বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
যেসব আমলে রিজিক বৃদ্ধি পায়
ভূমিকাঃ রিজিক বৃদ্ধি তথা অভাব-অনটন দূর করার জন্যে
আমরা কতোই না পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কেউ সফল হচ্ছে কেউ বিফল হচ্ছে। মুসলমান মাত্রেই বিশ্বাস
করেন যে, তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু, এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ
হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন।
আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর
মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্যে র্নিধারিত উপায়-উপকরণ
সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য
কিছু।
মনে রাখবেন, ঘরের কোণায় বসে আল্লাহু আল্লাহু
জিকির করলে জান্নাত থেকে কোনো রুটি আসবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন,
কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর
নিকটই পুনরুত্থান”। (সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১৫)।
আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন
ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম আমলঃ তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করাঃ
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর
নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা,
তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর
ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের
পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে
না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য
পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন”।
(সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩)।
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে,
আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে
দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য
যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত
কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় আমলঃ তাওবা ও ইস্তেগফার করাঃ
তওবা অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে
যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে তওবা বলা হয়।
তওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া। অর্থাৎ স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে
ফিরে আসা। তওবার জন্য করণীয় হলো, স্বীয় কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, সেই
অপরাধ আর না করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশিমাত্রায়
মনোযোগী হওয়া।
ইবনে মা’কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি আমার পিতার সাথে আব্দুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি তাকে বলতে শুনলাম,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’। আমার
পিতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে
শুনেছেন যে, ’’অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’? তিনি বলেন, হাঁ। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪২৫২, আহমাদ ৩৫৫৮, ৪০০৪, ৪১১৩, রাওদুন নাদীর ৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা
(প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। (সূরা
নূর ৩১)।
তিনি আরো বলেছেন,
“তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য)
ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর”। (সূরা হূদ ৩)।
তিনি আরো বলেছেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর
বিশুদ্ধ তওবা”। (সূরা তাহরীম ৮)।
ইস্তিগফার মানে হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ
হলেন ‘গাফির’ ক্ষমাকারী, ‘গফুর’ ক্ষমাশীল, ‘গফফার’ সর্বাধিক ক্ষমাকারী। ইস্তিগফার একটি
স্বতন্ত্র ইবাদত; কোনো গুনাহ বা পাপ মাফ করার জন্য এই ইবাদত করা হয় না। যেমন: সলাত,
সিয়াম, হজ ইত্যাদি ইবাদত দ্বারা গুনাহ মাফ হয়; কিন্তু এসব ইবাদত করার জন্য গুনাহ করা
শর্ত নয়। তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহ তাআলার অতি পছন্দের একটি ইবাদত। তাই প্রিয় নবী হজরত
মুহাম্মদ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও ইস্তিগফার করতেন।
অনুরূপ ইমানের পর সলাত প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও এই সলাত আদায়ের পর
তিনবার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত। অর্থাৎ ইস্তিগফার শুধু পাপের পরে নয়, ইবাদতের পরেও করা
হয়।
অধিক পরিমাণে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার বা ক্ষমা
প্রার্থনা করলে অভাব অনটন, দুঃখ, দূর্দশা দূর
হয় ও রিজিক বৃদ্ধি পায়। (ইহা প্রমাণিত)।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ
আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
‘আর বলেছি,‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়
তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ
করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি
দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২)।
হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে,
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ
তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয়
উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (সুনান ইবন
মাজা ৩৮১৯; তাবরানী ৬২৯১, সুনান আবু দাউদ ১৫১৮, যইফাহ ৭০৬, যইফ আবু দাউদ ২৬৮, আত-তালীকুর
রাগীব ২/২৬৮, যইফ আল-জামি' ৫৮২৯, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/৩৫১))। হাদিসের মানঃ
যঈফ (Dai'f)।
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন
আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ
তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয়
উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (বাইহাকী
: ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত)।
ক্ষমা প্রার্থনামূলক দোয়াসমূহ
(১) “আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”।
(দৈনিক ৭০/১০০ বার)।
“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং
তাঁর নিকটই তাওবা করছি”।
(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ বুরদাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা
আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট
তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর
কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি)
পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,
‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা
আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর,
আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ
১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা
ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন
নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) “রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া
ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”
অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের
উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।
(৫) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা
তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে
পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি
জুলমান কাছিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা
ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।”
‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি।
আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন
এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা
ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার
সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি
স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি
ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
মূল হাদিসঃ
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭)
যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু’-সাজদায় এ দু'আ অধিক পরিমাণে
পাঠ করতেনঃ
“সুবহ-নাকা আল্লহুম্মা রব্বানা-
ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।
অর্থাৎ "হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক!
তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” তিনি
কুরআনের উপর 'আমল করতেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪),
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, আবূ দাঊদ ৮৭৭,
নাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী
৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, নাসায়ী, ১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান
১৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)। হাদিসের মান-সহিহ।
(৮) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ),
‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ
"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা
আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা
প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন,
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি
বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি
তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ"
সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(৯) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর)
নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে
কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ
"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা
আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল
পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ
মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(১০) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্
(রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্দিহী
আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা
তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।”
রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন,
তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের
মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ
পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।
সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য
আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর
দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)।
(সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) হুযাইফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ সিজদার মাঝে বলতেন: “রব্বিগফির লী।” (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ-৯০১, আহমাদ ৩৯৭, ৪০০, ইবনু মাজাহ ৮৯৭, আল
কুবরা ৬৫৬, ৭৩১, ১৩৭৮, ১৩৭৯, আবু দাউদ ৮৭৪; তিরমিযী, শামাইল ২৭০, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ
৯১০, বাইহাকী ২/১২১-১২২, আবু দাউদ তায়ালিসী ৪১৬, সুনান আদ-দারেমী ১৩৬০, নাসাঈ, ১০৬৯, ইরওয়া ৩৩৫, দারিমী ১৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,
‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ
দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়,
আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৩, ৯৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন
আল্লাহ বলেন,
(ক) সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা
ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। (সূরা
নাসর ৩ নং আয়াত)।
(খ) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি
জুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু-রূপে
পাবে। (সূরা নিসা ১১০ নং আয়াত)।
(গ) আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল ৩৩ নং আয়াত)।
(ঘ) যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের
প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে
অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান ১৩৫ নং আয়াত।
(ঙ) আবূ হুরাইরা) রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার
কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে
নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে [তোমাদের পরিবর্তে] এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং
আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’
(বিঃদ্রঃ এ হাদিস দ্বারা পাপ করার পর আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ব্যক্ত করা হয়েছে। পাপ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়নি।
কেননা, মানুষ মাত্রই ভুলে জড়িত। তাই ভুলে জড়িত হয়ে পড়লে আবশ্যিক-রূপে ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য)।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭৪৯, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৭১, তিরমিযী ২৫২৬, আহমাদ ৭৯৮৩, ৮০২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ বারাকাতময় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায়
থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে
আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়,
তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া
করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস
এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা
নিয়ে হাযির হব। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪০,
সহীহাহ১২৭, ১২৮, রাওযুন নাযীর ৪৩২, মিশকাত তাহকীক সানী ২৩৩৬, তা’লীকুর রাগীব ২/২৬৮,
রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ)....আবূ মূসা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতে আল্লাহ তা’আলা
তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তওবা করে এমনিভাবে দিনে
তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন
চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তৃতীয় আমলঃ আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাঃ
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং
তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন :
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক তার জীবিকা
প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
চতুর্থ আমলঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়াঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে।
‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)। সালাত
শেষে আমি যখন বসলাম, আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করলাম, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ওপর দরূদ পাঠ করলাম। তারপর আমি আমার নিজের জন্য দু‘আ করতে লাগলাম। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩১-(১৩), তিরমিযী ৫৯৩)। হাদিসের
মানঃ হাসান।
দরূদ পাঠের ফজিলত
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ
পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২১(৩), সহীহ মুসলিম ৪০৮, আবূ দাঊদ ১৫৩০, নাসায়ী ১২৯৬, তিরমিযী ৪৮৫,
আহমাদ ৮৮৫৪, দারেমী ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে,
আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর
আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২২-(৪), সহীহ নাসায়ী ১২৯৭, হাকিম ১/৫৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ
পাঠ করবে, তারাই কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমার পক্ষ থেকে বেশি নিকটে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৩-(৫), তিরমিযী ৪৮৪, সহীহ আত্
তারগীব ১৬৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে
ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৪-(৬), সহীহ: নাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম
২/৪২১, দারিমী ২৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯২৫-(৭), আবূ দাঊদ ২০৪১, সহীহ আল জামি ৫৬৭৯, বায়হাক্বীর
দা‘ওয়াতে কাবীর ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(চ) উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের
ঘরকে কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা
দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯২৬-(৮), আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৭২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট
আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি,
যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্ছিত হোক সেই
ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দু’জনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা তাকে জান্নাতে
পৌঁছায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৭-(৯), তিরমিযী
৩৫৪৫, সহীহ আত্ তারগীব, হাকিম ১/৫৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(জ)
‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু‘আ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে
থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নবীর ওপর দরূদ না পাঠাও।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩৮-(২০), সহীহ লিগয়রিহী
: তিরমিযী ৪৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭৬। হাদিসের মানঃ সহিহ।
পঞ্চম আমলঃ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়
করাঃ
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা
বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমার রব
তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা
যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।’
(সূরা আস-সাবা’, আয়াত: ৩৯)।
আসমা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
এরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর পথে খরচ কর, গণনা কর না, তাহ’লে আল্লাহ (তাঁর রহমত) গণনা
করবেন। (অতিরিক্তগুলি) সঞ্চয় কর না, তাহ’লে আল্লাহ (স্বীয় রহমত) সঞ্চিত রাখবেন। তোমার
সাধ্যমত দান কর যত কমই হৌক’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৫৯১, ১৪৩৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৯; মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬১, ইবনু হিব্বান ৩২০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ আস্
সগীর ১৫১৩, আহমাদ ২৬৯৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ষষ্ঠ আমলঃ বারবার হজ-উমরা করাঃ
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর
অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা হাজ্জ ও উমরা
পরপর একত্রে আদায় কর। কেননা, এ হাজ্জ ও উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়, লোহা
ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়। একটি কবুল হাজ্জের প্রতিদান জান্নাত
ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৮১০,
সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সপ্তম আমলঃ দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করাঃ
মুস‘আব ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন
সা‘দ (রাঃ)-এর ধারণা ছিল অন্যদের চেয়ে তাঁর মর্যাদা অধিক। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা দুর্বলদের (দু‘আয়) ওয়াসীলায়ই সাহায্য প্রাপ্ত ও রিয্ক প্রাপ্ত
হচ্ছ।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯৬, ৩৫৯৪, ৩৬৪৯)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মনে রাখবেন, অন্যায় অত্যাচারী বা যুলুমকারী
পরকালে আমলের দিক থেকে নিঃস্ব হয়ে জাহান্নামে যাবে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি
বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়,
সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম
না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে
তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২২৮৭)। হাদিসের মান সহিহ।
অষ্টম আমলঃ ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়াঃ
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও
অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহাপবিত্র আল্লাহ বলেনঃ হে আদম
সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র
দূর করবো। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং
তোমার দরিদ্রতা দূর করবো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১০৭,
সুনান আততিরমিযী ২৪৬৬, সহীহাহ ১৩৫৯, মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
নবম আমলঃ আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করাঃ
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ
ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে
বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির
হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর
উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা
আন-নিসা, আয়াত: ১০০)।
আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ
সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।
দশম আমলঃ আল্লাহর পথে জিহাদঃ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও
সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন
ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’
(মুসনাদ আহমদ: ৫৬৬৭; বাইহাকী: ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান: ১৯৭৮৩)।
একাদশ আমলঃ আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করাঃ
সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি
দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার
ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
“আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা
শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও,
নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন”। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত :
০৭)।
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত
বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।
দ্বাদশ আমলঃ বিয়ে করাঃ
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের
প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও
বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের
মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো
তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
“আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ
ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত
করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। (সূরা আন-নূর,
আয়াত: ৩২)।
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন,
ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ
বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’
ত্রয়োদশ আমল: অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করাঃ
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর
কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি
অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক,
আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব”। (সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত:
৬০)।
এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন
আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়।
যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি
এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে,
‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি
সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই
সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল
দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে
যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে
দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর
শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো
হবে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি অভাব-অনটনে পড়ে তা মানুষের নিকট উপস্থাপন করে
তাহলে তার অভাব-অনটন দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি অভাব-অনটনে পড়ে তা আল্লাহ তা’আলার
নিকট উপস্থাপন করে তবে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে দ্রুত অথবা বিলম্বে রিযিক দান করেন।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩২৬, সহীহ আবূ দাউদ ১৪৫২,
সহীহাহ ২৭৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুবাইর ইবনু ‘আওয়াম (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ রশি নিয়ে তার পিঠে কাঠের
বোঝা বয়ে আনা এবং তা বিক্রি করা, ফলে আল্লাহ তার চেহারাকে (যাচ্ঞা করার লাঞ্ছনা হতে)
রক্ষা করেন, তা মানুষের কাছে সওয়াল করার চেয়ে উত্তম, চাই তারা দিক বা না দিক। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৭১, ২০৭৫, ২৩৭৩) (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ১৩৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
চতুর্দশ আমলঃ গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর
কাজ করে যাওয়াঃ
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা
এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো
থেকে অনুমান করা যায়।
তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে
চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার
ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ।
অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায় “। (সূরা আল-আ‘লা, আয়াত:
১৬-১৭)।
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান
লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন:
হাদিসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ইসলাম কুবুল করেছে, এবং
তার নিকট নূন্যতম রিযিক রয়েছে এবং তাকে আল্লাহ তা’আলা অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক দিয়েছেন,
সে-ই সফলকাম হলো। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৪৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩১৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৫৪, সুনান ইবনু মা-জাহ ৪১৩৮,
সহীহাহ ১২৯, তাখরীজুল মুশকিলাহ ১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন
আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক
দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন। আমীন।
অভাব-অনটন, বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবতে এলে করণীয়
(১) আল্লাহর উপর ভরসা করাঃ
বিপদাপদ, কষ্ট-ক্লেশ যাই আসুক না কেন সর্বদা
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। কেননা এসব কিছু মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আল্লাহ বলেন,
‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে
না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’। (সুরা তওবা ৯/৫১)।
(২) আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকাঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ
সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার
কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন।
তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, সহীহাহ ১২২০, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৩) ধৈর্যধারণ করাঃ
হাদ্দাব ইবনু খালিদ আল আযদী ও শাইবান ইবনু
ফাররূখ (রহঃ).....সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ
এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা
বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২২৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের প্রতিদান সম্পর্কে
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরষ্কার পাবে অপরিমিতভাবে’। (সুরা যুমার ৩৯/১০)।
নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না
(তাই বেশী বেশী আমল করতে
হবে)
নেক
আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা
করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন”। (সূরা
রা’দ, আয়াত ৩৯)।
সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের
লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২১৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
ভাগ্য পরিবর্তনশীল এটাই সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন ও নিজের প্রচেষ্টায় নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব। ভাগ্য যদি পরিবর্তনশীলই
না হবে তাহলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ তওবা ও ইস্তেগফারমূলক কিংবা আরো অসংখ্য দোয়া কেনো
নাযিল করে সেগুলো সালাতের মধ্যে ও সালাতের বাহিরে আমল করতে বলা হলো। কদর রাতে আল্লাহ
তায়ালা সুরা আল কদর নাযিল করা হয়েছে। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতারা
ও রূহ অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। (সুরা আল কদর
৯৭, আয়াত ৪)।
এই রাতে সকল মুসলমান নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে
ইবাদত বন্দেগী, জিকির ও বিভিন্ন আমল বা দোয়া পাঠ করে থাকে। অতএব ভাগ্য পরিবর্তনশীল।
নিজের কৃতকর্ম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা আমলের মাধ্যমে নিজের
ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।
আপনি যে আমল করছেন, সব সময় জিকির করছেন বা
দোয়া পাঠ করছেন এটাও আপনার প্রচেষ্টা।
নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত
করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া
দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৬৯, ৩২৪৭, ৩৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৭৯,
১৭৮৮৮, ১৭৯১৯, ১৭৯৬৪, আল-আহকাম ১৯৪, রাওদুন নাদীর ৮৮৮, মিশকাত ২৩৩০, সহীহ আবু দাউদ
১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রিজিক বৃদ্ধির অন্যান্য আমলসমূহ
(১) “আল্লাহুম্মা আকছির মালি ওয়া ওয়ালাদি ওয়া বারিক লি ফি-মা আ’ত্বাইতানি“।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ধন-সম্পদ দিন, সন্তান-সন্ততিতে
বরকত দিন এবং আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।
(বিঃদ্রঃ দোয়াটি সিজদায়, তাশাহুদ বৈঠকে, ফরজ
সালাতে সালাম ফিরানোর পর অন্যান্য দোয়া পাঠ শেষে ১০ বার, এ ছাড়া সকাল ও বিকেলেও ১০
বার করে পাঠ করতে পারেন)।
মূল হাদিসঃ
মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....উম্মু
সুলায়ম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার খাদিম আনাসের জন্য
আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি দুয়া করলেন, اللَّهُمَّ
أَكْثِرْ
مَالَهُ
وَوَلَدَهُ
وَبَارِكْ
لَهُ
فِيمَا
أَعْطَيْتَهُ
"হে আল্লাহ, তাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে বারাকাত দিন এবং আপনি তাকে যা দান
করেছেন তাতেও বারাকাত দিন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬২৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৮২, ৬৩৩৪,
৬৩৪৪, ৬৩৭৮, ৬৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৬১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২) “আল্লাহুম্মাগফিরলী যানবী, ওয়া ওয়াসসি‘
লী ফী দা-রী, ওয়া বা-রিক্লী ফী রিযক্বী”
অর্থ:
হে আল্লাহ, আমার গুনাগ ক্ষমা করে দিন। আমার ঘর-বাড়িতে প্রশস্ততা দান করুন। আমার রিজিকে
বরকত-প্রাচুর্য দিন।
মূল হাদিসঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি
বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আজ রাতে আমি আপনার দু’আ শুনেছি। আমি তা হতে যা মনে রাখতে পেরেছি
তা এই যে, আপনি বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও, আমার ঘর প্রশস্ত কর এবং
তুমি আমাকে যে রিযিক দিয়েছ তাতে বারকাত দান কর”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, এ দু’আ কিছু বাদ দিয়েছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০০, রাওয়ূন নাযীর ১১৬৭, গায়াতুল
মারাম ১১২, সুনানে নাসায়ি ৯৯০৮; কানজুল উম্মাল ৫০৮০; মুসনাদে আবি ইয়ালা ৭২৭৩; মুসান্নাফ
ইবনে আবি শাইবা ২৯৩৯১, নববী, ইবনুল কবাইয়িম, ইবনুল মুলাক্কিন, হুসাইন সালীম আসাদ ও
শু‘আইব আরনাঊত্ব প্রমুখ মুহাক্কিকগণ
এর সনদকে ছহীহ অথবা হাসান বলেছেন (নববী, আল-আযকার ২৯ পৃ; ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আদ ২/৩৫৪; দারেমী হা/৭২৭২; আহমাদ হা/১৯৫৮৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
(৩) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবু মূসা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে ছিলাম। তখন মানুষেরা উচ্চঃস্বরে তাকবীর পাঠ করতেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের জীবনের উপর সদয় হও। কেননা তোমরা তো
কোন বধির অথবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছে না। নিশ্চয়ই তোমরা ডাকছো সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী
সত্তাকে যিনি তোমাদের সাথেই আছেন। আবু মূসা (রাযিঃ) বলেন, আমি তার পিছে ছিলাম। তখন
আমি বলছিলাম, আল্লাহর সহযোগিতা ছাড়া কোন ভাল কাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এবং মন্দ কর্ম
থেকে ফিরে আসার সামর্থ্য নেই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে
আবদুল্লাহ ইবনু কায়স আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্ত ধনসমূহের মধ্যে কোন একটি গুপ্তধনের
কথা জানিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি বললেন,
“লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'”
সহযোগিতা ছাড়া কারো (ভাল কর্মের দিকে) এগিয়ে
যাওয়া এবং (খারাপ কর্ম থেকে) ফিরে আসার সামর্থ্য নেই’। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭০,
তিরমিযী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯০৮২, ১৯১০২, ১৯১০৮, ১৯১৫১,
১৯২৪৬, ১৯২৫৬, রিয়াজুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ৩৬/১৪৫১, রাওদুন নাদীর ১০৪১। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পাঠ করতেনঃ
"রব্বনা- আ-তিনা- ফিদ্দুনইয়া-
হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্ না-র"।
অর্থাৎ- হে আমাদের রব! আমাদের পার্থিব জীবনে
কল্যাণ দান করো, আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আমাদের বাঁচাও।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ ও আবু কুরায়ব (রহঃ)...আয়িশাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ
পাঠের মাধ্যমে দুআ করতেন,
"আল্ল-হুম্মা ফাইন্নী আউযুবিকা
মিন্ ফিতনাতিন না-রি ওয়া ‘আযা-বিন্ না-রি ওয়া ফিতনাতিল কবরি ওয়া ‘আযা-বিল্ কবরি
ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল গিনা ওয়ামিন শার্রি ফিতনাতিল ফাক্রি ওয়া আউযুবিকা মিন্ শাররি
ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, আল্ল-হুম্মাগসিল খতা-ইয়া-ইয়া বিমা-য়িস্ সালজি ওয়াল
বারাদ, ওয়ানক্কি কলবী মিনাল খতা-ইয়া- কামানাক্কাইতাস্ সাওবাল আবইয়াযা মিনাদ দানাস
ওয়া বা-ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খতা- ইয়া-ইয়া কামা-বা-’আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব,
আল্ল-হুম্মা ফা-ইন্নী আউযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা’সামি ওয়াল মাগ্রাম।"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের
ফিতনাহ থেকে আশ্রয় চাই, জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই, কবরের ফিতনাহ, কবর শাস্তি
ও ধন-সম্পদের ফিতনাহ এবং অসচ্ছলতার ফিতনার খারাবী হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমি আপনার
নিকট মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার বিভ্রান্তির অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ আমার
গুনাহসমূহ বরফ ও কুয়াশার স্নিগ্ধ-শীতল পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিন। আমার
অন্তর পবিত্র করে দিন যেভাবে আপনি সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করে দেন। আমি ও আমার
গুনাহসমূহের মাঝে দূরত্ব করে দিন যেমন আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন।
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অলসতা, বার্ধক্য, গুনাহ ও ধার-কৰ্জ হতে আশ্রয় চাই।"
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ).....আনাস ইবনু
মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলতেনঃ
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউয়ুবিকা
মিনাল আজ্যি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি ওয়া আউয়ুবিকা মিন
আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-ত"।
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা,
অলসতা, কাপুরুষতা, বার্ধক্য, বখিলতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার নিকট আরও আশ্রয়
চাচ্ছি কবরের শাস্তি, জীবন ও মরণের ফিতনার খারাবী থেকে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) আবু
বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ পাঠ করতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল
বুখ্লি ওয়াল কাসালি ওয়া আরযালিল উমুরি ওয়া আযা-বিল কবরি ওয়া ফিতনাতিল মাহইয়া-
ওয়াল মামা-ত”।
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে
বখিলতা, অলসতা, নিকৃষ্ট জীবন-যাপন, কবরের শাস্তি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে আশ্রয়
চাই।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৮) ইবরাহীম ইবনু দীনার (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা আসলিহলী দীনিয়াল্লিয়ী
হুওয়া ইসমাতু আমরী ওয়া আস্লিহলী দুন্ইয়াল্লাতী ফীহা মা’আ-শী ওয়া আসলিহলী আ-খিরতিল্লাতী
ফীহা মাআ-দী ওয়াজ আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতান্ লী ফী কুল্লি খইরি ওয়াজ আলিল মাওতা
রা-হাতান মিন্ কুল্লি শাররিন"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আপনি আমার দীন পরিশুদ্ধ
করে দিন, যে দীনই আমার নিরাপত্তা। আপনি শুদ্ধ করে দিন আমার দুনিয়াকে, যেথায় আমার
জীবনোপকরণ রয়েছে। আপনি সংশোধন করে দিন আমার আখিরাতকে, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন করতে
হবে। আপনি আমার আয়ুষ্কালকে বৃদ্ধি করে দিন প্রত্যেকটি ভালো কর্মের জন্য এবং আপনি আমার
মরণকে বিশ্রামাগার বানিয়ে দিন সব প্রকার খারাবী হতে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ)....আবদুল্লাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত। তিনি এ বলে দুআ করতেন,
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা
ওয়াত তুকা ওয়াল “আফা-ফা ওয়াল গিনা”
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পথনির্দেশ,
আল্লাহভীতি, চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও সচ্ছলতার জন্য দুআ করছি।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী
আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি।
আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা-
ওয়া মাওলাহা- আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ
ওয়া মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।” (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয়
চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ!
আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক
ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে
না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া
হতে যা কবুল হয় না।
মূল হাদিসঃ
যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল
‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কবরি, ‘আল্ল-হুম্মা
আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্তা ওয়ালিয়্যুহা-
ওয়ামাও লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘ইল্মিন লা- ইয়ানফা‘উ ওয়ামিন্ কলবিন
লা- ইয়াখশা‘উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা‘উ ওয়ামিন্ দা‘ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা,
কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ‘আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে
সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব।
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে
আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই
যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে, যে দু‘আ কবূল করা হয় না।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৪, সহীহাহ্ ৪০০৫, সহীহ আল জামি
১২৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল
ফাক্বরি ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা
মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”। (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা
ও অপমান হতে আশ্রয় চাই, আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার
করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
মূল হাদিসঃ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী
হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫),
হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২)
আনাস (রাঃ) বলেন, নবি সা: বলতেন-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল
হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি
ওয়া গলাবাতির্ রিজাল’’। (৩ বার)।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয়
নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের
ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
মূল হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল
হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি
ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’ ।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ
১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন
জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বাই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি
অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের
আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
মূল হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের
অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন
ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে,
জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
মূল হাদিসঃ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা,
আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
(১৫)
“আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী
সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা
ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার
শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা
দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে
আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
(১৬) আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ)
এ দোয়া পড়তেন-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন
যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ
সাখাতিক।” (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ
এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।
মূল হাদিসঃ
উবাইদুল্লাহ
ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে,
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা
ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি
তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন
হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব
ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৭) ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান
না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’।
(৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান,
কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।
মূল হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান
না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি পাঠ করতেন,
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল
জূ-’, ফাইন্নাহু বি’ছায্যাজী’। অ আঊযু বিকা মিনাল খিয়ানাহ, ফাইন্নাহা বি’ছাতিল বিতা-নাহ।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে
পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা নিকৃষ্ট শয়ন-সাথী। আর আমি খেয়ানত থেকেও পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা
নিকৃষ্ট সহচর। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ১৫৪৭, রিয়াযুস
স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৪৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৮৫, নাসায়ী ৫৪৬৮, ৫৪৬৯।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৯) (ক)
আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ)...মুসআব ইবনু
সা’দ (রাযিঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক গ্রাম্য লোক এসে বলল, আমাকে একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি
নিয়মিত পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলো
"লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু
লা-শারীকা লাহু আল্ল-হু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাসীরা সুবহানাল্লা-হি
রব্বিল আ-লামীনা লা-হাওলা ওয়ালা- কুত্ত্বওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল আযীযিল হাকীম"।
অর্থাৎ-
"আল্লাহ ভিন্ন কোন মা’বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তার কোন অংশীদার নেই, আল্লাহ মহান,
সবচেয়ে মহান, আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্রতা
ঘোষণা করছি। পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ভাল কাজ করার এবং খারাপ
কাজ হতে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই।" সে বলল, এসব তো আমার রবের জন্য। আমার জন্যে
কি? তিনি বললেন, বলো,
‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী অহদিনী
অরযুক্বনী।’
অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৬, রিয়াজুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী ৭/১৪২২,
আহমাদ ১৫৬৪, ১৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত
দোয়াটি দুই সিজদার মাঝখানে পড়তে হয়।
(খ) সাঈদ ইবনু আযহার আল ওয়াসিতী (রহঃ)....আবু
মালিক আল আশজাঈ এর পিতার সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা
গ্রহণ করত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত আদায়ের শিক্ষা
দিতেন। তারপর তিনি তাকে এ কালিমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেন,
"আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী
ওয়াহ্দিনী ওয়া’আ-ফিনী ওয়ারযুকনী।"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার জীবিকা
উপকরণ দান করুন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত দোয়াটি দুই সিজদার মাঝখানে পড়তে হয়।
মনে রাখবেন, দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন বা রিযিক
দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন
বা রিযিক। হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ তার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
হালাল খাবার, বৈধ উপার্জন ও পবিত্র জীবন মুমিনের
জন্য অপরিহার্য। এ ছাড়া তার জীবনের কোনো আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ জন্য
পবিত্র কোরআনে বারবার হালাল আহার, অবৈধ উপার্জন ত্যাগ ও জীবনে পূত-পবিত্রতা অর্জনের
নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে
প্রদান করেছি তা হতে আহার করো।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত:
৫৭)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে
দিয়েছি, তা হতে আহার করো এবং তাতে সীমা লঙ্ঘন কোরো না।’ (সুরা:
ত্বহা, আয়াত: ৮১)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জানিয়েছেন,
হারাম খাবার, পানীয় ও বস্ত্র অর্থাৎ হারাম
উপার্জনে যাপিত জীবন দোয়া কবুলের অন্তরায়। যে ব্যক্তি হারাম পরিহার করতে পারে না, তার
দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। বিপরীতে যার জীবিকা পবিত্র, তার দোয়া কবুল হওয়ার কথা
জানিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ (রা.)-কে বলেন, ‘হে সাদ! তোমার খাদ্য পবিত্র করো,
তাহলে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত (যার দোয়া কবুল হয়) হতে পারবে।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস: ৬৪৯৫)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন।
আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ
মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও
এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)।
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা
স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা
আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আততিরমিযী
২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে যে, কেউ পরওয়া করবে না কি উপায়ে মাল লাভ করল; হারাম
না হালাল উপায়ে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩, নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব
১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য
সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
যে চৌদ্দটি আমলে রিজিক বাড়ে
ReplyDelete