Search This Blog

Thursday, September 26, 2019

সুদখোরের ভয়াবহ পরিণতি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সুদখোরের ভয়াবহ পরিণতি

কাফির মুশরিকগন খুব ভালো করেই জানে যে মুসলমানদের মূল শক্তি হচ্ছে ঈমানি শক্তি। এই ঈমানি শক্তি ধ্বংস করতে তারা মুসলিম সমাজে সুকৌশলে সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, সমকামিতা, যেনা/ব্যভিচারসহ সকল প্রকার বেহাপনার প্রচলন ঘটিয়ে দিয়েছে। সারা বিশ্বে যখন ইসলামের জয়জয়কার তখন এরা মুসলমানদের ঈমানি শক্তিতে টিকে থাকতে না পেরে প্লান করে মুসলিম সমাজে প্রথম মদের প্রচলন ঘটায়।

“ফ্রাঞ্চের জনৈক বিশিষ্ট পন্ডিত হেনরী তাঁর গ্রন্থ “ খাওয়াতির মাওয়ানিহ ফিল ইসলাম” এ লিখেছেন, “প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য এই মদই ছিল অব্যর্থ তলোয়ার।” আমরা আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্ত আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়নি। ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলছে। এরা যদি আমাদের এ উপঢৌকন গ্রহণ করে নিতো; যে ভাবেই তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠী গ্রহণ করে নিয়েছে তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে যেত। আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত মদের প্রবাহ বইছে, তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গেছে যে, তারা তাদের মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।

জনৈক বৃটিশ আইন বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, “ইসলামি শরীয়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এও একটি বৈশিষ্ট্য যে এতে মদপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি, আফ্রিকার লোকেরা যখন এর ব্যবহার শুরু করে, তখন থেকেই তাদের মধ্যে উন্মাদনা সংক্রমিত হতে থাকে। আর ইউরোপের লোকেরা যখনই এই বস্তুকে চুমুক দিতে শুরু করেছে কাজেই আফ্রিকার লোকদের জন্য যেমন এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তেমনি ইউরোপের লোকদের জন্যও এর কারনে কঠিন শাস্তি বিধান করা অপরিহার্য”। (সূত্র: অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল। প্রকাশক-ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,  প্রকাশকাল- মে ২০০৬, পৃষ্ঠা নং-৪৩-৪৪।)

উপরোক্ত লেখা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মুসলমানদের ঈমানি শক্তি ধ্বংস করতে কাফির মুশরিকগণ বিভিন্ন ঈমান বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। সারা বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রে  মদ এখন সরকারিভাবে অনুমোদিত।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে সুদের প্রচলন থাকলেও তখন ব্যাংক সিস্টেম না থাকায় সরকারিভাবে তা অনুমোদন ছিল না। পরবর্তীতে সারা বিশ্বে ব্যাংক সিস্টেম চালু হওয়ায় সুদরে প্রচলন এখন সরকারিভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। আমাদের দেশে ব্যাংক, এনজিও, সমিতি ও ইন্স্যুরেন্সসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদভিত্তিক লেনদেন হচ্ছে। কাফির মুশরিকগণ মুসলিম সমাজে সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরে তারা নিজেদেরকে ধন্য মনে করছে। আর আমরা মুনাফিক মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান তা বাস্তবায়ন করে চলছি।

বর্তমানে সুদের সাথে প্রত্যেকেই জড়িত। যাদের ব্যাংকে একাউন্ট আছে তারা প্রত্যেকেই সুদ খায়। আবার যারা চাকরি করেন তাদের প্রোভিডেন্ট ফান্ডে সুদ দেয়া হয়। কয়জন ব্যক্তি আছেন যারা অবসরে আসার সময় সুদের টাকা বাদ দিয়ে মূল টাকা নিয়ে ঘরে ফিরেন। অবসরে আসার পর পেনশনের টাকা উচ্চ হারে সুদী প্রতিষ্ঠানে রেখে সেই সুদের টাকায় পরবর্তী জীবন অতিবাহিত করে। একদিকে প্রতিনিয়ত সুদ খাচ্ছে অন্যদিকে মাথায় লম্বা টুপি, গায়ে জুব্বা, হাতে তাশবিহ নিয়ে আল্লাহু আল্লাহু যিকির করে বেড়ায়। এরা আবার জান্নাত খোঁজে। যাই হোক বর্তমানে আমরা ঈমান হারা মুসলমানে পরিনত হয়েছি। আসুন আমরা সুদ ও সুদখোরের ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে জেনে নেই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এ জন্য যে তারা বলে, ‘ক্রয়-বিক্রয় তো সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন।অতএব যার নিকট তার রব-এর পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে”। (সূরা বাকারা: ২৭৫)।

বর্তমানে সুদ আমাদের দেশ ও জাতিকে অক্টোপাসের মত বেঁধে ফেলেছে। সুদ ছাড়া আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন বন্ধ। যার কারণে পত্রিকা ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মানুষকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট অংকের লাভের বিনিময়ে অর্থ ডিপোজিট করতে আহবান করা হচ্ছে। বিভ্রান্ত ও সৎ পথ থেকে বিচ্যুত কিছু আলেমের ফতোয়াও প্রচার করা হচ্ছে এই মর্মে যে, সুদী ব্যাংকের সাথে লেন্তদেন করা জায়েয এবং নির্দিষ্ট অংকে ইন্টারেস্ট বা সুদ গ্রহণ করাও জায়েয।

কিন্তু এ বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। প্রকাশ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতা ও তাঁদের প্রকাশ্য নাফরমানী। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন:

“রসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপি চুপি সরে পড়ে, আল্লাহ তাদের জানেন। সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে ”। (সূরা নূর- ৬৩)।

ইসলাম ধর্মে একথা সর্বজন বিদিত যে, কুরআন সুন্নাহ্‌র দলীল অনুযায়ী সুদী ব্যাংকে অর্থ রেখে সেখান থেকে নির্দিষ্টহারে ফায়েদা বা ইন্টারেষ্ট গ্রহণ করা নিঃসন্দেহে সুদ। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সুদকে হারাম করেছেন। সুদ কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। সুদ অর্থ-সম্পদের বরকতকে মিটিয়ে দেয়, আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়। সুদের কারণে আমল কবূল হয় না।

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন, “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র তিনি পবিত্রতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ্‌ তা‘আলা রাসূলদের (আঃ) প্রতি যা নির্দেশ পাঠিয়েছেন, মুমিনদের প্রতিও তাই পাঠিয়েছেন। তিনি এরশাদ করেন:  

“হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু থেকে খাদ্য গ্ৰহণ করুন এবং সৎকাজ করুন; নিশ্চয় আপনারা যা করেন সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবগত”। (সুরা আল-মুমিনুন: ৫১)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব হারাম খেলে দুআ কবূল হবে না, ইবাদত কবূল হবেনা। কামাই-রোজগারে বরকত হবে না। হারাম অর্থে পরিবার-সন্তানদের লালন পালন করলে তারাও সৎভাবে গড়ে উঠবে না। উপরোন্ত ক্বিয়ামতের কঠিন মাঠে জবাবদিহি তো করতে হবেই।

প্রত্যেক মুসলমানের জানা উচিত যে,

ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১৬, সহীহাহ ৯৪৬, তা’লীকুর রাগীব ১/৭৬, বাওযুন নায়ীর ৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জেনে রাখুন! সুদ একটি অন্যতম কাবীরা গুনাহ। কুরআন ও হাদীছে কঠিনভাবে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদের যাবতীয় প্রকার-প্রকৃতি ও যে নামেই ব্যবহার করা হোক তা নিষিদ্ধ।

আল্লাহ্‌ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পার। এবং তোমরা সেই আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়”। (সূরা আল ইমরান্ত ১৩০-১৩২)।

আল্লাহ আরো বলেন, “মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সুদ হিসেবে যা প্রদান করে থাক আল্লাহর কাছে তা ধন্তসম্পদ বৃদ্ধি করে না। (সূরা রূম- ৩৯)।

আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার চাইতে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে?

সুদ একটা সামাজিক অভিশাপ। যার ফলে সমাজের হাজার মানুষ আজ পরিবার নিয়ে পথে নামছে। নিঃস্ব অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরছে। এটা এক জঘন্যতম কবীরা গুনাহ। কুরআন-হাদিসের মধ্যে সুদখোরের ব্যাপারে ভীষণ ভয়াবহ শাস্তির কথা এসেছে। এখানে কিছু উল্লেখ করা হলোঃ-

(১)  সুদখোর মাতাল হয়ে হাশরের ময়দানে উঠবেঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা সূদ খায়, তারা (কিয়ামতে) সেই ব্যক্তির মত দন্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তা এ জন্য যে, তারা বলে, ‘ব্যবসা তো সূদের মতই।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ ও সূদকে অবৈধ করেছেন। অতএব যার কাছে তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে, তারপর সে (সূদ খাওয়া থেকে) বিরত হয়েছে, সুতরাং (নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে) যা অতীত হয়েছে তা তার (জন্য ক্ষমার্হ হবে), আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। কিন্তু যারা পুনরায় (সূদ খেতে) আরম্ভ করবে, তারাই দোযখবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারা-২৭৫)।

(২) সুদখোরের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণাঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর যদি তোমরা (সূদ বর্জন) না কর, তাহলে আল্লাহ ও তার রসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ সুনিশ্চিত জানো।[1] কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরা কারো উপর অত্যাচার করবে না এবং নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না”। (সূরা বাকারা- ২৭৯)।

(৩) সুদখোর জাহান্নামীঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা সূদ খায়, তারা (কিয়ামতে) সেই ব্যক্তির মত দন্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তা এ জন্য যে, তারা বলে, ‘ব্যবসা তো সূদের মতই।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ ও সূদকে অবৈধ করেছেন। অতএব যার কাছে তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে, তারপর সে (সূদ খাওয়া থেকে) বিরত হয়েছে, সুতরাং (নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে) যা অতীত হয়েছে তা তার (জন্য ক্ষমার্হ হবে), আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। কিন্তু যারা পুনরায় (সূদ খেতে) আরম্ভ করবে, তারাই দোযখবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারা-২৭৫)।

 (৪) সুদখোরের সুদে অর্জিত সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়ঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 “আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ কোন অধিক কুফরকারী, পাপীকে ভালবাসেন না”। (সূরা বাকারা-২৭৬)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ২২৬২)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৯, আত-তালীক ৩/৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) সুদখোর মুমিনের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়ঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে সুদের যে অংশই (কারো কাছে) অবশিষ্ট রয়ে গেছে, তা ছেড়ে দাও। (সূরা বাকারা- ২৭৮)।

(৬) লানত সুদখোরের প্রতি, সুদদাতার প্রতি, এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষী দু’জনের প্রতিঃ

জাবির (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন, যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী ২৫৩৫, ইরওয়া ৫/১৮৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (Sahih)।

(৭) সুদখোরের পেট হবে ঘরের মত বড়ঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমাকে একদল লোকের নিকট নিয়ে আসা হলো। তাদের পেট ছিল ঘরের মত বিশাল, তার মধ্যে সাপ ভর্তি ছিলো, যা বাইরে থেকে দেখা যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বলেনঃ এরা সুদখোর। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৩, আহমাদ ৮৬৪০, য‘ঈফ আত্ তারগীব ১১৬৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮২৮, যইফ আল জামি ১৩৩)।

(৮) সুদখোর রক্তের নদীতে সাঁতার কাটবেঃ

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানে লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হল সুদখোর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৮৫, ৪৪৫, ১৩৮৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৪০ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৯) সুদখোরের দোয়া কবুল হবে নাঃ

জাবির (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন, যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী ২৫৩৫, ইরওয়া ৫/১৮৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিশপ্ত লোকের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।

(১০) সুদখোর আপন মায়ের সাথে যিনা করার সমতুল্যঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৫০, ৫১, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ২২৫৯; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিনঃ

আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জেনেশুনে কোনো লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন”। (মুসনাদে আহমদ ৫/২২৫; সহীহ আল-জামে‘ ৩৩৭৫)।

(১২) সুদের পাপের ৭৩টি ন্তর রয়েছেঃ

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুদের পাপের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৫, ইবনুস সালাম এর তাখরিজুল ঈমান ৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোনো শাসক বা বিচারকের নিকট সুপারিশের পর কোনো হাদিয়া (উপহার) গ্রহণ করলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক বা বিচারকের নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার) পাঠায় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট দরজায় প্রবেশ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৪১, সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুদী ব্যাংকে বা সুদী কারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা হারাম

সূদী ব্যাংকের বিষয়টি স্পষ্ট। সুদী কারবার করে এমন ব্যাংকে চাকুরী করা হারাম। কারণ, এতে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:  “পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ২)।

আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন এবং সূদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। (সুরা আলবাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

হাম্মাদ ইবনু সাববাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ).....জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দু’জনের উপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

অতএব সূদী ব্যাংকে চাকুরীজীবি সূদ ভক্ষণকারীর ন্যায় পাপী হবে এবং তার যাবতীয় উপার্জন হারাম হবে। কিয়ামতের দিন পাপীদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আর আমরা তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে অগ্রসর হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’। (সুরা ফুরক্বান ২৫/২৩)।

সুদের টাকায় ক্রয়কৃত  খাদ্য ভক্ষণ করলে তার দেহ জান্নাতে যাবে না

হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্থ বা সম্পদ উপার্জনের মাধ্যমগুলো যেমন সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাই, ওজনে কম দেয়া, মিথ্যে কথা বলে পণ্য বিক্রি করা, নারী পাচার করা, যিনার মূল্য, কুকুরের মূল্য ইত্যাদি ইত্যাদি এর সাথে যারা জড়িত তারা জান্নাতে যাবে না।

হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।

প্রথমতঃ ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।

রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩,  নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(ক) “হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা আলবাক্বারাহ  ১৬৮)।

(খ) “হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (সুরা আলবাক্বারাহ  ১৭২)।

(গ) “হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে আমি অবগত”। (সুরা মুমিনূন ৫১)।

হারাম উপায়ে উপার্জিত অন্যান্য কিছু খাত

 (ক) রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৪২১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ২৩৪৬, ৫৭৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৩৩, ১২৭৬, নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪২৮, ৩৪৮১, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬,১৬৬৩৯ মুয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮,  ইরওয়া ১২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য ও পাঠার ভাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৪, নাসায়ী ৪২৯৩, ৪৬৭৩, আহমাদ ৭৯১৬, ৮১৮৯, ৯১০৮, ১০১১১, দারেমী ২৬২৩, ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৯, নান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮০, নাসায়ী ৪২৯৫, ৪৬৬৮, আহমাদ ১৪২৪২, ১৪৩৫৩, ১৪৭২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, ২০৮৬, আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (চ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা বেচা-কেনা করো না তাদেরকে (মেয়েদেরকে) গান শিক্ষাও দিয়ো না, এর মূল্য হারাম। এ জাতীয় কাজ যারা করে তাদের ব্যাপারেই কুরআন মাজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ- ’’কতক মানুষ আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে আর আল্লাহ্র পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।’’- (সূরা লুকমান ৩১ : ৬)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১, সহিহাহ ২৯২২)। (হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)-ইবনে মাজাহ সূত্রে)।

(ছ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (জ)  আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন পথে পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ খেজুর যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হবার সন্দেহ না থাকলে আমি উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৩১, ২০৫৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ১৮৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৬, ইরওয়া ১৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতি হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) সদাক্বার খেজুর হতে একটি খেজুর উঠিয়ে মুখে পুরলেন। (তা দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খেজুরটি মুখ থেকে বের করে ফেলো, বের করে ফেলো। (তিনি এ কথাটি এভাবে বললেন যেন হাসান তা মুখ থেকে বের করে ফেলে দেয়)। তারপর তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি জানো না যে, আমরা (বানী হাশিম) সদাক্বার মাল খেতে পারি না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬৯, আহমাদ ৯৩০৮, দারিমী ১৬৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩২৩১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪৭৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঞ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর তথায় অবস্থানকালে বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃতজমত্ত, শুকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে কী বলেন? কারণ এটি নৌকায় লাগানো হয়, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় এবং লোকেরা তা দিয়ে বাতিও জ্বালায়। তিনি বলেনঃ না, এগুলোও হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ ইহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করলে তারা এটি গলিয়ে বিক্রয় করে এবং এর মূল্য ভোগ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৬, ৪৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৭, নাসায়ী ৪২৫৬, ৪৬৬৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৬, বায়হাকী ৯/৩৫৫, ইবনু হিব্বান ৪৯৩৭, ইরওয়া ১২৯০, রাওদুন নাদীর ৪৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এগুলো ছাড়াও হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন খাত রয়েছে, যেমন সুদ খাওয়া, সুদীকারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা, ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি করা, সুপারিশের করে টাকা নেয়া, নাটক সিনেমায় অভিনয় করা, চাঁদাবাজি করা, টেন্ডারবাজি করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা, যেকোনো অবৈধ ব্যবসা করা, ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলাদাভাবে রোগী দেখে টাকা নেয়া কিংবা অন্য কোথাও রেফার্ড করে বা টেস্ট করিয়ে তার কমিশন নেয়া, ঘুষ নিয়ে রায় দেয়া, ঘুষ নিয়ে মামলার রিপোর্ট পরিবর্তন করা আর কতো লিখবো এরকম হাজার হাজার অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের খাত আছে। যারা এসব খাতের সাথে জড়িত তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। হারাম খেলে দেহও হারাম হয়ে যায়। তাদের ইবাদত, আমল বা দান খয়রাত আল্লাহ তায়ালা কখনো কবুল করবেন না। রাসুল সাঃ বলেন,

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১, আহমাদ ৪৬৮৬, ৪৯৪৯, ৫১০২, ৫১৮৩, ৫৩৯৬, ইরওয়াহ ১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন কর

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পার্থিব জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজতর করা হয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪২, আত-তালীকুর রাগীব ২/৭, সহিহাহ ৮৯৮, ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্দ্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৭, সহিহাহ ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

বর্তমানে সুদ থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ প্রত্যেক রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদভিত্তিক পরিচালিত। তেমনি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুদের উপর নির্ভরশীল। সুদ থেকে মুক্ত হতে চাইলে আগে রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্যে চাই ইসলামি শাসন ব্যবস্থা। 

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...