেনঃ
আরো। আমি পূনর্বার পান করলাম। এমনি কি আমার পেট তীরের মত সমান হয়ে গেল। এরপর আমি উমরের
সাথে সাক্ষাৎ করে আমার অবস্থার কথা তাকে জানালাম এবং বললামঃ হে উমর! আল্লাহ তাআলা এমন
একজন লোকের মাধ্যমে এর বন্দোবস্ত করেছেন যিনি এ ব্যাপারে তোমার চেয়ে বেশী উপযুক্ত।
আল্লাহর কসম! আমি তোমার কাছে আয়াতটির, পাঠ শুনতে চেয়েছি অথচ আমি তোমার চেয়ে তা ভাল
পাঠ করতে পারি। উমর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাকে আপ্যায়ন করা আমার নিকট লাল বর্ণের
উটের চেয়েও অধিক প্রিয়।
আলোচ্য অংশটুকুঃ
Afterwards
I met ‘Umar and mentioned to him what had happened to me, and said to him,
“Somebody, who had more right than you, O ‘Umar, took over the case. By Allah,
I asked you to recite a Verse to me while I knew it better than you.”
On
that Umar said to me, “By Allah, if I admitted and entertained you, it would
have been dearer to me than having nice red camels.
আবু
হুরায়রা দাবী করছেন যে তিনি হযরত উমরের চাইতেও তিনি কোরানের আয়াতটি বেশি বুঝতেন।
আমার খুব অদ্ভুত লাগছে তিনি কেন সরাসরি বলতে পারলেননা যে তিনি ক্ষুধার্ত। আপনারা যুক্তি
দেখাতে পারেন যে আত্মসম্মান বোধের কারণে তিনি বলেননি। কিন্তু তিনি একজন মিসকিন, থাকার
ঘরটা পর্যন্ত নেই সেই লোক আত্মসম্মানের কারণে মিথ্যা ভান করলে সেটাতো আরও বড় অপরাধ।
কোরানের আয়াত জানা থাকার পরেও না জানার ভান করে খাওয়ার ব্যাবস্থা করা মিথ্যারই নামান্তর।
আর হযরত উমর কি বললেন!! আবু হুরায়রা কে বাসার ভিতর ঢুকিয়ে উপভোগ করালে সেটা নাকি
হযরত উমরের কাছে একটা উট পাওয়ার চাইতেও বেশী পছন্দনীয় ব্যাপার হত!! এত পছন্দের একটা
জিনিস একেবারে হাতের কাছে পেয়েও হযরত উমর পায়ে ঠেলে দিলেন? এত ক্ষুধার্ত একজন মানুষ
যে ফেইন্ট হয়ে যায় তাকে দেখলেই তো হযরত উমরের বুঝা উচিৎ ছিল যে তাকে খাওয়ানো উচিত।
এই হাদীস বিশ্বাস করলে তো দেখা যাচ্ছে হযরত উমর নিজের পছন্দের ব্যাপারে পরিষ্কার মিথ্যা
কথা বলেছেন।
আবু হুরায়রা’র আরেকটি সন্দেহজনক
হাদীসঃ
(১) আমর আন-নাকিদ (রহঃ) … আবূ কাসীর থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যেন, আমি আমার মাকে ইসলামের প্রতি
আহবান জানাতাম, তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। একদিন আমি তাকে ইসলাম কবুলের জন্য আহবান জানালাম।
তখন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আমাকে এমন এক কথা শোনালেন
যা আমার কাছে খুবই অপ্রিয় ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত
দিয়ে আসছিলাম। আর তিনি অস্বীকার করে আসছিলেন। এরপর আমি তাকে আজ দাওয়াত দেওয়াতে তিনি
আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শোনালেন, যা আমি পছন্দ করি না। সুতরাং আপনি আল্লাহ্র
কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেন।
তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে আল্লাহ্! আবূ হুরায়রার মাকে
হিদায়াত দান কর”। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর কারনে আমি খুশি মনে
বেরিয়ে এলাম। যখন আমি (ঘরের) দরজায় পৌঁছলাম তখন তা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার
পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! একটু দাড়াও (থাম)। তখন আমি পানির
কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং গায়ে চাঁদর পরলেন।
আর তড়িঘড়ি করে দোপাট্টা ও ওড়না জড়িয়ে নিলেন, এরপর ঘরের দরজা খুলে দিলেন।
এরপর
বললেন, “হে আবূ হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যাতিত কোন ইলাহ নেই, আমি
আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল”।
তিনি বলেন, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে রওনা হলাম।
এরপর তাঁর কাছে গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ!
সুসংবাদ গ্রহন করুন। আল্লাহ্ আপনার দু’আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরায়রার মাকে হিদায়াত
দান করেছেন। তখন তিনি আল্লাহ্র শুক্র আদায় করলেন ও তাঁর প্রশংসা করলেন এবং ভাল ভাল
(কথা) বললেন।
তিনি
বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহ্র কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে
এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের কাছে প্রিয় করেন এবং তাদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল
করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ “হে আল্লাহ্! তোমার এই বান্দা (আবূ হুরায়রা) কে এবং তাঁর মাকে মুমিন বান্দাদের
কাছে প্রিয়ভাজন করে দাও এবং তাদের কাছেও মুমিন বান্দাদের প্রিয় করে দাও”। এরপর এমন
কোন মুমিন বান্দা সৃষ্টি হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে অথবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালোবাসেনি।
(১) আবু হুরায়রার মা এতই বিধর্মী যে নবী
(সাঃ) কে গালি দিতে ছাড়েন না,অথচ মাতৃভূমি ইয়েমেন ছেড়ে কপর্দকহীন আবু হুরায়রার
সাথে নবী (সাঃ) এরএলাকায় থাকতে চলে এলেন যেখানে আবু হুরায়রায় নিজেরই খাবার জুটেনা,
বারবার মাথা ঘুরে পড়ে যায়? মাতৃভূমিতে অন্য সকল অবিশ্বাসীদের সাথেই থাকার কথা ছিলনা?
(২) কপর্দকহীন আবু হুরায়রা যেখানে দাবী
করেন তার কোন সহায় সম্বল ছিলনা, সুফফা তে তিনি মসজিদে থাকতেন রাত দিন, সেখানে আবু
হুরায়রার এই হাদীসে বর্ণিত ঘরটি কোত্থেকে আসল? মুয়াবিয়ার আমলে হাদীস বর্ণনার সময়
অবস্থাসম্পন্ন আবু হুরায়রা কি ভুলে গিয়েছিলেন তার মক্কার শুরুর জীবনের দূরবস্থা?
(৩) নবী (সাঃ) এত দোয়া করে নিজ চাচা হযরত
আবু তালিবকে মুসলিম বানাতে পারলেননা, হামজা এবং দুই একজন ছাড়া আর সকল আত্মীয়ই নবী
(সাঃ) এরদোয়া সত্বেও ঈমান আনতে পারলেননা আর আবু হুরায়রার মার ঈমান চলে এল?
(৪) এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা আবু হুরায়রা
ছাড়া আর কেউ জানলনা? এই ঘটনা সত্য হলে সকলের মুখে মুখে শুনা যেত, নবী (সাঃ) এরমাজেজার
এক গ্রেট সাইন হত এটা। অথচ কেউ আবু হুরায়রার মা সম্পর্কে একবিন্দু তথ্য জানেনা, ইতিহাস
ঘেঁটে দেখুন। শুধু হযরত উমরের একটা কথায় আবু হুরায়রার মায়ের নামটা জানা যায়।
(৫) মুসলিম হয়েই আবু হুরায়রার মা ছেলের
সামনেও পর্দা করা শুরু করে দিলেন? তিনি ওযুর কথা পর্দার কথা হঠাৎ করে জেনে গেলেন?
(৬) এই হাদীসের শেষ লাইনটি সম্পূর্ণ মিথ্যাঃ
no believer was ever born who heard of me and who saw me but did not love me.
আবু
হুরায়রা বর্ণিত হাদীসেই আমরা দেখেছি পিপল অব ইরাক যারা বিশ্বাসী ছিলেন তারা আবু হুরায়রাকে
মিথ্যাবাদী বলতেন।
ইবনে
সাদ এর তাবাকাত এ দেখি আবু হুরায়রা নিজেই বর্ণনা করেছেনঃ উমর আবু হুরায়রাকে বলছেন
“O you, enemy of God and His Book! You stole God’s money, didn’t you? How else
could you be in possession of ten thousand dinars?”
হযরত
উমর এর মত খলিফা বিনা প্রমাণে একজনকে আল্লাহর শত্রু বলে দিতেন না। হযরত উমর তার নিজের
পুত্রের প্রতি কি আচরণ করেছিলেন তা দেখলেই জেনে যাবেন তিনি এই ধরনের লোক নন। সহিহ বুখারী
আর মুসলিমের হাদীসেও আমরা দেখেছি আবু হুরায়রা যখন কালেমা শাহাদা এর কথা বলেছিলেন হযরত
উমর আবু হুরায়রা কে বুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে গলায় পা দিয়েছিলেন। যদিও হযরত
আবু হুরায়রা (রাঃ)’র দাবী অনুযায়ী হযরত উমর পরে আবু হুরায়রা’র কথা বিশ্বাস করেছিলেন
নবী (সাঃ) এর জুতা দেখে।
(২) আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ)…আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক বান্দা গুনাহ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক!
আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং
সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও
করেন। এ কথা বলার পর সে পুনরায় গুনাহ করল এবং বলল, হে আমার মনিব! আমার গুনাহ মাফ করে
দাও। এরপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার এক বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন
প্রতিপালক আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন।
তারপর
সে আবারও গুনাহ করে বলল, হে আমার রব! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। একথা শুনে আল্লাহ তাআলা
আবারও বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন মালিক আছে, যিনি বান্দার
গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা!
এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর। আমি তোমার গুনাহ মাফে করে দিয়েছি। বর্ননাকারী আবদুল আ’লা
বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর” কথাটি (আল্লাহ তাআলা) তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের
পর বলেছেন, তা আমি জানি না।
যত
খুশি পাপ করুন, শুধু একবার বললেই হবে যে আল্লাহ ক্ষমা করে দিও। এক সময় আল্লাহ বিরক্ত
(!!) হয়ে বলে দিবেন বান্দারে তুই যা খুশি কর, আমি তোরে ক্ষমা করে দিয়েছি।
এই
ধারণা সম্পূর্ণ কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ বলেছেন প্রতিটি কাজের হিসাব হবে। আল্লাহ
অসীম দয়ালু, তিনি তওবা কবুল করেন তবে কখনোই পাপ করার লাইসেন্স দিয়ে দেননা।
এই
ধরনের আরেকটি হাদীসঃ
(৩) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ
(রহঃ)…আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
এক ব্যক্তি তার নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করল। এরপর মৃত্যু মুখে পতিত হয়ে সে তার সন্তানদেরকে
অসিয়্যাত করল এবং বলল, আমি মরে যাওয়ার পর তোমরা আমাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাইকে উত্তমরূপে
পিষবে। তারপর আমাকে সমুদ্রের মাঝে বায়ুতে উড়িয়ে দিবে। আল্লাহর কসম! আল্লাহ যদি আমাকে
পান, তবে অবশ্যই তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিবেন, যা তিনি আর কাউকে দেননি। তিনি (রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সন্তানগণ তার সাথে অনুরূপ আচরণ করল।
এরপর
আল্লাহ তা’আলা মাটিকে বললেন, তুমি তার যে ছাই গ্রাস করেছ তা একত্রিত করে দাও। ফলে সে
সোজা দাড়িয়ে গেল। এ সময় আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কাজ করার ব্যাপারে কিসে তোমাকে
উদ্বুদ্ধ করেছে? উত্তরে সে বলল, خشيتك
يا رب অথবা مَخَافَتُكَ
আপনার ভয়ে। তারপর এ কথার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
অপর
এক সুত্রে যুহরী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন এক স্ত্রীলোক বিড়ালের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে বিড়ালটি
বেঁধে রেখেছিল; কিন্তু তাকে কোন খাদ্য প্রদান করেনি এবং জমি থেকে কীট পতঙ্গ খাবার
জন্য তাকে ছেড়েও দেয়নি। এমনিভাবে বিড়ালটি মরে যায়।
যুহরী
(রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদীস দুটো এ জন্যই বয়ান করা হয়েছে, যেন কোন মানুষ (আমল বর্জন
করে আল্লাহর উপর) নির্ভর করে বসে না থাকে এবং যেন মানুষ (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) নিরাশ
না হয়ে যায়।
কি
আজব! যেখানে আল্লাহ কোরানে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন কারও তিল পরিমাণ ভাল কাজও নষ্ট হবেনা,
সেখানে বিড়ালকে না খাওয়ানোতে মহিলা জাহান্নামী। বিড়ালকে না খাওয়ালে জাহান্নামে
যেতে হবে এমন কথা আল্লাহ কোথাও বলেননি। মহিলা জাহান্নামে গিয়ে থাকলে বিড়ালকে না খাওয়ানোর
অন্যায় এর সাথে অন্যান্ন অন্যায় মিলেই গিয়েছে। আর আরেক পাপী এত বড় পাপই করেছে যে
তওবা না করেই মারা গেল। সে পাপের গুরুত্ব বুঝে তওবা করার সাহসও পায়নি। আর আল্লাহ সেই
পাপীকে বিনা তওবায় ক্ষমা করে দিলেন? আল্লাহর সুন্নতের সাথে যাচ্ছেনা। আল্লাহ বলেছেন
প্রতিটি মানুষ তার কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করবে।
সর্বোপরি,
হাশরের বিচার এখনো শুরুই হলনা, বিচার দিবসের কথা আল্লাহ কোরানে ঘোষনা করে রেখেছেন,
সেখানে সকলের কৃতকর্মের হিসাব নেয়া হবে, আর এই হাদীসে দেখছি বিচার আচার শেষে জান্নাত
জাহান্নামও অকুপাই হয়ে গিয়েছে। শেষ বিচারের দিন কি আল্লাহ পূর্বের বিচারের ভিডিও
দেখবেন?
নবী (সাঃ) এর কথা প্রচার
করলেও তা মানেননি আবু হুরায়রা রাঃ নিজেইঃ
ইমাম
আহমদ ইবনে হাম্বল আবু হুরায়রা সম্পর্কে একটি ঐতিহ্য মুহাম্মদ বিন জিয়াদ দ্বারা বর্ণনা
করেছেনঃ মুহম্মদ বিন জিয়াদ বলছেনঃ “মারওয়ান, মুয়াবিয়ার রাজত্বকালে মদিনার আমীর
ছিলেন। কখনও কখনও আবু হুরায়রা তার উপদেষ্টা হওয়ার জন্য মদিনা ছেড়ে চলে যায়। আবু
হুরায়রা মাটিতে আঘাত করে বলেছিলেন: “পথ পরিষ্কার কর! পথ পরিষ্কার কর! আমির এসেছেন।
“সে নিজেই উল্লেখ করেছে। মুসনাদ, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩।
ইবনে
কুতুব্বা আদ-দীনুরী তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন । আবু রাফি বলেছিলেন:
মারওয়ান
কিছু সময়ের জন্য আবু হুরায়রাকে মদিনার আমীর নির্ধারিত করেছিল। যখন সে ভ্রমণ করত গাধার
উপর বসে এবং তার মাথায় খেজুর গাছের আঁশ ঝুলিয়ে রাখত। সে যখন কারো সাথে সাক্ষাত করত
তখন বলত- পথ পরিষ্কার কর! আমির এসেছে। “সে নিজেই হয়তো”
আল-মা’আরেফ
পৃষ্ঠা ৯৪।
দুই
দিনের জন্য আমির হয়ে আবু হুরায়রা মাটিতে পা ছুঁড়ে আঘাত করে নিজেকে নিজে আমীর উল্লেখ
করে বলছেন যে তার জন্য লোকে রাস্তা ছেড়ে দিক। আবু হুরায়রা যে সেই সময় মারওয়ানের
ডেপুটি ছিলেন তা নিচের লিংকের হাদীসেও আছে।
এদিকে
আবু হুরায়রা বর্ণিত একটা হাদীস দেখিঃ এই হাদীসে বাহরাইনের আমীর ঠিক একই আচরণ করেছিল
বলে নবী (সাঃ) না করে দিয়েছেন যে এমন আচরণ খারাপ। আমীর হয়েই আবু হুরায়রা নবী (সাঃ)
এর কথা ভুলে গেলেন?
(৩) উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) … মুহাম্মাদ
ইবনু যিয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি (তিনি
তখন বাহরায়নের গভর্নর ছিলেন), (একদা) তিনি দেখলেন, এক ব্যক্তি তার ইযার ঝুলিয়ে চলছে
আর তা পা দ্বারা যমীনে আঘাত করে করে বলছে, আমীর এসেছেন, আমীর এসেছেন…… রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সে লোকের দিকে তাকাবেন না, যে তার অহংকারবশে
ইযার ঝুলিয়ে চলে।
ভাল
করে পড়ে দেখুন, কাপড় ছেঁচরানোটা মূল কারণ নয় বরং অহংকারটাই মূল কারণ যা নবী (সাঃ)
করতে নিষেধ করেছেন। আর মাটিতে পা ছুঁড়ে আঘাত করে লোকজনকে রাস্তা ছেড়ে দিতে বলাটাতো
পরিষ্কার অহঙ্কার।
(৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করে।
জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা
আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কী হলো? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল
এবং নিরীহ ব্যক্তিরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা জান্নাতকে বলবেন,
তুমি আমার রহমাত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি
জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে শাস্তি
দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হবে
না যতক্ষণ না তিনি তাঁর পা তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বাস, বাস, বাস। তখন জাহান্নাম
পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে মুড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির
কারো প্রতি জুলুম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলূক সৃষ্টি
করবেন। [৪৮৪৯; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৪৬, আহমাদ ৮১৭০] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৮৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৮৬)
অর্থাৎ,
আল্লাহ নিজের পা দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। এ ব্যাপারে কোরান কি বলে দেখিঃ
তোর
(ইবলিশ) দ্বারা আর তাদের মধ্যে যারা তোর (ইবলিশ) অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা আমি জাহান্নাম
পূর্ণ করব। সূরা সোয়াদ আয়াত ৮৫
অন্যান্য
অনেক হাদীসে আবু হুরায়রা আল্লাহর হাত পা মাথা ইত্যাদি আছে বলে দাবী করেছে। এখন এইটাকেও
যদি কেউ বলেন রূপক হাদীস তাহলে ভাই আমার রূপক হাদীসের চেয়ে কোরানকেই সহজ বলে মনে হচ্ছে,
কারণ আল্লাহ কোরানে সরাসরিই বলে দিয়েছেন শয়তান আর তার অনুসারী দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ
করবেন। আর আল্লাহর পা কে যদি শয়তানের অনুসারী বলেন (নাউযুবিল্লাহ) তাইলে আর কি বলব!!
এই রুপক হাদীস দিয়ে আসলে কি বুঝানো হয়েছে তাই বলেন? এর দরকার কি আমাদের জন্য?
শেষ
কথা হিসেবে বলতে চাই, আসুন ভাইয়েরা আমরা আমাদের ভুল ধারণা গুলো বাদ দিয়ে সত্য পথে
চলার চেষ্টা করি। আমি এতক্ষণ শুধু আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীসই উল্লেখ করেছি। তার গুলো
বাদেও এমন বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে যা অবাস্তব, ভয়ঙ্কর, লজ্জাজনক, ক্ষতিকর এবং মিথ্যা।
তাই সনদের উপর বিশ্বাস না করে চলুন সবাই কোরান দিয়ে হাদীস যাচাই করি। তাহলেই শুধু
এই সিংহভাগ বাতিল হাদীস থেকেও আপনি অনেক ভাল হাদীস খুঁজে পেতে পারেন। আল্লাহ আমাদের
হেফাযত করুন।
আমিন
ইয়া রাব্বুল আলামিন।
*জাল ও যয়ীফ হাদিসের কবলে
শবে বরাত*
“মুবারকময়
রজনী লাইলাতুল কদর , লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত নয়”
* জাল হাদিসের কবলে শবে বরাত*
‘মধ্য
শাবানের রজনী’ বা ‘শবে বারাত’ বিষয়ক সকল সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীস সনদ-সহ বিস্তারিত আলোচনা
করেছি ‘‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবে বরাত: ফযীলত ও আমল’’ নামক গ্রন্থে। এখানে আমি এ বিষয়ক
জাল হাদীসগুলো আলোচনা করতে চাই। প্রসঙ্গত এ বিষয়ক সহীহ ও যয়ীফ হাদীসগুলোর বিষয়েও কিছু
কথা আসবে।
(১) মধ্য শাবানের রাত্রির
বিশেষ মাগফিরাতঃ
এ
বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে:
إِنَّ
اللَّهَ
لَيَطَّلِعُ
فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِن
‘মহান
আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী
ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’’
এ
অর্থের হাদীস কাছাকাছি শব্দে ৮ জন সাহাবী: আবূ মূসা আশআরী, আউফ ইবনু মালিক, আব্দুল্লাহ
ইবনু আমর, মুয়ায ইবনু জাবাল, আবু সা’লাবা আল-খুশানী, আবূ হুরাইরা, আয়েশা ও আবূ বাকর
সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে।[1] এ সকল হাদীসের সনদ বিষয়ক বিস্তারিত
আলোচনা উপর্যুক্ত গ্রন্থে করেছি। এগুলোর মধ্যে কিছু সনদ দুর্বল ও কিছু সনদ ‘হাসান’
পর্যায়ের। সামগ্রিক বিচারে হাদীসটি সহীহ। শাইখ আলবানী বলেন, ‘‘হাদীসটি সহীহ। তা অনেক
সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে, যা একটি অন্যটিকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করে।…
এ
হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রিটি একটি বরকতময় রাত এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে
ক্ষমা করেন। কিন্তু এ ক্ষমা অর্জনের জন্য শিরক ও বিদ্বেষ বর্জন ব্যতীত অন্য কোনো আমল
করার প্রয়োজন আছে কি না তা এই হাদীসে উল্লেখ নেই।
(২) মধ্য শাবানের রাত্রিতে
ভাগ্য লিখনঃ
কিছু
কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের
জন্য হায়াত-মউত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। হাদীসগুলোর সনদ বিস্তারিত আলোচনা করেছি
উপর্যুক্ত পুস্তকটিতে। এখানে সংক্ষেপে বলা যায় যে, এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলো অত্যন্ত
দুর্বল অথবা বানোয়াট। এ অর্থে কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয় নি।
এখানে
উল্লেখ্য যে, কুরআন কারীমে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّا
أَنْزَلْنَاهُ
فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
‘আমি
তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’’
এ
বাণীর ব্যাখ্যায় তাবিয়ী ইকরিমাহ, বলেন, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘মধ্য শা’বানের রাতকে’
বুঝানো হয়েছে। ইকরিমাহ বলেন, এ রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয়।
মুফাস্সিরগণ
ইকরিমার এ মত গ্রহণ করেন নি। ইমাম তাবারী বিভিন্ন সনদে ইকরিমার এ ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করার
পরে তার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ইকরিমার এ মত ভিত্তিহীন। তিনি বলেন
যে, সঠিক মত হলো, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর’-কে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ
যে রাত্রিতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন সে রাত্রিকে এক স্থানে লাইলাতুল কাদ্র: ‘তাকদীরের
রাত’ বা ‘মর্যাদার রাত’ বলে অভিহিত করেছেন[5]। অন্যত্র এ রাত্রিকেই ‘লাইলাতুম মুবারাকা’
বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। এবং এ রাত্রিটি নিঃসন্দেহে রামাদান মাসের মধ্যে;
কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন।[6] এথেকে
প্রমাণিত হয় যে, মুবারক রজনী রামাদান মাসে, শাবান মাসে নয়।
পরবর্তী
মুফাস্সিরগণ ইমাম তাবারীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন যে, ‘মুবারক রজনী’
বলতে এখানে ‘মহিমান্বিত রজনী’ বা ‘লাইলাতুল ক্বাদ্র’ বুঝানো হয়েছে। তাঁদের মতে ‘লাইলাতুম
মুবারাকা’ এবং ‘লাইলাতুল কাদ্র’ একই রাতের দুটি উপাধি। দুটি কারণে মুফাস্সিরগণ ইকরিমার তাফসীরকে বাতিল
ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন:
(ক) ইকরিমার মতটি কুরআনের সুস্পষ্ট বাণীর
সাথে সাংঘর্ষিক। কুরআনে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন। অন্যত্র
বলেছেন যে, একটি মুবারক রাত্রিতে ও একটি মহিমান্বিত রাত্রিতে তিনি কুরআন নাযিল করেছেন।
এ সকল আয়াতের সমন্বিত সুস্পষ্ট অর্থ হলো, আল্লাহ রামাদান মাসের এক রাত্রিতে কুরআন নাযিল
করেছেন এবং সে রাতটি বরকতময় ও মহিমান্বিত। মুবারক রজনীকে শবে বরাত বলে দাবী করলে এ
আয়াতগুলোর স্পষ্ট অর্থ বিভিন্ন অপব্যাখ্যার মাধ্যমে বাতিল করতে হয়।
(খ) বিভিন্ন সাহাবী ও তাবিয়ী থেকে বর্ণিত
হয়েছে যে, তাঁরা ‘মুবারক রজনী’-র ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ রাতটি হলো ‘লাইলাতুল কাদ্র’
বা ‘মহিমান্বিত রজনী’। সাহাবীগণের মধ্য থেকে ইবনু আববাস (রা) ও ইবনু উমার (রা) থেকে
অনুরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে। তাবিয়ীগণের
মধ্যে থেকে আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামী (৭৪ হি), মুজাহিদ বিন জাব্র (১০২ হি), হাসান
বসরী (১১০ হি), ক্বাতাদা ইবনু দি‘আমা (১১৭
হি) ও আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম মাদানী (১৮২ হি) বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা
সকলেই বলেছেন যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ অর্থ লাইলাতুল কাদ্র।
(৩) মধ্য-শাবানের রাত্রিতে
দোয়া-মুনাজাতঃ
মধ্য
শাবানের রজনীর ফযীলত বিষয়ে বর্ণিত তৃতীয় প্রকারের হাদীসগুলোতে এ রাত্রিতে সাধারণভাবে
দোয়া করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ রাতে দোয়া করা, আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর
জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের পাপরাশি ক্ষমালাভের জন্য প্রার্থনার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ অর্থে
কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস নেই। এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কিছু হাদীস দুর্বল
এবং কিছু হাদীস জাল।
(৪) অনির্ধারিত সালাত ও দোয়াঃ
মধ্য
শাবানের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে সালাত আদায় ও দোয়ার কথা উল্লেখ
করা হয়েছে। এ সকল হাদীস এ রাত্রির সালাতের জন্য কোনো নির্ধারিত রাক‘আত, নির্ধারিত সূরা
বা নির্ধারিত পদ্ধতি উল্লেখ করা হয় নি। শুধু সাধারণভাবে এ রাত্রিতে তাহাজ্জুদ আদায়
ও দোয়া করার বিষয়টি এ সকল হাদীস থেকে জানা যায়। এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলো প্রায় সবই
বানোয়াট। দু-একটি হাদীস দুর্বল হলেও বানোয়াট নয়।
(৫) নির্ধারিত রাক‘আত, সূরা
ও পদ্ধতিতে সালাতঃ
শবে
বরাত বিষয়ক অন্য কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে বিশেষ পদ্ধতিতে, বিশেষ সুরা পাঠের মাধ্যমে,
নির্দ্দিষ্ট সংখ্যক রাকআত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের
সর্বসম্মত মত অনুযায়ী এই অর্থে বর্ণিত সকল হাদীস বানোয়াট। হিজরী চতুর্থ শতকের পরে রাসুলুলাহ
(ﷺ) -এর
নামে বানিয়ে এগুলো প্রচার করা হয়েছে। এখানে এ জাতীয় কয়েকটি জাল ও বানোয়াট হাদীস উল্লেখ
করছি।
(৬) ৩০০ রাক‘আত, প্রতি রাক‘আতে
৩০ বার সূরা ইখলাসঃ
‘যে
ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে প্রত্যেক রাকআতে ৩০বার সুরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাকআত
সালাত আদায় করবে জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ
করা হবে।’’ হাদীসটি ইবনুল ক্বাইয়িম বাতিল বা ভিত্তিহীন হাদীস সমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
(৭) ১০০ রাক‘আত, প্রতি রাক‘আতে
১০ বার সুরা ইখলাসঃ
মধ্য
শাবানের রজনীতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী চতুর্থ শতকের পরে মানুষের মধ্যে
প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে
প্রথম এ রাত্রিতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। এ সময়ে বিভিন্ন মিথ্যাবাদী
গল্পকার ওয়ায়িয এ অর্থে কিছু হাদীস বানিয়ে বলেন। এ অর্থে ৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার
প্রত্যেকটিই বানোয়াট ও ভিওিহীন।
এর
প্রথমটি আলী (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে প্রচারিত: যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০
রাকআত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকআতে সুরা ফাতিহা ও ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে
সে উক্ত রাতে যত প্রয়োজনের কথা বলবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন। লাওহে
মাহফুযে তাকে দুর্ভাগা লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরির্বতন করে সৌভাগ্যবান হিসেবে তার নিয়তি
নির্ধারণ করা হবে, আল্লাহ তায়ালা তার কাছে ৭০ হাজার ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা তার
পাপরাশি মুছে দেবে, বছরের শেষ পর্যন্ত তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন রাখবে, এছাড়াও আল্লাহ
তায়ালা ‘আদন’ জান্নাতে ৭০ হাজার বা ৭ লাখ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা জান্নাতের মধ্যে
তার জন্য শহর ও প্রাসাদ নির্মাণ করবে এবং তার জন্য বৃক্ষরাজি রোপন করবে…। যে ব্যক্তি
এ নামায আদায় করবে এবং পরকালের শান্তি কামনা করবে মহান আল্লাহ তার জন্য তার অংশ প্রদান
করবেন।
হাদীসটি
সর্বসম্মতভাবে বানোয়াট ও জাল। এর বর্ণনাকারীগণ কেউ অজ্ঞাত পরিচয় এবং কেউ মিথ্যাবাদী
জালিয়াত হিসেবে পরিচিত।
এ
বিষয়ক দ্বিতীয় জাল হাদীসটিতে জালিয়াতগণ ইবনু উমার (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে বলেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য
শাবানের রাতে এক শত রাকআত সালাতে এক হাজার বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বে
আল্লাহ তা‘য়ালা তার কাছে ১০০ জন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন, তন্মধ্যে ত্রিশজন তাকে জান্নাতের
সুসংবাদ দিবে, ত্রিশজন তাকে জাহান্নমের আগুন
থেকে নিরাপত্তার সুসংবাদ প্রদান করবে, ত্রিশজন তাকে ভুলের মধ্যে নিপতিত হওয়া
থেকে রক্ষা করবে এবং দশজন তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।’’
এ
হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের অধিকাংশ রাবী অজ্ঞাতপরিচয়। বাকীরা মিথ্যাবাদী হিসাবে সুপরিচিত।
এ
বিষয়ক তৃতীয় জাল হাদীসটিতে মিথ্যাবাদীগণ বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমাম আবু জাফর মুহাম্মাদ আল
বাকির (১১৫ হি) থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর
বরাতে বর্ণনা করেছে: ‘‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাতে ১০০০ বার সুরা
ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বেই মহান আল্লাহ তার কাছে ১০০ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন।
৩০ জন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে, ৩০ জন তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবে,
৩০ জন তার ভুল সংশোধন করবে এবং ১০ জন তার শত্রুদের নাম লিপিবদ্ধ করবে।’’
এ
হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের কিছু রাবী অজ্ঞাতপরিচয় এবং কিছু রাবী মিথ্যাবাদী হিসাবে সুপরিচিত।।
১০০
রাকআত সংক্রান্ত এ বিশেষ পদ্ধতিটি হিজরী চতুর্থ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন গল্পকার ওয়ায়িযদের
মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং যুগে যুগে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এক পর্যায়ে ভারতীয় ওয়ায়িযগণ এ সালাতের পদ্ধতির মধ্যে প্রত্যেক দু রাকআতের পরে ‘‘তাসবীহুত
তারাবীহ’’র প্রচলন করেন এবং ১০০ রাকআত পূর্ণ হওয়ার পর কতিপয় সাজদা, সাজদার ভিতরে ও
বাহিরে কতিপয় দোয়া সংযুক্ত করেছেন।
আল্লামা
আব্দুল হাই লাখনবী (১৩০৬ হি) বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদীস সমুহের মধ্যে এ হাদীসটি উল্লেখ
করেছেন। যার সারমর্ম হলো, মধ্য শাবানের রাতে পঞ্চাশ সালামে ১০০ রাকআত সালাত আদায় করতে
হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। প্রত্যেক দুই
রাকআত পর ‘তাসবীহুত তারাবীহ’ পাঠ করবে, এর পর সাজদা করবে। সাজদার মধ্যে কিছু নির্ধারিত
বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর সাজদা থেকে মাথা তুলবে এবং নবী (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাঠ করবে ও কিছু নির্ধারিত
বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় সাজদা করবে এবং তাতে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট
দোয়া পাঠ করবে।
(৮) ৫০ রাক‘আতঃ
ইমাম
যাহাবী এ হাদীসটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদীস হিসেবে হাদীসটির বর্ণনাকারী অজ্ঞাত রাবী
মুহাম্মাদ বিন সাঈদ আলমীলী আত তাবারীর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। উক্ত মুহাম্মাদ বিন সাঈদ
এ হাদীসটি তার মতই অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মদ বিন আমর আল বাজালী এর সনদে আনাস (রা) থেকে
মারফু হিসেবে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ৫০ রাকআত সালাত আদায় করবে,
সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার কাছে যত প্রকার প্রয়োজনের কথা বলবে তার সবটুকুই পূরণ করে
দেয়া হবে। এমনকি লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগ্যবান হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন
করে তাকে সৌভাগ্যবান করা হবে। এবং আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে ৭ লাখ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন
যারা তার নেকী লিপিবদ্ধ করবে, অপর ৭ লাখ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার জন্য বেহেশতে
প্রাসাদ নির্মাণ করবে ….. এবং ৭০ হাজার একত্ববাদীর জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে…।
ইমাম যাহাবী এ মিথ্যা হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, যে ব্যাক্তি এ হাদীসটি বানোয়াট করেছে
আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্চিত করুন।
(৯) ১৪ রাক‘আতঃ
ইমাম
বায়হাকী তাঁর সনদে আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে মধ্য শাবানের রাতে ১৪ রাকআত সালাত
আদায় করতে দেখেছি। সালাত শেষে বসে তিনি ১৪ বার সূরা ফাতিহা, ১৪ বার সূরা ইখলাস, ১৪
বার সূরা ফালাক, ১৪ বার সূরা নাস, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং সূরা তাওবার শেষ দু আয়াত
তিলাওয়াত করেন, এ সব কাজের সমাপ্তির পর আমি তাঁকে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি
বললেন: তুমি আমাকে যে ভাবে করতে দেখেছ এভাবে যে করবে তার আমলনামায় ২০টি কবুল হজ্জের
সাওয়াব লেখা হবে এবং ২০ বছরের কবুল সিয়ামের সাওয়াব লিখা হবে। পরদিন যদি সে সিয়াম পালন
করে তবে দু বছরের সিয়ামের সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।
হাদীসটি
উল্লেখ করার পর ইমাম বায়হাকী বলেন: ইমাম আহমাদ বলেছেন যে, এ হাদীসটি আপত্তিকর, পরিত্যক্ত,
জাল ও বানোয়াট বলে প্রতীয়মান। হাদীসটির সনদে অজ্ঞাত পরিচয় বর্ণনাকারীগণ রয়েছে।
অন্যান্য
মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করার বিষয়ে ইমাম বাইহাকীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
আল্লামা ইবনুল জাওযী ও ইমাম সুয়ুতী বলেন: হাদীসটি বানোয়াট, এর সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন।
সনদের মধ্যে মুহাম্মাদ বিন মুহাজির রয়েছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন: মুহাম্মদ
বিন মুহাজির হাদীস বানোয়াট-কারী
(১০) ১২ রাক‘আত, প্রত্যেক
রাক‘আতে ৩০ বার সূরা ইখলাসঃ
জালিয়াতগণ
আবু হুরাইরা (রা) পর্যন্ত একটি জাল সনদ তৈরী করে তাঁর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছে: ‘‘যে ব্যক্তি
মধ্য শা’বানের রাতে ১২ রাকআত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার সূরা ইখলাস পাঠ
করবে, সালাত শেষ হওয়ার পূর্বেই বেহেশতের মধ্যে তার অবস্থান সে অবলোকন করবে এবং তার
পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছে এমন দশ ব্যক্তির ব্যাপারে তার
সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’’
এ
হাদীসের সনদের অধিকাংশ বর্ণনাকারীই অজ্ঞাত। এছাড়াও সনদের মধ্যে কতিপয় দুর্বল ও পরিত্যাজ্য
বর্ণনাকারী রয়েছে।
উপরের
আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, মধ্য শা’বানের রাতে
নির্দ্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দ্দিষ্ট সূরার মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট রাকআত সালাত আদায় সংক্রান্ত
হাদীস সমূহ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে সকলেই একমত। কিন্তু কতিপয়
নেককার ও সরলপ্রাণ ফকীহ ও মুফাস্সির তাঁদের রচনাবলিতে এগুলোর জালিয়াতি ও অসারতা উল্লেখ
ছাড়াই এসকল ভিত্তিহীন হাদীস স্থান দিয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ এগুলোর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া
প্রদান করেছেন ও তদনুযায়ী আমল করেছেন, যা পরবর্তীতে এ রীতি প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে
সহায়তা করেছে।
মোল্লা
আলী ক্বারী (১০১৪ হি) মধ্য শাবানের রাতে সালাত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোর অসারতা
উল্লেখপূর্বক বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে, যারা সুন্নাতের ইলমের সন্ধান
পেয়েছেন তারা এগুলো দ্বারা প্রতারিত হন কি করে! এ সালাত চতুর্থ হিজরী শতকের পর ইসলামের
মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে যার উৎপত্তি হয়েছে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে। এব্যাপারে অসংখ্য
জাল হাদীস তৈরী করা হয়েছে যার একটিও সঠিক বা নির্ভরযোগ্য নয়।তিনি আরো বলেন, হে পাঠক,
এ সকল ভিত্তিহীন মিথ্যা হাদীস ‘কুতুল কুলুব’, ‘এহয়িয়াউ উলুমিদ্দীন’ ও ইমাম সা‘লাবীর
তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ থাকার কারণে আপনারা প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হবেন না। ইসমাঈল বিন
মুহাম্মদ আজলুনীও (১১৬২ হি) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।
আল্লামা
শাওকানী (১২৫০ হি) শবে বরাতের রাত্রিতে আদায়কৃত এ সালাত সংক্রান্ত হাদীসের ভিত্তিহীনতা
উল্লেখ পূর্বক বলেন, এ সকল হাদীস দ্বারা এক দল ফকীহ প্রতারিত হয়েছেন। যেমন ‘এহয়িয়াউ
উলূমিদ্দীন’ গ্রন্থকার ইমাম গাযালী ও অন্যান্যরা। এমনিভাবে কতিপয় মুফাস্সিরও প্রতারিত
হয়েছেন। এ সালাতের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের জাল হাদীস রচিত হয়েছে। এ সকল হাদীস মাউযূ বা
বানোয়াট হওয়ার অর্থ হলো, এই রাত্রিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত রাক‘আত সালাত আদায়ের
প্রচলন বাতিল ও ভিত্তিহীন। তবে কোনো নির্ধারিত রাক‘আত, সূরা বা পদ্ধতি ব্যতিরেকে সাধারণ
ভাবে এ রাত্রিতে ইবাদত বা দোয়া করার বিষয়ে দুই একটি যয়ীফ হাদীস রয়েছে।’’
কুরবানীর ফযীলত সংক্রান্ত
জাল ও যঈফ হাদীছঃ
১নং হাদীছঃ
“আয়েশা
(রা:) হতে বর্ণিত, নবী বলেন, “কুরবানীর দিনে কোন আদম সন্তান কুরবানীর পশুর খুন ঝরানোর
চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল করেনা। সে কিয়ামত দিবসে উক্ত পশুর শিং,
খুর, লোম প্রভৃতি নিয়ে উপস্থিত হবে। এবং তার খুন জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নির্ধারিত
মর্যাদার স্থানে পতিত হয়। অতএব, তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানীকর।” (ইবনু মাজাহ, হা/৩১২৬,
তিরমিযী, হা/১৪৯৩, হাকেম৪ /২২১-২২২ দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ)
মন্তব্য:
হাদীছটি যঈফ। কারণ, হাদীছটির সনদে কয়েকটি দোষ আছে:
(১)
উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল্লাহ বিন নাফে নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। তার স্মৃতি শক্তিতে
দুর্বলতা ছিল।
(২)
হাদীসটির সনদে আবুল মুসান্না নামক আরেকজন রাবী রয়েছে তার আসল নাম হল সুলাইমান বিন
ইয়াজিদ। তিনি অত্যন্ত দুর্বল ও বাজে। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যা)
(৩)
উক্ত হাদীছের প্রায় অনুরূপ হাদীছ ইমাম আব্দুর বাযযাক তার মুছান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা
করেছেন। (হা/৮১৬৭) উক্ত হাদীসটির সনদেও আবু সাঈদ শামী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে
তিনি একজন ‘পরিত্যক্ত’ রাবী। (দ্রঃ প্রাগুক্ত)।
২নং হাদীছঃ
“যায়েদবিন
আরকাম (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছাহাবীগণ
জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানীর পশুগুলির তাৎপর্য কি? (কেন আমরা এগুলো
যবেহ করে থাকি?) তিনি বললেন: “ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর সুন্নত।” তাঁরা জিজ্ঞাসা
করলেন, এতে আমাদের কী সওয়াব রয়েছে? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
“প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে।” তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, পশমের মধ্যে
যে ছোট ছোট লোম রয়েছে ওগুলোরও কি বিনিময় তাই? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, “ছোট ছোট প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে।” (ইবনু মাজাহ্, হা/৩১২৭,
আহমাদ (৪/৩৬৮), ইবনু হিব্বান ফিল মাজরুহীন (৩/৫৫))
মন্তব্য:
হাদীছটি যঈফ। কারণ, এ হাদীসটির সনদে আবু দাউদ আল আম্মী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে।
তার প্রকৃত নাম হল, নুফাই ইবনুল হারিস। সে মুহাদ্দিসগণের নিকট ‘পরিত্যক্ত’ রাবী। এতে
আরও একজন রাবী রয়েছে তার নাম হল আয়েযুল্লাহ, সে ‘যঈফ’ রাবী।
৩নং হাদীছঃ
আবু
সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ফাতেমা (রা:) কে বললেন, “(হে ফাতেমা!) তুমি তোমার কুরবানীর পশুর নিকট (যবেহ কালীন)
দাঁড়াও এবং উপস্থিত থাক, কারণ তার প্রথম ফোটা খুন (জমিনে) পড়ার সাথে সাথে তোমার অতীতের
গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে।” ফাতেমা (রা:) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি আমরা
আহলুল বায়ত তথা নবী পরিবারের জন্যই খাস নাকি তা আমাদের জন্য এবং সাধারণভাবে সকল মুসলিমের
জন্য প্রযোজ্য? তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমাদের জন্য এবং সাধারণভাবে
সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য।” (হাকেম ৪/২২২) বাযযার ২/৫৯ কাশফুল আসতার)
মন্তব্য:
হাদীছটি যঈফ। কারণ, এর সনদে আব্দুল হামীদ নামে একজন রাবী রয়েছে যে যঈফ। আরেকটি কারণ
হল, এর সনদে আতিয়া আল আওফী নামে আরেকজন রাবী রয়েছে সেও যঈফ এবং মুদাল্লিস। আবু হাতিম
তার ইলাল (علل) গ্রন্থে
(হা/৩৮) বলেন, “এটি একটি ‘মুনকার’ হাদীছ।” (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১০)।
৪নং হাদীছঃ
আলী
(রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “হে ফাতেমা! তুমি তোমার কুরবানীর পশুর নিকট জবেহ করার
সময় উপস্থিত থাকিও। জেনে রেখ, ঐ পশুর রক্তের প্রথম ফোটা (মাটিতে) পড়ার সাথে সাথে
তোমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। জেনে রেখ! কিয়ামত দিবসে কুরবানীর ঐ পশুগুলিকে
রক্ত, মাংস সহ সত্তরগুণ বৃদ্ধি করে নিয়ে আসা হবে এবং তোমার দাঁড়িপাল্লায় তা রাখা
হবে।” (বাইহাকী (৯/২৮৩) আবদুবনু হুমাইদ (৭/৮)
মন্তব্য:
এ হাদীছের সনদে আমর বিন খালিদ ওয়াসেতী রয়েছে সে একজন ‘পরিত্যক্ত’ রাবী। অনুরূপ হাদীছ
ইমাম আব্দুর রাযযাক যুহরী হতে ‘মুরসাল’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটির সনদে আব্দুল্লাহ
বিন মুহাররার নামক একজন রাবী রয়েছে, তিনিও অত্যন্ত যঈফ। অনুরূপ হাদীছ ইমরান বিন হুসাইন
হতে বায়হাকী (৯/২৮৩), হাকিম (৪/২২২) এবং তাবারানী (১৮/২৩৯) প্রমুখগণ তাদের স্ব স্ব
কিতাবে বর্ণনা করেছেন)। উক্ত হাদিছটিকে ইমাম তায়ালিসী (মুসনাদ তায়ালিসী, হা/২৫৩০)
ও ইবনু আদী (৭/২৪৯২) বর্ণনা করেছেন। তবে তার সনদেও দুজন যঈফ রাবী রয়েছে তারা হলেন,
নাযর বিন ইসমাইল এবং আবু হামযাহ্ শেমালী। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহ্)
৫নং হাদীছঃ
আলী
(রা:) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন,
(তিনি বলেন) “হে মানব মণ্ডলী! তোমরা কুরবানী কর এবং তার খুনকে সওয়াব লাভের মাধ্যম
মনে কর। নিশ্চয়ই কুরবানীর পশুর খুন জমিনে পতিত হলে তা আল্লাহর হেফাজতে চলে যায়।”
[আবু দাউদ তায়ালেসী (হা ৮৩১৫)।]
মন্তব্য:
হাদীসটির সনদে মুসা বিন যাকারিযা এবং আমর ইবনুল হুসাইন রয়েছে। তারা উভয়ে ‘পরিত্যক্ত’
রাবী।
৬ নং হাদীছঃ
অর্থ:
“আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “চাঁদি (টাকা-পয়সা) যেসব ক্ষেত্রে খরচ করা হয় তার মধ্যে আল্লাহর
নিকট বেশি প্রিয় হল কুরবানী যা ঈদের দিনে যবেহ করা (তাবারানী ১১/১৭) দারাকুতনী ৪/২৮২
প্রভৃতি।
হাদীসটির
সনদে ইবরাহীম বিন ইয়াজিদ আল খোযী নামক একজন পরিত্যক্ত রাবী রয়েছে।
৭নং হাদীছঃ
অর্থ:
হুসাইন ইবনু আলী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন: “যে ব্যক্তি কুরবানীর পশুকে খুশী মনে ও নেকীর আশায় যবেহ করবে তার এই কুরবানীর
পশু জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পর্দা বা অন্তরায় হয়ে যাবে।”
মন্তব্য:
এটি একটি মওযূ বা জাল হাদীস। এর সনদে আবু দাউদ নাখঈ (যার প্রকৃত নাম সুলাইমান বিন আমর)
নামক একজন মহা মিথ্যুক রাবী রয়েছে।
৮নং হাদীছঃ
অর্থ:
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন বললেন, “কোন অদম সন্তান এই দিনে (কুরবানীর) খুন প্রবাহিত
করার চেয়ে অধিক সৎ আমল করে না। তবে ছিন্ন আত্মীয়তা সম্পর্ককে আবার অবিচ্ছিন্ন করার
কথা ভিন্ন। (তাবারানী ১১/৩২)
মন্তব্য: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে হাসান বিন ইয়াহয়া
আল খোশানী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। তিনি সত্যবাদী তবে প্রচুর ভুল করতেন। আরেকজন
বর্ণনাকারী রয়েছে তার নাম লাইস বিন আবী সুলাইম তিনিও একজন যঈফ রাবী। এতে ইসমাইল বিন
আয়্যাশ নামক অপর এক জন রাবী রয়েছে। তিনি যখন তিনি শামবাসী ছাড়া অন্য এলাকার মুহাদ্দিস
গনের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন তখন তার হাদীস যঈফ বলে বিবেচিত হবে। আর এখানে তিনি
শামবাসী ছাড়া অন্যদের থেকে হাদীসটি বর্ণনা করায় তা যঈফের অন্তর্ভুক্ত।
অনুরূপ
হাদীছ ইবনু আব্দুল বার তার ইস্তেযকার (৫/১৬৪) ও তামহীদ (২৩/১৯২) গ্রন্থে ইবনু আব্বাসের
সূত্রে বর্ণনা করে সেটাকে ‘গারীব’ হাদীছ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটির সনদে সাঈদ বিন
যায়দ নামক যঈফ বারী রয়েছে। তিনি ইমাম মালিক (রহঃ) হতে মুনকার বা অগ্রহণীয় অনেক কিছু
বর্ণনা করতেন। (দ্রঃ ফিকহুল উযহিয়্যাহঃ ১১)
৯ নং হাদীছঃ
অর্থ:
আবু হুরাইরা (রা:) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
“তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো
তোমাদের পুলসিরাতের উপর চড়ে যাওয়ার বাহন হবে।” (দাইলামী-মুসনাদুল ফিরদাউস ১/৮৫)
মন্তব্য:
হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ। হাফেয ইবনু হাজার তালখীছুল হাবীর গ্রন্থে (৪/১৩৮) বলেন: “হাদীছটি
মুসনাদুল ফিরদাউস গ্রন্থের গ্রন্থকার ইবনুল মুবারক এর সূত্রে ইয়াহয়্যা বিন ওবায়দুল্লাহ্
বিন মাওহাব বর্ণনা করেছেন তার পিতা থেকে। তিনি আবু হোরায়রা হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা
করেছেন …..। তবে সনদে বর্ণিত ইয়াহয়্যা অত্যন্ত যঈফ। হাদীছটি ইমাম আলবানীও যঈফ বলেছেন।
(দ্রঃ যঈফুল জামে হা/৯২৪)
১০ নং হাদীছঃ
অর্থ:
আমর ইবনুল ’আস হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আমি কুরবানীর
দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ প্রাপ্ত হয়েছি যা আল্লাহ এই উম্মতের জন্য নির্ধারণ
করে দিয়েছেন। এক ব্যক্তি বলল: আপনার কি মত এ ব্যাপারে-আমি যদি একমাত্র দান কৃত দুধাল
বকরি ছাড়া আর কিছু না পাই তবে কি আমি ওটা জবাই (কুরবানী) করব? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন: “না (তা করবে না) বরং তুমি তোমার চুল, নখ, গোঁফ ও নাভির নিম্নদেশের
লোম কাটবে। ইহাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণা ঙ্গ কুরবানী বলে গণ্য হবে।” (আবু দাউদ,
কুরবানীর অধ্যায়, হা/২৭৮৮, নাসায়ী হাকেম (বৈরুত) ৪/২২৩ সনদ যঈফ। (দ্রঃ যঈফ আবু দাউদ
হা/৫৯৫, যঈফ নাসায়ী হা/২৯৪।। হাদীছটিকে ইমাম হাকেমও উক্ত যঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন।)
১১ নং হাদীছঃ
অর্থ:
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হে লোক সকল! আপনারা কুরবানী করুন এবং তা খুশী
মনে করুন। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি
যে, যদি কোন ব্যক্তি তার কুরবানীর পশু সহ কিবলা মুখী হয় (এবং যবেহ করে) তাহলে তার
রক্ত, শিং এবং লোম নেকীতে পরিণত করে কিয়ামত দিবসে তার দাঁড়িপাল্লায় উপস্থিত করা
হবে। কুরবানীর পশুর খুন যদিও তা মাটিতে পড়ে কিন্তু তা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর হিফাজতে
পড়ে। তিনিই এর প্রতিদান তাকে কিয়ামত দিবসে প্রদান করবেন। (কিতাবুত তামহীদ এর বরাতে
তাফসীরুল কুরতুবী)
উক্ত
হাদীছটির সনদও যঈফ।
১২নং হাদীছঃ
ইবনু
আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ
করেছেন: “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি ছাড়া এমন কোন খরচ নেই যা আল্লাহর
নিকট কুরবানীর পশুর খুন ঝরানোর চেয়ে উত্তম হতে পারে।” (তাফসীরুল কুরতুবী)।
আবু
ওমার ইবনে আব্দুল বার বলেন: “এ হাদীসটি ইমাম মালেকের সূত্রে বর্ণিত একটি ‘গারীব’ হাদীছ”
(দ্র: প্রাগুক্ত)।।
বহুল প্রচলিত কিছু জাল হাদিস
লোকে
মুখে প্রচলিত হাজার হাজার জাল হাদিসকে আজকাল আমরা ধর্মের অংশ বলে মানা শুরু করে দিয়েছি।
এই জাল হাদিসগুলো যে ইসলাম সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন মানুষরাই শুধু প্রচার
করে যাচ্ছে তা নয়, এমনকি কিছু মসজিদের অপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণ নেওয়া ইমাম, বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে
আসা কিছু “আলেমকেও” দেখবেন সেই হাদিসগুলোর সত্যতা যাচাই না করে ব্যপক হারে প্রচার করে
যাচ্ছেন। এরকম বহুল প্রচলিত কয়েকটি জাল হাদিস এখানে তুলে ধরলাম এবং সঠিক হাদিস চিহ্নিত
করার প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করলাম।
জাল হাদিসঃ নবী ﷺ এর নাম ব্যবহার করে প্রচারিত বানোয়াট হাদিস। এধরনের হাদিসের বর্ণনাকারিদের মধ্যে এক বা একাধিক জন প্রতারক এবং কুখ্যাত হাদিস জালকারি বলে স্বীকৃত। অনেক সময় বর্ণনাকারিদের নামগুলোও মিথ্যা বানানো। এছাড়াও হাদিসটি কোন স্বীকৃত হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়নি। অনেক সময় এধরনের হাদিস পীর, দরবেশ, আলেমরা নিজেরাই বানিয়ে প্রচার করেছেন কোন বিশেষ স্বার্থে।
মুহাম্মাদ ﷺ এর নামে প্রচারিত
জাল হাদিস |
যেই হাদিস বিশারদরা
জাল প্রমাণ করেছেন |
জ্ঞান অর্জনের জন্য
সুদূর চীনে যেতে হলেও যাও। |
ইবন জাওযি, ইবন
হিব্বান, নাসিরুদ্দিন আলবানি |
জ্ঞানীর কলমের কালি
শহীদের রক্তের চেয়ে বেশি পবিত্র। |
আল-খাতিব
আল-বাগদাদি—হিস্টরি অফ বাগদাদ |
দেশপ্রেম ঈমানের
অঙ্গ। |
আস-সাগানি,
নাসিরুদ্দিন আলবানি |
নিজের কুপ্রবৃত্তির
বিরুদ্ধে জিহাদ সর্বোত্তম জিহাদ। |
ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবন
বাআয। |
সবুজ গাছপালা, শস্যর
দিকে তাকিয়ে থাকলে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। |
আয-যাহাবি |
আল্লাহ সেই বান্দাকে
ভালবাসেন যে তাঁর ইবাদতে ক্লান্ত, নিস্তেজ হয়ে পড়ে। |
আদ-দারকুতনি |
সুদ খাওয়ার ৭০
পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আছে, এর মধ্যে আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে ছোট অপরাধ হচ্ছে
মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। |
ইবন জাওযি, আল
হুয়ায়নি (দুর্বল বা জাল হাদিস) |
মুহাম্মাদকে ﷺ সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। মুহাম্মাদ ﷺ—এর নূর থেকে সমস্ত সৃষ্টি জগত সৃষ্টি হয়েছে। |
আয-যাহাবি, ইবন
হিব্বান, নাসিরুদ্দিন আলবানি |
যে শুক্রবার
মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি ৮০বার দুরুদ পাঠাবে তার ৮০ বছরের
গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। |
আল্লামা সাখায়ি,
আলবানি |
আযানের মধ্যে আঙ্গুল
চুম্বন করে চোখে মোছা। |
আস-সুয়ুতি, আলবানি |
এক ঘণ্টা গভীরভাবে
চিন্তা করা ৬০ বছর ইবাদতের সমান। |
ইবন জাওযি |
যারা মানুষকে ইসলামের
দাওয়াত দেয় এবং মানুষকে ইসলাম গ্রহন করায় তাদের জন্য জান্নাত নিশ্চিত। |
আস-সাগানি |
সুরা ইয়াসিন
কু’রআনের হৃদয়। একবার সুরা ইয়াসিন পড়লে দশবার কু’রআন খতম দেওয়ার সমান সওয়াব
পাওয়া যায়। |
ইবন আবি হাতিম,
আলবানি |
মৃতের জন্য সুরা
ইয়াসিন পড়। |
আদ-দার কুদনি |
আরবদেরকে ভালোবাসো,
কারণ আমি একজন আরব, কু’রআন আরবিতে নাজিল হয়েছে এবং জান্নাতের ভাষা হবে আরবি। |
আবি হাতিম—জারহ ওয়া
তাদিল |
পাগড়ী পরে নামায
পড়লে ১৫টি পাগড়ী ছাড়া নামায পড়ার সমান সওয়াব। |
ইবন হাজার—লিসানুল
মিজান |
আমি জ্ঞানের শহর এবং
আলি তার দরজা |
ইমাম-বুখারি |
প্রত্যেক নবীর একজন
উত্তরসূরি আছে। আমার উত্তরসূরি আলি। |
ইবন জাওযি, ইবন
হিব্বান, ইবন মাদিনি |
আমার উম্মতের আলেমরা
বনি ইসরাইলিদের নবীদের সমান। |
আলেমদের ইজমা দ্বারা
স্বীকৃত |
আমার পরিবার,
সাহাবীরা আকাশের তারার মত, তাদের মধ্যে যাকেই তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা সঠিক পথে
থাকবে। |
আহমাদ হানবাল,
আয-যাহাবি, আলবানি |
বিশ্বাসীর অন্তরে
আল্লাহ ﷻ থাকেন। |
আয-যারকাশি, ইবন
তাইমিয়া |
যে নিজেকে জেনেছে, সে
আল্লাহকেও ﷻ জেনেছে। |
আস-সুয়ুতি, ইমাম
নাওয়ায়ি |
আমি তোমাদেরকে দুটি
উপশম বলে দিলাম—মধু এবং কু’রআন। |
আলবানি |
যদি আরবদের অধঃপতন
হয়, তাহলে ইসলামেরও অধঃপতন হবে। |
ইবন আবি হাতিম |
যে কু’রআন শেখানোর
জন্য কোন পারিশ্রমিক নেয়, সে কু’রআন শিখিয়ে আর কোন সওয়াব পাবে না। |
আয-যাহাবি |
বিয়ে কর, আর কখনও
তালাক দিয়ো না, কারণ তালাক দিলে আল্লাহর ﷻ আরশ কাঁপে। |
ইবন জাওযি |
যে বরকতের আশায় তার
ছেলের নাম মুহাম্মাদ রাখবে সে এবং তার ছেলে জান্নাত পাবে। |
ইবন জাওযি |
যে হজ্জের উদ্দেশে
মক্কায় গেছে কিন্তু মদিনায় গিয়ে আমার কবর জিয়ারত করেনি সে আমাকে অপমান
করেছে। |
আস-সাগানি, ইবন
জাওযি, আশ-শাওকানি |
যে আমার (মুহম্মাদ ﷺ) কবর জিয়ারত করে তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে
যায়। |
আলবানি |
যে স্ত্রী তার
স্বামীর অনুমতি না নিয়ে ঘরের বাইরে যায়, সে ফেরত না আসা পর্যন্ত আল্লাহর
অসন্তুষ্টিতে থাকবে বা যতক্ষন না তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়। |
আলবানি |
যদি নারী জাতি না
থাকতো, তাহলে আল্লাহর ﷻ যথাযথ ইবাদত হতো। |
শেখ ফয়সাল |
নারীর উপদেশ মেনে
চললে অনুশোচনায় ভুগবে। |
শেখ ফয়সাল |
এই
হাদিসগুলো কেন জাল করা হয়েছে, কারা জাল করেছে এবং কোন হাদিস বিশারদরা জাল প্রমাণ করেছেন—তা
পরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ভুল হাদিস থেকে দূরে থাকার
উপায়ঃ
যখনি
কারো কাছে কোনো হাদিস শুনবেন বা বই, পত্রিকা, টিভিতে কোনো হাদিস দেখবেন, যাচাই করে
দেখবেন হাদিসটি সাহিহ কি না। যদি সাহিহ না হয়, তাহলে নিশ্চিত যে, সেই হাদিসটি যে নবী
ﷺ এর কাছ
থেকে এসেছে তার কোনো সন্দেহাতীত প্রমাণ নেই। এমনকি হাদিসটি সম্পূর্ণ বানোয়াট হাদিসও
হতে পারে। অনেকে মনে করেন যে, প্রসিদ্ধ বইগুলো, যেমন জামিআত তিরমিযি, সুনানে আবু দাউদ—এগুলোর
সব হাদিস সাহিহ। ভুল ধারণা। এগুলোতে অনেক হাদিস রয়েছে যেগুলো দুর্বল, এমনকি অনেক প্রসিদ্ধ
মুহাদ্দিস তাদেরকে পরে জাল প্রমাণ করেছেন। যেমন, তিরমিযিতে এই হাদিসটি আছে—
আনাস
(রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “প্রত্যেকটি জিনিসের একটি অন্তর রয়েছে,
কু’রআনের অন্তর হলো সূরা ইয়াসিন। যে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে, তার তিলাওয়াতের
জন্য আল্লাহ দশ বার কু’রআন খতম দেওয়ার সমান সওয়াব লিখবেন।” [তিরমিযি বই ৪৫, হাদিস
নম্বর ৩১২৯]
এটিকে
প্রথমত দুর্বল (দা’ই’ফ) হাদিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই না, প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস
শেখ নাসিরুদ্দিন আলবাণীর বহুল প্রচলিত জাল হাদিসের সম্পর্কে সাবধান করে লেখা বই “সিলসিলাত
আল আহাদিছ আদিফা”-তে এটি ১৬৯ নম্বর জাল হাদিস হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়াও ইবন আবি হাতিমও
একে জাল প্রমাণ করেছেন।
মনে রাখবেন হাদিস নির্ভরযোগ্যতা
অনুসারে চার প্রকারঃ
সাহিহ
(নির্ভরযোগ্য) হাদিস–যেই হাদিসগুলো নবী ﷺ এর কাছ থেকে এসেছে—এর পক্ষে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য প্রমাণ
আছে বলে হাদিস বিশারদরা অনেক গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন। “সাহিহ বুখারি” এবং “সাহিহ
মুসলিম” দুটি প্রধান সাহিহ হাদিসের সংকলন। সাহিহ হাদিসের উপর নির্ভর করে শারিয়াহ
(আইন) তৈরি হয়। তবে সাহিহ হাদিস কয়জন বর্ণনা করেছেন, তার উপর নির্ভর করে কিছু প্রকারভেদ
রয়েছে, যার উপর ভিত্তি করে হাদিসটির নির্ভরযোগ্যতা কতখানি সন্দেহাতীত, তা কম-বেশি
হয়। যেমন মুতাওয়াতির –যে হাদিসগুলো এত বেশি বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে তা ভুল হবার
সম্ভাবনা নেই; আহাদ (বিচ্ছিন্ন) ঘারিব (অদ্ভুত) হাদিস – যে হাদিসগুলোর বর্ণনাকারীদের
কোনো এক পর্যায়ে শুধুই একজন সাক্ষি পাওয়া গেছে, যার ফলে তা মুতাওয়াতির সহিহ হাদিসের
মত সন্দেহাতীত নয়, কারণ সেই একজন বর্ণনাকারী, হাদিস বর্ণনা করার সময় ভুল করতে পারেন।
*বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম ইবন আল-সালাহ তার মুকাদ্দিমাহ বইয়ে বলেছেন যে, “কোনো হাদিস
সাহিহ হবার মানে এই নয় যে হাদিসের বাণীটি অকাট্য সত্য। একটি হাদিসকে সাহিহ তখনি বলা
হয় যখন তা ৫টি শর্ত পূরণ করে। এই পাঁচটি শর্ত পূরণ করার পরেও একটি সাহিহ হাদিসের বর্ণনায়
ভুল থাকতে পারে।” ইমাম তিরমিযি তার বইয়ে বলেছেন যে, তিনি তার সুনানে দুটি সাহিহ হাদিস
অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেগুলো হাদিস সাহিহ হবার সকল শর্ত পূরণ করে, কিন্তু তারপরেও সংখ্যা
গরিষ্ঠ উলামাদের ইজমা অনুসারে সেই হাদিসগুলোর বাণী ভুল এবং তাদের উপর আমল করা যাবে
না। সুতরাং কী ধরণের সাহিহ হাদিসের উপর আমল করা যাবে এবং কোনটার উপর আমল করা যাবে না,
সেটা আপনাকে একজন যথাযথ হাদিস বিশারদের (মুহাদ্দিস) কাছ থেকে জানতে হবে। [* মুফতি তাকি
উসমানী, দারুল ইফতা]
হাসান
(ভালো) হাদিস – যেই হাদিসগুলোর উৎস জানা আছে এবং কারা তা বর্ণনা করেছেন তা নিয়ে মতভেদ
নেই। সাহিহ হাদিসের মতো এধরনের হাদিস নিশ্চিতভাবে নবী ﷺ এর কাছ থেকে এসেছে বলে হাদিস বিশারদরা
দাবি করেন না, তবে এ ধরণের হাদিসের উপর ভিত্তি করে আমল করা যাবে, তা সমর্থন করেন। অনেক
হাদিস বিশারদ এই হাদিসগুলোর উপর ভিত্তি করে শারিয়াহ তৈরি করা সমর্থন করেন।
দা’ই’ফ
(দুর্বল) হাদিস – যেই হাদিসগুলো নবী ﷺ —এর কাছ থেকে এসেছে বলে কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই এবং
তাদের বর্ণনাকারীদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তি আছেন, যাদের চরিত্র এবং ধর্মীয় বিশ্বাস
বিতর্কিত। যারা মিথ্যা বলেছেন, ভুল করেছেন এবং নিজেরা হাদিস বানিয়েছেন বলে প্রমাণ
রয়েছে হাদিস বিশারদদের কাছে। এধরনের হাদিসের উপর আমল করবেন না এবং এধরনের হাদিস প্রচার
করা থেকে বিরত থাকবেন। আজকাল দুর্বল হাদিসে পত্র পত্রিকা, বই, টিভির অনুষ্ঠানগুলো ভরে
গেছে। লোকে মুখে হাজারো দুর্বল হাদিস প্রচলিত। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ (মুহাদ্দিস) মুহাম্মাদ
নাসিরুদ্দিন আলবানি বহুল প্রচলিত ৫০০০ টি দুর্বল এবং জাল হাদিসের উপরে একটি বিখ্যাত
বই লিখে গেছেন। এই হাদিসগুলো মুসলিম দেশগুলোতে, বিশেষ করে উপমহাদেশের মুসলমানদের কাছে
ব্যাপক হারে প্রচার হচ্ছে এবং অনেকেই এর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিচ্ছেন, আইন প্রচলন
করছেন, এমন কি অনেক কিছু হারাম ঘোষণা করা হচ্ছে! সুদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর নিষেধ কু’রআনে
থাকা সত্ত্বেও জঘন্য সব দুর্বল হাদিসের ব্যপক প্রচার চলছেঃ
(ক) জেনেশুনে একটি দিরহামও সুদ খাওয়া
ছত্রিশ বার ব্যভিচার করার চেয়ে বড় অপরাধ।
(খ) সুদ খাওয়ার ৭০ পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা
আছে, এর মধ্যে আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে ছোট অপরাধ হচ্ছে মায়ের সাথে …
রিবার
উপরে আবু ঈসা নি’আমাতুল্লাহ এর আর্টিকেলটি দেখুন, যেখানে এরকম কিছু অত্যন্ত আপত্তিকর
হাদিসের ভাষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মাওদু’
(জাল) হাদিস – সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা হাদিস। বর্ণনাকারীরা ঘোরতর মিথ্যাবাদী, চরম
প্রতারক। এধরনের হাদিস নবী ﷺ
এর কাছ থেকে এসেছে এটা বলাটাও বিরাট গুনাহ। আলবানি এরকম অনেক জাল হাদিস প্রমাণ করা
গেছেন, যেগুলো মুসলিম সমাজের মধ্যে এমন ভাবে ঢুকে গেছে যে সেগুলোকে আজকাল ধর্মের অংশ
বলে মানা শুরু হয়ে গেছে এবং অনেক মসজিদের ইমামকেও দেখবেন এই জাল হাদিসগুলো না জেনে
প্রচার করে যাচ্ছেন। এমনকি বাজারে অনেক বিখ্যাত বই পাবেন আপনি যেগুলো জাল হাদিসে ভরা।
যেমন – আমলে নাজাত, ফাযায়েলে আমল ইত্যাদি।
হাদিসের প্রকারভেদ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ
কারা হাদিস জাল করে?
হাদিস জাল করার উদ্দেশ্য অনেকগুলোঃ
(ক) মুনাফিকরা এবং কাফিররা মুসলমানদের মধ্যে
বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য মুসলিম ছদ্মবেশে জাল হাদিস প্রচার করতো।
(খ) আলেমদের মধ্যে যারা নিজেরা যত বেশি
হাদিস সংগ্রহ করেছে বলে দাবি করতে পারতো, সে তত বেশি সন্মান পেত। তাই সন্মানের লোভে
অনেক আলেম, পীর, দরবেশ মিথ্যা হাদিস প্রচার করে গেছে। “এই হাদিসটির ইস্নাদ আমার কাছে
একদম মুহাম্মাদ ﷺ
থেকে এসে পৌঁছেছে”—এই ধরনের দাবি করতে পারাটা একটা বিরাট গৌরবের ব্যাপার ছিল, এখনও
আছে।
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আগেকার
রাজা-বাদশা, শাসকরা আলেমদের ব্যবহার করে মিথ্যা হাদিস প্রচার করতো। জনতাকে কোন প্রশ্ন
করার সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হাদিসের চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র আর
কিছু ছিল না।
(ঘ) ধর্মের প্রতি মানুষকে আরও অনুপ্রাণিত
করার জন্য নানা চমকপ্রদ, অলৌকিক ঘটনায় ভরপুর জাল হাদিস প্রচার করা হত, যেগুলো শুনে
সাধারণ মানুষ ভক্তিতে গদগদ হয়ে যেত।
(ঙ) ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বিশেষ স্থানগুলোতে
মানুষের আনাগোনা বাড়ানো এবং তা থেকে ব্যবসায়িক লাভের জন্য জাল হাদিস ব্যবহার করে
সেসব স্থানের অলৌকিকতা, বিশেষ ফজিলত প্রচার করা হত। সাধারণ মানুষ তখন ঝাঁকে ঝাঁকে সেই
সব অলৌকিক, প্রসিদ্ধ স্থানে গিয়ে তাদের বিপুল পরিমাণের অর্থনৈতিক লাভ করে দিয়ে আসতো।
ইতিহাসের কিছু বিখ্যাত হাদিস
জালকারীঃ
খলিফা
মাহদি আব্বাসির শাসনামলে আব্দুল কারিম বিন আল আরযাকে যখন শাস্তি স্বরূপ হত্যা করার
জন্য আনা হয় তখন সে প্রায় চার হাজার হাদিস জাল করার কথা স্বীকার করেছিল।
আবু
আসমা নুহ বিন আবি মারিয়াম কু’রআনের প্রতিটি সূরার নানা ধরণের ফজিলত নিয়ে শত শত জাল
হাদিস প্রচার করেছে, যখন সে লক্ষ করেছিল মানুষ কু’রআনের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছিল
না। যেমন, সূরা ইয়াসিন কু’রআনের দশ ভাগের একভাগ, অমুক সূরা পড়লে কু’রআন খতমের সওয়াব
পাওয়া যায় ইত্যাদি। [কিতাব আল মাউজুয়াত
– ইবন জাওযি, পৃষ্ঠা ১৪]
ওয়াহাব
বিন মুনাব্বিহ নানা ধরণের ভালো কাজের বিভিন্ন ধরণের ফজিলত নিয়ে অনেক হাদিস জাল করেছে।
সে একজন ইহুদি ছিল মুসলমান হবার আগে। [আল মাউজুয়াত]
আবু
দাউদ নাখি একজন অত্যন্ত নিবাদিত প্রাণ ধার্মিক ছিলেন। তিনি রাতের বেশিরভাগ সময় নামায
পরতেন এবং প্রায়ই দিনে রোজা রাখতেন। তিনিও নানা ধরণের বানানো হাদিস প্রচার করেছেন
মানুষকে ধর্মীয় কাজে মাত্রাতিরিক্ত মগ্ন রাখার জন্য। [আল মাউজুয়াত-৪১]
কিছু জাল হাদিসের ব্যাখ্যা
জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর
চীনে যেতে হলেও যাওঃ
ইবন
জাওযি এবং ইবন হিব্বান এটি জাল বলে প্রমাণ করেছেন। আলবানির সংকলিত ৫০০০ টি দুর্বল হাদিসের
সংগ্রহে এটিকে জাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে [সিলসিলাতুল আহাদিথ আল যায়িফা, ভলুম ১,
পৃষ্ঠা ৪১৩]। এই জাল হাদিসটি মানুষকে জ্ঞান অর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবহার করা
হয়—যা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্দেশ্য। কিন্তু সে জন্য নবীর ﷺ
নাম ব্যবহার করে ধর্মের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করা একটি বিরাট গুনাহ।
যে
উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নামে মিথ্যা ছড়ায়, তার পরিণতি জাহান্নাম—সাহিহ বুখারি
জ্ঞান
অর্জন একটি ধর্মীয় দায়িত্ব এবং আল্লাহ আমাদেরকে কু’রআনে বহু জায়গায় জ্ঞান অর্জনের
কথা বলেছেন।
হে
প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (২০:১১৪) [রাব্বি যিদনি ই’লমান]
যারা
জানে এবং যারা জানে না, কিভাবে তারা একে অন্যের সমান হতে পারে? (৩৯:৯)
আল্লাহ
তাদের অন্তর কলুষিত করে দেন, যারা বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করে না। (১০:১০০)
তোমাদের
মধ্যে যারা বিশ্বাস করে এবং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে অনেক সন্মানিত
করবেন। (৫৮:১১)
কু’রআনের
এত আয়াত থাকতে আমাদের জাল হাদিস প্রচার করার কোনো প্রয়োজন নেই।
জ্ঞানীর
কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে বেশি পবিত্র
এই
হাদিসটি আল-খাতিব আল-বাগদাদি তার The History of Baghdad 2/193 বইয়ে বর্ণনা করেছেন
এবং একে জাল বলে প্রমাণ করেছেন।
এই
হাদিসটি ইসলামের দাওয়াতের কাজকে ইসলামের জন্য সংগ্রাম করা থেকে বেশি সন্মান দেয়।
এটি আগেকার দিনের কাপুরুষরা, যারা জিহাদে যেতে ভয় পেত, তারা প্রচার করতো, যাতে করে
তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে পালিয়ে থাকতে পারতো। কু’রআনে এর সম্পূর্ণ বিপরীত বাণী
রয়েছেঃ
শারীরিকভাবে
অক্ষম ছাড়া যে সব বিশ্বাসীরা ঘরে বসে থাকে, তারা কোনোভাবেই তাদের সমান নয়, যারা নিজেদের
জান এবং সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। যারা ঘরে বসে থাকে, তাদের থেকে মুজাহিদদের
পদমর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি সকল
বিশ্বাসীদেরকেই
সুন্দর প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু যারা ঘরে বসে থাকে তাদের থেকে মুজাহিদদেরকে
আল্লাহ অকল্পনীয় বেশি প্রতিদান দেন। (৪:৯৫)
তবে
মনে রাখবেন, জিহাদ মানেই “আল্লাহু আকবার” বলে অমুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া নয়। জিহাদ
শব্দের অর্থ আপ্রাণ চেষ্টা করা, কোনো কিছু অর্জনের জন্য সংগ্রাম করা। যেমন, কুপ্রবৃত্তি
দমনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাটা একটি জিহাদ। পরিবার, সমাজ ও দেশের অন্যায় সংস্কৃতি
থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাটাও জিহাদ।
একইভাবে
নিজের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ যে সর্বোত্তম জিহাদ বলে একটা হাদিস প্রচলিত আছে,
সেটাও ভুল। ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেন—
কিছু
লোক একটা হাদিস প্রচার করে যে, নবী মুহাম্মাদ ﷺ নাকি তাবুকের যুদ্ধের পর এসে বলেছিলেন, “আমরা একটা ক্ষুদ্রতর
জিহাদ থেকে ফেরত এসে একটা বৃহত্তর জিহাদে আসলাম।” এই হাদিসের কোনো ভিত্তি নেই, ইসলামিক
শিক্ষার সাথে জড়িত কোনো পণ্ডিত এই হাদিস বর্ণনা করেননি। কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ নিঃসন্দেহে
সবচেয়ে মহৎ কাজ, এবং শুধু তাই না, এটি মানবজাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের
একটি। [ইবন তাইমিয়্যাহ—আল ফুরকান, পৃষ্ঠা:৪৪-৪৫]
দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গঃ
ইবন
জাওযি একে জাল হাদিস বলে প্রমাণ করেছেন।
এই
হাদিসটি মুসলমানদের মিথ্যা আশা দেয় যে, তারা দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা না
করেও, শুধুই দেশ প্রেমের জন্য জান্নাতে যেতে পারবে। যেই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি
এবং যেই দেশের সরকার ইসলামের নিয়ম অনুসারে দেশ পরিচালনা করে না, সেই দেশের জন্য প্রেম
ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না। ঈমানের একটি অত্যাবশ্যকীয় দাবি হচ্ছে: আল্লাহ ﷻ যেটা আমাদের জন্য সঠিক বলেছেন, সেটাকে
মনে প্রাণে সঠিক মানা এবং আল্লাহ আমাদের জন্য যেটাকে খারাপ বলেছেন, সেটাকে মনে প্রাণে
ঘৃণা করা।
এই
ধরণের জাল হাদিস ব্যবহার করা হয় ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশের মুসলমানদের মধ্যে দেশের
প্রতি অন্ধ ভালবাসা সৃষ্টি করার জন্য। কাফির সরকার দ্বারা পরিচালিত কাফির শাসনতন্ত্র
প্রতিষ্ঠিত একটি দেশের প্রতি প্রেম আর যাই হোক, অন্তত আল্লাহর প্রতি ঈমানের অঙ্গ নয়।
তবে
এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, দেশের আইন মেনে চলা এবং দেশের উপকার করা মুসলমানদের
জন্য অত্যাবশ্যকীয়, যতক্ষন না সেটা ধর্মের বিরুদ্ধে না যাচ্ছে। কু’রআনের এই আয়াতগুলো
দেখুন—
হে
বিশ্বাসীরা, তোমরা সকল অঙ্গীকার পূর্ণ কর। …
[৫:১]
…
তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই তোমাদেরকে অঙ্গীকারের ব্যপারে জিজ্ঞেস করা হবে।
[১৭:৩৪]
…
নিশ্চিত করার পরে কোন অঙ্গীকার ভাংবেনা কারণ তোমরা আল্লাহকে সাক্ষি করেছ। … [১৬:৯১]
আমরা
যখন যেই দেশে থাকছি, আমরা সেই দেশের আইন মেনে চলার অঙ্গীকার করে সেই দেশে থাকার অনুমতি
পাই। সুতরাং ধর্মীয় সীমা না ভেঙ্গে দেশের আইন মেনে চলতে আমরা বাধ্য, যেহেতু আমরা অঙ্গীকার
করেছি।
আল্লাহ
সেই বান্দাকে ভালবাসেন যে তাঁর ইবাদতে ক্লান্ত, নিস্তেজ হয়ে পড়ে
আদ-দার
কুতনি একে জাল বলে প্রমাণ করেছেন।
এটি
কু’রআনের পরিপন্থী। আল্লাহ ﷻ
আমাদেরকে কু’রআনের বেশ কয়েকটি জায়গায় বলে দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের জন্য সহজ, স্বাচ্ছন্দ্য
চান, তিনি মোটেও আমাদের জন্য কষ্টকর কিছু চান না।
আল্লাহ
তোমাদের জন্য সহজ-সাচ্ছন্দ চান, তিনি তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। [২:১৮৫]
আল্লাহ
তোমাদের জন্য কষ্ট কর কিছু চান না, বরং তিনি শুধুই তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের
উপর তাঁর অনুগ্রহকে পূর্ণ করতে চান, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। [৫:৬]
এই
ধরণের হাদিসকে সাধারণত ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত ইবাদতে মানুষকে ব্যস্ত রাখার
জন্য। এধরনের হাদিস সারা রাত জেগে শবে বরাতের নামায পড়া, বা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান
পালন করতে গিয়ে শক্তি নিঃশেষ করে ফেলা ইত্যাদি বাড়াবাড়িকে অনুপ্রাণিত করে। অনেকে
এই ধরণের ভুল ধারনায় অনুপ্রাণিত হয়ে হজ্জের সময় এক দিনে দুই বার তাওয়াফ-সায়ি করে
নিস্তেজ হয়ে পড়েন, আর ফজরের ফরয নামায পড়তে পারেন না। এধরনের বাড়াবাড়ি বা ধর্মের
জন্য ‘নিঃশেষে আত্মত্যাগ’—এই ধরণের আত্মহত্যা মানসিকতা মোটেও কু’রআনের শিক্ষা নয়।
ধর্মীয়
উপাসনা এবং হালাল ভাবে জীবন যাপনের জন্য যা কিছু করা দরকার, তার মধ্যে সুন্দর ভাবে
ভারসাম্য বজায় রেখে শান্তির, সাচ্ছন্দের জীবন পার করাটাই কু’রআনের শিক্ষা।
মুহাম্মাদ ﷺ সৃষ্টি না
করলে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। মুহাম্মাদ ﷺ এর নূর থেকে
সমস্ত সৃষ্টি জগত সৃষ্টি হয়েছেঃ
আয-যাহাবি
বলেন, এই হাদিসের বর্ণনাকারির মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন মুসলিম আল ফিরি আছে, যে একজন কুখ্যাত
মিথ্যাবাদী। ইবন হিব্বান বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন মুসলিম অনেক হাদিস জাল করে প্রচার করে
গেছে, যেগুলো সে দাবি করতো সে লাইথ এবং মালিক এর কাছ থেকে শুনেছে। আলবানিও এই হাদিসটিকে
জাল বলে প্রমাণ করেছেন। ইমাম যাহাবি এবং ইবন তাইমিয়াহ একে বাতিল-মিথ্যা হাদিস বলেছেন।
এই
হাদিসটি একটি বড় হাদিসের অংশবিশেষ, যেটার ঘটনা হচ্ছে এরকম—যখন আদম ﷺ
নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে অন্যায় করলেন, তখন তিনি আল্লাহর ﷻ কাছে ক্ষমা চেলেন এই বলে যে, “হে প্রভু,
আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই, তোমার উপর মুহম্মদের ﷺ এর অধিকারের দোহাই দিয়ে।” তখন আল্লাহ ﷻ নাকি বলেছিলেন, “হে আদম, তুমি মুহম্মদের
ব্যপারে কিভাবে জানলে, যাকে আমি এখনও সৃষ্টি করিনি?” আদম ﷺ নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “হে প্রভু,
তুমি যখন আমাকে তোমার নিজের হাতে বানিয়েছিলে এবং তোমার রুহকে আমার ভেতরে ফুঁ দিয়েছিলে,
আমি তখন মাথা উচু করেছিলাম এবং দেখেছিলাম তোমার কুরসিতে লেখা—আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নেই এবং মুহাম্মাদ তার রাসুল। সেখান থেকে আমি বুঝেছিলাম যে—তুমি তোমার পাশে কারো নাম
ব্যবহার করবে না, যদি না সে তোমার সবচেয়ে পছন্দের কেউ না হয়।” তখন নাকি আল্লাহ ﷻ বলেছিলেন, “ও আদম, তুমি ঠিক কথা বলেছ।
আমার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ হল মুহাম্মাদ। আমার উপর তার অধিকারের দোহাই দিয়ে
আমাকে ডাকো। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আর যদি মুহাম্মাদকে না বানাতাম, তাহলে আমি তোমাকে
বানাতাম না।”
এটি
একটি সম্পূর্ণ জাল হাদিস। শুধু এই হাদিসটিই নয়, এধরনের আরও অনেক রূপকথার হাদিস রয়েছে,
যেখানে মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর ﷻ কাছাকাছি একজন অতিমানবীয় অলৌকিক সৃষ্টি প্রমাণ করার চেষ্টা
করা হয়। বিশেষ করে বেশ কিছু সুফি মতবাদ আছে, যারা এই ধরণের অনেক জাল হাদিসকে ব্যবহার
করে নবী ﷺ—কে উসিলা
করে তার মাধ্যমে আল্লাহর ﷻ
কাছে দাবি করার জন্য। এই ধরণের ভুল তাওয়াসসুল (আল্লাহর নিকটবর্তী হবার চেষ্টা) হারাম।
যেমন, “হে আল্লাহ, তোমার পেয়ারের নবীর কসম, আমরা তার উম্মত, তার উসিলায় আমাদের গুনাহ
ক্ষমা করে দাও”, “হে আল্লাহ, তুমি তোমার নবীকে অমুক দিয়েছিলে, তার উসিলায় আমাদেরকে
তমুক দাও” ইত্যাদি। আমরা কখনই নবীর ﷺ কোনো গুণ বা অবদানের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে
পারবো না। শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ইবাদতের বদলে আল্লাহর ﷻ কাছে চাওয়া যাবে। যেমন, “আমার রোজার
বিনিময়ে আমার সব গুনাহ মাফ করে দিন”, “আমার হজ্জের বিনিময়ে আমাকে সুস্থ করে দিন”
ইত্যাদি। মনে রাখবেন, আমাদের আল্লাহর ﷻ উপর কোনই অধিকার নেই, কারণ আমরা কেউই আদর্শ মুসলমান নই
যে, আমরা আল্লাহর ﷻ
কাছে কোনো দাবি রাখার মত মুখ করতে পারি।
উপরের
জাল হাদিসটি কু’রআনের বিরোধী, কারণ আল্লাহ ﷻ নিজে আদম ﷺ এবং তার স্ত্রীকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে তাঁর কাছে মাফ চেতে
হবে এবং তারপর তিনি তাদের দুজনকেই ক্ষমা করে, তাদের উপর রহমত করেছিলেন এবং তাদেরকে
ধর্মীয় জ্ঞান দিয়েছিলেন। আল্লাহ ﷻ নিজে আদমকে ﷺ এই দু’আটি শিখিয়েছিলেন তাঁর কাছে সঠিক ভাবে ক্ষমা চাওয়ার
জন্য—
প্রভু,
আমরা আমাদের নফসের প্রতি অন্যায় করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের
উপর আপনার রহমত না দেন, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে যাবো। [৭:২৩]
আর
যেসব হাদিস বলে নবীকে ﷺ
সৃষ্টি না করলে আল্লাহ ﷻ
কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, তারা কু’রআনের এই আয়াতগুলোর বিরোধিতা করে –
আমি
মানুষ এবং জ্বিন সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার দাসত্ব করার জন্য। [৫১:৫৬]
যারা
বলে আল্লাহ ﷻ সবকিছু
সৃষ্টি করেছেন নবী ﷺ
এর জন্য এবং তাকে না বানালে তিনি মানুষ, জ্বিন কিছুই বানাতেন না—তারা শিরক করে। একইভাবে
যারা বলে, আল্লাহ ﷻ
সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নবী ﷺ
এর নূর থেকে, তাদের এই দাবির কোন সমর্থন কু’রআনে নেই, কারণ আল্লাহ ﷻ কু’রআনে পরিস্কার বলে দিয়েছেন তিনি
কেন এবং কিভাবে সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন। কু’রআনের কোথাও নবী ﷺ এর নূরের কোন উল্লেখ নেই।
অবিশ্বাসীরা
কি দেখেনা যে আকাশ এবং পৃথিবী একসাথে সংযুক্ত ছিল এবং ‘আমি’ তাদেরকে বিদীর্ণ করে আলাদা
করেছি এবং আমি সকল প্রান সৃষ্টি করেছি পানি থেকে? তারপরেও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
[২১:৩০]
তিনি
আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এক বিশেষ উদ্দেশে। যেদিন তিনি বলবেন হও, সেদিন
তা (ধ্বংস) হয়ে যাবে। … [৬:৭৩]
তিনি
আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কিছু আদেশ করেন, তিনি শুধু বলেন “হও” আর তা
হয়ে যায়। [২:১১৭]
আর
যারা দাবি করে যে, তারা জানে আল্লাহ ﷻ কিভাবে বা কিসের থেকে সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন, তারা
মিথ্যা বলেঃ
আমি
তাদেরকে আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টির সাক্ষি রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃষ্টিরও সাক্ষি
রাখিনি। যারা অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে আমি আমার সহকারী হিসেবে নেই না। [১৮:৫১]
সুতরাং
কেউ জানেনা সৃষ্টি জগত কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এমন কি কেউ জানে না সে নিজে কিভাবে সৃষ্টি
হয়েছে। মানুষ জানে না মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, জ্বিন জানে না জ্বিন কিভাবে সৃষ্টি
হয়েছে। আল্লাহ কাউকে তাদের সৃষ্টির সময় সাক্ষৗ রাখেননি অর্থাৎ তারা কিভাবে সৃষ্টি
হয়েছে তা তারা দেখেনি, শুনেনি এবং জানেও না।
যে শুক্রবার আমার প্রতি ৮০বার
দুরুদ পাঠাবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবেঃ
এই
হাদিসটি আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণীত বলে দাবি করা হলেও এটি একটি জাল হাদিস। তাবলীগ
জামাতের কিছু বইয়ে এই ধরণের হাদিস অনেক পাওয়া যায়, যেখানে দুরুদের নানা ধরণের মাত্রাতিরিক্ত
সওয়াব, ফজিলত ইত্যাদি বর্ণনা করা থাকে। আল্লামা সাখায়ি একে দুর্বল এবং আলবানি একে
জাল হাদিস বলে চিহ্নিত করেছেন। এটি কু’রআনের পরিপন্থি কারণ আল্লাহ ﷻ স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেনঃ
যে
একটি ভালো কাজ নিয়ে আসবে, আল্লাহ তাকে তার দশ গুণ বেশি প্রতিদান দিবেন এবং যে একটি
খারাপ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে তার সমান প্রতিদান ছাড়া কম-বেশি দেওয়া হবে না। কারো সাথে
বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না। [৬:১৬০]
সুতরাং
যখনি কোন হাদিস পাবেন যে, অমুক করলে ১০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, তমুক করলে ১০ বছর
নফল নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যাবে, ধরে নিতে পারেন সেগুলো হয় দুর্বল হাদিস, না হয়
জাল হাদিস।
যদি নারী জাতি না থাকতো,
তাহলে আল্লাহর যথাযথ ইবাদত হতোঃ
এই
হাদিসের বর্ণনাকারিদের মধ্যে আব্দুর রাহিম ইবন যায়িদ আছে, যাকে হাদিস বিশারদরা মিথ্যাবাদী
এবং একজন প্রতারক বলে চিহ্নিত করেছেন।
নারীদেরকে
চরম অপমান করে, এমন হাদিসের কোনো অভাব নেই। আপনি যে কোন হাদিসের বই খুললেই শ’খানেক
হাদিস পাবেন, যেখানে নারীদেরকে পুরুষদের থেকে অধম, ধর্মীয় ভাবে পশ্চাদপদ, পুরুষদের
অধীন করে রাখা হয়েছে। আপনি কু’রআন ভালো করে পড়লেই বুঝতে পারবেন আল্লাহ ﷻ নারীদেরকে কত বড় সন্মান দিয়েছেন
এবং তাঁর কাছে পুরুষ এবং নারী উভয়েই সমানভাবে সন্মানিত (কিন্তু দায়িত্ব ভিন্ন) এবং
উভয়কেই সমান পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—
নিশ্চয়
আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করা পুরুষ, আত্মসমর্পণ করা নারী, বিশ্বাসী পুরুষ, বিশ্বাসী
নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ,
ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী
পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী
পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। [৩৩:৩৫]
আমরা
ভুলে যাই, প্রথম মুসলিম হয়েছিলেন যিনি, ইসলামের জন্য নিজের সকল সম্পত্তি যিনি উৎসর্গ
করেছিলেন— সেই খাদিজা (রা) একজন নারী। প্রথম যিনি ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন,
তিনি একজন নারী—সুমাইয়া (রা)। ইসলামের চারজন অন্যতম হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে আয়েশা
(রা) একজন নারী। সর্বপ্রথম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘আল-কারাওয়িন’ এর প্রতিষ্ঠাতা একজন
নারী—ফাতিমা আল-ফিহরি। শেখ মুহম্মাদ আকরাম আল-নদভি তার ৫৩ ভলিউমে প্রায় ৮০০০ মহিলা
হাদিস বিশারদের (মুহাদ্দিথাত) জীবনী সংগ্রহ করেছেন।
ইসলামে
নারীদের অবদানের কোনো অভাব নেই। যদি সত্যিই নারী জাতি না থাকলে আল্লাহর ঠিকমত ইবাদত
হতো, তাহলে আল্লাহ ﷻ
খামোখা নারী জাতি সৃষ্টি করতেন না, কারণ মানুষকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর
ইবাদত (দাসত্ব) করা। নারী জাতিকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যও হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা। এধরনের
কথা যারা বলে, তারা আসলে বলছে, আল্লাহ ﷻ নারীদেরকে সৃষ্টি করে একটা ভুল করেছেন—নাউ’যুবিল্লাহ।
হাদীসের মর্যাদা ও হাদীস
অমান্য করার পরিণতিঃ
ইসলামী
শরীয়তের দুটি মূল উৎস হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ্ হাদীছ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমরা ঐ দুটিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি হল
আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত (আল-হাদীছ)।
(মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক, মিশকাত হা/১৮৬; আল-মুস্তাদরাক লিল হাকেম, সনদ হাসান)।
যেহেতু
উপরোক্ত দুটি উৎসই ইসলামী জীবন-যাপনের মূল হাতিয়ার এবং এর উপরেই মুসলমানদের হেদায়াত
নির্ভরশীল, সেহেতু যুগ পরস্পরায় ইসলামের শত্রুরা এ দুটি মূল উৎসের মাঝেই ভেজাল ঢুকানোর
চেষ্টা করেছে। কুরআন যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়েই লিখিত
আকারে সংরক্ষিত ছিল। কণ্ঠস্থ ছিল বহু ছাহাবীর। কাজেই তারা কুরআনে হাত দেওয়ার দুঃসাহস
দেখাতে পারেনি। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ ছিল এর কিছুটা
ব্যতিক্রম। হাদীছ তখন লিখিত আকারে ছিল না। ছিল বিভিন্ন ছাহাবীর স্মৃতিপটে সংরক্ষিত।
তাও আবার গচ্ছিত আকারে নয়। লিখিত আকারে খুব কমই সংরক্ষিত ছিল। এই সুযোগে ইসলামের চির
শত্রুরা ও মুসলিম নামধারী বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল এই দ্বিতীয় উৎসের মধ্যে তাদের
কালো হাত বসিয়েছে। হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম এবং যা শরীয়ত নয় তাকে শরীয়তে রূপ
দেওয়ার জন্য বহু হাদীছ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম দিয়ে জাল
করেছে। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে এমন পণ্ডিতদেরও আবির্ভাব ঘটিয়েছেন, যারা
ঐ সমস্ত যঈফ ও জাল হাদীছগুলিকে ছাটাই বাছাই করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইমাম
ইবনুল জাওযী বলেন, যখন কারো পক্ষে কুরআন মজীদে অনুপ্রবেশ ঘটানো সম্ভব হয়নি, তখন কিছু
সংখ্যক লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ বর্ণিত করতে শুরু করে
এবং তিনি বলেননি এমন কথাও তাঁর নাম দিয়ে চালাতে শুরু করে। আর এর প্রেক্ষিতেই আল্লাহ
তায়ালা এমন আলেমদের আবির্ভাব ঘটালেন, যাঁরা মিথ্যা বর্ণনা অপসারণ করতে শুরু করেন এবং
ছহীহ হাদীছ কোনটি তা স্পষ্ট করে দেন। আল্লাহ তায়ালা এরূপ পণ্ডিত ব্যক্তিদের থেকে কোন
যুগকেই শূন্য রাখেননি। তবে এ ধরনের ব্যক্তিত্বদের অস্তিত্ব সাম্প্রতিককালে হ্রাস পেয়েছে।
এমনকি বর্তমানে তাদের প্রাপ্তি পশ্চিমা ডলফিন প্রাপ্তির চেয়েও দুর্লভ হয়ে পড়েছে। (সিলসিলাতুল
আহাদীছ আয-যাঈফাহ ওয়াল মওযূআহ ১/৪১।)
ইমাম
ইবনুল জাওযীর যুগেই যখন হাদীছের মহা পন্ডিতদের এরূপ অভাব দেখা দিয়েছিল, সেখানে বর্তমান
যুগে এ অভাব আরও তীব্র হওয়া স্বাভাবিক নয় কি? বাস্তব পরিস্থিতিও তাই। সারা বিশ্বে আজ
যঈফ ও জাল হাদীছের ছড়াছড়ি। কি খতীব, কি ওয়ায়েয, কি প্রবন্ধকার, কি তথাকথিত মুহাদ্দিস
সকলের মুখে শুধু যঈফ ও জাল হাদীছ শুনা যায়। কিন্তু এগুলি থেকে সতর্ককারী রয়েছেন কজন?
যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানীসহ হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তিত্ব ছাড়া?
তাদের লেখনীও আবার আরবীতে। যা বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য বুঝা কষ্টকর।
এই
ঘোলাটে পরিস্থিতি অনুধাবন করেই আমরা উভয় বাংলার মানুষকে যঈফ ও জাল হাদীছ থেকে সতর্ক
করার জন্য কলম হাতে নিয়েছি। আমরা বাংলার মুমিন সমাজকে জানিয়ে দিতে চাই যে, হাদীছ বর্ণনায়
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হাদীছের অবস্থা না জেনে তা দিয়ে দলীল পেশ করা যাবে না। আমরা
আরও চাই বাংলার মানুষকে ঐ সমস্ত হাদীছের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে, যেগুলিকে তারা অজ্ঞতা
বশত: কিংবা ঐ রকম বই-কিতাব না থাকায় ছহীহ হাদীছ মনে করে আমল করে আসছে। অথচ তা নিতান্তই
যঈফ বা জাল। বহুকাল আগে থেকেই হাদীছ শাস্ত্রের পণ্ডিতগণ এগুলোকে যঈফ ও জাল হাদীছ বলে
ঘোষণা দিয়েছেন এবং বর্তমান যুগের হাদীছ শাস্ত্রবিদগণও ওগুলোর যঈফ ও জাল হওয়ার সাক্ষ্য
দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর
মিথ্যা রোপ করার কঠিন গোনাহ হতে রক্ষা করা।
যঈফ ও জাল হাদীছের সংজ্ঞাঃ
যঈফ
হাদীছঃ যে হাদীছে ছহীহ ও হাসান হাদীছের শর্তসমূহ পাওয়া যায় না, তাকেই যঈফ হাদীছ বলে।
(ইমাম নববী, মুক্বাদ্দামাহ মুসলিম পৃঃ ১৭; হাদীছ সংকলনের ইতিহাস, (ইফাবা ১৯৯২) পৃঃ
৩৯।)
ছহীহ হাদীছঃ ছহীহ হাদীছ ঐ হাদীছকে বলা হয় যার বর্ণনা
সূত্র ধারাবাহিক রয়েছে এবং বর্ণনাকারীগণ সর্বতোভাবে ন্যায়পরায়ণ। যাদের স্মরণশক্তি অত্যন্ত
প্রখর এবং যে হাদীছের মধ্যে কোন প্রকার দোষ নেই এবং অপর ছহীহ হাদীছের বিরোধীও নয়।
(মিন আত্বয়াবিল মিনাহ ফি ইলমিল মুছত্বালাহ ও শরহে নুখবাতুল ফিক্র অবলম্বনে)।
হাসান হাদীছঃ ছহীহ হাদীছের সকল গুণ বিদ্যমান থাকার
পর বর্ণনাকারীদের স্মরণশক্তি যদি কিছুটা হালকা প্রমাণিত হয় তবে তাকে হাসান হাদীছ বলা
হয়। (প্রাগুক্ত)।
মাউযু বা জাল হাদীছঃ মাউযু বা জাল হাদীছ এর অপর নাম মিথ্যা
হাদীছ। মওযু হাদীস বলা হয় ঐ হাদীকে যা বানানো হয়েছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর দিকে সম্পর্কিত করা হয়েছে। (ডঃ মাহমুদ আহ-ত্বাহ্হান, তায়সীরু মুছতালাহিল
হাদীছ, পৃঃ ৮৯।)
হাদীছ
বর্ণনায় সতর্কতা অবলম্বন: হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নির্দোষ রাবীর হাদীছ গ্রহণ করতে হবে। পক্ষান্তরে যে রাবী দোষী সাব্যস্ত হবে, তার বর্ণিত
হাদীছ প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
আল্লাহ
বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে কোন ফাসেক ব্যক্তি কোন
খবর দিলে তা যাচাই কর।” (হুজুরাত-৬)।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে
ব্যক্তি আমার থেকে এমন হাদীছ বর্ণনা করে যে, তার ধারণা হয় ওটা মিথ্যাও হতে পারে, তবে
সে অন্যতম সেরা মিথ্যুক। (মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও
বলেন:
“একজন
ব্যক্তির মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই (পরীক্ষা-নিরীক্ষা
না করে) বলে বেড়াবে।” (মুক্বাদ্দামা মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
“যে
ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপরে মিথ্যা রোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ
করে নেয়।” (বুখারী ও মুসলিম)।
উল্লেখিত
আয়াত ও হাদীছগুলি দ্বারা এটাই প্রতিভাত হয় যে, হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে চরম সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে এবং ঢালাওভাবে হাদীছ বর্ণনা করা যাবে না। বরং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে
দেখতে হবে হাদীছটি সত্যিকার অর্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
হাদীছ কি-না। যে ব্যক্তি শোনামাত্রই বর্ণনা করে সে অন্যতম সেরা মিথ্যুক এবং জেনে বুঝে
মিথ্যা রোপ করলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম, এ বাক্যগুলো থেকে হাদীছের ছহীহ-যঈফ যাচাই
কতটুক আবশ্যক তা সহজেই অনুমেয়।
সহিহ ও যঈফ হাদিস যিনি পার্থক্য করতে জানেন না, তিনি আলেম নন:
ইমাম
আহমাদ বিন হাম্বল ও ইসহাক বিন রাহওয়াইহ বলেন, যে আলেম হাদীছের ছহীহ-যঈফ ও নাসেখ-মানসূখ
জানেন্ না, তাকে আলেমই বলা চলে না। (মারেফাতু উলুমুল হাদীস গ্রন্থের বরাতে সহীহ তারগীব
তারহীবের ভূমিকা- পৃঃ- ১৩)।
ছিহাহ সিত্তা বলা কতদূর সঠিক?
আমরা
বুখারী, মুসলিম, আবুদাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ এসব মহামতি ইমামদের হাদীছ গ্রন্থ
গুলিকে ছিহাহ সিত্তাহ বলে থাকি। যার অর্থ হাদীছের ছয়টি ছহীহ কিতাব। আসলে কি এ ছয় খানি
কিতাবই ছহীহ হাদীছের কিতাব? একমাত্র ছহীহ হাদীছের কিতাব বলতে বুখারী ও মুসলিমকে বুঝানো
হয়। যে দুটিকে একত্রে ছহীহায়েন বলা হয়। এই দুই কিতাবের সাথে অনেক বিদ্বান মুওয়াত্ত্বা
মালিককেও শামিল করেছেন। এর বাইরে কোন কিতাবই নিরঙ্কুশ ছহীহ হাদীছের কিতাব নয়। বরং সব
হাদীছের বিতাবেই ছহীহ-যঈফ মিশ্রিত রয়েছে। আবুদাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ এ চারটি
কিতাবে যঈফ হাদীছ মিশ্রিত রয়েছে। সুতরাং এগুলিকে বুখারী ও মুসলিমের সাথে মিলিয়ে ছিহাহ
সিত্তাহ বলা ঠিক নয়। এমন কি সহীহ বুখারী মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীসের কিতাবের সংকলকগণ
তাদের কিতাবগুলোকে সহীহ হিসেবেও নাম করণ করেন নি। যদিও অনেক আলেম এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ
হাদীস সহীহ হওয়ার উপর ভিত্তি করে সিহাহ সিত্তাহ বলেছেন।
বিদ্বানদের
গণনা মতে ঐ চারটি কিতাবে যঈফ হাদীছের সংখ্যা তিন হাযারের ঊর্ধ্বে রয়েছে। যেমন মুহাদ্দিস
আলবানী (রহঃ) এর চারটি যঈফ গ্রন্থ অবলম্বনে বলা যায়-
•
নাসাঈতে যঈফ হাদীছের সংখ্যা প্রায়……….. ৪৪০ টি
•
আবুদাউদে যঈফ হাদীছের সংখ্যা প্রায়………১১২৭ টি
•
তিরমিযীতে যঈফ হাদীছের সংখ্যা প্রায় ……..৮২৯ টি
•
ইবনু মাজাহ্তে যঈফ হাদীছের সংখ্যা প্রায়….৯৪৮ টি
………………………………………………………………………………….
মোট = ৩৩৪৪ টি
এই
চার খানা কিতাবকে পুরোপুরিভাবে ছহীহ হাদীছের সংকলন জ্ঞান করার কারণেই আমরা এগুলোর মধ্যে
সন্নিবেশিত হাদীছগুলিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি না বা করার প্রয়োজন মনে করি না। অথচ এটি
একটি মারাত্মক ভুল।
আল্লামা
মোহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ইয়ামানী বলেন: সুনানে ইবনে মাজাহ আবূদাউদ ও নাসাঈর পরবর্তী পর্যায়ের
গ্রন্থ। উহার হাদীছসমূহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো আবশ্যক। উহাতে ফযীলত সংক্রান্ত অধ্যায়ে
একটি মওযূ হাদীছ রয়েছে। (হাদীছ সংকলনের ইতিহাস, (ইফাবা, ১৯৯২), পৃঃ ৫৬১। গৃহীত: ত্বানক্বীহুল
আনওয়ার।)
উপরোক্ত
চারখানা বিতাবের বাইরেও এমন অনেক কিতাব রয়েছে যার বেশীর ভাগ হাদীছ ছহীহ। যেমন ছহীহ
ইবনু খুযায়মা, ছহীহ ইবনু হিব্বান প্রভৃতি।
মোটকথা,
হাদীছের প্রসিদ্ধ ছয় খানা বিতাবকে ছিহাহ সিত্তাহ না বলে কুতুবু সিত্তাহ বা ছহীহাইন
ও সুনানে আরবাআহ বলা উচিত।
প্রকাশ
থাকে যে, অনেকে মনে করেন, যঈফ হাদীছ ফযীলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। তাদের এ ধারণা সঠিক
নয়। বরং ফযীলত ও আহকাম সর্বক্ষেত্রেই যঈফ হাদীছ বর্জনীয়। ইহাই মুহাক্কেক্বীন বিদ্বানদের
চূড়ান্ত ফায়সালা। আল্লামা জামালুদ্দীন ক্বাসেমী বলেন, ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহ্ইয়া
ইবনে মঈন, ইবনুল আরাবী, ইবনে হাযম এবং ইবনু তাইময়াহ প্রমুখ মনীষীগণ বলেন, ফযীলত কিংবা
আহকাম কোন ব্যাপারেই যঈফ হাদীছ আমল যোগ্য নয়। (ফাওয়ায়েদুত্ তাহদীস পৃঃ ৯৫)।
পরিশেষে,
আল্লাহ আমাদের সকলকে যঈফ ও জাল হাদীছ চিনার ও তা থেকে সতর্ক থাকার সাথে সাথে কুরআন
ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমল করার তাওফীক দিন-আমিন।
(সমাপ্ত)
===========================================================
-------------------------------------------------------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment