বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইসলামি জিজ্ঞাসা ও সহিহ জবাব
(পর্ব-৩)
প্রশ্নোত্তর
বিদআতীদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা যাবে কি?
(৯৮) প্রশ্ন : আমরা জানি
যে ইখতেলাফ ইমামদের মধ্যেও ছিলো। তারপরেও তারা একে অপরকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিতো। আমার
প্রশ্ন হলো, বর্তমানে যারা বিভিন্ন মাজহাব মেনে চলেন তারা তো কোনো না কোনো ইমামকেই
অনুসরণ করেন, তারা যা করেন, সেটা তো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে অনেক কিছুই বিদআত
…আর যতটুকু জানি হাদিসে বিদাতিদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে নিষেদ করা হয়েছে। তাহলে ইমামদের
মধ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব রাখা আর আমাদের সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিদাতিদের সাথে বন্ধুত্ব
না রাখা টা কেমন সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে না? বিষয় টা একটু বুঝিয়ে বললে উপকৃত হবো।
উত্তর
: শাখাগত বিভিন্ন মাসআলা বিষয়ে আমাদের পূর্বসূরী ইমামগণ মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছেন। (আকীদাগত
ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে মতবিরোধ ছিল খুবই সীমীত) তারপরও তাদের একে অপরের মাঝে বন্ধুত্ব
বজায় ছিল। এর কারণ ছিল তারা দলীলকে কেন্দ্র করে মতবিরোধ করেছেন। প্রত্যেকের উদ্দেশ্য
ছিল সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়া। এখানে তাদের ব্যক্তিগত কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।
তবে
যারা আকীগতভাবেই বিদআতী ছিল আমাদের পূর্বসূরীগণ তাদের সাথেও কথা বলেছেন, তাদের কাছে
গেছেন ও তাদের সাথে বির্তক করেছেন। এর কারণ ছিল, তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা বা তাদের
বাতিল আকীদাকে মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়া- যাতে অন্যরা সচেতন হয়। যেমন, আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. খারেজী সম্প্রদায়ের সাথে বির্তক করেছেন, ইবনে তাইমিয়া রাহ. বিভিন্ন
বিদআতী গোষ্ঠির সাথে বির্তকে লিপ্ত হয়েছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল যেন, তারা সঠিক পথে ফিরে
আসে বা অন্য মানুষ যেন তাদের মাধ্যমে প্রতিরিত না হয়।
বিদআতীদের
সাথে এ ধরণের সম্পর্ক বর্তমানেও অব্যহত রাখা যাবে। তবে সাধারণ মানুষ নয় বরং যারা দ্বীনের
বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন এবং বাতিলের সাথে মোকাবেলা করার যোগ্যতা রাখেন কেবল তারা। সাধারণ
মানুষ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার ফলে নিজেরাই গোমারাহীর দিকে ধাবিত হতে পারে।
কিন্তু
যদি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখায় কোন কল্যাণের আশা না থাকে তাহলে তাদের সাথে কথা বলা যাবে
না, তাদের সাথে উঠাবসা করা যাবে না। শরঈ স্বার্থ ছাড়া তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা হলে
এই আয়াতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا رَأَيْتَ
الَّذِينَ يَخُوضُونَ
فِي آيَاتِنَا
فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ
حَتَّىٰ يَخُوضُوا
فِي حَدِيثٍ
غَيْرِهِ ۚ
وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ
الشَّيْطَانُ فَلَا
تَقْعُدْ بَعْدَ
الذِّكْرَىٰ مَعَ
الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
*“যখন
আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহে ছিদ্রান্বেষণ করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে
যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয় তবে স্মরণ
হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।”* (সূরা আনআম: ৬৮)
হাসান
রহ. বলেন: لا تجالسوا
أهل الأهواء
ولا تجادلوهم
ولا تسمعوا
منهم. رواه
اللالكائي
“প্রবৃত্তির
অনুসারীদের সাথে উঠাবসা করো না, তাদের সাথে বির্তক করো না এবং তাদের কথা শুনিও না।”
(লালকাঈ)
*মোটকথা*,
যোগ্য আলেমগণ বিতআতী ও বাতিল আকীদপন্থী লোকদের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখতে পারেন
তাদেরকে সহীহ পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বা মানুষকে তাদের গোমরাহী মূলক আকীদা ও আমল সম্পর্কে
সচেতন করার উদ্দেশ্যে। তবে সাধারণ মানুষরা তাদের সাথে উঠাবসা করা, তাদের বক্তব্য শুনা
ও তাদের লিখিত বই-পুস্তক পড়া থেকে যথাসম্ভ দূরত্ব বজায় রাখবে যেন তারা বিদআতীদের বাতিল
আকীদা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
বিদআতি মাদরাসায় বাচ্চাদেরকে
‘কুরআন শিক্ষা’ বা ‘জেনারেল সাবজেক্ট’ পড়ানোর জন্য শিক্ষকতা বা অন্য কোনো চাকুরী করার
বিধান
(৯৯) প্রশ্ন: ক. কোনো
বিদআতি মাদরাসায় ছোট বাচ্চাদের কেবল কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য বা জেনারেল সাবজেক্ট
(যেমন: ম্যাথ, ইংলিশ, সাইন্স ইত্যাদি) পড়ানোর জন্য শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করা জায়েজ
হবে কি?
আমি
শুনেছি যে, বিদআতিদেরকে কোনো ধরণের সাহায্য ঠিক নয়। কিন্তু কেউ যদি উক্ত মাদরাসায় বিদআতি
কোন কিছু শিক্ষা না দিয়ে বা বিদআতের সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে শিশুদেরকে কেবল কুরআন শিক্ষা
দেয় বা শিক্ষার্থীদেরকে জেনারেল বিষয়গুলো পড়ায় তাহলে তা কি জায়েজ হবে?
খ.
জীবন-জীবিকার তাগিদে একান্ত নিরুপায় অবস্থায় কি বিদআতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা
জায়েজ হবে?
উত্তর:
◉
ক. বিদআতের ভয়াবহতা ও বিদআতি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার বিধান:
এ
কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, ইসলামের পবিত্র গায়ে বিদআত হল মানব দেহে ক্যান্সারের চেয়েও
ভয়ানক। কেননা বিদআত খুব সঙ্গোপনে ইসলাম ধ্বংসের কাজ করে এবং ইসলামের আসল চেহারা বিকৃত
করে দেয়। চুরি, ডাকাতি, জিনা, মদ্যপান, সুদ, ঘুস ইত্যাদি বড় বড় পাপের চেয়েও বিদআত ভয়ানক।
এই
জন্য শয়তানের নিকট একজন সাধারণ গুনাহগার ব্যক্তির চেয়ে বিদআতি অধিক প্রিয়। যেমনটি বলেছেন
ইমাম সুফিয়ান সাওরী রাহ.
إن البدعة
أحب إلى
إبليس من
المعصية لأن
البدعة لا
يُتاب منها
والمعصية يُتاب
منها
“ইবলিসের
নিকট পাপাচার থেকে বিদআত অধিক প্রিয়। কেননা, বিদআত থেকে তওবা করা হয় না কিন্তু পাপাচার
থেকে তওবা করা হয়।” [আত তুহফাতুল ইরাকিয়া ফিল আমালিল কালবিয়া, পৃষ্ঠা নং ১২]
সত্যিই
যারা পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্ম করে তারা নিজেরা সাধারণত: পাপ ও অন্যায় জেনেই করে। যার
কারণে হয়ত তারা জীবনের এক পর্যায়ে তওবা করে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যারা বিদআত করে
তারা তা দ্বীনের অংশ মনে করে করে। ফলে তারা অত্যন্ত খুশি মনে দীনী জজবা সহকারে করে।
এরা সাধারণত: বিদআত পরিত্যাগ করতে চায় না। (আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া)।
[আল্লাহ
আমাদেরকে বিদআত থেকে হেফাজত করুন। আমীন]
মোটকথা,
দ্বীনের মধ্যে বিদআত মারাত্মক অন্যায় ও কবিরা গুনাহ। কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত
সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। তাই কোন ইমানদারের জন্য বিদআতে অংশ গ্রহণ করা, তাতে সমর্থন
দেয়া বা কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى
الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
وَلَا تَعَاوَنُوا
عَلَى الْإِثْمِ
وَالْعُدْوَانِ
“আর
তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে
অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ৫)
অত:এব
ইসলামের দাবী অনুযায়ী, বিদআতিদেরকে তাদের বিদআতি কার্যক্রম পরিচালনায় কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা
করার সুযোগ নাই।
যাহোক,
এ অবস্থায় যে সকল তথাকথিত মাদরাসা বা দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদেরকে বিদআত
শিক্ষা দেয় বা বিদআতের প্রচার-প্রসারে লিপ্ত তাদেরকে কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা
বৈধ নয়। সেখানে শিক্ষকতা বা অন্য কোন দায়িত্ব পালন কোনটাই করা যাবে না।
আরেকটি
বিষয় হল, কেউ যখন বিদআতি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করবে তখন ইচ্ছায় হোক-অনিচ্ছায় হোক তাকে
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা বিদআতি আয়োজনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।
মোটকথা,
এ ধরণের বিদআতি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা বৈধ নয়-চাই ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষকতা করা হোক,
জেনারেল বিষয়ে শিক্ষকতা করা হোক বা মাদরাসার অন্য কোন দায়িত্ব পালন হোক। কেননা এতে
প্রকারান্তরে উক্ত মাদরাসাকে বিদআত চর্চায় সহায়তা করা হয়।
◉◉
খ. একান্ত নিরুপায় অবস্থায় কি বিদআতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা বৈধ?
উত্তর:
একান্ত
নিরুপায় অবস্থায় (জীবন ধারণের বিকল্প পন্থা না থাকলে) এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা
বৈধ যদি সরাসরি বিদআতি বিষয় শিক্ষা প্রদান বা বিদআত চর্চায় অংশ গ্রহণ না করে। যেমন:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَدْ فَصَّلَ
لَكُم مَّا
حَرَّمَ عَلَيْكُمْ
إِلَّا مَا
اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ
“আর
তিনি তোমাদের জন্য হারাম কৃত বিষয়গুলোও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তবে যা তোমরা একান্ত
বাধ্য হয়ে গ্রহণ করো তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আনআম: ১১৯)
কিন্তু
এ অবস্থায় বিকল্প হালাল চাকুরী অনুসন্ধান করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট হালাল কর্মসংস্থানের
জন্য দুআ করা কর্তব্য। অন্য কোথাও হালাল কর্মসংস্থান হয়ে গেলে অনতিবিলম্বে এই চাকুরী
পরিত্যাগ করবে। কেউ যদি আল্লাহর ভয়ে হারাম থেকে বের হতে চায় তাআলা তাকে বিকল্প পথ বের
করে দেন এবং হালাল পথে চলা তার জন্য সহজ করে দেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
اللَّـهَ يَجْعَل
لَّهُ مَخْرَجًا
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে (উত্তরণের) পথ করে দেবেন।” (সূরা তালাক: ২) তিনি
আরও বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
اللَّـهَ يَجْعَل
لَّهُ مِنْ
أَمْرِهِ يُسْرًا
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।” (সূরা তালাক: ৪)
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে বিদআতের মত ভয়াবহ গুনাহ থেকে রক্ষা করুন এবং বিদআতিদেরকে সহিহ সুন্নাহর
পথ দেখান। আমীন।
সুস্থ ও সুঠাম দেহের
অধিকারী ভিক্ষুককে দান করার বিধান এবং ইসলামের দৃষ্টিতে ভিক্ষাবৃত্তির ভয়াবহতা
(১০০) প্রশ্ন: আমরা জানি,
ইসলামে অভাবীকে সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং যে চায় তাকে ধমক দিতে নিষেধ করা
হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু মানুষ ভিক্ষা চাইতে আসে যারা সম্পূর্ণ সুস্থ এবং
সুঠাম দেহের অধিকারী। তাদের জিজ্ঞাসা করলে নানা অজুহাত দেখায়। এমন কি তাদের যদি কাজ
দিয়ে দিতে চাই তাও তারা করবে না। উল্টা এমন কথা বললে খারাপ কথা বলে। বলে, ছোটলোক! গরিব
মানুষের পেটে লাথি মারে ইত্যাদি। এমন অবস্থায় কী করা উচিৎ?
উত্তর:
কেউ
যদি আপনার নিকট অভাব-অনটনের কথা বলে সাহায্য/ভিক্ষা চায় আর তাকে সত্যিই অভাবী মনে হয়
তাহলে তাকে যথাসম্ভব দান করার চেষ্টা করবেন। চাই সাধারণ দান-সদকা হোক অথবা যাকাত হোক।
আর
যদি জানতে পারেন যে, সে অভাবী নয় বা সে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাহলে তার
নিকট অপারগতা প্রকাশ করবেন এবং তাকে ভিক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এ
ক্ষেত্রে যদি সুন্দর পন্থায় ভালো কথার মাধ্যমে তাকে নসিহত করা সম্ভব হয় তাহলে নি:সন্দেহে
তা করা উচিৎ। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত নিরুপায় অবস্থা ছাড়া ভিক্ষা করা হারাম।
হাদিসে আখিরাতে সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভিক্ষাবৃত্তির করুণ পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম
ইবনুল কাইয়েম রা. বলেন:
المسألة في
الأصل حرام،
وإنما أبيحت
للحاجة والضرورة
“প্রকৃতপক্ষে
ভিক্ষা করা হারাম। তবে কেবল প্রয়োজন ও একান্ত জরুরি ক্ষেত্রে তার বৈধতা দেয়া হয়েছে।”
সুতরাং
এ ধরণের কথিত ভিক্ষুকের নিকট সুন্দর ভাষায় ভিক্ষাবৃত্তি সংক্রান্ত ইসলামের নির্দেশনা
পৌঁছানো এবং এ বিষয়ে তাকে নসিহত করা কর্তব্য।
◉
একান্ত নিরুপায় অবস্থা ছাড়া ভিক্ষাবৃত্তি করা হারাম:
নিম্নে
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
১. হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আবু
বিশর কাবিসা ইবনে মুখারেক রা. থেকে বর্ণিত, একবার এক অর্থদণ্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে
থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সদকার মাল আসা পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার
আদেশ করব।’’
অতঃপর
তিনি বললেন, ‘‘হে কাবিসা! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়:
১. যে ব্যক্তি অন্য লোকদের অর্থদণ্ড পরিশোধের দায়িত্ব
নিবে (কারো দিয়াত তথা রক্তপণ কিংবা জরিমানা দেওয়ার জামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল।
অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে।
২. দুর্যোগ কবলিত হয়ে যার অর্থ-সম্পদ ধ্বংস হয়ে
যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না আসে।
৩. যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন
জ্ঞানী বা সৎ লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর
এ ছাড়া হে কাবিসা, অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া
হবে।’’
(মুসলিম
১০৪৪, নাসায়ী ২৫৭৯, ২৫৯১, আবু দাউদ ১৬৪০, আহমদ ১৫৪৮৬, ২০০৭৮, দারেমী ১৬৭৮)
২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
مَنْ سَأَلَ
النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ
تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا
يَسْأَلُ جَمْرًا
فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ
لِيَسْتَكْثِرْ
“যে
ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট অর্থ চায় সে মূলত: (জাহান্নামের) জলন্ত
আঙ্গার চায়। অতএব সে কম-বেশি যা ইচ্ছা যাক।” [মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ মানুষের
কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েয।]
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন:
لأَنْ
يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ
حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ
بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ
عَلَى ظَهْرِهِ
فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ
اللَّهُ بِهَا
وَجْهَهُ، خَيْرٌ
لَهُ مِنْ
أَنْ يَسْأَلَ
النَّاسَ أَعْطَوْهُ
أَوْ مَنَعُوهُ
“তোমাদের
মধ্যে কেউ যদি রশি নিয়ে (বন-জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে) পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি
করার ফলে আল্লাহ তাকে (ভিক্ষাবৃত্তির অপমান থেকে) রক্ষা করেন তাহলে তা মানুষের নিকট
তার হাতপাতার চেয়ে উত্তম। তারা দিতেও পারে নাও পারে।” [সহিহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়:
হাদিস ৫৫০]
৪. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَا يَزَالُ
الرَّجُلُ يَسْأَلُ
النَّاسَ حَتّى
يَأْتِيَ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ لَيْسَ
فِي وَجْهِه
مُزْعَةُ لَحْمٍ
“যে
ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন
তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না।” [সহীহ বুখারী ১৪৭৪ ও মুসলিম ১০৪০]
৫. আবু কাবশা আল আনমারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ
ثَلَاثَةٌ أُقْسِمُ
عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ
حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ
قَالَ مَا
نَقَصَ مَالُ
عَبْدٍ مِنْ
صَدَقَةٍ وَلَا
ظُلِمَ عَبْدٌ
مَظْلَمَةً فَصَبَرَ
عَلَيْهَا إِلَّا
زَادَهُ اللَّهُ
عِزًّا وَلَا
فَتَحَ عَبْدٌ
بَابَ مَسْأَلَةٍ
إِلَّا فَتَحَ
اللَّهُ عَلَيْهِ
بَابَ فَقْرٍ
أَوْ كَلِمَةً
نَحْوَهَا
“তিনটি
বিষয়ের উপর আমি শপথ করছি এবং তোমাদের কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করছি, তোমরা তা মুখস্ত
করে রাখ। তিনি বলেনঃ উক্ত তিনটি বিষয় হল
১. দান করলে বান্দার সম্পদ কমে না।
২. কারো উপর জুলুম করা হলে সে যদি ধৈর্য ধারণ করে
তবে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
৩. যখন কোন বান্দা ভিক্ষার দ্বার খুলে দেয় (ভিক্ষাবৃত্তি
শুরু করে) তখন আল্লাহ তার জন্য অভাবের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন।” (অথবা তিনি এ জাতীয়
একটা কথা বলেছেন)।
[সহিহ
তারগিব ওয়াত তাহরিব অধ্যায়: ইখলাস (একনিষ্ঠতা), পরিচ্ছেদ: ইখলাস, সত্যবাদিতা ও সৎ নিয়তের
প্রতি উদ্বুদ্ধ করণ, হা/১৬]
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে কেবল তিনি ব্যতীত তাঁর সকল সৃষ্টি জগত থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন এবং
এমন অভাব-অনটন থেকে হেফাজত করুন যাতে মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। নিশ্চয়
তিনি অভাব মুক্ত ও অতীব প্রশংসিত।
(১০১) ‘সাদা মোরগ’ এর
ফযিলতে বর্ণিত জাল ও জঈফ হাদিস:
সত্য জানুন এবং ধোঁকা
থেকে বাঁচুনঃ
ফেসবুকের
কিছু পেইজ, বিভিন্ন পোর্টাল, ওয়েব সাইট এবং ইউটিউবে সাদা মোরগের ফযিলতে কতিপয় হাদিস
চোখে পড়ল। দুর্ভাগ্য বশত: একদল জাহেল সেগুলো প্রচার করছে আর আরেকদল জাহেল সত্য মিথ্যা
যাচায়-বাছায় না করে সুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আমীন ইত্যাদি কমেন্ট করে যাচ্ছে!
দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা এ সব হাদিস কতটুকু সঠিক বা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত সে
বিষয়ে কোনো জ্ঞানই রাখে না বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনও অনুভব করে না। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে জাল ও বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করা মারাত্মক ভয়াবহ। কেউ জেনেবুঝে
এমনটি করলে তার পরিণতি জাহান্নাম। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন)
তাই
এ সম্পর্কে বিভ্রান্তি নিরসন এবং জাহেলদের মুখোশ উন্মোচনেরে লক্ষ্যে এখানে মোরগের ফযিলত
সংক্রান্ত মোটামুটি প্রসিদ্ধ কতিপয় জাল-জঈফ হাদিস নিয়ে আলোচনা করা হল:
▣
মোরগের হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কাইয়েম রহ. এর মূল্যবান বক্তব্য:
ইমাম
ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন:
كل أحاديث
الديك كذب
إلا حديثاً
واحداً : إذا
سمعتم صياح
الديكة ؛
فاسألوا الله
من فضله
؛ فإنها
رأت ملكاً”
“একটি
হাদিস ছাড়া মোরগ সংক্রান্ত সকল হাদিস মিথ্যা । সে হাদিসটি হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِذَا سَمِعْتُمْ
صِيَاحَ الدِّيَكَةِ
فَاسْأَلُوا اللَّهَ
مِنْ فَضْلِهِ
فَإِنَّهَا رَأَتْ
مَلَكًا
“তোমরা
যখন মোরগে ডাক শুনো তখন আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কারণ সে ফেরেশতা দেখে।”
(উৎস: المنارالمنيف في
الصحيح و
الضعيف আল মানারুল মুনিফ, হা/৭৯- মূলত: এ
হাদিসটি সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে )
তবে
তিনি মোরগ সংক্রান্ত আরেকটি হাদিসকে সহিহ বলেছেন তার যাদুল মাআদ গ্রন্থে। তা হল:
لا تسبُّوا
الدِّيكَ فإنَّهُ
يوقِظُ للصَّلاةِ
“তোমরা
মোরগকে গালি দিও না। কারণ সে সালাতের জন্য ঘুম থেকে জাগায়।” (উৎস: যাদুল মাআদ: ২/৪৩১।
শাইখ আলবানী রহ.ও উক্ত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন: দ্রষ্টব্য: সহিহ তারগিব: ২৭৯৭ )
ইমাম
ইবনুল কাইয়েম রহঃ এর উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে বলা যায়, মাত্র দুটি হাদিস ছাড়া মোরগ
বিষয়ে কোনও সহিহ হাদিস নাই। যা আছে সব বানোয়াট ও দুর্বল।
▣
নিম্নে সাদা মোরগ সংক্রান্ত ৫টি বানোয়াট ও দুর্বল হাদিস তুলে ধরা হল (হাদিস বিশেষজ্ঞ
সম্মানিত মুহাদ্দিসদের বক্তব্য সহ):
◉
হাদিস-১ (বানোয়াট):
اتَّخذوا الدِّيكَ
الأبيضَ فإنَّه
صديقي و
عدوُّ عدوِّ
اللهِ، وكلُّ
دارٍ فيها
ديكٌ أبيضُ
لايقربُها الشَّيطانُ
و لا
ساحرٌ
“তোমরা
সাদা মোরগ পালন করো। কারণ সে আমার বন্ধু, আমিও তার বন্ধু। তার যে শত্রু সে আমারও তার
শত্রু। যেই বাড়িতে সাদা মোরগ থাকবে শয়তান এবং জাদুকর সেই বাড়ির কাছেও যেতে পারব
না।”
(মউযু
বা বানোয়াট হাদিস। সূত্র: শাইখ আলবানীর সিলসিলা যঈফা, হা/১৬৯৫)
◉
হাদিস-২ (বানোয়াট):
لا تسُبُّوا
الديكَ فإنه
صديقي وأنا
صديقُه وعدوُّه
عدوِّي والذي
بعثني بالحقِّ
لو يعلمُ
بنو آدمَ
ما في
صوتِه لاشتروا
ريشَه ولحمَه
بالذهبِ والفضةِ
وإنه ليطردُ
مدى صوتِه
من الجنِّ
“তোমরা
সাদা মোরগকে র্ভৎসনা করো না। কারণ সে আমার বন্ধু, আমিও তার বন্ধু। তার যে শত্রু সে
আমারও তার শত্রু। সে স্বত্বার কসম, যিনি আমাকে সত্য (দ্বীন) সহকারে পাঠিয়েছেন, আদম
সন্তানরা যদি জানত যে, তার আওয়াজে কী আছে তাহলে তার পাখা ও গোশত স্বর্ণ-রৌপ্য দিয়ে
হলেও ক্রয় করত। তার আওয়াজ যতদূর পৌছায়, তত দূর পর্যন্ত তা জিনকে তাড়িয়ে দেয়।”
মউযু
বা বানোয়াট হাদিস: আল মানারুল মুনীফ-ইবনুল জাউযী (৪৭), মউযুআতে ইবনুল জাউযী ৩/১৩৪,
আল ফাওয়ায়িদুল মাজমূআহ-শাওকানী (১৭১)
◉
হাদিস-৩ (বানোয়াট):
اتخذوا الديكَ
الأبيضَ فإن
دارًا فيها
ديكٌ أبيضُ
لا يقربُها
شيطانٌ ولا
ساحرٌ ولا
الدوَيْراتُ حولَها
“তোমরা
সাদা মোরগ পালন করো। কেননা যে বাড়িতে সাদা মোরগ থাকে শয়তান ও জাদুকর তার পাশে যেতে
রে না- এমনকি চারপাশের বাড়ি-ঘরেও।”
[এটি
মাউযু বা বানোয়াট হাদিস। সূত্র: সূয়ূতী কর্তৃক বানোয়াট হাদিস সংকলন: আল লাআলী আল মাসনূআহ
ফিল আহাদিসিল মাউযুআহ ২/১৪২, মাউযু-শাইখ আলবানীর যঈফুল জামে হা/৯১]
◉
হাদিস-৪ (বানোয়াট):
الديكُ الأبيضُ
الأفْرَقُ حبيبي
، وحبيبُ
حبيبي جبريلَ
، يحرُسُ
بيتَهُ وستَّةَ
عشَرَ بيتًا
مِنْ جيرانِهِ
، أربعةٌ
عنِ اليمينِ
، وأربعةٌ
عنِ الشمالِ
، وأربعةٌ
مِنْ قُدَّامٍ
، و
أربعَةٌ مِنْ
خَلْفٍ
“ঝুঁটিওয়ালা
সাদা মোরগ আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধু জিবরাঈলেরও বন্ধু। এটি (ঝুঁটিওয়ালা সাদা মোরগ)
নিজের বাড়ি হেফাজত করার পাশাপাশি তার প্রতিবেশীর ষোলটি ঘর হেফাজত করে। চারটি ডানদিক
থেকে, চারটি বামদিক থেকে, চারটি সামনে থেকে এবং চারটি পেছন থেকে।”
[এটি
মউযু বা বানোয়াট হাদিস: উৎস: মউযূআতে ইবনুল জাউযী, ৩/১৩৮, আল ফাওয়াইদুল মাজমুআহ-শাওকানী
১৭২, সিলসিলা যঈফাহ-আলবানী ৩০২৪]
◉
হাদিস-৫ (দুর্বল):
الدِّيكُ يؤذِّنُ
بالصَّلاةِ ،
مَن اتَّخذَ
ديكًا أبيضَ
حُفِظَ مِن
ثلاثةٍ : مِن
شرِّ كلِّ
شيطانٍ ،
وساحرٍ ،
وكاهنٍ
“মোরগ
নামাযের জন্য আযান দেয়। যে ব্যক্তি সাদা মোরগ রাখে তাকে তিনটি জিনিস থেকে হিফাজত করা
হয়: শয়তানের অনিষ্ট থেকে, জাদুকরের অনিষ্ট থেকে এবং জ্যোতিষীর অনিষ্ট থেকে।”
এটি
যঈফ বা দুর্বল হাদিস। সূত্র: যঈফুল জামে-আলবানী (৩০৩০) মূল হাদিসটি সুনানুল বাইহাকীর
শুআবুল ঈমানে বর্ণিত হয়েছে। হাদিস নং ৪৮১৪)
এ
বিষয়ে আরও কিছু হাদিস নেট জগতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু এখানে কেবল প্রসিদ্ধ কয়েকটি
তুলা ধরা হল। মনে রাখতে হবে যে, পূর্বোল্লিখিত দুটি হাদিস ছাড়া মোরগের ফযিলতে কোন হাদিস
বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়-যেমনটি ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহ. উল্লেখ করেছেন।
পরিশেষে
বলব, কোন ঈমানদারের জন্য জেনে-বুঝে কোন হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের পূর্বে তা প্রচার
করা হারাম। তবে যদি মানুষকে সতর্ক করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে হাদিসের মান বর্ণনা পূবর্ক
তা আলোচনা করায় দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম জাতিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যাচার থেকে
হেফাজত করুন। আমীন।
সুন্দর, সু স্বাস্থ্যবান,
মেধাবী ও সুসন্তান লাভের উদ্দেশ্যে গর্ভাবস্থায় কুরআনের বিশেষ বিশেষ সূরা পড়ার আমল
(১০২) প্রশ্ন: একজন গর্ভবতী
মা প্রথম ছয় মাসে শারীরিক দুর্বলতার জন্য কুরআন তিলাওয়াত খুব বেশি করতে পারেন নাই।
এখন তার অষ্টম মাস চলছে আর কুরআনের ১৪তম পারা পড়ছেন। বিভিন্ন ইসলামি গ্রুপে গর্ভাবস্থায়
সূরা ইউসুফ, সূরা ইবরাহীম ও সূরা মুহাম্মদ পড়ার কথা দেখা যায়।
এখন তিনি কি কুরআন খতম
দেয়ার চেষ্টা করবেন নাকি এই সুরাগুলো বেশি বেশি বেশি পড়বেন?
অনেকের বলে, সূরা মারইয়াম,
ওয়াকিয়া, দুআ ইউনুস পাঠ করলে প্রসব বেদনা কম হয়। এগুলো কি সবসময় পড়বে না প্রসব বেদনা
উঠলে কেউ পাঠ করে শুনাবে?
উত্তর:
গর্ভবতী
নারী গর্ভাবস্থায় যথাসম্ভব কুরআন তিলাওয়াত করবে, কারীদের তিলাওয়াত শুনবে, নফল সালাত,
দুআ-তাসবীহ, ইস্তিগফার পাঠ ইত্যাদি নেকির কাজ যথাসাধ্য করার চেষ্টা করবে এবং গান-বাজনা
শ্রবণ, অশালীন বাক্য উচ্চারণ, গিবত, সমালোচনা, পর্দাহীনতা, অশ্লীলতা, সালাত পরিত্যাগ
ইত্যাদি সব ধরণের হারাম কার্যক্রম থেকে দূরে থাকবে। তাহলে আশা করা যায় এগুলো গর্ভস্থ
সন্তানের উপর প্রভাব ফেলবে এবং কুরআনের বরকতে সুসন্তান লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু
কুরআন-সুন্নায় গর্ভাবস্থায় বিশেষ কোন সূরা পড়ার নির্দেশনা আসে নি। গর্ভ ধারণের অমুক
মাসে অমুক অমুক সুরা পড়লে সন্তান এমন হবে..তেমন হবে…এ জাতীয় কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
ও অজ্ঞতা প্রসূত বিদআতি কথা। যেমন বলা হয়:
–
গর্ভাবস্থায় এততম মাসে অমুক সূরা পড়লে সন্তান সুন্দর হবে,
–
অমুক সূরা পড়লে মেধাবী হবে,
–
অমুক সূরা পড়লে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে,
–
অমুক সূরা তিলাওয়াত করলে বা শুনলে প্রসব বেদনা কম হবে ..এগুলো সব মনগড়া ও বানোয়াট কথাবার্তা।
আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহির নির্দেশনা ব্যতিরেকে এমন কথা বলার কেউ অধিকার রাখে না।
মনে
রাখতে হবে, সন্তান কেমন হবে তা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এখানে বান্দার
কোনো হাত নেই বা জানার কোন সুযোগ নাই। আল্লাহ তাআলা বলেন:
هُوَ الَّذِي
يُصَوِّرُكُمْ فِي
الْأَرْحَامِ كَيْفَ
يَشَاءُ
“তিনিই
সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকার-আকৃতি গঠন করেন মাতৃগর্ভে, যেভাবে তাঁর ইচ্ছা।” (সূরা
আলে ইমরান: ৬)
ইমাম
কুরতুবী রহ. বলেন:
”
من حُسْن
وقُبْح ،
وسواد وبَيَاض
، وطُول
وقِصَر ،
وسَلامة وعاهة
، إلى
غير ذلك
”
অর্থাৎ
সুন্দর-কুৎসিত, কালো-ফর্সা, লম্বা-বেঁটে, সুস্থ-প্রতিবন্ধী ইত্যাদি। (এগুলো মহান আল্লাহ
তাঁর ইচ্ছামত সৃষ্টি করেন) [আল জামে লি আহকামিল কুরআন ১/৯২৭]
সুতরাং
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে বা ইউটিউবে বিশুদ্ধ দ্বীন বিষয়ে জাহেল লোকদের দলিল বহির্ভূত
বা জাল-জঈফ কথাবার্তা পড়ে বা বক্তৃতা শুনে সেগুলো আমল করার সুযোগ নাই। কারণ এগুলো সব
বিদআতি কথা। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি (ভ্রষ্টতা)।
আল্লাহ
আমাদেরকে সব ধরণের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
(১০৩) প্রশ্ন: সন্তানের
নাম রাখার অগ্রাধিকার কার সবচেয়ে বেশি?
উত্তর:
সন্তানের
অভিভাবক তথা যার উপর সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বহন করা আবশ্যক সেই তার নাম রাখা
সহ সব কিছুর ক্ষেত্রে বেশি হকদার।
অত:এব
মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী সহ অন্যান্য সকল মানুষের মধ্যে সন্তানের নাম নির্ধারণের
ক্ষেত্রে বাবার অধিকার সবচেয়ে বেশি। কারণ এক দিকে তার উপর স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণের
দায়িত্ব এবং সেই পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি অন্যদিকে ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান তার
বাবার দিকেই সম্বন্ধিত হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ
هُوَ أَقْسَطُ
عِندَ اللَّـهِ
ۚ
“তোমরা
তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।” (সূরা আহযাব: ৫) সুতরাং
তার অধিকারই সবচেয়ে বেশি।
অবশ্য
স্বামী যদি তার স্ত্রীর মতামত নিয়ে সন্তানের নাম নির্ধারণ করে তাহলে নি:সন্দে তা তার
স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা এবং উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সেই সাথে তিনি যদি সন্তানের
দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, নানা-নানী বা কোনও আলেম বা মুরব্বির উপর নামা রাখার দায়িত্ব
অর্পণ করে বা তাদের দেয়া নাম পছন্দ করে তাহলেও কোনও আপত্তি নাই।
কুরআন তিলাওয়াত ও তেলাওয়াতে
সেজদা সম্পর্কিত কতিপয় প্রশ্নের উত্তর
(১০৪) প্রশ্ন:
ক.
মুসহাফ (গ্রন্থ) থেকে কুরআন মাজীদ পড়লে যে নেকি হয় কুরআনের অ্যাপস থেকে পড়লে একই
নেকি হবে?
খ.
কুরআন তিলাওয়াতের সেজদার দোয়া মুখস্থ না থাকলে সাধারণ সেজদার দুআ ‘সুবহানা রব্বিয়াল
আ’লা’ পড়লে কি যথেষ্ট হবে?
গ.
তেলাওয়াতের সেজদার জন্য কি ওজু করা জরুরি?
ঘ.
সেজদা দিতে ভুলে গেলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
◉◉
ক. মুসহাফ (গ্রন্থ) থেকে কোরআন মাজীদ পড়লে যে নেকি হয় কুরআনের অ্যাপস থেকে পড়লে
একই নেকি হবে?
উত্তর:
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, কুরআন তিলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে একটি করে নেকি হয়-যা দশটি
নেকির সমপরিমাণ। সুতরাং আল্লাহ যদি কবুল করেন তাহলে কুরআনে কারীম তেলাওয়াতের উক্ত সওয়াব
পাওয়া যাবে- চাই মুসহাফ (গ্রন্থ) দেখে পড়া হোক বা মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ
বা অন্য কিছু দেখে পড়া হোক। এমনকি মুখস্থ পড়লেও সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
◉◉
খ. কুরআন তিলাওয়াতের সেজদার দোয়া মুখস্থ না থাকলে সাধারণ সেজদার দুআ ‘সুবহানা রব্বিয়াল
আ’লা’ পড়লে কি যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
সেজদার
আয়াত তেলাওয়াত করলে সেজদা দেয়ার পদ্ধতি হল, ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সেজদায় যাওয়া এবং সেজদার
দুআ ও তাসবীহ সমূহের মধ্য থেকে যে কোনও এক বা একাধিক দুআ পাঠ করা। অত:পর তেলাওয়াতে
সেজদার বিখ্যাত দুআটি পাঠ করা।
আয়েশা
রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা
তেলাওয়াতের সেজদাতে এই দু‘আ পাঠ করতেন:
سَجَدَ
وَجْهِيَ لِلَّذِي
خَلَقَهُ وَشَقَّ
سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ
بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ
উচ্চারণ:
সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সাম’আহু ওয়া বাসারাহু বিহাওলিহী ওয়া
কুওয়াতিহ।
অর্থ:
“আমার চেহারা সেই মহান সত্তার জন্য সিজদা করলো যিনি নিজ শক্তি ও সামর্থ্যে একে সৃষ্টি
করেছেন এবং এতে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন।” (সহীহ। সহীহ আবু দাউদ/১২৭৩)
নিম্নোক্ত
দুটিও পড়া হাদিস সম্মত:
اللَّهُمَّ اكْتُبْ
لِي بِهَا
عِنْدَكَ أَجْرًا
وَضَعْ عَنِّي
بِهَا وِزْرًا
وَاجْعَلْهَا لِي
عِنْدَكَ ذُخْرًا
وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي
كَمَا تَقَبَّلْتَهَا
مِنْ عَبْدِكَ
دَاوُدَ
‘‘হে
আল্লাহ! এর মাধ্যমে আপনার নিকট আমার জন্য সওয়াব লিখে নিন। এর মাধ্যমে আমার পাপ দূরীভূত
করুন, এটিকে আমার সঞ্চয় বলে গ্রহণ করুন এবং আমার থেকে এটিকে এভাবে কবুল করুন যেভাবে
আপনি আপনার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম) থেকে কবুল করেছিলেন।’’
(হাদিসটি
বর্ণিত হয়েছে ইবনে আব্বার রা. হতে। সুনান তিরমিযী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ৬/ সফর (أَبْوَابُ السَّفَرِ)
পরিচ্ছদ: সিজদা-এ কুরআনের দু’আ। এ হাদিসটিকে কোন কোন মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন। তবে ইবনে
খুযাইমা, হাকিম ও ইবনে হিব্বান প্রমুখ সহীহ বলেছেন এবং আলবানী হাসান বলেছেন।)
তারপর
আল্লাহু আকবার বলে সেজদা থেকে উঠে পুনরায় সালাতের জন্য উঠে দাঁড়ানো।
তবে
কারো যদি উক্ত দুআটি মুখস্থ না থাকে তাহলে সেজদার দুআ সমূহ থেকে যে কোনও একটি দুআ পড়াই
যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ। কিন্তু পরবর্তীতে সুন্নত পালনার্থে সেজদার দুআ মুখস্থ করার চেষ্টা
করা কর্তব্য।
◉◉
গ. তেলাওয়াতের সেজদার জন্য কি ওজু করা জরুরি?
উত্তর:
না, এর জন্য ওজু করা জরুরি নয়।
◉◉
ঘ. সেজদা দিতে ভুলে গেলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
তেলাওয়াতের সেজদা অধিক বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী সুন্নত; ওয়াজিব নয়। সুতরাং কেউ যদি ভুল
বশত: সেজদা না দেয় তাহলে গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো সেজদা না
দেয়া হলেও গুনাহ হবে না তবে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ না করাই ভালো।
আল্লাহু
আলাম।
(১০৫) প্রশ্ন: জাতির
পিতা কে? ইবরাহিম (আ.) না কি আদম (আ.)?
উত্তর:
নিম্নে
আদম আলাইহিস সালাম ও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রসঙ্গে কুরআন-হাদিস ও সম্মানিত মুফাসসিরগণের
বক্তব্য তুলে ধরা হল:
১) আদম আলাইহিস সালাম:
আদম
(আলাইহিস সালাম) প্রথম মানুষ এবং সমগ্র মানব জাতির আদি পিতা। মহান আল্লাহ তাঁকে নিজ
হাতে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করার পর তাঁর বাম পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী প্রথম মানবী মা হাওয়া
(আলাইহাস সালাম) কে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের দু জনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য
মানুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا
النَّاسُ اتَّقُوا
رَبَّكُمُ الَّذِي
خَلَقَكُم مِّن
نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ
وَخَلَقَ مِنْهَا
زَوْجَهَا وَبَثَّ
مِنْهُمَا رِجَالًا
كَثِيرًا وَنِسَاءً
“হে
মানব মণ্ডলী, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে
সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের
দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। ” (সূরা নিসা: ১)
এখানে
‘একজন মানুষ’ দ্বারা উদ্দেশ্য, আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম আর ‘তাঁর সঙ্গিনী’ দ্বারা
উদ্দেশ্য মা হাওয়া (আলাইহাস সালাম।
◍
এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখযোগ্য:
কিয়ামত
দিবসে যখন সূর্য নিকটবর্তী হবে এবং মানুষ অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হবে তখন বিচার-ফয়সালার
জন্য সর্ব প্রথম প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর নিকট ছুটে গিয়ে এভাবে আবেদন
পেশ করবে:
يَا آدَمُ
أَنْتَ أَبُو
الْبَشَرِ خَلَقَكَ
اللَّهُ بِيَدِهِ
وَنَفَخَ فِيكَ
مِنْ رُوحِهِ
وَأَمَرَ الْمَلاَئِكَةَ
فَسَجَدُوا لَكَ
اشْفَعْ لَنَا
إِلَى رَبِّكَ
أَلاَ تَرَى
إِلَى مَا
نَحْنُ فِيهِ
أَلاَ تَرَى
إِلَى مَا
قَدْ بَلَغَنَا
হে
আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রুহ
ফুঁকে দিয়েছেন।
আপনাকে
সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁরা আপনাকে সিজদাও করেছে।
অত:এব
আপনি রবের নিকট গিয়ে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি?
আপনি
দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?…। (সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ ৩৭৬ অধ্যায়ঃ
১/ কিতাবুল ঈমান (كتاب الإيمان)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২) ইবরাহীম আলাহিস সালাম:
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
مِّلَّةَ أَبِيكُمْ
إِبْرَاهِيمَ ۚ
“তোমরা
তোমাদের পিতা ইবরাহীমের আদর্শকে (মজবুত ভাবে ধারণ করো)।” (সূরা আল হজ্জ: ৭৮)
আল্লাহ
তাআলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কে “তোমাদের পিতা” হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এর অর্থ কি?
হ্যাঁ,
তিনি আরবদের বংশগত পিতৃপুরুষ ছিলেন। অর্থাৎ আরবদের বংশ পরম্পরা ইবরাহীম আলাইহি সালাম
পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পিতৃব্যেরে
আসনে আসীন। অর্থাৎ তিনি যদিও বংশ পরম্পরায় সকল মুসলিমের পিতা নন কিন্তু সম্মানের দিক
দিয়ে সকলের নিকট পিতৃতুল্য।
◍
তাফসিরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে:
وإبراهيم هو
أبو العرب
قاطبة . وقيل
: الخطاب لجميع
المسلمين ،
وإن لم
يكن الكل
من ولده
؛ لأن
حرمة إبراهيم
على المسلمين
كحرمة الوالد
على الولد
.
ইবরাহীম
আলাইহিস সালাম সমগ্র আরব জাতীর পিতা।
আর
কোন কোনো মুফাসসির বলেন: “সকল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করেই তাঁকে ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করা
হয়েছে যদিও সকল মুসলিম তার সন্তান নয়। এর কারণ হল, মুসলিমদের নিকট ইবরাহীম আলাইহিস
সালাম এর মর্যাদা পুত্রের নিকট পিতার মর্যাদা সমতুল্য।” (তাফসীরে কুরতুবী)
◍
তাফসীরে বাগাভীতে বলা হয়েছে:
فإن قيل
: فما وجه
قوله : ( ملة أبيكم ) وليس
كل المسلمين
يرجع نسبهم
إلى إبراهيم؟
.
قيل : خاطب
به العرب
وهم كانوا
من نسل
إبراهيم . وقيل
: خاطب به
جميع المسلمين
، وإبراهيم
أب لهم
، على
معنى وجوب
احترامه وحفظ
حقه كما
يجب احترام
الأب ،
وهو كقوله
تعالى : ( وأزواجه أمهاتهم ) ( الأحزاب : 6 ) [ ص: 404 ] ،
وقال النبي
صلى الله
عليه وسلم
: ” إنما أنا
لكم مثل
الوالد [ لوالده
] ”
যদি
প্রশ্ন করা হয় যে, এই আয়াতে “তোমাদের পিতা” বলার কারণ কি অথচ সকল মুসলিমের বংশ পরম্পরা
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌঁছে না?
এর
উত্তরে বলা হয়েছে, “তোমাদের পিতা” এ বাক্যটি দ্বারা আল্লাহ তাআলা আরবদেরকে উদ্দেশ্য
করেছেন । কারণ তারাই ছিল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর বংশধর।
অথবা
এ কথা দ্বারা সকল মুসলিমই উদ্দেশ্য। তিনি মুসলিম জাতির পিতা এই অর্থে যে, তার প্রতি
সম্মান প্রদর্শন করা এবং তার হক সংরক্ষণ করা অপরিহার্য যেভাবে পিতার সম্মান রক্ষা করা
অপরিহার্য।
উক্ত
আয়াতটি আল্লাহর এই বাণীর মত: وأزواجه أمهاتهم
“আর তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ তাদের (মুসলিমদের) মা।”
(সূরা আহযাব, ৬ নং আয়াত)।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إنَّما أنا
لكم مِثْلُ
الوالدِ
“আমি
তো তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য।” (মুসনাদে আহমদ, বাযযার, সহিহ ইবনে হিব্বান প্রমুখ। সনদ
সহিহ) (তাফসিরে বাগাভী)
পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ যদি
ছাত্রীদের চেহারা খুলতে বাধ্য করে
(১০৬) প্রশ্ন: আমাদের
দেশের ভার্সিটির এক্সামগুলোতে স্যারেরা মেয়েদেরকে নিকাব খুলতে এক রকম বাধ্য করে। কেউ
না খুলতে চাইলে তাকে অপমানও করে। এডমিট কার্ডের ফটোর সাথে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলানোর
অজুহাতে তারা এমনটি করে থাকে।এমন অবস্থায় পরিপূর্ণ পর্দানশীন কোন মেয়ে কি তা করতে পারে?
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তার কী করা উচিত? মুখ খোলা? নাকি না খুলে থাকা যদি স্যার পরীক্ষা
না দিতে দেয় তবুও?
উত্তর:
বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ যদি মুসলিম পর্দানশীন মেয়েদেরকে একান্তই নিকাব খুলতে বাধ্য করে এবং প্রতিবাদ
করার মত সামর্থ না থাকে তাহলে নিরুপায় হয়ে তা খোলা জায়েয আছে ইনশাআল্লাহ। তবে এডমিট
কার্ডের ফটোর সাথে চেহারা মিলানোর পর পূণরায় তা ঢেকে ফেলার চেষ্টা করবে। অনুরূপভাবে
পরীক্ষা চলাকালীন সময় চেহারা খোলা রাখা যদি আবশ্যক হয় তাহলে যতটুকু না হলেই নয় ততটুকু
খোলা রাখবে আর বাকিটুকু ঢেকে রাখবে।
তবে
অন্তরে এ কাজটির প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ হবে না। কারণ, এখানে
তাকে বাধ্য করা হচ্ছে এবং এই নিয়ম লঙ্ঘন করতেও সে অপারগ।
◉
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاتَّقُوا اللَّهَ
مَا اسْتَطَعْتُمْ
“অতএব,
তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)
◉
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
বাণী :
إِنَّ اللَّهَ
تَجَاوَزَ عَنْ
أُمَّتِي الْخَطَأَ
وَالنِّسْيَانَ وَمَا
اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
“নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের অজ্ঞতাজনিত ভুল, স্মৃতিভ্রমজনিত ভুল ও জোরজবরদস্তির শিকার
হয়ে কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে মাজাহ্ (২০৪৩)।শাইখ
আলবানী হাদিসটিকে সহীহ ইবনে মাজাহ’ তে সহীহ হিসেবে চিহ্নিত
করেছেন]
অর্থাৎ
এই সব ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা কাউকে পাপ বা গুনাহ দিবেন না এবং ইসলামী শরীয়াতে তার
কাজ পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
সুতরাং
যদি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করলে তার এত দিনের কষ্ট ও পরিশ্রম বৃথা যাওয়ার এবং এটা
তার জীবনের ক্ষতির আশঙ্কা করে তাহলে একান্ত বাধ্য হয়ে এমনটি করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ
গুনাহ লিখবেন না।
অবশ্য
কারো নিকট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করাটা যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয় তাহলে এই পরিস্থিতিতে সে
বিরত থাকবে।
পরীক্ষা
কর্তৃপক্ষের জন্য তো অপরিহার্য ছিল, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পুরুষদের থেকে আলাদা পরীক্ষা
হল নির্ধারণ করা এবং মহিলা দ্বারা এডমিট কার্ডের সাথে চেহারা মিলানোর বিষয়টি সম্পন্ন
করা। এ নিয়ম করলে এই ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না।
প্রকৃতপক্ষে
একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একজন পর্দানশীল মুসলিম নারীকে বাধ্য করে পর্দাহীন করার অধিকার
তাদের নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমাদেরকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে অনিচ্ছা
সত্বেও এই অন্যায়ের শিকার হতে হচ্ছে!
দুআ
করি, আল্লাহ তাআলা যেন এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করেন।
আমীন।
(১০৭) প্রশ্ন : শুক্রবারে
কি সূরা কাহাফ পুরাটা পড়তে হবে নাকি প্রথম ১০ আয়াত পড়লেই হবে ?
উত্তর:
শুক্রবারে
সূরা কাহাফ পড়ার যে ফযীলত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা পেতে হলে পুরোটা পড়তে হবে। অন্যথায়
সে ফযিলত পাওয়া যাবে না।
এক
বৈঠকে পড়তে না পারলেও সমস্যা নাই বরং বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু করে জুমার পূরো
দিনের মধ্যে যেকোনো সময় এক বা একাধিক বৈঠকে তা পড়তে পারলেও উক্ত ফযিলত পাওয়া যাবে
ইনশাআল্লাহ।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَن قَرَأَ
سورةَ الكَهفِ
يومَ الجُمُعةِ
أضاءَ له
من النورِ
ما بَينَ
الجُمُعتينِ
“যে
ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে তার জন্য এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত আলো বিচ্ছুরিত
হবে। ”
(
মুসতাদারেক হাকিম: ২/৩৯৯, বায়হাকী: ৩/২৪৯, ফয়জুল ক্বাদীর: ৬/১৯৮)
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ
سُورَةَ الْكَهْفِ
فِي يَوْمِ
الْجُمُعَةِ سَطَعَ
لَهُ نُورٌ
مِنْ تَحْتِ
قَدَمِهِ إلَى
عَنَانِ السَّمَاءِ
يُضَيءُ لَهُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ
وَغُفِرَ لَهُ
مَا بَيْنَ
الْجُمُعَتَيْنِ
“যে
ব্যক্তি শুক্রবার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর হয়ে
যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমা থেকে এ জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ
হয়ে যাবে।” (আত তারগীব ওয়া তারহীব: ১/২৯৮)
তবে
দশ আয়াত পড়ার বা মুখস্ত করার আলাদা ফযীলত রয়েছে। যেমন:
আবুদ
দারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ حَفِظَ
عَشْرَ آيَاتٍ
مِنْ أَوَّلِ
سُورَةِ الْكَهْف
عُصِمَ مِنَ
الدَّجَّالِ
‘‘যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দজ্জালের (ফিতনা)
থেকে পরিত্রাণ পাবে।’’ (সহীহ মুসলিম ১/৫৫৫, হা/৮০৯, ২৫৭)
অন্য
বর্ণনায় «مِنْ آخِرِ
الْكَهْفِ» “সূরা কাহাফ এর শেষ দিক থেকে” উল্লেখ
হয়েছে। (মুসলিম ৮০৯)
(১০৮) প্রশ্ন: যুহুদ
কি? যুহুদ বলতে কি তালি লাগানো পোশাক পরা, সারা বছর রোযা থাকা, সংসার-সমাজ সংশ্রব থেকে
দুরে থাকা না কি অন্য কিছু?
উত্তর:
আল
হামদুলিল্লাহ-সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
তালি
লাগানো পোশাক পরা, লোক-সমাজ থেকে দুরে থাকা, সারা বছর রোযা থাকা ইত্যাদিকে যুহুদ বলা
হয় না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ যুহুদ অবলম্বনকারী ছিলেন।
কিন্তু তিনি নতুন পোশাক পরতেন, বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাতের সময়, জুমার দিন
ও ঈদের দিন সাজ-সজ্জা করতেন, মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন, মানুষকে ভালো কাজের দিকে
আহ্বান করতেন, তাদেরকে দ্বীনের জ্ঞান দান করতেন, তার সঙ্গী-সাথীদেরকে বিরতী হীনভাবে
সারা বছর রোযা রাখতে নিষেধ করতেন।
যুহুদ
হল, হারাম থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা, বিলাসিতা পরিহার করা, অতিরিক্ত দুনিয়া সম্ভোগ থেকে
দুরে থাকা, আল্লাহর আনুগত্যের কাজে অগ্রগামী থাকা এবং আখিরাতের জন্য সর্বোত্তম পাথেয়
সংগ্রহ করা।
যুহুদের
সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্ম জীবন।
মৃত
ব্যক্তির পরিত্যাক্ত সম্পদ বণ্টণ ও ওসিয়ত বাস্তবায়ন: অপরিহর্যতা ও পদ্ধতি
২৪
নভেম্বর, ২০১৯ by Asad Rony
প্রশ্ন:
স্ত্রীর মোহরানার টাকা, স্বর্ণ ইত্যাদি যদি তার কাছে গচ্ছিত থাকা অবস্থায় তার ইন্তেকাল
হয় তবে সেগুলো কি স্ত্রীর নামে দান করে দিতে হবে নাকি তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে
হবে?
উত্তর:
স্ত্রীর
মৃত্যুর পরে তার পরিত্যক্ত সকল সম্পদ-যেমন: স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি
ইত্যাদি স্থাবর-অস্থাবর যা কিছু আছে সব কুরআনের বিধান অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের
মাঝে বণ্টন করে দেওয়া জরুরি।
হাদিসে
এসেছে:
عن أَبي
أُمَامَةَ رضي
الله عنه
قال : سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ : إِنَّ
اللَّهَ قَدْ
أَعْطَى كُلَّ
ذِي حَقٍّ
حَقَّهُ-الحديث
صححه الألباني
في ” صحيح
أبي داود”
আবু
উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক প্রাপকের প্রাপ্য অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।” (শাইখ
আলবানী সহিহ আবু দাউদে উক্ত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
সুতরাং
ওয়ারশিদেরকে তাদের প্রাপ্য যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত
করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ-সম্পদ দান করা বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।
(১০৯) প্রশ্ন: স্ত্রী যদি জীবিত থাকা অবস্থায় নিজের মোহরানার টাকা, স্বর্ণ
ইত্যাদি সদকায়ে জারিয়া হিসেবে দান করার জন্য ওসিয়ত করে যায় তবে কি তা জায়েজ হবে?
উত্তর:
এ
ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক তার পরিত্যক্ত সম্পদ (মোহরানা বা ব্যক্তিগত টাকা-স্বর্ণালঙ্কার
ইত্যাদি) এর সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ সদকা করা জায়েজ; এর বেশি নয়। ওসিয়ত অনুযায়ী তার সব
টাকা বা স্বর্ণালঙ্কার দান করা করা জায়েজ হবে না। কেননা এতে জীবিত ওয়ারিশগণ তাদের প্রাপ্য
অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
➤ সর্বোচ্চ
এক তৃতীয়াংশ সদকা করা জায়েজ হওয়ার পক্ষে নিম্নাক্ত হাদিসটি প্রযোজ্য:
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা.কে এক তৃতীয়াংশের
বেশি ওসিয়ত করার অনুমতি দেন নি। বরং এর কম পরিমাণকে উৎসাহিত করেছেন। যেমন:
সা’দ
বিন আবী ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। পথিমধ্যে আমি প্রচণ্ড রোগে আক্রান্ত হলাম। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সেবা-শুশ্রূষা করতে এলে আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল,
আমার অনেক সম্পত্তি। কিন্তু আমার ওয়ারিশ হওয়ার মত কেউ নাই একজন মাত্র মেয়ে ছাড়া। আমি
আমার সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ ওসিয়ত করব?
তিনি
বললেন: না।
আমি
বললাম: অর্ধেক?
তিনি
বললেন: না।
আমি
বললাম: তবে তিন ভাগের একভাগ?
তিনি
বললেন: “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি। সাদ, তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে
দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বেড়াবে এর চেয়ে
তাদেরকে সম্পদশালী করে রেখে যাওয়াই উত্তম।“ (বুখারী ও মুসলিম)
➤ এক তৃতীয়াংশের
চেয়ে কম ওসিয়ত করা উত্তম। কেননা, ইবনে আব্বাস রা. বলেন:
لَوْ غَضَّ
النَّاسُ إِلَى
الرُّبْعِ ،
لأَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ – صلى
الله عليه
وسلم – قَالَ
« الثُّلُثُ ،
وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ
أَوْ كَبِيرٌ
»
“মানুষ
যদি (সম্পত্তি ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে) এক তৃতীয়াংশ থেকে এক চতুর্থাংশে নেমে আসত তবে উত্তম
হত। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের
একভাগই তো বেশি। (বুখারী ও মুসলিম)
মোটকথা,
কোন ব্যক্তি যদি এক তৃতীয়াংশের বেশি ওসীয়ত করে মৃত্যু বরণ করে তবে তার ওয়ারিশগণের জন্য
সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ ওসিয়ত করা বৈধ; এর বেশি নয়। আল্লাহু আলাম।
জিনা থেকে বাঁচার পাশাপাশি
আমাদের সম্পর্ককে পবিত্র করার জন্য পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করতে চাই
(১১০) প্রশ্ন: আমার এক
মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে। আমরা উভয় উভয়কে খুব ভালোবাসি। আমার দুজনেই ইসলামের
সব বিধিনিষেধ মেনে চলি বা চলার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ভুলবশত আমরা এই
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। আর এখান থেকে বেরিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব। এটা আমাদের দুজনের
পক্ষে কখনোই সম্ভব না। আমার এর থেকে বের হতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নাই।
এখন আমার বিয়ে করতে চাই।
কারণ আমার দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু পরিবার ক্যারিয়ার গড়ার আগে এখনই আমাদের বিয়ে
দিবে না। এখন আমারা জিনা থেকে বাঁচার জন্য এবং আমাদের সম্পর্ককে পবিত্র করার জন্য পরিবারকে
না জানিয়ে বিয়ে করতে চাই।
প্রশ্ন হল, আমাদের এই
বিয়ে ইসলামি শরিয়া মতে সম্পন্ন হবে কি না? আমাদের বিয়ে পরবর্তী সম্পর্ক হালাল হবে কি?
বিয়ে সঠিক হবে কি? বৈধতা পাবে কি?
দয়া করে প্রশ্নটা এড়িয়ে
যাবেন না। উত্তর পেলে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর:
বিয়ের
পূর্বে ছেলে-মেয়েদের মাঝে তথাকথিত প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং
গুনাহ। কেউ শয়তানের প্ররোচনা বা প্রবৃত্তির তাড়নায় এমন অবৈধ ও হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে
পড়লে অনতিবিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করে সেখান থেকে ফিরে আসা ফরজ।
মনে
রাখা কতর্ব্য, কেউ যদি সত্যিকারভাবে আল্লাহকে ভয় করে গুনাহরের কাজ পরিত্যাগ করে তাহলে
আল্লাহ তাকে কল্পনাতীতভাবে সাহায্য করেন। যেমন
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
اللَّـهَ يَجْعَل
لَّهُ مَخْرَجًا
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে (উত্তরণের) রাস্তা করে দেন।” (সূরা তালাক: ২)
◉
গুনাহর কাজ পরিত্যাগ করার জন্য করণীয় হল:
➧ ক. তওবার
শর্তবালী হৃদয়পটে জাগ্রত রেখে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করা।
➧ খ. মনে
আল্লাহর ভয়, কবরের ভয়াবহতা ও জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তির কথা জাগ্রত করা।
➧ গ. পাপাচার
থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা এবং শয়তান থেকে আল্লাহর
নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা তথা আউযুবুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম (বিতাড়িত শয়তান থেকে
আল্লহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করা।
➧ ঘ. গুনাহের
কাজে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাময় স্থান থেকে দূরে থাকা।
➧ ঙ. পাপ
কাজ করার সুযোগ থাকার পরও জাহান্নামের শাস্তির কথা স্বরণ করে তা থেকে দূরে থাকা।
যাহোক,
এখন আপনাদের উভয়ের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে, অনতিবিলম্বে তওবা করা এবং সব ধরণের সম্পর্কচ্ছেদ
ঘটানো। তা না করে এ রিলেশন অব্যহত থাকলে আল্লাহর নাফরমানী ও তাঁর অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতেই
থাকবে। যার পরিণতি দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَقْرَبُوا
الزِّنَا ۖ
إِنَّهُ كَانَ
فَاحِشَةً وَسَاءَ
سَبِيلًا
“আর
ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা আহকাফ: ৩২)
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম সমাজকে হেফাজত করুন। আমীন।
◉
আপনি যদি উক্ত মেয়েকে বিয়ে করতে চান তাহলে তার অভিভাবকের সম্মতি নেওয়া অপরিহার্য।
অন্যথায় বিয়ে সহিহ হবে না। কেননা অধিক বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী, তথাকথিত কোর্ট ম্যারেজ
বা পালিয়ে বিয়ে বাতিল-অশুদ্ধ। আর বিয়ে শুদ্ধ না হলে দাম্পত্য জীবনটা হবে জিনা ও পাপের
অন্ধকারে পরিপূর্ণ। নাউযুবিল্লাহ।
উল্লেখ্য
যে, ইসলামে ছেলের বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য অভিভাবকের সম্মতির শর্তারোপ করা হয় নি। কেবল
মেয়ের অভিভাবকের সম্মতি থাকা অপরিহার্য শর্ত করা হয়েছে (অধিক বিশ্বযুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী)।
সুতরাং
যদি উক্ত মেয়ের বাবা/অভিভাবক এই বিয়েতে সম্মত থাকে তাহলে তা শুদ্ধ হবে যদিও তাতে ছেলের
বাবা/অভিভাবকের পক্ষ থেকে সম্মতি না থাকে। তবে আমাদের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে
ছেলের জন্যও তার বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়ে করা উচিৎ নয়। কেননা, এতে তারা মনে অনেক কষ্ট
পায়।
আল্লাহু
আলম।
নারীদের ক্যারিয়ার গঠনে
ইসলাম কি বাধা দেয়?
(১১১) প্রশ্ন: বর্তমান
আধুনিকতার যুগে পুরুষদের মত নারীরাও চায় তাদের উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে, লেখাপড়া শিখতে।
কেউই নিজেদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখতে চায় না। নারীদের এই ক্যারিয়ার মুখী চিন্তাভাবনা বা
এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের জন্য দয়া করে একটু বিস্তারিত
জানাবেন প্লিজ।
উত্তর:
ইসলাম
কখনো নারীদেরকে উন্নত ক্যারিয়ার গঠনে বাধা দেয় না বরং এতে উৎসাহিত করে। তবে অবশ্যই
তাকে ইসলামের বিধান মেনে তা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি ইসলামের বিধান লঙ্ঘিত হয়
তখন অবশ্যই ইসলাম অগ্রাধিকার পাবে। এটাই ঈমানের দাবী। এ কথা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য
প্রযোজ্য। একজন পুরুষের জন্যও বিধান হল, ক্যারিয়ার গঠন করতে গিয়ে যদি আল্লাহর আইন লঙ্ঘন
করতে হয় তখন তাকেও সে পথে থেকে ফিরে আসতে হবে। কেননা, মুমিনের জন্য দুনিয়ার আয়-উন্নতি,
সাফল্য ও সমৃদ্ধির চেয়ে আখিরাতের সাফল্য ও মুক্তি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
তাই,
যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়তের সীমা-রেখার মধ্যে থেকে ক্যারিয়ার গঠন, চাকুরী, ব্যবসা ও অন্যান্য
দুনিয়াবি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা যায় ততক্ষণ তাতে ইসলাম কোনভাবেই বাধা দেয় না।
সুতরাং
একজন নারীও ইচ্ছা করলে নারী অঙ্গনে বা এমন পরিবেশে নিজেকে উন্নত করার যাবতীয় উপায় অবলম্বন
করতে পারে যেখানে তার সম্ভ্রম ও ঈমান রক্ষা করা সম্ভব হয়। যেমন, বর্তমানে সউদী আরবে
আল হামদুলিল্লাহ নারীরা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যাংকিং, আইটি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষের
সংমিশ্রণ ছাড়া সম্পূর্ণ নিরাপদ পরিবেশে কাজ করে নিজেদের সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন।
মোটকথা,
পরপুরুষের সংমিশ্রণ ছাড়া সম্পূর্ণ হিজাব রক্ষা করে একজন মহিলা নিজের ক্যারিয়ার গঠন
করতে পারে। ইসলাম এতে বাধা দেয় না। তবে এ জন্য আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রের উপর অপরিহার্য
দায়িত্ব হল, নারীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র তৈরি করা এবং তাদের সুরক্ষার
সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা।
তবে যদি পর্দা রক্ষা রক্ষা করে কাজ করার মত নিরাপদ
পরিবেশ না পাওয়া যায় তাহলে একান্ত বাধ্য না হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত পর্দার ফরয
বিধান লঙ্ঘন করার (অর্থাৎ হিজাবকে জলাঞ্জলী দিয়ে পরপুরুষের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে
কাজ করার) সুযোগ নাই।
এ
ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং জীবিকা ও উপার্জনের বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করতে
হবে। কেউ যদি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিকের
ব্যবস্থা করে দেন যা সে কল্পনা করতে পারে না। যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
ٱللَّهَ يَجۡعَل
لَّهُۥ مِنۡ
أَمۡرِهِ
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: ৪]
তিনি
আরও বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
ٱللَّهَ يَجۡعَل
لَّهُۥ مَخۡرَجٗا
– وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ
حَيۡثُ لَا
يَحۡتَسِبُۚ
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে
রিযিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (সূরা
তালাক: ২ ও ৩ নং আয়াত)
অবশ্য যদি কোনো মহিলা উপায়ান্তর না পেয়ে একান্ত
জীবনের তাকিদে এমন পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয় তাহলে যথাসাধ্য পর্দা ও সম্ভ্রম রক্ষা
করে কাজ করা জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
يُكَلِّفُ اللَّهُ
نَفْسًا إِلاَّ
وُسْعَهَا
“আল্লাহ
তা’আলা কারো উপর তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব চাপান না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬ নং আয়াত)
এ ক্ষেত্রে নিভৃত কক্ষে পরপুরুষের নিকট সময় কাটাবে
না।
তাদের সাথে নিষ্প্রয়োজনীয় কথা বলবে না।
কথা বলার সময় কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে।
তাদের সাথে হাসাহাসি-দুষ্টামি করবে না।
আতর সুগন্ধি ব্যবহার করবে না
কাজ শেষ হলে অনতিবিলম্বে বাড়িতে ফিরে আসবে।
সেই সাথে আল্লাহর কাছে দুআ করবে এবং বিকল্পপন্থায়
জীবিকা উপার্জনের পথ অনুসন্ধান করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সাহায্যকারী। আল্লাহু আলাম।
ওযু শেষে আসমানের দিকে
তাকিয়ে তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করে কালিমা শাহাদাত পড়া কি হাদীস সম্মত
(১১২) প্রশ্ন: কিছু মানুষকে
ওযু শেষে আসমানের দিকে তাকিয়ে তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করে কালিমা শাহাদাত পড়তে
দেখা যায়। এটি কি হাদিস সম্মত?
উত্তর:
ওযু করার পর কালিমা শাহাদাত পড়ার সময় আসমানের দিকে তাকানো এবং সে দিকে তর্জনী অঙ্গুলি
ইশারা করা হাদিস সম্মত নয় বরং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যারা এমনটি করে তারা হয়ত সুন্নাহ
সম্পর্কে অজ্ঞতা বশত: করে। আল্লাহ ক্ষমা করুন।
ইসলামের
বিধান হল, যে কোনো ইবাদত করার পূর্বে সে বিষয়ে দলীল থাকা অপরিহার্য। নিজের পক্ষ থেকে
কোনো কিছু বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নাই।
যাহোক,
এ ক্ষেত্রে সুন্নাহ সম্মত সঠিক নিয়ম হল, ওযু শেষ করার পর সাধারণভাবে উক্ত দুআটি পাঠ
করতে হবে। (আসমানের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নাই এবং তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করারও
প্রয়োজন নাই)। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَا مِنْكُمْ
مِنْ أَحَدٍ
يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ
– أَوْ فَيُسْبِغُ
– الْوَضُوءَ ثُمَّ
يَقُولُ: أَشْهَدُ
أَنْ لَا
إِلَهَ إِلَّا
اللهُ وَحْدَهُ
لَا شَرِيكَ
لَهُ وَأَشْهَدُ
أَنَّ مُحَمَّدًا
عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
إِلَّا فُتِحَتْ
لَهُ أَبْوَابُ
الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ
يَدْخُلُ مِنْ
أَيِّهَا شَاءَ
“তোমাদের
মধ্য থেকে কেউ যদি উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ রূপে ওযূ করার পর বলে:
«أَشْهَدُ أَنْ لَا
إِلَهَ إِلَّا
اللهُ وَحْدَهُ
لَا شَرِيكَ
لَهُ وَأَشْهَدُ
أَنَّ مُحَمَّدًا
عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»
“আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই , তিনি এক, তাঁর কোন
শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তাঁর
বান্দাহ্ ও রাসূল- তাহলে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে
এর যে কোনো দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।” [সহীহ মুসলিম (২৩৪)।]
আল্লামা
উসাইমীন রহঃ কে ওযুর পর উক্ত দুআ পড়ার সময় আসমানের দিকে তাকানো এবং তর্জনী অঙ্গুলি
আসমানের দিকে উত্তোলন করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
“لا أعلم له
أصلاً
“এর
কোনো ভিত্তি (দলীল) আছে বলে আমার জানা নাই।” [সংক্ষেপিত। উৎস: নূরুন আ’লাদ দারব (এটি
সৌদি আরবের রেডিও কুরআনের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান।) বিষয়: ওযুর ফরয ও পদ্ধতি]
আল্লাহু
আলাম।
যদি হিন্দুরা মুসলিমদেরকে
‘জয় শ্রীরাম’ ‘জয় হনুমান’ ইত্যাদি বাক্য বলতে বাধ্য করে তাহলে কী করণীয়ঃ
(১১৩) প্রশ্ন: আমি ইমানুদ্দিন।
ইন্ডিয়া থেকে বলছি। আমার প্রশ্ন হল, নিশ্চয় আপনি বর্তমানে ভারতীয় মুসলিমদের অবস্থা
সম্পর্কে অবহিত আছেন। যেখানে উগ্র হিন্দুরা মুসলিমদেরকে জোর পূর্বক ‘জয় শ্রীরাম, ‘জয়
হনুমান’ ইত্যাদি কুফরি বাক্য বলতে বাধ্য করছে এবং না বলার জন্য তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে
(অবশ্য বলার পরও মেরে ফেলছে)!
এখন আমার প্রশ্ন বিপদ থেকে বাঁচার জন্য কি মুসলিমরা এই শব্দ মুখে নিতে
পারবে বা এতে তারা ঈমান কি হারিয়ে ফেলবে?
উত্তর:
কারো
অজানা নয় যে, বর্তমানে কতিপয় উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং অসভ্য-বর্বর হিন্দু সংগঠন অত্যন্ত
নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে মুসলিমদেরকে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জয় হনুমান’বলতে বাধ্য করছে। কোনো
মুসলিম তাদের কথা না শুনলে অথবা তাদের কথা অনুযায়ী এ সব কুফুরি বাক্য উচ্চারণ করার
পরও তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কখনো মুসলিমদেরকে জোর করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণে বাধ্য
করা হচ্ছে। গরু জবেহ করার অপরাধে (!) গণ পিটুতে মুসলিম হত্যা করা হচ্ছে, চলন্ত ট্রেন
থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়া হচ্ছে, কোনো কোনো অসভ্য হিন্দু নেতা মুসলিম মা-বোনদেরকে গণধর্ষণ
করার মত নির্লজ্জ আহ্বান জানাচ্ছে আবার কোনো কোনো অপরিনামদর্শী মূর্খ হিন্দু ধর্মগুরুর
মুখ থেকে ভারতকে মুসলিম শুণ্য করার ধৃষ্টতাপূর্ণ বাণী শোনা যাচ্ছ…। এভাবে ভারতে প্রতিনিয়ত
মুসলিমদের প্রতি জুলুম-অত্যাচারের সীমা অতিক্রম করছে।
গণতন্ত্রের
ধ্বজাধারী ভারতে এ সব ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও বিশ্ব মিডিয়ায় বারবার প্রকাশিত
হওয়ার পরও সরকার এ সকল হিন্দু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে
বরং পুলিশ-প্রশাসন উল্টো জঙ্গিদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এহেন ন্যক্কার জনক ঘটনার
জন্য আমরা এ সকল অপরাধে জড়িত ব্যক্তি, সংগঠন এবং সন্ত্রাস লালন কারী প্রশাসনের প্রতি
জানাচ্ছি ঘৃণা ও ধিক্কার। বহু ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও ভাষাভাষী মানুষের মিলন ভূমি ভারতে
সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি এ ধরণের জঘন্য অন্যায় আচরণ চরম লজ্জা জনক।
আমরা
আশা করব, ভারত সরকার অনতিবিলম্বে এ সকল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে এবং
সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিবে। অন্যথায় নির্যাতিত মুসলিমদের উত্থান
ভারত সরকারের জন্য ভয়ানক অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে।
যা
হোক, উগ্র হিন্দুরা যদি মুসলিমদেরকে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জয় হনুমান’ ইত্যাদি বাক্য বলতে
বাধ্য করে অর্থাৎ জোর করে এ সকল বাক্য উচ্চারণ করতে বলে আর না করলে জুলুম অত্যাচার
করার আশঙ্কা করে তাহলে তাদের ক্ষয়-ক্ষতি ও জুলুম-অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য অন্তরে
ঈমান ঠিক রেখে মুখে এ সকল বাক্য উচ্চারণ করায় কোনো আপত্তি নাই। এতে করে তার ঈমানে কোনো
প্রভাব ফেলবে না ইনশাআল্লাহ।
এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন:
مَن كَفَرَ
بِاللَّـهِ مِن
بَعْدِ إِيمَانِهِ
إِلَّا مَنْ
أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ
مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ
وَلَـٰكِن مَّن
شَرَحَ بِالْكُفْرِ
صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ
غَضَبٌ مِّنَ
اللَّـهِ وَلَهُمْ
عَذَابٌ عَظِيمٌ
“যার
উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর ঈমান (বিশ্বাস) এর উপর অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ
বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরির জন্য মন উন্মুক্ত করে দেয় তাদের
উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।” (সূরা আন নহল: ১০৬)
তাফসীরকারকগণ
বলেন, উক্ত আয়াতটি প্রখ্যাত সাহাবী আম্মার বিন ইয়াসার রা.কে কেন্দ্র করে অবতীর্ণ হয়।
হাদিসে
বর্ণিত হয়েছে:
“মুশরিকরা
একবার আম্মার বিন ইয়াসির রা. কে ধরেছিল এবং তারা জবরদস্তি করে তাদের দেবদেবীর প্রশংসা
করতে এবং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দিতে। তারা এমন বল প্রয়োগ
করে যে, আম্মার বিন ইয়াসির রা. তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করে। অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে আম্মার রা. সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন।
অত:পর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন যে ‘তুমি মনের মধ্যে কেমন অনুভব
করেছিলে’?
আম্মার
রা. বললেন: ‘ঈমানের প্রতি আমার মনে পূর্ণ আস্থা ছিল’।
এতে
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন ‘যদি মুশরিকরা তোমাকে আবার এই রকম বলতে
বলে তবে তুমি আবার বলো’। অতঃপর উপরোক্ত আয়াত নাজিল হল”। (তাফসিরে দুররুল মানসুর)
প্রখ্যাত তাফসীর বিদ আবু বকর আল জাসসাস বলেন:
هذا أصل
في جواز
إظهار كلمة
الكفر في
حال الإكراه
বাধ্যতামূলকভাবে
কুফরি বাক্য উচ্চারণ জায়েয হওয়ার পক্ষে এই আয়াতটি মূল দলিল।“ (আহকামুল কুরআন ৩/১৯২)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন:
عُفِيَ لأمَّتي
عن الخطأِ
والنِّسيانِ وما
استُكرِهوا عليهِ
“আমার
উম্মতের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভুল, স্মরণ না থাকার কারণে ঘটে যাওয়া অন্যায় এবং জোরজবরদস্তি
করে কৃত অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” (ইবনে হাযম রা. রচিত আল মুহাল্লা, তিনি এটিকে
সহীহ বলেছেন)
বিশিষ্ট মুফাসসির ইমাম বাগভি রহ. তার তাফসীর গ্রন্থে
বলেন:
وأجمع العلماء
على: أن
من أكره
على كلمة
الكفر، يجوز
له أن
يقول بلسانه
“এটি
আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত যে, কাউকে যদি কুফরি কথা বলার জন্য জবরদস্তী করা হয় তার জন্য
তা মুখে উচ্চারণ করা জায়েয।“ [তাফসীর বাগভি ( মা’আলিমুত তানযিল) ৫/৪৬]
ইবনে হজম তার ‘আল মুহালা গ্রন্থে বলেন:
سَمِعْت عَبْدَ
اللَّهِ بْنَ
مَسْعُودٍ يَقُولُ:
مَا مِنْ
ذِي سُلْطَانٍ
يُرِيدُ أَنْ
يُكَلِّفَنِي كَلاَمًا
يَدْرَأُ عَنِّي
سَوْطًا أَوْ
سَوْطَيْنِ إِلاَّ
كُنْت مُتَكَلِّمًا
بِه
“আবদুল্লাহ
ইবনে মাস’উদ বলেছেন:
“যদি
সুলতান (শাসক) জবরদস্তী করে যে, আমি যদি এমন কিছু বলি যাতে আমাকে একটি বা দুটি বেত্রাঘাত
থেকে ছাড় দেবে তবে আমি অবশ্যই আমি তা বলব।”। (আল মুহালা ৮/৩৩৬)
অবশ্য কোনো ব্যক্তি যদি মুশরিকদের দাবীর মুখেও ঈমানী
দৃঢ়তার পরিচয় দেয় এবং কুফরী কথা উচ্চারণ থেকে বিরত থাকে- যার কারণে তাকে তারা হত্যা
হয় তাহলে আশা করা যায়, সে আখিরাতে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে।
তবে
কেউ যদি জীবন বাঁচানোর স্বাার্থে অন্তরে আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রেখে শুধু মুখে
কুফরি বাক্য উচ্চারণ করে তাহলে তা জায়েয আছে-যেমনটি সাহাবী আম্মার বিন ইয়াসের রা. এর
ঘটনা, এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ আয়াত এবং রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস (যেমনটি
উপরে উল্লেখ করা হয়েছে) থেকে প্রমাণিত হয়।
পরিশেষে
দুআ করি, মহান আল্লাহ তাআলা ভারত সহ পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিমদেরকে সকল অন্যায়-অত্যাচার
থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
দাজ্জালের ফেতনা থেকে
বাঁচার এক অনবদ্য রক্ষা কবজ সুরা কাহাফ
(১১৪) প্রশ্ন: আমরা হাদিস
থেকে জেনেছি যে, সূরা কাহাফ এর প্রথম এবং শেষ দশ আয়াত মুখস্থ থাকলে দজ্জালের ফিতনা
থেকে মুক্ত থাকা যায়। তার মানে শুধু প্রথম দশ আয়াত অথবা শেষ দশ আয়াত মুখস্থ রাখাই যথেষ্ট
না কি বিশ আয়াতই মুখস্থ রাখতে হবে?
উত্তর:
আমাদের
জানা প্রয়োজন যে, দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য হাদিসে বিশুদ্ধ সূত্রে ছয় ভাবে
সূরা কাহাফ পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো হল নিম্নরূপ:
১. পুরো সূরা কাহাফ পাঠ করা।
২. অনির্দিষ্টভাবে সূরা কাহাফের যে কোনো স্থান থেকে
দশ আয়াত পাঠ করা।
৩. সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ
করা।
৪. সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশ আয়াত তিলাওয়াত করা।
৫. সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করা।
৬ . সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করা।
এ
বর্ণনাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ আলেম সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার হাদিসকে অধিক
শক্তিশালী ও অধিক প্রসিদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা এটি সহিহ মুসলিমে বিশুদ্ধ
সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং এ দশটি আয়াতের মর্মার্থও দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকা
প্রসঙ্গে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ।
আর
বর্ণনার ভিন্নতা প্রসঙ্গে আলেমগণ বলেন,এর দ্বারা ক্রমান্বয়ে পুরো সূরা কাহাফ পড়া বা
মুখস্থ করার দিকে ইঙ্গিত করা রয়েছে। সুতরাং কেউ যদি পুরো সূরাটা মুখস্থ করে বা নিয়মিত
পড়ে তাহলে এটাই সবচেয়ে উত্তম।
যাহোক নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো পেশ করা হল:
১) দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য পুরো সূরা
কাহাফ পাঠ করার হাদিস:
আবু
সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
مَنْ قَرَأَ
سُورَةُ الْكَهْفَ
كَمَا أُنْزِلَتْ
، ثُمَّ
خَرَجَ إِلَى
الدَّجَّالِ لَمْ
يُسَلَّطْ عَلَيْهِ
أَوْ : لَمْ
يَكُنْ لَهُ
عَلَيْهِ سَبِيلٌ
” . (المستدرك : 4/557 حديث رقم : 8562 قال الذهبي قي
التلخيص : صحيح)
“যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফ যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে তেলাওয়াত করবে অতঃপর দাজ্জালের জন্য
বাহির হবে তার উপর দজ্জাল কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না অথবা তার উপর দাজ্জালের (প্রভাব
ফেলার) কোন পথ থাকবে না।” (মুস্তাদরাক আলস সাহীহাইন ৪/৫৫৭, হা/৮৫৬২, ইমাম যাহাবী তালখীস
গ্রন্থে বলেন: সহীহ। মুহাদ্দিসদের মতে এটি মারফু হাদিস হুকুমে)
এখানে
বলা হয়েছে পুরো সূরা কাহাফ বিশুদ্ধ ও সুন্দরভাবে পাঠ করলেই দাজ্জালের প্রভাব থকে রক্ষা
পাওয়া যাবে।
২) সূরা কাহাফের যে কোনো স্থান থেকে দশ আয়াত পাঠ
করার হাদিস:
من قرأ
عشر آيات
من سورة
الكهف عصم
من فتنة
الدجال
صحيح ابن
حبان : 3/65 حديث رقم : 785 قال شعيب الأرنؤوط
: إسناده صحيح
على شرط
مسلم – سنن
النسائي الكبرى
: 5/15 حديث رقم
: 8025 ، 6/235حديث رقم : 10785 وعند النسائي بإسناد
آخر
“যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফের দশটি আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকবে।“
(সহীহ ইবনে হিব্বান ৩/৫৬, হা/৭৮৫, শুআইব আরনাউত বলেন, সহিহ মুসলিম এর শর্তানুযায়ী এর
সনদ সহিহ)
এখানে
বলা হয়েছে, সূরা কাহাফের দশটি আয়াত পাঠ করলেই দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত থাকা যাবে।
তা সূরার যে কোনো স্থান থেকে হোক না কেন। প্রথম বা শেষ দিক থেকে পড়া শর্ত নয়। অনুরূপভাবে
মুখস্থ করাও শর্ত নয়।
৩. সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে কয়েকটি আয়াত পাঠ:
প্রখ্যাত
সাহাবী নাওয়াস বিন সামআন রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন:
ففَمَنْ أَدْرَكَهُ
مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ
عَلَيْهِ فَوَاتِحَ
سُورَةِ الْكَهْفِ
“এরপর
তোমরা যারা তার (দাজ্জালের) দেখা পাবে, সে যেন তাকে লক্ষ করে সূরা কাহাফের প্রথম দিকের
আয়াতগুলি পাঠ করে।”
(সহিহ
মুসলিম, অধ্যায়: ফিতনা সমুহ ও কিয়ামতের নিদর্শনা বলী, অনুচ্ছেদ: দজ্জাল এর বর্ণনা,
তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকবে, হা/৭২৬৩)
এ
হাদিসে দাজ্জালের মুখোমুখি হলে তাকে লক্ষ করে সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে কয়েকটি আয়াত
পড়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে নির্ধারিত আয়াত সংখ্যা উল্লেখ করা হয় নি।
৪) সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশ আয়াত পাঠ করার
হাদিস:
আবুদ
দারদা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
من قرأ
عشر آيات
من آخر
الكهف عصم
من فتنة
الدجال
مسند أحمد
6/ 446حديث رقم
: 27556 قال شعيب
الأرنؤوط : إسناده
صحيح رجاله
ثقات رجال
الشيخين غير
معدان بن
أبي طلحة
اليعمري فمن
رجال مسلم
واللفظ له
– صحيح ابن
حبان : 3/66 حديث رقم : 786 قال شعيب الأرنؤوط
: إسناده صحيح
-سنن النسائي
الكبرى : 6/235 حديث رقم : 10784
“যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশটি আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত
থাকবে।“ (মুসনাদ আহমদ ৬/৪৪৬, হাদিস নং ২৭৫৫৬, সনদ সহিহ)
–
প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন:
وَمَنْ قَرَأَ
بِعَشْرِ آيَاتٍ
مِنْ آخِرِهَا
، ثُمَّ
خَرَجَ الدَّجَّالُ
لَمْ يَضُرَّهُ
“যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে দজ্জাল বের হলেও তার কোনো ক্ষতি করতে
পারবে না।“ (মুসনাদে হাকিম-তিনি এটিকে সহিহ বলেছেন। বায়হাকী, আল মুজামুল আওসাত-ত্বাবারানী
প্রমূখ)
এ
হাদিস দ্বয়ে সূরা কাহাফের শেষের দশ আয়াত তেলাওয়াতের কথা বলা হয়েছে। মুখস্থ করার কথা
বলা হয় নি।
৫) সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশ আয়াত মুখস্থ
করার ব্যাপারে হাদিস:
আবুদ
দারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে:
مَنْ حَفِظَ
عَشْرَ آيَاتٍ
مِنْ أَوَّلِ
سُورَةِ الْكَهْف
عُصِمَ مِنَ
الدَّجَّالِ
‘‘যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দজ্জালের (ফিতনা)
থেকে পরিত্রাণ পাবে।’’ (সহীহ মুসলিম ১/৫৫৫, হা/৮০৯, ২৫৭)
আবু
দাউদে একই সাহাবী থেকে সহীহ সনদে হুবহু অনুরূপ হাদিস বর্ণিত।
এখানে
প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করার কথা বলা হয়েছে।
এ
বর্ণনাটা অন্যান্য বর্ণনার তুলনায় অধিক শক্তিশালী ও প্রসিদ্ধ।
৬) সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে দশ আয়াত মুখস্থ করার
হাদিস:
সহীহ
মুসলিমে প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার হাদিস বর্ণনার পরক্ষণেই বলা হয়েছে যে, অন্য বর্ণনায়
রয়েছে: «مِنْ آخِرِ
الْكَهْفِ» ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে।“ অর্থাৎ
যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সংরক্ষিত
থাকবে।“ (সহীহ মুসলিম, হা/ ৮০৯)
আবু
দাউদ (রহঃ) প্রথম দশ আয়াত এর কথা বর্ণনা করার পর বলেন: হিশাম দাসতাওয়ারী রহ. কাতাদা
রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
مَنْ حَفِظَ
مِنْ خَوَاتِيمِ
سُورَةِ الْكَهْفِ
“যে
ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে (দশ আয়াত) মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে
রক্ষা পাবে।”
‘শুবা
(রহঃ) বলেছেন: مِنْ آخِرِ
الْكَهْف “সূরা কাহাফের শেষ দিক থেকে (যার দশটি
আয়াত মুখস্থ থাকবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।)”
[সুনান
আবু দাউদ, হাদিস নম্বরঃ [4272], অধ্যায়ঃ ৩২/ যুদ্ধ-বিগ্রহ (كتاب الملاحم) (ই.ফা., হাদিসটি সহীহ]
এসকল
হাদিস থেকে শেষ দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করারকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে আত্মরক্ষার
উপায় বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য
যে, সূরা কাহাফের প্রথম তিন আয়াত পাঠ সংক্রান্ত হাদিসটিকে আল্লামা আলবানী ‘শায’ হিসেবে
যঈফের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
সুতরাং
আমরা চেষ্টা করব, সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করার এবং তিলাওয়াত করার পাশাপাশি
সেগুলো মমার্থ উপলদ্ধি করত সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার। সেই সাথে যদি শেষ দশ আয়াতও
মুখস্থ করা হয় তাহলে আরও উত্তম হয়। আর যদি পূরো সূরাটাই মুখস্থ করা হয় তাহলে সবচেয়ে
উত্তম।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফিতনা-দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
আল্লাহু
আলাম।
পুরুষদের হাফ প্যান্ট
এবং টি শার্ট পড়ে সালাত আাদায় করার বিধান
(১১৫) প্রশ্ন: সালাতে
সতর তথা শরীরের কতটুকু ঢাকা আবশ্যক? হাফ প্যান্ট পরিহিত (হাঁটু ঢাকা অবস্থায়) বা হাফ
শার্ট/টি শার্ট পরিধান করে সালাত আদায় করলে তা কি শুদ্ধ হবে?
উত্তর:
সালাতে
পুরুষদের ন্যূনতম সতর হল, দু কাঁধ এবং নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা। অর্থাৎ সর্ব নিম্ন
এতটুকু ঢাকা থাকা সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।
অবশ্য
কাঁধ ঢাকা শর্ত কি না এ ব্যাপারে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। তবে একাধিক বিশুদ্ধ
হাদিসের আলোকে সালাতে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। যেমন হাদিসে
বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، قَالَ
قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى
الله عليه
وسلم
“ لاَ
يُصَلِّ أَحَدُكُمْ
فِي الثَّوْبِ
الْوَاحِدِ لَيْسَ
عَلَى مَنْكِبَيْهِ
مِنْهُ شَىْءٌ
”
আবু
হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন কাঁধ খোলা রেখে এক কাপড়ে সালাত আদায় না করে।” (সহীহ বুখারী
ও মুসলিম)
হাদিসে
আরও বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، قَالَ
قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى
الله عليه
وسلم
“ إِذَا
صَلَّى أَحَدُكُمْ
فِي ثَوْبٍ
فَلْيُخَالِفْ بِطَرَفَيْهِ
عَلَى عَاتِقَيْهِ
”
আবু
হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: “তোমাদের কেউ এক কাপড়ে সলাত আদায় করলে সে যেন কাপড়ের ডান পাশকে বাম কাঁধের
উপর এবং বাম পাশকে ডান কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখে।” (সহীহ মুসলিম)
এ
হাদিসদ্বয় থেকে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। অবশ্য যে সকল
ফকিহগণ কাঁধ ঢাকার বিষয়টিকে আবশ্যক মনে করে না তাদের মতে, কাঁধ ঢাকা সালাতের একটি সৌন্দর্য
বা আদব মাত্র; এর বেশি নয়। যা হোক, একান্ত জরুরি পরিস্থিতির শিকার না হলে ইচ্ছাকৃতভাবে
দু কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় করা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য
যে, মহিলাদের জন্য পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকলে মুখ মণ্ডল ও দু হাতের কব্জি ব্যতিরেকে
মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর ঢাকা আবশ্যক। আর পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা থাকলে মুখ
ও হাতের কব্জি দ্বয়ও ঢাকতে হবে।
সুতরাং
কোন পুরুষ যদি একটি গামছা/তোয়ালে দ্বারা তার দু কাঁধ ঢাকে বা হাফ শার্ট বা টি শার্ট
পরিধান করে এবং এতটুকু লম্বা হাফ প্যান্ট পরিধান করে যে, তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত
ঢেকে যায় তাহলে তাতে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে
একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সালাতে এত ছোট পোশাক পরা উচিৎ নয় বরং সারা শরীর সুন্দরভাবে আবৃত
করত: শালীন ও রুচি সম্মত জামা-কাপড় পরিধান করাই সালাতের সৌন্দর্য ও আদব। আল্লাহু আলাম।
সরকারী ভূমি অফিসে চাকুরী
করার বিধান কি যদি সুদ সহ বকেয়া কর আদায় করতে হয়
(১১৬) প্রশ্ন: আমার চাকরিটা
সরকারি ভূমি অফিসে। জানি, ঘুষ ও দুর্নীতি হারাম কিন্তু ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে বকেয়া
থাকলে সুদসহ আদায় করতে হয়। এটা সরকারী আইন।
ইসলামের দৃষ্টিতে এ চাকুরীর
বিধান কি? ইদানীং মনে খুব অশান্তি বোধ করি এটার জন্য। Economically needy থাকার কারণে
ছাড়তেও পারছি না। সঠিক উপদেশ একান্ত কাম্য।
উত্তর:
যদি
আপনাকে ভূমি উন্নয়নের বকেয়া কর আদায়ের সময় সুদসহ উঠাতে হয়, তাহলে সেই চাকরি করা
আপনার জন্য বৈধ নয়। কেননা এতে সুদের মত হারাম কাজে সরকারকে সহযোগিতা করা হয়। অথচ সুদ
হারাম এবং ভয়াবহ কবিরা গুনাহ।
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا
اتَّقُوا اللَّـهَ
وَذَرُوا مَا
بَقِيَ مِنَ
الرِّبَا إِن
كُنتُم مُّؤْمِنِينَ-
فَإِن لَّمْ
تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا
بِحَرْبٍ مِّنَ
اللَّـهِ وَرَسُولِهِ
ۖ وَإِن
تُبْتُمْ فَلَكُمْ
رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ
لَا تَظْلِمُونَ
وَلَا تُظْلَمُونَ
“হে
ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা
ইমানদার হয়ে থাক। অত:পর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে
যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে
যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।”
(সূরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)
এ
ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সুদের সম্পৃক্ত চার প্রকারের লোককে অভিসম্পাত করেছেন।
জাবের রা. হতে বর্ণিত,
أنه لعن
آكل الربا
وموكله وكاتبه
وشاهديه، وقال:
هم سواء
“সুদ
গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং সাক্ষীদ্বয়কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং
১৯৯৫, শামেলা)
আর
ইসলামে হারাম কাজে সহযোগিতা করা নিষেধ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
وَلَا تَعَاوَنُوا
عَلَى الْإِثْمِ
وَالْعُدْوَانِ
“পাপ
ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ২)
সুতরাং
যথাসাধ্য দ্রুত এই চাকরি থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ।
তবে যদি বিকল্প জীবন-জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না
থাকে তাহলে একান্ত অপারগ অবস্থায় উক্ত চাকরি করা যাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَا يُكَلِّفُ
اللَّـهُ نَفْسًا
إِلَّا وُسْعَهَا
“আল্লাহ
কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬)
তিনি আরও বলেন:
فَاتَّقُوا اللَّهَ
مَا اسْتَطَعْتُمْ
“অতএব,
তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)
তবে
মনে এই গুনাহের প্রতি ঘৃণা বোধ জাগ্রত রাখতে হবে এবং উক্ত চাকরি ছেড়ে বিকল্প হালাল
উপার্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং এ জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে।
একদিন নবী মোস্তফায়,
রাস্তা দিয়া হাইটা যায়, হরিণ একখান বান্ধা ছিল গাছেরই তলায় এ ঘটনার সত্যতা কতটুকুঃ
(১১৭) প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও একটি হরিণীর
মাঝে কথোপকথন এর একটি ঘটনা খুব প্রসিদ্ধ। তা হল, এক ইহুদী (বা বেদুঈন) একটি হরিণ শিকার
করে তার তাঁবুর সাথে বেধে রেখে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ পথ দিয়ে
যাওয়ার সময় হরিণীটি তার কাছে তাকে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য মুক্ত করার অনুরোধ করে, যেন
সে মরুভূমিতে ফেলে আসা তার বাচ্চাদের দুধ পান করাতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হরিণীকে প্রশ্ন করেন, তাকে ছেড়ে
দিলে সে কি পুনরায় ফিরে আসবে? হরিণী ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি তাকে ছেড়ে দেন
এবং জামিন হিসেবে নিজে সেখানে অবস্থান করেন। পরে মা হরিণীটি তার বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ফিরে আসে…।
এ দৃশ্য দেখে শিকারি ব্যক্তিটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নবুওয়তের সত্যতা বুঝতে পরে কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যায়।
এ ঘটনাটির সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর:
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হরিণীর মাঝে কথোপকথন সংক্রান্ত উক্ত ঘটনাটি সাধারণ
মানুষের মধ্যে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। আমাদের দেশের ওয়াজ মাহফিলগুলোতে অনেক বক্তা কান্না
জড়িত সুরেলা কণ্ঠে এ ঘটনা বয়ান করে থাকেন। মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে কিছু খতিব সাহেব
মুসল্লিদেরকে এ সব গল্প শুনিয়ে থাকে। অথচ তারা হাদিসের সত্য-মিথ্যা-সহিহ-যঈফ হওয়ার
বিষয়ে মোটেও গবেষণা করে না-যা খুবই দু:খ জনক।
তাছাড়াও
রাস্তা-ঘাট, চা ও মুদির দোকান থেকে কানে ভেসে আসে এই গান/গজলের সুর:
“একদিন
নবী মোস্তফায়
রাস্তা
দিয়া হাইটা যায়
হরিণ
একখান বান্ধা ছিল
গাছেরই
তলায়।”
মোটকথা,
আমাদের দেশের মানুষ প্রচলিত এই কিচ্ছার সাথে বহুকাল থেকে পরিচিত।
যাহোক,
এ পর্যায়ে আমরা উক্ত ঘটনটির সনদগত ভিত্তি কতটুকু আছে তা পর্যালোচনা করে দেখবো।
মূলত:
এ ঘটনাটি একাধিক হাদিসের কিতাবে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবু নুআইম দালায়েলুন্ন
নবুওয়াহ (নবুওয়তের প্রমাণপঞ্জি) গ্রন্থে এ মর্মে একটি লম্বা হাদিস বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে
সুনানে বায়হাকীতেও এ বর্ণনাটি উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কিতাবে এটি পাওয়া যায়।
নিম্নে এ হাদিস সম্পর্কে মুহাক্কিক হাদিস বিশারদদের
মন্তব্য তুলে ধরা হল:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারি রহ. বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসায় হরিণীর ঘটনা লোকমুখে ব্যাপক প্রসিদ্ধি রয়েছে। এ ব্যাপারে
হাফেয ইবনে কাসীর রহঃ বলেন:
ليس له
أصل ومن
نسبه إلى
النبي صلى
الله عليه
وسلم فقد
كذب
“এ
ঘটনার কোনো ভিত্তি নেই। যে এটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ
করল সে মিথ্যা বলল।” (উৎস: আল মাসনু’ ফী মারিফাতিল হাদিসিল মাউযু, পৃষ্ঠা নং ৮০)
সাখাবী রহঃও প্রায় একই মন্তব্য করেছেন।
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন:
أما تسليم
الغزالة فلم
نجد له
إسناداً لا
من وجه
قوي ولا
من وجه
ضعيف والله
أعلم
“আর
হরিণী কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য প্রকাশের ঘটনার ব্যাপারে
আমরা শক্তিশালী কিংবা দুর্বল কোনো সনদ (বর্ণনা সূত্র) পাই নি। আল্লাহ ভালো জানেন।”
(ফাতহুল বারী ৭/৪০৪)।
এছাড়াও তিনি এ হাদিসটিকে লিসানুল মীযান গ্রন্থে
‘বাতিল ও বানোয়াট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (লিসানুল মীযান, ৬/৩১১)
হাফেয যাহাবী মীযানুল ইতিদাল গ্রন্থে এটিকে একটি
‘ভ্রান্ত ঘটনা’ হিসেবে ইঙ্গিত দেন। (মিযানুল ইতিদাল ৪/৪৫৬)
أن الحافظ
الذهبي ذكره
في ميزان
الاعتدال وأشار
إلى أنه
خبر باطل
শাইখ আলবানী এ হাদিসকে যঈফ (দুর্বল) হিসেবে সাব্যস্ত
করেছেন। তিনি আরও বলেন: এ ঘটনাটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সেগুলোর একটিও
সহীহ নয় এবং এক বর্ণনায় যেভাবে ঘটনার বিবরণ এসেছে অন্য বর্ণনায় তা নেই।
মোটকথা,
উক্ত ঘটনাটি অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে বানোয়াট (কারো মতে দুর্বল।) সুতরাং হাদিসের নামে
এ জাতীয় কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা বা বিশ্বাস কোনো দায়িত্বশীল মানুষের কাজ হতে পারে
না। বক্তা, ইমাম, খতীব ও লেখকদের দায়িত্ব হল, যথাসাধ্য গবেষণা ও যাচায়-বাছায় পূর্বক
মানুষের নিকট হাদিস বর্ণনা করা। অন্যথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
নামে মিথ্যাচার করার কারণে জাহান্নামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে ইসলামের নামে সব ধরণের মিথ্যা-বানোয়াট ও ভিত্তিহীন
বিষয়াদি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
(১১৮) প্রশ্নঃ কেউ হঠাৎ
অন্যায়/পাপ করে ফেললে তা গোপন রাখা কি কতর্ব্য?
কোন
সৎ, দ্বীনদার, ভালো মানুষ যদি হঠাৎ কোন অন্যায়/পাপকাজ করে ফেলে আর তা যদি অন্য কোন
ঈমানদার দেখে ফেলে তাহলে তার করণীয় হল, বিষয়টি গোপন রাখা; কারও সামনে প্রকাশ না করা।
বরং তা প্রকাশ করাই গীবত।
আমরা
জানি, কোন মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে সে ব্যক্তিই উত্তম যে ভুল করার পর তওবা করে।
আমাদের সবার জীবনেই ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে। কারোটা প্রকাশ পায়; কারোটা প্রকাশ পায় না।
সম্ভব
হলে একান্ত নিভৃতে সে ব্যক্তিকে সরাসরি বা ইঙ্গিতে ভুলটি সংশোধনের জন্য নসিহত করা যেতে
পারে। সৎ ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কেউ তাকে নসিহত করলে তা সে গ্রহণ করে আর নিজেকে
দ্রুত সংশোধন করে নেয়।
কেউ
কারও গুনাহ ঢেকে রাখলে আল্লাহ তাআলাও কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটিগুলো ঢেকে রাখবেন।
যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سترَ
أخاهُ المُسلمَ
في الدُّنيا
سترَهُ اللهُ
يومَ القيامةِ
-صحيح الجامع
“যে
তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ ঢেকে রাখল আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।” (বুখারী)।
❑ অবশ্য
যদি সে এমন অন্যায় করে যা দেশ ও জাতির জন্য ধ্বংসাত্মক বা সমাজে বিশৃঙ্খলা লাগাতে পারে
তাহলে তা অনতি বিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো
জরুরি। যাতে অন্য মানুষ তার ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়।
❑ আর কোন
ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যেই পাপাচার করে বেড়ায় বা যার অন্যায়-অপকর্ম সম্পর্কে সমাজের সব
মানুষ জানে তাহলে তা ভিন্ন কথা। এটি প্রকাশ করলে গীবত হবে না। এমন ব্যক্তির পাপাচারের
কথা মানুষকে বলায় কোন দোষ নেই। যেন মানুষ তার ব্যাপারে সতর্ক হয় এবং তার মাধ্যমে প্রভাবিত
না হয়।
❑ আপনি যদি
কোন ভালো মানুষের পাপ ঢেকে রাখেন কিন্তু সে যদি নিজেই তা প্রকাশ করে দেয় বা অন্য কেউ
তা প্রকাশ করে দেয় তাহলে আপনি গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। কারণ, আপনি আপনার যা করণীয়
তা করেছেন। বরং যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করবে সেই গুনাহগার হবে।
আল্লাহু
আলাম।
টয়লেট বা বাথরুমে প্রবেশের
পূর্বে দুআ পাঠ: গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
(১১৯) প্রশ্ন: টয়লেট
বা বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে কোন দুআ পড়তে হয়? আমি শুনেছি, পেশাব-পায়খানা করার উদ্দেশ্যে
টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়লে জিন-শয়তান আর ব্যক্তির মাঝে পর্দা পড়ে যায়। কিন্তু গোসল
করতে গেলেও কি দোয়া পড়লে শয়তান আর ব্যক্তির মাঝে পর্দা পড়বে? আর পেশাব-পায়খানা ছাড়া
অন্য কোনো কাজে টয়লেটে প্রবেশ করলেও কি দুআ পাঠ করতে হবে?
উত্তর:
টয়লেট
হল নাপাক স্থান। এখানে মানব জাতির দুশমন নাপাক জিন-শয়তানরা ওঁৎ পেতে বসে থাকে মানুষের
ক্ষয়-ক্ষতি করার জন্য। তাই এদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দুআ পাঠ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
সুতরাং
আমরা আমাদের প্রয়োজন পূরণ তথা পেশাব, পায়খানা, ওযু, গোসল ইত্যাদি কাজে বাথরুমে প্রবেশ
করতে চাইলে প্রবেশের পূর্বে হাদিসে বর্ণিত দুআ পাঠ করা কর্তব্য।
নিম্নে
এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত দুআ সমূহ বর্ণনা করা হল:
আলী ইবনে আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত :
أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ : قَالَ
سَتْرُ مَا
بَيْنَ أَعْيُنِ
الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ
بَنِي آدَمَ
إِذَا دَخَلَ
أَحَدُهُمْ الْخَلَاءَ
أَنْ يَقُولَ
بِسْمِ اللَّهِ
رواه الترمذي
(606) وصححه الألباني
রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন
জিন শয়তানের চোখ ও বানী আদমের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল: বিসমিল্লাহ-“আল্লাহর নামে
প্রবেশ করছি” বলা। [সহীহ : তিরমিযী ৬০৬, সহীহুল জামি‘ ৩৫১১]
অর্থাৎ
টয়লেটে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করলে জিন-শয়তানদের দৃষ্টির সামনে পর্দা ফেলে
দেয়া হয়। ফলে তারা আর মানুষের লজ্জাস্থান দেখতে পায় না।
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ زَيْدِ
بْنِ أَرْقَمَ
قَالَ قَالَ
رَسُوْلُ اللهِ
ﷺ إِنَّ
هذِهِ الْحُشُوْشَ
مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا
أَتى أَحَدُكُمُ
الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ
أَعُوذُ بِاللهِ
مِنَ الْخُبُثِ
وَالْخَبَائِثِ. رَوَاهُ
أَبُوْ دَاوٗدَ
وَاِبْنُ مَاجَةَ
যায়দ
ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: “এসব টয়লেটে জিন-শয়তানরা উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যারা টয়লেটে যাবে তারা
যেন এ দু’আ পড়ে :
أَعُوذُ بِاللهِ
مِنَ الْخُبُثِ
وَالْخَبَائِثِ.
“আ’উযু
বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস”
“আমি
আল্লাহর নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।”
[সহীহ
: আবু দাউদ ৬, ইবনে মাজাহ্ ২৯৬, সহীহুল জামি‘ ২২৬৩।]
অপর বর্ণনায় এসেছে:
আনাস
ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টয়লেটে
প্রবেশ কালে বলতেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي
أَعُوذُ بِكَ
مِنْ الْخُبْثِ
وَالْخَبَائِثِ
“আল্লাহুম্মা
ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস”
“হে
আল্লাহ! তোমার নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।” (বুখারি ও
মুসলিম)
মোটকথা,
কেউ যদি পেশাব, পায়খানা, গোসল বা অন্য কোনো কাজের উদ্দেশ্যে টয়লেটে প্রবেশ করতে চায়
তাহলে তার জন্য সুন্নতি নিয়ম হল, প্রবেশের পূর্বে প্রথমে বিসমিল্লাহ পাঠ করা অত:পর
এ দুআ পাঠ করা:
“আ’উযু
বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস”
অথবা
“আল্লাহুম্মা
ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস।”
তাহলে
আল্লাহ তাআলা তার লজ্জাস্থানকে শয়তানের দৃষ্টি থেকে এবং তাকে শয়তানের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে
রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় শয়তান মানুষকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে মানবজাতির দুশমন শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
আল্লাহু
আলাম।
সালাতে অলসতা দূর করার
১৩ উপায়
(১২০) প্রশ্ন: ইদানীং
নামাজ পড়ার ব্যাপারে মনের মধ্যে খুব অলসতা অনুভব করি। নামাজ পড়ি ঠিকই কিন্তু শুধু মনে
হয় সবে তো আযান হল, কিছু সময় পরে পড়ব। আবার একটু পরে মনে হয় এখন আর পড়ব না কাজা নামাজ
আদায় করে নিব। কি করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি?
উত্তর:
এ
কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কালিমার পরে সালাতের মত এত গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত
আর কিছু নেই। এটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। সালাত পরিত্যাগ করা কুফুরি পর্যায়ের গুনাহ।
এ ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে এত বেশি আলোচনা ও তাগিদ এসে যে, অন্য কোনো বিষয়ে এতটা আসে
নি।
কিন্তু
বাস্তব কথা হল, একমাত্র আল্লাহ ভীরুদের জন্য ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা খুবই
কঠিন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ
وَالصَّلَاةِ ۚ
وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ
إِلَّا عَلَى
الْخَاشِعِينَ
“ধৈর্য্যের
সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু আল্লাহ ভীরু
লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।“ (সূরা বাকারা: ৪৫)
♦এ পর্যায়ে আমরা সালাতে অলসতা ও অবহেলা
প্রদর্শনের কঠিন পরিণতির কথা জানবো।
১. সালাতে অলসতা ও অবহেলা প্রদর্শনকারীর পরিণতি অত্যন্ত
ভয়াবহ:
যেমন:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ،
الَّذِيْنَ هُمْ
عَنْ صَلاَتِهِمْ
ساَهُوْنَ
“ঐ
সকল নামাযীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (অথবা জাহান্নামের মধ্যে ওয়াইল নামক একটি আগুনের
উপত্যকা) যারা সালাত থেকে উদাসীন।” (সূরা মাঊন ৪ ও ৫)
এ
আয়াতের তাফসীরে সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা যাদের জন্য রয়েছে কঠিন
শাস্তি? তিনি বললেন, “যারা সালাতের নির্দিষ্ট সময় পার করে দিয়ে সালাত আদায় করে।”
২) নামাযে অলসতা করা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য:
মহীয়ান
আল্লাহ বলেন:
إنَّ الْمُناَفِقِيْن
يُخاَدِعُوْنَ اللهَ
وَهُوَ خاَدِعُهُمْ،
وإذاَ قاَمُوْا
إلَى الصَََلاَةِ
قاَمُوْا كُسَالَى
يُراَؤُونَ الناَّسَ
وَلاَ يَذْكُرُوْنَ
اللهَ إلاَّ
قَلِيْلاً
“অবশ্যই
মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত:
তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায় অলস ভঙ্গিতে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে
অল্পই স্মরণ করে।” (সূরা নিসা: ১৪২)
৩) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لَيْسَ صَلاَةٌ
أثْقَلَ عَلىَ
الْمُناَفِقِيْنَ مِنْ
صَلاَةِ الْفَجْرِ
وَالعِشاَءِ وَلَوْ
يَعْلَمُوْنَ ماَ
فِيْهِماَ لأَتَوْهُماَ
وَلَوْ حَبْواً
“মুনাফিকদের
উপর ইশা ও ফজর সালাতের চাইতে এমন কষ্টকর কোনো সালাত নেই। তারা যদি জানতো যে, এ দু সালাতে
কি প্রতিদান রয়েছে তবে হামাগুড়ি দিয়ে ( বা নিতম্বের উপর ভর করে) হলেও তাতে উপস্থিত
হত।” (বুখারী ও মুসলিম)
৪) ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরী করে সালাত আদায়কারীকেও হাদিসে
মুনাফিক বলা হয়েছে।
আনাস
বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন:
“ঐ
টা মুনাফেকদের সালাত.. ঐটা মুনাফেকদের সালাত..ঐ টা মুনাফেকদের সালাত- যে ইচ্ছাকৃত ভাবে
বসে থাকে। তারপর সূর্য (অস্ত যাওয়ার পূর্বে) যখন তা হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং শয়তানের
দু শিংয়ের মাঝে অবস্থান করে তখন সে চারটি ঠোকর মারে আর তাড়াহুড়ার কারণে তাতে খুব অল্পই
আল্লাহ্কে স্মরণ করে থাকে।” (আহমাদ, আবু দাঊদ, মালিক)
৫. সময়মত সালাত আদায় করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল:
হাদিসে
বর্ণিত হয়েছে:
أَىُّ الْعَمَلِ
أَحَبُّ إِلَى
اللَّهِ قَالَ
”
الصَّلاَةُ عَلَى
وَقْتِهَا ”. قَالَ
ثُمَّ أَىُّ
قَالَ ”
ثُمَّ بِرُّ
الْوَالِدَيْنِ ”. قَالَ
ثُمَّ أَىّ
قَالَ ”
الْجِهَادُ فِي
سَبِيلِ اللَّهِ
আবদুল্লাহ
(ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? তিনি বললেন:
সময়
মত সালাত আদায় করা।
(আবদুল্লাহ)
জিজ্ঞাসা করলেন: তারপর কোনটি?
তিনি
বললেন: পিতা মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা।
আবদুল্লাহ
জিজ্ঞাসা করলেন: তারপর কোনটি?
তিনি
বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।
আবদুল্লাহ
বলেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি যদি তাকে
আরও বেশী প্রশ্ন করতাম, তিনি আমাকে অধিক জানাতেন।
এ
সকল আয়াত ও হাদিস থেকে যথাসময়ে সালাত আদায় করার গুরুত্ব এবং তা আদায়ের ক্ষেত্রে অলসতা
ও ঢিলেমী করার ভয়াবহতা সুষ্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।
♦ নিম্ন সালাত আদায়ে অলসতা দূর করার ১৩টি উপায় পেশ করা হল:
১.
যথাসময়ে সালাত আদায়ের গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা স্মরণ করা।
২.
সালাতে অবহেলা বা অলসতা প্রদর্শনের ভয়াবহতার কথা মনে জাগ্রত করা।
এ
দুটি বিষয়ে কুরআনের আয়াত ও হাদিস সম্বলিত ভালো মানের বই বা আর্টিকেল পাঠ করা উচিৎ বা
এ বিষয়ে ভালো মানের লেকচার শোনা উচিৎ। জানা থাকলেও আবারও পড়তে পারেন বা আবারও ভিডিও
লেকচার শুনতে পারেন। এতে মনের মধ্যে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা আসবে।
৩.
মনে মৃত্যুর কথা জাগ্রত রাখা যে, যে কোনো সময় আমার মৃত্যু ঘটতে পারে। সুতরাং সময় হওয়ার
পরও যদি সালাত আদায়ে বিলম্ব করি আর ইতোমধ্যে যদি আমার মৃত্যু সংঘটিত হয় তাহলে অলসতা
বশত: কাযা সালাতের দায়ভার মাথায় নিয়ে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
৪.
অলসতা দূর করার জন্য আল্লাহ নিকট দুআ করা। বিশেষ ভাবে এই দুআটি পাঠ করা:
اللَّهُمَّ إِنِّي
أَعُوذُ بِكَ
مِنْ الْعَجْزِ
وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ
وَالْهَرَمِ وَالْبُخْلِ
وَأَعُوذُ بِكَ
مِنْ عَذَابِ
الْقَبْرِ وَمِنْ
فِتْنَةِ الْمَحْيَا
وَالْمَمَاتِ
“হে
আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অক্ষমতা, অলসতা, অক্ষমতা, বার্ধক্য ও কৃপণতা থেকে।
আরও আশ্রয় চাই কবরের আযাব ও জীবন-মরণের ফিতনা থেকে।” [বুখারী ৬৩৬৭ ও মুসলিম ২৭০৬]
৫.
যথাসময়ে সালাত আদায়ের জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা বাস্তবায়নে আল্লাহর নিকট সাহায্য
চাওয়া।
কেউ
যদি ভালো কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার করে এবং আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে তাহলে
আল্লাহ তাআলা তাকে অবশ্যই সাহায্য করেন।
৬.
আল্লাহর নিকট খাঁটি অন্তরে তওবা করা এবং পাপকর্ম পরিত্যাগ করা। কারণ পাপের সাথে জড়িত
থাকার ফলে অন্তরে প্রলেপ পড়ে যায়। তখন সে ধীরে ধীরে আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে যায়।
সে আর আগের মত ইবাদতে সাধ অনুভব করে না। যার কারণে অন্তরে ইবাদতে আড়ষ্টতা, অবহেলা ভাব
ও অলসতা অনুভব করে।
৭.
সালাতে বিলম্ব হলে নিজেকে ধিক্কার দিন এবং ভবিষ্যতে যেন আর এমনটি না হয় সে জন্য মনকে
প্রস্তুত করুন।
৮.
সবসময় ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন। ওযু ভেঙ্গে গেলে পূণরায় ওযু করে নিন। তাহলে এটি
সময় হওয়ার সাথে সাথে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
৯.
আপনার দৈনন্দিন কিছু কাজ নামাযের উপর ভিত্তি করে সাজিয়ে নিন। যেমন: এ কাজটি নামাযে
আগে করবেন আর এ কাজটি নামাযের পরে করবেন…এভাবে।
১০.
মনকে সময় মত নামায পড়তে বাধ্য করুন। কারণ আমরা যদি মন মত চলি তাহলে আমরা সর্বক্ষেত্রে
ব্যর্থ হবো। তাই মনকে কখনো কখনো কাজে বাধ্য করতে হয়। অর্থাৎ ইচ্ছা না থাকলেও করতে হয়।
সুতরাং
আপনি যদি কিছুদিন মনের মধ্যে অলসতাতে প্রশ্রয় না দিয়ে মনকে সঠিক সময়ে সালাত আদায় করতে
বাধ্য করেন তাহলে অল্প দিন পরই এর ফলাফল পাওয়া শুরু করবেন। তখন মনের মধ্যে অলসতা আশ্রয়
পাবে না ইনশাআল্লাহ।
১১.
আরেকটি বিষয় বলব, অনেক মানুষ অজ্ঞতা বশত: পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আগে-পরে মিলিয়ে এত বেশি
পরিমাণ রাকআত সংখ্যায় পড়ে যা হয়ত অনেকের জন্য নামায পড়ার ব্যাপারে মনে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি
করে। এ কারণে মনের অজান্তে অলসতা ও অবহেলা চলে আসে। যেমন: অনেকে ইশার সালাত পড়ে সতেরো
রাকআত! অথচ হাদিসে এত রাকআত পড়ার কথা আসে নি।
সুতরাং
কোন ওয়াক্তে কত রাকআত পড়তে হয় সেটা ভালো করে জেনে নিন।
আর
এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, যদি কখনো কোনা কারণে নামাযের প্রতি মনে আগ্রহ না থাকে বা
অলসতা অনুভব হয় তাহলে কমপক্ষে কেবল ফরযটুকু পড়ে নিন। সুন্নতগুলো বাদ দিন। যদি মাঝে
মধ্যে সুন্নত নামাযগুলো ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে গুনাহ হবে না। তবে সুন্নত নামায ছাড়াকে
নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা উচিৎ নয়।
১২.
যে বিষয়গুলো অলসতা তৈরি করে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। বর্তমানে অলস সময়গুলোর সঙ্গী
হয়ে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন। এসব থেকে কিছু সময়ের
জন্য হলেও দূরে থাকতে হবে। তাহলে কাজে মন বসবে, ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং অলসতাও
হার মানবে।
১৩.
অতিরিক্ত ঘুম ও খাওয়া মনকে অলস এবং শরীরকে স্থূল করে দেয়। সুতরাং এ দুটি বিষয় যেন অতিরিক্ত
না হয় সে দিকে সতর্ক হতে হবে। বরং পরিমিত খাওয়া ও পরিমিত ঘুম, হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক
পরিশ্রমের অভ্যাস মানুষকে সচল রাখে এবং অলসতা ও স্থবিরতা দুর করে।
♦ পরিশেষ কবির ভাষায় বলব,
“অলস
অবোধ যারা
কিছুই
পারে না তারা
তোমায়
তো দেখি নাকো
তাদের
আকার।”
অলসতা
যেমন আমাদের পার্থিব জীবনে সাফল্য ও উন্নতির পথে বাধা তেমনি আখিরাতের মুক্তির জন্য
বিরাট প্রতিবন্ধক।
সুতরাং
অন্তরে প্রাণ চাঞ্চল্য বজায় রাখুন। অলসতাকে না বলুন এবং সময়ের কাজ সময়ে করুন। তাহলে
ইনশাআল্লাহ এক দিকে যেমন দুনিয়ায় সুখী জীবন অর্জন করা সম্ভব হবে অন্যদিকে আল্লাহ চাইলে
আখিরাতেও অর্জন করা সম্ভব হবে অনন্ত সুখ-সমৃদ্ধ চিরসুখের নীড় জান্নাত। আল্লাহ কবুল
করুন। আমীন।
আমি অবৈধ রিলেশন থেকে
তওবা করে বের হয়ে এসেছি কিন্তু আমার এক্স বয় ফ্রেন্ড আমাকে রিলেশন অব্যাহত রাখতে হুমকি-ধমকি
দিচ্ছেঃ
(১২১) প্রশ্ন: আমার একজন ছেলের সাথে রিলেশন ছিল প্রায়
তিন বছর ধরে। আমি ছোটবেলা থেকেই নামাজ-রোজা করি কিন্তু আমি এ ব্যাপারে জানতাম না যে,
বিয়ের আগে এমন সম্পর্ক হারাম আর এর ভয়াবহতা এত বিশাল। আমি পরে জানতে পেরেছি। আল্লাহ
আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন! আল হামদুলিল্লাহ।
তারপর
আমি এ হারাম সম্পর্ক থেকে বের হয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই ছেলে আমাকে ছাড়বে না। সে আমাকে
বিয়ে করবে। কিন্তু আমার পরিবার কোনদিনই এ সম্পর্ক মানে নি। তারা জানতো যে, আমার সাথে
একটা ছেলের সম্পর্ক। তবে একরকম চুরি করে সম্পর্কটা এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি যখনি
এ বিষয়ে জানতে পেরেছি তখনই সরে আসতে চেয়েছি। কিন্তু সে আমাকে ছাড়ছে না। বিভিন্ন অপবাদ
দিচ্ছে।
পরে
না পেরে তাকে ভালোভাবে বুঝালাম যে, আল্লাহর জন্য এ সম্পর্ক ছাড়তেই হবে। নয় তো জেনার
গুনাহ আমল নামায় উঠতে থাকবে। তাকে আরও বললাম যে, তাহলে আমাকে বিয়ে করে ফেলো। তোমার
ফ্যামিলিকে আমাদের বাড়িতে পাঠাও।
সে
বলল, আমি এখন বেকার। সময় লাগবে।
আমি
বললাম, তাহলে আমার পক্ষে সম্ভব না এভাবে এ রিলেশন কনটিনিউ করা।
সে
বলল, আচ্ছা সব মানছি। কথা দিচ্ছি, এতদিন পরেই তোমাকে বিয়ে করবো কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক।
(সে কয়েক মাস টাইম নিয়েছে।) কিন্তু যোগাযোগ অফ করতে পারবা না। যদি করো তো আমি মানবো
না। তোমার সম্পর্কে খারাপ কিছু ভাববো। সন্দেহ তো করবই যে, তুমি অন্য কারো জন্য এমন
করছ।
সে
বলল, দরকার হলে খারাপ কিছু হবে। যোগাযোগ অফ করতে পারবা না।
এ
পরিস্থিতি আমার করণীয় কি? আমি আল্লাহর জন্য সব করতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি তো মেয়ে।
বদনামের ভয় হয়। আমার পরিবারের যথেষ্ট সম্মান আছে।
আমি
এসব থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। নিজেকে আল্লাহর দেয়া বিধানের ওপর পুরোপুরি সমর্পণ করতে চাই।
এতটুকুও খাঁদ রাখতে চাই না। প্লিজ হেল্প মি।
উত্তর:
আল
হামদুলিল্লাহ অবশেষে আপনি নিজের ভুল বুঝতে পরে হেদায়েতের পথে এসেছেন এজন্য আপনাকে অভিনন্দন।
দুআ করি, মহান আল্লাহ আপনাকে ঈমান ও তাকওয়ার উপর অবিচল রাখুন মৃত্যু পর্যন্ত। আমীন।
অত:পর,
বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত হল, কেউ যদি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তাকে অবশ্যই সকল
সমস্যা ও সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন আর কেউ আল্লাহর নাফরমানী বা পাপাচার থেকে
ফিরে আসতে চাইলে তিনি তাকে সাহায্য করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
ٱللَّهَ يَجۡعَل
لَّهُۥ مِنۡ
أَمۡرِهِ
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: ৪]
তিনি আরও বলেন:
وَمَن يَتَّقِ
ٱللَّهَ يَجۡعَل
لَّهُۥ مَخۡرَجٗا
– وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ
حَيۡثُ لَا
يَحۡتَسِبُۚ
“যে
আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (বিপদ-সঙ্কট থেকে) উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি
তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (সূরা
তালাক: ২ ও ৩ নং আয়াত)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ
يُعِفَّهُ اللَّهُ
، وَمَنْ
يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ
اللَّهُ، وَمَنْ
يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ
اللَّهُ
“যে
ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চাইবে আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন, যে ব্যক্তি অন্যের দিকে অমুখাপেক্ষী
থাকতে চাইবে আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চাইবে আল্লাহ
তাকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দিবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং
আপনি যেহেতু গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেহেতু আল্লাহর উপর ভরসা করে
আপনার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন। কারণ এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত এবং এটাই আবশ্যক।
তারপরও শয়তান আপনার মনে নানা কুমন্ত্রণা দিতে পারে।
সে ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন তথা বেশি বেশি আঊযুবিল্লাহি
মিনাশ শয়তানির রাজীম অর্থ: “বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি”
পাঠ করুন।
অতীতের গুনাহের জন্য লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর
নিকট তওবা করার পাশাপাশি জেনে বুঝে আর কখনো এ পথে পা বাড়াবেন না মর্মে তাঁর দরবারে
দৃঢ় অঙ্গীকার করা অপরিহার্য। (এগুলো তওবার শর্ত।)
আল্লাহর নিকট বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার
জন্য দুআ করুন। আর এজন্য বিশেষ করে সেজদা অবস্থায়, ভোররাতে এবং অন্যান্য দুআ কবুলের
সময়গুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।
সে ছেলে যদি আপনাকে হুমকি-ধমকি দেয় তাহলে অনতি বিলম্বে
বিষয়টি আপনার অভিভাবককে জানান।
সে সীমালঙ্ঘন করবে বলে আশঙ্কা করলে থানায় জিডি করার
ব্যবস্থা করুন।
এবং নিজে পরিপূর্ণ হিজাব সহকারে সতর্কভাবে চলাফেরা
করুন। যথাসাধ্য একাকী কোথাও যাবেন না।
আল্লাহ
আপনাকে হেফাজত করুন এবং যে ছেলের সাথে আপনার রিলেশন ছিল তাকেও হেদায়েত করুন। আমীন।
সালাতুয যুহা, চাশত,
ইশরাক, আওয়াবিন: এগুলোর অর্থ, ওয়াক্ত, ফযিলত এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্যঃ
(১২২) প্রশ্ন: সালাতুয
যুহা, চাশত, ইশরাক, আওয়াবিন এর অর্থ, ওয়াক্ত, ফযিলত এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্য বিস্তারিত
জানালে উপকৃত হব।
উত্তর:
আল্লামা
আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন, সালাতুল ইশরাক বা শুরুক, সালাতু যোহা বা চাশত এবং সালাতুল
আওয়াবীন ইত্যাদিগুলো একই নামাযের ভিন্ন ভিন্ন নাম।
ইশরাক অর্থ: সূর্যোদয়। সূর্য উঠার ১৫/২০ মিনিট পরে
যে সালাত আদায় হয় তাকে সালাতুল ইশরাক বলা হয়। এটি মূলত: সালাতুয যোহার ১ম সময়।
সালাতুয যোহা অর্থ: পূর্বাহ্নের সালাত। এটিকেই চাশত
বলা হয়। সূর্যের উত্তাপ বেশি হওয়ার পর এই সালাত আদায় করা হয়। সময়ের হিসেবে যোহর সালাতের
দেড় বা দু ঘণ্টা পূর্বে এটি আদায় করা সবচেয়ে উত্তম।
সালাতুল আওয়াবীন অর্থ: আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের
সালাত। এটিই সালাতুয যোহা বা চাশতের অপর নাম। যেমন:
হাদিসে
বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنّ
رَسُولَ اللّهِ
صَلّى اللّهُ
عَلَيْهِ وَسَلّمَ
قَالَ: لَا
يُحَافِظُ عَلَى
صَلَاةِ الضّحَى
إلّا أَوّاب
وهي صلاة
الأوابين
আবু
হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সালাতুয যোহা
(চাশতের নামায) এর প্রতি কেবল সেই যত্নবান হতে পারে যে, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
সুতরাং এটাই হল ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সালাত।”
(সহিহ
ইবনে খুযায়মা, শাইখ আলবানী এটিকে হাসান বলেছেেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ তারগীব তারহীব ১/১৬৪)
অন্য
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنِ الْقَاسِمِ
الشَّيْبَانِيِّ، أَنَّ
زَيْدَ بْنَ
أَرْقَمَ، رَأَى
قَوْمًا يُصَلُّونَ
مِنَ الضُّحَى
فَقَالَ أَمَا
لَقَدْ عَلِمُوا
أَنَّ الصَّلاَةَ
فِي غَيْرِ
هَذِهِ السَّاعَةِ
أَفْضَلُ .
إِنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى
الله عليه
وسلم قَالَ
“
صَلاَةُ الأَوَّابِينَ
حِينَ تَرْمَضُ
الْفِصَالُ ”
কাসিম
আশ শায়বানী রহ. থেকে বর্ণিত যায়দ ইবনু আরকাম রা. একদল লোককে ‘যুহা’ বা চাশতের সলাত
আদায় করতে দেখে বললেনঃ এখন তো লোকজন জেনে নিয়েছে যে, এ সময় ব্যতীত অন্য সময় সলাত
আদায় করা উত্তম বা সর্বাধিক মর্যাদার। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ‘সলাতুল আওয়াবীন’ সলাতের সময় হ’ল তখন সূর্যতাপে উটের বাচ্চাদের পা গরম হয়ে
যায়।
[(সহীহ
মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ৬। মুসাফিরদের সলাত ও তার কসর (كتاب صلاة المسافرين
وقصرها), হাদিস নম্বরঃ [1631] পরিচ্ছদঃ ১৯.
যখন উটের বাচ্চা গরম অনুভব করে (দিনের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়) তখনই সলাতুল আওওয়াবীন
(চাশতের সলাতের সময়)]
উল্লেখ্য যে, অনেকে মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী
সময়ে ছয় রাকাআত নফল সালাতকে সালাতুল আওয়াবীন হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু উপরোক্ত
হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, এ কথা ঠিক নয়। যদিও মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী
সময়ে নফল সালাত আদায় করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তা ছয় রাকাআতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং
যতখুশি পড়া যায়। আর সেটিকে সালাতুল আওয়াবীন বলাটা ভুল বা উক্ত হাদীস পরিপন্থী।
এর
সর্বশেষ সময় সূর্য মাথার উপরে আসার আগ পর্যন্ত।
❖ সালাতুল
ইশরাক এর ফযীলত:
সালাতুল
ইশরাক অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ সালাত। এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ صَلَّى
الْغَدَاةَ فِي
جَمَاعَةٍ ،
ثُمَّ قَعَدَ
يَذْكُرُ اللَّهَ
حَتَّى تَطْلُعَ
الشَّمْسُ ،
ثُمَّ صَلَّى
رَكْعَتَيْنِ ،
كَانَتْ لَهُ
كَأَجْرِ حَجَّةٍ
وَعُمْرَةٍ
“যে
ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিকির করে তারপর
দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।”
বর্ণনাকারী
বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ
হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব। (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)
উল্লেখ্য
যে, এ হাদীসটি অনেক মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিস আলবানী রহ. এটিকে সহীহ
হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
❖ রাকআত
সংখ্যা:
এ
সালাতের সর্ব নিম্ন রাকআত সংখ্যা হল দুই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা
বিজয়ের সময় ৮ রাকআত সালাতুয যোহা পড়েছিলেন। তবে সঠিক মতানুসারে এর সর্বোচ্চ সংখ্যা
নির্দিষ্ট নয়। সুতরাং ইচ্ছা অনুযায়ী দু রাকআত করে, ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ বা তার চেয়ে
বেশি যতখুশি এই সালাত আদায় করা যায়। কেননা, এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, আমর বিন আবাসা
রা. কে লক্ষ্য করে নবী সা. বলেন
إذا صليت
الفجر فأمسك
عن الصلاة
حتى تطلع
الشمس قيد
رمح ثم
صل فإن
الصلاة محضورة
مشهودة إلى
أن تقف
الشمس- أخرجه
مسلم في
صحيحه مطولا
“ফজর
পড়ার পর সূর্য উঠা পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকো। তারপর এক বর্শা পরিমান সূর্য
উদিত হওয়ার পর নামায পড়ো। কেননা, নামাযে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। এভাবে তুমি সূর্য (মাথার
উপর) স্থির হওয়া পর্যন্ত পড়তেই থাকো।” (সহীহ মুসলিম, এটি একটি লম্বা হাদীসে অংশ বিশেষ)
উক্ত
হাদীসে নবী সা. এই সলাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেন নি বরং সূর্য মাথা বরাবার স্থির
হওয়ার আগ পর্যন্ত যতখুশি পড়তে বলেছেন।
আল্লাহু
আলাম।
একজন বোন একান্ত জরুরী
প্রয়োজনে একটি মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন যেখানে পুরুষরাও আছে।
(১২৩) প্রশ্ন: একজন বোন
একান্ত জরুরী প্রয়োজনে একটি মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন যেখানে পুরুষরাও
আছে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা এড়িয়ে চললেও কাজের প্রয়োজনে কথা বলতে হয়। যদি তিনি এই
জন্য বেতনের টাকা থেকে কিছু টাকা দান করে দেন, আর বাকি টাকা ক্লাসে পাঠদানের বেতন হিসেবে
রাখেন তবে কি তার এই বাকি টাকাটা হালাল ধরা যাবে?
উত্তর:
নারী-পুরুষ
একসাথে অবস্থান করে বা অবাধ মেলামেশা রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে নারী বা পুরুষ কারোর জন্যই
চাকুরী করা ঠিক নয়। কেননা এখানে নানা ধরণের ফেতনা-ফাসাদ সংগঠিত হওয়ার পর্যাপ্ত সম্ভাবনা
রয়েছে। (আমাদের সমাজে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা এবং বিশৃংখলার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে
চলেছে যা সকলের জানা)
ইসলামী
শরীয়তে নারী-পুরুষ পৃথক ব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করতে কোন বাধা নেই।
সুতরাং
একান্ত প্রয়োজনে নারীরা এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারে যেখানে কেবল নারীরা কাজ করে
(যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ অবস্থান নেই)। যেমন: গার্লস স্কুল বা কলেজে শিক্ষকতা করা।
অবশ্য
যদি কোনো মহিলা উপায়ান্তর না পেয়ে একান্ত জীবনের তাকিদে এমন পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য
হয় তাহলে যথাসাধ্য পর্দা ও সম্ভ্রম রক্ষা করে কাজ করা জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
يُكَلِّفُ اللَّهُ
نَفْسًا إِلاَّ
وُسْعَهَا
“আল্লাহ
তা’আলা কারো উপর তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব চাপান না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬ নং আয়াত)
এ ক্ষেত্রে নিভৃত কক্ষে পরপুরুষের নিকট সময় কাটাবে
না।
তাদের সাথে নিষ্প্রয়োজনীয় কথা বলবে না।
কথা বলার সময় কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে।
তাদের সাথে হাসাহাসি-দুষ্টামি করবে না।
আতর সুগন্ধি ব্যবহার করবে না
কাজ শেষ হলে অনতিবিলম্বে বাড়িতে ফিরে আসবে।
সেই সাথে আল্লাহর কাছে দুআ করবে এবং বিকল্পপন্থায়
জীবিকা উপার্জনের পথ অনুসন্ধান করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সাহায্যকারী।
প্রাপ্ত বেতন থেকে কিছু দান করা বা না করার সাথে
বেতন হালাল-হারাম হওয়ার কোনো সম্পর্ক নাই।
উপহার দাতাকে খুশি করার
জন্য মিথ্যা বলা
(১২৪) প্রশ্ন: কেউ যদি
আমাকে কিছু উপহার দেয় কিন্তু জিনিসটা সুন্দর না হলেও উপহার দাতাকে খুশি করার জন্য মিথ্যা
বলা জায়েয হবে কি?
উত্তর:
কেউ
উপহার দিলে সেটা সুন্দর না হলে উপহার দাতাকে খুশি করার জন্য সরাসরি মিথ্যা বলা যাবে
না। কেননা ইসলামে মিথ্যা বলা বড় গুনাহ এবং মুনাফিকের বৈশিষ্ট।
তবে
ক্ষেত্র বিশেষ তাওরিয়া করা বা একটু ঘুরিয়ে কথা বলা জায়েয আছে। এ ক্ষেত্রে উপহার দাতাকে
মিথ্যা কথা বলে খুশি করার চেষ্টা না করে এমন কিছু কথা বলবেন যেন সে খুশি হয়। যেমন:
জাযাকাল্লাহ খাইরান, আপনার উপহার পেয়ে আমি আনন্দিত।
শুকরিয়া,
আপনি আমাকে স্মরণ করেছেন- এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি।
আপনার
পছন্দের প্রশংসা করতেই হয়।
জিনিসটা
যদি আনকমন হয়, বলবেন, মাশাআল্লাহ!! ব্যতিক্রমী জিনিস!
ইত্যাদি।
স্বামীর আনুগত্য করার
আবশ্যকতা এবং তার অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়ার বিধান
(১২৫) প্রশ্ন: একজন মহিলা
কুরআন-হাদিস অনুযায়ী চলার চেষ্টা করেন এবং পর্দাও করেন। কিন্তু বাইরে যাওয়ার জন্য
স্বামীর আদেশ মানতে চান না। যেমন: স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও ভাইয়ের পাত্রী দেখার জন্য
বাড়ি থেকে চলে গেল। তার দাবি, আমি আম্মার সাথে গিয়েছি। এটা আমার জন্য অনুমতি আছে।
কিন্তু স্বামী এতে রাজি নয়।
প্রশ্ন হল, এভাবে উক্ত
মহিলার জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? এ ক্ষেত্রে স্বামীর
করণীয় কি?
উত্তর:
স্ত্রীর
জন্য স্বামীর আনুগত্য করা ফরয যদি তা গুনাহের কাজ বা সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজের নির্দেশ
না হয়।
সুতরাং
স্ত্রীর জন্য জরুরি হল, বিশেষ কোনো কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে স্বামীর নিকট অনুমতি
নেয়া। স্বামী অনুমতি দিলে পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে এবং নিজেকে ফিতনা থেকে হেফাযতে রেখে
স্ত্রী বাইরে যেতে পারে। দূরে কোথাও যাওয়ার দরকার হলে অবশ্যই তার পিতা, ভাই ইত্যাদি
মাহরাম পুরুষের সাথে যাবে। কিন্তু স্বামী যদি তাকে যেতে নিষেধ করে তাহলে স্ত্রীর জন্য
তা লঙ্ঘন করা বৈধ নয়। অন্যথায় সে স্বামীর ‘অবাধ্য’ হিসেবে গণ্য হবে এবং গুনাহগার হবে।
পারিবারিক
শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই এই আনুগত্য করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে পরিবারের মূল
পরিচালনার দায়িত্ব এবং স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা অর্পণ করেছেন। (সূরা নিসা:
৩৪ নং আয়াত)।
সুতরাং
স্ত্রী যদি এই আনুগত্যের বিষয়টিকে উন্মুক্ত হৃদয়ে গ্রহণ না করে তাহলে পরিবারিক শৃঙ্খলা
ভেঙ্গে যেতে বাধ্য। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।
জ্ঞাতব্য
যে, ইসলামের বিধান হল, কোন স্ত্রী যদি স্বামীর ‘অবাধ্য’ হয় বা তার আনুগত্য করতে অস্বীকার
করে তাহলে তার জন্য স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দেয়া বন্ধ করার অধিকার রয়েছে।
ইসলামে
স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার আনুগত্যের বিষয়টি নিম্নোক্ত হাদিস থেকে সুষ্পষ্ট
ভাবে প্রতিভাত হয়:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لَوْ كُنْتُ
آمِرًا أَحَدًا
أَنْ يَسْجُدَ
لِغَيْرِ اللهِ
لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ
أَنْ تَسْجُدَ
لِزَوْجِهَا وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ
بِيَدِهِ لاَ
تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ
حَقَّ رَبِّهَا
حَتَّى تُؤَدِّىَ
حَقَّ زَوْجِهَا
وَلَوْ سَأَلَهَا
نَفْسَهَا وَهِىَ
عَلَى قَتَبٍ
لَمْ تَمْنَعْهُ-
“যদি
আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ
দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা
ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে,
এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকেও আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।”
(ইবনে মাজাহ হা/১৮৫৩; সহীহাহ হা/১২০৩।)
সুতরাং
স্ত্রীর জন্য স্বামীর অবাধ্যতা করে বাইরে কোথাও যাওয়া জায়েয নয় যদি নিজের বাবা-মা বা
আত্মীয় স্বজনের বাড়ি হোক না কেন।
এর
দলিল হল, বিখ্যাত ইফকের ঘটনায় মা আয়েশা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নিকট তার বাবা-মার কাছে যাওয়ার অনুমতি চাওয়ার হাদিস:
তিনি
বলেন:
أتأذن لي
أن آتي
أبوي
“(হে
আল্লাহর রাসূল,) আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিবেন?” (সহিহ বুখারী
ও মুসলিম)
ইরাকী বলেন, আয়েশা রা. এ কথা থেকে বুঝা গেল, স্ত্রী
স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার পিতামাতার বাড়িতে যাবে না।” (ত্বরবুত তাসরীব ৮/৫৮)
ইমাম
আহমদ বিন হাম্বল রা. এক বিবাহিত মহিলার ব্যাপারে বলেন-যার মা অসুস্থ ছিল:
طاعة زوجها
أوجب عليها
من أمها
، إلا
أن يأذن
لها
”
মা’র চেয়ে স্বামীর কথার আনুগত্য করা তার জন্য অধিক অপরিহার্য। তবে স্বামী যদি তাকে
অনুমতি দেয় তাহলে ভিন্ন কথা।” (শারহু মুনতাহাল ইরাদাত ৩/৪৭)
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি বলেন:
لا يجوز
للمرأة الخروج
من بيت
زوجها إلا
بإذنه ،
لا لوالديها
ولا لغيرهم
؛ لأن
ذلك من
حقوقه عليها
، إلا
إذا كان
هناك مسوغ
شرعي يضطرها
للخروج
“কোন
মহিলার জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া জায়েয নয়। পিতামাতা বা অন্য কারো
নিকট নয়। কারণ এটি তার উপর স্বামীর হক। অবশ্য যদি শরিয়ত সম্মত বিশেষ কোনো কারণ থাকে
তাহলে ভিন্ন কথা।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৯/১৬৫)
তবে
স্বামীর কর্তব্য হল, সময়-সুযোগ ও প্রয়োজন বুঝে স্ত্রীকে মাঝে-মধ্যে তার পিতামাতা ও
অন্যান্য মাহরাম নিকটাত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া যদি এতে ক্ষয়-ক্ষতি ও
ফেতনার আশঙ্কা না করে।
অবশ্য একান্ত জরুরি অবস্থায় স্বামীর অনুমতি ছাড়াও
বাইরে যাওয়া জায়েয আছে। যেমন, বাড়িতে থাকা যদি তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ হয়, ঘর
ভেঙ্গে পড়ে, জরুরি চিকিৎসা, ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য সামগ্রী ক্রয় ইত্যাদি।
পরিশেষে
বলব, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিশ্বাস, ভালবাসা ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে যে কোনো সমস্যা সমাধান
করা যায়। এগুলো দাম্পত্য জীবনে অপরিহার্য দাবী। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের চাহিদা ও হক
আদায় করবে এবং প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রাখবে। তাহলে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়া থেকে রক্ষা
পাবে ইনশাআল্লাহ।
তবে
কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও দাম্পত্য জীবনের বৃহত্তর স্বার্থে
উভয়কে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং যথাসম্ভব দ্রুত সমাধান করতে হবে। তাহলে
দুজনের দাম্পত্য জীবন ভরে থাকবে অবারিত সুখ, শান্তি ও অনাবিল ভালোবাসায় ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
তাওফিক দান করুন। আমীন।
রাগ, হিংসা ও জেদ
(১২৬) প্রশ্ন: আমার মধ্যে
যদি হিংসা, রাগ, জেদ ইত্যাদি থাকে তাহলে কি আমার ঈমান ঠিক থাকবে?
উত্তর:
রাগ,
জেদ, হিংসা ইত্যাদিগুলো মানুষের মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক নয়। কেননা, এগুলো মানুষের মানবিক
বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কমবেশি এগুলো রয়েছে। কিন্তু উত্তম তো সেই ব্যক্তি
যে এগুলোকে প্রতিহত করে।
রাগ:
রাগ
মানব জীবনের একটি দুর্বল পয়েন্ট। অতিরিক্ত রাগের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়।
রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ অনেক সময় এমন কিছু অন্যায় কথা বলে ফেলে বা অন্যায় কাজ করে
ফেলে যার কারণে তাকে পরবর্তীতে আফসোস করতে হয় এবং লজ্জিত হতে হয়।
শয়তান
এ দুর্বল মুহূর্তে মানুষকে অনেক বড় বড় অন্যায় কাজ করতে প্ররোচিত করে। তাই রাগের সময়ে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করতে বলেছেন অর্থাৎ আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম পাঠ করতে নির্দেশনা প্রদান
করেছেন এবং রাগ না করার জন্য বারবার উপদেশ দিয়েছেন।
তবে
রাগ সব সময় খারাপ নয়। তখনো রাগ করা প্রশংসনীয় গুণ হিসেবে বিবেচিত হয় যখন তা দ্বারা
অন্যায় প্রতিহত করা হবে বা কল্যাণের কাজে ব্যবহার করা হবে। যেমন: কোনো অন্যায়-অপকর্ম
দেখে রাগ করা, শরিয়া বিরোধী কাজ দেখলে অন্তরে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া। এটি একজন মানুষের
মধ্যে ঈমানের পরিচায়ক। প্রিয় নবী শরিয়ত লঙ্ঘিত হলে মাঝে মাঝে এত বেশি রাগ করতেন যে,
মানুষ তার সামনে যাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলত।
কিন্তু
ব্যক্তিগত ছোটখাটো বিষয়ে রাগারাগি ও ঝগড়াঝাঁটি করা খুবই অ পছন্দনীয় বৈশিষ্ট্য।
হিংসা:
হিংসা
খুব খারাপ বৈশিষ্ট্য। এর ক্ষয়-ক্ষতি পরিমাণ অনেক। আল্লাহ তাআলা কুরআনে হিংসুকের হিংসা
থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলেছেন। (সূরা ফালাক)।
হিংসুক
নিজেই নিজের দুশমন। সে অন্যের ভালো দেখে হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে তছনছ হয়। মানসিকভাবে
অস্থির থাকে। তাই হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য চেষ্টা করতে হবে
এবং এ জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে।
জেদ:
জেদ
বা একরোখা স্বভাব প্রশংসনীয় নয়। আমাদের কর্তব্য, একরোখা স্বভাব থেকে বের হয়ে হকের পথে
থাকা। একগুঁয়েমি করে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ধ্বংসাত্মক বৈশিষ্ট্য।
অবশ্য
কেউ যদি সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত বিষয়ে জেদ করে এবং সকলের বিরোধিতা স্বত্বেও তার উপর অবিচল
থাকে তাহলে তা তার ঈমানি শক্তি ও নৈতিক দৃঢ়তার প্রমাণ বহন করে। এটি প্রশংসনীয়। সব মানুষ
এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না।
তবে
অযথা রাগ, জেদ এবং হিংসা ইত্যাদির কারণে ঈমান চলে যায় না। কিন্তু এতে ঈমান ও আমল ক্ষতিগ্রস্ত
হয় তাতে কোন সন্দেহ নাই।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে সকল খারাপ বৈশিষ্ট্য থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
নাক ফুল ও কানের দুল
সংক্রান্ত বোনদের কতিপয় প্রশ্নের উত্তর
(১২৭) প্রশ্ন: মহিলাদের
জন্য কানের দুল ও নাক ফুল পরার বিধান কি?
উত্তর:
নাক
ফুল, কানের দুল, চুরি ইত্যাদি অলংকার পরিধান করা আমাদের সমাজে নারীদের সাজসজ্জার অন্তর্ভুক্ত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এসব ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।
ইসলাম
নারীদেরকে এগুলো ব্যবহারে বাধা দেয় না। বরং তাদেরকে অঙ্গসজ্জা এবং অলংকার পরিধানের
প্রতি উৎসাহিত করে। তবে অলংকার পরে পর পুরুষদের সামনে খোলামেলা চলাফেরা করা কোন অবস্থায়
বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।
(১২৮) প্রশ্ন: ওযু ও
ফরয গোসলে মেয়েদের নাক ফুল বা কানের দুল নাড়িয়ে ছিদ্রের মধ্যে পানি পৌঁছানো জরুরি কি?
উত্তর:
গোসলে
মহিলাদের নাক ফুল বা কানের দুল খুলে বা তা নাড়িয়ে ছিদ্রের ভিতর পানি পৌঁছনো আবশ্যক
নয়।
ওযুতে
নাকের বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ। তবে হাদিসে নাক ঝাড়া বা নাক পরিষ্কার
করার প্রতি গুরুত্ব এসেছে। তাই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
আর
কান মাসেহ করার সময় কানের দুলের উপর দিয়ে হাত মাসেহ করাই যথেষ্ট।
অনুরূপভাবে
গোসল করার সময় কানের দুল খোলা বা নড়ানো জরুরি নয়। কানের উপরে পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট
হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
(১২৯) প্রশ্ন: মনে করুন,
বরপক্ষ আমাকে দেখতে এসে হবু শ্বশুর-শাশুড়ি খুশি হয়ে তাদের ইচ্ছায় এক জোড়া কানের দুল
আমাকে গিফট করলেন। কিন্তু পরে সে বিয়েটা হয় নি। কোন কারণে বিয়েটা ভেঙে গেছে। পরে দুলগুলো
ফিরিয়ে দিতে চাইলেও তারা নেয় নি।
এখন এগুলো কি এখন আমি
স্বাভাবিক ভাবে ব্যবহার করতে পারবো? এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে? এ মূহুর্তে আমার করণীয় কি?
উত্তর:
তারা
যেহেতু কানের দুলগুলো উপহার হিসেবে দিয়েছে সেহেতু আপনি তা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে
পারেন। এতে কোনো আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
কুড়িয়ে পাওয়া স্বর্ণে
দুলের ক্ষেত্রে করণীয়:
(১৩০) প্রশ্ন: আমার এক
আত্মীয় এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় দেখে তিনি সেটা তুলে বাড়িতে
নিয়ে এসেছেন। এখন সেই অলংকার ব্যবহার করা কি তার জন্য জায়েজ হবে?
উত্তর:
এ
ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিম্নোক্ত দুটি হাদীস পড়ুন:
♦ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ যখন কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু কুড়িয়ে নেয় সে যেন তার ওপর
দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে, তারপর সে যেন তা গোপন না করে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে,
তারপর যদি তার মালিক আসে, তবে সে সেটার অধিকারী, আর যদি না আসে, তবে সেটা আল্লাহর সম্পদ,
তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’ (ইবনে হিব্বান : ৪৮৯৪)।
♦ যাইদ ইবনে খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, কোন হারানো জিনিস প্রাপ্তি প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন:
عَرِّفْهَا سَنَةً
فَإِنِ اعْتُرِفَتْ
فَأَدِّهَا وَإِلاَّ
فَاعْرِفْ وِعَاءَهَا
وَعِفَاصَهَا وَوِكَاءَهَا
وَعَدَدَهَا ثُمَّ
كُلْهَا فَإِذَا
جَاءَ صَاحِبُهَا
فَأَدِّهَا
“এক
বছর না হওয়া পর্যন্ত এর ঘোষণা দিতে থাক। যদি সনাক্তকারী কোন লোক পাওয়া যায় তাহলে
তাকে তা ফিরত দাও। এর ব্যতিক্রম হলে তুমি এর থলে ও থলের বন্ধনী সঠিকভাবে চিনে রাখ এবং
এর মধ্যকার জিনিস গণনা করার পর কাজে ব্যবহার কর। তারপর মালিক এসে গেলে এটা তাকে ফিরিয়ে
দিও।” (সহীহ, ইবনে মাজাহ (২৫০৭), নাসাঈ)
মোটকথা
স্বর্ণালঙ্কার বা মূল্যবান বস্তু, টাকা-পয়সা ইত্যাদি জিনিস কুড়িয়ে পেলে উপরোক্ত বিধিবিধানগুলো
মেনে চলা আবশ্যক। আল্লাহ তাওফিক দানকারী। আল্লাহু আলাম।
নবদম্পতির মাঝে মিল-মোহাব্বত
সৃষ্টির ১০ উপায়
(১৩১) প্রশ্ন: নব দম্পতির
মাঝে বনিবনা না হলে কী করণীয়? তারা কি একে অপরকে বুঝার জন্য কিছু দিনের জন্য আলাদা
থাকতে পারে? শরিয়ত এ ব্যাপারে কী বলে?
উত্তর:
বিয়ের
পর নবদম্পতির মাঝে বনিবনা বা মিলমিশ না হলে একে অপরকে বুঝার উদ্দেশ্যে দূরে থাকা কোনো
সমাধান নয়। এতে সমস্যা কমার পরিবর্তে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি আছে।
যাহোক
তাহলে এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে:
১)
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে কথা বলা, আলোচনা করা। কথা বলার মাধ্যমেই অধিকাংশ সমস্যার
সমাধান করা সম্ভব।
২)
একে অপরের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত হক বা অধিকার আদায় করা। এই অধিকারের দিকে
মনোযোগ না দিলে মনমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে।
৩)
একে অপরকে বুঝতে কিছুটা সময় নেয়া। তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। এ জন্য দুজনের আলাদা থাকা জরুরি
নয়।
অবশ্য
যদি তারা একান্তই কয়দিনের জন্য দূরে থাকতে চায় তাহলে থাকতে পারে। কিন্তু সেটা যেন দীর্ঘ
সময় না হয়ে যায়।
৪)
নবদম্পতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা একে অপরকে সুখী করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
এ জন্য কথার ফাঁকে ফাঁকে ও আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে অপরেরে ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়গুলো
বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবে এবং সেভাবে কাজ করবে।
৫)
সঙ্গীর মধ্যে ছোটখাটো দোষত্রুটি থাকলেও সেগুলোর জন্য রাগারাগি করবে না বরং আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মেনে নিবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কেউ পরিপূর্ণ নয়। কেউ দোষত্রুটি
থেকে মুক্ত নয়। এ দুনিয়ার জীবনে সব কিছু ইচ্ছেমত পাওয়া সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত
ও ইচ্ছামত সব কিছু পাওয়া যাবে একমাত্র জান্নাতে।
৬)
সঙ্গীর মধ্যে দোষত্রুটি থাকলে যথাসম্ভব ধৈর্য ও সহনশীলতা সহকারে নিজেরাই সংশোধন করার
চেষ্টা করবে। এ সব বিষয় বাইরে প্রকাশ করা উচিৎ নয়।
৬)
মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে সব পরিবারে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু
এসব সমস্যা যেন দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়ার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য
এগুলোকে বড় করে দেখার প্রয়োজন নাই।
৭)
দাম্পত্য জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া মানে সমস্যা
বৃদ্ধি করা। সুতরাং নিজেদের সমস্যাগুলো বাবা, মা, ভাই, বোন, চাচা, মামা কাউকেই বলা
ঠিক নয়।
তবে
নিজেরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হলে তখন এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া উচিৎ যে, সমাধান
দিতে পারবে বলে আশা করা যায়।
৮)
তারা যে, বিয়ে করতে পেরেছে এ জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা কর্তব্য। এ কৃতজ্ঞতা
বোধ দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে সাহায্য করবে।
৯)
স্বামী বা স্ত্রীর শারীরিক সক্ষমতা বিষয়ক কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সাহায্য
নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঙ্গীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে এবং তাকে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে
তাড়াহুড়া করা উচিৎ নয়।
১০)
সর্বোপরি দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও সমস্যা মুক্ত করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে
দুআ করা।
আল্লাহ
তাআলা প্রতিটি দাম্পত্য জীবনকে সুখ-শান্তি দ্বারা ভরে দিন। সকলের প্রতি বর্ষণ করুন
তার অবারিত রহমত ও কল্যাণের বারিধারা। আল্লাহুম্মা আমীন। আল্লাহু আলাম।
(১৩২) প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কুরবানি
করা কি বৈধ?
উত্তর:
মৃত
ব্যক্তি যদি কুরবানি করার ওসিয়ত করে যায় তাহলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার উত্তরাধীগণ
ওসিয়ত পালনার্থে তার পক্ষ স্বতন্ত্রভাবে থেকে কুরবানি করবে। অন্যথায় মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে
আলাদাভাবে কুরবানী করা অধিকাংশ আলেমের মতে ঠিক নয়। কেননা এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা ও আমল পাওয়া যায় না।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁর প্রাণ প্রিয় স্ত্রী খাদিজা রা.,
প্রিয় চাচা হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব রা., তিন ছেলে ও তিন মেয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায়
গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তিনি তাদের পক্ষ থেকে কখনও স্বতন্ত্রভাবে কুরবানি করেন নি। কোনো
সাহাবী এমনটি করেছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তবে
কুরবানি করার সময় যদি পরিবারের জীবিত ও মৃত সকলকে নিয়তে শরিক করা হয় তাহলে আল্লাহ তাআলা
সকলকে সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
أبو سعيد
رضي الله
عنه: (أن
رسول الله
صلى الله
عليه وسلم
أتى يوم
النحر بكبشين
أملحين فذبح
أحدهما فقال
هذا عن
محمد وأهل
بيته وذبح
الآخر فقال
هذا عمن
لم يضح
من أمتي
আবু
সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরবানির দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নিকট সাদা-কালো রঙ বিশিষ্ট দুটি দুম্বা আনা হল। তিনি দুটির মধ্যে একটি জবেহ করে
বললেন, এটি মুহাম্মদ এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে এবং আরেকটি জবেহ করে বললেন, এটি আমার
উম্মতের যারা কুরবানি করে নি তাদের পক্ষ থেকে।” (মুসনাদ আহমদ)
‘পরিবার’
এর মধ্যে জীবিত ও মৃত সকলেই অন্তর্ভূক্ত।
◈
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রভাবে কুরবানী করার ব্যাপারে পূর্বসূরী আলেমদের অভিমত:
♦ ইমাম মালিক মৃত বাবা-মা’র পক্ষ থেকে
কুরবানি করাকে অপছন্দ করতেন। যেমন:
روي محمد
عن مالك
قال: لا
يعجبني أن
يضحي عن
أبويه الميتين،
قال في
الشرح: لكون
الأضحية من
أحكام الحي
اهـ
মুহাম্মদ
বর্ণনা করেন ইমাম মালিক থেকে। তিনি বলেন:
“মৃত
বাবা-মার পক্ষ থেকে কুরবানি করাকে আমি পছন্দ করি না।”
ব্যাখ্যাকার
বলেন: তা এই কারণে যে, “কুরবানি করা জীবিত ব্যক্তিদের আহকামের অন্তর্ভুক্ত।”(আল মুন্তাকা
শারহুল মুআত্তা)
♦শাফেয়ী মাজহাবের ফিকাহর কিতাবে এ কথা
বহু স্থানে উল্লেখিত হয়েছে যে,
لا يصل
إلى الميت
ثواب الأضحية
ولا القراءة
وحج التطوع
“কুরবানি,
কুরআন তিলাওয়াত এবং নফল হজ্জের সওয়াব মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছে না।”
আরও
উল্লেখিত হয়েছে:
وكره فعلها،
أي الأضحية
عن ميت
كالعتيرة
“আর
তিনি (ইমাম শাফেয়ী রহঃ) মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কুরবানি করাকে আতীরা (عتيرة) তথা জাহেলী যুগে মৃতদের উদ্দেশ্যে ছাগল জবেহ করার মতই
অপছন্দ করতেন।” (মাওয়াহিবুল জালীল শরহু মুখতাসার খালীল খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৬৮)
♦ হানাফি মাজহাবের ফিকাহর গ্রন্থ আল
بدائع الصنائع
-বাদায়েউস সানায়ে গ্রন্থে বলা হয়েছে:
إذ الأضحية
عن الميت
لا تجوز
“মৃত
ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়েয নেই।” (খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৭২)
♦ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে মৃত
ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানির ব্যাপারে অনুমতি বা নিষেধাজ্ঞা কোনাটাই পাওয়া যায় না।
যদিও হাম্বলী মাযহাবের কিতপয় আলেম মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দানের উপর কিয়াস করে কুরবানি
করাকে বৈধ বলেন।
♦ ইমাম তিরমিযী রহ. জামে তিরমিযীতে বলেন,
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক বলেছেন:
أحب إلى
أن يتصدق
عنه ولا
يضحي
“মৃত
ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান-সদকা করা আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। কিন্তু কুরবানি করা যাবে
না।”
অবশ্য একদল আলেম বলেন, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যেহেতু
দান করা সহীহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত সেহেতু কেউ যদি কুরবানি করে তা গরিব-দুঃখীদের মাঝে
বিলিয়ে দেয় তাহলে তা জায়েয আছে। এ ক্ষেত্রে সেখান থেকে কুরবানি দাতা বা তার পরিবার
কোন কিছুই গ্রহণ করতে পারবে না। বরং পুরোটাই গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে।
কিন্তু
মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে কুরবানি করার পক্ষ থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, সাহাবীদের পক্ষ থেকে কোনো দলিল পাওয়া যায় না। এমনকি মাজহাবের ইমামগণও
বৈধ বলেন নি-যেমনটি আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি।
সুতরাং
১ম মতটি অধিক বিশুদ্ধ। মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কুরবানি করার কারণে তারা যদি কবরে
লাভবান হত তাহলে সাহাবায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে সবার অগ্রে থাকতেন। কিন্তু তারা তা করেন
নি। অত:এব তাদের আগ বাড়িয়ে কিছু করা আমাদের জন্য সমীচীন হতে পারে না।
আল্লাহু
আলাম।
(১৩৩) প্রশ্ন: “স্বদেশ
প্রেম ঈমানের অঙ্গ”-এ কথা কি সঠিক? দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কতটুকু?
উত্তর:
আমাদের
দেশের মানুষের মুখে মুখে, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতায় প্রায় শোনা যায়, পত্র-পত্রিকা
এবং বই-পুস্তকেও লেখা থাকে “দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ।” এমনকি কতিপয় বক্তার ওয়াজের মধ্যেও
হাদিস হিসেবে বলতে শুনা যায়: ِحُبِّ الوَطَنِ
مِنَ الإيمان
“হুব্বুল ওয়াতানে মিনাল ঈমান-“দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।”
কিন্তু
হাদিস বিশারদগণের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নামে একটি মিথ্যাচার। মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় এমন হাদিসকে মওযু বা বানোয়াট হাদিস
বলা হয়।
বিশিষ্ট
মুহাদ্দিস ইমাম সাগানী তার ‘আল মাওযূআত’ বা বানোয়াট হাদিস শীর্ষক গ্রন্থে এ হাদিস সম্পর্কে
বলেন: موضوع বা বানোয়াট (হাদিস নং ৮১)
শাইখ আলবানী রহঃ বলেন:
“দেশপ্রেম
ঈমানের অন্তর্ভুক্ত” এটি বানোয়াট হাদিস যেমনটি ইমাম সাগানী এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ
বলেছেন। এর মর্মার্থটিও সঠিক নয়। কারণ দেশের প্রতি ভালবাসা থাকা নিজের জীবন ও অর্থ-সম্পদের
প্রতি ভালবাসা থাকার মতই একটি বিষয়। এগুলো মানুষের স্বভাবগত প্রবৃত্তি। সুতরাং এই ভালবাসা
যেমন বিশেষ প্রশংসা পাওয়ার হকদার নয় তেমনি এটি ঈমানের অপরিহার্য অনুষঙ্গও নয়। কেননা,
প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এই ভালবাসা বিদ্যমান রয়েছে-চাই সে মুমিন হোক অথবা কাফের হোক।”
(সিলসিলা যঈফা হাদিস নং ৩৬)
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন:
“দেশকে
ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ” কথাটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস হিসেবে
বলা হয়ে থাকে। এটি একটি মিথ্যাচার। দেশকে ভালবাসতে হলে, এ কারণে ভালবাসতে হবে যে, সেটি
ইসলামি রাষ্ট্র- চাই তা আপনার জন্মভূমি হোক বা দূরের কোনো দেশ হোক।সবগুলোই ইসলামী দেশ।
প্রতিটি ইসলামি দেশকে রক্ষা করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।”
(শাইখ
আল্লামা উসাইমীন রহ. কর্তৃক রিয়াযুস সালেহীন গ্রন্থের ব্যাখ্যা)
যাহোক,
দেশের প্রতি ভালবাসা থাকা মানুষের প্রকৃতিগত বিষয়। সকল ধর্মের লোকই তাদের দেশকে ভালবাসে।
কিন্তু কোনো ইসলামি দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা মুসলিম ও সুনাগরিক হিসেবে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কোনো ইসলামী দেশ যদি কাফের দেশ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন ঐ দেশে
বসবাসকারী প্রতিটি মুসলিমের জন্য সর্বাত্তকভাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা
অপরিহার্য হয়ে যায়। আবার অন্য দিকে দেশ থেকে যদি ইসলাম পালন করা অসম্ভব হয়ে যায় এবং
জান-মাল ও ইজ্জত-সম্ভ্রম অনিরাপদ পড়ে তখন দেশ ছেড়ে ‘হিজরত’ও করতে হতে পারে।
সুতরাং
দেশকে ভালবাসতে হবে, একতাবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে হবে এবং দেশ বিরোধী সকল
অন্যায় কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় প্রতিটি মুসলিমদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
কিন্তু তা “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ” এমন মিথ্যা হাদিসের উপর ভিত্তি করে নয় বরং দেশের
প্রতি দায়িত্ববোধ ও প্রকৃতিগত ভালবাসা থেকে।
আল্লাহ
তাআলা আমাদের দেশকে সকল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং দেশের শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত
করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
(১৩৪) প্রশ্নঃ যিলহজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কুরবানি করতে চায়
তার জন্য কুরবানী হওয়া পর্যন্ত চুল, নখ ইত্যাদি কাটা কি হারাম?
উত্তরঃ
যিলহজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কুরবানি করতে চায় তার জন্য শরীরের অতিরিক্ত পশম (যেমন,
মাথার চুল, নাভির নিচের বা বগলের পশম ইত্যাদি) কাটা জায়েজ নাই। কারণ, উম্মে সালামা
রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
((إذا دخل شهر
ذي الحجة
وأراد أن
يضحي فلا
يأخذ من
شعره ولا
من أظفاره
شيئاً))
“যিলহজ্জ
মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কুরবানি করতে চায় সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।” (সহীহ মুসলিম,
অধ্যায়: কুরবানি, অনুচ্ছেদ: যিলহজ্জ মাস শুরু হলে যে ব্যক্তি কুরবানি করবে তার জন্য
চুল ও নখ কাটা নিষেধ।)
অন্য
বর্ণনায় রয়েছে: ((ولا من
بشرته شيئاً)
“শরীরের চামড়া যেন না কাটে।” (সহীহ মুসলিম)
এ
সংক্রান্ত কতিপয় মাসায়েল:
ইবনে
কুদামা রহ. বলেন: নিষেধাজ্ঞার দাবী হলো হারাম হওয়া। অর্থাৎ যে কুরবানী করতে চায় তার
জন্য কুরবানীর পশু জবেহ করা পর্যন্ত নখ-চুল, শরীরের অতিরিক্ত চামড়া ইত্যাদি কাটা হারাম।
এ বিধান যে ব্যক্তি কুরবানি করবে কেবল তার জন্য
প্রযোজ্য। যাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হবে যেমন, স্ত্রী, সন্তান বা পরিবারের অন্য
সদস্যগণের জন্য অথবা যারা কুরবানি করবে না তাদের নখ-চুল ইত্যাদি কাটাতে কোন অসুবিধা
নাই।
যিলহজ্জ
মাসের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে কুরবানির পশু জবেহ করা পর্যন্ত চুল-নখ কাটা যাবে না।
কুরবানি করার পর তা কাটা যাবে।
কোন
ব্যক্তি ভুল বশত: নখ, চুল ইত্যাদি কেটে ফললে তার জন্য কাফফারা নেই। তবে এ জন্য তওবা
করতে হবে।
এ
দিনগুলোতে নতুন জামা কাপড়, আতর-সুগন্ধি মাখা ও স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হওয়ায় কোন অসুবিধা
নাই।
সালাতুত তওবার ফযিলত
এবং প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে ও রাতে তা আদায় করার বিধান
(১৩৫) প্রশ্ন: কারো যদি
নির্দিষ্ট কোনো গুনাহের কথা মনে না থাকে তবুওআমভাবে সকল ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা পাওয়ার
উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে সালাতুত তওবা পড়ে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে তবে
কি বিদআত হবে?
উত্তর:
গুনাহ
মোচনের জন্য সালাতুত তওবা অত্যন্ত কার্যকরী একটি সালাত। আহলে ইলমগণ এ সালাত পড়ার বৈধতার
ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
এ
মর্মে বর্ণিত হয়েছে একাধিক হাদিস। যেমন:
♦১) আবু বকর রা. বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি:
مَا مِنْ
عَبْدٍ يُذْنِبُ
ذَنْبًا فَيُحْسِنُ
الطُّهُورَ ثُمَّ
يَقُومُ فَيُصَلِّي
رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
إِلاَّ غَفَرَ
اللَّهُ لَهُ
”
.
ثُمَّ قَرَأَ
هَذِهِ الآيَةَ
{وَالَّذِينَ
إِذَا فَعَلُوا
فَاحِشَةً أَوْ
ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ
ذَكَرُوا اللَّهَ
}
إِلَى آخِرِ
الآيَةِ
“যখন
কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে উযু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দু’ রাক‘আত সালাত আদায়
করে অত:পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।”
অতঃপর
তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন: “এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের উপর অত্যাচার
করে আল্লাহকে স্বরণ করে…” আয়াতের শেষ পর্যন্ত।(সূরা আলে ‘ইমরান: ১৩৫)।
[আল্লামা
আলবানী সহীহ আবু দাউদে হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
♦ ২) ইমাম তাবরানী কিতাব আল-কবিরে বিশুদ্ধ
সনদে আবুদ্ দারদা রা. হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ تَوَضَّأَ
فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ
ثُمَّ قَامَ
فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ
أَوْ أَرْبَعًا
(شك أحد
الرواة) يُحْسِنُ
فِيهِمَا الذِّكْرَ
وَالْخُشُوعَ ،
ثُمَّ اسْتَغْفَرَ
اللَّهَ عَزَّ
وَجَلَّ ،
غَفَرَ لَهُ
“যে
ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই বা চার রাকাত (এক বর্ণনাকারী সংখ্যার
ব্যাপারে সন্দিহান) সালাত আদায় করে এবং তাতে সে ভালোভাবে রুকু ও সেজদা করে, তারপর আল্লাহ
তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।”
এটাকেই
সালাতুত তওবা বলা হয়।
সুতরাং
যে কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে আমাদের কর্তব্য হবে, কাল বিলম্ব না করে সুন্দরভাবে ওযু
করে একান্ত নিবিষ্টচিত্তে দু বা চার রাকআত সালাত আদায় করে মহান রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা
করা। তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম
দয়ালু ও অতিশয় ক্ষমাশীল।
তবে
প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে বা অন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে তা আদায় করা ঠিক
নয়। কেননা আমাদের পূর্বসূরি তথা সাহাবী ও তাবেঈনের কেউ এমনটি করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া
যায় না। অথচ আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া ক্ষেত্রে তারা ছিলেন আমাদের চেয়েও অধিক অগ্রগামী।
সুতরাং
সালাতুত তওবা আদায় করার জন্য এভাবে নতুন নিয়ম চালু করা হলে তা বিদআতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। কেননা, যখন আপনি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে এ সালাত আদায় করবেন তখন স্বভাবতই
প্রশ্ন সৃষ্টি হবে যে, এটা কি তাহলে নিয়মিত সুন্নত (সুন্নাতে রাতেবা)? নিয়মিত সুন্নত
হলে তার দলিল কোথায়? আর যেহেতু নিয়মিত পড়ার দলিল নেই তাই এমনটি করা ঠিক হবে না। বরং
যখনই কোনো গুনাহ সংঘটিত হবে তখনই তা পড়া উচিৎ। এটাই সঠিক নিয়ম।
আল্লাহ
তাওফিক দান করুন। আমীন।
(সমাপ্ত)
(১) প্রথম পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(২) দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৩) চতুর্থ পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৪) পঞ্চম পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই
শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ
কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে
ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে,
আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের
প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর
তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও
একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে
বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment