বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বাংলা সহিহ হাদিস সিরিজ -১ (সহিহ হাদিসের কুদসি সমগ্র)-১৬৩ টি হাদিস
সহিহ ও জাল-জইফ হাদিস চিহ্নিত/নির্নিত
সহিহ ও জাল-জইফ হাদিস চিহ্নিত/নির্নিত
পাপ-পুণ্য
লিখার নিয়ম ও আল্লাহর অনুগ্রহ
হাদিস নং-১
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন কোন পাপ
করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ
লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ [১]। আর
যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর
যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”। [বুখারি ও মুসলিম]
[১]
এ থেকে প্রমাণ হয় যে, পাপ ত্যাগ করাও নেকি, যদি তা আল্লাহর জন্য হয়।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা যখন নেকি করার
ইচ্ছা করে আমি তার জন্য একটি নেকি লিখি যতক্ষণ সে না করে, যখন সে করে আমি তার দশগুণ
লিখি। আর যখন সে পাপ করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য তা ক্ষমা করি যতক্ষণ সে না করে, অতঃপর
যখন সে তা করে তখন আমি তার সমান লিখি”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেনঃ “ফেরেশতারা বলেঃ হে আমার রব আপনার এ বান্দা পাপ করার ইচ্ছা করে, -যদিও আল্লাহ
তাকে বেশী জানেন- তিনি বলেনঃ তাকে পর্যবেক্ষণ কর যদি সে করে তার জন্য সমান পাপ লিখ,
যদি সে ত্যাগ করে তার জন্য তা নেকি লিখ, কারণ আমার জন্যই সে তা ত্যাগ করেছে [2]। [মুসলিম]
[2]
এ মর্যাদা শুধু আল্লাহর ভয়ে পাপ ত্যাগকারীর জন্য।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আল্লাহ
তা‘আলার বাণী: “আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে
রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”
হাদিস নং-৩
ইব্ন
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
“আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন” (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)- এ আয়াত নাযিল হলো, ইব্ন আব্বাস বলেন, তখন তাদের (সাহাবিদের) অন্তরে কিছু প্রবেশ করল যা পূর্বে তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা বলঃ শুনেছি, আনুগত্য করেছি ও মেনে নিয়েছি”। তিনি বলেনঃ ফলে আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন এবং তিনি নাযিল করলেনঃ
“আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন” (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)- এ আয়াত নাযিল হলো, ইব্ন আব্বাস বলেন, তখন তাদের (সাহাবিদের) অন্তরে কিছু প্রবেশ করল যা পূর্বে তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা বলঃ শুনেছি, আনুগত্য করেছি ও মেনে নিয়েছি”। তিনি বলেনঃ ফলে আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন এবং তিনি নাযিল করলেনঃ
“আল্লাহ
কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা
তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই
বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি
আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ
বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”।
“হে
আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে
দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের
উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”।
“আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”। [সূরা বাকারাঃ (২৮৬)]
“আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমি কবুল করেছি”। [সূরা বাকারাঃ (২৮৬)]
[মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিল হলঃ
“আল্লাহর
জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে যমীনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ
কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব
নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর
আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সূরা
বাকারাঃ ২৮৪) তিনি বলেনঃ এ আয়াত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের ওপর কঠিন ঠেকল, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, অতঃপর হাঁটু গেড়ে বসল। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল? আমাদেরকে
কতক আমলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যা আমরা সাধ্য রাখিঃ সালাত, সিয়াম, জিহাদ ও সদকা; কিন্তু
আপনার ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে অথচ আমরা তার সাধ্য রাখি না! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমরা কি সেরূপ বলতে চাও তোমাদের পূর্বে কিতাবওয়ালা দুটি
দল [ইয়াহূদী ও নাসারারা] যেরূপ বলেছেঃ শুনলাম ও প্রত্যাখ্যান করলাম? বরং তোমরা বলঃ
“আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি,
আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”। তারা
বললঃ আমরা শুনলাম, মেনে নিলাম, হে আমাদের রব আপনার ক্ষমা চাই, আপনার নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল।
যখন সকলে তা পড়ল, তাদের জবান দ্বিধাহীন তা উচ্চারণ করল। আল্লাহ তা‘আলা তার পশ্চাতে
নাযিল করলেনঃ
“রাসূল
তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে,
আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর
উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও
তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের
কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা
বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের
রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”
(সূরা বাকারাঃ ১৮৫) যখন তারা এর ওপর আমল করল, আল্লাহ তা রহিত করলেন, অতঃপর নাযিল করলেনঃ
“আল্লাহ
কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যরে বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা
তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই
বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি
আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।
“হে
আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে
দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের
উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।
“হে
আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার
সামর্থ্য আমাদের নেই”। তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।
“আর
আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে
ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন।
আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন”।
তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
যার
নিয়ত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম
হাদিস নং-৫
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “নিশ্চয়
সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সালা করা হবে, সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল।
তাকে আনা হবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে।
তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আপনার জন্য জিহাদ করে এমনকি শহীদ হয়েছি।
তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয়ঃ বীর, অতএব বলা হয়েছে।
অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যে ইলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে,
তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ
তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি ইলম শিখেছি, শিক্ষা দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন
তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি ইলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়ঃ আলেম,
কুরআন তিলাওয়াত করেছ যেন বলা হয়ঃ সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ
দেয়া হবে, তাকে চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক
ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা দিয়েছেন ও সকল প্রকার সম্পদ দান করেছেন, তাকে আনা হবে।
তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেনঃ তুমি এতে কি আমল
করেছ? সে বলবেঃ এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ
করি নাই। তিনি বলবেনঃ মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়ঃ সে দানশীল, অতএব বলা
হয়েছে, অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে
অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [মুসলিম ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
শির্কের
ভয়াবহতা
হাদিস নং-৬
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করল
যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”। [১]
[মুসলিম]
[১]
এ থেকে প্রমাণ হয় দেখানো ব্যক্তির আমল বিনষ্ট, তাতে কোন সওয়াব নেই।
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
হাদিস নং-৭
মাহমুদ
ইব্ন লাবিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে
সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শির্কে আসগর (ছোট শির্ক)। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল শির্কে আসগর
কি? তিনি বললেনঃ “রিয়া (লোক দেখানো আমল), আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে (রিয়াকারীদের)
বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেয়া হবেঃ তোমরা তাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা
দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কিনা”। [আহমদ]
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
হাদিস নং-৮
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন ইবরাহিম তার পিতা আযরের
সাথে দেখা করবে, তার চেহারার ওপর থাকবে বিষণ্ণতা ও ধুলো-বালি (অবসাদ)। ইবরাহিম তাকে
বলবেঃ আমি কি তোমাকে বলিনি আমার অবাধ্য হয়ো না? অতঃপর তার পিতা তাকে বলবেঃ আজ তোমার
অবাধ্য হব না। অতঃপর ইবরাহিম বলবেঃ হে আমার রব, আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যেদিন উঠানো
হবে আমাকে অসম্মান করবেন না, আমার পতিত পিতার অপমানের চেয়ে বড় অপমান কি! অতঃপর আল্লাহ
বলবেনঃ নিশ্চয় আমি কাফেরদের ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর বলা হবেঃ হে ইবরাহিম
তোমার পায়ের নিচে কি? সে দেখবে তার পিতা আচমকা রক্ত-ময়লায় নিমজ্জিত হায়েনায় পরিণত হয়েছে,
তখন তার পা পাকড়াও করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
দুনিয়া
ভর স্বর্ণ দ্বারা কাফেরের মুক্তি কামনা
হাদিস নং-৯
আনাস
ইব্ন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের সবচেয়ে হালকা
আযাবের ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন বলবেনঃ তোমার জন্য যদি দুনিয়াতে যা রয়েছে সব হয় তুমি
কি তা মুক্তিপণ হিসেবে দিবে? সে বলবেঃ হ্যাঁ, তিনি বলবেনঃ আমি তোমার কাছে এরচেয়ে কম
চেয়েছিলাম যখন তুমি আদমের ঔরসে ছিলেঃ আমার সাথে কোন বস্তুকে অংশীদার করবে না, কিন্তু
তুমি আমার সাথে অংশীদার না করে ক্ষান্ত হওনি”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
অমুক
নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি পেয়েছি বলা কুফরি
হাদিস নং-১০
যায়েদ
ইব্ন খালেদ আল-জুহানি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে হুদায়বিয়ায় ফজর
সালাত আদায় করলেন রাতের বৃষ্টি শেষে, যখন সালাত শেষ করলেন লোকদের দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ
“তোমরা কি জান তোমাদের রব কি বলেছেন?” তারা বললঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। তিনি
বলেছেনঃ “আমার কতক বান্দা ভোর করেছে আমার ওপর ঈমান অবস্থায়, আর কতক বান্দা ভোর করেছে
আমার সাথে কুফরি অবস্থায়। অতএব যে বলেছেঃ আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় বৃষ্টি লাভ করেছি,
সে আমার ওপর বিশ্বাসী ও নক্ষত্রের (প্রভাব) অস্বীকারকারী। আর যে বলেছেঃ অমুক অমুক নক্ষত্রের
কারণে, সে আমাকে অস্বীকারকারী ও নক্ষত্রে বিশ্বাসী”। [বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ি]
অর্থাৎ
সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১১
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা কি লক্ষ্য কর না তোমাদের রব কি বলেছেন?
তিনি বলেছেনঃ আমি আমার বান্দাদের যখনই কোন নিয়ামত দেই, তখনই এ ব্যাপারে তাদের একটি
দল অকৃতজ্ঞ (কাফের) হয়েছে। তারা বলেঃ নক্ষত্রই এবং নক্ষত্রের কারণে (তারা তা প্রাপ্ত
হয়েছে)”। [মুসলিম ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
তাওহীদের
ফযিলত
হাদিস নং-১২
আবু
যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেনঃ যে একটি নেকি নিয়ে আসবে
তার জন্য তার দশগুণ এবং আমি আরও বেশি বৃদ্ধি করব। যে একটি পাপ নিয়ে আসবে তার বিনিময়
সমান একটি পাপ অথবা আমি ক্ষমা করব। যে এক বিঘত আমার নিকটবর্তী হবে আমি একহাত তার নিকটবর্তী
হব। যে এক হাত আমার নিকটবর্তী হবে আমি তার এক বাহু নিকটবর্তী হব। যে আমার নিকট হেঁটে
আসবে আমি তার নিকট দ্রুত যাব। যে দুনিয়া ভর্তি পাপসহ আমার সাথে সাক্ষাত করে, আমার সাথে
কাউকে শরিক না করে, আমি তার সাথে অনুরূপ ক্ষমাসহ সাক্ষাত করব”। [মুসলিম, আহমদ ও ইব্ন
মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১৩
বু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “দাবি নিয়ে দুনিয়াতে তোমাদের যেমন ঝগড়া
হয়, তা মুমিনগণ কর্তৃক তাদের ভাইদের সম্পর্কে যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে,
তাদের রবের সাথে ঝগড়ার চেয়ে অধিক কঠিন নয়। তিনি বলেনঃ তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আমাদের
ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত ও আমাদের সাথে হজ
করত, কিন্তু আপনি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ যাও
তাদের থেকে যাকে তোমরা চিনো তাকে বের কর। তিনি বলেনঃ তাদের নিকট তারা আসবে, তাদের চেহারা
দেখে তাদেরকে তারা চিনবে, তাদের কাউকে আগুন পায়ের গোছার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। কাউকে
পায়ের টাকনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে, তাদেরকে তারা বের করবে অতঃপর বলবেঃ হে আমাদের রব,
যাদের সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা বের করেছি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ বের
কর যার অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। অতঃপর বলবেনঃ যার অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ
ঈমান রয়েছে। এক সময় বলবেনঃ যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান রয়েছে”। [নাসায়ি ও ইব্ন
মাজাহ]
অথাৎ
দুনিয়াতে আমরা নিজেদের দাবি নিয়ে যে পরিমাণ ঝগড়া ও তর্কে লিপ্ত হই, আখেরাতে মুমিনগণ
আল্লাহর সাথে তার চেয়ে অধিক ঝগড়া ও তর্কে লিপ্ত হবে তাদের ভাইদের মুক্ত করানোর জন্য,
যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আহলে
তাওহীদকে জাহান্নাম থেকে বের করা
হাদিস নং-১৪
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জান্নাতিরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে
প্রবেশ করবে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ বের কর যার অন্তরে সর্ষে পরিমাণ ঈমান রয়েছে,
ফলে তারা সেখান থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে কালো হয়ে গেছে, অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টির নহর
অথবা সঞ্জীবনী নহরে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তারা নতুন জীবন লাভ করবে যেমন নালার কিনারায়
ঘাস জন্মায়। তুমি দেখনি তা হলুদ আঁকাবাঁকা গজায়?”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
বেতাকার
হাদিস ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহুর ফযিলত
হাদিস নং-১৫
আব্দুল্লাহ
ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের
এক ব্যক্তিকে সবার সামনে নাজাত দিবেন, তার সামনে নিরানব্বইটি দফতর খোলা হবে, প্রত্যেক
দফতর চোখের দৃষ্টি পরিমাণ লম্বা। অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি এর কিছু অস্বীকার কর? আমার
সংরক্ষণকারী লেখকরা তোমার ওপর যুলম করেছে? সে বলবেঃ না, হে আমার রব। তিনি বলবেনঃ তোমার
কোন অজুহাত আছে? সে বলবেঃ না, হে আমার রব। তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় আমার নিকট তোমার একটি
নেকি রয়েছে, আজ তোমার ওপর কোন যুলম নেই, অতঃপর একটি বেতাকা/কার্ড বের হবে, যাতে রয়েছেঃ
তিনি
বলবেনঃ তোমার (কাজের) ওজন প্রত্যক্ষ কর। সে বলবেঃ হে আমার রব এতগুলো দফতরের সাথে একটি
কার্ড কি (কাজে আসবে)? তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় তোমার ওপর যুলম করা হবে না। তিনি বলেনঃ অতঃপর
সবগুলো দফতর এক পাল্লায় ও কার্ডটি অপর পাল্লায় রাখা হবে, ফলে দফতরগুলো ওপরে উঠে যাবে
ও কার্ডটি ভারী হবে। আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন জিনিস ভারী হবে না”। [তিরমিযি, আহমদ
ও ইব্ন মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আল্লাহর
রহমতের প্রশস্ততা
হাদিস নং-১৬
আবু
হুরায়রা (রাঃ ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আমার রহমত আমার গোস্বাকে
অতিক্রম করেছে”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আল্লাহর
রহমত থেকে নিরাশকারীদের প্রতি হুশিয়ারি
হাদিস নং-১৭
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “বনি ইসরাইলে দুই বন্ধু
ছিল। তাদের একজন পাপ করত, দ্বিতীয়জন খুব ইবাদত গুজার ছিল। ইবাদত গুজার তার বন্ধুকে
সর্বদা পাপে লিপ্ত দেখত, তাই সে বলত বিরত হও, একদিন সে তাকে কোন পাপে লিপ্ত দেখে বলেঃ
বিরত হও। সে বললঃ আমাকে ও আমার রবকে থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে
পাঠানো হয়েছে? ফলে সে বললঃ আল্লাহর কসম আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে
আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে
আল্লাহর দরবারে একত্র হল। তিনি ইবাদত গুজারকে বলেনঃ তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে?
অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তার ওপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে তিনি বলেনঃ যাও আমার
রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বলেনঃ তাকে নিয়ে জাহান্নামে যাও
[আবু দাউদ]
এর
অর্থ এই নয় যে, কেউ অন্যায় ও গুনাহ করবে আর অন্য কেউ তার প্রতিবাদ করবে না। এ ব্যাপারে
প্রতিবাদ হচ্ছে তিন প্রকারের, হাতে, মুখে বা অন্তরের ঘৃণা। তাকে হাত দিয়ে বাধা, মুখ
দিয়ে নিষেধ আর সক্ষম না হলেও অন্তরে তার কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা করাই হচ্ছে প্রতিবাদে ভাষা।
কিন্তু তার বাইরে প্রতিবাদের সীমা ছড়িয়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, বলাই অগ্রহণযোগ্য
কাজ। যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
জুনদুব
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি বলেছে আল্লাহর কসম আল্লাহ
অমুককে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ কে সে আমার ওপর কর্তৃত্ব করে যে, আমি
অমুককে ক্ষমা করব না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম আর তোমার আমল বিনষ্ট করলাম [১]”। অথবা
যেরূপ তিনি বলেছেন। [মুসলিম]
[১]
আল্লাহ তার আমল নষ্ট করে দেয়ার কারণ হচ্ছে, সে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা
করেছে। আল্লাহকে তাঁর সঠিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করেনি। মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে যখন খারাপ
ধারণা করে, তখন সে নিরাশ হয় বা অপরকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে দেয়, এটি কুফরির
পর্যায়ে। তাই তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১৯
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বনি ইসরাইলে এক লোক ছিল যে নিরানব্বই
জন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, অতঃপর জানার জন্য বের হল, এক সংসারবিরাগীর নিকট আসল, তাকে
জিজ্ঞাসা করল ও তাকে বললঃ কোন তওবা আছে কি? সে বললঃ না, ফলে তাকেও হত্যা করল। অতঃপর
সে লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকল, তখন এক ব্যক্তি তাকে বললঃ তুমি অমুক অমুক গ্রামে আস,
(রাস্তায়) তাকে মৃত্যু পেয়ে বসল, সে বক্ষ দ্বারা ঐ গ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা
করল। তার ব্যাপারে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাগণ তর্কে লিপ্ত হল। আল্লাহ তা‘আলা এ জনপদকে
নির্দেশ করলেন যে, নিকটবর্তী হও, আর এ জনপদকে নির্দেশ করলেন যে, দূরবর্তী হও। অতঃপর
আল্লাহ বললেনঃ উভয় জনপদের দূরত্ব পরিমাপ কর। দেখা গেল এ জনপদের দিকে সে এক বিঘত বেশী
অগ্রসর, তাই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
মানুষ
ধ্বংস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
হাদিস নং-২০
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন তোমরা কোন ব্যক্তিকে বলতে শোনঃ মানুষ
ধ্বংস হয়ে গেছে, তাহলে সেই অধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত”।
[আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
১৩. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর ভয়ের ফযিলত
হাদিস নং-২১
হুযায়ফা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বে এক ব্যক্তি ছিল, সে তার
নিজের (যে সকল খারাপ কাজ করেছে সে সকল) আমলের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করত (যে তাকে
কঠোর শাস্তি পেতে হবে), তাই সে তার পরিবারকে বললঃ আমি যখন মারা যাব আমাকে গ্রহণ করবে,
(এবং আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে নিবে) অতঃপর প্রবল ঝড়ের দিন আমাকে সমুদ্রে ছিটিয়ে দিবে,
তারা তার সাথে অনুরূপ করল। আল্লাহ তাকে (মৃত্যুর পর) একত্র করলেন, অতঃপর বললেনঃ কিসে
তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে যা তুমি করেছে? সে বললঃ তোমার ভয় ব্যতীত কোন বস্তু আমাকে উদ্বুদ্ধ
করে নি, ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন”। [বুখারি ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২২
আবু
সায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেনঃ “তিনি পূর্বের জনৈক ব্যক্তির
উল্লেখ করলেন- অথবা তোমাদের পূর্বের- তিনি একটি বাক্য বললেন অর্থাৎ আল্লাহ তাকে সম্পদ
ও সন্তান দান করেছেন, যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার সন্তানদের বললঃ আমি তোমাদের
কেমন পিতা ছিলাম? তারা বললঃ উত্তম পিতা। সে বললঃ সে তো আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ জমা
করেনি, আল্লাহ যদি তাকে পান [১] অবশ্যই শাস্তি দিবেন। তোমরা এক কাজ কর, আমি যখন মারা
যাব আমাকে জ্বালাও, যখন আমি কয়লায় পরিণত হব আমাকে পিষ অথবা বলেছেন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে
ফেল, অতঃপর যখন প্রচণ্ড ঝড়ের দিন হবে আমাকে তাতে ছিটিয়ে দাও”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে এ জন্য তাদের থেকে ওয়াদা নিলো, আমার রবের কসম, তারা তাই করল,
অতঃপর প্রচণ্ড ঝড়ের দিন ছিটিয়ে দিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ ‘কুন’ (হও), ফলে সে
দণ্ডায়মান ব্যক্তিতে পরিণত হল। আল্লাহ বললেনঃ হে আমার বান্দা কিসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ
করেছে, যে তুমি করেছ যা করার? সে বললঃ তোমার ভয়- অথবা তোমার থেকে পলায়নের জন্য- তিনি
বললেনঃ আল্লাহর দয়া ব্যতীত তার অন্য কিছু তাকে উদ্ধার করে নি। আরেকবার বলেনঃ রহম ব্যতীত
অন্য কিছু তার নসিব হয়নি”। [বুখারি ও মুসলিম]
[১]
আল্লাহ তাকে তাকে পাবে না, এটা তার বিশ্বাস থাকলে তার ঈমান থাকার কথা নয়, আর ঈমান না
থাকলে জান্নাত পাওয়া যাবে না। সুতরাং এখানে এটাই মানতে হবে যে, লোকটি তার অজ্ঞতাবশতঃ
আল্লাহ সম্পর্কে এ ধারণা করে থাকতে পারে। তাই তার অজ্ঞতার কারণে আল্লাহ তাকে এর জন্য
পাকড়াও না করে আল্লাহকে ভয় করার কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২৩
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি যে কখনো ভাল কাজ করেনি বলেছেঃ
যখন সে মারা যায়, তাকে জ্বালাও, অতঃপর তার অর্ধেক স্থলে ও অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দাও,
আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহ তার নাগাল পান তাহলে তিনি এমন শাস্তি দিবেন, যা জগতের কাউকে
দিবেন না। অতঃপর আল্লাহ সমুদ্রকে নির্দেশ করলেন, ফলে সে তার মধ্যে যা ছিল জমা করল,
এবং স্থলকে নির্দেশ করলেন ফলে সে তার মধ্যে যা ছিল জমা করল। অতঃপর বললেনঃ তুমি কেন
করেছ? সে বললঃ তোমার ভয়ে, তুমিই ভাল জান। ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন”। [বুখারি,
মুসলিম ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
যিকিরের
ফযিলত ও নেক আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা
হাদিস নং-২৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার সম্পর্কে আমার
বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি।[১] আমি তার সাথে থাকি [2] যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি
সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে
স্মরণ করে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার নিকট এক বিঘত অগ্রসর
হয় আমি তার নিকট একহাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার নিকট একহাত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একবাহু
অগ্রসর হই। যদি সে আমার নিকট আসে হেঁটে আমি তার নিকট যাই দ্রুত”। [বুখারি, মুসলিম,
তিরমিযি ও ইব্ন মাজাহ]
[১]
ইমাম আহমদের এক বর্ণনায় রয়েছেঃ “যদি সে আমার সম্পর্কে ভাল ধারণা করে তার জন্যই ভাল,
যদি সে আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করে তার জন্যই খারাপ।
[2]
সাথে থাকার অর্থ, তার অবস্থা জানা ও তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২৫
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ বলেছেনঃ আমার বান্দা যখন এক বিঘত
এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি তার সাথে সাক্ষাত করি একহাত এগিয়ে। যখন সে একহাত এগিয়ে
আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি একবাহু এগিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত
করে একবাহু এগিয়ে আমি তার নিকট আসি আরও দ্রুত পদক্ষেপে”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২৬
শুরাইহ্
রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের এক ব্যক্তিকে বলতে
শুনেছিঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি
আদম, তুমি আমার দিকে দাঁড়াও আমি তোমার দিকে চলব, তুমি আমার দিকে চল আমি তোমার দিকে
দ্রুত পদক্ষেপে যাব”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২৭
মা‘কাল
ইব্ন ইয়াসার থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের রব বলেনঃ হে বনি আদম, তুমি আমার
ইবাদতের জন্য মনোনিবেশ করো, আমি তোমার অন্তরকে সচ্ছলতায় ভরে দেব, তোমার হাত রিজিক দ্বারা
পূর্ণ করে দেব। হে বনি আদম, তুমি আমার থেকে দূরে যেয়ো না, ফলে আমি তোমার অন্তর অভাবে
পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দু’ হাতকে কর্মব্যস্ত করে দেব”। [হাকেম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ লিগাইরিহি
১৫. অধ্যায়ঃ
যিকির
ও নেককারদের সঙ্গের ফযিলত
হাদিস নং-২৮
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছে তারা যিকিরকারীদের
তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। যখন কোন কওমকে আল্লাহর যিকিরে মশগুল দেখে তারা একে অপরকে
আহ্বান করেঃ তোমাদের লক্ষ্যের দিকে আস”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তাদেরকে তারা নিজেদের ডানা
দ্বারা দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত ঢেকে নেয়। তিনি বলেনঃ অতঃপর তাদের রব তাদেরকে জিজ্ঞাসা
করেন, -অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জানেন- আমার বান্দাগণ কি বলে? ফেরেশতারা বলেঃ তারা
আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা করছে ও আপনার মর্যাদা
ঘোষণা করছে। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ তারা কি আমাকে দেখেছে? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা
বলেঃ না, আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ যদি তারা
আমাকে দেখত কেমন হত? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও কঠিন
ইবাদত করত, অধিক মর্যাদা ও প্রশংসার ঘোষণা করত, অধিক তসবিহ পাঠ করত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ
বলেনঃ তারা আমার নিকট কি চায়? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়?
তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ তারা কি জান্নাত দেখেছে? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ না, হে
রব, তারা জান্নাত দেখে নি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ যদি তারা জান্নাত দেখত কেমন হত?
তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার জন্য তারা আরো অধিক আগ্রহী
হত, অধিক তলবকারী হত ও তার অধিক আশা পোষণ করত। তিনি বলেনঃ তারা কার থেকে পানাহ চায়?
তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ তারা কি জাহান্নাম
দেখেছে? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ না, আল্লাহর কসম, হে রব তারা জাহান্নাম দেখেনি।
তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ যদি তারা জাহান্নাম দেখত কেমন হত? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা বলেঃ
যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে তার থেকে অধিক পলায়ন করত, তাকে অধিক ভয় করত। তিনি বলেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের সাক্ষী রাখছি আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি বলেনঃ তাদের
এক ফেরেশতা বলেঃ তাদের মধ্যে অমুক রয়েছে যে তাদের দলের নয়, সে অন্য কাজে এসেছে। তিনি
বলেনঃ তারা এমন জমাত যাদের কারণে তাদের সাথীরা মাহরুম হয় না”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-২৯
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি আমার বান্দার
সাথেই আছি যখন সে আমাকে স্মরণ করে ও তার দুই ঠোট নড়ে”। [আহমদ, ইব্ন মাজাহ]
এখানে
সাথে থাকার অর্থ, তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকা ও তাকে সহায্য-সহযোগিতা করা। কারণ,
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৩০
আবু
হুরায়রা ও আবু সায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা
উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছেন, তিনি বলেছেনঃ “বান্দা
যখন বলেঃ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ
وَاللَّهُ أَكْبَرُ
তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমিই মহান।
বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ
وَحْدَهُ তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে,
একলা আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই। বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ
لَا شَرِيكَ
لَهُ তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে,
আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমার কোন শরীক নেই। বান্দা যখন বলেঃ لَا
إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ
তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, রাজত্ব আমার, আমার জন্যই
প্রশংসা। বান্দা যখন বলেঃ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ
وَلَا حَوْلَ
وَلَا قُوَّةَ
إِلَّا بِاللَّهِ،
তিনি বলেনঃ আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমার তৌফিক ব্যতীত পাপ
থেকে বিরত থাকা ও ইবাদত করার ক্ষমতা নেই”। [ইব্ন মাজাহ, তিরমিযি, ইব্ন হুমাইদ ও ইব্ন
হিব্বান]
শায়খ
আলবানি হাদীসটি সহিহ বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৬. অধ্যায়ঃ
তওবা
ও ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা
হাদিস নং-৩১
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ “কোন বান্দা
পাপে লিপ্ত হল, অথবা বলেছেনঃ কোন পাপ করল। অতঃপর বলেঃ হে আমার রব আমি পাপ করেছি, অথবা
বলেঃ পাপে লিপ্ত হয়েছি আমাকে ক্ষমা করুন। তার রব বলেনঃ আমার বান্দা কি জানে তার রব
রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।
অতঃপর আল্লাহ যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর পাপে লিপ্ত হয় অথবা পাপ সংগঠিত করে,
অতঃপর বলেঃ হে আমার রব, আমি দ্বিতীয় পাপ করেছি অথবা দ্বিতীয় পাপে লিপ্ত হয়েছি, আপনি
তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন
ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যে পরিমাণ
চান সে বিরত থাকে। অতঃপর কোন পাপ করে অথবা বলেছেনঃ পাপে লিপ্ত হয়। তিনি বলেনঃ সে বলেঃ
হে আমার রব আমি পাপ করেছি অথবা পাপে লিপ্ত হয়েছি আবারও, আপনি আমার জন্য তা ক্ষমা করুন।
আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও
করেন? আমি আমার বান্দাকে তিনবারই ক্ষমা করে দিলাম, সে যা চায় আমল করুক”। [বুখারি ও
মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৩২
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “ইবলিস তার
রবকে বলেছেঃ আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি বনি আদমকে ভ্রষ্ট করতেই থাকব যতক্ষণ তাদের
মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেনঃ আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব
যতক্ষণ তারা আমার নিকট ইস্তেগফার করে”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আলি
ইব্ন রাবিয়াহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি আলিকে দেখেছিঃ “একটি চতুষ্পদ জন্তু আনা হল যেন সে তাতে আরোহণ করে, তিনি যখন
তার ওপর নিজ পা রাখলেন বললেনঃ بِسْمِ اللَّهِ
যখন তার পিঠে স্থির বসলেন বললেনঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ،
অতঃপর বললেনঃ﴿ “পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে
আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা
এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না”
(সূরা যুখরুফঃ১৩) অতঃপরঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ
তিনবার, اللَّهُ أَكْبَرُ
তিনবার বললেন, অতঃপর বললেনঃ
(“আপনি
কতই-না পবিত্র, নিশ্চয় আমি আমার নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন,
নিশ্চয় আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না”)
অতঃপর
হাসলেন, বলা হলঃ হে আমিরুল মুমেনিন কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি, তিনি করেছেন যেরূপ আমি করেছি, অতঃপর তিনি হেসেছেন।
আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেনঃ “তোমার রব তার বান্দাকে দেখে
আশ্চর্য হন, যখন সে বলে আমার পাপ ক্ষমা করুন, সে জানে আমি ব্যতীত কেউ পাপ ক্ষমা করবে
না”। [আবু দাউদ, তিরমিযি ও আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর
সাক্ষাত যে পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাত পছন্দ করেন
হাদিস নং-৩৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আমার বান্দা যখন
আমার সাক্ষাত পছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত পছন্দ করি। যখন সে আমার সাক্ষাত অপছন্দ করে
আমি তার সাক্ষাত অপছন্দ করি”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৮. অধ্যায়ঃ
বান্দার
জন্য আল্লাহর মহব্বতের নিদর্শন
হাদিস নং-৩৫
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন জিবরিলকে
ডেকে বলেনঃ আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তুমি তাকে মহব্বত কর ফলে জিবরিল তাকে মহব্বত
করেন। অতঃপর জিবরিল আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করেনঃ আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব
তোমরা তাকে মহব্বত কর ফলে আসমানবাসীরা তাকে মহব্বত করে, অতঃপর জমিনে তার জনপ্রিয়তা
রাখা হয়”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৩৬
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন
জিবরিলকে ডাকেন, অতঃপর বলেনঃ আমি অমুককে মহব্বত করি অতএব তুমি তাকে মহব্বত কর। তিনি
বলেনঃ “ফলে জিবরিল তাকে মহব্বত করে, অতঃপর সে আসমানে ঘোষণা করেঃ আল্লাহ অমুককে মহব্বত
করেন অতএব তোমরা তাকে মহব্বত কর, ফলে আসমানবাসী তাকে মহব্বত করে”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর
জমিনে তার জন্য গ্রহণযোগ্যতা রাখা হয়। পক্ষান্তরে যখন তিনি কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন
জিবরিলকে ডাকেন অতঃপর বলেনঃ আমি অমুককে অপছন্দ করি অতএব তুমি তাকে অপছন্দ কর”। তিনি
বলেনঃ “ফলে জিবরিল তাকে অপছন্দ করে, অতঃপর সে আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা দেয়, আল্লাহ
অমুককে অপছন্দ করে অতএব তোমরা তাকে অপছন্দ কর”। তিনি বলেনঃ ফলে তারা তাকে অপছন্দ করে,
অতঃপর জমিনে তার জন্য নিন্দা রাখা হয়”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
মুসলিমদেরকে
মহব্বত ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
হাদিস নং-৩৭
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে
বনি আদম আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি, সে বলবেঃ হে আল্লাহ আপনাকে কিভাবে
দেখব, অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ তুমি জান না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল
তুমি তাকে দেখনি, তুমি জান না যদি তাকে দেখতে আমাকে তার নিকট পেতে? হে বনি আদম আমি
তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিলাম তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি, সে বলবেঃ হে আমার রব, আমি কিভাবে
আপনাকে খাদ্য দিব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ তুমি জান না আমার অমুক বান্দা
তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল তুমি তাকে খাদ্য দাওনি, তুমি জান না যদি তাকে খাদ্য দিতে
তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে। হে বনি আদম, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে পানি
দাওনি, সে বলবেঃ হে আমার রব কিভাবে আমি আপনাকে পানি দেব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি
বলবেনঃ আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল তুমি তাকে পানি দাওনি, মনে রেখ যদি
তাকে পানি দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
২০. অধ্যায়ঃ
প্রতিবেশীদের
সাক্ষী ও তাদের প্রশংসার ফযিলত
হাদিস নং-৩৮
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখনই কোন মুসলিম মারা যায় অতঃপর তার প্রতিবেশীর
নিকটতম চার ঘর তার জন্য সাক্ষ্য দেয়, তার সম্পর্কেই আল্লাহ বলেনঃ তার সম্পর্কে তোমাদের
জানা আমি কবুল করলাম, আর যা তোমরা জান না আমি ক্ষমা করে দিলাম”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান লিগাইরিহি
দুনিয়া-আখিরাতে
মুমিনের দোষ আল্লাহর গোপন করা
হাদিস নং-৩৯
সাফওয়ান
ইব্ন মুহরিয আল-মাযেনি (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ একদা আমি ইব্ন ওমরের সাথে তার হাত ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এলো।
অতঃপর সে বললঃ ‘নাজওয়া’ (গোপন কথা) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)কে কি বলতে শুনেছেন? তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের নিকটবর্তী হবেন অতঃপর তার ওপর পর্দা
ফেলে তাকে ঢেকে নিবেন এবং বলবেনঃ মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবেঃ হ্যাঁ,
হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করবে এবং নিজেকে মনে করবে যে, সে ধ্বংস
হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেনঃ তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য
ক্ষমা করে দিচ্ছি। অতঃপর তাকে তার নেক আমলের দফতর দেয়া হবে, পক্ষান্তরে কাফের ও মুনাফিক
সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবেঃ এরা তাদের রবের ওপর মিথ্যারোপ করেছিল, জেনে রেখ জালেমদের ওপর
আল্লাহর লা‘নত”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
মুমিনের
ফযিলত
হাদিস নং-৪০
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ
তা‘আলা বলেনঃ আমার মুমিন বান্দা আমার নিকট এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত, যেখানে সে সকল কল্যাণের
হকদার, সে আমার প্রশংসা করে এমতাবস্থায় আমি তার দু’পাশ থেকে তার রূহ কব্জা করি”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
২৩. অধ্যায়ঃ
গরিবকে
সুযোগ দেয়া ও ক্ষমা করার ফযিলত
হাদিস নং-৪১
হুযায়ফা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তির রূহের
সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাত করে বলেঃ তুমি কি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলেঃ না, তারা বলেনঃ
স্মরণ কর। সে বলেঃ আমি মানুষদের ঋণ দিতাম, অতঃপর আমার যুবকদের বলতাম তারা যেন গরিবকে
সুযোগ দেয় ও ধনীর বিলম্বিতা ক্ষমা করে”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৪২
আবু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বের জনৈক ব্যক্তিকে জেরা
করা হয়েছে, কিন্তু তার কোন কল্যাণ পাওয়া যায়নি, সে ছিল ধনী, মানুষের সাথে লেনদেন করত,
আর তার লোকদের বলত, যেন গরিবকে ক্ষমা করে”। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ তার চেয়ে
আমি ক্ষমা করার অধিক হকদার, তাকে ক্ষমা কর”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৪৩
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি কোনো কল্যাণ করেনি, সে মানুষকে
ঋণ দিত, অতঃপর তার দূতকে বলতঃ যা সহজ গ্রহণ কর, যা কষ্টের তা ত্যাগ কর ও ছাড় দাও। হয়তো
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যখন সে মারা গেল, আল্লাহ তাকে বললেনঃ তুমি কোন
কল্যাণ করেছ? সে বলেঃ না, তবে আমার এক কর্মচারী ছিল, আমি মানুষকে ঋণ দিতাম, যখন আমি
তাকে উসুল করার জন্য প্রেরণ করেছি তাকে বলেছিঃ যা সহজ হয় গ্রহণ কর, যা কষ্টকর ত্যাগ
কর ও ক্ষমা কর, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাকে ক্ষমা
করে দিলাম”। [নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
আল্লাহর
অলিদের সাথে দুশমনি করার পাপ
হাদিস নং-৪৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ যে আমার অলির সাথে
দুশমনি করবে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করেছি। আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরয করেছি
আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন বস্তু দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করেনি। আমার
বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে অবশেষে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন
তাকে মহব্বত করি আমি তার কানে পরিণত যা দ্বারা সে শ্রবণ করে। তার চোখে পরিণত হই যা
দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যা দ্বারা
সে হাঁটে [১]। যদি সে আমার নিকট চায় আমি তাকে অবশ্যই দিব, যদি সে আমার নিকট পানাহ চায়
আমি তাকে অবশ্যই পানাহ দিব। আমার করণীয় কোন কাজে আমি দ্বিধা করি না যেমন দ্বিধা করি
মুমিনের নফসের সময়, সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আমি তার কষ্টকে অপছন্দ করি”। [বুখারি]
[১]
এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার শরীরের অঙ্গ পরিণত হয়ে যায়, বরং এর অর্থ
এই যে, সে তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির বাইরে সে লোক আর চলতে পারে না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিই
তার সন্তুষ্টিতে পরিণত হয়ে যায়। এর প্রমাণ হাদীসের বাকী অংশে। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আল্লাহর
জন্য মহব্বতের ফযিলত
হাদিস নং-৪৫
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেনঃ আমার বড়ত্বের
জন্য মহব্বতকারীরা কোথায়, আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করব, যখন আমার ছায়া ব্যতীত
কোন ছায়া নেই”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৪৬
আবু
মুসলিম খাওলানি রাহিমাহুল্লাহ, মু‘আয ইব্ন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা
করতে শুনেছিঃ “আল্লাহর নিমিত্তে মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ায় নুরের মিম্বারে অবস্থান করবেন,
যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না”। তিনি বলেনঃ (মু‘আযের কাছ থেকে) বের হয়ে
উবাদাহ ইব্ন সামেতের সাথে দেখা করি, আমি তাকে মু‘আয ইব্ন জাবালের হাদিস বলিঃ তিনি
বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা
করতে শুনেছিঃ “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে
খরচকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে সাক্ষাতকারীদের জন্য আমার মহব্বত
ওয়াজিব। আল্লাহর জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ার নিচে নূরের মিম্বারে অবস্থান
করবে, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না”। [আহমদ] এ হাদীসটি সব ক’টি সনদের
বিবেচনায় সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৪৭
মুয়ায
ইব্ন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ
তা‘আলা বলেনঃ “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য নূরের মিম্বার রয়েছে, যাদের সাথে ঈর্ষা
করবে নবী ও শহীদগণ”। [তিরমিযি]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
জান্নাত
কষ্ট ও জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত
হাদিস নং-৪৮
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন জিবরিলকে
বলেছেনঃ যাও তা দেখ। সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম
তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে প্রবেশ ব্যতীত থাকবে না। অতঃপর তা কষ্ট দ্বারা ঢেকে দিলেন।
অতঃপর বললেনঃ হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার
ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে কেউ প্রবেশ করবে না। তিনি বলেনঃ আল্লাহ যখন জাহান্নাম
সৃষ্টি করেছেন বলেছেন, হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বললঃ হে আমার
রব, আপনার ইজ্জতের কসম, তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে কখনো প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি
তা প্রবৃত্তি দ্বারা ঢেকে দিলেন অতঃপর বললেনঃ হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল
অতঃপর এসে বললঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে প্রবেশ ব্যতীত
কেউ বাকি থাকবে না”। [আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি ও আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
নেক
বান্দাদের জন্য তৈরি কিছু নিয়ামতের বর্ণনা
হাদিস নং-৪৯
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমি আমার নেক বান্দাদের
জন্য তৈরি করেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার
কল্পনা হয়নি”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
জান্নাতবাসীদের
ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি
হাদিস নং-৫০
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতিদের বলবেনঃ হে
জান্নাতিগণ, তারা বলবেঃ সদা উপস্থিত হে আমাদের রব, আপনার সন্তুষ্টিবিধানে আমি সদা সচেষ্ট,
সকল কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেনঃ তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব
আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন যা আপনার মখলুকের কাউকে দেননি!
তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম দিব না? তারা বলবেঃ হে রব এর চেয়ে উত্তম
কোন বস্তু? তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করছি এরপর কখনো তোমাদের
ওপর অসন্তুষ্ট হব না”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৫১
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে
আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ তোমরা কিছু চাও? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আপনি আমাদের যা দিয়েছেন
তার চেয়ে উত্তম কি? তিনি বলবেনঃ বরং আমার সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়”। [ইব্ন হিব্বান]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
জান্নাতিদের
তাদের প্রার্থিত বস্তু প্রদান করা
হাদিস নং-৫২
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা কথা বলছিলেন, -তার নিকট গ্রামের এক ব্যক্তি
ছিলঃ “জান্নাতিদের জনৈক ব্যক্তি তার রবের নিকট কৃষির জন্য অনুমতি চেয়েছে। আল্লাহ তাকে
বললেনঃ তুমি কি তাতে নেই যা চেয়েছ? সে বললঃ অবশ্যই, তবে আমি কৃষি করতে চাই। সে দ্রুত
চাষ করল, বীজ বপন করল, চোখের পলকে তার চারা গজাল, কাণ্ড সোজা হল, ফসল কাঁটার সময় হল
এবং তার স্তূপ হল পাহাড়ের ন্যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি এসব গ্রহণ কর,
কারণ কোন জিনিস তোমাকে তৃপ্ত করবে না। গ্রামের লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল এ ব্যক্তি
কুরাইশি বা আনসারি ব্যতীত কেউ নয়, কারণ তারা কৃষি করে, কিন্তু আমরা কৃষক নয়। রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩০. অধ্যায়ঃ
জান্নাতের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী
হাদিস নং-৫৩
মুগিরা
ইব্ন শু‘বা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মুগিরা
ইব্ন শু‘বা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মরফূ [১] হিসেবে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “মুসা আলাইহিস সালাম তার রবকে জিজ্ঞাসা করেন জান্নাতিদের
নিম্ন স্তর কি? তিনি বলেনঃ সে ব্যক্তি যে জান্নাতিদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে,
তাকে বলা হবেঃ জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবেঃ হে আমার রব কিভাবে, অথচ লোকেরা তাদের স্থানে
পৌঁছে গেছে, তাদের হক তারা গ্রহণ করেছে? তাকে বলা হবেঃ তুমি কি সন্তুষ্ট যে তোমার জন্য
দুনিয়ার বাদশাহদের রাজত্বের ন্যায় রাজত্ব হোক? সে বলবেঃ হে আমার রব, আমি সন্তুষ্ট।
তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য তা, এবং তার সমান, তার সমান ও তার সমান, পঞ্চম বারে বললঃ হে
আমার রব আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আমার রব, তাদের
মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী? তিনি বললেনঃ তাদেরকে আমি চেয়েছি, আমি নিজ হাতে তাদের
সম্মান রোপণ করেছি ও তার ওপর মোহর এঁটে দিয়েছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি
এবং মানুষের অন্তরে কল্পনা হয়নি। তিনি বলেনঃ কুরআনে তার নমুনা হচ্ছেঃ
“অতঃপর
কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে”।
(সূরা আলিফ লাম মিম সাজদাহঃ ১৭) [মুসলিম]
[১]
কেউ এ হাদিসকে মওকুফ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩১. অধ্যায়ঃ
জান্নাতে
প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি
হাদিস নং-৫৪
আব্দুল্লাহ
ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি
লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকেঃ জনৈক ব্যক্তি
হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ
কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার
রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর।
তিনি বলেনঃ সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ
হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ
কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার
দশগুণ জান্নাত রয়েছে,- তিনি বলেনঃ সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন
অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেনঃ
তখন বলা হতঃ এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৫৫
ইব্ন
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি,
যে একবার চলবে একবার হোঁচট খাবে, একবার আগুন তাকে ঝলসে দিবে, যখন সে তা অতিক্রম করবে
তার দিকে ফিরে তাকাবে, অতঃপর বলবেঃ বরকতময় সে সত্তা যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন।
নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন বস্তু দান করেছেন যা পূর্বাপর কাউকে দান করেন নি। অতঃপর তার
জন্য একটি গাছ জাহির করা হবে, সে বলবেঃ হে আমার রব আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন, যেন
তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও তার পানি পান করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে আদম সন্তান
যদি আমি তোমাকে এটা দান করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু তলব করবে। সে বলবেঃ না, হে আমার
রব, তাকে ওয়াদা দিবে যে এ ছাড়া কিছু তলব করবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে
যার ওপর তার ধৈর্য সম্ভব হবে না। তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, ফলে সে তার ছায়া গ্রহণ
করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার জন্য অপর গাছ জাহির করা হবে, যা পূর্বের তুলনায়
অধিক সুন্দর। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে এর নিকটবর্তী করুন, যেন তার পানি পান করতে
পারি ও তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি
কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? তিনি বলবেনঃ আমি যদি তোমাকে এর নিকটবর্তী
করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু চাইবে, ফলে সে তাকে ওয়াদা দিবে যে, অন্য কিছু চাইবে না,
তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তাকে তার নিকটবর্তী
করবেন, সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার সামনে জাহির করা হবে
একটি গাছ জান্নাতের দরজার মুখে, যা পূর্বের দু’টি গাছ থেকে অধিক সুন্দর। সে বলবেঃ হে
আমার রব, আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন আমি তার ছায়া গ্রহণ করব ও তার পানি পান করব,
এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু
চাইবে না? সে বলবেঃ অবশ্যই হে আমার রব, এটাই আর কিছু চাইব না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন,
কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তিনি তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, যখন তার
নিকটবর্তী করা হবে সে জান্নাতিদের আওয়াজ শুনবে, সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে তাতে প্রবেশ
করান, তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম, কিসে তোমার থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দিবে? তুমি কি সন্তুষ্ট
যে আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সাথে তার সমান দান করি? সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি কি আমার
সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’জাহানের রব? ইব্ন মাসউদ হেসে দিলেন, তিনি বললেনঃ তোমরা
আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ না আমি কেন হাসছি? তারা বললঃ কেন হাসছেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ হেসেছেন। তারা (সাহাবিরা) বললঃ হে আল্লাহর
রাসূল কেন হাসছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহর হাসি থেকে যখন সে বললঃ আপনি আমার সাথে ঠাট্টা
করছেন অথচ আপনি দু’ জাহানের রব? তিনি বললেনঃ আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, তবে আমি
যা চাই করতে পারি”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৫৬
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
লোকেরা
বললঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “চৌদ্দ তারিখের রাতে চাঁদ দেখায় তোমরা কি সন্দেহ (বা মতবিরোধ)
কর?” তারা বললঃ না, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “তোমরা আল্লাহকে সেভাবে (স্পষ্ট)
দেখবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সকল মানুষকে জমা করে বলবেনঃ যে যে বস্তুর ইবাদত করত সে
যেন তার পিছু নেয়, ফলে যে সূর্যের ইবাদত করত সে সূর্যের অনুগামী হবে। যে চাঁদের ইবাদত
করত সে চাঁদের অনুগামী হবে। যে তাগুতের ইবাদত করত সে তাগুতের অনুগামী হবে। শুধু এ উম্মত
অবশিষ্ট থাকবে, তাতে থাকবে তার সুপারিশকারীগণ –অথবা তার মুনাফিকরা, বর্ণনাকারী ইবরাহিম
সন্দেহ পোষণ করেছেন [১], অতঃপর তাদের নিকট আল্লাহ এসে বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা
বলবেঃ আমরা এখানে অবস্থান করছি যতক্ষণ না আমাদের রব আমাদের নিকট আসেন, যখন আমাদের রব
আসবেন আমরা তাকে চিনব, ফলে আল্লাহ সে রূপে তাদের নিকট আসবেন যে রূপে তারা তাকে চিনে।
অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ আপনি আমাদের রব, অতঃপর তারা তার অনুগামী
হবে। আর জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশে পুলসিরাত কায়েম করা হবে, আমি এবং আমার উম্মত সর্বপ্রথম
তা অতিক্রম করব। সে দিন রাসূলগণ ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। সে দিন রাসূলগণের বাণী হবেঃ
আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম। জাহান্নামে রয়েছে সা‘দানের [2] কাঁটার ন্যায় হুক, তোমরা
সা‘দান দেখেছ?” তারা বললঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ “তা সা‘দানের কাঁটার
ন্যায়, তবে তার বিশালত্বের পরিমাণ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। সে মানুষদেরকে তাদের
আমল অনুযায়ী ছো মেরে নিয়ে নিবে। তাদের কেউ ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ আমলের কারণে (জাহান্নামের
শুরুতে) রয়ে গেছে, তাদের কেউ টুকরো হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত অথবা সাজা প্রাপ্ত অথবা
তার অনুরূপ। অতঃপর তিনি জাহির হবেন, অবশেষে যখন বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হবেন ও
জাহান্নামীদের থেকে নিজ রহমতে যাকে ইচ্ছা বের করার ইচ্ছা করবেন ফেরেশতাদের নির্দেশ
দিবেন যে, জাহান্নাম থেকে বের কর আল্লাহর সাথে যে কোন বস্তু শরীক করত না, যাদের ওপর
আল্লাহ রহম করার ইচ্ছা করেছেন এবং যারা সাক্ষী দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক ইলাহ নেই।
তারা জাহান্নামে তাদেরকে সেজদার আলামত দ্বারা চিনবে। আগুন বনি আদমকে সেজদার জায়গা ব্যতীত
খেয়ে ফেলবে। সেজদার জায়গা ভক্ষণ করা জাহান্নামের ওপর আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। তারা
জাহান্নাম থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে পুড়ে গেছে, তাদের ওপর সঞ্জীবনী পানি ঢালা হবে,
ফলে তারা গজিয়ে উঠবে যেমন গজিয়ে উঠে প্রবাহিত পানির সাথে আসা উর্বর মাটিতে শস্যের চারা।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হবেন। অবশেষে শুধু এক ব্যক্তি জাহান্নামের
ওপর তার চেহারা দিয়ে অগ্রসর হয়ে থাকবে, সেই জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জাহান্নামী।
সে বলবেঃ হে আমার রব, আমার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিন, কারণ সে আমার চেহারা
বিষাক্ত করে দিয়েছে, তার লেলিহান আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতঃপর সে আল্লাহর নিকট দো‘আ
করবে, আল্লাহ যেভাবে তার দো‘আ করা পছন্দ করেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ এমন হবে না তো যদি
তোমাকে তা দান করি তুমি আমার নিকট অন্য কিছু চাইবে? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম,
এ ছাড়া আপনার নিকট কিছু চাইব না। সে তার রবকে যা ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার দিবে, ফলে
আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ করবে
ও তা দেখবে, চুপ থাকবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান। অতঃপর বলবেঃ হে আমার রব আমাকে
জান্নাতের দরজার পর্যন্ত অগ্রসর করুন। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি কি আমাকে তোমার ওয়াদা
ও অঙ্গিকার দাওনি যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা ছাড়া অন্য কিছু আমার নিকট কখনো চাইবে
না? হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবেঃ হে আমার রব, এবং
আল্লাহকে ডাকবে, অবশেষে আল্লাহ বলবেনঃ এমন হবে না তো যদি তা দেই অপর বস্তু তুমি চাইবে?
সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম তা ছাড়া কিছু চাইব না, এবং যত ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার
প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার
নিকট দাঁড়াবে তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হবে, সে তার নিয়ামত ও আনন্দ দেখবে, অতঃপর চুপ
থাকবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান, অতঃপর বলবেঃ হে আমার রব আমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করান, আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি আমি যা দিয়েছি তা ছাড়া কিছু চাইবে
না? তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবেঃ হে আমার
রব আমি তোমার হতভাগা মখলুক হতে চাই না, সে ডাকতে থাকবে অবশেষে তার কারণে আল্লাহ হাসবেন।
যখন হাসবেন তাকে বলবেনঃ জান্নাতে প্রবেশ কর, যখন সে তাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ তাকে বলবেনঃ
চাও, সে তার নিকট চাইবে ও প্রার্থনা করবে, এমনকি আল্লাহও তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেনঃ এটা,
ওটা অবশেষে যখন তার আশা শেষ হয়ে যাবে আল্লাহ বলবেনঃ এগুলো তোমার জন্য এবং এর অনুরূপও
তার সাথে”। আতা ইব্ন ইয়াযিদ বলেনঃ আবু সায়িদ খুদরি আবু হুরায়রার সাথেই ছিল, আবু হুরায়রার
হাদিসের কোন অংশ তিনি প্রত্যাখ্যান করেননি, অবশেষে যখন আবু হুরায়রা বললেন আল্লাহ তা‘আলা
বলেছেনঃ “এগুলো তোমার জন্য এবং এর সমান এর সাথে”। আবু সায়িদ খুদরি বললেনঃ “এবং তার
সাথে তার দশগুণ হে আবু হুরায়রা। আবু হুরায়রা বললেনঃ আমার শুধু মনে আছেঃ “এগুলো এবং
এর সাথে তার অনুরূপ”। আবু সায়িদ বললেনঃ আমি সাক্ষী দিচ্ছে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তার বাণীঃ “এগুলো তোমার জন্য এবং তার সমান দশগুণ” খুব ভাল
করে স্মরণ রেখেছি। আবু হুরায়রা বললেনঃ এ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি”।
[বুখারি ও মুসলিম]
[১]
অর্থাৎ এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সুপারিশকারীগণ’ –অথবা
‘মুনাফিকরা’ এ দু’য়ের কোন শব্দটি ব্যবহার করেছেন, এ ব্যাপারে হাদীসের এক বর্ণনাকারী
সন্দেহ করেছেন। মূল হাদীসে নয়। [সম্পাদক]
[2]
“সা‘দান” শব্দের অর্থ কাঁটা বা বড় কাঁটাদার গাছ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৫৭
আবু
যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম
থেকে নাজাত প্রাপ্ত সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে।
এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ তার ছোট পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর,
বড় পাপগুলো গোপন রাখ, অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তুমি অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ,
অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ। তিনি বলেনঃ অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্য প্রত্যেক
পাপের পরিবর্তে একটি করে নেকি। তিনি বলেনঃ অতঃপর সে বলবেঃ হে আমার রব আমি অনেক কিছু
করেছি এখানে তা দেখছি না”। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে
দেখেছি হাসতে, এমনকি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। [মুসলিম ও তিরমিযি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
শহীদদের
ফযিলত
হাদিস নং-৫৮
মাসরুক
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন আমরা আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিঃ
“আর
যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা
তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযক
দেয়া হয়”। [১] তিনি বলেনঃ জেনে রেখ,
আমরাও এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ “তাদের রূহসমূহ সবুজ পাখির পেটে, যার জন্য রয়েছে আরশের সাথে ঝুলন্ত প্রদীপ,
সে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করে, অতঃপর উক্ত প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। একদা
তাদের দিকে তাদের রব দৃষ্টি দেন অতঃপর বলেনঃ তোমরা কিছু চাও? তারা বলবেঃ আমরা কি চাইব,
অথচ আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করি? এভাবে তাদেরকে তিনবার জিজ্ঞাসা করবেন,
যখন তারা দেখবে যে কোন কিছু চাওয়া ব্যতীত তাদেরকে নিস্তার দেয়া হবে না, তারা বলবেঃ
হে রব আমরা চাই আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায়
শহীদ হতে পারি। যখন তিনি দেখবেন যে তাদের কোন চাহিদা নেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে”।
[মুসলিম, নাসায়ি ও ইব্ন মাজাহ]
[১]
সূরা আলে ইমরানঃ (১৬৯)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৫৯
শাকিক
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইব্ন
মাসউদ তাকে বলেছেনঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঠারো জন সাহাবি
যারা বদরের দিন শহীদ হয়েছিল, আল্লাহ তাদের রুহগুলো জান্নাতে সবুজ পাখির পেটে রেখেছেন
যে জান্নাতে বিচরণ করে। তিনি বলেনঃ তারা এভাবেই ছিল, এক সময় তোমার রব তাদের দিকে দৃষ্টি
দেন, অতঃপর বলেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা বললঃ হে আমাদের রব এর ওপরে
কি আছে? তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা চতুর্থবার
বলবেঃ আপনি আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা শহীদ হতে পারি যেমন শহীদ
হয়েছি”। [ইব্ন হিব্বান] হাদীসটি মওকুফ ও সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ মাওকুফ
হাদিস নং-৬০
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জান্নাতি এক ব্যক্তিকে আনা হবে, অতঃপর
আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম তোমার স্থান কি রকম পেয়েছ? সে বলবেঃ হে আমার রব সবচেয়ে
উত্তম। তিনি বলবেনঃ চাও, আশা কর। সে বলবেঃ তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তুমি আমাকে দুনিয়াতে
ফিরিয়ে দাও, যেন তোমার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হতে পারি, যেহেতু সে শাহাদাতের মর্যাদা
প্রত্যক্ষ করবে”। [নাসায়ি, আহমদ ও হাকেম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৬১
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তার দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেন,
যে তার রাস্তায় বের হয়, -যাকে আমার প্রতি ঈমান ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত
কোন জিনিস বের করেনি-, আমি তাকে অতিসত্বর তার পাওনা সওয়াব অথবা গনিমত দেব অথবা তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাব। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হত, তাহলে আমি কোন যুদ্ধ থেকে
পিছপা হতাম না। আমি চাই আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর
আমি শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব”। [বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি
ও ইব্ন মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৬২
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন জান্নাতি এক ব্যক্তিকে হাজির
করা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ হে বনি আদম তোমার স্থান কেমন পেয়েছ? সে বলবেঃ সবচেয়ে
উত্তম, অতঃপর তিনি বলবেনঃ চাও, আশা কর। সে বলবেঃ এ ছাড়া আমি কি চাইব ও কি আশা করব যে,
আপনি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দিন, অতঃপর আপনার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হই, যেহেতু সে
শাহাদাতের ফজিলত প্রত্যক্ষ করবে”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৬৩
ইব্ন
ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার রব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ
“আমার যে কোন বান্দা আমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে আমার রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়, আমি
তার জন্য জিম্মাদার যে আমি তাকে তার পাওয়া সওয়াব ও গনিমত পৌঁছে দেব, যদি তাকে মৃত্যু
দেই তাহলে তাকে ক্ষমা করব, তাকে রহম করব ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব”। [আহমদ ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ লিগাইরিহি
৩৩. অধ্যায়ঃ
আয়াতের
শানে নুযূল
হাদিস নং-৬৪
আব্দুল্লাহ
ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের ভাইয়েরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত
বরণ করেন, আল্লাহ তাদের রুহগুলো সবুজ পাখির পেটে রাখেন, তারা জান্নাতের নহরসমূহ বিচরণ
করে, তার ফল ভক্ষণ করে এবং আরশের ছায়ার নিচে ঝুলন্ত স্বর্ণের প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ
করে। যখন তারা নিজেদের সুস্বাদু খাদ্য-পানীয় এবং সুন্দর বিছানা গ্রহণ করল, বললঃ আমাদের
হয়ে আমাদের ভাইদেরকে কে পৌঁছাবে যে, আমরা জান্নাতে জীবিত, আমাদেরকে রিযক দেয়া হয়, যেন
তারা জিহাদ থেকে পিছপা না হয় এবং যুদ্ধের সময় ভীরুতা প্রদর্শন না করে? আল্লাহ তা‘আলা
বললেনঃ আমি তোমাদের হয়ে তাদেরকে পৌঁছে দেব”। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল
করেনঃ
“আর
যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না সূরা
(আলে ইমরানঃ১৬৯) । আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [আবু
দাউদ ও আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
আয়াতের
আরেকটি শানে নুযূল
হাদিস নং-৬৫
জাবের
ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে দেখা করে আমাকে বলেনঃ “হে জাবের কেন
তোমাকে বিষণ্ণ দেখছি? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল আমার পিতা উহুদের দিন শাহাদাত বরণ
করেন, তিনি অনেক সন্তান ও ঋণ রেখে গেছেন। তিনি বললেনঃ “আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব না
তোমার পিতার সাথে আল্লাহ কি নিয়ে সাক্ষাত করেছেন?” জাবের বলেন, আমি বললামঃ অবশ্যই হে
আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ পর্দার আড়াল ব্যতীত কারো সাথে কখনো কথা বলেননি,
কিন্তু তোমার পিতাকে জীবিত করে তার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ হে আমার বান্দা
আমার নিকট চাও আমি তোমাকে দিব। জবাবে তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেনঃ হে আমার রব আমাকে জীবিত
করুন, আমি দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হব। আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ আমার সিদ্ধান্ত
পূর্বে চূড়ান্ত হয়ে গেছে যে, মৃতদের দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করা হবে না। তিনি বলেনঃ
এবং এ আয়াত নাযিল করা হলঃ
“আর
যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না”। (সূরা
আলে ইমরানঃ ১৬৯) [তিরমিযি ও ইব্ন মাজাহ] হাদীসটি অন্যান্য শাহেদ তথা সমার্থের বর্ণনার
কারণে সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩৫. অধ্যায়ঃ
মুমূর্ষু
হালত, রুহ বের হওয়া ও জীবন সায়ান্নে মুসলিম-কাফিরের অবস্থার বর্ণনাসহ মহান হাদিস
হাদিস নং-৬৬
বারা
ইব্ন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক আনসারির জানাজায়
বের হলাম, আমরা তার কবরে পৌঁছলাম, তখনো কবর খোঁড়া হয়নি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসলেন আমরা তার চারপাশে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে
আছে, তার হাতে একটি লাকড়ি ছিল তিনি মাটি খুড়তে ছিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বললেনঃ “তোমরা
আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও, দুইবার অথবা তিনবার (বললেন)”। অতঃপর বললেনঃ
“নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান ও আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয়
তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাদের চেহারা সূর্য। তাদের
সাথে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত
বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেনঃ হে
পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হও”। তিনি বললেনঃ “ফলে রুহ
বের হয় যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের
পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে
রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় যা দুনিয়াতে পাওয়া যায়”। তিনি বললেনঃ
“অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাদের কোন দলের
কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, এ পবিত্র রুহ কে? তারা বলেঃ অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর
নামে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হত, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার
জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক
আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম
আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে
জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাদেরকে ফেরৎ
দেব এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পুনরায় উঠাব”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে
দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবেঃ তোমার রব
কে? সে বলবেঃ আল্লাহ। অতঃপর তারা বলবেঃ তোমার দ্বীন কি? সে বলবেঃ আমার দ্বীন ইসলাম।
অতঃপর বলবেঃ এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবেঃ তিনি রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। অতঃপর তারা বলবেঃ কিভাবে জানলে? সে বলবেঃ আমি
আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য জ্ঞান করেছি। অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে
ঘোষণা দিবেঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে
জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি
বলেনঃ ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত
তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেনঃ তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও
সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবেঃ সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে
তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে
শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার নেক আমল। সে বলবেঃ হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম
করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি”। তিনি বলেনঃ “আর কাফের বান্দা
যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান ও আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে
কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাদের সাথে থাকে ‘মুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর
তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন ও তার মাথার কাছে
বসেন। অতঃপর বলেনঃ হে খবিস নফস, আল্লাহর গোস্বা ও গজবের জন্য বের হও। তিনি বলেনঃ ফলে
সে তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর সে তাকে টেনে বের করে যেমন ভেজা উল থেকে (লোহার) সিক
বের করা হয় [১], অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত
হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা ঐ ‘মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ
দুনিয়াতে হতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয়। অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকেসহ
তারা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, এ খবিস রুহ কে?
তারা বলেঃ অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা
হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়, তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু
তার জন্য দরজা খোলা হবে না”। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তিলাওয়াত করেনঃ
“তাদের
জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না,
যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে” (সূরা
আরাফঃ ৪০) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ তার আমলনামা
জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত
করেনঃ
“আর
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ
মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের
কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল” (সূরা হজঃ ৩১)
তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়,
অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার রব কে?
সে বলেঃ হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলেঃ তোমার দ্বীন কি? সে বলেঃ হা হা আমি জানি
না। অতঃপর তারা বলেঃ এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলেঃ হা
হা আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার
জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার
নিকট তার তাপ ও বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাঁজরের হাড়
একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ
এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবেঃ তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে
তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই
নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবেঃ হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”। [আহমদও আবু দাউদ]
[১]
কারণ ভেজা উল সাধারণতঃ লোহার সাথে লেগে থাকে। তখন তা ছাড়িয়ে নেয়া কষ্টকর হয়। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩৬. অধ্যায়ঃ
জান্নাত
ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
হাদিস নং-৬৭
ইয়াদ
ইব্ন হিমার আল-মুজাশি থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তার খুতবায় বলেছেনঃ “জেন রেখ আমার রব আমাকে
নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না, যা তিনি আজকের এ দিনে
আমাকে শিক্ষা দিয়েছেনঃ আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয় আমি আমার
সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি শির্ক মুক্ত-একনিষ্ঠ, অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে
তাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করেছে। তাদের ওপর সে হারাম করেছে যা আমি তাদের জন্য হালাল
করেছি। সে তাদেরকে নির্দেশ করেছে যেন আমার সাথে শরীক করে, যার সপক্ষে কোন দলিল নাযিল
করা হয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ জমিনে বাসকারীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন অতঃপর তাদের আরব অনারব
সবাইর প্রতি তাঁর ক্রোধ আসে, অবশিষ্ট কতক কিতাবি [১] ব্যতীত। তিনি আরও বলেনঃ তোমাকে
প্রেরণ করেছি তোমাকে পরীক্ষা করব ও তোমার দ্বারা তাদের পরীক্ষা করব এ জন্য। আমি তোমার
ওপর এক কিতাব নাযিল করেছি, যা পানি ধুয়ে ফেলবে না, ঘুমন্ত ও জাগ্রত সর্বাবস্থায় তুমি
তা তিলাওয়াত করবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি কুরাইশদের জ্বালিয়ে
দেই। আমি বললামঃ হে আমার রব তাহলে তো তারা আমার মাথা থেঁতলে দিবে, অতঃপর রুটি বানিয়ে
ছাড়বে। তিনি বললেনঃ তাদেরকে বের কর যেমন তারা তোমাকে বের করেছে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর
আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করব, খরচ কর নিশ্চয় আমরা তোমার ওপর খরচ করব। তুমি বাহিনী প্রেরণ
কর, আমি তার সমান পাঁচগুণ প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করেছে তাদের নিয়ে যুদ্ধ কর
তাদের সাথে যারা তোমার অবাধ্য হয়েছে। তিনি বলেনঃ জান্নাতিরা তিন প্রকারঃ (ক). ন্যায়পরায়ণ,
সদকাকারী ও তাওফিকপ্রাপ্ত বাদশাহ। (খ). সকল আত্মীয় ও মুসলিমের জন্য দয়াশীল ও নরম হৃদয়ের
অধিকারী ব্যক্তি। (গ). অধিক সন্তান-সন্তুতিসম্পন্ন সৎ ও পবিত্র ব্যক্তি। তিনি বলেনঃ
জাহান্নামীরা পাঁচ প্রকারঃ (ক). দুর্বল, যার বিচারিক বিবেক নেই, যারা তোমাদের মধ্যে
অনুসারী, যারা সন্তান ও সম্পদ আশা করে না। (খ). খিয়ানতকারী, যার খিয়ানত গোপন থাকে না,
সামান্য বস্তু হলে তাতেও সে খিয়ানত করে। (গ). এমন ব্যক্তি যে সকাল-সন্ধ্যা তোমার পরিবার
ও সম্পদে ধোকা প্রদানে লিপ্ত। (ঘ). তিনি কৃপণতা অথবা মিথ্যার উল্লেখ করেছেন। (ঙ). দুরাচারী
অশ্লীল ব্যক্তি”। [মুসলিম]
[১]
যারা বিকৃতি করা ব্যতীত তাদের সঠিক দ্বীনে বহাল ছিল। এ সময়টা হচ্ছে নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রেরণ করার পূর্বে।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৬৮
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জান্নাত ও জাহান্নাম তর্ক করেছে, অতঃপর
জাহান্নাম বললঃ আমাকে অহংকারী ও দাম্ভিক দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বললঃ
আমার কি দোষ, আমার এখানে দুর্বল ও পতিত ব্যতীত কেউ প্রবেশ করবে না! আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে
বলেনঃ তুমি আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা আমি রহম করব। জাহান্নামকে
বলেনঃ তুমি আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা আমার বান্দাদের থেকে আমি শাস্তি দিব।
তোমাদের দু’টির প্রতিটিই পূর্ণ হতে হবে (অর্থাৎ উভয়কে পূর্ণ করা হবে)। জাহান্নাম পূর্ণ
হবে না যতক্ষণ না তাতে আল্লাহর পা রাখা হয়, তখন সে বলবেঃ কত্ কত্ কত্, তখনি জাহান্নাম
পূর্ণ হবে এবং তার এক অংশ অপর অংশে ঢুকে যাবে, আল্লাহ তার কোন মখলুককে যুলম করবেন না।
আর জান্নাতের জন্য আল্লাহ নতুন মখলুক সৃষ্টি করবেন”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
দুনিয়ার
সুখ ও দুঃখ আখেরাতে মূল্যহীন
হাদিস নং-৬৯
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্টভোগকারী জান্নাতিকে
হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ জান্নাতে তাকে ভালভাবে ঢোকাও, ফলে তাকে তারা ভালভাবে
জান্নাতে ঢুকাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম, তুমি কখনো কষ্ট অথবা তোমার
অপছন্দ কিছু দেখেছ? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো আমার অপছন্দ বস্তু দেখিনি।
অতঃপর দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী সুখভোগকারী জাহান্নামীকে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ
তাকে ভালভাবে জাহান্নামে ডুবাও, অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম, তুমি কখনো কল্যাণ ও
আরামদায়ক বস্তু দেখেছ? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক
বস্তু দেখেনি”। [মুসলিম, আহমদ ও ইব্ন মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩৮. অধ্যায়ঃ
কিয়ামতের
দৃশ্য
হাদিস নং-৭০
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে আদম, সে বলবেঃ
সদা উপস্থিত এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা, কল্যাণ কেবল তোমার
হাতেই। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল বের কর। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল কোনটি? তিনি বলবেনঃ
প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন, তখনি ছোটরা বার্ধক্যে উপনীত হবে। সকল গর্ভবতী
তার গর্ভ পাত করবে, তুমি দেখবে মানুষরা মাতাল, অথচ তাদের সাথে মাতলামি নেই, কিন্তু
আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল আমাদের থেকে সে একজন কে? তিনি
বললেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের থেকে একজন ও ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে এক হাজার। অতঃপর
তিনি বলেনঃ যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছিঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতিদের এক
চতুর্থাংশ হবে”। আমরা তাকবীর বলে উঠলাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের
এক তৃতীয়াংশ হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক
হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “মানুষের ভিতরে তোমরা সাদা ষাঁড়ের গায়ে একটি
কালো চুলের ন্যায়, অথবা কালো ষাঁড়ের গায়ের একটি সাদা চুলের ন্যায়”। [বুখারি, মুসলিম
ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
মানুষের
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে
হাদিস নং-৭১
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বললেনঃ
“তোমরা কি ভর দুপুরে মেঘ মুক্ত আকাশে সূর্য দেখায় সন্দেহ কর? তারা বললঃ না। তিনি বললেনঃ
তোমরা কি চৌদ্দ তারিখের রাতে মেঘহীন আকাশে চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর? তারা বললঃ না। তিনি
বললেনঃ তার সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার নফস, তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে
না, যেমন তোমরা সন্দেহ কর না সূর্য-চাঁদ কোনো একটি দেখার ক্ষেত্রে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ
বান্দার সাথে সাক্ষাত করবেন অতঃপর বলবেনঃ হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে
নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি
কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবেঃ অবশ্যই। তিনি বলেনঃ
অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবেঃ না। অতঃপর তিনি
বলবেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তির
সাথে সাক্ষাত করবেন এবং বলবেনঃ হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব
দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে
সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবেঃ অবশ্যই হে আমার রব। তিনি বলেনঃ
অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবেঃ না। অতঃপর তিনি
বলবেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তির
সাথে সাক্ষাত করবেন, তাকেও অনুরূপ বলবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব আমি তোমার ওপর, তোমার
কিতাব ও রাসূলদের ওপর ঈমান এনেছি, সালাত আদায় করেছি, সিয়াম পালন করেছি, সদকা করেছি,
সে ইচ্ছামত গুণাগুণ বর্ণনা করবে। তিনি বলবেনঃ তাহলে অপেক্ষা কর, তিনি বলেনঃ অতঃপর তাকে
বলা হবেঃ এখন আমি তোমার বিপক্ষে আমার সাক্ষী উপস্থিত করছি। সে অন্তরে চিন্তা করবে আমার
বিপক্ষে কে সাক্ষী দিবে, তখন তার মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হবে, এবং তার রান, গোস্ত ও হাড্ডিকে
বলা হবেঃ কথা বল, ফলে তার রান, গোস্ত ও হাড্ডি তার আমলের বর্ণনা দিবে। আর এটা এ জন্যে
যে, যেন সে লোক আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে না পারে, সে হচ্ছে মুনাফিক, তার ওপরই আল্লাহর
অসন্তুষ্টি আরোপ হবে”। [মুসলিম ও আবু দাউদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৭২
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “আমরা একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের নিকট ছিলাম, তিনি হঠাৎ
হাসলেন। তিনি বললেনঃ “তোমরা জান কেন হেসেছি?”, তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ আল্লাহ এবং তার
রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ “(আমি হেসেছি) বান্দার তার রবকে পাল্টা প্রশ্ন করা থেকে।
সে বলবেঃ হে আমার রব, আপনি কি আমাকে যুলম থেকে নাজাত দেননি?” তিনি বলেনঃ “আল্লাহ বলবেনঃ
অবশ্যই”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর সে বলবেঃ আমার বিপক্ষে আমার অংশ ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী
মানি না”। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ্ বলবেনঃ সাক্ষী হিসেবে আজ তোমার জন্য তুমিই যথেষ্ট, আর
দর্শক হিসেবে কিরামুন কাতেবিন যথেষ্ট”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তার মুখে মোহর এঁটে দেয়া
হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে, বল”। তিনি বলেনঃ “ফলে অঙ্গসমূহ তার আমলের বর্ণনা
দিবে”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর সে বলবেঃ তোমরা দূর হও, নিপাত যাও তোমরা, তোমাদের পক্ষেই
তো আমি সংগ্রাম করতাম”। [মুসলিম ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪০. অধ্যায়ঃ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ
তা‘আলা জমিন তাঁর হাতের মুঠোয় গ্রহণ করবেন, আর আসমান তার ডান হাতে মুড়িয়ে নিবেন, অতঃপর
বলবেনঃ আমিই বাদশাহ, দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়?”। [বুখারি, মুসলিম ও ইব্ন মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৭৪
ইব্ন
ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ জমিন হাতের মুঠোয়
গ্রহণ করবেন, আর আসমান তার ডান হাতে থাকবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশাহ”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৭৫
উবাইদুল্লাহ
ইব্ন মিকসাম থেকে বর্ণিতঃ
সে
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমরকে লক্ষ্য করেছে কিভাবে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)-কে বর্ণনা দেন, তিনি (নবী-সা.) বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন তার
দু’হাতে পাকড়াও করবেন, অতঃপর বলবেনঃ আমি আল্লাহ, (তিনি হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ ও
প্রসারিত করছিলেন), আমিই বাদশাহ”। আমি মিম্বারের দিকে দেখলাম একেবারে নিচ থেকে নড়ছে,
এমনকি মনে হচ্ছিল মিম্বার কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে
পড়ে যাবে”। মুসলিম, ইব্ন মাজাহ ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
কতক
জাহান্নামীর জাহান্নাম থেকে বের হওয়া
হাদিস নং-৭৬
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “জাহান্নাম থেকে চারজন বের হবে, তাদেরকে
আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের নির্দেশ দিবেন, ফলে তাদের
একজন পিছন ফিরে তাকাবে এবং বলবেঃ হে আমার রব, আমি আশা করেছিলাম যদি সেখান থেকে আমাকে
বের করেন, সেখানে আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না, ফলে তিনি বলবেনঃ আমি তোমাকে সেখানে ফিরিয়ে
দিব না”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
কিয়ামতের
দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ
হাদিস নং-৭৭
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম
যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, -অর্থাৎ বান্দাকে- তা হচ্ছে নিয়ামত, তাকে বলা হবে যেঃ
আমি কি তোমার শরীর সুস্থ করিনি, আমি কি তোমাকে ঠাণ্ডা পানি পান করাই নি”। [তিরমিযি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৩. অধ্যায়ঃ
পরকালের
আমলে অলসতাকারীর জন্য হুশিয়ারি
হাদিস নং-৭৮
আবু
হুরায়রা ও আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন বান্দাকে
উপস্থিত করা হবে, অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আমি কি তোমাকে কান, চোখ, সম্পদ ও সন্তান
দেই নি? এবং তোমার জন্য চতুষ্পদ জন্তু ও কৃষি অনুগত করে দিয়েছি। আর তোমাকে দিয়েছি নেতৃত্ব
দেয়া ও ভোগ করার সুযোগ, (এত কিছুর পর) তুমি কি চিন্তা করেছ তোমার এ দিনে আমার সাথে
সাক্ষাত করবে?” রাসূল বলেনঃ “সে বলবেঃ না, অতঃপর তিনি তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে ছেড়ে
যাব, যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে”। [তিরমিযি]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৪৪. অধ্যায়ঃ
আখেরাতে
মুমিনগণ রবের দর্শন লাভ করবে
হাদিস নং-৭৯
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি
বলেনঃ “তোমরা কি সূর্য ও চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর যখন আসমান পরিষ্কার থাকে?”, আমরা বললামঃ
না, তিনি বললেনঃ “নিশ্চয় সেদিন তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন চাঁদ-সূর্য
উভয়কে দেখায় সন্দেহ কর না”। অতঃপর বললেনঃ “একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেঃ প্রত্যেক সম্প্রদায়
যেন তার নিকট যায়, যার তারা ইবাদত করত, ক্রুসের অনুসারীরা তাদের ক্রুসের সাথে যাবে;
মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তির সাথে যাবে; এবং প্রত্যেক মাবুদের ইবাদতকারীরা তাদের মাবুদের
সাথে যাবে। অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা বদকার লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে এবং
কতক কিতাবি, অতঃপর জাহান্নাম হাজির করা হবে যেন তা মরীচিকা। অতঃপর ইহুদিদের বলা হবেঃ
তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবেঃ আমরা আল্লাহর ছেলে উযাইর এর ইবাদত করতাম, অতঃপর তাদেরকে
বলা হবেঃ তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা
বলবেঃ আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করান, বলা হবেঃ তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে
ছিটকে পড়বে। অতঃপর খৃস্টানদের বলা হবেঃ তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবেঃ আমরা আল্লাহর
ছেলে ঈসার ইবাদত করতাম, বলা হবেঃ তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই,
তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ আমরা চাই আমাদের পানি পান করান। বলা হবেঃ পান কর, ফলে তারা
জাহান্নামে ছিটকে পড়বে, অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার ও বদকার অবশিষ্ট থাকবে, তাদেরকে
বলা হবেঃ কে তোমাদেরকে আটকে রেখেছে অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবেঃ আমরা তাদেরকে
(দুনিয়াতে) ত্যাগ করেছি, আজ আমরা তার (আমাদের রবের) বেশী মুখাপেক্ষী, আমরা এক ঘোষণাকারীকে
ঘোষণা করতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কওম যেন তার সাথেই মিলিত হয়, যার তারা ইবাদত করত, তাই
আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট আসবেন ভিন্ন সুরুতে,
যে সুরুতে প্রথমবার তারা তাকে দেখেনি। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব। তারা বলবেঃ আপনি
আমাদের রব, নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না। তিনি বলবেনঃ তোমাদের ও তার মাঝে
কোন নিদর্শন আছে যা তোমরা চিন? তারা বলবেঃ পায়ের গোছা, ফলে তিনি তার গোছা উন্মুক্ত
করবেন, প্রত্যেক মুমিন তাকে সেজদা করবে, তবে যে লোকদেখানো কিংবা লোকদের শোনানোর জন্য
সেজদা করত সে অবশিষ্ট থাকবে। সে সেজদা করতে চাইবে কিন্তু তার পিঠ উল্টো সোজা খাড়া হয়ে
যাবে। অতঃপর পুল আনা হবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর
রাসূল পুল কি? তিনি বললেনঃ পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রয়েছে ছো মারা হুক, পেরেক, বিশাল
বড়শি যার রয়েছে বড় কাঁটা যেরূপ নজদ এলাকায় হয়, যা সা‘দান বলা হয়। তার ওপর দিয়ে মুমিনগণ
চোখের পলক, বিদ্যুৎ, বাতাস, শক্তিশালী ঘোড়া ও পায়দল চলার ন্যায় পার হবে, কেউ নিরাপদে
নাজাত পাবে, কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে, অবশেষে
যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি অতিক্রম করবে তখন তাকে টেনে হিছড়ে পার করা হবে। আর কোন সত্য
বিষয়ে তোমরা আমার নিকট এতটা পীড়াপীড়ি কর না, -তোমাদের নিকট যা স্পষ্ট হয়েছে- মুমিনগণ
সেদিন আল্লাহর নিকট যতটা পীড়াপীড়ি করবে, যখন দেখবে যে তাদের ভাইদের মধ্যে শুধু তারাই
নাজাত পেয়েছে, তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত,
আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত এবং আমাদের সাথে আমল করত। আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ যাও যার
অন্তরে তোমরা দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের
জন্য হারাম করে দিবেন। তারা তাদের নিকট আসবে, তাদের কেউ পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে,
কেউ গোছার অর্ধেক পর্যন্ত, তারা যাদেরকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ
বলবেনঃ যাও, যার অন্তরে তোমরা অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, তারা যাকে
চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেনঃ যাও যার অন্তরে তোমরা অণু পরিমাণ
ঈমান দেখ তাকে বের কর, ফলে তারা যাকে চিনবে বের করবে”। আবু সায়িদ বলেনঃ যদি তোমরা আমাকে
সত্য জ্ঞান না কর, তাহলে পড়ঃ
“নিশ্চয়
আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে
দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান
প্রদান করেন” (সূরা নিসাঃ ৪০) অতঃপর
নবী, ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সুপারিশ বাকি রয়েছে, অতঃপর
জাহান্নাম থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করবেন, ফলে এমন লোক বের করবেন যারা জ্বলে গিয়েছে, তাদেরকে
জান্নাতের দরজার নিকট অবস্থিত নহরে নিক্ষেপ করা হবে, যাকে বলা হয় সঞ্জীবনী পানি, ফলে
তার দু’পাশে গজিয়ে উঠবে যেমন প্রবাহিত পানির উর্বর মাটিতে শস্য গজিয়ে উঠে, যা তোমরা
দেখেছ পাথর ও গাছের পাশে, তার থেকে যা সূর্যের দিকে তা সবুজ এবং যা ছায়ার আড়ালে তা
সাদা, অতঃপর তারা মুক্তোর ন্যায় বের হবে। অতঃপর তাদের গর্দানে সীলমোহর দয়া হবে, অতঃপর
তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, জান্নাতিরা বলবেঃ তারা হচ্ছে রহমানের নাজাতপ্রাপ্ত, তাদেরকে
তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন কোন আমলের বিনিময়ে নয়, যা তারা করেছে, বা কোন কল্যাণের
বিনিময়ে নয় যা তারা অগ্রে প্রেরণ করেছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের জন্য তোমরা
যা দেখেছ তা এবং তার সাথে তার অনুরূপ”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৮০
আবু
যুবায়ের থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ)কে শুনেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘ওরুদ’ (বা জাহান্নামে
নামা) সম্পর্কে, তিনি বলেনঃ আমরা কিয়ামতের দিন অমুক অমুক স্থান থেকে হাজির হব, দেখ
অর্থাৎ মানুষের ওপরে, তিনি বলেনঃ লোকদেরকে তাদের মূর্তিসহ ডাকা হবে এবং তারা যার ইবাদত
করত। প্রথম অতঃপর প্রথম ধারাবাহিকভাবে, অতঃপর আমাদের রব আসবেন এবং বলবেনঃ তোমরা কার
অপেক্ষা করছ? তারা বলবেনঃ আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি, তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের
রব, তারা বলবেঃ যতক্ষণ না আমরা আপনাকে দেখব, ফলে তিনি তাদের সামনে জাহির হবেন সহাস্যে”।
রাসূল বলেনঃ “অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে চলবেন, তারাও তার অনুসরণ করবে। তাদের প্রত্যেক
ব্যক্তিকে নূর দেয়া হবে, কি মুনাফিক কি মুমিন, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করবে, জাহান্নামের
পুলে থাকবে হুক ও বড়শিসমূহ, সেগুলো পাকড়াও করবে আল্লাহ যাকে চাইবেন তাকে, অতঃপর আল্লাহ
তা‘আলা মুনাফিকদের নূর নিভিয়ে দিবেন, মুমিনগণ নাজাত পাবে, প্রথম দলটি নাজাত পাবে তাদের
চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়, শত্তুর হাজার এমন হবে যাদের কোন হিসাব নেয়া
হবে না। অতঃপর তাদের পরবর্তীরা হবে আসমানের সবচেয়ে উজ্জল তারকার ন্যায়, অতঃপর অনুরূপ,
অতঃপর সুপারিশ আরম্ভ হবে এবং তারা সুপারিশ করবে, অবশেষে যে لَا إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ বলেছে এবং যার অন্তরে গমের ওজন পরিমাণ
কল্যাণ ছিল সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। তাদেরকে জান্নাতের বারান্দায় রাখা হবে, জান্নাতিরা
তাদের ওপর পানি ঢালতে থাকবে, অবশেষে তারা পানি প্রবাহের স্থানে শস্য গজানোর ন্যায় বেড়ে
উঠবে, তাদের পোড়াদাগ চলে যাবে, অতঃপর প্রার্থনা করা হবে, এমনকি তাকে দুনিয়া ও দুনিয়ার
সমান দশগুণ দেয়া হবে”। [মুসলিম ও আহমদ] হাদীসটি মওকুফ ও সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ মাওকুফ
৪৫. অধ্যায়ঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আল্লাহর নিয়ামত
হাদিস নং-৮১
ইব্ন
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি আমার রবকে একটি বিষয় জিজ্ঞাসা করেছি,
আফসোস আমি যদি তা জিজ্ঞাসা না করতাম। আমি বলেছিঃ হে আমার রব আমার পূর্বে অনেক রাসূল
ছিল, তাদের কারো জন্য বাতাস অনুগত করে দেয়া হয়েছে, তাদের কেউ মৃতদের জীবিত করত। আল্লাহ্
বলেনঃ আমি কি তোমাকে ইয়াতিম পাই নি অতঃপর আশ্রয় দিয়েছি? আমি কি তোমাকে পথভোলা পাই নি
অতঃপর পথ দেখিয়েছি? আমি কি তোমাকে অভাবী পাই নি অতঃপর তোমাকে সচ্ছল করেছি? আমি কি তোমার
বক্ষ উন্মুক্ত করি নি? আমি কি তোমার থেকে বোঝা দূর করি নি? রাসূল বলেনঃ আমি বলেছিঃ
অবশ্যই হে আমার রব”। [তাবরানি]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউজ
হাদিস নং-৮২
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “অবশ্যই আমার কতক লোক হাউজে আমার নিকট
হাজির হবে, অবশেষে যখন আমি তাদেরকে চিনব আমার পিছন থেকে তাদেরকে ছো মেরে নেয়া হবে,
আমি বলবঃ আমার লোক। আমাকে (আল্লাহ্) বলবেনঃ আপনি জানেন না আপনার পর তারা কি আবিষ্কার
করেছে”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৮৩
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি
তার সাথীদের মাঝে ছিলেনঃ “আমি হাউজের ওপর থাকব, অপেক্ষা করব তার জন্য যে তোমাদের থেকে
আমার কাছে আসবে। আল্লাহর শপথ আমার থেকে কতক লোক বিচ্ছিন্ন করা হবে, আমি বলবঃ হে আমার
রব (তারা) আমার ও আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত, তিনি বলবেনঃ তুমি জান না তোমার পর তারা
কি করেছে, তারা তাদের পশ্চাতেই ধাবিত ছিল”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাউজে
কাউসার
হাদিস নং-৮৪
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে ছিলেন, হঠাৎ
তিনি তন্দ্রা গেলেন, অতঃপর হাসতে হাসতে মাথা তুললেন। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল
কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে?! তিনি বললেনঃ “এ মুহূর্তে আমার ওপর একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে,
অতঃপর তিনি পড়লেনঃ
“নিশ্চয়
আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি। অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই
সালাত পড় এবং নহর কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি
শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ” (সূরা কাউসারঃ ১-৩) অতঃপর
তিনি বললেনঃ “তোমরা জান কাউসার কি?” আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি
বললেনঃ “এটা একটা নহর, এর ওয়াদা আল্লাহ আমার নিকট করেছেন, তাতে রয়েছে প্রচুর কল্যাণ।
এটা এক হাউজ তাতে আমার উম্মত গমন করবে, তার পাত্রগুলো নক্ষত্রের সংখ্যার ন্যায়, তাদের
থেকে এক বান্দাকে ছো মেরে নেয়া হবে, আমি বলবঃ হে আমার রব, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত,
তিনি বলবেনঃ তুমি জান না তোমার পর তারা কি আবিষ্কার করেছে”। [মুসলিম ও আবু দাউদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
সুপারিশের
হাদিস
হাদিস নং-৮৫
মা‘বাদ
ইব্ন হিলাল আনাজি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমরা বসরার কতক লোক একসাথে আনাস ইব্ন মালেকের নিকট গেলাম। আমরা আমাদের সাথে
সাবেত আল-বুনানিকে নিয়ে গেলাম, যেন সে আমাদের পক্ষে তাকে সুপারিশের হাদিস সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করে। তিনি বাড়িতেই ছিলেন, আমরা তাকে দোহা (চাশতে)র সালাত আদায় করতে পেলাম।
আমরা অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন, তিনি বিছানায় উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা
সাবেতকে বললামঃ সুপারিশের হাদিসের পূর্বে কোন বিষয় সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন না,
তিনি বললেনঃ হে আবু হামযাহ, তারা আপনার ভাই বসরার অধিবাসী, তারা আপনার নিকট এসেছে সুপারিশের
হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য। অতঃপর তিনি বললেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ “যখন কিয়ামতের দিন হবে মানুষ ভীড়ে ঠাসাঠাসি করবে, অতঃপর
তারা আদম আলাইহিস সালামের নিকট আসবে ও বলবেঃ আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন,
তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ইবরাহিমের নিকট যাও, কারণ তিনি রহমানের খলিল।
তারা ইবরাহিমের নিকট আসবে, তিনি বলবেনঃ আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা মুসার নিকট যাও, কারণ
তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী। তারা মুসার নিকট আসবে, তিনি বলবেনঃ আমি এ জন্য নই,
তবে তোমরা ঈসার নিকট যাও, কারণ তিনি আল্লাহর (পক্ষ থেকে বিশেষ) রূহ ও তার বাণী। তারা
ঈসার নিকট আসবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাও, অতঃপর তারা আমার নিকট আসবে, আমি বলবঃ আমি এ জন্য, আমি
আমার রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব, আমাকে অনুমতি দেয়া হবে, তিনি আমাকে প্রশংসার
বাক্য শিক্ষা দিবেন যা দ্বারা আমি তার প্রশংসা করব, যা এখন আমার স্মরণ নেই। আমি তার
প্রশংসা করব ও সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, তিনি বলবেনঃ হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, তুমি বল তোমার
কথা শোনা হবে, তুমি চাও তোমাকে দেয়া হবে, তুমি সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা
হবে। আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেনঃ যাও, সেখান থেকে বের
কর যার অন্তরে গমের ওজন বরাবর ঈমান রয়েছে, আমি যাব ও অনুরূপ করব। অতঃপর ফিরে আসব ও
সে প্রশংসার বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব, অতঃপর তার সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, অতঃপর বলা
হবেঃ হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে দেয়া হবে, সুপারিশ
কর তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি
বলবেনঃ যাও, সেখান থেকে বের কর যার অন্তরে অণু অথবা সরিষা পরিমান ঈমান রয়েছে, আমি যাব
ও অনুরূপ করব। অতঃপর ফিরে এসে সে বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব অতঃপর সেজদায় লুটিয়ে
পড়ব, বলা হবেঃ হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে দেয়া হবে,
সুপারিশ কর কবুল করা হবে, অতঃপর আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি
বলবেনঃ যাও, বের কর যার অন্তরে সরিষার অণু অণু অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে, অতএব আমি তাকে
জাহান্নাম থেকে বের করব, আমি যাব ও অনুরূপ করব”। আমরা যখন আনাসের কাছ থেকে প্রস্থান
করলাম, আমি আমাদের কতক সাথীকে বললামঃ আমরা যদি হাসান বসরি হয়ে যাই, তার নিকট আনাসের
হাদিস বর্ণনা করি! তখন তিনি আবু খলিফার ঘরে আত্মগোপন করে ছিলেন, আমরা তার নিকট আসলাম,
তাকে সালাম করলাম, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন, আমরা তাকে বললামঃ হে আবু সায়িদ, আমরা
আপনার নিকট আপনার ভাই আনাস ইব্ন মালেকের কাছ থেকে এসেছি, তিনি আমাদেরকে সুপারিশ সম্পর্কে
যা শুনিয়েছেন তা কখনো শুনেনি। তিনি বললেনঃ বল, আমরা তাকে হাদিস বললাম, এখানে এসে শেষ
করলাম। তিনি বললেনঃ বল, আমরা বললাম এরচেয়ে বেশী বলেন নি। তিনি বললেনঃ তিনি আমাকে বলেছেন
পূর্ণ বিশ বছর পূর্বে, জানি না তিনি ভুলে গেছেন বা তোমাদের (পক্ষ থেকে কম আমলের উপর)
নির্ভর করে থাকাকে অপছন্দ করেছেন। আমরা বললামঃ হে আবু সায়িদ আপনি আমাদেরকে বলুন, তিনি
হাসলেন ও বললেনঃ মানুষকে তড়িৎ প্রবণ করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি তো তোমাদেরকে বলার জন্যই
বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন যেমন তোমাদেরকে তা বলেছেন। তিনি বলেনঃ “অতঃপর আমি চতুর্থবার
ফিরব এবং সে বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব, অতঃপর তার সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, বলা হবেঃ
হে মুহাম্মদ, মাথা উঠাও, বল শোনা হবে, চাও দেয়া হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে। আমি
বলবঃ হে আমার রব, যারা বলেছে لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ
তাদের ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দিন। তিনি বলবেনঃ আমার ইজ্জত, বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও সম্মানের
কসম, অবশ্যই আমি তাকে বের করব, لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ
যে বলেছে”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
উম্মতে
মুহাম্মাদির ফযিলত
হাদিস নং-৮৬
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন নুহ আলাইহিস সালামকে ডাকা
হবে, তিনি বলবেনঃ সদা উপস্থিত, আপনার সন্তুষ্টি বিধানে আমি সদা তৎপর হে আমার রব, তিনি
বলবেনঃ তুমি পৌঁছিয়েছ? তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ, তার উম্মতকে বলা হবেঃ সে তোমাদের পৌঁছিয়েছে?
তারা বলবেঃ আমাদের নিকট কোন সতর্ককারী আসে নি। তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য কে সাক্ষী দিবে?
তিনি বলবেনঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত, অতঃপর তারা সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় তিনি পৌঁছিয়েছেন,
আর রাসূল হবেন তোমাদের সাক্ষী। এ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
“আর
এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের
উপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের
উপর” (সূরা বাকারাঃ ১৪৩) ওয়াসাত অর্থ
ইনসাফপূর্ণ পথ বা মধ্যমপন্থার অনুসারী”। [বুখারি, তিরমিযি ও ইব্ন মাজাহ] হাদীসটি সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৮৭
আবু
মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন কিয়ামতের দিন হবে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক
মুসলিমের নিকট একজন ইহুদি অথবা খৃস্টান দিবেন, অতঃপর বলবেনঃ এ হচ্ছে তোমার জাহান্নাম
থেকে মুক্তির বিনিময়” [১]। [মুসলিম ও আহমদ]
[১] কারণ প্রতিটি মানুষের জন্য জাহান্নামে একটি স্থান
রয়েছে। যখন মুসলিম জাহান্নামে গেল না, আর খৃষ্টান ও ইয়াহূদী জাহান্নামে গেল, তখন সে
যেন মুসলিমের স্থান দখল করে নিল। আর মুসলিম যেন কাফেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করল। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৮৮
আবু
মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “এ উম্মতকে তিন ভাগে উপস্থিত করা হবেঃ
প্রথম ভাগ বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দ্বিতীয় ভাগ থেকে সামান্য হিসেব নেয়া
হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তৃতীয় ভাগ নিজেদের পিঠের ওপর বড় পাহাড়ের ন্যায়
পাপসহ উপস্থিত হবে, অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে
অধিক জানেনঃ এরা কারা? তারা বলবেঃ এরা আপনার কতক বান্দা। তিনি বলবেনঃ এসব তাদের থেকে
হটাও, এগুলো ইহুদি ও খৃস্টানদের ওপর রাখ এবং তাদেরকে আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও”।
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
হাদিস নং-৮৯
আবু
উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন কিয়ামতের দিন হবে একদল মানুষ দাঁড়াবে,
তাদের নূর সূর্যের ন্যায় দিগন্ত ঢেকে ফেলবে, অতঃপর বলা হবেঃ উম্মী নবী, প্রত্যেক নবী
এ জন্য প্রস্তুত হবেন। অতঃপর বলা হবেঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর একদল দাঁড়াবে তাদের
নূর চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায় দিগন্তের মধ্যবর্তী সব ঢেকে ফেলবে, বলা হবেঃ উম্মী
নবী, প্রত্যেকেই এ জন্য প্রস্তুত হবেন, অতঃপর বলা হবেঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর
একদল দাঁড়াবে তাদের নূর আসমানের তারকার ন্যায় দিগন্তের মধ্যবর্তী সব ঢেকে ফেলবে, বলা
হবেঃ উম্মী নবী, প্রত্যেকেই এ জন্য প্রস্তুত হবেন, অতঃপর বলা হবেঃ মুহাম্মদ ও তার উম্মত।
অতঃপর দু’ মুষ্টি উঠাবেন ও বলবেনঃ এটা তোমার জন্য হে মুহাম্মদ ও এটা আমার পক্ষ থেকে
তোমার জন্য হে মুহাম্মদ। অতঃপর মীযান কায়েম করা হবে এবং হিসাব আরম্ভ হবে”। [তাবরানি]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সাদা এ আয়নার ন্যায় অনুরূপ আয়না নিয়ে
জিবরিল আমার নিকট এসেছে তাতে কালো একটি ফোঁটা। আমি বললামঃ হে জিবরিল এটা কি? তিনি বললেনঃ
এ হচ্ছে জুমা, আল্লাহ যা তোমার ও তোমার উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন, তোমরাই ইহুদি ও
খৃস্টানদের পূর্বে, (অর্থাৎ তাদের সাপ্তাহিক ঈদের পূর্বদিন তোমাদের ঈদের দিন) তাতে
একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ প্রার্থনা করবে না, যা
তিনি তাকে দিবেন না। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ এ কালো ফোঁটা কি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে কিয়ামত
জুমার দিন কায়েম হবে, আমরা একে মাযিদ বলি। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়াওমুল মাযিদ কি?
তিনি বললেনঃ আল্লাহ জান্নাতে প্রশস্ত ময়দান তৈরি করেছেন, সেখানে তিনি সাদা মিশকের স্তূপ
রেখেছেন, যখন জুমার দিন হয় আল্লাহ সেখানে অবতরণ করবেন, সেখানে নবীদের জন্য স্বর্ণের
মিম্বার রাখা হয়, আর শহীদদের জন্য মুক্তোর চেয়ার এবং (জান্নাতের) প্রাসাদসমূহ থেকে
‘হূরুল ঈন’ বা ডাগর নয়না হূর অবতরণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ-গান করবে। তিনি বলেনঃ
অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দাদের কাপড় পরিধান করাও, তাদের কাপড় পরিধান করানো হবে।
তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের খাদ্য দাও, তাদের খাদ্য দেয়া হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের
পান করাও, তাদের পান করানো হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের সুগন্ধি দাও, তাদের সুগন্ধি
দেয়া হবে। অতঃপর বলবেনঃ তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব তোমার সন্তুষ্টি। তিনি
বলেনঃ তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছি, অতঃপর তাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা
যাবে ও ‘হূরল ঈন’ প্রাসাদসমূহে প্রবেশ করবে যা সবুজ মণি-মুক্তা ও লাল ইয়াকুত পাথরের
তৈরি”। [আবু ইয়ালা]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৯১
ইব্ন
ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বের উম্মতের তুলনায় তোমাদের
স্থায়িত্ব হচ্ছে আসর সালাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আহলে তাওরাতকে তাওরাত প্রদান করা
হয়েছে, তারা তার ওপর দিনের অর্ধেক আমল করে অতঃপর অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, তাই তাদেরকে
এক কিরাত [১] এক কিরাত দেয়া হয়েছে। অতঃপর আহলে ইঞ্জিলকে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছে, তারা তার
ওপর আমল করেছে আসর সালাত পর্যন্ত, অতঃপর তারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, তাই তাদেরকে এক
কিরাত এক কিরাত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হয়েছে, তোমরা তার ওপর আমল করেছ
সূর্যাস্ত পর্যন্ত, তাতেই তোমাদেরকে দুই কিরাত দুই কিরাত প্রদান করা হয়েছে। কিতাবিরা
বললঃ তারা আমাদের তুলনায় আমলে কম, কিন্তু সওয়াবে অধিক। আল্লাহ বললেনঃ আমি কি তোমাদের
হক থেকে সামান্য বঞ্চিত করেছি? তারা বললঃ না, তিনি বললেনঃ এটা আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে
চাই দান করি”। [বুখারি]
[১]
দীনার মুদ্রা মানের ক্ষুদ্র অংশকে কিরাত বলা হয়। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৯২
সাওবান
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য জমিন ঘুচিয়ে
দিলেন ফলে আমি তার পূর্ব-পশ্চিম দেখেছি, নিশ্চয় আমার উম্মতের রাজত্ব পৌঁছবে যতটুকু
আমার সামনে পেশ করা হয়েছে। আমাকে লাল ও সাদা দু’টি ভাণ্ডার [১] প্রদান করা হয়েছে, আমি
আমার রবের নিকট আমার উম্মতের জন্য প্রার্থনা করেছি যেন, তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের
মাধ্যমে ধ্বংস করা না হয়, যেন তাদের ওপর তাদের ব্যতীত কোন দুশমন চাপিয়ে দেয়া না হয়,
যে তাদের সমূলে ধ্বংস করবে। আমার রব আমাকে বলেছেনঃ হে মুহাম্মদ আমি যখন কোন সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করি, তা প্রত্যাখ্যান করা হয় না, আমি তোমার উম্মতের জন্য তোমাকে প্রদান করলাম
যে, তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা ধ্বংস করব না। তাদের ওপর তাদের ব্যতীত কোন দুশমন
চাপিয়ে দেব না যারা তাদের সমূলে ধ্বংস করবে, যদিও দুনিয়ার প্রান্ত থেকে এসে একত্র হয়,
অথবা বলেছেনঃ দিগন্তের মধ্য থেকে এসে, তবে তারা একে অপরকে ধ্বংস করবে, একে অপরকে বন্দি
করবে”। [মুসলিম]
[১] অর্থাৎ স্বর্ণ ও রৌপ্য। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৯৩
আব্দুল্লাহ
ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহর এ বাণী
তিলাওয়াত করেনঃ
“হে
আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ
করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত” (সূরা
ইবরাহিমঃ৩৬) ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেনঃ
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (সূরা মায়েদাঃ১১৮) অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ আমর উম্মত, আমার উম্মত” এবং ক্রন্দন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “হে জিবরিল মুহাম্মদের নিকট যাও, -নিশ্চয় তোমার রব অধিক জ্ঞাত,- তাকে জিজ্ঞাসা কর কি জন্য কাঁদ? জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তিনিই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে জিবরিল মুহাম্মদের নিকট যাও, তাকে বলঃ নিশ্চয় আমি তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, তোমাকে অসন্তুষ্ট করব না”। [মুসলিম]
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” (সূরা মায়েদাঃ১১৮) অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ আমর উম্মত, আমার উম্মত” এবং ক্রন্দন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “হে জিবরিল মুহাম্মদের নিকট যাও, -নিশ্চয় তোমার রব অধিক জ্ঞাত,- তাকে জিজ্ঞাসা কর কি জন্য কাঁদ? জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তিনিই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে জিবরিল মুহাম্মদের নিকট যাও, তাকে বলঃ নিশ্চয় আমি তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, তোমাকে অসন্তুষ্ট করব না”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৯৪
মালিক
ইব্ন সা‘সা‘ থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ... এখানে তিনি মেরাজের হাদিস বর্ণনা করেন,
তাতে রয়েছে, “অতঃপর আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়, অতঃপর আমি এগিয়ে মুসা
পর্যন্ত আসি, তিনি বলেনঃ কি করেছ? আমি বললামঃ আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা
হয়েছে। তিনি বলেনঃ মানুষ সম্পর্কে তোমার চেয়ে আমি বেশী জানি, আমি বনি ইসরাইলকে কঠিনভাবে
পরীক্ষা করেছি, তোমার উম্মত পারবে না, ফিরে যাও তোমার রবকে বল। আমি ফিরে যাই, অতঃপর
তাকে বলি, তিনি তা চল্লিশ ওয়াক্ত করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে ত্রিশ করে দেন, অতঃপর
অনুরূপ ঘটে, ফলে বিশ করে দেন, অতঃপর অনুরূপ ঘটে, ফলে দশ করে দেন, অতঃপর মুসার নিকট
আসি, তিনি অনুরূপ বলেন, ফলে তা পাঁচ করে দেয়া হয়। অতঃপর মুসার নিকট আসি, তিনি বলেনঃ
কি করেছ? আমি বললামঃ পাঁচ ওয়াক্ত করে দিয়েছেন, তিনি অনুরূপ বলেন। আমি বললামঃ আমি সন্তুষ্ট
চিত্তে গ্রহণ করেছি। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হয়ঃ নিশ্চয় আমি আমার ফরয বাস্তবায়ন করেছি, আমার
বান্দাদের থেকে হালকা করেছি, আমি এক নেকির প্রতিদান দিব দশ”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৯৫
ইব্ন
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “(হজের [১]) মৌসুমে সকল উম্মত আমার সামনে
পেশ করা হয়েছে, ফলে আমি আমার উম্মত দেখেছি, তাদের আধিক্য ও হালত আমাকে খুশি করেছে,
তারা সমতল ও পাহাড় সর্বত্র পূর্ণ ছিল। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ তুমি কি সন্তুষ্ট হয়েছ?
আমি বললামঃ হ্যাঁ, হে রব। তিনি বললেনঃ তাদের সাথে শত্তুর হাজার বিনা হিসেবে জান্নাতে
যাবে, যারা ঝাঁড়-ফুঁক চায় না, জ্বলন্ত লোহার সেক দেয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করে না এবং অশুভ
লক্ষণ নেয় না, বরং তারা তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে। উক্কাশা বলেনঃ দো‘আ
করেন যেন আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত
করুন”। অতঃপর অপর ব্যক্তি বলেঃ আমার জন্য দো‘আ করুন যেন আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত
করেন, তিনি বলেনঃ “উক্কাশা তোমাকে অতিক্রম করে গেছে”। [আহমদ, ইব্ন হিব্বান]
[১] ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে তা স্পষ্ট
করা হয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-৯৬
ইব্ন
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “কুরাইশরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললঃ তুমি তোমার রবের নিকট
দো‘আ কর যেন ‘সাফা’কে আমাদের জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দেন, তাহলে আমরা তোমার ওপর ঈমান আনব।
তিনি বললেনঃ তোমরা তাই করবে? তারা বললঃ হ্যাঁ। ইব্ন আব্বাস বলেনঃ অতঃপর তিনি দো‘আ
করেন, ফলে তার নিকট জিবরিল আগমন করেন ও বলেনঃ তোমার রব তোমাকে সালাম করেছেন, তিনি বলছেনঃ
যদি তুমি চাও তাহলে ‘সাফা’কে তাদের জন্য স্বর্ণ বানিয়ে দিব, অতঃপর যে কুফরি করবে, তাকে
আমি এমন আযাব দিব যা দুনিয়ার কাউকে দিব না। যদি চাও আমি তাদের জন্য তওবা ও রহমতের দরজা
খুলে দিব। তিনি বলেনঃ বরং তওবা ও রহমতের দরজা”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
উবাদাহ
ইব্ন সামেত থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “কোন এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের সাথীগণ তাকে হারিয়ে ফেলেন,
সাধারণত তারা কোথাও অবতরণ করলে তাকে তাদের মাঝে রাখতেন, তাই তারা চিন্তিত হল, তারা
ধারণা করল আল্লাহ তার জন্য না তাদের ব্যতীত অন্য সম্প্রদায় মনোনীত করলেন! এভাবেই নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নিয়ে চিন্তা করতে লাগল, হঠাৎ তাকে দেখে তাকবীর
বলে উঠল, তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, আল্লাহ না আপনার জন্য
আমাদের ব্যতীত অন্যদের মনোনীত করেন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃ না, বরং তোমরা আমার দুনিয়া ও আখেরাতের সাথী। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জাগ্রত করে
বলেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি এমন কোন নবী ও রাসূল প্রেরণ করি নি যে আমার নিকট একটি বস্তু
প্রার্থনা করেছে আমি তাকে দেই নি। হে মুহাম্মদ, তুমি চাও, দেয়া হবে। আমি বললামঃ আমার
চাওয়া হচ্ছে কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের জন্য সুপারিশ করা”। আবু বকর বললেনঃ হে আল্লাহর
রাসূল সুপারিশ কি? তিনি বললেনঃ “আমি বলবঃ হে আমার রব, আমার সুপারিশ চাই যা আপনার নিকট
আমি গোপনে জমা রেখেছি। আল্লাহ বলবেনঃ হ্যাঁ। অতঃপর আমার রব জাহান্নাম থেকে আমার অবশিষ্ট
উম্মত বের করবেন, অতঃপর তাদেরকে জান্নাতে নিক্ষেপ করবেন”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
বদরি
সাহাবিদের ফযিলত
হাদিস নং-৯৮
আলি
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু মুরসিদ গনভি, যুবায়ের ও
আমাকে প্রেরণ করেন, আমরা সবাই ছিলাম ঘোড় সওয়ার, তিনি বলেনঃ “তোমরা যাও, ‘রওদাতা খাখ’
এ পৌঁছ, সেখানে এক মুশরিক নারী রয়েছে, তার সাথে হাতেব ইব্ন আবি বালতা‘আর পক্ষ থেকে
মুশরিকদের প্রতি লেখা চিঠি আছে”। আমরা তাকে সেখানেই পেলাম যার কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, সে উঠে চড়ে যাচ্ছিল, আমরা বললামঃ চিঠি, সে বললঃ
আমার সাথে চিঠি নেই। আমরা তাকে নামিয়ে তালাশ করলাম কিন্তু কোন চিঠি পেলাম না। আমরা
বললামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিথ্যা বলেন নি, তুমি অবশ্যই
চিঠি বের করবে অথবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করব, যখন সে পীড়াপীড়ি দেখল, তার কোমরের ফিতার
দিকে নজর দিল, -চিঠিটি কাপড়ে মোড়ানো ছিল,- অতঃপর সে তা বের করল, আমরা চিঠি নিয়ে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ছুটলাম। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর
রাসূল সে আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের সাথে খিয়ানত করেছে, আমাকে ছাড়ুন আমি তার গর্দান
উড়িয়ে দেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হাতেবকে) বললেনঃ “যা করেছ কেন
করেছ?” হাতেব বললঃ আল্লাহর কসম, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বেঈমান হওয়ার কোন কারণ
নেই, আমি চেয়েছি তাদের নিকট আমার একটা হাত থাক, যার বিনিময়ে আল্লাহ আমার পরিবার ও সম্পদের
সুরক্ষা দিবেন, আপনার সাথীদের এমন কেউ নেই যার বংশের কোন লোক সেখানে নেই, যার দ্বারা
আল্লাহ তার পরিবার ও সম্পদ রক্ষা করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃ “সে সত্য বলেছে, তার ব্যাপারে ভালো ব্যতীত মন্দ বল না”। ওমর বললেনঃ সে আল্লাহ,
রাসূল ও মুমিনদের খিয়ানত করেছে, আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সে কি বদরি নয়? অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ
বদরিদের ব্যাপারে অবগত হয়েছেন, অতঃপর বলেছেনঃ তোমরা যা ইচ্ছা কর, তোমাদের জন্য জান্নাত
ওয়াজিব, অথবা তোমাদের আমি ক্ষমা করে দিয়েছি”। অতঃপর ওমরের দু’চোখ অশ্রু সিক্ত হয়ে গেল,
তিনি বলেনঃ আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জানেন। [বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৫১. অধ্যায়ঃ
সালাত
ফরজ হওয়া ও মেরাজের হাদিস
হাদিস নং-৯৯
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে
চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে
সে তার পা রাখে, তিনি বলেনঃ আমি তাতে সওয়ার হলাম, অবশেষে আমাকে বায়তুল মাকদিস নিয়ে
আসা হল, তিনি বলেনঃ আমি তাকে সে খুঁটির সাথে বাঁধলাম যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেনঃ
অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করি, তাতে দু’রাকাত সালাত আদায় করি, অতঃপর বের হই। অতঃপর জিবরিল
আমার নিকট মদের ও দুধের পাত্র নিয়ে আসেন, আমি দুধের পাত্র গ্রহণ করি, জিবরিল আমাকে
বলেনঃ তুমি ফিতরাত (স্বভাব) গ্রহণ করেছ, অতঃপর আমাদের নিয়ে আসমানে চড়েন ...”। তিনি
হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে রয়েছেঃ “আমি আমার রব ও মুসা আলাইহিস সালামের মাঝে যাওয়া-আসা
করতে ছিলাম, অবশেষে তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মদ, প্রতি রাত-দিনে এ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত,
প্রত্যেক সালাতের জন্য দশ, এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। যে নেক কাজ করার ইচ্ছা করল কিন্তু
তা করেনি, আমি তার জন্য একটি নেকি লেখি, যদি সে তা করে তার জন্য দশটি লেখা হয়। যে পাপ
করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করে নি, তার জন্য কিছু লেখা হয় না, যদি সে তা করে তবে
তার জন্য একটি পাপ লেখা হয়। তিনি বলেনঃ অতঃপর আমি অবতরণ করে মুসা আলাইহিস সালামের নিকট
পৌঁছলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম, তিনি আমাকে বললেনঃ তোমার রবের নিকট ফিরে যাও, তার নিকট
হ্রাসের দরখাস্ত কর, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি বললাম
আমি আমার রবের নিকট বারবার গিয়েছি এখন লজ্জা করছি”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ।
আবু
যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত,
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “এ হচ্ছে পাঁচ, অথচ তা পঞ্চাশ [১], আমার নিকট কথার (সিদ্ধান্তের)
কোন পরিবর্তন নেই”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ। অর্থাৎ কর্মে পাঁচ কিন্তু সাওয়াবে
পঞ্চাশ।
[১] কার্যত পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু সওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তের।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৫২. অধ্যায়ঃ
আরাফার
দিনের ফযিলত ও হাজিদের নিয়ে আল্লাহর গর্ব করা
হাদিস নং-১০০
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আরাফার দিন ব্যতীত কোন দিন নেই যেখানে
আল্লাহ তা‘আলা অধিক বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন। তাতে তিনি নিকটবর্তী
হন অতঃপর ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন ও বলেনঃ তারা কি চায়?” [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১০১
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যিলহজ মাসের দশ দিন থেকে উত্তম আল্লাহর
নিকট কোন দিন নেই”। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল, এ দিনগুলোই উত্তম,
না এ দিনগুলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদসহ উত্তম? তিনি বললেনঃ “জিহাদ ছাড়াই এগুলো উত্তম।
আল্লাহর নিকট আরাফার দিন থেকে উত্তম কোন দিন নেই, আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন
অতঃপর জমিনে বাসকারীদের নিয়ে আসমানে বাসকারীদের সাথে গর্ব করেন। তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের
দেখ, তারা হজ্জের জন্য এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় দূর-দিগন্ত থেকে এসেছে। তারা আমার
রহমত আশা করে, অথচ তারা আমার আযাব দেখে নি। সুতরাং এমন কোনো দিন দেখা যায় না যাতে আরাফার
দিনের তুলনায় জাহান্নাম থেকে অধিক মুক্তি পায়”। [ইব্ন হিব্বান]
হাদিসের
মানঃ হাসান লিগাইরিহি
হাদিস নং-১০২
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আরাফার লোকদের নিয়ে আসমানের
ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, তিনি বলেনঃ আমার বান্দাদের দেখ তারা এলোমেলো চুল ও ধূলিময়
অবস্থায় আমার কাছে এসেছে”। [ইব্ন হিব্বান]
হাদিসের
মানঃ সহিহ লিগাইরিহি
৫৩. অধ্যায়ঃ
সিয়ামের
ফযিলত
হাদিস নং-১০৩
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ সিয়াম ব্যতীত বনি
আদমের প্রত্যেক আমলই তার জন্য, কারণ তা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব”। [বুখারি
ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৫৪. অধ্যায়ঃ
সন্তান
মারা যাওয়ার পর সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করার ফজিলত
হাদিস নং-১০৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার মুমিন বান্দার
জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই যখন আমি দুনিয়া থেকে তার কলিজার টুকরা
[১] গ্রহণ করি, আর সে তার জন্য সওয়াবের আশা করে ধৈর্য ধারণ করে”। [বুখারি]
[১] কলিজার টুকরোর মত সন্তানকে মৃত্যু দিয়ে গ্রহণ
করি। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১০৫
শুরাহবিল
ইব্ন শুফ‘আহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের এক সাহাবি সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেনঃ “কিয়ামতের দিন বাচ্চাদের বলা হবে
জান্নাতে প্রবেশ কর”। তিনি বলেনঃ “তারা বলবেঃ যতক্ষণ না আমাদের পিতা-মাতা প্রবেশ না
করেন”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তারা আসবে”। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ “কি ব্যাপার তাদেরকে
কেন নারাজ দেখছি, জান্নাতে প্রবেশ কর”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তারা বলবেঃ হে আমার রব, আমাদের
পিতা-মাতা”! তিনি বলেনঃ “অতঃপর তিনি বলবেনঃ “তোমরা ও তোমাদের পিতা-মাতা জান্নাতে প্রবেশ
কর”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
হাদিস নং-১০৬
আবু
উমামা থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে বনি আদম, যদি
তুমি ধৈর্যধারণ কর ও প্রথম দুঃখের সময় অধৈর্য না হয়ে তাতে সওয়াবের আশা কর, তাহলে আমি
তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট হব না”। [ইব্ন মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
হাদিস নং-১০৭
আবু
মুসা আশ‘আরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বান্দার যখন সন্তান মারা যায় আল্লাহ তার
ফেরেশতাদের বলেনঃ তোমরা আমার বান্দার সন্তান কব্জা করেছ? তারা বলেঃ হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ
তোমরা আমার বান্দার অন্তরের নির্যাস গ্রহণ করেছ? তারা বলেঃ হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ আমার
বান্দা কি বলেছে? তারা বলেঃ আপনার প্রশংসা করেছে ও ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন
পড়েছে। (অর্থাৎ আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার কাছেই ফেরৎ যাব এটা বলেছে।) অতঃপর
আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর, তার নাম রাখ বায়তুল
হামদ”। [তিরমিযি ও ইব্ন হিব্বান] হাদীসটি শায়খ আলবানি হাসান বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৫৫. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর
রাস্তায় খরচ করা ও উৎসাহ প্রদানের ফযিলত
হাদিস নং-১০৮
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি আদম, তুমি
খরচ কর, আমি তোমার ওপর খরচ করব”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১০৯
আদি
ইব্ন হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম, তিনি বলেনঃ
“... অতঃপর তোমাদের প্রত্যেকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হবে, তার ও আল্লাহর মাঝে কোন
পর্দা থাকবে না, দুভাষীও না যে তার জন্য অনুবাদ করবে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাকে
সম্পদ দেই নাই? সে বলবেঃ অবশ্যই, অতঃপর বলবেনঃ আমি কি তোমার নিকট রাসূল প্রেরণ করিনি?
সে বলবেঃ অবশ্যই, সে তার ডানে তাকাবে আগুন ব্যতীত কিছুই দেখবে না, অতঃপর তার বামে তাকাবে
আগুন ব্যতীত কিছুই দেখবে না, অতএব তোমাদের প্রত্যেকের উচিত জাহান্নামের আগুন থেকে সুরক্ষা
গ্রহণ করা, যদিও সেটা একটি খেজুরের অংশের বিনিময়ে হয়, যদি তার সামর্থ্য না থাকে তাহলে
সুন্দর বাক্য দ্বারা”। [বুখারি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১১০
আবু
ওয়াকেদ লাইসি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের নিকট আসতাম, যখন তার ওপর কিছু
নাযিল হত তিনি আমাদের বলতেন, একদা তিনি আমাদের বলেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমি সম্পদ
নাযিল করেছি সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করার জন্য, যদি বনি আদম একটি উপত্যকার
মালিক হয়, সে পছন্দ করবে তার জন্য দ্বিতীয়টি হোক। যদি তার দু’টি উপত্যকা হয়, সে চাইবে
তার জন্য তৃতীয়টি হোক। মাটি ব্যতীত কোন বস্তু বনি আদমের উদর পূর্ণ করবে না, অতঃপর যে
তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
হাদিস নং-১১১
বুসর
ইব্ন জাহাশ আল-কুরাশি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাতের তালুতে থু থু ফেললেন, অতঃপর
তাতে শাহাদাত আঙ্গুল রাখলেন ও বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে বনি আদম তুমি আমাকে কিভাবে
অক্ষম করবে, অথচ আমি তোমাকে এরূপ বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছি, যখন তোমার রূহ এখানে পৌঁছে,
(গলার দিকে ইশারা করলেন), বলঃ আমি সদকা করবঃ আর কখন সদকা করার সময়”! [ইব্ন মাজাহ ও
আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
রাতে
ওযু করার ফযিলত
হাদিস নং-১১২
উকবা
ইব্ন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি আজ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বলব না যা তিনি
বলেননি, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “যে আমার
ওপর স্বেচ্ছায় মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে ঘর বানিয়ে নেয়”। তাকে আরো বলতে শুনেছিঃ
“আমার উম্মতের কোন ব্যক্তি রাতে উঠে, অতঃপর নিজেকে পবিত্রতার জন্য প্রস্তুত করে, তার
ওপর থাকে অনেক গিরা, যখন সে দু’হাত ধৌত করে একটি গিরা খুলে যায়, যখন সে চেহারা ধৌত
করে একটি গিরা খুলে যায়, যখন সে তার মাথা মাসেহ করে একটি গিরা খুলে যায়, যখন সে তার
পা ধৌত করে একটি গিরা খুলে যায়। আল্লাহ তা‘আলা পর্দার আড়ালে অবস্থানকারীদের বলেনঃ আমার
বান্দাকে দেখ, সে আমার নিকট প্রার্থনারত হয়ে নিজ নফসকে কষ্ট দিচ্ছে, আমার এ বান্দা
যা চাইবে তা তার জন্যই”। [ইব্ন হিব্বান ও আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৫৭. অধ্যায়ঃ
শেষ
রাতে দো‘আ ও সালাত আদায়ের ফযিলত
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমাদের রব প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে
অবতরণ করেন যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তিনি বলেনঃ কে আমাকে আহ্বান করবে আমি
তার ডাকে সাড়া দিব, কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে আমি তাকে প্রদান করব, কে আমার নিকট
ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব”। [বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি, ইব্ন মাজাহ ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৫৮. অধ্যায়ঃ
দুই
ব্যক্তিকে দেখে আমাদের রব আশ্চর্য হন
হাদিস নং-১১৪
ইব্ন
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমাদের রব দুই ব্যক্তিকে দেখে আশ্চর্য
হনঃ এক ব্যক্তি যে তার বিছানা ও লেপ ছেড়ে পরিবার ও প্রিয়জনদের থেকে ওঠে সালাতে দাঁড়াল,
আমাদের রব বলেনঃ হে আমাদের ফেরেশতারা, আমার বান্দাকে দেখ বিছানা ও লেপ ছেড়ে পরিবার
ও প্রিয়জনদের থেকে তার সালাতের জন্য ওঠেছে, আমার নিকট যা রয়েছে তার আশা ও আমার শাস্তির
ভয়ে। অপর ব্যক্তি যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করল, তবে তারা পরাস্ত হল, সে মনে করল পলায়নে
কি শাস্তি ও ফিরে যাওয়ায় কি পুরষ্কার, অতঃপর সে ফিরে গেল অবশেষে তার রক্ত ঝরানো হল,
আমার নিকট যা রয়েছে তার আশা ও আমার শাস্তির ভয়ে, আল্লাহ তার ফেরেশতাদের বলেনঃ আমার
বান্দাকে দেখ, আমার নিকট যা রয়েছে তার আশা ও আমার শাস্তির ভয়ে ফিরে এসেছে, অবশেষে তার
রক্ত প্রবাহিত করা হল”। [আহমদ ও আবু দাউদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৫৯. অধ্যায়ঃ
নফল
সালাতের ফযিলত
হাদিস নং-১১৫
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বান্দাকে যে বিষয়ে সর্বপ্রথম জবাবদিহি
করা হবে তার সালাত, যদি সে তা পূর্ণ করে থাকে, অন্যথায় আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দার
নফল দেখ, যদি তার নফল পাওয়া যায়, বলবেনঃ এর দ্বারা ফরয পূর্ণ কর”। [নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৬০. অধ্যায়ঃ
মুয়াজ্জিনের
ফযিলত
হাদিস নং-১১৬
উকবা
ইব্ন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “তোমাদের
রব পাহাড়ের চুড়ায় বকরির রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন, যে সালাতের আযান দেয় ও সালাত আদায়
করে, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার এ বান্দাকে দেখ আযান দেয় ও সালাত কায়েম করে, আমাকে ভয়
করে, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম”। [আবু দাউদ
ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৬১. অধ্যায়ঃ
আসর
ও ফজর সালাতের ফযিলত
হাদিস নং-১১৭
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “পালাবদল করে রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ তোমাদের
নিকট আগমন করে এবং তারা ফজর ও আসর সালাতে একত্র হয়। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারীগণ
ওপরে ওঠে, আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি তাদের চেয়ে বেশী জানেন, আমার বান্দাদের
কিভাবে রেখে এসেছে? তারা বলেঃ আমরা তাদেরকে সালাত পড়া অবস্থায় রেখে এসেছি, যখন গিয়েছি
তারা সালাত আদায় করছিল”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৬২. অধ্যায়ঃ
মাগরিব
থেকে এশা পর্যন্ত মসজিদে থাকার ফযিলত
হাদিস নং-১১৮
আব্দুল্লাহ
ইব্ন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মাগরিব আদায় করলাম,
অতঃপর যারা ফিরে যাবার ফিরে গেল এবং যারা থাকার থাকল, পরক্ষণেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত ফিরে আসলেন, তার নিশ্বাস জোরে পড়ছিল, তার হাঁটুর কাপড় উঠে
যাচ্ছিল, তিনি বললেনঃ “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের রব আসমানের একটি দরজা খুলে
তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করছেন, তিনি বলছেনঃ আমার বান্দাদের দেখ, তারা এক
ফরয শেষ করে অপর ফরযের অপেক্ষা করছে”। [ইব্ন মাজাহ ও আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৬৩. অধ্যায়ঃ
দিনের
শুরুতে সুরক্ষা গ্রহণ করা
নু‘আইম
ইব্ন হাম্মার আল-গাতফানি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
হে বনি আদম দিনের শুরুতে চার রাকাত সালাত আদায়ে অপারগ হয়ো না, আমি দিন শেষে তোমার
জন্য যথেষ্ট হব”। [আহমদ, আবু দাউদ ও ইব্ন হিব্বান]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৬৪. অধ্যায়ঃ
জান্নাতের
খাজানা
হাদিস নং-১২০
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাকে শিক্ষা দিব না, অথবা বলেছেনঃ
আমি কি তোমাকে আরশের নিচে জান্নাতের গুপ্তধন একটি কালিমার কথা বলব না? তুমি বলঃ (অর্থাৎ
আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকাজ করার শক্তি ও অসৎ কাজ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই) আল্লাহ
বলবেনঃ আমার বান্দা মেনে নিলো ও আনুগত্য করল”। [হাকেম]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৬৫. অধ্যায়ঃ
সন্তানের
পিতা-মাতার জন্য ইস্তেগফার করার ফযিলত
হাদিস নং-১২১
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নেক বান্দার মর্তবা
জান্নাতে বুলন্দ করবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব এটা আমার জন্য কিভাবে হল? তিনি বলবেনঃ
তোমার জন্য তোমার সন্তানের ইস্তেগফারের কারণে”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৬৬. অধ্যায়ঃ
বিসমিল্লাহ
না বললে শয়তান খানায় অংশ গ্রহণ করে
হাদিস নং-১২২
ইব্ন
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ইবলিস বলেছেঃ হে আমার রব, আপনার কোন মখলুক
নেই যার রিযক ও জীবিকা নির্বাহ আপনি নির্ধারিত করেন নি, কিন্তু আমার রিযক কি? তিনি
বললেনঃ যেসব খাদ্যে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না”। [আবু নু‘আইম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৬৭. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর
সর্বপ্রথম মখলুক
হাদিস নং-১২৩
উবাদাহ
ইব্ন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ
তা‘আলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন কলম [১], তিনি বলেনঃ লেখ। সে বললঃ হে আমার রব, কি
লিখব? তিনি বলেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তাকদির লিখ”। [আবু দাউদ ও আহমদ]
হাদীসটি সহিহ লি গায়রিহি।
[১] সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি? তা নির্ধারণে কয়েকটি মত
রয়েছে। এ হাদীস থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে, কলম-ই প্রথম সৃষ্টি। অন্য হাদীস থেকে বোঝা
যায় যে, আরশ প্রথম সৃষ্টি। আবার কোনো কোনো হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, পানিই প্রথম সৃষ্টি।
অধিকাংশ সত্যনিষ্ঠ আলেম আরশকেই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে মনে করে থাকেন। তারা অন্যান্য
সৃষ্টি যেমন কলম ও পানি সেগুলোকে প্রাথমিক সৃষ্ট বিষয় বলে সামঞ্জস্য বিধান করে থাকেন।
তবে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ লিগাইরিহি
৬৮. অধ্যায়ঃ
লেখা
ও সাক্ষী রাখার সূচনা
হাদিস নং-১২৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করেন ও তার মধ্যে
রূহ সঞ্চার করেন তখন সে হাঁচি দেয়। অতঃপর বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর নির্দেশে সে
আল্লাহর প্রশংসা করল, তার রব তাকে বললেনঃ হে আদম তোমার রব তোমাকে রহম করুন, ঐ ফেরেশতাদের
বসে থাকা দলটির কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
তারা বললঃ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ
وَرَحْمَةُ اللَّهِ
অতঃপর তিনি তার রবের নিকট ফিরে আসেন, তিনি বলেনঃ এ হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের পরস্পর
অভিবাদন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তখন তার দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিলঃ দু’টো থেকে যেটা ইচ্ছা
গ্রহণ কর, তিনি বললেনঃ আমি আমার রবের ডান গ্রহণ করলাম, আমার রবের উভয় হাতই ডান ও বরকতপূর্ণ,
অতঃপর তিনি তা প্রসারিত করলেন, তাতে ছিল আদম ও তার সন্তান। তিনি বললেনঃ হে আমার রব,
এরা কারা? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তোমার সন্তান, সেখানে প্রত্যেক মানুষের বয়স তার চোখের
সামনে লিখা ছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল, অথবা তাদের থেকে একজন অতি উজ্জ্বল
ছিল, যার জন্য শুধু চল্লিশ বছর লিখা ছিল, তিনি বললেনঃ হে আমার রব এ কে? তিনি বললেনঃ
এ হচ্ছে তোমার সন্তান দাউদ, তার জন্য আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। তিনি বললেনঃ হে আমার রব
তার বয়স বৃদ্ধি করুন, তিনি বললেনঃ এটাই আমি তার জন্য লিখেছি। তিনি বললেনঃ হে আমার রব,
আমি তার জন্য আমার বয়স থেকে ষাট বছর দান করলাম, তিনি বললেনঃ এটা তোমার ও তার বিষয়।
আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ছিল তিনি জান্নাতে অবস্থান করেন, অতঃপর সেখান থেকে অবতরণ করানো
হয়, এরপর থেকে তিনি নিজের বয়স হিসেব করতেন। রাসূল বলেনঃ তার নিকট মালাকুল মউত আসল,
আদম তাকে বলেনঃ দ্রুত চলে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর লিখা হয়েছে। তিনি বললেন, অবশ্যই;
কিন্তু তোমার ছেলে দাউদের জন্য তার থেকে ষাট বছর দান করেছ। আদম তা অস্বীকার করল। সে
অস্বীকার করেছে তাই তার সন্তানও অস্বীকার করে, তিনি ভুলে গেছেন তাই তার সন্তানও ভুলে
যায়। তিনি বলেনঃ সে দিন থেকে লিখা ও সাক্ষী রাখার নির্দেশ দেয়া হয়”। ইব্ন হিব্বান,
হাকেম ও আবু আসেম] হাদীসটি সহিহ লি গায়রিহি।
হাদিসের
মানঃ সহিহ লিগাইরিহি
৬৯. অধ্যায়ঃ
নবী
আদমকে আল্লাহ যা বললেনঃ
হাদিস নং-১২৫
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন আদমের মধ্যে রূহ সঞ্চার করেন,
অতঃপর রূহ যখন তার মাথায় পৌঁছে তিনি হাঁচি দেন, তারপর বলেনঃ الحمدُ لله رَبِّ
العَالَمِيْن আল্লাহ তাকে বলেনঃ يَرْحَمُكَ الله
[ইব্ন হিব্বান] হাদীসটি সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭০. অধ্যায়ঃ
মুসলিমদের
সালাম
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি
করেছেন, তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত, তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেনঃ যাও সেখানে বসে থাকা
ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর, খেয়াল করে শোন তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়, কারণ তা-ই
হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ
তারা বললঃ السَّلَامُ عَلَيْكَ
وَرَحْمَةُ اللَّهِ
তারা অতিরিক্ত বলল। সুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে, আর তারপর থেকে
মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদীসটি সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭১. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর
নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমার কোন বান্দার
জন্য (বর্ণনাকারী ইব্ন মুসান্না বলেছেনঃ আমার বান্দার জন্য) এমন বলা সমীচীন নয়ঃ আমি
ইউনুস ইব্ন মাত্তা আলাইহিস সালাম থেকে উত্তম [১] ”। [বুখারি ও মুসলিম]
[১] অর্থাৎ ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা শুনে হয়ত
কেউ মনে করতে পারে যে, ইউনুস আলাইহিস সালাম ধৈর্য ধারণ করতে পারেন নি, আমি তার থেকে
উত্তম। এ জাতীয় কোনো কথা বলে নিজেকে নিয়ে অহংকার যেন কেউ না করে। কারণ, নবীগণ অন্যান্য
সকল মানুষ থেকে উত্তম। তাদের সাথে আর কারও তুলনা চলে না। আর তাদের মান-মর্যাদা নিয়ে
প্রশ্ন তোলার তো কোনো সুযোগই নেই। সুতরাং কেউ যেন এটা বলে না বসে যে, সে ইউনুস আলাইহিস
সালাম থেকে ভালো। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭২. অধ্যায়ঃ
মুসা
ও খিযির আলাইহিমাস সালামের ঘটনা
হাদিস নং-১২৮
সায়িদ
ইব্ন জুবায়ের থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি ইব্ন আব্বাস (রাঃ)কে বললাম ‘নাউফ আল-বাকালি’র ধারণা ‘খিদির’ এর সাথী ‘মুসা’
বনি ইসরাইলের ‘মুসা’ নয়, তিনি অন্য ‘মুসা’। তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে।
উবাই ইব্ন কা‘ব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমাদেরকে বর্ণনা করেনঃ
“একদা মুসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাইলে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালে তাকে জিজ্ঞাসা করা
হল, কে সবচেয়ে বেশী জানে? তিনি বললেনঃ আমি”। এ জন্য আল্লাহ তাকে তিরস্কার করলেন, কারণ
তিনি বেশী জানার জ্ঞান আল্লাহর নিকট সোপর্দ করেন নি। তাকে তিনি বললেনঃ “দুই সমুদ্রের
মিলনস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে, সে তোমার চেয়ে অধিক জানে। তিনি বললেনঃ হে আমার রব,
তার নিকট পৌঁছার জন্য আমার কে আছে? অথবা সুফিয়ান বলেছেনঃ হে আমার রব, আমি কিভাবে তার
কাছে পৌঁছব? তিনি বললেনঃ একটি মাছ নাও, অতঃপর তা পাত্রে রাখ, যেখানে মাছটি হারাবে সেখানেই
সে...” অতঃপর পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করেন। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭৩. অধ্যায়ঃ
মালাকুল
মউতের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা
হাদিস নং-১২৯
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “মালাকুল মউত মুসা আলাইহিস সালামের নিকট
এসে তাকে বলেনঃ আপনার রবের ডাকে সাড়া দিন। তিনি বলেনঃ অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম মালাকুল
মউতকে থাপ্পড় মেরে তার চোখ উপড়ে ফেলেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর মালাকুল মউত আল্লাহর নিকট
ফিরে গেল এবং বললঃ আপনি আমাকে আপনার এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করেছেন যে মরতে চায় না,
সে আমার চোখ উপড়ে ফেলেছে, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চোখ তাকে ফিরিয়ে দেন, আর বলেনঃ আমার
বান্দার নিকট ফিরে যাও এবং বলঃ আপনি হায়াত চান? যদি আপনি হায়াত চান তাহলে ষাঁড়ের পিঠে
হাত রাখুন, আপনার হাত যে পরিমাণ চুল ঢেকে নিবে তার সমান বছর আপনি জীবিত থাকবেন। তিনি
বলেনঃ অতঃপর? মালাকুল মউত বললঃ অতঃপর মৃত্যু বরণ করবেন। তিনি বলেনঃ তাহলে এখনি দ্রুত
কর। হে আমার রব, পবিত্র ভূমির সন্নিকটে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বে আমাকে মৃত্যু দান কর”।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আল্লাহর শপথ আমি যদি তার নিকট
হতাম, তাহলে রাস্তার পাশে লাল বালুর স্তূপের নিকট তার কবর দেখিয়ে দিতাম”। [বুখারি ও
মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭৪. অধ্যায়ঃ
আইয়ূব
আলাইহিস সালামের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “একদা আইয়ূব উলঙ্গ গোসল করছিল, তার ওপর
এক পাল স্বর্ণের টিড্ডি পড়ল, তিনি তা মুষ্টি মুষ্টি করে কাপড়ে তুলছিলেন। এমতাবস্থায়
তার রব তাকে ডাক দিলেনঃ হে আইয়ূব, আমি কি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করে দেই-নি যা দেখছ তা
থেকে? তিনি বললেনঃ অবশ্যই হে আমার রব, তবে আপনার বরকত থেকে আমার অমুখাপেক্ষীতা নেই”।
[বুখারি ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭৫. অধ্যায়ঃ
জাহেলী
যুগের প্রথার অনিষ্ট
হাদিস নং-১৩১
উবাই
ইব্ন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে দু’জন ব্যক্তি বংশের উল্লেখ
করল, একজন বললঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক তুমি কে, তুমি মা হারা হও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুসা আলাইহিস সালামের যুগে দু’ ব্যক্তি
বংশ পরিচয় উল্লেখ করেছিল, তাদের একজন বলেঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক এভাবে সে নয়জন গণনা
করে, অতএব তুমি কে, তুমি মা হারা হও। সে বললঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক ইব্ন ইসলাম।
তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট ওহি প্রেরণ করলেন, এ দু’জন বংশ
পরিচয় উল্লেখকারীঃ হে নয়জন উল্লেখকারী তুমি জাহান্নামে, তুমি তাদের দশম ব্যক্তি। হে
দু’জন উল্লেখকারী তুমি জান্নাতে, তুমি তাদের তৃতীয়জন”। [আহমদ ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭৬. অধ্যায়ঃ
শয়তানের
ওয়াসওয়াসা
হাদিস নং-১৩২
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তোমার উম্মত বলতে
থাকবেঃ এটা কিভাবে? এটা কিভাবে? অবশেষে বলবেঃ আল্লাহ মখলুক সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আল্লাহকে
কে সৃষ্টি করেছে?” [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৭৭. অধ্যায়ঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদের ফযিলত
হাদিস নং-১৩৩
আব্দুর
রহমান ইব্ন আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আমি তার অনুগামী হলাম,
তিনি একটি খেজুর বাগানে ঢুকে সেজদা করলেন, সেজদা এত দীর্ঘ করলেন যে আমি আশঙ্কা করলাম
আল্লাহ তাকে তো মৃত্যু দেন নি! তিনি বলেনঃ আমি দেখার জন্য আসলাম, অতঃপর তিনি মাথা তুললেন,
তিনি বললেনঃ “হে আব্দুর রহমান কি হয়েছে তোমার?” তিনি বলেনঃ আমি তাকে তা শোনালাম, অতঃপর
তিনি বললেনঃ “জিবরিল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব না,
আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বলেনঃ যে ব্যক্তি তোমার ওপর দরূদ পাঠ করবে আমি তার ওপর দরূদ পাঠ
করব, যে তোমার ওপর সালাম পাঠ করবে আমি তার ওপর সালাম প্রেরণ করব”। [আহমদ, বায়হাকি ও
আবু ইয়ালা]
হাদিসের
মানঃ হাসান লিগাইরিহি
৭৮. অধ্যায়ঃ
ভালোর
নির্দেশ দেয়া ও খারাপ থেকে বিরত রাখা
হাদিস নং-১৩৪
আবু
সায়িদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ
তা‘আলা কিয়ামতের দিন বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, এক পর্যায়ে বলবেনঃ তুমি যখন খারাপ কর্ম
দেখেছ কেন বাঁধা দাওনি? আল্লাহ যখন বান্দাকে তার উত্তর শিক্ষা দিবেন, সে বলবেঃ হে আমার
রব, তোমার মাগফেরাত আশা করেছি ও মানুষকে ভয় করেছি”। [ইব্ন মাজাহ ও ইব্ন হিব্বান]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
ফাতেহার
ফযিলত
হাদিস নং-১৩৫
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি সালাতকে আমার
ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি, আমার বান্দার জন্য সে যা চাইবে। বান্দা যখন
বলেঃ ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ
رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব”।
আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ﴾
“দয়াময়, পরম দয়ালু”। আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। বান্দা যখন বলেঃ
﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ
ٱلدِّينِ﴾ “বিচার দিবসের মালিক”। আল্লাহ বলেনঃ
আমার বান্দা আমার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা
করেছে। (একবার বলেছেনঃ আমার বান্দা তাকে আমার ওপর ন্যাস্ত করেছে), বান্দা যখন বলেঃ
﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ
وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ﴾
“আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই”। আল্লাহ
বলেনঃ এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দার জন্য যা সে চাইবে। যখন বান্দা
বলেঃ
“আমাদেরকে
সরল পথের হিদায়াত দিন তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ
করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর
(আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা
পথভ্রষ্টও নয়”।
আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার বান্দার জন্য, আমার বান্দার জন্য যা সে চাইবে”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮০. অধ্যায়ঃ
ঊর্ধ্বজগতে
ফেরেশতাদের তর্ক
হাদিস নং-১৩৬
মুয়ায
ইব্ন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ একদা ফজর সালাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলম্ব করলেন,
আমরা প্রায় সূর্যের অগ্রভাগ দেখার কাছাকাছি ছিলাম, অতঃপর তিনি দ্রুত বের হলেন, সালাতের
ঘোষণা দেয়া হল, তিনি দ্রুত সালাত আদায় করলেন, যখন সালাম ফিরালেন উচ্চ স্বরে আমাদেরকে
বললেনঃ “তোমরা তোমাদের কাতারে থাক যেরূপ আছ”। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ “আমি অবশ্যই
তোমাদের বলব কি কারণে আজ আমার বিলম্ব হয়েছে। আমি রাতে উঠে ওযু করেছি অতঃপর যা তাওফিক
হয়েছে সালাত আদায় করেছি, সালাতে আমার তন্দ্রা এসে যায় তাই আমার কষ্ট হচ্ছিল, হঠাৎ দেখি
আমার রব আমার সামনে সর্বোত্তম আকৃতিতে। তিনি আমাকে বললেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি বললামঃ
লাব্বাইক আমার রব। তিনি বললেনঃ ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে? আমি বললামঃ
হে আমার রব আমি জানি না, -তিনি তা তিনবার বললেন- রাসূল বলেনঃ আমি দেখলাম তিনি (আল্লাহ)
নিজ হাতের তালু আমার ঘাড়ের ওপর রাখলেন, এমনকি আমি তার আঙ্গুলের শীতলতা আমার বুকের মধ্যে
অনুভব করেছি, ফলে আমার সামনে প্রত্যেক বস্তু জাহির হল ও আমি চিনলাম। অতঃপর বললেনঃ হে
মুহাম্মদ, আমি বললামঃ লাব্বাইক হে আমার রব। তিনি বললেনঃ ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা কি
নিয়ে তর্ক করছে? আমি বললামঃ কাফফারা সম্পর্কে। তিনি বললেনঃ তা কি? আমি বললামঃ জামাতের
জন্য হাঁটা, সালাতের পর মসজিদে বসে থাকা, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযু করা। তিনি বলেনঃ
অতঃপর কোন বিষয়ে? আমি বললামঃ পানাহার করানো, সুন্দর কথা বলা, মানুষের ঘুমিয়ে থাকাবস্থায়
রাতে সালাত আদায় করা। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তুমি চাও, আমি বললামঃ
“হে
আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণের কাজ করার তৌফিক চাই, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার তৌফিক চাই,
অভাবীদের জন্য ভালোবাসা, আর আপনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার প্রতি রহম করেন। আর যখন
আপনি কোন কাওমকে ফিতনা তথা পরীক্ষায় নিপতিত করতে চান, তখন আমাকে পরীক্ষায় নিপতিত না
করে মৃত্যু দিন। আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা, আপনাকে যে ভালোবাসে তার ভালবাসা এবং
এমন আমলের ভালোবাসা চাই যা আমাকে আপনার ভালোবাসার নিকটে নিয়ে যাবে।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় এ বাক্যগুলো সত্য, তোমরা এগুলো শিখ ও শিক্ষা দাও”।
[তিরমিযি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮১. অধ্যায়ঃ
আত্মীয়তার
সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা মখলুক সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর
যখন তিনি তার সৃষ্টি সম্পন্ন করেন তখন ‘রাহেম’ [১] বলেঃ এ হচ্ছে তোমার নিকট বিচ্ছিন্নতা
থেকে আশ্রয় চাওয়ার স্থান, তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমাকে যে রক্ষা
করবে আমি তাকে রক্ষা করব, তোমাকে যে ছিন্ন করবে আমি তাকে ছিন্ন করব? ‘রাহেম’ বললঃ অবশ্যই
হে রব, তিনি বলেনঃ এটাই তোমার জন্য”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃ “যদি তোমরা চাও তাহলে তিলাওয়াত করঃ
“সুতরাং
অবাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্ভবত তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করবে।”?। [বুখারি ও মুসলিম]
[১] অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক। আত্মীয়তার সম্পর্ক
কিভাবে কথা বলল সেটা আমরা জানি না, তবে রাসূল বলেছেন, তাই আমাদেরকে এর উপর ঈমান আনতে
হবে। যে আল্লাহ আমাদেরকে কথা বলিয়েছেন, তিনি সব কিছুকেই কথা বলাতে পারেন। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮২. অধ্যায়ঃ
হাদিসে
কুদসিতে আল্লাহর বাণীঃ
হাদিস নং-১৩৮
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ বনি আদম আমার উপর
মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এটা তার অধিকার ছিল না। সে আমাকে গালি দিয়েছে অথচ এটা তার অধিকার
ছিল না। আমাকে তার মিথ্যারোপ করার অর্থ তার বলাঃ তিনি আমাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন না
যেরূপ প্রথম সৃষ্টি করেছেন, অথচ প্রথমবার সৃষ্টি করা পুনরায় সৃষ্টি করা থেকে সহজ নয়।
আমাকে তার গালি হচ্ছে তার কথাঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, অথচ আমি এক ও অমুখাপেক্ষী,
আমি জন্ম দেই-নি আমাকে জন্ম দেয়া হয় নি, আর আমার সমকক্ষ কেউ নয়”। [বুখারি ও নাসায়ি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮৩. অধ্যায়ঃ
যুগকে
গালি দেয়া হারাম
হাদিস নং-১৩৯
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ বনি আদম আমাকে কষ্ট
দেয়, সে যুগকে গালি দেয় অথচ আমিই যুগ [১], আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি”। [মুসলিম,
আবু দাউদ ও নাসায়ি]
[১] হাদীসের পরবর্তী অংশই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর
নাম ‘দাহর’ বা যুগ নয়। কারণ, রাত-দিনের মূল কথা হচ্ছে, সময়। আর সময়ের পরিবর্তন আল্লাহ্ই
করে থাকেন। সুতরাং কেউ যদি সময়কে গালি দেয়, সে প্রকারান্তরে আল্লাহ্কেই গালি দিল;
কারণ, সময়ে যা কিছু ঘটে, তার সবই আল্লাহ্র অনুমতি বা নির্দেশে সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাং
হাদীসের পরবর্তী অংশ পূর্বাংশের তাফসীর। কেউ যেন সময়, যুগ বা কালকে গালি না দেয়। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮৪. অধ্যায়ঃ
অহংকার
হারাম
আবু
সায়িদ খুদরি ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ইজ্জত তার লুঙ্গি ও
অহংকার তার চাদর, অতএব যে আমার সাথে টানাহেঁচড়া করবে আমি তাকে শাস্তি দিব”। [মুসলিম,
ইব্ন মাজাহ ও আবু দাউদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮৫. অধ্যায়ঃ
যুলম
হারাম
হাদিস নং-১৪১
আবু
যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ
“হে আমার বান্দাগণ! নিশ্চয় আমি আমার ওপর যুলম হারাম করেছি, আমি তোমাদের মাঝেও তা হারাম
করেছি অতএব তোমরা যুলম কর না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই গোমরাহ তবে আমি
যাকে হিদায়েত দেই, অতএব আমার কাছে হিদায়েত তলব কর আমি তোমাদেরকে হিদায়েত দিব। হে আমার
বান্দাগণ! তোমরা সকলে ক্ষুধার্ত তবে আমি যাকে খাদ্য দেই, অতএব আমার নিকট খাদ্য তলব
কর আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলে বিবস্ত্র তবে আমি যাকে বস্ত্র
দান করি, অতএব আমার নিকট বস্ত্র তালাশ কর আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দিব। হে আমার বান্দাগণ!
তোমরা রাত ও দিনে ভুল কর, আমি তোমাদের সকল পাপ মোচন করি, অতএব আমার নিকট ক্ষমা চাও
আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার ক্ষতি পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে
না যে আমার ক্ষতি করবে। আর না তোমরা আমার উপকার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে যে আমার উপকার
করবে। যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মধ্যে
সবচেয়ে নেককার ব্যক্তির মত হয়ে যাও, তাও আমার রাজত্ব সামান্য বৃদ্ধি করবে না। হে আমার
বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মধ্যে
সবচেয়ে খারাপ লোকের মত হয়ে যাও, তাও আমার রাজত্ব সামান্য হ্রাস করবে না। হে আমার বান্দাগণ!
যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন এক ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার নিকট
প্রার্থনা করে, অতঃপর আমি প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বস্তু প্রদান করি, তাও আমার নিকট
যা রয়েছে তা হ্রাস করতে পারবে না, তবে সুই যে পরিমাণ পানি হ্রাস করে যখন তা সমুদ্রে
প্রবেশ করানো হয়। হে আমার বান্দাগণ! এ তো তোমাদের আমল যা আমি তোমাদের জন্য সংরক্ষণ
করি, অতঃপর তোমাদের তা পূর্ণ করে দেব। অতএব যে ভাল কিছু পেল সে যেন আল্লাহর প্রশংসা
করে, যে অন্য কিছু পেল সে যেন নিজেকে ভিন্ন কাউকে দোষারোপ না করে”। [মুসলিম, তিরমিযি
ও ইব্ন মাজাহ] হাদীসটি সহিহ।
আবু
সায়িদ বলেনঃ আবু ইদরিস খাউলানি যখন এ হাদিস বলতেনঃ হাঁটু গেড়ে বসতেন।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১৪২
জাবের
ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমার নিকট একটি হাদিসের সংবাদ পৌঁছেছে, যা কোন এক ব্যক্তির নিকট রয়েছে যে তা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শুনেছে। অতঃপর আমি একটি উট
খরিদ করি ও তাতে সফর করি, অতঃপর একমাস সফর করে শামে গিয়ে তার সাক্ষাত লাভ করি, দেখলাম
তিনি আব্দুল্লাহ ইব্ন উনাইস।
আমি
দারোয়ানকে বললামঃ তাকে বলঃ জাবের দরজায় অপেক্ষা করছে। তিনি বললেনঃ (জাবের) ইব্ন আব্দুল্লাহ?
আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি নিজ কাপড় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন, অতঃপর আমার সাথে আলিঙ্গন
করলেন, আমিও তার সাথে আলিঙ্গন করলাম। আমি বললামঃ আপনার কাছ থেকে আমার নিকট কিসাস সম্পর্কে
একটি হাদিস পৌঁছেছে যে, আপনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
শ্রবণ করেছেন, আমি আশঙ্কা করছিলাম, হয় আপনি মারা যাবেন, অথবা আমিই মারা যাব তা শ্রবণ
করার আগে। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে
শুনেছিঃ “কিয়ামতের দিন মানুষদের অথবা বলেছেনঃ বান্দাদের, হাজির করা হবে, (উরাত) উলঙ্গ,
(গুরলান) খৎনা বিহীন, (বুহমান) খালি হাত অবস্থায়”। তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ বুহমান কি?
তিনি বললেনঃ “তাদের সাথে কিছু থাকবে না। অতঃপর তিনি তাদেরকে নির্দিষ্ট আওয়াজ দ্বারা
ডাক দিবেন যা নিকট থেকে শুনা যাবেঃ আমিই বাদশাহ, আমি প্রতিদান দানকারী, কোন জাহান্নামী
যার কোন জান্নাতির নিকট হক রয়েছে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না আমি তার থেকে
তাকে কিসাস পাইয়ে দিব। কোন জান্নাতি যার নিকট কোন জাহান্নামীর হক রয়েছে জান্নাতে প্রবেশ
করবে না যতক্ষণ না আমি তার থেকে তাকে কিসাস পাইয়ে দিব, এমনকি চড় পর্যন্ত”। তিনি বলেনঃ
আমরা বললামঃ কিভাবে তা সম্ভব হবে, আমরা তো তখন আল্লাহর নিকট উলঙ্গ, গুরলান বুহমান হাজির
হব? তিনি বললেনঃ নেকি ও পাপের মাধ্যমে”। [আহমদ, বুখারি ফিল আদাবুল মুফরাদ, আবু আসেম,
হাকেম]
[১] অর্থাৎ কিভাবে পরস্পরের হক আদান-প্রদান করব,
আমাদের সাথে তো কিছুই থাকবে না? তার জবাবে বলা হয়েছে যে এ আদান-প্রদান ও কিসাস হবে
সৎ কাজ ও অসৎ কাজের মাধ্যমে। সুতরাং কারও ভালো কাজ থাকলে, দুনিয়াতে কারও উপর যুলুম
করে থাকলে সে ভালো কাজ তাকে দিয়ে দেওয়া হবে, আর না থাকলে তার উপর অপরের গোনাহ চাপিয়ে
দেওয়া হবে। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ হাসান লিগাইরিহি
৮৬. অধ্যায়ঃ
জীবের
ছবি অঙ্কন করা হারাম ও চিত্রকরদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি
হাদিস নং-১৪৩
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তার চেয়ে বড় জালেম
কে যে আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করে, সে যেন একটি অণু অথবা শস্য দানা অথবা গমের দানা
সৃষ্টি করে”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৮৭. অধ্যায়ঃ
ঝগড়াকারীদের
শাস্তি
হাদিস নং-১৪৪
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের
দরজা খোলা হয়”। মা‘মার বলেনঃ সুহাইল ব্যতীত অন্যরা বলেছেনঃ “প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার
আমল পেশ করা হয়, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন যারা আল্লাহর
সাথে শরীক করে না, তবে ঝগড়াকারী দুই ব্যক্তি ব্যতীত, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের বলেনঃ
এদেরকে অবকাশ দাও, যতক্ষণ না তারা মীমাংসা করে নেয়”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৮৮. অধ্যায়ঃ
জ্বর
ও রোগ-ব্যাধি কাফফারা
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বলেনঃ তিনি এক রোগীকে দেখতে যান, যে জ্বরের
কারণে অসুস্থ ছিল, -আবু হুরায়রা ছিলেন তার সাথে- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, আল্লাহ বলেনঃ আমার আগুন [১] দুনিয়াতে আমি
আমার মুমিন বান্দার ওপর প্রবল করি, যেন তা আখেরাতের আগুনের বিনিময় হয়ে যায়”। [আহমদ,
ইব্ন মাজাহ ও তিরমিযি]
[১]
অর্থাৎ জ্বরটি হচ্ছে একটি আগুন, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দার আখেরাতের গোনাহের বিনিময়
হয়ে যায়। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
৮৯. অধ্যায়ঃ
বান্দা
অসুস্থ হলে তার জন্য সেরূপ আমল লেখা হয় যেরূপ সে সুস্থ অবস্থায় করত
হাদিস নং-১৪৬
উকবা
ইব্ন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দিনের এমন আমল নেই যার ওপর মোহর এঁটে দেয়া
হয় না, বান্দা যখন অসুস্থ হয় ফেরেশতারা বলেঃ হে আমাদের রব, আপনার অমুক বান্দাকে আপনি
অসুস্থ করে দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তার জন্য তার অনুরূপ আমল লিখতে থাক, যতক্ষণ
না সে ভাল হয় অথবা মারা যায়”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১৪৭
আবুল
আশআস সান‘আনি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
দামেস্কের মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ‘রাওয়াহ’ নামক স্থানে দুপুরে অবস্থান করেন,
সেখানে তিনি সাদ্দাদ ইব্ন আউসের সাথে সাক্ষাত করেন, (তার সাথী) ‘সুনাবিহি’ তার সাথেই
ছিল। আমি বললামঃ কোথায় যাচ্ছেন, আল্লাহ আপনাদের ওপর রহম করুন, তারা বললঃ এখানে আমাদের
এক অসুস্থ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা করছি, আমরা তাকে দেখতে যাব। আমি তাদের সাথে
চললাম, অবশেষে তারা ঐ ব্যক্তির নিকট গেল। তারা তাকে বললঃ কিরূপ সকাল করলেন? সে বললঃ
আল্লাহর নিয়ামতসহ। সাদ্দাদ তাকে বললঃ গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন,
কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আমি যখন
আমার কোন মুমিন বান্দাকে পরীক্ষা করি, অতঃপর সে আমার মুসিবতের ওপর আমার প্রশংসা করে,
নিশ্চয় সে ঐ বিছানা থেকে উঠে সে দিনের মত যে দিন তার মা তাকে বেগুনা জন্ম দিয়েছে। আল্লাহ
তা‘আলা বলেনঃ আমি আমার বান্দাকে আটকে রেখেছি, আমি তাকে মুসিবত দিয়েছি, অতএব তোমরা তার
জন্য সওয়াব লিখতে থাক, যেমন তার সওয়াব লিখতে তার সুস্থ অবস্থায়”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান লিগাইরিহি
৯০. অধ্যায়ঃ
চোখের
দৃষ্টি হারানোর পর ধৈর্যধারণকারী ও সওয়াবের আশা পোষণকারীর জন্য জান্নাত
হাদিস নং-১৪৮
আনাস
ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ
বলেনঃ আমি আমার বান্দাকে যখন তার দু’টি প্রিয় বস্তু [১] দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর
সে ধৈর্যধারণ করে, আমি তার বিনিময়ে তাকে জান্নাত দান করি”। [বুখারি]
[১]
এখানে দু’টি প্রিয় বস্তু বলে দু’চোখ বোঝানো হয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১৪৯
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহ
তা‘আলা বলেনঃ আমি যার দু’টি প্রিয় বস্তু নিয়ে নেই, অতঃপর সে ধৈর্যধারণ করে ও সওয়াবের
আশা করে, আমি তার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট হই না”। [তিরমিযি]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং-১৫০
ইব্ন
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
আমি যখন আমার বান্দার প্রিয় দু’টি বস্তু গ্রহণ করি, অতঃপর সে সবর করে ও ধৈর্যধারণ করে,
আমি তার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন সওয়াবে সন্তুষ্ট হব না”। [ইব্ন হিব্বান]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯১. অধ্যায়ঃ
অভাবের
ফযিলত
হাদিস নং- (১৫১)
আব্দুল্লাহ
ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা কি জান আল্লাহর মখলুকের মধ্যে কে
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে? তারা বললঃ আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ
আল্লাহর মখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে অভাবী ও মুহাজির, যাদের দ্বারা
সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পূর্ণ করা হয় ও যাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাদের
কেউ মারা যায় কিন্তু তার ইচ্ছা তার অন্তরেই থাকে পূর্ণ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা
তার ফেরেশতাদের থেকে যাকে ইচ্ছা বলবেনঃ তাদের কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর, অতঃপর ফেরেশতারা
বলেঃ আমরা আপনার আসমানের অধিবাসী, আপনার সর্বোত্তম মখলুক, আপনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন
তাদের কাছ যাব এবং তাদেরকে সালাম করব?! তিনি বলেনঃ তারা এমন বান্দা যারা আমার ইবাদত
করত আমার সাথে কাউকে শরীক করত না। তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রাখা হত, তাদেরকে ঢাল
হিসেবে ব্যবহার করা হত, তাদের কেউ মারা যেত কিন্তু তার প্রয়োজন তার অন্তরেই থাকত সে
তা পূর্ণ করতে পারত না। তিনি বলেনঃ অতঃপর তখন তাদের নিকট ফেরেশতাগণ আসেন, প্রত্যেক
দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করেনঃ তোমাদের ওপর সালাম, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছে,
আখেরাতের প্রতিদান খুবই সুন্দর!”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ হাসান লিগাইরিহি
৯২. অধ্যায়ঃ
আত্মহত্যা
থেকে হুশিয়ারি
হাদিস নং- (১৫২)
জুনদুব
ইব্ন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তি
ছিল, যার হাতে ছিল জখম, সে অস্থির হয়ে ছুরি নেয় ও তা দ্বারা হাত কেটে ফেলে, অতঃপর রক্ত
বন্ধ হয়নি ফলে সে মারা যায়”। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমার বান্দা তার নিজের ব্যাপারে জলদি
করেছে, আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম”। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯৩. অধ্যায়ঃ
অন্যায়ভাবে
হত্যাকারীর পাপ
হাদিস নং- (১৫৩)
আব্দুল্লাহ
ইব্ন মাসউদ থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত
হবে এবং বলবেঃ হে আমার রবঃ এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ বললেনঃ কেন তাকে হত্যা
করেছ? সে বলবেঃ আমি তাকে এ জন্য হত্যা করেছি যেন আপনার সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেনঃ
হ্যাঁ তা আমার জন্য। অপর ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হবে এবং বলবেঃ এ ব্যক্তি
আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাকে বলবেন কেন হত্যা করেছ? সে বলবেঃ যেন অমুকের সম্মান
বুলন্দ হয়। তিনি বলবেনঃ তার জন্য সম্মান নয়, ফলে সে তার পাপ বহন করবে”। [নাসায়ি] পরবর্তী
হাদিসের বিবেচনায় সহিহ।
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং- (১৫৪)
ইমরান
আল-জাওনি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি জুনদুবকে বললামঃ আমি তাদের নিকট বায়‘আত হয়েছি, অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইব্ন জুবায়ের
এর হাতে, তারা চায় আমি তাদের সাথে শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, তিনি বললেনঃ বিরত থাক।
আমি বললামঃ তারা আমাকে পীড়াপীড়ি করে। তিনি বললেনঃ তোমার সম্পদ দিয়ে বিরত থাক। তিনি
বলেনঃ আমি বললামঃ আমি তাদের সাথে তলোয়ার দ্বারা যুদ্ধ করব এ ছাড়া কিছুতেই তারা রাজি
হয় না। অতঃপর জুনদুব বললেনঃ অমুকে আমার নিকট বলেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীকে নিয়ে উপস্থিত
হবে, অতঃপর সে বলবেঃ তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন আমাকে হত্যা করেছে”। শু‘বা বলেনঃ আমার মনে
হয় তিনি বলেছেনঃ “সে বলবেঃ কিসের ওপর আমাকে হত্যা করেছে? সে বলবেঃ অমুকের নেতৃত্বে
আমি তাকে হত্যা করেছি”। তিনি বলেনঃ অতঃপর জুনদুব বললঃ সুতরাং তুমি বিরত থাক। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯৪. অধ্যায়ঃ
পিপড়া
হত্যার নিষেধাজ্ঞা
হাদিস নং- (১৫৫)
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “একটি পিপড়া
কোন এক নবীকে কামড় দেয়, তিনি পিপড়ার গ্রামের নির্দেশ দিলেন ফলে তা জ্বালিয়ে দেয়া হল,
আল্লাহ তাকে ওহি করলেনঃ একটি পিপড়া তোমাকে কামড় দিয়েছে, আর তুমি একটি জাতি জ্বালিয়ে
দিলে যারা আল্লাহর প্রশংসা করত”! [বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ি ও ইব্ন মাজাহ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
তাকদির
অধ্যায়
হাদিস নং- (১৫৬)
ইব্ন
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা না‘মান নামক স্থানে (অর্থাৎ
আরাফায়) আদমের পিঠে থাকাবস্থায় অঙ্গিকার গ্রহণ করেছেন, তিনি তার পিঠ থেকে প্রত্যেক
সন্তান বের করেন যা সে জন্ম দিবে, অতঃপর তাদেরকে সামনে অণুর ন্যায় রাখেন, অতঃপর তাদের
মুখোমুখি হয়ে কথা বলেনঃ তিনি বলেনঃ
“আর
স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন
এবং তাদেরকে তাদের নিজদের উপর সাক্ষী
করলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের রব নই’?
তারা বলল, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম।’
যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে,
নিশ্চয় আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম”
(সূরা আরাফঃ১৭১) [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং- (১৫৭)
আব্দুর
রহমান ইব্ন কাতাদা আসসুলামি থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “নিশ্চয়
আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার পিঠ থেকে মখলুক বের করেন ও বলেনঃ এরা জান্নাতি
আমি কোন পরোয়া করি না, এরা জাহান্নামী আমি কোন পরোয়া করি না। তিনি বলেন এক ব্যক্তি
বললঃ হে আল্লাহর রাসূল তাহলে কিসের ওপর আমল করব”? তিনি বললেনঃ “তাকদিরে নির্ধারিত স্থানে”
[১]। [আহমদ]
[১]
অর্থাৎ আমল করার বিষয়টিও তাকদীরে লেখা আছে। যদি ভালো আমল করার সৌভাগ্য হয়, তবে সেটাও
তার তাকদীরে লেখা আছে। সুতরাং তাকদীরে কী আছে তা খুজে বের করার চেষ্টায় আমল করা পরিত্যাগ
করা যাবে না, বরং সর্বদা ভালো আমল করার প্রচেষ্টায় লেগে থাকতে হবে, আর তখনই তার জন্য
সে ভালো আমলটি করা সহজ করে দেয়া হবে। একজন মুমিন এ কাজটিই করে এবং করা উচিত। মুমিন
কখনো তাকদীরের দোহাই দিয়ে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকে না। যারা কাফের ও বদকার তারাই
শুধু তাকদীরের দোহাই দিয়ে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকে এবং বলে যদি আল্লাহ চাইত তবে
আমি অবশ্যই নেক আমল করতে সমর্থ হতাম। বস্তুতঃ এ ধরনের কথা বলে নেক আমল থেকে বিরত থাকা
আরবের মুশরিকদের কাজ। মোটকথাঃ মুমিনের দায়িত্ব হচ্ছে, নেক আমলের জন্য সদা সচেষ্ট থাকা।
যাতে করে তার তাকদীরের লেখা অনুসারে সে ভালো কাজ করতে পারে। আর আল্লাহও তার জন্য তা
সহজ করে দেন। এটাই বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
থেকে বর্ণিত হয়েছে। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ হাসান হাদিস
হাদিস নং- (১৫৮)
আবু
নাদরাহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবি যাকে আবু আব্দুল্লাহ বলা হয়, তাকে দেখার
জন্য তার সাথীবৃন্দ আসেন, তিনি কাঁদতে ছিলেন, তারা বললঃ আপনি কি জন্য কাঁদছেন, আপনাকে
কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেননিঃ “তুমি তোমার মোচ ছাট, অতঃপর
তার ওপর স্থির থাক, যতক্ষণ না আমার সাথে সাক্ষাত কর”। তিনি বলেনঃ অবশ্যই, কিন্তু আমি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তা‘আলা তার
ডান হাতে এক মুষ্টি ও অপর হাতে অপর মুষ্টি গ্রহণ করেন, অতঃপর বলেনঃ এরা হচ্ছে এর জন্য
এবং এরা হচ্ছে এর জন্য, আমি কোন পরোয়া করি না”। আমি জানি না আমি কোন মুষ্টির অন্তর্ভুক্ত।
[আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস নং- (১৫৯)
আবু
দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করেন যখন
সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তার ডান কাঁধে হাত মারেন ও ধবধবে সাদা এক প্রজন্ম বের করেন যেন
তারা পতঙ্গ, অতঃপর বাম কাঁধে হাত মারেন ও কালো এক প্রজন্ম বের করেন যেন তারা জ্বলন্ত
ছাই। অতঃপর ডান হাতের তালুর দিকে লক্ষ্য করে বলেনঃ এগুলো জান্নাতের জন্য আমি কোন পরোয়া
করি না, বাম হাতের তালুর দিকে লক্ষ্য করে বলেনঃ এগুলো জাহান্নামের জন্য আমি কোন পরোয়া
করি না”। [আহমদ]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯৬. অধ্যায়ঃ
মান্নত
অধ্যায়
হাদিস নং- (১৬০)
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বনি আদমের নিকট মান্নত কোন জিনিস নিয়ে
আসে না যা আমি তার জন্য নির্ধারণ করি নি, কিন্তু তাকদির তাকে পেয়ে বসে [১], আমি তার
জন্য নির্ধারণ করে রেখেছি এর দ্বারা কৃপণ থেকে সম্পদ বের করব”। [বুখারি ও মুসলিম]
[১]
অর্থাৎ কখনও কখনও মানুষ মান্নত দ্বারা কোন জিনিস পায়, এটা আসলে মান্নতের মাধ্যমে পাওয়া
নয়; বরং এটাই আমি তার তাকদীরে লিখেছি। কিন্তু সে যেহেতু আল্লাহর জন্য কিছু দিতে চায়
না, কৃপণতা করে, তখন সে মনে মান্নতের মাধ্যমে পাওয়া যাবে, আর এভাবে মান্নত করার কারণে
আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে কিছু জিনিস তার থেকে বের করে আনেন। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯৭. অধ্যায়ঃ
কিয়ামতের
বড় আলামত
আবু
যর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেনঃ আমি একটি গাধার ওপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের সাথে ছিলাম। তখন
তার উপর একটি পাড়যুক্ত চাদর ছিল। তিনি বলেনঃ এটা ছিল সূর্যাস্তের সময়, তিনি আমাকে বলেনঃ
“হে আবু যর তুমি জান এটা কোথায় অস্ত যায়?” তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ আল্লাহ এবং তার রাসূল
ভাল জানেন। তিনি বলেনঃ সূর্যাস্ত যায় একটি কর্দমাক্ত ঝর্ণায় [১], সে চলতে থাকে অবশেষে
আরশের নিচে তার রবের জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, যখন বের হওয়ার সময় আল্লাহ তাকে অনুমতি
দেন, ফলে সে বের হয় ও উদিত হয়। তিনি যখন তাকে যেখানে অস্ত গিয়েছে সেখান থেকে উদিত করার
ইচ্ছা করবেন আটকে দিবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব আমার পথ তো দীর্ঘ, আল্লাহ বলবেনঃ যেখান
থেকে ডুবেছে সেখান থেকেই উদিত হও, এটাই সে সময় যখন ব্যক্তিকে তার ঈমান উপকার করবে না”
[2]। [আহমদ]
[১]
এর অর্থ, মানুষের দৃষ্টিতে যখন কোন সূর্য অস্ত যায়, আর সে যখন সাগরের পারে থাকে, তখন
দেখতে পায় যেন সূর্য কর্দমাক্ত ঝর্ণায় ডুবে গেল। এর পরবর্তী অংশই প্রমাণ করে যে, সূর্য
তারপরও চলতে থাকে। [সম্পাদক]
[2]
অর্থাৎ এর পর আর কারও ঈমান গ্রহণ করা হবে না। [সম্পাদক]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯৮. অধ্যায়ঃ
দাজ্জালের
ফিতনা
হাদিস নং- (১৬২)
নাওয়াস
ইব্ন সাম‘আন থেকে বর্ণিতঃ
কোন
এক সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালের উল্লেখ করলেন,
তাতে তিনি আওয়াজ নিচু ও উঁচু করছিলেন, এমনকি আমরা তাকে (দাজ্জালকে) প্রতিবেশীর খেজুর
বাগানে ধারণা করেছিলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ “আমি তোমাদের ওপর দাজ্জাল ব্যতীত অন্য কিছুর
আশঙ্কা করছি, যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে থাকি, তাহলে আমিই তাকে মোকাবিলা করব
তোমাদের পরিবর্তে। যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে না থাকি, তাহলে প্রত্যেকে তার
নিজের জিম্মাদার, আর আমার অবর্তমানে আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জিম্মাদার। দাজ্জাল কোঁকড়ানো
চুল বিশিষ্ট যুবক, তার চোখ ওপরে উঠানো, আমি তার উদাহরণ পেশ করছি আব্দুল উজ্জা ইব্ন
কুতনকে। তোমাদের থেকে যে তাকে পাবে সে যেন তার ওপর সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে,
নিশ্চয় সে বের হবে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে, সে ডানে ও বামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে,
হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা দৃঢ় থাক”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যমীনে তার অবস্থান
কি পরিমাণ হবে? তিনি বললেনঃ “চল্লিশ দিন, একদিন এক বছর সমান, অতঃপর একদিন এক মাসের
সমান, অতঃপর একদিন এক জুমার সমান, অতঃপর তার অন্যান্য দিনগুলো তোমাদের দিনের ন্যায়”।
আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যে দিনটি এক বছরের ন্যায় সেখানে কি একদিনের সালাত যথেষ্ট?
তিনি বললেনঃ “না, তোমরা তার পরিমাণ করবে”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল যমীনে তার
গতি কিরূপ হবে? তিনি বললেনঃ “মেঘের মত, যাকে বাতাস হাঁকিয়ে নিয়ে যায়, সে এক কওমের নিকট
আসবে তাদেরকে আহ্বান করবে, ফলে তারা তার ওপর ঈমান আনবে ও তার ডাকে সাড়া দিবে, অতঃপর
সে আসমানকে নির্দেশ করবে আসমান বৃষ্টিপাত করবে, যমীনকে নির্দেশ করবে যমীন শস্য জন্মাবে,
এবং তাদের জন্তুগুলো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে উঁচু চুটি, দুধে পরিপূর্ণ ও দীর্ঘ দেহ নিয়ে।
অতঃপর এক কওমের নিকট আসবে তাদেরকে দাওয়াত দিবে, কিন্তু তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান
করবে, সে তাদের থেকে চলে যাবে ফলে তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হবে তাদের হাতে তাদের সম্পদের
কিছুই থাকবে না। সে ধ্বংস স্তূপের পাশ দিয়ে যাবে অতঃপর তাকে বলবেঃ তোমার সম্পদ তুমি
বের কর, ফলে তার সম্পদ তার অনুগামী হবে মক্ষী রাণীর ন্যায়, অতঃপর সে পূর্ণ এক যুবককে
ডাকবে ও তলোয়ারের আঘাতে দু’টুকরো করে ঢিলার দূরত্ব পরিমাণ দুই ধারে নিক্ষেপ করবে, অতঃপর
তাকে ডাকবে সে এগিয়ে আসবে ও হাসিতে তার চেহারা উজ্জ্বল থাকবে। দাজ্জাল এরূপ করতে থাকবে,
এমতাবস্থায় আল্লাহ মাসিহ ইব্ন মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন, তিনি দামেস্কের পূর্ব দিকে
সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন দু’টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেশতাদের ডানার ওপর তার
দু’হাত রেখে। যখন তিনি মাথা নিচু করবেন (বৃষ্টির ন্যায়) পানি টপকাবে, যখন তিনি মাথা
উঁচু করবেন মুক্তোর ন্যায় শ্বেত পাথর পড়বে, (অর্থাৎ পরিষ্কার পানি)। কোন কাফের এর পক্ষে
সম্ভব হবে না তার শ্বাসের গন্ধ পাবে আর বেচে থাকবে, তার শ্বাস সেখানে যাবে যেখানে তার
দৃষ্টি পৌঁছবে। তিনি তাকে সন্ধান করবেন অবশেষে ‘লুদ্দ’ নামক দরজার নিকট তাকে পাবেন,
অতঃপর তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম এক কওমের নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ
দাজ্জাল থেকে নিরাপদ রেখেছেন, তিনি তাদের চেহারায় হাত ভুলিয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তাদের
মর্তবা সম্পর্কে তাদেরকে বলবেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তার নিকট ওহি করবেন, আমি আমার এমন
বান্দাদের বের করেছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার সাধ্য কারো নেই, অতএব তুমি আমার বান্দাদের
নিয়ে তুরে আশ্রয় গ্রহণ কর, আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজকে প্রেরণ করবেন, তারা প্রত্যেক উঁচু
স্থান থেকে ছুটে আসবে। তাদের প্রথমাংশ পানিতে পূর্ণ নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তারা
তার পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষাংশ অতিক্রম করবে ও বলবেঃ এখানে কখনো পানি ছিল। আল্লাহর
নবী ঈসা ও তার সাথীগণ তুরে আটকা পড়বেন, অবশেষে গরুর একটি মাথা তাদের নিকট বর্তমানে
তোমাদের একশো দিনার থেকে উত্তম হবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট
মনোনিবেশ করবেন, ফলে আল্লাহ তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজের) গ্রীবায় গুটির রোগ সৃষ্টি করবেন,
ফলে তারা সবাই এক ব্যক্তির মৃতের ন্যায় মৃত পড়ে থাকবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার
সাথীগণ যমীনে অবতরণ করবেন, তারা যমীনে এক বিঘত জায়গা পাবে না যেখানে তাদের মৃত দেহ
ও লাশ নাই। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন, ফলে তিনি
উটের গর্দানের ন্যায় পাখি প্রেরণ করবেন, তারা এদেরকে বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা
নিক্ষেপ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, কাঁচা-পাকা কোন ঘর অবশিষ্ট
থাকবে না যেখানে সে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করবে না, যমীন ধৌত করে অবশেষে আয়নার মত করে
দিবে। অতঃপর যমীনকে বলা হবেঃ তোমার ফল তুমি জন্মাও, তোমার বরকত তুমি ফেরৎ দাও, ফলে
সেদিন এক দল লোক একটি আনার ভক্ষণ করবে এবং তার ছিলকা দ্বারা ছায়া গ্রহণ করবে, দুধে
বরকত দেয়া হবে ফলে এক উটের দুধ কয়েক গ্রুপ মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। এক গরুর দুগ্ধ
এক গ্রামের জন্য যথেষ্ট হবে। এক বকরির দুগ্ধ এক পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। তারা এভাবেই
জীবন যাপন করবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ পবিত্র বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা তাদের বগলের নিচ
স্পর্শ করবে, ফলে সে প্রত্যেক মুমিন ও মুসলিমের রূহ কব্জা করবে, তখন কেবল সবচেয়ে খারাপ
লোকগুলো অবশিষ্ট থাকবে, তারা গাধার ন্যায় (সবার সামনে) যৌনাচারে লিপ্ত হবে, অতঃপর তাদের
ওপরই কিয়ামত কায়েম হবে”। [মুসলিম]
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৯৯. অধ্যায়ঃ
আল্লাহর
প্রশংসামূলক কতক বাক্যের ফযিলত
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ের নিকট সালাত অবস্থায় হাজির হয়ে বললঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ
حَمْدًا كَثِيرًا
طَيِّبًا مُبَارَكًا
فِيهِ، নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে অমুক বাক্য পাঠকারী? সকলে চুপ রইল। তিনি বলেনঃ
তিনি তিনবার তা বললেন, অতঃপর এক ব্যক্তি বললঃ আমি তা বলেছি, আমি ভাল ব্যতীত অন্য কিছু
উদ্দেশ্য করিনি। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “বারোজন
ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করার জন্য দ্রুত ছুটে এসেছে, তারা বুঝতে পারছিল না কিভাবে তা লিখবে,
অবশেষে তাদের রবের নিকট জিজ্ঞাসা করে, অতঃপর তিনি বলেনঃ আমার বান্দা যেরূপ বলেছে সেরূপ
লিখ”। [আহমদ]
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook,
Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে
শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা
হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা
আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে,
নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম
সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে
পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে
তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে
জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা)
বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা
জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী
৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং
১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল
ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, গুলশান-২,ঢাকা, বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment