বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সহিহ হাদিস ভিত্তিক
রাসুল সাঃ এর মুজিজাসমূহ
(মুজিজা, কারামত ও ইসতিদরাজ বা যাদু)
মুজিযা (المعجزة)
শব্দটি আরবী ‘ইজায’ (إعجاز) শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ
‘অক্ষম করা’। মুজিযা অর্থ ‘অক্ষমকারী অলৌকিক নিদর্শন’’। নবীগণ তাঁদের নুবুওয়াতের দাবি
প্রমাণ করতে যে সকল অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন করেন সেগুলোকে ‘মুজিযা’ বলা হয়। (মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৩০; জুরজানী, আত-তা’রীফাত,
পৃ. ২৮২)।
কুরআন-হাদীসে মুজিযা শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি,
মুজিযা বুঝাতে ‘আয়াত’ (الآية)
অর্থাৎ চিহ্ন বা নিদর্শন বলা হয়েছে। পরবর্তী যুগে ‘মুজিযা’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। নতুন
পরিভাষা ব্যবহারে কোনো আপত্তি নেই; তবে কুরআন-হাদীসের ‘‘মাসনূন’’ পরিভাষা ব্যবহার করা
নিঃসন্দেহে উত্তম। সম্ভবত এজন্যই ‘মুজিযা’ বুঝাতে ইমাম আযম ‘আয়াত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছায় মুজিযা প্রদর্শন
করেছেন।
আল্লাহ বলেন:
‘‘তারা (কাফিরগণ) বলত: ‘তোমরা (নবীগণ) তো আমাদেরই
মত মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদত করত তোমরা তাদের ইবাদত থেকে আমাদেরকে বিরত
রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোনো অকাট্য ক্ষমতা (মুজিযা) উপস্থিত কর। তাদের
রাসূলগণ তাদেরকে বলতেন: সত্য বটে আমরা তোমাদের মত মানুষ বৈ কিছুই নই, কিন্তু আল্লাহ
তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের
নিকট ক্ষমতা (মুজিযা) উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। মুমিনগণের আল্লাহরই উপর নির্ভর করা
উচিত।’’ (সূরা (১৪) ইবরাহীম: ১০-১১ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা
(৬) আন‘আম: ৯১ আয়াত; সূরা (২১) আম্বিয়া: ৩; সূরা (২৩) মুমিনূন: ২৪, ৩৩; সূরা (২৬) শু‘আরা:
১৫৪, ১৫৬; সূরা (৩৬) ইয়াসীন: ১৫ আয়াত)।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:
‘‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোনো নিদর্শন (মুজিযা)
উপস্থিত করা কোনো রাসূলের কাজ নয়।’’ (সূরা (১৩) রা’দ:
৩৮ আয়াত, সূরা (৪০) গাফির/মুমিন: ৭৮ আয়াত)।
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা এটাই বুঝা যাচ্ছে
যে, নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছায় ও নির্দেশে মুজিযা প্রদর্শন করেছেন। কুরআন কারীমে নবীগণের
অনেক মুজিযার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নূহ (আঃ)-এর নৌকার মুজিযা, ইবরাহীম (আঃ)-এর অগ্নিকুন্ডে
নিরাপদ থাকার মুজিযা, মূসা (আঃ)-এর লাঠি ও অন্যান্য মুজিযা, ঈসা (আঃ)-এর মৃতকে জীবিত
করা ও অন্যান্য মুজিযা, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর
চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করা, ইসরা, মিরাজ ও অন্যান্য মুজিযা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ
ছাড়া বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে। এগুলি বিশ্বাস করা মুমিনের ঈমানী
দায়িত্ব। এখানে সহিহ হাদিসে বর্নিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মুজিজাসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
নুবুওয়্যাতের মুজিজাসমূহ-১
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বক্ষ
বিদীর্ণ করা
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (বাল্যকালে দুধ-মা
হালীমার কাছে থাকাকালীন) একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সমবয়সী বালকদের সাথে খেলাধুলা করছিলেন।
এমন সময় জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে আসলেন এবং তাঁকে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেললেন।
অতঃপর তার বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা হতে একখণ্ড বের করে বললেন, তোমার দেহের ভিতরে এটা
শয়তানের অংশ। তারপর তাকে একটি স্বর্ণ-পাত্রে রেখে জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর
উক্ত পিণ্ডটিকে যথাস্থানে রেখে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। এ ঘটনা দেখে খেলার সঙ্গী বালকেরা
দৌড়ে এসে তার দুধ-মায়ের কাছে এসে বললেন, মুহাম্মাদ-কে হত্যা করা হয়েছে। এ সংবাদ
শুনে তারা ঘটনাস্থলে এসে তাকে সুস্থ পেল, তবে তার চেহারার বর্ণ খুবই বিষন্ন। বর্ণনাকারী
আনাস (রাঃ) বলেন, আমি প্রায়শ রাসূল (সা.) -এর বুকের সেলাইটি দেখতে পেতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২, সুনানে আবূ দাউদ ৪৩২৯, সুনানে আততিরমিযী ২২৪৯, মুসান্নাফ
আবদুর রাযযাক ২০৮১৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৫, মুসনাদে আহমাদ ১২৫২৮, আবূ ইয়া'লা
৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৩৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩২১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল (ছাঃ)-এর মোট কতবার বক্ষবিদারণ হয়েছিল?
উত্তর: দু’বার রাসূল (ছাঃ)-এর বক্ষবিদারণের
ঘটনা ঘটে।
(১) দুধমা হালীমার নিকটে ৪ বা ৫ বছর বয়সে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২, সুনানে আবূ দাউদ ৪৩২৯, সুনানে আততিরমিযী ২২৪৯,
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮১৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৫, মুসনাদে আহমাদ ১২৫২৮,
আবূ ইয়া'লা ৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৩৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০, ইসলামিক সেন্টারঃ
৩২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) হিজরতের পূর্বে মেরাজে গমনকালে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৬৪, ৫৮৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩৪৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৩, সুনান
আততিরমিযী ৩৩৪৬, সুনান আননাসায়ী ৪৪৮, সহীহুল জামি' ৩০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৮, আস্
সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৩১৩, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৫৯৪২, আস্ সুনানুস
সুগরা ২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
এছাড়া
আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে, যেগুলির সূত্র দুর্বল। (আকরাম
যিয়া উমরী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১০৩)।
নুবুওয়্যাতের মুজিজাসমূহ-২
নবি সাঃকে পাথর সালাম করতো
জাবির
ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি মক্কার
ঐ পাথরকে এখনো চিনি, যে আমার নুবুওয়্যাত লাভের পূর্বে আমাকে সালাম করত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৭, সহীহুল জামি ২৪৮৭,
সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৬৭০, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩১৭০৫, মুসনাদে আহমাদ ২০৯৩১,
দারিমী ২০, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৮৭৪, আল মু'জামুস সগীর লিত্ব ত্ববারানী
১৬৭, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২০১২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
নুবুওয়্যাতের মুজিজাসমূহ-৩
চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করা-ক
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মক্কার
লোকেরা একটি নিদর্শন (মু’জিযাহ্) দেখতে পান, যখন তিনি (সা.) চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে
দেখালেন। এমনকি তারা উভয় খণ্ডের মাঝখানে হেরা পর্বত দেখতে পেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৮৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯৬৯-৬৯৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮০২, মুসনাদে
আহমাদ ১৩১৭৭, আবূ ইয়া'লা ৩১১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮১৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৮৭৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
নুবুওয়্যাতের মুজিজাসমূহ-৪
চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করা-খ
ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়। তার একখণ্ড পাহাড়ের উপরের দিকে
এবং অপর খণ্ড পাহাড়ের নিম্নদিকে ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৮৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯৬৪-৬৯৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮০০,
তিরমিযী ৩২৮৭, মুসনাদে বাযযার ১৯৭১, মুসনাদে আহমাদ ১৩৯৪৮, আবূ ইয়া'লা ২৯২৯, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৬৪৯৬, আস সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১১৫৫২, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী
১৫৩৮, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৩৭৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮১৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৮৬৯)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
নুবুওয়্যাতের মুজিজাসমূহ-৫
আবূ জাহল নবি সাঃ এর দিকে অগ্রসর হতেই আগুনের পরিখা, ভয়ঙ্কর দৃশ্য
ও ডানাবিশিষ্ট দল দেখতে পেল
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন আবূ জাহল (মক্কার কাফির কুরায়শদেরকে) বলল, তোমাদের সামনে মুহাম্মাদ কি তার চেহারা
মাটিতে লাগায়? (অর্থাৎ সে সালাত আদায় করে?) বলা হলো, হ্যাঁ।
তখন আবূ জাহল বলল, লাত ও ’উযযার শপথ! আমি যদি
তাকে এরূপ করতে দেখি, তাহলে আমি (পা দিয়ে) তার ঘাড় মাড়িয়ে দেব। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ
(সা.) -এর কাছে আসলো, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তখন আবূ জাহল নবী (সা.)- এর দিকে
অগ্রগামী হচ্ছিল, তৎক্ষণাৎ দেখা গেল, সে তড়িৎবেগে পিছনের দিকে হটছে এবং উভয় হাত দ্বারা
নিজেকে আত্মরক্ষা করে চলছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি
দেখছি আমার ও মুহাম্মাদ-এর মধ্যস্থলে আগুনের পরিখা ও ভয়ঙ্কর দৃশ্য এবং ডানাবিশিষ্ট
দল। উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি সে (আবূ জাহল) আমার কাছাকাছি
হত, তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার এক এক অঙ্গ ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৯৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৯৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৮১৭, আবূ ইয়া'লা ৬২০৭, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৬৫৭১, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নুবুওয়্যাতের মুজিজাসমূহ-৬
যিমাদ সুরা ফাতিহার বাক্যগুলো শুনেই ইসলাম কবুল করলেন
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“আযদ শানুয়াহ্” গোত্রের “যিমাদ” নামে এক লোক একদিন মক্কায় আগমন করল। যিমাদ মন্ত্র
দ্বারা জিন-ভূতের ঝাড়-ফুঁক করত। সে মক্কার অজ্ঞ নির্বোধ লোকেদের কাছে শুনতে পেল যে,
মুহাম্মাদ পাগল হয়ে গেছে। এটা শুনে সে বলল, যদি আমি ঐ লোককে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)
-কে] দেখতাম তাহলে চিকিৎসা করতাম। হয়তো আমার চিকিৎসায় আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাতে
সুস্থ করে দিতে পারেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ’যিমাদ’ রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে
এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি জিন-ভূতের চিকিৎসা করব। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.)
পাঠ করলেন, (অর্থাৎ) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তারই প্রশংসা করি এবং তাঁর সাহায্য
কামনা করি। তিনি যাকে পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউই পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে
পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউই সোজা পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা
ছাড়া ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য কেউ নেই এবং তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল (সা.)।
অতঃপর যিমাদ বলল, আপনি উক্ত বাক্যগুলো আমাকে
আবার শুনান। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাক্যগুলো তিনবার পাঠ করলেন। এতদশ্রবণে যিমাদ বলল,
আমি গণকের কথাও শুনেছি, জাদুকরের কথাও শুনেছি এবং কবিদের কথাও শুনেছি। কিন্তু আপনার
এ বাক্যগুলোর মতো এমন বাক্য আমি আর কখনো শুনিনি। মূলত আপনার প্রতিটি বাক্য অথৈ সাগরের
তলদেশ পর্যন্ত পৌছে গেছে। অতএব আপনি আপনার হাতখানা প্রশস্ত করুন। আমি আপনার হাতে ইসালামের
বায়আত করব। বর্ণনাকারী বলেন, তখনই সে রাসূল (সা.) -এর হাতে বায়’আত করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫৬৮, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী
৬০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরোহীসহ ঘোড়া তার পেট পর্যন্ত মাটিতে দেবে গেল, শক্ত মাটিতে
বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা আবূ বকর (রাঃ) আমার পিতার কাছে আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি আমার পিতার কাছ হতে
একটি হাওদা কিনলেন এবং আমার পিতাকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সঙ্গে হাওদাটি বয়ে
নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বয়ে তাঁর সঙ্গে চললাম। আমার পিতাও ওটার মূল্য নেয়ার জন্য
আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাঁকে বললেন, হে আবূ বকর! দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন,
আপনারা কী করেছিলেন যে রাতে আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথী ছিলেন?
তিনি বললেন, হাঁ। অবশ্যই আমরা সারা রাত পথ চলে পরদিন দিন দুপুর অবধি চললাম। যখন রাস্তাঘাট
লোকশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোন মানুষের আনাগোনা ছিল না।
হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়লো,
যার ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে নামলাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে
সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ওখানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় থাকলাম। তিনি শুয়ে
পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, একজন মেষ
রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে
চায়।
আমি বললাম, হে যুবক! তুমি কার রাখাল? সে মদিনার
কি মক্কার এক লোকের নাম বলল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মেষপালে কি দুধেল মেষ আছে? সে
বলল, হাঁ আছে। আমি বললাম, তুমি কি দুহে দিবে? সে বলল, হাঁ। অতঃপর সে একটি বক্রী ধরে
নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধূলা-বালি, পশম ও ময়লা হতে পরিষ্কার করে নাও। রাবী আবূ
ইসহাক (রহ.) বলেন, আমি বারাআ (রাঃ)-কে দেখলাম এক হাত অন্য হাতের উপর রেখে ঝাড়ছেন। অতঃপর
ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করল। আমার সঙ্গেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল। আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূর পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়েছিলাম।
আমি দুধ নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। তাঁকে জাগানো ভাল
মনে করলাম না।
কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে
হাযির হলাম। আমি দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলেছিলাম তাতে দুধের নীচ পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে
গেল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট
হয়ে গেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন কি আমাদের যাত্রা
শুরুর সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের সফর। ততক্ষণে সূর্য
পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবনু মালিক আমাদের পিছন নিয়েছিল।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অনুসরণে
কে যেন আসছে। তিনি বললেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিরুদ্ধে দু’আ করলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ
ঘোড়া তার পেট পর্যন্ত মাটিতে দেবে গেল, শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এই শব্দটি সম্পর্কে
সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন আমার ধারণা এ রকম শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বলল, আমার বিশ্বাস
আপনারা আমার বিরুদ্ধে দু’আ করেছেন। আমার জন্য আপনারা দু’আ করে দিন।
আল্লাহর কসম আপনাদের খোঁজকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে
নিয়ে যাব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু’আ করলেন। সে বেঁচে গেল।
ফিরে যাবার পথে যার সঙ্গে তার দেখা হত, সে বলত আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে
দিয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, সে আমাদের সঙ্গে করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬১৫, ২৪৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৮৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আল্লাহর উপর ভরসা করায় আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) ও রাসুল সাঃ মুশরিকদের নজর
থেকে রক্ষা পেলেন
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ বকর
সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, (হিজরতের সময়) আমি আমাদের মাথার উপরে মুশরিকদের পা দেখতে পেলাম,
যখন আমরা গুহায় ছিলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি তাদের কেউ স্বীয় পায়ের
দিকে তাকায়, তবে সে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আবূ বকর!
তুমি এমন দুই লোক সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ কর, যাদের তৃতীয়জন হলেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩৬৫৩, ৪৬৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬০৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৮১,
মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ২, আবূ ইয়া'লা ৬৭, তিরমিযী ৩০৯৬, সহীহুল জামি ৭৮১৪, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ ৭, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ২, মুসনাদে বাযযার ১/৯৬, মুসনাদে আহমাদ
১১, আবূ ইয়া'লা ৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬২৭৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
খালি মশক পানিতে পূর্ন হলো
‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক
সফরে তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। সারা রাত পথ চলার পর
যখন ভোর কাছাকাছি হল, তখন বিশ্রাম নেয়ার জন্য থেমে গেলেন এবং গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন।
অবশেষে সূর্য উদিত হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল, [ইমরান (রাঃ) বলেন] যিনি সর্বপ্রথম ঘুম হতে
জাগলেন তিনি হলেন আবূ বকর (রাঃ)। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে
জাগ্রত না হলে তাঁকে জাগানো হত না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) জাগলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর শিয়রের
নিকট গিয়ে বসে উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে লাগলেন। শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন এবং অন্যত্র চলে গিয়ে অবতরণ করে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায়
করলেন। তখন এক ব্যক্তি আমাদের সাথে সালাত আদায় না করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে বললেন, হে অমুক! আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করতে কিসে
বাধা দিল? লোকটি বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর সে সালাত আদায় করল। (ইমরান (রাঃ)
বলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন
এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এই অবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ উষ্ট্রে আরোহী এক
মহিলা আমাদের নযরে পড়ল। সে পানি ভর্তি দু’টি মশকের মাঝখানে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। আমরা
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায়? সে বলল, (আশেপাশে) কোথায়ও পানি নেই। আমরা বললাম, তোমার
ও পানির জায়গার মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলল একদিন ও এক রাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চল। সে বলল, আল্লাহর রাসূল কী?
আমরা তাকে যেতে না দিয়ে তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেও ঐ রকম কথাই বলল যা সে আমাদের সঙ্গে
বলেছিল। তবে সে তাঁর নিকট বলল, সে কয়েকজন ইয়াতীম সন্তানের মা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার মশক দু’টি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করলেন। অতঃপর তিনি মশক দু’টির মুখে হাত
বুলালেন। আমরা তৃষ্ণার্ত চল্লিশ জন মানুষ পানি পান করে পিপাসা মিটালাম। অতঃপর আমাদের
সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলোকে পানি পান করান হয়নি। এত সবের
পরও মহিলার মশকগুলো এত পানি ভর্তি ছিল যে তা ফেটে যাবার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের নিকট যা কিছু আছে উপস্থিত কর। কিছু
খেজুর ও রুটির টুকরা জমা করে তাঁকে দেয়া হল। এ নিয়ে নারীটি খুশীর সঙ্গে তার গৃহে ফিরে
গেল। গৃহে গিয়ে সকলের নিকট সে বলল, আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, এক মহা যাদুকরের সঙ্গে অথবা
মানুষে যাকে নবী বলে ধারণা করে তার সঙ্গে। আল্লাহ্ এই মহিলার মাধ্যমে এ বস্তিবাসীকে
হিদায়াত দান করলেন। স্ত্রীলোকটি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করল এবং বস্তিবাসী সকলেই ইসলাম গ্রহণ
করল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৭১, ৩৪৪, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮২,
দারাকুত্বনী ১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৪৭০৫, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী
১০৮৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
খালি পাত্রে হাত রাখতেই পানি অঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন তিনি যাওরা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি অঙ্গুলির
ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই উযূ করে নিলেন। ক্বাতাদাহ (রহ.)
বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা তিনশ’
কিংবা প্রায় তিনশ’ জন ছিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৫৭২, ১৬৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০৯,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৯, সুনান আততিরমিযী
৩৬৩৩, মুসনাদে আহমাদ ১২৭৬৫, মুসনাদে আব্দ ইবনু হুমায়দ ১৩৬৫, আবূ ইয়া'লা ৩১৭২, সহীহ
ইবনু খুযায়মাহ ১২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫৪৬, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৪৯৮৭, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাকী ১১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩১৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালি পাত্রে তাঁর হাত রেখে দিলেন এবং
সকলকে এ পাত্রের পানি দ্বারা উযূ করতে নির্দেশ দিলেন
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলাম যখন ‘আসরের সালাতের সময় সন্নিকট। সকলেই
পেরেশান হয়ে পানি খুঁজছেন কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উযূর পানি আনা হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে
তাঁর হাত রেখে দিলেন এবং সকলকে এ পাত্রের পানি দ্বারা উযূ করতে নির্দেশ দিলেন। আমি
দেখলাম তাঁর হাতের নীচ হতে পানি সজোরে উথ্লে পড়ছিল। তাদের শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত সকলেই
এই পানি দিয়ে উযূ করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৫৭৩, ১৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
পেয়ালার সামান্য পানি দিয়ে ৭০ জন অযু করলেন
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে বেরিয়ে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাহাবাগণও ছিলেন। তারা চলতে
লাগলেন, তখন সালাতের সময় হয়ে গেল, কিন্তু উযূ করার জন্য কোথাও পানি পাওয়া গেল না। কাফেলার
এক ব্যক্তি সামান্য পানিসহ একটি পেয়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
উপস্থিত করলেন। তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে তারই পানি দ্বারা উযূ করলেন এবং তাঁর হাতের
চারটি আঙ্গুল পেয়ালার মধ্যে সোজা করে ধরে রাখলেন। আর বললেন, উঠ তোমরা উযূ কর। সকলেই
ইচ্ছামত উযূ করে নিলেন। তারা ছিলেন সত্তর বা এর কাছাকাছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৭৪, ১৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৩৩১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
পাত্রের সামান্য পানি দিয়ে ৮০ জন অযু করলেন
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতের
সময় উপস্থিত হল। যাদের বাড়ি মসজিদের নিকটে ছিল তারা উযূ করার জন্য নিজ নিজ বাড়িতে চলে
গেলেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক গেলেন না তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সামনে পাথরের তৈরী একটি পাত্র আনা হল। এতে সামান্য পানি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন। কিন্তু পাত্রটি ছোট্ট হওয়ার কারণে হাতের আঙ্গুলগুলো
বিস্তৃত করতে পারলেন না বরং একত্রিত করে রেখে দিলেন। অতঃপর উপস্থিত লোকেরা ঐ পানি দ্বারাই
উযূ করে নিল। হুমাইদ (রহ.) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কতজন ছিলেন?
বললেন, আশি জন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৭৫,
১৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
পাত্রের সামান্য পানি দিয়ে ১৫০০ জন অযু করলেন
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, হুদাইবিয়ায় অবস্থানের সময় একদা সাহাবাগণ পিপাসায় খুব কাতর হয়ে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে একটি পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি উযূ করলেন। তাঁর নিকট
পানি আছে ধারণা করে সকলে সেদিকে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তোমাদের কী হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সামনের পাত্রের সামান্য পানি ছাড়া উযূ ও পান
করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত
রাখলেন। তখনই তাঁর হাত উপচে ঝর্ণা ধারার মত পানি ছুটে বের হতে লাগলো। আমরা সকলেই পানি
পান করলাম ও উযূ করলাম। সারিম (একজন রাবী) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম,
আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা যদি এক লক্ষও হতাম তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট
হত। আমরা ছিলাম পনেরশ’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৫৭৬, ৪১৫২, ৪১৫৩, ৪১৫৪, ৪৮৪০, ৫৬৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৮২, ৪১৫২, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৭০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৮৫৬, মুসনাদে আহমাদ ১৪২১৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৬৮৫৪।, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
কুল্লি করে পানি কুপে নিক্ষেপ করায় কুপ পানিতে ভরে যায় অতপর ১৪০০শ লোক ও
সব উটগুলো তৃপ্তিসহকারে পারি পান করল
বারা‘আ (ইবনু ‘আযিব) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হুদাইবিয়ায় চৌদ্দশ’ লোক ছিলাম।
হুদাইবিয়াহ একটি কূপ, আমরা তা থেকে পানি এমনভাবে উঠিয়ে নিলাম যে তাতে এক ফোঁটা পানিও
অবশিষ্ট থাকল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কূপের কিনারায় বসে কিছু পানি
আনার জন্য আদেশ করলেন। তিনি কুল্লি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। অল্প সময় অপেক্ষা
করলাম। তখন কূপটি পানিতে পূর্ণ হয়ে গেল। আমরা পানি পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের
উটগুলোও পানি পান করে পরিতৃপ্ত হল। অথবা বলেছেন আমাদের উটগুলো পানি পান করে ফিরল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৭৭, ৪১৫০, ৪১৫১, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৮৩, মুসনাদে আহমাদ ১৮৫৮৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৮০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৩৩১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সামান্য কয়েক টুকরো রুটিরে বরকতে ৭০/৮০ জন লোক পেট পুরে খেলেন
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আবূ ত্বল্হা (রাঃ) উম্মু সুলায়মকে বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কন্ঠস্বর দুর্বল শুনেছি। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুধা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু
আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করলেন। অতঃপর তাঁর
একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও
ওড়নার অপর অংশ আমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট পাঠালেন।
রাবী আনাস বলেন, আমি তাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময়
তিনি কতক লোকসহ মসজিদে ছিলেন। আমি গিয়ে তাঁদের সামনে দাঁড়ালাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, তোমাকে আবূ ত্বলহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি, হাঁ। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খাওয়ার দাও’আত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি-হাঁ।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদেরকে বললেন, চল, আবূ ত্বলহা আমাকে দাও’আত
করেছে। আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবূ ত্বলহা (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
আগমনের কথা শুনলাম। এতদশ্রবণে আবূ ত্বলহা (রাঃ) বলেন, হে উম্মু সুলাইম! নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানোর মত কিছু আমাদের
নিকট নেই। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।
আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁদেরকে স্বাগত জানানোর
জন্য বাড়ি হতে কিছুদূর এগুলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে দেখা
করলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ত্বলহা (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে তার
ঘরে আসলেন, আর বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের
ঐ রুটিগুলি হাযির করলেন এবং তাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হল। উম্মু সুলায়ম
ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে কিছু ঘি বের করে তরকারী হিসেবে উপস্থিত করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন অতঃপর দশজনকে নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা দশজন
আসলেন এবং রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়ে চলে গেলেন। অতঃপর আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তারা আসলেন
এবং তৃপ্তি সহকারে রুটি খেয়ে চলে গেলেন। আবার আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন
এবং পেট পুরে খেয়ে নিলেন। ঐভাবে উপস্থিত সকলেই রুটি খেয়ে তৃপ্ত হলেন। সর্বমোট সত্তর
বা আশিজন লোক ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৫৭৮, ৪২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০৮, আহমাদ ১৩২৮২, সুনান
আততিরমিযী ৩৬৩০, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ১২৩৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৬৬১৭,
আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৪৯৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩৩২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বরকতময় পানি সকলেই তৃপ্তিসহকারে পান করলেন
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা নিদর্শনাবলীকে বরকতময় মনে করতাম আর তোমরা ঐসব ঘটনাকে ভীতিকর মনে কর।
আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। আমাদের
পানি কমে আসল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত পানি খোঁজ কর।
(খুঁজে) সাহাবীগণ একটি পাত্র নিয়ে আসলেন যার ভিতর সামান্য পানি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ঐ পাত্রের ভিতর ঢুকিয়ে দিলেন এবং ঘোষণা করলেন, বরকতময় পানি
নিতে সকলেই এসো। এ বরকত আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ হতে দেয়া হয়েছে। তখন আমি দেখতে পেলাম
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পানি উপচে পড়ছে।
কখনও আমরা খাবারের তাস্বীহ পাঠ শুনতাম আর তা খাওয়া হত। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৭৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১০, সুনান আততিরমিযী
৩৬৩৩, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৭২২, মুসনাদে বাযযার ১৪৭৮, মুসনাদে আহমাদ ৪৩৯৩,
আবূ ইয়া'লা ৫৩৭২, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৪, দারিমী ২৯, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৪৫০১,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সামান্য পানিতে সকলে তৃপ্ত হলো
আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, তোমরা আজ সন্ধ্যা এবং
রাত্রিতে (লাগাতার) চলতে থাকবে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানির কাছে আগামীকাল পৌছে যাবে।
অতঃপর লোকেরা এমনভাবে (দ্রুত পথ) চলতে থাকল যে, কেউ কারো দিকে ফিরে চাইত না। আবূ কতাদাহ
(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সন্ধ্যারাত হতে চলতে চলতে রাত্রি যখন মধ্যাহ্নে পৌছল,
তখন তিনি রাস্তা হতে একদিকে সরে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা (ফজর) সালাতের
প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে। (এরপর সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন এবং) সকলের আগে সর্বপ্রথম
রাসূলুল্লাহ (সা.) -ই জাগ্রত হলেন, অথচ তখন সূর্যের তাপ এসে তার পিঠে পড়ছিল। অতঃপর
তিনি (সা.) বললেন, তোমরা নিজ নিজ বাহনে আরোহণ কর। অতএব আমরা আরোহণ করলাম এবং সূর্য
খুব উপরে উঠা পর্যন্ত ভ্রমণ করে তিনি এক জায়গায় অবতরণ করলেন। অতঃপর তিনি (সা.) উযূর জন্য পানির পাত্র চাইলেন, যা আমার
সাথে ছিল। তাতে পানিও ছিল খুব সামান্য পরিমাণ। তিনি (সা.) তা হতে একান্ত হালকাভাবে
উযু করলেন। আবূ কতাদাহ (রাঃ), বলেন, তার উযুর পরও পাত্রে সামান্য পরিমাণ পানি অবশিষ্ট
রয়ে গেল। এরপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা পাত্রের পানিগুলো আমাদের জন্য ভালোভাবে সংরক্ষণ
করে রাখ। কেননা অচিরেই তা হতে একটি বড় ধরনের ঘটনা প্রকাশ পাবে।
অতঃপর বিলাল (রাঃ) সালাতের জন্য আযান দিলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করলেন, তারপর ফজরের (ফরয) সালাত
আদায় করলেন এবং নিজেও সওয়ারীতে আরোহণ করলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম।
অবশেষে সূর্য যখন অনেক উপরে উঠল এবং প্রতিটি
জিনিস সূর্যের প্রচণ্ড তাপে খুবই গরম হয়ে গেল, তখন আমরা ঐ কাফেলার লোকেদের কাছে এসে
পৌছলাম, (যারা আমাদের পূর্বেই রওয়ানা হয়ে এসেছে) তারা বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল!
খুবই গরমে এবং পিপাসার তাড়নায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। তিনি (সা.) বললেন, তোমাদের
ওপর ধ্বংস আসবে না। এই বলে তিনি (সা.) পানির পাত্রটি আনালেন এবং পানি ঢালতে থাকলেন,
আর আবূ কতাদাহ্ লোকেদেরকে পানি পান করাচ্ছিলেন। লোকেরা যখন পাত্রে পানি দেখতে পেল,
তখন তারা আর বিলম্ব না করে একসাথে সকলে পানির জন্য ভিড় জমিয়ে ফেলল। তাদের অবস্থা
দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা উত্তম আচরণ কর। তোমরা সকলেই এ পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত
হবে। আবূ কতাদাহ (রাঃ) বলেন, তারা অনুরূপ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) পানি ঢালতে থাকলেন,
আর আমি পানি পান করাতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া কেউ ছিল
না। এরপর পানি ঢালা হলো, তখন তিনি (সা.) আমাকে বললেন, এবার তুমি পান কর। আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! আপনি পান না করা অবধি আমি পান করব না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
লোকেদেরকে যে পানীয় পান করায়, সে হয় সর্বশেষে। আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতএব আমি
পান করলাম। পরে তিনি (সা.) পান করলেন। আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতঃপর লোকেরা তৃপ্তি
সহকারে আরামের সাথে পানির স্থানে এসে পৌছল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮১,
আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৩২৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
খেজুরের স্তুপ থেকে পাওনাদারের সকল প্রাপ্য পরিশোধের পরেও সমপরিমান খেজুর
রয়ে গেল
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁর পিতা (‘আবদুল্লাহ
(রাঃ) উহুদ যুদ্ধে) ঋণ রেখে শাহাদাত লাভ করেন। তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার পিতা অনেক ঋণ রেখে গেছেন। আমার কাছে বাগানের কিছু খেজুর
ছাড়া অন্য কোন মাল নেই। কয়েক বছরের খেজুর একত্র করলেও তাঁর ঋণ শোধ হবে না। আপনি দয়া
করে আমার সঙ্গে চলুন, যাতে পাওনাদারগণ আমার প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ না করে। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে গেলেন এবং খেজুরের একটি স্তূপের চারপাশে ঘুরে দু’আ করলেন।
অতঃপর অন্য স্তুপের নিকটে গেলেন এবং এর উপরে বসলেন এবং জাবির (রাঃ)-কে বললেন, খেজুর
বের করে দিতে থাক। সকল পাওনাদারের প্রাপ্য শোধ হয়ে গেল আর তাদের যত দিলেন তত থেকে গেল।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৮০, ২১২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৩৩১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাবুকের যুদ্ধে সামান্য খাদ্যদ্রব্য আল্লাহর বরকতে সকলেই পাত্র পূর্ণ করে
নিলো ও তৃপ্তিসহকারে খেলো
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন লোকজন ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল, তখন ’উমার (রাঃ) বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল! এখন লোকজনের কাছে যে পরিমাণ অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য অবশিষ্ট আছে, সেগুলো
আনিয়ে নিন এবং তার উপর আল্লাহর কাছে বরকতের জন্য দুআ করুন। তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ,
তাই করা হবে। তখন তিনি (সা.) একখানা চামড়ার দস্তরখান আনালেন। তা বিছানো হলো, অতঃপর
তিনি তাদের অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্যগুলো আনতে বললেন। তাতে কোন লোক আনল এক মুষ্টি বুট, আর
কেউ আনল এক মুষ্টি খেজুর, আর কেউ আনল কিছু রুটির টুকরা। অবশেষে সবকিছু মিলিয়ে দস্তরখানের
উপর সামান্য পরিমাণ বস্তুই একত্রিত করা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মধ্যে বরকতের
জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের (যার যা খুশি) নিজ নিজ পাত্রগুলোতে নিয়ে নাও।
অতএব তারা নিজ নিজ পাত্রগুলোতে নিতে লাগল। এমনকি সেনাদলের মধ্যে এমন কোন পাত্র রইল
না যা তারা ভর্তি করে নিল না।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, লোকেরা সকলে তৃপ্তি
করে খেল এবং কিছু খাদ্য অতিরিক্তও রয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আর নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল। আর
যে ব্যক্তি এ দু’টি কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে (অর্থাৎ মৃত্যুবরণ
করবে), কোন কিছু তাকে জান্নাতে প্রবেশ হতে বাধা দিতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭, মুসনাদে আহমাদ ১১০৯৫, আবূ ইয়া'লা ১১৯৯, সহীহ ইবনু হিব্বান
৬৫৩০, আবূ ইয়া'লা ১১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আনাস (রাঃ) এর মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এর প্রেরিত “হায়সা” প্রায় তিনশ লোক
খেয়েও একই পরিমান রইল
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী
(সা.) যায়নাব-এর বিবাহে বর ছিলেন, তখন আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) কিছু খেজুর, মাখন
এবং পনীরের সংমিশ্রণে ’হায়সা’ তৈরি করলেন। তারপর তাকে তিনি একটি পাত্রে রেখে বললেন,
হে আনাস। এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে নিয়ে যাও এবং বল, এগুলো আমার মা আপনার কাছে
পাঠিয়েছেন এবং তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। আর তিনি এটাও বলেছেন যে, হে আল্লাহর
রাসূল! এটা আমাদের পক্ষ হতে আপনার জন্য খুবই সামান্য হাদিয়্যাহ্! আনাস (রাঃ) বলেন,
আমি তা নিয়ে গেলাম এবং আমার মা যা কিছু বলার জন্য আমাকে আদেশ করেছিলেন, আমি তাও বললাম।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, এগুলো রাখ। অতঃপর আমাকে কিছু লোকের নাম উল্লেখ
করে বললেন, যাও এবং অমুক অমুক ও অমুককে আর তা ছাড়াও যার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাদেরকে
দাওয়াত দেবে।
অতএব তিনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদেরকে
এবং আমার সাথে যাদের দেখা হয়েছে তাদেরকে দাওয়াত দিলাম। অতঃপর আমি ফিরে এসে দেখলাম
পূর্ণ লোকজন। আনাস (রাঃ) প্রশ্ন করা হলো, সেখানে আপনাদের সংখ্যা কতজন ছিল? তিনি বললেন,
প্রায় তিনশত। আমি দেখতে পেলাম, নবী (সা.) ’হায়সার পাত্রের মধ্যে স্বীয় হাত রাখলেন
এবং আল্লাহর যা ইচ্ছা তা পাঠ করলেন। তারপর দশ দশজনের দলকে তা হতে খাবার জন্য ডাকতে
থাকলেন। আর তাদেরকে বললেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ সম্মুখ হতে খাওয়া
শুরু কর। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা সকলে তুষ্ট হয়ে খেলেন। একদল খেয়ে বের হতেন এবং আরেক
দল প্রবেশ করতেন, এভাবে সমস্ত লোকই খাদ্য খেলেন। অতঃপর নবী (সা.) আমাকে বললেন, হে আনাস!
পাত্রটি উঠাও। তখন আমি পাত্রটি উঠালাম, কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারছি না, যখন আমি পাত্রটি
রেখেছিলাম, তখন পাত্রটিতে ’হায়সা’ বেশি ছিল নাকি এখন যখন আমি তাকে উঠালাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৫৭৮, ৫৩৮১, ৫৪৫০, ৬৬৮৮, মুসনাদে আহমাদ ৩৫৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৪০, সুনান আততিরমিযী
৩২১৮, সুনান আননাসায়ী ৩৩৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৪২, মুসনাদে আহমাদ ১৩৭১, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৭০৭, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১২৩৮, মুসনাদে বাযার ৪৫৬, আবূ ইয়া'লা
২৮৩০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫৩৪, শু’আবূল ঈমান ৫৮৯৬, আস সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৮৪৫১,
দারিমী ৪৩, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৭৩৮৭, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭০৯৬, আস সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাকী ১৪৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়ার বরকতে উট ভালো হয়ে গেলো
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
আমি কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে শরীক ছিলাম। আর আমি এমন একটি উটের উপর
আরোহণ করে ছিলাম যা সেচের পানি বহন করতে করতে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। চলবার
শক্তি ছিল না। পিছন হতে নবী (সা.) এসে আমার সাথে মিলিত হয়ে বললেন, তোমার উটের কি হয়েছে?
আমি বললাম, তা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) উটটির পিছনে গেলেন এবং
তাকে ধমক দিয়ে তার জন্য দু’আ করলেন। তারপর তা সর্বদা অন্যান্য উটের আগে আগেই চলতে
লাগল। পরে আবার তিনি (সা.) আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার উটের খবর কি? আমি বললাম, আপনার
দুআর বরকতে এখন খুব ভালো। তিনি বললেন, তুমি কি এক উকিয়্যার বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রয়
করবে? তখন আমি এই শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনাহ্ পৌছা পর্যন্ত আমি তার পিঠে আরোহী
হব। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন আমি প্রাতঃকালে উটটি নিয়ে
তাঁর কাছে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে উটের মূল্য প্রদান করলেন এবং উটটিও আমাকে ফেরত দিয়ে
দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৬৭, ৪৪৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১০-(৭১৫), আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৫৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
বাগানের খেজুরের পরিমাণ আন্দায করা সত্যে পরিনত হলো
আবূ হুমায়দ আস্ সাইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে তাবুকের যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হলাম। অতঃপর আমরা
’ওয়াদিউল কুরা’ নামক স্থানে এক মহিলার বাগানে উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
তোমরা (বাগানের খেজুরের) পরিমাণ আন্দায কর। অতএব আমরা ধারণা করলাম এবং রাসূলুল্লাহ
(সা.) বাগানের ফল দশ ওয়াসাক হবে বলে অনুমান করলেন। এরপর তিনি (সা.) উক্ত মহিলাকে বললেন,
এ বাগানে কি পরিমাণ খেজুর উৎপন্ন হয়, ভালোভাবে তার হিসাব রেখো, যাবৎ না আমরা তোমার
কাছে ফিরে আসি ইনশা-আল্লা-হ। অবশেষে আমরা রওয়ানা হয়ে তাবুকে এসে উপস্থিত হলাম।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সাবধান! আজ রাতে
ব্যাপক ঝড় হবে। অতএব তোমাদের কেউই যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। আর যার সাথে উট রয়েছে,
সে যেন তাকে শক্ত করে বেঁধে রাখে। রাতে প্রচণ্ড ঝড় হলো। এক লোক দাড়িয়ে গেলে ঝড়
তাকে উড়িয়ে ’তাঈ’ পাহাড়ে নিয়ে নিক্ষেপ করল। অতঃপর আমরা ফেরার পথে ওয়াদিউল কুরায়
এসে পৌছলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত মহিলাকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের বাগানে কি পরিমাণ
ফল উৎপন্ন হয়েছে? সে বলল, “দশ ওয়াসাক’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৯১৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৮৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯২, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৭৬৮৬, মুসনাদে বাযার
৩৭২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আগমনে পাদ্রী তাঁকে চিনতে পারলেন এবং লোকজনের মাঝে
অনেক অলৌকিক ঘটনা তুলে ধরলেন
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
[রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চাচা] আবূ ত্বালিব নবী (সা.) ও কুরায়শ নেতৃবর্গের মধ্যে সিরিয়ার
উদ্দেশে ভ্রমণে বের হলেন। যখন তারা (বুহায়রাহ্) পাদ্রির কাছে পৌছে সেখানে যাত্রাবিরতি
করলেন, তখন নিজেদের বাহন হতে হাওদা ইত্যাদি সামানপত্র খুললেন। এমন সময় পাদ্রি তাদের
কাছে আসলো। কুরায়শদের কাফেলা ইতঃপূর্বে বহুবার এ পথে আসা যাওয়া করেছে, অথচ পাদ্রি
কখনো তাদের কাছে আসেনি। বর্ণনাকারী বলেন, কাফেলার লোকেরা নিজেদের হাওদা ইত্যাদি খুলছে,
এমন সময় পাদ্রি তাদের মাঝে প্রবেশ করল। অবশেষে সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে
তার হাত ধরে বলল, ইনিই তো সমগ্র জগতের নেতা, ইনিই রাব্বূল আলামীনের রাসূল, আল্লাহ তা’আলা
তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করবেন। তখন কুরায়শ নেতাদের কেউ কেউ প্রশ্ন
করল, তুমি তা কিরূপে জান? পাদ্রি বলল, যখন তোমরা পাহাড়ের পশ্চাৎ হতে বের হয়ে সম্মুখে
এসেছ, তখন হতে এমন কোন বৃক্ষ ও পাথর বাকি ছিল না যা তাঁকে সিজদাহ্ করেনি। বস্তুত এ
দুই জিনিস কেবলমাত্র নবীকেই সিজদাহ্ করে। আর আমি তাকে মোহরে নুবুওয়্যাত দ্বারা চিনতে
পেরেছি, যা তার কাঁধের গোড়ায় নিম্নদিকে আপেলের মতো রয়েছে। অতঃপর পাদ্রি ফিরে আসলো
এবং কাফেলার লোকেদের জন্য খাবার তৈরি করল। যখন সে খাবার নিয়ে তাদের কাছে আসলো, তখন
দেখল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফেলার লোকেদের উটগুলো নিয়ে এমন অবস্থায় আসলেন, দেখা
গেল এক খণ্ড মেঘ তার উপর ছায়া দান করে রয়েছে। আর যখন তিনি কাফেলার লোকেদের কাছে আসলেন,
তখন দেখলেন, লোকেরা পূর্ব হতেই ছায়াবিশিষ্ট স্থানগুলো দখল করে ফেলেছে। কিন্তু যখন
তিনি বসলেন, তখন বৃক্ষের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়ল। (এ অবস্থা দেখে) পাদ্রি কাফেলার
লোকেদেরকে বলল, তোমরা তাকিয়ে দেখ গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। (এ সমস্ত অলৌকিক
ঘটনা দেখে) পাদ্রি বলে উঠল, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর শপথ দিয়ে প্রশ্ন করছি, বল! তোমাদের
মধ্যে তার অভিভাবক কে? লোকেরা বলল, আবূ ত্বালিব। অতঃপর পাদ্রি (তাঁকে ফেরত পাঠানোর
জন্য) অনেকক্ষণ ধরে আবূ ত্বালিব-কে আল্লাহর শপথ দিয়ে অনুরোধ করতে থাকে। অবশেষে আবূ
ত্বালিব তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। আর তার সফরসঙ্গী হিসেবে আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)-কে
সাথে পাঠিয়ে দিলেন। এদিকে পথে খাওয়ার জন্য পাদ্রী তার সাথে কিছু কেক ও যায়তূনের
তেল দিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১৮, সুনান আততিরমিযী
৩৬২০, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৭৩৩, মুসনাদে বাযযার ৩০৯৬, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম
৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইয়া’লা ইবনু মুররাহ্ আস্ সাকাফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর তিনটি অলৌকিক
জিনিস দেখেছেন
ইয়া’লা
ইবনু মুররাহ্ আস্ সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে তিনটি
(অলৌকিক) জিনিস দেখেছি।
(১) একবার আমরা তার সাথে ভ্রমণে বের হলাম।
চলার পথে আমরা এমন একটি উটের কাছে দিয়ে গমন করছিলাম, যার দ্বারা পানি বহন করার কাজ
করানো হয়। উটটি যখন নবী (সা.) -কে দেখল, তখন সে জিরজির আওয়াজ করে নিজের ঘাড়টি মাটিতে
রাখল। নবী (সা.) সেখানে থেমে গেলেন এবং বললেন, এ উটটির মালিক কোথায়? সে তার কাছে আসলো।
তিনি (সা.) তাকে বললেন, তোমার এ উটটি আমার কাছে বিক্রয় করে দাও। সে বলল, বরং হে আল্লাহর
রাসূল! আমি তা আপনাকে দান করলাম! মূলত তা এমন এক পরিবারের লোকেদের উট, যাদের কাছে তা
ছাড়া রুযীরোজগারের আর কিছুই নেই। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, অবস্থা যখন এরূপই যা তুমি
বলেছ। তবে শুন! তা আমার কাছে এ অভিযোগ করেছে যে, তার দ্বারা অধিক কাজ নেয়া হয় এবং
তাকে খাবার অল্প দেয়া হয়। অতএব তোমরা তার সাথে সদাচরণ করবে।
(২) অতঃপর আমরা সামনের দিকে রওয়ানা হলাম।
অবশেষে এক জায়গায় এসে আমরা অবস্থান করলাম এবং নবী (সা.) সেখানে ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন
একটি গাছ জমিন ফেড়ে এসে তার উপর ঝুঁকে পড়ল। অতঃপর গাছটি তার পূর্বের স্থানে চলে গেল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুম হতে জেগে উঠলে আমি তাঁকে এ ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি (সা.)
বললেন, এ গাছটি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে সালাম করার জন্য নিজের প্রভুর কাছে অনুমতি চেয়েছিল।
অতএব তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।
(৩) বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা সেখান থেকে
সম্মুখের দিকে যাত্রা করলাম এবং একটি জলাশয়ের নিকট পৌছলাম। তখন একজন মহিলা নবী (সা.)
-এর কাছে তার এমন একটি ছেলেকে নিয়ে আসলো, যার মাঝে জিনের আসর ছিল। তখন নবী (সা.) এই
ছেলেটির নাকে ধরে বললেন, “তুমি বের হও, আমি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ।” বর্ণনাকারী বলেন,
এরপর আমরা আরো সামনের দিকে সফর করলাম। ফেরার পথে যখন আমরা উক্ত জলাশয়ের কাছে আসলাম,
তখন নবী (সা.) ঐ ছেলেটির মাকে তার ছেলেটির অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। সে বলল, ঐ
সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আপনার চলে যাওয়ার পর হতে ছেলেটির
মধ্যে আমরা অপ্রীতিকর আর কিছু দেখতে পাইনি। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৭১৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
নবী (সা.) এর ডাকে গা্ছ কাছে আসে ও নিজ স্থানে ফিরে যায়
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী
(সা.) মক্কার কাফিরদের কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত
মনে এক স্থানে বসাছিলেন, এমন সময় জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি আপনাকে একটি মু’জিযাহ্ দেখাব? তিনি (সা.) বললেন,
হ্যাঁ, দেখান। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম ঐ গাছটির প্রতি তাকালেন যা নবী (সা.) - এর
পিছনে ছিল। জিবরীল আলায়হিস সালাম নবী (সা.) -কে বললেন, আপনি ঐ বৃক্ষটিকে ডাক দেন।
তিনি (সা.) তাকে ডাকলেন। তখন বৃক্ষটি এসে তাঁর সামনে দাঁড়াল। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস
সালাম বললেন, এবার তাকে নিজের স্থানে চলে যেতে বলুন। তখন তিনি (সা.) তাকে পূর্বের স্থানে
যেতে নির্দেশ করলে তা সেখানে চলে গেল। তা দেখে নবী (সা.) বললেন, আমার (মানসিক প্রশান্তির
জন্য এটাই যথেষ্ট, এটাই যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৯২৪, দারিমী ২৩, হিদায়াতুর রুওয়াত ৫/৩৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নবী (সা.) এর ডাকে গাছ কাছে এসে তাওহীদের স্বাক্ষ্য দিয়ে নিজ স্থানে ফিরে
যায়
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
আমরা নবী (সা.) -এর সাথে এক ভ্রমণে ছিলাম। এমন সময় এক বেদুঈন আসে। যখন সে কাছে আসলো,
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, সত্যিকারার্থে আল্লাহ
ছাড়া “ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য দ্বিতীয় কেউ নেই, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল?
বেদুঈন বলল, তুমি যা বললে আর কেউ কি এ কথার
সাক্ষ্য দেয়? তিনি (সা.) বললেন, ঐ বাবলা গাছটি এ কথার সাক্ষ্য দিবে। এই বলে রাসূলুল্লাহ
(সা.) গাছটিকে ডাকলেন। গাছটি ছিল উপত্যকার এক প্রান্তে। তা জমিনকে চিরে তাঁর সম্মুখে
এসে দাঁড়াল। তখন তিনি গাছটি হতে তিনবার সাক্ষ্য চাইলেন। গাছটি অনুরূপভাবে তিনবার সাক্ষ্য
প্রদান করল, যেরূপ তিনি (সা.) বলেছিলেন। অতঃপর গাছটি নিজের স্থানে চলে গেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২৫, দরিমী ১৬, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫০৫, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব বারানী ১৩৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) –এর ডাকে খেজুরের কান্দি কাছে এসে স্বাক্ষ দিয়ে নিজ স্থানে
ফিরে যায়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, আমি কিভাবে বিশ্বাস করব যে, আপনি
আল্লাহর নবী? তিনি (সা.) বললেন, যদি আমি খেজুরের ঐ খোসা (কান্দি বা ছড়া)-কে ডাকি এবং
সে সাক্ষ্য দেয় যে, আমি আল্লাহর রাসূল! (তবে বিশ্বাস করবে?) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)
তাকে ডাকলেন। এতে ঐ কান্দি খেজুরের গাছ হতে নিচে নেমে নবী (সা.) -এর সম্মুখে এসে পড়ল।
অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, ফিরে যাও। তখন কান্দিটি ফিরে গেল। তা দেখে বেদুঈন মুসলিম হয়ে
গেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২৬, সুনান আততিরমিযী
৩৬২৮, আল মুজামুল আওসাত্ব ৫০৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বাঘ মানুষের মতো কথা বলে অতপর রাখালের ইসলাম গ্রহণ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন একটি বাঘ বকরির রাখালের নিকট এসে (বকরির) পাল হতে একটি বকরি ধরে নিয়ে গেল। এদিকে
রাখাল তার অনুসন্ধানে বের হলো, শেষ পর্যন্ত সে বাঘের কবল হতে বকরিটিকে ছিনিয়ে নিল।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বাঘটি একটি টিলার উপর উঠল এবং লেজ গুটিয়ে বলতে লাগল, আমি খাদ্যের
অনুসন্ধানে বের হয়েছিলাম, আর আল্লাহ তা’আলাও আমাকে রিযক দান করেছিলেন, অতঃপর (হে রাখাল!)
তুমি আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নিয়েছ। তা শুনে (রাখাল) লোকটি বলে উঠল, আল্লাহর শপথ
আজকের মতো এমন আশ্চর্যের ব্যাপার আমি আর কখনো দেখিনি। বাঘে (মানুষের ন্যায়) কথা বলছে।
তখন বাঘটি বলে উঠল! এটা অপেক্ষা অধিকতর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এক লোক দু’টি পাথরের
মাঝে খেজুর বাগানে অবস্থান করছে। সে তোমাদেরকে অতীতে যা হয়ে গেছে তা এবং পরবর্তীতে
যা কিছু হবে তার সংবাদ দেয়। বর্ণনাকারী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] বলেন, উক্ত (রাখাল)
লোকটি ছিল ইয়াহুদী। সে নবী (সা.) -এর কাছে এসে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করে সাথে সাথে ইসলাম
গ্রহণ করল। তার কথা শুনে নবী (সা.) বললেন, লোকটি সত্য কথাই বলেছেন।
অতঃপর নবী (সা.) বললেন, এটা এবং এর মতো আরো
অন্যান্য বহু নিদর্শন কিয়ামতের আগে সংঘটিত হবে। তিনি আরো বলেছেন, সেদিন বেশি দূরে নয়,
এমন একদিন আসবে, কোন লোক তার ঘর হতে বাইরে কোথাও যাবে এবং তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার
(স্ত্রী) কি অপকর্ম করেছে, সে ফিরে আসতেই তার (পায়ের) জুতা ও (হাতের) লাঠি তাকে বলে
দিবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২৭, শারহুস্ সুন্নাহ
৪২৮২, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পাত্রে খাদ্যের বরকত কোথা হতে আসে
আবূল আ’লা (রহিমাহুল্লাহ) সামুরাহ ইবনু জুনদুব
(রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) নবী (সা.) -এর সাথে বড় একটি পাত্রে
পালাক্রমে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খানা খেতাম। অর্থাৎ দশজন খানা খেয়ে উঠে যেত এবং
দশজন খেতে বসত। [আবূল আলা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,] আমরা সামুরাহ্ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম,
কোথা হতে এ পাত্রে খাদ্য বৃদ্ধি পেত? সামুরাহ্ (রাঃ) বললেন, কি কারণে তুমি আশ্চর্য
হচ্ছ? আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, সে খাদ্য-পাত্রে এখান হতে বৃদ্ধি পেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২৮, সুনান আততিরমিযী ৩৬২৫, দারিমী
৫৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৬৭৪০, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩১৭০৮, আল মু'জামুল
কাবীর লিত্ব তবারানী ৬৮২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বদর যুদ্ধে রাসুল সাঃ এর দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করলেন
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। বদর যুদ্ধে নবী (সা.) তিনশত
পনেরো জনকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং এভাবে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! এরা খালি পা,
অতএব এদেরকে বাহন দান কর। হে আল্লাহ! এরা বস্ত্রহীন, এদেরকে পোশাক দান কর। হে আল্লাহ!
এরা ক্ষুধার্ত, এদেরকে পরিতৃপ্ত খাদ্য দান কর। অতএব আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে (মুসলিমদেরকে)
বিজয়ী করলেন। ফলে তাঁরা এমন অবস্থায় ফিরলেন যে, তাঁদের প্রত্যেক লোকের সাথে একটি
অথবা দু’টি উট ছিল এবং তারা পোশাক পরিহিত এবং খাদ্যে পরিতৃপ্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২৯, সুনান আবূ দাউদ ২৭৪৭, সিলসিলাতুস
সহীহাহ ১০০৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৩১৩৭, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৫৯৬)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) এর থলের খেজুর শেষ হতো না
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন আমি অল্প কয়েকটি খেজুর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে নিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন এগুলোর মাঝে বরকত হয়। তখন তিনি (সা.) খেজুরগুলো
হাতে নিলেন। অতঃপর সেগুলোর মাঝে আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। তারপর বললেন, এগুলো নিয়ে
যাও এবং তোমার খাদ্য-থলির মাঝে রেখে দাও। যখনই তুমি থলি হতে কিছু নিতে চাবে, তখনই তার
ভিতরে হাত ঢুকিয়ে নেবে। তবে কখনো থলিটিকে ঝেড়ে খালি করবে না।
[আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন,] আমি সে খেজুর
হতে এত এত ’ওয়াসাক’ পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি। এতদ্ভিন্ন তা হতে আমরা নিজেরাও
খেয়েছি এবং অন্যান্যকেও খাওয়েছি। আর উক্ত থলিটি কখনো আমার কোমর হতে আলাদা হত না।
পরিশেষে ’উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের দিন সেই থলিটি কোথাও খুলে পড়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ৩৮৩৯, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ২৯৩৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
খায়বার বিজয় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে (ভাজা) বকরি হাদিয়্যাহূস্বরূপ
পেশ করা হলো তাতে বিষ ছিল
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
খায়বার বিজয় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে (ভাজা) বকরি হাদিয়্যাহূস্বরূপ
পেশ করা হলো তাতে বিষ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন, এখানে যত ইয়াহুদী
আছে, সকলকে আমার সামনে একত্রিত কর। তারা সকলে একত্রিত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে
উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তোমাদেরকে এক ব্যাপারে প্রশ্ন করব, তোমরা কি আমাকে এ ব্যাপারে
সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে
প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
তোমরা মিথ্যা বলছ; বরং তোমাদের পিতা তো অমুক। তখন তারা বলল, আপনি সত্যই বলেছেন এবং
সঠিক বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার বললেন, আমি তোমাদেরকে আরো একটি বিষয়ে যদি প্রশ্ন
করি, সে বিষয়েও তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম!
কেননা যদি আমরা আপনাকে মিথ্যা কথা বলি, তাহলে আপনি তো জানতেই পারবেন যেমনটি জানতে পেরেছেন
আমাদের পিতার বিষয়ে।
এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন,
আচ্ছা, জাহান্নামী কারা? উত্তরে তারা বলল, আমরা স্বল্প সময়ের জন্য জাহান্নামে যাব।
অতঃপর আপনারা তাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
দূর হও! তোমরাই সেখানে থাকবে। আল্লাহর শপথ! আমরা কখনো জাহান্নামে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত
হব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে আরো একটি কথা প্রশ্ন
করি, তাহলে তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দেবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম! এবার
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বল দেখি! তোমরা কি এ বকরির মাংসে বিষ মিশিয়েছিলে?
তারা (নির্দ্বিধায়) বলল, হ্যাঁ। নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, কিসে তোমাদেরকে এমন করতে
উদ্বুদ্ধ করল? উত্তরে তারা বলল, আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তাহলে আমরা আপনা হতে রেহাই
পাব। আর আপনি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩১৬৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৩৫৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ২৩৫২০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত তুলে দোয়া করতেই বৃষ্টি শুরু
হলো
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজুর (রহঃ).....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত জনৈক
ব্যক্তি জুমুআর দিন মসজিদে নবাবীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল।
এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনাবৃষ্টির ফলে) মাল সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি
দান করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন,
“আল্ল-হুম্মা আগিসনা- আল্ল-হুম্মা আগিসনা-,
আল্ল-হুম্মা আগিসনা-”
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ
করুন, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।)। [৩ বার]
আনাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! এ সময় আসমানে
কোন মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিল না। আর আমাদের ও সালই পাহাড়ের মাঝে কোন ঘর-বাড়ী কিছুই
ছিল না। (ক্ষণিকের মধ্যে) তার পেছন থেকে ঢালের ন্যায় অখণ্ড মেঘ উদিত হ’ল। একটু পর
তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হ’ল। বর্ণনাকার বলেন, এরপর
আল্লাহর শপথ আমরা সপ্তাহকাল যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি।
অতঃপর পরবর্তী জুমুআয় আবার এক ব্যক্তি ঐ দরজা
দিয়ে প্রবেশ করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন।
সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর
রসূল! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহর কাছে
দু’আ করুন যেন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন,
“আল্ল-হুম্মা হাওলানা- ওয়ালা- আলায়না- আল্ল-হুম্মা
’আলাল আ-কা-মি ওয়ায় যিরা-বি ওয়া বুতনিল আওদিয়াত ওয়া মানা-বিতিশ শাজার”
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও
আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিও না। হে আল্লাহ! পাহাড়ী এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের
অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানো স্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।)।
এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বের হয়ে
সূর্য তাপের মধ্যে চলাচল করতে লাগলাম। শারীক বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম,
এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি? আনাস বললেন, আমার জানা নেই। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৫৮২, ৯৩২, ৯৩৩, ১০১৩, ১০১৪, ১০১৫, ১০১৬, ১০১৭, ১০১৮, ১০১৯, ১০২১, ১০২৯, ১০৩৩, ৩৫৮২,
৬০৯৩, ৬৩৪২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০২,
সুনান আননাসায়ী ১৫১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১২৬৯, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৭৯, ইরওয়া ৪১৬,
মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ২০৫৫, মুসান্নাফ আবদুর রযযাক ৪৯১০, মুসান্নাফ ইবনু আবী
শায়বাহ ২৯২২৫, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১২৮২, মুসনাদুশ শাফি'ঈ ৩৫৬, মুসনাদে আহমাদ
১২০৩৮, আবূ ইয়া'লা ৩৩৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মা ১৪২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৯২, আস্ সুনানুল
কুবরা লিন্ নাসায়ী ১৮১৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৫২৫, আল মু'জামুল আওসাত্ব
৫৯২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৬৬৬৬, আদাবুল মুফরাদ ৬১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যে খেজুরের কান্ডের কান্না শুরু-১
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরের একটি কান্ডের সঙ্গে খুত্বা প্রদান করতেন।
যখন মিম্বার তৈরি করে দেয়া হল। তখন তিনি মিম্বরে উঠে খুত্বা দিতে লাগলেন। কান্ডটি তখন
কাঁদতে শুরু করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কান্ডটির নিকটে গিয়ে হাত বুলাতে
লাগলেন। উপরোক্ত হাদীসটি ‘আবদুল হামীদ ও আবূ ‘আসিম (রহ.).....ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে.....নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একইভাবে বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৮৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩১৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যে খেজুরের কান্ডের কান্না শুরু-২
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বৃক্ষের উপর কিংবা একটি খেজুর বৃক্ষের কান্ডের
উপর শুক্রবারে খুত্বা দেয়ার জন্য দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা একজন
পুরুষ বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য একটি মিম্বার বানিয়ে দিব? নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পার। অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বার
বানিয়ে দিলেন। যখন শুক্রবার এল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন,
তখন কান্ডটি শিশুর মত চীৎকার করে কাঁদতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিম্বার হতে নেমে এসে ওটাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু কান্ডটি শিশুর মত আরো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
কাঁদতে লাগল। রাবী বলেন, কান্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুত্বাকালে যিক্র শুন্তে
পেত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৮৪, ৪৪৯, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৩২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যে খেজুরের কান্ডের কান্না শুরু-৩
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,
প্রথম দিকে খেজুরের কয়েকটি কান্ডের উপর মসজিদে নববীর ছাদ করা হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই খুত্বা দানের ইচ্ছা করতেন, তখন একটি কান্ডে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন।
অতঃপর তাঁর জন্য মিম্বার তৈরি করে দেয়া হলে তিনি সেই মিম্বারে উঠে দাঁড়াতেন। ঐ সময়
আমরা কান্ডটি হতে দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীর স্বরের মত কান্নার আওয়াজ শুনলাম। শেষে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এসে তাকে হাত বুলিয়ে সোহাগ করলেন। অতঃপর
কান্ডটি শান্ত হল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৮৫,
৪৪৯, ২০৯৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৫৯০৮, মুসনাদে আহমাদ ১৪৫০৯, শাফিঈ ২৭৬,
মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ১৭৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৩৩২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনু সালাম এর ইসলাম গ্রহণ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ
ইবনু সালাম রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মদীনায় আগমনের সংবাদ শুনতে পেলেন। এ সময় তিনি নিজের
এক বাগানে খেজুর পাড়ছিলেন। অতঃপর নবী (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি
প্রশ্ন করব, যা নবী ছাড়া আর কেউই জানে না।
১. কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত কি?
২. জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম খাদ্য কি?
৩. কিসের কারণে সন্তান (আকৃতিতে) কখনো তার
পিতার মতো হয়, আবার কখনো তার মায়ের মতো হয়?
নবী (সা.) বললেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিবরীল
আলায়হিস সালাম এইমাত্র আমাকে অবহিত করে গেলেন। কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামাত হলো একটি
আগুন, যা লোকেদেরকে পূর্ব দিকে হতে পশ্চিম দিকে সমবেত করে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতবাসীগণ
সর্বপ্রথম যে খাদ্য খাবে, তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত টুকরা আর (সন্তানাদির বিষয়টি)
যদি নারীর বীর্যের উপর পুরুষের বীর্যের প্রাধান্য ঘটে, তবে সন্তান বাপের মতো হয়। আর
যদি নারীর বীর্যের প্রাধান্য ঘটে, তবে সন্তান মায়ের রূপ ধারণ করে। তখন ’আবদুল্লাহ
ইবনু সালাম বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া ইবাদাত পাওয়ার
যোগ্য কেউ নেই এবং নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল।
(অতঃপর তিনি বললেন) হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীরা
এমন একটি জাতি, যারা অপবাদ আনবে। অতঃপর ইয়াহুদীগণ নবী (সা.) -এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে
প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মাঝে আবদুল্লাহ কে? তার উত্তরে বলেন, আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম
লোক এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির সন্তান। তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তখন
নবী (সা.) বললেন, আচ্ছা বল তো, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম যদি ইসালাম গ্রহণ করে, তখন তারা বলে উঠল, আল্লাহ তা’আলা তাকে
তা হতে রক্ষা করুন। এমন সময় ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (আড়াল হতে) বের হয়ে এসে কালিমাহ্
উচ্চারণ করে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাসনার যোগ্য কেউ
নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। তখন তারা (ইয়াহূদীরা) বলতে লাগল,
(এ লোকটি) আমাদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান। অতঃপর তারা তাকে খুব তাচ্ছিল্যভাবে
তুচ্ছ প্রতিপন্ন করল। তখন ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (এদের
ব্যাপারে) আমি এটাই আশঙ্কা করেছিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৮৭০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৮০, মুসনাদে আহমাদ ১২৯৯৩, মুসনাদে
আবদ ইবনু হুমায়দ ১৩৮৯, আবূ ইয়া'লা ৩৪১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪২৩, আস্ সুনানুল কুবরা
লিন্ নাসায়ী ৯০৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বদর যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) যার জন্য যে স্থানটি দেখিয়েছিলেন যুদ্ধ
শেষে দেখা গেলো সে সেই স্থানেই পড়ে আছে-১
আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের
নিকট (কুরায়শ নেতা) আবূ সুফইয়ান-এর প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পৌছলে রাসূলুল্লাহ (সা.)
পরামর্শ করলেন, তখন (আনসার নেতা) সা’দ ইবনু উবায়দাহ্ (রাঃ) উঠে বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! আপনি যদি আমাদেরকে সওয়ারীসহ দরিয়াতে
ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ করেন, তবে আমরা ঝাপিয়ে পড়ব। আর যদি বারকুল গিমাদ’ পর্যন্তও
আমাদের বাহনকে ছুটে যেতে আদেশ করেন, তা করতেও আমরা প্রস্তুত। বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ)]
বলেন, এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকেদেরকে যুদ্ধের জন্য তৈরি করে নিলেন। এরপর তারা রওয়ানা
হয়ে বদর’ নামক স্থানে এসে অবতরণ করলেন। এখানে পৌছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা অমুক
নিহত হওয়ার স্থান আর তা অমুকের আর তা অমুকের। এ সময় তিনি (সা.) (স্থান দেখিয়ে) স্বীয়
হাত জমিনে রাখলেন। বর্ণনাকারী বলেন, (যুদ্ধ শেষে) দেখা গেল, রাসূলুল্লাহ (সা.) যার
জন্য যে স্থানটি দেখিয়েছিলেন, তাদের একটিও এদিক-সেদিক সরে পড়েনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৭১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৫১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৭৯, সুনান আবূ দাউদ ২৬৮১, সুনান আননাসায়ী ২০৭৪, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮/৪৮০, মুসনাদে বাযযার ২২২, মুসনাদে আহমাদ ১৩৭২৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
বদর যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) যার জন্য যে স্থানটি দেখিয়েছিলেন যুদ্ধ
শেষে দেখা গেলো সে সেই স্থানেই পড়ে আছে-২
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা
মক্কাহ্ এবং মদীনার মাঝামাঝি স্থানে ’উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ
দেখতে চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন লোক। অতএব আমি চাঁদ দেখে ফেললাম।
আর আমি ব্যতীত অন্য কেউই চাঁদ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেনি। আমি ’উমার (রাঃ)-কে বললাম,
আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? কিন্তু তিনি তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর
’উমার (রাঃ) বললেন, শীঘ্রই আমি আমার বিছানায় শুয়ে শুয়ে তা দেখব। অতঃপর ’উমার (রাঃ)
বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে লাগলেন এবং বললেন, যুদ্ধের একদিন আগে রাসূলুল্লাহ
(সা.) আমাদেরকে ঐ সমস্ত স্থানগুলো দেখিয়ে দিলেন, যে যে স্থানে কাফিরদের লাশ পড়ে থাকবে।
তিনি বললেন, ইনশা-আল্ল-হ আগামীকাল এ জায়গা অমুক (কাফির)-এর লাশ পড়বে। ইনশাআল্ল-হ
আগামীকাল এ স্থানে অমুকের লাশ পড়বে। উমার (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি তাকে
সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন; যে সকল স্থান রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দিষ্ট করেছিলেন, ঐ
স্থান হতে একটুখানিও এদিক-সেদিক সরে পড়েনি।
(বর্ণনাকারী বলেন,) অতঃপর লাশগুলোকে একটি
(অনাবাদ) কূপের মাঝে একটির উপর অপরটিকে নিক্ষেপ করা হলো এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কূপটির
কাছে এসে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তোমরা কি তা ঠিক ঠিক পেয়েছ? তবে আমার আল্লাহ
আমাকে যা ওয়াদা দিয়েছেন, আমি অবশ্য তা ঠিক ঠিকভাবে পেয়েছি। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে এমন দেহসমূহের সাথে কথা বলছেন, যাদের মধ্যে কোন প্রাণ
নেই। তিনি বললেন, আমি তাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে বেশি শুনছ না, অবশ্য তারা
আমার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৯৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭৩, আবূ
ইয়া'লা ১৪০, মুসনাদে বাযার ২২২, আবূ ইয়া'লা ১৪০, আল মু'জামুস্ সগীর লিত্ব তবারানী
১০৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দান করা যবগুলো মাপ করার কারণে বরকত উঠে গেল
জাবির (রাঃ) বলেন, একদিন এক লোক রাসূলুল্লাহ
(সা.) -এর কাছে এসে খাদ্য চাইল। তিনি (সা.) তাকে অর্ধ ওয়াসাক পরিমাণ যব দিলেন। তা
হতে সে লোক, তার স্ত্রী ও তাদের মেহমান সর্বদা খেতে থাকে। অবশেষে একদিন সে উক্ত যুবগুলো
মেপে দেখল। ফলে তা নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে ঘটনাটি
জানাল। তখন নবী (সা.) বললেন, তুমি যদি তা না মাপতে, তাহলে তোমরা তা হতে সর্বদা খেতে
পারতে এবং (আমার দেয়া) যবগুলো আগের মতো থেকে যেত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৮১,
সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
বকরির মাংস খেতে খেতে রাসুল সাঃ বললেন এ বকরি মালিকের অনুমতি ছাড়াই আনা
হয়েছে
’আসিম ইবনু কুলায়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা
হতে, তিনি (কুলায়ব) জনৈক আনসারী লোক হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ
(সা.) -এর সাথে এক লোকের জানাযায় গেলাম। পরে আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরের
কাছে উপস্থিত হয়ে কবর খননকারীকে নির্দেশ দিয়ে বলছেন, (এর কবরকে) পায়ের দিকে ও মাথার
দিকে আরো প্রশস্ত কর। অতঃপর তিনি (সা.) দাফন কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসলে মৃত লোকের
(বিধবা) স্ত্রীর পক্ষ হতে এক লোক এসে নবী (সা.) -কে খাদ্যের দাওয়াত দিল। রাসূল (সা.)
দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমরাও খেতে গেলাম। তাঁর সামনে খাদ্য আনা হলে তিনি
তাতে হাত রাখলেন, অতঃপর লোকেরাও হাত বাড়িয়ে খেতে শুরু করল। এ সময় আমরা রাসূলুল্লাহ
(সা.) -এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি মাংসের একটি গ্রাসকে মুখের ভিতরে রেখে নাড়াচাড়া
করছেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, এমন একটি বকরির মাংস বলে আমি একে অনুভব করছি, যা তার
মালিকের অনুমতি ছাড়াই আনা হয়েছে। তখন মহিলাটি [রাসূল (সা.) -এর সন্দেহ জানতে পেরে]
একজন লোক পাঠিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বকরি ক্রয় করার জন্য আমি এক লোককে নাকী বাজারে
পাঠিয়েছিলাম। তা এমন একটি স্থান, যেখানে ভেড়া, বকরি ও দুম্বা ইত্যাদি বিক্রয় হয়;
কিন্তু সেখানে কোন ভেড়া-বকরি পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমার একজন প্রতিবেশীর কাছে পাঠালাম।
সে নিজের জন্য একটি বকরি ক্রয় করেছিল। আমি এই বলে লোকটিকে পাঠিয়েছিলাম, সে যে দামে
বকরিটি ক্রয় করেছে, ঠিক সেই দামেই বকরিটি যেন আমার জন্য পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু সে ব্যক্তিকে
পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমি তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালাম। তখন তার স্ত্রী আমার জন্য
বকরিটি পাঠিয়ে দিয়েছে (এটা সেই বকরিরই মাংস)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন,
এ খাদ্যগুলো বন্দিদেরকে খাইয়ে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৯৪২, সুনান আবূ দাউদ ৩৩৩২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১১১৪০, ইরওয়া
৩/১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দুর্বল বকরি থেকে পর পর দুইবার দুধ দোহন
হিযাম ইবনু হিশাম তাঁর পিতার মাধ্যমে, তিনি
তাঁর দাদা উম্মু মা’বাদ-এর ভাই হুবায়শ ইবনু খালিদ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) যখন মক্কাহ্ হতে বহিস্কৃত হলেন, তখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করলেন। তাঁর সাথে
ছিলেন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস ’আমির ইবনু ফুহায়রাহ্
এবং পথপ্রদর্শক ’আবদুল্লাহ আল লায়সী। পথ অতিক্রমকালে তাঁরা উম্মু মা’বাদ (রাঃ) হতে
মাংস এবং খেজুর ক্রয় করতে চাইলেন, কিন্তু তার কাছে এর কিছুই পাননি। মূলত সে সময় লোকেরা
অনাহার ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত ছিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁবুর এক পার্শ্বের
একটি বকরি দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন কররেন, হে উম্মু মা’বাদ! এ বকরিটির কি হয়েছে?
সে বলল, এটা এতই দুর্বল যে, দলের বকরিগুলোর সাথে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। তিনি (সা.)
প্রশ্ন করলেন, এতে কি দুধ আছে? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) বলল, সে নিজেই বিপদগ্রস্তা; অতএব
দুধ দেবে কিভাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি আমাকে এ অনুমতি দেবে যে, আমি
তার দুধ দোহন করি? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) আগ্রহের সাথে বলল, আমার পিতামাতা আপনার ওপর উৎসর্গ
হোক! আপনি যদি তার স্তনে দুধ দেখতে পান, তাহলে তা দোহন করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.)
বকরিটিকে কাছে আনলেন, তারপর বকরিটির স্তনে হাত বুলালেন এবং বিসমিল্লা-হ পড়ে উম্মু
মা’বাদ-এর জন্য তার বকরির বিষয়ে (বরকতের) দুআ করলেন। তখন বকরিটি দোহনের জন্য নিজের
রান দুটি প্রশস্ত করে রাসূল (সা.) -এর সামনে দাঁড়িয়ে জাবর কাটতে লাগল। এদিকে দুধ
দোহনের জন্য নবী (সা.) - এত বড় একটি পাত্র চাইলেন, যা দ্বারা একদল লোক তুষ্টির সাথে
পান করতে পারে। প্রবাহিত ঢলের মতো তিনি তাতে দুধ দোহন করলেন, এমনকি তার উপর ফেনাও জমে
গেল। অতঃপর তিনি উম্মু মা’বাদ-কে পান করতে দিলেন। সে তুষ্ট হয়ে পান করল। পরে তিনি
(সা.) সাথিদেরকে পান করালেন, তারাও পরিতৃপ্তি লাভ করলেন এবং সকলের শেষে রাসূলুল্লাহ
(সা.) নিজে পান করলেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) - দ্বিতীয়বার
দোহন করলেন, এমনকি সেই পাত্রটি এবারও দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি সেই দুধ উম্মু
মা’বাদ-এর কাছে রেখে দিলেন। (যেন তার স্বামীও নবী (সা.) -এর মু’জিযাকে প্রত্যক্ষ করতে
পারে) এবং উম্মু মা’বাদ-এর তরফ হতে ইসলামের বায়’আত গ্রহণ করে তাঁরা সামনের দিকে যাত্রা
করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪৩, বায়হাক্বী ১/২৭৬-২৭৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বদর যুদ্ধের দিন জিবরীল আলায়হিস সালাম রাসুল সাঃ এর ঘোড়ার লাগাম ধরেছিলেন
ইবনু আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। বদর যুদ্ধের
দিন নবী (সা.) বললেন, এই তো জিবরীল আলায়হিস সালাম তার ঘোড়ার মাথা (লাগাম) ধরে আছেন।
তিনি যুদ্ধাস্ত্রে সাজানো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৮৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৯৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১৫, সহীহুল
জামি' ৬৯৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বদর যুদ্ধের দিন তৃতীয় আসমান থেকে ফেরেশ্তা এসে জনৈক মুশরিককে চাবুক মারল
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
সেদিন (বদর যুদ্ধের দিন) জনৈক মুসলিম তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করছিলেন,
এমন সময় তিনি তার ওপর হতে একটি চাবুকের এবং এক অশ্বারোহীর আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি
বলেছিলেন, “হে হায়যূম! (ফেরেশতার ঘোড়ার নাম) অগ্রসর হও।” এ সময় তিনি দেখতে পেলেন,
সেই সম্মুখস্থ মুশরিক লোক চিত হয়ে পড়ে আছে। অতঃপর তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তার নাকের
উপর আঘাতের চিহ্ন এবং মুখ ফেটে রয়েছে। চাবুকের আঘাতের মতো সমস্ত স্থান নীল বর্ণ হয়ে
রয়েছে। অতঃপর সে আনসারী রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করলে তিনি
বললেন, তুমি সত্যই বলেছ। তিনি তৃতীয় আকাশের সাহায্যকারী মালায়িকার একজন ছিলেন। ইবনু
আব্বাস (রাঃ) বলেন, মুসলিমগণ সেদিন (বদরের দিন) সত্তরজন মুশরিককে হত্যা এবং সত্তরজনকে
বন্দি করেছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৭৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৭৬৩, মুসনাদে বাযযার ১৯৬, ইরওয়া ৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ডানে ও বামে সাদা পোশাক পরিহিত
জিবরীল ও মীকাঈল আলায়হিস সালাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে রক্ষার জন্য প্রচণ্ডভাবে লড়াই
করেছেন
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ডানে ও বামে সাদা পোশাক পরিহিত
দু’জন লোককে দেখলাম, তারা [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর] রক্ষার জন্য প্রচণ্ডভাবে লড়াই করছেন।
ঐ দু’জনকে আমি পূর্বেও কোনদিন দেখিনি কিংবা পরেও, তারা দু’জন ছিলেন জিবরীল ও মীকাঈল
আলায়হিস সালাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৭৫, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৯৮-৫৮৯৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৩০৬, মুসনাদে আহমাদ ১৫৩০, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
পায়ের উপর হাত বুলাতেই পা ব্যথামুক্ত হয়ে গেল
বারা’ (ইবনু ’আযিব) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদিন নবী (সা.) একদল লোক (ইয়াহুদী নেতা) আবূ রাফি’-কে হত্যার জন্য পাঠালেন।
সে দলের মধ্য হতে ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আতীক (রাঃ), এক রাত্রে তার (আবূ রাফি’-এর) গৃহে
প্রবেশ করলেন, তখন সে (আবূ রাফি’) ঘুমিয়ে ছিল এবং সে অবস্থায় তাকে হত্যা করেন। এ
প্রসঙ্গে ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আতীক (রাঃ) বলেন, আমি তরবারি তার পেটের উপর ধরলাম এবং তা
পিঠ পর্যন্ত পৌছল। তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে, তাকে হত্যা করেছি। অতঃপর আমি একটি একটি
করে দরজা খুলে (ফিরে আসার পথে) সিড়িতে পৌছলাম। তা ছিল জোৎস্না রাত, তাই (দু’এক ধাপ
থাকতেই সিড়ি শেষ হয়েছে ভেবে) নীচে পা রাখতেই আমি পড়ে গেলাম। ফলে আমার পায়ের গোড়ালির
হাড় ভেঙ্গে গেল। তখন আমি পাগড়ি দিয়ে ভাঙ্গা পা’টি বেঁধে ফেললাম। তারপর আমি আমার
সাথিদের কাছে আসলাম।
অবশেষে নবী (সা.) -এর কাছে পৌছে ঘটনাটি বর্ণনা
করলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার পা’টি মেল। আমি পা মেলে ধরলাম। তিনি (সা.) সে পা’টির
উপর হাত বুলালেন। এতে আমার পা এমনভাবে ব্যথামুক্ত হয়ে গেল যেন তাতে আমি কক্ষনো আঘাতই
পাইনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৭৬, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০২২, ৪০৩৯, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৫৬৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
খন্দকের যুদ্ধের শুরুতে ১০০০ লোক পেট পুরে খাওয়ার পরও ডেকছির মাংস ও আটার
খামির আগের মতোই রইল
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের
যুদ্ধের শুরুতে আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এ সময় এক খণ্ড শক্ত পাথর দেখা দিল। তখন লোকেরা
এসে নবী (সা.) -কে বলল, খাল খননকালে একটি শক্ত পাথর দেখা দিয়েছে (যা কোদাল কিংবা শাবল
দ্বারা ভাঙা যাচ্ছে না)। তখন নবী (সা.) বললেন, আচ্ছা, আমি নিজেই গর্তে নামব। অতঃপর
তিনি (সা.) দাঁড়ালেন, সে সময় তার পেটে পাথর বাধা ছিল। আর আমরাও তিনদিন যাবৎ কিছুই
খেতে পাইনি। এমতাবস্থায় নবী (সা.) কোদাল হাতে নিয়ে পাথরটির উপর আঘাত করলে তা চূর্ণবিচূর্ণ
হয়ে বালুকণায় পরিণত হয়। জাবির (রাঃ) বলেন, [নবী (সা.)-কে ক্ষুধার্ত অবস্থায় পেয়ে]
আমি আমার স্ত্রীর কাছে এসে বললাম, তোমার কাছে কি খাওয়ার মতো কিছু আছে? কেননা আমি নবী
(সা.) -কে ভীষণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। তখন সে একটি চামড়ার পাত্র হতে এক সা’ পরিমাণ যব
বের করল আর আমাদের পোষা একটি বকরির ছানা ছিল। তখন আমি সেই ছানাটি যাবাহ করলাম এবং আমার
স্ত্রীও যব পিষল। অবশেষে আমরা হাঁড়িতে মাংস চড়ালাম। অতঃপর নবী (সা.) -এর কাছে এসে
তাকে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আমাদের ছোট একটি বকরির বাচ্চা যাবাহ
করেছি। আর এক সা যব ছিল, আমার স্ত্রী তা পিষেছে। অতএব আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে
চলুন। (এ কথা শুনে) নবী (সা.) উচ্চৈঃস্বরে সকলকে ডেকে বললেন, হে খাল খননকারীগণ! আসো,
তোমরা তাড়াতাড়ি চল, জাবির তোমাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেছে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি যাও,
কিন্তু আমি না আসা পর্যন্ত মাংসের ডেকচি নামাবে না এবং খামিরগুলো নবী (সা.) -এর সামনে
আগিয়ে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশালেন এবং বরকতের জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর ডেকচির
কাছে অগ্রসর হয়ে তাতেও লালা মিশিয়ে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। এরপর তিনি (আমার স্ত্রীকে
লক্ষ্য করে) বললেন, তুমি আরো রুটি প্রস্তুতকারিণীকে আহ্বান কর, যারা তোমাদের সাথে রুটি
বানায় এবং চুলার উপর হতে ডেকচি না নামিয়ে তা হতে নিয়ে পরিবেশন কর। (জাবির রা. বলেন)
সাহাবীদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে
চলে যাওয়ার পরও তরকারি ভর্তি ডেচকি ফুটছিল এবং প্রথম অবস্থার মতো আটার খামির হতে রুটি
প্রস্তুত হচ্ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৭৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৩৯, আল মুসতাদরাক
লিল হাকিম ৪৩২৪, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৪৯৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১৪২, ইসলামিক
সেন্টার ৫১৫৪ )। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) –এর কথায় দুটি গাছ মিলিত হয় আবার নিজ স্থানে সরে যায়
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে যাচ্ছিলাম। চলার পথে আমরা একটি বিস্তীর্ণ ময়দানে
অবতরণ করলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য গেলেন, কিন্তু আড়াল
করার জন্য কিছুই পেলেন না। এ সময় হঠাৎ ময়দানের এক পার্শে দুটি গাছ দেখা গেল। রাসূলুল্লাহ
(সা.) তখন তার একটির কাছে গেলেন এবং তার একটি ডাল ধরে বললেন, আল্লাহর হুকুমে তুমি আমার
অনুগত হও, গাছটি তৎক্ষণাৎ এমনভাবে তার অনুগত হলো, যেমন নাকে রশি লাগানো উট তার চালকের
অনুগত হয়ে থাকে। এবার তিনি (সা.) দ্বিতীয় বৃক্ষটির কাছে যেয়ে তার একটি শাখা ধরে
বললেন, আল্লাহর নির্দেশে তুমি আমার অনুগত হও। অতএব বৃক্ষটি সাথে সাথেই তার প্রতি অনুরূপ
ঝুঁকে পড়ল। অবশেষে যখন তিনি (সা.) উভয় বৃক্ষের মধ্যখানে গিয়ে দাঁড়ালেন, তখন বললেন,
আল্লাহর হুকুমে তোমরা উভয়ে আমার জন্য মিলিত হয়ে যাও। তখনই তারা মিলিত হয়ে গেল (তার
আড়াল হয়ে হাজত পূরণ করলেন)। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বসে এই বিস্ময়কর ঘটনার কথা
মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম। এ অবস্থায় হঠাৎ আমি একদিকে তাকাতেই দেখি, রাসূলুল্লাহ
(সা.) তাশরীফ এনেছেন। আর বৃক্ষ দু’টিকেও দেখলাম তারা পুনরায় আলাদা হয়ে গেছে এবং প্রত্যেকটি
আপন আপন জায়গায় গিয়ে যথারীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০১২,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫২৪, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
জখমের উপর তিনবার ফুঁ দিলেন আর কষ্ট দূর হলো
ইয়াযীদ ইবনু আবূ ’উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি সালামাহ্ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ)-এর পায়ের গোছায় আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রশ্ন
করলাম, হে আবূ মুসলিম! আঘাতটি কিসের? তিনি বললেন, এ আঘাত খায়বার যুদ্ধে লেগেছিল। তখন
লোকেরা বলাবলি করছিল, সালামাহ্ মৃত্যুবরণ করেছেন। সালামাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি নবী
(সা.) -এর কাছে আসলাম। তিনি আমার জখমের উপর তিনবার ফুঁ দিলেন, ফলে সে সময় হতে অদ্যাবধি
আর আমার কোন প্রকারের কষ্ট হয়নি। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৮৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২০৬, মুসনাদে আহমাদ ১৬৫৬২, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৬৫১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতির সংবাদ আসার আগেই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলে দিতেন
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ
(ইবনু হারিসাহ্), জাফর (ইবনু আবূ তালিব) ও (আবদুল্লাহ) ইবনু রওয়াহাহ-এর মৃত্যু সংবাদ
যুদ্ধের ময়দান হতে আসার আগেই নবী (সা.) লোকেদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। রণক্ষেত্রের বর্ণনা
তিনি (সা.) এভাবে দিয়েছেন- যায়দ পতাকা হাতে নিয়েছে, সে শহীদ হয়েছে। তারপর জাফর
পতাকা হাতে নিয়েছে, সেও শহীদ হয়েছে। অতঃপর ’আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ পতাকা ধরেছে,
সেও শহীদ হয়েছে। (বর্ণনাকারী বলেন,) এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চক্ষুদ্বয় হতে
অশ্রুধারা প্রবাহিত ছিল। এরপর তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহর তরবারিসমূহের এক তরবারি [খালিদ
ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)] পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের ওপর মুসলিমদের
বিজয়ী করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৮৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৭৫৭, মুসনাদে আহমাদ ১২১৩৫, সহীহুল জামি ২২৩, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত তারহীব ১৩৬৪, আবূ ইয়া'লা ৪১৮৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৭০৪০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
একমুষ্টি পাথর হাতে নিয়ে কাফিরদের মুখের প্রতি নিক্ষেপ করায় শত্রুদল পরাজিত
হলো
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের
যুদ্ধে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে শরীক ছিলাম। যখন মুসলিমগণ ময়দান হতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন
করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের বাহন খচ্চরকে তাড়া দিয়ে কাফিরদের দিকে অগ্রসর হলেন।
[বর্ণনাকারী ’আব্বাস (রাঃ) বলেন] আর আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর খচ্চরের লাগাম ধরে
রেখেছিলাম এবং আমি তাঁকে সামনে বাড়তে বাধা দিচ্ছিলাম, যেন তা দ্রুত কাফিরদের দলের
মধ্যে ঢুকে না পড়ে। আর আবূ সুফইয়ান ইবনু হারিস ধরে রেখেছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)
-এর বাহনের গদি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আব্বাস! সামুরাহ
গাছের নিচে বায়’আতকারীদেরকে আহ্বান করুন। আব্বাস (রাঃ) ছিলেন উচ্চৈঃস্বর বিশিষ্ট লোক।
তিনি বলেন, তৎক্ষণাৎ আমি উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিয়ে বললাম, আসহাবে সামুরাগণ কোথায়? ’আব্বাস
(রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার আওয়াজ (আহ্বান) শুনার সাথে সাথেই আসহাবেই সামুরাগণ
এমনভাবে দৌড়িয়ে ময়দানে এসে উপস্থিত হলেন, যেমন গাভী তার বাছুরের দিকে দৌড় দেয়।
আর তারা আওয়াজ দিতে থাকল-
(يَا
لَبَّيْكَ
يَا
لَبَّيْكَ)
’ইয়া লাব্বাইক, ইয়া লাব্বাইক। আমরা উপস্থিত! আমরা উপস্থিত।
আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর মুসলিমগণ কাফিরদের
সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে গেল। অন্যদিকে আনসারদের মধ্যে এ ধ্বনি উচ্চারিত হয়- হে আনসার
সম্প্রদায়। হে আনসার সম্প্রদায়! (শত্রু নিধনে ঝাপিয়ে পড়) ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর
তাদের ধ্বনি (একমাত্র) বানী হারিস ইবনু খাযরাজের ওপর সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। (আনসারদের
মধ্যে এ গোত্রটি ছিল সর্বাপেক্ষা বড়) এই সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ বাহন খচ্চরের
উপরে থেকে মাথা উঠিয়ে যুদ্ধের অবস্থার দিকে তাকিয়ে বললেন, এখনই যুদ্ধ জ্বলে উঠেছে।
অতঃপর তিনি একমুষ্টি পাথর হাতে নিয়ে কাফিরদের মুখের প্রতি নিক্ষেপ করে বললেন, মুহাম্মাদের
প্রভুর শপথ! কাফিরদল পরাজিত হয়েছে। [বর্ণনাকারী ’আব্বাস (রাঃ) বলেন] আমি আল্লাহর শপথ
করে বলছি, তাদের এ পরাজয় কেবলমাত্র তাঁর [রাসূল (সা.) -এর] কঙ্কর নিক্ষেপের দ্বারাই
ঘটেছে। অতঃপর আমি যুদ্ধের সমাপ্তি অবধি সর্বক্ষণ তাই দেখতে পেলাম যে, তাদের তলোয়ার
ও বর্শার ধার ভোঁতা হয়ে পড়েছে এবং তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাচ্ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৫০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৭৫, মুসনাদে আহমাদ ১৭৭৫, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯৭৪১,
আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৮৬৫৩, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৫৪১৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এক মুষ্টি মাটি তুলে নিয়ে কাফিরদের মুখের প্রতি নিক্ষেপ করায় শত্রুদল পরাজিত
হলো
সালামাহ্ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে শরীক ছিলাম। রাসূলুল্লাহ
(সা.) -এর কতিপয় সাহাবী কাফিরদের মোকাবিলা হতে যখন পলায়ন করলেন। তখন কাফিরগণ রাসূলুল্লাহ
(সা.) -কে চতুর্দিক হতে ঘিরে ফেলল, এমতাবস্থায় তিনি (সা.) খচ্চরের পিঠ হতে নিচে নামলেন।
অতঃপর তিনি জমিন হতে এক মুষ্টি মাটি তুলে নিলেন। তারপর কাফিরদের অভিমুখে (شَاهَتِ الْوُجُوهُ) ’তোমাদের মুখ বিবর্ণ
হোক’ এ অভিশাপ বাক্যটি উচ্চারণ করে তা নিক্ষেপ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন,) তাদের যে
কোন লোককে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন (উপস্থিত কাফিরদের) প্রত্যেকের চক্ষুদ্বয় উক্ত
এক মুষ্টি মাটি দ্বারা ভর্তি হয়ে গেল। ফলে তারা ময়দান হতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। এভাবে
আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরাজিত করলেন। পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের হতে লব্ধ গনীমাতের
সম্পদসমূহ মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৮৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৫১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৭৭, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৬৫২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৮২৪)। মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)।
হুনায়নের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে লোকটির বিষয়ে ভবিষ্যত বানী করেছেন
সে জাহান্নামী
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
হুনায়নের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম। সে যুদ্ধে তাঁর
সাথে অংশগ্রহণকারী ইসলামের দাবিদার জনৈক লোক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ লোকটি
জাহান্নামী।
যুদ্ধ শুরু হলে সে ব্যক্তি প্রাণপণ যুদ্ধ করে
মারাত্মকভাবে আহত হলো। অতঃপর এক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! লক্ষ্য করুন। আপনি
যে লোকটিকে জাহান্নামী বলেছেন, সে আল্লাহর পথে প্রাণপন লড়াই করে এখন মারাত্মকভাবে
আহত অবস্থায় আছে। এবারও তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। (বর্ণনাকারী বলেন,) এ কথা শুনে
কারো কারো মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো। এমতাবস্থায় লোকটি ভীষণভাবে জখমের যন্ত্রণায় অস্থির
হয়ে স্বীয় হাতখানা তীরদানের দিকে বাড়িয়ে তীর বের নিল এবং নিজের বুকের মধ্যে গেঁথে
দিল (তথা আত্মহত্যা করল)। এটা দেখে মুসলিমদের কতিপয় লোক দৌড়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)
-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনার কথাটিকে সত্যে পরিণত করেছেন।
অমুক লোকটি নিজেই আত্মহত্যা করেছে। এ সংবাদ শোনামাত্রই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলে উঠলেন,
’আল্ল-হু আকবার’। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
অতঃপর বললেন, হে বিলাল! উঠ! লোকেদের মধ্যে
এ ঘোষণা দিয়ে দাও যে, পূর্ণ মুমিন ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর আল্লাহ
তা’আলা (অনেক সময়) পাপী লোকের দ্বারাও এ দীন ইসলামকে শক্তিশালী করে থাকেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪২০৪, মুসনাদে আহমাদ ১৭২৫৭, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯৫৭৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫১৯,
আল মুজামুল আওসাত ৩৩৯৩, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৫০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
স্বপ্নযোগে রাসুল সাঃ যাদুকরের নাম জানতে পারলেন
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর জাদু করা হয়। ফলে তাঁর অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তার
ধারণা হত তিনি কোন একটি কাজ করেছেন অথচ তা তিনি করেননি। এ অবস্থায় একদিন তিনি (সা.)
আমার কাছে ছিলেন এবং আল্লাহর নিকট বার বার দু’আ করলেন। অতঃপর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন,
তুমি কি অবগত হয়েছ, আমি যা জানতে চেয়েছিলাম আল্লাহ তা’আলা আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন।
আমার কাছে দু’জন লোক (মানব আকৃতিতে দু’জন ফেরেশতা) আসে। তাদের একজন আমার মাথার কাছে
এবং অপরজন আমার পায়ের কাছে বসে পড়ল। এরপর তাদের একজন আপন সাথিকে বলল, এ লোকের অসুখটা
কি? বলল, তার ওপর জাদু করা হয়েছে। প্রথমজন জিজ্ঞেস করল, কে তাকে জাদু করেছে? সে উত্তর
দিল, ইয়াহুদী লাবীদ ইবনু আসাম। প্রথম লোক প্রশ্ন করল, তা কিসের সাহায্যে (করা হয়েছে?)
দ্বিতীয় লোকটি বলল, চিরুনি এবং চিরুনিতে ঝরে পড়া চুলের মধ্যে এবং পুরুষ খেজুর গাছের
নতুন খোলের মধ্যে। [’আয়িশাহ (রা.) বলেন,] অতঃপর নবী (সা.) তাঁর কিছু সাহাবীসহ সে কূপের
কাছে গেলেন। এরপর বললেন, এটাই সেই কূপ যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। তার পানি মেহেদি
নিংড়ানো। আর কূপের আশপাশের খেজুর গাছগুলোর মাথা যেন শয়তানের মাথার মতো। অতঃপর তা
কূপ হতে বের করে ফেলেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৯৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৯৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২১৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৪৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৩৫১৯, আবূ ইয়ালা
৪৮৮২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৬৯৩৬, মুসনাদে আহমাদ ২৪৩৪৫, আস্ সুনানুল কুবরা
লিন্ নাসায়ী ৭৬১৫, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৫৯২৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৬৯৩৬,
আস্ সুনানুস্ সুগরা ৩৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়ায় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর মা হেদায়েতপ্রাপ্ত
হোন
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি সর্বদা আমার মাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতাম, কেননা তিনি ছিলেন মুশরিকা। এমনি একদিন
আমি তাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করলে তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শানে এমন কিছু
শুনালেন, যা আমার কাছে বড়ই খারাপ লেগেছে। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসলাম
এবং কেঁদে কেঁদে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আবূ হুরায়রাহ্-এর
মাকে হিদায়াত করেন। তখন তিনি (সা.) এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তুমি আবূ হুরায়রাহ্-এর
মাকে হিদায়াত নসীব কর। [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন] নবী (সা.) -এর দু’আ শুনে আমি আনন্দে
বের হয়ে (বাড়ির দিকে) ফিরলাম। অতঃপর আমি আমার মায়ের ঘরের দরজায় পৌছে দেখলাম, দরজাটি
বন্ধ। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! তুমি তোমার স্থানে
একটু অপেক্ষা কর। অতঃপর আমি পানি পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। অতএব তিনি গোসল করে জামা-কাপড়
পরিধান করলেন এবং তাড়াহুড়া করে ওড়না পরতে পরতে এসে দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন,
হে আবূ হুরায়রাহ্! ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত ’ইবাদত পাওয়ার যোগ্য
কেউ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। সাথে সাথে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)
-এর কাছে ফিরে আসলাম এবং খুশিতে আমি কাঁদছিলাম। তখন তিনি (সা.) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়
করলেন এবং কল্যাণকর কথা বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৮৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯১, মুসনাদে আহমাদ
৮২৪২, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) স্বীয় চাদর বুকে জড়িয়ে ধরলে আমৃত্যু স্মরণশক্তি ফিরে
পেলেন
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর
কোন কোন সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা বলে থাক, আবূ হুরায়রাহ নবী (সা.) হতে
অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করে থাকে। অথচ আল্লাহর সামনে সকলকে উপস্থিত হতে হবে। প্রকৃত
ব্যাপার হলো, আমার মুহাজির ভাইগণ অধিকাংশ সময় বাজারে ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
আর আমার আনসারী ভাইয়ের বাগানে খামারে লিপ্ত থাকতেন। আর আমি ছিলাম একজন দরিদ্র লোক।
তাই আমি পেটে যা জুটে তার উপর তৃপ্ত থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে উপস্থিত থাকতাম।
একদিন নবী (সা.) বললেন, আমার এ উক্তি (বিশেষ দুআ) শেষ হওয়া অবধি তোমাদের যে কেউ তার
কাপড় (চাদর) প্রসারিত রাখবে এবং আমার কথা শেষ হওয়ার পর তা গুটিয়ে স্বীয় বুকের সাথে
জড়িয়ে নেবে, সে আমার কোন উক্তি কখনো ভুলবে না। (আবূ হুরায়রাহ বলেন, এ কথা শুনার
পর) আমি আমার চাদরখানা প্রসারিত করে দিলাম, তা ব্যতীত আমার কাছে অন্য কোন কাপড় ছিল
না। পরিশেষে নবী (সা.) কথা বলা শেষ করলে আমি তাকে আমার বুকের সাথে চেপে ধরলাম। সেই
মহান সত্তার শপথ! যিনি তাঁকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, সে সময় হতে আজ অবধি তাঁর
কোন কথা আর আমি ভুলিনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৯৬,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২৯৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৪৯৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৫৮৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৭৪, ইসলামিক
সেন্টার ৬২১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসূলুল্লাহ (সা.) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর বুকে হাত রেখে দোয়া করায়
ঘোড়ার পিঠে স্থির হয়ে বসে থাকার শক্তি ফিরে পেলেন
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খলাসাহ্ (ইয়ামানের
একটি মন্দির) হতে শান্তি দেবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ নিশ্চয়। আর আমার অবস্থা এই ছিল
যে, আমি ঘোড়ার পিঠে মজবুতভাবে বসতে পারতাম না। অতএব আমি এ কথাটি নবী (সা.) -এর কাছে
উল্লেখ করলাম, তখন তিনি আমার বুকের উপর তার হাত মারলেন। এমনকি তাঁর আঙ্গুলের নিশানগুলো
আমি আমার বুকের উপর দেখতে পেলাম। অতঃপর তিনি এই বলে আমার জন্য দু’আ করলেন, হে আল্লাহ
তাকে (ঘোড়ার পিঠে) স্থির রাখ এবং তাকে হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে
দাও। এরপর হতে আমি আর কখনো ঘোড়া হতে পড়ে যাইনি। অতঃপর জারীর (কুরায়শ বংশীয়) আহমাস
গোত্রের দেড়শত অশ্বারোহী নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং যুল খলাসাহ্ গৃহটিকে আগুন দ্বারা পুড়ে
ও ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৮৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২৫৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৪৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১৫৯, মুসনাদে আহমাদ ১৯২২৭, মুসনাদুল হুমায়দী ৮০১,
মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩২৩৪২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭২০১, শু’আবূল ঈমান ৮০৪৬, আস্
সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১০৩৫৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ২২০৪, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাকী ১৯০৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
নবী (সা.) এর দোয়ায় জনৈক মুরতাদের লাশ জমিন গ্রহন করেনি
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি
নবী (সা.) -এর ওয়াহী লিখত। পরে সে ইসলাম হতে মুরতাদ হয়ে মুশরিকদের সাথে গিয়ে মিশলো।
তখন নবী (সা.) বললেন, নিশ্চয় মাটি তাকে গ্রহণ করবে না। বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ) বলেন]
আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, ঐ লোকটি যে স্থানে মরেছে, তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে
পান, তার (মৃত দেহটি) জমিনের উপর পড়ে রয়েছে। তখন তিনি লোকজনকে প্রশ্ন করলেন, এ লোকটির
এ অবস্থা কেন? তারা বলল, আমরা কয়েকবার তাকে দাফন করেছিলাম; কিন্তু জমিন তাকে গ্রহণ
করেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৯৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৯৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৮১,
মুসনাদে আহমাদ ১২২৩৬, আস্ সুনানুস্ সুগরা ১০২৮, হিদায়াতুর রুওয়াত ৩৩২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এক বড় মুনাফিকের মৃত্যুতে প্রবলভাবে ধূলিঝড় প্রবাহিত হলো
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
নবী (সা.) কোন এক সফর হতে প্রত্যাবর্তন করলেন। তিনি মদীনার কাছাকাছি হতেই এমন প্রবলভাবে
ধূলিঝড় প্রবাহিত হলো যে, আরোহীকে পুঁতে ফেলার উপক্রম হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,
কোন এক বড় মুনাফিকের মৃত্যুতেই এ ঝড় প্রবাহিত করা হয়েছে। অতঃপর মদীনার ভিতরে প্রবেশ
করে জানতে পারলেন যে, মুনাফিকদের এক বড় নেতার মৃত্যু ঘটেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৯৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৮২, মুসনাদে আহমাদ ১৪৪১৮, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১০২৯,
আবূ ইয়া'লা ২৩০৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৫০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদেশ অমান্য করায় ডান হাত অচল হয়ে গেল
সালামাহ্ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক
লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সম্মুখে বাম হাতে খাচ্ছিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, তুমি তোমার
ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি ডান হাতে খেতে পারি না। তিনি (সা.) বললেন, ডান হাতে খাওয়ার
সাধ্য তোমার না থাকে। আসলে সে অহংকারবশত ডান হাতে খাওয়া হতে বিরত রয়েছে। বর্ণনাকারী
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই অভিশাপ বাক্যে সে আর কোনদিনই তার ডান হাত আপন মুখের
কাছে নিতে পারেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২১, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ
২৪৪৫, দারাকুত্বনী ৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নবী (সা.) খেজুরের স্তুপে বসে পাওনাদারদের সকল পাওনা পরিশোধ করলেন কিন্তু
স্তুপের একটি খেজুরও কমেনি
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা
তাঁর ওপর ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। আমি তাঁর পাওনাদারদেরকে ঋণের পরিবর্তে খেজুর নিতে
অনুরোধ করলাম। কিন্তু তারা তা নিতে অস্বীকার করল। তখন আমি নবী (সা.) -এর কাছে এসে বললাম,
আপনি ভালোভাবে জানেন যে, আমার পিতা (আবদুল্লাহ) উহুদের দিন শহীদ হয়েছেন এবং বহু ঋণ
রেখে গেছেন। অতএব আমার একান্ত বাসনা, সে সমস্ত পাওনাদারগণ আপনাকে উপস্থিত দেখুক। তখন
তিনি (সা.) আমাকে বললেন, তুমি যাও এবং প্রত্যেক প্রকারের খেজুরকে পেড়ে পৃথক পৃথকভাবে
স্তূপীকৃত কর। অতএব আমি তাই করলাম। অতঃপর তাঁকে ডেকে আনলাম। পাওনাদারগণ যখন নবী (সা.)
-কে দেখতে পেল, তখন তারা আমার ওপর আরো অধিক ক্ষেপে গেল এবং সেই মুহূর্তেই ঋণ পরিশোধ
করার জন্য চাপ সৃষ্টি করল। তাদের এ আচরণ দেখে নবী (সা.) স্তূপীকৃত খেজুরের চতুর্দিকে
তিনবার চক্কর দিলেন। পরে স্তূপের উপর বসে বললেন, তোমার পাওনাদারগণকে ডাক। এরপর রাসূল
(সা.) নিজ হাতে তাদেরকে মেপে মেপে দিতে থাকলেন। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা আমার পিতার সম্পূর্ণ
ঋণ পরিশোধ করে দিলেন।
জাবির (রাঃ) বলেন, অথচ আমি এর উপরই সন্তুষ্ট
ছিলাম যে, আল্লাহ তা’আলা যেন আমার পিতার দায়িত্ব পরিশোধ করে দেন এবং আমার বোনদের জন্য
রাখা আল্লাহ খেজুরের স্তূপ থেকে যেন একটি খেজুরও না নেয়া লাগে। একটি সকল স্তূপকেই
পূর্বাবস্থায় রাখলেন। এমনকি তাকিয়ে দেখলাম যে স্তূপের উপর নবী (সা.) বসেছিলেন, তা
হতে একটি খেজুরও কমেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০৬,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৮১, সুনান আননাসায়ী ৩৬৩৬, ইরওয়া ১৪২১, আস্ সুনানুল
কুবরা লিন্ নাসায়ী ৬৪৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মিরাজ
মিরাজ তথা নূরের চলন্ত সিঁড়িযোগে ঊর্ধ্বলোকে
আরোহণ, সপ্তাকাশ পরিভ্রমণ, সৃষ্টিজগতের রহস্য অবলোকন, জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন
ও আল্লাহর দরবারে মহামিলন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুজিজা। তবে কুরআনুল
কারীম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে বড় মুজিযার বস্তু।
মিরাজের বর্ণনা-১
কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
হতে, তিনি মালিক ইবনু সস’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। আল্লাহর নবী (সা.) -কে যে রাত্রে
মি’রাজ করানো হয়েছিল, সে রাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাদেরকে বলেছেন, একদিন আমি কা’বার
হাত্বীম অংশে কাত হয়ে শুয়েছিলাম।
বর্ণনাকারী (কতাদাহ্) কখনো কখনো (হাত্বীম-এর
স্থলে) “হিজর’ শব্দ বলেছেন। এমন সময় হঠাৎ - একজন আগন্তুক আমার কাছে আসলেন এবং তিনি
এ স্থান হতে ওই স্থান পর্যন্ত চিরে ফেললেন। অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ হতে নাভির উপরিভাগ
পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হলো,
এরপর আমার অন্তরকে ধৌত করা হয়, তারপর তাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায়
রাখা হয়।
অপর এক বর্ণনায় আছে- অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা
পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে তাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চেয়ে
ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাকে
বলা হয় ’বুরাক’। তার দৃষ্টি যত দূর যেত, সেখানে তার পা রাখত। নবী (সা.) বলেন, অতঃপর
আমাকে তার উপরে আরোহণ করানো হলো।
এবার জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে
যাত্রা করলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে?
বললেন, (আমি) জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ
(সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন
বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। যখন
আমি ভিতর প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে দেখতে পেলাম ইয়াহইয়া ও ’ঈসা আলায়হিস সালাম-কে।
তারা দু’জন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরীল আলায়হিস সালাম (আমাকে) বললেন, ইনি হলেন ইয়াহইয়া
আলায়হিস সালাম আর উনি হলেন ’ঈসা আলায়হিস সালাম আপনি তাদেরকে সালাম করুন। যখন আমি
সালাম করলাম, তাঁরা উভয়ে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি
সদর সম্ভাষণ।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে তৃতীয়
আসমানে উঠলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল।
আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন
করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর
সম্ভাষণ। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর। অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভিতরে প্রবেশ করে আমি
সেখানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন
ইউসুফ আলায়হিস সালাম তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে
বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে আরো
ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা
হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন,
মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন,
হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন বড়ই শুভ! অতঃপর দরজা খুলে দেয়া
হলো। আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে ইদরীস আলায়হিস সালাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম
বললেন, ইনি ইদরীস আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম, অতঃপর তিনি
জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। এরপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বে
আরোহণ করলেন এবং পঞ্চম আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন,
(আমি) জিবরীল । পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ
(সা.)। আবার প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার
প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে
পৌছলাম, সেখানে হারূন আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন,
ইনি হারূন আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিলেন।
অতঃপর বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে
আরো ঊর্ধ্বলোকে উঠলেন এবং ষষ্ঠ আকাশে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে?
বললেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)! পুনরায়
প্রশ্ন করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হা। বলা হলো, তার প্রতি সাদর
সম্ভাষণ। তারা আগমন কতই না উত্তম! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম,
তখন সেখানে মূসা আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি
হলেন, মূসা আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি তার জবাব দিয়ে
বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাঁকে অতিক্রম
করে অগ্রসর হলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন?
তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানিয়ে) পাঠানো হলো,
যার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে সপ্তম
আকাশে আরোহণ করলেন। অনন্তর জিবরীল আলায়হিস সালাম দরজা খুলতে বললে, প্রশ্ন করা হলো,
কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ
(সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর
বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ
করলাম সেখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন,
ইনি হলেন আপনার পিতা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম
করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর আমাকে ’সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো
হলো। আমি দেখতে পেলাম, তার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতির
কানের মতো। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরো দেখতে
পেলাম চারটি নহর। দু’টি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল!
এ নহরের তৎপর্য কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হলো জান্নাতে প্রবাহিত দু’টি নহর। আর
প্রকাশ্য দুটি হলো (মিসরের) নীল এবং (ইরাকের) ফুরাত নদী। অতঃপর আমাকে বায়তুল মা’মূর’
দেখানো হলো। তারপর আমার সামনে হাজির করা হলো এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র
মধু। তার মধ্য হতে আমি দুধ গ্রহণ করলাম (এবং তা পান করলাম)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম
বললেন, এটা ফিত্বরাত’-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত সত্যের উপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।
অতঃপর আমার ওপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত
ফরয করা হলো। আমি (তা গ্রহণ করে) প্রত্যাবর্তন করলাম। মূসা আলায়হিস সালাম-এর সম্মুখ
দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি (আমাকে) বললেন, আপনাকে কি করতে আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম,
দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ
(ওয়াক্ত) সালাত সম্পাদনে সক্ষম হবে না। আল্লাহর শপথ! আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের)
লোকেদেরকে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলদের হিদায়াতের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম
করেছি। অতএব আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (সালাত) আরো
হ্রাস করার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরে গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানালে) আল্লাহ
তা’আলা আমার ওপর হতে দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। তারপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর
নিকট ফিরে আসালাম। তিনি এবারও অনুরূপ কথা বললেন। ফলে আমি আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে
ফিরে গেলাম। তিনি আমার ওপর হতে আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা
আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। তাই আমি (আবার) ফিরে
গেলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) মাফ করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস
সালাম-এর নিকট ফিরে আসলে আবারো তিনি ঐ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা
আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত) সালাত কম করে দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) সালাতের
আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। এবারও তিনি অনুরূপ কথাই
বললেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরে গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো।
আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পুনরায় ফিরে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে
(সর্বশেষ) কি করতে আদেশ করা হলো? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ
করা হয়েছে।
তিনি বললেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত)
সালাত সমাপনে সক্ষম হবে না। আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে বিশেষভাবে
পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার
করেছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো কম করার প্রার্থনা
করুন। তিনি (সা.) বললেন, আমি আমার প্রভুর কাছে (স্বীয় কর্তব্য পালনের জন্য) এত অধিকবার
প্রার্থনা জানিয়েছি যে, পুনরায় প্রার্থনা জানাতে আমি লজ্জাবোধ করছি, বরং আমি (আল্লাহর
এ নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর ওপর অর্পণ
করছি। তিনি (সা.) বলেন, আমি যখন মূসা আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করে সম্মুখে অগ্রসর
হলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি
চালু করে দিলাম এবং বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪, সুনান আননাসায়ী ৪৪৮, সহীহুল জামি' ২৮৬৬, মুসনাদে আহমাদ
১৭৮৬৭, সহীহ ইবনু খুযায়মা ৩০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৮, আস্ সুনানুস্ সুগরা ২২৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
মিরাজের বর্ণনা-২
সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার সামনে বুরাক’ উপস্থিত করা হলো। তা
শ্বেত বর্ণের লম্বা কায়াবিশিষ্ট একটি জানোয়ার, গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা
ছোট। তার দৃষ্টি যত দূর যেত সেখানে পা রাখত। আমি তাতে আরোহণ করে বায়তুল মাক্বদিসে
এসে পৌছলাম এবং অন্যান্য নবীগণ যে স্থানে নিজেদের বাহন বাঁধতেন, আমিও আমার বাহনকে সেখানে
বাঁধলাম। নবী (সা.) বলেন, অতঃপর বায়তুল মাকদিসের মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দু’রাকআত
সালাত আদায় করলাম। তারপর মাসজিদ হতে বের হলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমার কাছে
এক পাত্র মদ ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল
আলায়হিস সালাম বললেন, আপনি (ইসালামরূপী) ফিত্বরাত (স্বভাব-ধর্ম ইসালাম গ্রহণ করেছেন।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে আকাশের
দিকে নিয়ে চললেন, এর পরবর্তী অংশ সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে পূর্ববর্ণিত
হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করেছেন।
নবী (সা.) বলেন, হঠাৎ আমি আদম আলায়হিস সালাম
-কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং আমার জন্য ভালো দু’আ করলেন।
নবী (সা.) এটাও বলেছেন যে, তিনি তৃতীয় আকাশের ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর সাক্ষাৎ লাভ
করেছেন। তিনি এমন লোক যে, তাঁকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হয়েছে। তিনিও
আমাকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে আমার জন্য ভালো দুআ করলেন। সাবিত (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,
এবং মূসা আলায়হিস সালাম এর কান্নার বিষয়টি এতে উল্লেখ নেই।
নবী (সা.) আরো বলেছেন, সপ্তম আকাশে আমি ইবরাহীম
আলায়হিস সালাম -কে দেখতে পেলাম যে, তিনি বায়তুল মা’মূরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে আছেন।
সে ঘরে দৈনিক সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করেন। যারা একবার বের হয়েছেন, পুনরায়
তারা আর প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায়
নিয়ে গেলেন। তার পাতাগুলো হাতির কানের মতো এবং তার ফল মটকার মতো। এরপর উক্ত গাছটি
আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তুতে পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট
কোন মাখলুক যার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হবে না।
এরপর আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠালেন,
যা তিনি পাঠিয়েছেন এবং আমার ওপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। ফেরার সময়
আমি মুসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে আসলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনার প্রভু আপনার
উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি
আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বললেন, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং (সালাতের সংখ্যা)
কম করার জন্য তার কাছে আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এটা দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত
সম্পাদন করতে সক্ষম হবে না। আমি বানী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।
তিনি (সা.) বলেন, তখন আমি আমার প্রভুর কাছে
ফিরে গিয়ে বললাম, হে আমার প্রভু! আমার উম্মাতের ওপর হতে কম করে দিন। তখন আমার ওপর
হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে ফিরে
এসে বললাম, আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিয়েছেন। মূসা
আলায়হিস সালাম বললেন, আপনার উম্মত তা সম্পাদনেও সমর্থ হবে না। কাজেই আপনি পুনরায়
আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কম করার জন্য আবেদন করুন।
নবী (সা.) বলেন, আমি এভাবে আমার প্রভু ও মূসা
আলায়হিস সালাম -এর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম এবং বার বার সালাতের সংখ্যা কমিয়ে
আনতে থাকলাম। তিনি (সা.) বলেন, সর্বশেষে আমার প্রভু বললেন, হে মুহাম্মাদ! দৈনিক ফরয়
তো এই পাঁচ সালাত এবং প্রত্যেক সালাতের সাওয়াব দশ সালাতের সমান। ফলে এটা (পাঁচ ওয়াক্ত)
পঞ্চাশ সালাতের সমান। যে লোক কোন একটি ভালো কাজ করার সংকল্প করবে, কিন্তু তা সম্পাদন
করেনি, তার জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে এবং সে কাজটি সম্পাদন করলে তার জন্য দশটি পুণ্য
লেখা হবে। আর যে লোক কোন একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে তা বাস্তবায়ন না করে, তার
জন্য কিছুই লেখা হবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তার জন্য একটি
গুনাহই লেখা হবে।
তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করে যখন
মূসা আলায়হিস সালাম -এর নিকট পৌছলাম, তখন তাঁকে পূর্ণ বিবরণ জানালাম। তখন তিনি আমাকে
বললেন, আবারও আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কিছু কমিয়ে দেয়ার জন্য। অনুরোধ করুন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বললাম, আমি আমার প্রভুর কাছে বার বার গিয়েছি। এখন
পুনরায় যেতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৮৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ ৬০, মুসনাদে আহমাদ ২৩৩৮০, আবূ ইয়া'লা ৩৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মিরাজের বর্ননা-৩
ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বর্ণনা করতেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি
মক্কায় থাকাকালীন এক রাত্রে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করা হলো এবং জিবরীল আলায়হিস সালাম
অবতরণ করলেন, এরপর আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। তারপর তাকে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন।
অতঃপর জ্ঞান ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণ-পাত্র এনে তা বুকের মধ্যে ঢেলে বেদিলেন।
তারপর তাকে বন্ধ করে দিলেন।
অতঃপর তিনি (জিবরীল আলায়হিস সালাম) আমার হাত
ধরে আমাকে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হলাম, তখন জিবরীল
আলায়হিস সালাম আসমানের দ্বার রক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। সে বলল, (আপনি) কে? তিনি বললেন,
জিবরীল। সে বলল, আপনার সাথে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার সাথে মুহাম্মাদ
(সা.)। সে বলল, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর যখন সে দরজা খুলল,
তখন আমরা নিকটবর্তী আকাশে আরোহণ করে দেখলাম, সেখানে এক লোক বসে আছেন, তার ডানপার্শ্বে
বহু মানবাকৃতি এবং তার বামপার্শ্বেও অনেক মানবাকৃতি। তিনি ডানদিকে তাকালে হাসেন এবং
যখন বামদিকে তাকান, তখন কাঁদেন। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ, হে সৎ নবী (সা.)! হে পুণ্যবান
সন্তান। আমি জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? বললেন, ইনি আদম আলায়হিস
সালাম ডানে ও বামে এগুলো তাঁর সন্তানের আত্মাসমূহ। ডানদিকে এগুলো জান্নাতী এবং বামদিকের
এগুলো জাহান্নামী। এজন্য তিনি যখন ডানদিকে তাকান, তখন হাসেন এবং যখন বামদিকে তাকান,
তখন কাঁদেন।
অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের দিকে
উঠলেন এবং দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খোল। তখন সে প্রথম দ্বাররক্ষীর মতো প্রশ্ন করল
(তারপর দরজা খুলল)। আনাস (রাঃ) বলেন, বর্ণনাকারী
আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, নবী (সা.) আকাসসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইবরাহীম আলায়হিস
সালাম-কে পেয়েছেন; কিন্তু তিনি (আবূ যার) তাদের অবস্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে বলেননি।
শুধু এটুকু বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) আদম আলায়হিস সালাম-কে নিকটবর্তী আকাশে এবং
ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছেন।
ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু হাযম
প্রথম আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বাহ আল আনসারী একান্ত তারা উভয়ে বলতেন,
নবী (সা.) বলেছেন: অতঃপর আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং আমি এক সমতল স্থানে
পৌছলাম। সেখানে আমি কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম ও আনাস বা বলেন, নবী
(সা.) বলেছেন: তখন মহান আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয
করলেন। আমি তা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলাম। যখন মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পৌছলাম,
তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনার উম্মতের ওপর আল্লাহ তা’আলা কি ফরয করেছেন? আমি বললাম,
পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেন, আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান। কেননা
আপনার উম্মত সক্ষম হবে না। অতঃপর মূসা আলায়হিস সালাম আমাকে ফেরত পাঠালেন। ফলে আল্লাহ
তা’আলা কিছু অংশ কম করে দিলেন। অতঃপর আমি আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে এসে
বললাম, কিছু সালাত কম করে দিয়েছেন। তিনি পুনরায় বললেন, আবারও যান। কেননা আপনার উম্মত
এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবারও আমার রবের কাছে ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা
আবার কিছু মাফ করে দিলেন। আমি আবার মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন,
আবার যান। আরো কিছু সালাত কম করিয়ে আনেন। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম
হবে না। অতএব আমি আবার আমার প্রভুর কাছে গেলাম। এবার আল্লাহ তা’আলা বললেন, এই পাঁচ
সালাতই ফরয, আর তা (সাওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ সালাতের সমান। আমার কথার পরিবর্তন
হয় না। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আবারও আপনি
আপনার রবের কাছে যান।
এবার আমি বললাম, পুনরায় আমার প্রভুর কাছে
যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং
’সিদরাতুল মুনতাহা’য় পৌছলেন। উক্ত গাছটিকে বিভিন্ন বর্ণ ঢেকে ফেলল। প্রকৃতপক্ষে সেটা
কি, তা আমি জানি না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। দেখতে পেলাম তাতে মুক্তার
গম্বুজসমূহ এবং তার মাটি মিশকের। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৮৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩০৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬৩, সুনান আততিরমিযী ৩৩৪৬, সুনান আননাসায়ী ৪৪৮, সহীহুল জামি' ৩০১, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৩১৩, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী
১৫৯৪২, আস্ সুনানুস সুগরা ২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
কারামাত
কারামাত শব্দের অর্থ সম্মানিত হওয়া, মর্যাদাবান
হওয়া, মহৎ হওয়া ও উদার হওয়া।
পরিভাষায় ঐ অলৌকিক কর্মকে কারামাত বলা হয়
যা নেককার মু’মিনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, কিন্তু তা নুবুওয়্যাতের দাবির সাথে হবে
না এবং তার উদ্দেশ্য কাফির ও মুশরিকদের বিরোধিতা ও মোকাবেলায়ও হবে না। কেননা যে অলৌকিক
কর্ম নুবুওয়্যাতের দাবীর সাথে হয় এবং তার উদ্দেশ্য কাফির ও মুশরিকদের বিরোধিতা ও
মোকাবেলা হয়, তাকে মু’জিযা বলা হয়। এর দ্বারা মু’জিযাহ্ ও কারামাতের পার্থক্য গেল
বুঝা গেল। ওয়ালীদের কারামাতসমূহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের নিকট প্রমাণিত। আহলুস্
সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের ’আক্বীদাহ হলো ওয়ালীদের কারামাতের প্রতি ঈমান রাখা। আর তা
সত্য। এটা এমন একটা বিষয় যা আল্লাহ তার কোন কোন বান্দাকে যখন দরকার তখন অথবা তার শত্রুদেরকে
দেখানোর জন্য ও তাঁর দীনকে বিজয়ী করার জন্য দিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন তাদের
খাদ্য দরকার তখন খাবার দান, পিপাসিত হলে পানি দান; তারা জানে না যে, তা কোথা থেকে আসলো
অথবা অনেক দূর থেকে খাবার আসা, এ জাতীয় অনেক কিছু সংঘটিত হওয়া। অথবা খাবারে বরকত
হওয়া। এটা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে হতে পারে। তবে সে আল্লাহর ওয়ালীকে অবশ্যই আল্লাহর
ও তাঁর রসূলের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।
আর যদি সে লোক ইসলামী শারী’আতের পাবন্দি না
করে, তবে তাঁর কর্ম কারামাত বলে পরিগণিত হবে না। এটা তখন শয়তানের কর্ম হিসেবে বিবেচিত
হবে। আর তা শয়তানদের ফিতনাহ্। কারামাত প্রকাশিত হয় কেবল আল্লাহর মুমিন বান্দাদের
নিকট থেকে। যারা আল্লাহর দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ও তাঁর শারী’আতের অনুসারী বলে জানা যায়।
এদের দ্বারা আল্লাহ যে বিশেষ কর্ম সম্পাদন করিয়ে নেন তাকে কারামাত বলে। (ইমাম ইবনু বায, নূরুন ’আলাদ দারব, কওলু আহলিস্ সুন্নাতি ওয়াল
জামা’আতি ফিল কারামাত)।
বিলায়াতের মানদন্ডের ধারণা
অজ্ঞতার কারণে অনেক মুসলিম ‘কারামত’-কে ওলী
হওয়ার মানদন্ড বলে মনে করেন। তারা ভাবেন যার কারামত নেই তিনি ওলী নন এবং যার কারামত
যত বেশি তিনি তত বড় ওলী। ধারণাটি একেবারেই ভিত্তিহীন। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ)-এর পূর্ববর্তী
আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, এ উম্মাতের সবচেয়ে বড় ওলী সাহাবীগণ। অথচ সাহাবীগণ থেকে
তেমন কোনো কারামত বর্ণিত হয়নি। তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী ও চার ইমাম থেকেও তেমন কোনো কারামত
বর্ণিত হয়নি। পক্ষান্তরে পরবর্তী যুগের অনেক বুজুর্গ থেকে অনেক বেশি কারামত বর্ণিত
হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ঈমান, তাকওয়া, ফরয ও নফল ইবাদত
সদা-সর্বদা পালন, কুরআন ও সুন্নাহের সর্বাত্মক অনুসরণই ওলী হওয়ার প্রমাণ ও চিহ্ন। কোনো
মুসলিম যদি কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে সঠিক ঈমান সংরক্ষণ করেন, হারাম ও নিষেধ বর্জন করেন,
ফরয দায়িত্বগুলো আদায় করেন এবং যথাসম্ভব বেশি বেশি নফল ইবাদত আদায় করেন তবে তিনি আল্লাহর
ওলী। এ সকল বিষয়ে যিনি যতুটুকু অগ্রসর হবেন তিনি ততটুকু আল্লাহর নৈকট্য বা বেলায়াত
অর্জন করবেন। কারামত বা অলৌকিক কর্ম বিলায়াতের প্রমাণ বা মানদন্ড নয়। তবে কোনো ওলীকে
আল্লাহ কারামত দিতে পারেন। এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, মানতে হবে। এখানে সাহাবাগণের
কয়েকটি কারামত উল্লেখ করা হলোঃ
হাতের লাঠিট প্রদীপের মতো আলো দিতে লাগল
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন উসায়দ ইবনু
হুযায়র ও ’আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ) তাঁদের কোন এক প্রয়োজনে দীর্ঘ রাত্র অবধি নবী (সা.)
-এর সাথে কথাবার্তা বলতে থাকেন। রাত্রটি ছিল ঘোর অন্ধকার। অতঃপর যখন তারা (বাড়ির উদ্দেশে)
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছ হতে যাত্রা করলেন এ সময় তাদের প্রত্যেকের হাতে ছোট এক একটি
লাঠি ছিল। পথে বের হওয়ার পর তাদের একজনের লাঠিটি প্রদীপের মতো আলো দিতে লাগল। আর তারা
সে লাঠির আলোয় পথ চলতে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের উভয়ের পথ পৃথক পৃথক হলো, তখন অপরজনের
লাঠিটিও আলোকিত হয়ে উঠল। অবশেষে তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ লাঠির আলোয় নিজেদের বাড়িতে
পৌঁছে গেলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪৪, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮০৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০৫৪১, সহীহ ইবনু হিব্বান ২০৩০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাহাবী জাবির (রাঃ) এর পিতার কথা সত্যে পরিনত হলো
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধ
সমাগত হলে আমার পিতা (আবদুল্লাহ) রাত্রের বেলায় আমাকে ডেকে বললেন, আমার মনে হয় নবী
(সা.) -এর সাথিদের মধ্যে যারা নিহত হবেন, আমিই হব তাঁদের মধ্যে প্রথম নিহত লোক এবং
একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া তোমার চেয়ে প্রিয় লোক আর কাউকেও আমি রেখে যাচ্ছি
না; আর আমি ঋণগ্রস্ত। অতএব আমার ঋণগুলো পরিশোধ করে দেবে এবং তোমার বোনদের সাথে উত্তম
ব্যবহার করবে। জাবির (রাঃ) বলেন, পরের দিন সকাল হলে দেখলাম, তিনিই প্রথম শহীদ লোক এবং
তাকে অন্য আরেক লোকের সাথে একই কবরে দাফন করলাম। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৫১, আস সুনানুল কুবরা লিল
বায়হাকী ১৩০৫৪, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪৯১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ বকর (রাঃ) এর ঘরের মেহমানগণ খাওয়ার পরও তিনগুণ খাবার রয়ে গেল অতপর..
‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) বর্ণনা করেন,
আসহাবে সুফ্ফায় কতক অসহায় গরীব লোক ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার
বললেন, যার ঘরে দু’জনের খাবার আছে সে যেন এদের মধ্য হতে তৃতীয় একজন নিয়ে যায়। আর যার
ঘরে চার জনের খাবার রয়েছে সে এদের মধ্য হতে পঞ্চম একজন বা ষষ্ঠ একজনকে নিয়ে যায় অথবা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন। আবূ বকর (রাঃ) তিনজন নিলেন। আর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে গেলেন দশজন এবং আবূ বকর (রাঃ) তিনজন। ‘আবদুর রহমান
(রাঃ) বলেন, আমি, আমার আববা ও আম্মা। আবূ ‘উসমান (রাঃ) রাবী বলেন, আমার মনে নাই ‘আবদুর
রাহমান (রাঃ) কি এও বলেছিলেন যে, আমার স্ত্রী ও আমাদের পিতা-পুত্রের একজন গৃহভৃত্যও
ছিল। আবূ বকর (রাঃ) ঐ রাতে নবীজীর বাড়িতেই খেয়ে নিলেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানেই
অবস্থান করলেন। ইশার সালাতের পর পুনরায় তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
গৃহে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের খাবার খাওয়া শেষ না হওয়া
পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করলেন। অনেক রাতের পর বাড়ী ফিরলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে
বললেন, মেহমান পাঠিয়ে দিয়ে আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? তিনি বললেন, তাদের কি এখনো রাতের
খাবার দাওনি। স্ত্রী বললেন, আপনার না আসা পর্যন্ত তারা খাবার খেতে রাযী হননি। তাদেরকে
ঘরের লোকজন খাবার দিয়েছিল। কিন্তু তাদের অসম্মতির নিকট আমাদের লোকজন হার মেনেছে। ‘আবদুর
রাহমান (রাঃ) বলেন, আমি তাড়াতাড়ি সরে পড়লাম। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ওরে বেওকুফ! আহম্মক!
আরো কিছু কড়া কথা বলে ফেললেন। অতঃপর মেহমান পক্ষকে সম্বোধন করে বললেন, আপনারা খেয়ে
নিন। আমি কিছুতেই খাব না। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা যখন গ্রাস তুলে
নেই তখন দেখি পাত্রের খাবার অনেক বেড়ে যায়। খাওয়ার শেষে আবূ বকর (রাঃ) দেখলেন তৃপ্ত
হয়ে আহারের পরও পাত্রে খাবার আগের চেয়ে বেশি রয়ে গেছে। তখন স্ত্রীকে বললেন, হে বনী
ফিরাস গোত্রের বোন! ব্যাপার কী? তিনি বললেন, হে আমার নয়নমণি! খাদ্যের পরিমাণ এখন তিনগুণের
চেয়েও অধিক রয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) তা হতে কয়েক লোকমা খেলেন এবং বললেন, আমার কসম শয়তানের
প্ররোচনায় ছিল। অতঃপর অবশিষ্ট খাদ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে
গেলেন এবং ভোর পর্যন্ত ঐ খাদ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিফাযতে রইল।
রাবী বলেন, আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মধ্যে সন্ধি ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে
তাদের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বার জনকে নেতা বানানো হল। প্রত্যেক নেতার অধীনে আবার
কয়েকজন করে লোক ছিল। আল্লাহ্ই ভাল জানেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কতজন করে দেয়া হয়েছিল!
‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, এদের সকলেই এ খাবার হতে খেয়ে নিলেন। অথবা তিনি যেমন বলেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৮১, ৬০২, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৫৭,
মুসনাদে বাযার ২২৬৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/৩৩৮, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৯৮, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৩১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
গায়েবী এক লোক বলে উঠল, তোমরা নবী (সা.) -কে নিজ জামাকাপড় পরিহিত অবস্থায়
গোসল দাও
আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
(সা.) -এর মৃত্যুর পর সাহাবীগণ যখন তাঁকে গোসল দেয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তাঁরা বললেন,
আমরা কি অন্যান্য মৃতের ন্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর গায়ের জামা খুলে গোসল দেব? নাকি
তাঁর ওপর নিজ জামাকাপড় রেখে গোসল দেব? এ ব্যাপারে যখন মতবিরোধ চরমে উঠল, তখন আল্লাহ
তা’আলা তাঁদের ওপর নিদ্রা চাপিয়ে দিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে এমন একজন লোকও বাকি ছিল
না, যার থুতনি নিজের বুকের সাথে গিয়ে লাগেনি। অতঃপর ঘরের এক পার্শ্বে হতে জনৈক উক্তিকারী
বলে উঠলেন, তোমরা নবী (সা.) -কে নিজ জামাকাপড় পরিহিত অবস্থায় গোসল দাও। সে উক্তিকারীকে
লোকেরা তাকে চিনতে পারেননি। অতঃপর তারা উঠে নবী (সা.) -কে জামাসহ গোসল দিলেন। তাঁরা
জামার উপর দিয়ে পানি ঢেলে দিলেন এবং জামা দ্বারা শরীরে মলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪৮, সুনান আবূ দাউদ ৩১৪১, মুসনাদে
আহমাদ ৬/২৬৭, ইবনু সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মুক্ত দাস সাফীনাহ্ (রাঃ)-কে একটি সিংহ পাহাড়া দিয়ে
তাঁর সেনাদলের সাথে মিলিয়ে দিল
ইবনুল মুনকাদির (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মুক্ত দাস সাফীনাহ্ (রাঃ) রোম এলাকায় মুসলিম সেনাদল হতে বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়েছিলেন, অথবা শত্রুরা তাঁকে বন্দি করে ফেলেছিল। অতঃপর তিনি পালিয়ে সেনাদলের
খোঁজাখুজি করতে লাগলেন। এমন সময় হঠাৎ তিনি একটি সিংহের সম্মুখীন হলেন। তখন তিনি সিংহটিকে
লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূল হারিস! আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুক্ত দাস। আর আমার ব্যাপার
হলো এই এই (অর্থাৎ কাফিররা আমাকে বন্দি করেছিল। এখন আমি তাদের কবল থেকে ছুটে এসে আমার
সেনাদলের পথ হারিয়ে ফেলেছি) এ কথা শুনে সিংহটি (আনুগত্যের ভঙ্গিতে) স্বীয় লেজ নাড়তে
নাড়তে তার সামনে অগ্রসর হয়ে পার্শ্বে এসে দাঁড়াল। সিংহটি যখন কোন ভীতিজনক আওয়াজ
শুনতে পেত, তখন সেদিকে ছুঁটে যেত। অতঃপর ফিরে এসে সাফীনার পাশে পাশে চলত। অবশেষে তাঁকে
সেনাদলের কাছে পৌছিয়ে দিয়ে সিংহটি ফিরে চলে গেল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৪৯, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬/৪৬, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক
২০৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আনাস (রাঃ) এর বাগান হতে মিশক কস্তুরীর ঘ্রাণ আসত
আবূ খলদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি আবূল ’আলিয়াহ্-কে প্রশ্ন করলাম, আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে কোন হাদীস শুনেছেন
কি? তিনি বললেন, তিনি তো দশটি বছর তাঁর সেবা করেছেন। নবী (সা.) তাঁর জন্য দু’আ করেছেন।
তার একটি বাগান ছিল, তাতে বছরে দু’বার ফল আসত এবং তাতে এমন কিছু ফল ছিল, যা হতে মিশক
কস্তুরীর ঘ্রাণ আসত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৫২,
সুনান আততিরমিযী ৩৮৩৩, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ২২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাঈদ (রাঃ) এর দোয়ায় মহিলার চোখ অন্ধ হয়ে যায়
’উরওয়াহ্ ইবনুয যুবায়র (রহিমাহুল্লাহ) হতে
বর্ণিত। আরওয়া বিনতু আওস মারওয়ান ইবনু হাকাম-এর কাছে সা’ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ’আমর
ইবনু নুফায়ল-এর বিরুদ্ধে মুকাদ্দামাহ দায়ের করে এবং সে দাবি করে যে, তিনি তার কিছু
ভূমি দখল করে নিয়েছেন। সাঈদ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে এ বিষয়ে একটি হাদীস
শুনার পরও আমি কি তার জমিনের কিছু অংশ দখল করতে পারি? তখন মারওয়ান বললেন, সে হাদীসটি
কি আপনি যা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন? সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ
(সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে লোক কারো এক বিঘত পরিমাণ ভূমি অন্যায়ভাবে কেড়ে নেবে, আল্লাহ
তা’আলা তাকে সাত তবক অবধি বেড়ি বানিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেবেন। এ কথা শুনে মারওয়ান
তাঁকে বললেন, এ হাদীস শুনার পর আমি আর কোন প্রমাণ আপনার কাছ হতে চাব না। অতঃপর সাঈদ
(রাঃ) দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! এ মহিলাটি যদি তার দাবিতে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে আপনি
তার চোখ অন্ধ করে দেন এবং উক্ত ভূমিতেই তাকে ধ্বংস করুন। বর্ণনাকারী উরওয়া বলেন, মৃত্যুর
আগেই সে মহিলাটি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং একদিন সে উক্ত ভূমিতে হাঁটছিল, হঠাৎ সে সেখানে
একটি গর্তে পড়ে মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)।
আর মুসলিমের এক বর্ণনাতে আছে, যা মুহাম্মাদ
ইবনু যায়দ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে উক্ত হাদীসের মর্মার্থ বর্ণিত, তিনি
উক্ত মহিলাটিকে অন্ধ অবস্থায় দেখেছেন, সে দেয়াল হাতড়িয়ে চলত এবং বলত আমার উপর সাঈদের
বদদোয়া লেগেছে। অতঃপর একদিন উক্ত মহিলাটি তার গৃহের সে বিবাদময় ভূমির একটি কূপের
কাছ দিয়ে যেতেই তাতে পড়ে গেল এবং তা-ই তার কবর হলো। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪০২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬১০, মুসনাদে আহমাদ ১৬৩৩, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্
৫/২৩৬, মুসনাদে বাযযার ১২৪৯, আবূ ইয়া'লা ৯৫১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৬১, দারিমী ২৬০৬,
আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৭৯৪৩, আল মু'জামুস সগীর লিত্ব তবারানী ২৭৫, আল মু'জামুল
আওসাত্ব ৫১৪৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী১১৮৬৬, আস্ সুনানুস্ সুগরা ২২২৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উমার (রাঃ) খুৎবা দেয়ার সময় যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখে দিক নির্দেশনা দেন
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার ’উমার
(রাঃ) একদল সৈন্য অভিযানে প্রেরণ করলেন। আর সারিয়াহ্ (ইবনু যানীম) নামক এক লোককে সে
দলের প্রধান নিযুক্ত করলেন। তখন একদিন ’উমার (রাঃ) মসজিদে নাবাবীতে খুৎবা দিচ্ছিলেন।
আকস্মাৎ তিনি খুত্ববার মাঝখানে খুব উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, “হে সারিয়া আল জাবাল!’
এ ঘটনার কয়েকদিন পরে উক্ত সেনাদলের পক্ষ হতে একজন বার্তাবাহক মদীনায় আগমন করে বলল,
হে আমীরুল মু’মিনীন! আমরা শত্রুদের মুখোমুখি হলে (প্রথমে) তারা আমাদেরকে পরাজিত করে।
এমন সময় হঠাৎ জনৈক ঘোষণাকারীর ’হে সারিয়া আল জাবাল উচ্চ শব্দ শুনতে পাই, তৎক্ষণাৎ
আমরা (নিকটস্থ) পাহাড়টিকে পশ্চাতে রেখে শত্রুর সাথে লড়তে থাকি। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা
তাদেরকে পরাস্ত করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৫৪,
আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৬/৩৭০, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ১১১০)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
বাংলাদেশে শত শত পির বা অলি আছেন। এদের দরবারে
গেলে বা এদের রচিত বই পুস্তক পড়লে জানা যায় বর্তমান পিরের দাদা হুজুরের বিভিন্ন কেরামতির
গল্প। কিন্তু বর্তমান পিরের বা অলির কোনো কেরামতি নেই। বাংলাদেশের কথিত এইসব পির বা
অলি বংশানুক্রমিক। এদের বংশ ছাড়া অন্য কেউ পির হতে পারবে না। অথচ কুরআন ও হাদিস এর
শর্তানুসারে এরা কেহই অলি হওয়ার যোগ্য নয়। এদের মাধ্যমে কারামত প্রকাশিত হওয়া অসম্ভব।
কারণ বাংলাদেশে শিরক ও বিদআতের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটানোর মূল কারিগর হচ্ছেন এরা।
তবে এরা কখনো কারামত ঘটানোর কোনো দাবী করলে তা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে বলে এটা বিশ্বাস
করা যাবে না। বিশ্বাস করতে হবে শয়তানের মাধ্যমে উক্ত ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। যারা প্রকৃত
আল্লাহর বন্ধু বা অলি তারা কখনো শিরক, বিদআত ও কুফরের সাথে জড়িত থাকবেন না। তাদের তরিকা
হবে রাসুল সাঃ এর তরিকা। তারা বানানো কোনো তরিকা মোতাবেক চলবেন না। আর আল্লাহ যেকোনো
নেক্কার বান্দার মাধ্যমে কারামত প্রকাশ করতে পারেন।
ইসতিদরাজ বা যাদু
‘ইসতিদরাজ’
শব্দটি আরবী ‘দারাজা’ (درَج)
ক্রিয়ামূল থেকে গৃহীত, যার অর্থ চলা, হাঁটা, অগ্রসর হওয়া, ক্রমান্বয়ে এগোনো ইত্যাদি।
‘দারাজাহ’ (الدرجة)
অর্থ ধাপ বা পর্যায়। ইসতিদরাজ (الاستدراج)
অর্থ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নেওয়া, ক্রমান্বয়ে উপরে তোলা বা নিচে নামান, ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের
দিকে এগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। কোনো পাপী বা অবিশ্বাসী ব্যক্তি থেকে কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশিত
হলে তাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইসতিদরাজ’ বলা হয়।
এথেকে আমরা বুঝি যে, সকল অলৌকিক কর্মই কারামত
নয় এবং কোনো অলৌকিক কর্মই কারো ‘ওলীত্বে’-র প্রমাণ নয়। কারণ একই প্রকার অলৌকিক কর্ম
মুমিন থেকে প্রকাশিত হতে পারে এবং ফাসিক বা কাফির থেকেও প্রকাশিত হতে পারে। ইসলামের
দৃষ্টিতে কোনো অলৌকিক কর্ম কোনো মানুষের বিলায়াত তো দূরের কথা, ঈমানেরও প্রমাণ নয়।
বরং মানুষের ঈমান, তাকওয়া, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ আনুগত্য ও সদা সর্বদা ফরয ও নফল ইবাদত পালন
করাই বিলায়াতের প্রমাণ। যদি এরূপ ব্যক্তি থেকে কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশিত হয় তবে তাকে
কারামত বলা হবে। আর যদি কোনো ব্যক্তির ঈমান, তাকওয়া বা ইত্তিবায়ে সুন্নাত না থাকে কিন্তু
তিনি বিভিন্ন অলৌকিক কর্ম সম্পাদন করেন তবে তাকে ‘ইসতিদরাজ’ বলা হবে।
কাফিরও সাধনার মাধ্যমে এক প্রকার ‘কাশফ‘ অর্জন
করে বা জিনের সহযোগিতা লাভ করে। একে সাধারণ মানুষ ‘‘অলৌকিক ক্ষমতা’’ মনে করে বিভ্রান্ত
হোন। মোল্লা আলী কারী বলেন: ‘‘ফিরাসাত বা অন্তর্দৃষ্টি তিন প্রকার।
(১) ঈমানী ফিরাসাত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে
প্রদত্ত নূর যা আল্লাহ তাঁর বান্দার অন্তরে নিক্ষেপ করেন। হঠাৎ অনুভূতি হিসেবে তা মানুষের
অন্তরে হামলা করে, যেমন সিংহ তার শিকারের উপরে হামলা করে। ....
(২) সাধনার মাধ্যমে অর্জিত ফিরাসাত। এ প্রকারের
ফিরাসাত অর্জিত হয় ক্ষুধা, রাত্রি-জাগরণ, নির্জনবাস ইত্যাদির মাধ্যমে। কারণ মানুষের
নফস যখন জাগতিক সম্পর্ক ও সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ থেকে বিমুক্ত হয় তখন তার বিমুক্তির
মাত্রা অনুসারে তার মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি ও কাশফ সৃষ্টি হয়। এ প্রকার ফিরাসাত কাফির ও
মুমিন উভয়েরই হতে পারে। এ প্রকার কাশফ বা ফিরাসাত ঈমান বা বেলায়াত প্রমাণ করে না। এর
দ্বারা কোনো কল্যাণ বা সঠিক পথও জানা যায় না।... (৩) সৃষ্টিগত ফিরাসাত। এ হলো চিকিৎসক
ও অন্যান্য পেশার মানুষের ফিরাসাত যারা সৃষ্টিগত আকৃতি থেকে প্রকৃতি ও আভ্যন্তরীণ অবস্থা
অনুমান করতে পারেন।’’ (মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল
আকবার, পৃ. ১৩২-১৩৩)।
দাজ্জাল ‘কারামত’ নামের অলৌকিকতা দেখিয়ে মানুষদেরকে
ঈমান-হারা করবে। যুগে যুগে অগণিত সাধারণ মুমিন-মুসলিম ‘অলৌকিকতার’ খপ্পরে পড়ে ঈমান
হারা হয়েছেন। বিশেষত, রোগ-ব্যাধি ও অশান্তির বিষয়ে ‘তদবির’ দিয়ে ‘ভাল করা’, ‘দুআ’ দিয়ে
ধনী বানিয়ে দেওয়া, মনের কথা বা গোপন প্রয়োজন বলে দেওয়া, আগামী আগন্তুকের বিষয়ে সংবাদ
দেওয়া ইত্যাদি বিষয়কে ‘কারামত’ মনে করে ঈমান-হারা হয়েছেন ও হচ্ছেন অগণিত সাধারণ মুসলিম।
খৃস্টান পাদরি-প্রচারক, হিন্দু সাধু-সন্ন্যাসী ও মুসলিম নামধারী ‘দয়াল বাবা’, ‘দয়াল
মা’, ‘পাগলা বাবা’, ‘জটাধারি’ ইত্যাদির পিছনে ঘুরে, তাদেরকে ‘ওলী’ মনে করে প্রতারিত
ও বিভ্রান্ত হচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে মুমিনকে সচেতন করতে ইমাম আযম ও অন্যান্যরা কারামত
প্রসঙ্গে ইসতিদরাজ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন
পির, দরবেশ, গাউস, কুতুব ও বাবার দরবার এবং মাজার আছে। মাজারগুলোতে গেলে দেখা যায় গাঁজাখোরের
আড্ডাখানা। আবার দেখা যায় নারী-পুরুষের মিলনমেলা। যাই হোক এসব ঘটনা আমরা সকলেই জানি।
তবে এইসব মাজার বা দরবার থেকে কোনো অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হলে তা শয়তানের কারসাজি বলে
বিশ্বাস করতে হবে। অনেক পির বা কথিত অলি আছেন যারা বাধ্যানুগত জিনের সাহায্যে তার মুরিদদেরকে
আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা দেখিয়ে থাকে। এরা আবার যাদু বিদ্যায় পারদর্শী। যাই
হোক এদের দ্বারা প্রকাশিত কোনো অলৌকিক ঘটনা কারামত নয়। এগুলোকে বলে ইসতিদরাজ বা যাদু।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন.এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক
লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment