Search This Blog

Tuesday, February 11, 2020

কিয়ামত সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত এবং সহিহ ও জাল-জইফ হাদিসসমূহ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কিয়ামত সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত এবং সহিহ ও জাল-জইফ হাদিসসমূহ
কিয়ামত সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত
ক্বিয়ামত হ’ল মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার অলৌকিক শক্তির রূপায়ণ ও নিদর্শন। ক্বিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিবেশের কথা জানার জন্য বিশ্ববাসীর চরম আগ্রহের প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা‘আলা এর সময়কাল গোপন রেখেছেন। কোন নবী-রাসূল বা ফেরেশতারাও এর আসন্ন সময়কাল জানেন না। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিশেষ করে উম্মতে মুহাম্মাদীর অনেকে বিষয়টি বার বার জানার আগ্রহ ব্যক্ত করলে, আল্লাহ তা‘আলা এর গোপনীয়তা সংরক্ষণের কথা বিভিন্নভাবে প্রত্যাদেশ করে পৃথিবীবাসীকে অবহিত করেন।
মহান আল্লাহ বলেন: ‘লোকেরা আপনাকে ক্বিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে। আপনি কি করে জানবেন যে, সম্ভবতঃ ক্বিয়ামত শীঘ্রই হয়ে যেতে পারে’। [আহযাব ৬৩]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন: ‘বরকতময় তিনিই, নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু যাঁর। তাঁরই কাছে আছে ক্বিয়ামতের জ্ঞান এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’। [যুখরুফ ৮৫]
ক্বিয়ামতের গোপনীয়তা রক্ষার ঘোষণায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকেই তার কর্ম অনুযায়ী ফল লাভ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের জ্ঞান রাখে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত হ’লে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে’। [ত্ব-হা ১৫-১৬]
একই বিষয়ে অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। ক্বিয়ামতের ব্যাপারটি তো এমন, যেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান’। [নাহল ৭৭]
এ বিষয়ে এরশাদ হচ্ছে: ‘আপনাকে জিজ্ঞেস করে, ক্বিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন, এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা যথাসময়ে প্রকাশ করবেন। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয় হবে। তোমাদের উপর আকস্মিকভাবেই তা এসে যাবে। তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ শুধু আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানে না’। [আ‘রাফ ১৮৭]
ক্বিয়ামত দিবস হবে অকল্পনীয় ও অবর্ণনীয় এক মহাদিবস। মানব সৃষ্টির নেপথ্যে যে মহারহস্য নিহিত আছে, আসন্ন ক্বিয়ামত দিবসের ঘোষণায়ও অনুরূপ আশ্চর্যজনক রহস্য লুক্কায়িত আছে। এর মধ্য দিয়ে ক্বিয়ামতের সর্বোচ্চ ও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সমূহ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।
সর্বশক্তিমান আল্লাহর অসীম কুদরত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরও গভীরতর বিচার-বিশ্লেষণের অভাবে একটা বৃহৎ দল ধর্মদ্বেষী হয়ে ক্বিয়ামতে অবিশ্বাসী হয়ে পড়ে। ফলে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী উভয় দলের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা দেয়।
সর্বজ্ঞ আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করে প্রত্যাদেশ করেন যে: ‘ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না’। [মুমিন ৫৯]
মূলতঃ ক্বিয়ামতে অবিশ্বাসী হচ্ছে কাফের ও মুনাফিকদের দল। কাফেরদের ক্বিয়ামতে অবিশ্বাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় রাসূল (সা:)-কে প্রত্যাদেশ করেন: ‘কাফেররা বলে, আমাদের উপর ক্বিয়ামত আসবে না। বলুন, আমার পালনকর্তার শপথ! অবশ্যই তোমাদের নিকটে আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে তাঁর অগোচর নয় অনুপরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ, সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে’। [সাবা ৩]
একই বিষয়ে আরো বলা হয়েছে: ‘বলুন, তোমাদের জন্য একটি দিনের ওয়াদা রয়েছে, যাকে তোমরা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না এবং ত্বরান্বিতও করতে পারবে না’। [সাবা ৩০]
কাফেররা ক্বিয়ামতকে একটা মিথ্যা প্রচারণা মনে করে। ফলে তাদের মনে নানারূপ সন্দেহ-সংশয় ও অবিশ্বাস ভর করে এবং তারা বিভিন্নভাবে একে প্রত্যাখ্যান করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: ‘কাফেররা সর্বদা সন্দেহ পোষণ করবে যে পর্যন্ত না তাদের কাছে আকস্মিকভাবে ক্বিয়ামত এসে পড়ে অথবা এসে পড়ে তাদের কাছে এমন দিবসের শাস্তি, যা থেকে রক্ষার উপায় নেই। রাজত্ব সেদিন আল্লাহরই, তিনিই তাদের বিচার করবেন। অতএব যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তারা নে‘মতপূর্ণ কাননে থাকবে এবং যারা কুফরী করে এবং আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে তাদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি রয়েছে’। [সূরাঃ হাজ্জ ৫৫-৫৭]
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে’। [জাছিয়া ২৭]
তিনি আরো বলেন: ‘যখন বলা হয়, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং ক্বিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলে থাক আমরা জানি না ক্বিয়ামত কি? আমরা কেবল ধারণাই করি এবং এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। তাদের মন্দ কর্মগুলো তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যে আযাব নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তা তাদেরকে গ্রাস করবে’। [জাছিয়া ৩২-৩৩]
বর্তমান বিশ্বে আধুনিক বিজ্ঞানী বা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন এবং বিগত কয়েক দশকে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার দিন তারিখও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা এতটুকু কার্যকর হয়নি। অতএব বুঝা যায়, এ পৃথিবীর কোন কিছুই কার্যকর হয় না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। অবশ্য বিজ্ঞানীদের বর্ণনায় পৃথিবীর ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে ক্বিয়ামতের ধ্বংসযজ্ঞের যৎসামান্য সাদৃশ্য রয়েছে। বিজ্ঞানীদের এই তথ্যে বর্তমান বিশ্বের জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিনক্ষণ গোপন রেখেছেন। তিনি একদিন তা প্রকাশ করে দেবেন, আর সঙ্গে সঙ্গে ক্বিয়ামত শুরু হয়ে যাবে।
পার্থিব জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বহু বিষয়ে মানুষের কোন জ্ঞান নেই, যেমন কে কোথায় জন্মগ্রহণ করবে ও মৃত্যুবরণ করবে, আগামী কাল কি ঘটবে, কে ধনী হবে আর কে হবে দরিদ্র, কে হবে ভাগ্যবান আর কে হতভাগ্য, কে হবে অন্ধ, পঙ্গু আর কে হবে সর্বাঙ্গ সুন্দর, আর কখন হবে প্রচন্ড ঝড় ও বৃষ্টি, ভূকম্পন ও ভূমিধ্বস ইত্যাদি, কোন মানুষের পক্ষে তা জানা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু ক্বিয়ামতের মতই এগুলো আল্লাহর জানা। তাঁর পক্ষে অসম্ভব বলতে কোন কিছুই নেই।
এ মর্মে আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই ক্বিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত’। [লোকমান ৩৪]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন: ‘ক্বিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই জানা। তাঁর অজ্ঞাতসারে বাইরে কোন ফল আবরণমুক্ত হয় না এবং কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, আমার শরীকরা কোথায়? সেদিন তারা বলবে, আমরা আপনার নিকট নিবেদন করি যে, আমরা কিছুই জানি না’। [হা-মীম সাজদাহ ৪৭]
মূলতঃ ক্বিয়ামত হবে মানবজীবনের শেষ পরীক্ষা কেন্দ্র। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব জাতিকে এ পার্থিব জগতে আল্লাহর হুকুম মান্য করে এবং শয়তান-এর প্ররোচনা ও পরামর্শ হ’তে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। যারা আল্লাহর হুকুম বা আদেশ-নিষেধ মেনে পরজগতে পাড়ি জমাতে পারবে, ক্বিয়ামত হবে তাদের জন্য আশীর্বাদ বা অভয় কেন্দ্র।  পক্ষান্তরে যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে শয়তানের মিথ্যা ধোঁকায় পৃথিবীতে নানা অনাচার ও অবিচার করে মৃত্যুবরণ করবে, ক্বিয়ামত তাদের জন্য অভিশাপ, দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে।
নির্ধারিত সময় উপস্থিত হ’লেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। তখন কেউ কোন কাজ করার বা কথা বলার সুযোগ পাবে না। ক্বিয়ামতের পূর্বাবস্থার একটি হাদীছ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করা হ’ল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না দু’টি বৃহৎ দল পরস্পর তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হবে। অথচ তাদের উভয় দলেরই মূল দাবী হবে এক ও অভিন্ন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে, তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর নবী বলে দাবী করবে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না ধর্মীয় ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে। ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাবে। সময়ের পরিধি সংকীর্ণ হয়ে আসবে। (অর্থাৎ সময় দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাবে)। ফিতনা-ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। খুন-খারাবী, হত্যাকান্ড ও মারামারি-হানাহানি অত্যধিক বৃদ্ধি পাবে। এমনকি তোমাদের মধ্যে ধন-সম্পদের এমন প্রাচুর্য দেখা দেবে যে, সম্পদশালী ব্যক্তি, ধন-সম্পদের মালিক (তার ছাদাক্বা প্রদান করার জন্য) চিন্তিত ও পেরেশান হয়ে পড়বে এজন্য যে, কে তার ছাদাক্বা গ্রহণ করবে? এমনকি যার নিকটই সে মাল উপস্থাপন করা হবে, সে বলে উঠবে আমার এ মালের কোন প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষণ না জনগণ সুউচ্চ ও কারুকার্যখচিত ইমারত নির্মাণ কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তি কোন কবরের নিকট দিয়ে গমন কালে (পরিতাপ করে বলবে) হায়! আমি যদি তার স্থানে হ’তাম! আর যতক্ষণ না পশ্চিম দিক হ’তে সূর্য উদিত হবে। অতঃপর সূর্য (পশ্চিম দিক হ’তে) উদিত হ’লে জনগণ তা প্রত্যক্ষ করে সকলেই (আল্লাহর প্রতি) ঈমান আনয়ন করবে।কিন্তু ‘এখনকার ঈমান কোন লোকেরই উপকারে আসবে না। যে ব্যক্তি ইতিপূর্বে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা ঈমানদার অবস্থায় কোন সৎ ও ন্যায় কাজ করেনি’। [আন‘আম ১৫৮]
আর ক্বিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, দু’ব্যক্তি (ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রেতাদের সম্মুখে) কাপড় ছড়িয়ে ও খুলে বসবে। কিন্তু সে কাপড় ক্রয়-বিক্রয় কিংবা ছড়ান কাপড়টা গুটিয়ে নেয়া বা ভাঁজ করারও সুযোগ পাবে না। আর ক্বিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও পরিবেশে অবশ্যই কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি উট দোহন করে নিয়ে আসবে, কিন্তু সে তা পান করারও সুযোগ পাবে না। ক্বিয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে এমতাবস্থায় যে, এক ব্যক্তি তার পশুর জন্য চৌবাচ্চা বা জলাধার মেরামত বা নির্মাণ করতে থাকবে। কিন্তু তাতে সে পানি পান করাবার সুযোগ পাবে না। আর ক্বিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও পরিবেশে অবশ্যই কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি খাদ্যের লোকমা বা গ্রাস তার মুখ পর্যন্ত উত্তোলন করবে কিন্তু সে তা খাওয়া ও গলধঃকরণ করার সুযোগ পাবে না। [বুখারী]
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি আয়াত পেশ করা হ’ল। মহান আল্লাহ বলেন: ‘হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই  ক্বিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল। অথচ তারা মাতাল নয়, বস্ত্ততঃ আল্লাহর আযাব  অত্যন্ত কঠিন’। [হাজ্জ ১-২]
মহান আল্লাহ বলেন: ‘যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে একটি মাত্র ফুৎকার এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে এবং এক ধাক্কায় তারা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, সেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আটজন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে’।   [হাক্বকাহ ১৩-১৭]
অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন: ‘অতঃপর যখন সিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা জাহান্নামেই চিরকাল বসবাস করবে’। [মুমিনূন ১০১-১০৩]
ক্বিয়ামত দিবসের প্রথম নিদর্শনই হবে সিংগায় ফুৎকারের বিকট আওয়াজ। সিংগায় এই ফুৎকারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। পাহাড়-পর্বত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে ধূলিকণার ন্যায় উড়ে বেড়াবে, আকাশ ও পৃথিবী ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআন ও হাদীছ দ্বারা ক্বিয়ামতে শিংগায় দুইটি ফুৎকার প্রমাণিত হয়। প্রথম ফুৎকারে ধ্বংস অনিবার্য যা উপরের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর দ্বিতীয়বার সিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে অকস্মাৎ সব মৃত জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহর পানে ধাবিত হবে।
এমর্মে মহান আল্লাহর বাণী: ‘সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে’। [যুমার ৬৮]
একইভাবে অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে: ‘সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন’। [ইয়াসীন ৫১-৫২]
একই বিষয়ে মহান আল্লাহ আরও বলেন: ‘যেদিন সিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে, অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করবেন, তারা ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে এবং সকলেই তার কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়’। [নামল ৮৭]
যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারাই ক্বিয়ামতে সফলকাম হবে। পক্ষান্তরে যারা ক্বিয়ামতকে মিথ্যা ভাববে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহকে অবিশ্বাস করবে, তারা ক্বিয়ামতে কোপানলে পতিত হবে। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সকল বান্দাকে সঠিকভাবে ক্বিয়ামতের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহামূল্যবান আদেশ সমূহকে একাধিকবার বা বহুবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রত্যাদেশ করেছেন। তন্মধ্যে ক্বিয়ামতের ভীতিকর ও আতংকজনক আলোচনা নিঃসন্দেহে অন্যতম। ক্বিয়ামতের অচিন্তনীয় ও নিদারুণ শাস্তির প্রেক্ষাপটেই দয়াশীল আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের বহুমুখী আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির সেরা বস্ত্তগুলির নামে বার বার শপথ করে প্রত্যাদেশ করতে থাকেন বান্দার হৃদয়ে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলেন: ‘শপথ সেই ফেরেশতাগণের, যারা ডুব দিয়ে আত্মা উৎপাটন করে। শপথ তাদের, যারা আত্মার বাঁধন খুলে দেয় মৃদুভাবে। শপথ তাদের, যারা সন্তরণ করে দ্রুতগতিতে, শপথ তাদের যারা দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় এবং শপথ তাদের, যারা সকল কর্মনির্বাহ করে। যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী, অতঃপর পশ্চাতে আসবে পশ্চাদগামী, সেদিন অনেক হৃদয় ভীত-বিহবল হবে। তাদের দৃষ্টি নত হবে’। [নাযি‘আত ১-৯]
ক্বিয়ামতের অপরিসীম দৃঢ়তা ব্যক্ত করে অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন: ‘কল্যাণের জন্য প্রেরিত বায়ুর শপথ, সজোরে প্রবাহিত ঝটিকার শপথ, মেঘ বিস্তৃতকারী বায়ুর শপথ, মেঘপুঞ্জ বিতরণকারী বায়ুর শপথ এবং অহী নিয়ে অবতরণকারী ফেরেশতাগণের শপথ, ওযর-আপত্তির অবকাশ না রাখার জন্য অথবা সতর্ক করার জন্য; নিশ্চয়ই তোমাদেরকে প্রদত্ত ওয়াদা বাস্তবায়িত হবে। অতঃপর যখন  নক্ষত্রসমূহ নির্বাপিত হবে, যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে, যখন পর্বতমালাকে উড়িয়ে দেয়া হবে এবং যখন রাসূলগণের একত্রিত হওয়ার সময় নিরূপিত হবে, এসব বিষয় কোন দিবসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে? বিচার দিবসের (ক্বিয়ামতের) জন্য’। [মুরসালাত ১-১৩]
মহান আল্লাহ আরও বলেন: ‘আমি শপথ করি ক্বিয়ামত দিবসের, আরও শপথ করি সেই মনের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়। মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না? পরন্তু আমি তার অঙ্গুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম। বরং মানুষ তার ভবিষ্যৎ জীবনেও পাপাচার করতে চায়। সে প্রশ্ন করে, ক্বিয়ামত দিবস কবে? যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। সেদিন মানুষ বলবে, পলায়নের জায়গা কোথায়? না কোথাও আশ্রয়স্থল নেই, আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে’। [ক্বিয়ামাহ ১-১৩]
অতঃপর মানুষকে বিচারের সম্মুখীন হ’তে হবে এবং সে জানতে পারবে নিজের সৎ ও অসৎ কর্মের হিসাব। অপরাধীরা তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে। মহান আল্লাহ বলেন: ‘আমি ক্বিয়ামতের দিন ন্যায়-বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি সামান্যতম যুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট’। [আম্বিয়া ৪৭]
অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন: ‘যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে’। [রূম ১২]
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে: ‘যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা কসম খেয়ে বলবে যে, এক মুহূর্তেরও বেশী অবস্থান করিনি। এমনিভাবে তারা সত্য বিমুখ হ’ত’। [রূম ৫৫]
ক্বিয়ামত দিবসের প্রতিকূল পরিবেশে অপরাধীদের বাস্তব অবস্থার বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন: ‘যদি গোনাহগারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তবে অবশ্যই তারা ক্বিয়ামতের দিন সে সবকিছুই নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মুক্তিপণ হিসাবে দিয়ে দিবে। অথচ তারা দেখতে পাবে; আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এমন শাস্তি, যা তারা কল্পনাও করত না। আর দেখবে তাদের দুষ্কর্ম সমূহ এবং যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। তা তাদেরকে ঘিরে নিবে’। [যুমার ৪৭-৪৮]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (সা:) বলেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কম আযাবপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলবেন, যদি গোটা পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ থাকত তবে কি তুমি সে সমুদয়ের বিনিময়ে এ আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন, আদমের ঔরসে থাকাকালে এর চেয়েও সহজ বিষয়ের হুকুম করেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা অমান্য করেছ এবং আমার সাথে শরীক করেছ’।  [বুখারী]
পবিত্র কুরআনে ক্বিয়ামতের বর্ণনা নানাভাবে নানা পর্যায়ে উল্লিখিত হয়েছে। তবে এসব বর্ণনার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হ’ল ক্বিয়ামতের প্রতি বিদ্যমান অবিশ্বাস হ’তে মানব জাতিকে ফিরিয়ে আনা। কুরআন আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী, রহমত, ছওয়াব, গযব ও আযাবের অদ্বিতীয় স্মারক। এজন্য ক্বিয়ামতের মহা নিনাদ, ভয়ঙ্কর গর্জন, ভীতিকর পরিবেশ ইত্যাদির মাঝে হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান ও শাস্তির যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। অতঃপর বাস্তবায়ন মুহূর্তের কতিপয় অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, অপরাধীরা তাদের দীর্ঘজীবনের অপকর্মের সময়কে খুবই সল্প সময় হিসাবে ব্যক্ত করে স্বস্তি লাভের চেষ্টা করবে। এক পর্যায়ে গোনাহগাররা পৃথিবীর সব ধন-সম্পদের বিনিময়েও আল্লাহ্র কঠোর আযাব হ’তে রক্ষা লাভের জন্য প্রলাপ করবে। এসব বিষয় উপরের আয়াতে সংক্ষেপে উপস্থাপিত হয়েছে। এই পাপী কাফেরদের জন্য রয়েছে শিকল, বেড়ি ও জাহান্নাম।
আর মুমিন ও ইবাদতকারীদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নে‘মত, যা তারা কল্পনা করতে পারবে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: ‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়ন স্বরূপ বসবাসের জান্নাত। পক্ষান্তরে যারা অবাধ্য হয়, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম’। [সাজদাহ ১৭-২০]
মানব জাতির জন্য আল্লাহপাক বিশ্বজগতের যাবতীয় বস্ত্ত অতি সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে মানবের শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশের জন্য এক বিশাল ও বিপুলায়তনের অন্তর্জগতও সৃষ্টি করেছেন নিখুঁত ও নিরঙ্কুশভাবে। এই অন্তর্জগতই হ’ল মানুষের সম্মান, খ্যাতি ও যশের একমাত্র লীলাভূমি। আবার কলংক, অধঃপন ও অমর্যাদার অতল তলে তলিয়ে যাওয়ারও পথ। সমগ্র বিশ্বজগতের অসীম অনন্ত ও অবাধ্য পরিবেশের চেয়ে, ব্যক্তিগত অন্তর্জগতের সীমাবদ্ধ ও বাধ্যগত পরিবেশের নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক অনেক সহজ। এজন্য মহাজ্ঞানী আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সার্বক্ষণিকভাবে স্মরণ করার জন্য মানুষকে বার বার আহবান জানিয়েছেন। অতঃপর যারা আল্লাহকে স্মরণ করে তারা, তাঁর সন্তুষ্টি লাভে সমর্থ হয় এবং সৎপথ প্রাপ্ত হয়। অপরদিকে যারা শয়তান-এর প্ররোচনায় আল্লাহ্র স্মরণ ভুলে যায় বা অগ্রাহ্য করে, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। ফলে তারা জাহান্নামের আমল করে নিজেদের ধ্বংস করে। ক্বিয়ামতে আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে অন্ধ করে উঠাবেন।
মহান আল্লাহ বলেন: ‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। অতএব তোমাকে আজ ভুলে যাব’। [ত্বোয়া-হা ১২৪-১২৬]
একইভাবে অন্যত্র বলা হয়েছে যে: ‘যেদিন প্রকাশ করে দিবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা যা কিছু তারা করত। সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দিবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য স্পষ্ট ব্যক্তকারী’। [নূর ২৪-২৫]
আলোচ্য বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়াসে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় প্রত্যাদেশ করেন: ‘যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুন্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবে এবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সবকিছুর বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমাদের কান, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের ত্বক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে না, এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে না। তবে তোমাদের ধারণা ছিল যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না’।  [হা-মীম-সাজদাহ ১৯-২২]
ক্বিয়ামত হবে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ) হ’তে শুরু করে শেষ দিবসের শেষ মানুষ পর্যন্ত পৃথিবীতে আগত সমস্ত মানুষের মিলন কেন্দ্র, পরীক্ষা কেন্দ্র তথা বিচার কেন্দ্র। সেখানে যা ঘটবে তার একটি ছোট্ট নমুনা। যা উপরের আয়াতে সকল মানবের অবগতির জন্য বর্ণিত হয়েছে। মানুষের হাত, পা, কান, চোখ, ত্বক ইত্যাদি তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, এটা অবশ্যই বিস্ময়কর। ঐ দিন সকল মানুষ ক্বিয়ামতের ময়দানে সমবেত হবে, কেউ অনুপস্থিত থাকতে পারবে না এবং সকলকে একাকী অবস্থায় আল্লাহর দরবারে হাযির হ’তে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন:‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহ্র কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না। তাঁর কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গণনা করে রেখেছেন। ক্বিয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে’। [মারিয়াম ৯৩-৯৫]
অতঃপর ঐদিন আল্লাহ তা‘আলা সুদীর্ঘ সময়ের বিপুল সংখ্যক মানুষের খতিয়ান বহিঃপ্রকাশ করে দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। মহিমাময় পরওয়ারদেগার তাঁর অলৌকিক শক্তিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাদেরকে পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত করা হবে। অতঃপর তাদের কর্মফল অনুযায়ী তাদের কারো ডান হাতে ও কারো বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্তরা হবে সৌভাগ্যবান এবং বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্তরা হবে দুর্ভাগ্যবান।
এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ প্রত্যাদেশ করেন: ‘যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ সহজ হয়ে যাবে এবং সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে। আর যাকে তার আমলনামা পিছনদিক থেকে দেয়া হবে, সে মৃত্যুকে আহবান করবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। [ইনশিক্বাক্ব ৭-১২]
ক্বিয়ামত দিবস অবিশ্বাসী ও কাফেরদের জন্য হবে মারাত্মক, তারা প্রত্যেকেই তার কাজকর্ম স্বচক্ষে দেখতে পাবে; হয় আমলনামা হাতে আসার পরে দেখবে, না হয় কাজকর্ম সব স্বশরীরী হয়ে সামনে এসে যাবে। ফলে ক্বিয়ামতের অলৌকিক দৃশ্য কাফেরদের সামনে হাযার বছরের সমতুল্য মনে হবে। পক্ষান্তরে সৎকর্মপরায়ণদের সামনে এর কোন প্রভাবই পড়বে না।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন: ‘তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাযার বছরের সমান। তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু’। [সাজদাহ ৫-৬]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা‘আলার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাযার বছর’। [মা‘আরিজ ৪]
ক্বিয়ামতে সীমালংঘনকারীরাই সর্বাধিক আতংক, উৎকণ্ঠা ও হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হবে। কাফের, মুনাফিক ও অবিশ্বাসীরাও আতংকগ্রস্ত থাকবে এবং অপরাধের পরিমাণ অনুযায়ী ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। অতীত জীবনের স্থায়িত্ব কালকে খুবই সামান্য সময় হিসাবে ব্যক্ত করবে। তাদের সেই উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার অবগতির জন্য বাণী অবতীর্ণ করেন: ‘যেদিন তারা (কাফেররা) একে (ক্বিয়ামত) দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে’। [নাযি‘আত ৪৬]
একই বিষয়ে অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন: ‘ওদেরকে (কাফেরদের) সে বিষয়ে ওয়াদা দেয়া হ’ত, তা সেদিন তারা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা দিনের এক মুহূর্তেরও বেশী পৃথিবীতে অবস্থান করেনি। এটা সুস্পষ্ট অবগতি। এখন তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, যারা পাপাচারী সম্প্রদায়’। [আহক্বাফ ৩৫]
এ বিষয়ে মুমিনদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মহান আল্লাহ বলেন: ‘আজ আমি তাদেরকে তাদের ছবরের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম। আল্লাহ বলবেন, তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়? তারা বলবে, আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন’। [মুমিনূন ১১১-১১৩]
ক্বিয়ামত দিবসের সর্বশেষ অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করে বিশ্বনবী (ছাঃ)-এর একটি হাদীছের উদ্ধৃতি দেয়া হ’ল। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,:
আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সা:)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে তোমরা সূর্য দেখতে কি কষ্ট পাও? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের যতটুকু কষ্ট হয়, তোমাদের রবকে দেখতেও তোমাদের ততটুকু কষ্ট হবে মাত্র। তারপর তিনি বললেন, সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) একজন ঘোষক ঘোষণা করে বলবে যে, যারা যে জিনিসের  ইবাদত করতে, তারা সেই জিনিসের সাথে হয়ে যাও। সুতরাং ক্রুশধারীরা ক্রুশের সাথে চলে যাবে, মূর্তিপূজকরা মূর্তির সাথে হয়ে যাবে। এভাবে প্রতি মা‘বূদের অনুসারীরা তাদের উপাস্যের কাছে যাবে। তারপর যারা একমাত্র আল্লাহ্র ইবাদত করত, তারাই শুধু অবশিষ্ট থাকবে। তারা গোনাহগার বা নেককার যাই হোক না কেন। সাথে সাথে আহলে কিতাবদের অবশিষ্ট কিছু লোকও থাকবে। এরপর জাহান্নামকে সামনে আনা হবে। তা মরীচিকার মত মনে হবে। তখন ইহুদীদের বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহ্র বেটা উযায়েরের ইবাদত করতাম।
তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহ্র তো কোন স্ত্রী বা সন্তান ছিল না। (তাদেরকে পুনরায় বলা হবে) তোমরা এখন কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আপনি আমাদের পানি পান করতে দিন। বলা হবে ঠিক আছে, পানি পান করে নাও। তারপর তারা জাহান্নামের মধ্যে পড়ে যাবে। এরপর নাছারা (খৃষ্টান)-দেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহ্র বেটা (ঈসা) মসীহের ইবাদত করতাম। তাদের বলা হবে, তোমরা মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহ্র তো স্ত্রী বা সন্তান ছিল না। (তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে) তোমরা এখন কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে বলা হবে, ঠিক আছে পান করে নাও। তারপর তারা জাহান্নামের মধ্যে পড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র আল্লাহ্র ইবাদতকারীরা। তাদের মধ্যে নেককারও থাকবে, গোনাহগারও থাকবে। তাদের বলা হবে, সব লোক তো চলে গেছে, কিন্তু তোমাদেরকে কিসে বসিয়ে রেখেছে? তারা বলবে, আমরা তো তখনই তাদেরকে বর্জন করেছিলাম, যখন আজকের চাইতে তাদের বেশী প্রয়োজন ছিল।
আমরা এমর্মে একজন ঘোষকের ঘোষণা শুনেছি যে, যে কওম যার জিনিসের ইবাদত করত, সেই কওম তার সাথে হয়ে যাও। আমরা (সেই ঘোষণা অনুসারে) আমাদের রবের জন্য অপেক্ষা করছি। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, এরপর মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। কিন্তু প্রথমবার ঈমানদারগণ যে আকৃতিতে তাঁকে দেখেছিলেন তিনি সেই আকৃতিতে আসবেন না। তিনি (এসে) বলবেন, আমি তোমাদের রব! সবাই বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। (সে সময়) নবীগণ ছাড়া আর কেউ তাঁর সাথে কথা বলবেন না। তোমরা কি তাঁর কোন চিহ্ন জান? তারা বলবে, সাক বা পায়ের নলার তাজাল্লী। সেই সময় সাক খুলে দেয়া হবে। তখন সব ঈমানদারই সিজদায় পড়ে যাবে। তবে যারা প্রদর্শনীর জন্য আল্লাহকে সিজদা করতো তারা থেকে যাবে। তার সেই সময় সিজদা করতে চাইলে, তাদের মেরুদন্ডের হাড় শক্ত হয়ে একটি তক্তার ন্যায় হয়ে যাবে। (তাই তারা সিজদা করতে পারবে না)।
তারপর পুলছিরাত এনে জাহান্নামের উপরে পাতা হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! পুল বা পুলছিরাত কি? তিনি বললেন, পিচ্ছিল জায়গা, যার উপর লোহার হূক এবং চওড়া ও বাঁকা কাঁটা থাকবে যা নজদের সা‘দান গাছের কাঁটার মতো। মুমিনগণ এ পুলছিরাতের উপর দিয়ে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে এবং কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ ছহীহ-সালামতে বেঁচে যাবে, আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ জাহান্নামের আগুনে ঝলসে যাবে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তি হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে কোন রকমে অতিক্রম করবে। আজ তোমরা হকের দাবীতে আমার তুলনায় ততখানি কঠোর নও, যতখানি কঠোর সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) ঈমানদারগণ প্রতাপশালী আল্লাহর কাছে হবে।
(আর তোমরা যে হকের দাবীতে আমার চাইতে বেশী কঠোর নও তা তো) তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যখন তারা (ঈমানদারগণ) দেখবে যে, তাদের ভাইদের মধ্যে তারাই শুধু নাজাত পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেই সব ভাইয়েরা কোথায়, যারা আমাদের সাথে ছালাত পড়ত, ছিয়াম পালন করত ও নেক আমল করত? আল্লাহ বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদের (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে আনো। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। তাদের কারো দু’পা ও পায়ের নলা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুনে ডুবে থাকবে। তারা (ঈমানদারগণ) যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) বের করে আনবে। তারপর ফিরে আসলে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান দেখতে পাবে তাদেরকেও বের করে আন। সুতরাং তারা যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে মুক্ত করবে এবং তারপর ফিরে আসলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, যাও যাদের হৃদয়ে একবিন্দু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে বের করে আনো। সুতরাং (এবারও) তারা যাদেরকে চিনবে তাদেরকে মুক্ত করে আনবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না করো তাহ’লে ইচ্ছা করলে কুরআন মজীদের এ আয়াতটি পাঠ করো (তাতে একথার সত্যতার সমর্থন পাবে)। আল্লাহ (কারো প্রতি) একবিন্দু পরিমাণ যুলুমও করেন না। বরং কোন নেকীর কাজ হ’লে তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন। এভাবে নবী, ফেরেশতা এবং ঈমানদারগণ শাফা‘আত বা সুপারিশ করবেন।
তারপর পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এখন একমাত্র আমার শাফা‘আতই অবশিষ্ট আছে। তিনি এক মুষ্টি ভরে জাহান্নাম থেকে একদল লোককে বের করবেন, যাদের গায়ের চামড়া পুড়ে কাল হয়ে গেছে। তারপর তাদেরকে জান্নাতের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত ‘হায়াত’ নামক একটি নহরে নামানো হবে। তারা এর দু’তীরে এমনভাবে তরতাজা হয়ে উঠবে, যেমন তোমরা পাথর বা গাছের পাশ দিয়ে প্রবাহিত স্রোতের কিনারে বীজকে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম করতে দেখ। এর মধ্যে যেটা রোদে থাকে সেটা সবুজ হয়, আর যেটা ছায়ায় থাকে সেটা সাদা হয়। তাদেরকে সেখান থেকে বের করা হবে। তখন তাদেরকে মোতির দানার মত মনে হবে। তাদের গলায় সীলমোহর লাগান হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাতবাসীরা বলবে, এরা পরম দয়ালু আল্লাহ্র মুক্ত করা লোক। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত দিয়েছেন, অথচ (এজন্য) তারা কোন আমল বা কল্যাণের কাজ করেনি। (জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে) তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা দেখছো তা তোমাদেরকে দেয়া হ’ল এবং অনুরূপ পরিমাণ আরও দেয়া হ’ল’।    [বুখারী]
ক্বিয়ামত সম্পর্কিত আলোচনার শেষ প্রান্তে বর্ণিত হাদীছটি মোটামুটি ভাবে মানবমন্ডলীর সর্বব্যাপক কর্মকান্ডের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছে। মহানবী (সা:) ক্বিয়ামত সম্পর্কিত বিপুলসংখ্যক আয়াতগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেই উপরের সংক্ষিপ্ত হাদীছটির অবতারণা করেন। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ধর্মীয় তত্ত্বের মেরুদন্ডে আঘাত হেনে অসংখ্য মা‘বূদের ইবাদতে আত্মোৎসর্গকারীদের পরিণতির পৃথক পৃথক ইতিহাস হাদীছটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া এক মা‘বূদের ইবাদতকারীদের মধ্যে খাঁটি মুমিন এবং তুলনামূলকভাবে কিছু ত্রুটিযুক্ত মুমিন এবং আরও সামান্য ঈমান ওয়ালা মুমিনের সর্বশেষ অবস্থার বাস্তব চিত্রও হাদীছটিতে বর্ণিত হয়েছে। মোটকথা এখানে পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সঙ্গে উক্ত হাদীছটি পুরোপুরিভাবে সঙ্গতিপূর্ণ এবং উভয়ের মূল্যায়ন এক ও অভিন্ন।
ক্বিয়ামতের উপরোক্ত বিবরণ পড়ে আমাদের উচিত এখনই সাবধান হওয়া। সেই দিনের জন্য যথাসাধ্য প্রস্ত্ততি নেওয়া। যাতে ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে আমরা নাজাত লাভ করতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন।

কিয়ামত সংক্রন্ত সহিহ ও জাল-জইফ হাদিসসমূহ
গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
অধ্যায়ঃ ৩৫/ কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয়-১০৮টি হাদিস
(হুবহু প্রকাশিত ও জাল-জইফ হাদিস চিহ্নিত)
জাল-জইফ হাদিস আমলযোগ্য নয়-

৩৫
কিয়ামত ও মর্মস্পর্শী বিষয়
২৪১৫ -২৫২২
১. অনুচ্ছেদঃ
কিয়ামত প্রসঙ্গে
২৪১৫
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সকলের সাথেই তার প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলা কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন। তার ও তার প্রতিপালকের মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডানপাশে তাকিয়ে তার দুনিয়াবী জীবনে পাঠানো আমল ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখতে পাবে না। সে তার বাম পাশে তাকিয়েও তার দুনিয়াবী জীবনে কৃত আমল ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখতে পাবে না। তারপর সে তার সম্মুখে তাকাতেই জাহান্নাম দেখতে পাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হতে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয় সে যেন তাই করে।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮৫), বুখারী, মুসলিম।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। আবুস সাইব বলেন, উপরোক্ত হাদীসটি একদিন ওয়াকী (রাহঃ) আমাদের নিকট ‘আমাশের সূত্রে বর্ণনা করেন। বর্ণনাশেষে তিনি বলেন, যদি খুরাসানবাসী কোন ব্যক্তি এখানে উপস্থিত থাকে তাহলে সে যেন এ হাদীসটি খুরাসানে প্রচার করাকে সাওয়াবের কাজ মনে করে। কেননা, জাহমিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এটা (মানুষের সাথে আল্লাহ্ তা'আলার কথা বলার বিষয়টি) অস্বীকার করে। আবুস সাইবের নাম সালম ইবনু জুনাদা ইবনু সালম ইবনু খালিদ ইবনু জাবির ইবনু সামুরা আল-কূফী।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪১৬
ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে ; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে।
সহীহ, সহীহাহ্ (৯৪৬), তা’লীকুর রাগীব (১/৭৬), রাওযুন নাযীর (৬৪৮)।
আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ হাদীসটি শুধুমাত্র হুসাইন ইবনু কাইসের রিওয়ায়াত হিসাবে ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর বরাতে (দায়িত্বে) জেনেছি। হাদীসের বর্ণনাকারী হুসাইন ইবনু কাইস তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার জন্য সমালোচিত। আবূ বারযা ও আবূ সাঈদ (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪১৭
আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামাত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবেঃ কিভাবে তার জীববনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল করেছে ; কোথা হতে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কি কি কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে।
সহীহ্‌, প্রাগুক্ত, তাখরীজ ইক্‌তিযাউল ইলমি আল-আমাল (১৫/১)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান স’হীহ্। সাঈদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু জুরাইজ ছিলেন বসরার অধিবাসী এবং আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ)-এর মুক্তদাস। আবূ বারযা (রাঃ)-এর নাম নাযলা ইবনু উবাইদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২. অনুচ্ছেদঃ
হিসাব-নিকাশ ও প্রতিশোধ প্রসঙ্গে
২৪১৮
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান, দেউলিয়া কে? তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামাত দিবসে নামায, রোযা, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হতে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
সহীহ, সহীহাহ্‌ (৮৪৫), আহকামুল জানাইয (৪), মুসলিম।
আবূ ঈ’সা বলেন, এ হাদীসটি হাসান স’হীহ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪১৯
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সেই বান্দার উপর আল্লাহ তা’আলা রাহমাত বর্ষণ করুন, যে তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে যুলুম করেছে। কিয়ামাত দিবসে এ ব্যাপারে তাকে পাকড়াও করার পূর্বেই যেন সে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কারণ, সে স্থানে (আখিরাতে) দিরহাম, দীনারের (বিনিময় প্রদানের) ব্যবস্থার থাকবে না। সুতরাং তার কোন ভালো আমল থাকলে (যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী) তা নিয়ে যাওয়া হবে। আর ‍যদি কোন ভালো আমল না থাকে, তাহলে মাযলুমদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
সহীহ্, সহীহাহ্ (৩২৬৫)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্ এবং সাঈদ আল-মাকবুরীর রিওয়ায়াত হিসেবে গারীব। মালিক ইবনু আনাস-সাঈদ আল-মাকবুরী হতে, তিনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রেও উপরের হাদীসের মতোই বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪২০
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে (কিয়ামাত দিবসে) সকল হকদারের হক আদায় করা হবে। এমনকি শিংবিহীন বকরীর পক্ষে শিংবিশিষ্ট বকরীর (গুতোর) বদলা নেওয়া হবে।
সহীহ, সহীহাহ্ (১৫৮৮)।
আবূ যার ও আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসটি হাসান সহীহ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪২১
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী মিকদাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামাত দিবসে সূ্র্যকে মানুষের এত নিকটে আনা হবে যে, তা মাত্র এক অথবা দু’মাইল ব্যবধানে থাকবে। সুলাইম ইবনু আমির (রাহঃ) বলেন, আমি জানি না উক্ত মাইল দ্বারা যামীনের দূরত্ব জ্ঞাপক মাইল বুঝানো হয়েছে, না চোখের সুরমা লাগানোর শলাকা বুঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, সূর্য তাদের গলিয়ে দেবে। তারা তখন নিজেদের আমল (গুনাহ) অনুপাতে ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আর তা কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে লাগামের মতো বেষ্টন করবে। এই কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দ্বারা মুখের দিকে ইশারা করেন, অর্থাৎ লাগামের মতো বেষ্টন করাকে বুঝালেন।
সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৩৮২), মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। আবূ সাঈদ ও ইবনু উমার (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪২২
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাম্মাদ (রাহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ হাদীসটি মারফূভাবে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। “মানুষ যেদিন জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে” (সূরাঃ মুতাফফিফীন-৬) আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকাবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৭৮), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস হান্নাদ-ঈসা ইবনু ইউনুস হতে, তিনি ইবনু আওন হতে, তিনি নাফি হতে, তিনি ইবুন উমার (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩. অনুচ্ছেদঃ
হাশরের ময়দানের অবস্থা
২৪২৩
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মানুষকে খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় হাযির করা হবে, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “আমি যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই আবার সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই” (সূরাঃ আম্বিয়া-১০৪)। ইবরাহীম (আঃ)-কে সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম পোশাক পরিধান করানো হবে। আমার সাহাবীগণের মধ্যকার কিছু সংখ্যক লোককে বন্দী করে ডানে-বামে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা তো আমার অনুসারী। আমাকে তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, আপনার পরে এরা যে কি সব বিদ’আতী কাজ করেছে। আপনি তাদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর হতে তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে আরম্ভ করেছে। তখন আমি আল্লাহ্‌ তা’আলার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাহ [ঈ’সা (আঃ)-এর] মতো বলব, (সূরাঃ মাইদা-১১৮): “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনারই বান্দাহ, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মহা পরাক্রমশালী  প্রজ্ঞাময়”।
সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
মুহাম্মাদ ইব্‌ন বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না-মুহাম্মদ ইবনু জাফর হতে, তিনি শুবা হতে, তিনি মুগীরা ইবনু নু’মান হতে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের মতোই বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪২৪
বাহ্য ইবনু হাকীম (রাহঃ) হতে তার বাবা, অতঃপর তার দাদা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ (কিয়ামাত দিবসে) তোমাদের পায়ে হাঁটিয়ে, সাওয়ারী হিসেবে এবং কিছু সংখ্যককে মুখের উপর উপুর করে টেনে হাযির করা হবে।
সহীহ, ফাযাইলুশ্‌শাম (১৩)।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪. অনুচ্ছেদঃ
কিয়ামাত ও মর্মষ্পর্শী বিষয়
২৪২৫
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন মানুষকে তিনবার হাযির করা হবে। দুইবারের হাযিরা হবে ঝগড়া-বিবাদ ও বিভিন্ন ওযর-আপত্তি শুনানী প্রসঙ্গে এবং তৃতীয়বারের হাযিরাতে প্রত্যেকের (নিজ নিজ) আমলনামা উড়তে থাকবে। কেউ তা পাবে ডান হাতে আর কেউ পাবে বাম হাতে।
যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২৭৭)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে সহীহ নয়। কারণ হাসান বাসরী (রহঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে সরাসরি কিছু শুনেননি। কিছু রাবী আলী আর-রিফাঈর সূত্রে আল-হাসান হতে তিনি আবূ মূসা (রাঃ) হতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনাটিও সহীহ নয়, কারণ হাসান আবূ মূসার নিকট হাদীস শুনেন নাই।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৫. অনুচ্ছেদঃ
সহজ হিসাব
২৪২৬
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যার হিসাব গ্রহণ করা হবে সে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল (স্বল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম)! আল্লাহ্‌ তা’আলা তো বলেছেন, “যে ব্যক্তির ডান হাতে তার আমলনামা প্রদান করা হবে, খুব সহজেই তার হিসাব-নিকাশ হবে” (সূরাঃ ইনশিকাক-৭-৮)। তিনি বললেনঃ সেটা তো শুধু নামমাত্র উপস্থাপন করা।
সহীহ, যিলালুল জান্নাত (৮৮৫), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এ হাদীসটি ইবনু আবী মুলাইকার সূত্রে আইয়্যূব (রাহঃ)-ও বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৬. অনুচ্ছেদঃ
দুনিয়ার সঞ্চিত সম্পদ পরকালে ব্যয় করার আকাঙ্খা
২৪২৭
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামাতের দিন আদম-সন্তানকে ভেড়ার (সদ্য প্রসূত) বাচ্চার ন্যায় অবস্থায় হাযির করা হবে। তারপর তাকে আল্লাহ তা’আলার সামনে দাঁড় করানো হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি তোমাকে ক্ষেত-খামার, দাস-দাসী ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দান করেছিলাম এবং আরো বিভিন্ন ধরণের অনুগ্রহ দিয়েছিলাম। তুমি কি আমল করে এসেছ? সে বলবে, হে রব! আমি সেগুলো সঞ্চয় করে রেখেছি, বহু গুণে বৃদ্ধি করেছি এবং যা ছিল তার চাইতে অনেক বাড়িয়ে রেখে এসেছি। আমাকে একটুখানি ফেরত যেতে দিন, আমি সেগুলো আপনার নিকটে নিয়ে আসব। তিনি তাকে বলবেন, তুমি কি কি আমল করে এসেছ আগে তা আমাকে দেখাও। অতঃপর দেখা যাবে সে এমন এক বান্দা, যে কোন ভাল কাজই করে নাই, ফলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (৩/১১)
আবূ ঈসা বলেন, একাধিক রাবী উপরোক্ত হাদীসটি হাসান বাসরী (রহঃ)-এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তারা এটিকে মুসনাদ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেননি। রাবী ইসমাঈল ইবনু মুসলিম তার স্মরণশক্তির দূর্বলতার জন্য সমালোচিত। এ অনুচ্ছেদে আবূ হুরাইরা ও আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪২৮
আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা দুজনেই বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন কোন বান্দাকে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমাকে কান, চোখ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দেইনি এবং তোমার অধীনে জীব-জন্তু ও খেত-খামার দেইনি? তোমাকে তো স্বাধীনভাবে ছেড়ে রেখেছিলাম সর্দারী করতে এবং মানুষের নিকট হতে এক-চতুর্থাংশ গ্রহণ করতে (জাহিলী যুগের একটি রীতি)। তুমি কি ধারণা করতে যে, এই দিনে আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে? সে বলবে, না। তিনি তাকে বলবেন, তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে, আমিও আজ তোমাকে ভুলে গেলাম।
সহীহ, যিলালুল জান্নাত (৬৩২), মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ্‌ গারীব। “তোমাকে ভুলে গেলাম” কথার অর্থ এই যে, আমি আজ তোমাকে শাস্তি প্রদান করলাম। আবূ ঈসা বলেন, কিছু আলিম (“আজ আমি তাদের ভুলে গেছি”) (সূরাঃ আরাফ-৫১) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আজ আমি তাদের শাস্তি কার্যকর করলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৭. অনুচ্ছেদঃ
পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পেশ করবে
২৪২৯
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “যে দিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পরিবেশন করবে” (সূরাঃ যিলযাল-৪) তিলাওয়াত করে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান পৃথিবীর পরিবেশনযোগ্য বৃত্তান্ত কি? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তার বৃত্তান্ত এই যে, সে সমস্ত নারী-পুরুষের সেইসব কাজের সাক্ষ্য দিবে, যা তারা তার উপরে করেছে। সে বলবে, অমুক দিন অমুক ব্যক্তি এই এই কাজ করেছে। এভাবে সে সাক্ষ্য দেবে। তিনি বললেন, এটাই হবে পৃথিবীর পেশকৃত বৃত্তান্ত।
দুর্বল সনদ
এ হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৮. অনুচ্ছেদঃ
শিঙ্গার ফুৎকার প্রসঙ্গে
২৪৩০
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক গ্রাম্য লোক নাবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে প্রশ্ন করল, শিঙ্গা কি? তিনি বললেনঃ এটা একটা শিং যাতে ফুৎকার দেয়া হবে।
সহীহ, সহীহাহ্‌ (১০৮০)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। একাধিক বর্ণনাকারী সুলাইমান আত-তাইমীর সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র তার রিওয়ায়াত হিসাবেই জেনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৩১
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্তে আরাম করতে পারি, অথচ শিঙ্গাওয়ালা (ফেরেশতা ইসরাফীল আ:) মুখে শিঙ্গা নিয়ে অধীর আগ্রহে কান পেতে শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ শোনার অপেক্ষায় আছেন, কখন ফুঁ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হবে, আর অমনি তিনি ফুঁ দিবেন। বিষয়টি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের নিকট অত্যন্ত ভীতিকর মনে হলো। তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমরা বল যে, আমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলাই যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধানকারী। আমরা আল্লাহ্‌ তা’আলার উপর ভরসা করলাম।
সহীহ, সহীহাহ্‌ (২০৭৯)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ সূত্র ছাড়াও আতিয়্যা হতে, তিনি আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে হাদীসটি একইরকম বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৯. অনুচ্ছেদঃ
পুলসিরাতের অবস্থা
২৪৩২
মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুলসিরাত পার হওয়ার সময় মু’মিনদের নিদর্শন হবেঃ হে প্রভু! রক্ষা কর রক্ষা কর।
যঈফ, যঈফা (১৯৭৩)
আবূ ঈসা বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র আবদুর রহমান ইবনু ইসহাকের সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। এ অনুচ্ছেদে আবূ হুরা0ইরা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৩৩
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট নিবেদন করলাম যে, তিনি যেন কিয়ামাত দিবসে আমার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি সুপারিশ করব। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনাকে কোথায় খোঁজ করব? তিনি বললেন, তুমি সর্বপ্রথম আমাকে পুলসিরাতের সামনে খোঁজ করবে। আমি বললাম, পুলসিরাতে যদি আপনাকে না পাই? তিনি বললেন, তাহলে মীযানের ঐখানে খুঁজবে। আমি আবার বললাম, মীযানের ঐখানেও যদি আপনাকে না পাই? তিনি বললেন, তাহলে হাওযে কাওসারের সামনে খুঁজবে। আমি এ তিনটি জায়গায় যে কোন একটিতে অবশ্যই উপস্থিত থাকব।
সহীহ, মিশকাত (৫৫৯৫), তা’লীকুর রাগীব (৪/২১১)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই জেনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১০. অনুচ্ছেদঃ
শাফা’আত প্রসঙ্গে
২৪৩৪
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে গোশত আনা হলো। তারপর তাঁকে সামনের একটি রান উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন- আর তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে খেতে থাকলেন। তারপর তিনি বললেনঃ কিয়ামাত দিবসে আমিই হবো সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এর কারণ কি? আল্লাহ্‌ তা’আলা সেদিন পূর্বেকার ও পরের সকল মানুষকে এক জায়গায় সমবেত করবেন। একজনের আওয়াজই সবার কাছে পৌছে যাবে এবং সবাই একজনের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকবে।
সূর্য তাদের খুব নিকটে এসে যাবে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও সামর্থ্যের অতীত দুর্ভাবনায় পড়ে যাবে এবং ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়বে। তারা পরস্পরকে বলবে, তোমরা কি এ দুঃসহ বিপদ দেখতে পাচ্ছ না? তোমাদের প্রভুর নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারে এরূপ কাউকে খুঁজে দেখছ না কেন? লোকেরা একে অপরকে বলবে, তোমাদের উচিত আদম (আ:)-এর কাছে যাওয়া। অতএব, তারা আদম (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, আপনি তো মানব জাতির আদি পিতা। আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে তাঁর নিজ হাতে বানিয়েছেন এবং আপনার মধ্যে তাঁর সৃষ্ট রূহ্‌ ফুঁকে দিয়েছেন। তারপর ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সাজদাহ করেছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমরা কি অবস্থার মধ্যে পতিত আছি? আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা দুঃখ-দুর্দশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি! আদম (আ:) তাদেরকে বলবেন, আমার প্রভু তো আজ এতই ক্রোধান্বিত হয়েছেন যেরূপ ইতিপূর্বে আর কখনো হননি এবং পরেও কখনো হবেন না। তিনি আমাকে একটি গাছের ব্যাপারে (তার ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন। আমি সেটা অমান্য করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী (অর্থাৎ- আমারই তো কোন উপায় দেখছি না)। তোমরা অন্য কারো নিকটে যাও। তোমরা বরং নূহ্‌ (আ:)-এর নিকট যাও। তারা তখন নূহ্‌ (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে নূহ! আপনি তো দুনিয়াবাসীদের জন্য প্রথম রাসূল। আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে ‘আব্‌দ শাকূর’ (কৃতজ্ঞ বান্দাহ) উপাধি দিয়েছেন, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে, আমরা কি অবস্থায় পতিত আছি, আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা দু:খ-দুর্দশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি! নূহ্‌ (আ:) তাদেরকে বলবেন, আজ আমার প্রতিপালক এতই রাগান্বিত হয়েছেন যেমনটি এরপূর্বে আর কখনো হননি এবং পরেও হবেন না। আমাকে একটি দু’আ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল (যে উদ্দেশ্যেই দু’আ করব আল্লাহ্‌ তা’আলা তা ক্ববূল করবেন বলে অঙ্গীকার ছিল)। কিন্তু আমি আমর উম্মাতের বিরুদ্ধে সেই দু’আ করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা বরং ইবরাহীম (আ:)-এর নিকট যাও। তারা ইবরাহীম (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে ইবরাহীম ! আপনি আল্লাহ্‌র নবী এবং দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমরা কি অবস্থার মধ্যে পতিত আছি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমার পরোয়ারদিগার আজ এতই রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এরপূর্বে তিনি আর কখনো হননি এবং পরেও কখনো হবেন না। আমি তিনটি মিথ্যা কথা বলেছি। আবূ হাইয়্যান তাঁর বর্ণিত হাদীসে সেগুলো উল্লেখ করেছেন। নাফসী, নাফসী, নাফসী (আমি আজ আমার নিজের চিন্তায় অস্থির)। তোমরা বরং অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা মূসা (আ:)-এর নিকট যাও। তখন তারা মূসা (আ:)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, হে মূসা ! আপনি তো আল্লাহ্‌র রাসূল, আল্লাহ্‌ তাঁর রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা আপনাকে মানুষের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। আপনি কি আমাদের প্রাণান্তকর এ করুণ অবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা তো আজ এতই ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এরপূর্বে তিনি আর কখনো হননি আর পরেও হবেন না। আমি তো এক লোককে হত্যা করেছি। অথচ তাকে হত্যার নির্দেশ আমাকে প্রদান করা হয়নি। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা বরং অন্য কারো নিকট যাও। তোমরা ঈসা (আ:)-এর নিকট যাও। তখন ঈসা (আ:)-এর নিকট গিয়ে তারা বলবে, হে ঈসা ! আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, তাঁর একটি বাণী যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর সৃষ্ট আত্মা। আপনি দোলনায় থাকাবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনি কি আমাদের এ করুণ অবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তখন ঈসা (আ:) বলবেন, আমার পরোয়ারদিগার আজ এতই রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এর আগে তিনি আর কখনো হননি এবং পরে কখনো হবেন না। তিনি কোন গুনাহের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বললেন, নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাও। তখন তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে বলবে, হে মুহাম্মাদ ! আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, নাবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নাবী, আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় পতিত আছি! আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তখন আমি রাওয়ানা হয়ে আরশের নীচে উপস্থিত হবো। তারপর আমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য তাঁর প্রশংসা ও সর্বোত্তম গুণগানের এমন কিছু উন্মুক্ত করে দিবেন যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তুমি মাথা উঠাও এবং আবেদন কর, তোমার আবেদন পূরণ করা হবে, সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ ক্ববূল করা হবে। তারপর আমি মাথা তুলে বলব, হে পরোয়ারদিগার! আমার উম্মাত, হে পরোয়ারদিগার! আমার উম্মাত (তাদের রক্ষা করুন)। তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ নেই তাদেরকে তুমি জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অধিকন্তু তারা অন্য মানুষের সাথে শরীক হয়ে অন্যান্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অধিকারও পাবে। তারপর তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! জান্নাতের দরজার দুটি চৌকাঠের মধ্যকার ব্যবধান মক্কা ও হাজার এবং মক্কা ও বুসরার মধ্যকার ব্যবধানের সমান।
সহীহ, তাখরীজ তাহাভীয়া (১৯৮), যিলালুল জান্নাত (৮১১)।
আবূ বাক্‌র সিদ্দীক, আনাস, উক্‌বা ইবনু আমির ও আবূ সাঈদ (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ হাইয়্যান আত-তাইমীর নাম ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু হাইয়্যান। তিনি কূফার অধিবাসী এবং বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। আবূ যুরআ ইবনু আমর ইবনু জারীর-এর নাম হারিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১. অনুচ্ছেদঃ
কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য শাফায়াত
২৪৩৫
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমার শাফা’আত রয়েছে কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য।
সহীহ, মিশকাত (৫৫৯৯), আয্‌যিলাল (৮৩১-৮৩২), রাওযুন নাযীর (৬৫)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ এবং এ সূত্রে গারীব। জাবির (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৩৬
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে কাবীরা গুনাহগারদের জন্যই আমার সুপারিশ।
সহীহ, প্রাগুক্ত।
মুহাম্মাদ ইবনু আলী বলেন, জাবির (রাঃ) আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ ইবনু আলী! যে লোক কাবীরা গুনাহ্‌ করে নাই তার সুপারিশের দি দরকার?
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উক্ত সূত্রে হাসান গারীব। এটিকে জাফর ইবনু মুহাম্মাদের রিওয়ায়াতের হিসাবেই গারীব বলা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১২. অনুচ্ছেদঃ
সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে
২৪৩৭
আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার প্রভূ আমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তরহাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যাদের কোন হিসাবও নেয়া হবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সাথে থাকবে আরো সত্তরহাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের দুই হাতের মুঠির তিনমুঠি পরিমাণ।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৮৬)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৩৮
আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক্ব (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একটি দলের সাথে ইলিয়া (বাইতুল মাকদিসের একটি নগর) নামক জায়গায় অবস্থান করছিলাম। দলের একজন লোক বলল, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মাতের একজন লোকের সুপারিশে তামীম বংশের সকল ব্যক্তির চেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি ছাড়াই। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর বর্ণনাকারী উঠে দাঁড়ালে আমি প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি হলেন ইবনু আবুল জায’আ (রাঃ)।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩১৬)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। ইবনু আবুল জায’আ হলেন আবদুল্লাহ (রাঃ)। আমরা তাঁর নিকট হতে এই একটি হাদীসই জেনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৩. অনুচ্ছেদঃ
আমি শাফা’আতের প্রস্তাবই গ্রহণ করলাম
২৪৩৯
হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কিয়ামাতের দিন রবীআ ও মুদার গোত্রের সমসংখ্যক লোকের জন্য সুপারিশ করবে।
দুর্বল সনদ, মুরসাল
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৪০
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে কেউ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য সুপারিশ করবে, কেউ একটি গোত্রের জন্য, কেউ একটি ছোট দলের জন্য, কেউ একজন লোকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।
যঈফ, মিশকাত (৫৬০২)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৪১
আওফ ইবনু মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার পক্ষ হতে একজন আগন্তুক আমার সামনে আসলেন এবং দুইটি প্রস্তাবের যে কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার (স্বাধীনতা) দিলেনঃ (১) হয় আমার উম্মাতের অর্ধেক সংখ্যক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা (২) আমার সুপারিশের সুযোগ থাকবে। আমি সুপারিশ করাকেই বেছে নিলাম। আর তা হবে সেই সকল ব্যক্তির জন্য যে সকল ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন শরীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩১৭)।
এ হাদীসটি আবুল মালীহ (রাহঃ) হতে অপর এক সাহাবীর বরাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে। এই সূত্রে আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)-এর উল্লেখ নেই। হাদীসটিতে আরো বিস্তৃত বিবরণ আছে। উপরোক্ত হাদীসের ন্যায় হাদীস কুতাইবা-আবূ আওয়ানা হতে, তিনি কাতাদা হতে, তিনি আবুল মালীহ হতে, তিনি আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
হাওযে কাওসারের বর্ণনা
২৪৪২
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার হাওযে কাওসারের পাশে আকাশের তারকার সমসংখ্যক পানপাত্র রয়েছে।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩০৪), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৪৩
সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি করে হাওয হবে। আর এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর গর্ববোধ করবেন যে, কার হাওযে কত বেশি লোক অবতরণ করবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে, আমার হাওযেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক আসবে।
সহীহ, তাখরীজু তাহাভীয়া (১৯৭), মিশকাত (৫৫৯৪), সহীহাহ্‌ (১৫৮৯)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি আশআস ইবনু মালিক (রাহঃ) হাসান বাসরীর বরাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ‘মুরসাল’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এই সূত্রে সামুরার (রাঃ) উল্লেখ নেই এবং এটিই সহীহ্‌।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৫. অনুচ্ছেদঃ
হাওযের পানপাত্রের বর্ণনা
২৪৪৪
আবূ সাল্লাম আল-হাবশী (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনু আবদুল আযীয (রাহঃ) এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন আমাকে তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সে একটি খচ্চরের পিঠে আমাকে বহন করিয়ে নিয়ে চললো। তারপর তিনি (আবূ সাল্লাম) খালীফার দরবারে হাযির হয়ে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! আমাকে এই খচ্চরের পিঠে সাওয়ার হয়ে আসতে খুবই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি বললেন, হে আবূ সাল্লাম! আমি আপনাকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে এখানে আনিনি, বরং আমি শুনতে পেলাম, আপনি নাকি হাওযে কাওসার সম্পর্কে সাওবান (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন? অতএব, আমি পছন্দ করলাম যে, আপনি আমার সামনে তা বর্ণনা করবেন। আবূ সাল্লাম বলেন, সাওবান (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়ামান দেশের আদান হতে সিরিয়ার অন্তর্গত বালকা শহরের আম্মান নামক জায়গার দূরত্বের সমান হবে আমার হাওযের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমান। এর পানির রং দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং পানপাত্রের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমসংখ্যক। যে ব্যক্তি তা হতে এক ঢোক পানি পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য অর্জন করবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যাদের মাথার চুল উষ্কখুষ্ক, পোশাক ধূলিমলিন, যারা ধনীর দুলালীদের বিয়ে করেননি এবং যাদের জন্য বন্ধ দরজা খোলা হতো না। উমার (রাহঃ) বলেন, কিন্তু আমি তো সুখ-স্বাচ্ছন্দে লালিতা-পালিতাকে বিয়ে করেছি, আমার জন্য বন্ধ দরজা খোলা হয়, আমি খালীফা আবদুল মালিকের আদরের দুলালী ফাতিমাকে বিয়ে করেছি। আমার মাথার চুল ধূলিমলিন হওয়ার আগ পর্যন্ত তা ধুবো না এবং আমার পরনের জামা ময়লাযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধুবো না।
হাদীসের মারফূ অংশটুকু সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩০৩)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি এই সূত্রে গারীব। এ হাদীসটি মা’দান ইবনু আবী তালহা হতে সাওবান (রাঃ) এর বরাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে। আবূ সাল্লাম আল-হাবশীর নাম মামতূর, তিনি সিরিয়ার অধিবাসী এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
২৪৪৫
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হাওযে কাওসারের পানপাত্রের সংখ্যা কত হবে? তিনি বললেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অন্ধকার রাতের আকাশের গ্রহ ও তারকারাজির সংখ্যার চেয়েও বেশি হবে এর পানপাত্রের সংখ্যা। আর সেগুলো হবে জান্নাতের পাত্র। তা হতে যে লোক একবার পান করবে, সে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান যা সিরিয়ার অন্তর্গত ‘আম্মান’ হতে ইয়ামানের ‘আইলার’ (দূরত্বের) সমান। এর পানি হবে দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি।
সহীহ, আয্‌যিলাল (৭২১), মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান, আবদুল্লাহ ইবনু আমর, আবূ বারযা আল-আস্‌লামী, ইবনু উমার, হারিসা ইবনু ওয়াহ্‌ব ও আল-মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনু উমার (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হাদীসে এ কথাটুকু উল্লেখ আছেঃ “কূফা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যকার দূরত্বের সমান হবে আমার হাওযের বিস্তৃতি”।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৬. অনুচ্ছেদঃ
এই উম্মাতের সত্তরহাজার বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে
২৪৪৬
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিরাজের রাত্রিতে যখন ঊর্ধারোহণ করলেন, তখন তিনি নবী ও নাবীগণের দলের পাশ দিয়ে যান। তিনি তখন দেখতে পেলেন তাদের সাথে আছে তাদের উম্মাতগণ। কোথাও বা একজন নবী ও তাঁর সাথে আছে ছোট একটি দল। আর কোন কোন নাবীর সাথে কেউ নেই। অবশেষে তিনি একটি বিরাট দলের পাশদিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিরাট দলটি কারা? বলা হলো, মূসা (আ:) ও তাঁর উম্মাতগণ। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন। তিনি বলেন, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম, অসংখ্য মানুষের একদল যারা আকাশের এই দিগন্ত ও সেই দিগন্ত পূর্ণ করে আছে। বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। আপনার উম্মাতের মধ্যে এরা ছাড়াও সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। একথা বলার পর তিনি ঘরের ভিতর ঢুকলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা তাকে প্রশ্ন করেনি এবং তিনিও এর ব্যাখ্যা করে বলেননি। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করলেন। কেউ বলেন, আমরাই সেই দলের, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলেন, তারা আমাদের সন্তান যারা ইসলামী ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসে বলেনঃ যারা গায়ে গরম লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, ফাল অর্থ্যাৎ শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাদের প্রভুর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, তারা হবে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। একথা শুনার পর উক্কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি সেই দলের অন্তর্ভূক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আরেকজন এসে বলল, আমিও কি সেই দলের অন্তর্ভূক্ত? তিনি বললেন, উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।
সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনু মাসঊদ ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৭. অনুচ্ছেদঃ
কতই না নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি
২৪৪৭
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা দ্বীনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে যে অবস্থায় ছিলাম বর্তমানে তো সেগুলো দেখতেই পাচ্ছি না। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি বললাম, বর্তমানে নামাযের অবস্থা কি? তিনি বললেন, তোমরা কি নামাযের ভিতর এমন সব কাজ কর নি যা তোমরা জান (প্রতিটি আমলে নতুন নতুন নিয়ম প্রবেশ করেছে)?
