বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
ঘুষখোরদের ভয়াবহ পরিণতি
ঘুষখোরের কোনো ইবাদত তথা নামাজ, রোজা, হজ্জ,
যাকাত ও দানসহ যেকোনো আমল আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে
হালাল রিজিক। যেহেতু ঘুষখোরেরা হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করে থাকে তাই তাদের আমল গ্রহণযোগ্য
নয়। ঘুষখোরেরা ঘুষের টাকা দিয়ে অন্ন, বস্ত্র, বাড়ি, গাড়ি ক্রয়সহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার
খরচ বহন করে থাকে। তথা ঘুষখোর ও তার পরিবারের সকলেই ঘুষের টাকায় পরিচালিত হয়ে থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় যে অঞ্চলে ঘুষ বেশী সেই অঞ্চলে যেতে এই ঘুষখোর তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে
মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে থাকে। এই ঘুষখোরকে দেখা যায় সে পাঁছ ওয়াক্ত নামাজও পড়ে আবার
ঘুষের টাকায় হজ্জ করে। প্রতি বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে দান খয়রাতও করে।
ঘুষ কাকে বলেঃ
অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের একটি পন্থা হলো
ঘুষ। ঘুষের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার
জন্য যা কিছু প্রদান করা হয়, তাকে ঘুষ বা উৎকোচ বলা হয়। কারো কারো মতে, অন্যায়ভাবে
কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা বা বাতিল করার নিমিত্তে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অর্থ বা অন্য কিছু
প্রদান করাকে ঘুষ বলে। কেউ কেউ বলেন, ঘুষ হচ্ছে স্বাভাবিক ও বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থের
ওপর অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা। ঘুষ কখনো দিতে বাধ্য করা হয়। আবার কখনো নিজ
উদ্যোগে প্রদান করা হয়।
ঘুষের বিধান
ঘুষ বা উৎকোচ আসে হাদিয়া বা উপহারের রূপ ধারণ
করে। অথচ ইসলামে হাদিয়া জায়েজ, কিন্তু ঘুষ হারাম।
হাদিয়া দ্বারা পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসা
বৃদ্ধি পায়, আর ঘুষ দ্বারা ভালোবাসা নষ্ট হয়। ঘুষ ও হাদিয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো, হাদিয়ায়
আর্থিক কোনো লাভের উদ্দেশ্য থাকে না; কিন্তু ঘুষে আর্থিক লাভের আশা থাকে। দায়িত্বে
নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে হাদিয়ার আকারে কোনো কিছু প্রদান করাও ঘুষের পর্যায়ভুক্ত।
আবূ হুমায়দ সা’ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুতাবিয়্যা নামে এক লোককে বানী
সুলায়ম গোত্রের যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করলেন। যখন সে ফিরে আসল তখন তিনি তার নিকট হতে
হিসাব-নিকাশ নিলেন। সে বলল, এগুলো আপনাদের মাল, আর এগুলো (আমাকে দেয়া) হাদিয়া। তখন
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে
তোমার মা-বাবার ঘরে বসে থাকলে না কেন? সেখানেই তোমার কাছে হাদিয়া পৌঁছে যেত। এরপর তিনি
আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করার পর তিনি বললেনঃ আমি
তোমাদের কাউকে এমন কোন কাজে নিয়োগ করি, যার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহ্ আমাকে মনোনীত
করেছেন। কিন্তু সে কাজ করে এসে বলে, এ হল তোমাদের মাল আর এ হলো আমাকে দেয়া হাদিয়া।
তাহলে সে কেন তার মা-বাবার ঘরেই বসে থাকল না,
সেখানে এমনিতেই তার কাছে তার হাদিয়া পৌঁছে যেত? আল্লাহর কসম! তোমরা যে কেউ অন্যায় পন্থায়
কোন কিছু গ্রহণ করবে, সে কিয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। আমি
তোমাদের কাউকে ভালভাবেই চিনব যে, সে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে উট বহন করে; আর উট আওয়াজ
দিতে থাকবে। অথবা গাভী বহন করে, আর সেটা ডাকতে থাকবে। অথবা বক্রী বহন করে, আর সেটা
ডাকতে থাকবে। তারপর তিনি আপন হাত দু’টি এতদূর উত্তোলন করলেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা
দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমার দু’চোখ সে অবস্থা
দেখেছে এবং আমার কান শুনেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৯৭৯, সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ১৭০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৮৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উক্ত হাদিস হতে বুঝা যায় যে, যতো সুন্দর নামেই
এর নামকরণ করা হৌক কিংবা জনগণ খুশি হয়ে প্রদান করুক অথবা কাজের বিনিময় হিসাবে দিয়ে
থাকুক, অর্পিত দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে বেতন-ভাতা বাদে অন্যের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত
অর্থ গ্রহণ করা হয় তার সবই ঘুষ এবং অন্যায়। এতে একপক্ষ অধিক লাভবান হয় এবং অন্যপক্ষ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ইসলাম ও সাধারণ বিবেক কোনটিই সমর্থন করে না। আপাতদৃষ্টিতে ঘুষকে
একটি মাত্র অপরাধ মনে করা হলেও বস্তুত এটি বিভিন্ন পথ ও পন্থায় অসংখ্য অপরাধের দায়ে
ঘুষখোরকে অভিযুক্ত করে কীভাবে তার ধ্বংস সুনিশ্চিত করে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে
সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
(১) যুলুমের দায়ে অভিযুক্তঃ
ঘুষের মাধ্যমে অন্যের প্রতি আর্থিক ও মানসিক
যুলুম করা হয় বলে ঘুষখোররা যালেম হিসাবে অপরাধী। যুলুমের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘‘আমি যালিমদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত রেখেছি।
যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর
ন্যায় পানি। যা তাদের মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দিবে। এটা কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং সে জাহান্নাম
কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়’’। (সুরা কাহ্ফ: ২৯)।
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন: “অত্যাচারীরা শীঘ্রই
জানবে কোথায় তাদের গন্তব্যস্থল!’’ (সুরা শু‘আরা: ২২৭)।
কেউ কেউ কোন যালিমকে অনায়াসে মানুষের উপর যুলুম
করতে দেখলে এ কথা ভাবে যে, হয়তো বা সে ছাড় পেয়ে গেলো। তাকে আর কোন শাস্তিই দেয়া হবে
না। না, ব্যাপারটা কখনোই এমন হতে পারে না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে কিয়ামতের দিনের
কঠিন শাস্তির অপেক্ষায় রেখেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘‘কাজেই মানুষকে সতর্ক
কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর ‘আযাব আসবে। যারা জুলুম করেছিল তারা তখন বলবে,
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব
আর রাসূলদের কথা মেনে চলব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে,
তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না? অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের
প্রতি জুলুম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন
ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তারা যে চক্রান্ত
করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহ্র দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও
তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল যে, তাতে পর্বতও টলে যেত। (অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না
কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে দেয়া ওয়া‘দা খেলাপ করবেন, আল্লাহ
মহা প্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’’ (সুরা ইবরাহীমঃ
৪২-৪৭)।
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ
করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি
ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের
প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে
নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত
করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন,
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....হিশাম ইবনু
হাকীম ইবনু হিযাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি একবার সিরিয়ায় কয়েকজন মানুষের
কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদেরকে উত্তপ্ত সূৰ্যতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তাদের
মাথার উপর গরম তেল ঢালা হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এটা কী? তাকে বলা হলো যে, তাদেরকে
খাযনার জন্যে সাজা দেয়া হচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হুশিয়ার! আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকেদের
সাজা দিবেন, যারা এ জগতে মানুষকে (অন্যায়) সাজা দেয়। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১৯,
ইসলামিক সেন্টার ৬৪৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা
জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে
পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরাঃ শুআরা,
আয়াত: ২২৭)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো
সফলকাম হয় না।’ (সুরাঃ আনআম, আয়াত: ৫৭)।
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি
অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের
দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুলুম এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত মারাত্মক
আর কোন গুনাহ নাই, যার শাস্তি আল্লাহ ত্বরিতে দুনিয়াতে দেন এবং আখেরাতের জন্যও জমা
রাখেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২১১, সুনান আততিরমিযী ২৫১১,
সুনান আবূ দাউদ ৪৯০২, সহীহাহ ৯১৭, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২২৮, সুনান ইব্নু মাজাহ্ ৪২৮৬;
ইব্নু হিববান ৪৫৫, ৪৫৬ বায্যার, হাদীস ৩৬৯৩; আহমাদ ২০৩৯০, ২০৩৯৬, ২০৪১৪, ১৯৮৬১, ১৯৮৮৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার
মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর
এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে
বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরাঃ
রুম, আয়াত: ৪১)।
রাসুল সাঃ বলেন,
আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ)....আবূ মাসউদ বাদরী
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক ক্রীতদাসকে চাবুক দিয়ে প্রহার করছিলাম।
হঠাৎ আমার পিছনে থেকে একটি শব্দ শোনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো! রাগের কারণে আমি
শব্দটি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি আমার কাছাকাছি এলেন তখন
দেখতে পেলাম, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তিনি বলছেনঃ হে আবূ
মাসউদ! তুমি জেনে রেখো, হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো! বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি চাবুকটি
আমার হাত থেকে ফেলে দিলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো যে, এ গোলামের
উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে তোমার উপর আল্লাহ তা’আলা অধিক ক্ষমতাবান। বর্ণনাকারী বলেন,
আমি বললাম, এরপর কখনও কোন কৃতদাসকে আমি প্রহার করবো না। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৬০,
ইসলামিক সেন্টার ৪১৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....হিশাম
ইবনু হাকীম ইবনু হিযাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি একবার সিরিয়ায় কয়েকজন
মানুষের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদেরকে উত্তপ্ত সূৰ্যতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং
তাদের মাথার উপর গরম তেল ঢালা হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এটা কী? তাকে বলা হলো যে, তাদেরকে
খাযনার জন্যে সাজা দেয়া হচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হুশিয়ার! আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকেদের
সাজা দিবেন, যারা এ জগতে মানুষকে (অন্যায়) সাজা দেয়। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১৯,
ইসলামিক সেন্টার ৬৪৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কারোর মধ্যে বিনয় ও নম্রতা না থাকলেই সে কারোর
উপর উদ্যত ও আক্রমণাত্মক হতে পারে। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা সকলকে বিনয়ী ও নম্র হতে
আদেশ করেন।
আবু আম্মার হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ)....বানী
মুজাশি’ এর ভাই ইয়ায ইবনু হিমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ প্রদানকালে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ
তা’আলা আমাকে আদেশ দিয়েছেন। তারপর তিনি কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে হিশাম এর সানাদে বর্ণিত
হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে এতে এ কথা বর্ধিত উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা
আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল করেছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কারো উপর কেউ যেন গর্ব না করে
এবং কারো প্রতি যেন কেউ যুলম না করে। এ হাদীসে এটাও রয়েছে যে, তারা তোমাদের এমন অনুগামী
যে, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ সন্ধান করে না।
কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে
আবু আবদুল্লাহ! এমনটি কি হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। জাহিলিয়াতের যুগে আমি তাদেরকে
পেয়েছি। আর এরূপ এক গোত্রে কোন এক লোক ছিল। সে বকর চরাতো। দাসী ছাড়া সেখানে তার কাছে
কেউ যেত না। তার সাথেই সে সহবাস করত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৭১০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৪৬, ইসলামিক সেন্টার
৭০০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার
বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্য যুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মধ্যেও সেটিকে হারাম
গণ্য করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম কর না’। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ঘুষখোর হারাম ভক্ষণকারী হিসাবে শাস্তিযোগ্যঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না”।
(সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন,
খাওলাতাল আনসারিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিছু সংখ্যক মানুষ আল্লাহ
তা’আলার সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে থাকে। কিয়ামত দিবসে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন
নির্ধারিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৬, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১১৮, আহমাদ ২৭৩১৮, সহীহ আল জামি‘ ২০৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৮৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন, আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য
দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৩) আমানতের খিয়ানতকারীঃ রাসূল
(ছাঃ) বলেন,
বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি
এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে,
তবে তা হলো খিয়ানাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৮,
সুনান আবূ দাঊদ ২৯৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬০২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭৭৯, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্
২৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমানতের খিয়ানতকারীদের
পসন্দ করেন না” (সুরা আনফাল ৮/৫৮)।
আমানতের খিয়ানত মুনাফেকীর একটি অন্যতম আলামত’।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ ১. যখন কথা বলে
মিথ্যা বলে; ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩, ২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর মুনাফিকের শাস্তি জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে। আর তুমি তাদের কোন সাহায্যকারী
পাবে না’। (সুরা নিসা ৪/১৪৫)।
(৪) ঘুষখোররা সূদের ন্যায় মারাত্মক গোনাহের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দন্ডনীয়ঃ
রাসূল (ছাঃ) বলেন, আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক
বা বিচারকের নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার)
পাঠায় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট
দরজায় প্রবেশ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, সুনান
আবূ দাঊদ ৩৫৪১, সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
তিনি আরো বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহের সত্তর ভাগের ক্ষুদ্রতম ভাগ হলো নিজের মায়ের সাথে যিনা করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮২৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৫১৩৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
যিনি মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জেনে শুনে সুদের কেবলমাত্র একটি রোপ্যমুদ্রা
খায়, তার গুনাহ ছত্রিশবার যিনার চেয়ে বেশি হয়।
আর বায়হাক্বী ’’শু’আবুল ঈমান’’-এ হাদীসটি ইবনু
’আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। এতে অতিরিক্ত এ কথাও আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শরীরের গোশ্ত/মাংস হারাম রিযক্বে গঠিত তার জন্য জাহান্নামই
সর্বোত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮২৫, আহমাদ ২১৯৫৭,
দারাকুত্বনী ২৮৪৩, শু‘আবুল ঈমান ৫১৩০)।
(৫) ঘুষখোর যালিমরা নিরীহ মযলূমদের বদ্দোআ ও প্রতিশোধের শিকারঃ
মযলূমের বদদোআ ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে
পাঠাবার সময় বললেন, মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ
তাদেরকে এ লক্ষ্যে দীনের প্রতি আহবান করবে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে
এই ঘোষণা দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন।
তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন।
তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ
হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত
থাকবে, মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার
মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭২,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৯৬,২৪৪৮, ১৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২, মুসলিম ১৯, সুনান
আবূ দাঊদ ১৫৮৪, সুনান আত্ তিরমিযী ৬২৫, সুনান আননাসায়ী ২৫২২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৭৮৩,
সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২৭৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৫৭,
ইরওয়া ৭৮২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২২৯৮, দারেমী ১৬১৪, সহীহ আবী দাউদ ১৪১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৪০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অর্থাৎ মযলূমের দোআ ব্যর্থ হয় না। তাছাড়া ক্বিয়ামতের
দিন অন্যের সম্পদ ভক্ষণকারী যালিমের নিকট থেকে তার নেকী হতে মযলূমের বদলা পরিশোধ করা
হবে। নেকী শেষ হয়ে গেলে মযলূমের পাপ যালিমের উপর চাঁপানো হবে। পরিশেষে তাকে নিঃস্ব
অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। রাছুল সাঃ বলেন,
(ক)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে
যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া
থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে
যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে
এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার
পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ
তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিসকাতুল মাশাবিহ মিসকাত ৫১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫,
সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ
ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল
আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক
সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মান সহিহ।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের
হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায়
করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৮, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮২, সুনান আততিরমিযী ২৪২০, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ১৫৮৮, সহীহুল জামি‘ ৫০৬২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬০৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৩৬,
আহমাদ ৭২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা ১১৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৪,
ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের
মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম
ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে
জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ,
নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের
আবাসস্থল চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৪০, ৬৫৩৫, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪০, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অত্যাচারঘটিত;
যেমন- মানহানি বা অন্য কোন বিষয়ের কোন হক থাকে, তবে সে যেন সেদিনের পূর্বেই তার কাছ
থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। যদি তার নেক আমল
থাকে, তাহলে অত্যাচারিতের হক অনুসারে তার কাছ থেকে নেক ’আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি
তার নেক না থাকে, তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে তার ওপর চাপানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৪৯, ৬৫৩৪, সহীহুল জামি ৬৫১১, সহীহ আত্ তারগীব ২২২২, আহমাদ ১০৫৭৩, সহীহ ইবনু হিব্বান
৭৩৬১, শু‘আবুল ঈমান ৭৪৭০, আর মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৫, আল মু‘জামুস্ সগীর
লিত্ব ত্ববারানী ৩৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৭৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) ঘুষ লেনদেনকারীরা রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক অভিশপ্তঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারী
উভয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৭৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৩, সুনান আততিরমিযী ১৩৩৭, আহমাদ
৬৫৩২, ইরওয়া ২৬২০, সহীহ আল জামি ৫১১৪, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ২২১১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) ঘুষ ক্বিয়ামতের দিন বিপদের বোঝা হয়ে ঘুষখোরের কাঁধেই চেঁপে বসবেঃ
আবূ হুমায়দ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আযদ গোত্রের ইবনু উতবিয়া নামের এক লোককে সাদাকা
সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে
হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তার বাবার
ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না। তখন সে দেখত পেত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি
দেয় না? যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সাদাকার মাল হতে স্বল্প পরিমাণও যে
আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কিয়ামত দিবসে উপস্থিত হবে। সেটা উট হলে তার আওয়াজ করবে,
আর গাভী হলে হাম্বা হাম্বা রব করবে আর বকরী হলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে থাকবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁর দু’হাত এই পরিমাণ উঠালেন যে, আমরা তাঁর দুই বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম।
তিনি তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি। হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৯৭, ৯২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৪০৮., ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) ঘুষখোরদের ইবাদত, দান-খয়রাত তথা কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে নাঃ
হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্থ বা সম্পদ উপার্জনের
মাধ্যমগুলো যেমন সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাই, ওজনে কম দেয়া, মিথ্যে কথা
বলে পণ্য বিক্রি করা, নারী পাচার করা, যিনার মূল্য, কুকুরের মূল্য ইত্যাদি ইত্যাদি
এর সাথে যারা জড়িত তারা জান্নাতে যাবে না।
হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত।
রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।
প্রথমতঃ
ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ তা
প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয়
ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক)
আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল
ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম
ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র
জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ
এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র
হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো
বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ
ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ
কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার
পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩, নাসায়ী
৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ)
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন
বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত
নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র
থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই
রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার
পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা
সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে
নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে
গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে
যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক) “হে
মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো
না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা আলবাক্বারাহ ১৬৮)।
(খ)
“হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ
ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (সুরা আলবাক্বারাহ ১৭২)।
(গ) “হে
রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে
আমি অবগত”। (সুরা মুমিনূন ৫১)।
অর্থাৎ হারাম ভক্ষণ করায় তার প্রার্থনা কবুল
হবে না যদিও মুসাফিরের প্রার্থনা সাধারণত কবুল হয়ে থাকে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে
কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও সন্তানের জন্য পিতার দোয়া। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬২, সুনান আততিরমিযী ১৯০৫, ৩৪৪৮, ১৫৩৬,
সুনান আবূদাঊদ ১৫৩৬, আহমাদ ৭৪৫৮, ৮৩৭৫, ৯৮৪০, ১০৩৩০, ১০৩৯২, সহীহাহ ৫৯৬, রাওদুন নাদীর
৫১০, সহীহ আবু দাউদ ১৩৭৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৯) অন্যের জিনিস নিজের দাবী করলেঃ
ঘুষখোররা ঘুষ নেয়ার পর নিজের টাকা বলে দাবী
করে থাকে। অনেক সময় হাতে নাতে ধরা পড়ার পরেও নিজের টাকা দাবী করে। যারা এরুপ করে তারা
জাহান্নামী।
যুহারর ইবনু হারব (রহ)..আবূ যার (রযিঃ) বলেন
যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি
জেনে শুনে নিজ পিতার পরিবর্তে অন্য কাউকে পিতা বলে, সে কুফুরী করল। আর যে ব্যক্তি এমন
কিছুর দাবী করে যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার আবাসস্থল
বানিয়ে নেয়। আর কেউ কাউকে কাফির বলে ডাকলে বা আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকল, যদি সে তা
না হয় তাহলে এ কুফুরী সম্বোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৯, আহমাদ ২০৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২১, ইসলামিক সেন্টারঃ
১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করলে সে জাহান্নামী
সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করা, ঘুষ, দুর্নীতি করা
এক মারাত্মক কবিরা গুণাহ। যেসব সরকারি চাকরিজীবি এসবের সাথে জড়িত তারা জাহান্নামী।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মালপত্র পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে
মারা গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে জাহান্নামী। সাহাবীগণ অনুসন্ধান
করে তার সঈে একটি কম্বল অথবা একটি আবা পেলো যা সে আত্মসাৎ করেছিল। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৭৪,
আহমাদ ৬৪৫৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৩/৩৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৫৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে গনীমতের উটের পাশে নামায পড়লেন। তারপর
তিনি উটের দেহ থেকে একটি পশম নিয়ে তা তাঁর দু’ আঙ্গুলের মাঝে রেখে বলেনঃ হে লোকসকল!
অবশ্য এটা তোমাদের গনীমতের মাল। সুতা এবং সুঁই, আর যা পরিমাণে তার চেয়ে বেশী এবং যা
তার চেয়ে কম, সবই তোমরা গনীমতের মালের মধ্যে জমা দাও। কেননা গনীমতের মাল চুরি করার
ফলে কিয়ামতের দিন তা চোরের জন্য অপমান ও গ্লানি এবং জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫০, ইরওয়া ৫/৭৪-৭৫, সহীহাহ ৯৮৫)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করার নির্দেশ
রাসুল সাঃ বলেন,
আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পার্থিব জীবনোপকরণ
লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজতর
করা হয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪২, আত-তালীকুর রাগীব
২/৭, সহিহাহ ৮৯৮, ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সাঃ আরো বলেন,
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয়
করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্দ্ধারিত
রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব
হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই
গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনান ইবনু মাজাহ
২১৪৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৭, সহিহাহ ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পরিশেষে আমরা কেবল এতটুকু বলতে চাই, ঘুষ মোটেও
কোন সাধারণ অপরাধ নয়। বরং এটি অনেক বড় বড় অপকর্মের জন্মদাতা, মানবাত্মার সর্বনাশ সাধনকারী
অসংখ্য গোনাহের সমষ্টি এবং জান্নাত লাভের অন্যতম প্রতিবন্ধক। অতএব হে আল্লাহর বিশ্বাসী
বান্দাগণ! অন্তিম সময়ের নিষ্ফল তওবার অপেক্ষায় না থেকে, এখনই তওবা করে ফিরে আসুন সঠিক
পথে, কল্যাণের পথে। আপনার জন্য জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত অপেক্ষা করছে। পার্থিব এ সামান্য
ত্যাগের মাঝেই তো সেই মহাসাফল্য নিশ্চিত। বিবেক জাগ্রত করে সত্যকে উপলব্ধি করে দেখুন,
আত্মিক ঐশ্বর্যের কাছে নোংরা আভিজাত্য কিভাবে পরাজিত। আপনার ঈমানী আলোর উজ্জ্বল ঝলকানিতে
চিরতরে অপসারিত হোক সকল পাপের কালো আঁধার। আল্লাহ আমাদের সূদ-ঘুষ সহ যাবতীয় পাপকাজ
থেকে বিরত থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো:
ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন
------------------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment