বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পির-মুরিদ ও বিদআতিরা যেসব কারণে জাহান্নামি
(পর্ব-৭)
মূর্তি নির্মাতা বা ভাষ্কর ও ছবি অংকনকারী জাহান্নামি
ভূমিকাঃ মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী, ছবি অংকন, সংগীত ও নৃত্য এগুলো জাতীয় শিক্ষানীতি
অনুযায়ী শিশু শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চারু ও কারুকলা নামক সাবজেক্টের অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূলত এগুলো বিদ্যালয়ে শিখানো
হয়। এসব বিষয়ে পরীক্ষায় আলাদা নম্বর দেয়া হয়। পরবর্তীতে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চারু
ও কারুকলা সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পেশাদার শিল্পী হিসেবে গড়ে ওঠেন।
মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী, ছবি অংকন,
সংগীত ও নৃত্য শিখতে আমাদের দেশে অনেক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে
ডিপ্লোমা কোর্স আছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে অনেক সেন্টার আছে, যেখানে ব্যাচ সিস্টেমে এগুলো
শিক্ষা দেয়া হয়। অনেক অভিভাবক আছেন, যারা নিজ বাসায় শিক্ষক রেখে সন্তানকে এসব শিক্ষা
দেন।
কে কতোটুকু শিখতে পারল তার কীর্তি কর্ম দেখতে
আয়োজন করা হয় বিভিন্ন প্রদর্শনী মেলা। সব কিছু নিয়ে আমরা বলতে পারি যে, এসবের পিছনে
সরকারি অনুমোদন ও আইনগত বৈধতা রয়েছে।
মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী, ছবি অংকন, সংগীত ও নৃত্য সৃষ্টির আদিকাল থেকে
এখনো পৃথিবীর সব দেশেই অব্যাহত আছে। এগুলো মূলত কাফির-মুশরিকদের কৃষ্টি কালচার। এই
কালচার এখন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে এমনিভাবে প্রবেশ করেছে এবং এগুলোর আইনী বৈধতা দেয়ায়
এখান থেকে বের হওয়া বর্তমান প্রেক্ষিতে সম্ভব নয়।
কাফির-মুশরিকদের এইসব অপকৃষ্টি-কালচার বা অপসংস্কৃতি
সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দূরীভূত করে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই মূলত
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসুল সাঃকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ
করেছিলেন। রাসুল সাঃ সে কাজটিই করে গেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: বলেন, ‘মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সা: কাবাগৃহে প্রবেশ করেন। এ সময় গৃহের চার দিকে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। তিনি হাতের ধনুক দিয়ে সেগুলো আঘাত করতে থাকেন এবং পাঠ করেন ‘বলুন : সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮১)। অতঃপর রাসূল সা: কাবাগৃহে প্রবেশ করেন এবং সেখানে ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ:-এর ছবি মূর্তি দেখতে পান, যাদের হাতে ভাগ্য গণনার তীর ছিল এবং ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে ওঠেন ‘আল্লাহ ওদের ধ্বংস করুক। আল্লাহর কসম! এই নবীদ্বয় কখনোই তীর দ্বারা ভাগ্য গণনা করতেন না।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ২৪৭৮, ৪২৮৭, ৪৭২০, আধুনিক প্রকাশনী ২২৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৩১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস আরো বলেন, ‘অতঃপর তিনি সেখানে কাঠের তৈরি
কবুতর দেখতে পেলেন এবং তা নিজ হাতে ভেঙে ফেললেন।’ (সিরাতুল রাসূল সা: তৃতীয় মুদ্রণ
৫৩৫ পৃ; আর-বিদায়াহ ৪/৩০০; যাদুল মা’আদ ৩/৩৫৮ এবং আর-রাহি মাকতুম ৪০৪ পৃষ্ঠা।
মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী, ছবি অংকন, সংগীত ও নৃত্য বিষয়ে জানতে হলে
আগে আমাদের এসবের ইতিহাস, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন স্থাপনা সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
মূল আলোচনাঃ
শিল্পকলা বিষয়ে জানতে হলে প্রথমে এর উৎপত্তি
বিষয়ে জানতে হবে। বলা যায়, শিল্পকলার বয়স মানব সভ্যতার সমান। এর উদ্ভব হয়েছে আজ থেকে
৪০-৫০ হাজার বছর আগে হোমোস্যাপিয়েন মানুষের হাত ধরে, যখন থেকে গুহাবাসী মানুষ দলবদ্ধভাবে
বসবাস শুরু করে। বেঁচে থাকার তাগিদে সহজে পশু শিকারের আশায় বিভিন্ন জাদু বিশ্বাসে নির্ভরতা
খোঁজে। গুহায় জীবজন্তু আর শিকারের ছবি আঁকা শুরু হয়। এগুলোই পৃথিবীর প্রথম শিল্পকলা।
এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতার অগ্রগতি হয়।
একসময় মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশকে তার নিজের আয়ত্তে এনে জীবনকে সহজ, সুন্দর ও সমৃদ্ধময়
করে। এভাবে যখন মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অনেক সহজ হলো, তখন তার মনের
কিছু কিছু অনুভূতি ও কল্পনাশক্তি একত্রিত হয়ে শিল্পিত রূপ নিল। যেমন- ভাষা আবিষ্কারের
সঙ্গে সঙ্গে কবিতা, গল্প এসেছে, পরবর্তী সময়ে এসেছে সংগীত। মানুষের মনের কল্পনা ও সৃজনশীলতার
মিশ্রণে যা যা তৈরি হলো, যেমন- ছবি, কবিতা, গান। এগুলোই হচ্ছে শিল্পকলা। এক কথায় বলা
যায়, মানুষের মনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সামগ্রিক রূপই হলো শিল্পকলা। মানুষ তার কল্পনা
ও প্রতিভার সঙ্গে দক্ষতা ও রুচির সমন্বয়ে যা সৃষ্টি করে তাই শিল্পকলা। শিল্পকলা মানুষের
অন্তর্দৃষ্টিকে সম্প্রসারিত করে তার কল্পনার পরিধি বাড়িয়ে দেয়।
শিল্পকলাকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।
যেমন-
(ক) চারুশিল্প
(খ) কারুশিল্প
চারু ও কারুকলা এবং এর উদ্দেশ্যঃ
যে কলা বা কারুকাজ বাহ্যিক কাজে লাগে না, কিন্তু
মনের তৃপ্তি পাওয়া যায়, তাকে চারুকলা বলে। অন্যদিকে যে কলা বা শিল্প প্রধানত দৈহিক
ও ব্যবহারিক চাহিদা মেটানোর সঙ্গে আনন্দ দান করে, তাকে কারুকলা বলা হবে। এই দুইয়ের
উদ্দেশ্য হলো শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক
বিকাশ ঘটানো এবং তাদের দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞানসম্মত সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে
উদ্বুদ্ধ করা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপকরণ তৈরি,
শিশুদের পাঠ–বিষয়ক আলাদা আনন্দ দিতে চারু ও কারু বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষকের জ্ঞান থাকা
আবশ্যক। শিশুদের ছবি কিংবা চিত্র কিংবা রঙের প্রতি দুর্বলতা বেশি। আর ছবির মাঝে রঙের
খেলা খেলতে খেলতে কঠিন বিষয়গুলোও সহজ করে দেওয়া যায়।
সে কারণে শিক্ষকদের ‘চারুকলা ও কারুকলা’ প্রশিক্ষণ
দেওয়া দরকার, যাতে তাঁরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বিষয়টি বোঝাতে পারেন।
প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে শুধু একজন করে শিক্ষককে এই প্রশিক্ষণ দিলে চলবে না, অন্তত কয়েকজন
শিক্ষককে এ বিষয়টির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়
বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র।[১] এই একাডেমি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের
অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ইতিহাসঃ
সংস্কৃতিক যথার্থ পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে শেখ
মুজিবুর রহমান পাশ করেছিলেন বাংলা একাডেমি এ্যাকট। পরবর্তীতে জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময়
বিকাশকে জাতীয় আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে
গৃহীত “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এ্যাক্ট ১৯৭৪” (এ্যাকট নং ৩১ অফ ১৯৭৪) অনুসারে বাংলাদেশ
শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। একাডেমীর প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন ড. মুস্তাফা নূরউল
ইসলাম।[২]
অবস্থানঃ
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকার রমনায় সেগুনবাগিচা
এলাকার দুর্নীতি দমন কমিশন ভবনের বিপরীতে অবস্থিত। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিস্তৃত করার
লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর ব্যতীত দেশের ৬৩টি জেলায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা
হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীসমূহ একটি
"কার্য নির্বাহী" কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়। জেলা প্রশাসন পদাধিকার বলে
উক্ত কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেক জেলায় একজন কালচারাল অফিসার
রয়েছেন, যিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। বিকেল হলে শিল্পকলা
একাডেমির মাঠে নানা বয়সি মানুষজন আড্ডা দিতে ভীড় জমান।[৩]
বিবরণঃ
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নিম্নলিখিত বিভাগ
নিয়ে গঠিত:
• চারুকলা বিভাগ
• নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ
• সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ
• গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগ
• প্রশিক্ষণ বিভাগ
• প্রযোজনা বিভাগ
• প্রশাসন, অর্থ, হিসাব ও পরিকল্পনা বিভাগ
কার্যক্রমঃ
সাংস্কৃতিক বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা
করা এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে দুস্থ ও গুণী
শিল্পীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যাবলীর অংশ। অন্যদিকে
বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা প্রদানসহ সাংস্কৃতিক সংস্থাসমূহকে অনুদান প্রদান করে
থাকে এই প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও এই একাডেমী, চারুকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, নাটক, সংগীত
ও নৃত্যনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উৎসবের এবং প্রতিযোগীতার আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি চারুকলা,
সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র বিষয়ক গ্রস্থাদি প্রকাশ, গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান
করে থাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণ এবং প্রকাশনা বিক্রয়ের ব্যবস্থাসহ
সিম্পোজিয়াম আয়োজনও করে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ
(১) "শিল্পকলা একাডেমির ৪০ বছর পূর্তি"।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
(২) "বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ৪০ বছর"।
দৈনিক সমকাল। ২০১৪-০২-১৯। ৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ
২০১৪-০৫-২৪।
(৩) "ছুটির বিকেলে আড্ডায় ডুব"।
প্রথম আলো। ৩০ নভেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০২০।
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাতটি পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয় এবং তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতোকোত্তর
পড়ার সুযোগ আছে।
চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চারুকলা অনুষদ (পূর্ব নাম চারুকলা ইন্সটিটিউট)
বাংলাদেশের চারু ও কারুশিল্প পাঠদানের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৪৮ সালে পুরাতন
ঢাকার জংশন রোডে ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলের একটি বাড়ীতে চারুকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যাত্রা শুরু করে। চারুকলা অনুষদ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি অনুষদ।
এটি ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত।
প্রতিষ্ঠাঃ
প্রতিষ্ঠাকালে চারুকলা ইন্সটিটিউটের নাম ছিল
'গভর্ণমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট'। ১৯৬৩ সালে এটিকে প্রথম শ্রেণির
কলেজে উন্নীত করে নামকরণ করা হয় 'বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়'। ১৯৮৩ সালে
এই প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে এনে 'চারুকলা ইন্সটিটিউট'
নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে এটি অনুষদের মর্যাদা লাভ করে, চারুকলা অনুষদ নাম ধারণ করে।
চারুকলা অনুষদের বিভাগসমূহ:
• অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ
• ছাপচিত্র বিভাগ
• ভাস্কর্য বিভাগ
• কারুশিল্প বিভাগ
• গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ
• প্রাচ্যকলা বিভাগ
• মৃৎশিল্প বিভাগ
• শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ
চারুকলার বর্তমান অবস্থাঃ
বর্তমানে চারুকলা অনুষদে চালু রয়েছে আটটি
বিভাগ। গ্রাফিক ডিজাইন, ওরিয়েন্টাল আর্ট, সিরামিকস, ড্রয়িং ও পেইন্টিং, ভাস্কর্য,
কারুশিল্প, হিসটোরি অব আর্টস ও প্রিন্টমেকিং। অনুষদে রয়েছেন ৪৩ জন শিক্ষক। দেশের প্রসিদ্ধ
শিল্পী। রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের জন্য আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব।চারুকলা ইন্সটিটিউট
ভবনের নকশা করেন খ্যাতনামা স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। সবুজ প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা সারি
বেধে চর্চা করছে ছবি আঁকার। কেউবা কাঠ কেটে ফুটিয়ে তুলছে আকৃতি। আবার পাথর দিয়ে গড়ছে
অবয়ব। চত্বর যেন বিভিন্ন ভাস্কর্য, রঙিন চিত্রকলা আর সবুজ গাছপালায় মুড়ানো।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ও চারুকলা অনুষদঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে
প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে ঢাকা শহরের শাহবাগ-রমনা এলকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা
হয়।[১] এই শোভাযাত্রায় চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের
ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম
বহন করা হয়। এছাড়াও বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙ-এর
মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়। তবে একবিংশ
শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে প্রায় প্রতি জেলাসদরে এবং বেশ কিছু উপজেলা সদরে পহেলা
বৈশাখে ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ আয়োজিত হওয়ায় ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ বাংলাদেশের নবতম
সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে
২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর
মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।[২][৩]
তথ্য সূত্রঃ
1. "মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন"। দৈনিক
প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৮।
2. হোসেন, মোছাব্বের (১৪ এপ্রিল ২০১৭)।
"মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশ্ব স্বীকৃতি এল যেভাবে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের
তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৮।
3. "২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকো
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে"। UNESCO official
site। ২০১৬-১১-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-৩০।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
বাংলাদেশে প্রায় ২,৫০০ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান
রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে ২০১৬ (জুন) সাল নাগাদ, বাংলাদেশে ৪৫২টি প্রত্নতাত্ত্বিক
স্থানের সন্ধান মিলেছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন
স্থাপত্য-বৌদ্ধবিহার, মন্দির, মসজিদ, সাধারণ বসতি, আবাসিক গৃহ, নহবতখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
জমিদার প্রাসাদ অথবা রাজপ্রাসাদ, অসংখ্য প্রাচীন পুকুর ও দীঘি শানবাঁধানো ঘাট, পানীয়
জলের কুয়া, প্রস্তরলিপি, তাম্রলিপি, মূদ্রা, প্রাচীন পুঁথি-তুলট বা তালপাতায় লেখা,
পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পোড়ামাটি ও পাথরের ভাস্কর্য, মৃৎপাত্র ইত্যাদি৷
সংরক্ষণঃ
যখন কোনো প্রত্নস্থান থেকে কোন প্রকার প্রত্নবস্তু
পাওয়া যায় সেটাকে নানা প্রকার পদার্থ দ্বারা এটিকে তার সাথে মানানসই করে এটিকে কোন
একটি জাদুঘর বা প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় জায়গায় রেখে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্র শিল্পীদের নামঃ
• জয়নুল আবেদীন (১৯১৪-১৯৭৬)
• কফিল আহমেদ (জন্ম ১৯৬২)
• নভেরা আহমেদ (১৯৩৯–২০১৫)
• শাহাবুদ্দিন আহমেদ (জন্ম ১৯৫০)
• সফিউদ্দিন আহমেদ (১৯২২–২০১২)
মূর্তির দেশ বাংলাদেশ
আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের প্রধান প্রধান মোড়ে এখন দেখা যায় বিভিন্ন মূর্তি বা ভাষ্কর্য । এখানে মূর্তির ছবিগুলো না দিয়ে শুধু বর্ণনা করা হলো। মূর্তি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
১-(মূর্তি) অথবা ২- (মূর্তি) অথবা ৩- মূর্তি
১। জাগ্রত চৌরঙ্গী- ১৯৭৩ সালে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় ভাস্কর্যটি স্থাপিত।
২। অপরাজেয় বাংলা- ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর
সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর
সৈয়দ আব্দুলস্নাহ খালিদ
৩। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পশ্চিম পাশে ডাসের পেছনে অবস্থিত। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ
এর উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর শামীম সিকদার
৪। সংশপ্তক- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ নির্মিত। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।
৫। সাবাস বাংলাদেশ- ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত । শিল্পী নিতুন কুণ্ডু ।
৬। বিজয় '৭১'-
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০০ সালের জুন মাসে তৈরি হয় এই ভাস্কর্য। ভাস্কর্য
শিল্পী শ্যামল চৌধুরী ।
৭। রাজু ভাস্কর্য-
১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়ক দ্বীপ। ভাস্কর শ্যামল
চৌধুরী ।
৮। চেতনা ৭১-
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের ৩০ জুলাই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন
করা হয়। ভাস্কর মোবারক হোসেন নৃপল।
৯। বিজয় ৭১-
যশোরের পাল বাড়ির মোড়ে ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর খন্দকার
বদরুল আলম নান্নু ।
১০। আদম্য বাংলা-
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ভাস্কর্য আদম্য বাংলা নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১২ সালের
জানুয়ারিতে। শিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল
১১। মোদের গরব-
বাংলা একাডেমীর সামনে এই ভাস্কর্যটি ২০০৭ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়।
১২ । ভাস্কর্যে বাংলাদেশ-
ভাস্কর গোপাল চন্দ্র পাল। যার তত্ত্বাবধানে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরে নির্মাণ
হয় ৩৬০ টি ভাস্কর্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস।
২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীঃ
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় চারুকলা
প্রদর্শনী দেশের চারুশিল্পের বৃহত্তম উৎসব। ১৯৭৪ সালে সমকালীন চিত্রকলা প্রদর্শনীর
মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিষয়ক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এ কর্মকাণ্ডের সূত্র
ধরে ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু। প্রতি
দুই বছর পর পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায়
শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে গত ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে শুরু হয়েছিল ২৩তম জাতীয় চারুকলা
প্রদর্শনী।
প্রদর্শনী উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১ জুলাই ২০১৯/ ১৭ আষাঢ় ১৪২৬ রোজ সোমবার বিকাল ৫ টায় একাডেমির
জাতীয় চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে একাডেমির যন্ত্রশিল্পীরা অর্কেস্ট্রা
পরিবেশন করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্ঠা এইচ টি ইমাম প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন ও বিজয়ী শিল্পীদের
পুরস্কার প্রদান করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অংশগ্রহণকারী সকল শিল্পীকে অভিনন্দন
জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘এটি চমৎকার একটি প্রদর্শনী হবে। দেশ বিদেশে আমাদের শিল্পীদের
যথেষ্ট মর্যাদা আছে। সবাইকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে শিল্পকর্ম ক্রয় করার আহ্বান জানাই।’
বিশেষ অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি
এবং বরেণ্য চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভিাপতিত্বে
স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক শিল্পী আশরাফুল আলম পপলু।
এবারের প্রদর্শনীতে ৩১০ জন শিল্পীর ৩২২ টি
শিল্পকর্ম স্থান পাচ্ছে। চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, কারুশিল্প, স্থাপনা ও ভিডিও
আর্ট মাধ্যমের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। এছাড়া ও আছে কৃৎকলা (পারফরমেন্স
আর্ট)। আবেদনকারী ৮৫০ জন শিল্পী থেকে বাছাইকৃত ৩১০ জন শিল্পীর ৩২২ টি শিল্পকর্মের মধ্যে
১৫৯ টি চিত্রকলা, ৪৫ টি ভাস্কর্য্, ৫০ টি ছাপচিত্র, ১৭ টি কারুশিল্প, ৮ টি মৃৎশিল্প
, ৩৭ টি স্থাপনা ও ভিডিও আর্ট , ০৭ টি কৃৎকলা
(পারফরমেন্স আর্ট)।
প্রাথমিক পর্যায়ে শিল্পকর্ম বাছাই কমিটিতে ছিলেন শিল্পী নাসরিন বেগম , শিল্পী মোস্তাফিজুল
হক , শিল্পী শেখ সাদী ভূইয়া , শিল্পী ড. মোহাম্মদ ইকবাল ও শিল্পী আনিসুজ্জামান । পুরস্কারের
জন্য সেরা শিল্পকর্ম বাছাইয়ে বিচারক হিসেবে ছিলেন শিল্পী আব্দুস শাকুর শাহ, স্থপতি
শামসুল ওয়ারেস, শিল্পী রণজীৎ দাস , শিল্পী ড. ফরিদা জামান ও শিল্পী মোহাম্মদ ইউনুস
দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে মোট ৮ টি পুরস্কার
প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী কামরুজ্জামান যার
আর্থিক মূল্যমান ২ লক্ষ টাকা। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র , স্থাপনা- এই চারটি বিভাগে
সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে শিল্পী রাফাত আহমেদ বাঁধন, শিল্পী তানভীর মাহমুদ,
শিল্পী রুহুল করিম রুমী, শিল্পী সহিদ কাজী। প্রতিটির আর্থিক মূল্যমান ১ লক্ষ টাকা।
এছাড়াও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী উত্তম কুমার তালুকদার যার মূল্যমান
১ লক্ষ টাকা। দীপা হক পুরস্কার পেয়েছেন সুমন ওয়াহিদ যার মূল্যমান ২০ হাজার টাকা ও চিত্রশিল্পী
কাজী আনোয়ান হোসেন পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী ফারিয়া খানম তুলি যার মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে ।
প্রদর্শনীটি ১-২১ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত চলবে
। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা ও শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত চলবে।
গত ৩০ জুলাই বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে ২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর
বিস্তারিত তুলে ধরেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত
ছিলেন একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভূঁইয়া, চারুকলা বিভিাগের পরিচালক শিল্পী আশরাফুল আলম
পপলুসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ।
জাতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় বিকাশকে অব্যাহত রাখতে
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলার চর্চা ও বিকাশের উদ্দেশ্যে শিল্পসংস্কৃতি ঋদ্ধ
সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। প্রতি দুই বছর পরপর একাডেমির চারুকলা বিভাগ নবীন
শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী, জাতীয় ভাস্কর্য্য প্রদর্শনী, দ্বিবার্ষিক এশিয় চারুকলা প্রদর্শনী,
জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী আয়োজনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রদর্শনী আয়োজন করে
থাকে।
সাম্প্রতিক আলোচিত ভাষ্কর- মৃণাল হকঃ
কে এই মৃণাল হক? কী তার উদ্দেশ্য ছিল?
মৃণাল হক (৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮ - ২২ আগস্ট ২০২০)
হলেন একজন বাংলাদেশী ভাস্কর। তিনি ঢাকার রাজসিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ডেন
জুবিলী টাওয়ার ভাস্কর্যের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
শিক্ষাঃ
মৃণাল হক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহীতে
জন্ম গ্রহণ করেন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ
শেষে ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে তিনি
মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবনঃ
১৯৯৫ সালে মৃণাল আমেরিকাতে পাড়ি জমান এবং
সেখানে তার প্রথম কাজ শুরু করেন। নিউইয়ার্ক সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের দুতাবাসে তার
প্রথম প্রদর্শনি প্রদর্শিত হয়।[১] তিনি নিউইয়ার্কে এত বেশি কাজ করেন যে, নিউইয়ার্কের
সরকারি টিভি চ্যানেলে তার একটি সাক্ষাৎকার ২৬ বার এবং সিএনএন চ্যানেলে ১৮ বার প্রচারিত
হয়।[২][৩][৪]
২০০২ সালে মৃণাল দেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে
বসবাস শুরু করেন। একই বছর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের বক ভাষ্কর্যটি ।
২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবিলী
টাওয়ার তারই শিল্পকর্ম।
উল্লেখযোগ্য কর্ম
দুর্জয় -রাজারবাগ পুলিশ লাইন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সমালোচনাঃ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রিক দেবী
থেমিসের অনুকরণে ভাস্কর্য স্থাপন করে সমালোচনার মুখে পড়েন।
মৃত্যুঃ
তিনি ২২ আগস্ট ২০২০ ইংরেজি তারিখ শুক্রবার
দিবাগত রাত আনুমানিক দুইটায় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।
ভাষ্কর মৃণাল হকের কী উদ্দেশ্য ছিলঃ
বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাতার
প্রধান পরিকল্পক মৃণাল হক। ঢাকা শহর ও দেশের বিভিন্ন ভার্সিটিতে বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন
মূর্তি নির্মাণ করেছেন। ২০০২ সালে মৃণাল হক আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে
বসবাস শুরু করেন। এই বছর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের বক ভাস্কর্যটি। ২০০৩
সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবুলি টওয়ার
তারই শিল্পকর্ম। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নির্মিত দুর্জয় ভাস্কর্যসহ সর্বশেষ সুপ্রিম
কোর্টের সামনে নির্মিত কথিত ন্যায় বিচারের প্রতীক জাস্টিসিয়া (গ্রীক দেবী) তারই শিল্পকর্ম।
সুপ্রীম কোর্টের মূর্তি নির্মাতা মৃণাল হক
বলেছেন, ‘সব কিছুকে মূর্তি বলে তা সরানোর দাবি মেনে নেয়াটা হবে আত্মসমর্পণ। এটা মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা বিরোধী । এরকম দাবি মেনে নিলে দেশে থাকার মতো পরিবেশ থাকবে না।
(সুপ্রীম কোর্টের সামনে গ্রীক দেবীর মূর্তি
দেখতে চাইলে ক্লিক করুন-গ্রীক দেবী)
ঢাকার হজ ক্যাম্পের সামনে তিনি লালনের ভাস্কর্য
স্থাপন করেন। যার প্রেক্ষিতে দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে সেটি
পরিবর্তন করে আল্লাহ ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করা হয়।
প্রশ্ন হলো, মৃনাল হক বাস করেন বাংলাদেশে।
কিন্তু বাঙালিকে কতটা বুঝেন। একজন শিল্পীকে অবশ্যই তার দেশের তার এলাকা ও সংস্কৃতির
চাহিদা বুঝে শিল্প কর্ম করতে হয়। কিন্তু তিনি সেটা না করে ইউরোপ আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন
করছেন বাংলাদেশে।
মূলত মুসলিম প্রধান দেশে দেশীয় সংস্কৃতি, ঈমানি
চেতনা ও দেশপ্রেম বিলুপ্ত করার বিদেশী গভীর চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছেন মৃণাল হকরা,
এমনটিই মন্তব্য করছেন দেশের সচেতন সাধারণ নাগরিকরা।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে মূর্তি
ছড়িয়ে দেয়ার মাষ্টার প্ল্যান তিনি হাতে নিয়েছিলেন। কারণ এটি একটি বড় মাপের ব্যবসা।
একদিকে ভিনদেশি আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া, অন্যদিকে
পকেট ভর্তি করার সুবর্ণ সুযোগ। ইতিমধ্যে তার মাধ্যমে দেশজুড়ে শত শত মূর্তি বানানো হয়েছে,
এবং আরো সহস্রাধিক কাজ চলছে ।কিন্তু কাজগুলো অসমাপ্ত রেখেই গত ২২ আগস্ট ২০২০ তারিখে
পরপারে চলে যান।
ময়মনসিংহ মহিলা কলেজর সামনে নগ্ন মূর্তি স্থাপন করায়-ফেসবুক দুনিয়ায় তূমুল
প্রতিবাদঃ
ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে
একটি মহিলার নগ্ন মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মহিলা মূর্তিটিকে এমনিভাবে উলঙ্গ করে তৈরী
করা হয়েছে যা দেখলে যেকোনো বয়সের লোকের সেক্স জাগ্রত হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত এখন লিখছি
না। তবে নগ্ন মূতিটিকে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং দেখার পর তওবা করুন। (নগ্নমূর্তি)।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ উপর্যুক্ত তথ্যসমূহের
আলোকে এটাই প্রমাণিত যে, আমরা মুসলিম শাসক আমাদের দেশে মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী, ছবি অংকন, সংগীত ও নৃত্য জায়েজ করে নিয়েছি
বা জায়েজ করার অনুমতি দিয়েছি। আমরা মুসলিম হিসেবে এসব শিক্ষা করা কী আদৌ জায়েজ। আমি
এসবের কিছুই জানি না, সেই বলে কী আমার মধ্যে সৃজনশীলতা নেই। ইসলামের বিরোধীতা করাই
কি আধুনিকতা, সৃজনশীলতা, মনের বিকাশ সাধন? যারা এইসবের পক্ষে বা যারা এইসব কাজ করে
বেড়ায় তারা কুরআন ও সহিহ হাদিস অনুযায়ী পাক্কা মুনাফিক, কাফির ও মুশরেক। যদিও তারা
সালাত আদায় করে, সাওম পালন করে, হজ্জ করে এবং দান খয়রাত করে।
এখন আসুন মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী
এবং ছবি অংকন বিষয়ে কুরআন ও হাদিস কী বলে একটু জেনে নেই।
আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি যে, এ
দেশের কিছু মুসলিম নামধারী ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নাস্তিক্যবাদকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক
করে তুলেছে। অপর পক্ষে, কিছু মুসলিম লেবাসধারী, ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের জায়গায় পৌঁছে
দিয়েছে। তারা ইসলামি জিহাদের নামে নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষকে এমনকি মুসলিমকে (যারা তাদের
মতবাদে বিশ্বাস করে না তাদের) কাফের আখ্যা দিয়ে হত্যায় লিপ্ত হয়েছে এবং এটাকে তারা
হালাল করে নিয়েছে। এ অবস্থায় চক্রান্তকারীরা সরকারের মাথায় হাত রেখে ‘চেতনা’র নামে
নিরীহ মুসলিমদের মগজে ইসলাম সম্পর্কে বাজে ধারণা ঢুকিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
তারই প্রতিফলন দেখছি, দেশব্যাপী ভাস্কর্যের আড়ালে নোংরা খেলায়।
বলা হয়েছে, মূর্তি নয় ভাস্কর্য স্থাপন করেছে
এবং ইসলামে নাকি ভাস্কর্য জায়েজ আছে। ভাবটা এমন, ইসলামে যদি ভাস্কর্য বৈধ না হতো তাহলে
তারা এটা স্থাপন থেকে বিরত থাকতেন। তাদের কথায় একটা বিষয় স্পষ্ট যে, তারা মেনে নিয়েছেন,
ইসলামে মূর্তি হারাম বা নিষিদ্ধ।
যারা বলছেন, ইসলামে ভাস্কর্য জায়েজ তাদের প্রধান
দলিল হলোÑ ‘মক্কা বিজয়ের পর, হজরত মুহাম্মদ সা: কাবাকে মূর্তিমুক্ত করতে উদ্যত হন,
সাহাবিরা সব মূর্তি ভেঙে ফেললে তিনি কাবার দেয়ালে খোদাই করা মেরির ভাস্কর্যে হাত রাখেন
এবং এটাকে ছেড়ে দিতে বলেন’ মার্টিন লিং, বইয়ের নাম Muhammad : His Life Based on the Earliest
Sources, পৃষ্ঠা নম্বর ৩০০। এই মার্টিন লিং
আল-ওকাইদ এর আল-মাগাজি গ্রন্থের পৃষ্ঠা নম্বর ৮৩৪ থেকে কথাগুলো নিয়েছেন।
এখন দেখা যাক, এ দলিলের গ্রহণযোগ্যতা, এই রাবির
ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি রহ: (কিতাব আল উলুম, পৃষ্ঠা নম্বর ২৬০), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
রহ:-এর (খুলুশাহ তাহদিব আল কামাল ফি আসমা আর রিজাত, পৃষ্ঠা নম্বর ২৭৮), ইমাম নাসায়ি,
ইমাম বুখারি, ইমাম যাহাবি, (মিজান, পৃষ্ঠা নম্বর ১১০), ইমাম আবু দাউদ, ইমাম দারুকুতনি
রহ:সহ সব ইমাম ও হাদিসবিশারদগণ তাকে ‘মিথ্যাবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে
আরো জানার আগ্রহ থাকলে তিনি ২০০৫-এ ‘Al-Seerah International’ জার্নালে প্রকাশিত
Muhammad Ibn Umar Al-Waqidi’’ গবেষণালব্ধ প্রবন্ধটি পড়ে নিতে পারেন।
এখন দেখা যাক, ইসলামে ভাস্কর্য হারাম না হালাল।
উসামা বিন জায়েদ রা: বলেন, আমি রাসূল সা:-এর সাথে কাবাগৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি সেখানে
দেয়ালে ছবিগুলো দেখে বালতিতে পানি আনার জন্য বললেন। আমি পানি নিয়ে এলে তিনি তা দিয়ে
কাপড় ভিজিয়ে এগুলো মুছতে থাকলেন এবং বললেন ‘আল্লাহ ঐ জাতিকে ধ্বংস করুন যারা ছবি তৈরি
করে অথচ সেগুলোকে তারা সৃষ্টি করতে পারে না।’ (সিলসিলা সহিহা হাদিস নম্বর-৯৯৬)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: বলেন, ‘মক্কা বিজয়ের
দিন রাসূল সা: কাবাগৃহে প্রবেশ করেন। এ সময় গৃহের চার দিকে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। তিনি
হাতের ধনুক দিয়ে সেগুলো আঘাত করতে থাকেন এবং পাঠ করেন ‘বলুন : সত্য এসেছে এবং মিথ্যা
বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮১)। অতঃপর
রাসূল সা: কাবাগৃহে প্রবেশ করেন এবং সেখানে ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ:-এর ছবি মূর্তি দেখতে
পান, যাদের হাতে ভাগ্য গণনার তীর ছিল এবং ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে ওঠেন ‘আল্লাহ ওদের ধ্বংস
করুক। আল্লাহর কসম! এই নবীদ্বয় কখনোই তীর দ্বারা ভাগ্য গণনা করতেন না।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪২৮৭, ২৪৭৮, আধুনিক প্রকাশনী ৩৯৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস আরো বলেন ‘অতঃপর তিনি সেখানে কাঠের তৈরি
কবুতর দেখতে পেলেন এবং তা নিজ হাতে ভেঙে ফেললেন।’ (সিরাতুল রাসূল সা: তৃতীয় মুদ্রণ
৫৩৫ পৃ; আর-বিদায়াহ ৪/৩০০; যাদুল মা’আদ ৩/৩৫৮ এবং আর-রাহি মাকতুম ৪০৪ পৃষ্ঠা।
এই হাদিস থেকে এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে,
কাঠ দ্বারা তৈরি করা প্রাণীর তথা কবুতরের ভাস্কর্য ইসলামি শরিয়তে স্থান পায়নি। এই কাঠের
তৈরি বা কাঠকে খোদাই করে তৈরি করা কবুতরটি কোনো ইবাদত তথা উপাসনা করার জন্য ছিল না।
আল্লাহর রাসূল সা: এটার বৈধতা দেননি। এখন কেউ কেউ বলতে পারে, যেহেতু এটা মূর্তির সাথে
ছিল তাই তিনি মানুষের উপাসনার বস্তু ভেবে ভেঙে ফেলেছেন। তাদের উদ্দেশে এখানে আরো একটি
হাদিস পেশ করলাম
হজরত আয়েশা রা: বলেন, ‘আমি রাসূল সা:-এর জন্য
বালিশে ঝালর লাগালাম, যাতে একটি প্রতিচ্ছবি ছিল। অতঃপর রাসূল সা: এলেন এবং দুই দরজার
মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলেন। এ সময় তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হতে থাকে। আমি বললাম, আমাদের কী
দোষ আল্লাহর রাসূল সা:? তিনি বললেন, এই বালিশের কী অবস্থা? আমি বললাম, এটা বানিয়েছি
যাতে এর ওপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন। তিনি বললেন, ‘তুমি কি জানো না যে, ওই ঘরে ফেরেশতা
প্রবেশ করে না, যে ঘরে ছবি থাকে? আর যে ব্যক্তি (এমন প্রাণীর ভাস্কর্য) তৈরি করে তাকে
কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং আল্লাহ বলবেন, তুমি যা সৃষ্টি করেছ তাতে জীবন দাও।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩২২৪, ২১০৫, আধুনিক প্রকাশনী ২৯৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একটি মহল যা উপাসনার জন্য তৈরি করা তা মূর্তি
আর যা উপাসনার জন্য নয়, শুধু সৌন্দর্য প্রকাশ কিংবা স্মৃতির জন্য সংরক্ষিত তা ভাস্কর্য
বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। তাদের তথাকথিত এই সংজ্ঞায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। কোনো
প্রাণীর ভাস্কর্য যা সৌন্দর্যের জন্য তৈরি করা তা যদি ইসলামে বৈধ হয়, তাহলে হজরত আয়েশা
রা: কোন উপাসনার জন্য বালিশে প্রাণীর ছবিযুক্ত ঝালর লাগিয়েছিলেন?
কেউ কেউ আয়েশা রা:-এর একটি হাদিস এনে প্রাণীর
ভাস্কর্যকে বৈধতাদানের অপচেষ্টা চালায়। আর তা হলো, একদা রাসূল সা: আমার একটি খেলনা
দেখে জিজ্ঞেস করলেন কী এটা? আমি বললাম, ঘোড়া। তখন তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এর ওপরে
এগুলো কী? আমি বললাম, দু’টি ডানা। তখন তিনি বললেন ঘোড়ার আবার ডানা থাকে নাকি? আমি বললাম,
আপনি শোনেননি, সোলায়মান আ:-এর ঘোড়ায় পাখা ছিল? তখন আল্লাহর রাসূল সা: হাসছিলেন এবং
তাঁর দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছিল। (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা) উল্লিখিত হাদিসে
খেলনার কথা বলা হয়েছে। ইসলামে ছোট শিশুদের খেলনা বৈধ। তবে তার আকৃতি পূর্ণ প্রাণীর
মতো হবে না। কারণ আয়েশা রা: যে খেলনার কথা বলেছেন তা পূর্ণ আকৃতি ছিল না (মাজমাউল ফতুয়া
২/২৭৭-২৭৮)।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান
হয় যে, ইসলামে প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য (তা পূজা বা উপাসনার জন্য কিংবা স্মৃতি সংরক্ষণ
বা সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য) যাই হোক না কেন, তা নিষিদ্ধ। এ দেশের মানুষ ধর্মীয় অধিকারে
বিশ্বাসী, যারা মূর্তিপূজায় বিশ্বাস করেন তাদের নির্দিষ্ট উপাসনালয় থাকবে, তারা তাদের
ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করবেন সেখানে। সরকার তাদের উপাসনালয় তৈরিতে সহযোগিতা করছে
এবং বর্তমানেও করছে, এতে কোনো মুসলিমের আপত্তি ছিল না এবং থাকার কথাও নয়। কিন্তু নিরাকার
এক আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলিমদের প্রাণে আঘাত হেনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাস্কর্যের নামে
সুকৌশলে মূর্তি স্থাপন করে তা ইসলামে বৈধ বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা এ দেশের মানুষ
মানবে না।
ইসলামে ছবি অংকন ও মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য নির্মাণের বিধান
প্রাথমিক আলোচনাঃ
কোনো প্রাণীর-মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে
কঠিন কবীরা গুনাহ ও হারাম । মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তির বেচাকেনা ইত্যাদি
সকল বিষয় কঠিনভাবে নিষিদ্ধ এবং এগুলো কুফরী কাজ। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে
বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। এটা চরম ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে
যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোকেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে
কুরআন মজীদের স্পষ্ট নির্দেশ-
প্রথম আয়াতঃ
‘তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ
এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -সূরা হজ্জ : ৩০।
এই আয়াতে পরিস্কারভাবে সবধরনের মূর্তি পরিত্যাগ
করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড বর্জন
করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে. উপরের আয়াতে সকল
ধরনের মূর্তিকে ‘রিজস’ শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘রিজ্স’ অর্থ নোংরা ও অপবিত্র বস্ত্ত।
বোঝা যাচ্ছে যে, মূর্তির সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রুচিবোধের পরিচায়ক।
দ্বিতীয় আয়াতঃ
অন্য আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থা তুলে
ধরা হয়েছে এভাবে-
‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো
না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক
ও নাসরকে।’ -সূরা নূহ : ২৩
এখানে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত
হয়েছে : ১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা। ২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা।
তাহলে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কুরআন মজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য
হিসেবে চিহ্নিত। অতএব এটা যে ইসলামে গর্হিত ও পরিত্যাজ্য তা তো বলাই বাহুল্য।
উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে প্রতিমার পূজা নূহ্ (আঃ)-এর কওমের মাঝে চালু ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ ‘‘দুমাতুল জান্দাল’’ নামক জায়গার কাল্ব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়া‘আ, হল, হুযায়ল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুছ ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরবর্তীতে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটবর্তী ‘জাওফ’ নামক স্থান। ইয়া‘উক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাসর ছিল যুলকালা‘গোত্রের হিময়ার শাখার মূর্তি। নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে, শায়ত্বন তাদের কওমের লোকদের অন্তরে এ কথা ঢেলে দিল যে, তারা যেখানে বসে মাজলিস করত, সেখানে তোমরা কতিপয় মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সমস্ত পুণ্যবান লোকের নামেই এগুলোর নামকরণ কর। কাজেই তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐ সব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা আরম্ভ করে দেয়। সহীহ (বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৯২০, আধুনিক প্রকাশনী ৪৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তৃতীয় আয়াতঃ
কুরআন মজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার
কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে-
‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য
মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’ -সূরা ইবরাহীম : ৩৬
অন্য আয়াতে এসেছে-
‘আর তারা বলেছিল, তোমরা পরিত্যাগ করো না তোমাদের
উপাস্যদের এবং পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ সুওয়াকে, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে। অথচ এগুলো
অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ -সূরা নূহ : ২৩-২৪
কুরআন মজীদে একটি বস্ত্তকে ভ্রষ্টতার কারণ
হিসেবে চিহ্ণিত করা হবে এরপর ইসলামী শরীয়তে
তা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য থাকবে-এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কী হতে পারে।
চতুর্থ আয়াতঃ
কুরআনের ভাষায় মূর্তি ও ভাস্কর্য হল বহুবিধ
মিথ্যার উৎস। ইরশাদ হয়েছে-
তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার)
মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। -সূরা আনকাবুত : ১৭।
মূর্তি ও ভাস্কর্য যেহেতু অসংখ্য মিথ্যার উদ্ভব
ও বিকাশের উৎস তাই উপরের আয়াতে একে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে,
মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
আল্লাহ তা‘আলার নিকট মনোনীত ধর্ম ও একমাত্র
শান্তিময় ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম, যাতে নেই কোন ধরণের সঙ্কীর্ণতা ও লাগামহীন স্বাধীনতা
এবং নেই এমন কোন আদেশ যা পালন করা দুষ্কর এবং নেই এমন কোন নিষেধ, যা বর্জন করা অসম্ভব।
বরং তাতে রয়েছে সহজতা ও পূর্ণতা এবং ব্যাপকতা ও কোমলতা।
কিন্তু এই ধর্মের প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতার
দরুন মুসলিমদের মাঝে ইয়াহুদী, খ্রিস্টান, মুশরিক ও বিভিন্ন অমুসলিমদের সীমাহীন অপসংস্কৃতি
ও অসভ্যতা অনুপ্রবেশ করেছে, যার অন্যতম হলো প্রাণীর ছবি আঁকা ও তোলা এবং ভাষ্কর্য ও
মূর্তি প্রস্তুত করা। তাই এই বিষয়ে ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে সংক্ষেপে কিছু বিধি নিষেধ
উল্লেখ করা হলো।
প্রাণীর ছবি আঁকা, বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলা,
সংরক্ষণ করা ও প্রদর্শন করার বিধানঃ
হাদিসে বর্ণিত আছে যে,
(ক) আবূ ত্বলহা (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে।
লায়স (রহ.) ..আবূ ত্বলহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (এ বিষয়ে) শুনেছি। (সহীহ (বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন). ৫৯৪৯,৩২২৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুসলিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরূকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরূক ইয়াসারের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫০, মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রাণীর ছবি আঁকা নিষিদ্ধ। প্রাকৃতিক দৃশ্য
বা জড় বস্ত্ত এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে,
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে জীবজগতের বা জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
ও হারাম করা হয়েছে।
২। এই হাদীসটির মধ্যে জীবজগতের বা জীবজন্তুর
ছবি বা মূর্তি তৈরি করা হতে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে; কেননা এর দ্বারা সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়। এবং জীবজগতের বা জীবজন্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরি করার বিষয়টি হলো আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন
করার একটি মাধ্যম এবং উপাদান।
৩। এই হাদীসটিকে লক্ষ্য করে একথাও বলা হয় যে,
যারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করার জন্য মূর্তি
বা প্রতিমা তৈরি করে, তাদের জন্য এই হাদীসটি প্রযোজ্য। সুতরাং মূর্তি বা প্রতিমা নির্মাতাদের জন্য এই হাদীসটি
খাস রয়েছে। তাই তারাই কেয়ামতের দিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
(গ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা এ জাতীয় (প্রাণীর)
ছবি তৈরী করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবেঃ তোমরা যা বানিয়েছিলে
তাতে জীবন দাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫১, ৭৫৫৮; মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৮,আধুনিক
প্রকাশনী- ৫৫১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না, যাতে কোন (প্রাণীর) ছবি থাকত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের) সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি আমার কক্ষে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙিয়েছিলাম। তাতে ছিল প্রাণীর) অনেকগুলো ছবি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের দিন সে সব লোকের সব থেকে শক্ত আযাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির (প্রাণীর) সদৃশ তৈরী করবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমরা ওটা দিয়ে একটি বা দু’টি বসার আসন তৈরী করি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫৪, ৫৯৫৫, ২৪৭৯; মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৭, আহমাদ ২৪১৩৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার ছবিওয়ালা
গদি ক্রয় করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তা দেখে) দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেন,
প্রবেশ করলেন না। আমি বললামঃ যে পাপ আমি করেছি তা থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করছি। তিনি
জিজ্ঞেস করলেনঃ এ গদি কিসের জন্যে? আমি বললামঃ আপনি এতে বসবেন ও টেক লাগাবেন। তিনি
বললেনঃ এসব ছবির প্রস্তুতকারীদের কিয়ামতের দিন ‘আযাব দেয়া হবে। তাদের বলা হবে, যা তোমরা
তৈরী করেছিলে সেগুলো জীবিত কর। আর যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫৭, ৫৯৬১, ২১০৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথী আবূ ত্বলহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ হাদীসের (এক রাবী)
বুসর বলেনঃ যায়দ একবার অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমরা তার সেবা শুশ্রূষার জন্যে গেলাম। তখন তার
ঘরের দরজাতে ছবিওয়ালা পর্দা দেখতে পেলাম। আমি নবী সহধর্মিণী মাইমূনাহ (রাঃ)-এর পালিত
‘উবাইদুল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, ছবির ব্যাপারে প্রথম দিনই যায়দ আমাদের কি জানায়নি?
তখন ‘উবাইদুল্লাহ বললেন, তিনি যখন বলেছিলেন, তখন কি তুমি শোননি যে, কারুকাজ করা কাপড়
বাদে?
ইবনু ওয়াহ্ব অন্য সূত্রে আবূ ত্বলহা থেকে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৫৯৫৮,৩২২৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ
(রাঃ)-এর নিকট কিছু পর্দার কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি ঘরের এক দিকে পর্দা করেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ আমার থেকে এটা সরিয়ে নাও, কেননা এর ছবিগুলো
সালাতের মধ্যে আমাকে বাধা দেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫৯,৩৭৪, আধুনিক
প্রকাশনী- ৫৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) সালিমের পিতা ‘আবদুল্লাহ (ইবনু ‘উমার) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জিবরীল (আ.) (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (আগমনের) ওয়াদা করেন। কিন্তু তিনি আসতে দেরী করেন। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পড়লেন। তখন জিবরীলের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটল। তিনি যে মনোকষ্ট পেয়েছিলেন সে বিষয়ে তাঁর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন জিবরীল (আঃ) বললেনঃ যে ঘরে ছবি বা কুকুর থাকে সে ঘরে আমরা কক্ষনো প্রবেশ করি না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৬০, ৩২২৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য ও যিনাকারীর উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি সুদ গ্রহীতা, সুদদাতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি অঙ্কণকারী আর যে তা করায় এবং ছবি নির্মাতাকে অভিশাপ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৬২, ২০৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। মুসলিম ব্যক্তির প্রতি একটি অপরিহার্য কর্তব্য
হলো এই যে, সে যেন সদা সর্বদা নিরিবিলিতে এবং প্রকাশ্যভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকে। এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক নিজেকে পরিচালিত
করে। এই ধর্মের নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয়গুলি বর্জন করে। এটাই হলো ইহকাল ও পরকালে সুখময়
জীবন লাভের একটি নিদর্শন।
২। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষের জন্য পবিত্র
ও হালাল মাল এবং সম্পদ উপার্জন করার সমস্ত পথ খুলে দেওয়ার প্রতি অতি আগ্রহী। তাই সমস্ত
বৈধ পন্থায় যেমন, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকর্ম এবং শিল্পের মাধ্যমে মাল উপার্জন করার প্রতি
মানুষকে উৎসাহ প্রদান করে। এবং অবৈধ বা হারাম উপায়ে মাল উপার্জন করা অবৈধ ও হারাম ঘোষণা
করে। সুতরাং রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নেওয়া, কুকুর বিক্রি করে তার মূল্য গ্রহণ করা
এবং ব্যভিচার অথবা অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে অথবা সুদ ইত্যাদি লেনদেনের
মাধ্যমে সম্পদ বা মাল উপার্জন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
৩। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মে শরীরের কোনো অঙ্গে উল্কি করা এবং জীবজগতের ছবি বা মূর্তি তৈরি করা নিষিদ্ধ ও হারাম কর্ম।
(ট) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। আর লোকজন তাঁর কাছে নানান কথা জিজ্ঞেস করছিল। কিন্তু
জবাবে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (হাদীস) উল্লেখ করছিলেন না। অবশেষে
তাঁকে ছবির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন প্রাণীর ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের
দিন তাকে কঠোরভাবে হুকুম দেয়া হবে ঐ ছবির মধ্যে জীবন দান করার জন্যে। কিন্তু সে জীবন
দান করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৬৩, ২২২৫, আধুনিক প্রকাশনী-
৫৫৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে জীবজগতের বা জীবজন্তুর
মূর্তি বা ছবি তৈরি করা ও বিক্রয় করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। তবে জীবজগৎ
বা জীবজন্তু ছাড়া অন্যান্য জিনিসের মূর্তি বা ছবি তৈরি করা বৈধ। সুতরাং বৃক্ষ, নদী,
পাহাড়-পর্বত এবং ভবন ইত্যাদির মূর্তি বা ছবি তৈরি করা সদাসর্বদা বৈধ।
২। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে কাল্পনিক প্রাণীর মূর্তি খোদাই করা অথবা নির্মান করা কিংবা ছবি তৈরি করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম করা হয়েছে। কেননা এইগুলি তো স্বভাবিকভাবে আকৃতির দিক দিয়ে প্রকৃত জীবজগৎ বা জীবজন্তুর মতই যদিও সেগুলির সমতুল্য প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে কোনো জীবজন্তুর অস্তিত্ব নেই।
(ঠ) এছাড়া আরো অনেক হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের আছার,
তাবেঈন, তাবে তাবেঈন ও ফুকাহা কেরামের কথা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কোন প্রাণীর
ছবি আঁকা বিনা ঠেকায় ছবি তোলা ও সংরক্ষণ করা বা প্রদর্শন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। ঠিক
তেমনি কোন ব্যক্তির ছবি চাই সেটা কোন আলিম বা বুযুর্গের ছবি হোক না কেন নিজের সাথে
বা ঘরে বরকত বা সৌন্দর্য কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা বা ঝুলিয়ে রাখা শরী‘আতের
দৃষ্টিতে নাজায়িয তথা হারাম বরং শাস্তি ও অভিশাপযোগ্য কাজ। আরো দেখুন (সহীহ বুখারী হা. নং ৫৯৫৩, ২২২৫, ১৩৪১, সহীহ মুসলিম হা.নং ৯৬৯, ৫২৮, ২১১১,
২১১২, ২১০৭, নাসাঈ হা.নং ৫৩৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান হা.নং ৫৮৫৩ মুসান্নাফে আবদুররাজ্জাক্ব
হা.নং ১৯৪৯২, ১৯৪৮৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হা.নং ২৫৭০৬, ৩৪৫৩৮ শরহুননববী খ.২,পৃঃ
১৯৯ ফাতহুল বারী খ. ১০ পৃঃ৪৭০ উমদাতুল ক্বারী খ. ১৫ পৃ. ১২৪ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৩৫৯ ইমদাদুল মুফতীন পৃঃ ৮২৯)।
ক্যামেরায় ছবি বা ফটোগ্রাফির হুকুমঃ
পূর্বোক্ত আলোচনার দ্বারা বুঝা গেল যে, ছবি
তোলা ও সংরক্ষণ করা বা প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ হারাম, আর ক্যামেরায় ছবি যাকে আজকাল ফটোগ্রাফিও
বলা হয়। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া এই যে, যন্ত্রের পরিবর্তনের কারণে ফটোগ্রাফি
এবং হাতে অংকিত ছবির হুকুমে কোন পার্থক্য ধরা হবেনা। বরং ক্যামেরার ছবি, ফটোগ্রাফিও প্রকৃত ছবির প্রকারসমূহের
মধ্যে এক প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং হাতের দ্বারা ছবি অংকনের ন্যায় সম্পূর্ণ হারাম
হবে। (তাসবীর কী শরয়ী আহকাম পৃ.৬০, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম খ.৪ পৃ.১৬৩)।
ফটোগ্রাফির ছবি এবং ডিজিটাল ক্যামেরায় বা মোবাইলের ছবির মধ্যে কোন পার্থক্য
নাইঃ
বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে ছবি
উঠানোর যে এক অত্যাধুনিক পদ্ধতি তথা ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে যে ছবি তোলা
হয় যদি তা স্ক্রিনে ধারণ করে সংরক্ষণ করা হয় চাই কাগজে বা অন্য কিছুর উপর তার প্রিন্ট
দেয়া হোক বা না হোক সেটা মূলত ছবিই এবং এতে ছবির সকল উদ্দেশ্য পূর্ণমাত্রায় পুরা হয়
সুতরাং আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইলের ছবির পদ্ধতি যেমনই হোক
না কেন তা প্রকৃত ছবি বলেই গণ্য হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণনা
অনুযায়ী হারাম হবে । কোনো কোনো আলেম এটাকে
জায়িয বলতে চেয়েছেন কারণ বাহ্যিকভাবে এটা ছবি মনে হয় না । কিন্তু লক্ষ্য উদ্দেশ্যের
দিক দিয়ে এটা ছবিই, কাজেই একে জায়িয বলার কোন অবকাশ নেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫০, মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩, উমদাতুল
ক্বারী ১৫/১২৪, জাদীদ ফিকহী মাসাইল ১/৩৫০, আহাম মাসাইল জিনমে ইবতেলায়ে আম খ.১পৃ. ২০৩,২০১,২/২৬২)।
মোবাইলে ছবি তোলা কি হারাম?
এক. ইসলামের মৌলিক বিধান হচ্ছে, জড়বস্তুর ছবি তোলা
ও আঁকায় শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই। আর প্রাণীর ছবি প্রয়োজন ছাড়া তোলা, সংরক্ষণ করা,
প্রকাশ করা, ব্যবহার করা হারাম। তবে শরীয়তে
ছবি বলতে কী বুঝায়, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণ রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ডিজিটাল
ক্যামেরায় ছবি তোলা, কম্পিউটার ও মোবাইলে সংরক্ষিত ছবিও ‘নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত
বিধায় এটিও হারাম। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে তা জায়েয। কিন্তু এটিও যে অনুত্তম
এতে কারো কোন দ্বিমত নেই।
অতএব, স্পষ্ট বিধানের ওপর আমল করাই আমাদের
জন্য উত্তম। আল্লাহ ও তার রাসূল ﷺ-এর
হুকুম অনুসরণ করার ক্ষেত্রে যত বেশি কঠোরতা অবলম্বন করা যায়, ততই তাকওয়ার জন্য অধিক
সহায়ক। আপনি মোবাইলে ছবি (অবৈধ ও অশ্লীল কিংবা যাকে দেখা নাজায়েয তেমন মানুষের ছবি
ছাড়া) তুলে রাখলে, কাগজে প্রিন্ট না দিলে, আপলোডও না করলে আপনার সাধারণ ছবি তোলার সমান
গুনাহ নাও হতে পারে। তবে এটাও যদি বর্জন করা যায় তাহলে এটা হবে আপনার তাকওয়ার আলামত।
দুই. আমাদের জানা মতে প্রশ্নেল্লেখিত শব্দে কোনো
সহিহ হাদিস নেই। তবে সহিহ হাদিসে এসেছে,
সা‘ঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ আববস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরী করি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়ে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরী করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরী করতে পার। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, সা‘ঈদ (রাঃ) বলেছেন, আমি নযর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করার সময় আমি তার কাছে ছিলাম। ইমাম বুখারী (রহ.) আরো বলেন, সা‘ঈদ ইবনু আবূ আরুবাহ (রহ.) একমাত্র এ হাদীসটি নযর ইবনু আনাস (রহ.) হতে শুনেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২, মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১১০, আহমাদ ২১৬২, আধুনিক প্রকাশনী ২০৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাফ ছবি বানানোর বিধানঃ
শুধু চেহারা বা মাথা সহকারে উপরের অর্ধাংশের
ছবি বিনা প্রয়োজনে আঁকা কিংবা তোলা নাজায়িয ও হারাম। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. বলেন,
মাথার প্রতিকৃতির নাম হলো ছবি, আর যাতে মাথা নেই তা ছবি নয়। (শরহু মাআনিল আছার, খ.২পৃ.৩৩৯
নাসায়ী হা.৫৩৬৫ সহীহ ইবনে হিব্বান হা.৫৮৫৩ শরহুস সিয়ারিল কাবীর,সারাখছী খ.৪ পৃ.২১৯
ফাতহুল বারী খ.১০ পৃ.৪৭০)।
প্রয়োজনের সময় ছবি তোলার বিধানঃ
পূর্বোল্লিখিত আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে
বুঝা গেল যে, বিনা প্রয়োজনে কোনো প্রাণীর ছবি উঠানো সম্পূর্ণ হারাম, চাই সেটা সম্পূর্ণ
ছবি হোক কিংবা হাফ ছবি হোক, তবে বিশেষ কোন প্রয়োজনের কথা ভিন্ন, যেমন: শরয়ী কোন জরুরত
বা জীবনোপকরণের নিহায়াত প্রয়োজনে বহির্বিশ্বে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বা হজ্ব উমরার উদ্দেশ্যে
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বাধ্য হয়ে পাসপোর্টের জন্য কিংবা ভিসার জন্য কিংবা ন্যাশনাল পরিচয়পত্র
সংগ্রহের জন্য ছবি তোলা বা এমন বিশেষ কোন মুহূর্তে ছবি উঠানো যেখানে মানুষের মুখমণ্ডল
সনাক্ত করা আবশ্যকীয় হয় এ ধরনের একান্ত কোন প্রয়োজনে ছবি তোলার অবকাশ আছে। কেননা ফুকাহায়ে
কিরাম একান্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হারাম হওয়ার বিধানটি শিথিলভাবে বিবেচনা করেছেন। (মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা হা.২৭১৭ শরহুস সিয়ারিল কাবীর খ. ৪পৃ.২১৮ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, তাকি
উসমানী ৪/১৬৪)।
প্রশ্নঃ প্রয়োজন ছাড়া ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যাবে কি?
জবাব: যেখানে শরয়ী জরুরত বিদ্যমান বলে ওলামাগণ মনে
করেন, সেখানে দ্বীন সুরক্ষার বিশেষ প্রয়োজনে ক্যামেরা সহযোগে ফটো তোলা নিষেধ নয়।
অনুরুপভাবে পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট তৈরি বা এজাতীয় বিশেষ প্রয়োজনে ফটো তোলা যায়।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলা, আঁকা এবং তা প্রকাশ করা কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের
ভিত্তিতে সব ইমাম ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ ও সমকালীন মুফতিদের মতে জায়েয নয়। (ফিকহি মাকালাত;
তকি উসমানী : ৪/১২৩)।
ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা আর ছবি আঁকার বিধান
একই। উভয়টিই না-জায়েজ। কেননা শরীয়তে যেই বিষয় মৌলিকভাবে জায়েয নয় তা করার যন্ত্র
পাল্টে গেলেও তার হুকুম পাল্টে না, যেমন মদ খাওয়া হারাম। হাতে মদ বানালে যেই হুকুম,
মেশিনে বানালেও একই হুকুম। যেমন মানুষ হত্যা করা হারাম, হাতে হত্যা করা যেমন হারাম
কোন নব আবিস্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমেও হত্যা করলেও একই বিধান প্রযোজ্য। হাদিসে এসেছে,
মুসলিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরূকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরূক ইয়াসারের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে বা ছবি তোলে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫০, মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে সমস্ত ছবির ব্যবহার বৈধঃ
এক্ষেত্রে কয়েক ধরণের বস্তু রয়েছেঃ
১. জড়বস্তু, বৃক্ষলতা, নদী, সাগর, প্রাকৃতিক দৃশ্য
ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তু, তার প্রতিকৃতি প্রস্তুত করা বা তার ব্যবহার কিংবা ঘরে বা অন্য
কোথাও লটকায়ে রাখা বৈধ। যদি তাতে শরী‘আতের অন্য কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২, মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১১০, আহমাদ ২১৬২, আধুনিক প্রকাশনী ২০৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০৮৪, শরহুস সিয়ারিল কাবীর ৪/২১৯ ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬৫০)।
২. বিচ্ছিন্ন কোন অঙ্গ যেমন: হাত, পা, চোখ ইত্যাদি
(তাসবীর কী শরয়ী আহকাম মুফতীয়ে আজম শফী রহ. কর্তৃক ৭৮)।
৩. কোন জানদারের ছবি যদি এত ছোট হয় যে, তার অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো
পরিপূর্ণ বুঝা যায় না এবং তা যদি মাটিতে রাখা হয় আর একজন মধ্যম জ্যোতিশীল ব্যক্তি সোজা
দাঁড়িয়ে উক্ত ছবির অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে দেখতে না পায় (যেমন বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে
কাবা শরীফের যে ছবি থাকে ) তাহলে এমন ছবি ব্যবহার করা বা ঘরে রাখা জায়িয। যদিও তা বানানো
নাজায়িয। (ফাতাওয়ায়ে শামী খ.১ পৃ.৬৪৯, তাছবীর কী শরয়ী আহকাম পৃ. ৮৩)।
৪. ফটো যদি কোন থলি, গিলাফ কিংবা কোন ডিব্বা ইত্যাদির
ভিতরে বন্ধ অবস্থায় থাকে তাহলে উক্ত পাত্রসমূহ ঘরে রেখে ব্যবহার করা জায়িয, যদিও তা
বানানো ও তার ক্রয় নাজায়েয। (শামী ১/৬৪৯,তাসবীর কী শরয়ী আহকাম পৃ.৮৭)।
ছবি বানিয়ে বা ফটো তোলে তার মূল্য গ্রহণ করার বিধানঃ
বিনা প্রয়োজনে কোন প্রাণীর ছবি প্রস্তুত করার
পর প্রস্তুতকারীর জন্য যেমন তার মূল্য নেয়া নাজায়িয তেমনি ক্রয়কারীর জন্য তার মূল্য
দেয়াও নাজায়িয, এজন্য স্টুডিও ইত্যাদিতে ছবি বানানোর কাজে চাকুরী করাও নাজায়িয। তবে
চিত্রকর ছবি বানাতে যে রং ইত্যাদি ব্যয় করেছে তার মূল্য দিয়ে দিবে। (শামী ১/৬৫১)।
গ্রাফিক্স ডিজাইন, গেম ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন , এইসব কাজ কি হারাম না হালাল
?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর
রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। গ্রাফিক্স ডিজাইনে
আপনি কি তৈরি করছেন তার উপর নির্ভর করছে এটা হালাল নাকি হারাম ।
প্রানীর ছবি আঁকা সম্পর্কে কয়েকটি
হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ-
(ক) আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব (র)...সাঈদ ইবনে
আবুল হাসান (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম,
এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা
হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আব্বাস (রা) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরি করে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ
না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর তাতে সে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (এ কথা
শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস
(রা) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং
যে সকল জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরি করতে পার। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (র) বলেন,
সাঈদ (রা) বলেছেন আমি নযর ইবনে আনাস (রা) থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, ইবনে আব্বাস (রা)
হাদীস বর্ণনা করার সময় আমি তার কাছে ছিলাম। ইমাম বুখারী (র) আরও বলেন, সাঈদ ইবনে আবু
আরুবাহ (র) একমাত্র এ হাদিসটি নযর ইবনে আনাস (র) থেকে শুনেছেন। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ২০৮৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুহাম্মদ (র)...আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য প্রানীর ছবিযুক্ত একটি বালিশ
তৈরি করেছিলাম। যেন তা একটি ছোট গদী। এরপর তিনি আমার ঘরে এসে দু'দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন
এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার কি অপরাধ হয়েছে?
তিনি বললেন, এ বালিশটি কেন? আমি বললাম, এ বালিশটি আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন
আমি সে জন্য তৈরি করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে আয়িশা) (রা)
তুমি কি জান না? যে ঘরে প্রানীর ছবি থাকে, সেখানে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করেন না?
আর যে ব্যক্তি প্রানীর ছবি আঁকে তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে? তাকে (আল্লাহ্)
বলবেন, 'তুমি যে প্রানীর ছবি বানিয়েছ, এখন তাকে প্রাণ দান কর।'
(গ) ইবনে মুকাতিল (র)...আবূ তালহা (রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ঘরে
কুকুর থাকে আর প্রানীর ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করেন না।
(ঘ) ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান (র)...সালিম (রা) তাঁর
পিতার নিকট হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জিবরাঈল (আ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে (সাক্ষাতের) ওয়াদা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সময় মত আসেন নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কারন জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেন আমরা ঐ ঘরে প্রবেশ করি না, যে ঘরে ছবি
ও কুকুর থাকে।
(ঙ) আলী ইবনে আবদুল্লাহ (র)...আবু তালহা (রা)
সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'যে ঘরে কুকুর
এবং প্রানীর ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না।
(চ) হুমায়দী (র)...মুসলিম (র) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের সাথে ইয়াসার ইবনে নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের
ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে
শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের
দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়।
(ছ) আলী ইবনে আবদুল্লাহ (র)...আয়েশা (রা) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের) সফর
থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি আমার ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। তাতে ছিল
(প্রানীর) অনেকগুলো ছবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন,
তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে, যারা
আল্লাহ্র সৃষ্টির (প্রানীর) অনুরূপ তৈরি করবে। আয়েশা (রা) বলেন, এরপর আমরা তা দিয়ে
একটি বা দু'টি বসার আসন তৈরি করি।
কাজেই প্রানীর ছবি আঁকার ক্ষেত্রে হাদিসের
বর্ণনা অনুযায়ী সকল উলামা একমত যে, কোন প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। কিন্তু প্রাণহীন বস্তুর
(গাছপালা, প্রকৃতি, বস্তু ইত্যাদি) ছবি আঁকতে কোন দোষ নেই। আর ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী
এই অঙ্কন কাগজ , পাথর , কাপড় বা কমপিউটার যাতেই আঁকা হোক না কেন, কোনো পরিবর্তন হবে
না।
তবে যদি এমন কোন প্রয়োজন দেখা দেয় যেটায় এমন
উপকার হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনে যা তা না করলে হচ্ছে না ( যেমন শিক্ষার প্রয়োজনে ) তখন
তার অনুমতি আছে এবং অনেক সময় এটা অত্যন্ত জরুরি
। তবে এক্ষেত্রে ছবিটি মাথা ছাড়া ও এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন কারো গোপন অঙ্গ প্রকাশ
না পায় ।
অর্থাৎ শিক্ষার প্রয়োজন ব্যতীত প্রাণীর ছবি
কোন মতেই তৈরি করার অনুমতি নেই ।
ছবিযুক্ত পোশাক পরিধানের বিধানঃ
সাহাবায়ে কেরাম, প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের ইমাম
ও সব আলেমের ঐকমত্যে কোনো প্রাণীর ছবি প্রস্তুত করা হারাম। ভাস্কর্য, হস্তশিল্প, অঙ্কন,
ক্যামেরা বা আধুনিক যেকোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে কারো ছবি বানানো হারাম। হারাম বা নিষিদ্ধ
হওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোর বিধান অভিন্ন। (ইমদাদুল মুফতিয়িন : ৮২৫-৮২৬)।
আধুনিক যুগে কোনো কোনো দেশের কোনো কোনো আলেম
মনে করেন, ছবি ও ভাস্কর্য নিষিদ্ধ করার কারণ হলো, মূর্তিপূজা ও ব্যক্তিপূজার পথ রুদ্ধ
করা। তাই তাঁদের মতে, যেসব ছবি পূজা করা হয় না, অতিমাত্রায় শ্রদ্ধা করা হয় না, সেগুলো
বৈধ। এ ব্যাপারে রক্ষণশীল ও গ্রহণযোগ্য আলেমদের বক্তব্য ফুটে উঠেছে ইমাম নববীর লেখনীতে।
তিনি বলেন, আমাদের শাফেয়ি মাজহাব ও অন্য মাজহাবের আলেমরা বলে থাকেন, কোনো প্রাণীর ছবি
প্রস্তুত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ। কেননা এ ব্যাপারে হাদিসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করা হয়েছে। এই ছবি দিয়ে কাউকে সম্মান করা হোক বা অপমান, উভয় অবস্থায় তা হারাম।
কেননা এর ফলে আল্লাহর সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন হয়ে যায়। কাপড়, বিছানা, মুদ্রা,
বাসনকোসন, দরজা বা অন্য যেকোনো কিছুতে ছবি আঁকা হারাম। প্রাণীর ছবি ছাড়া অন্যান্য ছবি
হারাম নয়। যেমন—গাছপালা, উটের গদি (অশ্ব-জিন) ইত্যাদির ছবি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়।
(শরহে নববী : ১৪/৮১)।
ইসলামি শরিয়ত মতে, কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক
পরিধান করা হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন—বৃক্ষ, পাহাড়, ঝরনা ইত্যাদির ছবি বৈধ।
(আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৯, মেরকাতুল মাফাতিহ : ৪৪৮৯)।
অনেকে মনে করে, ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা
শুধু সালাতের ক্ষেত্রে হারাম! ফলে তারা সালাতের সময় এ ব্যাপারে খেয়াল রাখলেও অন্য সময়
উদাসীন থাকে। অথচ এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সর্বাবস্থায় ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা
হারাম। তবে হ্যাঁ, সালাতে এমন পোশাক পরিধান করা গর্হিত অপরাধ।
‘খোলাসা’ নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, কোনো ছবিযুক্ত
কাপড় দিয়ে সালাত আদায় করা হোক বা না হোক, উভয় অবস্থায় তা মাকরুহে তাহরিমি বা হারাম।
(আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৯)।
মূর্তি ও ভাস্কর্যের হুকুমঃ
ইসলামি শরী‘আতের দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি ও
ভাস্কর্য সম্পর্ণূরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ, জায়িয হওয়ার কোন সুরত নেই। হ্যাঁ রয়েছে শুধু
ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা। এজন্যই ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, পূজার মূর্তি দুই কারণে হারাম,
এক প্রাণীর প্রতিকৃতি হওয়ায়, দুই পূজা করায়। আর সাধারণ ভাস্কর্য হারাম হওয়ার কিছু কারণ
নিম্নে উল্লেখ করা হল:
ক. সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে কোন প্রাণীর ভাস্কর্য
তৈরি করা হারাম, এটা প্রাণীর প্রতিকৃতির কারণে নয়; বরং কোনো কোনো ভাস্কর্য নির্মাতা
তার নির্মিত ভাস্কর্যের ব্যাপারে এতই মুগ্ধতার শিকার হয়ে যায় যে, যেন ঐ পাথরেরমূর্তি
এখনই জীবন্ত হয়ে উঠবে! এখনই তার মুখে বাক্যের স্ফূরণ ঘটবে! বলাবাহুল্য এই মুগ্ধতা ও
আচ্ছন্নতা এই অলীক বোধের শিকার করে দেয়, যেন সে মাটি দিয়ে একটি জীবন্ত প্রাণী সৃষ্টি
করেছে। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যারা এসব প্রতিকৃতি
তথা ছবি প্রস্তুত করবে তাদেরকে কিয়ামতের দিন বলা হবে, তোমরা যা সৃষ্টি করেছ তাতে জীবন
দাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৫৯, ৩৭৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খ. আর যদি স্মরণ ও সম্মানের উদ্দেশ্যে বানানো
হয়, তাহলে এটা যেমন প্রাণীর ছবি হওয়ার কারণে হারাম, তেমনি এ কারণেও যে, এভাবে কোন ছবির
সম্মান দেখানো এক ধরণের ইবাদত বলেই গণ্য হবে। আর শয়তান এভাবেই ধীরে ধীরে মুসলমানদেরকে
শিরকে লিপ্ত করায় যেমনিভাবে শয়তান অতীত জাতিসমূহকে স্মারক ভাস্কর্য প্রস্তুত করার মাধ্যমে
শিরকে লিপ্ত করিয়ে ছিল। কেননা পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের মাঝে এধরণের স্মারক ভাস্কর্য
থেকেই পূজার মূর্তির সূচনা হয়ে শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। (মাআরিফুল কুরআন ৮/৫৬৬)।
গ. আর যেসব প্রাণহীন বস্তুর পূজা করা হয় সেগুলোর
ভাস্কর্য তৈরি করাও হারাম এটা পূজার কারণে , যদিও তা প্রাণীর ছবি নয়।
ঘ. আরো দেখা যায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ও প্রস্তুতকারীরা
সীমা রেখার পরোয়া করে না এবং নগ্ন ও অর্ধনগ্ন, নারী মূর্তি, মূর্তি পূজার বিভিন্ন চিত্র
ও নিদর্শন ইত্যাদি বানিয়ে নিজেরা যেমন গুনাহগার হয় তেমনি রাস্তার মোড়ে বা অলিতে গলিতে
স্থাপন করে অন্যদেরকেও গুনাহগার বানায়।
ঙ. তদুপরি এগুলি হচ্ছে অপচয় ও বিলাসিতার পরিচায়ক।
বিলাসী লোকেরা বিভিন্ন উপাদানে নির্মিত ছবিসমূহের মাধ্যমে তাদের কক্ষ অট্টালিকা ইত্যাদির
সৌন্দর্য বর্ধন করে থাকে। ইসলামের সাথে এই অপচয় ও বিলাসিতার কোন সম্পর্ক নেই।
এজন্যই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় বাইতুল্লাহ ও তার চারপাশ থেকে সব ধরণের মূর্তি অপসারণ
করে ছিলেন এবং সকল মূর্তি ও ভাস্কর্য বিলুপ্ত করে ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা.কে সব
ধরণের প্রতিকৃতি মিটিয়ে ফেলার আদেশ করে ছিলেন, তারপর বিভিন্ন স্থানে খোদিত ছবিগুলি
সাহাবায়ে কেরাম রা.পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ডলে ডলে সমান করার চেষ্টা করে ছিলেন, এরপর অবশিষ্ট
খোদিত চিত্র মাটির লেপ দিয়ে জাফরানের রং লাগানো হয়ে ছিল।
(বুখারী হা.২৪৭৮,৪২৮৭,৪৭২০,৪২৮৮, মুসলিম হা.১৭৮১,
আবু দাউদ হা.২০২০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা.হা.৩৮০৭৪, ইবনে হিব্বান হ.৫৮৬১,৫৮৫৭,
সিরাতে ইবনে হিশাম ৪/৬৫,তারীখুল ইসলাম যাহাবী ১/৩৯৭-৩৯৮,শরহুননববী ২/১৯৯, উমদাতুলকারী
১৫/১২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
টিভি ও ভিডিওর শরয়ী হুকুমঃ
টিভি ও ভিডিও রাখা, দেখা, দেখানো ও তাতে কোন
কিছু শোনা ও শোনানো না জায়িয। কারণ, বর্তমানে নব উদ্ভাবিত এই জিনিস দু’টির মাধ্যমে
হারাম কার্যকলাপ সয়লাবের মত ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন: বেহায়াপনা,অশ্লিলতা, নোংরামী, প্রাণীর
ছবি, বাজনা, খেল-তামাশা, নাচ-গান, বেগানা বেপর্দা মহিলাদের সাজগোজ করিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থা
ও ছতরহীন খেলোয়ারদেরকে দর্শন করা প্রভৃতি। (তকমিলাহ ৪/১৬৪,মুন্তাখাবে নিজামুল ফাতাওয়া
২/৩৬৩, আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২৮৯)।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান ভিডিও করা ও তা টিভির পর্দায় দেখা ও দেখানোর হুকুমঃ
পূর্বোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল যে,
প্রাণীর ছবি তোলা শরিয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। আর ভিডিও করার সময় ছবি তুলতে হয়
এবং তা পরবর্তীতে টিভির পর্দায় দেখার জন্য ফিল্মে সংরক্ষণ করে রাখতে হয় যা প্রকৃতপক্ষে
ছবিই, ছবির সকল উদ্দেশ্য এতে পূর্ণমাত্রায় পুরা হয়, তাই আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া পেয়ে
এটার পদ্ধতি যেমনই হোকনা কেন তা ছবি হিসাবেই বিবেচিত হবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর বাণী অনুযায়ী হারাম তথা নাজায়িয হবে, আর যে জিনিস হারাম কাজ ছাড়া সম্ভব
নয় বরং হারামের সাহায্য-সহযোগিতা নিতে হয় তাও হারাম, চাই সেটা দুনিয়ার কাজের জন্য ব্যবহৃত
হোক বা দ্বীনের কাজের জন্য ব্যবহৃত হোক, এ জন্যই তো আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও হারাম কাজের মাধ্যমে দ্বীনের সাহায্য-সহযোগিতা নিতে বলেন
নি। কারণ, হারাম কাজের মাধ্যমে দ্বীনের সাহায্য কখনও হতে পারে না, বরং তাতে দ্বীনের
ক্ষতিই হয় । এ জন্যই শরীয়তে যে জিনিস করতে হলে হারাম কাজের সাহায্য নিতে হয় সেই জিনিসকে
স্পষ্টভাবে হারাম হিসাবে আখ্যা দিয়েছে।
সুতরাং কোন বড় আলেমের ওয়াজ-মাহফিল কিংবা হামদ-নাত,
ইসলামী গজল কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হোকনা কেন জানদার প্রাণীর ছবি সহকারে তা ভিডিও করা
যেমন নাজায়িয তেমনি তার ভিডিও টিভিতে বা অন্য কোথাও দেখা বা দেখানোও নাজায়িয। (বুখারী
হা.৫৯৫০, উমদাতুল কারী ১৫/১২৪, শামী ৯/১৯, জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/৩৫০, হিদায়া ৪/৪৬৬,
আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩০২.আহাম মাসায়েল… ২/২৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রশ্নঃ ইসলামী প্রোগ্রামের ভিডিও দেখার হুকুম কি?
জবাব: কোনো দৃশ্য দেখার একটি মাধ্যমের নাম
ভিডিও। সুতরাং যে সকল দৃশ্য বাস্তবে দেখা নাজায়েয, সেগুলো ভিডিওতে দেখা নাজায়েয। আর
যে সকল দৃশ্য বাস্তবে দেখা জায়েয, সেগুলো ভিডিওতে দেখা জায়েয। হাদীস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ
রাঃ বলেছেন,
তিন শ্রেণীর লোক যাদের চোখ জাহান্নাম দেখবে
না। যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়েছে। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। যে চোখ আল্লাহর
নিষিদ্ধ স্থান থেকে বিরত থেকেছে। (তাবরানি: ১০০৩)।
অপর হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া,
দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, [পরনারীর সাথে সুড়সুড়িমূলক]
কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে
পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৬, বুখারী ৬২৪৩, মুসলিম ২৬৫৭, আবূ দাঊদ ২১৫২, আহমাদ ৭৭১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ভাল কাজ ভিডিও করা ও তা টিভি ইত্যাদিতে
দেখানো হারাম হওয়ার কিছু কারণঃ
১. প্রধান কারণ হলো তাতে ছবি তুলতে হয়, যা
সম্পূর্ণ হারাম।
২. ছবি দেখাও হারাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভিশপ্ত ব্যক্তি হওয়া।
৪. গুনাহের সবচেয়ে নিকৃষ্ট যন্ত্রসমূহের ব্যবহার
করা।
৫. ভালো কাজের নামে দ্বীনের বে-হুরমতী করা।
৬. রহমতের ফেরেশতা থেকে দূরবর্তী হওয়া।
৭. এ ধরণের যন্ত্র কিনে অনর্থক মাল নষ্ট করা।
৮. আল্লাহ তা‘আলার মহামূল্যবান নেয়ামত তথা
সময়কে অহেতুক কাজে ব্যয় করা যা মূল্যবান নেয়ামতের নাশুকরী ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৯. হামদ-নাত ইত্যাদি ভাল কাজ ভিডিও দেখার দ্বারা
ধীরে ধীরে খারাপ কাজের ভিডিও দেখার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।
১০. কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হওয়া ।
১১. ভাল কাজ ভিডিও করা ও তা টিভিতে দেখার দ্বারা
গুনাহের কাজসমূহ ভিডিও করা ও তা টিভিতে দেখার উপর দলীল হওয়া।
ছবি ও মূর্তির ক্ষতিকর দিক সমূহঃ
ইসলামে যত জিনিসকেই হারাম করা হয়েছে তা দ্বীনের
ক্ষেত্রে কিংবা চরিত্রের ক্ষেত্রে কিংবা সম্পদ অথবা অন্যান্য কোন ক্ষতিকর দিক বিবেচনা
করেই করা হয়েছে। আর সত্যিকারের মুসলিম সর্বদা আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুমের কাছে নিজেকে
অবনত করে, যদিও সে ঐ হুকুমের হাকিকত নাও জানতে পারে তথাপিও। মূর্তি ও ছবির অনেক ক্ষতিকর
দিক রয়েছে। ঐ গুলি হচ্ছে:
(১) আকীদা ও দ্বীনের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে,
ছবি মূর্তি বহু লোকেরই আকীদা নষ্ট করে ফেলেছে। কারণ, খৃষ্টানরা ইসা আ. মারইয়াম আ. এবং
ক্রুশের ছবির পূজা করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় তাদের নেতাদের মূর্তির পূজা করা হয়।
আর ঐ মূর্তিগুলির সামনে নিজেদের মস্তক সমূহকে
অবনত করে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে। তাদের সাথে পা মিলিয়ে চলছে কোন কোন মুসলিম ও আরব
দেশ। তারাও তাদের নেতাদের মূর্তি ও ভাস্কার্য স্থাপন করেছে। তারপর কোন কোন সূফি পীরদের
মধ্যে এর প্রবনতা দেখা দিয়েছে। তারা তাদের পীর মাশায়েখদের ছবি, সালাত আদায় করার সময়,
তাদের সম্মুখে স্থাপন করে এই নিয়তে যে, এতে তাদের মধ্যে খুশু বা আল্লাহর ভয় পয়দা হয়।
আর তাদের মাশায়েখরা যখন যিকর করতে থাকে তখন তাদের ছবি উত্তোলন করে। ফলে তাদের মরাকাবা
ও মুশাহাদা দেখাতে বিঘ্ন ঘটায়। কোন কোন স্থানে তাদের ছবিকে সম্মান দেখিয়ে লটকিয়ে রাখে
এই ধারনা করে যে এত বরকত হয়।
সেই রকম অনেক গায়ক গায়িকা ও শিল্পীদের ছবি
তাদের অনুসারীরা ভালবাসে। তারা ওদের ছবি সংগ্রহ করে সম্মান এবং পবিত্রতা দেখানোর জন্য
ঘরে অথবা অন্যত্র ঝুলিয়ে রাখে। এ সম্বন্ধে লেখক বলেছেন ঐ গায়কের ঘটনা যা ১৯৬৭ সালে
ইয়াহুদিদের সাথে যুদ্ধে ঘটেছিল। ফলে তাদের পরাজয় ঘটে। কারণ তাদের সাথে গায়করা ছিল,
আল্লাহ ছিলেন না। ফলে ঐ গায়ক গায়িকারা কোন উপকার করতে পারেনি। বরঞ্চ এদর কারণেই তাদের
পরাজয় ঘটেছিল। হায়! যদি আরবগণ এই ঘটনা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে সর্বান্তকরনে আল্লাহর দিকে
প্রত্যাবর্তন করত, তবে তারা আল্লাহর সাহায্য পেত।
(২) ছবি ও মূর্তি যে কিভাবে যুবক, যুবতিদের স্বভাব
চরিত্র নষ্ট করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তাঘাট বাড়িঘর পূর্ণ হয়ে আছে এই ধরণের
তথকাথিত শিল্পীদের ছবিতে যারা নগ্ন, অর্ধ নগ্ন অবস্থায় ছবি উঠিয়েছে। ফলে, যুবকরা তাদের
প্রতি আশেক হয়ে পড়েছে। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানা ধরনের ফাহেশা কাজে তারা লিপ্ত হয়ে
পড়েছে। তাদের চরিত্র ও অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে, তারা না দ্বীন সম্বন্ধে চিন্তা
করছে, আর না বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার চিন্তা ভাবনা করছে। না সম্মান, আর না জিহাদের
চিন্তা ভাবনা করে। আজকের যামানায় ছবির প্রচার খুবই বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিল্পীদের
ছবি। এমনকি জুতার বাক্স, পত্রিকা, পাক্ষিক, বই পুস্তক, টেলিভিশন ইত্যাদিতেও। বিশেষ
করে যৌন উত্তেজক সিনেমা, ধারাবাহিক নাটক এবং ডিটেকটিভ চলচিত্র সমূহে। অনেক ধরনের কার্টুন
ছবিতেও যাতে আল্লাহ পাকের সৃষ্টিকে বিকৃত করা হচ্ছে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা লম্বা নাক,
বড় কান কিংবা বিরাট বিরাট চোখ সৃষ্টি করেননি, যা তারা এই ছবি সমূহে অংকন করে থাকে।
বরঞ্চ আল্লাহ তাআলা মানুষকে অতি উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন।
(৩) ছবি ও মূর্তির ক্ষেত্রে যে ধন দৌলত নষ্ট হয়,
প্রকাশ্যভাবে তা সকলেরই গোচরীভূত হয়। এই জাতীয় ভাস্কর মূর্তি সমূহ সৃষ্টি করার জন্য
হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয় শয়তানের রাস্তায়। বহু লোক এই জাতীয় ঘোড়া, উট,
হাতি, মানুষের মূর্তি ইত্যাদি ক্রয় করে তাদের ঘরে নিয়ে কাচেঁর আলমারীতে সাজিয়ে রাখে।
আবার অনেকে তাদের মাতা পিতা বা পরিবারের লোকদের ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে। এই সমস্ত কাজে
যে ধন দৌলত তারা ব্যয় করে তা যদি গরীব মিসকীনদের মাঝে দান ছাদাকাহ করত, তবে মৃতের রুহ
তাতে শান্তি পেত। এর থেকেও লজ্জাকর ঘটনা হল, কেউ কেউ বাসর রাতে স্ত্রীর সাথে যে ছবি
তোলে তা ড্রইং রুমে ঝুলিয়ে রাখে অন্যদের দেখানোর জন্য। মনে হয় যেন তার স্ত্রী তার একার
নয়, বরঞ্চ তা সকলেরই।
পির-অলি ও মুরিদদের ভ্রান্ত আক্বিদাহঃ
ছবি ও মূর্তি নির্মানের পিছনে আমাদের দেশের
ভন্ড পির-অলিদের একটা যোগসাজস রয়েছে। এরা কখনো এসবের বিরুদ্ধে কথা বলে না। কারণ এরা
তাদের কবরকে মাজার বানিয়ে যেমন পূজা করে তেমনি তাদের পিরের ছবি অংকন করে বা ক্যামেরায়
ছবি তুলে তাদের দরবারে ঝুলিয়ে রাখে। যাতে মুরিদগণ সেই ছবি দেখে ইবাদতে তাকে স্মরণ করে
বিভিন্ন সাহায্য কামনা করতে পারে। আপনারা যদি কখনো দেওয়ানবাগ দরবারে যান তাহলে দেখতে
পাবেন, প্রবেশ করেই দরবারের নিচ তলায় যেখানে মসজিদ বানিয়ে সালাত আদায় করা হয় সেই মসজিদের
উত্তর পার্শ্বের দেয়ালে দেওয়ানবাগীর বিশালকৃতির একটি ছবি। এছাড়া তাদের দরবারে দেওয়ানবাগীর
ছবি সংবলিত লকেট কিনতে পাওয়া যায়। যে লকেট গলায় ধারণ করে লকেটটি সব সময় মুরিদেরা ক্বলবের
উপর রাখে ও ক্বলবের জিকির করে। এছাড়া দেওয়ানবাগীর স্ট্যাম্প বা পাসপোর্ট কিংবা বড় আকৃতির
ছবি লেমেনেটিং করে সব সময় পকেটে রাখে, ঘরে সাজিয়ে রাখে এবং তাদের স্থানীয় মসজিদের ভিতর
ঝুলিয়ে রেখে সালাত আদায় করে। এই ছবিকে তারা খুবই সম্মান করে এবং চুমু খায়।
ডাঃ বাবা জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরী যে চেয়ারে বসেন
সেই চেয়ারের উপর তথা পিরের মাথার উপর অনেক দেব দেবীর ছবি লটকানো দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া
আরো অনেক দরবার আছে যেখানে ছবি ও মূর্তির সংরক্ষণ আছে। তাদের এই শিরক ও কুফরী কাজগুলো
করা নাকি জায়েজ এজন্যে জাল-জইফ হাদিস সংগ্রহ করে তারা বই পর্যন্ত লিখেছে।
মুশরিক মুসলমানদের সূরা
সাবার ১৩ নং আয়াতের অপব্যাখার দাঁত ভাঙ্গা জবাবঃ
মুশরিক মুসলমানদের মূর্তি বা ভাষ্কর্য সম্পর্কে
সূরা সাবার ১৩ নং আয়াতের একটা শব্দকে ভুল অর্থ বা অপব্যাখ্যা করে হযরত সুলাইমান আলাইহিস
সালাম উনার প্রতি মূর্তি বানানোর অপবাদ দেয়া হয়েছে।
আসুন প্রকৃত সত্য ইতিহাস ও অর্থ জেনে নেই:
يَعْمَلُونَ لَهُ
مَا يَشَاءُ
مِن مَّحَارِيبَ
وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ
كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ
رَّاسِيَاتٍ ۚ
অর্থ: তারা (জ্বিনরা) হযরত সোলায়মান আলাইহিস
সালাম উনার ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, প্রতিকৃতি, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর
স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। (সূরা সাবা ১৩ নং আয়াত)
আরবী জ্ঞান না থাকার কারনে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে
তারা উক্ত আয়াতে তামাছিল শব্দের অর্থ করেছে মূর্তি। অথচ তামাছিল দ্বারা কখনই নির্দিষ্টভাবে মূর্তি বুঝায় না। এখানে تماثيل শব্দটি تمثال
শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে "এমন বস্তু যা অন্য কোন বস্তুর অনুরূপ আকৃতিতে তৈরি
করা হয়। (লিসানুল আরব ১১/৬৩১)৷
সূতরাং আমরা দেখতে পেলাম উক্ত আয়াত দ্বারা
যে তামাছিল বলা হয়েছে সেটা দ্বারা বোঝানো হয়েছে কোন কিছুর অনুরূপ আকৃতি বা প্রতিকৃতি।
প্রতিকৃতি দ্বারা তো আর কোন প্রানীর মূর্তি বা প্রতিকৃতি নির্দিষ্ট করে বুঝায় না। তাহলে
কি করে এটা বলা সম্ভব যে, হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম প্রানীর মূর্তি বা ভাষ্কর্য
বানাতে বলেছেন?
আসুন দেখা যাক, উক্ত আয়াতে তামাছিল দ্বারা
কি বোঝানো হয়েছে, সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখায় আল্লামা যমখশরী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি বলেন,
يجوز ان
يكون غير
صور الحيوان
كصور الاشجار
و غيرها
لان التماثيل
كل ماهو
علي مثل
صورة غيره
من حيوان
او غير
حيوان
অর্থ: হযরত সুলাইমাম আলাইহাস সালাম জিনদের
সাহায্যে যেসব আকৃতি তৈরি করাতেন তা কোন প্রানীর ছবি বা আকৃতি ছিলো না, বরং তা ছিলো
গাছপালা ইত্যাদির আকৃতি। কেননা আরবীতে تمثال
বলা হয় এমন বস্তুকে যা অন্য কোন আকৃতিতে বানানো হয়, চাই তা প্রানী হোক কিংবা অপ্রানী
হোক। (কাশশাফ )
প্রশ্ন হতে পারে, সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি
কি প্রানীর প্রতিকৃতি বানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন?
উত্তর, না। কারন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম
ছিলেন তাওরাত এর অনুসারী। সূতরাং উনার পক্ষে কখনোই মূর্তির ভাষ্কর্য বানানো সম্ভব
নয়। কারন তাওরাতে কোন প্রানীর মূর্তি, প্রতিকৃতি বানানো শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র
তাওরাতে বর্ণিত রয়েছে-
لءلا
تفسدوا
وتعملوا
انفسكم
تمثالا
منحوتا
صورة
مثال
ماشبه
ذكرا
اوانثي
شبه
بهيمة
ما
مما
غلي
الارض
. شبه
طيرما
ذي
جناح
مما
يطير
في
السماء
شبه
دبيب
ما
علي
الارض
شبه
سمك
ما
مما
في
السماء
من
تحت
الارض
অর্থ: এমন যেন না হয়, তোমরা বিকৃত হয়ে নিজেদের
খোদাই করা প্রতিমুর্তি বানিয়ে নিবে, যা কোন পুরুষ কিংবা নারী অথবা যমীনের কোন প্রাণী
বা উড্ডয়নকারী কোন পাখি বা যমীনে বিচরণশীল কোন চতুষ্পদ জন্তু অথবা যমীনের নিচে পানিতে
বিচরণশীল মাছের অনুরূপ হয়।” (কিতাবুল ইস্তিছনা, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৬-১৮)।
তাওরাতের অনুসারী হয়ে কি করে হযরত সুলাইমান
আলাইহিস সালাম প্রানীর প্রতিকৃতি তৈরী করতে নির্দেশ দিবেন?
সূতরাং কি করে বলা যায় সূরা সাবার ১৩ নম্বর
আয়াতে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম প্রানীর মূর্তি ভাষ্কর্য বানাতে বলেছেন? আশা করি
সহিহ বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবেন৷ মূলত মূর্তি পূজারী মুসলমানরাই এটার বিকৃত করে থাকে৷
রাসুল সাঃ বলেছেন, শেষ জামানায় এমন কতক মুসলমান হবে যারা নামাজ বন্দেগীও করবে আবার
মূর্তি পূজাও করবে৷ এরাই মূলত ঐ আয়াতের অনুরুপ অপব্যাখ্যা করে থাকে৷ এছাড়া ভন্ড পির
অলি ও বাউল শিল্পীগণ উক্ত আয়াতের অপব্যাখ্যা করে গান বাজনাসহ ছবি অংকন ও মূর্তি নির্মাণকে
জায়েজ বলে৷ তবে এটা প্রমানিত যে, ভন্ড পির অলিগণ লোক সংগ্রহ করতে প্রথমে এরা বাদ্যযন্ত্রসহ
গান বাজনা, ছবি বা মূর্তি নির্মান করে সব ধরনের অপকর্ম করে৷ এসব যেহেতু শয়তানী কর্মকান্ড
আর লোকজনও শয়তানের ধোকায় পড়ে সেই দিকে ধাবিত হয় বেশী৷
এজন্যেই আল্লাহতায়ালা বলেন,
"অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা
সত্ত্বেও মুশরিক “। (সুরা ইউসুফ-১০৬)।
এই অধিকাংশ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
"আপনি যদি অধিকাংশ লোকের কথা মানেন তারা
আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করে দেবে”। (সুরা আন-আম-১১৬)।
"কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমানদার হবে না”।
(সুরা হুদ-১৭)।
"আর তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ অনুমানের
উপর চলে”। (সুরা ইউনুস-৩৬)।
ছবি ও মূর্তি সংক্রান্ত সহিহ হাদিসসমূহঃ
হাদিসগুলো নেয়া হয়েছে ঊপদেশ নামক বই থেকে-
পরিচ্ছেদঃ
ছবি ও মূর্তি
(১১২)
আবু ত্বালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (বুখারী ২/৮৮০
পৃঃ; মিশকাত হা/৪৪৮৯; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৪২৯৮ ‘পোষাক’ অধ্যায়)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(১১৩)
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি ‘আল্লাহর নিকট ছবি মূর্তি অংকনকারীর সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে’ (বুখারী ৮৮০
পৃঃ, মিশকাত হা/৪৪৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১৪)
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি-মূর্তি তৈরি করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
তাদের বলা হবে তোমরা যেসব ছবি-মূর্তি তৈরি করেছ তাতে আত্মা দান কর’ (বুখারী হা/৫৯৫১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১৫)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি মাত্র একটি ছবি-মূর্তিও তৈরি করবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং
তাতে আত্মা দান করতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু তার পক্ষে কখনোই তা সম্ভব হবে না’ (বুখারী,
মিশকাত হা/৪৪৯৯, ‘পোষাক’ অধ্যায়)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১৬)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবিপূর্ণ
কোন কিছু তাঁর বাড়ীতে দেখলে তা ছিড়ে বা ভেঙ্গে ফেলতেন’ (বুখারী হা/৫৯৫২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(১১৭)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
সফর হতে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা তাকের উপর দিয়ে রেখেছিলাম। রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা দেখে ছিড়ে টুকরা করে দিলেন এবং বললেন, ‘যারা
ছবি-মূর্তি অংকন করে ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি হবে’ (বুখারী হা/৫৯৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১৮)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এক সফর থেকে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেটা সরিয়ে ফেলতে বললেন, আমি তা সরিয়ে দিলাম (বুখারী হা/৫৯৫৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১৯)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাঃ)-এর একটি চাদর ছিল যা দ্বারা তিনি
তাঁর ঘরের এক পার্শ্ব পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাঁকে বললেন, ‘আমার নিকট থেকে চাদর সরাও তার ছবিগুলি সর্বদা আমার সামনে আসছে’ (বুখারী
হা/৩৭৪, ৫৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২০)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাঃ) একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন,
তাতে ছবি আঁকা ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে প্রবেশের সময় তা দেখতে
পেলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ না করে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। আয়েশা (রাঃ) তাঁর মুখ দেখে বুঝতে
পেরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট তওবা করছি। আমি কি পাপ করেছি? (আপনি
ঘরে প্রবেশ করছেন না কেন?) । রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘এই ছোট
বালিশটি কোথায় পেলে’? তিনি বললেন, আমি এটা এজন্য ক্রয় করেছি যে, যাতে আপনি হেলান দিয়ে
বিশ্রাম করতে পারেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘নিশ্চয়ই যারা
এই সমস্ত ছবি তোলে বা অংকন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে,
তোমরা যাদের তৈরি করেছ তাদের জীবিত কর। তিনি বললেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত
ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (বুখারী হা/৫৯৬১)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়,
যে ঘরে ছবি থাকবে সে ঘরে প্রবেশ করা যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে ছবি-মূর্তি ধ্বংস
করার আদেশ দিয়েছিলেন (নূহ ২৩)। ইবরাহীম (আঃ) ছবি-মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করেছিলেন (আম্বিয়া
৫৮)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি-মূর্তি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দেয়ার
জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম, মিশকত হা/১৬৯৬; বাংলা মিশকাত ৪র্থ খণ্ড, হা/১৬০৫
‘জানাযা’ অধ্যায়)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২১)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার
কাছে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি আমার অঙ্গিনার সম্মুখভাগে একটি পাতলা কাপড় দ্বারা পর্দা
করেছিলাম, যাতে অনেক ছবি ছিল। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এতে পাখা বিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি ছিল।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন এটা দেখলেন, তখন সেটা ছিড়ে ফেললেন এবং
তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, ‘আয়েশা! ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন
শাস্তি দেয়া হবে ঐ লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য তৈরি করে’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
‘নিশ্চয়ই ছবির মালিকদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছ
তা জীবিত কর। যে বাড়িতে ছবি টাঙ্গানো থাকে সে বাড়িতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। আয়েশা
(রাঃ) বলেন, ‘আমি ঐ ছবিওয়ালা কাপড়টিকে কেটে একটি বা দু’টি বালিশ তৈরি করলাম। আমি তার
একটির উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে হেলান দিয়ে থাকতে দেখেছি’
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৮৯, ৪৪৯২, ৪৪৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২২)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে বললেন, আমি গত রাতে আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি ঘরে
প্রবেশ করিনি। কারণ গৃহদ্বারে অনেকগুলি ছবি ছিল এবং ঘরের দরজায় এক খানা পর্দা টাঙ্গানো
ছিল যাতে অনেকগুলি প্রাণীর ছবি ছিল। আর ঘরের অভ্যন্তরে ছিল একটি কুকুর। বস্তুত যে ঘরে
এ সমস্ত জিনিস থাকে, আমরা সে ঘরে প্রবেশ করি না। সুতরাং ঐ সমস্ত ছবিগুলির মাথা কেটে
ফেলার আদেশ দিন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে। তা কাটা হলে গাছের আকৃতি হয়ে যাবে এবং পর্দাটি
সম্পর্কে আদেশ দিন তাকে কেটে দু’টি গদি তৈরি করা হবে, যা বিছানা এবং পায়ের নিচে থাকবে।
আর কুকুরটি সম্পর্কে আদেশ দিন যেন তাকে ঘর থেকে বের করা হয়। সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাই করলেন’ (তিরমিযী হা/২৮০৬, মিশকাত হা/৪৫০২, সনদ ছহীহ)।
অত্র হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছবি
টাঙ্গানো যাবে না। কারণ এতে রহমতের ফেরেশতা আসে না। উল্লেখ্য যে, সব ধরনের ছবি হারাম।
শরীর বিশিষ্ট হোক বা শরীর ছাড়া হোক, ছায়া বিশিষ্ট হোক বা ছায়া ছাড়া হোক, সব প্রকার
ছবি নিষিদ্ধ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে
সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। এতে তিনি সব ছবিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। নির্দিষ্টভাবে
কোন প্রকার উল্লেখ করেননি। সেজন্য তিনি পর্দা ছিড়ে ফেলেছেন এবং ছবি সরানোর জন্য আদেশ
দিয়েছেন। এটা সুস্পষ্ট দলীল যে, ছবির আসল আকৃতি পরিবর্তন করে দিলে তা ব্যবহার করা বৈধ
হয়ে যায়। কারণ ছবির চিহ্ন পরিবর্তনের ফলে অন্য আকৃতি তৈরি হয়। তবে যে ছবিতে প্রকৃত
উপকারিতা আছে আমরা সে ছবি তৈরি করা জায়েয মনে করি। আর এ উপকারিতাসমূহ প্রতাখ্যান করা
সহজ নয়, যার পদ্ধতি মূলত বৈধ। যেমন চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় এবং ভূগোলবিদদের ও
শিকার সংগ্রহকারীদের প্রয়োজন হয়। এমনকি কোন কোন সময় তা ওয়াজিব হয়ে যায়। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(১২৩)
মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) মায়মুনা (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চিন্তিত অবস্থায়
ভোর করলেন এবং বললেন, জিব্রীল (আঃ) এই রাতে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন।
কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। আল্লাহর কসম! তিনি তো কখনো আমার সাথে কথা দিয়ে খেলাফ করেন না।
অতঃপর তাঁর মনে পড়ল ঐকুকুর ছানাটির কথা, যা তাঁর খাটের নিচে ছিল, তা বের করার নিদের্শ
দিলেন। এরপর তাকে বের করে দেওয়া হল। অতঃপর কুকুরটি যে জায়গায় বসা ছিল তিনি সেই জায়গায়
কিছু পানি নিজ হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন পরে যখন বিকাল হল জিব্রীল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ
করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, গত রাতে আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ
করার ওয়াদা করেছিলেন। তিনি বললেন হ্যাঁ, সাক্ষাতের ওয়াদা করেছিলাম কিন্তু আমরা এমন
ঘরে প্রবেশ করি না, যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে। পরের দিন সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত কুকুর মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিলেন। এমনকি ছোট ছোট বাগানের
হেফাযতে রক্ষিত কুকুরগুলিকে ছেড়ে দেন। অর্থাৎ এগুলিকে মারতে বলেননি’ (মুসলিম হা/২১০৫;
মিশকাত হা/৪৪৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২৪)
সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে
বর্ণিতঃ
আমি আমার পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় বিবাহ করলাম।
আমার পিতা লোকজনকে দাওয়াত দিলেন। দাওয়াত প্রাপ্তদের একজন আমার ঘরটি সবুজ রংয়ের বিভিন্ন
কাপড়, বিছানা ও বালিশ দ্বারা সাজিয়েছিলেন। আবু আইয়ুব এসে ঘরে ঢুকলেন এবং তিনি আমাকে
দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি অনুসন্ধান করে দেখলেন, সবুজ কাপড় দ্বারা বাড়ি-ঘর পর্দা
করা হয়েছে। তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তোমরা কি দেওয়ালে পর্দা লাগাও? আমার পিতা লজ্জিত
হয়ে বললেন, হে আবু আইয়ুব! মহিলারা এ কাজে আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। তখন আবু
আইয়ুব বললেন, যাদের উপর মহিলারা প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে মনে করতাম, আপনাকে তাদের
অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম না। এরপর তিনি বললেন, আমি তোমাদের খাদ্য খাব না। তোমাদের ঘরেও
প্রবেশ করব না। অতঃপর তিনি বের হয়ে গেলেন (ত্বাবারাণী, আদাবুয যিফাফ ২০১ পৃঃ)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২৫)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
ওমর (রাঃ) যখন সিরিয়াতে আসলেন, তাঁর জন্য এক
খ্রিস্টান লোক খাদ্য তৈরি করল। সে ওমর (রাঃ)-কে বলল, আমি পসন্দ করি আপনি আমার বাড়িতে
আসবেন এবং আপনি ও আপনার সাথীরা আমাকে সম্মানিত করবেন। এ লোক ছিল সিরিয়ার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের
একজন। ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, আমরা তোমাদের গীর্জায় ছবি থাকার কারণে প্রবেশ করি না
(বায়হাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৪ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২৬)
আবু মাসউদ উকবাহ ইবনু আমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
এক লোক তাঁর জন্য খাদ্য তৈরি করল। এরপর তাঁকে
দাওয়াত দিল। অতঃপর তিনি বললেন, ঘরে কি ছবি আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি ঘরে প্রবেশ করতে
অস্বীকার করলেন, শেষ পর্যন্ত ছবি ভেঙ্গে ফেলা হল। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন (বায়হাকী,
আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১২৭)
ইমাম আওযাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আমরা ঐ ওয়ালীমাতে যাই না, যাতে তবালা ও বাদ্যযন্ত্র
থাকে (আদাবুয যিফাফ, ১৬৫ পৃঃ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
উক্ত পুস্তক হতে শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,
(ক) প্রানীর
ছবি অংকন করা ও মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর হিসেবে কাজ করা হারাম। এতদ বিষয়ে অধ্যয়ন করাও
হারাম।
(খ) প্রানীর ছবি ঘরে থাকলে সালাত শুদ্ধ হয় না।
সেই ঘরে ফিরিস্তাগণ প্রবেশ করে না, আল্লাহর রহমত উঠে যায় এবং অভিশাপ বর্ষণ হতে থাকে।
অনেকে নিজের ছবি বা মৃত বাবা মার ছবি স্মৃতিস্বরুপ বাঁধাই করে দেয়ালে বা দৃশ্যমান স্থানে
রাখেন যা সম্পূর্ণ হারাম। কারো ঘরে থাকলে আজকেই ভেঙ্গে ফেলুন।
(গ) প্রানীর ছবি অংকনকারী ও মূর্তি নির্মাতা বা
ভাষ্করদের কিয়ামতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
(ঘ) ফটো
স্টুডিও এবং যারা ফটোশপ বা অনুরুপ সফটওয়ার দিয়ে কম্পিউটারে মানুষসহ বিভিন্ন প্রানীর
ছবি তোলেন ও ডিজাইন করেন তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাও হারাম।
আল্লাহ বলেন,
‘আর তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পরের সহযোগিতা
কর। পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না।’ (সূরা মাইদা : ২)।
(ঙ) প্রানীর ছবি ও মূর্তি বা ভাষ্করর্য প্রদর্শনীতে
যাওয়া হারাম।
প্রান প্রিয় মুত্তাকি মুসলমান ভাইয়েরাঃ
আমরা মাঝে মধ্যে শুনি আমাদের দেশে ইসলাম বিরোধী আইন নাকি পাশ করা হয় নাই। আসলে কি তাই?
উপরোক্ত আলোচনায় তা কি প্রমাণ করে? জাতীয় ও নারী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রথম দিকে হেফজতে
ইসলামকে সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে। আপনার
সন্তানকে আপনি কী শিক্ষা দিচ্ছেন? আপনি পারবেন না কারণ আমাদের শিক্ষাই বলে দিচ্ছে ইসলামের
বিরুদ্ধে চলো। তাই আধুনিকালের ছেলে মেয়েদেরকে দেখবেন, এরা সব সময় কানে হেড ফোন, ফেসবুক,
ইউটিউব আর ইমো নিয়ে ব্যস্ত।
আমরা উক্ত আলোচনায় জানতে পারলাম যে, কুরআন
ও সহিহ হাদিস অনুযায়ী ছবি অংকন ও মূর্তি নির্মাণ বা ভাষ্কর্য তৈরী সম্পূর্ণ হারাম।
যারা এসব করেছে, করছে এবং করবে এরা প্রত্যেকেই জাহান্নামি।
আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে ছবি-মূর্তি ধ্বংস
করার আদেশ দিয়েছিলেন (নূহ ২৩)। ইবরাহীম (আঃ) ছবি-মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করেছিলেন (আম্বিয়া
৫৮)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি-মূর্তি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দেয়ার
জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম, মিশকত হা/১৬৯৬; বাংলা মিশকাত ৪র্থ খণ্ড, হা/১৬০৫
‘জানাযা’ অধ্যায়)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
রাসুল সাঃ বলেন,
‘যারা ছবি-মূর্তি অংকন করে ক্বিয়ামতের দিন
তাদের কঠিন শাস্তি হবে’। (বুখারী হা/৫৯৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
অন্যান্য Related পর্ব দেখতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
(১) পিরতন্ত্র বা সুফিবাদ বনাম ইসলাম-(শয়তানের ওহী কার উপর নাযিল হয়?)।
(২) পির-অলিদের ভ্রান্ত আক্বিদাহসমূহ।
(৪) মুখে বলে মুসলমান কর্মকান্ডে সে কাফের।
(৫) যেসব আমলের কারণে মুসলমান মুশরেকে পরিনত হয়।
(৬) মুনাফিক মুসলমানদের মুনাফিকীকরণ ও তাদের রাজত্ব।
---------------------------------------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment