Wednesday, September 25, 2019

মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি


দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (আঃ)। তাঁদের থেকেই দুনিয়াতে মানুষ বিস্তার লাভ করেছে। (সুরা আননিসা ৪/১)।

সে হিসাবে পৃথিবীর সকল মানুষ ভাই ভাই। আদর্শিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মুসলমানরা ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর। (সুরা হজ্জ ২২/৭৮)।

সুতরাং যেদিক দিয়েই বিবেচনা করা হোক না কেন পৃথিবীর সকল মানুষ পরস্পর ভাই ভাই। তাই মানুষ একে অপরকে কিংবা এক মুসলমান অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। কারণ পরস্পরকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ নিবন্ধে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি আলোচনা করা হবে ইংশাআল্লাহ।-

মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ

মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’। (সুরা আহযাব ৩৩/৫৮)।

মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর উঠলেন এবং উচ্চস্বরে ডেকে বললেনঃ  “হে মুসলিমগণ! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ এবং অন্তরে ইসলামের প্রভাব রাখোনি, তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না এবং তাদের দোষ অন্বেষণ করো না। কেননা যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ অন্বেষণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ অন্বেষণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যার দোষ খুঁজবেন, তাকে অপমান করবেন, যদি সে নিজের ঘরের মধ্যেও থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৪, সুনান আততিরমিযী ২০৩২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৩৯, গয়াতুল মারাম ৪২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৬৩, আহমাদ ১৯৭৭৬, শু‘আবুল ঈমান ৬৭০৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২৮১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যম

মানুষকে প্রধানত কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়ে থাকে। কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে গালি দেওয়া, গীবত-তোহমত, চোগলখুরী করা, খোঁটা দেওয়া, তুচ্ছ জ্ঞান করা ইত্যাদি বোঝায়। আর কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে যুলুম করা, ধোঁকা-প্রতারণা, রাস্তা বন্ধ করা, সম্পদ জবর দখল করা ও হত্যা করা ইত্যাদি বুঝায়।

কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়

আঘাতের ক্ষত ও ব্যথা দ্রুত সেরে যায়। কিন্তু কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত ও ক্ষতের নিরাময় সহজে হয় না।

‘তরবারির আঘাতের ক্ষতের প্রতিষেধক আছে, কিন্তু জিহবার ক্ষতের কোন প্রতিষেধক নেই’। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/১৭৩; মিরক্বাত ৩/৫৯ পৃঃ)।

বাকশক্তি আল্লাহর দেওয়া অন্যতম বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের কদর করতে হবে। জেনে-বুঝে ও হিসেব করে কথা বলতে হবে। কারণ, মানুষের প্রতিটি কাজ-কর্ম ও কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা তা রেকর্ড করে নেয়। তাতে কোনো গুনাহ থাকুক বা না থাকুক। আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার সঙ্গেই রয়েছে।’ (সুরা সুরা কাফ: ১৮)।

অর্থহীন কথাবার্তা পরিহার করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী, যারা অর্থহীন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ১-৩)।

হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের সমাদর করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মুমিন মাত্রই কথাবার্তায় সংযত। সে কাউকে কথার মাধ্যমে আহত করতে পারে না।  আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম (প্রকৃত) সেই, যার যবান ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত) মুহাজির সেই, আল্লাহ্ যা নিষেধ করেছেন তা যে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৮৪, ১০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে, কল্যাণকর কথা বলতে মানা নেই, বরং উত্তম কথার পুরস্কার অনেক বড়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় কেউ তা করলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহাপুরস্কার দেবেন।’। (সুরা নিসা: ১১৪)।

উত্তম ও সুন্দর কথাকে সদকার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে হাদিসে।  মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)....হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করলেন। এর মধ্যে একটি হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের প্রত্যেকটি গ্রন্থির উপর প্রতিদিনের জন্য সাদাকা ধার্য রয়েছে। দু’ ব্যক্তির মধ্যে ইনসাফ করে দেয়াও একটি সাদাকা। কোন ব্যক্তিকে সওয়ারীর উপর আরোহণে সাহায্য করা অথবা তার মালামাল সওয়ারীর উপরে তুলে দেয়াও একটি সাদাকা্। তিনি আরো বলেন, সকল প্রকার ভাল কথাই এক একটি সাদাকা, সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যেতে যতটি পদক্ষেপ ফেলা হয় তার প্রতিটিই এক একটি সাদাকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও একটি সাদাকা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২০৪, ইসলামীক সেন্টার ২২০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এমনকি সুন্দর কথা ও উত্তম ব্যবহার মানুষকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমন কি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৪০, ১৪১৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই কথা বললে কল্যাণকর কথা বলার চেষ্টা করতে হবে, নতুবা চুপ থাকতে হবে। শায়খ বকর ইবনে আবদুল্লাহ আল-মুজানি (রহ.)-কে চুপ থাকা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল— আপনি এত দীর্ঘ সময় চুপ থাকেন কেন? তিনি জবাব দেন, আমার জিহ্বা হিংস্র একটা জীবের মতো, যদি আমি ছেড়ে দিই, এটি আমাকে খেয়ে ফেলবে। (বাহজাতুল মাজালিস: ০১/১১)।

সামান্য একটু কষ্টদায়ক কথার পরিমাণ ও উত্তম কথার বিনিময় কী হতে পারে, তা নিচের হাদিস থেকেই বুঝা যায়। রাসুল (স.) বলেছেন,

আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে তার নিকট দিয়ে একজন শরীফ লোক যাচ্ছিলেন। আলকামা (রাঃ) তাকে বলেন, তোমার সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে এবং অন্যবিধ অধিকারও আছে। আমি লক্ষ্য করছি যে, তুমি এসব আমীর-ওমরার নিকট যাতায়াত করো এবং তাদের সাথে তাদের মর্জিমাফিক কথাবার্তা বলো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী বিলাল ইবনুল হারিস আল-মুযানী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কথা বলে, অথচ তার প্রতিদান সম্পর্কে সে জ্ঞাত নয়। আল্লাহ তা’য়ালা এই কথার বিনিময়ে তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর সন্তোয লিখে দেন। পক্ষান্তরে তোমাদের কেউ আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে, যার পরিণতি সম্পর্কে সে বেখবর। আল্লাহ এই কথার বিনিময়ে তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অসন্তুুষ্টি লিখে দেন। আলকামা (রাঃ) বলেন, লক্ষ্য করো, ভেবে দেখ, তুমি কি বলছো এবং মুখ থেকে কি কথা বের করছো। বিলাল ইবনুল হারিস (রাঃ) -র নিকট আমি যে হাদীস শুনেছি তা আমাকে অনেক কথাই বলতে বাধা দেয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৯, সুনান আততিরমিযী ২৩১৯, আহমাদ ১৫৪২৫, মুয়াত্তা মালেক ১৮৪৮, সহীহাহ ৮৮৬, রাওদুন নাদীর ১৭২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৫১, ১৫২, ইবনে হিব্বান: ২৮০; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৮৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কথাবার্তায় সংযত হওয়ার তাওফিক দান করুন। কথার মাধ্যমে কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।

কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত মানুষ সবচেয়ে বেশী স্মরণে রাখে এবং এ আঘাত সর্বাধিক ব্যথাতুর হয়। কথার দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-

(১) গালি দেওয়া:

মানুষকে গালি দেওয়া হলে সে কষ্ট পায়। আর এটা কবীরা গোনাহ। পরকালে এর প্রতিকার হবে নেকী প্রদান বা গোনাহ বহনের মাধ্যমে। তাছাড়া কাউকে গালি দেওয়া গোনাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের গালাগালি করা ফাসিক্বী এবং খুনাখুনি করা কুফরী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪, সুনান আততিরমিযী ২৬৩৫, সুনান আননাসায়ী ৪১০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭৭৯, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৩১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৩৫, মুসনাদুল হুমায়দী ১০৪, মুসনাদুল বাযযার ১১৭২, আহমাদ ৩৯০৩, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৯৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯৩৯, শু‘আবুল ঈমান ৬৬২, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৩৫৭৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৮/১২৩, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৯৯৫৮, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৭৩৪, আস্ সুনানুল কুবরা ১৬২৭১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসে নিপতিত করার শামিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিপতিত করার ন্যায়’। (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮০)।

উভয় গালিদাতাকে রাসূল (ছাঃ) শয়তান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘উভয় গালমন্দকারী দুই শয়তান। এরা পরস্পরের উপর মিথ্যা দোষারোপ করে এবং অসত্য বলে’। (আহমাদ ১৭৫২২; আল-আদাবুল মুফরাদ ৪২৮; ছহীহুল জামে‘ ৬৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোনো মুসলিমকে গালি দিলে শয়তানকে সহযোগিতা করা হয়।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো, যে মদ পান করেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাকে প্রহার করো। রাবী বলেনঃ তখন আমাদের মাঝে কেউ হাত দ্বারা, কেউ জুতার দ্বারা, আবার কেউ বা কাপড় (পেঁচিয়ে লাঠির মতো বানিয়ে তা) দ্বারা আঘাত করল। অতঃপর লোকটি যখন চলে গেল, তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুক। তখন এটা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ বলো না। তার ওপর শায়ত্বনকে সাহায্য করো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৭, ৬৭৮১, সুনান আবূ দাঊদ ৪৪৭৭, আহমাদ ৭৯৮৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গালিদাতাদের মধ্যে যে প্রথমে শুরু করবে সব গোনাহ তার উপরে বর্তাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আনাস ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দু’ ব্যক্তি পরস্পরকে গালি দেয়, তবে গালমন্দের পাপ সে ব্যক্তির হবে যে ব্যক্তি প্রথম গালি দিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না অত্যাচারিত ব্যক্তি সীমা অতিরিক্ত করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৭, সুনান আততিরমিযী ১৯৮১, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৯৪, সহীহুল জামি‘ ৬৬৯৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭৭৮, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৩২৬, আহমাদ ৭২০৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪২৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭২৮, শু‘আবুল ঈমান ৬৬৬৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৪১০, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৫২৫, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৬১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এমনকি গালিদাতা পরকালে নিঃস্ব হবে এবং নেকী দিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং মুসলমানকে গালি দিয়ে তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে পরকালে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হ’তে না হয়।

(২) গীবত-তোহমত:

গীবত-তোহমতের মাধ্যমেও মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। গীবত অর্থ দোষচর্চা, পরনিন্দা। আর তোহমত অর্থ মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। এ দু’টিই পরিবারে ও সমাজে নানা বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টির জন্য দায়ী। মানুষের মধ্যকার সুসম্পর্কে চিড় ধরাতে এদু’টি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এ দু’টি গোনাহ সমাজের মানুষ হেসে-খেলে করে থাকে। এমনকি অনেকে একে দোষের মনে করে না। অথচ উভয়টিই কবীরা গোনাহ ও বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট। বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ এ গোনাহ মাফ করবেন না। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের ইয্যত-সম্মান নষ্ট হয়, তার হক বিনষ্ট হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। অনেকে দোষচর্চা করে মনে করেন যে, তিনি সঠিক কথাইতো বলছেন। সুতরাং সেটা দোষের হবে কেন? কিন্তু কারো মধ্যে থাকা দোষ-ত্রুটি তার অবর্তমানে আলোচনা করাই গীবত।

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ)...আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, (গীবাত হলো) তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে বাস্তবিকই থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে প্রকৃতই থেকে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৫৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৪০৭, ছহীহুল জামে ৮৬; ছহীহাহ ১৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গীবত বা দোষচর্চা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আর একে অপরের পিছনে গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপসন্দ করে থাক’। (সুরা হুজুরাত ৪৯/১২)।

অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) গীবত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর উঠলেন এবং উচ্চস্বরে ডেকে বললেনঃ ’’হে মুসলিমগণ! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ এবং অন্তরে ইসলামের প্রভাব রাখোনি, তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না এবং তাদের দোষ অন্বেষণ করো না। কেননা যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ অন্বেষণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ অন্বেষণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যার দোষ খুঁজবেন, তাকে অপমান করবেন, যদি সে নিজের ঘরের মধ্যেও থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৪, সুনান আততিরমিযী ২০৩২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৩৯, গয়াতুল মারাম ৪২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৬৩, আহমাদ ১৯৭৭৬, শু‘আবুল ঈমান ৬৭০৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২৮১)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

