বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ঈমান বিধ্বংসী
অস্ত্র
মুসলিম
সমাজে মাদকের ব্যাপকতা
এবং
মাদক
সেবনকারীদের ইহকালীন-পরকালীন শাস্তি
ভূমিকাঃ মাদক সম্পর্কে জানেন না বিশ্বের এমন কি কেউ
আছে? মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং
আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অঞ্চল মিয়ানমার, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থিত। এসব দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাদক
পাচারের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিট ব্যবহার করার কারণে মাদকের বিস্তার রোধ করা
কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
১৩ জানুয়ারি, ২০২০-এ দ্য ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসে
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৭.৫
মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত। দেশের বেকার জনসংখ্যারও বেশ বড় অংশ মাদকাসক্ত। মোট মাদকাসক্তদের
৪৮ শতাংশ শিক্ষিত এবং ৪০ শতাংশ অশিক্ষিত। মাদকাসক্তদের প্রায় ৫৭ শতাংশ যৌন অপরাধী,
যাদের ৭ শতাংশ হলো এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত। সারা দেশে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার
মাদক ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন, যাঁদের মধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ জন মহিলা।
২০১৯ সালে গড়ে প্রতিদিন ১১৪ জন রোগী সরকারি
ও বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০৪ এবং
২০১৭ সালে ৬৯। এটাও অবাক করার মতো বিষয় যে ২০১৯ সালে মহিলা মাদকসেবীদের সংখ্যা চার
গুণ বেড়েছে। ২০১৮ সালে ৯১ জন মহিলা সরকারি সুযোগ-সুবিধায় চিকিত্সা পেয়েছিলেন। এই সংখ্যা
বেড়ে ২০১৯ সালে ৩৬০ হয়েছে।
ইসলামে মাদক সেবন নিষিদ্ধ। মাদকতার কারণে অনেক
অপরাধ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। মাদক হলো নেশা উদ্রেগকারী এমন সব বস্তু যা মানুষের
মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয়। যার প্রভাবে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে না।
আর এই মাদকই হলো সব অপরাধের আকর।
মদ বা মাদকের সংজ্ঞাঃ
মদ বা মাদক এমন একটি দ্রব্য, যা খেলে নেশা
হয়। গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, গুল, জর্দা, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মদ, ইয়াবাসহ সবই
মাদকের অন্তর্ভুক্ত। যখন কেউ এসব দ্রব্যাদির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখনই তাকে মাদকাসক্ত
বলা হয়। ১৯৮৯ সালে প্রণীত বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদকাসক্ত বলতে, শারীরিক
বা মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা অভ্যাসবশে মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীকে
বোঝানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এভাবে মাদকাসক্তির সংজ্ঞা দিয়েছে—
Intoxication is detrimental to the individual and the society produced by the
repeated consumption of a drug (Natural and Synthetic.)
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ الخمر
(খামর) আভিধানিক অর্থ হলো আচ্ছন্ন করা। মহিলাদের মাথা, চুল ইত্যাদি যে কাপড় দ্বারা
আবৃত বা আচ্ছাদিত করা হয় তাকে الخمر ‘‘খামর’’ বলা হয়
আর এজন্য খামর নাম রাখা হয়েছে যে মদ পানের মাধ্যমে জ্ঞান ও বুদ্ধি আচ্ছাদিত হয়। কারো
মতে মদ হলো যে জিনিসই মাদকতা সৃষ্টি করে।
ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেনঃ
‘আলী ইবনু আবূ তালিব থেকে বর্ণিত। ‘আবদুর রহমান
বিন ‘আওফ খানার আয়োজন করেন এবং আমাদেরকে দা‘ওয়াত দিলে আমাদেরকে মদও পান করালেন। মদের
ক্রিয়া আমাদেরকে আক্রমণ করল। এমতাবস্থায় সালাতের সময়ও হলো তারা আমাকে ইমামতির দায়িত্ব
দিলো আমি সূরা কাফিরূন পড়তে লাগলাম। আমি তাতে পড়লাম, অর্থাৎ- ‘‘তুমি বল, হে কাফির সম্প্রদায়!
আমি ‘ইবাদাত করি না, তোমরা যার ‘ইবাদাত কর, আর আমরা তার ‘ইবাদাত করছি তোমরা যার ‘ইবাদাত
করছো।’’ তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন, অর্থাৎ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত
থাক, তখন সালাতের ধারে-কাছেও যেও না। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।’’
(সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৩)।
ইবনু হুমাম বলেনঃ যদিও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি
মুরতাদ হয় তার স্ত্রী তালাক হয় না, কেননা কুফরীর বিষয়টি বিশ্বাস ও অবজ্ঞাকরণের সাথে
সংশ্লিষ্ট। এজন্য কুফরীর হুকুম লাগানো হয়েছে রসিকতাকারীকে বিশ্বাসের সাথে। সুতরাং এটা
স্পষ্ট যে, ‘আলী (রাঃ)-এর সূরা আল কাফিরূন-এর আয়াতটির তিলাওয়াত ছিল ভুলবশত বা অনাকাঙ্ক্ষিত,
ইচ্ছাকৃত না।
এ অধ্যায়ের সংশ্লিষ্ট মাসআলার মধ্যে অন্যতম
একটি মাস্আলাহ্ হলো যদি কেউ মদ পান করে এবং গন্ধ চলে যাওয়ার পর স্বীকার করে তাহলে তার
ওপর হাদ্দ প্রয়োগ করা হবে না- ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইউসুফ-এর মতে। তবে মুহাম্মাদের মতে
হাদ্দ প্রয়োগ হবে। অনুরূপ গন্ধ চলে যাওয়ার পর কেউ সাক্ষী দেয় তাহলেও হাদ্দ প্রয়োগ হবে
না। আর মাতাল অবস্থায় হাদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না জ্ঞান ফিরে আসার পর হাদ্দ প্রয়োগ করতে
হবে। এ ব্যাপারে চার ইমামই ঐকমত্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি, মিরকাতুল মাফাতীহ)।
মদ বা মাদক এমন একটি বস্তু যা বিবেককে আচ্ছন্ন
করে ফেলে। আর বিবেক আচ্ছন্ন হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
(ক) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ মদ পান করো না, কারণ
তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭১,
সহীহ আল-জামি' ৭৩৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকার যখন যিনায় লিপ্ত হয় তখন সে মু’মিন
থাকে না। কেউ যখন মদপান করে তখন সে মু’মিন থাকে না। যে চুরি করে চুরি করার সময় মু’মিন
থাকে না এবং কোন ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে
থাকে; তখন সে মু’মিন থাকে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৭৭২, ২৪৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উল্লেখ্য যে, মদ কোন নির্ধারিত বস্তুর নাম
নয়। নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি জিনিস হারাম।
(ক) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম (রহঃ)....ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। সম্ভবত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে জিনিসে নেশা উদ্রেক করে তাই মদ। আর
মদ মাত্রই হারাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৬,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৫১, ইসলামিক সেন্টার ৫০৬১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নেশা উদ্রেককর প্রতিটি পানীয় হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪২,
৫৫৮৫, ৫৫৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১০৬, ৫১০৭, ৫১০৮, ৫১০৯ আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০০১, ১৭৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৬৩, ১৮৬৬, নাসায়ী ৫৫৯০, ৫৫৯১, ৫৫৯২, ৫৫৯৩,
৫৫৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮২, ৩৬৮৭, আহমাদ ২৩৫৬২, ২৩৯০২, ২৪১৩১, ২৫০৪৪, ২৫৩৬৩,
মুয়াত্তা মালেক ১৫৯৫, দারেমী ২০৯৭, ইরওয়া ৮/৪১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন নেশা উদ্রেককর জিনিস
হারাম। আর যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯২, ৩৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৮৬১, আহমাদ ৪৬৩০, ৪৮১৫, ৪৮৪৮, ৫৬১৬, ৫৬৯৭, ৫৭৮৬, ৬১৪৪, ৬১৮৩, ইরওয়া ২৩৭৩, ২৩৭৫, রাওদুন
নাদীর ৫৪২-৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস
হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮৭, আহমাদ ৪৬৩০, ৪৮১৫, ৪৮৪৮,
৫৬১৬, ৫৬৯৭, ৫৭৮৬, ৬১৪৪, ৬১৮৩, ইরওয়া ৮/৪১, রাওদুন নাদীর ৫৪২-৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি জিনিস হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৪৩,
৪৩৪৫, ৬১২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩৩, নাসায়ী
৫৫৯৫,৫৫৯৭, ৫৬০২, ৫৬০৩, ৫৬০৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮৪, আহমাদ ১৯১৭৪, ১৯২২৯,
১৯২৪৩, দারেমী ২০৯৮, রাওদুন নাদীর ৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা উদ্রেক করে, তার
সামান্য পরিমাণও হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯৩, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮১, আহমাদ ১৪২৯৩, ইরওয়া
৮/৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ছ) ‘আমর ইবনে শু‘আয়ব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার
পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯৪, নাসায়ী ৫৬০৭, আহমাদ ২৭৯৪২, ৬৬৯৯, ইরওয়া
৮/৪৩, ৪৪, রাওদুন নাদীর ৫৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(জ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঠের পাত্রে, তৈলাক্ত পাত্রে, কদুর খোলের
পাত্রে ও মাটির সবুজ পাত্রে নবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেনঃ সমস্ত নেশা
সৃষ্টিকর জিনিস হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪০১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৫০৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৯৩,
নাসায়ী ৫৫৮৯, ৫৬৩০, ৫৬৩৭, ৫৬৪৬, আহমাদ ৭৬৯৪, ৮৪৪২, ৯০৯০, ১০১৩২, ১০২৮৯, ১০৫৮৮, মালেক
১৫৯২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঝ) মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ).....সাঈদ ইবনু
আবূ বুরদাহ (রাযিঃ) তার পিতা, তিনি দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে ও মুআয (রাযিঃ) কে ইয়ামানে প্রেরণ করলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ তোমরা
(মানুষকে) সুসংবাদ দিবে আর (দীনকে) সহজভাবে প্রকাশ করবে, (মানুষকে) দীন শিক্ষা দেবে,
কাউকে (দীন থেকে) পৃথক করে দিবে না। আমার ধারণা হয়, তিনি ‘একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে'
কথাটিও বলেছেন। তিনি যাত্রা করলে আবূ মূসা (রাযিঃ) ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল!
তাদের তো মধু থেকে বানানো মদ আছে যা পাকিয়ে ঘন করা হয় এবং মিযর আছে যা যব দিয়ে প্রস্তুত
করা হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা কিছু সালাত হতে বিরত
করে তা-ই হারাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১০, ৫১১১
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৪৫, ইসলামিক সেন্টার ৫০৫৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ....বুরাইদাহ (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে
নবীয তৈরি করতে সব রকম পাত্র (ব্যবহার করা) হতে বারণ করেছিলাম। পাত্রগুলো অথবা (তিনি
বলেছেন) কোন পাত্র কোন জিনিসকে হালালও করতে পারে না হারামও করতে পারে না। তবে সব ধরনের
নেশা জাতীয় জিনিসই নিষিদ্ধ। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫১০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৩৮, ইসলামিক সেন্টার ৫০৪৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahi।
(ট) ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল প্রকারের নেশা সৃষ্টিকারী
দ্রব্য মদের অন্তর্ভুক্ত এবং সকল নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই হারাম। পৃথিবীতে যে লোক মদ
পান করে এবং মদ পানে আসক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে পরকালে তা পান করতে পারবে না।
(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঠ) ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৩৮৮, ইরওয়া ৮/৪১, রাওদুন নাদীর ৫৪২-৫৪৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ড) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক
(রহঃ)....ইবনু উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যা কিছু নেশাগ্রস্ত করে তা-ই মদ। আর যা নেশা উদ্রেক করে তা-ই নিষিদ্ধ।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৪৯, ইসলামিক সেন্টার ৫০৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঢ) আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রহঃ) থেকে তার পিতার
সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাদেরকে কতগুলো পাত্র
ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তাতে নবীয তৈরি করতে পারো এবং সমস্ত নেশা উদ্রেককারী
জিনিস পরিহার করো।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪০৫, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১০২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৯৭৭, আল-আহকাম ১৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ণ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নেশাদার দ্রব্য এবং তার মূল্য হারাম করেছেন।
মৃতপ্রাণী ও তার মূল্য হারাম করেছেন। শূকর ও তার মূল্য হারাম করেছেন’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
যেসব কাজ করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয় সেইসব
কাজ করতে ইসলাম প্রথমতঃ নিষেধ করে। এরপর কেহ করলে বা আদেশ নিষেধ না মানলে তার জন্যে
রয়েছে শাস্তি। এই শাস্তি দুই প্রকার। ইহকালীন শাস্তি ও পরকালীন শাস্তি।
শাস্তিযোগ্য অপরাধসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে
মদ বা মাদক বা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণ। কুরআন ও হাদিসে যদিও মদ সম্পর্কেই বেশী আলোচনা
করা হয়েছে, কিন্তু মদ এখানে একটি উপমা মাত্র। মদ এক প্রকার নেশাদার দ্রব্য। মদের মতোই
আরো অন্যান্য দ্রব্য যেমন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি
মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন
(টি.ডি. জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন
(বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও
মিথাইল-ইথাইল কিটোন এবং সর্বশেষ ক্রিস্টাল আইস ইত্যাদি এগুলো সবই মাদক বা নেশাদার দ্রব্য।
বর্তমানে বাংলাদেশে এগুলোর সেবন চলছে বেশী।
যে দ্রব্যটি অধিক পরিমানে খেলে নেশা হয় তার
অল্প পরিমানও নেশা যা খাওয়া হারাম। উল্লেখিত দ্রব্যগুলো যেহেতু নেশা সৃষ্টি করে তাই
এর অল্প পরিমানও খাওয়া হারাম।
আসলে এগুলো মদেরই ভিন্ন ভিন্ন
নাম।
(ক) উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক শরাবের
ভিন্নতর নাম রেখে তা পান করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৩৮৫,
আহমাদ ২২২০১, সহীহাহ ৯০, ৪১০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন রাত এবং দিন অতিবাহিত
হবে না, যখন আমার উম্মাতের কতক লোক শরাবের ভিন্ন নামকরণ করে তা পান করবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮৪, সহীহাহ ১/১৩৭, ১৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) আবূ মালেক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক মদের
ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে
এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন
এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪০২০, আবূ দাউদ ৩৬৮৮, আহমাদ ২২৩৯৩, মিশকাত ৪২৯২, রাওদুন নাদীর ৪৫২, সহীহাহ
১/১৩৮-১৩৯, তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬০৫৮, ২৮/১৮৬ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মদপান বৃদ্ধি হওয়া সম্পর্কে রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যৎবাণীঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
(সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যা উঠে যাবে, মূর্খতা
বেড়ে যাবে, ব্যভিচার (যিনা) বেড়ে যাবে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে
এবং নারীর সংখ্যা বেশি হবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৪৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮০, ৮১, ৫২৩১, ৫৫৭৭, ৬৮০৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২২০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৪৫, সহীহুল জামি ২২০৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ২৭৬৭, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ ৩৭২৮০, মুসনাদে আহমাদ ১৩১১২, আবু ইয়া'লা ২৯৩১, সহীহ ইবনু হিব্বান
৬৭৬৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৫৯০৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/২৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে মদকে উপমা হিসেবে এর নিষিদ্ধতা ও শাস্তি
সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে মাত্র। আলোচ্য বিষয়ে অন্যান্য নেশাদার দ্রব্যগুলোও
এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
মদ বা মাদক বা নেশাদার জাতীয় দ্রব্য সেবন ইসলামে নিষেধঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং
ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে
তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্র“তা ও বিদ্বেষ
সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিক্র ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তাহলে
কি তোমরা বিরত থাকবে’? (মায়িদাহ ৯০-৯১)।
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে মদ ও জুয়া সম্পর্কে।
তুমি বল: উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং উপকারও আছে মানুষের জন্য, তবে এদের পাপ উপকারের
চেয়ে অধিক। (সূরা বাকারা-২১৯)।
(ক) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন
সুদ সম্পর্কিত সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বাইরে বের হয়ে আসেন এবং শরাবের ব্যবসাও নিষিদ্ধ (হারাম) ঘোষণা করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৯,
২০৮৪, ২২২৬, ৪৫৪০, ৪৫৪১, ৪৫৪২, ৪৫৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৩৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৮০, নাসায়ী ৪৬৬৫, আ৩৪৯০, আহমাদ ২৩৬৭৩, দারেমী ২৫৬৯, ২৫৭০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন ‘উমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বারের উপর (দাঁড়িয়ে)
খুৎবা প্রদানকালে বললেনঃ নিশ্চয় মদ হারাম সাব্যস্ত (নাযিল) হয়েছে। আর তা সাধারণত পাঁচ
প্রকারের জিনিস দ্বারা প্রস্তুত হয়; যথা- আঙ্গুর, খেজুর, গম, যব ও মধু। আর মদ তা-ই
যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বিলুপ্ত করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৬৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৪৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০৩২, আবূ দাঊদ ৩৬৬৯, নাসায়ী ৫৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
সামুরা (রাঃ) শরাব বিক্রয় করেন এ কথা উমার (রাঃ) জানতে পেরে বললেন, আল্লাহ সামুরাকে
ধ্বংস করুনঃ সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‘‘আল্লাহ তা‘আলা ইহূদীদের অভিসম্পাত করুন, তাদের প্রতি চর্বি হারাম করা হয়েছিল; কিন্তু
তারা তা গলিয়ে বিক্রয় করতো’’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২২৩, ৩৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৮২, নাসায়ী ৪২৫৭, আহমাদ ১৭১, দারেমী ২১০৪, ইরওয়া ১২৯০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২০৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিত ‘যে ব্যক্তি
মদ পান করবে আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না’। (আহমাদ
হা/২৭৬৪৪; তারগীব হা/৩৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
মদ খোর (পাপের ক্ষেত্রে) মূর্তিপূজকের সমতুল্যঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদখোর (পাপের ক্ষেত্রে) মূর্তিপূজকের
সমতুল্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৫, সহীহাহ ৬৭৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাত আদায় করা নিষেধঃ
হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের
নিকটবর্তী হয়ে না, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং যদি তোমরা মুসাফির
না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর। আর যদি তোমরা পীড়িত
হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং
পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের
চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল। (সুরা
নিসা-৪৩)।
মদ দিয়ে চিকিৎসা করা হারামঃ
(ক) উম্মু
সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের
রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা আল্লাহ তার হারামকৃত বস্তুর মধ্যে করেননি। (আত্-তালখীসুল হাবীর ৪/১৩৯৭, আল মুহাযযিব (৮/৩৯৬৬), মাজমাউয
যাওয়ায়িদ ৫/৮৯) শাকীক বিন সালাম থেকে, বুলগুলমারাম, ১২৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ)....ওয়ায়িল আল-হাযরামী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তারিক ইবনু সুওয়াইদ
জুকী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন।
তিনি তাকে বারণ করলেন, কিংবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব জঘন্য মনে করলেন। তিনি [তারিক
(রাযিঃ)] বললেন, আমি তো শুধু ঔষধ তৈরি করার জন্য মদ প্রস্তুত করি। তিনি বললেনঃ এটি
তো (ব্যাধি নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই ব্যাধি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৫০৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০৪৬, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৮৭৩, আহমাদ ১৮৩১০, ১৮৩৮০, ২৬৫৯৬, বুলগুলমারাম ১২৫২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
পরকালীন শাস্তিঃ
(ক)
আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মদপানে অভ্যস্ত
ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ
৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে
এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ
করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব
পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা‘আলা অবশ্যি তাকে ‘‘রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের
দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৭,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৬২, নাসায়ী ৫৬৬৪, ৫৬৭০, আহমাদ ৬৬০৬, ৬৭৩৪, দারেমী ২০৯১,
সহীহাহ ৭০৯, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ৯৩৯, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৯১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
“চল্লিশ
দিন সালাত কবুল হবে না” এ কথার অর্থ কি?
