বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কবর
যিয়ারত সংক্রান্ত জাল-জইফ হাদিস
মানুষকে যেখানে দাফন করা হয় তার নাম কবর। দুনিয়ায় এটাই তার
সর্বশেষ ঠিকানা। যখন দাফন করা হয়, জীবিতদের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়
এবং সে চলে যায় অদৃশ্য জগতে। মানুষ অনেকটা অসহায় এবং আল্লাহর তাকদীরের কাছে অপারগ
হয়ে প্রস্থান করে কবরের জগতে। মৃত্যুর বিভীষিকা, কবরের চাপ অতঃপর ফিরিশতাদের
প্রশ্ন, হাশরের ময়দানে উত্থান, হিসাব-নিকাশ ও কিসাস অর্থাৎ যুলুমের বদলা নেকীর
বিনিময় কিংবা পাপের বোঝা গ্রহণ করে এবং ডান হাত কিংবা বাঁ হাতে আমলনামা প্রাপ্তির
গভীর উৎকণ্ঠার মতো নিদারুণ অবস্থার সম্মুখীন হয় পর পর। মৃত এ ব্যক্তিকে
কাণ্ডজ্ঞানহীন মূর্খ কবর পূজারী কতিপয় জীবিত মানুষের অন্তরে মহা শক্তিধর হিসেবে
পেশ করে শয়তান, ফলে তারা দো‘আ, সুপারিশ ও কল্যাণ লাভ করার আশায় ছুটে যায় তাদের
কবরে, পেশ করে টাকা-পয়সা, বিভিন্ন নজর-নেওয়াজ ও ত্যাগ-কুরবানী।
আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে শয়তান এভাবেই গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট
করেছে, সত্যকে আড়াল করে তাদের সামনে তুলে ধরেছে বাতিলকে। আল্লাহ তা‘আলা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করে সে মূর্খতা ও অন্ধকার উম্মত থেকে দূর
করেন। তিনি কবর যিয়ারত সম্পূর্ণ নিষেধ করে দেন, যেন জাহেলী কুসংস্কার, শির্কী
আকীদা, বিচ্যুতি ও শয়তানী সংশয় থেকে তাদের অন্তর সফেদ ও পরিচ্ছন্ন হয়। অতঃপর যখন
তাদের আকীদা পরিশুদ্ধ ও পরিপক্ব হলো, তাওহীদের আলোয় তাদের হৃদয়-কুন্দর ভরে গেল,
তিনি ঘোষণা দিলেন:
“আমি তোমাদেরকে কবর
যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম, তোমরা তা যিয়ারত কর”। [1] ইমাম তিরমিযী অতিরিক্ত বর্ণনা
করেন: “কারণ তা আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়”। [2] ইমাম আবু দাউদ তার পরিবর্তে বলেন:
“কারণ তার যিয়ারত করায় উপদেশ রয়েছে”। [3] ইমাম নাসাঈ-এর বর্ণনা করা শব্দ
হচ্ছে: “কবর যিয়ারত থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, অতএব, যে যিয়ারত করার ইচ্ছা
করে সে যিয়ারত করুক, তবে তোমরা বেহুদা কথা বল না”। [4]
তিনি উম্মতকে সতর্ক করে বলেন, যেন তারা দূর আগামীতে শয়তানের
বিস্মৃতি ও প্রতারণায় সঠিক পথহারা না হয়:
“আল্লাহ ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের লা‘নত করুন, তারা তাদের নবীদের
কবরকে মসজিদ বানিয়েছে”।[5] আবু
হুরায়রা থেকে ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন: “হে আল্লাহ আমার কবরকে প্রতিমা [6] বানিও
না, আল্লাহ সে জাতিকে লা‘নত করুন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানায়”। [7]
কবর যিয়ারত করার বৈধতা থেকে কেউ যেন তার উপর নির্মাণ করা, তাকে
ঘিরে বসা ও তা ইবাদাত খানায় পরিণত করার ভ্রান্তিতে লিপ্ত না হয় তাই আরো সতর্কতা
অবলম্বন করেন। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন,
“কবরের উপর নির্মাণ
করা, তার উপর বসা অথবা তার উপর সালাত পড়া থেকে”। [8]
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবুল হাইয়াজ আল-আসাদীকে বলেন, আমি কি
তোমাকে সে কাজের জন্য প্রেরণ করব, যার জন্য আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু আমাকে প্রেরণ
করেছেন?
“যাও, কোনো মূর্তি
রাখবে না অবশ্যই তা ধ্বংস কর, আর না রাখবে কোনো উঁচু কবর, অবশ্যই তা বরাবর কর”। [9]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন:
“যেন কবর পাকা (বা টাইলস) করা না হয়, তার উপর বসা না হয় এবং
তার উপর ঘর নির্মাণ করা না হয়”। [10] ইমাম
তিরমিযী বলেন: “কবর পাকা করা, তার উপর লিখা, তার উপর নির্মাণ করা এবং তা পায়ে
পিষ্ট করতে নিষেধ করেছেন”। [11] নাসাঈর শব্দ হচ্ছে: “কবরের উপর
নির্মাণ করা অথবা তার উপর বৃদ্ধি করা অথবা তা পাকা করা অথবা তার উপর লিখা থেকে
নিষেধ করেছেন”। [12]
কবরকে সম্মান জানিয়ে দামি বস্তু সেখানে ব্যয় করা শরী‘আতের
দৃষ্টিতে বৈধ নয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু এতটুকু প্রমাণিত
আছে যে, তিনি কবরের উপর মাটি দিয়েছেন এবং কিছু ছোট পাথর দিয়েছেন যেন মাটি তার উপর
বসে যায়, তার অতিরিক্ত করা সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি। তাই কবরের উপর থেকে শ্রদ্ধা
জ্ঞাপনমূলক সকল বস্তু সরিয়ে ফেলার নির্দেশ করেছেন তিনি, হোক সেটা ইট-পাথর,
প্লাস্টার, মার্বেল, সিরামিক অথবা কোনো খনিজ দ্রব্য।
মুদ্দাকথা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরুতে কবর
যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছেন, পরবর্তীতে তার অনুমতি দিয়েছেন হিকমত বর্ণনা করাসহ:
“তোমরা কবর যিয়ারত কর, কারণ তা আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়”। [13] কাদি ইয়াদ বলেন: “উপদেশ গ্রহণ
করার নিমিত্তে কবর যিয়ারত করা বৈধ, বড়ত্ব প্রকাশ, প্রতিযোগিতা ও মাতম করার
উদ্দেশ্য নয়, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বেহুদা কথা বল
না”। [14] কাদি
ইয়াদ বলেন: “আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়া ব্যতীত কবর যিয়ারত করার কোনো কারণ আমি জানি
না”। [15]
কীভাবে কবর যিয়ারত করব সেটাও রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আদর্শে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের
শেষাংশে ‘বাকি করবস্থান’-এ যেতেন। সেখানে তিনি বলতেন:
“হে মুমিনদের
বাড়ি-ঘরের অধিবাসীগণ তোমাদের ওপর সালাম, তোমাদের যা ওয়াদা করা হয়েছিল সামনে হাযির
হয়েছে, (আমাদের পরিণতিও তোমাদের পরিণতির মতো হবে) তবে আমরা আগামীকাল পর্যন্ত অবকাশ
প্রাপ্ত। আর আমরা অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সাথে মিলিত হবো। হে আল্লাহ, তুমি
বাকী‘ আল-গারকাদের অধিবাসীদের ক্ষমা কর”।[16] অনুরূপ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
যখন জানতে চান, কীভাবে কবর যিয়ারত করবেন, তিনি বলেন, বল:
“হে মুমিন ও মুসলিমদের
বাড়ি-ঘরের অধিবাসীগণ, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের ওপর আল্লাহ রহম করুন, আমরা
অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সাথে মিলিত হবো”। অপর বর্ণনায় এসেছে: “আল্লাহর নিকট
আমাদের জন্য ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি”।[17]
এভাবে আমাদেরকে তিনি কবর যিয়ারত করার নিয়ম বাতলে দেন; কিন্তু
শয়তান মূর্খ ও বিপথগামীদের নিকট শির্ককে সুন্দরভাবে পেশ করে, তারা কবরে গিয়ে বলে:
হে আমার সায়্যেদ অমুক (মৃত), আমাকে সাহায্য কর; তার নিকট বিভিন্ন প্রয়োজন পেশ করে,
যা কবিরা গুনাহ ও শির্ক।
অতএব, যে যিয়ারত করবে সে যিয়ারত করার কারণও গ্রহণ করবে অর্থাৎ
উপদেশ। আর এটা হাসিল হয় যে কোনো কবর যিয়ারত দ্বারা, নিকট আত্মীয় কিংবা দূর
সম্পর্কীয় বলে কোনো কথা নেই। মূল উদ্দেশ্য উপদেশ গ্রহণ করা, মানুষের শেষ পরিণতি
মাটির গর্ত ভিন্ন কিছু নয়। মৃত ব্যক্তি মুমিন হলে কবর প্রশস্ত করা হয়, কাফির হলে
সংকীর্ণ করা হয়। সুতরাং কবর যিয়ারত করার জন্য দূর কোথাও যাওয়া কিংবা দীর্ঘ সফর
করার অর্থ নেই, কারণ যে কোনো কবরের পাশে দাঁড়ালে উপদেশ হাসিল হয়। হ্যাঁ, যদি স্বীয়
পিতা, মাতা বা কোনো সন্তানের কবর যিয়ারত করা হয়, তাহলে উপদেশ গ্রহণ গভীর হয়, দলীল
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করেন, তিনি নিজে কাঁদেন এবং যারা পাশে ছিল তাদের
কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন:
“আমি আমার রবের নিকট
অনুমতি চেয়েছি যে, আমার মায়ের জন্য ইস্তেগফার করব, তিনি আমাকে অনুমতি দেন নি, আমি
তার কবর যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছি, তিনি আমাকে তার অনুমতি দেন। অতএব, তোমরা কবর
যিয়ারত কর, কারণ তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়”।[18]
কেউ বলতে পারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের
শহীদদের কবর যিয়ারত করেছেন -এটা কি দীর্ঘ সফর নয়? না, এটা দীর্ঘ সফর নয়। উহুদ
মদীনার পাহাড়সমূহ থেকে একটি পাহাড়, উহুদের শহীদদের কবর মদীনার নিকটবর্তী, তার জন্য
দীর্ঘ সফর করার প্রয়োজন হয় না, মদীনা থেকে কেউ উহুদ গেলে বলা হয় না সফরে গিয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট গিয়েছেন মৃত্যুর পূর্বে
দো‘আ ও ইস্তেগফার করার উদ্দেশ্যে, যেমন সহীহ বুখারীতে উকবাহ ইবন আমের থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন:
“মৃত ও জীবিতদের বিদায়
জানানোর মতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আট বছর পর উহুদের শহীদদের
জন্য দো‘আ করেছেন”।[19]
অনুরূপ তিনি ‘বাকি কবরস্থান’ যিয়ারত করেছেন আল্লাহর নির্দেশে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“জিবরীল আমার নিকট এসে বলেন: আপনার রব আপনাকে নির্দেশ করছেন
বাকি‘র অধিবাসীদের নিকট আসুন এবং তাদের জন্য দো‘আ করুন”।[20]
অতএব, উহুদ ও বাকি‘র ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আদিষ্ট ছিলেন, সেখানে তিনি তাদের জন্য ইস্তেগফার করেন। তাদের থেকে বরকত
হাসিল কিংবা নিজের প্রয়োজন পেশ করার জন্য যাননি, সেখানে পৌঁছার জন্য তার দীর্ঘ সফর
ও আসবাব-পত্রসহ প্রস্তুতি গ্রহণ ছিল না। কোনো কিতাবে উল্লেখ নেই নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম কিংবা মূসা কিংবা কোনো নবীর কবর যিয়ারত করার জন্য দীর্ঘ
সফর করেছেন, অথচ তাদের কবরের জায়গা তিনি জানতেন। অনুরূপ কোনো সাহাবী থেকে প্রমাণিত
নয় যে, কবর যিয়ারত করার জন্য তারা দীর্ঘ সফর করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব যেখানে তিনি
নিজে বলেছেন: “তিনটি মসজিদ ব্যতীত দীর্ঘ সফর করা যাবে না”।[21]
এভাবেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতকে
তাওহীদ বিনষ্টকারী প্রত্যেক বস্তু থেকে সতর্ক করেছেন, সাহাবীগণ তার আদর্শ
বাস্তবায়ন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে; কিন্তু শয়তান তার পুরনো পদ্ধতি বেছে নেয় মানুষকে
পথহারা করার নিমিত্তে নতুন লেভেল দিয়ে, কবরের দিকে ধাবিত করার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন
করে, ইসলাম থেকে ছিটকে পড়া কিংবা কুমতলব নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করা কতিপয় অনুসারীকে
দিয়ে মিথ্যা রচনা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বলে প্রচার করে,
সাথে যুক্ত করা হয় আজগুবি অনেক ফযীলত। কতক নাম মাত্র আলেম না বুঝে সেগুলো প্রচার
করে, তাতে বিধৃত মনগড়া ফযীলতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং যারা তার থেকে সতর্ক করে
তাদের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়!
আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম সুরক্ষার অংশ হিসেবে তাওহীদের ধারক
আলেমদের তাদের পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দেন, তারা উম্মতকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ওপর আরোপ করা মিথ্যাচার সম্পর্কে সতর্ক করেন। বানোয়াট জাল
হাদীসসমূহের অসারতা তুলে ধরেন, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দাবির সাথে তার বৈপরীত্য
প্রমাণ করেন, যেন প্রকৃত মুসলিম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যিকার
অনুসারীরা তার আদর্শের ওপর অটল থাকে। বক্ষ্যমাণ পুস্তিকা সে ধারাবাহিকতার অংশ
বিশেষ। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করার তাওফীক দিন।
প্রশ্ন
দু’জন ব্যক্তি ঝগড়ায় জড়িয়েছে যে, কারো জন্য নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ ব্যতীত শুধু কবর যিয়ারত করার নিয়তে সফর
করা জায়েয কি না, বিষয়টি আমাদের বুঝিয়ে বলুন, আল্লাহ আপনাদেরকে হিফাযত করুন?
উত্তর: ইসলামের শুরুতে কবর যিয়ারত করা নিষেধ ছিল। কারণ তখন মানুষ
সবেমাত্র মূর্তিপূজা ত্যাগ করে মুসলিম হয়েছে, অতঃপর তা রহিত করে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম, তোমরা তা
যিয়ারত কর। কারণ, কবর আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়”।[22]
তিনি শুধু পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত বৈধ করেন। ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের[23] কারণে
নারীদের জন্য তা কিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধই থাকে, যা বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ,
তিরমিযী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ:
“নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী নারীদের লা‘নত করেছেন”।[24]
আরো হারাম করেন নির্দিষ্ট কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্য দীর্ঘ সফর।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন:
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত
কোনো বস্তুর দিকে (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) বাহন (গাড়ি) হাঁকানো যাবে না”।[25]
শেষের হাদীস থেকে তিনটি মসজিদের জন্য সাওয়াবের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ
সফর করা বৈধ প্রমাণিত হয়: মসজিদুল হারাম, মসজিদুন নবী ও মসজিদুল আকসা।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত সহীহ হাদীসের ভাষ্য -তিনটি মসজিদ
ব্যতীত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা
বৈধ নয় অর্থাৎ যদি যিয়ারতকারী নবীর মসজিদ ব্যতীত শুধু কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্য
করে। যদি মসজিদ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করে, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করে কোনো সমস্যা নেই, এরূপ করা বৈধ, কারণ পূর্বের হাদীস
থেকে জেনেছি পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা বৈধ।
এ ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্পষ্ট কোনো
কথা ও কর্ম বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয় নি, যা প্রমাণ করে নির্দিষ্ট কবরের জন্য সফর
করা বৈধ, হোক সেটা তার কবর কিংবা কারো কবর। কোনো সাহাবী ও তাদের অনুসারী কোনো
আদর্শ পুরুষ সম্পর্কে জানা যায় নি, যিনি শুধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিংবা কারো কবর যিয়ারত করার জন্য দীর্ঘ সফর করেছেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে একটি মারফু হাদীসে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে এমন কোনো আমল করল
যার ওপর আমাদের আদর্শ নেই তা প্রত্যাখ্যাত”। [26] অতএব, সকল কল্যাণ আদর্শ
পূর্বসূরিদের আনুগত্যে এবং সকল অনিষ্ট পরবর্তীদের নতুন আবিষ্কারে।
এটাই প্রকৃত সত্য ও সঠিক ফায়সালা, তবে পরবর্তী কতক লোক, যারা
ইলমের সাথে সম্পৃক্ত, শুধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর কিংবা অন্য
কারো কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফর করাকে বৈধ বলেন, এমন কতিপয় দলীলের ওপর
ভিত্তি করে, যা হয়তো বানোয়াট অথবা খুব দুর্বল, যেসব হাদীস দ্বারা শর‘ঈ বিধান
প্রমাণিত হয় না। হাদীস বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিকট যা স্বীকৃত নীতি, আমি হাদীস
বিশারদ ইমামদের উক্তিসহ এখানে তা উল্লেখ করছি, আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে
বলছি: সাওয়াবের নিয়তে দীর্ঘ সফর করা যারা বৈধ বলেন, তাদের দলীল চৌদ্দটি হাদীস, যার
একটিও তাদের দাবির পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করা বৈধ নয়।
১. “যে আমার কবর যিয়ারত করল তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব
হলো”।
বাণীটি উল্লেখ করেছেন আবুশ শাইখ ও ইবন আবিদ দুনিয়া ইবন উমার
থেকে। বাণীটি সহীহ ইবন খুযাইমাতেও আছে, তবে তিনি তার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত
করেছেন।[27] তিনি