পার্থিব শাস্তি

রাসূল (ছাঃ) পার্থিব শাস্তির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে গেলে একে অপরের খিদমত করত। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে একজন লোক ছিল যে তাদের খিদমত করত। তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর জাগ্রত হ’লে লক্ষ্য করলেন যে, সে তাদের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করেনি (বরং ঘুমিয়ে আছে)। ফলে একজন তার অপর সাথীকে বললেন, এতো তোমাদের নবী করীম (ছাঃ)-এর ন্যায় ঘুমায়। অন্য বর্ণনায় আছে, তোমাদের বাড়িতে ঘুমানোর ন্যায় ঘুমায় (অর্থাৎ অধিক ঘুমায়)। অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে বললেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বল যে, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) আপনাকে সালাম প্রদান করেছেন এবং আপনার নিকট তরকারী চেয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, যাও, তাদেরকে আমার সালাম প্রদান করে বলবে যে, তারা তরকারী খেয়ে নিয়েছে। (একথা শুনে) তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার নিকট তরকারী চাইতে ওকে পাঠালাম। অথচ আপনি তাকে বলেছেন, তারা তরকারী খেয়েছে। আমরা কি তরকারী খেয়েছি? তিনি বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোশত দিয়ে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোশত দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন, না বরং সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে’। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮)।

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, সাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর ব্যাপারে আপনার জন্য এতটুকুই যে, সে এরূপ অর্থাৎ তিনি খাটো। তিনি বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলেছ, যা সমুদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমুদ্রের পানি রং পাল্টে যাবে। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বললেনঃ আমাকে এতো এতো সম্পদ দেয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করবো না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৫, ছহীহুত তারগীব ২৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পরকালীন শাস্তি

রাসূল (ছাঃ) উম্মতকে গীবতের পরকালীন শাস্তি সম্বন্ধেও অবহিত করেছেন।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা’আলা আমাকে উপরে নিয়ে গেলেন, আমি সেখানে এমন লোকেদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ তামার তৈরি। সেসব নখ দ্বারা তারা তাদের মুখমণ্ডলে ও বক্ষ খোঁচাচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল (আ.) বললেনঃ এরা সেসব লোক, যারা মানুষের মাংস খায় (পরোক্ষ নিন্দা করে) এবং মানুষের পিছনে লেগে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৭৮, আহমাদ ৯৩৩৪০, শু‘আবুল ঈমান ৬৭১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৮৩৯, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৮, সহীহুল জামি‘ ৫২১৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৫৩৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,

মুসতাওরিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পরোক্ষ নিন্দা করে বা মন্দ বলে এক গ্লাস খেলো, আল্লাহ তা’আলা তাকে সে পরিমাণ জাহান্নামের আগুন খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের অপদস্থ ও অপমানের বিনিময়ে কাপড় পরিধান করল, আল্লাহ তা’আলা সেটার বিনিময়ে তাকে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুনের পোশাক পরিধান করাবেন। আর যে ব্যক্তি কাউকে দাঁড় করায় বা নিজে দণ্ডায়মান হয়ে লোকেদেরকে নিজের বুজুর্গি শোনায় বা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখায়, কিয়ামতের দিন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা তার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা শোনানোর জন্য এবং দেখানোর জন্য তাকে দাঁড় করাবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৮১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯৩৪, সহীহুল জামি‘ ৬০৮৩, আহমাদ ১৮০১১, শু‘আবুল ঈমান ৬৭১৭, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৭১২০, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৬৯৭, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৮৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তোহমত বা অপবাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

‘যে ব্যক্তি কোন অপরাধ কিংবা পাপ করে, অতঃপর তা কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর চাপায়, সে নিজেই উক্ত অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপভার বহন করবে’। (সুরা আননিসা ৪/১১২)।

তিনি আরো বলেন,

‘মিথ্যা তো কেবল তারাই রচনা করে যারা আল্লাহর আয়াত সমূহে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী’। (সুরা নাহল ১৬/১০৫)।

(৩) চোগলখুরী করাঃ

গিবত শব্দের অর্থ পরনিন্দা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা; কারও অনুপস্থিতিতে তাঁর দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা।

মানুষকে কষ্ট দেওয়ার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে চোগলখুরী করা। আর তা হচ্ছে দুই ভাই বা বন্ধুর মাঝে সম্পর্ক বিনষ্টের উদ্দেশ্যে একে অপরের কাছে পরস্পরের দোষ উল্লেখ করা।

চোগলখুরীর নিন্দায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অন্যের নিকটে লাগায় আপনি তার আনুগত্য করবেন না”। (সূরা আল-ক্বালাম, আয়াত: ১০-১১)।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তার কাছে খারাপ লাগবে। জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তো তুমি গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বর্তমান না থাকে, তবে তুমি “বুহতান’’ (মিথ্যারোপ) করলে।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যদি তুমি তোমার ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে রয়েছে, তবে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার সম্পর্কে এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে নেই, তবে তুমি তার প্রতি “বুহতান’’ (মিথ্যা অপবাদ) দিলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৯, সহীহুল জামি‘ ৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৪৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৫৮, শু‘আবুল ঈমান ৬৭১৯, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১৫১৮, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৬৯৫, সুনানুদ্ দারিমী ২৭১৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪৯৩, আহমাদ ৮৯৮৫, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাঊদ ৪৮৯৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরেকটি হাদীছে এসেছে,

আবদুর রহমান ইবনু গানম ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর আল্লাহ তা’আলার নিকৃষ্ট বান্দা তারা, যারা মানুষের পরোক্ষ নিন্দা করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র লোকেদের পদস্খলন প্রত্যাশা করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮৭১, আহমাদ ১৭৯৯৮, শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী ৬৭০৮, মুসনাদুল বাযযার ২৭১৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৮৮৯, সহীহ আল আদাবুল মুফরাফ ২৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮১৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৯৯০০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

‘আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? ছাহাবীগণ বলেন, হ্যঁা। তিনি বলেন, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরো বলেন, আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যারা চোগলখুরী করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়’। (আহমাদ ২৭৬৪২; আল-আদাবুল মুফরাদ ৩২৩, সনদ হাসান)।

চোগলখুরীর পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,

(১) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তিনি বললেনঃ এদের ‘আযাব দেয়া হচ্ছে, কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব হতে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের উপর একখানি গেড়ে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেন এমন করলেন? তিনি বললেনঃ  আশা করা যেতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের আযাব কিছুটা হালকা করা হবে। ইবনুল মুসান্না (রহ.) আ‘মাশ (রহ.) বলেনঃ আমি মুজাহিদ (রহ.) হতে অনুরূপ শুনেছি। সে তার পেশাব হতে সতর্ক থাকত না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৮, ২১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। (সুনান আবূদাঊদ ৪৮৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) ইয়াহইয়া ইবনু রাশিদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর অপেক্ষায় বসে রইলাম। তিনি বেরিয়ে এসে আমাদের নিকট বসলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যার সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত কোন হাদ্দ বাস্তবায়িত করার পথে বাধা সৃষ্টি করে, সে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি জেনে বুঝে মিথ্যা মামলা দেয়, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। যে ব্যক্তি কোন ঈমানদারের এমন দোষ বলে বেড়ায় যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের আবর্জনার মধ্যে বসবাস করাবেন। অতএব তাকে শীঘ্রই তার কথা থেকে তওবা এবং ত্যাগ করা উচিত। (সুনান আবূদাঊদ ৩৫৯৭; মুস্তাদরাকে হাকেম ২২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪)  মন্দ নামে ডাকাঃ

মানুষের নাম বিকৃত করে ডাকা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী হতে উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি অন্যায়ভাবে দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না; ঈমানের পর ফাসেকী হ’ল সবচেয়ে মন্দ নাম। যারা (এসব থেকে) তওবা করে না তারাই যালিম’। (সুরা হুজুরাত ৪৯/১১)।

আবূ জুরাইরা ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের বনী সালিমাহ সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ ’’তোমরা একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। কারণ ঈমানের পর মন্দ নামে ডাকা পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত’’ (সূরা আল-হুজুরাতঃ ১১)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মাঝে আগমন করেন তখন আমাদের প্রত্যেকেরই দু’-তিনটা করে নাম ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’’হে অমুক’’ এভাবে ডাকলে তারা বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! থামুন, সে ব্যক্তি এ নামে ডাকলে অসন্তুষ্ট হবে। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হলোঃ ’’তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারো নাম বিকৃত করে কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা অথবা ব্যঙ্গ ও তুচ্ছজ্ঞান করে এমন খেতাব বের করে ডাকা, যা সে পছন্দ করে না; এসব কর্মকাণ্ড কিছুতেই ইসলাম সমর্থন করে না। অন্যের মনঃকষ্টের কারণ হয়, এমন যেকোনো কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।

(৫)  কাউকে উপহাস করাঃ

কোনো মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবারই কোনো না কোনো দিক দিয়ে দুর্বলতা থাকে। তাই কোন মানুষকে উপহাস করা উচিত নয়। এতে মানুষ মনে অত্যন্ত কষ্ট পায়। এটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী হতে উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি অন্যায়ভাবে দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না; ঈমানের পর ফাসেকী হ’ল সবচেয়ে মন্দ নাম। যারা (এসব থেকে) তওবা করে না তারাই যালিম’। (সুরা হুজুরাত ৪৯/১১)।

(৬) কাউকে  তুচ্ছজ্ঞান করাঃ

কোন মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করলে বা হেয় ভাবলে সে যারপর নাই কষ্ট পায়। এ কাজ থেকে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন এবং এর অশুভ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার তার বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইযযত-আবরু হারাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৫৮, আহমাদ ৭৭২৭, শু‘আবুল ঈমান ৬৬৬০, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩০৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন,

সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের মানসম্মানের হস্তক্ষেপ করা ব্যাপকতর সুদের অন্তর্ভুক্ত (মহাপাপ)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৬; ছহীহাহ ১৪৩৩, ৩৯৫০; ছহীহুল জামে‘ ২২০৩, ২৫৩১; ছহীহুত তারগীব ২৮৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) দান করে খোঁটা দেয়াঃ

দান করে খোঁটা  দ্বারা  কেবল  দান-খয়রাত  ও  পরোপকারের  ছওয়াবই  নষ্ট  হয়  না;  বরং  এটা  একটা  কঠিন  পাপও  বটে। কেননা  এর  দ্বারা  উপকৃত  ব্যক্তির  অন্তরে  আঘাত  দেওয়া হয়। মানুষের  মনে  আঘাত  দেওয়া  কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়।

(ক)  আল্লাহ তাআলা বলেন:

“যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনো কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান পাবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। (সূরা বাকারা : ২৬২)।

(খ)  আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অত:পর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল”। (সূরা বাকারা: ২৬৪)।

(গ)  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:  “সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যে উপকার করে খোটা দেয়। (সুনান নাসাঈ, ৫৬৮৮)।

(ঘ)  আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী এই তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ি ৫৫৭৭)।

(ঙ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেনঃ (১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, (২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া ৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) মুখ ও লজ্জাস্থানের কারণে সে  জাহান্নামী হবেঃ

মানুষের কিছু কিছু অঙ্গ এমন যে এগুলো মানুষের জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে। যদি কেউ এই অঙ্গের সঠিক ব্যবহার করে তাহলে এই অঙ্গগুলো তাদের জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হবে, আর যদি কেউ এই অঙ্গগুলো গুনাহের কাজে ব্যবহার করে, তবে এই অঙ্গগুলো তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দুটি এমন আছে, যেগুলো মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হবে।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের বদৌলতে বেশীর ভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া ও সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাকে আরো জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি অংগ- মুখ ও লজ্জাস্থান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০০৪, আহমাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩, সহীহাহ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুখের অপব্যবহারে বেশির ভাগ গুনাহঃ যেমন বেশির ভাগ গুনাহ মুখের দ্বারা সংঘটিত হয়। মিথ্যা বলা, গিবত করা, গালি দেওয়া, ধমক দেওয়া, হারাম খাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো এই অঙ্গ। এ কারণে আল্লাহর রাসুল (সা.) এই অঙ্গের সঠিক ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আল্লাহ্ এবং শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে ক্লেশ না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৫, ৫১৮৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের এই ছোট অঙ্গ এতটাই শক্তিশালী যে এর থেকে বের হওয়া একটি শব্দের কারণে অনেক বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত এই অঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা ব্যতিরেকেই এমন কথা বলে যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৭, ৬৪৭৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্যঃ রাসুল (সা.) যে দুটি অঙ্গ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, তার মধ্যে দ্বিতীয় অঙ্গটি হলো, লজ্জাস্থান। পবিত্র কোরআনে যারা অঙ্গটির হেফাজত করে, তাদের সফল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, “অবশ্যই সফল হয়েছে মুমিনগণ... আর যারা তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষিত রাখ”।  (সুরা : মুমিনুন, আয়াত ৫)।

অর্থাৎ প্রকৃত মুমিনের গুণ হলো, যৌনাঙ্গকে হেফাজত করা। তারা নিজের দেহের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখে। অর্থাৎ উলঙ্গ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করে এবং অন্যের সামনে লজ্জাস্থান খোলে না। আর তারা নিজেদের লজ্জাস্থানের সততা ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করে। অর্থাৎ যৌন স্বাধীনতা দান করে না এবং কামশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগামহীন হয় না। অর্থাৎ যারা স্ত্রী ও (হালাল) দাসীদের ছাড়া সব পর নারী থেকে যৌনাঙ্গকে হেফাজতে রাখে এবং এই দুই শ্রেণির সঙ্গে শরিয়তের বিধি মোতাবেক কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে কোনো অবৈধ পন্থায় কামবাসনা পূর্ণ করতে প্রবৃত্ত হয় না। কারণ অবৈধ পদ্ধতিতে কামবাসনা পূর্ণ করা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে কোন গুনাহটি সবচেয়ে বড়? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শারীক করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটি অবশ্যই বড় গুনাহ্। এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তান তোমার সঙ্গে খাবে এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, এরপর তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫২০, ৪৪৭৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৭০০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি জান্নাতে যাবে নাঃ

অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোকদেরকে সমাজের কেই পছন্দ করে না কারণ এরা সমাজে কলহ-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। মুনাফিকের একটা চিহ্ন হচ্ছে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা। উগ্র ভাষায় কথা বললে ভালবাসা কিংবা বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। তাই এইসমস্ত লোকদেরকে ইসলাম পছন্দ করে না। যারা অশ্লীলভাষী ও উগ্রমেজাজী এরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা ঈমানের অংগ। আর ঈমানের অবস্থান হলো জান্নাতে। আর অশ্লীলতা হলো অত্যাচার (জুলুম), আর অত্যাচার থাকবে জাহান্নামে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) অবাধ্য, আহাম্মক ও দাম্ভিকতা করলে সে জাহান্নামীঃ

হারিসা ইবনে ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করবো না যে, কারা জান্নাতী হবে? যারা দুর্বল এবং যাদেরকে দুর্বল মনে করা হয়। আমি কি তোমাদের অবহিত করবো না যে, কারা জাহান্নামী হবে? প্রত্যেক অবাধ্য, আহাম্মক ও দাম্ভিক ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৫৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬০৫, আহমাদ ১৮২৫৩, তাখরীজু মুশকিলাতুল ফিকর ১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করলে ও ধোকা দিলে সে জাহান্নামীঃ

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ এবং আবূল আহওয়াস মুহাম্মাদ ইবনু হাইয়্যান (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭৫, আহমাদ ৮১৫৯, ২৮৫০০, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) মুসলিমকে গালি দিলে ও তাকে হত্যা করলে সে জাহান্নামীঃ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৯, ৩৯৪০, ৩৯৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৮৩, ২৬৩৪, ২৬৩৫, নাসায়ী ৪১০৫, ৪১০৬, ৪১০৭, ৪১০৮, ৪১০৯, ৪১১০,৪১১১ ৪১১২, ৪১১৩, আহমাদ ৩৬৩৯, ৩৮৯৩, ৩৯৪৭, ৪১১৫, ৪১৬৭, ৪২৫০, ৪৩৩২, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পরিশেষে মানুষের কর্তব্য হলো ধর্ম ও দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করা। জীবনের খেলাঘরের অস্তাচলে অর্থকষ্ট রোগ-ব্যাধিতে ভুগে সহসাই আমাদের পাড়ি জমাতে হবে, না-ফেরার দেশে। আর আমাদের অমরত্ব লাভের উপায় হলো সদাচার, মানবকল্যাণ ও পরপারে জান্নাতিসুখে থাকার অবলম্বন জোগাড় করা।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...