Search This Blog

Sunday, April 5, 2020

রাসুল সাঃ এর সহিহ ওযু শিক্ষা ও পবিত্রতা বিষয়ক জাল-জঈফ হাদিসের ভ্রান্ত ধারণা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

রাসুল সাঃ এর সহিহ ওযু শিক্ষা

পবিত্রতা বিষয়ক জাল-জঈফ হাদিসের ভ্রান্ত ধারণা


আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ (ওহে যারা ঈমান এনেছ!) তোমরা যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন ধৌত করে নিবে নিজেদের মুখমণ্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত আর মাস্‌হ করে নিবে নিজেদের মস্তক এবং ধৌত করে নিবে নিজেদের পা গ্রন্থি পর্যন্ত। (সূরা আল-মায়িদাহ্ ৫/৬)।

ছালাতের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল ত্বাহারৎ বা পবিত্রতা অর্জন করা। যা দু’প্রকারের : আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, অর্থাৎ দৈহিক। ‘আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় হৃদয়কে যাবতীয় শিরকী আক্বীদা ও ‘রিয়া’ মুক্ত রাখা এবং আল্লাহর ভালবাসার ঊর্ধ্বে অন্যের ভালবাসাকে হৃদয়ে স্থান না দেওয়া। ‘দৈহিক পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় শারঈ তরীকায় ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’। (সুরা বাক্বারাহ ২/২২২)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, পবিত্রতাবিহীন সালাত কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ), মুসআব ইবনু সা'দ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) অসুস্থ ইবনু আমিরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ইবনু আমির তাকে বললেন, হে ইবনু উমার! আপনি কি আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করেন না? ইবনু উমার বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তাহারাত ব্যতিরেকে সালাত কবুল হয় না। খিয়ানাতের সম্পদ থেকে সদাকাহও কবুল হয় না। আর তুমি তো ছিলে বাসরার শাসনকর্তা। (সহিহ মুসলিম-হাদিস একাডেমী-৪২৩, ৪২৪, ৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩০০, ৩০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুছল্লীর জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী। কেননা এর ফলে বাহ্যিক পবিত্রতা হাছিলের সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়, শয়তানী খেয়াল দূরীভূত হয় এবং মুমিনকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা হাছিলের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম।

ওযূর আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা । পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।

ওযূ করার সঠিক পদ্ধতি

 (১) মুছল্লী প্রথমে মনে মনে ওযূ করার নিয়ত বা সংকল্প করবে।

হাদিসঃ

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২০১, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে।

হাদিসঃ

রাবাহ ইবনু আবদির রহমান ইবনি আবী সুফিয়ান ইবনি হুআইত্বিব হতে তার দাদীর সূত্রে, তিনি তার পিতার (সাঈদ ইবনুযায়িদ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাঈদ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি তার ওযু হয়নি। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭, ৩৯৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৪, দারিমী ৬৯১, ইরওয়াহ ৮১, সহীহ আবূ দাউদ ৯০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতঃপর,

(৩) ডান হাতে পানি নিয়ে।

হাদিসঃ

উসমান ইবনু ’আবদুর রহমান আত-তাইমী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আবূ মুলায়কাহকে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি ’উসমান ইবনু ’আফফান (রাঃ)-কে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে দেখেছি। তিনি (’উসমান) পানি চাইলেন। একটি পাত্রে পানি আনা হলে তিনি প্রথমে উক্ত পাত্র স্বীয় ডান হাতের উপর কাঁত করলেন (অর্থাৎ ডান হাত ধৌত করলেন)। এরপর পাত্রে ডান হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তিনবার ডান হাত ধুলেন, তিনবার বাম হাত ধুলেন, অতঃপর হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ্ করলেন- উভয় কানের ভিতর ও বহিরাংশ একবার করে মাসাহ্ করলেন। তারপর উভয় পা ধৌত করে বললেনঃ অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারীরা কোথায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপই অযু করতে আমি দেখেছি।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে।

হাদিসঃ

উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি এরূপে উযূ করলেন, তিনবার নিজের দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধুলেন, এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন, তারপর ডান পা তিনবার ও বাম পা তিনবার করে ধুলেন। এরপর তিনি ’উসমান (রাঃ) বললেন, আমি যেভাবে উযূ করলাম এভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ করতে দেখেছি। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি আমার ন্যায় উযূ করবে ও মনোযোগ সহকারে দুই রাক্’আত (নফল) সালাত আদায় করবে, তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬-৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সেই সাথে হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে।

হাদিসঃ

লাক্বীত্ব ইবনু সবুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, উযূর অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে ধুবে। আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে এবং উত্তমরূপে নাকে পানি পৌঁছাবে, যদি সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) না হও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৭৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪৪৮,  আহমাদ ১৫৯৪৫-৪৬, নাসায়ী ১১৪,  দারিমী ৭০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আংটি থাকলে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। (ছহীহ বুখারী, তরজমাতুল বাব ‘ওযূ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৯, হা/১৬৫-এর পূর্বের আলোচনা, ইবনু সীরীন আংটির জায়গা ধৌত করতেন- ১/২৮ পৃঃ)।

(৪) ডান হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে এবং নাকে পানি দিবে ও নাক ঝাড়বে।

হাদিসঃ

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি পাত্র হতে দু’হাতে পানি ঢেলে দু’হাত ধৌত করলেন। অতঃপর এক খাবল পানি দিয়ে (মুখ) ধুলেন বা কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। তারপর দু’ হাত কনুই পর্যন্ত দু’-দু’বার ধুলেন এবং মাথার সামনের অংশ এবং পেছনের অংশ মাসেহ করলেন। আর টাখনু পর্যন্ত দু’ পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ এরূপ ছিল।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯১, ১৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১১৯,সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮, আধুনিক প্রকাশনী ১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর,

(৫) কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতীসহ থুৎনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করবে।

হাদিসঃ

হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর,

এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুৎনীর নীচে দিয়ে দাড়ি খিলাল করবে।

হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। তারপর ঐ পানি চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নীচে) লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৫৪), হাকিম (১/১৪৯), ইরওয়াউল গালীল (১/১৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর,

(৬) প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে।

হাদিসঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি উয়ু করলেন এবং তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে অনুরূপ করলেন অর্থাৎ আরেক হাতের সাথে মিলিয়ে মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তাঁর বাঁ হাত ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসহ(মাসেহ) করলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এভাবে উযূ করতে দেখেছি।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর,

(৭) নতুন পানি নিয়ে।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ  করতে দেখেছেন। আর এটাও দেখেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন এমন পানি দিয়ে, যা তাঁর দুই হাতের পানির অবশিষ্টাংশ নয় (অর্থাৎ- নতুন পানি দিয়ে মাসাহ করলেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই হাত দ্বারা মাথার সম্মুখ হতে পিছনে ও পিছন হতে সম্মুখে নিয়ে গিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে।

হাদিসঃ

’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ’আসিম (রাঃ)-কে বলা হলো, যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ  করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ করুন। তাই তিনি ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)] পানি আনালেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন। অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৫, ১৮৬, ১৯১, ১৯২, ১৯৭, ১৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৫, আহমাদ ১৬৪৪৫, আধুনিক প্রকাশনী ১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

একই সঙ্গে ভিজা শাহাদাত আংগুল দ্বারা কানের ভিতর অংশে ও বুড়ো আংগুল দ্বারা কানের পিঠ মাসাহ করবে।

হাদিসঃ

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাথা ও দুই কান মাসাহ করেছেন। কানের ভিতরাংশ নিজের দুই শাহাদাত আঙ্গুল ও উপরিভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মাসাহ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৩, সুনান আননাসায়ী ১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর,

(৮) ডান ও বাম পায়ের টাখনুসহ ভালভাবে ধৌত করবে।

হাদিসঃ

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ’আসিম (রাঃ)-কে বলা হলো, যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ করুন। তাই তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)] পানি আনালেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন। অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, (মাসাহ করার জন্য) নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। অর্থাৎ মাথার সামনের অংশ হতে ’মাসাহ’ শুরু করে দুই হাত পিছন পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর আবার পিছন থেকে শুরু করে হাত সেখানে নিয়ে এলেন যেখান থেকে শুরু করেছিলেন। অতঃপর দুই পা ধুইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন, আর নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনবার করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বুখারীর বর্ণনার শব্দ হলো, তারপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। আর এটা তিনি একবার করেছেন। অতঃপর টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধুইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বুখারীরই এক বর্ণনার শব্দ হলো, অতঃপর তিনি কুলি করলেন ও নাক ঝাড়লেন তিনবার এক কোষ পানি দিয়ে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ১৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ সময় বাম হাতের কনিষ্ঠা আংগুল দ্বারা পায়ের আংগুল সমূহ খিলাল করবে।

হাদিসঃ

মুস্তাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ করার সময় দেখেছি যে, তিনি বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৭, ৪০৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৯,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৮, সহীহুল জামি ৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৯) ওযূ শেষে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিবে।

হাদিসঃ

হাকাম ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করার পর উযূ করতেন এবং নিজের লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৮, নাসায়ী ১৩৫, দারিমী ৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) অতঃপর দু‘আ পাঠ করবে। উল্লেখ্য যে, ওযূর অঙ্গগুলো এক, দুই ও তিনবার ধোয়া যায়। এর বেশী ধোয়া যাবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৭, ১৫৮, ১৫৯; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৫, ৩৯৬, ৩৯৭)।

একবার ধোয়াঃ

হাদিসঃ

’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উযূর স্থানসমূহ) একবার করে উযূ করলেন। একবারের অধিক ধুলেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৫, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

দুইবার ধোয়াঃ

‘আবদুল্লাহ্ ইবন যায়দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূতে দু’বার করে ধুয়েছেন।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ১৫৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনবার ধোয়াঃ

হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬-৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওযূর ফযিলতসমূহ

(ক) হযরত ওছমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে এবং উত্তমরূপে ওযূ করে, তার শরীর হ’তে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ হ’তেও তা বের হয়ে যায়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৫; আহমাদ হা/৪৭৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন কোন মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা ওযূ করে এবং তার চেহারা ধৌত করে, তখন তার চেহারা হ’তে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায়। যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাত দিয়ে করা সকল গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যা তার দু’হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধৌত করে, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ সমূহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্য তার দু’পা হেঁটেছে। ফলে সে (ওযূর জায়গা হ’তে উঠার সময়) সকল গুনাহ হ’তে পাক-পবিত্র হয়ে যায়’। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ক্বিয়ামতের মাঠে মহানবী (ছাঃ) উম্মতে মুহাম্মাদীর ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উজ্জ্বল্য দেখে তাদেরকে চিনতে পারবে এবং হাউযে কাউছারে পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাবে। হাদিসে এসেছে,

আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে এসে কবরবাসীদের সালাম দিলেন এবং বললেনঃ ’’আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মুমিনীন ওয়াইন্না ইনশাআল্লাহ তাআলা বিকুম লাহিকুন’(ঈমানদার কবরবাসীরা! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অচিরেই আল্লাহর মর্জি আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো)। অতঃপর তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আমাদের আকাঙ্ক্ষা এই যে, আমরা আমাদের ভাইদের দেখতে পাবো। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলেনঃ তোমরা আমার সাহাবী। আর যারা আমাদের পরে আসবে তারা আমার ভাই। আমি তোমাদের আগেই হাওযের নিকট উপস্থিত হবো। তারা জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন লোকেদের আপনার উম্মাতরূপে কিভাবে চিনবেন, যারা এখনও জন্মগ্রহণ করেনি?

তিনি বলেনঃ তোমরা কি দেখো না, যদি কোন ব্যক্তির একটি সাদা পা ও সাদা পেশানীযুক্ত ঘোড়া অপর ব্যক্তির কোলো ঘোড়ার পালে মিশে যায়, তবে সে কি তার ঘোড়াটি চিনতে পারবে না? তারা বলেন, হাঁ, নিশ্চয় চিনতে পারবে। তিনি বলেনঃ তারা কিয়ামতের দিন উযুর বদৌলতে সাদা পেশানী ও সাদা হাত-পাবিশিষ্ট অবস্থায় আসবে। তিনি আরো বলেনঃ আমি তোমাদের আগেই হাওয কাওছারে উপস্থিত হবো। একদল লোক আমার হাওয থেকে বিতাড়িত হবে, যেমন পথভোলা উট বিতাড়িত হয়। আমি তাদেরকে ডেকে বলবোঃ তোমরা এদিকে এসো তোমরা এদিকে এসো। তখন বলা হবে, এসব লোক আপনার পর (দীনকে) পরিবর্তন করেছে এবং অবিরত তারা তাদের পশ্চাতে ফিরে গেছে। তখন আমি বলবোঃ সাবধান! দূর হও দূর হও। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯, আহমাদ ৯০৩৭, আল-আহকাম ১৯০, ইরওয়া ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কষ্ট সত্বেও যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং পদ মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। এ মর্মে হাদীছে এসেছে

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা।

 রিবাত (সীমান্ত প্রহরী) অর্থঃ কোন জিনিস থেকে বন্ধ থাকা, অর্থাৎ ইতা’আতের উপর নিজের আত্মাকে বন্ধ রাখা, তাতে যত কষ্টই হোক। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫১, সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ১৪৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১; মুয়াত্তা মালিক ৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওযূর দো‘আর ফযিলত

 যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে এবং শেষে ওযূর দো‘আ পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের সব কয়টি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ).....উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৯,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৫, সহীহুল জামি ৬১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তায়াম্মুম

তায়াম্মুমেম শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি

সংজ্ঞাঃ তায়াম্মুম অর্থ ‘সংকল্প করা’। পারিভাষিক অর্থে: ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৯)।

এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য আবুবকর-পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেননা সম্ভবত: ৫ম হিজরী সনে বনুল মুছত্বালিক্ব যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মদীনার উপকণ্ঠে ‘বায়দা’ (البَيْدَاء) নামক স্থানে পৌঁছে আয়েশা (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটি খোঁজার জন্য কাফেলা থামিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে কোন পানি ছিল না। ফলে এভাবেই পানি ছাড়া সকাল হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। (সুরা মায়েদাহ ৬)।

ছাহাবী উসায়েদ বিন হুযায়ের (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম অবদান নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উট উঠিয়ে দিলাম, যার উপরে আমরা ছিলাম এবং তার নীচে হারটি পেয়ে গেলাম’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬০৮,  ৩৩৪, আধুনিক প্রকাশনী ৪২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ বলেন,

‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ কর ও তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’...। (সুরা মায়েদাহ ৫/৬, সুরা নিসা ৪/৪৩)।

পবিত্র মাটি

আরবী পরিভাষায় ‘মাটি’ বলতে ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়। যেমন বলা হয়েছে, ‘মাটি হলো ভূ-পৃষ্ঠ। চাই তা নিরেট মাটি হৌক বা অন্য কিছু হৌক’। (আল-মিছবাহুল মুনীর)।

আরব দেশের মাটি অধিকাংশ পাথুরে ও বালুকাময়। বিভিন্ন সফরে আল্লাহর নবী (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ বালুকাময় মরুভূমির মধ্য দিয়ে বহু দূরের রাস্তা অতিক্রম করতেন। বিশেষ করে মদ্বীনা হ’তে প্রায় ৭৫০ কি: মি: দূরে ৯ম হিজরীর রজব মোতাবেক ৬৩০ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবূক যুদ্ধের সফরে তাঁরা মরুভূমির মধ্যে দারুণ পানির কষ্টে পড়েছিলেন। কিন্তু ‘তায়াম্মুমের’ জন্য দূর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায় না। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইলস, চুন ইত্যাদি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ জায়েয নয়। (আলোচনা দ্রষ্টব্য : ছাদেক শিয়ালকোটি, ছালাতুর রসূল; টীকা, পৃঃ ১৪৮-৪৯)।

তায়াম্মুম ফরয হওয়ার শর্তাবলী

(ক)  বালেগ বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়া।

(খ)  মাটি ব্যবহারে সক্ষম হওয়া।

(গ)  অপবিত্রতা নষ্টকারী কোনো কিছু ঘটা।

তায়াম্মুমের ফরযসমূহ

(ক)  নিয়ত।

(খ)  পবিত্র মাটি।

(গ)  একবার মাটিতে হাত মারা।

(ঘ)  মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত মাসাহ করা।

তায়াম্মুমের কারণসমূহ

(১) যদি পাক পানি না পাওয়া যায়

(২) পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার ভয় থাকে

(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে

(৪) যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি। উপরোক্ত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ওযূ বা ফরয গোসলের পরিবর্তে প্রয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ একটানা ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। (সুরা মায়েদাহ ৫/৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত ৫২৭ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০; বুখারী ৩৪৪, ১/৪৯ পৃঃ; আহমাদ, তিরমিযী ইত্যাদি মিশকাত ৫৩০)।

হাদিসঃ

’ইমরান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখলেন এক ব্যক্তি পৃথক হয়ে বসে আছে, অথচ সে মানুষের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করেনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! মানুষের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? লোকটি বলল, আমি নাপাক ছিলাম, অথচ তখন পানি পাচ্ছিলাম না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মাটি (তায়াম্মুমের মাধ্যমে) ব্যবহার করা উচিত ছিল। আর (পবিত্রতা অর্জনে) এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮২, নাসায়ী ৩২১, আহমাদ ১৯৮৯৮, দারেমী ৭৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৩০১, ইরওয়া ১৫৬, সহীহ আল জামি ৪০৪৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’। (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত ৫৩০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০)।

হাদিসঃ

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাক-পবিত্র মাটি মুসলিমকে পবিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করে, যদি দশ বছরও সে পানি না পায়। পানি যখন পাবে তখন সে যেন তার গায়ে পানি লাগায়। এটাই তার জন্য উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৪, ইরওয়া ১৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম

কারো হাড় ভেঙ্গে গেলে বা শরীরে ক্ষত বা জখম হলে পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা করলে ও কষ্ট হলে তবে ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম করবে এবং বাকী অংশ ধুয়ে ফেলবে।

কেউ পানি ও মাটি কোনটিই না পেলে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই সালাত আদায় করে নিবে। তাকে উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।

মোজা ও বন্ধ ফলকের উপর মাসাহ

ইবন মুবারক বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই। ইমাম আহমাদ বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে আমার অন্তরে কোনো সংশয় নেই। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চল্লিশটি হাদীস বর্ণিত আছে। পা ধোয়ার চেয়ে মোজার উপর মাসাহ করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উত্তমটিই তালাশ করতেন।

সময়সীমা

মুকিমের জন্য একদিন ও একরাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন ও তিনরাত মাসাহ করা জায়েয। মোজা পরিধান করার পরে প্রথম বার অপবিত্র হওয়া থেকে সময়সীমা শুরু হয়।

মোজার উপর মাসাহর শর্তাবলী

পরিধেয় মোজা বৈধ ও পবিত্র হওয়া। ফরয পরিমাণ অংশ ঢেকে থাকা এবং মোজা পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা।

মোজার উপর মাসাহর পদ্ধতি

পানিতে হাত ভিজিয়ে পায়ের উপরিভাগের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে নলা পর্যন্ত একবার মাসাহ করা। পায়ের নিচে ও পিছনে মাসাহ নয়।

মোজার উপর মাসাহ ভঙ্গের কারণসমূহ

নিচের চারটির যে কোনো একটি কারণে মোজার উপর মাসাহ নষ্ট হয়ে যায়:

(ক)  পায়ের থেকে মোজা খুলে ফেললে।

(খ)  মোজা খুলে ফেলা অত্যাবশ্যকীয় হলে, যেমন গোসল ফরয হলে।

(গ)  পরিহিত মোজা বড় ছিদ্র বা ছিড়ে গেলে।

(ঘ)  মাসাহের মেয়াদ পূর্ণ হলে।

সব ধরণের পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে না ফেলা পর্যন্ত তার উপর মাসাহ করা জায়েয, এতে মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক বা জানাবত তথা বড় নাপাকী লাগুক।

তায়াম্মুমের সঠিক পদ্ধতি

মুছল্লী পবিত্র হওয়ার নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটিতে দুই হাত একবার মারবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২০১, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর ফুঁক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দুই হাত দিয়ে প্রথমে মুখমন্ডল তারপর বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি এরপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার করে মাসাহ করবে। যেমনঃ রাসূল (ছাঃ) বলেন,

‘তোমার জন্য এইরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তাঁর দুই হাত মাটির উপর মারলেন এবং ফুঁক দিলেন। অতঃপর দুই হাত দ্বারা মুখমন্ডল ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। (বুখারী ৩৩৮, ইফাবা ৩৩১, মুসলিম ৮৪৬, মিশকাত ৫২৮)।

মূল হাদিসঃ

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবী শাইবাহ ও ইবনু নুমায়র (রহঃ).....শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) ও আবূ মূসা (রাযিঃ) এর কাছে বসেছিলাম। তখন আবূ মূসা (রাযিঃ) বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! কোন লোক যদি জুনুবী হয় (যার ফলে তার গোসল ফরয হয়) এবং সে এক মাস যাবৎ পানি না পায় তাহলে সে কিভাবে সালাত আদায় করবে? আবদুল্লাহ বললেন, সে তায়াম্মুম করবে না যদিও একমাস পানি না পায়। আবূ মূসা (রাযিঃ) বললেন, তাহলে সূরাহ মায়িদাহ এর এ আয়াত-....."যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর"- (সূরাহ আল মায়িদাহ ৫: ৬) এর কি হবে?

আবদুল্লাহ বললেন, এ আয়াতের দ্বারা তাদেরকে যদি তায়াম্মমের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে পৌছবে যে) পানি ঠাণ্ডাবোধ হলে তারা মাটি দিয়ে তায়াম্মুম শুরু করবে। আবূ মূসা (রাযিঃ) তখন আবদুল্লাহ-কে বললেন, আপনি কি আম্মার-এর বর্ণনা শোনেননি (তিনি বলেন) যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোন এক প্রয়োজনে পাঠালেন। (পথিমধ্যে) আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম এবং পানি পেলাম না। তখন আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম চতুষ্পদ জন্তু যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়।

তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ ঘটনা বললাম। তিনি বললেন, তোমার জন্যে দু’হাত দিয়ে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল-এ বলে তিনি তার দু’হাত একবার মাটিতে মারলেন। তারপর বামহাত দিয়ে ডানহাত মাসাহ করলেন এরং উভয় হাতের কব্জির উপরিভাগ ও মুখমণ্ডল মাসাহ করলেন। আবদুল্লাহ বললেন, তুমি কি দেখনি যে, উমার (রাযিঃ) আম্মার (রাযিঃ) এর কথা যথেষ্ট মনে করেননি? (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭০৪-৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৮, ৩৩৯, ৩৪০, ৩৪১, ৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৫, ৩৪৬, ৩৪৭; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৮, , সুনান আবূ দাঊদ ৩২২, সুনান আননাসায়ী ৩১২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৫৬৯, আহমাদ ১৮৩৩২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৩০৬, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২৬৮, আ.প্র. ৩২৬, ই.ফা. ৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্যঃ আবুদাঊদে দুইবার হাত মারা ও পুরো হাত বগল পর্যন্ত মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সনদ বিশুদ্ধ হলেও সেগুলো মূলতঃ কতিপয় ছাহাবীর ঘটনা মাত্র, যা রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার আগে ঘটেছিল। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩১৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৬, আহমাদ (৪/৩২০, ৩২১), সুনান আননাসায়ী ৩১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তায়াম্মুমের উক্ত পদ্ধতি শিক্ষা দেন। যেমন- ইমাম মুহিউস সুন্নাহ বলেন,

‘এটা ছাহাবীদের কাজের ঘটনা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) থেকে নকল করতে পারিনি। যেমনটি আম্মার (রাঃ) জুনবী অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করার ঘটনা নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর যখন তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি শুধু মুখমন্ডল ও দুই কব্জি মাসাহর নির্দেশ দান করেন। এ পর্যন্তই শেষ করেছেন। আর আম্মার (রাঃ) তার কাজ থেকে ফিরে আসেন। (মিশকাত ৫৩৬)।

মুল হাদিসঃ

’আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অবস্থানকালে পানি না থাকার কারণে ফজরের (ফজরের) সালাতের জন্য মাটি দিয়ে মাসাহ করলেন। তারা তাদের হাতকে মাটিতে মারলেন, তারপর একবার তাদের চেহারা মাসাহ করলেন। আবার মাটিতে হাত মারলেন এবং সম্পূর্ণ হাত বাহুমূল পর্যন্ত এবং হাতের ভিতর দিকে বগল পর্যন্ত মাসাহ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তায়াম্মুমের সময় দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা

তায়াম্মুম করার সময় একবার মাটিতে হাত মারতে হবে অতঃপর মুখমন্ডল এবং দুই হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-

(ক)  ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তায়াম্মুমে দুইবার হাত মারবে। মুখের জন্য একবার আর দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার জন্য একবার। (বায়হাক্বী হা/১০৫৪, ১/২০৭; হাকেম হা/৬৩৪ ও ৬৩৬; আবুদাঊদ হা/৩৩০, ১/৪৭ পৃঃ; দারাকুৎনী ১/১৭৭; বুলূগুল মারাম হা/১২৮; বিস্তারিত দ্রঃ তানক্বীহ, পৃঃ ১৯৪-১৯৭)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। এর সনদে কয়েকজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর আল-উমরা নামক রাবীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হিসাবে যঈফ। আলী ইবনু যাবইয়ান নামক রাবী অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম ইবনু মাঈন বলেন, সে মিথ্যুক, অপবিত্র। ইমাম বুখারী বলেন, সে মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী। ইমাম নাসাঈ বলেন, সে হাদীছের পরিত্যক্ত রাবী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪২৭; যঈফুল জামে‘ হা/২৫১৯; যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৩০)।

প্রশ্ন হলো, উক্ত হাদীছ হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে স্থান পেল? (হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ৫০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ; কুদূরী, পৃঃ ১২)।

আর ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি সম্পর্কে যে সমস্ত ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো কেন প্রত্যাখ্যান করা হলো? (ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩৩১, ১/১৮৮ পৃঃ), ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮, পৃঃ ৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ)।

(খ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ’উমার (রাঃ) কোন কাজে গেলে আমিও তার সাথে গেলাম। তিনি তাঁর কাজ শেষ করলেন। সেদিন তাঁর কথার মধ্যে এ কথাটি ছিল, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি কোন একটি গলি দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব বা পায়খানা সেরে বের হলেন। ঐ লোকটির সাথে তাঁর দেখা হলে সে সালাম দিল। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন না। লোকটি যখন অন্য গলির দিকে মোড় নিচ্ছিল, তিনি (তায়াম্মুম করার জন্য) দেওয়ালে দুই হাত মেরে মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। অতঃপর আবার দেওয়ালে হাত মেরে কনুইসহ দু’হাত মাসাহ করলেন (অর্থাৎ- তায়াম্মুম করলেন)। এরপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, তোমাকে সালামের উত্তর দিতে পারিনি। কারণ আমি বে-উযূ ছিলাম, এটাই ছিল (তোমার সালামের উত্তর দিতে আমার) বাধা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩০)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, ‘আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ বিন ছাবিত তায়াম্মুম সম্পর্কে একটি মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছে’। (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৩০)।

ইমাম বুখারী এবং ইয়াহইয়া ইবনু মাঈনও অনুরূপ বলেছেন। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, হাদীটি ছহীহ নয়। কারণ মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত আল-আবদী অত্যন্ত দুর্বল। তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় না। (যঈফ আবুদাঊদ (আল-উম্ম) হা/৫৮, পৃঃ ১৩৬)।

ইমাম আবুদাঊদ আরো বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুইবার হাত মারা ও ইবনু ওমরের কাজের যে বর্ণনা করেছে, এই ঘটনার ব্যাপারে সে নির্ভরযোগ্য নয়। (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৩০)।

জ্ঞাতব্যঃ

(১) ‘তায়াম্মুম’ করে ছালাত আদায়ের পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়া গেলে পুনরায় ঐ ছালাত আদায় করতে হবে না।

আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুই লোক সফরে বের হলো। পথিমধ্যে সালাতের সময় হলো, অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না। তাই তারা দু’জনই পাক মাটিতে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে নিলো। অতঃপর সালাতের সময়ের মধ্যেই তারা পানি পেয়ে গেল। তাই তাদের একজন উযূ  করে আবার সালাত আদায় করে নিলো এবং দ্বিতীয়জন তা করলো না। এরপর তারা ফিরে এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তা বর্ণনা করলো। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করেনি তাকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি সুন্নাতের উপরই ছিলে। এ সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি উযূ করে পুনরায় সালাত আদায় করেছে তাকে বললেন, তোমার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৮, সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত)  ৪৩৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ওযূর মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায়, তায়াম্মুমের দ্বারা সেসব কাজ করা যায়। অমনিভাবে যেসব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়, সেসব কারণে ‘তায়াম্মুম’ ভঙ্গ হয়।

(৩) যদি মাটি বা পানি কিছুই না পাওয়া যায়, তাহ’লে বিনা ওযূতেই ছালাত আদায় করবে।

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি একদা (তাঁর বোন) আসমা (রাঃ) এর হার ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। (পথিমধ্যে) হারখানা হারিয়ে গেল। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সেটির অনুসন্ধানে লোক পাঠালেন। তিনি হারটি এমন সময় পেলেন, যখন তাঁদের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল অথচ তাঁদের কাছে পানি ছিল না। তাঁরা সালাত আদায় করলেন। তারপর বিষয়টি তাঁরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করেন। সেজন্য উসায়দ ইব্নু হুযায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। আল্লাহ্র কসম! আপনি যে কোন অপছন্দনীয় অবস্থার মুখোমুখী হয়েছেন, তাতেই আল্লাহ্ তা’আলা আপনার ও সমস্ত মুসলিমের জন্য মঙ্গল রেখেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৬, ৩৩৪, আ.প্র. ৩২৪, ই.ফা. ৩২৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পবিত্রতা বিষয়ক জাল-জঈফ হাদিসের ভ্রান্ত ধারণা

ওযূর শুরুতে মুখে নিয়ত বলা

মুখে নিয়ত বলার শারঈ কোন বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি মানুষের তৈরী বিধান। অতএব তা পরিত্যাগ করে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৭, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৭, সুনাননাসায়ী ৭৫, সুনানআবূ দাঊদ ২২০১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২, আধুনিক প্রকাশনী ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর নামে প্রকাশিত ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও যরূরী মাসআলা মাসায়েল’ নামক বইয়ে বলা হয়েছে যে, ক্বিবলার দিকে মুখ করে উঁচু স্থানে বসে ওযূ করতে হবে। (হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ), ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জরুরী মাসআলা মাসায়েল’, সংকলনে ও সম্পাদনায়- মাওলানা আজিজুল হক (ঢাকা : মীনা বুক হাউস, ৪৫, বাংলা বাজার, চতুর্থ মুদ্রণ-আগস্ট ২০০৯), পৃঃ ৪২; উল্লেখ্য যে, মাওলানার নামে বহু রকমের ছালাত শিক্ষা বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাজারে চালু আছে। কোন্টি যে আসল অনুবাদ তা আল্লাহই ভাল জানেন)।

অথচ উক্ত কথার প্রমাণে কোন দলীল পেশ করা হয়নি। উক্ত দাবী ভিত্তিহীন।

ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রাহীম আল-ইসলামু হাক্কুন, ওয়াল কুফরু বাতিলুন, আল-ঈমানু নূরুন, ওয়াল কুফরু যুলমাতুন’ দু‘আ পাঠ করা

উক্ত দু‘আর প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। যদিও মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) উক্ত দু‘আর সাথে আরো কিছু বাড়তি কথা যোগ করে তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোন প্রমাণ উল্লেখ করেননি। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪৩)।

এটা পড়লে সুন্নাতের বিরোধিতা করা হবে। উক্ত দু‘আটি দেশের বিভিন্ন মসজিদের ওযূখানায় লেখা দেখা যায়। উক্ত দু‘আ হতে বিরত থাকতে হবে। বরং ওযূর শুরুতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে।

রাবাহ ইবনু আবদির রহমান ইবনি আবী সুফিয়ান ইবনি হুআইত্বিব হতে তার দাদীর সূত্রে, তিনি তার পিতার (সাঈদ ইবনুযায়িদ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাঈদ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি তার ওযু হয়নি। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ পড়া

ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ পড়তে হবে মর্মে আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি কোন দলীল পেশ করেননি। অন্য শব্দে একটি জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

(রাসূল (ছাঃ) বলেন) হে আনাস! তুমি আমার নিকটবর্তী হও, তোমাকে ওযূর মিক্বদার শিক্ষা দিব। অতঃপর আমি তার নিকটবর্তী হলাম। তখন তিনি তাঁর দুই হাত ধৌত করার সময় বললেন, ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল হামদুল্লিা-হি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হি’। যখন তিনি ইস্তিঞ্জা করলেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা হাছ্ছিন ফারজী ওয়া ইয়াস্সিরলী আমরী’। যখন তিনি ওযূ করেন ও নাক ঝাড়েন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা লাক্কিনী হুজ্জাতী ওয়ালা তারহামনী রায়েহাতাল জান্নাতি’। যখন তার মুখমন্ডল ধৌত করেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা বাইয়িয ওয়াজহী ইয়াওমা তাবইয়ায্যু উজূহুওঁ’। যখন তিনি দুই হাত ধৌত করলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহুম্মা আ‘ত্বিনী কিতাবী ইয়ামানী’। যখন হাত দ্বারা মাসাহ করলেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা আগিছনা বিরহমাতিকা ওয়া জান্নিবনা আযাবাকা’। যখন তিনি দুই পা ধৌত করলেন তখন বললেন, ‘আল্ল-হুম্মা ছাবিবত ক্বাদামী ইয়াওমা তাযিল্লু ফীহি আক্বদাম’।

অতঃপর তিনি বলেন, হে আনাস! ঐ সত্তার কসম করে বলছি, যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, যে বান্দা ওযূ করার সময় এই দু‘আ বলবে, তার আঙ্গুল সমূহের ফাঁক থেকে যত ফোঁটা পানি পড়বে তার প্রত্যেক ফোঁটা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা একজন করে ফেরেশতা তৈরি করবেন। সেই ফেরেশতা সত্তরটি জিহবা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করবেন। এই ছওয়াব ক্বিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে উবাদা বিন ছুহাইব ও আহমাদ বিন হাশেমসহ কয়েকজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী, নাসাঈ, দারাকুৎনীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাদেরকে পরিত্যক্ত বলেছেন। ইমাম নববী বলেন, এই বর্ণনাটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩)।

ওযূর পানি পাত্রের মধ্যে পড়লে উক্ত পানি দ্বারা ওযূ হবে না বলে বিশ্বাস করা

এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) লিখেছেন, ‘উঁচু স্থানে বসবে, যেন ওযূর পানির ছিটা শরীরে আসতে না পারে’। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২)।

অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাত্রের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিতেন আবার বের করতেন। এভাবে তিনি ওযূ করতেন।

‘আমর ইবনু আবূ হাসান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি এক পাত্র পানি আনলেন এবং তাঁদের (দেখাবার) জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মত উযূ করলেন। তিনি পাত্র থেকে দু’হাতে পানি ঢাললেন। তা দিয়ে হাত দু’টি তিনবার ধুলেন। অতঃপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিন খাবল পানি নিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তারপর আবার হাত ঢুকালেন। তিনবার তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) দুই হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত দিয়ে সামনে এবং পেছনে একবার মাত্র মাথা মাসেহ করলেন। তারপর দু’ পা টাখনু পর্যন্ত ধুলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬, ১৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ত্রুটিপূর্ণ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। ওযূর সময় কথা বললে ফেরেশতারা রুমাল নিয়ে চলে যায়

ওযূকারীর মাথার উপর চারজন ফেরেশতা রুমাল নিয়ে ছায়া করে রাখে। পর পর চারটি কথা বললে রুমাল নিয়ে চলে যায় বলে যে কাহিনী সমাজে প্রচলিত আছে, তা উদ্ভট, মিথ্যা ও কাল্পনিক। তাছাড়া খারাপ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় এ আক্বীদাও ঠিক নয়। এ মর্মে যে হাদীছ রয়েছে তা জাল।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, অপবিত্রতা দুই প্রকার। জিহবার ও লজ্জাস্থানের অপবিত্রতা। দুইটি এক সমান নয়। লজ্জাস্থানের অপবিত্রতার চেয়ে জিহবার অপবিত্রতা বেশী। আর এর কারণে ওযূ করতে হবে। (আব্দুর রহমান ইবনু আলী ইবনিল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ফিল আহাদীছিল ওয়াহিয়াহ (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪০৩), হা/৬০৪; দায়লামী ২/১৬০, হা/২৮১৪; ইমাম সুয়ূত্বী, জামিউল আহাদীছ হা/১১৭২৬)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি বাতিল। (জাওয়াযকানী, আল-আবাতিল ১/৩৫৩ পৃঃ)।

এর সনদে বাক্বিয়াহ নামক রাবী রয়েছে, সে ত্রুটিপূর্ণ। সে দুর্বল রাবীদের নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনাকারী। রাসূল (ছাঃ) থেকে উক্ত মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। (আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ হা/৬০৪-এর আলোচনা দ্রঃ)।

কুলি করার জন্য আলাদা পানি নেওয়া

সুন্নাত হলো হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে ও নাকে পানি দেয়া। রাসূল (ছাঃ) এভাবেই ওযূ করতেন। ‘তিনি এক অঞ্জলি দ্বারাই কুলি করেন ও নাক পরিষ্কার করেন’।

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি পাত্র হতে দু’হাতে পানি ঢেলে দু’হাত ধৌত করলেন। অতঃপর এক খাবল পানি দিয়ে (মুখ) ধুলেন বা কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। তারপর দু’ হাত কনুই পর্যন্ত দু’-দু’বার ধুলেন এবং মাথার সামনের অংশ এবং পেছনের অংশ মাসেহ করলেন। আর টাখনু পর্যন্ত দু’ পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ এরূপ ছিল।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯১, ১৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আলাদাভাবে পানি নেওয়ার যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ। যেমন-

ত্বালহা (রহঃ) তাঁর পিতা হতে তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন সময় গেলাম যখন তিনি অযু করছিলেন, অযুর পানি তাঁর মুখ ও দাড়ি গড়িয়ে তাঁর বুকের উপর পড়ছিল। আমি দেখলাম, তিনি পৃথকভাবে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৯, বুলূগুল মারাম হা/৪৯, পৃঃ ১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। এর সনদে লাইছ ও মুছাররফ নামের দু’জন রাবী রয়েছে, যারা ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়াও আরো ত্রুটি রয়েছে। এই হাদীছ যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণ একমত। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩৯-এর আলোচনা দ্রঃ)।

শায়খ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, তালক বিন মুছাররফের হাদীছ পৃথক করা প্রমাণ করে, কিন্তু তা যঈফ। (শরহে বুলূগুল মারাম, পৃঃ ২৬)।

কান মাসাহ করার সময় নতুন পানি নেওয়া

ওযূতে কান মাসাহ করার ক্ষেত্রে মাথা ও কান একই সঙ্গে একই পানিতে মাসাহ করবে। ‘অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং হাত ঝাড়তেন। তারপর এর দ্বারা তাঁর মাথা ও কান মাসাহ করতেন’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৭, সুনান আততিরমিযী ৩৬, সুনান আননাসায়ী ১০২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪০, আস-সুনানুল কুবরা ২৫৬, আস-সুনানুল কুবরা ১৬১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এ জন্য পৃথকভাবে নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’।

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কর্ণদ্বয় মাথার অন্তর্ভুক্ত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪৪৩, ইরওয়াহ ৮৪, সহীহাহ ৩৬, সহীহ আবূ দাউদ, ১৬৩, সুনান আততিরমিযী ৩৭, সিলসিলা ছহীহাহ ৩৬; ইরওয়াউল গালীল ৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাছাড়া বায়হাক্বীতেও একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করার ছহীহ হাদীছ এসেছে। (বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ)।

নতুনভাবে পানি নেয়ার হাদীছটি ছহীহ নয়। যেমন-

(ক) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছেন যে, পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেছেন। অতঃপর তা ব্যতীত কান মাসাহ করার জন্য পৃথক পানি নিয়েছেন। (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৯১, ১/২২৯ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৩৯, পৃঃ ২৩)।

তাহক্বীক্ব: উক্ত শব্দে বর্ণিত হাদীছ যঈফ। উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার পরে হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী ও বায়হাক্বীর যে মন্তব্য ইবনু হাজার আসক্বালানী তুলে ধরেছেন তা মূলতঃ এই হাদীছের ক্ষেত্রে নয়; বরং হাত ধৌত করার পর নতুন করে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করা সংক্রান্ত হাদীছটির ব্যাপারে, যা ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ)।

তাই আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন,

‘সমালোচনা থেকে মুক্ত এমন কোন মারফূ হাদীছ এ ব্যাপারে আছে বলে আমি অবগত নই, যার দ্বারা নতুন পানি নিয়ে কান মাসাহ করা যাবে’। (তুহফাতুল আহওয়াযী ১/১২২ পৃঃ, হা/২৮-এর আলোচনা; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৪৬ ও ৯৯৫; মাজমূউ ফাতাওয়া আলবানী, পৃঃ ৩৬)।

(খ) নাফে‘ বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ওযূ করতেন, তখন কান মাসাহ করার জন্য দুই আঙ্গুলে পানি নিতেন। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩১৪; মুওয়াত্ত্বা হা/৯২)।

তাহক্বীক্ব: এ বর্ণনাটিও যঈফ। বায়হাক্বীর মুহাক্কিক মুহাম্মাদ আব্দুল কবাদির ‘আতা বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ঐ হাদীছগুলো যঈফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। (বায়হাক্বী হা/৩১৭-এর ভাষ্য দ্রঃ)।

উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ব্যক্তিগত আমলকে ইবনুল ক্বাইয়িম ছহীহ বলতে চেয়েছেন। কিন্তু উক্ত ত্রুটি থাকার কারণে তা যঈফ। যেমন তিনি বলেন,

‘রাসূল (ছাঃ) দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিয়েছেন এমন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি। তবে ইবনু ওমর থেকে সেটা ছহীহ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে’। (ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/২০০ পৃঃ; বুলূগুল মারাম, পৃঃ ২৩-এর উক্ত হাদীছের ভাষ্য দ্রঃ)।

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,

‘দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং মাথা মাসহের জন্য নেয়া পানির সিক্ততা দিয়েই দুই কান মাসাহ করা জায়েয’। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬-এর ভাষ্য দ্রঃ)।

অতএব কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং মাথা ও কান একই সঙ্গে মাসাহ করতে হবে।

জ্ঞাতব্যঃ অনেকে কান মাসাহকে ফরয বলেন না। অথচ কানসহ মাথা মাসাহ করা ফরয। কারণ দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’।

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কর্ণদ্বয় মাথার অন্তর্ভুক্ত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪৪৩, ইরওয়াহ ৮৪, সহীহাহ ৩৬, সহীহ আবূ দাউদ, ১৬৩, সুনান আততিরমিযী ৩৭, সিলসিলা ছহীহাহ ৩৬; ইরওয়াউল গালীল ৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করতেন। যেমন-

 ‘অতঃপর তিনি এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং মাথা ও দুই কান মাসাহ করতেন’।

 আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) আমাদের বললেন, তোমরা কি এটা পছন্দ করো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে অযু করতেন তা তোমাদেরকে আমি দেখিয়ে দেই? অতঃপর তিনি এক পাত্র পানি চাইলেন। সেখান থেকে ডান হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর এক অঞ্জলি নিয়ে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত এবং অপর অঞ্জলি নিয়ে বাম হাত ধুলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা ফেলে দিলেন এবং মাথা ও উভয় কান মাসাহ্ করলেন। তারপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন, তখন তাঁর পায়ে জুতা ছিল। তিনি তাঁর এক হাতে পায়ের উপরিভাগ এবং অপর হাতে জুতার নিম্নভাগ মাসাহ্ করলেন। এরপর অনুরূপভাবে বাম পাও মাসাহ্ করলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৭, সুনান আততিরমিযী ৩৬, সুনান আননাসায়ী ১০২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪০, আস-সুনানুল কুবরা ২৫৬, আস-সুনানুল কুবরা ১৬১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

মাথা ও কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি না নেওয়া

অনেকে দুই হাত ধৌত করার পর সরাসরি মাথা মাসাহ করে, নতুন পানি নেয় না। যেমন আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেছেন, ‘কান ও মাথা মাছহে করার জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, ভেজা হাত দ্বারাই মাছহে করবে’। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২)।

এটি সুন্নাতের বরখেলাফ। কারণ রাসূল (ছাঃ) দুই হাত ধৌত করার পর নতুন পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করতেন। যেমন- ‘হাতের অতিরিক্ত পানি ছাড়াই তিনি নতুন পানি দ্বারা তাঁর মাথা মাসাহ করতেন’। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ, ‘নবী (ছাঃ)-এর ওযূ’ অনুচ্ছেদ)।

মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা

মাথা মাসাহ করার ব্যাপারে অবহেলা ও উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ চুল স্পর্শ করাকেই মাসাহ মনে করেন, কেউ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসাহ করেন এবং কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় নেমে পড়েন। কুদূরী ও হেদায়ার লেখক চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর দলীল হিসাবে পেশ করেছেন ছহীহ মুসলিমের হাদীছ। অথচ উক্ত হাদীছে পাগড়ী থাকা অবস্থায় মাসাহ করা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কুদূরী এবং হেদায়াতে মুগীরা (রাঃ)-এর নামে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা ভুল হয়েছে। (দ্রঃ ছহীহ মুসলিম হা/৬৪৭, ১/১৩৩ পৃঃ ও হা/৬৫৬, ১/১৩৪ পৃঃ)।

যা হেদায়ার টীকাতেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা দুইটি হাদীছকে একত্রে মিশ্রিত করে উল্লেখ করেছেন। (আবুল হাসান বিন আহমাদ বিন জা‘ফর আল-বাগদাদী আল-কুদূরী, মুখতাছারুল কুদূরী (ঢাকা): ইসলামিয়া কুতুবখানা, বাংলাবাজার ১৯৮২/১৪০৩), পৃঃ ৩; শায়খুল ইসলাম বুরহানুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনু আবী বকর আল-মারগীনানী (৫১১-৫৯৩ হিঃ), আল-হেদায়াহ (নাদিয়াতুল কুরআন কুতুবখানা (১৪০১), ১/১৭ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় সংস্করণ : মার্চ ২০০৬), ১/৬ পৃঃ)।

সুধী পাঠক! শরী‘আতের ব্যাখ্যা হিসাবে রাসূল (ছাঃ) সুন্দরভাবে মাথা মাসাহ করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। কারণ পবিত্র কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়েছে। আর তিনি মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনে চুলের শেষ পর্যন্ত দুই হাত নিয়ে যেতেন এবং সেখান থেকে সামনে নিয়ে এসে শেষ করতেন। এভাবে তিনি পুরো মাথা মাসাহ করতেন। যেমন-

‘অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাত দ্বারা মাথা মাসাহ করেন। এতে দুই হাত তিনি সামনে করেন এবং পিছনে নেন। তিনি মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন অতঃপর যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন’। (ছহীহ বুখারী হা/১৮৫, ১/৩১ পৃঃ; বুখারী (ইফাবা হা/১৮৫); মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২/৭৮ পৃঃ; ছহীহ তিরমিযী হা/৩৪)।

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৪১ হিঃ) বলেন,

‘রাসূল (ছাঃ) কখনো মাথার কিছু অংশ মাসাহ করেছেন মর্মে কোন একটি হাদীছ থেকেও প্রমাণিত হয়নি’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা’)।

উল্লেখ্য, পাগড়ী পরা অবস্থায় থাকলে মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করা যাবে। (ছহীহ মুসলিম হা/৬৫৬, ৫৭, ৫৯, ১/১৩৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪ ও ৫২৫); মিশকাত হা/৩৯৯, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬৭, ২/৮১ পৃঃ; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা’)।

আরো উল্লেখ্য যে, পাগড়ীর নীচে মাসাহ করতেন বলে আবুদাঊদে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১৪৭, ১/১৯-২০ পৃঃ; যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৬৪)।

ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা

ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার পক্ষে ছহীহ কোন প্রমাণ নেই। এর পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল ও মিথ্যা। অথচ কিছু আলেম এর পক্ষে মুসলিম জনতাকে উৎসাহিত করেছেন। আশরাফ আলী থানবী ঘাড় মাসাহ করার দাবী করেছেন এবং এ সময় পৃথক দু‘আ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২ ও ৪৪)।

ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল (মদ্বীনা মুনাওয়ারাহ) প্রণীত ও মারকাযুদ-দাওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ, ঢাকার শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ অনুদিত ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে ওযূর সুন্নাত আলোচনা করতে গিয়ে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন। এর পক্ষে জাল হাদীছও পেশ করেছেন। (ঐ, (ঢাকা: মুমতায লাইব্রেরী, ১১, বাংলাবাজার, দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারী ২০১০), পৃঃ ১১৪-১১৫)।

এভাবেই ভিত্তিহীন আমলটি সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। জাল দলীলগুলো নিম্নরূপ :

(ক) ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর ওযূর পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। ..অতঃপর তিনি তিনবার তার মাথা মাসাহ করেন এবং দুই কানের পিঠ মাসাহ করেন ও ঘাড় মাসাহ করেন, দাড়ির পার্শ্ব মাসাহ করেন মাথার অতিরিক্ত পানি দিয়ে। (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৭৫৮৪, ২২/৫০)।

তাহক্বীক্বঃ  مِنْ كَلاَمِ النَّبِىِّ ‘এটা জাল। নবী (ছাঃ)-এর বক্তব্য নয়। (আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ১/৪৬৫ পৃঃ)।

বর্ণনাটি জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯ ও ৭৪৪)।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,

(খ) আমর ইবনু কা‘ব বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ওযূ করার সময় আমি দাড়ির পার্শ্ব এবং ঘাড় মাসাহ করতে দেখেছি। (ত্বাবারাণী কাবীর ১৯/১৮১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। ইবনুল ক্বাত্ত্বান বলেন, এর সনদ অপরিচিত। মুছাররফসহ তার পিতা ও দাদা সবাই অপরিচিত। (লিসানুল মীযান ৬/৪২ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ৮৩)।

(গ) ত্বালহা ইবনু মুছাররফ তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি একবার তাঁর মাথা মাসাহ করতেন এমনকি তিনি মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত পৌঁছাতেন। আর তা হল ঘাড়ের অগ্রভাগ। (আবুদাঊদ হা/১৩২, ১/১৭-১৮ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি মুনকার বা অস্বীকৃত। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিক পর্যন্ত মাসাহ করেন এমনকি তার দুই হাত কানের নিচ দিয়ে বের করে নেন’ এই কথা ইয়াহইয়ার কাছে বর্ণনা করলে তিনি একে অস্বীকৃতি জানান। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি, ইবনু উ‘আইনাহ বলতেন, মুহাদ্দিছগণ ধারণা করতেন এটা ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তিনি এটাও বলতেন, ত্বালহা তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে এ কথা কোথায় পেল? (যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩২-এর আলোচনা দ্রঃ)।

(ঘ) ‘ঘাড় মাসাহ করলে বেড়ী থেকে নিরাপদ থাকবে’।

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯, ১/১৬৮ পৃঃ)।

ইমাম সুয়ূত্বী জাল হাদীছের গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। (হাফেয জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, আল-লাআলিল মাছনূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৮ পৃঃ)।

(ঙ) ‘যে ব্যক্তি ওযূ করবে এবং ঘাড় মাসাহ করবে, তাকে ক্বিয়ামতের দিন বেড়ী দ্বারা বাঁধা হবে না’। (আবু নু‘আইম, তারীখুল আছবাহান ২/১১৫ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪, ২/১৬৭ পৃঃ)।

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী উক্ত বর্ণনাকে জাল বলেছেন। (আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতিল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ৭৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ)।

উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনু আমল আল-আনছারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মুহাররম নামের দু’জন রাবী ত্রুটিপূর্ণ। মুহাদ্দিছগণ তাদেরকে দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ)।

উল্লেখ্য যে, ঘাড় মাসাহ করা সম্পর্কে এ ধরনের মিথ্যা বর্ণনা আরো আছে। এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না। বরং ঘাড় মাসাহ করার অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।

ওযূর পর অঙ্গ মুছতে নিষেধ করা

ওযূ করার পর রুমাল, গামছা কিংবা কাপড় দ্বারা অঙ্গ মুছতে পারে। এটা ইচ্ছাধীন।

সালমান আল-ফারিসী থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করেন এবং তাঁর পরিধানের পশমী জুব্বা উল্টিয়ে তা দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল মাসহ(মাসেহ) করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪৬৮, বায়হাক্বী, সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ ২০৯৯; আওনুল মা‘বূদ ১/৪১৭-১৮ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 যে বর্ণনায় অঙ্গ মুছতে নিষেধ করা হয়েছে, তা জাল বা মিথ্যা।

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর, ওমর, আলী এবং ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ওযূর পর রুমাল দিয়ে মুখ মুছতেন না। (ইবনু শাহীন, নাসিখুল হাদীছ ওয়া মানসূখাহু, পৃঃ ১৪৫, দ্রঃ যাকারিয়া বিন গুলামা ক্বাদের পাকিস্তানী, তানকীহুল কালাম ফিল আহাদীছিয যঈফাহ ফী মাসাইলিল আহকাম (বৈরুত : দারু ইবনে হাযম, ১৯৯৯/১৪২০), পৃঃ ৯৬)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে সাঈদ বিন মাইসারা নামে একজন রাবী রয়েছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথ্যুক বলেছেন। ইবনু হিববান তাকে জাল হাদীছের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। (আওনুল মা‘বূদ ১/২৮৭ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ১/২২০ পৃঃ; নাসিখুল হাদীছ ওয়া মানসূখাহু, পৃঃ ১৪৫)।

উল্লেখ্য, উক্ত মর্মে যঈফ হাদীছও আছে।

হাত ধোয়ার সময় কনুই-এর উপরে আরো বেশী করে বাড়িয়ে ধৌত করা

হাত ধৌত করতে হবে কুনই পর্যন্ত। এর বেশি নয়। আল্লাহর নির্দেশ এটাই। (সূরা মায়েদাহ ৬)। হাদীছের শেষে ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করার যে বক্তব্য এসেছে, তার উদ্দেশ্য অঙ্গ বাড়িয়ে ধৌত করা নয়; বরং ভালভাবে ওযূ সম্পাদন করা। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫২ নং-এর ভাষ্য দ্রঃ, উল্লেখ্য, উক্ত অংশটুকু সংযোজনের ক্ষেত্রে ত্রুটি সাব্যস্ত হয়েছে বলেও মুহাদ্দিছগণ উল্লেখ করেছেন। (দ্রষ্টব্য আহমাদ হা/৮৩৯৪; ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী হা/১৩৬-এর আলোচনা, ‘ওযূর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; ইরওয়াউল গালীল ১/১৩৩ পৃঃ)।

চামড়ার মোজা ছাড়া মাসাহ করা যাবে না বলে ধারণা করা

উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং যেকোন পবিত্র মোজার উপর মাসাহ করা যাবে।

মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করলেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৯৯, ইবনু মাজাহ ৫৫৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৯, ইরওয়া ১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদীছে কোন নির্দিষ্ট মোজার শর্তারোপ করা হয়নি। (আলোচনা দ্রঃ ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউ ফাতাওয়া ১/২৬২ পৃঃ; আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ১৪-১৫)।

মোজার উপরে ও নীচে মাসাহ করা

অনেককে মোজার উপরে-নীচে উভয় দিকে মাসাহ করতে দেখা যায়। অথচ সুন্নাত হলো মোজার উপরে মাসাহ করা।

মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি কোন এক সফরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলেন। এক সময় তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেন। (প্রয়োজন সেরে আসার পর) মুগীরাহ তাঁকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং তিনি উযূ করছিলেন। তিনি তাঁর মুখমন্ডল এবং দু’হাত ধুলেন এবং তাঁর মাথা মাসেহ করলেন ও উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮২, ২০৩, ২০৬, ৩৬৩, ৩৮৮, ২৯১৮, ৪৪২১, ৫৭৯৮, ৫৭৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪, আহমাদ ১৮১৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরে-নীচে উভয় দিকে মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সনদ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন-

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোজার উপরিভাগ ও নিম্নভাগ মাসহ(মাসেহ) করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৫৫০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮২, ২০৩, ২০৬, ৩৬৩, ৩৮৮, ২৯১৮, ৪৪২১, ৫৭৯৮, ৫৭৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪, সুনান আততিরমিযী ৯৭, ৯৮, ১০০; সুনান আননাসায়ী ৭৯, ৮২, ১০৯, ১২৩-২৫; সুনান আবূ দাঊদ ১৪৯-৫১, ১৫৯; আহমাদ ১৭৬৬৮, ১৭৬৭৫, ১৭৬৭৯, ১৭৬৯২, ১৭৭০৫, ১৭৭১০, ১৭৭২৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৭৩, দারিমী ৭১৩)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন, ‘এই হাদীছটি ত্রুটিপূর্ণ। আমি ইমাম আবু যুর‘আহ ও ইমাম বুখারীকে এই হাদীছ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এই হাদীছ ছহীহ নয়। ইমাম আবুদাঊদও একে দুর্বল বলেছেন। (তিরমিযী হা/৯৭, ১/২৮ পৃঃ)।

এই হাদীছের সনদে ছাওর নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, সে রাজা ইবনু হাইওয়া থেকে না শুনেই বর্ণনা করেছে। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ)।

জ্ঞাতব্যঃ বর্তমানে অনেকেই মোজা পরিহিত অবস্থায় টাখনুর নীচে লুঙ্গি-প্যান্ট পরিধান করাকে জায়েয বলছেন ও পরিধান করছেন। এটা শরী‘আতকে ছোট করার মিথ্যা কৌশল মাত্র। পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির সাথে আপোস করে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে নস্যাৎ করতে চায়। এই মিথ্যা কৌশল থেকে সাবধান থাকতে হবে।

ওযূর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দু‘আ পড়া

ওযূর দু‘আ পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

উক্ববা বিন আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করল, অতঃপর আকাশের দিকে চোখ তুলে দু‘আ পড়ল, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যেকোন দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (আহমাদ হা/১২১; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৩)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মুনকার। ‘আকাশের দিকে তাকানো’ অংশটুকু ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তাই শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘এই অতিরিক্ত অংশটুকু অস্বীকৃত। কারণ ইবনু আম আবী উক্বাইল এককভাবে বর্ণনা করেছে। সে অপরিচিত’। (ইরওয়াউল গালীল হা/৯৬-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/১৩৫ পৃঃ)।

ওযূর পরে সূরা ক্বদর পড়া

ওযূর পর সূরা ক্বদর পড়া যাবে না। উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ওযূর পর ‘ইন্না আনযালনা-হু ফী লায়লাতিল ক্বাদরি’ অর্থাৎ সূরা ক্বদর একবার পাঠ করবে সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যে দুই বার পাঠ করবে তার নাম শহীদদের দফতরে লিখা হবে এবং যে ব্যক্তি তিনবার পাঠ করবে আল্লাহ তাকে নবীদের সাথে হাশর-নাশর করাবেন। (দায়লামী, মুসনাদুল ফেরদাঊস; সুয়ূত্বী, আল-হাবী লিল ফাতাওয়া ২/১১ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর কোন সনদই নেই। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৪৯ ও ১৫২৭)।

উল্লেখ্য যে, আশরাফ আলী থানবী তার বইয়ে সূরা ক্বদর পড়ার কথা বলেছেন এবং ওযূর পরের দু‘আর সাথে অনেকগুলো নতুন শব্দ যোগ করেছেন যা হাদীছের গ্রন্থ সমূহে পাওয়া যায় না। (পূর্ণাঙ্গ নামায, পৃঃ ৪৫)।

অতএব সাবধান! ওযূ করার পর শুধু নিম্নের দু‘আ পাঠ করতে হবে, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।

“আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু। আল্ল-হুম্মাজ্‘আল্নী মিনাত্ তাউওয়াবীনা ওয়াজ্‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন”।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যথাযথভাবে ওযূ করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজার সবই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারবে’।

’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ  করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ করবে, এরপর বলবেঃ

“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’,

অর্থাৎ- ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ

“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’-

(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আর হুমায়দী তাঁর আফরাদে মুসলিম গ্রন্থে, ইবনুল ’আসীর ’’জামি’উল উসূল’’ গ্রন্থে এরূপ ও শায়খ মুহীউদ্দীন নাবাবী হাদীসের শেষে আমি যেরূপ বর্ণনা করেছি এরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম তিরমিযী উপরোক্ত দু’আর পরে আরো বর্ণনা করেছেনঃ

“আল্লা-হুম্মাজ ’আলনী মিনাত্ তাওয়া-বীনা ওয়াজ ’আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরীন’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তওবা্‌কারীদের মধ্যে শামিল কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে গণ্য কর)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ২৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, সুনান আততিরমিযী ৫৫, সহীহুল জামি‘ ৬১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব মিথ্যা ফযীলতের প্রয়োজন নেই। মুছল্লীর প্রয়োজন জান্নাত।

রক্ত বের হলে ওযূ ভেঙ্গে যায়

শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের হলে ওযূ করতে হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ) তামীম আদ্ দারী (রাঃ)হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রবহমান রক্তের কারণেই উযূ করতে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৩, দারাকুত্বনী ১/১৫৭)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০)।

ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেন, ওমর ইবনু আব্দুল আযীয তামীম দারীর নিকট থেকে শুনেননি। আর ইয়াযীদ ইবনু খালেদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ দুইজনই অপরিচিত। (দারাকুৎনী ১/১৫৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৩৩ )।

তাছাড়া রক্ত বের হওয়া অবস্থায় ছাহাবায়ে কেরাম ছালাত আদায় করতেন। (আবুদাঊদ হা/১৯৮, ১/২৬ পৃঃ, সনদ হাসান, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৯)।

তারা ওযূ করতেন না মর্মে ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

বাকর (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তার মুখমন্ডলে উঠা ফোড়ায় চাপ দিলেন ফলে কিছু রক্ত বের হল। তখন তিনি আঙ্গুল দ্বারা ঘষে দিলেন। অতঃপর ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু ওযূ করেননি। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১৪৬৯, সনদ ছহীহ; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/৬৮৩ পৃঃ)।

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, রক্ত বের হলে ওযূ করা ওয়াজিব হবে মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তা কম হোক বা বেশী হোক। (আলবানী, মিশকাত হা/৩৩৩-এর টীকা দ্রঃ ১/১০৮ পৃঃ)।

বমি হলে ওযূ ভেঙ্গে যায়

ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে বিভিন্ন গ্রন্থে বমিকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মানুষও তাই আমল করে থাকে। অথচ তার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই।

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতরত অবস্থায় কারো বমি হলে, নাক দিয়ে রক্ত বের হলে, খাদ্য বা পানীয় পেট থেকে মুখে চলে এলে অথবা বীর্যরস নির্গত হলে, সে যেন বাইরে এসে উযূ করে, অতঃপর পূর্বোক্ত সালাতের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ করে, উক্ত অবস্থায় যদি সে কথা না বলে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১২২১)।হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে, সে যঈফ। সে হিজাযের দুই ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারাও যঈফ। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/১২২১; যঈফ আবুদাঊদ (আল-উম্ম), পৃঃ ৬৮; যঈফুল জামে‘ হা/৫৪২৬)।

(খ)  যায়েদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বমি অপবিত্র। (দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি নিতান্ত যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, এর সনদে সাওর নামক রাবী রয়েছে। সে যায়েদ বা অন্য কারো নিকট থেকে বর্ণনা করেনি। (দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০৭৫, ৯/৭২ পৃঃ; যঈফুল জামে‘ হা/৪১৩৯)।

অতএব বমি হলে ওযূ করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ বিধান নেই।

জ্ঞাতব্যঃ হেদায়া ও কুদূরীতে রক্ত বের হওয়া ও বমি হওয়াকে ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩; বঙ্গানুবাদ ১/৮-৯ পৃঃ; কুদূরী, পৃঃ ৫)।

আর সে কারণেই এই আমল চালু আছে। দুঃখজনক হল, ইমাম দারাকুৎনীর উক্ত মন্তব্য থাকতে হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে তা পেশ করা হল?

ওযূ থাকা সত্ত্বেও ওযূ করলে দশগুণ নেকী

উক্ত ফযীলত সঠিক নয়। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।

(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন যোহরের আযান দেয়া হল তখন তিনি ওযূ করলেন এবং ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর যখন আছরের আযান দেয়া হল তখনও ওযূ করলেন। রাবী বলেন, আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ওযূ অবস্থায় ওযূ করবে, তার জন্য আল্লাহ দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। (আবুদাঊদ হা/৬২, ১/৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫১২, পৃঃ ৩৯; তিরমিযী হা/৫৯, ১/১৯ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৩, ২/৪৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী, মুনযেরী, ইরাক্বী, নববী, ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিছ হাদীছটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১০)।

উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ ইফরীক্বী ও গুত্বাইফ নামক দুইজন দুর্বল ও অপরিচিত রাবী আছে। (আবুদাঊদ হা/৬২; ইবনু মাজাহ হা/৫১২; তিরমিযী হা/৫৯; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩, ১/৯৬ পৃঃ)।

(খ) ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি একবার করে ওযূ করবে সে ব্যক্তি ওযূর নিয়ম পালন করল, যা তার জন্য আবশ্যক ছিল। যে ব্যক্তি দুইবার করে ধৌত করবে সে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি তিনবার করে ধৌত করবে তার ওযূ আমার ও আমার পূর্বের নবীগণের ওযূর ন্যায় হল। (মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭৩৫; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৪)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৩৬; তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/৫৭৩৫)।

উক্ত যঈফ হাদীছ হেদায়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে। (ঐ, ১/১৯ পৃঃ)।

এর সনদে যায়েদ আল-আম্মী নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৪২০)।

(গ) ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বান্দা যখন উত্তমরূপে ওযূ করে তখন আল্লাহ তার সামনের ও পিছনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদুল বাযযার হা/৪২২, ১/৯৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯২)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মুনকার বা অস্বীকৃত। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০৩৬, ১১/৬২ পৃঃ)।

মুছল্লীর ওযূতে ত্রুটি থাকলে ইমামের ক্বিরাআতে ভুল হয়

অনেক আলেমের মাঝে উক্ত বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

শাবীব আবী রাওহ ছাহাবীদের কোন একজন থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাত আদায় করলেন এবং সূরা রূম পড়লেন। কিন্তু পড়ার মাঝে কিছু গোলমাল হল। ছালাত শেষে তিনি বললেন, তাদের কী হয়েছে যে, যারা আমাদের সাথে ছালাত আদায় করে অথচ উত্তমরূপে ওযূ করে না। এরাই আমাদের কুরআন তেলাওয়াতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। (নাসাঈ হা/৯৪৭, ১/১১০ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৫, পৃঃ ৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৫, ২/৪৪)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল মালেক বিন উমাইর নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে। (তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/২৯৫-এর টীকা দ্রঃ; নাসাঈ হা/৯৪৭; যঈফুল জামে‘ হা/৫০৩৪)।

মাথার চুলের গোড়ায় নাপাকি থাকবে মনে করে সর্বদা মাথার চুল ছোট করে রাখা বা কামিয়ে রাখা

নাপাকির ভয়ে এক শ্রেণীর মুরববী সর্বদা মাথা ন্যাড়া করে রাখেন বা চুল খুব ছোট করে রাখেন এবং একে খুব ফযীলতপূর্ণ মনে করেন। আলী (রাঃ) এরূপ করতেন বলে তারা এর অনুসরণ করে থাকেন। অথচ উক্ত মর্মে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা যঈফ। মোটেই আমলযোগ্য নয়।

(ক) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নাপাকীর একচুল পরিমাণ স্থানও ছেড়ে দিবে এবং উহা ধৌত করবে না, তার সাথে আগুনের দ্বারা এই এই ব্যবস্থা করা হবে। আলী (রাঃ) বলেন, সে অবধিই আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করেছি। একথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি তার মাথার চুল খুব ছোট করে রাখতেন। (আবুদাঊদ হা/২৪৯, ১/৩৩ পৃঃ; আহমাদ হা/১১২১; মিশকাত হা/৪৪৪, পৃঃ ৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৮)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৩; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৪, ১/১৩৮ পৃঃ)।

উক্ত বর্ণনার সনদে ‘আত্বা, হাম্মাদ ও যাযান নামের ব্যক্তি ত্রুটিপূর্ণ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০, ২/২৩২ পৃঃ)।

(খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক চুলের নীচেই নাপাকি রয়েছে। সুতরাং চুলগুলোকে ভালভাবে ধৌত করবে এবং চামড়াকে সুন্দর করে পরিষ্কার করবে। (আবুদাঊদ হা/২৪৮, ১/৩৩ পৃঃ; তিরমিযী হা/১০৬, ১/২৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫৯৭, পৃঃ ৪৪; আলবানী, মিশকাত হা/৪৪৩, পৃঃ ৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৭, ২/৯৭ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১)।

এর সনদে হারিছ ইবনু ওয়াজীহ নামক এক রাবী আছে। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, তার হাদীছ মুনকার আর সে দুর্বল রাবী। (যঈফ আবুদাঊদ হা/২৮৪; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৩, ১/১৩৮ পৃঃ)।

(গ) আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ থেকে অপর জুম‘আ, আমানত আদায় করা- এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। আমি বললাম, আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, জানাবাতের গোসল করা। কারণ প্রতিটি পশমের গোড়ায় নাপাকি রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ হা/৫৯৮, পৃঃ ৪৪, ‘পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০৬)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত হাদীছও যঈফ। (যঈফ সুনান ইবনে মাজাহ হা/৫৯৮)।

এর সনদে উতবা ইবনু আবী হাকীম নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১, ৮/২৭২)।

মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ

শরী‘আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল।

(ক) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সালাতের জন্য (উযূ করার সময়) মিসওয়াক করা হয় তার ফাযীলাত সত্তর গুণ বেশী সে সালাতের চেয়ে যে সালাতে মিসওয়াক করা হয়নি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ৩৮৯, বায়হাক্বী ২৭৭৪, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ১৫০৩, আহমাদ ৩/২৭২, হাকিম ১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,

মু‘আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে মিথ্যুক। (আলবানী, মিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ, ১/১২৪ পৃঃ)।

(খ) মিসওয়াক করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা- মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার সমান। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩; মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ)।

উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম। (ঐ, মুন্তাখাব হাদীস, অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ সা‘আদ (ঢাকা : দারুল কুতুব, দ্বিতীয় প্রকাশ : আগস্ট ২০১০), পৃঃ ২৯৯)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, এর সনদে মু‘আবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে। সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে। সে মিথ্যুক। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃ; যঈফুল জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৩১২৭)।

(গ) যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না। (ত্বাবারাণী হা/৫২৬১; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩)।

(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূর করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ হরাস করে (৯) এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে। (দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল (বাংলা) ফাযায়েলে নামায অংশ, পৃঃ ৬৮-৬৯)।

তাহক্বীকঃ হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মু‘আল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী। (দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ)।

(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়। (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেননি। (আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬)।

(চ)  আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করে এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসেছেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। শেষে আমার আশঙ্কা হয় যে, তা আমার ও আমার উম্মাতের জন্য ফরয করা হবে। আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরয করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মাড়িতে ঘা হওয়ার আশঙ্কা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৯, আহমাদ ২১৭৬৬, তারগীব ১৪৪, তালীকুর রগীব ১/১০১, ১০২)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীকঃ হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন এবং নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের একজন রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন। (মুগাল্লাত্বঈ, শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সঊদী আরব : মাকতাবাহ নিযার মুছত্বফা আল-বায, ১৪১৯ হিঃ), ১/৬২ পৃঃ)।

(ছ) আবূ আইয়ূব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি বিষয় নবী-রসূলদের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত- (১) লজ্জাশীলতা, আর এক বর্ণনায় এর স্থলে খতনার কথা বলা হয়েছে; (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা; (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) বিয়ে করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২, সুনান আততিরমিযী ১০৮০, ইরওয়া ৩৩, সিলসিলা য‘ঈফাহ্ ৪৫২৩)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীকঃ বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। আইয়ূব ও মাকহূলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর‘আহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী অপরিচিত বলেছেন। (মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫/১৯৮৫), হা/৭৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৭)।

যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করা ফযিলতপূর্ণ

যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

(ক) মু‘আয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, উত্তম মিসওয়াক হল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ, যা মুখকে পবিত্র করে ও দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক। (ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব, হা/৬৮৯)।

তাহক্বীকঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-উকাশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন। (আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১৫/১৯৯৪), ৯/৩৭১ পৃঃ)।

ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুহছিন উকাশীও আছে। সে চরম মিথ্যাবাদী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০)।

(খ) আবু খায়রাহ ছববাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম, যারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়েছিল। তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তা দ্বারা মিসওয়াক করি। আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান গ্রহণ করছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আব্দুল ক্বায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করুন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, অসন্তুষ্টিতে নয়। আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৮৩৫৯; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০)।

তাহক্বীকঃ হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাঊদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুক্বাতিল বিন হুমামও অপরিচিত। (ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ)।

আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করাই যথেষ্ট

 মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট, একথা ঠিক নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট। (বায়হাক্বী ১/৪০, ইবনু আদী ৫/৩৩৪)।

তাহক্বীকঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ। বরং দারাকুৎনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথ্যুক বলেছেন। তাছাড়া আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১; ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯; যঈফুল জামে হা/৬৪১৫)।

ছিয়াম অবস্থায় কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক না করাঃ

উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বরং কাঁচা হোক শুকনা হোক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৩৪, ১৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাআতের ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ে বলা হয়েছে, ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, মিসওয়াকের এহতেমাম করার মধ্যে সত্তরটি উপকার রয়েছে। তার মধ্যে একটি মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদত নসীব হয়। (ফাযায়েলে নামায অংশ, ৬৯ পৃঃ)।

উক্ত দাবী উদ্ভট ও ভিত্তিহীন। এভাবে শরী‘আতকে হেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

মিসওয়াক সম্পর্কে সহিহ হাদিস

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসওয়াক হলো মুখগহ্বর পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১, বুখারী ২/৬৮২ (তা‘লীক সূত্রে), সুনান আননাসায়ী ৫, সহীহুত্ তারগীব ২০৯, দারিমী ৭১১)। মুসনাদে আহমাদ ৬৪৯৬৯, ২৪২০৩, ইবনু হিব্বান-এর “মাওয়ারিদ" ১৪৩, মুসনাদে হুমায়দী ১৬২, বায়হাকী-এর “সুনানুল কুবরা” ১৩৪, ইরওয়াউল গালীল ৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি  ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয়, তা ফেরেশতার পেটের মাঝে প্রবেশ করে। সুতরাং তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার রাখ’। (আবুবকর আহমাদ ইবনু আমর আল-বাছরী আল-বাযযার, মুসনাদুল বাযযার হা/৬০৩, ১/১২১ পৃঃ; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩, ৩/২৮৭ পৃঃ)।

উল্লেখ্য, মিসওয়াকের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।

মাথায় টুপি দিয়ে বা মাথা ঢেকে টয়লেটে যাওয়া

পেশাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় মাথায় টুপি দেওয়া বা মাথা ঢেকে যাওয়ার প্রথা সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর মাথা ঢেকে নিতেন এবং যখন স্ত্রী সহবাস করতেন, তখনও মাথা ঢাকতেন। (বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৪৬৪)।

তাহক্বীকঃ হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস আল-কাদীমী নামক রাবী রয়েছে। সে এই হাদীছ জাল করেছে। এছাড়া তার শিক্ষক আলী ইবনু হাইয়ান আল-মাখযূমীকে ইবনু হাজার আসক্বালানী মাতরূক বলেছেন। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছও এই হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯২)।

পানি থাকা সত্ত্বেও কুলুখ নেওয়া অথবা কুলুখ নেওয়ার পর পুনরায় পানি নিয়ে ইস্তিঞ্জা করা

পানি থাকা অবস্থায় কুলুখ নেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। পানি না পাওয়া গেলে কুলুখ নেওয়া যাবে। তবে পুনরায় পানি ব্যবহার করতে হবে না। কুলুখ নেওয়ার পর পানি নেওয়া সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণনা করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত আয়াত কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ‘এতে এমন কতিপয় লোক রয়েছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসে। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন’ (তওবা ১০৮)। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছিল, (আমরা ইস্তিঞ্জা করার সময়) ঢিল নেওয়ার পর পানি নিই।

তাহক্বীকঃ বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। এই বর্ণনার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১-এর ভাষ্য দ্রঃ)।

ইমাম বাযযার এটি বর্ণনা করে বলেন, ‘যুহরী থেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আযীয ছাড়া অন্য কেউ একে বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। আর সে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছে। (তালখীছ, পৃঃ ৪১, দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ)।

ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হিঃ) বলেন,

মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আযীযকে আবু হাতেম যঈফ বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তার ও তার দুই ভাই ইমরান ও আব্দুল্লাহ কারো একটি হাদীছও সঠিক নয়। তাছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীবও দুর্বল। (ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর ফী আহাদীছির রাফইল কাবীর হা/১৫১; দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ)।

উক্ত বর্ণনার বিরোধী সহিহ হাদিস:

উক্ত হাদীছ যে জাল তার বাস্তব প্রমাণ হল নিম্নের ছহীহ হাদীছ, যেখানে ঢিলের কথাই নেই।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই আয়াত কুবাবাসীদের সম্পর্কে হয়েছিলঃ ’’সেখানে এমন সব লোক রয়েছে যারা পাক-পবিত্র থাকতে ভালবাসে।’’ (সূরাহ তওবা্ : ১০৮)। তিনি (রাবী) বলেন, কুবাবাসীরা পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করত। তাই তাদের শানে এই আয়াত অবতীর্ন হয়েছিল। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪, সুনান আততিরমিযী ৩১০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৭, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/১০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদিসে এসেছে,

আবূ আইয়ূব, জাবির ও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। যখন এ আয়াত নাযিল হয়, অর্থাৎ- ’’সেখানে (মসজিদে কু’বায়) এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা অর্জন করাকে পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন’’- (সূরাহ্ আত্ তওবা্ ৯: ১০৮) তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনসারগণ! এ আয়াতে আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমাদের পবিত্রতা কী? তাঁরা বললেন, আমরা সালাতের জন্য উযূ করি, নাপাকী হতে পবিত্র হবার জন্য গোসল করি, পানি দিয়ে পবিত্রতা লাভ করে থাকি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটাই (পবিত্রতা), যার জন্য আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা করেছেন। সুতরাং তোমরা সবসময় এটা করতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৫৫, সহীহ আবূ দাঊদ ৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মূল কথা হল, অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরা শুধু ঢিল দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত। কিন্তু কুবাবাসীরা অন্যদের তুলনায় শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। সে জন্যই আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।

আরেকটি জাল হাদীছ :

আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বামীদেরকে বলে দাও, তারা যেন পেশাব-পায়খানার সময় ঢিল নেওয়ার পর পানি ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। কারণ রাসূল (ছাঃ) এটা করেন। (ইরওয়াউল গালীল হা/৪২)।

তাহক্বীকঃ বর্ণনাটি জাল। এ শব্দে কোন বর্ণনা নেই। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই। (ইরওয়াউল গালীল ১/৮২ পৃঃ)।

 উক্ত বর্ণনার বিরোধী সরাসরি ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কুলুখ নেওয়ার কথা নেই; বরং শুধু পানি নেওয়ার কথা রয়েছে। যেমন-

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি (মহিলাদের) বললেন, তোমরা তোমাদের স্বামীদের পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার নির্দেশ দাও। আমি (স্ত্রীলোক হিসাবে) তাদের (এ নির্দেশ দিতে) লজ্জাবোধ করছি। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পানি দিয়ে ইস্তিনজা করতেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯, ইরওয়া ৪২, সুনান আননাসাঈ ৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত উক্ত মিথ্যা প্রথাকে অবশ্যই উচ্ছেদ করতে হবে। পানি থাকা সত্ত্বেও যেন কোন স্থানে কুলুখের স্তূপ সৃষ্টি না হয়। কারণ প্রকৃত ফযীলত পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার মধ্যেই রয়েছে।

কুলুখ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করা

 কুলুখ নিয়ে চল্লিশ কদম হাঁটা, কাশি দেওয়া, নাচানাচি করা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা, টয়লেটে কুলুখের আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা সবই নব্য মূর্খতা। ইসলামে এরূপ বেহায়াপনার কোন স্থান নেই। মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকা মানুষকে এত নীচে নামিয়েছে। উল্লেখ্য যে, পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের পেশাবে অপবিত্রতার মাত্রা বেশী।

আবূস সামহ্ (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাত করতাম। তিনি গোসল করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলতেনঃ তুমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়াও। তখন আমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখতাম। একবার হাসান অথবা হুসাইন (রাঃ)-কে আনা হলে তাঁদের একজন তাঁর বুকে পেশাব করে দিলেন। আমি তা ধৌত করতে এলে তিনি বললেনঃ মেয়ে শিশুর পেশাব ধোয়া আবশ্যক হয়। আর ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৬, সুনান আননাসায়ী  ৩০৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৫২৬, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৫১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথচ তাদের ব্যাপারে এ ধরনের চরম ফতোয়া দেয়া হয় না। অনুরূপভাবে একই ব্যক্তি যখন টয়লেট থেকে বের হয় তখন কিন্তু হাঁটাহাঁটি করে না, কুলুখও ধরে না। এগুলো তামাশা মাত্র। এই অভ্যাস ইসলামের বিশ্বজনীন মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। ইসলাম সৌন্দর্য মন্ডিত জীবন বিধান। যাবতীয় নোংরামী এখানে নিষিদ্ধ। শরী‘আতে পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। তাই বলে এর নামে নতুন আরেকটি বিদ‘আত তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পেশাবের ছিটা কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকায় ইসলাম তার জন্য সুন্দর বিধান দিয়েছে। আর তা হল, ওযূ করার পর হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেওয়া। যেমন-

সুফিয়ান ইবনু হাকাম আস-সাক্বাফী অথবা হাকাম ইবনু সুফিয়ান আস-সাক্বাফী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পেশাব করতেন, তখন অযু করে (লজ্জাস্থানে) পানি ছিটাতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৬,  সুনান আননাসায়ী ১৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৬১, আহমাদ (৩/৪১০, ৪/১৭৯, ৫/৪০৮, ৪০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অতএব প্রচলিত বেহায়াপনার আশ্রয় নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নারী-পুরুষ সকলকে এ ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।

ওযূর অবশিষ্ট পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা যাবে না এবং ইস্তিঞ্জা করার পর অবশিষ্ট পানি দ্বারা ওযূ করা যাবে না বলে ধারণা করা

 উক্ত বিশ্বাস সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বরং তাঁরা যে পাত্রে ওযূ করতেন সে পাত্রের পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জাও সম্পন্ন করতেন।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় যেতেন। আমি এবং অন্য এক বালক পানির পাত্র ও বর্শাধারী একটি লাঠি নিয়ে যেতাম। সে পানি দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শৌচ কার্য সমাধা করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

উল্লেখ্য যে, আবুদাঊদ ও নাসাঈতে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূল (ছাঃ) যে পাত্রের পানিতে ইস্তিঞ্জা করেন, তার বিপরীত পাত্রে ওযূ করেন।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলে আমি তাঁর পেছনে পেছনে কখনো ’তাওর’-এ করে আবার কখনো ’রক্ওয়াহ্’-এ করে পানি নিয়ে যেতাম। এ পানি দ্বারা তিনি শৌচকর্ম সম্পাদন করতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাটিতে স্বীয় হাত ঘষতেন। অতঃপর আমি আর এক পাত্রে পানি আনতাম। এ পানি দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ  করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬০, সুনান আবূ দাঊদ ৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মূলতঃ পাত্রের পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল বলেই অন্য পাত্র তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। মুহাদ্দিছগণ এমনটিই বলেছেন। (আল্লামা মুহাম্মাদ শামসুল হক আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ শরহে সুনানে আবী দাঊদ (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিইয়াহ, ১৪১৫ হিঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৫)।

পেশাব-পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর ‘আল-হামদুলিল্লা-হিললাযি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া ‘আফানী’ দু‘আ পাঠ করা

 টয়লেট সারার পর বলবে, ‘গুফরা-নাকা’, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।

আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানা থেকে বের হতেন, তখন বলতেনঃ ’গুফরানাকা’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩০, সুনান আততিরমিযী ৭,  সুনান ইবনু মাজাহ  ৩০০, দারিমী  ৬৮০, আহমাদ (৬/১৫৫), সুনান নাসায়ী ‘আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ৭৯, ইবনু খুযাইমাহ (১/৪৮), ৯০, হাকিম (১/১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আল-হামদুলিল্লা-হিললাযি.. মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানা হতে বের হতেন, এ দু’আ পড়তেনঃ

“আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আযহাবা ’আন্নিল আযা- ওয়া’আ-ফানী’’-

অর্থাৎ- সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করেছেন ও আমাকে নিরাপদ করেছেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...