Search This Blog

Sunday, March 17, 2024

কুরআনের মর্যাদা ও আমলসমূহ

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহিহ হাদিস ভিত্তিক

কুরআনের মর্যাদা ও আমলসমূহ

ওয়াহীর সূচনা

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কীভাবে ওয়াহী শুরু হয়েছিল।

এ মর্মে আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ

“নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওয়াহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের (নবীদের) প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/১৬৩)।

যেভাবে ওয়াহী আসতো

(ক) উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ [কোন কোন সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই মালাক (ফেরেশতা) যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো মালাক মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।] ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর ললাট হতে ঘাম ঝরে পড়ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২, ৩২১৫; মুসলিম ৪৩/২৩, হাঃ ২৩৩৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৪৪, সহীহুল জামি ৪৭৯২, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ২০৮৮, মা'রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ৬৩৭৯, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ২৫, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১৫, মুসনাদুল হুমায়দী ৭৯১, মুসনাদে বাযযার ২০২৯, মুসনাদে আহমাদ ২১৩১, আবূ ইয়া'লা ২৭৪০, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১৪৩৯, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৯৮৭০, আল মু'জামুল আওসাত ৩৭৫৮, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৩৪৭৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৭৩৬১, আস্ সুনানুস্ সুগরা ৩৪৩৬, আহমাদ ২৫৩০৭, ২৬২৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সর্বপ্রথম যে ওয়াহী আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় বাস্তব স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর ন্যায় প্রকাশিত হতো। অতঃপর তাঁর নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ’হেরা’র গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। আপন পরিবারের নিকট ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে- এভাবে সেখানে তিনি এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন ’ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদীজাহ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে আবার একই সময়ের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। এভাবে ’হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওয়াহী আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশতা এসে বললো, ’পাঠ করুন’। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ [’’আমি বললাম, ’আমি পড়তে জানি না।]

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ [অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ’পাঠ করুন’। আমি বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না।’ সে দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ ’পাঠ করুন’। আমি উত্তর দিলাম, ’আমি তো পড়তে জানি না।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’’পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু’’- (সূরাহ্ ’আলাক্ব ৯৬/১-৩)।

অতঃপর এ আয়াত নিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -প্রত্যাবর্তন করলেন। তাঁর হৃদয় তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজাহ বিন্তু খুওয়ায়লিদের নিকট এসে বললেন, ’আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর’, ’আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর।’ তাঁরা তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন। এমনকি তাঁর শংকা দূর হলো। তখন তিনি খাদীজাহ (রাঃ)-এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি। খাদীজাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ্ আপনাকে কখনও লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে খাদীজাহ (রাঃ) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকাহ ইবনু নাওফাল ইবনু ’আবদুল আসাদ ইবনু ’আবদুল ’উযযাহ’র নিকট গেলেন, যিনি অন্ধকার যুগে ’ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় লিখতে পারতেন এবং আল্লাহর তাওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইঞ্জিল হতে ভাষান্তর করতেন।

তিনি ছিলেন অতিবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, ’হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ’ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, সবই বর্ণনা করলেন। তখন ওয়ারাকাহ তাঁকে বললেন, এটা সেই বার্তাবাহক যাঁকে আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কওম তোমাকে বহিষ্কার করবে।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, [’তারা কি আমাকে বের করে দেবে?’] তিনি বললেন, ’হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে এসেছো অনুরূপ (ওয়াহী) কিছু যিনিই নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই বৈরিতাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে জোরালোভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকাহ (রাঃ) ইন্তিকাল করেন। আর ওয়াহীর বিরতি ঘটে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০, আহমাদ ২৬০১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ্ আনসারী (রাঃ) ওয়াহী স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা আমি হাঁটছি, হঠাৎ আসমান হতে একটি শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টিকে উপরে তুললাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন, আসমান ও যমীনের মাঝে একটি আসনে উপবিষ্ট। এতে আমি শংকিত হলাম। অবিলম্বে আমি ফিরে এসে বললাম, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর।’ অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, ‘‘হে বস্ত্রাবৃত রাসূল! (১) উঠুন, সতর্ক করুন; আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন; এবং স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র পবিত্র রাখুন; (৫) এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।’’ (সূরাহ্ঃ মুদ্দাস্সির ৭৪/১-৫) অতঃপর ওয়াহী পুরোদমে ধারাবাহিক অবতীর্ণ হতে লাগল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহ.) ও আবূ সালেহ্ (রহ.) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হিলাল ইবনু রাদ্দাদ (রহ.) যুহরী (রহ.) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইউনুস ও মা’মার فواده -এর স্থলে بَوَادِرُهُ শব্দ উল্লেখ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪, ৩২৩৮, ৪৯২২, ৪৯২৩, ৪৯২৪, ৪৯২৫, ৪৯২৬, ৪৯৫৪, ৬২১৪; মুসলিম ১/৩৮ হাঃ ১৬১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৪৩, মুসনাদে আহমাদ ১৪৫২৩, সহীহুল জামি' ৪১৯৩, আহমাদ ১৫০৩৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (সা.) -এর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হত, তখন তিনি কষ্ট অনুভব করতেন বলে মনে হত এবং তার চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত।

অপর এক বর্ণনায় আছে, ওয়াহী নাযিল হওয়ার সময় তিনি মাথা ঝুকিয়ে ফেলতেন এবং তার সাথে উপস্থিত সাহাবীগণও (আদবের খাতিরে) আপন আপন মাথা নত করে নিতেন। ওয়াহী আসা শেষ হলে তিনি (সা.) স্বীয় মাথা উঠাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন (ভীতি প্রদর্শন সম্পর্কীয় আয়াত) “তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”- (সূরাহ আশ শুআরা ২৬: ২১৪); অবতীর্ণ হলো, তখন নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে- হে বানী ফিহর! হে বানী ’আদী! বলে কুরায়শদের গোত্রসমূহকে আহ্বান করেন। পরিশেষে সেখানে সকলে একত্রিত হলো। এমনকি যারা স্বয়ং উপস্থিত হতে পারেনি, তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানতে চাইল যে, ব্যাপার কি? বিশেষত আবূ লাহাব এবং কুরায়শের সর্বসাধারণ লোকেরাও আসলো।

তখন তিনি (সা.) বললেন, বল তো! আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, (শত্রুপক্ষের) একদল অশ্বারোহী এ পাহাড়ের অপর প্রান্ত হতে। অপর এক বর্ণনা মতে, একদল অশ্বারোহী উপত্যকার এক প্রান্ত হতে বের হয়ে হঠাৎ তোমাদের ওপর আক্রমণ করতে চায়, তোমরা কি আমার এ কথাটি বিশ্বাস করবে? তারা সকলে বলে উঠল; হ্যাঁ, নিশ্চয়। কেননা তোমাকে আমরা বিগত দিনে সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখে আগত এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছি। এতদশ্রবণে আবূ লাহাব বলে উঠল, তোমার ধ্বংস হোক! এজন্যই কি তুমি আমাদেরকে একত্রিত করেছ? বর্ণনাকারী বলেন, তখনই আয়াত অবতীর্ণ হলো “আবূ লাহাব-এর উভয় হাত ধ্বংস হয়েছে"- (সূরাহ্ আল লাহাব ১১১ : ১)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮, সহীহুল জামি ৭৯০২, মুসনাদে আহমাদ ২৮০২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫৫০, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৪২৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৩৪৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওয়াহী আসা স্থগিত হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা.) খুবই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন

আর ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, এতে এটুকু আছে যে, ওয়াহী আসা স্থগিত হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা.) খুবই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন। এমনকি তিনি (সা.) কয়েকবার ভোরে এ উদ্দেশে পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছিলেন যে, সেখান হতে নিজেকে নীচে নিক্ষেপ করবেন। যখনই তিনি (সা.) নিজেকে নিক্ষেপ করার উদ্দেশে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতেন, তখনই জিবরীল আলায়হিস সালাম এসে তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে বলতেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি সত্য সত্যই আল্লাহর রাসূল (ধৈর্যধারণ করুন, অস্থিরতার কিছুই নেই)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর আশ্বাস বাণীতে তার অস্থিরতা দূর হয়ে অন্তরে প্রশান্তি আসত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬৯৮২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৩, মুসনাদে আহমাদ ২৬০০১, হিদায়াতু রুওয়াত ২৯২, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯৭১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওয়াহী ছিল নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেয়া একপ্রকার মুজিজা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে তাঁর যুগের প্রয়োজন মুতাবিক কিছু মুজিযা দান করা হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মুজিযা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, ওয়াহী- যা আল্লাহ্ আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। কাজেই আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের অনুপাতে আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক অধিক হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮১, ৭২৭৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫২, আহমাদ ৮৪৯৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ক্রমাগত ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ক্রমাগত ওয়াহী অবতীর্ণ করতে থাকেন এবং তাঁর ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রতি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। এরপর তাঁর ওফাত হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮২,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মক্কা ও মদিনায় কতো বছর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে

(ক) আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আয়িশাহ (রাঃ) ও ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা্য় দশ বছর অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং মদিনা্তেও দশ বছর (তাঁর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৭৮, ৪৯৭৯, ৩৮৫১, ৪৪৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে চল্লিশ বছর বয়সে নুবুওয়্যাত প্রদান করা হয়েছে। এরপর তিনি (সা.) মক্কায় তেরো বছর অবস্থান করেছেন এবং তার কাছে ওয়াহী আসতে থাকে। অতঃপর তাঁকে হিজরতের নির্দেশ দেয়া হয়। (মদীনায় হিজরত করে তিনি (সা.) দশ বছর বেঁচে ছিলেন, অবশেষে তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৩৭, (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ৩৯০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪৮, মুসনাদে আহমাদ ৩৫১৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১২৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) (নুবুওয়্যাতের পর) মক্কায় পনের বছর অবস্থান করেছেন। সাত বছর অবধি মালাকের (ফেরেশতার) স্বর শুনতেন এবং আলো দেখতে পেতেন। এটা ছাড়া আর কিছুই দেখতেন না। আট বছর তাঁর কাছে ওয়াহী পাঠানো হয়ে থাকে। আর দশ বছর মদীনায় অবস্থানের পর পঁয়ষট্টি বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৫৩, মুসনাদে আহমাদ ৯১৫৯, সুনান আততিরমিযী ৩৬২২, আবূ ইয়া'লা ১৫৭৫, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন সংকলনের ইতিহাস

(ক) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামাহর যুদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় ’উমার (রাঃ)-ও তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’উমার (রাঃ) আমার কাছে এসে বললেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদদের মধ্যে কারীদের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি কারীগণ শাহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন মাজীদের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। উত্তরে আমি ’উমার (রাঃ)-কে বললাম, যে কাজ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, সে কাজ তুমি কীভাবে করবে? ’উমার (রাঃ) জবাবে বললেন, আল্লাহর কসম! এটা একটি উত্তম কাজ।

’উমার (রাঃ) এ কথাটি আমার কাছে বার বার বলতে থাকলে অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা এ কাজের জন্য আমার বক্ষকে উন্মোচন করে দিলেন এবং এ ব্যাপারে ’উমার যা ভাল মনে করলেন আমিও তাই করলাম। যায়দ (রাঃ) বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোন সংশয় নেই। তদুপরি তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াহীর লেখক ছিলে। সুতরাং তুমি কুরআন মাজীদের অংশগুলোকে তালাশ করে একত্রিত কর। আল্লাহর শপথ! তারা যদি আমাকে একটি পর্বত এক স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিত, তাহলেও তা আমার কাছে কুরআন সংকলনের নির্দেশের চেয়ে কঠিন বলে মনে হত না। আমি বললাম, যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, আপনারা সে কাজ কীভাবে করবেন? তিনি বললেন, আল্লাহরকসম! এটা একটা কল্যাণকর কাজ।

এ কথাটি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমার কাছে বার বার বলতে থাকেন, অবশেষে আল্লাহ্ আমার বক্ষকে উন্মোচন করে দিলেন সে কাজের জন্য, যে কাজের জন্য তিনি আবূ বকর এবং ’উমার (রাঃ)-এর বক্ষকে উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। এরপর আমি কুরআন অনুসন্ধানের কাজে লেগে গেলাম এবং খেজুর পাতা, প্রস্তরখন্ড ও মানুষের বক্ষ থেকে আমি তা সংগ্রহ করতে থাকলাম। এমনকি আমি সূরাহ তওবার শেষাংশ আবূ খুযায়মাহ আনসারী (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করলাম। এ অংশটুকু তিনি বাদে আর কারো কাছে আমি পাইনি। আয়াতগুলো হচ্ছে এইঃ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তাঁর জন্য তা কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।

এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলো, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি। (১২৮-১২৯) তারপর সংকলিত সহীফাসমূহ মৃত্যু পর্যন্ত আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে রক্ষিত ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তা ’উমার (রাঃ)-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল, যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন। অতঃপর তা ’উমার (রাঃ)-এর কন্যা হাফসাহ (রাঃ)-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮৬, ২৮০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭২, সহীহ ইবনু হিববান ৪৫০৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) একবার ’উসমান (রাঃ)-এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুযাইফাহ্কে ভীষণ চিন্তিত করল। সুতরাং তিনি ’উসমান (রাঃ)-কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! কিতাব সম্পর্কে ইয়াহূদী ও নাসারাদের মত মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উষ্মতকে রক্ষা করুন। তারপর ’উসমান (রাঃ) হাফসাহ (রাঃ)-এর কাছে এক ব্যক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব। হাফসাহ (রাঃ) তখন সেগুলো ’উসমান (রাঃ)-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

এরপর ’উসমান (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ), ’আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ), সা’ঈদ ইবনু আস (রাঃ) এবং ’আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মাসহাফে তা লিপিবদ্ধ করলেন। এ সময় ’উসমান (রাঃ) তিনজন কুরাইশী ব্যক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন ব্যাপারে যদি যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতভেদ দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লেখা হয়ে গেল, তখন ’উসমান (রাঃ) মূল লিপিগুলো হাফসাহ (রাঃ)-এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ-সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এছাড়া আলাদা আলাদা বা একত্রিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮৭, ৩৫০৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২১, সুনান আততিরমিযী ৩১০৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫০৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু শিহাব (রহ.) খারিজাহ ইবনু যায়দ ইবনু সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবনু সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা যখন গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরাহ আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায়; অথচ আমি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাঠ করতে শুনেছি। তাই আমরা খোঁজ করতে লাগলাম। শেষে আমরা তা খুযাইমাহ ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ)-এর কাছে পেলাম। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ ’’মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি’’- (সূরাহ আল-আহযাব ৩৩/২৩)। তারপর আমরা এ আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সূরার সঙ্গে মাসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮৮, ২৮০৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ইউসুফ ইবনু মাহিক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় এক ইরাকী ব্যক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলঃ কোন্ ধরনের কাফন শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, আফ্সোস তোমার প্রতি! এতে তোমার কী ক্ষতি? তারপর লোকটি বলল, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে আপনি আপনার কুরআনের কপি দেখান। তিনি বললেন, কেন? লোকটি বলল, এ তারতীবে কুরআনকে বিন্যস্ত করার জন্য। কারণ লোকেরা তাকে অবিন্যস্তভাবে পাঠ করে। ’আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, তোমরা এর যে অংশই আগে পাঠ কর না কেন, এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। (الْمُفَصَّلِ) মুফাস্সাল সূরাহ সমূহের মাঝে প্রথমত ঐ সূরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে যার মধ্যে জান্নাত ও জাহান্নামের উল্লেখ রয়েছে। তারপর যখন লোকেরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগল তখন হালাল-হারামের বিধান সম্বলিত সূরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে। যদি প্রথমেই এ আয়াত অবতীর্ণ হত যে, তোমরা মদ পান করো না, তাহলে লোকেরা বলত, আমরা কখনো মদপান ত্যাগ করব না। যদি শুরুতে অবতীর্ণ হতো তোমার ব্যভিচার করো না, তাহলে তারা বলত আমরা কখনো অবৈধ যৌনাচার ত্যাগ করব না। আমি যখন খেলাধূলার বয়সী একজন বালিকা তখন মক্কা্য় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নিম্নলিখিত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়ঃ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ মানে, ’’অধিকন্তু ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে কঠিনতর ও তিক্ততর।’’ (বিধান সম্বলিত) সূরাহ বাকারাহ ও সূরাহ নিসা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে থাকাকালীন অবস্থায় অবতীর্ণ হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর ’আয়িশাহ (রাঃ) তাঁর কাছে সংরক্ষিত কুরআনের কপি বের করলেন এবং সূরাসমূহ লেখালেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯৩, ৪৮৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি সূরাহ বনী ইসরাঈল, সূরাহ কাহ্ফ, সূরাহ মারিয়াম, সূরাহ ত্বাহা এবং সূরাহ আম্বিয়া সম্পর্কে বলতেন যে, এগুলো হচ্ছে আমার সর্বপ্রথম সম্পদ এবং এগুলো আমার পুরাতন সম্পত্তি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯৪, ৪৭০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সমপর্যায়ের ঐ সূরাগুলো সম্পর্কে আমি খুব অবগত আছি, যা নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাক’আতে জোড়া জোড়া পাঠ করতেন। তারপর ’আবদুল্লাহ (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং ’আলক্বামাহ (রহ.) তাকে অনুসরণ করলেন। যখন ’আলক্বামাহ (রহ.) বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলেন তখন আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এগুলো হচ্ছে মোট বিশটি সূরা, ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর সংকলন মুতাবিক মুফাস্সাল থেকে যার শুরু এবং যার শেষ হচ্ছে الْحَوَامِيْمُ অর্থাৎ ’হামীম’ ’আদ্দুখান’ এবং ’আম্মা ইয়াতাসা আলুন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯৬, ৭৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাতিব (ওয়াহী লিখক)

(ক) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়াহী লিখতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াতগুলো খোঁজ কর। এরপর আমি খোঁজ করলাম। অবশেষে সূরাহ তওবার শেষ দু’টো আয়াত আমি আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ)-এর কাছে পেলাম। তিনি ছাড়া আর কারো কাছে আমি এর সন্ধান পায়নি। আয়াত দু’টো হচ্ছে এইঃ ’’তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল। তার পক্ষে অতি দুঃসহ-দুর্বহ সেসব বিষয় যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তিনি তোমাদের অতিশয় হিতকামী, মু’মিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, খুবই দয়ালু। এতদসত্ত্বেও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলে দিন- আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নেই। তাঁরই উপর আমি ভরসা করি এবং তিনি বিরাট আরশের অধিপতি’’- (সূরাহ আত্-তওবা ৯/১২৮-১২৯)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮৯, ২৮০৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, لَايَسْتَوِي الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ....وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْسَبِيْلِ اللهِ আয়াতটি অবতীর্ণ হলে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যায়দকে আমার কাছে ডেকে আন এবং তাকে বল সে যেন কাষ্ঠখন্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড় (রাবী বলেন- অথবা তিনি বলেছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত) নিয়ে আসে। এরপর তিনি বললেন, লিখ। এ সময় অন্ধ সাহাবী আমর ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তো অন্ধ, আমার ব্যাপারে আপনার কী নির্দেশ? এ কথার প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত আয়াতের পরিবর্তে অবতীর্ণ হলঃ ’’সমান নয় সেসব মু’মিন যারা বিনা ওজরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মু’মিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করে’’- (সূরাহ আন-নিসা ৪/৯৫)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯০, ২৮৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে

(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিব্রীল (আঃ) আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাঁকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলাম এবং বার বার অন্যভাবে পাঠ করার জন্য ক্রমাগত অনুরোধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য তিলাওয়াতের পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সাত আঞ্চলিক ভাষায় তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৪৯৯১, ৩২১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় সূরাহ ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ দিয়ে আমি তাঁর কিরাআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সালাতের মাঝে আমি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরাহ যেভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যেভাবে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন ভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।

এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরাহ ফুরকান যেভাবে পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্নভাবে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। তারপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেই অবতীর্ণ করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে ’উমার! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেও কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ কুরআন সাত আঞ্চলিক ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা বেশি সহজ, সেভাবেই তোমরা পাঠ কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)   ৪৯৯২, ৫০৪১, ২৪১৯, ৭৫৫০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৮, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৭৫, সুনান আননাসায়ী ৯৩৭, মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৮৪৫, ইবনু হিব্বান ৭৪১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে আয়াত পড়তে শুনলেন। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যেভাবে পড়তে শুনতেন, তার থেকে সে অন্য রকম করে পড়ছিল। তখন ঐ ব্যক্তিকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ। সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাক। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, তোমাদের পূর্বেকার জাতিগুলো তাদের পারস্পরিক বিভেদের জন্যই ধ্বংস হয়ে গেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)   ৫০৬২, ২৪১০, ৩৪৭৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯২)। দিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে আছি, এমন সময় এক লোক মসজিদে এসে সালাত আদায় করতে শুরু করল। সে এমন পদ্ধতিতে কিরাআত পড়ল যা আমার জানা ছিল না। এরপর আর একজন লোক এলো। সে প্রথম ব্যক্তির কিরাআতের ভিন্ন ধরনে পড়ল। সালাত শেষে আমরা সকলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যক্তি সালাতে এভাবে কিরাআত পড়েছে, যা আমার জানা নেই। আবার দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ওর চেয়ে ভিন্নভাবে কিরাআত পড়ল। এসব কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হুকুম দিলেন, আবার কুরআন পড়তে। তারা আবার পড়ল। পড়া শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উভয়ের পাঠকেই ঠিক বললেন। এ কথা শুনে আমার মনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এমন এক সন্দেহের জন্ম দিলো যা জাহিলিয়্যাতের সময়েও আমার মধ্যে ছিল না। সন্দেহের ছায়া আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে লক্ষ্য করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার সিনার উপর হাত মারলেন। এতে আমি ঘামে ভিজে গেলাম।

আমি এতই ভীত হলাম, যেন আমি আল্লাহকে দেখছি। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, হে উবাই! আমার কাছে ওহী পাঠানো হয়েছিল এক রীতিতে কুরআন পাঠের। কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট আবেদন করলাম। (হে আল্লাহ!) আপনি আমার উম্মাতের জন্য কুরআন পাঠ পদ্ধতি সহজ করে দিন। আল্লাহ দ্বিতীয়বার বললেন, তবে দু’ রীতিতে কুরআন পড়ো। আমি আবার নিবেদন করলাম, (হে আল্লাহ!) আপনি আমার উম্মাতের জন্য কুরআন পাঠ আরো সহজ করে দিন। তিনি তৃতীয়বার আমাকে বলে দিলেন, তাহলে সাত রীতিতে কুরআন পড়ো। কিন্তু তোমার প্রতিটি নিবেদনের পরিবর্তে আমি তোমাকে যা দিয়েছি এর বাইরেও আরো নিবেদন অধিকার তোমার রইল। তুমি তা চাইতে পারো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় আবেদনটি আমি এমন এক দিনের জন্য পিছিয়ে রাখলাম যেদিন সব সৃষ্টি আমার সুপারিশের দিকে চেয়ে থাকবে। এমনকি ইব্রাহীম (আঃ)-ও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২০, আহমাদ ২১১৭১, সহীহ ইবনু হিববান ৭৪০, বাগাবী ১২২৭, সহীহ আল জামি ২০৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমাকে এক রীতিতে কুরআন পড়ালেন। আমি তাকে এর পাঠ রীতির সংখ্যা বৃদ্ধি করে আনতে আল্লাহর নিকট ফেরত পাঠালাম। আল্লাহ আমার জন্য এ রীতি বৃদ্ধি করতে লাগলেন। অতঃপর এ পাঠ সাত রীতিতে গিয়ে পৌঁছল।

বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব যুহরী বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, এ সাত রীতি অর্থের দিক দিয়ে একই। এর দ্বারা হালাল হারামে কোন পার্থক্য পড়েনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৯, আহমাদ ২৩৭৫, মু‘জামুস সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৯৯০, সহীহ আল জামি ১১৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(চ)  উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের সাথে দেখা করলেন। তিনি বললেন, হে জিবরীল! আমি এক নিরক্ষর উম্মাতের কাছে প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে আছে প্রবীণা বৃদ্ধা, প্রবীণ বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী। এমন ব্যক্তিও আছে যে কখনো লেখাপড়া করেনি। জিবরীল বললেন, হে মুহাম্মাদ! (এতে ভয় নেই) কুরআন সাত রীতিতে (পড়ার অনুমতি নিয়ে) নাযিল হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৪৪, সহীহ ইবনু হিববান ৭৩৯, আহমাদ ২১২০৪, ২১১৩২, নাসায়ী ৯৪১, আবূ দাঊদ ১৪৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ছ) ’আলকামাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হিম্স শহরে ছিলাম। ওই সময় একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) সূরা ইউসুফ পড়লেন। তখন এক লোক বলে উঠল, এ সূরা এভাবে নাযিল হয়নি। (এ কথা শুনে) ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে এ সূরা পড়েছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বলেছেন, বেশ ভাল পড়েছ। ’আলকামাহ্ বলেন, সে তাঁর সাথে কথা বলছিল এ সময় তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পাওয়া গেল। ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) তখন বললেন, মদ খাও আর আল্লাহর কিতাবকে মিথ্যা বানাও। এরপর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) মদপানের অপরাধে তাকে শাস্তি প্রদান করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১৯, (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৫০০১, মুসলিম ৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

কুরআন কুরায়শ এবং আরবদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উসমান (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ), সা’ঈদ ইবনুল ’আস (রাঃ), ’আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র (রাঃ) এবং ’আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ)-কে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার জন্য আদেশ দিলেন এবং তাদেরকে বললেন, আল কুরআনের কোন শব্দের আরাবী হওয়ার ব্যাপারে যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতভেদ দেখা দিলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তাঁরা তা-ই করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৮৪, ৩৫০৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতি রমজানে জিব্রীল (আঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  সঙ্গে  কুরআন শুনাতেন ও শুনতেন

(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমাযান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমাযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিব্রীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিব্রীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯৭, ৬, ১৯০২, ৩২২০, ৩৫৫৪, আহমাদ ৩৬১৬, ৩৪২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি বছর জিব্রীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একবার কুরআন মাজীদ শোনাতেন ও শুনতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’বার শুনিয়েছেন। প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানে দশ দিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর তিনি বিশ দিন ই’তিকাফ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯৮, ২০৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সব সাহাবী ক্বারী ছিলেন

(ক) মাসরুক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ’আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদের কথা উল্লেখ পূর্বক বলেছেন, আমি তাঁকে ঐ সময় থেকে ভালবাসি, যখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর- ’আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ), সালিম (রাঃ), মু’আয (রাঃ) এবং উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৯৯, ৩৭৫৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) শাকীক ইবন সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ’আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ! সত্তরেরও কিছু অধিক সূরাহ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে হাসিল করেছি। আল্লাহর কসম! নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীরা জানেন, আমি তাঁদের চেয়ে আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত; অথচ আমি তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম নই। শাকীক (রহ.) বলেন, সাহাবীগণ তাঁর কথা শুনে কী বলেন তা শোনার জন্য আমি মাজলিসে বসে থাকলাম, কিন্তু আমি কাউকে অন্যরকম কথা বলে আপত্তি করতে শুনিনি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আলক্বামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হিম্স শহরে ছিলাম। এ সময় ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) সূরাহ ইউসুফ তিলাওয়াত করলেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, এটা এভাবে অবতীর্ণ হয়নি। এ কথা শুনে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এ সূরাহ তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন, তুমি সুন্দর পড়েছ। এ সময় তিনি ঐ লোকটির মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন। তাই তিনি তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা বলা এবং মদ পানের অপরাধ এক সঙ্গে করছ? এরপর তিনি তার ওপর নির্ধারিত শাস্তি জারি করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মাসরূক (রহ.) হতে বর্ণিত। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরাহ সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৬৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় কোন্ কোন্ ব্যক্তি কুরআন সংগ্রহ করেছেন? তিনি বললেন, চারজন এবং তাঁরা চারজনই ছিলেন আনসারী সাহাবী। তাঁরা হলেনঃ উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ), মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ), যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং আবূ যায়দ (রাঃ)। (অন্য সানাদে) ফাদল (রহ.) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০৩, ৩৮১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করলেন। তখন চারজন ব্যতীত আর কেউ কুরআন সংগ্রহ করেননি। তাঁরা হলেন আবুদ্ দারদা (রাঃ), মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ), যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং আবূ যায়দ (রাঃ)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা আবূ যায়দ (রাঃ)-এর উত্তরসুরী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০৪, ৩৮১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ) বলেছেন, ’আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক এবং উবাই (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম কারী। এতদ্সত্ত্বেও তিনি যা তিলাওয়াত করেছেন, আমরা তার কিছু অংশ বাদ দিই, অথচ তিনি বলছেন, আমি তা আল্লাহর রাসূলের যবান থেকে শুনেছি, কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তা ত্যাগ করব না। আল্লাহ্ বলেছেন, ’’আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে তা হতে উত্তম কিংবা তার মত কোন আয়াত এনে দিই।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০৫,  ৪৪৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন তিলাওয়াতকারী লেবুর মতো সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত

আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এ লেবুর মত যা সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মু’মিন) কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন খেজুরের মত, যা সুগন্ধহীন, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি যে কুরআন পাঠ করে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে রায়হান জাতীয় লতার মত, যার সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে বিস্বাদ। আর ঐ ফাসিক যে কুরআন একেবারেই পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোন সুগন্ধও নেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২০, ৫০৫৯, ৫৪২৭, ৭৫৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৭, সুনান আততিরমিযী ২৮৬৫, সুনান আননাসায়ী ৫০৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪, আহমাদ ১৯৫৪৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিসমিল্লাহ হচ্ছে সুরাহ পার্থক্য নির্ণয়কারী

আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ নাযিল না হওয়া পর্যন্ত সূরাগুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২১৮, সুনান আবূ দাঊদ ৭৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭৭, শু‘আবূল ঈমান ২১২৫, সহীহ আল জামি ৪৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের সময় প্রশান্তি নেমে আসে ও মালায়িকাহ অবতীর্ণ হয়

লায়স (রহ.) উসাইদ ইবনু হুযায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদা রাত্রে তিনি সুরা বাকারা পাঠ করছিলেন। তখন তাঁর ঘোড়াটি তারই পাশে বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি ভীত হয়ে লাফ দিয়ে উঠল এবং ছুটাছুটি শুরু করল। যখন পাঠ বন্ধ করলেন তখনই ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ শুরু করলেন। ঘোড়াটি আগের মত করল। যখন পাঠ বন্ধ করলেন ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ আরম্ভ করলে ঘোড়াটি আগের মত করতে লাগল। এ সময় তার পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়াটির নিকটে ছিল। তার ভয় হচ্ছিল যে, ঘোড়াটি তার পুত্রকে পদদলিত করবে। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলেন। পরদিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উক্ত ঘটনা বললেন। ঘটনা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইবনু হুদায়র (রাঃ)! তুমি যদি পাঠ করতে, হে ইবনু হুদায়র (রাঃ)! তুমি যদি পাঠ করতে।

ইবনু হুযায়র আরয করলেন, আমার ছেলেটি ঘোড়ার নিকট থাকায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম হয়ত বা ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করবে, সুতরাং আমি আমার মাথা উপরে উঠাতেই মেঘের মত কিছু দেখলাম, যা আলোর মত ছিল। আমি যখন বাইরে এলাম তখন আর কিছু দেখ্লাম না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান, ওটা কী ছিল? বললেন, না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা ছিল মালায়িকাহ। তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। তুমি যদি সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে তারাও ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে অবস্থান করত এবং লোকেরা তাদেরকে দেখতে পেত। এরপর হাদীসের অন্য একটি সনদ বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৬,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৬, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৬, আহমাদ ১১৭৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আল্লাহর কিতাব অনুসরণ করার ওয়াসিয়্যাত

ত্বলহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ ’আওফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, যখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোন ওয়াসিয়্যাত করে যাননি, তখন কী করে মানুষের জন্য ওয়াসিয়্যাত করাকে (কুরআন মাজীদে) বাধ্যতামূলক করা হল এবং তাদেরকে এজন্য নির্দেশ দেয়া হল। জবাবে তিনি বললেন, তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর কিতাব (অনুসরণ)-এর ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২২, ২৭৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুইটি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও সাথে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ্ তা’আলা কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বলে, হায়! আমাদেরকে যদি এমন জ্ঞান দেয়া হত, যেমন অমুককে দেয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মত ’আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলেঃ হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মত সম্পদ দেয়া হত, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২৬, ৫০২৫, ৭২৩২, ৭৫২৮, ৭৫২৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ, ’আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ....আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি ব্যাপার ছাড়া ঈর্ষা পোষণ করা যায় না। একটি হ’ল- এমন ব্যক্তি যাকে মহান আল্লাহ কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন। সে তদনুযায়ী রাত-দিন আমল করে। আরেক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’আলা অর্থ-সম্পদ দান করেছেন। সে রাত-দিন তা (আল্লাহর পথে) খরচে করে। (এ দু’ ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা পোষণ করা যায়। অর্থাৎ এদের সাথে আমল ও দানের ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুকূল ইলম ও মালের আকাঙ্ক্ষা করা যায়। তবে ঐ ব্যক্তির ইলম বিলুপ্ত হয়ে যাক কিংবা ঐ মালদারের মাল ধ্বংস হয়ে যাক- এরূপ কামনা করা যাবে না)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫২৯, ১৭৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২০৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৯৭৪, আহমাদ ৪৫৫০, সুনানুল কাবীর লিল বায়হাক্বী ৭৮২১, সহীহ ইবনু হিববান ১২৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৩৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৪৮৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৬৪, ইসলামীক সেন্টার ১৭৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায় সেই ব্যক্তি উত্তম

(ক) উসমান (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২৭, ৫০২৮, সুনানে আবূ দাঊদ ১৪৫২, সুনান আততিরমিযী ২৯০৭, আহমাদ ৫০০, শু‘আবূল ঈমান ১৭৮৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১১৮, সহীহাহ্ ১১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৫, সহীহ আল জামি‘ ৩৩১৯।আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একদিন) মসজিদের প্রাঙ্গণে বসেছিলাম। এ সময়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন ও (আমাদেরকে) বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন সকালে ’বুত্বহান’ অথবা ’আক্বীক’ বাজারে গিয়ে দু’টি বড় কুঁজওয়ালা উটনী কোন অপরাধ সংঘটন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে পছন্দ করবে? এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের প্রত্যেকেই এ কাজ করতে পছন্দ করবে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তা-ই হয় তাহলে তোমাদের কেউ কোন মসজিদে গিয়ে সকালে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত (মানুষকে) শিক্ষা দেয় না বা (নিজে) শিক্ষাগ্রহণ করে না কেন? অথচ এ দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য দু’টি উটনী অথবা তিনটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য তিনটি উটনী অথবা চারটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। সারকথা কুরআনের যে কোন সংখ্যক আয়াত, একই সংখ্যক উটনীর চেয়ে উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩০০৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৮, সহীহ আল জামি‘ ২৬৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদা একা মহিলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করতে এসেছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে মাথা নিচু করলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবীদের একজন বলল, যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সঙ্গে আমার শাদী দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম কিছুই নেই।

তিনি বললেন, তুমি তোমার পরিজনদের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না! এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিছুই পেলাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না; কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ আছে। সাহল (রাঃ) বলেন, তার কোন চাদর ছিল না। অথচ লোকটি বলল, আমার তহবন্দের অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ তহবন্দ দিয়ে কী হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আবরণ থাকবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরণ থাকবে না।

লোকটি বসে পড়লো, অনেকক্ষণ সে বসে থাকল। এরপর উঠে দাঁড়াল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে তাকে ডেকে আনলেন। যখন সে ফিরে আসল, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সূরাহ মুখস্থ আছে। সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করতে থাকল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ সকল সূরাহ মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পার? সে উত্তর করল, হাঁ! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ রেখেছ, তার বিনিময়ে এ মহিলাটির তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম। (সহিহ বুখারী-তাওহীদ প্রকাশনী ৫০৩০, ৫০২৯, ২৩১০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২৫, আহমাদ ২২৯১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৬০)। হাদিসের মান সহিহ।

শিশুদের কুরআন শিক্ষাদান

সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, যে সকল সূরাকে তোমরা মুফাসসাল (ক) বলো, তা হচ্ছে মুহ্কাম। (খ) রাবী বলেন, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন, তখন আমার বয়স দশ বছর এবং আমি ঐ বয়সেই মুহ্কাম আয়াতসমূহ শিখে নিয়েছিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৩৫, ৫০৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ক) সূরাহ হুজুরাত থেকে সূরাহ নাস পর্যন্ত সূরাসমূহকে মুফাস্সাল বলা হয়।

(খ) যে সকল আয়াতের ভাষা প্রাঞ্জল এবং অর্থ নির্ধারণের ব্যাপারে কোন অসুবিধা হয় না ও সন্দেহের অবকাশ নেই তাকে ‘মুহ্কাম আয়াত’ বলে।

কুরআন অধ্যয়নে পারদর্শী ব্যক্তির মর্যাদা

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন অধ্যয়নে পারদর্শী ব্যক্তি মর্যাদাবান লিপিকার মালায়িকাহ্’র (ফেরেশ্তাগণের) সাথী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন অধ্যয়ন করে ও যে এতে আটকে যায় এবং কুরআন তার জন্য কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার জন্য দু’টি পুরস্কার। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৭৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৪১৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা অপরিসীম

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারীকে কিয়ামতের দিন বলা হবে, পাঠ করতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো। (অক্ষরে অক্ষরে ও শব্দে শব্দে) সুস্পষ্টভাবে পাঠ করতে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করতে। কারণ তোমার স্থান (মর্যাদা) হবে যা তুমি পাঠ করবে শেষ আয়াত পর্যন্ত (আয়াত পাঠের তুলনাগত দিক থেকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬৪, সুনান আততিরমিযী ২৯১৪, সহীহাহ্ ২২৪০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৯০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করলে ১০ নেকি

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের কোন একটি অক্ষরও পাঠ করবে, সে নেকী পাবে। আর নেকী হচ্ছে ’আমলের দশ গুণ। আমি বলছি না যে,(الٓمٓ) ’আলিফ লাম মীম’ একটি অক্ষর। বরং ’আলিফ’ একটি অক্ষর, ’লাম’ একটি অক্ষর ও ’মীম’ একটি অক্ষর। (তাই আলিফ, লাম ও মীম বললেই ত্রিশটি নেকী পাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৭, সুনান আততিরমিযী ২৯১০, সহীহাহ্ ৩৩২৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৬৯, দারিমী ৩৩১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন মাজীদ বারবার তিলাওয়াত করে স্মরণ রাখতে হবে

(ক) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বাঁধন খুলে দেয়, তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৮৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৯০, আহমাদ ৫৯২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫১, শু‘আবূল ঈমান ১৮১০, সহীহ ইবনু হিববান ৭৬৪, সহীহাহ্ ৩৫৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৫, সহীহ আল জামি‘ ২৩৭২, আহমাদ ৪৬৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(খ) আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুত গতিতে চলে যায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৩২, ৫০৩৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৮৮, সুনান আততিরমিযী ২৯৪২, সুনান আননাসায়ী ৯৪৩, আহমাদ ৩৯৬০, দারিমী ২৭৮৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫৩, শু‘আবূল ঈমান ১৮১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৬২, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৬, সহীহ আল জামি‘ ২৮৪৯, আহমাদ ৩৬২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! কুরআন বাঁধন ছাড়া উটের চেয়েও দ্রুত গতিতে দৌড়ে যায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৮৭, আহমাদ ১৯৫৬৩,  ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৫৬৯, শু‘আবূল ঈমান ১৮০৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৭, সহীহ আল জামি‘ ২৯৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মনের আকর্ষণ থাকা পর্যন্ত কুরআন পড়া

জুনদুব ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মনের আকর্ষণ থাকা পর্যন্ত কুরআন পড়বে। মনের ভাব পরিবর্তিত হলে অর্থাৎ- আগ্রহ কমে গেলে তা ছেড়ে উঠে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৬৭, সহীহাহ্ ৩৯৯৩, দারিমী ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুস্পষ্ট ও ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করা

(ক) আবূ ওয়ায়িল (রহ.) সূত্রে ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ ওয়ায়িল (রহ.) বলেন, আমরা একদিন সকালে ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। একজন লোক বলল, গতকাল রাতে আমি মুফাস্সাল সূরাসমূহ পাঠ করেছি। এ কথা শুনে ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, এত শীঘ্র পাঠ করা যেন কবিতা পাঠের মতো; অথচ আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাঠ শুনেছি এবং তা আমার ভালভাবে মনে আছে। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সমস্ত সূরাহ পাঠ করতে আমি শুনেছি, তার সংখ্যা মুফাস্সাল হতে আঠারটি এবং ’আলিফ-লাম হামিম’ হতে দু’টি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৩, ৭৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর বাণীঃ ’’হে নবী! আপনার জিহবাকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য নাড়াবেন না।’’ আল্লাহর এই কালাম সম্পর্কে তিনি বলেন, যখনই জিব্রীল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসতেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব তাড়াতাড়ি জিহবা এবং ঠোঁট নাড়াতেন এবং এটা তার জন্য খুব কঠিন হত। আর এ অবস্থা সহজেই অন্যজনে আঁচ করতে পারত। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আল্লাহ্ তা’আলা সূরাহ ক্বিয়ামাহ এর এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ ’’হে নবী! তাড়াতাড়ি ওয়াহী মুখস্থ করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না। এ মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। যখন আমি তা পাঠ করতে থাকি, তখন আপনি সে পাঠকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকুন। পরে এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব।’’ সুতরাং যখন জিব্রীল (আঃ) পাঠ করেন আপনি তার অনুসরণ করুন। এরপর থেকে যখন জিবরীল (আঃ) বলে যেতেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকতেন। যখন তিনি চলে যেতেন, আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তিনি তা পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৪, ৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাদ  সহকারে কিরাআত

(ক) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ’কিরাআত’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোন কোন ক্ষেত্রে শব্দকে) দীর্ঘায়িত করে পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৫, ৫০৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’কিরাআত’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’কিরাআত’ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, কোন কোন ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ করতেন। এরপর তিনি ’বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ তিলাওয়াত করে শোনালেন এবং তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’বিস্মিল্লাহ্’’ ’আর রহমান’, ’আর রহীম’ পড়ার সময় দীর্ঘায়িত করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৬, ৫০৪৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলতেন, ‘আলহাম্দু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন’, এরপর থামতেন। তারপর বলতেন, ’আর্ রহমা-নির রহীম’, তারপর বিরতি দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২০৫, সুনান আততিরমিযী ২৯২৭, দারাকুত্বনী ১১৯১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৯১০, শামায়িল ২৭০, ইরওয়া ৩৪৩, সহীহ আল জামি ৫০০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আত্তারজী’ (ছন্দময় সুমধুর সুরে কুরআন পাঠ করা)

(ক) আবদুল্লাহ্ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম উষ্ট্রির পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় যখন উষ্ট্রটি চলছিল, তখন আমি তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি ’সূরাহ ফাত্হ’ বা ’সূরাহ ফাত্হ’র অংশ বিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ছন্দোময় সুরে পাঠ করছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৭, ৪২৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ মূসা! তোমাকে দাঊদ (আঃ)-এর সুমধুর কন্ঠ দান করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৩, আহমাদ ২৩০৩০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(গ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’তোমাদের মিষ্টি স্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর করো।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬৮, সুনান আননাসায়ী ১০১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৭৩৭, আহমাদ ১৮৪৯৪, দারিমী ৩৫৪৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নবীদের সুর করে কুরআন পড়াকে আল্লাহ তাআলা  কান পেতে শোনেন

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন নবীর সুর করে কুরআন পড়াকে আল্লাহ তা’আলা যতটা কান পেতে শোনেন আর কোন কথাকে এতো কান পেতে শোনেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৫০২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯২, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৭৩, সুনান আননাসায়ী ১০১৭, আহমাদ ৭৬৭০, দারিমী ১৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৮, শু‘আবূল ঈমান ১৯৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কোন নবীর মধুর স্বরে সুরেলা কণ্ঠে স্বরবে কুরআন পাঠ যত পছন্দ করেন, তত পছন্দ করেন না আর কোন স্বরকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বরের মধুর আওয়াজ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পড়বে। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২০৮, দারিমী ৩৫৪৪, শু‘আবূল ঈমান ১৯৫৫, সহীহাহ্ ৭৭১, সহীহ আল জামি ৩১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুর করে কুরআন পড়ে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সুস্পষ্ট করে আওয়াজের সঙ্গে কুরআন পাঠ করা

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা কোন বিষয়ের প্রতি ঐরূপ কান লাগিয়ে শুনেন না যেরূপ তিনি নবীর সুমধুর তিলাওয়াত শুনেন। রাবী বলেন, এর অর্থ সুস্পষ্ট করে আওয়াজের সঙ্গে কুরআন পাঠ করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২৩, ৫০২৪, ৭৪৮২, ৭৫৪৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯২,, আহমাদ ৭৬৭৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উকবাহ্ ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উচ্চস্বরে কুরআন পড়া প্রকাশ্যে সদকা করার মতো। আর চুপে চুপে কুরআন পড়া চুপে চুপে সদকা করার মতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২০২, সুনান আবূ দাঊদ ১৩৩৩, সুনান আততিরমিযী ২৯১৯, সুনান আননাসায়ী ২৫৬১, আহমাদ ১৭৩৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৭১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৩১০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে অন্যের নিকট থেকে কুরআন পাঠ শুনতে ভালবাসে

(ক) আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমার কাছে কুরআন পাঠ কর।” আবদুল্লাহ্ বললেন, আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের নিকট থেকে তা শুনতে ভালবাসি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪৯, ৪৫৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কুরআন পাঠ কর। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করব? অথচ তা তো আপনার ওপরই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি ’সূরাহ নিসা’ পাঠ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত আসলাম ’চিন্তা করো আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করব তখন তারা কী করবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপাততঃ যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর চেহারার দিকে তাকালাম, দেখলাম, তাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫০, ৪৫৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতে কী পরিমাণ আয়াত পাঠ করা যথেষ্ট

আল্লাহতাআলা বলেন,

“যতটা কুরআন তোমার সহজসাধ্য হয়, ততটাই পড়”। (সুরা মুজাম্মিল ২০)।

(ক) সুফ্ইয়ান ইবনু ’উয়াইনাহ (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু সুবরুমা (রহ.) বললেন, আমি দেখতে চাইলাম, সালাতে কী পরিমাণ আয়াত পাঠ করা যথেষ্ট এবং আমি তিন আয়াত বিশিষ্ট সূরার চেয়ে ছোট কোন সূরাহ পেলাম না। সুতরাং আমি বললাম, কারো জন্য তিন আয়াতের কম সালাতে পড়া উচিত নয়। আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তখন তিনি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি কেউ সুরা বাকারার শেষ দু’ আয়াত রাতে পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫১, ৪০০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি নিজ ঘরে ফিরে তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী পেতে পছন্দ করো? আমরা বললাম, (হে আল্লাহর রসূল!) নিশ্চয়ই পছন্দ করি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তারা যেন সালাতে তিনটি আয়াত পড়ে। এ তিনটি আয়াত তার জন্য তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী অপেক্ষা উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০২, সুনানে ইবনু মাজাহ ৩৭৮২, আহমাদ ১০৪৪৬, শু‘আবূল ঈমান ২০৪৮, দারেমী ৩৩১৪, আত-তালীকুর রাগীব ২/২০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কতোদিনে  কুরআন খতম করা যায়

(ক) আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “এক মাসে কুরআন পাঠ সমাপ্ত কর।’’ আমি বললাম, “আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি।’’ তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তাহলে সাত দিনে তার পাঠ শেষ করো এবং এর চেয়ে কম সময়ে পাঠ শেষ করো না।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫৪, ১১৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে এক সম্ভ্রান্ত বংশীয় মহিলার সঙ্গে শাদী দেন এবং প্রায়ই তিনি আমার সম্পর্কে আমার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। আমার স্ত্রী বলত, সে কতইনা ভাল মানুষ যে, সে কখনও আমার বিছানায় আসেনি এবং শাদীর পর থেকে আমার সম্পর্কে খোঁজ খবরও নেয়নি। এ অবস্থা যখন দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলতে থাকল তখন আমার পিতা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার সম্পর্কে জানালেন।

তখন নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতাকে বললেন, তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করুন। এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন সওম পালন কর? আমি উত্তর দিলাম, প্রতিদিন সওম পালন করি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এ অবস্থায় পূর্ণ কুরআন মাজীদ খতম করতে তোমার কত সময় লাগে? আমি উত্তর দিলাম, প্রত্যেক রাতেই এক খতম করি। তিনি বললেন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন সওম পালন করবে এবং কুরআন এক মাসে এক খতম দেবে।’’ আমি বললাম, আমি এর চেয়ে অধিক করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন সওম পালন করবে।

আমি বললাম, আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, দু’দিন পর একদিন সওম পালন কর। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে অধিক সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে সব চেয়ে উত্তম পদ্ধতির সওম পালন কর। তা হল, দাঊদ (আঃ)-এর সওম। তিনি এক দিন অন্তর একদিন সওম পালন করতেন এবং তুমি প্রতি সাত দিনে একবার কুরআন খতম করো। হায়! আমি যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেয়া সুবিধা গ্রহণ করতাম! এখন আমি দুর্বল বৃদ্ধ হয়ে গেছি।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) প্রত্যেক দিন তার পরিবারের একজন সদস্যের সামনে কুরআনের সপ্তমাংশ পাঠ করে শোনাতেন। দিবা ভাগে পাঠ করে দেখতেন, তার স্মরণশক্তি সঠিক আছে কিনা? যা তিনি রাতে পাঠ করবেন তা যেন সহজ হয় এবং যখনই তিনি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির ইচ্ছা করতেন তখন কয়েক দিন সওম পালন বন্ধ রাখতেন এবং পরবর্তীতে ঐ ক’দিনের হিসাব করে সওম পালন করতেন। কেননা, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় যে নিয়ম পালন করতেন পরে সে নিয়ম ত্যাগ করা অপছন্দ মনে করতেন। আবূ ’আবদুল্লাহ্ বলেন কেউ তিন দিনে, কেউ পাঁচ দিনে এবং অধিকাংশ লোক সাত দিনে কুরআন খতম করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫২, ১১৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন পড়েছে, সে কুরআন বুঝেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২০১, সুনান আততিরমিযী ২৯৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৭, শু‘আবূল ঈমান ১৯৪১, আবূ দাঊদ ১৩৯৪, আহমাদ ৬৫৩৫, দারিমী ১৫৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন তিলাওয়াতকালে ক্রন্দন করা

(ক) আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে কুরআন পাঠ করো। আমি উত্তরে বললাম, আমি আপনার কাছে কুরআন পাঠ করবো,অথচ আপনারই ওপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের নিকট হতে কুরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি তখন সূরাহ নিসা পাঠ করলাম যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলামঃ ’’তারপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং এ সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসেবে হাযির করব তখন তারা কী করবে।’’ তখন তিনি আমাকে বললেন, ’’থাম!’’ আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর [নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর] দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫৫, ৫০৫০,  ৫০৫৬, ৪৫৮২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০০,  সুনান আবূ দাঊদ ৩৬৬৮, সুনান আততিরমিযী ৩০২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩০৩০৩, আহমাদ ৩৬০৬, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৪৬০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৫৭, শু‘আবূল ঈমান ৯৮৯২, আহমাদ ৩৫৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে বললেন, তোমাকে কুরআন তিলাওয়াত শুনাতে আল্লাহ আমাকে হুকুম দিয়েছেন। উবাই জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ কি আমার নাম ধরে আপনাকে এ কথা বলেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। এবার উবাই বললেন, রব্বুল ‘আলামীনের কাছে আমি কী উত্থাপিত হয়েছি? রব্বুল ‘আলামীনের কাছে আমার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? বা আমার নাম নেয়া হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। এ কথা শুনে উবাই-এর দু’ চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘আমাকে আল্লাহ তা’আলা হুকুম দিয়েছেন তোমাকে ‘লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ’ সূরা পাঠ শুনাতে। উবাই বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম বলেছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। শুনে উবাই কেঁদে ফেললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৬০, ৪৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭১৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে ব্যক্তি লোক দেখানো বা দুনিয়ার লোভে অথবা গর্বের জন্য কুরআন পাঠ করে তাকে হত্যা করা

(ক) আলী (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, শেষ যামানায় এমন একদল মানুষের আবির্ভাব হবে, যারা হবে কমবয়স্ক এবং যাদের বুদ্ধি হবে স্বল্প। ভাল ভাল কথা বলবে, কিন্তু তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলার নীচে পৌঁছবে না। সুতরাং তোমরা তাদেরকে যেখানে পাও, হত্যা কর। এদের হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতে পুরস্কার রয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫৭, ৩৬১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সালাতের তুলনায় তোমাদের সালাতকে, তাদের সওমের তুলনায় তোমাদের সওমকে এবং তাদের ’আমলের তুলনায় তোমাদের ’আমলকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীর নিচে (অর্থাৎ অন্তরে) প্রবেশ করবে না। এরা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর শিকারী সেই তীরের আগা পরীক্ষা করে দেখতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পার্শ্বদেশে নযর করে; অথচ সেখানে কিছু দেখতে পায় না। শেষে ঐ ব্যক্তি কোন কিছু পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫৮, ৩৩৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। আমরা তখন কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম। এ পাঠের মধ্যে ’আরব অনারব সবই ছিল (যারা কুরআন পাঠে ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারছিল না) তারপরও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পড়ে যাও। প্রত্যেকেই ভাল পড়ছো। (মনে রাখবে) অচিরেই এমন কতক দল আসবে যারা ঠিক মতো কুরআন পাঠ করবে, যেভাবে তীর সোজা রাখা হয়। তারা (দুনিয়াতেই) তাড়াতাড়ি এর ফল চাইবে। আখিরাতের জন্য অপেক্ষা করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২০৬, সুনান আবূ দাঊদ ৮৩০, আহমাদ ১৫২৭৩, শু‘আবূল ঈমান, ২৩৯৯, সহীহাহ্ ২৫৯, সহীহ আল জামি‘ ১১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইয়াহূদীদের নিকট কুরআনের মর্যাদা

ত্বারিক ইবনু শিহাব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের এক লোক ’উমার (রাঃ)-কে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমাদের উপর যদি এ আয়াতঃ ’’আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নি’মাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম’’- (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৩) অবতীর্ণ হত, তাহলে সে দিনটিকে আমরা অবশ্যই ঈদের দিন হিসাবে গণ্য করতাম। ’উমার (রাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই জানি এ আয়াতটি কোন্ দিন অবতীর্ণ হয়েছিল। আরাফাহর দিন জুমু’আহর দিনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। হাদীসটি সুফ্ইয়ান (রহ.) মিসআর (রহ.) থেকে, মিস্আর কায়স থেকে কায়স (রহ.) তারিক থেকে শুনেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৬৮, ৪৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আল্লাহ তা’আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোনো কোনো জাতিকে উন্নতি দান করেন

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আমির ইবনু ওয়াসিলাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাফি’ ইবনু আবদুল হারিস (রাযিঃ) উসফান নামক স্থানে উমর (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। উমর (রাযিঃ) তাকে মক্কায় (রাজস্ব আদায়কারী) নিয়োগ করলেন। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি প্রাস্তরবাসীদের জন্য কাকে কাজে নিয়োগ করেছ? সে বলল- ইবনু আবযা-কে। উমর (রাযিঃ) বললেন, ইবনু আবযা কে? সে (নাফি’) বলল, আমাদের আযাদকৃত ক্রীতদাসের একজন। উমর (রাযিঃ) বললেন, তুমি একজন ক্রীতদাসকে তাদের জন্য তোমার স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ করেছ? নাফি বললেন- সে (ক্রীতদাসটি) মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাবের একজন ভাল কারী বা আলিম। আর সে ফারায়িয শাস্ত্রেও অভিজ্ঞ। তখন উমর (রাযিঃ) বললেনঃ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা এ কিতাব দ্বারা অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন আর অন্যদের অবনত করেন। অর্থাৎ যারা এ কিতাবের অনুসারী হবে তারা দুনিয়ায় মর্যাদাবান এবং আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। আর যারা একে অস্বীকার করবে তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছিত পরকালে জাহান্নামে পতিত হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৬৭, ইসলামীক সেন্টার ১৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে সফর করা নিষেধ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে সফর করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯৭,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ২৯৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৬১০, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৭৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৬২৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৯৪১০, আহমাদ ৪৫২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮২৪১, ইবনু হিববান ৪৭১৫, ইরওয়া ২৫৫৮, সহীহাহ্ ৬৮২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিভিন্ন সুরা ও আয়াতের ফজিলতসমূহ

সূরাহ ফাতিহার ফজিলত

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উবাই ইবনু কা’বকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি সালাতে কিভাবে কুরআন পড়ো? উত্তরে উবাই ইবনু কা’ব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সূরা আল ফাতিহাহ্ পড়ে শুনালেন। (তাঁর পড়া শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! এর মতো কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর বা ফুরকান-এ (কুরআনের অন্য কোন সূরাতেও) নাযিল হয়নি। এ সূরা হলো সাব্’উল মাসানী (পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত) ও মহান কুরআন। এটি আমাকেই দেয়া হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪২, সুনান আততিরমিযী ২৮৭৫, দারিমী ৩৪১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সা’ঈদ ইবনু মু’আল্লা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালাত আদায়রত ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন; কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাত আদায়রত ছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা কি বলেননি, ’’হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ ও রাসূল যখন তোমাদেরকে আহবান করেন তখন আল্লাহ্ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও।’’ (সূরাহ আল-আনফাল ৮/২৪)

তারপর তিনি বললেন, তোমার মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরাহ শিক্ষা দেব না? তখন তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন আমরা মাসজিদ থেকে বের হতে ইচ্ছা করলাম তখন আমি বললাম, আপনি তো বলেছেন মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরার কথা বলবেন। তিনি বললেন, সেটা হলঃ ’’আল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল ’আলামীন’’। এটা পুনঃ পুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত এবং কুরআন আজীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০৬,  ৪৪৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৮৫, ৮৬২, আহমাদ ১৭৮৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৩৯৭, সহীহ আল জামি‘ ১৪৫২, আবূ দাঊদ ১৪৫৮, নাসায়ী ৯১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৮৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা সফরে চলছিলাম। (পথিমধ্যে) অবতরণ করলাম। তখন একটি বালিকা এসে বলল, এখানকার গোত্রের সরদারকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষগণ বাড়িতে নেই। অতএব, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি ঝাড়-ফুঁক করতে পারেন? তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন ঐ বালিকাটির সঙ্গে গেলেন। যদিও আমরা ভাবিনি যে সে ঝাড়-ফুঁক জানে। এরপর সে ঝাড়-ফুঁক করল এবং গোত্রের সরদার সুস্থ হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশী হয়ে তাকে ত্রিশটি বক্রী দান করলেন এবং আমাদের সকলকে দুধ পান করালেন। ফিরে আসার পথে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ভালভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে জান (অথবা রাবীর সন্দেহ) তুমি কি ঝাড়-ফুঁক করতে পার?

সে উত্তর করল, না, আমি তো কেবল উম্মুল কিতাব- সূরাহ ফাতিহা দিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি। আমরা তখন বললাম, যতক্ষণ না আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌঁছে তাঁকে জিজ্ঞেস করি ততক্ষণ কেউ কিছু বলবে না। এরপর আমরা মদিনা্য় পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, সে কেমন করে জানল যে, তা (সূরাহ ফাতিহা) রোগ আরোগ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্যও একটা ভাগ রেখো। আবূ মা’মার .... আবূ সা’ঈদ থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০৭,  ২২৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরাহ আল-বাকারাহর ফজিলত

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বস্তুর একটি শীর্ষস্থান রয়েছে। কুরআনের শীর্ষস্থান হলো সূরা আল বাকারাহ্। প্রত্যেক বস্তুরই একটি ’সার’ রয়েছে। কুরআনের সার হলো মুফাস্সাল সূরাহগুলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৯, দারিমী ৩৪২০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সূরাহ আল-বাকারাহর শেষ দুটি আয়াতের ফজিলত

আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০০৯, ৫০৪০, ৪০০৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮১, সুনান আবূ দাউদ ১২৬৩, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

(১) সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত প্রত্যেক রাতে পাঠ করার বিষয়টি হলো: সুখময় জীবন লাভ এবং সমস্ত প্রকারের অমঙ্গল থেকে সুরক্ষিত হওয়ার উপাদান।

(২) সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত প্রত্যেক রাতে পাঠ করলে মহান আল্লাহর সাথে মুসলিম ব্যক্তির ভরসা সঠিক পন্থায় দৃঢ় হয়।

(৩) মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই দুইটি আয়াত মুখস্থ করা উচিত। উক্ত আয়াত দুটি হলো এই যে, মহান আল্লাহ  বলেছেন:

“আমানার রাসুলু বিমা উংঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহ। লা-নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহ। ওয়া কালু সামি’না ওয়া আত্বা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির। লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন্না সীনা আও আখত্ব’না রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরাং কামা হামালতাহু আলাল্লাজীনা মিং কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়া’ফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন”।

অনুবাদঃ “আল্লাহর রাসূল তদীয় প্রতিপালকের পক্ষ হতে তৎপ্রতি যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম জাতি। তারা সবাই সঠিক পন্থায় ঈমান স্থাপন করেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। তারা সবাই বলে: আমরা মুসলিম জাতি আল্লাহর রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করি না। কেননা আমরা তো সকল রাসূলগণের প্রতি সঠিক পন্থায় বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তারা আরো বলে: আমরা আমাদের প্রতিপালকের বাণী শুনেছি এবং তা সাদরে বরণ করেছি। সুতরাং হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমাদেরকে আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতেই হবে। আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণ করেন না। সুতরাং সে ব্যক্তি যে সমস্ত সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, সে সমস্ত সৎকর্ম তার কল্যাণের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। এবং যে সমস্ত অপকর্ম সম্পাদন করেছে, সে সমস্ত অপকর্ম তার অমঙ্গলের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। তারা আরো বলে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যায় অথবা ভুল করি, তাহলে আপনি আমাদেরকে উভয় বিষয়ের শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা প্রদান করুন। হে আমাদের প্রতিপালক!  আপনি আমাদের উপর এমন বোঝার ভার অর্পণ করবেন না, যেমন বোঝার ভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের উপর এমন গুরুভার অর্পণ করবেন না, যে গুরুভার বহন করার শক্তি আমাদের নেই। এবং আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা   করুন, আমাদের প্রতি কৃপা করুন। আপনি আমাদের সহায়ক। অতএব আপনি অমুসলিম সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় আমাদেরকে সাহায্য করুন”। (সূরা আল্ বাকারা, আয়াত নং ২৮৫ হতে ২৮৬ পর্যন্ত)।

সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন

হাদিসঃ

(১) হাসান ইবনুর রাবী’ ও আহমাদ ইবনু জাওওয়াস আল হানাফী (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জিবরীল আমীন (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসে ছিলেন। এ সময় উপরের দিক হতে দরজা খোলার শব্দ [জিবরীল (আঃ)] শুনলেন। তিনি উপরের দিকে মাথা উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এ দরজাটি আজ খোলা হলো। এর আগে আর কখনো তা খোলা হয়নি। (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ) এ দরজা দিয়ে একজন মালাক (ফেরেশতা) নামলেন। তখন জিবরীল (আঃ) বললেন, যে মালাক (আজ) জমিনে নামলেন, আজকে ছাড়া আর কখনো তিনি জমিনে নামেননি। (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) তিনি সালাম করলেন। তারপর আমাকে বললেন, আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। এটা আপনার আগে আর কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (তাহলো) সূরা আল ফাতিহাহ্ ও সূরা আল বাকারাহ্’র শেষাংশ। আপনি এ দু’টি সূরার যে কোন বাক্যই পাঠ করুন না কেন নিশ্চয়ই আপনাকে তা দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৬, সুনান আননাসায়ী ৯১২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২২৫৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৫৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫০, ইসলামীক সেন্টার ১৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(২) বাদরী সাহাবী আবূ মাস‘উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরাহ বাকারার শেষে এমন দু’টি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হাক রয়েছে, কমপক্ষে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। ‘আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, পরে আমি আবূ মাস‘উদের সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সেটা আমার নিকট বর্ণনা করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০০৮, ৫০০৮, ৫০০৯, ৫০৪০, ৫০৫১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৩) নুমান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আসমান-যামীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হতে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দু’টি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা আল-বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শাইতান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪৫, রাওযুন নায়ীর (৮৮৬), তা’লীকুর রাগীব ২/২১৯, আহমাদ ১৮৪১৪, দারিমী ৩৪৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩০৩১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আয়াতুল কুরসীর ফজিলত

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে এবং ভোর পর্যন্ত শায়ত্বন আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী শায়ত্বন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১০, ২৩১১, ৩২৭৫,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪০৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬১০,  তা’লীকুর রাগীব ২/২১২, আধুনিক প্রকাশনী ৪৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূল মুনযির! তুমি কি বলতে পারো তোমার জানা আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই ভাল জানেন। (এরপর) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, হে আবূল মুনযির! তুমি বলতে পারো কি তোমার জানা আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি শ্রেষ্ঠতর? এবার আমি বললাম, “আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়ূম।’’ উবাই বলেন, এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার বুকে হাত মেরে বললেন, হে আবূল মুনযির! জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তোমার জন্য মুবারক হোক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১০, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শু‘আবূল ঈমান ২১৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  ইমাম নাসাঈ (রহ.) আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে: হাদিস: ৬৪৬৪)।

(ঘ)  সূরা আল-বাকারাহ্, ২৫৫ নং আয়াত। যে ব্যক্তি সকালে তা বলবে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি বিকালে তা বলবে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। হাদীসটি হাকিম সংকলন করেছেন, ১/৫৬২। আর শাইখ আলবানী একে সহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীবে সহীহ বলেছেন ১/২৭৩। আর তিনি একে নাসাঈ, তাবারানীর দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তাবারানীর সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।

‘আয়াতুল কুরসি’ এর ফযিলত প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বিভিন্ন গ্রন্থে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, তিনি বলেন, ‘সত্যতার সাথে যদি তুমি আয়াতুল কুরসী সে সময় পড় তাহলে তাদের কর্মকান্ড বাতিল হয়ে যায়, কারণ তাওহীদ শয়তানকে তাড়ায়। মানুষ যদি শয়তানী চক্রান্ত স্থানে সত্যতার সাথে ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়ে, তাহলে তা (যাদু-মন্ত্র) নষ্ট করে দেয়। (কিতাব: ‘আল ফুরক্বান বাইনা আওলিয়াইর রহমান ওয়া আওলিয়াইশ শাইত্বান’)।

(ঙ) মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল-হুমাইদী হতে, বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীসঃ “আসমান-যামীনের মধ্যে আয়াতুল কুরসীর চাইতে মহান আর কোন কিছুই আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেননি, এর ব্যাখায় সুফিয়ান ইবনু উয়াইনাহ বলেন, আয়াতুল কুরসী হল আল্লাহ তা’আলার কালাম, আর আল্লাহ তা’আলার কালাম তো নিঃসন্দেহে আসমান-যামীনের সকল সৃষ্টির চাইতে মহান। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেসব ঘরে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘর হতে শয়তান ভেগে যায়

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না। (এগুলোতে কুরআন তিলাওয়াত করো) কারণ যেসব ঘরে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘর হতে শয়তান ভেগে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮০, সুনান আততিরমিযী ২৮৭৭, আহমাদ ৭৮২১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার দু’ হাজার বছর আগে আল্লাহ তা’আলা একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাব হতে পরবর্তীতে দু’টি আয়াত নাযিল করেছেন যা দ্বারা সূরা আল বাকারাহ্ শেষ করেছেন। কোন ঘরে তা তিন রাত পড়া হবে, অথচ এরপরও এ ঘরের কাছে শয়তান যাবে, এমনটা হতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪৫, সুনান আততিরমিযী ২৮৮২, আহমাদ ১৮৪১৪, দারিমী ৩৪৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩০৩১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরা আল বাকারাহ্ ও আ-লি ইমরান এর ফজিলত

(ক) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়। কারণ কুরআন পাঠ কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। তোমরা দু’ উজ্জ্বল সূরা আল বাকারাহ্ ও আ-লি ’ইমরান পড়বে। কেননা কিয়ামতের দিন এ সূরা দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি সামিয়ানা অথবা দু’টি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে। এ দু’ সূরার পাঠকদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। বিশেষ করে তোমরা সূরা আল বাকারাহ্ পড়বে। কারণ সূরা আল বাকারাহ্ পড়া বারাকাত আর তা না পড়া আক্ষেপ। এ সূরা দু’টি পড়তে পারবে না অলস বেকুবরা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৪, শু‘আবূল ঈমান ১৮২৭, সহীহ ইবনু হিববান ১১৬, সহীহাহ্ ৩৯৯২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) নাওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরআন ও কুরআন পাঠকদের যারা কুরআন অনুযায়ী ’আমল করত (তাদের) কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি কালো ছায়ারূপে থাকবে সূরা আল বাকারাহ্ ও সূরা আ-লি ’ইমরান। এদের মাঝখানে থাকবে দীপ্তি। অথবা থাকবে প্রসারিত- পালক বিশিষ্ট পাখির দু’টি ঝাঁক। তারা আল্লাহর নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৫, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৩, আহমাদ ১৭৬৩৭, শু‘আবূল ঈমান ২১৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মাকহূল (রহঃ) বলেছেন, যে লোক জুমার দিনে সূরা আ-লি ‘ইমরান পড়বে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য রাত পর্যন্ত সালাত বা দু’আ করতে থাকবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭২, মাওকূফ সহীহ : দারিমী ৩৪৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরাহ কাহ্ফের ফজিলত

(ক) বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ’সূরাহ কাহ্ফ’ তিলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার উপর ছায়া দান করল। মেঘখন্ড ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। সকাল বেলা যখন লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস্সাকিনা (প্রশান্তি), যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১১, ৩৬১৪,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৫, শু‘আবূল ঈমান ২২১৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩২৩, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৬, আহমাদ ২১৭১২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৩৯১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১০২৮, সহীহাহ্ ৫৮২, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭২, সহীহ আল জামি‘ ৬২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরাহ আল্ ফাত্হর ফজিলত

আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে রাত্রিকালে চলছিলেন এবং ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তখন ’উমার (রাঃ) তাঁর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। এমন সময় ’উমার (রাঃ) নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! তুমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তিনবার প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাওনি।

’উমার (রাঃ) বললেন, এরপর আমি আমার উটকে দ্রুত হাঁকিয়ে লোকেদের অগ্রভাগে চলে গেলাম এবং আমি শঙ্কিত হলাম, না জানি আমার সম্পর্কে কুরআন অবতীর্ণ হয় নাকি। কিছুক্ষণ পর কেউ আমাকে ডাকছে, এ রকম আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি মনে আশংকা করলাম যে, হয়তো আমার ব্যাপারে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে গেলাম এবং তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরাহ নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সকল স্থান হতে উত্তম। এরপর তিনি পাঠ করলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنً ’’নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১২, ৪১৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরাহ ইখলাস এর ফজিলত

(ক) সূরাহ ইখলাস হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমানঃ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে ’কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারণ করছিল। পরদিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ব্যাপারে বললেন। যেন ঐ ব্যক্তি তাকে কম মনে করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন। এ সূরাহ হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৩, ৫০১৪, ৬৬৪৩, ৭৩৭৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সূরাহ ইখ্লাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগঃ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা সাধ্যাতীত মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এটা পারবে? তখন তিনি বললেন, ’’কুল হুআল্লাহ আহাদ’’ অর্থাৎ সূরাহ ইখ্লাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৯৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমানঃ

আবূ দারদা (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়া যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১১, দারিমী ৩৪৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) সুরা ইখলাস তিলাওয়াকারীকে  আল্লাহ তাআলা ভালবাসেনঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের সালাত আদায় করাত এবং ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ দিয়ে সালাত শেষ করত। তারা মদীনায় ফেরার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো কি কারণে সে তা করে। সে বলল, এর কারণ এতে আল্লাহর গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পড়তে ভালবাসি। তার উত্তর শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তা’আলাও তাকে ভালবাসেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৭৩৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৩, ইবনু হিববান ৭৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৩, সুনান আননাসায়ী ৯৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) সুরা ইখলাস তিলাওয়াকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ সূরাকে ভালবাসি। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার এ সূরার প্রতি ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩০, সুনান আততিরমিযী ২৯০১, দারিমী ৩৪০৫, সহীহ ইবনু হিববান ৭৯২, আহমাদ ১২৪৩২, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ পড়তে শুনে বললেন, সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। আমি শুনে বললাম, কি সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে (হে আল্লাহর রসূল) উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘জান্নাত’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬০, সুনান আততিরমিযী ২৮৯৭, সুনান আননাসায়ী ৯৯৪, আহমাদ ১০৯১৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) সূরা ইখলাস তিলাওয়াকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়ঃ

আবুল হাসান মুহাজির রাহ. বলেন, জনৈক সাহাবী বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলেন। (একদিন তাঁর কাছে এমনভাবে বসা ছিলেন যে,) তার হাঁটুদু’টি নবীজীর হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে লেগে ছিল।

এ অবস্থায় এক লোককে শুনলেন, সূরা কাফিরূন তিলাওয়াত করছে। তা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শিরক থেকে পবিত্র হয়ে গেছে।

আরেক লোককে শুনলেন, সূরা ইখলাছ তিলাওয়াত করছে। তখন তিনি বললেন, তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে।  (সুনানে দারেমী, হাদীস ৪৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩২০৬; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ৭৯৭৪; ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী, হাদীস ১০৫৩)।

(ছ) জান্নাতে যার জন্য অট্টালিকা নির্মিত হবেঃ

মুআয ইবনে আনাস জুহানী রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

যে ব্যক্তি সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ দশবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে  একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।

এ কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদের অধিকারী হয়ে যাব।

(অর্থাৎ অধিক হারে এই সূরা পাঠ করব। ফলে আল্লাহ আমাদের অনেক প্রাসাদ দান করবেন।)

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার দান আরো প্রশস্ত, আরো উৎকৃষ্ঠ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৬১০, সিলসিলা ছহীহা, হা/৫৮৯; ছহীহুল জামে, হা/৬৪৭২)।

সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব রাহ. বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

যে ব্যক্তি সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ  দশবার পড়বে তার জন্য জান্নাতে অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। যে বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি অট্টালিকা তৈরি করা হবে। আর যে ত্রিশবার পড়বে তার জন্য তিনটি অট্টালিকা প্রস্তুত করা হবে।

নবীজীর এই কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক অট্টালিকার মালিক হয়ে যাব।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার দান এর চেয়ে আরো প্রশস্ত। (সুনানে দারেমী, হাদীস ৩৪৭২; ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী, হাদীস ১০৫৯)।

উল্লেখ্য যে, সূরা ইখলাছ ৫০, ১০০, কিংবা ২০০ বার পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে যে সকল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোই যঈফ’। (তিরমিযী, হা/২৮৯৮; সিলসিলা যঈফা, হা/৩০০; মিশকাত, হা/২১৫৮-৫৯)।

মু‘আব্বিযাত (সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস)-এর ফজিলত

(ক) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যখনই নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হতেন তখনই তিনি ’সূরায়ে মু’আব্বিযাত’ পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন তাঁর রোগ কঠিন হয়ে গেল, তখন বারাকাত অর্জনের জন্য আমি এই সূরাহ পাঠ করে তাঁর হাত দিয়ে শরীর মাসহ (মাসেহ) করিয়ে দিতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৬, ৪৪৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৭,  ৫৭৪৮, ৬৩১৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩২, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৫৬, সুনান আততিরমিযী ৩৪০২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫০৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৪৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৩০, সহীহাহ্ ৩১০৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজ রাতে এমন কিছু আশ্চর্যজনক আয়াত নাযিল হয়েছে আগে এ রকম কোন আয়াত (নাযিল) হতে দেখা যায়নি। (আর তা হলো) “কুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক” ও “কুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্না-স”। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৫, সুনান আননাসায়ী ৯৫৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৮, সুনান আততিরমিযী ২৯০২, সহীহ আল জামি‘ ১৪৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুহফাহ্ ও আব্ওয়া (নামক স্থানের) মধ্যবর্তী জায়গায় চলছিলাম। এ সময় প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকার আমাদেরকে ঘিরে ফেলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা “কুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক” ও সূরা “কুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্না-স” পড়ে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে ’উকবাহ্! এ দু’টি সূরা দ্বারা আল্লাহর আশ্রয় চাও। কারণ এ দু’ সূরার মতো অন্য কোন সূরা দিয়ে কোন প্রার্থনাকারীই আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬২, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫০, শু‘আবূল ঈমান ২৩২৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও সুরা ফালাক এক সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিন বার করে পাঠ করার ফজিলত

আবদুল্লাহ ইবনু খুবায়ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার ঝড়-বৃষ্টি ও ঘনঘোর অন্ধকারময় রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খোঁজে বের হলাম এবং তাঁকে খুঁজে পেলাম। (তিনি আমাদেরকে দেখে) তখন বললেন, পড়ো! আমি বললাম, কি পড়বো (হে আল্লাহর রসূল!)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ, ক্বুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও ক্বুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্না-স পড়বে। এ সূরাহগুলো সকল বিপদাপদের মুকাবিলায় তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬৩, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৮২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৭৫, সুনান আননাসায়ী ৫৪২৮, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৪৯, সহীহ আল জামি‘ ৪৪০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুরা ফালাক এর ফজিলত

উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! (বিপদাপদে পড়লে) আমি কি ‘সূরা হূদ’ পড়ব, না ‘সূরা ইউসুফ’? তিনি উত্তরে বললেন, এ ক্ষেত্রে তুমি আল্লাহর কাছে ক্বুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক-এর চেয়ে উত্তম কোন সূরা পড়তে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬৪, সুনান আননাসায়ী ৯৫৩, আহমাদ ১৭৪৫৫, ইবনু হিববান ৭৯৫, সহীহ আল জামি‘ ৫২১৭, সহীহাহ্ ৩৪৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুরা মূলক এর ফজিলত

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। সে সূরাটি হচ্ছে, ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৫৩, সুনানে আবূ দাঊদ ১৪০০, সুনান আততিরমিযী ২৮৯১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৮৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৮৭, শু‘আবূল ঈমান ২৫০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোবার পর) যে পর্যন্ত সূরা ’আলিফ লা-ল মীম্ তানযীল’ ও সূরা ’তাবা-রকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক’ পড়ে শেষ না করতেন ঘুমাতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৫৫, সুনান আততিরমিযী ২৮৯২, আহমাদ ১৪৬৫৯, দারিমী ৩৪১১, মু‘জামুল আওসাত ১৪৮৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৫৪৫, শু‘আবূল ঈমান ২২২৮, সহীহাহ্ ৫৮৫, সহীহ আল জামি‘ ৪৮৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুরা কাফিরুন এর ফজিলত

ফারওয়াহ্ ইবনু নাওফাল (রহঃ) তার পিতা নাওফাল হতে বর্ণনা করেছেন, একদিন নাওফাল (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এমন একটি বিষয় আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি ঘুমাতে গিয়ে পড়তে পারি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা “কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন” পড়ো। কেননা এ সূরা শির্ক হতে পবিত্র। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬১, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৫৫, সুনান আততিরমিযী ৩৪০৩, সহীহ ইবনু হিববান ৫৫২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৫, সহীহ আল জামি‘ ১১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসমে আজম এর ফজিলত

(ক) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে এই বলে দু‘আ করলোঃ

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, ইন্নী আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ, সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই”।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৮, সুনান আননাসায়ী ১২৯৯, ১৩০০, আহমাদ ১১৭৯৫, ১২২০০, ১৩১৫৮, ১৩৩৮৭, রাওদুন নাদীর ১৩৩, আস-সহীহ ১৩৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ’হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি এক ও অনন্য। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্মও দেননি। কারো থেকে জন্মও নন। যার কোন সমকক্ষ নেই।’ তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে তার ইস্মে আ’যম বা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামে ডাকল। এ নামে ডেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে তা দান করেন এবং কেউ ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৮৯, ২২৯০,  সুনান আবূ দাঊদ ১৪৯৩, সুনান আততিরমিযী ৩৪৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৭, আহমাদ ২২৯১৫, ইবনু হিব্বান ৮৯১, শু‘আবূল ঈমান ২৩৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর ইস্মে আ’যম এই দু’ আয়াতের মধ্যে রয়েছে, ওয়া ইলা-হুকুম ইলা-হূ ওয়া-হিদ, লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়ার রহমা-নুর রহীম।

এছাড়াও সূরা আ-লি ’ইমরান-এর শুরুতে আলিফ লা-ম মী-ম আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯১, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৯৬, সুনান আততিরমিযী ৩৪৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩৬৩, দারিমী ৩৪৩২, মু‘জামুল কাবীর ৪৪০, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪২, সহীহ আল জামি ৯৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দুআ ইউনুস এর ফজিলত

সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু’আ করেছিলেন তা হলোঃ

“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন”

“তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু’আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তার দু’আ কবুল করেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯২, আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী (হাঃ ২২৯২, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল ঈমান ৬১১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি ৩৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

 

লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

(MSHRC)

------------------------------

Please Share On 

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...