বলেছেন: “তার সনদ সম্পর্কে আমার অন্তরে সংশয় রয়েছে, আমি তার দায়িত্ব থেকে আল্লাহর
নিকট পানাহ চাই (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অত্র হাদীস
সম্পৃক্ত করার পাপ থেকে আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই)”।[28]
আমি বলছি, হাদীসের সনদে দু’জন অপরিচিত বর্ণনাকারী আছেন:
ক. আব্দুল্লাহ ইবন উমার আল-ওমরী, আবু হাতিম তার সম্পর্কে
বলেছেন: “মাজহুল” অর্থাৎ অপরিচিত।
খ. মূসা ইবন হিলাল আল-বসরী আল-আবদী, তার সম্পর্কেও আবু হাতিম
বলেছেন: “মাজহুল”[29] অর্থাৎ
হাদীস বিশারদদের নিকট অখ্যাত।
উকাইলি বলেছেন: মুসা ইবন হিলালের হাদীস সহীহ নয়, তাকে
সমর্থনকারী কেউ নেই, অর্থাৎ এ হাদীসের ক্ষেত্রে।[30]
ইমাম যাহাবী বলেছেন: তার নিকট যেসব হাদীস রয়েছে, তন্মধ্যে
সবচেয়ে মুনকার আব্দুল্লাহ ইবন উমারের হাদীস, নাফে‘ থেকে। সে ইবন উমার থেকে… অতঃপর
তিনি এ হাদীস উল্লেখ করেন।[31] অপর
বর্ণনায় এসেছে এভাবে:
“যে আমার কবর যিয়ারত
করল, তার জন্য আমার সুপারিশ হালাল হলো”।
২. যে হজ করল, অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করল, সে
যেন ঐ ব্যক্তির মতো যে আমার জীবনে আমার যিয়ারত করেছে”। বাণীটি তাবরানী ও বায়হাকী[32] ইবন
উমার থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটির সনদে হাফস ইবন সুলাইমান একজন বর্ণনাকারী আছেন, ইমাম
আহমদ তার সম্পর্কে বলেছেন: “হাদীসের ক্ষেত্রে সে পরিত্যক্ত”।[33]
ইমাম বুখারী বলেছেন: “মুহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন”।[34]
ইবন খারাশ বলেছেন: “সে মিথ্যুক, হাদীস রচনা করত।
ইমাম যাহাবী অত্র হাদীসকে হাফস ইবন সুলাইমানের মুনকার
বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তিনি বলেন: “বুখারীর ‘আদ-দু‘আফা’ কিতাবে তার
জীবনী আলোচনায় ‘মুআল্লাক’ বর্ণনায় রয়েছে: ইবন আবুল কাদি বলেন, আমাদেরকে বর্ণনা
করেছেন সা‘ঈদ ইবন মানসুর, তিনি বলেন, আমাদেরকে বলেছেন হাফস ইবন সুলাইমান, লাইস
থেকে, তিনি মুজাহিদ থেকে, তিনি ইবন উমার থেকে, মারফু‘ হিসেবে, (অর্থাৎ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করে), (যে হজ করল আমার
মৃত্যুর পর…)[35]
৩. “যে সাওয়াবের নিয়তে মদিনায় আমাকে যিয়ারত করল, আমি তার জন্য
কিয়ামতের দিন সাক্ষী অথবা সুপারিশকারী হবো”।
বাণীটি বায়হাকী আনাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন।[36]
অত্র হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী আবুল মুসান্না সুলাইমান ইবন
ইয়াযিদ আল-কা‘বি রয়েছে, তার সম্পর্কে
ইমাম যাহাবী বলেন: “পরিত্যক্ত ও প্রত্যাখ্যাত”।
আবু হাতিম বলেন: মুনকারুল হাদীস, (হাদীসের ক্ষেত্রে
পরিত্যক্ত)।[37]
ইবন হিব্বান বলেন: এ হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করা বৈধ নয়।[38]
৪. “হে হজ করল, কিন্তু আমার যিয়ারত করল না সে আমার সাথে রূঢ়তা
অবলম্বন করল”।
সাখাবী রহ. ‘মাকাসিদুল হাসানাহ’ গ্রন্থে বলেন: “হাদীসটি
বিশুদ্ধ নয়, এটি বর্ণনা করেছেন ইবন আদি ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে, ইবন হিব্বান
‘আদ-দু‘আফা’ গ্রন্থে, দারাকুতনী “আল-‘ইলাল” গ্রন্থে ও ইমাম মালিকের ‘গারায়েব
সমগ্র’ থেকে ইহা একটি, ইবন উমার থেকে মারফু‘ হিসেবে (অর্থাৎ সরাসরি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করে) বর্ণিত”।[39]
ইমাম যাহাবী ‘মিযানুল ইদিতাল’ গ্রন্থে বলেন: “বরং হাদীসটি
জাল”।[40]
৫. “যে আমার কবর যিয়ারত করল অথবা বলেছেন: যে আমাকে যিয়ারত করল,
আমি তার সুপারিশকারী হবো অথবা সাক্ষী হবো, আর যে হারামাইনে মারা গেল, আল্লাহ তাকে
কিয়ামতের দিন নিরাপদ ব্যক্তিদের সাথে উঠাবেন”।
বাণীটি আবু দাউদ ত্বায়ালিসী উমার ইবনুল খাত্তাব থেকে তার
মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
অত্র বাণীর সনদে একজন মাজহুল বর্ণনাকারী (অপরিচিত রাবী)
রয়েছেন। সনদটি নিম্নরূপ: আবু দাউদ বলেছেন: আমাদেরকে বলেছে সিওয়ার ইবন মায়মুন আবুল
জাররাহ আল-আবদী, তিনি বলেন: আমাকে বলেছেন উমারের পরিবারের জনৈক ব্যক্তি, উমার
থেকে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
“…….”
৬. “যে আমাকে যিয়ারত করল আমার মৃত্যুর পর, সে যেন আমাকে যিয়ারত
করল আমার জীবিত অবস্থায়, আর যে দু’টি হারাম থেকে কোনো একটিতে মারা গেল, তাকে কিয়ামতের
দিন নিরাপত্তার সাথে উঠানো হবে”।
বাণীটি উদ্ধৃত করেছেন দারাকুতনি স্বীয় সুনান গ্রন্থে ও ইবন
আসাকির, হাতিব থেকে।[41]
অত্র হাদীসের সনদে হারুন আবু কায‘আহ অথবা ইবন আবি কায‘আহ নামক
একজন বর্ণনাকারী আছেন, তার সম্পর্কে:
ইমাম বুখারী বলেন: “এ হাদীসের কোনো মুতাবি‘ হাদীস নেই”।[42]
আবু কুয‘আর শাইখও মাজহুল।
ইমাম যাহাবী ‘মিযানুল ইতিদাল’[43] গ্রন্থে হাতিবের এ হাদীস এবং তার
পূর্বের উমারের হাদীসকে হারুন ইবন আবু কুযআহর মুনকার সমগ্রের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।
৭. “যে একই বছর আমার ও আমার পিতা ইবরাহীমের কবর যিয়ারত করল সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে”।
ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে বলেন: “হাদীসটি বানোয়াট, তার
কোনো ভিত্তি নেই। হাদীসের ইলম সম্পর্কে জ্ঞাত কেউ তা বর্ণনা করেন নি”।[44]