● আবু আব্দিল্লাহ ইবনে মানদাহ
[মৃত্যু: ৩৯৫ হিজরি] বলেন:
“চল্লিশ দিন সালাত কবুল হবে না” অর্থ: মদপানের
শাস্তি হিসেবে চল্লিশ দিনের সালাতের সওয়াব পাবে না। যেমন ফকিহগণ বলেছেন: জুমার দিন
খুতবা চলাকালীন যদি কেউ কথা বলে সে জুমা পড়বে কিন্তু তার জুমা হবে না। অর্থাৎ তার এই
অপরাধের কারণে তাকে জুমার সালাতের সওয়াব প্রদান করা হবে না।” (তাযীম কাদরিস সালাত ২/৫৮৭ ও ৫৮৮)।
● ইমাম নওবী রহ. [মৃত্যু: ৬৭৬ হি: /১২৭৭ খৃ:] বলেন:
“আর সালাত কবুল না হওয়ার অর্থ হল, এতে তার
সওয়াব হবে না। যদিও ফরয আদায়ের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তা পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন
নাই।” (শরহে মুসলিম)।
সুতরাং মদ্যপানকারীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যথানিয়মে
সালাত অব্যাহত রাখা। অন্যথায় সালাত পরিত্যাগের কারণে গুনাহের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
মদপানের সাথে সালাত পরিত্যাগের জন্য কঠিন (কুফরি পর্যায়ের) গুনাহ হবে। কেননা সালাত
তার উপর অবধারিত ফরজ এবং ইসলামে পাঁচটি রোকনের অন্যতম। সুতরাং সওয়াব থেকে বঞ্চিত হলেও
যথাসময়ে যথানিয়ম পূর্ণ যত্ন সহকারে সালাত আদায় করা আবশ্যক। যেমন: বিশেষ কোন অপরাধের
কারণে কোন কোম্পানির পক্ষ থেকে তার কর্মচারীকে কাজ অব্যাহত রাখার শর্তে বেতন থেকে বঞ্চিত
করা হয়।
(গ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....জাবির (রহঃ)
হতে বর্ণিত। ‘জাইশান’ থেকে জনৈক লোক আসলো। জাইশান ইয়ামানের একটি অঞ্চল। অতঃপর সে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের অঞ্চলে তারা শস্য দিয়ে প্রস্তুত 'মিয্র'
নামক যে মদ পান করে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ এটা কি নেশা তৈরি করে? সে বলল, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ নেশা উদ্রেক করে এমন সবই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা'আলা ওয়াদা করেছেন, যে লোক নেশাযুক্ত
জিনিস পান করবে তাকে তিনি “তীনাতুল খাবাল” পান করিয়ে ছাড়বেন। মানুষেরা বলল, হে আল্লাহর
রসূল! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেন, জাহান্নামবাসীদের ঘাম বা জাহান্নামবাসীদের মলমূত্র।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৪৭, ইসলামিক সেন্টার
৫০৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ রাবী' আতাকী ও আবূ কামিল (রহঃ).....ইবনু
উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যা কিছু নেশা তৈরি করে তা-ই মদ। আর যা নেশা উদ্রেক করে তাই নিষিদ্ধ। যে লোক দুনিয়াতে
মদ পান করবে, আবার সব সময় এ কাজ করে তওবা না করেই মৃত্যুমুখে পতিত হবে, সে আখিরাতে
তা পান করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩. ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৫০৫৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ)
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদের উপর
দশভাবে অভিসম্পাত করা হয়েছেঃ স্বয়ং মদ (অভিশপ্ত), মদ উৎপাদক, যে তা উৎপাদন করায়, তার
বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তার বহনকারী, তা যার জন্য বহন করা হয়, এর মূল্য ভোগকারী, তা
পানকারী ও তা পরিবেশনকারী (এদের সকলেই অভিশপ্ত)। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৩৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৭৪, ৫৬৮৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৭৭, আহমাদ ইরওয়া ১৫২৯, রাওদুন নাদীর ৫৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশভাবে মদের উপর অভিসম্পাত করেছেনঃ মদ প্রস্তুতকারী, তা উৎপাদনকারী,
যে তা উৎপাদন করায়, তা যার জন্য উৎপাদন করা হয়, তা বহনকারী, যার জন্য তা বহন করা হয়,
তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তা পরিবেশনকারী এবং যার জন্য পরিবেশন করা হয়। এভাবে তিনি
দশজনের উল্লেখ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৫, গায়াতুল মারাম
৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে
অতঃপর তাত্থেকে তওবা করেনি, সে আখিরাতে তাত্থেকে বঞ্চিত থাকবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৩,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৭, ৫১১৮, ৫১১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, তিরমিযী
১৮৬১, নাসায়ী ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৭৯, আহমাদ ৪৬৭৬, ৪৭১৫,
৪৮০৮, ৪৮৯৭, মুয়াত্তা মালেক ১৫৯৭, দারেমী ২০৯০, রাওদুন নাদীর ৫৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করে, সে আখেরাতে
তা পান করতে পারবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৩৭৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে
অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৩, নাসায়ী ৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮,
সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল জামি ৭৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঞ)
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন
শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২)
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও (৩) পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দানকারী (দায়ূছ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২,
সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ট) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার
অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। খোটা দানকারী জান্নাতে যাবে না’। (তারগীব হা/২৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
ইসলামি আইনে মদ পানকারী বা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণকারীর দুনিয়ায় শাস্তিঃ
(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মদ পানকারী
এ ব্যক্তিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে নিয়ে আসা হলো।
তিনি তাকে দু’খানা ছড়ি (এক যোগে ধরে তার) দ্বারা চল্লিশের মত কোড়া মারলেন। আনাস (রাঃ)
বলেনঃ ১ম খলিফা আবু বাকর (রাঃ) এরূপ কোড়া মেরেছেন, উমার (রাঃ) তার খিলাফতকালে এ ব্যাপারে
লোকদের সাথে পরামর্শ করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আওফ বলেনঃ সর্বাপেক্ষা হালকা শাস্তি হচ্ছে
আশি (কোড়া)। ‘উমার (রাঃ) ঐ (৮০-র) আদেশই জারি করলেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৩, ৬৭৭৬; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৪, ৪৩৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৬, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৩৬১৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৪৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৯,
সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭০, আহমাদ ১১৭২৯, ১২৩৯৪, ১২৪৪৪, ১২৮০৫ দারেমী ২৩১১, সহীহ আল-জামি
৪৯৭৪, আধুনিক প্রকাশনী ৬৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
অপর এক বর্ণনায়, আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ পানকারীকে জুতা ও খেজুরের ডাল দ্বারা চল্লিশবার
প্রহার করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬১৫, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) ‘উকবাহ ইবনু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নু‘আয়মান অথবা (রাবীর সন্দেহ) নু‘আয়মানের পুত্রকে মদ্যপায়ী অবস্থায় আনা হল। তখন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে যারা ছিল তাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে প্রহার
করার জন্যে। রাবী বলেন, তারা তাকে প্রহার করল, যারা তাকে জুতা মেরেছিল তাদের মাঝে আমিও
ছিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৪, ৬৭৭৫, ২৩১৬,
আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে, আবূ বাকর এবং ‘উমার (রাঃ)-এর
খিলাফাতের প্রারম্ভে মদ্যপায়ীকে আনা হত। তখন আমরা আমাদের হাত, জুতা এবং চাদর দ্বারা
প্রহার করতাম। কিন্তু ‘উমার -এর খিলাফাতের শেষ দিকে তিনি চল্লিশ চাবুক মারতেন। পরিশেষে
তারা অতিমাত্রায় মদ্যপানের দরুন ব্যাপকভাবে পাপকার্যে জড়িয়ে পড়ল, তখন তিনি আশি চাবুক
মারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬১৬, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৯, আহমাদ ১৫৭১৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(ঘ) ‘আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, এমন একটি ঘটনা যা এখনো আমি চোখে দেখছি। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন ব্যক্তিকে আনা হলো যে মদ পান করেছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকেদেরকে বললেনঃ তোমরা একে প্রহার করো। সুতরাং তাদের কেউ জুতার
দ্বারা, আবার কেউ লাঠির দ্বারা এবং কেউ খেজুরের ডাল দ্বারা লোকটিকে প্রহার করল। রাবী
ইবনু ওয়াহব বলেনঃ مِيْتَخَةْ
এর অর্থ হলো- খেজুরের কাঁচা ডাল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জমিন থেকে কিছু মাটি উঠিয়ে তার মুখে নিক্ষেপ করলেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) আব্দুর রাহমান ইবনু আযহার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনে অবস্থানকালে জনৈক মাতালকে
তাঁর নিকট আনা হলো। তিনি তার মুখমন্ডলে মাটি ছুঁড়ে মারলেন এবং তাকে প্রহার করতে সাহাবীদের
নির্দেশ দিলেন। তারা তাদের জুতা ও হাতে যা কিছু ছিলো তা দিয়ে তাকে প্রহার করতে লাগলেন,
যতক্ষণ না তিনি তাদের বললেন যে, থামো। অতঃপর তারা প্রহার বন্ধ করলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ইন্তেকালের পর আবূ বাকর (রাঃ) মদ পানের জন্য চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। অতঃপর উমারও
তার খিলাফাতের প্রথম পর্যায়ে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে আশিটি বেত্রাঘাত
করেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) আশি এবং চল্লিশ দু’ ধরণের শাস্তিই প্রয়োগ করেন। অতঃপর মু‘আবিয়াহ
(রাঃ) মদ পানের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮৮, ৪৪৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন জনৈক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো,
যে মদ পান করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তাকে প্রহার
করো। সুতরাং আমাদের কেউ তাকে হাত দ্বারা, কেউ চাদর দ্বারা, কেউ জুতার দ্বারা প্রহার
করল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এরূপ কাজের জন্য তোমরা তাকে
নিন্দা ও ভৎর্সনা করো। সুতরাং লোকেরা তার সম্মুখপানে তিরস্কার করতে বলল, তুমি কি আল্লাহকে
ভয় কর না, তোমার কি আল্লাহর ‘আযাবের ভয় নেই। তুমি এরূপ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আসতে লজ্জাবোধ হলো না? অতঃপর জনৈক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ
তোমাকে হেয় ও লাঞ্ছিত করুক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
এরূপ বলো না (বদ্দু‘আ করো না)। এরূপ বলে তার ওপর শায়ত্বনকে প্রাধান্য দিও না; বরং তোমরা
এভাবে বলো- হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৬২১, ৩৬২৬ সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৭৮১, ৬৭৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৭, আহমাদ ৭৯৮৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ছ) ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, জনৈক ব্যক্তির নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ, কিন্তু তাকে ‘হিমার’ (গাধা) উপাধিতে ডাকা
হতো। সে (অবোধের ন্যায় কথাবার্তা বলে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসাতো।
একদিন মদ্যপায়ীর জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন।
এরপর আবার একদিন তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে চাবুক মারার নির্দেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ!
তার ওপর তোমার অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। কতবারই না তাকে এ অপরাধে আনা হলো? এমতাবস্থায়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে অভিশাপ দিও না। আল্লাহর শপথ! আমি তার
সম্পর্কে জানি যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) সাওর ইবনু যায়দ আদ্ দায়লামী হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, ‘উমার মদ্যপায়ীর দণ্ডের ব্যাপারে সাহাবীগণের নিকট পরামর্শ চাইলেন। তখন ‘আলী বললেনঃ
আমি মনে করি তাকে আশিবার চাবুক মারা হোক। কেননা যখন সে মদ পান করে, তখন সে বিকারগ্রস্ত
হয়ে পড়ে। আর নেশাগ্রস্থের দরুন আবোল-তাবোল কথা বকতে থাকে, এমনকি তখন সে মিথ্যা অপবাদও
রটায়। তখন ‘উমার মদ্যপায়ীকে আশিবার চাবুক মারার নির্দেশ দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬২৪, মালিক ১৬৩৩, মুসতাদরাক লিল
হাকিম ৮১৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) হুসাইন ইবনুল মুনযির আর-রাকাশী ওরফে আবূ সাসান
(রহঃ) বলেন, একদা আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালীদ ইবনু
উকবাহকে ধরে আনা হলো। হুমরান এবং অপর এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলো। তাদের
একজন সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে মদ খেতে দেখেছে। অপর ব্যক্তি সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে
মদ বমি করে ফেলতে দেখেছে। উসমান (রাঃ) বললেন, মদ পান না করলে তা বমি করতে পারে না।
তাই তিনি আলী (রাঃ)-কে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতে নির্দেশ দিলেন। আলী (রাঃ) হাসান
(রাঃ)-কে বললেন, তুমি তাকে শাস্তি দাও। হাসান (রাঃ) বলেন, যিনি খিলাফাতের সুবিধা ভোগ
করছেন তিনি ভার বহন করবেন।
অতঃপর আলী (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফারকে
বললেন, তুমি তার উপর হাদ্দ কার্যকর করো। অতএব তিনি একটি চাবুক নিয়ে তাকে প্রহার করতে
শুরু করলেন। আর আলী (রাঃ) তা গণনা করতে থাকলেন। যখন তিনি চল্লিশে পৌঁছলেন আলী (রাঃ)
বললেন, থামো, যথেষ্ট হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি বেত্রাঘাত
করেছেন। আমি মনে করি, আবূ বাকরও চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেছেন, কিন্তু উমার আশিটি বেত্রাঘাত
করেছেন। এর প্রতিটি সুন্নাত। তবে আমি চল্লিশটি পছন্দ করি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮০, ৪৪৮১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৭০৭, আহমাদ ৬২৫, ১১৮৮, ১২৩৪, দারেমী ২৩১২, ইরওয়া ৩০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঞ) ইবনুল হাদ (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ সমার্থবোধক
হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে প্রহারের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সাহাবীদের বললেনঃ তোমরা তাকে মৌখিক ধমক দিয়ে নসীহত করো। সুতরাং তারা তার নিকট
এসে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় করনি, তুমি আল্লাহকে ভয় করনি এবং তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লজ্জিত হওনি। অতঃপর তারা তাকে ছেড়ে দিলেন। হাদীসের শেষাংশে
তিনি বলেনঃ বরং তোমরা বলো, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! তার উপর করুণা
বর্ষণ করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
চতুর্থবার মদপানকারীর শাস্তিঃ
(ক) মুআবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা মদ পান করলে,
তাদের বেত্রাঘাত করো। পুনরায় পান করলে বেত্রাঘাত করো। আবারো পান করলে বেত্রাঘাত করো,
পুনরায় পান করলে বেত্রাঘাত করো, আবারো পান করলে তাদের হত্যা করো। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৪৪৮২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত
করো। আবার মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত করো, আবার মাতাল হলে বেত্রাঘাত করো, চতুর্থবারও
যদি এর পুনরাবৃত্তি হয়, তবে তাকে হত্যা করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, উমার ইবনু আবূ
সালামাহও পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও আবূ হুরাইরাহ সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ কেউ মদ পান করলে তাকে বেত্রাঘাত করো। চতুর্থবারও যদি এরূপ
করে তবে তাকে হত্যা করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপভাবে সুহাইল পর্যায়ক্রমে
আবূ সালিহ ও আবূ হুরাইরাহ সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা
করেছেনঃ চতুর্থবার যদি তারা মদ পান করে তাহলে তাদের হত্যা করো।
একইভাবে ইবনু আবূ নুআইম ইবনু উমারের সূত্রে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। আর আব্দুল্লাহ ইবনু উমার
(রাঃ) এবং আশ-শারীদ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা
করেছেন। তবে আল জাদলী মুআবিয়াহ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ সে তৃতীয় বার বা চতুর্থবার মদ পান করলে তাকে হত্যা
করো। (সুনান আবু দাউদ (তাহকীককৃত) ৪৪৮৪, সুনান ইবনে মাজাহ
২৫৭২, ২৫৭৩, আহমাদ ৭৭০৪, ৭৮৫১, ১০১৬৯, ১০৩৫১, দারেমী ২১০৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৮৭,
সহীহাহ ১৩৬০।) হাদিসের মানঃ হাসান সহীহ।
(খ) মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ পানকারী প্রসঙ্গে বলেনঃ যখন তা পান করবে
তখন তাকে কোড়া মারো, তারপর পান করলে কোড়া মারো, তারপর ৩য় বার পান করলেও তাকে কোড়া মারো,
তারপর ৪র্থ বার মদ পান করলে তার গর্দান কেটে দাও। (ইবনু
মাজাহ ২৫৭৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৪৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮২,
আহমাদ ১৬৪০৫, ১৬৪১৭, ১৬৪২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(আবূ হুরাইরা, শারীদ, শুরাহবিল ইবনু আওস, জারীর,
আবুর রামদা আল-বালাবী ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
আবূ ঈসা বলেন, মু‘আবিয়ার হাদিসটি অনুরূপভাবে সাওরী বর্ণনা করেছেন আসিম হতে, তিনি আবূ
সালিহ হতে, তিনি মু‘আবিয়া হতে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে।
ইবনু জুরাইজ এবং আমর বর্ণনা করেছেন সুহাইল ইবনু আবী সালিহ হতে, তিনি তার পিতা হতে,
তিনি আবূ হুরাইরা হতে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একই বিষয়ে
আবূ সালিহ কর্তৃক মু’আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত এই হাদীসটি অত্যাধিক সহীহ্। আবূ ঈসা বলেন,
আমি ইমাম বুখারী (রহঃ) -কে একথা বলতে শুনেছি। তিনি আরো বলেছেন, পূর্বে মদ পানকারীকে
মেরে ফেলার হুকুম ছিল। পরে সেটাকে বাতিল করা হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক-মুহাম্মাদ
ইবনু মুনকাদিরের সূত্রে, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর সূত্রে, তিনি রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “যে লোক
মাদকদ্রব্য সেবন করে সে লোককে চাবুক পেটা কর। যদি সে লোক চতুর্থবার তা সেবন করে তাহলে
তাকে মেরে ফেল।” জাবির (রাঃ) বলেন, তারপর একজন লোককে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সামনে আনা হল সে লোক চতুর্থবার সুরা পান করেছিল। তাকে তিনি বেত্রাঘাত
করলেন কিন্তু হত্যা করেননি। ইমাম যুহরীও কাবীসা ইবনু যুয়াইব (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হতে একই কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি (কাবীসা)
বলেছেন, প্রথমে হত্যার হুকুম ছিল, পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়েছে।
অভিজ্ঞ আলিমগণ এরূপ আমল করেছেন। আমরা এ বিষয়ে
তাদের মধ্যে কোনরকম দ্বিমত দেখতে পাইনি। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের আলিমগণ
একমত যে, মদ্য পানকারীকে মেরে ফেলা যাবে না। তাছাড়া এই বক্তব্যকে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত
একটি হাদীস আরো বেশি মজবুত করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ “যে লোক এরকম সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই এবং আমি নিশ্চয়ই
আল্লাহর রাসূল’ -তার রক্তপাত (হত্যা) করা বৈধ হবেনা। তবে এ ধরণের তিন প্রকার মানুষকে
হত্যা করা যাবেঃ কোন মানুষের হত্যাকারী, বিবাহিত যিনাকারী এবং নিজের দ্বীন পরিত্যাগকারী
(মুরতাদ)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদ পান করে তাকে চাবুক মারো। যদি সে (পর্যায়ক্রমে)
চতুর্থবারও মদ পান করে, তাহলে তাকে হত্যা কর। রাবী বলেন, অতঃপর একদিন জনৈক ব্যক্তিকে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করা হলো, যে চতুর্থবার মদ পান
করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে প্রহার করলেন কিন্তু হত্যা
করেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬১৭, সহীহ আত্ তারগীব
২৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি কাউকে শরীয়াতের দন্ড দেয়ার সময় সে তাতে মরে গেলে আমার দুঃখ হয় না। কিন্তু
মদ পানকারী ছাড়া। সে মারা গেলে আমি জরিমানা দিয়ে থাকি। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শাস্তির ব্যাপারে কোন সীমা নির্ধারণ করেননি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৩৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮৬, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৬২৩, আহমাদ ১০৮৪, ইরওয়া ২৩৮১, আধুনিক
প্রকাশনী- ৬৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বদ দোয়া না করাঃ
খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ করে
এবং তার ওপর ঐ অপরাধের দণ্ড কার্যকর হয়, তখন উক্ত দণ্ডই তার জন্য কাফফারা হয়ে যায়।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬২৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৯৪,
আহমাদ ২১৮৭৬, সহীহাহ্ ২৩১৭)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
নির্ধারিত দণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দশ
চাবুকের বেশি কার্যকর করা বৈধ হবে নাঃ
আবূ বুরদাহ্ ইবনু নাইয়্যার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত দণ্ড
ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দশ চাবুকের বেশি কার্যকর করা বৈধ হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৮৪৮, ৬৮৪৯, ৬৮৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৮, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ২৬০১,
আহমাদ ১৫৮৩২, ১৫৪০৫, ১৬০৫১, দারেমী ২৩১৪, ইরওয়া ২০৩২, ২১৮০। আধুনিক প্রকাশনী ৬৩৭১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাবধানতা অবলম্বনে শাস্তি প্রদান করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (কারণবশত) মারধর করে,
তখন অবশ্যই যেন মুখমণ্ডলে আঘাত না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৬৩১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৭৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরাঃ
মদখোরকে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখিত দলিলভিত্তিক আমরা দেখতে পাই যে, মদখোরকে
হাত, জুতা, লাঠি, চাদর বা খেজুরের ডাল দ্বারা প্রহার করা হতো। আবু বকর রাঃ এর শাসনামলে
মদখোরকে ৪০টি চাবুক এবং ওমর রাঃ এর শাসনামলেও ৪০টি চাবুক মারা হতো। পরবর্তীতে মদের
ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে ৮০টি চাবুক মারা হতো। রাসুল সাঃ যদিও চতুর্থবার মদপানকারীকে হত্যা
করার আদেশ দিয়েছেন কিন্তু সে সময়েই তা কার্যকর করা হয়নি। আবার রাসুল সাঃ বলেছেন, আল্লাহ
তা‘আলার নির্ধারিত দণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে দশ চাবুকের বেশি কার্যকর করা বৈধ হবে
না। মদখোরের শাস্তি যেহেতু আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত নয় তাই এর স্বল্পতা-ব্যাপকতার
উপর ভিত্তি করে শাস্তি কম বেশী করা যেতে পারে।
রাসুল সাঃ ও সাহাবাগণের এর সময় তরলীকৃত মদ
পানের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু বর্তমান যুগে মদ ছাড়াও অতি মারাত্মক জাতীয়
নেশাদার দ্রব্য আবিস্কৃত হয়েছে। এর নামগুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো তরলীকৃত
মদের চেয়ে খুবই ভয়ানক যা সেবন করলে জীবন যৌবন পরিবার সংসার অর্থসহ সব কিছু তিলে তিলে
ধ্বংস হয়ে যায়।
বর্তমান যুগে এলকোহল জাতীয় মদকে নেশাদার দ্রব্য
মনে করা হয় না। আইনগতভাবে মদ নিষিদ্ধ নয়। অথচ রাসুল সাঃ ও সাহাবাগণ এই এলকোহল জাতীয়
মদেরই শাস্তির বিধান চালু করে গেছেন। সেই বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুসলিম শাসকগণ
মদকে আইনগতভাবে জায়েজ করে দিয়ে অন্যান্য নেশাদার দ্রব্যকে শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছেন।
আসুন জেনে নেই, এলকোহল জাতীয় মদ ব্যতীত অন্যান্য
নেশাদার দ্রব্যের জন্যে দেশে বিদেশে কিরুপ শাস্তি দেয়া হয়।
মাদক সেবন, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ: শাস্তি কি?
মাদকাসক্তের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শারীরিক বা
মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি অভ্যাসবশে মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা সেবনকারী
ব্যক্তি। আইনে মাদকের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, স্থানান্তর,
আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন,
নিলামকরণ, ধারণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, সেবন, প্রয়োগ, ব্যবহারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে-
পারমিট ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করিতে পারিবেন না এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে
সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিকেল কলেজের অন্যূন কোনো সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র
ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করিবার জন্য পারমিট প্রদান করা যাইবে না। তবে
মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক তাড়ি পান করিবার ক্ষেত্রে এবং
রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসমূহ এবং অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র
নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত অথবা প্রস্তুতকৃত মদ পান করিবার ক্ষেত্রে উপ-ধারা
(১) এর কোনো কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনিযায়ী ইয়াবা, সিসা, কোকেন, হেরোইন ও
পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ
শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৫ গ্রাম পর্যন্ত কোকেন, হেরোইন, মরফিন ও পেথিড্রিন
পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া যাবে। এই মাদকের পরিমাণ ৫ থেকে
২৫ গ্রামের মধ্যে হলে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম
বা তার বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। মাদক
নির্মূলে রয়েছে এমন শক্তিশালী আইন। তবু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাদক।
কিন্তু কেন? এ ব্যাপারে কথা হয় সাবেক আইনমন্ত্রী
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১৮ সালে ইয়াবা,
সিসা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রপ্তানি
বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন পাস করে। কিন্তু এখন
পর্যন্ত এ আইনে কারো সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অর্থাৎ মাদকের সর্বোচ্চ
শাস্তি থাকা সত্ত্বেও কোনো মামলাতে দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি হয়নি। যে কারণে মাদক সংশ্লিষ্টরা একই অপরাধ বার বার করছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল
এইড ফর চিলড্রেন এর নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, মাদকদ্রব্য
নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনিযায়ী ইয়াবা, সিসা, কোকেন,
হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার
সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯ (১) ধারায় বলা
হয়েছে- অ্যালকোহল ব্যতীত অন্যান্য মাদকদ্রব্য অথবা মাদকদ্রব্যের উৎপাদন অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণে
ব্যবহৃত হয় এইরূপ কোনো দ্রব্য অথবা উদ্ভিদের
(ক) চাষাবাদ,
উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন বা স্থানান্তর এবং আমদানি বা রপ্তানি করা যাইবে
না;
(খ)
সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ,
ধারণ, অধিকার অথবা দখল, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শন করা যাইবে না;
(গ)
সেবন, প্রয়োগ অথবা ব্যবহার করা যাইবে না এবং
(ঘ) দফা
(ক) হইতে (গ) পর্যন্ত উল্লেখিত কোনো উদ্দেশ্যে কোনো প্রচেষ্টা অথবা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ
বিনিয়োগ, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা পরিচালনা কিংবা উহার পৃষ্ঠপোষকতা, কিংবা মিথ্যা
ঘোষণা প্রদান করা যাইবে না।
৯(২) ধারায় বলা হয়েছে- কোনো মাদকদ্রব্যের উপাদান
অথবা উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় অথবা হইতে পারে এইরূপ কোনো প্রিকারসর কেমিক্যালসের-
(ক)
উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ; বহন, পরিবহন বা স্থানান্তর এবং আমদানি বা রপ্তানি করা যাইবে
না;
(খ) সরবরাহ,
বিপণন, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলাম করা, ধারণ, অধিকার
অথবা দখল, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শন করা যাইবে না;
(গ) সেবন,
প্রয়োগ অথবা ব্যবহার করা যাইবে না; এবং
(ঘ) দফা
(ক) হইতে (গ) পর্যন্ত উল্লেখিত কোনো উদ্দেশ্যে কোনো প্রচেষ্টা অথবা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ
বিনিয়োগ, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা পরিচালনা, কিংবা উহার পৃষ্ঠপোষকতা, কিংবা মিথ্যা
ঘোষণা প্রদান করা যাইবে না।
আইনের ৯ ধারা লঙ্ঘনে কী ধরনের সাজার বিধান
রয়েছে সে সম্পর্কে আইনের ৩৬ ধারায় বিশদ বলা হয়েছে। এই ধারায় টেবিল ১০- এ বলা হয়েছে
প্রথম তফশিলের ‘ক’ শ্রেণির ৫নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ৯ এর উপ-ধারা
(১) এর দফা (খ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি হবে-
(ক) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ অনূর্ধ্ব ২০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে অন্যূন ১ বৎসর, অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড
এবং অর্থদণ্ড;
(খ) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ ২০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার এর ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ৪০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার
হইলে অন্যূন ৫ বৎসর, অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড;
(গ)
মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৪০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটারের ঊর্ধ্বে হইলে মত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
৩৬ এর ১১নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের
‘ক’ শ্রেণির ৬নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১) এর
দফা (ক) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি হবে-
(ক) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে অন্যূন ১ বৎসর, অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর
কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড;
(খ) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ ৫ গ্রাম অথবা মিলিলিটারের ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ২৫ গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে
অন্যূন ৫ বৎসর, অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড;
(গ)
মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ২৫ গ্রাম অথবা মিলিলিটারের ঊর্ধ্বে হইলে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
৩৬ এর ১৪নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের
‘ক’ শ্রেণির ৭নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১) এর
দফা (খ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি-
(ক) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ অনূর্ধ্ব ৫০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার
হইলে অন্যূন ১ বৎসর, অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (খ) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ ৫০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ৫ কেজি অথবা লিটার হইলে অন্যূন ৫ বৎসর, অনূর্ধ্ব
১০ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড;
(গ)
মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৫ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে হইলে অন্যূন ১০ বৎসর, অনূর্ধ্ব যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
৩৬ এর ২৪নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের
‘খ’ শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর
দফা (গ) (ঘ) অথবা (ঙ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি-
(ক) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১০ কেজি অথবা লিটার হইলে অন্যূন
৬ মাস অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড;
(খ) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ ১০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ১০০ কেজি অথবা লিটার হইলে অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড
এবং অর্থদণ্ড এবং
(গ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০০ কেজি অথবা লিটার-এর
ঊর্ধ্বে হইলে অন্যূন ৫ বৎসর অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
৩৬ এর ২৫নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের
‘খ’ শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর
দফা (চ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি- অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
এই আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে- অ্যালকোহল উৎপাদন, ইত্যাদি সম্পর্কে বিধি-নিষেধ বিষয়ে
বলা হয়েছে। এর (১) উপ-ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স, পারমিট বা পাস ব্যতিরেকে
নিম্নবর্ণিত কোনো কার্য করিতে পারিবে না, যথা:-
(ক) কোনো
ডিস্টিলারি অথবা ব্রিউয়ারি স্থাপন;
(খ)
কোনো অ্যালকোহল উৎপাদন অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ; (গ) কোনো অ্যালকোহল বহন, পরিবহন, আমদানি
অথবা রপ্তানি;
(ঘ) কোনো
অ্যালকোহল সরবরাহ, বিপণন, ক্রয় অথবা বিক্রয়; (ঙ) কোনো অ্যালকোহল ধারণ, অধিকার অথবা
দখল, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ অথবা প্রদর্শন;
(চ)
কোনো অ্যালকোহল সেবন, প্রয়োগ ও ব্যবহার;
(ছ)
কোনো অ্যালকোহল জাতীয় ঔষধ প্রস্তুতের উপাদান হিসাবে ব্যবহার; এবং ধারা ১০ এর শাস্তিঃ ৩৬ এর টেবিল ২৪ অনুযায়ী- প্রথম তফশিলের ‘খ’ শ্রেণির
৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) (ঘ)
অথবা (ঙ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি-
(ক)
মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১০ কেজি অথবা লিটার
হইলে অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড;
(খ) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ ১০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ১০০ কেজি অথবা লিটার হইলে অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড
এবং অর্থদণ্ড; এবং
(গ) মাদকদ্রব্যের
পরিমাণ ১০০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে হইলে অন্যূন ৫ বৎসর অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড
ও অর্থদণ্ড।
৩৬ এর টেবিল ২৫ অনুযায়ী- প্রথম তফশিলের ‘খ’
শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা
(চ) এর লঙ্ঘন। শাস্তি অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
(২) কোনো
মাদকদ্রব্য অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া দণ্ড ভোগ করিবার পর যদি কোনো ব্যক্তি পুনরায় কোনো
মাদকদ্রব্য অপরাধ করেন, তাহা হইলে উক্ত অপরাধের দণ্ড মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
না হইলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য এই আইনে সর্বোচ্চ যে দণ্ড রহিয়াছে উহার দ্বিগুণ দণ্ডে
দণ্ডিত হইবেন।
(৩)
কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধের জন্য দ্বিতীয়বার দণ্ডিত হইয়া দণ্ড ভোগ করিবার পর যদি কোনো
ব্যক্তি পুনরায় কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ করেন তাহা হইলে উক্ত অপরাধের দণ্ড মৃত্যুদণ্ড
অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হইলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অন্যূন ২০ (বিশ) বৎসর কারাদণ্ড
ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
সূত্রঃ মানবজমিন, প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২১।
কোন দেশের মাদক আইনে কী শাস্তি?
মাদক নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন
রয়েছে। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ অনুযায়ী ৫ গ্রাম পর্যন্ত কোকেন, হেরোইন,
মরফিন ও পেথিড্রিন পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে।
এছাড়া মাদকের পরিমাণ ৫ থেকে ২৫ গ্রামের মধ্যে
হলে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা এবং মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হলে
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
এই লেখায় থাকছে কয়েকটি দেশের আইনের তথ্য।
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডঃ
মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে মালয়েশিয়ায়
মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। দেশটিতে মাদক রাখার জন্য জেল, জরিমানার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া অভিবাসীদের
কাছে মাদক পাওয়া গেলে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডে মাদক পাচারের কারণে হতে
পারে মৃত্যুদণ্ড। মাদকসেবীদের বাধ্যতামূলকভাবে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো সে দেশের নিয়মিত
ঘটনা।
ইরান ও সৌদি আরবঃ
প্রতিবেশী আফগানিস্তানে আফিমের চাষ হওয়ায় ইরানের
অন্যতম সমস্যা মাদক। দেশটিতে মাদকসহ ধরা পড়লে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। হতে পারে মৃত্যুদণ্ডও।
আবার, সৌদি আরবে মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যুদণ্ড প্রায় নিশ্চিত। মাদক সেবন
কিংবা সেগুলো রাখার জন্য দেশটিতে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত, জরিমানা ও দীর্ঘদিনের কারাবাস
দেওয়া হয়।
চীন ও সিঙ্গাপুরঃ
চীনে মাদকসহ ধরা পড়লে সরকারের মাদকাসক্তি নিরাময়
কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া মাদক সংক্রান্ত কিছু অপরাধের জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়
দেশটিতে। অন্যদিকে মাদক বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে।
ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনঃ
ইন্দোনেশিয়ায় গাঁজাসহ ধরা পড়লে সর্বোচ্চ ২০
বছরের জেল হতে পারে। অন্যান্য মাদকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান
রয়েছে। তবে মাদক বিক্রির দায়ে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।
ফিলিপাইনে মাদক পাচারকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের
বিধান রয়েছে। কারো কাছে ১০ গ্রামের বেশি মাদক পাওয়া গেলে তাকে পাচারকারী হিসেবে ধরে
নেওয়া হয়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশে এলকোহল জাতীয় মদ পান ও ব্যবসায়ীক বৈধতা বা লাইসেন্স প্রদানঃ
২৪ মে ২০১৫ তারিখে “যুগান্তর পত্রিকায়” প্রকাশিত
এক তথ্য মতে, সারা দেশে মদের বার রয়েছে ১১৮টি। এর মধ্যে ক্লাব-বার ২৮টি। এসব ক্লাব-বারের
বেশিরভাগই আবার ঢাকায়। রাজধানীতে ক্লাব বারের সংখ্যা ১৭টি। বাকিগুলো চট্টগ্রাম, সিলেট,
খুলনা ও বরিশালে।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে (০৮.৫১ PM
Bdst) bdnews24.com এ প্রকাশিত এক তথ্য মতে জানা যায়, ঢাকায় ৬০টি ক্যাসিনো আছে।
এছাড়া অনেক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত যে, ক্যাসিনোর সংখ্যা কেউ বলছে ৬০টি, কেউ ১৫০টি,
কেউ ৬০০টি।
১৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে “দৈনিক সংগ্রাম” পত্রিকায়
প্রকাশিত-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) হিসেবে রাজধানীতে বৈধ মদের বার ৫০
থেকে ৬০টি এবং সিসা বার বা সিসা লাউঞ্জ রয়েছে ১০৫টি। অনেক বারের আইনি ভিত্তি থাকলেও
সেখানে যে মদ বা সিসা বিক্রি হয় তার বেশির ভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নেই।
১৯ জুন ২০১৮ তারিখে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকায়
প্রকাশিত, বর্তমানে সারা দেশে অনুমোদিত বারের সংখ্যা মাত্র ৯৬টি।
২৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে “শেয়ার বিজনেস” নামক
পত্রিকায় প্রকাশিত- দেশে বর্তমানে মদপানের অনুমতি রয়েছে ১৪২২৩ জনের। এর মধ্যে রাজধানী
ঢাকায় রয়েছে ৮১০০ জনের। আর অনুমতিপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ৭২৩ জন। জেলা শহরের চেয়ে বিভাগীয়
শহরগুলোতে কোমল পানীয় মদ পানকারী বেশি। কোনো কোনো জেলায় দেখা গেছে, ৫০ জনেরও নিচে মদ
পানকারীর পারমিট রয়েছে।
যেভাবে মদপানের পারমিট বা লাইসেন্স করতে হয়ঃ
বংলাদেশে মদপানের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারের
যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়োগ প্রাপ্ত সেটি হল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর/Narcotics
Control Department. ঠিকানা: ৪৪১, তেজগাও শিল্পাঞ্চল। ঢাকা- ১২০৮।
লাইসেন্সর জন্য নির্দিষ্ট ফরম পুরন করে এবং আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র
ও নির্ধারিত ফি সহকারে জমাদান সাপেক্ষে পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়।
নির্ধারিত পারমিট ফিঃ
(ক)
বিদেশী মদ/ ফরেন লিকিওর এর জন্য---- ২,০০০ টাকা
(খ) দেশী মদের জন্য-----------------------------৮০
টাকা
আনুষাঙ্গিক কাগজপত্রঃ
আবেদনটির যৌক্তিকতা প্রমানে ডাক্তারি সার্টিফিকেট।
প্রিয় পাঠকঃ
আমাদের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে মদ পান আইনীগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ। মদের বারের সংখ্যা ও মদ পানকারীর লাইসেন্স সংখ্যা সরকারি হিসেবে যাই
থাকুক, আপনি কখন কোথায় মদ পান করতে চান সেখানেই হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে। শুধু মদই না
যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্যে এখন হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে মদের কারখানাঃ
কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের
চুয়াডাঙ্গা জেলায় অবস্থিত একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান
একটি চিনি কল। তবে উপজাত হিসেবে এই কারখানা থেকে মদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।
অবস্থানঃ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের
অধীন চুয়াডাঙ্গা জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় এই
শিল্প কমপ্লেক্সটি অবস্থিত।
ইতিহাসঃ
১৯৩৮ সালে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত
উদ্যোক্তাদের অধীনে স্থাপিত হয়। সে সময় এর অধীনে একটি চিনি কারখানা, একটি ডিষ্টিলারী
ইউনিট ও একটি ওষুধ কারখানা যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতা লাভের পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ
সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে।[২][৩]
অবকাঠামোঃ
এই বৃহদায়তন শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা,
ডিষ্টিলারি ওয়াটার, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সারকারখানার সমন্বয়ে গঠিত। এর ভুমির পরিমান
৩ হাজার ৫৭২ একর। যার ২ হাজার ৪৫০ একর কৃষিজমি। এসব কৃষিজমিতে আখ চাষ করা হয়।[৪]
উৎপাদন ক্ষমতাঃ
প্রতিষ্ঠার সময় কেরু এ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ)
লিঃ এর দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১০১৬ মেট্রিক টন। জাতীয়করণের পরে ১৯৭৮-৮৫ সাল এই
সময়ে অস্ট্রেলীয় কারিগরি সহযোগিতায় এর দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫০
মেট্রিক টন এবং চিনি উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি অর্থবছরে ১১৫০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়।
উৎপাদিত পণ্যঃ
এখানকার মূল পণ্য হচ্ছে আখ থেকে উৎপাদিত চিনি।
তবে আখ থেকে চিনি বের করে নেওয়ার পর যে উপজাত-দ্রব্য (চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড)
পাওয়া যায় তা থেকেও বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়। উপজাত-দ্রব্য হতে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে
উলেখযোগ্য হচ্ছে দেশি মদ, বিদেশি মদ, ভিনেগার, স্পিরিট ও জৈব সার এবং নতুন উৎপাদিত
পণ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার । এখানে নয়টি ব্র্যান্ডের ‘ফরেন লিকার’ বা বিদেশি মদ তৈরি
হয়। ফরেন লিকারগুলো হচ্ছেঃ
• ইয়েলো লেভেল মল্টেড হুইস্কি
• গোল্ড রিবন জিন
• ফাইন ব্র্যান্ডি
• চেরি ব্র্যান্ডি
• ইমপেরিয়াল হুইস্কি
• অরেঞ্জ ক্রেকাউট
• সারিনা ভদকা
• রোজা রাম
• ওল্ড রাম
এই ফরেন লিকার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দর্শনায়
কেরুর নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র হতে ১৮০, ৩৭৫ ও ৭৫০ মিঃলিঃ লিটারের বোতলে বাজারজাত
করা হয়। বছরে প্রায় ৩৯ লাখ ২০ হাজার বোতল ফরেন লিকার উৎপাদিত হয় এখানে। আর বাংলা
মদের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৬ লাখ লিটার। যা দেশের ১৩টি বিক্রয় কেন্দ্র হতে বাজারজাত
করা হয়।
১৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে “বিবিসি নিউজ“ বাংলায়
প্রকাশিত, মদের চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশে, উৎপাদনও বাড়াচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোং। বাংলাদেশের
একমাত্র অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং বলছে, গত ছয় মাসে তাদের
উৎপাদিত দেশি মদের বিক্রি ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও বাংলাদেশের আনাচে
কানাচে চোলাই মদসহ ভেজাল মদ তৈরীর অসংখ্য অবৈধ কারখানা আছে। এইসব ভেজাল মদ পান করে
মাঝে মধ্যে অনেক লোকের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় দেখা যায়।
বাংলাদেশে নতুন অ্যালকোহল বিধিমালা
এখন থেকে ২১ বছরের কম বয়সীদের মদ্যপান নিষিদ্ধ
করেছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি অ্যালকোহল সেবন ও ব্যবহারের জন্য সরকার অনুমতিরও বিধান
রেখেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণাল থেকে জারিকৃত বিধিমালা-২০২২
বলা হয়েছে, অ্যালকোহলের বিক্রয়, বিপণন, আমদানি-রফতানি, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ
ও সেবনে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য এই বিধানগুলো যুক্ত করা হয়।
এ বিধিমালায় মূলত অ্যালকোহল জাতীয় মাদকদ্রব্য
কোথায় বেচাকেনা হবে, মদ্যপায়ীরা কোথায় বসে মদ পান করবেন, পরিবহন করতে পারবেন কি
না - এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলে বলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ফলে এখন
থেকে অ্যালকোহল আমদানি, রফতানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয়-বিক্রয়
এবং সংরক্ষণের জন্য অ্যালকোহল পারমিট, লাইসেন্স বা পাস গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে মদ
বা মদ্য জাতীয় পানীয় পানের জন্য পারমিট আর পরিবহনের জন্য পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে
এ বিধিমালায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক
পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, বিধিমালা না থাকার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পারফিউম স্যানিটাইজার তৈরিতে কিংবা শিল্পে ব্যবহৃত অ্যালকোহল খেয়ে মারা যাওয়া কিংবা
অন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে। এবারই প্রথম বিধিমালা করা হলো। এর আগে এ সংক্রান্ত কোন
বিধিমালা ছিলো না। শৃঙ্খলা আনার পাশাপাশি অ্যালকোহলের নামে খারাপ কিছু যেন বিক্রি না
হয় আর সরকার যাতে রাজস্ব পায়- এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন এই বিধিমালা করা হয়েছে।
যা আছে নতুন বিধিমালায়:
• ২১ বছরের নীচে কোন ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট
দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে
মুসলিমদের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোন ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন
হবে।
• হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ
খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয় তারা বার
স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
• কোন এলাকায় ১০০ জন দেশি মদ বা বিদেশি মদের
পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেওয়া যাবে। অর্থাৎ কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে
যদি কমপক্ষে ১০০ জন সদস্য থাকেন যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা
যাবে।
• কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে ২০০ জন অ্যালকোহল
পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।
• অ্যালকোহল বহন বা পরিবহনের জন্য অধিদফতর
থেকে পাসের জন্য আবেদন করা যাবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যে কোনো পথেই অ্যালকোহল
পরিবহন করা যাবে। তবে সেটা পাসে উল্লেখ থাকতে হবে।
• পারমিটধারী ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের নির্ধারিত
স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন।
• অ্যালকোহলে কোন ধরনের ভেজাল মেশানো যাবে
না।
• ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে
যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।
• বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট,
ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেওয়া
যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচ তারকা বা তার চেয়ে
বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।
• বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন
করতে হবে।
• বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে
এমন কোন দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিলাতিমদ উৎপাদন করা যাবে।
• সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও
যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।
• সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোন বিয়ার
উৎপাদন করা যাবে না।
• ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদপান
করতে পারবেন।
• বিদেশী মদ আমদানি বা রফতানির জন্য আবেদন
করা যাবে।
• বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল,
অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড
স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল
আমদানি করা যাবে।
• যে ব্রান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হবে
সেই ব্রান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে।
• তবে পর্যটন কর্পোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত
প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ মদ আমদানি করতে পারবে না।
• যেসব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের
সংখ্যা দুশো বা তার চেয়ে বেশি সেসব ক্লাব তাদের চাহিদা ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা
বলছেন এসব বিধিমালা সঠিকভাবে মানা হলে এটি যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়াবে, তেমনি ক্রমবর্ধমান
চাহিদা নিরসনে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বার স্থাপন করতে পারবে,
যে সুযোগ এতোদিন অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো।
এখন সরকারের অনুমোদিত কিছু ওয়্যার হাউজ, লাইসেন্সকৃত
পানশালা ছাড়াও অল্প কিছু তারকা হোটেলগুলো থেকে মদ ক্রয়ের সুযোগ আছে পারমিটধারী ব্যক্তিদের
জন্য। তবে বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি কিংবা ভদকার মতো বিদেশি মদের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক
থাকায় প্রায়ই ভেজাল মেশানো মদ্যপানের মতো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
মদের বারগুলোতে কী হয়ঃ
১৯ জুন ২০১৮ তারিখে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকায়
প্রকাশিত, বর্তমানে সারা দেশে অনুমোদিত বারের সংখ্যা মাত্র ৯৬টি।
থ্রি স্টার, ফাইভ স্টার ও সেভেন স্টারসহ বাংলাদেশের
বিভিন্ন শহরে এইসব মদের বারগুলো অবস্থিত।
বেশীরভাগ মদের বারগুলোতে চার ধরণের পাপ কাজ
সংঘটিত হয়। যেমন,
(ক) মদ পান ।
(খ) জুয়ার আসর।
(গ)
নাচ গানের আসর ও
(ঘ)
যিনা/ব্যভিচার।
বাংলাদেশে মদের লাইসেন্স দেয়ার প্রথম উদ্যোক্তা কে?
০৬ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে “বাংলা ট্রিবিউন” পত্রিকায়
প্রকাশিত-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ক্ষমতায় এসে মদ, জুয়া, রেস খেলা বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে
হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, জিয়াউর রহমানসহ তারাই মদের লাইসেন্স চালু করে।’
মুসলিম মদপানকারীকে লাইসেন্স প্রদানঃ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ ( ২০১৮ সনের
৬৩ নং আইন ) এর তৃতীয় অধ্যায় এর ১১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, পারমিট ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করিতে
পারিবেন না এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অন্যূন
কোনো সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করিবার
জন্য পারমিট প্রদান করা যাইবে না। এবং বাংলাদেশে নতুন অ্যালকোহল বিধিমালায় বলা হয়েছে,
মুসলিমদের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোন ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন
হবে।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে যতোগুলো মদের বার ও মদ বিক্রির দোকান আছে এবং যারা ব্যবসায়ী তারা
কি সবাই অমুসলিম? এইসব মদ বিক্রির স্থানে যারা মদ ক্রয় করতে যায় তারা কি সবাই অসুস্থ?
প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল মদ বিক্রি হচ্ছে আর যারা ক্রয় করছে তারা কারা? আইনে বলা
হয়েছে, কোনো মুসলমান মদ পান করতে চাইলে তার ডাক্তারী সার্টিফিকেট থাকতে হবে। কয়জনের
এই সার্টিফিকেট আছে? আর ইসলামে যেখানে বলা হয়েছে মদ নিজেই এক প্রকার রোগ তা দিয়ে কিভাবে
চিকিৎসা হতে পারে। আর ইসলামে এই মদপানকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এর শাস্তির বিধান তৈরী
করা হয়েছে, মদের ব্যবসাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে আর আমরা ইসলামি বিধিনিষেধ তোয়াক্বা
না করে মুসলিম সমাজে সেটাই আইনগতভাবে চালু করেছি। আবার দাবী করি আমি মুসলমান।
মুসলিম সমাজে বা রাষ্ট্রে মদের প্রচলন কারা করলো? কেনই বা করলো? আসুন গোপনীয়
মূল রহস্য জেনে নেইঃ
ফ্রাঞ্চের জনৈক বিশিষ্ট পন্ডিত হেনরী তাঁ গ্রন্থ
“খাওয়াতির মাওয়ানিহ ফিল ইসলাম” এ লিখেছেন,“ প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে
মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য এই মদই ছিল অব্যর্থ তলোয়ার। আমরা আলজেরিয়ার
বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্ত আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় নি। ফলে তাদের বংশ
বেড়েই চলছে। এরা যদি আমাদের এ উপঢৌকন গ্রহণ করে নিতো; যে ভাবেই তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক
গোষ্ঠী গ্রহণ করে নিয়েছে তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে যেত। আজ যাদের
ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত মদের প্রবাহ বইছে,তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে
গেছে যে, তারা তাদের মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।
(সূত্র: অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত
মাসআলা-মাসায়েল, পৃষ্ঠা নং-৪৩। প্রকাশক-ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল-মে ২০০৬।)
মূলত মুসলমানদের মূল পারমানবিক শক্তি হচ্ছে
ঈমানি শক্তি। কাফির মুশরিকগণ ভালভাবেই জানে মুসলমানদের পরাজিত করতে এবং আজীবন দাসে
পরিনত করতে হলে আমাদের ঈমানি শক্তি নষ্ট করতে হবে। আর ঈমানি শক্তি নষ্ট করা মূল হাতিয়ার
হচ্ছে মুসলিম সমাজে ব্যাপকহারে মদের প্রচলন ঘটানো। এই কৌশলটাই যুগ যুগ ধরে কাফির মুশরিকগণ
প্রয়োগ করে আসছে। যা মুসলিম শাসকবৃন্দ বুঝতে পারছে না।
মদের কারখানা, মদের দোকান বা মদের বার কিংবা মদ ব্যবসা মুসলমানদের জীবিকার
উৎসঃ
দর্শনা কেরু এন্ড কোং মদের কারখানাসহ মদ বিক্রির
দোকানে, মদের বারে শত শত মুসলিম কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
প্রতিটি স্থানেই সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে অসংখ্য মুসলিম ব্যক্তি চাকরি করছে। এরা একদিকে
মদের দোকানে বা কারখানায় চাকরি করে অর্থ উপার্জন করছে অন্য দিকে অনেকে সালাত আদায়সহ
ধর্মীয় কর্মও পালন করছে। কিন্তু তাদের উপার্জিত অর্থ কি হালাল ! আসুন সহিহ হাদিস ভিত্তিক
বিষয়গুলো জেনে নেই।
(ক) ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদের উপর দশভাবে অভিসম্পাত করা হয়েছেঃ স্বয়ং মদ (অভিশপ্ত),
মদ উৎপাদক, যে তা উৎপাদন করায়, তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তার বহনকারী, তা যার জন্য
বহন করা হয়, এর মূল্য ভোগকারী, তা পানকারী ও তা পরিবেশনকারী (এদের সকলেই অভিশপ্ত)।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৭৪,
৫৬৮৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৭, আহমাদ ইরওয়া ১৫২৯, রাওদুন নাদীর ৫৪৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশভাবে মদের উপর অভিসম্পাত করেছেনঃ মদ প্রস্তুতকারী,
তা উৎপাদনকারী, যে তা উৎপাদন করায়, তা যার জন্য উৎপাদন করা হয়, তা বহনকারী, যার জন্য
তা বহন করা হয়, তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তা পরিবেশনকারী এবং যার জন্য পরিবেশন করা
হয়। এভাবে তিনি দশজনের উল্লেখ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ
৩৩৮১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৫,
গায়াতুল মারাম ৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা পুত-পবিত্র, তিনি
পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ
করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
‘‘হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ‘মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ
‘‘হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ
ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক) হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র,
তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
(খ) হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ
দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর
যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো । (বাক্বারাহ ২/১৭২)।
(গ) হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার
করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে আমি অবগত। (মুমিনূন ৫১)।
মনে রাখবেন,
(ক) জাবের (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যে
দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের
জন্য জাহান্নামই সমীচীন। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত
হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত
পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে,
সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সবশেষে এটাই বলতে চাই, মদ বা মদ জাতীয় সকল
নেশাদার দ্রব্যই হারাম। মদের ব্যবসা হারাম। মদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের
উপার্জিত অর্থও হারাম। বর্তমানে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রেই মদের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে
এবং তা সহজলভ্য করতে সরকারিভাবে আইনও পাশ করা হয়েছে। এর থেকে পরিত্রানের উপায় হচ্ছে,
প্রকৃত ইমানদার, মুত্তাকি মুসলিম শাসক নিযুক্ত করা এবং মাদকের ভয়াবহতা সমাজে তুলে ধরা
এবং নিজের আমল সংশোধনসহ ইসলামি পরিবার গঠন করা। নেক্বার মেয়েকে বিয়ে করে নেক্বার সন্তান
জন্ম দেয়া ও তাদেরকে ইসলামি বিধান মোতাবেক গড়ে তোলা।
======================================
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি
কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি,
গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য
সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment