Search This Blog

Friday, January 3, 2020

বাংলা সহিহ হাদিস সিরিজ-৮ (পোশাক পরিচ্ছদ অধ্যায়)-৩৫টি হাদিস


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
 বাংলা সহিহ হাদিস সিরিজ-৮ (পোশাক পরিচ্ছদ অধ্যায়)
হাদিস গ্রন্থ-রিয়াদুস সলেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী
সহিহ ও জাল-জইফ হাদিস চিহ্নিত/নির্নিত
 (৭১৭-৭৫১টি মোট  ৩৫টি হাদিস)
পোশাক পরিচ্ছদ


পরিচ্ছদঃ ১১৭
কোন্ শ্রেণীর কাপড় উত্তম
রিয়াদুস সলেহীন-হাদিস নং-৭৮৩
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো এবং তা দিয়ে তোমাদের মৃতদের কাফন পরাও; কেননা তা তোমাদের উত্তম পোশাক। আর তোমাদের জন্য উত্তম সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ সুরমা; কারণ তা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের পাতার চুল গজায়। (আবূ দাউদ ৩৮৭৮, তিরমিযী ১৭৫৭, ২০৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৪৯৭, আহমাদ ২০৪৮, ২২২০, ২৪৭৫, ৩০২৭, ৩৩৩২, ৩৪১৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৮৪
সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান কর। কেননা, তা সবচেয়ে পবিত্র ও উৎকৃষ্ট। আর ওতেই তোমাদের মৃতদেরকে কাফন দাও।’’
(নাসাঈ, হাকেম, তিনি বলেন হাদীসটি সহীহ)(সহীহ তারগীব ২০২৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৮৫
বারা’ ইবনে আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যম আকৃতির লম্বা ছিলেন। আমি তাঁকে লাল পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আমি তাঁর চাইতে অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি।’
(সহীহুল বুখারী ৩৫৪৯, ৩৫৫১, ৩৫৫২, ৫৮৪৮, ৫৯০১, মুসলিম ২৩৩৭, তিরমিযী ১৭২৪, ৩৬৩৫, ৩৬৩৬, নাসায়ী ৫০৬০, ৫০৬২, ৫২৩২, ৫২৩৩, ৫৩১৪, আবূ দাউদ ৪১৮৩, ১৮০৮৬, ১৮১৯১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৮৬
আবূ জুহাইফাহ অহাব ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কায় দেখলাম, যখন তিনি আবত্বাহ নামক স্থানে চর্মনির্মিত লাল রঙের শিবিরে অবস্থান করছিলেন। বিলাল তাঁর ওযূর পানি নিয়ে বাইরে বের হলেন। কিছু লোক (বরকত হাসিল করার জন্য) উক্ত পানির ছিটা পেল আর কিছু সংখ্যক লোক পানি পেল। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল রঙের জোড়া বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় বাইরে এলেন। যেন আমি তাঁর দুই পায়ের গোছার শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করছি। অতঃপর তিনি ওযূ করলেন এবং বিলাল আযান দিলেন। আমি তাঁর এদিক ওদিক মুখ ফিরানো লক্ষ্য করছিলাম। তিনি ডানে ও বামে মুখ ফিরিয়ে ‘হাইয়্যা আলাস স্বালাহ’, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলছিলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি বর্শা (সুতরাহ স্বরূপ) পুঁতে দেওয়া হল। তারপর তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং নামায পড়ালেন। তাঁর (সুতরার) সামনে দিয়ে কুকুর ও গাধা অতিক্রম করছিল। সেগুলোকে বাধা দেওয়া হচ্ছিল না।
(সহীহুল বুখারী ১৮৮, ১৯৬, ৩৭৬, ৪৯৫, ৪৯৯, ৫০১, ৬৩৩, ৩৫৫৩, মুসলিম ৫০৩, ২৪৯৭, নাসায়ী ৪৭০, আবূ দাউদ ৬৮৮, আহমাদ ১৮২৬৮, ১৮২৭৮, দারেমী ১৪০৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৮৭
আবূ রিমসা রিফাআহ তাইমী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরনে দুটো সবুজ রঙের কাপড় দেখেছি।’
(আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে)(আবূ দাউদ ৪০৬৫, ৪২০৬, তিরমিযী ২৮১২, ১৫৭২, আহমাদ ৭০৭১, ৭০৭৭, ১৭০২৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৮৮
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবিজয়ের দিন (সেখানে) কাল রঙের পাগড়ী পরে প্রবেশ করেছিলেন।
(মুসলিম ১৩৫৮, তিরমিযী ১৬৭৯, ১৭৩৫, ২৮৬৯, ৫৩৪৪, ৫৩৪৫ , আবূ দাউদ ৪০৭৬, ইবনু মাজাহ ২৮২২, ৩৫৮৫, আহমাদ ১৪৪৮৮, ১৪৭৩৭, দারেমী ১৯৩৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৮৯
আবূ সা‘ঈদ ‘আম্‌র ইবনে হুরাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাল রঙের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখছি, তিনি তাঁর পাগড়ীর দুই প্রান্ত দুই কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।’
(মুসলিম ১৩৫৯ নাসায়ী ৫৩৪৩, ৫৩৪৬, আবূ দাউদ ৪০৭৭, ইবনু মাজাহ ১১০৪, ২৮২১, ৩৫৮৪, ৩৫৮৭, আহমাদ ১৮২৫৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯০
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি সাদা সুতি বস্ত্রে কাফন দেওয়া হয়েছে যেগুলি ইয়ামানের ‘সাহুল’ নামক স্থানে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ওগুলির মধ্যে কামীস (জামা) ছিল না। আর পাগড়ীও ছিল না।’’
(সহীহুল বুখারী ১২৬৪, ১২৭১, ১২৭২, ১২৭৩, ১২৮৭, মুসলিম ৯৪১, তিরমিযী ৯৯৬, নাসায়ী ১৮৯৭, ১৮৯৮, ১৮৯৯, আবূ দাউদ ৩১৫১, ইবনু মাজাহ ১৪৬৯, আহমাদ ২৩৬০২, ২৪১০৪, ২৪৩৪৮, ২৪৪৮৪, ২৪৭৯৫, ২৫০৭৩, ২৫১৫২, ২৫২৬৭, ২৫৪১৮, ২৫৭৪৪, মুওয়াত্তা মালিক ৫২১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯১
উক্ত রাবী থেকে বর্ণিতঃ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সকালে বের হলেন, তখন তাঁর দেহে পালানের ছবি ছাপা কাল লোমের চাদর ছিল।’
(মুসলিম ২০৮১, তিরমিযী ২৮১৩, আবূ দাউদ ৪০৩২, আহমাদ ২৪৭৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯২
মুগীরাহ ইবনে শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমি রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার কাছে পানি আছে কি?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ সুতরাং তিনি স্বীয় বাহন থেকে নামলেন এবং চলতে লাগলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর যখন ফিরে এলেন, তখন আমি পাত্র থেকে (পানি) ঢেলে দিলাম। তিনি তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। তাঁর পরনে ছিল পশমী জুব্বা। তিনি তা হতে তাঁর হাত দু’টিকে বের করতে সক্ষম হলেন না। পরিশেষে তিনি জুব্বার নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর হাত দু’টি ধুলেন ও মাথা মাসাহ করলেন। তারপর আমি তাঁর মোজা খুলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম। তিনি বললেন, ছেড়ে দাও। কেননা, আমি ওগুলো পবিত্র (ওযূ) অবস্থায় পায়ে দিয়েছি। অতঃপর তিনি তার উপর মাসাহ করলেন।
(সহীহুল বুখারী ১৮২, ২০৩, ২০৬, ৩৬৩, ৩৮৮, ২৯১৮, ৪৪২১, ৫৭৯৮, ৫৭৯৯, মুসলিম ২৭৪, তিরমিযী ৯৭, ৯৮, ১০০, নাসায়ী ৭৯, ৮২, আবূ দাউদ ১৪৯, ১৫০, ১৫১, ইবনু মাজাহ ৫৪৫, ৫৫০, আহমাদ ১৭৬৬৮, ১৭৬৭৫, ১৭৬৯১, ১৭৬৯৯, ১৭৭১০, ১৭৭১৭, ১৭৭৪১, ১৭৭৫৫, মুওয়াত্তা মালেক ৭৩, দারেমী ৭১৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১১৮
জামা পরিধান করা উত্তম
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৩
উম্মে সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় পোশাক ছিল কামীস (জামা)।’
(আবূ দাউদ ৪০২৫, ৪০২৬, তিরমিযী ১৭৬২, ইবনু মাজাহ ৩৫৭৫)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১১৯
জামা-পায়জামা, জামার হাতা, লুঙ্গি তথা পাগড়ীর প্রান্ত কতটুকু লম্বা হবে? অহংকারবশতঃ ওগুলি ঝুলিয়ে পরা হারাম ও নিরহংকারে তা ঝুলানো অপছন্দনীয়
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৪
আসমা বিনতে য়্যাযীদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামার হাতা কব্জি পর্যন্ত লম্বা ছিল।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান)
(আমি (আলবানী) বলছিঃ এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ (২৪৫৮)। এর সনদের মধ্যে শাহ্‌র ইবনু হাওশাব নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি মন্দ হেফয শক্তির কারণে দুর্বল। হাফেয ইবনু হাজার ‘‘আত্‌তাক্বরীব’’ গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, বেশী বেশী মুরসাল এবং সন্দেহমূলক বর্ণনাকারী। আবূ হাতিম ও ইবনু আদী প্রমুখও বলেছেন তার হেফ্য শক্তিতে দুর্বলতা ছিল।
[দেখুন ‘‘য‘ঈফা’’ হাদীস নং ৬৮৩৬]। তিরমিযী ১৭৬৫, ৪০২৭)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৫
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে নিজের পোশাক মাটিতে ছেঁচড়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি কিয়ামতের দিন (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! খেয়াল না করলে আমার লুঙ্গি ঢিলে হয়ে নেমে যায়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তাদের শ্রেণীভুক্ত নও, যারা তা অহংকারবশতঃ করে থাকে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১, ৬০৬২, মুসলিম ২০৮৫, তিরমিযী ১৭৩০, ১৭৩১, নাসায়ী ৫৩২৭, ৫৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, আবূ দাউদ ৪০৮৫, ইবনু মাজাহ ৩৫৬৯, আহমাদ ৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৬৬৯, ৪৭৫৯, ৪৮৬৯, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩০, ৫০৩৫, ৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩১৮, ৫৩২৮, ৫৩৫৪, ৫৪১৬, ৫৪৩৭, ৫৫১০, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৬, ১৬৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৬
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৭৮৮, মুসলিম ২০৮৭, আহমাদ ৮৭৭৮, ৮৯১০, ৯০৫০, ৯২৭০, ৯৫৪৫, ৯৮৫১, ১০১৬৩, ২৭২৫৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৭
উক্ত রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘লুঙ্গির যে পরিমাণটুকু পায়ের গাঁটের নীচে যাবে, সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে।’
(সহীহুল বুখারী ৫৭৮৭, নাসায়ী ৫৩৩০, ৫৩৩১ , আহমাদ ৭৪১৭, ৭৭৯৭, ৯০৬৪, ৯৬১৮, ১০১৭৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৮
আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন।’ আবূ যার্র বললেন, ‘তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে।’’
(মুসলিম ১০৬, তিরমিযী ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯, ৫৩৩৩, আবূ দাউদ ৪০৮৭, ইবনু মাজাহ ২২০৮, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৭৯৯
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ঝুলানোর কাজ হয়ে থাকে। (অর্থাৎ এগুলি ঝুলিয়ে পরলে গুনাহ হয়।) যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কিছু মাটিতে ছেঁচড়ে চলবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১, ৬০৬২, মুসলিম ২০৮৫, তিরমিযী ১৭৩০, ১৭৩১, আবূ দাউদ ৪০৮৫, ৪০৯৪, নাসায়ী ৫৩২৭, ৫৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৬৯, আহমাদ ৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩৫, ৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩২৮, ৫৩৫৪, ৫৪১৬, ৫৫১০ , ৬১৬৮, ৬৩০৪, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৬, ১৬৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০০
আবূ জুরাই জাবের ইবনে সুলাইম থেকে বর্ণিতঃ
আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যাঁর মতানুযায়ী লোকে কাজ করছে, তাঁর কথা তারা মেনে নিচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এ লোকটি কে?’ লোকেরা বলল, ‘ইনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ আমি তাঁকে ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলাল্লাহ’ দু’বার বললাম। তিনি বললেন, ‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। ‘আলাইকাস সালাম’ তো মৃতদের জন্য অভিবাদন বাণী। তুমি বলো ‘আসসালামু আলাইকা।’’
জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি সেই আল্লাহর রসূল, যাঁকে কোনো বিপদের সময় যদি ডাকো, তাহলে তিনি তোমার বিপদ দূর করে দেবেন। যদি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, তাহলে তিনি তোমার জন্য যমীন থেকে ফসল উৎপাদন করবেন। কোন গাছপালা বিহীন জনশূন্য মরুভূমিতে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি যদি তাঁর নিকট দো‘আ কর, তাহলে তিনি তোমার বাহন তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবেন।’’
জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে বিশেষ উপদেশ দান করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কাউকে কখনো গালি-গালাজ করো না।’’ সুতরাং তারপর থেকে আমি না কোন স্বাধীন-পরাধীন ব্যক্তিকে, না কোন উট আর না কোন ছাগলকে গালি দিয়েছি।
(দ্বিতীয় উপদেশ হচ্ছে এই যে,) ‘‘কোন পুণ্যকর্মকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না। নিঃসন্দেহে সহাস্য বদনে কোন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বাক্যালাপ করা নেকীর কাজ। নিজ লুঙ্গি পায়ের অর্ধ রলা পর্যন্ত উঁচু রেখো। তা যদি মানতে না চাও, তাহলে গাঁট পর্যন্ত ঝুলাতে পার। লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা থেকে দূরে থেকো। কেননা, এতে অহংকার জন্মায়। আর নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারকে পছন্দ করেন না। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় অথবা এমন দোষ ধরে তোমাকে লজ্জা দেয়, যা তোমার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানে, তাহলে তুমি তার এমন দোষ ধরে তাকে লজ্জা দিয়ো না, যা তার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানো। যেহেতু তার কুফল তার উপরই বর্তাবে (তোমার উপর নয়)।’’
(আবূ দাউদ ৪০৮৪, তিরমিযী ২৭২১, আহমাদ ১৫৫২৫)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০১
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা এক ব্যক্তি (টাখনুর নীচে) লুঙ্গি ঝুলিয়ে সালাত পড়ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও, পুনরায় ওযূ কর। সে আবার ওযূ করে করে এলো। তিনি আবার বললেনঃ যাও, পুনরায় ওযূ কর। একজন বললো, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! কেন আপনি তাকে ওযূ করার নির্দেশ দিচ্ছেন, তারপর নীরবতা পালন করছেন? তিনি বললেনঃ এ লোক তার লুঙ্গি (টাখনুর নীচে) ঝুলিয়ে দিয়ে সালাত পড়ছিলো। অথচ আল্লাহ এমন ব্যক্তির সালাত কবূল করেন না, যে তার পায়জামা এরকম ঝুলিয়ে দিয়ে সালাত আদায় করে।
(এ সহীহ্ আখ্যা দানের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। সে সম্পর্কে আমি ‘‘তাখরীজুল মিশকাত’’ গ্রন্থে (হাঃ নং ৭৬১) এবং ‘‘য‘ঈফু আবী দাঊদ’’ গ্রন্থে (নং ৯৬) ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। এর সনদের মধ্যে আবূ জা‘ফার নামে এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি অপরিচিত, তাকে চেনা যায় না। এ বর্ণনাকারী সম্পর্কে শাইখ আলবানী ‘‘য‘ঈফু আবী দাঊদ-আলউম্ম-’’ গ্রন্থে (নং ৯৬) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আবূ দাউদ ৪০৮৬, ইবনুল কাত্তানও আবূ জাফারকে মাজহূল বলেছেন।)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০২
কাইস ইবনু বিশর আত-তাগলিবী (রাহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (বিশর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী দামিশকে ছিলেন। তাকে বলা হতো সাহল ইবনু হানযালিয়্যা। তিনি একাকিত্বকে বেশি পছন্দ করতেন, লোকদের সাথে খুব কমই উঠাবসা করতেন, অধিকাংশ সময় সালাতেই কাটিয়ে দিতেন, সালাত থেকে অবসর হয়ে তার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তাসবীহ্ ও তাকবীরে মগ্ন থাকতেন। (একদিন) তিনি আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন আমরা আবূ দারদা (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। আবূ দারদা (রাঃ) তাকে বললেন, আমাদেরকে এমন কোন কথা বলে দিন, যা আমাদের উপকার দিবে আর আপনারও কোন ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট্ট বাহিনী প্রেরণ করলেন। বাহিনী ফিরে আসার পর তাদের একজন ঐ মাজলিশে এসে বসে পড়লো যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বসা ছিলেন। তার পাশে বসা লোকটিকে আগন্তুক লোকটি বললো, তুমি যদি আমাদেরকে তখন দেখতে জিহাদের ময়দানে আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, বর্শা উঁচিয়ে অমুক (কাফির) আক্রমণ করলো এবং আঘাত হানলো। উত্তরে (আক্রান্ত মুসলিমটি) বললো, এই নে আমার পক্ষ থেকে, আর আমি হচ্ছি গিফার গোত্রের যুবক। তার এই বক্তব্য বিষয়ে আপনি কী বলেন? লোকটি বললো, আমার মতে (অহংকারের কারণে) তার সাওয়াব বিনষ্ট হয়ে গেছে। এই কথা আরেকজন শুনে বললো, এতে তো আমি কোন দোষ দেখি না। তারা বিতর্কে লিপ্ত হলো, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তা শুনে ফেলেন। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এতে কোন দোষ নেই, সে (পরকালে) পুরষ্কৃত হবে এবং (ইহকালে) প্রশংসিত হবে। কাইস ইবনু বিশর বলেন, আবুদ দারদা (রাঃ) কে আমি দেখলাম যে, এতে তিনি খুশি হয়েছেন এবং তাঁর দিকে নিজের মাথা উঠিয়ে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একথা শুনেছেন কি? ইবনু হানযালিয়্যা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ শুনেছি। আবুদ দারদা (রাঃ) এই কথাটি বারবার ইবনু হানযালিয়্যার সামনে বলতে লাগলেন। অবশেষে আমি বলেই ফেললাম, আপনি কি ইবনু হানযালিয়্যার হাঁটুর উপর চড়ে বসতে চান?
বর্ণনাকারী বলেন, আবুদ দারদা আরেকদিন আমাদের কাছে গেলেন, তখন আবুদ দারদা বললেন, একটি বাক্য যা আমাদের উপকার দেবে, তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, ঘোড়ার জন্য ব্যয় করা সেই সদকা সমতুল্য যে সদকা করে হাত সংকুচিত করা হয় নি। তারপর তিনি অপরদিন আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন, তখন আবুদ দারদা বললেন, একটি বাক্য, যা আমাদের উপকৃত করবে, তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খুরাইম আল-আসাদী কতইনা ভালো লোক, যদি না তার মাথার চুল খুব লম্বা হতো, আর যদি না তার লুঙ্গি টাখনুর নিচে না যেত”। কথাটি খুরাইমের কাছে পৌঁছলে তিনি তাড়াতাড়ি ছুরি নিয়ে তার মাথার লম্বা চুল কানের মাঝ বরাবর কেটে ফেললেন, আর তাঁর লুঙ্গিকে নলার মাঝখান পর্যন্ত উঠিয়ে নিলেন। তারপর আরেকদিন আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন, তখন আবুদ দারদা রা. তাকে বললেন, একটি বাক্য যা আমাদেরকে উপকৃত করবে, তোমার কোনো ক্ষতি করবে না, তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে যাচ্ছ, সুতরাং তোমরা তোমাদের বাহনগুলোকে ঠিক করে নাও, তোমাদের পরিধেয় বস্ত্রগুলো এমনভাবে ঠিক করে নাও যাতে করে তোমাদেরকে মানুষের মাঝে মনে হবে তেমন যেমন তিলের দাগ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলতা করা ও বলা কোনোটাই পছন্দ করেন না।’ আবূ দাউদ হাদীসটিকে হাসান সনদে বর্ণনা করেন, তবে কাইস ইবন বিশর ব্যতীত; কারণ তার গ্রহণযোগ্যতা কিংবা দুর্বলতা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও ইমাম মুসলিম তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(আবূ দাঊদ (৪০৮৯) হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কায়েস ইবনু বিশ্র নির্ভরযোগ্য নাকি দুর্বল? এ সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ মতবিরোধ করেছেন। আর তার থেকে ইমাম মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ সুস্পষ্টভাবে কেউ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন দেখছি না। তবে হাদীসটির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার পিতা থেকে। কারণ তার পরিচয় সম্পর্কে জানা যায় না। দেখুন ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’ (২১২৩)। হাফিয যাহাবী ‘‘আলমীযান’’ গ্রন্থে কায়েস ইবনু বিশর এবং তার পিতা সম্পর্কে বলেনঃ তাদের দু’জনকেই চেনা যায় না)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৩
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমের লুঙ্গি অর্ধ গোছা পর্যন্ত ঝুলানো উচিত। গাঁটের উপর পর্যন্ত ঝুললে ক্ষতি নেই। যে অংশ লুঙ্গি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলবে, তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলিয়ে লুঙ্গি পরবে, তার দিকে আল্লাহ (করুণার দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না।’’
(আবূ দাউদ ৪০৯৩, ইবনু মাজাহ ৩৫৭০, ৩৫৭৩, আহমাদ ১০৬২৭, ১০৬৪৫, ১০৮৬৩, ১১০০৪, ১১০৯৫, ১১৫১৫, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৪
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আমার লুঙ্গি বেশ ঝুলে ছিল। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘হে আব্দুল্লাহ! লুঙ্গি উঠিয়ে পর।’’ অতএব আমি লুঙ্গি তুলে পরলাম। তিনি আবার বললেন, ‘‘আরো উঁচু কর।’’ আমি আরো উঁচু করলাম। এরপর বরাবর আমি এর খেয়াল রাখতে থাকলাম; যেন লুঙ্গি নীচে না নামে। কিছু লোক (আব্দুল্লাহকে) জিজ্ঞাসা করল, ‘কতদূর পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরা যাবে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘অর্ধ গোছা পর্যন্ত।’
(সহীহুল বুখারী ৩৪৮৫, ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১, মুসলিম ২০৮৫, ২০৮৬, তিরমিযী ১৭৩১, নাসায়ী ৪৩২৬, ৪৩২৭, ৪৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, আবূ দাউদ ৪০৮৫, ৪০৯৪, ইবনু মাজাহ ৩৫৬৯, আহমাদ ৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৮৬৯, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩০,৫০৩৫, ৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩১৮, ৫৩২৮, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯২, ১৬৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৫
পূর্বোক্ত বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি গাঁটের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে (করুণার দৃষ্টিতে) দেখবেন না।’’ উম্মে সালামাহ প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের নিম্নপ্রান্তের ব্যাপারে কী করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আধ হাত বেশী ঝুলাবে।’’ উম্মে সালামাহ বললেন, ‘তাহলে তো তাদের পায়ের পাতা খোলা যাবে!’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এক হাত পর্যন্ত নীচে ঝুলাবে; তার বেশী নয়।’’
(আবূ দাউদ ও তিরমিযী) (৭৯৫ এর মত)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২০
বিনয়বশতঃ মূল্যবান পোশাক পরিধান ত্যাগ করা মুস্তাহাব
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৬
মু‘আয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিনয়বশতঃ তা পরিহার করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সাক্ষাতে তাকে ডেকে স্বাধীনতা দেবেন, সে যেন ঈমানের (অর্থাৎ ঈমানদারদের পোশাক) জোড়াসমূহের মধ্য থেকে যে কোন জোড়া বেছে নিয়ে পরিধান করে।’’
(তিরমিযী ২৪৮১, আহমাদ ১৫২০৪)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২১
মধ্যম ধরনের পোশাক পরা উত্তম। অকারণে শরয়ী উদ্দেশ্য ব্যতিত অনুত্তম, যা উপহাস্য হতে পারে এমন পোষাক পরা যাবে না
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৭
‘আমর ইবনে ‘শুআইব স্বীয় পিতা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন যে, তাঁর বান্দার উপর তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের প্রভাব ও চিহ্ন দেখা যাক।’’
(তিরমিযী, হাসান)(তিরমিযী ২৮১৯)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২২
রেশমের কাপড় পরা, তার উপরে বসা বা হেলান দেওয়া পুরুষদের জন্য অবৈধ, মহিলাদের জন্য বৈধ
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৮
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা (পুরুষরা) রেশমের কাপড় পরিধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমের কাপড় পরিধান করবে, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। (অর্থাৎ সে জান্নাত হতে বঞ্চিত হবে।)’’
(সহীহুল বুখারী ৫৮২৮, ৫৮৩০, ৫৮৩৪, ৫৮৩৫, মুসলিম ২০৬৯, নাসায়ী ৫৩১২, ৫৩১৩, আবূ দাউদ ৪০৪২, ইবনু মাজাহ ২৮১৯, ২৮২০, ৩৫৯৩, আহমাদ ৯৩, ২৪৪, ৩০৩ , ৩২৩, ৩৫৮, ৩৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮০৯
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, ‘‘সে-ই রেশম পরিধান করে, যার কোনই অংশ নেই।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৮২৮, ৫৮৩০, ৫৮৩৪, ৫৮৩৫, মুসলিম ২০৬৯, নাসায়ী ৫৩১২, ৫৩১৩, আবূ দাউদ ৪০৪২, ইবনু মাজাহ ২৮১৯, ২৮২০, ৩৫৯৩, আহমাদ ৯৩, ২৪৪, ৩০৩ , ৩২৩, ৩৫৮, ৩৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১০
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘‘দুনিয়াতে যে রেশমী কাপড় পরবে, আখেরাতে সে তা পরতে পাবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৮৩২, মুসলিম ২০৭৩, ইবনু মাজাহ ৩৫৮৮, আহমাদ ১১৫৭৪, ১৩৫৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১১
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি ডান হাতে রেশম ধরলেন এবং বাম হাতে সোনা, অতঃপর বললেন, ‘‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এ দু’টি বস্তু হারাম।’’
(আবূ দাঊদ, সহীহ সনদে)(আবূ দাউদ ৪০৫৭, নাসায়ী ৫১৪৪, ইবনু মাজাহ ৩৫৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১২
আবূ মূসা ‘আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে, আর মহিলাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে।’’
(তিরমিযী, হাসান সহীহ) (তিরমিযী ১৭২০, নাসায়ী ৫১৪৮)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১৩
হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সোনা ও রূপার পাত্রে পান বা আহার করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন এবং চিকন ও মোটা রেশম পরিধান করতে অথবা (বেড-কভার বা সীট-কভার বানিয়ে) তার উপর বসতেও নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩১, ৫৮৩৭, মুসলিম ২০৬৭, তিরমিযী ১৮৭৮, নাসায়ী ৫৩০১, আবূ দাউদ ৩৭২৩, ইবনু মাজাহ ৩৪১৪, ৩৫৯০, আহমাদ ২২৭৫৮, ২২৮০৩, ২২৮৪৮, ২২৮৫৫, ২২৮৬৫, ২২৮৯২, ২২৯২৭, ২২৯৫৪, দারেমী ২১৩০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২৩
চুলকানি রোগ থাকলে রেশমের কাপড় পরা বৈধ
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১৪
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ)কে তাদের গায়ে চুলকানি হবার দরুন রেশমী কাপড় পরার অনুমতি দিয়েছিলেন।’
(সহীহুল বুখারী ৫৮৩৯, ২৯১৯, ২৯২০, ২৯২২, ৫৮৩৯, মুসলিম ২০৭৬, তিরমিযী ১৭২২, নাসায়ী ৫৩১০, ৫৩১১, আবূ দাউদ ৪০৫৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৯২, আহমাদ ১১৮২১, ১১৮৭৯, ১২৪৫২, ১২৫৮০, ১২৮৩৬, ১৩২২৮, ১৩২৭০, ১৩৪৭৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২৪
বাঘের চামড়া বিছিয়ে বসা নিষেধ
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১৫
মু‘আবিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রেশমী কাপড় ও বাঘের চামড়ার উপর (বাহনের পিঠে রেখে বা অন্যত্র বিছিয়ে) বসো না।’’
(আবূ দাউদ ৪১২৯, আহমাদ ১৬৩৯৮)
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১৬
আবুল মালীহ (রাঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিংস্র জন্তুর চামড়ার বিছানায় বসতে নিষেধ করেছেন।
(তিরমিযী ১৭৭১, নাসায়ী ৪২৫৩, আবূ দাউদ ৪১৩২, আহমাদ ২০১৮৩, ২০১৮৯, দারেমী ১৯৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২৫
নতুন কাপড় বা জুতা ইত্যাদি পরার সময় কী বলতে হয়?
রিয়াদুস সলেহীন- হাদিস নং-৮১৭
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
১/৮১৭। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরতেন, তখন পাগড়ী, জামা কিংবা চাদর তার নাম নিয়ে এই দো‘আ পড়তেন,
‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আন্তা কাসাউতানীহ, আসআলুকা মিন খাইরিহী অখাইরি মা সুনি‘আ লাহ, অ‘আঊযু বিকা মিন শার্রিহি অশার্রি মা সুনি‘আ লাহ।’
অর্থ- হে আল্লাহ তোমারই নিমিত্তে সমস্ত প্রশংসা, তুমি আমাকে এই (নতুন কাপড়) পরালে, আমি তোমার নিকট এর কল্যাণ এবং এ যার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর এর অকল্যাণ এবং যার জন্য এ প্রস্তুত করা হয়েছে তার অকল্যাণ থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। (তিরমিযী ১৭৬৭, আবূ দাউদ ৪০২০)
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ

(হাদিস গ্রন্থ সহিহ মুসলিম হতে পোশাক সংক্রান্ত হাদিসসমূহ জানতে
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...