Search This Blog

Thursday, April 4, 2024

গোলাম আজাদ করার ন্যায় ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহ

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

গোলাম আজাদ করার ন্যায় ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহ

ভূমিকাঃ

প্রাক ইসলামী যুগে গোলাম বা দাস প্রথার প্রচলন ছিল। ইসলাম আগমনের পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দাস প্রথাকে বিলুপ্ত না করলেও, বিভিন্নভাবে এই প্রথাকে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং গোলাম আজাদ করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পাপের কাফ্ফারা আদায়ের জন্য দাস মুক্ত করার বিবিধ পন্থা ইসলামী শরী‘আতে বিধিবদ্ধ আছে। যেমন- হত্যা, কসম ভঙ্গ, যিহার এবং রামাযান মাসে দিনের বেলায় সহবাস প্রভৃতির কাফ্ফারা আদায়ের অন্যতম উপায় হলো গোলাম আজাদ করা।

হত্যার কাফ্ফারা

আল্লাহতায়ালা বলেন,

“কোন মুমিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত করলে সেটা স্বতন্ত্র; এবং কেউ কোন মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে এক দাস মুক্ত করা এবং তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ আদায় করা কর্তব্য, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শক্র পক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয় তবে এক মুমিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। আর যদি সে এমন সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাদের সাথে তোমরা অংগীকারাবদ্ধ তবে তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ আদায় এবং মুমিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। আর যে সঙ্গতিহীন সে একাদিক্ৰমে দু’ মাস সিয়াম পালন করবে। তাওবাহর জন্য এগুলো আল্লাহর ব্যবস্থা এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”। (সূরা নিসা ৪/৯২)।

যিহারের কাফ্ফারা

আল্লাহতায়ালা বলেন,

“আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তবে একে অন্যকে স্পর্শ করার আগে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, এ দিয়ে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া যাচ্ছে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত”। (সুরা মুজাদালাহ ৫৮/০৩)।

কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা

আল্লাহতায়ালা বলেন,

“তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছে করে কর সেগুলোর জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। তারপর এর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি।(১) অতঃপর যার সামর্থ নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন।(২) তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফফারা। আর তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো।(৩) এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর”। (সুরা মায়েদা ৫/৮৯)।

রামাযানে দিনের বেলায় সহবাসের কাফ্ফারা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সাদাকা করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চাইতেও বেশি অভাবগ্রস্তকে সাদাকা করব? আল্লাহর শপথ, মাদ্বীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেনঃ এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৩৬, ১৯৩৭, ২৬০০, ৫৩৬৮, ৬০৮৭, ৬১৬৪, ৬৭০৯, ৬৭১০, ৬৭১১, ৬৮২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১১১, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৯০, সুনান আততিরমিযী ৭২৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৭১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৮৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৪৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮০৪০, ইরওয়া ৯৩৯, আহমাদ ৭২৯৪, ৭২৯০, মুয়াত্তা মালেক ৬৬০, দারেমী ১৭১৬, সহীহ আবী দাউদ ২০৬৮-২০৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাসকে প্রহার করার কাফ্ফারা

আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ..... আবূ উমর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর কাছে আগমন করলাম, ইতোমধ্যে একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু নিয়ে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে তার সমতুল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজ ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফফারা হল তাকে মুক্ত করে দেয়া। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪১৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৫২, ইসলামিক সেন্টার ৪১৫১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

গোলাম আযাদ বা দাস মুক্ত করা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। কিন্তু এযুগের কোন কোটিপতি ব্যক্তিও যদি দাস মুক্ত করার এই ফজিলতপূর্ণ আমল সম্পাদনের ইচ্ছা করেন, তার সে ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ নেই বললেই চলে। কেননা বর্তমান যুগে দাস প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ ইসলামী শরী‘আতের এমন কিছু আমলের বিধান দিয়েছেন, যা দাস মুক্ত করার ন্যায় ফজিলতপূর্ণ। ফজিলতপূর্ণ সেই আমলগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-

প্রথমেই জেনে নেই গোলাম আজাদ করার ফজিলত

গোলাম আযাদ করা বা দাসমুক্ত করার অনেক ফযীলত রয়েছে। এ কাজের সবচেয়ে বড় ফযীলত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি।

মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না আনায়ী (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রহঃ) (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ক্রীতদাসকে আযাদ করবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে বাঁচাবেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৬৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০৯, সুনান আততিরমিযী ১৫৪১;  বুলুগুল মারাম ১৪১৮, ইরওয়াউল গালীল ১৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৫৩, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ উমামা (রাঃ)-সহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন সাহাবী হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম অন্য কোন মুসলিমকে আযাদ করলে সে তার জন্য জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি পাওয়ার উপায় হবে। আযাদকৃত ব্যক্তির একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মুক্তির জন্য আযাদকারীর এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথেষ্ট হবে। কোন মুসলিম দু’জন মুসলিম মহিলাকে আযাদ করলে তারা উভয়ে তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম হবে। তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুক্তির জন্য এদের উভয়ের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথেষ্ট হবে। কোন মুসলিম মহিলাকে কোন মুসলিম মহিলা আযাদ করলে সে আযাদকারণীর জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তির উপায় হবে। তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুক্তির জন্য এর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫২২, সুনান আবূ দাউদ ৩৯৬৫, আহমাদ ১৭৫৯৭, ১৭৫৯৯, ১৮৪১৭, রাওদুন নাদীর ৩৫৩, সহীহাহ ২৬১১, বুলুগুল মারাম ১৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শুরাহবীল ইবনুস সিমত (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি আমর ইবনু আবাসাহ (রাঃ)-কে বলেন, আপনি আমাদের নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কৃতদাসীকে মুক্ত করবে, সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে। (সুনান আবূদাঊদ ৩৯৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছাহাবায়ে কেরাম এই হাদীছগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গোলাম আযাদ করার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করতেন।

নাফে‘ (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) তার জীবদ্দশায় একশত দাস আযাদ করেছিলেন।  (ছিফাতুছ ছাফওয়া, ১/২৪০ পৃ.)।

অনুরূপভাবে সচ্ছল ছাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর পথে নির্যাতিত গোলাম ছাহাবীদেরদে কিনে আযাদ করে দিতেন। কল্পনায় নিজেকে একজন পরাধীন ক্রীতদাস ভেবে সেই দাস প্রথা প্রচলিত সমাজের দিকে নযর দিলে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

গোলাম আজাদ করার ন্যায় ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহ

(১) কা‘বা ঘর তাওয়াফ করাঃ

উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) দু’ রুকনের (হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর) কাছে যেভাবে ভীড় করতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের আর কাউকে এমনভাবে (প্রতিযোগিতামূলকভাবে) ভীড় করতে দেখিনি। ইবনু ’উমার(রাঃ) বলেন, আমি যদি এরূপ করি (তাতে দোষের কোন বিষয় নয়), কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এদের স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারাহ্। আমি তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) আরো বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চারদিকে সাতবার তাওয়াফ করবে ও তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে, তবে তা তার জন্য গোলাম মুক্ত করে দেবার সমতুল্য হবে। এটা ছাড়াও তাঁকে (ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে) বলতে শুনেছি, কোন লোক এতে এক পা ফেলে অপর পা উঠানোর আগেই বরং আল্লাহ তা’আলা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন ও তার জন্যে একটি সাওয়াব নির্ধারণ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫৮০, সুনান আততিরমিযী ৯৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ১১৩৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং মুমিন বান্দাদের কর্তব্য হলো নেকী লাভের এই সুযোগ হাতছাড়া না করা। কেননা অনেকে এমন আছেন, যারা হজ্জ বা ওমরাহ করতে গিয়ে ঘোরাঘুরি, অধিক খানাপিনা এবং বাযারে কেনাকাটায় প্রচুর সময় অপচয় করেন। মহান আল্লাহ আমাদের নেকীর কাজে অগ্রগামী হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন।

(২) তাওয়াফের পর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় ও ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করাঃ

ছাফা ও মারওয়া দু’টি পাহাড়ের নাম, যা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৫৮)।

হজ্জের অন্যতম একটি রুকন হ’ল ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করা, যার মাধ্যমে গোলাম আযাদ করার নেকী লাভ করা যায়। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, আমি নবী কারীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, জেনে রাখ! তওয়াফের পর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করার নেকী ইসমাঈলের বংশ থেকে একজন দাস আযাদ করার মত। এরপর ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করার ছওয়াব সত্তর জন দাস মুক্ত করার সমান’। (মুসনাদে বায্যার ৬১৭৭; ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১১১২)। হাদিসের মান: হাসান।

(৩) আল্লাহর পথে জিহাদ করাঃ

গোলাম আযাদের নেকী লাভের অন্যতম উপায় হলো আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

আমর ইবনে আবাসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি শত্রুবাহিনীর প্রতি একটি তীর নিক্ষেপ করলো, অতঃপর তা শত্রুবাহিনী পর্যন্ত গিয়ে পৌছে লক্ষ্যে আঘাত হানুক বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হোক, তা একটি গোলাম আযাদ করার সমান। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮১২, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৮, বায়হাকী ফিস সুনান ১০/২৭২, বায়হাকী ফিশ শুআব ৪৩৪১, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ২/১২১, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৭১, তাখরীজু ফিকহুস সায়রাহ ২২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,مَ

আবূ নাজীহ আস-সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় যে লোক তীর ছুড়লো তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করার অনুরূপ সাওয়াব। (সুনান আততিরমিযী ১৬৩৮; সুনান আননাসাঈ ৩১৪৩; ছহীহুল জামে‘ ৬২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) ঋণ দেওয়া এবং পথহারাকে পথ দেখানোঃ

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সম-পরিমাণ সাওয়াব। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯১৭, তা’লীকুর রাগীব (২/৩৪,২৪১),মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ১৯১৭, ছহীহুল জামে ৬৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আলোচ্য হাদীছে ঋণ বলতে কর্যে হাসানাহ এবং পথহারা বলতে রাস্তা ভুলে যাওয়া ব্যক্তিকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া, অন্ধ ব্যক্তিকে পথ দেখানো প্রভৃতি বুঝানো হয়েছে।

(৫) অসহায় আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করাঃ

আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের জন্য দান করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে গোলাম আযাদ করার নেকী অর্জন করা যায়।

মায়মূনাহ বিনতে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি আপন বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তার ঘরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি জানেন না আমি আমার বাঁদী মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুন! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটা দান করতে তাহলে তোমার জন্য বেশি নেকির কাজ হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৯২, ২৫৯৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৯, ইবনু হিব্বান ৩৩৪৩, শু‘আবুল ঈমান ৩১৫১, আহমাদ ২৬৮৮৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনু বাত্ত্বাল (রহঃ) বলেন,‘দাস মুক্ত করার চেয়েও ফযীলতপূর্ণ আমল হ’ল আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা’। (মির‘আতুল মাফাতীহ্, ৬/৩৭২ পৃ.)।

(৬) পরিবারের জন্য খরচ করাঃ

সাধারণ দান-ছাদাক্বার চেয়ে উত্তম দান হলো পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করা। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক রকম দীনার তাই যা তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করো। এক রকম দীনার সেটাই যা তুমি গোলাম আযাদ করার জন্য খরচ করো। এসব দীনারের মধ্যে সাওয়াবের দিক দিয়ে সবচেয়ে মর্যাদাবান হলো যা তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৫, আহমাদ ১০১৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৬৯৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯৫১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, ‘এই হাদীছে দলীল রয়েছে যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করা, দাস মুক্তির জন্যে দান করা এবং মিসকীনদেরকে ছাদাক্বাহ করার চেয়েও কোন ব্যক্তির জন্য উত্তম কাজ হলো পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করা’।  (মির‘আতুল মাফাতীহ্, ৬/৩৬৭ পৃ.)।

(৭) শ্রমিকের কাজে সাহায্য করা এবং বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাঃ

ইসলাম ছোট-বড়, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলকে পরস্পর সহযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করেছে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম,

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ‘আমল উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম? তিনি বললেন, যে ক্রীতদাসের মূল্য অধিক এবং যে ক্রীতদাস তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ যদি আমি করতে না পারি? তিনি বললেন, তাহলে কাজের লোককে (তার কাজে) সাহায্য করবে কিংবা বেকারকে কাজ দিবে। আমি (আবারও) বললাম, এও যদি না পারি? তিনি বললেন, মানুষকে তোমার অনিষ্টতা হতে মুক্ত রাখবে। বস্তুতঃ এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ হতে সাদাকাহ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বোঝা গেলো, শ্রমিক বা কাজের লোককে তার কাজে সহযোগিতা করা এবং অদক্ষ ও কর্মহীন লোকের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া দাস মুক্ত করার ন্যায় মর্যাদাপূর্ণ আমল।

(৮) অপরকে খানাপিনা করানো এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধঃ

দাস মুক্ত করার নেকী লাভের অন্যতম বিকল্প মাধ্যম হলো ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো, তৃষ্ণার্তকে পান করানো এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।

বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, একদিন এক গ্রাম্য লোক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। দারা-কুৎনীর বর্ণনায় এসেছে, সে বলল,

‘আমাকে এমন একটি আমলের সন্ধান দিন, যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। (দারাকুৎনী হা/২০৫৫; শু‘আইব আরনাঊত হাদীছটি ছহীহ বলেছেন)।

বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি ’আমল বলে দিন যে ’আমলের দরুন আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদিও তুমি অল্প কথায় বলে ফেললে, কিন্তু তুমি ব্যাপক বিষয় জানতে চাচ্ছ। তুমি একটি প্রাণী মুক্ত কর এবং গোলাম মুক্ত কর। সে বলল, এ কাজ দু’টি কি একই নয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (অবশ্যই) না। কেননা প্রাণী মুক্ত করার অর্থ হলো তুমি একাকী একটি প্রাণ মুক্ত করা, আর গোলাম মুক্ত করার অর্থ হলো তার মুক্তিপণের মাধ্যমে সাহায্য করা। অধিক দুগ্ধদানকারী প্রাণী দান করা এবং অত্যাচারী আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দয়াপ্রবণ হওয়া। যদি তুমি এসব কাজ করতে সক্ষম না হও, তাহলে ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াও এবং তৃষ্ণার্তকে পান করাও। সৎকর্মের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজে বাধা দাও। আর যদি তুমি এ কাজ করতেও অক্ষম হও, তাহলে উত্তম কথোপকথন ছাড়া তোমার জিহবাকে সংযত রাখ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৮৪, আহমাদ ১৮৬৪৭, শু‘আবুল ঈমান ৪০২৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) মাগরিব ও ফজর ছালাতের পর দশ বার তাহ্লীল বা কালেমা তাওহীদ পাঠ করাঃ

যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ফরয ছালাতের পর দশবার করে বিশেষ তাহলীল পাঠ করে, তার আমলনামায় দশজন মুমিন ক্রীতদাস মুক্ত করার নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়।

(ক) উমারাহ ইবনু শাবীব আস-সাবায়ী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাগরিবের নামাযের পর যে লোক দশবার বলেঃ

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহ্য়ি ওয়া ইয়মীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর”

 অর্থাৎ “আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সমস্ত কিছুই তার এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী”,

আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতা পাঠান যারা তাকে শায়তানের ক্ষতি হতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য (আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ) অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় দশটি পুণ্য লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ বিলুপ্ত করে দেন এবং তার জন্য দশটি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৩৪, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৬০/৪৭২), নাসাঈ ১০৩৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবদুর রহমান ইবনু গানম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও মাগরিবের সালাতের শেষে জায়গা হতে উঠার ও পা ঘুরানোর আগে এ দু‘আ দশবার পড়েঃ

‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’। (১০ বার)।

(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।)।

তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়। আর এ দু‘আ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্ক ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। ‘আমলের দিক দিয়ে এ লোক হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম ‘আমল করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৫, হাসান লিগায়রিহী : আহমাদ ১৭৯৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৭৭। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১০) প্রতিদিন একশত বার কালেমা তাওহীদ পাঠ করাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে

“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’

(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)।

তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব হবে। তার জন্য একশ নেকী লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ দুআ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে বেশী পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭১২, ৪৮৬, ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, আহমাদ ৮০০৮, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৬৪৩৭, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৭, ৮৬৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) একশত বার সুবহানাল্লাহ, আল্হামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পাঠ করাঃ

উম্মু হানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে একটা আমল বলে দিন। কেননা এখন আমি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, দুর্বল হয়ে গেছি এবং আমার দেহও ভারী হয়ে গেছে। তিনি বলেনঃ তুমি শতবার আল্লাহ আকবার, শতবার আলহামদু লিল্লাহ এবং শতবার সুবহানাল্লাহ পড়ো। তা জিনপোষ ও লাগামসহ একশত ঘোড়া আল্লাহর পথে (জিহাদে) দান করার চেয়ে উত্তম, একশত উটের চেয়ে উত্তম এবং একশত গোলাম আযাদ করার চেয়ে উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১০, আহমাদ ২৭৭২৩, ২৬৮৪৭, সহীহাহ ১৩১৬, ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১৫৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বর্তমান যুগে যদি দাস প্রথা থাকত, তাহলে একশটি দাস আযাদ করতে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন হ’ত। অথচ পাঁচ-সাত মিনিটের মাধ্যেই আমরা এই আমলটি করতে পারি।

উপসংহারঃ

সম্মানিত পাঠক! যে সকল আমল সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল, তা সম্পাদন করা আমাদের কাছে আদৌ কোন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু আবহেলা ও অলসতার দরূন নেকীর ভান্ডার সমৃদ্ধ করার এই সুযোগগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। কোন কোন আমল একটু ইচ্ছা করলেই স্বল্প সময়ে করা সম্ভব হয়। তাই আসুন! নেকী লাভের সকল সুযোগকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাই এবং উপরোক্ত আমলসমূহ সম্পাদনের মাধ্যমে গোলাম আযাদ করার নেকী অর্জনে ব্রতী হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

 

লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

(MSHRC)

------------------------------

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...