Search This Blog

Sunday, March 29, 2020

ইসলামি জিজ্ঞাসা ও সহিহ জবাব (পর্ব-২)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইসলামি জিজ্ঞাসা ও সহিহ জবাব
(পর্ব-২)
 
প্রশ্নোত্তর

(৫১) ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে ৬টি মারাত্মক অভিযোগ এবং সেগুলোর জবাব
নিম্নে ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে নাস্তিক ও অমুসলিমদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ছয়টি মারাত্মক ও স্পর্শকাতর অভিযোগ এবং সেগুলোর জবাব তুলে ধরা হল:
১মঃ মুসলিমরা জঙ্গি, সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, সাম্প্রদায়িক!
উত্তর:
অমুসলিমদের নিকট ইসলাম সম্পর্কে এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ধারণা। এটি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচারের ফলাফল। কোন অস্ত্রধারী যখন ইহুদীবাদের নামে মসজিদে আক্রমণ চালায়, যখন কোন খৃষ্টান ক্যাথলিক অস্ত্রধারী গ্রুপ আয়ারল্যান্ডের শহরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, যখন খৃষ্টান ধর্মের অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের সার্বিয় হিংস্র মিলেশিয়েরা বসনিয় নিরপরাধ মুসলিম নাগরিকদের উপর বর্বর হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট-তরাজ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তখন এসকল জঘন্য কার্যক্রমকে তো সে ধর্মের প্রতিটি অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় না বা সে ধর্মকেও দায়ী করা হয় না? অথচ অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বর্তমানে পৃথিবীর কোথায় হিংসাত্মক কোন ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ইত্যাদি বলে প্রচার মাধ্যমগুলো দোষারোপ করতে শুরু করে।
বর্তমানে যেসব রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সেগুলো হয়ত কোন কোনটি ইসলামী ভিত্তির উপর আদৌ প্রতিষ্ঠিত নয়। বরং সে সকল দেশের একনায়ক রাষ্ট্রশক্তি এবং রাজনৈতিক নেতারা ইসলামকে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছে। সুতরাং একজন নীতিমান মানুষের উচিৎ হবে, ইসলামের মূল উৎস থেকে ইসলামকে বিশ্লেষণ করা। তাকে পার্থক্য করতে হবে, ইসলাম সম্পর্কে বর্তমানে মিডিয়াতে কি বলা হচ্ছে আর কুরআন ও হাদিসে ইসলামের মূল শিক্ষা কী দেয়া হয়েছে?
ইসলাম মানে আল্লাহর আনুগত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা। শব্দগত বিশ্লেষণ করলে মূলত ইসলাম মানে শান্তি। একজন মানুষ নিজের জীবনে ইসলামকে বাস্তবায়ন করলে আত্মিকভাবে খুঁজে পায় পরম শান্তি ও অনাবিল তৃপ্তি। ইসলাম সর্বদা শান্তির পক্ষে; সন্ত্রাসের বিপক্ষে।
বর্তমানে পাশ্চাত্য সমাজে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের প্রভাব নেই বললেই চলে। যার কারণে তারা ইসলামকে তাদের ধর্মের মতই একটি প্রত্যাখ্যাত বা বিতাড়িত ধর্ম মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। এতে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি সমস্যার জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা এবং সর্বোত্তম সমাধান।
ইসলামে মানুষের আত্মরক্ষা করার বৈধতা রয়েছে। রয়েছে দ্বীন রক্ষা করার বৈধতা। ইসলামে রয়েছে বিনা অপরাধে যে সকল মানুষ নিজের ঘর-বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে সে সকল দুর্বল মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহবান। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে সুস্পষ্ট যুদ্ধ নীতি। যেখানে বলা হয়েছে, যুদ্ধাবস্থায় সাধারণ মানুষকে হত্যা করা যাবে না। এমনকি তাদেরকে ন্যূনতম কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষেত-খামার, গাছ, ফসলাদি, পশু-পাখি ইত্যাদি ধ্বংস করা যাবেনা।
মোটকথা, নিরপরাধ মানুষকে কোন অবস্থায় হত্যা করতে ইসলাম অনুমতি দেয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আর তোমরা আল্লাহর পথে ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যুদ্ধ কর যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসে। এবং সীমালঙ্ঘন কর না। আল্লাহ তো সীমালঙ্ঘন কারীদেরকে ভালবাসেন না।” (সূরা বাকারাঃ ১৯০)
ইসলামে যুদ্ধ হল সর্বশেষ পদক্ষেপ। এবং তা ইসলামী শরীয়ত প্রদত্ত এক অলঙ্ঘনীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
জিহাদ শব্দের অর্থ হল, সাধনা করা বা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদের দুটি অর্থ রয়েছে। একটি হল, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে লড়াই করা । অপরটি হল, মানুষের রিপু, কু প্রবৃত্তি, স্বার্থপরতা, হিংসা, অহংবোধ, নিচুটা ইত্যাদি অন্তরের গোপন শত্রুদের সাথে নিরন্তর সংঘাত।
২য়ঃ ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে!
উত্তর:
‘ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে’ ইসলামের প্রতি এ জাতীয় অপবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। বরং ইসলাম এসেছে নারীদেরকে অত্যাচারের শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য । ইসলাম এসেছে নারীর মর্যাদা এবং সম্ভ্রমকে রক্ষা করার জন্য।
পর্দা করার নাম অত্যাচার নয়। বরং পর্দা হচ্ছে নারীর মর্যাদা এবং সম্ভ্রম রক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
নারী ও পুরুষের প্রকৃতি এবং স্বভাবকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। নারী ও পুরুষের স্বভাব ও প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রত্যেককে প্রদান করা হয়েছে আলাদা আলাদা দায়িত্ব। সন্তান গর্ভে ধারণ, প্রসব, দুগ্ধ দান, প্রতিপালন ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতে হয় নারীকে। প্রতিমাসে নির্দিষ্ট দিনে ঋতুস্রাব, রক্তস্রাব ইত্যাদি শুধু মহিলাদের হয়। পক্ষান্তরে পুরুষ এসব থেকে মুক্ত। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র এবং দায়িত্ব আলাদা করা হয়েছে। সুতরাং নারী বাড়িতে থেকে বাড়ির যাবতীয় দায়িত্ব পালন, সন্তান প্রতিপালন ইত্যাদি করার নাম মহিলাদেরকে ‘জেলখানায় বন্দি’ রাখা নয়। বরং এটা তার স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক বিশাল দায়িত্ব। তাছাড়া পুরুষ থেকে পৃথক শুধু নারী অঙ্গনে নারীরা কাজ করবে, অর্থ উপার্জন করবে তাতে ইসলাম বাঁধা প্রদান করেনি।
ইসলাম নারী-পুরুষের অধিকারকে সমানভাবে সংরক্ষণ করেছে। যা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ইসলাম বলেছে, একজন নারী চাই বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক তার রয়েছে ব্যক্তিগত অধিকার। সে তার নিজস্ব সম্পদকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। তার রয়েছে ব্যক্তিগত মতামত, ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের অধিকার।
একজন মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহের আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে। তার অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ বৈধ হবে না। তবে অপ্রাপ্ত অবস্থায় মেয়ের অভিভাবক মেয়ের বিয়ে দিলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে রাখা না রাখা তার ইচ্ছাধীন। ইচ্ছে করলে সে বিয়ে অটুট রাখতে পারে ইচ্ছে করলে তা ভঙ্গ ও করতে পারে।
বিবাহের পর মিলমিশ না হলে স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করার বা না করাও তার ইচ্ছাধীন। সে ইচ্ছা করলে ‘খোলা তালাক’ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।
বিবাহের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে সে ‘মোহর’ পাওয়ার হকদার। এ মোহর সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম আচরণ করার জন্য স্বামীকে নির্দেশ প্রদান করেছে ইসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তিনি আরও বলেছেন, “তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।”
মা হিসেবে ইসলাম নারীর যে মর্যাদা দিয়েছে তা নজির বিহীন। ইসলাম বলেছে, “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল,
আমার সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী হকদারকে?
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
প্রশ্ন করা হল: তার পর কে?
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
আবার প্রশ্ন করা হল: তারপর কে?
তিনি বললেন, “তোমার মা। এরপর তোমার পিতা।”
পিতার তুলনায় এখানে মাকে তিনগুণ অধিকার দেয়া হয়েছে।
ইসলামে উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত ন্যায় ও যুক্তি সংগত।
যে বিষয়টি নিয়ে তথাকথিত নারীবাদীরা বুঝে-না বুঝে চেঁচামেচি করছে তা হল, ইসলাম বলেছে, ‘উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর দ্বিগুণ সম্পদের অধিকারী হবে।’
দেখা যাক ইসলাম কি এ আইনের মাধ্যমে সত্যি কি নারীদের প্রতি অত্যাচার করেছে? দেখা যাবে, না, বরং এটি একটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত আইন। তা কয়েকটি কারণে। যেমন:
● ১) ইসলামী আইনে মেয়ে একদিকে পিতা মৃত্যু বরণ করার পর ছেলের তুলনায় অর্ধেক সম্পদের অধিকারী হবে ।
● ২) অন্যদিকে স্বামী মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রী তার পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হবে। (সন্তান থাকলে ৮ ভাগের ১ ভাগ আর সন্তান না থাকলে ৪ ভাগের ১ ভাগ)।
● ৩) বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া অপরিহার্য করেছে ইসলাম। এ মোহরানা তার অধিকার।
● ৪) স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সহ পরিবারের যাবতীয় খরচ পুরুষের জন্য আবশ্যক। মহিলাকে কোন খরচ দিতে বাধ্য করা হয় নি।
● ৫) তাছাড়া, স্বামীর বাড়িতে কোন সমস্যা হলে পিতা যদি মারা যাওয়ার পর সাধারণত বোন তার ভাইয়ের বাড়িতেই আশ্রয় নেয়। ভাইকে অনেক সময় বোনের সমস্যায় এগিয়ে আসতে হয় এবং ঝামেলা পোহাতে হয়। ইত্যাদি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে প্রতিভাত হবে, একজন নারীর তুলনায় পুরুষের সম্পদের প্রয়োজন অনেক বেশী। তাই ইসলাম সম্পদ বণ্টনের যে আইন প্রণয়ন করেছে তা অত্যন্ত বিবেক সঙ্গত এবং যুক্তি যোগ্য।
● ৬) সবচেয়ে বড় কথা হল, যে মহান আল্লাহ এই বিশাল ভূমণ্ডল-নভোমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং তা পরিচালনা করছেন তার দেয়া আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করা তো মুসলিম হিসেবে সকলের জন্য অপরিহার্য। আর যে সকল বিধর্মী ইসলামকেই মানে না, আল্লাহ ও রসূলকে বিশ্বাস করে না তাদের তো শুধু এ একটি আইনই নয় বরং গোটা ইসলামই তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য!
মোটকথা, যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করতে চায় সে আল্লাহর আইনকে অবশ্যই ন্যায় সঙ্গত মনে করবে এবং তাঁর দেয়া আইন কানুনের কাছে মাথা নত করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশ মেনে চলবে তাহলেই এ দুনিয়াতে পাবে শান্তি এবং পরকালে পাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
আল্লাহ যেন আমাদেরকে সে পথেরই অনুসারী বানান। আমীন॥
৩য়ঃ ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর মুসলিমগণ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মকে সহ্য করে না!
উত্তর:
বিভিন্ন সামাজিক গ্রন্থে যে দৃশ্যটি দেখানো হয় তা হল, একজন ঘোড় সোওয়ার। যার এক হাতে রয়েছে উন্মুক্ত তলোয়ার আরেক হাতে কুরআন। সে জোর করে মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত করার জন্য যুদ্ধে ছুটে যাচ্ছে। মূলত: এ দৃশ্যটি ইসলামের প্রকৃত রূপ নয়। ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টির জন্য এ জাতীয় একটি কল্পিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বরং ইসলাম কখনো অন্য কোন ধর্মাবলম্বীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করতে বলেনি। বরং সকল ধর্মকে সম্মান করতে শিক্ষা দিয়েছে। সকল ধর্মাবলম্বীদেরকে প্রদান করেছে ধর্ম গ্রহণের স্বাধীনতা। ইরশাদ হচ্ছে: “ দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়-পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনা: ৮)
ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল:
“ দ্বীনের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তী করা যাবে না। হেদায়েত এবং গোমরাহি স্পষ্ট হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি ‘তাগুত’ কে অস্বীকার করল সে এমন ‘মজবুত হাতল’ ধরল যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবার নয়।” (সূরা বাকারা: ২৫৬)
ইসলামের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, ইসলামী সমাজে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করা। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন মুসলিম দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়গুলোকে সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছিল এবং আজ পর্যন্ত রয়েছে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস পূর্ণ।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ৬৩৪ হিজরিতে বিজয়ী বেশে যখন বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করলেন তখন তিনি সেখানে অবস্থানরত প্রতিটি মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দান করেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। আরও ঘোষণা করলেন, প্রতিটি মানুষের জান-মাল নিরাপদ এবং তাদের উপাসনালয়গুলোকে রক্ষা করার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অনুরূপভাবে ইসলামী আইনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করা অনুমোদিত। যেখানে সংখ্যালঘুদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী পারষ্পারিক বিষয়াদির নিষ্পত্তি করা হবে।
মোটকথা, ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের জান-মালকে পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য করা হয়। চাই সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক। ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। কুরআন বলে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নাই; সকল মানুষ সমান। ইরশাদ হচ্ছে:
“হে মানুষগণ, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে বেশী সম্মানিত যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু।” (সূরা হুজুরাত: ৪৯)
৪র্থঃ ইসলাম শুধু আরবদের জন্য!
উত্তর:
কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী মানুষকে বলতে শোনা যায়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু আরবের অধিবাসী ছিলেন তাই ইসলাম শুধু আরবদের জন্য। তাই তারা ‘আরবের ইসলাম’, ‘মুহাম্মদের ইসলাম’ ইত্যাদি কথা বলে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কিন্তু এ ধারণা কি ঠিক? উত্তর হল, না। অবশ্যই ঠিক নয়। কারণ, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমগ্র বিশ্ববাসীর নবী। সমগ্র মানবতার নবী। কুরআনে বলা হয়েছে: “আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবতার জন্য সতর্ক কারী এবং সুসংবাদ দানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা সাবাঃ ২৮)
অতএব, ‘ইসলাম শুধু আরবদের জন্য সীমাবদ্ধ’ এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়।
এর প্রমাণ আমরা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের পরিসংখ্যান থেকে পেতে পারি। যেমন, সারা বিশ্বে বর্তমান মুসলিম জন সংখ্যা ১.৪ বিলিয়ন (১৪০ কোটি)। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি চার জনে ১ জন মুসলমান। ইসলাম বর্তমানে উত্তর আমেরিকা সহ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশী ক্রমবর্ধমান ধর্ম। ইসলাম হল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা জাতি-গোষ্ঠী, বর্ণ-গোত্র ও বিভিন্ন সংস্কৃতির বিরাট জনগোষ্ঠীর ধর্ম জীবন ব্যবস্থা। ফিলিপাইন থেকে নাইজেরিয়া পর্যন্ত মুসলমানদেরকে একত্রিত রেখেছে এক অভিন্ন বিশ্বাস এবং চেতনা। আরব বিশ্বে বসবাস করে মাত্র ১৮% মুসলমান। সর্ব বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হল ইন্দোনেশিয়া। মুসলমানদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে বাস করে। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে বাস করে প্রায় ২০%। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৭%। আরব বিশ্বে ১৮%। চিন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১০%। তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের নন আরব দেশগুলোতে ১০%। এ ছাড়াও পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলিমদের বসবাস রয়েছে। তম্মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি। তবে রাশিয়া এবং রাশিয়া থেকে বিভক্ত প্রজাতন্ত্রগুলো, ভারত এবং মধ্য আফ্রিকায় বিরাট অংকে মুসলমানদের অবস্থান। আর শুধু আমেরিকাতেই রয়েছে প্রায় ৮ মিলিয়ন মুসলমান।
৫মঃ ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে নারীদেরকে অপমানিত করেছে!
উত্তর:
ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থার নাম যা সকল যুগের জন্য সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে ইসলাম সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিস্থিতির কারণে মানুষ ২য় বিবাহ করতে বাধ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার অধিকার সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
তাই ইসলাম ২য় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়েছে যে, সকল স্ত্রীর সাথে ন্যায়পরায়ণতা সুলভ আচরণ করতে হবে। কোন মহিলাকে এ বিয়েতে বাধ্য করা যাবে না এবং এ বিয়েতে ২য় স্ত্রী শর্তারোপ করতে পারে।
ইসলামে একাধিক বিয়ে করা আবশ্যক করা হয়নি, উত্তমও বলা হয়নি। বরং তা শুধু বৈধ বলা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি চারটি বিয়ে করতে পারে তবে শর্ত হচ্ছে, তাকে শরীয়ত নির্ধারিত অলঙ্ঘনীয় শর্তাবলী অবশ্যই পূরণ করতে সক্ষম হতে হবে। সেগুলো হল, ন্যায়-পরায়নতা বজায় রাখা, প্রত্যেক স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হওয়া, ভরণ-পোষণ সহ জীবন-যাপনের উপকরণের ব্যবস্থা করা।
মোটকথা, শুধু প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। আর তাও শর্ত সাপেক্ষে। সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তব প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ইসলাম এ অনুমতি প্রদান করেছে।
সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যারা ইসলামের এ বিধানকে অনৈতিক এবং এতে নারীদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তারাই যখন নিজের স্ত্রী বাদ দিয়ে অন্য মহিলাকে ‘র্গাল ফ্রেন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে তখন তার এটাকে অনৈতিক বলতে নারাজ! তারাই নারীদেরক পণ্যের মত পুরুষের উপভোগের বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর প্রতি এর থেকে চরম অপমান আর কী হতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এই আইনের মাধ্যমে ইসলাম তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে লাঞ্ছনা ও অপমানের হাত থেকে উদ্ধার করে বৈধ পন্থায় সম্মানের সাথে ঘরে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
তাই পরিশেষে বলব, একাধিক বিবাহের বৈধতা দিয়ে ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, প্রকৃতিগত চাহিদা এবং নানা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করেছে। নারীকে পরপুরুষের ভোগ্য বস্তু থেকে উদ্ধার করে তাকে মর্যাদা এবং সম্মানের আসনে আসীন করেছে।
তবে প্রয়োজন, ইসলামী আইনের ব্যাপারে মুসলমানদের গণসচেতনতা এবং সঠিকভাবে তা ব্যবহার করা। তাহলেই যে উদ্দেশ্যে ইসলাম এ আইনকে মানবতার কল্যাণে দান করেছে সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন॥
৬ষ্ঠঃ মুসলমানেরা অশিক্ষিত এবং পশ্চাৎপদ!
উত্তর:
ইসলাম এত দ্রুত বিকাশ লাভ করার অন্যতম কারণ হল, ইসলাম উদারতা, সহজ-সরল রীতি ও আদর্শের দিকে আহবান জানায়। ইসলাম মানুষকে তার বিবেক ও জ্ঞানকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি প্রথম বাণী হল, “পড়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।” এই নির্দেশকে পালন করতে গিয়ে অতি অল্প সময়ে বিরাট এক সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। মুসলমানগণ দিকে দিকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিল। প্রতিষ্ঠিত হল বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন আবিষ্কার, চিকিৎসা, অংক, ফিজিক্স, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, নির্মাণ শিল্প, সাহিত্য ও ইতিহাসে মুসলমানগণ পৃথিবীর নেতৃত্ব প্রদান করেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিভিন্ন শাখায় তাদের রচিত গ্রন্থগুলো শত শত বছর ধরে ইউরোপের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-গবেষণার মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। মধ্যযুগে মুসলিম মনিষীদের আবিষ্কৃত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইউরোপে প্রবেশ করে। তন্মধ্যে জ্যামিতি, আরবি সংখ্যা, শূন্যের ধারণা (যাকে অংকের প্রাণ বলা হয়) ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আধুনিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও মুসলমানগণ ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে যার হাত ধরে আজকের ইউরোপ নব নব আবিষ্কার আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। সে সব আবিষ্কারের অন্যতম হল, স্টার ল্যাব, উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্র, নৌপথের মানচিত্র ইত্যাদি।
মহিলাদের জুমার সালাতের বিধি-বিধান ও পদ্ধতি
(৫২) প্রশ্ন: মহিলাদের জুমার সালাতের সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর:
মহিলাদের জুমার সালাত সংক্রান্ত নিময়-পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত মাসায়েলগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:
ক. জুমার সালাত কেবল পুরুষদের জন্য ফরয; মেয়েদের জন্য নয়। সুতরাং মেয়েরা বাড়িতে যথা সময়ে নিয়ম মাফিক যোহরের সালাত আদায় করবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তারিক ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ
“জুমুআর নামায প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামাআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য/ফরয)। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়ঃ ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তি।” [সুনান আবু দাউদ (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة), হা/১০৬৭। হাদিসটিকে ইমাম আলাবানি সহীহুল জামে কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হা/৩১১১]
খ. কোন মহিলা যদি বাড়ির সন্নিকটে অবস্থিত মহিলাদের জন্য আলাদা নিরাপদ সালাতের ব্যবস্থা আছে এমন কনো মসজিদে যায় অথবা স্বামী বা মাহরাম পুরুষ (তথা পিতা, ভাই, সন্তান, দাদা, চাচা ইত্যাদি) এর সাথে জুমা সমজিদে যায় তাহলে সেখানে পুরুষদের সাথে তাদের মতই জুমার সালাত কায়েম করবে। যদিও মহিলাদের জন্য মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে সালাত পড়া অধিক উত্তম।
মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হল:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْـمَسَاجِدَ ، وَبُيُوْتُهُنَّ خَيْرٌ لَـهُنَّ
‘‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম’’। [সহিহ আবু দাউদ-শাইখ আলবানী, হা/৫৬৭]
আরেকটি হাদিস: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে।তিনি বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ إِذَا اسْتَأْذَنَّكُمْ إِلَيْهَا
‘‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না যদি তারা তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়’’। [মুসলিম, হাদিস নং ৪৪২]
গ. তারা মসজিদে গেলে অবশ্যই পূর্ণ পর্দা সহকারে যাবে, পরপুরুষদের থেকে দূরে অবস্থান করবে এবং আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لاَ تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ ، وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلاَتٌ
‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা যেন ঘর থেকে বের হয় কোন রকম সাজ-সজ্জা ও সুবাস-সুগন্ধ না লাগিয়ে’’। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৫; আহমদ: (২/৪৩৮),সহীহুল জামে-শাইখ আলবানী, হা/৭৪৫৭]
ঘ. বাড়িতে কেবল মহিলাদের নিয়ে আলাদাভাবে জুমার সালাত অথবা এককভাবে জুমার সালাত বৈধ নয়।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়ায় বলা হয়েছে:
“যদি কোন মহিলা ইমামের সাথে জুমার সালাত আদায় করে তাহলে তা যোহর সালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (অর্থাৎ পরে পুনরায় তার যোহর সালাত পড়ার প্রয়োজন নাই)। আর সে যদি একাকী সালাত পড়ে তাহলে সে কেবল যোহর পড়বে। এককভাবে তার জন্য জুমা পড়া বৈধ নয়।” (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা/৭৩৩৭)
আল্লাহু আলাম
দুজন ব্যক্তি জামাআতে সালাত পড়ার সময় ইমাম-মুক্তাদি একটু আগে-পিছে হয়ে দাঁড়াবে না কি সমান্তরাল হয়ে দাঁড়াবে?
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ by Asad Rony
প্রশ্ন: দু জন মিলে জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পার্শ্বে না কি বাম পার্শ্বে দাঁড়াবে এবং সে ক্ষেত্রে সে কি ইমামের বারাবর দাঁড়াবে না কি কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু জন ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদি পাশাপাশি পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। মুক্তাদি ইমাম থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়ানোর প্রচলিত রীতি সুন্নাহ পরিপন্থী।
এ মর্মে একাধিক হাদিস ও সাহাবীদের আমল তুলে ধরা হল:
ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে এ মর্মে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
بَاب يَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْإِمَامِ بِحِذَائِهِ سَوَاءً إِذَا كَانَا اثْنَيْنِ
পরিচ্ছেদঃ দু জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।
তারপর তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করেন:
ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি আমার খালা মায়মুনা রা. এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর আরও দু রাকআত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان), পরিচ্ছেদঃ ১০/৫৭. দু’জন সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে। হাদিস নং তাওহীদ প্রকাশনী: ৬৯৭ , আধুনিক প্রকাশনী: ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৬৬৩)]
অত্র হাদিসে জানা গেলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস রা. কে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে দাঁড় করান নি। আর এ কারণে ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে অনুচ্ছেদ রচনা করেে বলেছেন: “দু জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।” (যেমনটি উপরে আলোচনা করা হয়েছে)।
অন্য হাদিসে এসেছে:
عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِالْهَاجِرَةِ فَوَجَدْتُهُ يُسَبِّحُ فَقُمْتُ وَرَاءَهُ فَقَرَّبَنِي حَتَّى جَعَلَنِي حِذَاءَهُ عَنْ يَمِينِهِ فَلَمَّا جَاءَ يَرْفَا تَأَخَّرْتُ فَصَفَفْنَا وَرَاءَهُ.
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রা. এর নিকট প্রবেশ করলাম। সময়টা ছিল গরম। আমি তখন তাঁকে নফল সালাত রত (সালাতুয যোহা বা চাশতের সালাত) অবস্থায় পেলাম। তাই আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি আমাকে কাছে আনলেন এবং তাঁর ডান পার্শ্বে তাঁর বরাবর আমাকে দাঁড় করালেন। তারপর ইয়ারফা (উমর রা. এর খাদেম) আসলে আমি পেছনে সরে আসলাম। তারপর আমরা দু’জনেই তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম।
[মুআত্তা মালিক: পরিচ্ছদ-৯, চাশতের সময় বিভিন্ন নফল নামাযের বর্ণনা, হাদিস নং ৩৪৮, সনদ সহিহ]
আব্দুর রাযযাক তার মুসান্নাফ হাদিসগ্রন্থে ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বললেন, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলা:, একজন ব্যক্তি আরেকজনের সাথে সালাত আদায় করলে সে কোথায় অবস্থান করবে?
তিনি বললেন: তার ডান পাশে।
আমি বললাম: সে কি তার সাথে এমন সমন্তরালভাবে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়াবে যে, একজন অপরজন থেকে দূরে থাকবে না?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: আপনি এটা পছন্দ করেন যে, সে তার এমন বরাবর দাঁড়াবে যে, তাদের মাঝ কোনো ফাঁক থাকবে না?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
ইমাম মালিক তার মুআত্তা গ্রন্থে (১/১৫৪) নাফে রা. থেকে বর্ণনা করেন:
তিনি বলেন, আমি এক নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর পেছনে দাঁড়ালাম। তার সাথে আমি ছাড়া অন্য কেউ ছিলো। তখন তিনি পেছনে হাত নিয়ে আমাকে টেনে তার বরবার দাঁড় করালেন।”
এ ছাড়া এ সম্পর্কে আরও অনেক আসার (সাহাবীদের বক্তব্য ও আমল) বিদ্যমান রয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হাদিসে কাতার সোজা করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে এবং কাতারে বক্রতা থাকার ব্যাপারে সতর্কতা এসেছে। যেমন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ
“তোমরা কাতার সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা সালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত।” [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪]
তিনি আরও বলেন:
اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ
“তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের অন্তরগুলো বিভক্ত হয়ে যাবে।”
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪]
এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং ইমাম ও মুক্তাদি দু জন হলেও যেহেতু এটি একটি কাতার সেহেতু মুক্তাদি এভাবে ইমাম থেকে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালে কাতার সোজা হল না। সে কারণে তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ হবে।
সঠিক পদ্ধতি হল, দু জন ব্যক্তি সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদি সমান্তরালভাবে পাশাপাশি দণ্ডায়মান হবে। তবে মুক্তাদি সতর্ক থাকবে যেন, সে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইমাম থেকে কিছুটা সামনে চলে না যায়। কেননা ইচ্ছাকৃত ইমামের সামনে চলে গেলে মুক্তাদির সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু বেখেয়ালে সামনে চলে গেলে তৎক্ষণাৎ পেছনে সরে আসবে। এতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
(৫৩) প্রশ্ন: “সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে তাকানো যাবে না।” এ কথা কি সঠিক?
উত্তর:
যদি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে তাকালে চোখ বা অন্য কনো স্বাস্থ্যগত
ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তাহলে সে দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে যে কাজে ক্ষতি রয়েছে তা করা নিষেধ। যেমন:
  আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ
“আর তোমরা নিজেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।” (সূরা বাকারা: ১৯৪)
  আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস ও ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ
‘‘তোমরা নিজের বা অন্যের ক্ষতি করতে পারবে না এবং তোমরা পরস্পর (প্রতিশোধের ভিত্তিতে) একে অপরের ক্ষতি করতে পারবে না।’’। (ইবনে মাজাহ্ ২৩৬৯, ২৩৭০)
অর্থাৎ যে সকল কথা, কাজ ও আচরণ দ্বারা নিজের অথবা অন্যের শারীরিক, মানসিক, অর্থ-সম্পদ, মর্যাদা-সম্ভ্রম ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসলামে তা করা বৈধ নয়।
  বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে বলা হয়েছে:
খালি চোখে এই গ্রহণ দেখতে না করেছে নাসা। চোখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সূর্য গ্রহণ দেখলেও তা রেটিনার ওপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে একটা চোখে দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারে মানুষ।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশেষ গ্রহণ গ্লাস বা সোলার ফিল্টার দিয়েই এই গ্রহণ দেখা উচিত। বাজারে আইএসও স্বীকৃত বিশেষ সোলার গ্লাস দিয়ে একমাত্র এই গ্রহণ দেখা নিরাপদ। সে সব গ্লাস ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহার নির্দেশিকা পরে নিতে উপদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোনোভাবে সেই গ্লাস ভাঙা বা দাগ থাকলে ব্যবহার করতে না করেছে তাঁরা।
পেরিস্কোপে, টেলিস্কোপ, সানগ্লাস বা দূরবীন, কোনও কিছুর সাহায্যে গ্রহণ দেখার সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে বারণ করা হয়েছে। গ্রহণের সময় সূর্য রশ্মি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে যা চোখে প্রভাব ফেলতে পারে। সানগ্লাস বা ঘষা কাঁচ দিয়েও এই গ্রহণ দেখতে বারণ করেছে নাসা। কারণ এইগুলো নিরাপদ না। (যুগান্তর, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯)
আল্লাহু আলাম।
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
(৫৪) প্রশ্নঃ জানাযার ছালাত পর কিংবা দাফনের পর মুনাজাত করা।
উত্তরঃ
জানাযার ছালাত পর কিংবা দাফনের পর মুনাজাত করা :
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর এবং বর্তমানে নতুন করে চালু হওয়া জানাযার সালাম ফিরানোর পর পরই সম্মিলিত যে মুনাজাত চলছে, শরী‘আতে তার কোন ভিত্তি নেই। মূলত জানাযাই মৃত ব্যক্তির জন্য বিশেষ দু‘আ। প্রচলিত পদ্ধতিকে জায়েয করার জন্য যে বর্ণনা পেশ করা হয় তা জাল। যেমন-
(ক) হুসাইন বিন ওয়াহওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনু বারা একদা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে রাসূল (ছাঃ) তাকে দেখতে এসে বললেন, ত্বালহা মৃত্যুর রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং তোমরা আমাকে তার মৃত্যুর খবর জানাবে। কিন্তু তারা তাড়াহুড়া করল। রাসূল (ছাঃ) বণী সালেম বিন আওফের নিকট না পৌঁছতেই সে মারা গেল। সে তার পরিবারকে আগেই বলেছিল আমি রাত্রে মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে দাফন করবে। রাসূল (ছাঃ)-কে ডেকো না। কারণ আমি আশংকা করছি আমার কারণে তিনি ইহুদী কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারেন। অতঃপর সকাল হলে রাসূল (ছাঃ)-কে সংবাদ দেওয়া হল। ফলে তিনি এসে তার কবরের পাশে দাঁড়ান এবং লোকেরাও তাঁর সাথে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ায়। তারপর তিনি তাঁর দু’হাত তুললেন এবং দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! ত্বালহার জন্য বংশধর অবশিষ্ট রাখুন, যার জন্য সে আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে আর আপনিও তার প্রতি সন্তষ্ট হবেন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত হাদীছের শেষাংশ অর্থাৎ ‘অতঃপর তিনি দু‘হাত তুললেন এবং দু‘আ করলেন….এই কথাটুকু ত্বাবারাণী ব্যতীত অন্য কোন হাদীছ গ্রন্থে নেই। এটি ছহীহ হাদীছের সরাসরি বিরোধী। কারণ উক্ত হাদীছ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও ঐ অংশ নেই। বিশেষ করে হাদীছটি ছহীহ বুখারীতে প্রায় ৮ জায়গায় এসেছে কিন্তু কোন স্থানে ঐ অতিরিক্ত অংশ নেই।[2]
দ্বিতীয়ত : উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ইবনুল কালবী (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটি মুরসাল হিসাবে যঈফ। কারণ হাদীছটি সাঈদ বিন উরওয়াহ থেকে হুছাইন বিন ওয়াহওয়াহ বর্ণনা করেছে। অথচ উভয়ের সাথে কোনদিন সাক্ষাৎ হয়নি।[3]
(খ) আবী ওয়ায়েল (রাঃ) আব্দুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি যেন এখনো তাবূক যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-কে আব্দুল্লাহ যিল বিজাদাইন (যিন নাজাদাইন)-এর কবরের মধ্যে দেখছি। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)ও সেখানে আছেন। রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে বলছেন, তোমাদের ভাইকে আমার নিকটে নিয়ে আস। অতঃপর তিনি তাকে ধরে কবরের লাহদে রাখলেন। তারপর তিনি বের হলেন এবং বাকী কাজ সমাপ্তির জন্য তাঁদের দুইজনকে বললেন। যখন তিনি দাফন সমাপ্ত করলেন, তখন ক্বিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তার উপর সন্তুষ্ট হয়েই সকাল করেছি, সুতরাং আপনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হউন’। রাবী বলেন, এটা ছিল রাত্রের ঘটনা। আল্লাহর কসম! আমি নিজে নিজে ভাবছিলাম, যদি তার স্থানে আজ আমি হতাম!। [4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটির বেশ কিছু সূত্র থাকলেও সূত্রগুলো যঈফ।[5] এর সনদে আববাদ ইবনু আহমাদ আল-আরযামী নামে একজন মাতরূক বা পরিত্যক্ত রাবী আছে।[6] এছাড়া হাদীছটিতে দলবদ্ধ মুনাজাত করার প্রমাণ নেই। কারণ আবুবকর ও ওমর (রাঃ) সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাঁদের হাত তোলার কথা উল্লেখ নেই।
মৃতকে দাফন করার পর করণীয় :
মূলত জানাযাই দু‘আ। সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও গ্রাম্য মৌলভীদের দু‘আর অর্থ না জানার কারণে দাফনের পর প্রচলিত এই বিদ‘আত চালু আছে। তারা যে দু‘আগুলো পড়ে থাকেন সেগুলো সবই নিজেদের উদ্দেশ্যে পড়েন। তাতে মৃত ব্যক্তির কোন লাভ হয় না। অবুঝ লোকেরা কেবল ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলে তাড়াহুড়া করে চলে আসে। অথচ এ সময় প্রত্যেককেই দীর্ঘক্ষণ ধরে মাইয়েতের জন্য ইস্তিগফার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে-
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قاَلَ كَانَ النَّبِىُّ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ اِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ ثُمَّ سَلُوْا لَهُ بِالتَّثْبِيْتِ فَإنَّهُ الآنَ يُسْأَلُ.
ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মোর্দাকে দাফন করে অবসর গ্রহণ করতেন, তখন তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তাঁর জন্য কবরে স্থায়ীত্ব চাও (অর্থাৎ সে যেন ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে)। এখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ছাহাবী আমর ইবনুল ‘আছ মুমূর্ষু অবস্থায় তার সন্তানদেরকে বলেছিলেন,
فَإِذَا دَفَنْتُمُوْنِىْ فَشَنُّوْا عَلَىَّ التُّرَابَ شَنًّا ثُمَّ أَقِيْمُوْا حَوْلَ قَبْرِىْ قَدْرَ مَا يُنْحَرُ جَزُوْرٌ وَيُقَسَّمُ لَحْمُهَا حَتّى أَسْتَأنِسَ بِكُمْ وَأَعْلَمَ مَاذَا أَُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّىْ.
‘যখন তোমরা আমাকে দাফন করবে, তখন আমার উপর ধীরে ধীরে মাটি দিবে। অতঃপর আমার কবরের পার্শ্বে অবস্থান করবে, যতক্ষণ একটি উট যবহে করে তার গোশত বন্টন করতে সময় লাগে। যাতে আমি তোমাদের কারণে স্বস্তি লাভ করি এবং আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতাগণের কী উত্তর দিব তা যেন জানতে পারি’।[8]
অতএব সুন্নাত হল দাফনের পর উপস্থিত প্রত্যেকেই মাইয়েতের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এ সময় মাইয়েতের জন্য নিম্নের দু‘আগুলো বার বার পড়বে : (ক) اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَثَبِّتْهُ
‘আল্ল-হুম্মাগ্ফির লাহূ ওয়া ছাবিবতহু। অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে (প্রশ্নোত্তরে ও ঈমানের উপর) অটল রাখুন’।[9] (খ) اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ আল্ল-হুম্মাগফিরলাহু ওয়ারহামহু ইন্নাকা আংতাল গফূরুর রহীম। অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং তার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু’।[10]
اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّيْنَ وَاخْلُفْهُ فِىْ عَقِبِهِ فِى الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ وَافْسَحْ لَهُ فِىْ قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ.
(গ) আল্ল-হুম্মাগ্ফির্ লাহু ওয়ার্ফা‘ দারাজাতহূ ফিল মাহ্দিইয়ীনা। ওয়াখ্লুফহূ ফী ‘আক্বিবিহি ফিল গ-বিরীন, ওয়াগ্ফির্ লানা ওয়া লাহূ ইয়া রববাল ‘আ-লামীন। ওয়াফসাহ লাহূ ফী ক্বব্রিহী ওয়া নাবিবর লাহূ ফীহি। অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে মাফ করে দিন। হেদায়াত প্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করুন এবং তার পিছনে যারা রয়ে গেল তাদের জন্য আপনি প্রতিনিধি হন। হে জগৎ সমূহের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন। তার কবর প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য কবরকে আলোকিত করুন’।[11] উক্ত মর্মে বিস্তারিত আলোচনা দেখুনঃ ‘শারঈ মানদন্ডে মুনাজাত’ বই।
ফুটনোটঃ
[1]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কবীর হা/৩৪৭৩; ফাযযুল বি‘আ হা/২৮; ফাৎহুল বারী ৩/১৫২, হা/১২৪৭-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৮৫৭, ১২৪৭, ১৩১৯, ১৩২১, ১৩২২, ১৩২৬, ১৩৩৬ ও ১৩৪০, ১/১৬৭ ও ১৭৮-৭৯ পৃঃ।
[3]. لَاتَثْبُتُ لَهُمَا صَحْبَةٌ -ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-ইছাবাহ ফী তাময়ীযিছ ছাহাবাহ, ২/২৬১-২৬২ পৃঃ ও ৯/১০৩ পৃঃ, রাবী নং- ৭৭৪৫; যঈফ আবুদাঊদ হা/৩১৫৯; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২৩২; আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১৬২৫ পৃঃ ।
[4]. মুসনাদে বাযযার হা/১৭০৬; আবু নুআইম, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১২২ পৃঃ; মা‘রেফাতুছ ছাহাবা হা/৪১০৫; ছাফওয়াতুছ ছাফওয়া ১/৬৭৯; ফাৎহুল বারী ১১/১৭৩ পৃঃ, হা/৬৩৪৩-এর আলোচনা।
[5]. মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪/৭৫ পৃঃ, হা/১৭০৬-এর আলোচনা দ্রঃ-ذكر فيه ما اتفقوا على ضعفه
[6]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৫৯৮৩।
[7]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩২২১, ২/৪৫৯ পৃঃ, ‘কবর স্থান থেকে ফিরার সময় মাইয়েতের জন্য ইস্তিগফার করা’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১৩৩, পৃঃ ২৬।
[8]. ছহীহ মুসলিম হা/৩৩৬, ১/৭৬, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬, (ইফাবা হা/২২১), মিশকাত হা/১৭১৬, পৃঃ ১৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬২৪, ৪/৭৯ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘মৃতকে দাফন করা’ অনুচ্ছেদ।
[9]. আবুদাঊদ হা/৩২২১, ২/৪৫৯ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১৩৩, পৃঃ ২৬; সাঈদ ইবনু আলী আল-কাহতানী, হিছনুল মুসলিম, অনুবাদ : মোহাঃ এনামুল হক (ঢাকা : ৭৮, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মে ২০০১), পৃঃ ২১৫, দু‘আ নং ১৬২।
[10]. আবুদাঊদ হা/৩২০২, ২/৪৫৭ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬০।
[11]. ছহীহ মুসলিম হা/২১৬৯ (৯২০), ১/৩০১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৯৯৯), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪; মিশকাত হা/১৬১৯, পৃঃ ১৪১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৩১, ৪/৩৫ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়।
(৫৫) প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি পরিবারের লোকদের সালাতের আদেশ করছেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শুনে না। এমতাবস্থায় তিনি কি করবেন? তিনি কি তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করবেন, নাকি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন?
উত্তরঃ
পরিবারের লোকেরা যদি একেবারেই সালাত আদায় না করে, তবে তারা কাফের ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদে পরিণত হবে। তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করা জায়েয নয়। কিন্তু তার উপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে দাওয়াত দিবেন। বারবার অনুরোধ করবেন। হতে পারে আল্লাহ্ তাদেরকে হেদায়াত করবেন। কেননা সালাত পরিত্যাগকারী কাফের- নাঊযুবিল্লাহ্! কুরআন, সুন্নাহ্, সাহাবায়ে কেরামের উক্তি ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এর দলীল।
যারা বেনামাজীকে কাফের বলার পক্ষপাতী নয়, তাদের দলীলগুলো চারটি অবস্থার বাইরে নয়। যথাঃ
 মূলতঃ উক্ত দলীল সমূহে তাদের মতের পক্ষে দলীল নেই।
 সেগুলা এমন গুণ সম্পন্ন যে তা বিদ্যমান থাকাবস্থায়, নামাজ পরিত্যাগের বিষয়টি তার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়।
 অথবা এমন কিছু ওযর ও অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে, যে কারণে সালাত পরিত্যাগ করা মার্জনীয়।
 অথবা উক্ত দলীল সমূহ আম বা ব্যাপক। সালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার হাদীসগুলো দ্বারা তা খাছ বা বিশিষ্ট করা হয়েছে।
বেনামাজী মু’মিন বা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে বা সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে কুরআন সুন্নাহ্র উক্তি সমূহে এ রকম কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং “সালাত পরিত্যাগ করা কুফরী” এব্যাপারে যে দলীল সমূহ উপস্থাপিত হয়েছে, তা নেয়ামতের কুফরী বা ছোট কুফরী এরকম ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই।
যখন সুস্পষ্ট হলো, সালাত পরিত্যাগকারী কাফের মুরতাদ, তখন তার ব্যাপারে নিম্নল্লিখিত বিধান সমূহ প্রজোয্য হবেঃ
প্রথমতঃ
মুসলিম নারীর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হবে না। বিবাহের চুক্তি হয়ে গেলেও তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না। কেননা আল্লাহ্ মুহাজির নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ
-যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়। (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)
দ্বিতীয়তঃ
বিবাহের বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর যদি সালাত পরিত্যাগ শুরু করে তবে উক্ত বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে- স্ত্রী ব্যবহার তার জন্য হালাল হবে না। পূর্বোল্লিখিত আয়াত এর দলীল।
তৃতীয়তঃ
বেনামাজীর যবেহ্ করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া জায়েয হবে না। কেননা এটা হারাম। ইহুদী বা খৃষ্টানের যবেহ্ করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া আমাদের জন্য বৈধ। কেননা আল্লাহ্ তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। (দেখুন সূরা মায়েদা- ৫ নং আয়াত) অতএব বেনামাজীর যবেহ করা গোস্ত ইহুদী খৃষ্টানের চাইতে অধিক নিকৃষ্ট।
চতুর্থতঃ
বেনামাজীর জন্য বৈধ নয় মক্কা বা তার হারাম সীমানায় প্রবেশ করা। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا
-হে ঈমানদারগণ! মুশরিকগণ তো নাপাক। সুতরাং তারা যেন এই বছরের পর আর মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে। [সূরা তওবাঃ ২৮]
পঞ্চমতঃ
বেনামাজীর কোন নিকটাত্মীয় মারা গেলে সে তাদের মীরাছ লাভ করবে না। যেমন কোন নামাজী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল, রেখে গেল একজন ছেলে এবং এক চাচাতো ভাই; কিন্তু ছেলে বেনামাজী আর চাচাতো ভাই নামাজী। এ অবস্থায় দূরের সেই চাচাতো ভাই মীরাছ পাবে ছেলে পাবে না। কেননা উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী বলেনঃ
لَا يَرِثُ الْمُؤْمِنُ الْكَافِرَ وَلَا يَرِثُ الْكَافِرُ الْمُؤْمِنَ
-কোন মুসলিম কাফেরের মীরাছ লাভ করতে পারবে না। কোন কাফেরও কোন মুসলিমের মীরাছ লাভ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো বলেন:
أَلْحِقُوا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا فَمَا بَقِيَ فَهُوَ لِأَوْلَى رَجُلٍ ذَكَرٍ
-ফারায়েয তথা মীরাছ সমূহ তার অধিকারীদের মাঝে বন্টন করে দাও। কিছু অবশিষ্ট থাকলে মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুরুষের জন্য নির্ধারিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই উদাহরণ প্রজোয্য হবে সমস্ত ওয়ারীসদের ক্ষেত্রে।
ষষ্ঠতঃ
বেনামাজী মৃত্যু বরণ করলে- তাকে গোসল দেয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, জানাযা সালাত পড়া যাবেনা, মুসলমানদের গোরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তাকে কি করতে হবে? মাঠে- ময়দানে গর্ত খনন করে পরিহিত কাপড়েই পুঁতে ফেলতে হবে। কেননা তার কোনই মর্যাদা নেই।
এ ভিত্তিতে কোন লোক যদি মৃত্যু বরণ করে, আর তার সম্পর্কে জানা যায় যে সে বেনামাজী, তবে জানাযা পড়ার জন্য লাশকে মুসলমানদের সামনে উপস্থিত করা বৈধ হবে না।
সপ্তমতঃ
ক্বিয়ামত দিবসে বেনামাজীর হাশর-নশর হবে ফেরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে। এরা হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কাফের। তারা কখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাই বেনামাজীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ করাও জায়েয নয়। কেননা কাফের কোন দু’আ পাওয়ার উপযুক্ত নয়। আল্লাহ্ বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُوْلِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
-নবী ও ঈমানদারদের জন্য সমিচীন নয় যে তারা কোন মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হয় না কেন। যখন প্রমাণিত হল যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।” [সূরা তওবাঃ ১১৩]
সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। কিন্তু আফসোস! মানুষ বর্তমানে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। নিজেদের গৃহে এমন লোকদের স্থান দিচ্ছে, যারা সালাত আদায় করে না। অথচ এটা মোটেও ঠিক নয়। (আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন)
(৫৬) প্রশ্নঃ এক সঙ্গে তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ দলীল চাই?
উত্তরঃ
এক সঙ্গে তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ দলীল :
(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না।[1]
বিশেষ সতর্কতা : মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত لاَ يَقْعُدُ (বসতেন না) শব্দকে পরিবর্তন করে পরবর্তী ছাপাতে لاَيُسَلِّمُ(সালাম ফিরাতেন না) করা হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তী সকল মুহাদ্দিছ لاَ يَقْعُدُ দ্বারাই উল্লেখ করেছেন।[2] আরো দুঃখজনক হল- আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) নিজে স্বীকার করেছেন যে, আমি মুস্তাদরাক হাকেমের তিনটি কপি দেখেছি কিন্তু কোথাও لاَيُسَلِّمُ (সালাম ফিরাতেন না) শব্দটি পাইনি। তবে হেদায়ার হাদীছের বিশ্লেষক আল্লামা যায়লাঈ উক্ত শব্দ উল্লেখ করেছেন। আর যায়লাঈর কথাই সঠিক।[3]
সুধী পাঠক! ইমাম হাকেম (৩২১-৪০৫ হিঃ) নিজে হাদীছটি সংকলন করেছেন আর তিনিই সঠিকটা জানেন না!! বহুদিন পরে এসে যায়লাঈ (মৃঃ ৭৬২ হিঃ) সঠিকটা জানলেন? অথচ ইমাম বায়হাক্বী (৩৮৪-৪৫৮ হিঃ)ও একই সনদে উক্ত হাদীছ উল্লেখ করেছেন। সেখানে একই শব্দ আছে। অর্থাৎ لاَ يَقْعُدُ (বসতেন না) আছে। একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী। অন্ধ তাকলীদকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই হাদীছের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে।
(ب) عَنِ بْنِ طَاوُوسَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ كاَنَ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ بَيْنَهُنَّ.
(খ) ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না।[4]
(ج) عَنْ قَتَادَةَ قال كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(গ) ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। শেষের রাক‘আতে ছাড়া তিনি বসতেন না।[5]
(د) عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ كَانَ يَقْرَأُ فِى الأُولَى بِ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَفِى الثَّانِيَةِ بِ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ) وَفِى الثَّالِثَةِ بِ (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوْعِ فَإِذَا فَرَغَ قَالَ عِنْدَ فَرَاغِهِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ يُطِيْلُ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(ঘ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। প্রথম রাক‘আতে ‘সাবিবহিসমা রাবিবকাল আ‘লা’ দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয় রাক‘আতে ‘কুল হুওয়াল্লা-হুল আহাদ’ পড়তেন এবং তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি শেষ করতেন তখন শেষে তিনবার বলতেন ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’। শেষবার টেনে বলতেন।[6] উক্ত হাদীছও প্রমাণ করে রাসূল (ছাঃ) একটানা তিন রাক‘আত পড়েছেন, মাঝে বৈঠক করেননি।
(ه) عَنْ عَطاَءَ أَنَّهُ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَجْلِسُ فِيْهِنَّ وَ لاَ يَتَشَهَّدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(ঙ) আত্বা (রাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না এবং শেষ রাক‘আত ব্যতীত তাশাহহুদ পড়তেন না।[7] এমন কি পাঁচ রাক‘আত পড়লেও রাসূল (ছাঃ) এক বৈঠকে পড়েছেন।
(و) عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِىَّ كَانَ يُوْتِرُ بِخَمْسٍ وَلاَ يَجْلِسُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(চ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন। কিন্তু তিনি শেষ রাক‘আতে ছাড়া বসতেন না।[8]
সুধী পাঠক! যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন তারাই সমাধান পেশ করেছেন। সুতরাং তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে মাঝে তাশাহ্হুদ পড়া যাবে না; বরং একটানা তিন রাক‘আত পড়তে হবে। তারপর তাশাহ্হুদ পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
জ্ঞাতব্য : তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া যায়। তিন রাক‘আত বিতর পড়ার এটিও একটি উত্তম পদ্ধতি।[9] উল্লেখ্য যে, তিন রাক‘আত বিতরের মাঝে সালাম দ্বারা পার্থক্য করা যাবে না মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।[10]
ফুটনোটঃ
[1]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪০; বায়হাক্বী হা/৪৮০৩, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪১; সনদ ছহীহ, তা’সীসুল আহকাম ২/২৬২ পৃঃ।
[2]. হাকেম হা/১১৪০; ফাৎহুল বারী হা/৯৯৮-এর আলোচনা দ্রঃ; আল-আরফুশ শাযী ২/১৪ পৃঃ।
[3]. আল-আরফুয যাশী শারহু সুনানিত তিরমিযী ২/১৪- وأما أنا فوجدت ثلاث نسخ للمستدرك وما وجدت فيها ما أخرج الزيلعي بلفظ لا يسلم وإنما وجدت فيها وكان لا يقعد وظني الغالب أن لفظ لا يسلم لا بد من أن يكون في مستدرك الحاكم ، فإن الزيلعي متثبت في النقل
[4]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪৬৬৯, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭।
[5]. মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৪৭১, ৪/২৪০; বিস্তারিত দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪১৮-এর আলোচনা।
[6]. নাসাঈ হা/১৬৯৯, ১/১৯১ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[7]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪২।
[8]. নাসাঈ হা/১৭১৭, ১/১৯৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ; শারহুস সুন্নাহ ১/২৩১ পৃঃ।
[9]. বুখারী হা/৯৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫); সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৬২; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৪২০-এর আলোচনা দ্রঃ, ২/১৪৮ পৃঃ; দেখুনঃ আলবানী, ক্বিয়ামু রামাযান, পৃঃ ২২; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৬৮৭১, ৬৮৭৪- عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ وَكَانَ يَتَكَلَّمُ بَيْنَ الرَّكْعَتَيْنِ وَالرَّكْعَةِ
[10]. ইওয়াউল গালীল হা/৪২১, ২/১৫০ পৃঃ; আহমাদ হা/২৫২৬৪।
(৫৭) প্রশ্নঃ: আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?
উত্তরঃ
যে গুনাহ দিয়ে আল্লাহ্র নাফরমানি করা হয়, তার সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে, শির্ক। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ لَقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ [المائدة: ٧٢]
“যারা বলে যে, মারিয়াম-তনয় মাসীহ-ই আল্লাহ, তারা কাফের। অথচ মাসীহ বলেন, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্র ইবাদত কর। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন; তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই” (মায়েদাহ ৭২)।
আর শির্ক হচ্ছে, আল্লাহ্র সমকক্ষ সাব্যস্ত করা, চাই তা হোক কোনো বাদশাহ, কিংবা নবী-রাসূল বা কোনো অলী। আল্লাহ ব্যতীত অথবা আল্লাহ্র সাথে তাকে ডাকা, বা তাকে ভয় করা বা তার উপর ভরসা করা বা তার কাছে কোনো কিছু চাওয়া অথবা অন্য কোনো ইবাদত তার জন্য সম্পাদন করা।
কবর যিয়ারত ও তার আদব
(৫৮) প্রশ্ন : কবর যিয়ারতের বিধান কি ? এবং আমরা কেন কবর যিয়ারত করি?
উত্তর : মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব।
কবর যিয়ারতের কিছু উপকারীতা ও কতিপয় আদব নিম্নে বিধৃত হল :
১। জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়, যা সৎকর্মের জন্য সহায়ক।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন তোমরা যিয়ারত করতে পারো।” (মুসলিম)
মুসনাদে আহ্মাদ ও অন্য কিতাবে একটি বর্ণনায় এসেছে : “কবর যিয়ারত তোমাদেরকে পরকাল স্বরণ করিয়ে দেয়।”
২। আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব। আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে তাদের নিকট কোন প্রার্থনা কিংবা তাদের কোন দুআ কামনা করব না।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে কবরস্থানে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি পড়ার দীক্ষা দিয়েছেন :
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ ، أَسْاَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
অর্থ “হে মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ তোমাদের প্রতি সালাম, ইন্শাআল্লাহ্ আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই মিলিত হবো, আমি আল্লাহ্র নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করছি।” (মুসলিম)
৩। কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “কবরের ওপর তোমরা বসবে না এবং তার দিকে ফিরে নামায আদায় করবে না।” (মুসলিম)
৪। কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “তোমরা তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরস্থান বানিয়ে নিওনা, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।” (মুসলিম)
উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, কবরস্থান কোরআন তেলাওয়াতের স্থান নয়, কোরআন তেলাওয়াতের স্থান বাড়ী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবা থেকে কোন প্রমাণ নেই যে, তাঁরা মৃতদের জন্য কোরআন পড়েছেন; হ্যাঁ, তাঁরা মৃতদের জন্য দুআ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন, তার নিকট দাঁড়িয়ে বলতেন : “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার সুদৃঢ় হওয়ার জন্য দুআ কর। যেহেতু এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে।” (হাকেম)
৫। কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পণ করা যাবে না। এ আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ থেকে প্রমাণিত নয়, এটা খৃষ্টানদের কালচার। আমরা যদি উক্ত পুস্পমাল্যের খরচটা ফকীর-মিসকীনকে দেই তবে তাতে মৃত ব্যক্তি ও ফকীর-মিসকীন উভয়ে লাভবান হবে।
৬। কবর প্লাষ্টার, পেইন্ট ও উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ। হাদীসে বর্ণিত : “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে নির্মাণ কাজ ও প্লাষ্টার করতে নিষেধ করেছেন।” মুসলিম
৭। প্রিয় মুসলিম ভাই! মৃত ব্যক্তির নিকট দুআ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকুন। মৃতরা সামর্থহীন, বরং এক আল্লাহ্কে ডাকুন, তিনি সর্ব শক্তিমান ও দুআ কবুল করেন। উপরুন্তু মৃত ব্যক্তিদের নিকট কিছু প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।
(৫৯) প্রশ্নঃ (১০) মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা যাবে কি?
উত্তরঃ
(১০) মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা : মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা জাহেলী আদর্শ। এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। হুযায়ফাহ (রাঃ) বলেন, يَنْهَى عَنِ النَّعْيِ রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করতেন।[1] মৃত্যু সংবাদ প্রচারের নামে শোক প্রকাশ করে কোন লাভ হয় না।শুধু লোক দেখানোই হয়। তার প্রমাণ হল, সব জানাযাতে লোকের সংখ্যা এক রকম হয় না। কারো জানাযায় হাযার হাযার লোক হয়, আবার কারো জানাযায় একশ’ লোকও জুটে না। অথচ সব মাইয়েতের জন্যই মাইকিং করা হয়। সুতরাং এতে কোন ফায়েদা নেই। এটা মূলতঃ ব্যক্তির প্রসিদ্ধি ও গুণের কারণ। তাছাড়া শুভাকাঙ্খী হলে এমনিতেই সে মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাবে, মাইকিং করে জানানো লাগবে না।
উল্লেখ্য যে, মারা যাওয়ার পূর্বে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার উত্তরসূরী ও আত্মীয়-স্বজনকে অছিয়ত করে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিদ‘আতী কর্মকান্ড অনুষ্ঠিত না হয়। বিশেষ করে বিলাপ করা ও বিভিন্ন কথার মাধ্যমে শোক প্রকাশ করা। কারণ সাবধান করে না গেলে বা এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে এ জন্য তাকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أَلاَ تَسْمَعُوْنَ إِنَّ اللهَ لاَ يُعَذِّبُ بِدَمْعِ الْعَيْنِ وَلاَ بِحُزْنِ الْقَلْبِ وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا وَأَشَارَ إِلَى لِسَانِهِ أَوْ يَرْحَمُ وَإِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ. وَكَانَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَضْرِبُ فِيْهِ بِالْعَصَا وَيَرْمِىْ بِالْحِجَارَةِ وَيَحْثِى بِالتُّرَابِ. ‘তোমরা কি শুননি, নিশ্চয়ই আল্লাহ চোখের কান্না ও অন্তরের চিন্তার কারণে শাস্তি দিবেন না; বরং তিনি শাস্তি দিবেন এর কারণে। অতঃপর তিনি তার জিহবার দিকে ইঙ্গিত করলেন। অথবা তার উপর রহম করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মাইয়েতকে তার পরিবারের কান্নার কারণে শাস্তি দেন। ওমর (রাঃ) এ জন্য লাঠিপেটা করতেন, পাথর মারতেন এবং মাটি নিক্ষেপ করতেন।[2]
[1]. তিরমিযী হা/৯৮৬, ১/১৯২ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১৪৭৬, পৃঃ ১০৬, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪, সনদ হাসান। [2]. ছহীহ বুখারী হা/১৩০৪, ১/১৭৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২২৬, ২/৩৮৭ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/২১৭৬; মিশকাত হা/১৭২৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬৩২, ৪/৮৪, ‘জানাজা’ অধ্যায়।
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রচলিত কুসংস্কার এবং আমাদের করণীয়
(৬০) প্রশ্ন: আমাদের সমাজে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মাকে অনেক নিয়ম পালন করতে বলা হয় এবং অনেক কিছুতে বাধা দেয়া হয়। অন্যথায় গর্ভস্থ সন্তানের নাকি ক্ষতি হয়। এ বিষয়টি কুরআন-হাদিসের আলোকে কতটুকু সঠিক? এবং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কালে আমাদের কী করা উচিত?
উত্তর:
নি:সন্দেহে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগত ও মহাবিশ্বের মধ্যে দুটি বিশাল প্রাকৃতিক পরিবর্তন-যা মহান আল্লাহর অসীম শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করে।
বিজ্ঞান বলে, চাঁদ যখন পরিভ্রমণ অবস্থায় কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কিছু সময়ের জন্য সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই সূর্যগ্রহণ (Solar eclipse) বা কুসুফ। আর পৃথিবী যখন তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখনই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ কিছুক্ষণের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই চন্দ্রগ্রহণ (Lunar eclipse) বা খুসুফ।
  সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় করণীয়:
এ সময় সকল মুসলিমদের জন্য করণীয় হল, সালাতুল কুসুফ/খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণ/সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করা, আল্লাহর কাছে নিজেদের পাপাচারের জন্য ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাকবীর পাঠ করা, আল্লাহর নিকট দুআ করা, দান-সদকা করা এবং এত বড় নিদর্শন দেখে মহান আল্লাহর প্রতি মনে ভয়-ভীতি জাগ্রত করা। এগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য-এমনকি একজন গর্ভবতী নারীর জন্য।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী মা জননী আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ مِنْ آيَاتِ اللهِ، وَإِنَّهُمَا لَا يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَكَبِّرُوا، وَادْعُوا اللهَ وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا،
”সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদর (ক্ষমতার) বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অত:এব যখন তোমরা সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর বলো, আল্লাহর নিকট দু’আ করো, সালাত আদায় করো এবং দান-সদকা করো।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: [1964], অধ্যায়ঃ ১১/ সালাতুল কুসূফ (كتاب الكسوف) ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
  সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে কেন্দ্র করে সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কার:
সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে (বিশেষ করে প্রসূতি মাদের বিষয়ে) অনেক কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস প্রচলিত আছে। যেমন:
– এ সময় কোন কিছু খেতে নেই। বলা হয়, সূর্যগ্রহণের ১২ ঘণ্টা এবং চন্দ্রগ্রহণের ৯ ঘণ্টা আগে থেকে খাবার গ্রহণ করা বারণ!
– এ সময় তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হবে!
– এ সময় যৌন সংসর্গ করা যাবে না!
– গর্ভবতী মায়েরা এ সময় যা করে, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে!
– সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের কাত হয়ে শুতে বারণ নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়!
– সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গপ্প শুনতে পাওয়া যায়। এক, শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই, শিশুটি চালাক হবে!
– প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের বিকলঙ্গ হবে!
– চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সময় যদি গর্ভবতী নারী কিছু কাটাকাটি করেন, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয়—এ গুলো সবই কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস।
– এ সময় কোনো নারীকে ঘুম বা পানাহার থেকে বারণ করাও অন্যায়।
এছাড়া গর্ভবতী নারীর করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে সমাজে বহু কিছু প্রচলিত রয়েছে সেগুলো সব কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণা।আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন। ইসলামী শরিয়াহ ও বাস্তবতার সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
জাহেলি যুগেও এ ধরণের কিছু ধারণা প্রচলিত ছিল। সেকালে মানুষ ধারণা করত যে, চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্যগ্রহণ হলে অচিরেই দুর্যোগ বা দুর্ভিক্ষ হবে। চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ পৃথিবীতে কোনো মহাপুরুষের জন্ম বা মৃত্যুর বার্তাও বহন করে বলে তারা মনে করত। বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু, মহান সংস্কারক, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেগুলোকে ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মুগিরা ইবনে শুবা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতেই সূর্যগ্রহণ হলে আমরা বলাবলি করছিলাম যে, নবী পুত্রের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। এসব কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার অগণিত নিদর্শনের দুটি। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।” (সহিহ বুখারি :১০৪৩)
সুতরাং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের মাঝে যে সকল কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সেগুলো দূর করার জন্য দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে উম্মতকে যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে সেগুলো পালনে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
(৬১) প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য কি একজন অনভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার থেকে অভিজ্ঞ বিশ্বস্ত নন মাহরাম পুরুষ ডাক্তার দেখানো উচিত?
উত্তর:
অনভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করলে যদি আশঙ্কা থাকে যে, সে হয়তো রোগীর কোন ক্ষতি করে ফেলবে বা রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা হবে না এবং এর বিকল্প কোন অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তারও না পাওয়া যায় তাহলে কোন অভিজ্ঞ পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করা জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ। কারণ এটা অপারগ অবস্থা।
তবে চিকিৎসা গ্রহণের সময় তার সাথে স্বামী বা কোন মাহরাম পুরুষ থাকবে। মহিলা রোগীকে নি:সঙ্গভাবে পুরুষ ডাক্তারের কাছে আলাদা কক্ষে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া যাবে না। কেননা এতে ফেতনার সম্ভাবনা রয়েছে।
মূলত: ইসলামের দৃষ্টিতে কোন পুরুষের সাথে কোন পরনারীর নির্জনে থাকাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ألا لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»
“সাবধান! কোন পুরুষ কোনও মহিলার সাথে একান্তে নির্জনে গেলেই তাদের সাথে তৃতীয় জন হবে শয়তান।” (সহিহুল জামে ২৫৪৬-আলবানী)
তিনি আরও বলেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلا يَخْلُوَنَّ بِامْرَأَةٍ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا مَحْرَمٌ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন কোন পরনারীর সাথে নির্জন না হয় যখন তার মাঝে এবং সে নারীর মাঝে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে।” (সহিহুত তারগীব: ১৯০৯-আলবানী)
মোটকথা, একান্ত জরুরি অবস্থা না হলে পর পুরুষ ডাক্তারের নিকট কোন মুসলিম মহিলার জন্য এমন চিকিৎসা করা বৈধ নয়, যেই চিকিৎসা করার জন্য পর্দা লঙ্ঘিত হয়।
(৬২) প্রশ্ন: প্রতি নামাজের সময় কি পরনের কাপড় পালটিয়ে নামাজ পড়তে হয় নাকি কাপড় না পালটিয়েও নামাজ হবে?
উত্তর:
শরীর, পোশাক এবং সালাতের স্থান পবিত্র হওয়া সালাতের অন্যতম পূর্ব শর্ত (অপরিহার্য বিষয়)।
সুতরাং যদি আপনার পোশাক পবিত্র থাকে তাহলে নামাজের জন্য তা পরিবর্তন করা আবশ্যক নয়। কিন্তু যদি তাতে কোন নাপাক বস্তু (পেশাবের ছিটা, পায়খানা ইত্যাদি) লেগে যায় তাহলে যে স্থানে নাপাকি লেগেছে সে স্থানটুকু ধৌত করাই যথেষ্ট। আর যদি তা ধৌত করা সম্ভব না হয় অথবা নাপাকি লাগার নির্দিষ্ট স্থানটা জানা না যায় তাহলে অবশ্যই কাপড় পরিবর্তন করতে হবে এবং পবিত্র কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করতে হবে। অন্যথায় সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে::
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ لاَ يَقْبَلُ اللَّهُ صَلاَةً بِغَيْرِ طُهُورٍ
আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল করেন না।” (সহিহ ইবনে মাজাহ হা/২২৩)
আল্লাহু আলাম।
(৬৩) প্রশ্ন: বিয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকে এবং অনেক সময় পছন্দ না হলে বিয়ের পর হয়ত ফিতনা হতে পারে। তাহলে বাবা মা কি ছেলে বা মেয়ে কে নির্দিষ্ট কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার জন্য তাদের ছেলে বা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করা জায়েজ নাই যাকে সে পছন্দ করে না বা যার সাথে তার বিয়েতে আগ্রহ নেই। কারণ বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর পারষ্পারিক আকর্ষণ ও আগ্রহ বোধ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা যদি না থাকে তাহলে এই পবিত্র বন্ধন দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের পূর্বে বরক ও কনে একে অপরকে দেখে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدِرَ أَنْ يَرَى مِنْهَا بَعْضَ مَا يَدْعُوهُ إِلَيْ نكاحها فَلْيَفْعَلْ
“তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা করে তখন যতদূর সম্ভব তাকে দেখে নিয়ে এ মর্মে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত যে, মেয়েটির মধ্যে এমন কিছু আছে যা তাকে বিয়ে করার প্রতি আকৃষ্ট করে।” (আহমদ ও আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:
انْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا
“তাকে দেখে নাও, তোমাদের মধ্যে এটা ভালবাসার সৃষ্টি করবে।” [তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ সহিহ বলেছেন]
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
বিয়ের পূর্বে দেখাদেখির বিষয়ে ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, বর-কনে যেন একে অপরকে দেখে তাদের নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যদি কাউকে তার অপছন্দের ব্যক্তির সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেখানে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হল যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে-এ সম্ভাবনাই বেশি।
এ ছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন:
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ
“বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।” [সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ [6970] অধ্যায়: ৯০/ কূটচাল অবলম্বন (كتاب الحيل) পাবলিশারঃ তাওহীদ]
অর্থাৎ কুমারী মেয়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সে যদি চুপ থাকে তাহলে তা তার সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে। যেমন বাংলা প্রবাদে বলা হয়, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
এ সব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারো জন্য আল্লাহ প্রদত্ত তাদের এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। সুতরাং তাদের সম্মতি ছাড়া জোর পূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা আল্লাহর নাফরমানির শামিল।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:
وليس للأبوين إلزام الولد بنكاح من لا يريد ، فإن امتنع لا يكون عاقاً ، كأكل ما لا يريد
الاختيارات” (ص 344)
“বাবা-মার জন্য তাদের সন্তানকে এমন ব্যক্তির সাথে বিবাহে বাধ্য করার সুযোগ নাই যাকে সে বিয়ে করতে চায় না। অত:এব সে যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ না মানে তাহলে সে ‘অবাধ্য’ হিসেবে গণ্য হবে না- বিষয়টি অনিচ্ছা স্বত্বেও খাওয়ার মত।” (উৎস: আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা নং ৩৪৪)
সুতরাং ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক কাউকেই তার ইচ্ছার বাইরে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কেউ যদি তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করে তাহলে তাদের অধিকার রয়েছে বিয়ে রাখা অথবা ভঙ্গ করার। আর সন্তান যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাতে তার গুনাহ হবে না বরং বাবা-মা তাদের অনধিকার চর্চার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম
(৬৪) প্রশ্ন: কিভাবে অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি বৃদ্ধি করা যায়?
উত্তর:
নি:সন্দেহে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি দুনিয়াও আখিরাতের সাফল্য লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। যুগে যুগে সকল নবী-রাসূল তাদের উম্মতকে এ বিষয়ে উপদেশ প্রদান করেছেন।
তাকওয়া বলতে বুঝায়, আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা বাস্তবায়ন করা এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকা।
তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি বৃদ্ধির ১০টি কার্যকরী উপায়:
১) অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর আনুগত্য মূলক কাজ করা।
২) অধিক পরিমাণে নফল সিয়াম পালন করা।
৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ বাস্তবায়ন করা এবং বিদআত থেকে দূরে থাকা।
৪) আল্লাহর বড় বড় নিদর্শনগুলো চিন্তাশীল হৃদয়ে দেখা। যেমন: সুবিশাল ও সুউচ্চ আকাশ, বিস্তীর্ণ পৃথিবী, পৃথিবীর বুকে অসংখ্য সাগর, সুউচ্চ পর্বতরাজি, আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো চন্দ্র, সূর্য ও লক্ষকোটি নক্ষত্ররাজি, দিন-রাতের বিবর্তন ইত্যাদি।
৫) অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির পাঠ ও ইস্তিগফার করা।
৬) অধিক পরিমাণে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা (ও কুরআনের তরজমা ও তাফসীর পড়া)।
৭) সাহাবায়ে কেরাম ও যুগে যুগে মুত্তাকী-পরহেযগার পূর্বসূরিদের জীবনী পাঠ করা।
৮) তাকওয়াবান-পরহেজগার ও সৎ লোকদের সাথে উঠবস করা
৯) পাপাচার ও পাপাচারের স্থান থেকে দূরে থাকা।
১০) তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির মর্যাদা কথা জানা ও সেগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা।
আল্লাহু আলাম
(৬৫) প্রশ্ন: পুরুষদের জন্য ব্রেসলেট পরা কি হারাম?
উত্তর:
হাতে চুরি, ব্রেসলেট, কানে দুল, গলায় মালা ইত্যাদি অলংকারাদি পরিধান করা মহিলাদের বৈশিষ্ট্য। তাই এ সব অলংকার পুরুষদের ব্যবহার করা হারাম। আর এগুলো যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি হয় তাহলে তা আরও বেশি জটিল। অর্থাৎ এ কারণে দ্বিগুণ গুনাহ হবে। কারণ তা একদিকে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন অন্য দিকে পুরুষের জন্য স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয় বরং পুরুষদের অলংকার পরিধান করার রীতি পাশ্চাত্য ও অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বনের ক্ষেত্রে অন্ধ অনুকরণের আরেকটি উদাহরণ।
ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সবই কঠিন হারাম।
  ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা কবিরা গুনাহ:
বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য অবলম্বনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বহু হাদিস উল্লেখিত হয়েছে। তন্মধ্যে ৩টি হাদিসে পেশ করা হল:
১) ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬)
হাদিসের ব্যাখ্যা:
এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভুষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হিজড়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন।
অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ
“যে সব নারী পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ)
৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। [আবু দাউদ : ৪০৯৮]
  ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের রীতি-নীতি ও কৃষ্টি-কালচার অনুসরণ করা হারাম:
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]
  পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহার করা হারাম:
পুরুষদের জন্য স্বর্ণের তৈরি আংটি, হাত ঘড়ি, ব্রেসলেট, গলার মালা, চশমার ফ্রেম, জামার বোতাম, কলম ইত্যাদি ব্যবহার করা বৈধ নয়। (অনুরূপভাবে পুরুষদের জন্য রৌপ্যের তৈরি কেবল আংটি ছাড়া অন্য কোনও কিছু ব্যবহার করা বৈধ নয়)।
ক. যায়েদ ইবনে আকরাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أحل الذهب والحرير لإناث أمتي وحرم على ذكورهم
“স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ এবং পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (সিলসিলা সহীহা হা/১৮৬৫/৩০৩০)
খ. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আলী ইবনে আবু তালিব রা.-কে বলতে শুনেছেন,
إِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ حَرِيرًا فَجَعَلَهُ فِي يَمِينِهِ وَأَخَذَ ذَهَبًا فَجَعَلَهُ فِي شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي
“আল্লাহর নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন: এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম।” (সুনানে আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ নারীদের জন্য রেশমি পোশাক বৈধ, সহিহ)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কৃত সকল কর্মকাণ্ড থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
(৬৬) প্রশ্ন: সালাতে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দুআ “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া…” ও নিয়ত “নাওয়াইতো আন…” পাঠ করার বিধান কি?
উত্তর:
সালাতে দাঁড়িয়ে মুখে উচ্চারণ করে প্রচলিত গদ বাধা নিয়ত পাঠ করা বিদআত। চাই আরবিতে “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি…” পাঠ করা হোক বা বাংলায় তার অনুবাদ পাঠ করা হোক। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘জায়নামাজের দুআ’ হিসেবে “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া” অথবা আঊযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, দরুদ শরিফ ইত্যাদি পাঠ করাও বিদআত।
কেননা সালাত শুরু করার পূর্বে বিশেষ কোন দুআ, তাসবীহ বা অন্য কিছু পাঠ করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় কোনো নির্দেশনা নেই। সাহাবিগণও কখনো এমন আমল করেন নি। এমন কি চার মাজহাবের সম্মানিত ইমামগণ তথা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল প্রমুখ মনিষীগণ কেউই তা পড়ার কথা বলেন নি।
◉◉ সশব্দে নিয়ত পাঠ করার ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত আলেমদের বক্তব্য:
নিম্নে এ প্রসঙ্গে কতিপয় আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
ক. মোল্লা আলী কারী হানাফি রহ. বলেন:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ত্রিশ হাজার ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন। তথাপি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই কথা বর্ণিত নেই যে, আমি অমুক অমুক ওয়াক্ত নামাযের নিয়ত করছি। সুতরাং মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করাটাই সুন্নাত। জেনে রাখুন, শব্দ উচ্চারণ করে মুখে নিয়ত করা জায়েজ নয়। কারণ এটা বিদআত। সুতরাং যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নি তা যে করে সে বিদআতি। [দেখুনঃ মিরকাত, ১/৩৬-৩৭]
খ. আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফি রহ. বলেন:
হাদিসের বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ ও যঈফ কোন সনদেও এই কথা প্রমাণিত নেই যে, তিনি নামায আরম্ভ করার সময় বলতেন যে, আমি এই এই নামায আদায় করেছি। কোন সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও প্রমাণিত নেই। বরং এই কথা বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আরম্ভের সময় কেবল শুধু তাকবীর বলতেন। তাই মুখে নিয়ত পাঠ করা বিদআত। [ফাতহুল কাদীর, ১/৩৮৬, কাবীরী, পৃষ্ঠা ২৫২]
গ. হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহ. বলেনঃ
মুখে নিয়ত পাঠ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ কারো হতেই কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। মুখে পাঠের এই পদ্ধতি শয়তানের একটি কুমন্ত্রণা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন শুধু “আল্লাহু আকবার” বলতেন। আর আগে কিছু বলতেন না। সুতরাং মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা বিদআত। চার ইমামও এরূপ নিয়তনামা পড়াকে পছন্দ করেন নি। [ইগাসাতুল লাহফান, ১/১৩৬ ।। যাদুল মাআদ, ১/৫১]
ঘ. সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রাহ. বলেনঃ
“আরবি নিয়ত শব্দের অর্থ হল মনে ইচ্ছা পোষণ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এটা প্রমাণিত নেই। না প্রমাণিত আছে কোন সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও। তাই মুখে নিয়ত পাঠ করা বিদআত।” [ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ৩৩৯-৩৪০ পৃষ্ঠা]
(উপরোল্লিখিত আলেমদের বক্তব্যগুলো উমর ইবনুল খাত্তাব এর লেখা থেকে সংকলন করা হয়েছে।)
এছাড়াও এ প্রসঙ্গে বহু বিশ্ববরেণ্য আলেমদের বক্তব্য রয়েছে।
অত্র আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা দ্বীনের মধ্যে এটি নব আবিষ্কৃত বা নব সংযোজিত বিদআত। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি। আর গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম।
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
◉◉ সালাত শুরু করার সঠিক পদ্ধতি:
সালাত শুরু করার সঠিক পদ্ধতি হল, প্রথমে কোন সালাত পড়া হবে তা অন্তরে স্থির করা। (যেমন: ফরয, সুন্নত, নফল, কাযা ইত্যাদি) অত:পর মহান আল্লাহর সীমাহীন সম্মান-মর্যাদার কথা স্মরণ করে অন্তরে ভয়ভীতি, বিনয়-নম্রতা ও একাগ্রতা সহকারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সালাত শুরু করা।
তারপর হাদিসে বর্ণিত সানা বা দুআউল ইস্তিফতাহ (সালাত শুরুর দুআ) এর একাধিক দুআ থেকে যে কোনো একটি দুআ পাঠ করা।
তারপর “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম” পাঠ করার পর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সহকারে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। এরপর যথারীতি সালাত শেষ করা।
◉◉ নিয়ত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা:
মনে রাখতে হবে, নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হয় না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى
“আমল সমূহ নিয়তের (ইচ্ছার) উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে।” [সহিহ বুখারির প্রথম হাদিস]
এ হাদিসের আলোকে সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত, কুরবানি সহ যে কোন ইবাদতের শুরুতে নিয়তের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তা হবে অন্তরে। কেননা নিয়তের নিয়ত আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ: ইচ্ছা করা, মনস্থ করা, এরাদা করা, সংকল্প করা। [মুনজিদ, ৮৪৯/ ফতহুল বারী, ১/১৭]
ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেনঃ “নিয়ত হচ্ছে, কোন কিছু করার ইচ্ছা করা এবং সংকল্প করা। উহার স্থান হচ্ছে অন্তর জবানের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। এ কারণে না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আর নাা কোন সাহাবী হতে নিয়তের শব্দ বর্ণিত হয়েছে”। [ইগাসাতুল্ লাহ্ফান, ১/২১৪]
সুতরাং সালাত শুরু করার পূর্বে কোন সালাত, কয় রাকআত, তা ফরয, সুন্নত না কি নফল এ বিষয়গুলো অন্তরে জাগ্রত থাকলে তাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট।
আসুন, আমরা সুন্নাত অনুযায়ী সালাত আদায় করি এবং বিদআত বর্জন করি। সুন্নতে রয়েছে মুক্তি আর বিদআতে রয়েছে ধ্বংস। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।
(৬৭) প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি মনে করে, নারী-পুরুষের সমান অধিকার না দিয়ে ইসলাম নারীর প্রতি যুলুম করেছে, সে ব্যক্তির বিধান কি?
উত্তরঃ
ইসলাম নারীকে পুরুষের সমান অধিকার না দিলেও, তাকে তাঁর যথাযথ অধিকার দান করেছে। ইসলাম তাঁর প্রতি কোন অন্যায় করেনি। ইসলামের এ অধিকার বণ্টনকে যদি কেও অস্বীকার করে এবং অন্যায় ও অবিচার মনে করে, তাহলে সে কাফের। (ইবনে বায)
(৬৮) প্রশ্ন-মহিলাদের চাকুরী করা কি বৈধ?
উত্তর-বৈধ কর্ম ক্ষেত্রে মহিলাদের চাকুরী করা বৈধ। শর্ত হল, সে কর্ম ক্ষেত্র কেবল মহিলাদের জন্য খাস হবে। পুরুষ মহিলা একই স্থলে কর্ম হলে, সে চাকুরী বৈধ নয়। যেহেতু তাতে ফিতনা আছে। নারী মোহিনী ও আকর্ষণময়ী। মহানবী (সঃ) আর বলেছেন, “ আমার গত হওয়ার পরে পুরুষের পক্ষে নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা অন্য কোন কিছু ছেড়ে যাচ্ছি না।”
(আহমাদ, বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৭৪০ নং, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
সুতরাং পরপুরুষ থেকে যথা সম্ভভ দূরে থাকতে হবে মহিলাকে। নামাযের কাতারের ব্যাপারে তিনি বলেন, “পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।”
(আহমাদ, মুসলিম ৪৪০, সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১০৯২ নং)
বলা বাহুল্য যে, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার মিশ্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও চাকরি মুসলিম মহিলার জন্য বৈধ নয়। (ইবনে উষাইমীন)।
(৬৯) প্রশ্নঃ অসুস্থতার কারণে যদি কোন নারীর রক্তস্রাব নির্গত হতেই থাকে, তবে কিভাবে সে ছালাত ও ছিয়াম আদায় করবে?
উত্তরঃ এই নারীর অসুখ শুরু হওয়ার পূর্বে তথা গত মাসে তার ঋতুর যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট ছিল, সেই নির্দিষ্ট দিন সমূহে সে নিজেকে ঋতুবতী হিসেবে গণ্য করে ছালাত-ছিয়াম প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বিগত মাসগুলোর প্রথম দিকে তার ছয়দিন ঋতু ছিল, তারপর এক সময় তার অসুখ শুরু হয়েছে, এক্ষেত্রে সে প্রত্যেক মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন অপেক্ষা করবে এবং ছালাত ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। এ দিন সমূহ শেষ হলেই গোসল করে ছালাত-ছিয়াম আদায় করবে।
এ নারী বা তার মত নারীদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে,
ক) ফরয নামাযের সময় হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে লজ্জাস্থান ধৌত করবে।
খ) তারপর সেখানে প্যাড বা পট্টি জাতীয় কোন কিছু বেঁধে দিবে,
গ) এরপর ওযু করবে এবং নামায আদায় করবে।
নামাযের সময় উপস্থিত হওয়ার পূর্বে এরূপ ওযু ইত্যাদি কাজ করবে না। ফরয নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময় নফল নামায পড়তে চাইলেও এভাবে ওযু ইত্যাদি করবে।
এ অবস্থায় যেহেতু বারবার এতকাজ করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তাই দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। যোহরের সাথে আছরের নামায আদায় করে নিবে বা আছরের সাথে যোহরের নামাযকে আদায় করবে। এবং মাগরিবের সাথে এশার নামায আদায় করবে অথবা এশার সময় মাগরিব ও এশার নামায আদায় করবে। যাতে করে তার একবারের পরিশ্রম দু’নামায যোহর ও আছরের জন্য যথেষ্ট হয় এবং দ্বিতীয়বারের পরিশ্রম মাগরিব ও এশার জন্য যথেষ্ট হয়। আর একবার ফজর নামাযের জন্য। অর্থাৎ- পাঁচবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য লজ্জাস্থান ধৌত করা, পট্টি বাঁধা, ওযু করা প্রভৃতি কষ্টকর বিষয়। তাই এর পরিবর্তে তিনবারেই একাজ আদায় হয়ে যাবে। কষ্টও অনেক লাঘব হবে। (আল্লাহই তাওফীক দাতা ও তিনিই অধিক জ্ঞাত আছেন)
(৭০) প্রশ্ন : এখানে নারীদের কিছু পোশাক রয়েছে, যার আস্তীন লম্বা ও প্রশস্ত, এগুলো পরা কি বৈধ ? অনুরূপ মাহরাম পুরুষ ও অন্যান্য নারীদের সামনে সংকীর্ণ আস্তিন জাতীয় কাপড় পরা কি বৈধ ?
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত :
নারীরা যা ইচ্ছা তাই পরিধান করতে পারে, যদি তাতে পুরুষ অথবা কাফেরদের সাথে সামঞ্জস্য না থাকে। এবং তা পরিধান করার ফলে বেগানা পুরুষের সামনে সতর খোলার সম্ভাবনা না থাকে। নারীরা এমন পোশাক পরিধান করবে, যার দ্বারা ভেতরের অবস্থা প্রকাশ না পায়। এবং এতটুকু প্রশস্ত পরবে, যার দ্বারা হাড্ডির পরিমাণ বুঝা না যায়।
দ্বিতীয়ত :
মাহরাম পুরুষ তথা পিতা, ভাই ও ভাইপোর সামনে নারীর সতর হচ্ছে সমস্ত শরীর, তবে সচরাচর যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত, যেমন চেহারা, চুল, গর্দান, আস্তীন ও পা। আল্লাহ তাআলা বলেন :
(وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ ) النور/31 .
আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। নূর : (৩১)
অতএব, ফিতনা বা সন্দেহের সম্ভাবনা না থাকলে মাহরাম পুরুষের সামনে হাত থেকে কনুই পর্যন্ত সংকীর্ণ আস্তীন বিশিষ্ট কাপড় পরিধান করতে বাধা নেই। কারণ, এতটুকু অংশ মাহরাম পুরুষদের সামনে সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।
অনুরূপ নারীদের সামনে এরূপ কাপড় পরিধান করতেও কোন সমস্যা নেই। যেহেতু তাদের সামনে তা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ ভাল জানেন।
ধর্ষকের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করা কি ওয়াজিব?
(৭১) প্রশ্ন: কেউ যদি কোন নারীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় তখন সেই নারীর উপর আত্মরক্ষা করা কি ওয়াজিব? আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করা জায়েয হবে কি?
উত্তর:
যে নারীর সাথে জোরপূর্বক যেনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে নারীর উপর আত্মরক্ষা করা ফরজ। তিনি কিছুতেই দুর্বৃত্তের কাছে হার মানবেন না। এজন্য যদি দুর্বৃত্তকে হত্যা করে নিজেকে বাঁচাতে হয় সেটা করবেন। এই আত্মরক্ষা ফরজ। ধর্ষণ করতে উদ্যত ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে তিনি দায়ী হবেন না। এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে- ইমাম আহমাদ ও ইবনে হিব্বান কর্তৃক সংকলিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ।” এ হাদিসের ব্যাখ্যায় এসেছে- “যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ” অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী অথবা অন্য কোন নিকটাত্মীয় নারীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল (সে শহীদ)।
যদি স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্য লড়াই করা ও ধর্ষকের হাত থেকে স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হয় তাহলে কোন নারী নিজের ইজ্জত নিজে রক্ষা করার জন্য প্রাণান্তকর লড়াই করা; এই ধর্ষক, জালিম ও দুর্বৃত্তের হাতে নিজেকে তুলে না দিয়ে নিহত হওয়া সে নারীর জন্য বৈধ হওয়া অধিক যুক্তিপূর্ণ। কেননা তিনি যদি নিহত হন তাহলে তিনি শহীদ। যেমনিভাবে কোন নারীর স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে যদি নিহত হন তিনি শহীদ। শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা অনেক বড়। আল্লাহর আনুগত্যের পথে, তাঁর পছন্দনীয় পথে মারা না গেলে এ মর্যাদা লাভ করা যায় না। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এ ধরনের প্রতিরোধকে তথা কোন ব্যক্তির তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে এবং কোন নারীর তার নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে পছন্দ করেন। আর যদি কোন নারী আত্মরক্ষা করতে সমর্থ্ না হন, পাপিষ্ঠ ও দুশ্চরিত্র লোকটি যদি তাকে পরাস্ত করে তার সাথে যেনাতে লিপ্ত হয় তাহলে এ নারীর উপর হদ্দ (যেনার দণ্ড) অথবা এর চেয়ে লঘু কোন শাস্তি কার্যকর করা হবে না। কারণ হদ্দ কায়েম করা হয় সীমালঙ্ঘনকারী, পাপী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির উপর।
ইবনে কুদামা হাম্বলির “মুগনী” নামক গ্রন্থে এসেছে- যে নারীকে কোন পুরুষ ভোগ করতে উদ্যত হয়েছে ইমাম আহমাদ এমন নারীর ব্যাপারে বলেন: আত্মরক্ষা করতে গিয়ে সে নারী যদি তাকে মেরে ফেলে… ইমাম আহমাদ বলেন: যদি সে নারী জানতে পারেন যে, এ ব্যক্তি তাকে উপভোগ করতে চাচ্ছে এবং আত্মরক্ষার্থে তিনি তাকে মেরে ফেলেন তাহলে সে নারীর উপর কোন দায় আসবে না। এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ একটি হাদিস উল্লেখ করেন যে হাদিসটি যুহরি বর্ণনা করেছেন কাসেম বিন মুহাম্মদ থেকে তিনি উবাইদ বিন উমাইর থেকে। তাতে রয়েছে- এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কিছু লোককে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল। সে ব্যক্তি মেহমানদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। তখন সে মহিলা তাকে পাথর ছুড়ে মারেন। যার ফলে লোকটি মারা যায়। সে মহিলার ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেন: আল্লাহর শপথ, কখনই পরিশোধ করা হবে না অর্থাৎ কখনোই এই নারীর পক্ষ থেকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা হবে না। কারণ যদি সম্পদ রক্ষার্থে লড়াই করা জায়েয হয় যে সম্পদ খরচ করা, ব্যবহার করা জায়েয তাহলে কোন নারীর তার আত্মরক্ষার্থে, খারাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাযত করতে গিয়ে, যেনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে- যে গুনাহ কোন অবস্থায় বৈধ নয়- লড়াই করা সম্পদ রক্ষার লড়াই এর চেয়ে অধিক যুক্তিপূর্ণ। এইটুকু যখন সাব্যস্ত হল সুতরাং সে নারীর যদি আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা দুর্বৃত্তকে সুযোগ দেয়া হারাম। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা না করাটাই তো সুযোগ দেয়া।[আল-মুগনি (৮/৩৩১)] আল্লাহ ভাল জানেন।[আল-মুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ (৫/৪২-৪৩)]
ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর “আত-তুরুকুল হুকমিয়্যা” গ্রন্থে বলেন: ১৮- (পরিচ্ছেদ) উমর (রাঃ) এর নিকট এক মহিলাকে আনা হল যে মহিলা যেনা করেছে। তিনি তাকে জিজ্ঞসাবাদ করলেন: মহিলাটি দোষ স্বীকার করল। উমর (রাঃ) তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন: এ নারীর কোন ওজর থাকতে পারে। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) মহিলাটিকে বললেন: কেন তুমি যেনা করেছ? মহিলাটি বলল: আমি এক লোকের সাথে একত্রে পশু চরাতাম। তার উটপালে পানি ও দুধ ছিল। আমার উটপালে পানি ও দুধ ছিল না। আমি পিপাসার্ত হয়ে তার কাছে পানি চাইলাম। সে অস্বীকার করে বলল- আমি আমাকে ভোগ করতে দিলে সে পানি দিবে। আমি (তার প্রস্তাব) তিনবার অস্বীকার করলাম। এরপর আমি এত তীব্র পিপাসা অনুভব করলাম যেন আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে। তখন আমি সে যা চায় তাকে তা দিলাম। বিনিময়ে সে আমাকে পানি পান করাল। তখন আলী (রাঃ) বললেন: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)।
فَمَنْ اُضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلا عَادٍ فَلا إثْمَ عَلَيْهِ ، إنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
(অর্থ- অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩]
সুনানে বাইহাকীতে এসেছে- আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামি হতে বর্ণিত তিনি বলেন: উমর (রাঃ) এর নিকট এক মহিলাকে ধরে আনা হল। সে মহিলা তীব্র পিপাসায় কাতর ছিল এবং এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি রাখালের কাছে পানি চাইল। রাখাল তাকে পানি দিতে অস্বীকৃতি জানাল- যদি না মহিলা রাখালকে জৈবিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ না দেয়। উমর (রাঃ) এ মহিলাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন: এ মহিলা অনন্যোপায় ছিল। আমার অভিমত হল- তাকে খালাস দিন। তখন উমর (রাঃ) মহিলাটিকে খালাস দিলেন। আমি বলব: এই বিধান এখনো চলমান আছে। যদি কোন নারী কোন পুরুষের কাছে থাকা খাবার বা পানীয়ের তীব্র প্রয়োজনের সম্মুখীন হয় এবং সে পুরুষ যেনা করা ছাড়া সেটা দিতে রাজি না হয়, আর সে নারী স্বীয় জীবন নাশের আশংকা করে নিজেকে সে পুরুষের হাতে তুলে দেয় সেক্ষেত্রে সে নারীর উপর শরয়ি হদ্দ (যেনার দণ্ড) কায়েম করা হবে না। কেউ যদি বলেন: এমতাবস্থায় নিজেকে তুলে দেয়া কি জায়েয; নাকি মৃত্যু হলেও ধৈর্য রাখা ওয়াজিব? উত্তর হচ্ছে: এই নারীর ক্ষেত্রে শরয়ি হুকুম হচ্ছে- জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার নারীর হুকুম। যে নারীকে এই বলে হুমকি দেয়া হয়: ‘সুযোগ দিলে দে; না হয় তোকে মেরে ফেলব’। ধর্ষণের শিকার নারীর উপর হদ্দ কায়েম করা হবে না। মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য সে নারী নিজের ইজ্জত বিসর্জন দিতে পারে। তবে যদি কোন নারী ধৈর্যধারণ করে মৃত্যুকে বরণ করে নেয় তবে সেটা তার জন্য উত্তম। কিন্তু এক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা তার উপর ফরজ নয়। আল্লাহই ভাল জানেন।
কোন মুসলিম বেশ্যা বা অসতী মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ কি?
(৭২) প্রশ্নঃ কোন মুসলিম বেশ্যা বা অসতী মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ কি?
উত্তরঃ
কোন মুসলিম কোন ব্যভিচারিণী নারীকে বিবাহ করতে পারে না। বরং ঐ ব্যাপারে ঐরূপ নারী মনোমুগ্ধকর সুন্দরী রুপের ডালি বা ডানা কাটা পরি হলেও মুসলিম পুরুষের তাতে রুচি হওয়াই উচিত নয়। একান্ত প্রেমের নেশায় নেশাগ্রস্থ হলেও তাকে সহধর্মিণী করা হারাম। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক বলেন,
“ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা অংশীবাদিনীকে এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা অংশীবাদী পুরুষকে বিবাহ করে থাকে। আর মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হল।”(নূরঃ ৩)
সুতরাং অসতী নারী মুশরিকের উপযুক্ত; মুসলিমের নয়। কারণ উভয়েই অংশীবাদী; এ পতির প্রেমে উপপতিকে অংশীস্থাপন করে ও করে একক মা’বুদের ইবাদতে অন্য বাতিল মা’বুদকে শরীক। (অবশ্য অসতী হলেও কোন মুশরিকের সাথে কোন মুসলিম নারীর বিবাহ বৈধ নয়।)
পক্ষান্তরে ব্যভিচারিনী যদি তওবা করে প্রকৃত মুসলিম নারী হয়, তাহলে এক মাসিক অপেক্ষার পর তবেই তাকে বিবাহ করা বৈধ হতে পারে। গর্ভ হলে গর্ভাবস্থায় বিবাহ বন্ধন শুদ্ধ নয়। প্রসবের পরই বিবাহ হতে হবে। ৫৫১(ইউঃ ২/৭৮০)
(৭৩) প্রশ্নঃ কোন বিবাহিত মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ কি?
উত্তরঃ
কোন বিবাহিত স্বামী ওয়ালী সধবা মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না তার তালাক হয়েছে অথবা তার স্বামী মারা গেছে এবং তার নির্ধারিত ইদ্দত কাল অতিবাহিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতিত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এ হল আল্লাহ্র বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ব্যতিত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হল; এই শর্তে যে, তোমরা তাঁদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নয়।” (নিসাঃ ২৪)
(৭৪) প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি এক কুমারীর সাথে (প্রেম করে) ব্যভিচার করেছে, এখন সে তাকে বিবাহ করতে চায়। এটা কি তার জন্য বৈধ?
উত্তরঃ
যদি বাস্তবে তাই হয়ে থাকে, তাহলে ওদের প্রত্যেকের উপর আল্লাহ্র নিকট তওবা করা ওয়াজেব; এই নিকৃষ্টতম অপরাধ হতে বিরত হবে, অশালীনতায় পড়ার ফলে যা ঘটে গেছে, তার উপর খুব লজ্জিত হবে, এমন নোংরামীর পথে পুনরায় পা না বাড়াতে দৃঢ়সংকল্প হবে এবং অধিক অধিক সৎকাজ করবে। সম্ভবতঃ আল্লাহ উভয়কে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদেরকে পাপসমূহকে পুন্যে পরিণত করবেন। যেমন তিনি বলেন,
“যার আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য উপাস্যকে আহবান করে না, আল্লাহ যাকে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে হত্যা নিষেধ করেছেন, তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করে তারা শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন ওদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীন অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে, (পূর্ণ) ঈমান এনে সৎকার্য করে, আল্লাহ ওদের পাপরাশীকে পুন্যে পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকাজ করে, সে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্র অভিমুখী হয়।” (সূরা ফুরকান ৬৮-৭১ আয়াত)
আর ঐ ব্যক্তি যদি ঐ মহিলাকে বিবাহ করতে চায়, তাহলে বিবাহ বন্ধনের পূর্বে এক মাসিক দেখে তাকে (গর্ভবতী কি না তা) পরীক্ষা করে নেবে। যদি (মাসিক না হয় এবং) তার গর্ভ প্রকাশ পায়, তাহলে তার বিবাহ বন্ধন ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সন্তান প্রসব করেছে। যেহেতু রসূল (সঃ) অপরের ফসলকে নিজের পানি দ্বারা সিঞ্চিত (অর্থাৎ গর্ভবতী নারীকে বিবাহ করে সঙ্গম) করতে নিষেধ করেছেন। ৫৪২ (আবূ দাঊদ) (লাজনাহ দায়েমাহ)।
অবৈধ সম্পর্কের কারণে বেদনা-উৎকণ্ঠা
(৭৫) প্রশ্ন-
আমি বর্তমানে মানসিক দিক থেকে খুবই সঙ্কটাপন্ন সময় কাটাচ্ছি। মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে পারছি না। আমি আমার ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত কোনো বিষয়েই ভাবতে পারছি না। মৃত্যু ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে আমি ভাবতে পাচ্ছি না। তা সত্ত্বেও আমি এই মুহূর্তে মরতে চাই না। আল্লাহর কাছে আমার আশা, আমি যে পাপ করেছি তিনি তা ক্ষমা করে দেবেন।
আমার সমস্যাটা হল, বিগত কয়েক মাসে একটি নারীর সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। মূলতঃ তার সাথে সম্পর্ক করা আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তবে যে কারণে আমি তার কাছাকাছি এসেছি তা হল আমি তাকে বুঝাতে চেয়েছি যাতে সে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে সরে আসে। সে আত্মহত্যা করবে বলে মনস্থির করেছিল। সে উচ্চমাত্রায় ট্যাবলেট গ্রহণ করত। আমি তাকে আত্মহত্যার পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য নানা উপদেশ ও চেষ্টা করতাম। আমার ইচ্ছা ছিল তাকে জাহান্নাতে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচানো। তবে যা ঘটল তা হলো, ক্রমান্বয়ে আমাদের মাঝে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলো। তবে আমরা কখনো অসামাজিক কাজে লিপ্ত হই নি। এধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছাও আমার ছিল না। এই মেয়েটি বিবাহিতা। সমস্যা হলো, সে দাবি করছে, আমি একবার তার সাথে শারীরিকভাবে মিলেছি। আমি তার কথা বিশ্বাস করি না; কেননা আমি কখনো আমার কাপড় খুলে নি। তবে সে ছিল অর্ধনগ্ন। আমার ভয় হচ্ছে, আমি হয়তো কোনো পাপ করে ফেলেছি। যদিও আমি তার সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হই নি। তবে যদি সত্যি তার দাবি অনুযায়ী এরূপ কর্ম করে থাকি, তবে তো আমার রক্ষা নেই।
আমি তাকে বিশ্বাস করি না; কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, সে আমার ভালো চায় না। আর তার আত্মহত্যার অভিনয়টি ছিল আমার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিছক একটি ছলনা।
বর্তমানে আমি খুবই চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত। আমি ঘুমাতে পারি না। কোনো কিছু করতেও পারি না। যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি তো শুধু তাকে আগুন থেকে বাঁচাতে চেয়েছি। তবে এখন আমার ভয় হচ্ছে , আমি নিজেকে ধ্বংস করার কারণ হয়েছি।
উত্তর-
আলহামদুলিল্লাহ
প্রথমত: ওই নারীর বন্ধুত্ব থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। ওই নারীর সাথে সম্পর্ক করা, মেয়েদের সাথে একাকী হওয়ার ব্যাপারে লাগাম ছেড়ে দিয়ে যে অন্যায়কর্ম আপনি করেছেন তা পাপ, গুনাহ। এধরনের পাপের জন্য আল্লাহর আযাব-শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: ওই নারীর সাথে সকল সম্পর্ক স্থায়ীভাবে কর্তন করতে হবে। অন্য কোনো নারীর সাথেও এধরনের সম্পর্ক রাখা যাবে না; কেননা এধরনের অধিকাংশ সম্পর্কের শেষ পরিণতি হলো যিনা-ব্যভিচার, অথবা নিষিদ্ধ হারামভাবে স্বাদ গ্রহণ। নাউজুবিল্লাহ। যদিও শুরুতে, আপনার কথামতো, সম্পর্কটা ছিল নিষ্কলুষ। তবে শয়তান মানুষের মাঝে রক্তের মতোই বিচরণ করে। আর জেনে রাখুন পরনারীর সাথে সম্পর্ককে কখনো নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ বলা যায় না।
এখন আপনার যা উচিত, তা হলো দ্রুত তাওবা করা। উত্তম তাওবা। আর তার পদ্ধতি হল যা হয়েছে সে ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া। এই সম্পর্ক পরিপূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা। অন্যকোনো হারাম সম্পর্ক কায়েম না করার জন্য সত্যিকার অর্থে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া। এই খারাপ মহিলাটি আপনাকে বোঝাতে চাচ্ছে আপনি তার সাথে খারাপ কাজ করেছেন। ভবিষ্যতে যাতে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হন সে জন্য সে এটাকে ছুতা হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। যদি ওই মহিলার দাবি অনুযায়ী তার সাথে খারাপ কাজ করেও থাকেন, তাহলেও যেন শয়তান এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে এবং আল্লাহর রহমত থেকে আপনাকে নিরাশ না করে দেয়। অন্যথায় শয়তান আপনাকে কুপথে টেনে নিয়ে যাবে এবং খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি তুচ্ছ জ্ঞান করাবে। বারবার এ-কাজে লিপ্ত করাবে, এবং একপর্যায়ে সে তাওবা করা দুষ্কর হয়েগিয়েছে বলে প্রবোধ দেবে। শয়তান এধরনের অনুভূতি আপনার মধ্যে বদ্ধপরিকর করতে চায়। তবে আল্লাহর রহমত সুপরিব্যাপ্ত। তাই আপনি দ্রুত তাওবা করুন। ইরশাদ হয়েছে:
(বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[ সূরা আয-যুমার:৫৩]
যে ব্যক্তি সত্য ও খালেস তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। ইরশাদ হয়েছে:
(আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু) [ সূরা আল ফুরকান: ৮৬-৭০]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি.) হতে বর্ণিত,
একব্যক্তি এক পরনারীকে চুম্বন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল, সে ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, অতঃপর আল কুরআনের এ আয়াতগুলো নাযিল হল:
(আর তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে, নিশ্চয় ভালোকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ। ) [ সূরা হুদ:১১৪]
লোকটি বললেন, এটা কি আমার জন্য হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি এ অনুযায়ী আমল করবে তার জন্য। (অন্য এক বর্ণনায়) তিনি বললেন: ফাহেশা [অর্থাৎ যৌনাঙ্গে যিনা-ব্যভিচারের পর্যায় ব্যতীত] যে ব্যক্তি পরনারীর সাথে কোনো কিছু করল। [মুসলিম: আত-তাওবা/৪৯৬৪]
আর আপনি বেশি-বেশি আমলে সালেহা, নামাজ, ইস্তেগফার ইত্যাদি করুন। ভালো ও ধার্মিক সঙ্গী খোঁজে নিন, যারা এই হারাম সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে। আর জেনে রাখুন, তাওবার দরজা সদা উন্মুক্ত, কেয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর গড়গড়া শুরুর আগ পর্যন্ত তাওবা কবুল করেন।
অবশেষে বলতে চাই, আপনাকে শরিয়তসিদ্ধ পথ বেছে নিতে হবে, যাতে আল্লাহ চাহে তো নিজেকে হিফাযত করতে পারবেন, অর্থাৎ বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি এ-জাতীয় হারাম কর্মে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে, তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন, তা করার তাওফিক দান করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষিত হোক।
(৭৬) প্রশ্নঃ স্বামী সহবাসের পর গোসল করার পূর্বে মহিলার জন্য কি ঘর সংসারের কাজকর্ম ও রান্না-বান্না করা বৈধ নয়?
উত্তরঃ
স্বামী সহবাসের পর গোসল করার পূর্বে মহিলার জন্য ঘর সংসারের কাজকর্ম ও রান্না-বান্না করা অবৈধ নয়। যা অবৈধ, তা হল, নামায, কা’বা-ঘরের তওয়াফ, মসজিদে অবস্থান, কুরআন স্পর্শ ও তিলাঅত। এ ছাড়া অন্যান্য কাজ বৈধ।
একদা আবূ হুরাইরা এর সাথে মহানবী (সঃ) এর মদীনার এক পথে দেখা হল। সে সময় আবূ হুরায়রা অপবিত্রাবস্থায় ছিলেন। তিনি সরে গিয়ে গোসল করে এলেন। নবী (সঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথায় গিয়েছিলে আবূ হুরায়রা!” তিনি বললেন, ‘আমি অপবিত্র ছিলাম। তাই সেই অবস্থায় আপনার সাথে বসাটাকে অপছন্দ করলাম।’ নবী (সঃ) বললেন, “সুবহানাল্লাহ! মু’মিন অপবিত্র হয় না।” (বুখারী ২৭৯, মুসলিম ৩৭১ নং) অর্থাৎ মুসলিম অভ্যান্তরিকভাবে অপবিত্র হলেও বাহ্যিকভাবে সে অপবিত্র হয় না বা অস্পৃশ্য হয়ে যায় না।
(৭৭) প্রশ্নঃ নাম করা বংশের ছেলে বা মেয়ের সাথে কি বংশ পরিচয়হীন ছেলে বা মেয়ের বিবাহ শুদ্ধ নয়?
উত্তরঃ
কোন কোন মানুষ এই ভেদাভেদ জ্ঞান রেখে উপযুক্ত পাত্র বা পাত্রী হাতছাড়া করে। অথচ তা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক আল্লাহ ভীরু। আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।” (১৩)
আর মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম বান্দা হল সেই যার চরিত্র সুন্দর।” ৫৫৮ (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে ১৭৯ নং)
ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন, “আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি সে, যে সবচেয়ে বেশী পরহেযগার। আর সবচেয়ে উচ্চ বংশীয় লোক সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।” ৫৫৯ (আল-আদাবুল মুফরাদ)
নবী (সঃ) বলেন, “যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদেরকে মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলে কিংবা মেয়ের)বিবাহ দাও। যদি তা না কর (শুধুমাত্র দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিবাহ না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও কেবলমাত্র বংশ, রূপ বা ধন সম্পত্তির লোভে বিবাহ দাও), তবে পৃথিবীতে বর ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।” ৫৬০(তিরমিযী ১০৮৫ নং, ইবনে মাজাহ ১৯৬৭ নং)

জোরপূর্বক বিবাহ বা তালাক
(৭৮) প্রশ্নঃ কোন কোন সময় এমন হয় যে, জোরপূর্বক বর বা কনেকে বিবাহের কাবিন নামা বা তালাক পত্রে সই করিয়ে বিবাহ বা তালাক দেওয়া হয়। কিন্তু জোরপূর্বক বিবাহ বা তালাক কি গণ্য?
উত্তরঃ জোরপূর্বক বিবাহ বা তালাক গণ্য নয়। ভয় দেখিয়ে বা হুমকির মুখে কাউকে বিয়ে করে সংসার করলে ব্যভিচার করা হয়। অনুরূপ তালাকও। জোরপূর্বক মুসলিম বানানো হলে যেমন কেউ মুসলিম হয়ে যায় না, জোরপূর্বক কুফরী করলে যেমন কেউ কাফের হয় না, তেমন বিবাহ ও তালাকও। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“কেউ বিশ্বাস করার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং অবিশ্বাসের জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহ্র ক্রোধে এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে অবিশ্বাসে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ তার চিত্ত বিশ্বাসে অবিচল।” (নাহলঃ ১০৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ আমার উম্মাতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে করতে সে বাধ্য হয়েছে। (এ হাদীসটি হাসান। ইবনে মাজাহ্ (নং-২০৪৫), বায়হাকী (সুনান, হাদীস নং-৭) ও আরো অনেকেই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
(৭৯) প্রশ্নঃ একজনের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে বৈধ কি?
উত্তরঃ
মহান আল্লাহ যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম বলেছেন, তার মধ্যে একজন হল বিবাহিত মহিলা, যে কোন স্বামীর বিবাহ বন্ধনে বর্তমানে সংসার করছে এবং তালাক হয়নি। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এ হল আল্লাহ্র বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ব্যাতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হল; এই শর্তে যে, তোমরা তাঁদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নয়।” (নিসাঃ ২৪)
বলা বাহুল্য একজনের স্ত্রী অবস্থায় থাকাকালে অন্যের সাথে বিবাহ বন্ধনই শুদ্ধ হবে না, কিন্তু অন্ধ প্রেম সেই দম্পতিকে চির ব্যভিচারের নর্দমায় ফেলে রাখে।
(৮০) প্রশ্নঃ অবৈধ প্রনয়ের মাধ্যমে কোট ম্যারেজ বা লাভ ম্যারেজ বৈধ কি? তাতে যদি মেয়ের অভিভাবক সম্মত না থাকে, তাহলে সে বিবাহ বৈধ কি?
উত্তরঃ
বিয়ের পূর্বে কোন যুবক যুবতীর ভালবাসা করা হারাম। অতঃপর আপোষে মেলামেশা ও ব্যাভিচার করা তো কবীরা গোনাহর পর্যায়ভুক্ত। আর ব্যাভিচার হল ১০০ চাবুক ও কারা শাস্তি ভোগের পাপ। পরন্ত বিবাহিত হলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযুক্ত। অতঃপর যে মা বাপ কতো মায়া মমতার সাথে মানুষ করে, সেই মা বাপের মাথায় লাথি মেরে চোরের মতো পালিয়ে গিয়ে লাভ ম্যারেজ বা কোর্ট ম্যারেজ করে! কিন্তু সে বিয়েতে মেয়ের বাপ রাজী না থাকলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। যেহেতু নবী (সঃ) বলেছেন, “যে নারী তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই নিজে নিজে বিবাহ করে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল।” ৫৬৩ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, মিশকাত ৩১৩১ নং)
এমন চোরদের দাম্পত্য, চির ব্যভিচার হয়। যেহেতু তাদের বিবাহ শুদ্ধ নয়।
(৮১) প্রশ্নঃ রোযাদারের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে যদি তা পেটে পৌঁছে তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কেননা লাক্বীত বিন সাবুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন,
وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
ছিয়াম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।
[আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিও্বতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। ]
অতএব পেটে পৌঁছে এরকম করে রোযাদারের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়।
রোযাদার কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে পৌঁছে যায়, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে তার কোন ইচ্ছা ছিল না। আল্লাহ্ বলেন,
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।(সূরা আহযাবঃ ৫)
আরেকটি বিষয় নাকে ভাপের ধোঁয়া টানলে ধোঁয়ার কিছু অংশ পেটে প্রবেশ করে আর তা নিজ ইচ্ছায় হলে, এতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
চোখে ড্রপ ব্যবহার করা সুরমা ব্যবহার করার ন্যায়। কানে ,চোখে ড্রপ ব্যবহার করে উহা পেটে পৌঁছানোর ইচ্ছা করা হয় না; বরং এতে উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধু ড্রপ ব্যবহার করা।এতে রোযা নষ্ট হবে না।
এমনিভাবে রোযা অবস্থায় শ্বাসকষ্টের কারণে স্প্রে(nabulijer) ব্যবহার করলে এবং স্প্রে নাকে প্রবেশ করে কিন্তু পেট পর্যন্ত পৌঁছে না। তাই রোযা রেখে ইহা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। এতে রোযা ভঙ্গও হবে না। কেননা এটা এমন বস্তু যা উড়ে বেড়ায় নাকে প্রবেশ করে এবং বিলীন হয়ে যায়, এর অংশ বিশেষ পেটের মধ্যে প্রবেশ করে না। তাই এদ্বারা ছিয়াম ভঙ্গ হবে না।
শ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য যদি মুখে পাইপ লাগিয়ে অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে চলমান করা হয়, এবং তা পেটে পৌঁছে, তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা পানাহারের অন্তর্ভূক্ত নয়।
(৮২) দাড়িয়ে পান করার ব্যাপারে ইসলামে কী সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে? পান করার নিয়মগুলো সংক্ষেপে বলবেন কি?
উত্তর:
শুধু মুসলিম শরীফেই ছয়টির বেশি সহীহ হাদীস আছে যেখানে মুসলমানদেরকে দাড়িয়ে পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলো “রসূল (সঃ) দাড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম, ৫০১৭)“মহানবী (সঃ) কোনো ব্যক্তিকে দাড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম হাদীস নং)“নবী করীম (সঃ) দাড়িয়ে পান করা সতর্ক করে দিয়েছেন।” (মুসলিম, ৫০২০) “কেউ দাড়িয়ে পান করবে না।” (মুসলিম, ৫০২২) সুতরাং এ সকল হাদীসগুলো দাড়িয়ে পান করাকে অনুমোদন দিচ্ছে না। আরো হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, “মুহাম্মদ (সঃ) জমজম কূপের পানি পান করার সময় দাড়িয়ে পান করতেন। (মুসলিম, ৫০২৩ ও ৫০২৭) “তিনি দাড়িয়ে জমজমের পানি পান করতেন।” (বুখারী, ১৬৩৭) সুতরাং উল্লিখিত হাদীসগুলোর উপর ভিত্তি করে সকল আলেমরা এ ব্যাপারে একমত যে, জমজমের পানি পান ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে বসে পান করতে হবে। কিন্তু এমন হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, মুহাম্মদ (সঃ) জমজমের পানি দাড়িয়ে পান করা ছাড়া অন্য সময়ও দাড়িয়ে পান করতেন। হাদীস উল্লেখ আছে যে, “আলী (রাঃ) মসজিদের দিকে হাটছিলেন এবং দাড়িয়ে পানি পান করেছিলেন এবং তিনি বলেন, আমি জানি যে অনেক মানুষ এটাকে অনুমোদনহীন কাজ বলে ভাবে কিন্তু আমি মহানবী (সঃ) কে দাড়িয়ে পান করতে দেখেছি।” (বুখারী, ৫৬১৫) একদা আলী (রাঃ) দাড়িয়ে পান করছিলেন এবং লোকেরা তার দিকে তাকাতে লাগলো, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো, আমি তাই করছি যা মুহাম্মদ (সঃ) করেছেন, আমি দাড়িয়ে পান করি, কারণ মুহাম্মদ (সঃ)-কে এভাবে দেখেছি এবং আমি বসেও পান করি কারণ আমি মহানবী (সঃ)-কে বসে পান করতে দেখেছি।” (মুসনাদ আহমদ, ৭৯৭) “ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন যে, তিনি মুহাম্মদ (সঃ) এর সাথে ছিলেন এবং মুহাম্মদ (সঃ) অনেক সময় হাটতে হাটতে খেতেন এবং দাড়িয়ে পান করতেন।” (তিরমিযী, ১৮৮১) সুতরাং এই সকল হাদীসের উপর ভিত্তি করে আলেমরা মতৈক্যে পৌছেন যে, বসে পান করা মুস্তাহাব। কারণ এটা নবী (সঃ) নির্দেশ, যখন নির্দেশ এবং কাজকর্মের ভিতরে দ্বন্দ্ব দেখা যায় তখন নির্দেশটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে, কারণ নির্দেশ হলো সাধারণ সিদ্ধান্ত। তবে দাড়িয়ে পান করা মাকরূহ কিন্তু এর জন্য কোনো শাস্তি নেই। কেউ কেউ বলেন দাড়িয়ে পান করা হারাম। কিন্তু না এটা হারাম নয় বরং মাকরূহ। বসে পান করা অধিক অধিক উত্তম। * আর পান করার নিয়মগুলো হলো: ১. পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। ২. ডান হাত দ্বারা পান করতে হবে। ৩. বসে পান করতে হবে। ৪. তিন ঢোক কিংবা তার চেয়ে বেশি ঢোকে পান করতে হবে কিন্তু এক ঢোকে নয়। ৫. পান করার পরে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে। ৬. যে ব্যক্তি পানীয় সরবরাহ করে তার উচিৎ সকলকে সরবরাহ করে সবার শেষে নিজে পান করা। ৭. পানি সরবরাহ করার সময় ডানদিক থেকে সরবরাহ করতে হবে। ৮. কলসি হতে পানি পান করা উচিত নয় বরং গ্লাসে ঢেলে পান করতে হবে। ৯. স্বর্ণ এবং রূপার পাত্রে পানি পান করা উচিত নয়। সুতরাং এগুলোই হলো পান করার নিয়ম এবং রসূল (সঃ) এর সুন্নত।
ডান হাতের সাহায্য নিয়ে বাম হাতে পান করা কি সুন্নত পরিপন্থী?
(৮৩) প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের বাড়িতে প্রতি শুক্রবার আকিদার দরস হয়, তার দাওয়াতে সেখানে আমি অংশ গ্রহণ করি। খাবারের সময় আমাদের একজন বাম হাতে গ্লাস নিয়ে ডান হাতের তালুর উল্টো পিঠে রেখে পানি পান করছিল, উপস্থিত একজন তাকে বাঁধা দিয়ে বলল: “না, এভাবে পানি পান করবেন না। ডান হাতেই পানি পান করুন, গ্লাসে খাবার লাগলে লাগুক”। এরকম ঘটনা আমার জীবনে এটাই প্রথম। আমার জিজ্ঞাসা আমরা যে বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র তুলে ডান হাতের সাহায্যে পান করি, তা কি সুন্নতের খিলাফ, অথবা বাম হাতে খাওয়া শয়তানী কর্মের অন্তর্ভুক্ত? জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দিন।
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ,
হাদিসে স্পষ্টভাবে ডান হাতে পান করার নির্দেশ ও বাম হাতে পান করার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
( إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ ، وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ ) .
“যখন তোমাদের কেউ খায় সে যেন ডান হাতে খায়, এবং যখন পান কর সে যেন ডান হাতে পান করে। কারণ শয়তান তার বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে”।[1]
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لَا تَأْكُلُوا بِالشِّمَالِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِالشِّمَالِ
“তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়”।[2]
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সালেম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لَا يَأْكُلَنَّ أَحَدُكُمْ بِشِمَالِهِ، وَلَا يَشْرَبَنَّ بِهَا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِهَا وَيَشْرَبُ بِهَا، قَالَ: وَزَادَ نَافِعٌ: وَلَا يَأْخُذَنَّ بِهَا، وَلَا يُعْطِيَنَّ بِهَا
“তোমাদের কেউ বাম হাতেবা খাবে না এবং তার দ্বারা পান করবে না, কারণ শয়তান তার মাধ্যমে খায় ও পান করে”। ওমর ইব্ন মুহাম্মদ বলেন: ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর অপর ছাত্র নাফে বাড়িয়ে বলেছেন: “… বাম হাতে ধরবে না এবং বাম হাত দ্বারা কাউকে দিবে না”।[3]
ইয়াস ইব্ন সালমা ইব্ন আকওয়া থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাকে বলেছেন:
أَنَّ رَجُلًا أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: ” كُلْ بِيَمِينِكَ، قَالَ: لَا أَسْتَطِيعُ، قَالَ: ” لَا اسْتَطَعْتَ مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ، قَالَ: فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তার বাম হাতে খেল, তিনি বললেন: “তোমার ডান হাতে খাও”। সে বলল: পারি না। তিনি বললেন: “তুমি কখনো পারবে না, অহংকার ব্যতীত কোন কারণ তাকে বাঁধা দেয়নি”। তিনি বলেন: সে তার ডান হাত কখনো মুখে তুলতে পারেনি।[4]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ أَكَلَ بِشِمَالِهِ أَكَلَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ، وَمَنْ شَرِبَ بِشِمَالِهِ شَرِبَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ
“যে তার বাম হাতে খায়, শয়তান তার সাথে খায়। আর যে তার বাম হাতে পান করে, শয়তান তার সাথে পান করে”।[5]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ، وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা, পান করা ও পরিধানের জন্য তার ডান হাত ব্যবহার করতেন, এ ছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য তিনি তার বাম হাত ব্যবহার করতেন”।[6]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব নিষেধাজ্ঞা থেকে স্পষ্ট হয় যে, বাম হাতে খাওয়া, পান করা ও আদান-প্রদান করা নিষেধ ও অবৈধ এবং শয়তানি কর্মের অন্তর্ভুক্ত। শয়তানি কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ [المائدة: ٩٠]
“হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”। সূরা মায়েদা: (৯০)
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।[7]
অতএব প্রমাণ হল বাম হাতে পান করা যাবে না, কারণ বাম হাতে পান করা শয়তানি কর্ম, আল্লাহ যা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাম হাতে পান করার অর্থ শয়তানের দলভুক্ত হওয়া, আল্লাহ যার থেকে সর্তক করেছেন, কারণ শয়তান আমাদের চিরশত্রু, সে তার দলকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لَكُمۡ عَدُوّٞ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا يَدۡعُواْ حِزۡبَهُۥ لِيَكُونُواْ مِنۡ أَصۡحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ ٦ [فاطر: ٦]
“নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়”। [ সূরা ফাতের: ৬]
হ্যাঁ কোন অপারগতা, হাতে জখম ও শরীয়ত অনুমোদিত কারণ থাকলে বাম হাতে পানাহার করা বৈধ। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿ وَقَدۡ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيۡكُمۡ إِلَّا مَا ٱضۡطُرِرۡتُمۡ إِلَيۡهِۗ ١١٩ [الانعام: ١١٩]
“অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, তবে যার প্রতি তোমরা বাধ্য হয়েছ”।[8]
সুতরাং বাধ্য হয়ে বাম হাতে পান করা বৈধ।
উভয় হাতে পান করা:
কতক বর্ণনা থেকে প্রমাণ হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাতে পানি পান করেছেন। যেমন ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَشَرِبَ مِنْ زَمْزَمَ مِنْ دَلْوٍ مِنْهَا وَهُوَ قَائِمٌ
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান অবস্থায় যমযমে রাখা বালতি দ্বারা যমযমের পানি পান করেছেন”।[9]
আব্দুর রহমান ইব্ন আবু ওমর নিজ দাদীর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
(دَخَلَ عَلَيَّ رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي الْبَيْت قِرْبَة مُعَلَّقَة فَشَرِبَ قَائِمًا فَقُمْت إِلَى فِيهَا فَقَطَعْته) .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আগমন করেন, তখন বাড়িতে ঝুলন্ত [চামড়ার তৈরি] পানির মশক ছিল, তিনি দণ্ডায়মান অবস্থায় পান করেন, অতঃপর আমি তার মুখ দেয়ার জায়গা কেটে সংরক্ষণ করি”।[10]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فَرَفَعَهُ عَلَى يَدَيْهِ فَشَرِبَ لِيَرَى النَّاسُ أَنَّهُ لَيْسَ بِصَائِمٍ
“… অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্র তলব করলেন, তিনি তা উভয় হাতের ওপরে রাখলেন ও পান করলেন, যেন মানুষেরা দেখে তিনি সিয়াম অবস্থায় নেই”।[11]
আল্লাহ তা’আলার বাণী:
﴿ إِلَّا مَنِ ٱغۡتَرَفَ غُرۡفَةَۢ بِيَدِهِۦۚ ٢٤٩ [البقرة: ٢٤٩]
“তবে যে তার হাতের অঞ্জলি ভরে পান করে”।[সূরা বাকারা ২৪৯]
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কতক মুফাস্সির বলেছেন: “গারফাতুন” অর্থ এক হাত দ্বারা পান করা। আর “গুরফাতুন” অর্থ দুই হাত দ্বারা পান করা”। আয়াতে যেহেতু গুরফাতুন রয়েছে তাই আমরা বলতে পারি যে, বাদশাহ তালুতের অনুসারীগণ –যার মধ্যে দাউদ ‘আলাইহিস সালামও ছিলেন- দুই হাতে পানি পান করে ছিলেন”।
এসব দলিল থেকে প্রমাণ হয় যে, প্রয়োজন হলে দুই হাতে পান করা বৈধ। যেমন বড় পাত্র, অথবা কলসি, অথবা বালতী থেকে সরাসরি দুই হাতে পান করা। অথবা ডান হাতে সমস্যা হলে বাম হাতের সাহায্য নিয়ে দুই হাতে পান করা বৈধ। কারণ শয়তান দু’হাতে পান করে না।
এক হাতে পান করার সময় অপর হাতের সাহায্য নেয়া:
এক হাতে পান করার সময় যখন অপর হাতের সাহায্য নেয়া হয়, তখন যে হাতের অংশ গ্রহণ বেশী থাকে সে হাতে পান করাই গণ্য হয়। অর্থাৎ পানির পাত্র যদি বড় হয়, অথবা হাত ফসকে গ্লাস পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বা কোন জরুরতে ডান হাতে গ্লাস ধরে বাম হাতের সাহায্য নেয়া হয়, তাহলে ডান হাতেই পান করা গণ্য হয়। এতে কোন সমস্যা নেই। আর যদি বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র ধরে ডান হাতের সাহায্য বা সামান্য স্পর্শ গ্রহণ করা হয়, তাহলে বাম হাতে পান করা গণ্য হয়। শরীয়তে যা নিষেধ। কতক আলেম বাম হাতে পান করার নিষেধাজ্ঞাকে ইসলামী আদব, মোস্তাহাব ও সুন্নত পরিপন্থী হিসেবে দেখেছেন। কতক আলেম বলেছেন ডান হাতে পান করা অবশ্য জরুরী, বিনা প্রয়োজনে বাম হাতে পান করা হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বদা ডান হাতে পান করা, বাম হাতে পান করাকে শয়তানি কর্ম বলা এবং বাম হাতে পানকারীকে বদ দোয়া দেয়া ইত্যাদি দ্বিতীয় মতকে যথাযথ প্রমাণ করে।
মুসলিমে বর্ণিত, জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদিস “তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়” প্রসঙ্গে ইব্ন আব্দুল বারর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “জাবের থেকে বর্ণিত হাদিসে বাম হাতে খাওয়া ও পান করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কথা সর্বজন বিদিত যে, কোন বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার অর্থ তার বিপরীত বিষয় থেকে নিষেধ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম হাতে খাওয়া ও পান করার কঠিন নিষেধাজ্ঞা জেনে যে বাম হাতে খেল অথবা পান করল, অথচ ডান হাতে খেতে তার কোন সমস্যা ছিল না, বা কোন বাঁধা তাকে ডান হাত থেকে বিরত রাখেনি, সে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করল। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করল সে পথভ্রষ্ট হল”।[12]
আমাদের দেশে বাম হাতে পান করার যে বদ অভ্যাস গড়ে ওঠেছে তা বৈধ নয়। যেমন বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র উঠিয়ে ডান হাতের সামান্য স্পর্শ নিয়ে পান করা। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় বাম হাতে গ্লাস তুলে ডান হাতের সামান্য স্পর্শ নেয় অতঃপর বাম হাতেই পানি পান করে। অর্থাৎ শুরুতে বাম হাতে পানির গ্লাস তুলল অতঃপর ডান হাতের স্পর্শ নিল, আবার মুখের স্পর্শ লাগার আগেই ডান হাত গ্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন হল। এভাবে মূলত বাম হাতেই পান করা হল, বা ডান হাতের সামান্য সাহায্য নেয়া হল, বা বাম হাতের সাথে সাথে ডান হাতও নাড়াল, প্রকৃত পক্ষে যা বাম হাতে পান করাই গণ্য হয়। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় ডান হাতের স্পর্শ পর্যন্ত লাগে না! এভাবে আস্তে আস্তে বাম হাতে পান করার বদ অভ্যাস গড়ে উঠে।
আমাদের অনেকে যে অজুহাত বা কারণ দেখিয়ে বাম হাতে পান করেন, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকে বলেন ডান হাতে গ্লাস নিলে তাতে খাবার লাগে তাই বাম হাতে গ্লাস ধরি। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন কারণ নয়। গ্লাসে খাবার লাগলে কোন সমস্যা নেই, ধুলেই তা চলে যায়। বর্তমান যেহেতু সবাই আলাদা গ্লাস ব্যবহার করি, তাই এতে অপরের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একাধিক ব্যক্তি একই গ্লাস ব্যবহার করার সময় হাত চেটে পরিষ্কার করে নিলে হয়, বা টিস্যু পেঁচিয়ে গ্লাস ধরা যায়। হোটেল, পার্টি বা নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানে সবাইকে আলাদা গ্লাস দেয়া হয়, বা ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য কাগজ বা প্লাস্টিকের গ্লাস দেয়া হয়, সেখানে গ্লাসে খাবার লাগলেও সমস্যা নেই। দুঃখের বিষয় এ সুন্নতের বিপরীতে আমাদের দেশে বদ অভ্যাস কঠিন আকার ধারণ করেছে। কোন কারণ ছাড়াই আমরা বাম হাতে গ্লাস নিয়ে পান করি, যা সুন্নত পরিপন্থী ও নিন্দনীয় কাজ।
একটি আশ্চর্য বিষয়! আমরা খাবার সময় বাম হাতের ব্যবহারকে খুব খারাপ দৃষ্টিতে দেখি। খাবারের মাঝে গোস্ত ইত্যাদি ছেড়ার জন্য আমরা দাঁতের সাহায্য নেই, অনেকে পাশে থাকা সহপাঠীর সাহায্য পর্যন্ত গ্রহণ করি, তবু বাম হাত ব্যবহার করি না, অথচ এখানে বাম হাত ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তাই দাঁতে কষ্ট না করে বা অপরের সাহায্য না নিয়ে বাম হাতের সাহায্য নেয়াই অধিক শ্রেয়। এ জন্য খাবার শুরুতে উভয় হাত ধুয়ে নেয়া সুন্নত। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهُ وَالْوُضُوءُ بَعْدَهُ
“… খানার বরকত হচ্ছে তার পূর্বে ও পরে ওযু করা”।[13]
তবে মুখে খাবার অবশ্যই ডান হাতে তুলতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বাম হাতের সাহায্য নেয়া বৈধ।
অনেকে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের প্রধান খাদ্য ছিল রুটি বা শক্ত খাবার। তাই খাবার সময় ডান হাতে গ্লাস ধরলে তাতে খাবার লাগত না, কিন্তু আমাদের অধিকাংশ খাবার তরল। তাই আমাদের প্রয়োজন হয় বাম হাতে গ্লাস ধরা। বস্তুত বিষয়টা পুরোপুরি সঠিক নয়, যদিও তখনকার অধিকাংশ খাবার শুষ্ক ছিল, কিন্তু তরল খাবারও ছিল, বিশেষ করে “সারিদ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় খাবার ছিল। গোস্তের শুরবায় রুটি ভিজিয়ে সারিদ তৈরি করা হয়, যা আমাদের ডাল-ভাতের ন্যায় তরল, কিন্তু তবুও কেউ কখনো বর্ণনা করেননি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে গ্লাস তুলে ডান হাতের সাহায্য নিয়ে পান করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছায়ার মত অনুসরণকারী সাহাবি ও জীবন সঙ্গিনী ঘরের স্ত্রীগণ পর্যন্ত দেখেননি তিনি বাম হাতে পাত্র নিয়ে ডান হাতে সামান্য ভর রেখে পান করেছেন! যদি তারা দেখতেন অবশ্যই বর্ণনা করতেন। অথচ কম হলেও দিনে দুইবার তিনবার খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন হয়, পানি তো তারচেয়ে বেশী! বরং আমরা দেখতে পাই খাবার দস্তরখানে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন:
يا غلام سم الله وكل بيمينك وكل مما يليك
“হে বৎস বিসমিল্লাহ বল, ডান হাতে খাও ও সামনে থেকে খাও”।
অতএব হাতে খাবার লাগা এমন অপারগতা নয় যে কারণে হারাম হালাল হয় ও নিষিদ্ধ কর্ম বৈধ হয়। তাই এসব অজুহাত পেশ করে বাম হাতে পান করা কোন মুসলিমের পক্ষে সমীচীন নয়।
সুতরাং আপনার সাথীদের ডান হাতে পানি পান করাই সঠিক ও সুন্নত মোতাবেক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ ভাল জানেন।
[1] মুসলিম: (২০২০)
[2] মুসলিম: (২০১৯)
[3] আহমদ: (৫৯৫০), মুস্তাখরাজ আবু আওয়ানাহ: (৬৪৮৩)
[4] মুসলিম: (৩৭৭৩)
[5] আহমদ: (২৩৯১৯)
[6] আবু দাউদ: (৩০)
[7] আবু দাউদ: (৩৫১৪)
[8] সূরা আন-আম: (১১৯)
[9] মুসলিম: (৩৭৮৪)
[10] তিরমিযি: (১৮৯২), ইব্ন মাজাহ: (৩৪২৩), মুহাদ্দিস আলবানি সহিহ তিরমিযিতে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[11] আহমদ: (১৪২৩৪)
[12] আল-ইস্তেযকার: (৮/৩৪১-৩৪২)
[13] আবু দাউদ: (৩২৭১), তিরমিযি: (১৭৬৪)
(৮৪) ভালবাসা দিবস সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া
 মুফতি:ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
অনুবাদ:আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: ভালবাসা দিবস সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ স্থায়ী ওলামা পরিষদের ফতোয়া
সংযোজন তারিখ: 2009-02-12
শর্ট লিংক: http://IslamHouse.com/192807
:: এই শিরোনামটি বিষয় অনুসারে নিম্নের ক্যাটাগরিগুলোতে বিন্যস্ত ::
ভালোবাসা দিবস সংক্রান্ত ফাইল
এই ‘বিষয় পরিচিতি’টি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত:: আরবী
ভালবাসা দিবস সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া
(ফতোয়া নং ২১২০৩ তারিখঃ ২৩-১১- ১৪২০ হি. )
ফতোওয়াটি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদে বিশ্লেষণের পর এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে যে, কুরআন সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামে ঈদ বা উৎসবের দিন মাত্র দু’টি। সালাফে সালেহীনগণও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামে স্বীকৃত ঈদ দুটির একটি হল ঈদুল ফিতর, অপরটি হল ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। উল্লিখিত ঈদ দু’টি ব্যতীত যত ঈদ বা উৎসব আছে, হোক না তা কোন ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তা বিদআত। মুসলমানদের তা পালন করা বা পালন করতে বলা বৈধ নয় এবং এ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা ও এ ব্যাপারে কিছু দিয়ে সাহায্য করাও নিষেধ। কেননা এ ধরনের কাজ আল্লাহ তা’আলার সীমা লঙ্ঘন বৈ অন্য কিছু হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করবে সে নিজের উপর অত্যাচার করবে। এ ধরনের কালচার বিধর্মীদের অনুসরনের কল্পে গ্রহণ করা হলে অপরাধ আরো মারাত্বক হবে। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সদৃশ্যতা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে এক ধরনের বন্ধু বানানো হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে এ থেকে বারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, من تشبه بقوم فهو منهم যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য। ভালবাসা দিবস পালন করাও এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি খৃষ্টানদের উৎসব। যে মুসলমান আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এ কাজ করা দেয়া বা এই দিনে কাউকে ফুল বা অন্যকোনো উপহার দেয়া বৈধ নয়। বরং তার কর্তব্য হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম পালন করা এবং আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসে এমন কাজ থেকে নিজে দূরে থাকা ও অন্যদের দূরে রাখা।
অতএব এ দিবসকে কেন্দ্র করে পানাহার করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, কোন কিছু প্রস্তুত করা বা উপঢৌকন দেয়া, চিঠি-পত্র চালাচালি করা ও প্রচার-পত্র বিলি করা অবৈধ। এ সমস্ত কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ المائدة2
ফতোয়াটি যারা সত্যায়ন করেছেন :
সৌদি আরবের গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ:
১.আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আলে শেখ
২.সদস্য: সালেহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান
৩.সদস্য: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-গদইয়ান
৪. সদস্য: বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ।
(৮৫) আল্লাহ তাআ’লার শানে যেভাবে প্রযোজ্য, তিনি সেভাবেই আরশের উপরে আছেন এটাই কি সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যা?
উত্তরঃ
আল্লাহর ক্ষমতা ও মর্যাদা অনুযায়ী যেভাবে আরশের উপরে সমুন্নত হওয়া শোভা পায়, তিনি সেভাবেই আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত।
মুফাস্সিরগণের ইমাম আল্লামা ইবনে জারীর বলেন, ইসতিওয়া অর্থ হল সমুন্নত হওয়া, উপরে হওয়া। আল্লাহর বাণী,
)الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى(
এর অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন যে, “আল্লাহ আরশের উপরে সমুন্নত।” এই অর্থ ব্যতীত সালাফে সালেহীন হতে অন্য কোন অর্থ বর্ণিত হয়নি। তদুপরি ইসতিওয়া শব্দটি ভাষাগত দিক থেকে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে।
১) অন্য কোন শব্দের সাথে যুক্ত না হয়ে এককভাবে ব্যবহার হলে অর্থ হবে, পরিপূর্ণ হওয়া। আল্লাহ বলেনঃ
)وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَى(
“যখন তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হলেন এবং পরিপূর্ণতায় পৌঁছলেন।” (সূরা ক্বাছাছঃ ১৪)
২) ইসতিওয়া শব্দটি আরবী অক্ষর (واو) এর সাথে মিলিত হয়ে ব্যবহার হলে অর্থ হবে সমান সমান হওয়া, একটি জিনিষ অন্যটির বরাবর হওয়া। যেমন বলা হয় (استوى الماء والعتبة) পানি কাষ্ঠের সমান হয়ে গেছে।
৩) আরবী অব্যয় (إلى) এর সাথে মিলিত হয়ে আসলে অর্থ হবে, ইচ্ছা করা, মনোনিবেশ করা। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
)ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ(
“অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন।” (সূরা বাকারাঃ ২৯)
৪) আরবী অব্যয় (على) এর সাথে মিলিত হয়ে আসলে অর্থ হবে, সমুন্নত হওয়া, উপরে হওয়া। যেমন আল্লাহ বলেন,
)الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى(
“আল্লাহ আরশের উপরে সমুন্নত।”
আবার কোন কোন সালাফ বলেন ইসতিওয়া শব্দটি إلى এবং على এর মধ্যে থেকে যে কোন একটির সাথেই মিলিত হয়ে আসুক না কেন, অর্থের দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই। একটি অন্যটির অর্থে ব্যবহার হয়। তাই উভয় ক্ষেত্রে অর্থ হবে আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত।
মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানোর বিধান
(৮৬) প্রশ্ন: আমি একজন ভার্সিটির ছাত্র। আমি তিন জন ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াই। ওরা তিন বোন। তিনজনকে এক সাথেই পড়াই। আপাতত অন্য কোনও টিউশন না পাওয়ার কারণে ওদেরকে পড়াতে হচ্ছে। আমি যদি এখন এই টিউশনি ছেড়ে দেই তাহলে আমার পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ আমার এই টিউশন ফি থেকে বাসায় সহযোগিতা করতে হয়।এমন পরিস্থিতিতে কি আমার টিউশন টা করানো জায়েজ হবে? আমার উপার্জন কি হারামের মধ্যে পড়ছে?
উত্তর:
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আপনার অর্থনৈতিক সমস্যা দূরভীত করুন এবং হালাল পন্থায় উপার্জনের মাধ্যমে পারিবারিক সচ্ছলতা দান করুন। আমীন।
প্রিয় ভাই, মনে রাখতে হবে, ইসলাম ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে পারে এমন সকল পথ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। আর এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, কোন পুরুষের জন্য বড়, বুঝমান বা প্রাপ্ত বয়স্ক গাইরে মাহরাম মেয়েদেরকে সামনাসামনি প্রাইভেট পড়ানো নি:সন্দেহে বিশাল ফিতনা এবং দ্বীন ও চারিত্রিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। যে পড়ায় আর যারা পড়ে উভয়ের জন্য তা সমানভাবে সত্য। শুধু প্রাইভেট পড়ানো নয় বরং স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার ইত্যাদিতে পুরুষ শিক্ষক দ্বারা মেয়েদেরকে এবং মহিলা শিক্ষক দ্বারা ছেলেদেরকে পড়ানো মারাত্মক ফিতনার কারণ। চতুর্দিকে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের মাধ্যমে নারী কেলেঙ্কারী এবং এ জাতীয় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার অভাব নাই-সচেতন মানুষ মাত্রই তা অবগত। সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে পড়ানো জায়েজ নাই।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিতে বলা হয়েছে:
لا يجوز للرجل تدريس البنات مباشرة ؛ لما في ذلك من الخطر العظيم والعواقب الوخيمة
“কোন পুরুষের জন্য মেয়েদেরকে সরাসরি (সামনাসামনি) পাঠদান করা বৈধ নয়। কারণ এতে রয়েছে বিশাল বিপদ ও ভয়াবহ পরিণতি।” [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১২/১৪৯]
সুতরাং তা বাদ দিয়ে হয় কেবল ছেলেদেরকে প্রাইভেট পড়ানো অথবা বিকল্প পন্থায় হালাল উপার্জনের উৎস অনুসন্ধান করা কর্তব্য। কেউ যদি আল্লাহকে ভয় করে হারাম থেকে দূরে থাকতে চায় নিশ্চয় তিনি তাকে সাহায্য করেন এবং তার জন্য উত্তম পন্থায় রিজিকের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّـهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّـهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত স্থান থেকে রিজিক দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” (সূরা তালাক/২ ও ৩)
আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানো ছাড়া বিকল্প না থাকলে…
যদি নিজের বা পরিবারের আর্থিক সমস্যা লাঘব ও প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানো জরুরি হয় এবং এ ছাড়া বিকল্প কোনও পথ না পাওয়া যায় তাহলে সাময়িকভাবে তাদেরকে পড়ানো জায়েজ হবে। তবে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে। যেমন:
ক. পর্দার অন্তরাল থেকে তাদেরকে পড়াতে হবে। তাদেরকে আপনি দেখবেন না; তারাও আপনাকে দেখবে না। মেয়েরা হিজাব পরিহিত হলেও সামনাসামনি বসে তাদেরকে পড়ানো জায়েজ হবে না।
খ. কথা বলার সময় মেয়েরা কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে।
গ. একান্ত দরকার ছাড়া কথা বলবে না।
ঘ. হাসি-মজাক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে কথার বলার অনুমিত দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোমল কণ্ঠ পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। অন্যথায় কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।” (সূরা আহযাব: ৩২)
ঙ. কখনো একাকী একজনকে পড়ানো যাবে না। কারণ কোন পরপুরুষ ও পরনারী নির্জন হলে শয়তান উভয়ের মনে কু প্রবৃত্তি ও কামভাবকে উসকিয়ে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য সাথে তার একাধিক বোন থাকলে তুলনা মূলকভাবে এ আশঙ্কা কিছুটা কম থাকে।
হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ألا لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»
“সাবধান! কোন পুরুষ কোনও মহিলার সাথে একান্তে নির্জনে গেলেই তাদের সাথে তৃতীয় জন হবে শয়তান।” (সহিহুল জামে ২৫৪৬-আলবানী)
তিনি আরও বলেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلا يَخْلُوَنَّ بِامْرَأَةٍ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا مَحْرَمٌ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন কোন পরনারীর সাথে নির্জন না হয় যখন তার মাঝে এবং সে নারীর মাঝে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে।” (সহিহুত তারগীব: ১৯০৯-আলবানী)
যাহোক, এ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে পড়ানো বৈধ হলেও মহান আল্লাহর নিকট হালাল চাকুরী বা কাজের জন্য দুআ করতে হবে এবং সাধ্যানুযায়ী অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে। যখনই তা জুটে যাবে তখনই এই প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে হালাল কর্মে যুক্ত হতে হবে।
পরিশেষে দুআ করব, আল্লাহ যেন আমাদেরকে ফেতনার স্থান থেকে সরিয়ে হালাল পন্থায় অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেন এবং সব ধরণের ফিতনা-ফ্যাসাদ ও গুনাহ থেকে রক্ষা করেন। আমীন।
নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কুরআনে কলম দিয়ে দাগ দেয়া
(৮৭) প্রশ্ন: আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
উত্তর :
কুরআনের সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে কুরআনের মধ্যে এমন কোনো চিহ্ন বসানো উচিৎ নয় যাতে তার সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে। কুরআনে কারীমকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
তবে একান্ত দরকারে (যেমন, মুখস্থ করার সুবিধার্থে) চিহ্ন দেয়ার প্রয়োজন হলে, আয়াতের নিচে বা উপরে সাধারণ কাঠ পেন্সিল ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেন তা প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন রাবার ব্যাবহার করা উচিৎ।
কিন্তু বলপেন, সাইনপেন বা এমন কালি ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা পরে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। আল্লাহু আলাম।
(৮৮) প্রশ্ন : কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
উত্তর :
কুরআনের পৃষ্ঠাগুলোকে সহজে উল্টানোর সুবিধার্থে এমনটি করা হয়। এটা দরকারে জায়েয হলেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উত্তম। কেননা, তা কুরআনের আদবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এমনটি না করাই ভালো। আল্লাহু আলাম।
(৮৯) প্রশ্ন: কুরআনে কারীম হাত থেকে পড়ে গেলে করণীয় কি?
উত্তর :
অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআনুল কারীম পড়ে গেলে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে আগামীতে সর্তক থাকতে হবে যেন, কোনোভাবেই কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন না করা হয়।
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, কুরআন হাত থেকে পড়লে এর ওজন বরাবর চাল সদকা করতে হবে। এটি একটি ভুল কাজ। কেননা, ইসলামী শরিয়তে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি। তাই তা বর্জনীয়।
(৯০)  কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ:
  ১) অর্ধ শাবানের রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করা। অথচ তা অবতীর্ণ হয়েছে রমাযান মাসের কদরের রাতে। (সূরা বাকারা: ১৮৫ ও সূরা কদর)
  ২) কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কুরআন (সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক, ইখলাস ইত্যাদি সূরা) পাঠ করা। এটি দলীল বহির্ভূত কাজ হওয়ার কারণে বিদয়াত।
  ৩) মৃত শয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে কুরআন পাঠ করা। এটি বিদআত। অথচ সুন্নত হচ্ছে, মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ র তালকিন দেয়া বা তাকে শুনিয়ে কালিমা পাঠ করা।
  ৪) কুরআন খতম (শবিনা খতম) করে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বখশীয়ে দেয়া। এটিও দলীল বহির্ভূত হওয়ার কারণে বিদআত।
  ৫) অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে তার ওজন বরাবর চাল সদকা করা। এটি শরীয়তের কোন বিধান নয়। বরং এজন্য জন্য আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করা প্রয়োজন।
  ৬) না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব হবে না বলে ধারণা করা। এ ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক কুরআন পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে ১টি করে (যা ১০টি নেকীর সমান) সওয়াব অর্জিত হবে। তবে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করা নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।
  ৭) কুরআন তেলাওয়াতের শেষে ‘সাদাকাল্লাহুল আযীম’ “আল্লাহ সত্য বলেছেন” বলাকে সুন্নত মনে করা ঠিক নয়। কারণ, এর কোন শরঈ ভিত্তি নাই। সুতরাং এটিকে নিয়ম করে পাঠ করা ঠিক নয়।
  ৮) কুরআন হাতে নিয়েই তাতে চুমু খাওয়া। এটিকে নিয়ম করে নেয়া ঠিক নয়। তবে হঠাৎ আবেগে চুমু খেলে তাতে সমস্যা নাই।
  ৯) এ বিশ্বাস করা যে, হাদিস মানার প্রয়োজন নাই। কেবল কুরআন মানাই যথেষ্ট। এটি মুসলিম উম্মাহকে পথভ্রষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। হাদিস ব্যতিরেকে কুরআন বুঝা আদৌ সম্ভব নয়।
  ১০) সিডি, ক্যাসেট, মোবাইল ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু করে গল্প-গুজবে ব্যস্ত থাকা বা তার প্রতি অমনোযোগিতা প্রকাশ করা। এটি কুরআনের প্রতি অবহেলার শামিল। আল্লাহ তাআলা কুরআন তিলাওয়াত হলে চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনার নির্দেশ নিয়েছেন। (সূরা আরাফ: ২০৪)
  ১১) মোবাইলে রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত রাখা উচিৎ নয়। কারণ, তা টয়লেট বা অপবিত্র স্থানে বেজে উঠতে পারে। তাছাড়া রিং বাজলে আল্লাহর কথাকে কেটে দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু হয়। আল্লাহর বাণীর সাথে এরূপ আচরণ শোভনীয় নয়। অনুরূপভাবে মোবাইলের ওয়াল পেপার হিসেবে কুরআনের আয়াত সম্বলিত ছবি সেট করা উচিৎ নয়। কারণ, নাপাক স্থানে তা প্রকাশিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
  ১২) কুরআনের আয়াতকে ঘরের শোভা বর্ধন, বরকত নাজিল বা জিন-ভুত, যাদু, অসুখ-বিসুখ বা কোন কিছুর ক্ষতির আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লটকিয়ে রাখা নাজায়েজ। তবে শিক্ষা, মুখস্ত বা স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলে তা জায়েজ আছে।
  ১৩) কুরআনের আয়াত দ্বারা ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) বানানো উচিৎ নয়। কারণ, তা মানুষের ভুল পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ তা ঘরের শোভা বর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে।
  ১৪) কুরআন আয়াত লিখে তাবিজ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যদিও এটি মত বিরোধপূর্ণ বিষয়। তবে সঠিক হল তা জায়েজ নয়। কারণ, এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মৌখিক, কর্মগত বা সম্মতি জ্ঞাপক কোন অনুমোদন পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘কুরআনের নকশা’ দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম। অবশ্য, অসুখ-বিসুখ, জিনের আক্রমণ, যাদু-টোনা ইত্যাদির প্রভাব কাটাতে কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড়-ফুঁক দেয়া শুধু শরীয়ত সম্মতই না বরং তা সর্বোত্তম চিকিৎসা।
(৯১) প্রশ্ন: ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে তলোয়ার নিয়ে হত্যা করতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি কি সহিহ?
উত্তর:
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে তলোয়ার নিয়ে হত্যা করতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণের প্রসিদ্ধ ঘটনাটি বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সনদের দিক দিয়ে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।
কারণ এর সনদে একাধিক সমস্যা রয়েছে। যেমন:
– সনদ বা বর্ণনাসূত্রে একাধিক দুর্বল ও পরিত্যক্ত বর্ণনাকারীর উপস্থিতি।
-বর্ণনাসূত্রে বিচ্ছিন্নতা।
– মতনে ইযতিরাব (বা মূল ঘটনার বিবরণীতে গড়মিল) ইত্যাদি-যা মুহাদ্দিসগণ সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
তাই বিখ্যাত আস সীরাতুস সাহীহা (বিশুদ্ধ সীরাত গ্রন্থ ) এর লেখক ডক্টর আকরাম যিয়া উমরী বলেন:
قصته مع أخته فاطمة حين لطمها لإسلامها وضرب زوجها سعيد بن زيد، ثم اطلاعه على صحيفة فيها آيات، وإسلامه، فلم يثبت شيء من هذه القصص من طريق صحيحة
উমরা রা. কর্তৃক তাঁর বোন ফাতিমা রা. এর ইসলাম গ্রহণের কারণে তাকে থাপ্পড় মারার কাহিনী, (ভগ্নীপতি) সাঈদ বিন যায়েদ রা. কে প্রহার, অত:পর সূরা ত্বা-হা লিখিত সহিফা দেখতে পাওয়া…তারপর ইসলাম গ্রহণ …এই সকল গল্পের কোন কিছুই সহিহ সনদে প্রমাণিত হয় নি।” (আস সীরাতুস সাহীহা ১/১৮০)
শাইখ আলবানী রহঃ ও ফিকহুস সীরাহ গ্রন্থে এ ঘটনার উপর মন্তব্য করার ক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। অর্থাৎ তিনি সহিহ-জঈফ কোনটাই বলেন নি।
ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
باب إسلام عمر بن الخطاب -رضي الله عنه
“উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর ইসলাম গ্রহণ।” কিন্তু সেখানে তিনি তাঁর ইসলাম গ্রহণের এ এ সব কথা উল্লেখ করেন নি।
কিন্তু যেহেতু এ জাতীয় ঘটনা আমাদের ঈমান, আকিদা বা আমলের সাথে সম্পৃক্ত নয় সেহেতু তা ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করলেও কোনও ক্ষতি নাই ইনশাআল্লাহ। তবে বক্তাদের উচিৎ, এ সংক্রান্ত ঘটনার শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা সম্পর্কে শ্রোতাদেরকে ধারণা দেয়া।
(৯২) প্রশ্ন: আমি আলট্রাসাউন্ড এর কোর্স করছি। এখন যতটা সম্ভব গুরুত্ব সহকারে শিখছি। কারণ এর উপর রোগ নির্ণয় এবং একজন মানুষের পরবর্তী চিকিৎসা নির্ভর করে। আমার প্রশ্ন হল যে, যেহেতু আমি এই ফিল্ডে আমি একজন সম্পূর্ণ নতুন প্র্যাক্টিশনার সেহেতু যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ১০০% সঠিক রিপোর্ট না দিতে পারি তাহলে কি আমার পাপ হবে এবং আমার ইনকামের টাকা টা হারাম হবে? দয়া করে আমাকে পরামর্শ দেবেন।
উত্তর:
যেহেতু আপনি একজন নতুন প্র্যাক্টিশনার বা শিক্ষার্থী সেহেতু প্র্যাকটিসের জন্য আপনার জ্ঞানের আলোকে যতটুকু সম্ভব কাজ করবেন তবে কোন বিষয়ে সংশয় বা অস্পষ্টতা থাকলে অবশ্যই আপনার শিক্ষকের নিকট সমাধান নিবেন। শিক্ষকের তদারকি ও পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে রিপোর্ট দিবেন না। যেন রোগী ১০০% সঠিক রিপোর্ট পায়।
আর যেহেতু আপনার রিপোর্টের উপরে রোগীর পরবর্তী চিকিৎসা নির্ভর করছে সেহেতু রিপোর্ট ত্রুটিপূর্ণ হলে নিশ্চিত ভাবে চিকিৎসাও ত্রুটিপূর্ণ হবে-যা একজন রোগীর জন্য ক্ষতিকারক এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
সুতরাং আপনার ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্টের কারণে যদি রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আপনি এর দায় এড়াতে হতে পারবেন না (অর্থাৎ আপনি গুনাহগার হবেন) এবং এখান থেকে প্রাপ্ত ইনকামও আপনার জন্য বৈধ হবে না।
আল্লাহ ক্ষমা করুন।
সালাতের পর সম্মিলিতভাবে যিকির, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ ও মুনাজাত করার বিধান।
(৯৩) প্রশ্ন: আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব কয়েকদিন ধরে একটি কাজ শুরু করেছে। তা হল, ফজরের ফরজ সালাত শেষে উচ্চস্বরে আয়াতুল কুরসি, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, সূরা ইখলাস,ফালাক,নাস, দুবার দরুদ শরিফ (তাও দরুদে ইবরাহিম নয়) এর পরে উচ্চস্বরে মুসল্লিদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে। এটি ঠিক কি না?
আমি তাকে গোপনে সূরা আরাফের ২০৪ ও ২০৫ আয়াত দেখিয়েছি। কিন্তু তিনি তা মানলেন না। উচ্চস্বরে পড়ার কারণে আমরা যারা নীরবে জিকির করি আমাদের ভুল হয়। এ ক্ষেত্রে কী করার আছে? আর দলীয়ভাবে কুরআন পড়ারও বিধান আছে কি না?
উত্তর:
সালাত শেষ করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশ কতিপয় দুআ ও জিকির নিয়মিত পাঠ করতেন এবং তার উম্মতকে সেগুলো শিক্ষা দিয়েছেন। বিশেষ করে ফরজ সালাতের পর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে সকালের দুআ ও জিকিরগুলো পাঠ উত্তম। এ সব দুআ ও জিকির বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আমাদের কর্তব্য, এগুলো প্রত্যেকেই নিজে নিজে আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে প্রতিনিয়ত যথাসাধ্য আমল করা।
মসজিদে এমন উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোআ, তসবিহ ইত্যাদি পাঠ করা উচিত নয়, যাতে অন্যান্য মুসল্লি বা জিকির রত লোকদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
সুন্নতি পদ্ধতি হল, প্রত্যেকেই অন্তরে ভয়ভীতি জাগ্রত রেখে কুরআনের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করার মন মানসিকতা নিয়ে অর্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জেনে-বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং সহিহ সনদে হাদিসে বর্ণিত দোয়া ও জিকিরগুলো পাঠ করা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আরাফ: ৫৫)
তিনি আরও বলেন:
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ
“আর সকালে ও সন্ধ্যায় তোমার রবের জিকির করো মনে মনে সবিনয়ে, সভয়ে ও অনুচ্চস্বরে আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আরাফ: ২০৫)
হাদিসে এসেছে,
عن أبي سعيدٍ قالَ اعتَكفَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليْهِ وسلَّمَ في المسجدِ فسمِعَهم يجْهَرونَ بالقراءةِ فَكشفَ السِّترَ وقالَ ألا إنَّ كلَّكم مُناجٍ ربَّهُ فلا يؤذِيَنَّ بعضُكم بعضًا ولا يرفعْ بعضُكم على بعضٍ في القراءةِ أو قالَ في الصَّلاةِ.
আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে (মসজিদে নববী) ইতিকাফ করছিলেন। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, লোকেরা উঁচু স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করছে। তখন তিনি পর্দার কাপড় সরিয়ে তাদের লক্ষ্য করে বললেন, “মনে রাখবে, তোমাদের সবাই তার পালনকর্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। অতএব তোমাদের একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে (অথবা তিনি বলেছেন: সালাতের ক্ষেত্রে) একজন অপরজনের উপর আওয়াজ উঁচু করবে না।”
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৩৩২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস: ১১৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১১৮৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩১০]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ .এর বক্তব্য:
قد سُئل شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى عن الدعاء بعد الصلاة، فذكر بعض ما نقل عنه صلى الله عليه وسلم من الأذكار بعد المكتوبة، ثم قال: وأما دعاء الإمام والمأمومين جميعاً عقيب الصلاة فلم ينقل هذا أحد عن النبي صلى الله عليه وسلم. انته
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.কে সালাতের পর দুআ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ফরয সালাতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত কতিপয় যিকির উল্লেখ করার পর বলেন: “আর সালাতের পর ইমাম-মামুম (মুক্তাদি) সবাই মিলে দুআ করার কথা কেউই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন নি।” (মজমু ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ২২/৫১৫)
ইমাম নওবী রাহ. এর বক্তব্য:
أما ما اعتاده الناس أو كثير منهم من تخصيص دعاء الإمام بصلاتي الصبح والعصر، فلا أصل له.
ইমাম নওবী রাহ. মাজমু গ্রন্থে বলেন: “আর লোকজন বা অনেক মানুষ ইমাম কর্তৃক ফরজ ও আসর সালাতের বিশেষ কিছু দুআকে নির্দিষ্ট করা-যা লোকেরা বা অনেক মানুষ নিয়োম বানিয়ে ফেলেছে তার কোন ভিত্তি নাই।” ( মাজমু নওবী ৩/৪৬৫-৪৬৯)
সুতরাং আমাদের সমাজের ইমাম সাহেবগণ ফরয সালাতের পর (বিশেষ করে ফজর ও আসর সালাতের পর) মুসল্লিদেরকে নিয়ে যেভাবে সম্মিলিতভাবে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, জিকির-আজকার, মিলাদ ও দুআ-মুনাজাত করেন তা নিঃসন্দেহে বিদআত। কেননা তা যিকিরের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের আমল ও তরিকা পরিপন্থী।
  তালিম বা শিখানোর উদ্দেেশ্যে সম্মিলিত কুরআত তিলাওয়াত বা দুআ ও যিকির পাঠ করার বিধান:
যদি লোকজনকে শেখানো (তালিম) বা মুখস্থ করানোর উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে কিছু দুআ ও সূরা পাঠ করানো হয় তাহলে তা জায়েজ আছে। যেভাবে মাদরাসা ও মক্তবে ছোট বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন সূরা ও দুআ মুখস্থ করানো হয়। উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়ে গেলে তা বন্ধ করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে যেন অন্য ইবাদতকারীদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে সাধারণত যেভাবে নিয়ম করে মাথা ঝুঁকিয়ে, হেলে দুলে, চিৎকার করে সম্মিলিতভাবে আল্লাহ.. আল্লাহ…ইল্লাল্লাহ… ইল্লাল্লাহ… ইত্যাদি জিকির করা হয় বা সুললিত কণ্ঠে আরবি, বাংলা ও উর্দু ভাষায় ছন্দ, গজল, কবিতা আবৃতি আর কিছু দুআ-দরুদের সংমিশ্রণে মিলাদ-কিয়াম করা করা হয় তাতে লোকজনকে শেখানোর উদ্দেশ্যে থাকে না বরং ইবাদত করাই উদ্দেশ্য থাকে-এটা বলাই বাহুল্য।
সুতরাং এভাবে সম্মিলিত দুআ-মুনাজাত ও জিকির-আজকার বিদআত হওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নাই।
আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান দান করুন। আমীন।
  ফজরের পরে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস:
ফজরের পরে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস টি মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সর্বসম্মতিক্রমে জঈফ বা দুর্বল। সুতরাং সহিহ সনদে বর্ণিত এত এত জিকির, দুআ ও আমল থাকার পরও কেন এ সব জঈফ ও অগ্রহণযোগ্য আমলের পিছে ছুটতে হবে তা বোধগম্য নয়।
আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত দান করুন। আমীন।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফযিলতে বর্ণিত হাদিসটির সনদ ও মান সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মতামত নিম্নরূপ:
فالحديثُ المذكور رواه مَعقِل بن يسار عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “مَن قالَ حينَ يُصْبِحُ عَشْرَ مرَّاتٍ: أعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم، ثُمَّ قرأ الثَّلاثَ آياتٍ من آخِرِ سورة الحشر، وكَّل الله به سبعينَ أَلْفَ ملَكٍ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ حتَّى يُمْسِي، وإِنْ ماتَ ذلك اليومَ ماتَ شهيدًا، ومَن قالَها حينَ يُمْسِي كان بتلك المَنْزِلة”.
أخرجه الترمذي (2922)، وأحمد (5/26 رقم 20306)، والدارمي (3425)، والطبراني فيالكبير” (20/229 رقم 17293)، والبيهقي فيالشُّعَب” (2/492 رقم 2272)، وابن بشران فيأماليه” (208 جامع الحديث)، وابن الضريس فيفضائل القرآن” (222 جامع الحديث) من طريق أبي أحمد الزبيري، ثنا خالدٌ يَعْنِي ابن طهمان أبو العلا الخفَّاف، حدثني نافعُ بنُ أبي نافع، عن معقل بن يسار.
وقال النَّوويُّ فيالأذكار” (1/67): “في إسناده ضعف، وقال في الخلاصة: “اتفقوا على ضعفه”.
وقال المنذري فيالترغيب والترهيب” (1/252): وفي بعض نسخ الترمذي قال: حديث غريب، وفي نسخٍ أُخْرى قال: حسن غريب. وردَّ الذَّهبِيُّ فيالميزانالنُّسَخَ التي فيها أنَّ التِّرمذيَّ حسَّنه، فقال فيالميزان” (1/632): لم يُحَسِّنْه التِّرمذي، وهو حديث غريبٌ جِدًّا. والعِلَّةُ فيه خالد بن طهمان؛ فقد ضعَّفه ابْنُ الجارود، وابنُ معين، وقال: ضعيف خلط قبل موتِه بِعَشْرِ سنين، وكان قبل ذلك ثقة. انظرتهذيب التهذيب” (3/99)، وقال فيالتقريب”: “صدوقٌ رُمِيَ بالتشيُّع ثُم اختلط،
والحديث ضعَّفه أيضًا الشيخ الألباني،، والله أعلم.
আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত মোতাবেক আমল করার এবং সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করেন। আমীন।
(৯৪) প্রশ্নঃ নবী-ওলীর অসীলায় দুআ করা যায় কি?
উত্তরঃ
না। নবি-আলীর আসীলায় দু’আ করা যায় না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সরাসরি দু’আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
আর আমার দাসগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেসা করে, তখন তুমি বল, আমি তো কাছেই আছি। যখন কোন প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিই। অতএব তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তাঁরা ঠিক পথে চলতে পারে। (বাকারাহঃ ১৮৬)
আর মুহাম্মাদ (সঃ)-এর অসীলায় আদম (আঃ)-এর দুআ করার কথা প্রমাণিত নয়।
পরন্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তিন প্রকার আসীলায় দুআ করা যায়ঃ-
১। মহান আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলীর আসীলায় দুআ।
২। স্বীকৃত নেক আমলের আসীলায় দুআ।
৩। জীবিত ও উপস্থিত ব্যক্তির দুআর আসীলায় দুআ।
এ সবের দলীল রয়েছে আকীদার বইগুলিতে। পক্ষান্তরে শেষ নবী (সঃ)-এর আসীলায় আদম (আঃ)-এর দু’আর হাদীস সহীহ নয়। দলিল-সহ সবিস্তার দ্রষ্টব্য ‘তাওহীদ-কৌমুদী’।
নির্দিষ্ট অঙ্কে ক্রয় করে দ্বিগুন অঙ্কে বিক্রি করা
(৯৫) প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি বাকিতে ও নির্দিষ্ট মূল্যে আমার কাছ থেকে কম্পিউটার ক্রয় করে। কিন্তু সে তা অন্য ক্রেতাদের নিকট দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি করে। অতঃপর সে আমার পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে। এ বিকিকিনি কি জায়েজ ? 
 উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ প্রথমত : আপনার যাকে ইচ্ছা তার কাছে নির্দিষ্ট মূল্যে ও বাকিতে মাল বিক্রি করতে পারেন। অতঃপর সে যে দামে ইচ্ছা বিক্রি করবে, এবং আপনার পাওনা পরিশোধ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন : (وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا) البقرة/275 {এবং আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন, এবং সূদ হারাম করেছেন।} বাকারা : (২৭৫)   ব্যবসায়ীদের মাঝে এ পক্রিয়াটি খুব বেশী সচারচর। কারণ, খুচরা বিক্রেতারা প্রথমে বাকিতে ক্রয় করে, অতঃপর তা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে। তবে এ ধরণের লেনদেনের জন্য শর্ত হচ্ছে, ক্রেতার তা গ্রহণ করতে হবে। এবং বিক্রির পূর্বে আপনার দোকান থেকে অথবা আপনার জায়গা থেকে তা নিয়ে নিতে হবে। কারণ, জায়েদ বিন সাবেত -রাদিআল্লাহ আনহু – থেকে বর্ণিত, (نَهَى أَنْ تُبَاعَ السِّلَعُ حَيْثُ تُبْتَاعُ حَتَّى يَحُوزَهَا التُّجَّارُ إِلَى رِحَالِهِمْ) . والحديث حسنه الألباني في صحيح أبي داود যেখানে মাল ক্রয় করা হয়, ঠিক সেখানেই মাল বিক্রি করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না ক্রেতা তা নিজ জিম্মাদারিতে নিয়ে নেয়। দারা কুতনী; আবু দাউদ : (৩৪৯৯), আল-বানী সহিহ আবু দাউদে হাদিসটি হাসান বলেছেন। দ্বিতীয়ত : শরিয়তে লাভ করার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। আপনার কাছ থেকে ক্রয়কৃত পণ্য, সে তার ইচ্ছে মত বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করতে পারবে। তবে শর্ত হচ্ছে, ক্রেতার উদাসীনতা, অনভিজ্ঞতা ও মূল্য সম্পর্কে তার অজ্ঞতাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আল্লাহ ভাল জানেন। সূত্র: islamqa.info
ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী করার বিধান
(৯৬) প্রশ্নঃ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী করার বিধান কি?
আমাদের দেশে ইনস্যুরেন্স বা বীমা কোম্পানিগুলো অধিকাংশই বাণিজ্যিক, যা সবই প্রতারণা ও সুদ নির্ভর। তাই এ সকল কোম্পানিতে চাকুরী করা বা তাতে অর্থ লগ্নি করা হারাম।
আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এবং সউদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, সব ধরণের বাণিজ্যিক বীমা হারাম। চাই তা জীবন বীমা হোক বা সম্পদের বীমা হোক।
তার কারণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
প্রথমত: বাণিজ্যিক জীবন বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যাতে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। কিন্তু তাতে আছে কঠিন ধোঁকার সম্ভাবনা। কেননা বীমাকারীর পক্ষে চুক্তির সময় একথা জানা সম্ভব নয় যে, কি পরিমাণ অর্থ সে প্রদান করবে এবং কি পরিমাণ গ্রহণ করবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো এক বা দু কিস্তি অর্থ প্রদান করল এবং তারপরেই কোন দুর্ঘটনা ঘটল। তখন বীমা কর্তৃপক্ষ শর্ত অনুযায়ী বিরাট পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। হতে পারে কোন দুর্ঘটনাই ঘটল না। তখন বীমাকারী সকল কিস্তি পরিশোধ করতেই থাকবে। অথচ বেঁচে থাকতে সে শেষে কিছুই পাবে না; তার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিছগণ পাবে।
সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বাই গারার’বা প্রতারণা ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা থেকে নিষেধ করেছেন।(মুসলিম)
দ্বিতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমা মূলত: এক ধরণের জুয়া। কেননা এখানে অর্থ আদান-প্রদানে ঝুঁকি ও প্রতারণার সুযোগ আছে। বিনা অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ আছে আবার বিনা প্ররিশ্রমে ও বিনিময় ছাড়াই অধিক লাভবান হওয়ারও সুযোগ আছে। কেননা বীমাকারী কয়েক কিস্তি দেয়ার পর কোন দুর্ঘটনায় পতিত হল, তখন কর্তৃপক্ষ বীমার যাবতীয় অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে, ফলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তবে কর্তৃপক্ষ বীমার কিস্তির মাধ্যমে লাভবান হতেই থাকবে। অথচ তাদের এই লাভ বিনিময় ছাড়াই হচ্ছে। অতএব এখানে যখন অজ্ঞতা সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তখন তা নিষিদ্ধ জুয়ার পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে। আর আল্লাহ কুরআনে জুয়াকে হারাম করেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য ব্যতীত অন্য কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” (মায়েদাঃ ৯০)
তৃতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমায় তাৎক্ষণিক ও বিলম্বে সুদের ব্যবস্থা আছে। কেননা বীমা কোম্পানি গ্রাহককে বা তার উত্তরাধিকারকে বা অনুমোদিত ব্যক্তিকে জমা কৃত অর্থের চেয়ে বেশী প্রদান করবে, ফলে তা তাৎক্ষণিক সুদের পর্যায়ভুক্ত গণ্য হবে। আর এই প্রদানটি নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেয়ার কারণে তা বিলম্ব সুদেরও অন্তর্ভুক্ত হবে। আর উভয় প্রকার সুদ হারাম।
চতুর্থত: বাণিজ্যিক বীমা নিষিদ্ধ বাজির অন্তর্ভুক্ত। কেননা উভয় ক্ষেত্রে (বীমা ও বাজিতে) অজ্ঞতা, ধোঁকা ও জুয়ার সুযোগ আছে। আর ইসলামের উপকার ও সহযোগিতার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে বাজি ধরাকে শরীয়ত নিষেধ করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজি ধরার বৈধতাকে শুধু তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, “উট ও ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা এবং তীর নিক্ষেপ ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে বাজী ধরা চলবে না।” (আবু দাউদ)
পঞ্চমত: বাণিজ্যিক বীমার মাধ্যমে অন্যের সম্পদ বিনিময় ব্যতীত অর্জন করার সুযোগ আছে। আর বাণিজ্যিক চুক্তিতে বিনিময় ছাড়া অর্থ উপার্জন হারাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।” (নিসাঃ ২৯)
ষষ্ঠত: বাণিজ্যিক বীমায় এমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হয়, শরীয়তে যা বাধ্য করা হয়নি। এই চুক্তিতে বীমা কর্তৃপক্ষ থেকে কোন দুর্ঘটনা আসেনি বা দুর্ঘটনার কোন কারণও হয়নি, তবু শুধু বামী কারীর সাথে চুক্তির কারণে ‘দুর্ঘটনা হতে পারে’এমন অনুমানের ভিত্তিতে বিমাকারীর কিছু অর্থের বিনিময়ে তাকে অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। এই জন্য এটা হারাম লেনদেন।
ইসলামী শরীয়ত মানুষকে হালাল ভাবে অর্থ উপার্জন ও খরচ করতে যেমন আদেশ করেছে, তেমনি সকল প্রকার হারাম উপার্জনকে বর্জন করতে কঠোরভাবে তাগিদ দিয়েছে। অন্যতম হারাম উপার্জন হচ্ছে সুদ, যা বিশেষভাবে এই বাণিজ্যিক বীমায় প্রদান করা হয়। এই সুদকে শরীয়ত যেমন হারাম করেছে, তেমনি সুদের সাথে জড়িত সকলকেই অপরাধী সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ বলেন, وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا “আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (বাকারাঃ ২৭৫)
عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
জাবের রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত করেছেন তার উপর যে সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদ লেখে এবং সুদের ব্যাপারে যারা সাক্ষী থাকে। তারা সকলেই সমান অপরাধী।” (মুসলিম)
বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত এবং মসজিদে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ: যে দুটি সুন্নত অধিকাংশ মুসলিমের নিকট চরম উপেক্ষিত
(৯৭) প্রশ্ন:
ক. হাদিসের আলোকে বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত পড়ার গুরুত্ব কতটুকু?
খ. ফজরের সুন্নত সালাত বাড়িতে পড়ার পর মসজিদে গিয়ে সময় থাকলে কি তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ এর দু রাকআত আদায় করতে হবে?
গ. মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি জামাআত দাঁড়ানোর সামান্য সময় বাকি থাকে (যেটুকু সময়ে সাধারণত: দু রাকআত সালাত পড়া সম্ভব নয়) তাহলে কী করা উচিৎ? তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত শুরু করা না কি দাঁড়িয়ে থাকা?
উত্তর:
নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের উত্তর প্রদান করা হল:
(ক) প্রশ্ন: বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত পড়ার গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তর: বহু সংখ্যক হাদিস দ্বারা সু প্রমাণিত যে, পুরুষদের জন্য ফরজ ছাড়া সকল প্রকার সুন্নত, নফল ইত্যাদি বাড়িতে পড়া অধিক উত্তম।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত পড়ার আমলটি নেই বললেই চলে। যারা নিয়মিত সালাত আদায় করে তারাও অধিকাংশই মসজিদে গিয়ে সুন্নত সালাতগুলো পড়ে থাকে অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগুলো নিয়মিত তাঁর ঘরেই আদায় করতেন।
নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلاَةِ فِىْ بُيُوْتِكُمْ فَإِنَّ خَيْرَ صَلاَةِ الْمَرْءِ فِىْ بَيْتِهِ إِلاَّ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوْبَةَ
“বাড়িতে সালাত আদায় করাকে তোমরা নিয়ম বানিয়ে নাও। কেননা পুরুষের জন্য ফরয সালাত ব্যতীত ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম।” [বুখারী হা/৭৩১; মুসলিম হা/৭৮০]
২) তিনি আরও বলেন:
إِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ مِنْهَا نَصِيبًا فَإِنَّ اللهَ جَاعِلٌ فِىْ بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْرًا
“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে, তখন সে যেন ঘরের জন্য সালাতের কিয়দাংশ রেখে দেয়। কেননা ঘরে সালাত আদায়ের ফলে আল্লাহ তাতে কল্যাণ দান করেন।” [ইবনে মাজাহ হা/১৩৭৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৩৯২।]
৩) আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘দ রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম:
কোনটি উত্তম, আমার ঘরে সালাত আদায় করা না কি মসজিদে?
তিনি বললেন: তুমি কি দেখ না আমার ঘর মসজিদের কত নিকটে? তা সত্ত্বেও মসজিদে সালাত আদায় করার চেয়ে ঘরে সালাত আদায় করা আমার নিকটে অধিক প্রিয়; ফরয সালাত ব্যতীত’। [ইবনে মাজাহ হা/১৩৭৮; সহীহ আত-তারগীব হা/৪৩৯।]
৪) তিনি আরও বলেন,
اجْعَلُوْا فِىْ بُيُوْتِكُمْ مِنْ صَلاَتِكُمْ، وَلاَ تَتَّخِذُوْهَا قُبُوْرًا
“তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না’। [বুখারী হা/৪৩২, ১১৮৭; আবু দাউদ হা/১০৪৩, ১৪৪৮; তিরমিযী হা/৪১৫; ইবনে মাজাহ হা/১১৪১; মিশকাত হা/৭১৪।]
উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে ফরয সালাত ছাড়া অন্যান্য সাধারণ নফল-সুন্নত ইত্যাদি সালাত বাড়িতে পড়ার গুরুত্ব ও ফযিলত সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তওফিক দান করুন। আমীন।
(খ) প্রশ্ন: ফজরের সুন্নত সালাত বাড়িতে পড়ার পর মসজিদে গিয়ে সময় থাকলে কি তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ এর দু আকআত আদায় করতে হবে?
উত্তর: কেউ যদি ফজরের সুন্নত বাড়িতে পড়ে তবে নিঃসন্দেহে তা উত্তম। অত:পর মসজিদে গিয়ে জামাআত শুরু হতে যদি কিছুটা বিলম্ব থাকায় সে যদি বসতে চায় তাহলে প্রথমে তাহিয়াতুল মসজিদ/ দুখুলুল মসজিদের দু রাকআত আদায় করবে। কেননা মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে দু রাকআত সালাত আদায় ব্যতিরেকে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হল:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
“ যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু রাকআত সালাত আদায়ের পূর্বে বসবে না।” (সহীহ বুখারী)
(গ) প্রশ্ন: মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি জামাআত দাঁড়ানোর সামান্য সময় বাকি থাকে (যেটুকু সময়ে সাধারণত: দু রাকআত সালাত শেষ করা সম্ভব নয়) তাহলে কী করা উচিৎ? তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত শুরু করা না কি দাঁড়িয়ে থাকা?
উত্তর: কেউ যদি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করে যখন জামাআত শুরু হওয়ার সামান্য সময় বাকি আছে (এক বা দুই মিনিট) তাহলে এ ক্ষেত্রে তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত শুরু করবে না বরং দাঁড়িয়ে থাকবে এবং ইকামত হলে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরিমা সহকারে জামাআত ধরবে।
এ মর্মে ইমাম নওবী রহ. বলেন:
“আর যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে এমন সময় যে, (জুমার দিন) ইমাম খুতবার শেষ দিকে রয়েছে এবং মনে এ ধারণা প্রবল হয় যে, যদি তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ে তাহলে ইমামের সাথে তাকবিরাতুল ইহরাম (তাকবীরে তাহরিমা) ছুটে যাবে তাহলে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে না। বরং একামত হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে; বসবে না-যেন সে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া ব্যতিরেকে মসজিদে উপবেশন কারী না হয়ে যায়।
আর যদি সালাত পড়ে তাকবীরে তাহরিমা ধরা সম্ভব হয় তাহলে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে। এভাবেই বিশ্লেষকগণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।” (আল মাজমু ৪/৫৫১)। আল্লাহু আলম।।
(সমাপ্ত)

(১) প্রথম পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

(২) তৃতীয় পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

(৩) চতুর্থ পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

(৪) পঞ্চম পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।


মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
 “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে  এর উপর ক্লিক করুনঃ


PLEASE SHARE ON

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...