৮. “যে যিয়ারত করার জন্য আমার নিকট আসল, আমার যিয়ারত ব্যতীত
কোনো প্রয়োজন তাকে আকর্ষণ করে নি, আমার ওপর জরুরি হয়ে যায় যে, কিয়ামতের দিন আমি
তার সুপারিশকারী হবো”।
বাণীটি উদ্ধৃত করেছেন ইবনুন নাজ্জার ‘আদ-দুররাহ আস-সামিনাহ ফি
তারিখিল মাদিনাহ’[45] গ্রন্থে
এবং দারাকুতনী তার ‘আতরাফ’ গ্রন্থে।[46]
হাদীসটির সনদে একজন বর্ণনাকারী মাসলামাহ ইবন সালেম রয়েছে, তার
সম্পর্কে ইমাম যাহাবী ‘দিওয়ানুদ দো‘আফা’ গ্রন্থে বলেন: “তার মধ্যে জাহমিয়াহ মতবাদ
রয়েছে”।[47]
ইবন আব্দুল হাদি বলেন: “তার অবস্থা অজ্ঞাত, আহলে-ইলমদের বর্ণনা
থেকে তার পরিচয় মিলে না, তার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা বৈধ নয়। সে অনেকটা পূর্বে
উল্লিখিত মূসা ইবন হিলাল আল-‘আবদির মত।[48]
৯. “যে আমার কবর যিয়ারত করেনি, সে আমার সাথে অসদাচরণ করল”।
ইবন নাজ্জার ‘তারিখুল মদিনাহ’ গ্রন্থে সনদ বিহীন ও কর্তাহীন ক্রিয়া
দ্বারা বাণীটি উল্লেখ করেছেন, তার বাক্যটি নিম্নরূপ: “আলী থেকে বর্ণনা করা হয়েছে,
তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ….”[49]
ইবন আব্দুল হাদি বলেন: “আলী ইবন আবু তালিবের ওপর এটি মিথ্যা
রচনা”।[50]
আমি বলি: হাদীসটির সনদে নু‘মান ইবন শিবল আল-বাহিলী রয়েছে, সে
(মিথ্যার অপবাদে) অভিযুক্ত।
ইবন হিব্বান বলেন: “সে প্রলয় সৃষ্টিকারী (আজগুবি) হাদীস বর্ণনা
করে”।[51]
ইমাম যাহাবী হাদীসটি ‘মি‘যানুল ইতিদাল’[52] গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
যাহাবীর সনদেও মুহাম্মাদ ইবন ফাদল ইবন আতিয়াহ আল-মাদিনী রয়েছে,
সে মিথ্যুক, মিথ্যুক ও হাদীস রচনাকারী হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।
যাহাবী ‘মিযানুল ইতিদাল’ গ্রন্থে বলেন: “আহমদ বলেন: তার হাদীস
মিথ্যাবাদীদের হাদীস”।[53]
ইবন মা‘ঈন বলেন: ফাদল ইবন আতিয়াহ সেকাহ, কিন্তু তার ছেলে
মুহাম্মাদ মিথ্যাবাদী”।[54]
আর যাহাবী বলেন: এ ব্যক্তির মুনকারের সংখ্যা অনেক বেশি, কারণ
সে ছিল সাহেবে হাদীস।[55]
তিনি আরো বলেন: ফাল্লাস বলেছেন: সে মিথ্যাবাদী।[56]
ইমাম বুখারী বলেন: মুহাদ্দিসগণ তার সম্পর্কে নীরবতা অবলম্বন
করেছেন, ইবন আবি শায়বাহ তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।[57]
অত্র হাদীসটি আলী থেকে মারফু‘ হিসেবে এমন সনদ দ্বারা বর্ণিত,
যেখানে আব্দুল মালিক ইবন হারুন ইবন ‘আনতারাহ রয়েছে, আর সে মিথ্যা ও হাদীস রচনা
করার অভিযোগ অভিযুক্ত।
ইয়াহইয়া বলেন: সে মিথ্যাবাদী।[58]
আবু হাতিম বলেন: পরিত্যক্ত ও হাদীস ভুলা হিসেবে প্রসিদ্ধ।[59]
সাদি বলেন: সে মিথ্যাবাদী।[60]
ইমাম যাহাবী বলেন: তাকে নিম্নের হাদীস রচনা করার অভিযোগে
অভিযুক্ত করা হয়েছে:
“যে ‘আইয়ামে বিদে’র
দিন থেকে এক দিন সিয়াম রাখল, দশ হাজার বছরের সমান করা হবে”।[61]
আব্দুল মালিক ইবন হারুনের রচিত আরো অনেক হাদীস রয়েছে, বিস্তারিত
দেখার জন্য যাহাবী রচিত ‘মিযানুল ই‘তিদাল’ দেখুন।[62]
১০. “যে আমার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবে তার জন্য আমার সুপারিশ
ওয়াজিব হবে”।
বাণীটি ইয়াহইয়া আল-হুসাইনী বুকাইর ইবন আব্দুল্লাহ থেকে মারফু‘
হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।
ইবন আব্দুল হাদি বলেন: “হাদীসটি বাতিল, তার কোনো ভিত্তি নেই,
দ্বিতীয়তঃ এতে কবরের উদ্দেশ্যে সফর করার কোনো দাবি বা অর্থ নেই”।[63]
১১. “আমার যিয়ারত করা যার পক্ষে সম্ভব হয় নি, সে যেন ইবরাহীম
খলীলের কবর যিয়ারত করে”।
ইবন আব্দুল হাদি বলেছেন: “হাদীসটি বানোয়াট ও মিথ্যা সংবাদের
অন্তর্ভুক্ত, যার ইলমের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক রয়েছে সে অনায়াসে জানবে হাদীসটি বানোয়াট
ও রচনা করা সংবাদ। এ জাতীয় মিথ্যা হাদীসের খারাপি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য ব্যতীত
মানুষের সামনে তা বর্ণনা করা বৈধ নয়”।[64]
১২. “যে ইসলামের হজ সম্পাদন করল, আমার কবর যিয়ারত করল, কোনো
যুদ্ধে অংশ নিল এবং বায়তুল মাকদিসে আমার ওপর সালাম পাঠ করল, আল্লাহ তার ওপর যা ফরয
করেছেন সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না”।[65]
আবুল ফাতহ আযদি তার ফাওয়ায়েদের দ্বিতীয় খণ্ডে হাদীসটি উদ্ধৃত
করেছেন, আবু সাহল ইবন আব্দুল্লাহ আল-মিসসিসি থেকে, সে হাসান ইবন উসমান আয-যিয়াদি
থেকে।
ইমাম যাহাবী বলেন: হাসান ইবন উসমান আয-যিয়াদি থেকে গ্রহণ করা
বদরের হাদীস বাতিল অর্থাৎ অত্র হাদীস। তার থেকে এ হাদীস নু‘মান ইবন হারুনও বর্ণনা
করেছেন।[66]
দ্বিতীয়তঃ আবুল ফাতহ আযদি দুর্বল।
ইবনুল জাওযী বলেন: সে হাফেয ছিল, কিন্তু তার হাদীসে অনেক
মুনকার রয়েছে, মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল বলতেন।[67]
খতিব বলেন: সে হাদীস রচনা করার অভিযোগে অভিযুক্ত।[68]
বারকানী তাকে দুর্বল বলেছেন, মসূলের অধিবাসীরা তাকে কিছুই গণনা
করত না।[69]
১৩ “আমার যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে যে আমার কবর পর্যন্ত পৌঁছল,
আমি তার জন্য কিয়ামতের দিন সাক্ষী অথবা সুপারিশকারী হবো”।
উকাইলি এ বাণী ইবন আব্বাস থেকে মারফু হিসেবে তার ‘আদ-দুআফা’[70] গ্রন্থে