সহীহ, বুখারী (৫২৯, ৫৩০)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং এই সুত্রে আবূ ইমরান আল-জাওনীর রিওয়ায়াত হিসাবে গারীব। আনাস (রাঃ) হতে ভিন্ন সূত্রেও হাদিসটি বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৪৮
আসমা বিনতু উমাইস আল-খাসআমিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে নিজেকে বড় মনে করে এবং অহংকার করে আর আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে যালিম হয়ে যুলুম করে এবং পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে সত্যবিমুখ হয়ে অনর্থক কাজে লিপ্ত হয় এবং গোরস্থান ও মাটিতে মিশে যাওয়ার কথা ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে বিদ্রোহী হয়ে অবাধ্যতা করে এবং তার সূচনা ও পরিণতিকে ভুলে যায়। আর সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে দ্বীনের বিনিময়ে দুনিয়া হাসিল করার পথ অবলম্বন করে। আর সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে সন্দেহজনক বিষয়ের উপর আমল করে দ্বীনের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে লালসার গোলাম হয়ে যায়, লালসা তাকে টেনে নিয়ে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যাকে তার প্রবৃত্তি ভুল পথে পরিচালিত করে। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যাকে প্রবৃত্তির চাহিদা লাঞ্ছিত করে।
যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী (৫১১৫), যঈফা (২০২৬) যিলাল (৯-১০)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। এর সনদ তেমন মজবুত নয়।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
১৮. অনুচ্ছেদঃ
মু’মিনকে সাহায্য করার সাওয়াব
২৪৪৯
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঈমানদার ব্যক্তি কোন ক্ষুধার্ত ঈমানদার ব্যক্তিকে খাদ্য দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মু’মিন ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মু’মিন ব্যক্তিকে পানি পান করাবে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে সীলমোহর করা খাঁটি “রাহীক মাখতূম” পান করাবেন। যে মু’মিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মু’মিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন।
যইফ, মিশকাত (১৯১৩), যঈফ আবূ দাঊদ (৩০০)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীসটি আতিয়্যা হতে আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে মাওকূফরূপে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মতে মাওকূফ বর্ণনাটি অনেক বেশী সহীহ ও সমাঞ্জস্যপূর্ণ।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৫০
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ভয় পায় সে ভোররাতেই যাত্রা শুরু করে, আর ভোররাতেই যে লোক যাত্রা শুরু করে, সে গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখ, আল্লাহ তা‘আলার পণ্য খুবই দামী। জেনে রাখ, আল্লাহ তা‘আলার পণ্য হল জান্নাত।
সহীহ, সহীহাহ্‌ (৯৫৪, ২৩৩৫), মিশকাত তাহকীক ছানী (৫৩৪৮)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র আবুন নাযরের সুত্রেই জেনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৯. অনুচ্ছেদঃ
বৈধ অক্ষতিকর বিষয় ছেড়ে দেওয়ার ফাযীলত
২৪৫১
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী আতিয়্যা আস-সাদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা ক্ষতিকর কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ অক্ষতিকর বিষয় না ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত মুত্তাকীদের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে না।
যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২১৫)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২০. অনুচ্ছেদঃ
আমার কাছে এলে তোমাদের যে অবস্থা হয় তা বহাল থাকলে
২৪৫২
হানযালা আল-উসাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার সামনে এসে যেরূপ অবস্থায় থাক, সদা-সর্বদা যদি এভাবেই থাকতে, তাহলে নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তাদের ডানা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করে রাখত।
হাসান সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৯৭৬), মুসলিম অনুরূপ।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ হাদিসটি হানযালা আল-উসাইদী (রাঃ) হতে অন্য সূত্রেও বর্ণিত আছে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
২১. অনুচ্ছেদঃ
প্রতিটি জিনিসের উত্থান-পতন আছে
২৪৫৩
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল কাজের পিছনে থাকে প্রেরণা ও উদ্দীপনা, আর উদ্দীপনার পিছনেই লুকিয়ে থাকে অলসতা ও কর্মবিমুখতা। কাজেই যে লোক সোজা পথে চলে এবং নিজেকে মাঝামাঝি পর্যায়ে সোজাভাবে কাজে অটল রাখতে পারে তার সফলতা অর্জনের আশা করতে পার। আর যদি তার দিকে আঙ্গুলে ইঙ্গিত করা হয় (লোক দেখানো আমল করলে) তাহলে তাকে সফলকাম ব্যক্তিদের মধ্যে গন্য করো না।
হাসান, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫৩২৫), তা’লীকুর রাগীব (১/৪৬), আয্‌যিলাল (১/২৮)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কারো অনিষ্টতার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তার দিকে তার দ্বীন কিংবা দুনিয়ার ব্যাপারে আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়। তবে যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা হিফাযাত করেন তার কথা আলাদা।”
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২২. অনুচ্ছেদঃ
মানুষ কামনা-বাসনা ও বিপদাপদে বেষ্টিত
২৪৫৪
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন আমাদেরকে (বুঝানোর) উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বর্গাকৃতির চতুর্ভুজ আঁকলেন, তারপর এর মাঝ বরাবর একটি লম্বারেখা টানলেন, তারপর একটি লম্বারেখা টানলেন চতুর্ভুজের বাইরে দিয়ে, তারপর মাঝের লম্বারেখার চারিদিকে অনেকগুলো রেখা টানলেন এবং বললেনঃ এটি হলো আদম-সন্তান এবং বেষ্টনী হলো তার জীবনকালের সীমা, যা তাকে বেষ্টন করে রেখেছে। মাঝের লম্বারেখাটি হলো মানুষ, এর চারপাশের রেখাসমূহ হলো তার বিপদাপদ। এর একটি হতে সে মুক্তি পেলে অন্যটি তাকে দংশন করে। আর বাইরের রেখাটি হলো তার কামনা-বাসনা।
সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৫৫
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম-সন্তান বৃদ্ধ হওয়ার পরেও তার দুটি স্বভাব যুবকই থাকেঃ সম্পদের লোভ ও বেঁচে থাকার লালসা।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৩৪), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেল, এ হাদীদটি হাসান সহী্হ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৫৬
আবদুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম-সন্তানকে নিরানব্বইটি (অসংখ্য) বিপদাপদ দ্বারা বেষ্টন করেই সৃষ্টি করা হয়। বিপদসমূহ অতিক্রান্ত হলেও সে বার্ধক্যে উপনীত হয়।
হাসান, ২০৫৮ নং হাদীসে পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর কত সময় দরুদ পড়বে
২৪৫৭
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ হে মানবগণ! তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলাকে স্মরণ কর, তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলাকে স্মরণ কর। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙ্গাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। উবাই (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি তো খুব অধিক হারে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরুদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইছা কর। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার দরুদ পাঠে কাটিয়ে দিব? তিনি বললেনঃ তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।
হাসানঃ সহীহাহ (৯৫৪), ফাযলুস সালাত আল্লান্নাবী (১৩,১৪)।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২৪. অনুচ্ছেদঃ
আল্লাহ্‌কে যথাযথ লজ্জা করা
২৪৫৮
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্য। তিনি বললেনঃ তা নয়, বরং আল্লাহ্‌ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষন করবে এবং পেট ও এর এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাযত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পঁচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাঁকজমক পরিহার করে। যে লোক এইসকল কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহ্‌কে যথাযথভাবে লজ্জা করে।
হাসানঃ রাওযুন নাযীর (৬০১), মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (১৬০৮)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। আমরা এই হাদীসটি শুধুমাত্র আব্বাস ইবনু ইসহাক হতে আস-সাব্বাহ ইবনু মুহাম্মদের সূত্রেই এভাবে জেনেছি।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২৫. অনুচ্ছেদঃ
কোন ব্যক্তি বুদ্ধিমান
২৪৫৯
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে। আর সেই ব্যক্তি নির্বোধ ও অক্ষম যে তার নাফসের দাবির অনুসরণ করে আর আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে বৃথা আশা পোষণ করে।
যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২৬০)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। “মান দানা নাফসাহু” বাক্যাংশের তাৎপর্য এই যে, কিয়ামাতের দিন আত্মাকে হিসাবের সম্মুখীন করার পূর্বেই যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নিজের নাফসের হিসাব-নিকাশ নেয়। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, “হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব নাও এবং মহাসমাবেশে হাযির হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার হিসাব-নিকাশ নেয়, কিয়ামাতের দিন তার হিসাব অত্যন্ত হালকা ও সহজ হবে”। মাইমূন ইবনু মিহরান বলেন, কোন ব্যক্তি খাঁটি মুত্তাকী হতে পারবে না যে পর্যন্ত না সে আত্মসমালোচনা করবে। যেমন কোন ব্যক্তি তার শরীকের নিকট হতে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নেয় যে, সে খাদ্যদ্রব্য ও কাপড়-চোপড় কোথা থেকে কত মূল্যে সংগ্রহ করেছে।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৬. অনুচ্ছেদঃ
মৃত্যুকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করার ফাযীলাত
২৪৬০
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে (জানাযার) এসে দেখেন যে, কিছু লোক হাসাহাসি করছে। তিনি বললেন, ওহে! তোমরা যদি জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী মনে করতে তাহলে আমি তোমাদের যে অবস্থায় দেখছি অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে। তোমরা জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে খুব বেশী স্মরণ কর। কেননা কবর প্রতিদিন দুনিয়াবাসীকে সম্বোধন করে বলতে থাকে, আমি প্রবাসী মুসাফিরের বাড়ী, আমি নির্জন কুটির, আমি মাটির ঘর, আমি পোকা-মাকড় ও কীট-পতঙ্গের আস্তানা। তারপর কোন ঈমানদারকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, ‘মারহাবা, স্বাগতম’, আমার পিঠের উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে প্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে, আর তুমি আমার কাছেই এসেছ। সুতরাং তুমি শীঘ্রই দেখবে যে, আমি তোমার সাথে কেমন সৌজন্যমূলক ব্যবহার করি। তারপর কবর তার জন্য দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং জান্নাতের দিকে তার একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর অপরাধী পাপী কিংবা কাফিরকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, তোমার আগমন অশুভ ও তোমার জন্য স্বাগতম নেই। কেননা আমার উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে ঘৃণিত ও অপ্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট ফিরে এসেছ। সুতরাং শীঘ্রই দেখবে, আমি তোমার সাথে কেমন জঘন্য আচরণ করি। এই বলে সে সংকুচিত হয়ে যাবে এবং তার উপর একেবারে চেপে যাবে, ফলে তার পাঁজরের হাড়সমূহ পরষ্পরের মধ্যে ঢুকে যাবে। রাবী বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক হাতের আংগুলসমূহ অপর হাতের আংগুলে ঢুকিয়ে বললেন, ‘এভাবে’। তিনি আরও বললেন, তার জন্য এরূপ সত্তরটি অজগর সাপ নিয়োগ করা হবে, তার মধ্যে একটি সাপও যদি যমিনে একবার ফুঁ দেয় তাহলে এতে কোন কিছুই উৎপন্ন হবে না। তারপর হিসাব-নিকাশ না হওয়া পর্যন্ত সে অজগরগুলো তাকে দংশন করতে থাকবে, খামচাতে থাকবে। রাবী (আবূ সাঈদ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কবর হল জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান, অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত।
খুবই দুর্বল, যঈফা (৪৯৯০), স্বাদ কর্তনকারী অংশটুকু সহীহ, সহীহা (২৪০৯)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি।
হাদিসের মানঃ খুবই দুর্বল
২৭. অনুচ্ছেদঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়া প্রসঙ্গে
২৪৬১
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ কোন এক সময় আমি রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে দেখলাম একটি মাদুরের উপর তিনি কাৎ হয়ে শুয়ে আছেন। আমি তাঁর শরীরের পিঠের অংশে মাদুরের দাগ দেখতে পেলাম।
সহীহঃ তাখরীজুত তারগীব (৪/১১৪), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। হাদীসটিতে একটি দীর্ঘ ঘটনা আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৮. অনুচ্ছেদঃ
দুনিয়াবী আসক্তি ধ্বংসের কারণ হবে
২৪৬২
 ‘আমর ইবনু ‘আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-কে (বাহরাইনে) প্রেরণ করেন। পরে তিনি বাহরাইন হতে কিছু ধন-দৌলত নিয়ে মাদীনায় ফিরে আসেন। আনসারগণ আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ)-এর ফিরে আসার খবর পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ফজরের নামাযে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাজ আদায় শেষে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। আনসারগন তখন তার নিকটে এসে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দেখে সামান্য হেসে বললেন, আমার ধারনা তোমরা হয়তো শুনেছো যে, আবূ ‘ঊবাইদাহ কিছু ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে এসেছে। তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন তাহলে তোমরা সুখবর গ্রহণ কর। তোমারা যাতে সন্তুষ্ট হবে এমন বিষয়ের আশা পোষণ কর। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের গরিবী ও অভাব-অনটনের ভয় করি না, বরং ভয় করি পৃথিবীটা তোমাদের জন্য সম্প্রসারিত করা হবে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য যেভাবে করা হয়েছিল। তারপর তোমরা পৃথিবীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাবে, যেভাবে তারা অনুরক্ত হয়েছিল। ফলে পৃথিবী তোমাদের বিনাশ করে দিবে, যেভাবে তাদেরকে বিনাশ করেছিল।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৯৭), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৯. অনুচ্ছেদঃ
গ্রহণকারীর চাইতে প্রদানকারী উত্তম
২৪৬৩
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি কিছু ধন-সম্পদ চাইলাম। তিনি আমাকে (সেটা) দিলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন, তারপর বললেন, হে হাকীম! ধন-দৌলত হলো সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয় বস্তু। সুতরাং যে লোক এটাকে উদার মনে গ্রহণ করবে, তার জন্যে এতেই মঙ্গল ও রাহমত প্রদান করা হবে। আর যে লোক তা লোভাতুর মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করবে, সে তাতে বারকাত ও মঙ্গল্প্রাপ্ত হবে না। সে এমন লোকের সাথে তুলনীয়, যে খাদ্য গ্রহণ করে প্রচুর কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের হাত (দাতার হাত) নিচের (প্রার্থনাকারীর) হাত হতে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন! আমি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আপনার পর আর কারো নিকট প্রার্থনা করে তার সম্পদে কমতি করবো না। তারপর আবূ-বাকর (রাঃ) তার আমলে হাকীম (রাঃ)-কে কিছু দেয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি তা নিতে অসম্মতি জানান। তারপর উমার (রাঃ)-ও তাকে কিছু দেয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি কিছু নিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। অতঃপর উমার (রাঃ) বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি হাকীমের ব্যাপারে তোমাদেরকে সাক্ষী করছি যে, আমি তাকে গানীমাতের সম্পদ হতে তার প্রাপ্য উপস্থাপন করেছি, কিন্তু তিনি তা নিতে অসম্মতি জানান। তারপর হাকীম (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে আর কারো নিকট হতে কোন কিছুই নেননি।
সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৪
আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা এতে ধৈর্য ধারণ করেছি। তাঁর মৃত্যুর পরে সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আরাম-আয়িশ দ্বারা আমাদেরকে পরীক্ষা করা হলে আমরা ধৈয্য ও সহনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পারিনি।
সনদ সহীহ।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৫
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির একমাএ চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ্‌ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দিবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দিবে। আর যে ব্যক্তির একমাএ চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ্‌ তা’আলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দিবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না।
সহীহঃ সহীহা (৯৪৯-৯৫০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৬
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদাতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুইহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১০৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান গারীব। আবূ খালিদ আল-ওয়ালিবীর নাম হুরমুয।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩১. অনুচ্ছেদঃ
ওজন করায় বারাকাত চলে গেল
২৪৬৭
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর সময় আমাদের ঘরে সামান্য কিছু যব ছিল। আল্লাহ্‌ তা’আলার ইচ্ছানুযায়ী আমরা তা থেকে খেতে থাকলাম। আমি একদিন দাসীকে বললাম, এগুলো কৌটা দ্বারা পরিমাপ কর। সে তা পরিমাপ করল। এরপর কিছু দিনের মধ্যে তা শেষ হয়ে গেল। তিনি {আয়িশাহ (রাঃ)} বলেন, আমরা এগুলো এমনি রেখে দিলে (যদি না পরিমাপ করতাম) আরো অধিক দিন খেতে পারতাম।
সহীহঃ বুখারী (৬৪৫১), মুসলিম (৮/২১৮) সংক্ষেপিত।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি সহীহ। শাতরুন শব্দের অর্থ সামান্য কিছু।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩২. অনুচ্ছেদঃ
ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে পর্দা না বানানো
২৪৬৮
 ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের ঘরের দরজায় একটি পাতলা রঙিন পর্দা ঝুলানো ছিল, এতে কিছু ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে বললেনঃ এটা খুলে নামিয়ে ফেলো। যেহেতু, এটা আমাকে দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি [আয়িশাহ (রাঃ)] আরো বলেন, আমাদের নিকট একটি রেশমি বুটিদার চাদর ছিল, আমরা তা পরিধান করতাম।
সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (১৩৬), মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহীহ এবং উপযুক্ত সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৬৯
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘুমানোর বালিশটি ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভিতর ছিল খেজুর গাছের ছাল-বাকলে ভরা।
সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (২৮২), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদিসটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৩. অনুচ্ছেদঃ
দানকৃত বস্তুই অবশিষ্ট থাকে
২৪৭০
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন সাহাবীগণ একটি ছাগল যবেহ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, এর আর কি বাকী আছে? তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বললেন, এর কাঁধের অংশ ছাড়া আর কিছু বাকী নেই (দান করা হয়েছে)। তিনি বললেন, কাঁধ ব্যতীত সবটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে (যা কিছু দান করা হয়েছে তা-ই আল্লাহ্‌র নিকট বাকী রয়েছে)।
সহীহঃ সহীহা (২৫৪৪)।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি সহীহ। আবূ মাইসারার নাম ‘আমর ইবনু শুরাহবিল আল-হামদানী।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৪. অনুচ্ছেদঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দারিদ্র্যতা
২৪৭১
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের সদস্যগণ সারামাস যাবত এমন অবস্থায়ও কাটিয়েছি যে, চুলায় আগুন ধরাইনি। আমাদের খাবারের জন্য পানি ও খেজুর ব্যতীত আর কিছুই থাকতো না।
সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১১১), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৭২
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে আল্লাহ্‌র পথে যেভাবে ভয় দেখানো হয়েছে, আর কাউকে ঐভাবে ভয় দেখানো হয়নি। আমাকে আল্লাহ্‌ তা’আলার উদ্দেশ্যে যেভাবে যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে আর কোন ব্যক্তিকে সেইভাবে যন্ত্রণা প্রদান করা হয়নি। আমার উপর দিয়ে ত্রিশটি দিবারাত্রি এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে যে, বিলালের বগলের মধ্যে রক্ষিত সামান্য খাদ্য ছিল আমার ও বিলালের সম্বল। তা ছাড়া এতটুকু আহারও ছিল না যা কোন প্রাণধারী প্রাণী খেয়ে বাঁচতে পারে।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৫১)।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহীহ। এই হাদীসের অর্থ হলো নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নিয়ে যখন মক্কা হতে (তায়িফে) পলায়ন করেছিলেন, তখন বিলাল (রাঃ) তারঁ বগলের নিচে দাবিয়ে নিতে পারে এতটুকু খাবার সাথে বহন করে নিয়েছিলেন। তাঁরা এই খাবার খেয়ে দীর্ঘ একমাস অতিবাহিত করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৭৩
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এক শীতের দিনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘর হতে বের হলাম। এর পূর্বে আমি একটি লোমহীন চামড়া নিয়ে তা মাঝামাঝি কেটে গলায় ঢুকালাম এবং খেজুরের পাতা দিয়ে কোমরে শক্ত করে বাঁধলাম। আমি তখন খুব বেশী ক্ষুধার্ত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে কোন খাদ্যসামগ্রী থাকলে তা অবশ্য খেয়ে ফেলতাম। আমি খাদ্যের খোঁজে বের হয়ে গেলাম। তারপর জনৈক ইয়াহূদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, সে তার বাগানে (কপিকল জাতীয়) চরকির সাহায্যে কুয়া হতে পানি তুলছিল। আমি প্রাচীরের একটি ছিদ্র দিয়ে তাকে দেখলাম। সে প্রশ্ন করল, হে বিদুঈন! কি চাও? তুমি প্রতি বালতির বিনিময়ে একটি করে খেজুর পাবে, আমার বাগানের পানি তুলে দিবে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, দরজা খোল, আমি ভেতরে আসি। সে দরজা খুললে আমি ভেতরে গেলাম। তারপর সে একটি বালতি এনে দিল। আমি বালতি ভরে পানি উঠাতে লাগলাম আর সে প্রতি বালতিতে একটি করে খেজুর দিতে লাগল। অবশেষে খেজুরে আমার হাতের মুঠি ভরে গেল। আমি তখন বালতি রেখে দিয়ে বললাম, আমার যথেষ্ট হয়েছে। আমি খেজুরগুলো খেয়ে পানি পান করলাম এবং মসজিদে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সেখানে পেলাম।
যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (৩/১০৯, ১১০)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৭৪
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার তাদেরকে দুর্ভিক্ষে পেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে একটি করে খেজুর দেন।
শাজ, ইবনু মাজাহ (৪১৫৭)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ শায
২৪৭৫
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক অভিযানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তিনশত লোকের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। আমরা আমাদের রসদপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী আমাদের কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। রসদ (পাথেয় ছিল খুবই সামান্য, কাজেই তাড়াতাড়ি তা) ফুরিয়ে গেল। এমনকি প্রতি জনের জন্য দিনশেষে একটি করে খেজুর নির্ধারিত হতো। তাকে বলা হলো, হে আবূ আব্দুল্লাহ! একজন লোকের জন্য সারাদিনে একটি খেজুরে কি হতো? তিনি বললেন, একটি খেজুরে কিছুই হতো না, কিন্তু আমরা একটির উপকারিতাও তখন বুঝতে পারলাম, যখন হতে একটি করে খেজুর পাবার সুযোগও ফুরিয়ে গেল। তারপর আমরা সাগরের সামনে এসে একটি বিরাট আকারের মৎস্য দেখতে পেলাম। সমুদ্র তা নিক্ষেপ করেছে। আমরা আঠার দিন পর্যন্ত এটা খেলাম। আমাদের নিকট তা কতই না প্রিয় ছিল।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১৫৯), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদিসটি হাসান সহীহ। এই হাদিসটি জাবির (রাঃ) হতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এটিকে ওয়াহাব ইবনু কাইসানের সূত্রে মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) আরো পরিপূর্ন ও লম্বা করে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৫. অনুচ্ছেদঃ
দারিদ্রতা স্বচ্ছলতার চাইতে উত্তম
২৪৭৬
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় চামড়ার তালিযুক্ত একটি ছেড়া চাদর গায়ে জড়িয়ে মুসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) এসে আমাদের সামনে হাযির হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বর্তমান করুণ অবস্থা দেখে এবং তার পূর্বের স্বচ্ছল অবস্থার কথা মনে করে কেঁদে ফেললেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে সময় তোমাদের কি অবস্থা হবে, যখন তোমাদের কেউ সকালে এক জোড়া পোশাক পরবে আর বিকেলে পরবে অন্য জোড়া। আর তার সামনে খাদ্যভর্তি একটি পেয়ালা রাখা হবে আর অন্যটি উঠিয়ে নেয়া হবে। তোমরা তোমাদের ঘরগুলো এমনভাবে পর্দায় ঢেকে রাখবে, যেভাবে কা’বা ঘরকে গেলাফে ঢেকে রাখা হয়। সাহাবীগণ আরয করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তখন বর্তমানের চাইতে অনেক স্বচ্ছল থাকব। বিপদাপদ ও অভাব-অনটন হতে নিরাপদ থাকব। ফলে ইবাদাত বন্দিগীর জন্য যথেষ্ট অবসর পাব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং বর্তমানটাই তোমাদের জন্য তখনকার তুলনায় অনেক ভালো।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫৩৬৬) দেখুন হাদীস নং (২৫৯১)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইয়াযীদ ইবনু যিয়াদ হলেন ইবনু মাইসারা, তিনি মাদীনার অধিবাসী। মালিক ইবনু আনাস-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ আলিম তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর ইয়াযীদ ইবনু যিয়াদ আদ-দিমাশকী যুহরীর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তার সূত্রে ওয়াকী, মারওয়ান ইবনু মুআবিয়া হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর কূফার অধিবাসী ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদের সূত্রে সুফিয়ান, শুবা, ইবনু উআইনা-সহ একাধিক ইমাম হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৩৬. অনুচ্ছেদঃ
আহলে সুফফার মধ্যে দুধ বন্টন
২৪৭৭
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সুফফাবাসীগণ ছিলেন মুসলিমদের অতিথি, তাদের আশ্রয় লাভের মতো ধন-দৌলত, পরিবার-স্বজন কিছুই ছিল না। আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মা'বূদ নেই! আমি ক্ষুধার কষ্টে আমার পেট মাটিতে চেপে ধরে থাকতাম, আর কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। কোন একদিন আমি তাদের (সাহাবাদের) পথে বসে গেলাম। এমন সময় আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করলাম। উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাকে তার পিছনে যেতে বলেন (এবং কিছু খেতে দেন)। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ‘উমার (রাঃ) এই পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আমি তাকেও আল্লাহ তা'আলার কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে সেই একই উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম, কিন্তু তিনিও চলে গেলেন এবং কিছুই করলেন না। তারপর আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখা মাত্রই (আসল ব্যাপার বুঝতে পেরে) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আবু হুরায়রা্! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি বললেন, চলো, তারপর তিনি চললেন, আমি তার অনুসরণ করলাম। তিনি তার গৃহে প্রবেশ করলেন, আমিও ঢোকার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে সম্মতি প্রদান করলেন। তিনি ঘরে এক পেয়ালা দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের জন্য এই দুধ কোথা হতে এসেছে? বলা হলো, আমাদের জন্য অমুক ব্যক্তি উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা্! আমি বললাম, লাব্বাইকা। তিনি বললেন, যাও সুফফাবাসীদেরকে ডেকে নিয়ে এসো, তারা তো মুসলিমদের অতিথি, তাদের নির্ভর করার মতো ধন-সম্পদ, পরিবার পরিজন বলতে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সাদাকাহর কোন মাল আসলে তিনি তার কোন অংশই না রেখে তাদের জন্য সবটুকু পাঠিয়ে দিতেন। আর উপহার আসলে তিনি তা হতে তাদের জন্য কিছু পাঠিয়ে দিতেন এবং নিজেও কিছু নিতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম এবং (মনে মনে) বললাম, এই এক পেয়ালা দুধ দিয়ে আসহাবে সুফফার কি হবে? অথচ আমাকে তাদের নিকট পাঠানো হচ্ছে। এই দুধ তাদের মধ্যে পরিবেশন করার জন্য তো তিনি আমাকেই আদেশ করবেন। তখন তার কোন অংশই আমার জন্য জুটবে না। অথচ আমি আশা করছিলাম যে, আমি এটুকু পান করতে পারলে আমার জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ পালন করা ব্যতীত আর কোন পথও নেই। অতএব আমি তাদের নিকট এসে তাদেরকে ডাকলাম। তারা এসে ঘরে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলে তিনি বললেনঃ হে আবু হুরায়রা! পেয়ালাটা নিয়ে তাদেরকে দুধ পরিবেশন কর। আমি পেয়ালাটি নিলাম তারপর আমি একজন করে দিতে থাকলাম। সে পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে পেয়ালাটি আমাকে ফিরত দিলে আমি অন্যজনকে দিতাম। সেও পরিতৃপ্ত হতো। এভাবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌছলাম। সমবেত সকলেই পরিতৃপ্ত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেয়ালাটি তার হাতে নিয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচুকি হাসলেন এবং বললেন, আবু হুরায়রা্! এখন তুমি পান কর। আমি পান করলাম। তিনি আবার বললেন, পান কর। তারপর আমি পান করতেই থাকলাম আর তিনি বলতেই থাকলেন, পান কর। অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই। তারপর তিনি পেয়ালা হাতে নিয়ে আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন।
সহীহঃ বুখারী (৬৪৫২)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৭. অনুচ্ছেদঃ
পেট পূর্ণ করে খাদ্যগ্রহণকারী ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন ক্ষুধার্ত থাকবে
২৪৭৮
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে ঢেকুর তুললো। তিনি বললেন, আমাদের সামনে তোমার ঢেকুর তোলা বন্ধ কর। অবশ্যই যে সকল ব্যক্তি দুনিয়াতে বেশি পরিতৃপ্ত হবে তারাই কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে।
হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (৩৩৫০-৩৩৫১)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান, এই সনদসূত্রে গারীব। আবু জুহাইফা (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
৩৮. অনুচ্ছেদঃ
সাহাবীদের জীর্ণ পোশাক
২৪৭৯
আবু বুরদা (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (আবু মূসা) বলেন, হে বাছা! যদি তুমি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বৃষ্টিতে সিক্ত অবস্থায় দেখতে তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের শরীরের গন্ধকে ভেড়ার গন্ধ বলে ধারণা করতে।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৫৬২)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ। এই হাদীসের মর্ম এই যে, তাদের শরীরে পশমী কাপড় থাকতো, বৃষ্টির পানিতে ভিজলে তা হতে ভেড়ার শরীরের দুর্গন্ধের মতো দুৰ্গন্ধ বের হতো।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৯. অনুচ্ছেদঃ
যে ব্যক্তি বিনয়ের পোশাক পরিধান করে
২৪৮০
ইবরাহীম নাখঈ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ দালান কোঠা সবই বিপদের কারণ। আবূ হামযা বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম যা না হইলেই নয় সে সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ এতে সাওয়াবও নেই, গোনাহ্ও নেই।
দুর্বল সনদ, বিচ্ছিন্ন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৮১
মু'আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ক্ষমতা থাকার পরেও আল্লাহ তা'আলার প্রতি নম্রতাবশতঃ দামী জামা পরা ছেড়ে দিবে, তাকে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা'আলা সকল সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং ঈমানদারদের পোশাকের মধ্যে যে কোন পোশাক পরিধান করার অধিকার দিবেন।
হাসানঃ সহীহা (৭১৭)।
এ হাদীসটি হাসান। “হুলালুল ঈমান’ শব্দের অর্থ ঈমানদারগণকে জান্নাতের যে পোশাক পরতে দেয়া হবে তা।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
৪০. অনুচ্ছেদঃ
সব ব্যয় আল্লাহ তা'আলার পথে, অট্টালিকা নির্মাণের ব্যয় ব্যতীত
২৪৮২
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দালানকোঠা নির্মাণের খরচ ব্যতীত জীবন যাপনের সকল খরচই আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় বলে পরিগণিত। দালানকোঠা নির্মাণের খরচের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।
যঈফ, যঈফা (১০৬১), তা’লীকুর গারীব (২/১১৩)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৪৮৩
হারিসা ইবনু মুযাররিব (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রুগ্ন খাব্বাব (রাঃ)-কে দেখতে গেলাম। তখন তিনি তার শরীরে সাতবার উত্তপ্ত লোহার দাগ দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমার রোগ দীর্ঘস্থায়ী হলো। যদি আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে না শুনতামঃ “তোমরা মৃত্যু কামনা করো না", তাহলে আমি নিশ্চয়ই মৃত্যু কামনা করতাম। তিনি আরো বললেন, মানুষকে শুধুমাত্র মাটিতে খরচ (দালান-কোঠা স্থাপনে খরচ) ছাড়া, সকল খরচেই নেকি দেয়া হবে।
সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। ৯৫৭ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪১. অনুচ্ছেদঃ
বস্ত্র দানকারী আল্লাহ্‌র হিফাযাতে থাকে
২৪৮৪
হুসাইন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক ভিক্ষুক এসে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট কিছু চাইল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কি রমযানের রোযা রাখ? সে বলল, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, তুমি আমার নিকট কিছু চেয়েছ। আর যাঞ্চাকারীর অধিকার আছে। এখন তোমার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করা আমার কর্তব্য। এ কথা বলে তিনি তাকে একটি কাপড় দান করলেন, তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় পরতে দিলে সে তত দিন আল্লাহ্‌ তা’আলার হিফাযাতে থাকে, যত দিন পর্যন্ত সেই কাপড়ের সামান্য অংশও তার শরীরে থাকে।
যইফ, মিশকাত(১৯২০), তা’লীকুর রাগীব(৩/১১২)
আবূ ঈসা বলেন,এ হাদিসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৪২. অনুচ্ছেদঃ
সালামের প্রসার, খাদ্যদান ও গভীর রাতে নামায
২৪৮৫
আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় এসে পৌছলেন, মানুষ তখন দলে দলে তার নিকট দৌঁড়ে গেল। বলাবলি হতে লাগলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন। অতএব তাকে দেখার জন্য আমিও লোকদের সাথে উপস্থিত হলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা কোন মিথ্যুকের চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা এইঃ হে মানুষগণ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান কর এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় কর। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহীহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৩৩৪, ৩২৫১)।
আৰু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৩. অনুচ্ছেদঃ
কৃতজ্ঞ ভোজনকারী
২৪৮৬
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোযাদারের সমান মর্যাদাশীল।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৭৬৪, ১৭৬৫)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৪. অনুচ্ছেদঃ
মুহাজিরদের প্রতি আনসারদের উদারতা
২৪৮৭
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় আগমন করলেন, মুহাজিরগণ তখন তার নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা যাদের কাছে হিজরাত করে এসেছি, তাদের মতো আর কাউকে দেখিনি সম্পদশালী অবস্থায় ও অস্বচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহ তা'আলার পথে) এত ব্যয় করতে এবং এত উত্তমরূপে সহানুভূতি দেখাতে। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা কমানোর জন্য তারাই যথেষ্ট এবং তারা নিজেদের পরিশ্রমে অর্জিত সম্পদে আমাদেরকে ভাগীদার করেছেন। এমনকি আমাদের ভয় হচ্ছে যে, তারাই সমস্ত সাওয়াব নিয়ে যাবেন। এসব কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, তোমরা যতদিন তাদের জন্য দু'আ করবে এবং তাদের গুণগান করবে ততদিন তোমাদেরও সাওয়াব হতে থাকবে।
সহীহঃ মিশকাত (৩২০৬), তা’লীকুর রাগীব (২/৫৬)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ, এই সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৫. অনুচ্ছেদঃ
যে ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম
২৪৮৮
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।
সহীহঃ সহীহাহ (৯৩৫)।
আৰু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গরীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৮৯
আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে থাকাবস্থায় কি করতেন? তিনি বললেন, তিনি সংসারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন, তারপর নামাযের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি উঠে গিয়ে নামায আদায় করতেন।
সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (২৯৩)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৬. অনুচ্ছেদঃ
মোসাফাহা
২৪৯০
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাতে এসে মুসাফাহা (করমর্দন) করত, তখন সেই ব্যক্তি তার হাত টেনে না নেয়া পর্যন্ত তিনি নিজের হাত টেনে নিতেন না। আর সে তার চেহারা ফিরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত তিনি ঐ ব্যক্তি হতে নিজের চেহারা ফিরিয়ে নিতেন না। তিনি কখনো তাঁর পা দুটি তাঁর সামনে বসা লোকদের দিকে প্রসারিত করতেন না।
দূর্বল, তবে মুসাফাহার অংশটুকু সহীহ ইবনু মাযাহ (৩৭১৬)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদিসটি গারীব।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৪৭. অনুচ্ছেদঃ
অহঙ্কারীর পরিণতি
২৪৯১
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের আগের উম্মাতের মধ্যে কোন এক লোক তার দামী জামা পরে গর্বভরে পথে বের হলে আল্লাহ তা'আলা তখন তাকে গ্রাস করার জন্য যমীনকে নির্দেশ দিলেন। অতএব যমীন তাকে গ্রাস করে এবং সে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত এভাবে ধ্বসতেই থাকবে।
সহীহঃ আস-সহীহ আল জামি' (৩২১৭), বুখারী, মুসলিম আবু হুরায়রা হতে।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৯২
আমর ইবনু শু'আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবার ও তার দাদা থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাম্ভিক ব্যক্তিদেরকে ক্বিয়ামাত দিবসে ক্ষুদ্র পিপড়ার ন্যায় মানুষের রূপে সমবেত করা হবে। তাদেরকে চারদিক হতে অপমান ও লাঞ্ছনা ছেয়ে ফেলবে। জাহান্নামের ‘বুলাস’ নামক একটি কারাগারের দিকে তাদেরকে টেনে নেয়া হবে, আগুন তাদেরকে গ্রাস করবে, জাহান্নামীদের গলিত রক্ত ও পুঁজ তাদেরকে পান করানো হবে।
হাসানঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৫১১২), তা’লীকুর রাগীব (৪/১৮)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
৪৮. অনুচ্ছেদঃ
ক্রোধ সংবরণকারীর মর্যাদা
২৪৯৩
মু'আয ইবনু আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাগ কার্যকর করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা দমন করে, আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামাতের দিন তাকে আহবান করে সকল মাখলুকের (সৃষ্টি) সামনে আনবেন এবং তাকে তার ইচ্ছামতো যে কোন হূর বেছে নেয়ার ক্ষমতা (স্বাধীনতা) দিবেন।
হাসানঃ রাওযুন নাযীর (৪৮১, ৮৫৪), তা’লীকুর রাগীব (৩/২৭৯)।
আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২৪৯৪
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি গুণ রয়েছে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর তাঁর (রহমাতের) ডানা প্রসারিত করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনঃ দূর্বলদের সাথে ভদ্র ব্যবহার, পিতা-মাতার সাথে মমতা জড়ানো কোমল ব্যবহার এবং দাস-দাসীর প্রতি অনুগ্রহপূর্ণ ও সৌজন্যমূলক আচরণ।
মাওযূ, যঈফা (৯২)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান গারীব। আবূ বাক্‌র ইবনুল মুনকাদির হলেন মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদিরের ভাই।
হাদিসের মানঃ জাল হাদিস
২৪৯৫
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আমার বান্দাগণ! তোমরা তো সবাই পথভ্রষ্ট, তবে তারা নয়, যাদের আমি হিদায়াত করি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট হিদায়াতের আবেদন কর, আমি হিদায়াত করব। আর যাদের আমি ধনী করেছি তাদের ব্যতীত তোমাদের সবই তো দরিদ্র। তোমরা আমার নিকটে প্রার্থনা কর আমি রিযিক দেব। আর আমি যাদের মাফ করেছি তাদের ব্যতীত তোমাদের সকলেই তো গুনাহগার। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ কথা জানা যে, আমি মাফ করার ক্ষমতা রাখি, তারপর সে ক্ষমা ভিক্ষা করে, আমি তার গুনাহ মাফ করে দেই। আমি এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ করি না। তোমাদের পূর্বের ও পরের, জীবিত ও মৃত, সিক্ত ও শুষ্ক (স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল) সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের শ্রীবৃ্দ্ধি ঘটবে না। আর তোমাদের আগের ও পরের, জীবিত ও মৃত, ভিজা ও শুষ্ক (স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল) সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সবচাইতে বড় পাপী বান্দার মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের হানি ঘটবে না। আর যদি তোমাদের আগের ও পরের, জীবিত ও মৃত, ভিজা ও শুষ্ক সকলে একটি জায়গায় সমবেত হয় এবং প্রত্যেকেই তার পূর্ণ চাহিদামত আমার নিকট প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু যদি দেই, তাহলেও আমার রাজত্বের কিছুই কমবে না, তবে এতটুকু পরিমাণ যে, তোমাদের কেউ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে যাবার সময় তাতে একটি সুঁই ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তাতে সমুদ্রের পানি যতটুকু কমবে। কারণ আমি হলাম দাতা, দয়ালু ও মহান। আমি যা চাই তাই করি। আমার দান হল আমার কথা আর আমার আযাব হল আমার নির্দেশ। আমার ব্যাপার এই যে, আমি যখন কিছু ইচ্ছা করি তখন বলি, “হয়ে যাও” অমনি তা হয়ে যায়।
এই বর্ণনাটি যঈফ, তবে হাদিসের অধিকাংশই সহীহ, মুসলিম, ইবনু মাযাহ (৪২৫৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান। কিছু রাবী এ হাদিস শাহর ইবনু হাওশাব হতে মাদীকারিব-এর সূত্রে আবূ যার (রাঃ)-এর বরাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একই রকম বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
২৪৯৬
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছি। আমি সে হাদীসটি তাঁকে একবার, দু’বার, এমনকি সাতবারের বেশী বর্ণনা করতে শুনেছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে ‘কিফ্‌ল’ নামক জনৈক ব্যক্তি কোন গুনাহ হতে বিরত থাকত না। কোন এক সময় জনৈকা মহিলা (দারিদ্র্যক্লিষ্ট হয়ে) তার নিকটে আসলো। সে তাকে যেনা করার শর্তে ষাট দীনার দিল। স্বামী যেমন স্ত্রীর উপর উঠে সে যখন তেমনই উঠল তখন মহিলা কাঁপতে লাগল এবং কেঁদে ফেলল। সে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন? আমি কি তোমার উপর জোরযবরদস্তি করছি? মহিলা বলল, না; কিন্তু এ গুনাহর কাজটি আমি কখনো করিনি। প্রয়োজন ও অভাব আজ আমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে। সে বলল, অভাবে পড়েই তুমি এসেছ এবং কখনও তা করনি? তুমি চলে যাও এবং যা দিয়েছি এগুলো তোমার। সে বলল, আল্লাহ্‌ তা’আলার কসম ! এরপর হতে আমি আর কখনো আল্লাহ্‌ তা’আলার নাফারমানী করব না। ঐ রাতেই সে মারা গেল সকাল হলে দেখা গেল তার বাড়ীর দরজায় লেখা রয়েছেঃ “আল্লাহ্‌ তা’আলা কিফ্‌লকে মাফ করে দিয়েছেন”।
যঈফ, যঈফা (৪০৮৩)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান। শাইবান ও অন্যান্য রাবী এটিকে আ’মাশের সূত্রে মারফূ হাদিস হিসাবে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। কোন কোন রাবী এ হাদিস আ’মাশের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু মারফূ হিসাবে নয়। আবূ বাক্‌র ইবনু আইয়্যাশ এ হাদিস আ’মাশের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সনদ বর্ণনায় ভুল করেছেন এবং বলেছেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ-সাঈদ ইবনু জুবাইর হতে তিনি ইবনু উমার (রাঃ) হতে। এটি সুরক্ষিত সনদ নয়। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ আর-রাযী কূফার অধিবাসী এবং তার দাদী ছিলেন আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর দাসী। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ আর-রাযীর বরাতে উবাইদা আয-যাব্বী, হাজ্জাজ ইবনু আরতাত ও অপরাপর বিদ্বানগণ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৪৯. অনুচ্ছেদঃ
আল্লাহ তা'আলা বান্দাহর তাওবায় অত্যধিক খুশি হন
২৪৯৭
আল-হারিস ইবনু সুয়াইদ (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের নিকট আবদুল্লাহ (রাঃ) দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, একটি তার পক্ষ হতে এবং আরেকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ঈমানদার লোক তার পাপকে এমনভাবে ভয় করে যেন সে পাহাড়ের গোড়ায় অবস্থান করছে, আর ভয় করছে যে, পাহাড় ভেঙ্গে তার উপর পড়বে। আর অসৎ লোক তার পাপকে মনে করে যেন তার নাকের ডগায় বসা একটি মাছি, হাত নাড়ালো আর অমনি তা উড়ে গেল।
সহীহঃ বুখারী (৬৩০৮), মুসলিম (৮/৯২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৯৮
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কারো তাওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি সন্তুষ্ট হন, যে এমন এক জন-মানবশূন্য প্রান্তরে যাত্রা করেছে, যেখানে পদে পদে ভয়, আতংকজনক ও ভীতিপূর্ণ অবস্থা। তার সাথে আছে একটি জন্তুযান, এর উপর তার আহার-পানীয় ও অন্যান্য মাল সামান। হঠাৎ জন্তুটি হারিয়ে গেল। সে তা খোঁজ করতে লাগলো। অবশেষে সে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃতপ্রায় হয়ে গেল। মনে মনে সে বললো, আমি জন্তুটি যে জায়গায় হারিয়েছি সে জায়গায় গিয়েই মৃত্যুবরণ করবো। তারপর সে পূর্বের জায়গায় ফিরে এলো এবং গভীর ঘুমে অচেতন হলো। সে জেগে উঠে দেখতে পেলো যে, তার জন্তুযানটি তার শিয়রে দাঁড়ানো এবং তার পিঠে খাবার-পানীয় ও অন্যান্য বস্তু-সামগ্রী যথাযথ আছে। (এই ব্যক্তি হারানো জন্তু ও বস্তু-সামগ্রী পেয়ে যেমন আহলাদিত হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাহর তাওবাতে এর চেয়েও বেশি তুষ্ট হন)।
সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ হুরাইরা, নু‘মান ইবনু বাশীর ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সূত্রেও এই অনুচ্ছেদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪৯৯
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ মাত্রই গুনাহগার (অপরাধী)। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাহকারীরাই উত্তম।
হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (৪২৫১)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। আমরা এই হাদীসটি শুধুমাত্র আলী ইবনু মাসআদা হতে কাতাদা (রাহঃ)- এর সূত্রেই জেনেছি।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
৫০. অনুচ্ছেদঃ
উত্তম কথা বল অন্যথায় চুপ থাকো
২৫০০
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার অতিথির অভ্যর্থনা ও আদর-যত্ন করে। আর যে লোক আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরব থাকে।
সহীহঃ ইরওয়া (২৫২৫), বুখারী, মুসলিম।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ। ‘আয়িশাহ, আনাস, আবূ শুরাইহ আল-কাবী (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ শুরাইহ আল-কাবী হলেন আল-আদাবী, তার নাম খুওয়াইলিদ ইবনু ‘আমর।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫০১
 ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নীরব থাকলো, সে নাজাত (মুক্তি) পেলো।
সহীহঃ সহীহাহ (৫৩৫)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। আমরা এই হাদীস প্রসঙ্গে শুধুমাত্র ইবনু লাহীআর বর্ণনা হতেই জেনেছি। আবূ ‘আবদুর রাহমান আল-হুবালীর নাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫১. অনুচ্ছেদঃ
ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা বা নকল সাজা নিষেধ
২৫০২
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বললেনঃ আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সাফিয়্যা তো বামন মহিলা লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছো, তা সাগরের পানির সাথে মিশালেও তা উক্ত পানিকে দূষিত করে ফেলতো।
সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৪৮৫৩, ৪৮৫৭), গাইয়াতুল মারাম (৪২৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫০৩
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে এত এত পরিমাণ সম্পদ দিলেও আমি কারো বিকৃত করে নকল করা পছন্দ করি না।
সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব ছানী (৪৮৫৭)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ হুজাইফা আল-কূফী ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর শিষ্যগণের অন্তর্ভুক্ত। তার নাম সালামা ইবনু সুহাইবাহ বলে পরিচিত।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫২. অনুচ্ছেদঃ
উত্তম মুসলিম
২৫০৪
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলোঃ সবচেয়ে ভাল মুসলিম কে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির জিহ্বা (কথাবার্তা) ও হাত (কাজ) হতে মুসলিমগণ নির্বিঘ্ন থাকে।
সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ এবং আবূ মূসা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস হিসাবে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫৩. অনুচ্ছেদঃ
গুনাহ থেকে তাওবাকারীকে খোঁটা দেয়া নিষেধ
২৫০৫
মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইকে কোন গুনাহর জন্য লজ্জা দিলে সে উক্ত গুনাহে না জড়িয়ে পরা পর্যন্ত মারা যাবে না।
মাওযূ, যঈফা (১৭৮)
আহমাদ (রাহঃ) বলেন, এ গুনাহ্‌র অর্থ হল, যা হতে সে তাওবা করেছে।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদিসটি গারীব। এর সনদ সূত্র মুত্তাসিল নয়। খালিদ ইবনু মা’দান (রাহঃ) মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর দেখা পাননি। খালিদ ইবনু মা’দান (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি সত্তরজন সাহাবীর দেখা পান। মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফাত কালে মারা যান। খালিদ ইবনু মা’দান উক্ত হাদিস ছাড়াও মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর বহু শাগরিদের সূত্রে তার থেকে আরও হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৫৪. অনুচ্ছেদঃ
কারো বিপদে আনন্দ প্রকাশ নিষিদ্ধ
২৫০৬
ওয়াসিলা ইবনুল আসকা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার কোন ভাইয়ের বিপদে তুমি আনন্দ প্রকাশ করো না। অন্যথায় আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে দয়া করবেন এবং তোমাকে সেই বিপদে নিক্ষিপ্ত করবেন।
যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৮৫৬)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান গারীব। মাকহূল (রাহঃ) ওয়াসিলা ইবনুল আসকা’, আনাস ইবনু মালিক ও আবূ হিন্দ আদ-দারী (রাঃ)-এর নিকট হাদিস শুনেছেন। আরও কথিত আছে যে, মাকহূল (রাহঃ) এই তিনজন সাহাবী ব্যতীত আর কোন সাহাবীর নিকট হাদিস শুনেননি। মাকহূল শামীর উপনাম আবূ আবদুল্লাহ এবং তিনি ছিলেন ক্রীতদাস, পরে তাকে দাসত্বমুক্ত করা হয়। আর বসরার অধিবাসী মাকহূল আল-আযদী (রাহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকট হাদিস শুনেছেন এবং তার সূত্রে উমারা ইবনু যাযান হাদিস বর্ণনা করেছেন।
আলী ইবনু হুজর হতে ইসমাইল ইবনু আইয়্যাশ-এর সূত্রে তামীম-আতিয়া (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মাকহূল’ কে কোন কিছু প্রশ্ন করা হলে বেশীরভাগ সময়ই আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, “আমি জানি না”।
উত্তম সনদ তবে তা বিচ্ছিন্ন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
৫৫. অনুচ্ছেদঃ
মানুষের সাথে মেলামেশাকারী ও তাদের কষ্ট সহ্যকারী ব্যক্তিই উত্তম
২৫০৭
ইয়াহইয়া ইবনু ওয়াস‌্সাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪০৩২)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, ইবনু আবূ আদী বলেছেন, শুবা মনে করতেন যে, উক্ত সাহাবী ইবনু উমার (রাঃ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫৬. অনুচ্ছেদঃ
পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন ও বিদ্বেষ বর্জন
২৫০৮
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা হতে নিবৃত্ত থাকো। যেহেতু, তা দ্বীনকে মুন্ডন (বিনাশ) করে দেয়।
হাসানঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব ছানী (৫০৪১)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ, তবে এই সূত্রে গারীব। “সূআযাতিল বাইন” কথার অর্থঃ পরস্পর শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ। আর “আল-হালিকাতু” শব্দের অর্থঃ দ্বীনকে মুন্ডনকারী (বিনাশকারী)।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২৫০৯
আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে নামায, রোযা ও সাদাকাহর চেয়ে উত্তম কাজ প্রসঙ্গে অবহিত করবো না? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন। কারণ, পরস্পর সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অর্থ হলো দ্বীন বিনাশ হওয়া।
সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (৪১৪), মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৫০৩৮)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি সহীহ। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “এটা মুন্ডন করে দেয়। আমি বলছি না যে, তা মাথা মুড়িয়ে দেয়, বরং তা দ্বীনকে মুন্ডন করে দেয় (বিনাশ করে)”।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫১০
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার উম্মাতদের রোগ তোমাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। তা হলো পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা। আর এই রোগ মুন্ডন করে দেয়। আমি বলছি না যে, চুল মুন্ডন করে দেয়, বরং এটা দ্বীনকে মুন্ডন (বিনাশ) করে দেয়। সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তোমরা যদি পরস্পরকে না ভালবাস তাহলে ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে বলবো না যে, পারস্পারিক ভালবাসা কোন কাজের মাধ্যমে মজবুত হয়? তোমরা পরস্পর সালামের বিস্তার ঘটাও।
হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (৩/১২), ইরওয়া (২৩৮), তাখরীজু মুশকিলাতিল ফাকর (২০), গাইয়াতুল মারাম (৪১৪), সহীহুল আদব (১৯৭)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর হতে বর্ণনার ক্ষেত্রে বর্ণনাকারীগণ মতবিরোধ করেছেন। তাদের অনেকে এই হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর-ইয়াঈশ ইবনুল ওয়ালীদ হতে, তিনি যুবাইরের আযাদকৃত গোলাম হতে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং সনদের মধ্যে যুবাইর (রাঃ)-এর নাম যুক্ত করেননি।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
৫৭. অনুচ্ছেদঃ
দু’টি পাপের শাস্তি দুনিয়াতে এবং পরকালেও দেয়া হয়
২৫১১
আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ ও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তা‘আলা যার সাজা পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪২১১)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫৮. অনুচ্ছেদঃ
দ্বীনের ব্যাপারে উচ্চশ্রেণীর এবং দুনিয়াবী ব্যাপারে নিম্নশ্রেণীর লোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা
২৫১২
 ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যার মধ্যে দু’টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আল্লাহ্‌ তা’আলা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের মধ্যে তার নাম লিখে রাখেন। আর যার মধ্যে এ দু’টি বৈশিষ্ট্য নেই, আল্লাহ্‌ তা’আলা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের দলে তার নাম লিখেন না। যে ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে তার চাইতে উঁচু স্তরের লোকের দিকে দেখে এবং তার অনুসরণ করে; আর পার্থিব ব্যাপারে তার চাইতে নীচু স্তরের লোকের দিকে দেখে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে সে লোকের উপর যে মর্যাদা ও নি’আমাত দান করেছেন তার শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার প্রশংসা করে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার নাম কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের দলে লিখে রাখেন। আর যে ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে তার চাইতে নিম্নমানের লোকের দিকে এবং পার্থিব ব্যাপারে তার চাইতে উঁচু স্তরের লোকের দিকে দেখে এবং তার কাছে পার্থিব সামগ্রী না থাকার কারণে আফসোস করে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার নাম কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দাদের দলে লিখেন না।
য’ঈফ, য’ঈফাহ্‌- হাঃ নং- ৬৩৩, ১৯২৪
মূসা ইবনু হিশাম-‘আলী ইবনু ইসহাক হতে তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক হতে তিনি মুসান্না ইবনুস সাব্বাহ হতে তিনি ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে তিনি তাঁর পিতা হতে স্বীয় দাদার সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদিসের সমার্থবোধক হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ হাদিসটি হাসান ও গারীব। সুওয়াইদ ইবনু নাসর তার সনদসূত্রে “তার পিতা থেকে” কথাটুকু উল্লেখ করেননি।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৫১৩
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষদের প্রতি (পার্থিব ব্যাপারে) দৃষ্টি দিও, তোমাদের চেয়ে ধনশালী মানুষদের দিকে নয়। এতে করে তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নি‘আমাতসমূহ নগন্য মনে হবে না।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১৪২), মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৫৯. অনুচ্ছেদঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে সাহাবীগণের এক অবস্থা এবং পরে অন্য অবস্থা
২৫১৪
হানযালা আল-উসাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সচিবগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি কোন একদিন কাঁদতে কাঁদতে আবূ বাকর (রাঃ) এর সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করেন, হে হানযালা! তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! হানযালা তো মুনাফিক্ব হয়ে গেছে। আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসে অবস্থান করি এবং তিনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের স্মরণে নাসীহাত করেন, তখন মনে হয় যেন আমরা সেগুলো স্বচক্ষে দেখছি। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর স্ত্রী-পুত্র-পরিজন ও বিষয়-সম্পদের কাজে ব্যাকুল হয়ে পড়ি এবং অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদেরও তো এই অবস্থা। চলো আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাই। তারপর আমরা সেদিকে যাত্রা শুরু করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখে প্রশ্ন করেন, হে হানযালা! কি সংবাদ? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হানযালা তো মুনাফিক্ব হয়ে গেছে। আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি আর আপনি জান্নাত-জাহান্নামের নাসীহাত করেন, তখন মনে হয় যেন আমরা সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। পরে যখন বাড়ি ফিরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্র-পরিজন ও বিষয়-সম্পদের কাজে ব্যাকুল হয়ে পড়ি তখন অনেক কিছুই ভুলে যাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমার নিকট হতে যে অবস্থায় ফিরে যাও, যদি সবসময় সেই অবস্থায় থাকতে তাহলে অবশ্যই তোমাদের বৈঠকে, বিছানায় এবং পথে-ঘাটে ফেরেশতারা তোমাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করতো। হে হানযালা! সেই অবস্থা মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪২৩৬), মুসলিম।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫১৫
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে সেটা তার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৬৬)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫১৬
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ তা‘আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ তা‘আলাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই কর। আর জেনে রাখো, যদি সকল উম্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল উম্মাত তোমার কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার তাক্বদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।
সহীহঃ মিশকাত (৫৩০২), যিলালুল জান্নাত (৩১৬-৩১৮)।
আবূ ‘ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৬০. অনুচ্ছেদঃ
উট বাঁধো তারপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর
২৫১৭
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বললেন কোন একজন লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি সেটা (উট) বেঁধে রেখে আল্লাহর তা’আলার উপর ভরসা করবো, না বাঁধন খুলে রেখে আল্লাহ্ তা'আলার উপর ভরসা করবো? তিনি বললেনঃ তুমি সেটা বেঁধে রেখে (আল্লাহ্ তা'আলার উপর) ভরসা করবে।
হাসানঃ তাখরীজুল মুশকিলাহ (২২)।
ইয়াহ্ইয়া বলেন, আমার মতে এর হাদীসটি 'মুন্কার'। আবু 'ঈসা বলেন, এই হাদীসটি আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনা হিসাবে গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এর হাদীসটি জেনেছি। ‘আম্‌র ইবনু উমাইয়্যা (রাঃ)-সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীসের মতো হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২৫১৮
আবুল হাওরা আস-সা'দী (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হাসান ইবনু 'আলী (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই কথাটি মনে রেখেছিঃ যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু, সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ।
সহীহঃ ইরওয়াহ্ (১২, ২০৭৪), আযযিলাল (১৭৯), আর রাওযুন নাযীর (১৫২)। এ হাদীসটিতে আরো বক্তব্য আছে।
আবুল হাওরা আস-সা'দীর নাম রাবী'আহ্ ইবনু শাইবান। আবূ 'ঈসা বলেনঃ এই হাদীসটি সহীহ। বুনদার মুহাম্মাদ ইবনু জাফর হতে, তিনি শু'বাহ্ হতে, তিনি বুরাইদ (রাহঃ)-এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫১৯
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সামনে কোন এক ব্যক্তির ‘ইবাদাত-বন্দিগী ও কঠোর সাধনার কথা এবং অন্য ব্যক্তির পরহিযগারী ও আল্লাহ্‌ ভীতি প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন কিছুই পরহেযগারী ও খোদাভীতির সমতুল্য হতে পারে না।
য’ঈফ, য’ঈফাহ্‌- হাঃ নং-৪৮১৭
‘আবদুল্লাহ ইবনু জাফর হলেন মিসওয়ার ইবনু মাখরামার সন্তান। তিনি মাদীনার অধিবাসী এবং হাদিস শাস্ত্রবিদগণের মতে নির্ভরযোগ্য রাবী। আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদিসটি গারীব। শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই আমরা এ হাদিস জেনেছি।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৫২০
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল খাবার খায়, সুন্নাত মুতাবিক ‘আমাল করে এবং যার উৎপীড়ন হতে মানুষ নিরাপদ থাকে, সে জান্নাতে যাবে। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! আজকাল তো এ ধরনের অনেক লোক রয়েছে। তিনি বললেনঃ আমার পরবর্তী যুগসমূহেও এমন লোক থাকবে।
য’ঈফ, মিশকাত- হাঃ নং-১৭৮; তা’লীকুর রাগীব- হাঃ নং- ১/৪১
আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদিসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উল্লেখিত সূত্রে ইসরা’ঈলের রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদিস জেনেছি। ‘আব্বাস আদ-দূরী-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আবূ বুকাইর হতে তিনি ইসরা’ঈল হতে তিনি হিলাল ইবনু মিকলাস (রহঃ) সূত্রে কাবীসার সূত্রে ইসরা’ঈল বর্ণিত হাদিসের সমার্থবোধক হাদিস বর্ণনা করেছেন। আমি মুহাম্মদ ইবনু ইসমা’ঈলকে এ হাদিস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তরে বলেন যে, তিনি ইসরা’ঈলের সূত্রেই শুধুমাত্র এ হাদিস জেনেছেন। তবে তিনি আবূ বিশরের নাম প্রসঙ্গে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
২৫২১
মু'আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্ তা'আলার উদ্দেশ্যে দান-খায়রাত করে, আল্লাহ্ তা'আলার উদ্দেশ্যে (দান করা হতে) নিবৃত্ত থাকে, আল্লাহ তা'আলার জন্য ভালবাসে, আল্লাহ তা'আলার জন্যই ঘৃণা করে এবং আল্লাহ তা'আলার (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে বিয়ে প্রদান করে, সে তাঁর ঈমান সুসম্পন্ন করেছে।
হাসানঃ সহীহাহ্ (১/১১৩)।
আবূ 'ঈসা বলেন, এই হাদীসটি মুন্কার।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
২৫২২
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে সেই দলের সদস্যগণ হবেন পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। আর দ্বিতীয় দলের সদস্যগন হবেন আকাশের মুক্তার মতো ঝল্ঝল্কারী তারকার ন্যায়। তাঁদের প্রত্যেকের দু'জন করে স্ত্রী থাকবে এবং প্রত্যেক স্ত্রীর শরীরে সত্তরজোড়া কাপড় থাকবে। এই সব কাপরের ভিতর থেকেও তার পায়ের জংঘার মগজ প্রকাশ পাবে।
সহীহঃ সহীহাহ্ (১৭৩৬)।
আবূ 'ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(সমাপ্ত)

 প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল
ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...