উদ্ধৃত করেছেন, আর তার সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন ইবন আসাকির।
হাদীসটি ইবন জুরাইজের ওপর মিথ্যা রচনা মাত্র।
ইবনু আব্দুল হাদি বলেছেন: “হাদীসের মূল বাক্য ও সনদে বিকৃতি
ঘটেছে, মূল বাক্যের বিকৃতি যেমন এখানে রয়েছে «من زارني» যিয়ারাহ ধাতু থেকে
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক্রিয়াটি হবে
“যে আমাকে নিদ্রায়
দেখল সে তার মতো যে আমাকে জীবিত দেখল”। উকাইলির কিতাবে এরূপ রয়েছে, যা ইবন আসাকির
বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ «من رآني» রুইয়া ধাতু থেকে। এ হিসেবে তার অর্থ সঠিক। কারণ,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে আমাকে নিদ্রায়
দেখল সে আমাকে দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি গ্রহণ করতে পারে না”।
আর সনদের বিকৃতি হচ্ছে: সা‘ঈদ ইবন মুহাম্মাদ আল-হাদরামী, সঠিক
ভাষ্য হচ্ছে ‘শু‘আইব ইবন মুহাম্মাদ’ ইবন আসাকিরের বর্ণনায় এরূপ রয়েছে।
অতএব, কোনো অবস্থাতে হাদীসটি প্রমাণিত নয়, তার শব্দ যিয়ারাহ
হোক কিংবা রু’ইয়া হোক, কারণ তার বর্ণনাকারী ফুদালা ইবন সা‘ঈদ যামিল মুযানি অপরিচিতি
শাইখ, এ হাদীস ব্যতীত কোনোভাবে তার সম্পর্কে জানা যায় না, আর হাদীসটি সে একাই
বর্ণনা করেছে, তার মুতাবি‘ কোনো হাদীস নেই।[71]
ইমাম যাহাবী বলেন: “উকাইলি বলেছেন, তার হাদীস সংরক্ষিত নয়,
আমাদেরকে বলেছেন সা‘ঈদ ইবন মুহাম্মাদ আল-হাদরামি, তিনি বলেন: আমাদেরকে বলেছেন,
ফুদালাহ, তিনি বলেন: আমাদেরকে বলেছেন: মুহাম্মাদ ইবন ইয়াহইয়া, ইবন জুরাইজ থেকে,
তিনি আতা থেকে, তিনি ইবন আব্বাস থেকে মারফু‘ হিসেবে:
“যে আমাকে যিয়ারত করল
আমার মৃত্যুর পর, সে ঐ ব্যক্তির মতো যে আমাকে যিয়ারত করল আমার জীবিত অবস্থায়”।
যাহাবি বলেছেন: হাদীসটি ইবন জুরাইযের ওপর মিথ্যা রচনা।[72]
১৪. “আমার উম্মত থেকে যার সামর্থ্য আছে, অতঃপর আমার যিয়ারত করল
না, তার কোনো আপত্তি শ্রবণ করা হবে না”।
ইবন নাজ্জার ‘তারিখুল মদিনায়’ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন আনাস
থেকে।[73]
এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী আছেন সাম‘আন ইবন মাহদী, তার
সম্পর্কে:
ইমাম যাহাবী বলেছেন: আনাস ইবন মালিক থেকে বর্ণনাকারী সাম‘আন
ইবন মাহদি এমন প্রাণী যার পরিচয় মিলে না, তার সাথে একটি মিথ্যা পুস্তক সম্পৃক্ত
করা হয়েছে, যা আমি দেখেছি। তার রচনাকারীকে আল্লাহ ধ্বংস করুন।[74]
ইবন হাজার ‘লিসান’[75] গ্রন্থে বলেন: এটি মুহাম্মাদ ইবন
মুকাতিল আল-রাযির বর্ণনা করা পাণ্ডুলিপি, তিনি গ্রহণ করেছেন জাফর ইবন হারুন
আল-ওয়াসেতি থেকে, তিনি সাম‘আন থেকে, অতঃপর অত্র নুসখা উল্লেখ করেছেন। এটি তিন শোর
অধিক হাদীস সম্বলিত একটি পাণ্ডুলিপি।
আমি বলছি: এ চৌদ্দটি হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেন, যারা বলেন
কবরের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফর করা বৈধ। কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফর করা বৈধ যারা বলেন, এসব তাদেরও দলীল।
প্রিয়পাঠক, আপনাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, এতে একটিও বিশুদ্ধ
হাদীস নেই, হাসান হাদীসও নেই, বরং প্রত্যেকটি হাদীস খুব দুর্বল, অথবা বানোয়াট, তার
কোনো ভিত্তি নেই, বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি থেকে যা আপনার সামনে পেশ করা হয়েছে। অতএব,
এসব হাদীসের আধিক্য ও একাধিক সনদের কারণে ধোঁকায় পতিত হবেন না। অনেক হাদীস রয়েছে,
যার সনদ আপনার সামনে পেশ করা এসব সনদকেও ছাড়িয়ে যাবে, তবুও তা হাদীস বিশারদগণের
নিকট বানোয়াট। কারণ, আধিক্যের কোনো ফায়দা নেই, যদি তার ভিত্তি মিথ্যাবাদীদের উপর,
অভিযুক্তদের ওপর, প্রত্যাখ্যাতদের ওপর অথবা অখ্যাত বর্ণনাকারীদের ওপর হয়, এসব
হাদীসে যেরূপ দেখা যায়। কারণ, উল্লিখিত হাদীস মিথ্যাবাদী অথবা অভিযুক্ত অথবা
পরিত্যক্ত অথবা অপরিচিত, যাদেরকে কোনোভাবে চিনা যায় না এমন বর্ণনাকারী থেকে মুক্ত
নয়। এ জাতীয় হাদীস থেকে শক্তি উপার্জন হয় না, যা হাদীস বিশারদগণের রীতি। এ কথা
তখন, সহীহ হাদীসে যখন তার বিপরীত বক্তব্য না থাকে, আর যদি সহীহ হাদীসে তার বিপরীত
বক্তব্য থাকে, তখন কোনোভাবেই দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন পূর্বে উল্লেখ আছে:
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফরের জন্য বাহন প্রস্তুত করা বৈধ নয়”।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: “নির্দিষ্ট কবর যিয়ারত করার
ব্যাপারে একটি হাদীসও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। সহীহ
গ্রন্থের লেখকগণ, সুনান গ্রন্থের লেখকগণ ও মুসনাদ গ্রন্থের কোনো লেখক যেমন ইমাম
আহমদ প্রমুখদের থেকে কেউ এ সম্পর্কে কোনো হাদীস বর্ণনা করেন নি। মূলত যারা বানোয়াট
ও জাল হাদীস সংগ্রহ করেছেন তারা এসব উদ্ধৃত করেছেন, এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, যা আলেমদের ঐকমত্যে দুর্বল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসের মত, যেমন:
“একই বছর যে আমার ও
আমার পিতা ইবরাহীমের যিয়ারত করল আমি আল্লাহর হয়ে তার জান্নাতের জিম্মাদারি গ্রহণ
করব” এবং “যে আমার মৃত্যুর পর আমার যিয়ারত করল সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমার
যিয়ারত করল”। এবং “যে হজ করেনি ও আমার যিয়ারত করে নি সে আমাকে বিচ্ছিন্ন করল”। এ
জাতীয় হাদীস মিথ্যা ও বানোয়াট”।[76]
আমি বলছি এ কথাই সঠিক, এভাবেই আল্লাহর সাথে দীনদারী রক্ষা করা
ওয়াজিব। আর যার নিকট এ বিষয়ে বিশুদ্ধ হাদীস থাকবে অর্থাৎ নির্দিষ্ট কবর যিয়ারত
করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফর করা মর্মে, তাকে অবশ্যই বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আর পূর্বে উল্লেখ করা এসব হাদীস বানোয়াট ও মিথ্যা, তবে কতক
হাদীস রয়েছে বৈধ কবর যিয়ারত সংক্রান্ত, যার ব্যাপারে সবাই একমত, কিন্তু সেগুলো
সফরের জন্য বাহন তৈরী করা সংক্রান্ত নয়।
বৈধ যিয়ারত সংক্রান্ত অনেক সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস রয়েছে, তার
জন্য এসব বাতিল হাদীসের প্রয়োজন নেই, যার দ্বারা শরী‘আতের কোনো বিধান সাব্যস্ত করা
বৈধ নয়, বরং তা বর্ণনা করাও বৈধ নয়, বানোয়াট অথবা দুর্বল, দলীল হিসেবে পেশ করা
দুরস্ত নয় ইত্যাদি বলা ব্যতীত। নতুবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সতর্কবাণীর অন্তর্ভুক্ত হবে, তিনি বলেছেন:
“যে আমার পক্ষ থেকে
কোনো হাদীস বর্ণনা করল ধারণা হচ্ছে তা মিথ্যা, তাহলে সেও দু’জন মিথ্যাবাদীর একজন”।
মুগিরা ইবন শু‘বা ও সামুরাহ ইবন জুনদুব থেকে ইমাম মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস
হাদীসটি মারফু‘ হিসেবে বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন।[77]
আল্লাহ ভালো জানেন, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর আল্লাহ সালাম ও সালাত প্রেরণ করুন। (আমীন)
[1] সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং ৯৭৭
[2] তিরমিযী,
হাদীস নং ১০৫৪
[3] আবু
দাউদ, হাদীস নং ৩২৩৫
[4] নাসাঈ,
হাদীস নং ২০৩১
[5] সহীহ
বুখারী ও মুসলিম।
[6] অর্থাৎ
মুর্তি ও প্রতিমার নিকট যেসব ইবাদাত আঞ্জাম দেওয়া হয়, সেসব থেকে আমার কবরকে হিফাযত
কর, যেন আমার কবরে কেউ নজর-নেয়াজ ও মান্নত না করে, কেউ বসে ইতিকাফ না করে,
কেউ দো‘আ ও ফরিয়াদ না করে এবং কেউ কেবলা ও কাবা না বানায়। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড
পূর্ববর্তীদের কবরে সংঘটিত হত, তাই সেসব থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার উম্মতকে সতর্ক করেছেন।
[7] আহমদ,
হাদীস (১২/৩১৪), আলবানি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: তাহযিরুস সাজিদ: (পৃ. ২৪),
যদিও ইবন রজব ফাতহুল বারী: (২/৪৪১) গ্রন্থে বলেছেন, তার সনদের সমস্যা আছে।
[8] আবু
ইয়ালা আল-মুসিলি বিশুদ্ধ সনদে স্বীয় মুসনাদ: (৩/৬৭) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আরো
দেখুন ইবন মাজাহ।
[9] সহীহ
মুসলিম (৯/৬১)
[10] সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং ৯৪, (২/৬৬৭); আহমদ (৩/২৯৫, ৩৩৯, ৩৩২) ও (৬/২৯৯)
[11] তিরমিযী,
হাদীস নং ১০৫২) ও (৩/৩৫৯)
[12] নাসাঈ
(৪/৮৮)
[13] সহীহ
মুসলিম।
[14] মুয়াত্তা
মালিক, আহমদ ও নাসাঈ।
[15] দেখুন,
শারহু মুসলিম লিল আবি (৩/৩৯৬)
[16] সহীহ
মুসলিম।
[17] সহীহ
মুসলিম।
[18] সহীহ
মুসলিম।
[19] সহীহ
বুখারী, কিতাবুল মাগাযী।
[20] সহীহ
মুসলিম।
[21] সহীহ
বুখারী ও মুসলিম।
[22] সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং ৯৭৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২৩৫; তিরমিযী, হাদীস নং ১০৫৪; নাসাঈ
(৪/৮৯); আহমদ (৫/৩৫৬)। এ ছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিসগণও বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
[23] শাইখ
(লেখক) বলেছেন: ইবন আব্বাস থেকে আবু সালেহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ, আবু সালেহ
সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে উম্মে হানীর মাওলা বাযাম। কেউ বলেছেন, বাযাম হচ্ছে মিজান
বসরী, বাযামের পরিচয় যাই মানি হাদীসটি সহীহ। কারণ বাযাম থেকে যদি মুহাম্মাদ ইবন
যাহাদাহ বর্ণনা করেন, তার হাদীস মুহাদ্দিসদের নিকট সহীহ হিসেবে স্বীকৃত। এ হাদীস
বাযাম থেকে, তবে তার থেকে যদি কালবি বা তার মতো কোনো বর্ণনা করে সেটা সহীহ নয়। আর
আমরা যদি আবু সালেহকে, মিজান বসরী মানি তবুও হাদিসের বিশুদ্ধতায় দ্বিমত নেই,
কারণ সে মুহাদ্দিসদের নিকট নির্ভরযোগ্য, তার সনদে ইনকিতা (বিছিন্নতা), তাদলিস
(অস্পষ্টতা) ও ইরসাল (সাহাবীকে উহ্য রাখার দোষ) নেই।
[24] আবু
দাউদ, হাদীস নং ৩২৩৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৩২০; নাসাঈ (৪/৯৫); ইবন মাজাহ, হাদীস নং
১৫৭৫। সবাই হাদীসটি ইবন আব্বাসের ছাত্র আবু সালেহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আবু সালেহ
উম্মে হানীর মাওলা (গোলাম) ছিলেন।
আবু সালেহ এর স্বপক্ষে (অপর দু’জন সাহাবী থেকে বর্ণিত) দু’টি
শাহিদ হাদীস রয়েছে, একটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী, হাদীস নং ১০৫৬ ও ইবন মাজাহ, হাদীস
নং ১৫৭৬ উমার ইবন আবু সালামাহ থেকে, সে তার বাবা আবু সালামাহ সূত্রে, হাদীসটি মারফু:
«لعن الله زوارات القبور».
“আল্লাহ কবর যিয়ারতকারী নারীদের উপর লা‘নত করেছেন”।
অপর হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৭৪; বুখারী,
‘তারিখুল কাবির’ গ্রন্থে (৩/২৯); আহমদ (৩/৪৪২-৪৪৩); ইবন আবি শাইবাহ (৩/৩৪৫)।
আব্দুর রহমান ইবন বুহমান সূত্রে, সে আব্দুর রহমান ইবন হাসসান থেকে, সে পিতা হাসসান
থেকে:
«لعن رسول الله rزوارات القبور».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী নারীদের
ওপর লা‘নত করেছেন”।
[25] সহীহ
বুখারী, হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।
[26] সহীহ
বুখারী, হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।
[27] দেখুন,
‘মাকাসিদুল হাসানাহ’: (১১২৫)
[28] দেখুন,
‘তালখিসুল হাবীর’: (২/২৬৭), ‘লিসানুল মিযান’: (৬/১৩৫)
[29] আল-জারহু
ওয়াত-তাদীল: (৮/১৬৬)
[30] আদ-দু‘আফা:
(৪/১৭০)
[31] মিযানুল
ইতিদাল: (৪/২২৬)
[32] তাবরানি
ফি মুজামিল কাবির: (১২/৪০৬); বায়হাকি ফিস সুনানিল কুবরা: (৫/২৪৬); শু‘আবুল ঈমান:
(৮/৯২,৯৩)
[33] আল-‘ইলাল:
(২২৯৮)
[34] “আত-তারিখুল
কাবির”: (২/৩৬৩)
[35] মিজানুল
ইতিদাল: (১/৫৫৯)
[36] বায়হাকি
ফি শু‘আবুল ঈমান: (৮/৯৫), আনাসের ছাত্র সুলাইমান ইবন ইয়াজিদ সূত্রে।
[37] আল-জারহু
ওয়াত-তা‘দিল: (৪/১৪৯)
[38] আল-মাজরুহিন:
(৩/১৫১)
[39] আল-মাকাসিদুল
হাসানাহ: (১১৭৮)
[40] মিযানুল
ইতিদাল: (৪/২৬৫)
[41] আল-মাজরুহিন:
(৩/১৫১)
[42] দেখুন:
আদ-দু‘আফা লিল ‘উকাইলি: (৪/৩৬৩); আল-কামিল লি ইবন আদি: (৭/২৫৭৭)
[43] মিযানুল
ই‘তিদাল: (৪/২৮৫)
[44] আল-মাজমু‘
শারহুল মুহাযযাব: (৮/২৬১)
[45] আদ-দুররাহ
আস-সামিনাহ: (পৃ. ১৪৩), মাসলামাহ ইবন সালেম সূত্রে, সে আব্দুল্লাহ ইবন উমার থেকে,
সে নাফে‘ থেকে, সে সালেম থেকে এবং সে তার পিতা (আব্দুল্লাহ ইবন উমার) থেকে,
হাদীসটি মারফু‘।
[46] ফিল
আফরাদ ওয়াল গারায়েব, (যেমন ইবন তাহির রচিত তার আতরাফ গ্রন্থে রয়েছে: (৩/৩৭৬)
[47] দিওয়ানুদ
দু‘আফা: (পৃ. ৩৮৫)
[48] আস-সারিমুল
মুনকি: (পৃ. ৩৬)
[49] আদ-দুররাহ
আস-সামিনাহ: (পৃ. ১৪৪)
[50] আস-সারিমুল
মুনকি: (পৃ. ১৫১)
[51] আল-মাজরুহিন:
(৩/৭৩)
[52] মিযানুল
ই‘তিদাল: (৪/৬৫)
[53] আল-‘ইলাল:
(২/৪৫৯)
[54] আল-জারহু
ওয়াত-তা‘দিল: (৮/৭৫)
[55] মিযানুল
ই‘তিদাল: (৪/৭)
[56] মিযানুল
ই‘তিদাল: (৪/৬)
[57] দেখুন:
আত-তারিখুল কাবির: (১/২০৮), মিযানুল ই‘তিদাল: (৪/৬)
[58] তারিখুদ
দূরি: (২/৩৭৬)
[59] আল-জারহ
ওয়াত-তা‘দিল: (৫/৩৭৪)
[60] মিযানুল
ই‘তিদাল: (২/৬৬৬)
[61] মিযানুল
ই‘তিদাল: (২/৬৬৭)
[62] মিযানুল
ই‘তিদাল: (২/৬৬৬ ও ৬৬৭)
[63] আস-সারিম
আল-মুনকি: (পৃ. ১৫৩)
[64] আস-সারিমুল
মুনকি: (পৃ. ৫৩)
[65] দেখুন,
আস-সারিম আল-মুনকি: (পৃ.১৩৯ ও ১৪১)
[66] মিযানুল
ই‘তিদাল: (১/৩০০)
[67] আদ-দু‘আফা
লি ইবনুল জাওযি: (২/৫৩)
[68] তারিখু
বাগদাদ: (২/২৪৪)
[69] দেখুন,
মি‘যানুল ইতিদাল: (৩/৫২৩)
[70] আদ-দু‘আফা
লিল উকাইলি: (৩/৪৫৭)
[71] আদ-দু‘আফা
লিল ‘উকাইলি: (৩/৪৫৭)
[72] মিযানুল
ই‘তিদাল: (৩/৩৪৮ ও ৩৪৯)
[73] আদ-দুররাহ
আস-সামিনাহ লি ইবন নাজ্জার: (পৃ. ১৪৩-১৪৪)
[74] মিযানুল
ই‘তিদাল: (৩/১১৪)
[75] লিসানুল
মিযান: (৩/১১৪)
[76] ইকতিদাউস
সিরাতিল মুস্তাকীম: (২/৭৭২ ও ৭৭৩)
[77] মুসলিমের
ভূমিকা: (১/৯), মুগিরাহ ইবন শুবা ও সামুরাহ ইবন জুনদুব থেকে বর্ণিত।
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ
উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের
আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে
ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে,
আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে
হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে
তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়,
তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস
করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও
একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে
বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment