বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইসলামি জিজ্ঞাসা ও সহিহ জবাব
(পর্ব-৫)
বদমেজাজি ও অহংকারী ব্যক্তির
পরিণতি এবং এমন স্বামীর সাথে আচরণের ১৫টি কৌশল
(১৭৫) প্রশ্ন: আমার স্বামীকে
নিয়ে অনেক বিপদে আছি। আমাদের একটা ছেলে আছে।আমাদের দুজনের সাথে সারাদিন সাধারণ কোনো
বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে। সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে তর্ক হতে থাকে। এক পর্যায় মারামারি।
সে আমাকে মারে। স্বামী পরকীয়া করে না কিন্তু তার রাগ-জিদটা একটু বেশী। আমি কি করব বুঝতে
পারি না।
আমার মা নাই। আমাদের
কেউ যাদু গ্রস্ত কি না কিভাবে বুঝব? প্লিজ আমাকে হেল্প করুন। আমাদের সংসার না টিকার
মত অবস্থা।
উত্তর:
আল্লাহ
আপনাকে হেফাজত করুন এবং আপনার স্বামীকে হেদায়েত ও সুবুদ্ধি দান করুন। আমীন।
নিচে
বদমেজাজি ব্যক্তিদের করুণ পরিণতি এবং এ জাতীয় স্বামীর সাথে ঘর-সংসার ও আচরণের ১৫টি
কৌশল তুলে ধরা হল:
বদমেজাজি
কাকে বলে এবং তাদের কী পরিণতি?
বদমেজাজি
বলতে বুঝায় যে ব্যক্তি, সামান্য বিষয়ে রাগারাগি করে, বকাঝকা ও গালাগালি করে। সে যা
বলে সেটাই করে। যার মধ্যে কারো মতামত শুনা বা আপোষ-মীমাংসার মনোভাব নাই। এরা অহংকারী,
উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে।
এ
ধরণের স্বামীর সাথে ঘর সংসার করার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় এবং মানসিক
কষ্ট-যাতনা ও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দাম্পত্য জীবন থেকে ভালবাসা, হৃদ্যতা
ও সুসম্পর্ক বিদায় নেয়। সর্বদা ঝগড়া-ঝাটি ও ধন্ধ-কলহ লেগে থাকে।
সত্যি
বলতে, এ জাতীয় লোকের কারণে সমাজে প্রচুর সমস্যা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্ধু
ও কলীগরা পর্যন্ত তার ব্যাপারে বিরক্ত ও মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকে।
এরা
আল্লাহর কাছেও ঘৃণিত মানুষের কাছেও ঘৃণিত।
কুরআন-সুন্নাহয়
এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা দেখি:
✪ আল্লাহ
তাআলা বলেন:
إِنَّ اللَّـهَ
لَا يُحِبُّ
كُلَّ مُخْتَالٍ
فَخُورٍ
“নিশ্চয়
আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” সূরা লোকমান: ১৮)
✪ হাদিসে
এসেছে:
হারিস
ইবনে ওয়াহাব রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يَدْخُلُ
الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ
وَلَا الْجَعْظَرِيُّ
قَالَ وَالْجَوَّاظُ
الْغَلِيْظُ الْفَظُّ.
“কঠোর
ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।” (আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫০৮০)।
✪ তিনি আরও
বলেন:
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ
بِأَهْلِ النَّارِ
كُلُّ جَوَّاظٍ
زَنِيْمٍ مُتَكَبِّرٍ
“আমি
তোমাদেরকে কি জাহান্নামীদের কথা বলব না? তারা হল, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে,
আর যারা বদমেজাজি অহংকারী।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৬)।
✪ আবু হুরায়রা
রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْمُؤْمِنُ غِرٌّ
كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ
خِبٌّ لَئِيْمٌ
“ইমানদার
মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়।” (তিরমিযী হা/১৯৬৪;
মিশকাত হা/৫০৮৫)।
✪ জারীর
রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
مَنْ يُحْرَمِ
الرِّفْقَ يُحْرَمِ
الْخَيْرَ
“যাকে
কোমলতা ও নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়।” (মুসলিম,
মিশকাত হা/৫০৬৯)।
✪ একদা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন:
عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ
وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ
وَالْفُحْشَ إِنَّ
الرِّفْقَ لَا
يَكُونُ فِي
شَيْءٍ إِلَّا
زَانَهُ وَلَا
يُنْزَعُ مِنْ
شَيْء إِلَّا
شَانَهُ»
“কোমলতা
নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে
নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে
পড়ে।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)।
বদমেজাজি ও অহংকারী স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করা ও
আচরণের ১৫টি কৌশল ও পদ্ধতি:
এ
ধরণের স্বামীর সাথে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে চাইলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে
চাইলে বুদ্ধিমতী স্ত্রীর জন্য কতিপয় করণীয় রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে ১৫টি নির্দেশনা দেয়া
হল:
১)
মানুষের সাথে আচরণের মূলমন্ত্র হল, মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি বুঝে আচরণ করা। সুতরাং
অহংকারী ও বদমেজাজি স্বামী যে কাজে রাগ করে বা বিরক্ত হয় সে কাজ মোটেও করবেন না।
২)
কোন বিষয়টা তার অ পছন্দনীয় আর কোন বিষয়টা পছন্দনীয়, কোন কাজটা ভালোবাসে আর কোন কাজটা
ঘৃণা করে ইত্যাদি জেনে সেভাবে তার সাথে আচরণ করুন।
৩)
তার পছন্দমত খাবার প্রস্তুত, পছন্দমত পোশাক পরিধান ও সাজগোজ করার চেষ্টা করুন।
৪)
তার মেজাজ বুঝে কথা বলুন। নরম ভাষায় কথা বলুন। শক্ত ও কঠিন ভাষা পরিহার করুন। কেননা
শক্ত ভাষা তাকে আরও ক্রুদ্ধ করে তুলবে।
৫)
পৃথিবীর সব মানুষ প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। তাই প্রায়ই তার প্রশংসা করুন। প্রশংসা করুন
তার সামনে এবং আপনার আত্মীয় ও তার আত্মীয়দের সামনে। তবে তার যে গুণটা সত্যি প্রশংসা
পাওয়ার মত সেটাই বলুন। মিথ্যা প্রশংসা থেকে দূরে থাকুন। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
আর
কখনো সরাসরি তার ভুল ধরতে যাবেন না বা মানুষের সামনে তার দোষ গেয়ে বেড়াবেন না।
কোনো
বিষয় সংশোধনের প্রয়োজন মনে হলে তার মেজাজ যখন ভালো ও হাসিখুশি থাকে তখন সুন্দরভাবে
তাকে সে বিষয়ে বুঝিয়ে বলুন।
৬)
যখন তার মেজাজ খারাপ থাকে, তখন তার মনোভাব বুঝে তাকে কিছুক্ষণ একাকী বিশ্রাম নিতে দিন।
হয়ত কিছুক্ষণ পর তার মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে।
৭)
তার ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশি খরবদারি করতে যাবেন না। কারণ এতে সে বিরক্ত হতে পারে।
৮)
তার রাগের সময় তর্ক করবেন না। নীরবতা অবলম্বন করুন। তার মনের রাগ বা ক্ষোভ ঝাড়তে দিন।
শান্ত হলে আন্তরিকতার সাথে কোনো কিছু বলার থাকলে বলুন।
৯)
সে যদি কোনো সমস্যায় থাকে তাহলে তা বুঝার চেষ্টা করুন এবং তাকে এ ব্যাপারে যথাসম্ভব
সহযোগিতা করুন। তার কাছে এমন কোন আবদার করবেন না যা সংগ্রহ করা তার জন্য কষ্টকর। তাকে
বুঝতে দিন যে, আপনি তার সংসারের একজন সহযোগী এবং আপনি তার কষ্ট ও সমস্যাগুলো বুঝেন।
১০)
কোন ভুল করে ফেললে ভুল স্বীকার করুন এবং তার নিকট ক্ষমা চান।
১১)
আপনার আচরণের মধ্যে কোন যদি কোনো দোষ থাকে যা পরিবর্তন করা উচিৎ তাহলে তা সংশোধন করুন।
যেমন: অতিরিক্ত কথা বলা, উচ্চস্বরে কথা বলা, বেশি বেশি অভিযোগ করা, আওয়াজ করে হাঁটা,
অপরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি।
১২)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকুন এবং পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজগোজ ও স্বাস্থ্যের প্রতি
যত্ন নিন। অপরিচ্ছন্ন ও অপরিপাটি পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি ও আসবাব-পত্র মানুষের মনের
উপর প্রভাব ফলে।
১৩)
সে যদি অত্যাচার করে এবং পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে যায় তাহলে আপনার পরিবার এবং সমাজের
সর্বগ্রাহ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিসের ব্যবস্থা করুন বা আইনের আশ্রয়
নিন।
১৪)
সর্বোপরি নামাযের সেজদা অবস্থায়, ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পরে ও অন্যান্য দুআ কবুলের
আশাব্যঞ্জক সময়গুলোতে তার হেদায়েত ও সংশোধনের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন।
১৫)
তবে যদি এমন হয় যে, স্বামীর আচার-আচরণ ইতোপূর্বে ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই তার মধ্যে
আমূল পরিবর্তন। হঠাৎ করেই সে আপনাকে দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না। সামান্যতেই
উত্তেজিত হয় ও প্রচণ্ড রাগ করে তাহলে এটা যাদুর আলামত। এ ক্ষেত্রে শরিয়ত সম্মত উপায়ে
যাদুর চিকিৎসা করতে হবে।
পরিশেষে
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আপনাদের দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো দূরভীত করে শান্তি ও সুখের
সুবাতাস বইয়ে দেন এবং বিশ্বাস, ভালবাসা, দয়া ও মমতায় আপনাদের গৃহাঙ্গণ ভরপুর করে দেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।আমীন।
(১৭৬) আশুরার শোক উদযাপন বিদআত কেন?
মুহররম
মাসের দশ তারিখ আশুরার দিন হিসেবে পরিচিত। ৬১ হিজরির ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ
তাআলা তার মর্যাদা অনেক উন্নীত করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হাসান ও হুসাইন রা. এর ব্যাপারে এ শুভ সংবাদ প্রদান করে গেছেন যে, তারা হবেন জান্নাতের
যুবকদের নেতা।
আর
এ কথা চির সত্য, যে যত বড় মর্যাদা লাভ করে তাকে তত বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, মানব জাতির মধ্যে কে সব চেয়ে
বেশি পরীক্ষা ও বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন? তিনি বললেন, নবীগণ, তারপর আল্লাহর নেককার
বান্দাগণ।
তারপর
অন্যদের মধ্যে যারা যে পরিমাণ ঈমান ও পরহেযগারিতার অধিকারী তারা সে পরিমাণ পরীক্ষা
সম্মুখীন হয়েছেন। মানুষ তার দীনদারি অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। কেউ যদি মজবুত দ্বীনের
অধিকারী হয় তবে সে বেশি পরিমাণ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। আর কারো দ্বীনদারিতে কমতি থাকলে
তার বিপদাপদ কম আসে এবং পরীক্ষাও কম হয়। মুমিন বান্দা যতদিন পৃথিবীতে চলা ফেরা করে
ততদিন তার উপর বিপদাপদ পতিত হতে থাকে এবং এভাবে তার আর কোন গুনাহ বাকী থাকে না।” (মুসনাদ
আহমদ ও তিরমিযী, সনদ হাসান)
আল্লাহ
তাআলার পক্ষ থেকে তাদের এই মর্যাদা পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের
মতই বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছেন। ইসলামের মর্যাদা নিয়েই তারা দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং
ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা সহকারে তারা প্রতিপালিত হয়েছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সংস্পর্শ, স্নেহ-মমতা, আদর ও ভালবাসা পেয়ে তাদের জীবন সৌভাগ্য মণ্ডিত
হয়েছে। যার কারণে মুসলমানগণ তাদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন।
রাসূল
যখন ইহজগৎ ত্যাগ করেন তখন তাঁরা ভাল-মন্দ বুঝার বয়সে উপনীত হন নি।
আল্লাহ
তাআলা তাদেরকে এমন নিয়ামত দিয়েছেন যার মাধ্যমে তারা তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের
সাথে গিয়ে মিলিত হতে পারে। কারণ, তাদের চেয়ে যিনি বেশি মর্যাদার অধিকারী তথা তাদের
পিতা আলী রা. ও শহীদ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছেন।
হুসাইন
রা. এর নিহত হওয়ার ঘটনায় জনমানুষের মাঝে ফেতনা-ফ্যাসাদের বিস্তার ঘটে। যেমন উসমান রা.
এর নিহত হওয়ার ঘটনা বিরাট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। যার কারণে আজ পর্যন্ত মুসলিম জাতি
বিভক্ত।
❖ হুসাইন
রা. এর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড:
খারেজী
সম্প্রদায়ের আব্দুর রহমান বিন মুলজিম আলী রা. কে হত্যা করার পর সাহাবীদের একাংশ হাসান
রা. এর হাতে বাইআত নিলেন। তার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: আমার এই ছেলে মুসলমানদের দুটি বড় বড় বিবদমান দলের মধ্যে সমাধান করবেন।” তিনি
রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। এর মাধ্যমে মুয়াবিয়া এবং হাসান রা. এর সমর্থক দু দলের মধ্যে
সমাধান হল। অতঃপর তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করলেন। এরপর বেশ কিছু মানুষ হুসাইন রা. এর নিকট
চিঠির পর চিঠি লেখা শুরু করল। তারা বলল, যদি হুসাইন রা. ক্ষমতা গ্রহণ করেন তবে তাঁকে
তারা সাহায্য-সহযোগিতা করবে। অথচ তারা এ কাজের যোগ্য ছিল না।
অতঃপর
হুসাইন রা. যখন তাদের নিকট তার চাচাত ভাই মুসলিম ইবনে আকীল ইব্ন আবু তালিবকে পাঠালেন
তখন তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তার দুশমনকে তাকে প্রতিহত করতে এবং তার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করতে সাহায্য করল।
এদিকে
বিচক্ষণ সাহাবীগণ এবং হুসাইন রা. হিতাকাংখীগণ যেমন ইবনে আব্বাস, ইব্ন উমর প্রমুখ তারা
সবাই হুসাইন রা. কে ঐ সকল লোকদের ডাকে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। তারা বললেন: হুসাইন
রা. সেখানে যাওয়াতে কোন লাভ নেই। এতে কোন কল্যাণ বয়ে আসবে না। পরে ঘটনা যা ঘটার তাই
ঘটল। আল্লাহর ইচ্ছাই বাস্তবায়িত হল।
হুসাইন
রা. বিজ্ঞ সাহাবীগণের পরামর্শ উপেক্ষা করে যখন বের হলেন তখন দেখলেন, অবস্থা পরিবর্তন
হয়ে গেছে। তিনি তাদের নিকট আবেদন করলেন, তাকে ছেড়ে দেয়া হোক তিনি যেন তিনি ফিরে যেতে
পারেন অথবা কোন সীমান্ত প্রহরায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন। অথবা তাকে যেন তার চাচাত ভাই
ইয়াজিদের সাথে সাক্ষাত করতে দেয়া হয়। কিন্তু তারা তার কোন প্রস্তাব গ্রহণ করল না। বরং
তাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে যুদ্ধ করতে বাধ্য করল। তিনি এবং তার সঙ্গীগণ যুদ্ধ করে
পরিশেষে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন।
এই
শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করলেন এবং তাঁর অন্যান্য
পূত-পবিত্র পরিবার বর্গের সাথে মিলিত করলেন এবং তাঁর উপর যারা এহেন নিষ্ঠুর আচরণ করল
তাদেরকে লাঞ্ছিত করলেন।
ইতিহাসের
এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড জনমানুষের মধ্যে অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলল। মানুষ দুভাগে বিভক্ত
হয়ে গেল। এ নিয়ে অনেক মানুষ মুনাফেকি, মূর্খতা এবং গোমরাহির মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল।
একদল মানুষ এই আশুরার দিন কে মাতম, আহাজারি, কান্নাকাটি এবং শোক দিবস হিসেবে গ্রহণ
করল। তারা সেদিন জাহেলি জামানার বিভিন্ন আচরণ প্রদর্শনী শুরু করল। তারা সে দিন, শোক
র্যালী, কালো পতাকা মিছিল, নিজের শরীরে চাবুক তলোয়ার ইত্যাদি ধারাল অস্ত্র দ্বারা দিয়ে
জখম, নিজেদের গালে আঘাত, শরীরের কাপড় ছেড়া, জামার পকেট ছেড়া, চুল ছেড়া ইত্যাদি বিভিন্ন
জাহেলী প্রথা অনুযায়ী শোক দিবস পালন করে থাকে। যা আজ পর্যন্ত পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবছর আশুরার দিন তারা ইসলামী শরীয়তের সম্পূর্ণ বিপরীত এহেন কার্যকলাপ করে থাকে।
তারা মনে করে এ সব কাজ করার মাধ্যমে তারা হুসাইন রা. এর আহলে বাইত তথা পরিবার বর্গের
প্রতি ভালবাসা এবং সমবেদনা প্রকাশ করে!!
❖ শাইখুল
ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ
“হুসাইন
রা. এর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে শয়তান মানুষের মধ্যে দুটি বিদআত আবিষ্কার করল। একটি
হল, আশুরার দিন শোক ও কান্নাকাটি করার বিদআত। যে দিন শরীরে আঘাত করা, চিৎকার করে কান্নাকাটি
করা, পিপাষার্ত থাকা, মর্সিয়া পালন ইত্যাদি কার্যক্রম করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় বরং
এ দিন পূর্ব পুরুষদেরকে গালাগালি করা হয়, তাদের উপর অভিশাপ দেয়া হয় এবং এমন সব লোকদেরকে
অপরাধী সাব্যস্ত করা হয় যারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী নয় এবং হুসাইন রা. এর মৃত্যু সংক্রান্ত
এমন সব কাহিনী বয়ান করা হয় যেগুলো অধিকাংশই মিথ্যা এবং বানোয়াট।
যারা
এসবের সূচনা করেছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল ফেতনা-ফ্যাসাদের দরজা উন্মুক্ত করা এবং মুসলিম
উম্মাহকে বিভক্ত করা। এসব কাজ তো মুসলমানদের ঐকমত্যে ওয়াজিব নয় মুসতাহাবও নয় বরং এতে
শুধু অতীতের বিপদাপদকে কেন্দ্র করে ধৈর্য হীনতা এবং কান্নাকাটি নতুন করে করা হয়। অথচ
তা আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল কর্তৃক শক্তভাবে নিষিদ্ধ জিনিস।”
ধৈর্য
হীনতা প্রকাশ করা বা চিৎকার-কান্নাকাটি করা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী। বিপদে-মসিবতে
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ হল, ধৈর্যের পরিচয় দেয়া, ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্নালিল্লাইহি
রাজিঊন পাঠ করার পাশাপাশি আত্ম সমালোচনা করা। যেমন:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَبَشِّرِالصَّابِرِينَ – الَّذِينَ
إِذَا أَصَابَتْهُم
مُّصِيبَةٌ قَالُوا
إِنَّا لِلَّـهِ
وَإِنَّا إِلَيْهِ
رَاجِعُونَ ولَـٰئِكَ
عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ
مِّن رَّبِّهِمْ
وَرَحْمَةٌ ۖ
وَأُولَـٰئِكَ هُمُ
الْمُهْتَدُونَ
“আর
ধৈর্য ধারণকারীদেরকে শুভ সংবাদ দাও। যারা বিপদ এলে বলে: “ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্নালিল্লাইহি
রাজিঊন। এদের উপরই আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা বর্ষিত হয় এবং এরাই সুপথে প্রতিষ্ঠিত।”
(সূরা বাকারা: ১৫৫)
সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
لَيْسَ مِنّا
مَنْ ضَرَبَ
الْخُدُودَ، وَشَقَّ
الْجُيُوبَ، وَدَعا
بِدَعْوى الْجاهِلِيَّةِ
যে
ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত আহবান করে আমাদের দলভুক্ত
নয়।” (মজমু ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ২৫/৩০২, ৩০৭)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
أَنا بَرِيءٌ
مِمَّنْ بَرئَ
رَسُولُ اللهِ
صلى الله
عليه وسلم
إِنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى
الله عليه
وسلم بَرِئَ
مِنَ الصَّالِقَةِ
وَالْحالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ
“যে
মহিলা (বিপদ-মুসিবতে) চিৎকার করে, মাথা মুণ্ডন করে, কাপড় ছিঁড়ে তার থেকে আমি সম্পর্ক
মুক্ত।” (সহীহ মুসলিম)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
النَّائِحَةُ إذا
لَمْ تَتُبْ
قَبْلَ مَوْتِها،
تُقامُ يَومَ
القِيامَةِ وعليها
سِرْبالٌ مِن
قَطِرانٍ، ودِرْعٌ
مِن جَرَبٍ
“বিলাপকারীনী
মহিলা যদি তওবা করার আগে মৃত্যু বরণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন আলকাতরা মাখানো পায়জামা
আর ঘা বিশিষ্ট বর্ম পরিহিত অবস্থায় উঠবে।” (সহীহ মুসলিম, জানাইয অধ্যায়)
সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন:
ما مِن
عبدٍ تُصيبُه
مُصيبةٌ، فيقولُ:
إنَّا لله
وإنَّا إليه
راجعونَ، اللهُمَّ
أْجُرْني في
مُصِيبتِي، وأَخْلِفْ
لي خيرًا
منها، إلَّا
أَجَرَه اللهُ
في مُصِيبته،
وأَخْلَفَ له
خيرًا منها
“যে
আল্লাহর বান্দা বিপদে আপতিত হলে বলে: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাইহি রাজিঊন,
“আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লাহু খাইরান মিনহা” অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর
জন্য নিবেদিত এবং তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর
থেকে উত্তম বিকল্প দান কর।”
তাকে
আল্লাহ তাকে তার বিপদে উত্তম প্রতিদান দিবেন এবং তারচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।”
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أَرْبَعٌ في
أُمَّتي مِن
أمْرِ الجاهِلِيَّةِ،
لا يَتْرُكُونَهُنَّ:
الفَخْرُ في
الأحْسابِ، والطَّعْنُ
في الأنْسابِ،
والاسْتِسْقاءُ بالنُّجُومِ،
والنِّياحَةُ
“আমার
উম্মতের মধ্যে চারটি জিনিস জাহেলিয়াতের কাজ যেগুলো তারা ছাড়বে না। বংশ আভিজাত্য দিয়ে
গর্ব করা, অন্যের বংশকে দোষারোপ করা, তারকার সাহায্যে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং মানুষের
মৃত্যুতে বিলাপ করা। (সহীহ মুসলিম, বিতাবুল জানাইয)
সুতরাং
কোন ব্যক্তি যদি হুসাইন রা. এর নিহত হওয়ার ঘটনায় অন্য মুমিনদের প্রতি জুলুম করে, তাদেরকে
গালাগালি করে বা তাদের উপর অভিশাপ দেয় এবং দ্বীনের দুশমন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের
কাজে সাহায্য করা সহ অসংখ্য অন্যায় কাজে জড়িত হয় তাদের পরিণতি কী হতে পারে?
শয়তান
গোমরাহ লোকদের জন্যে আশুরার দিনকে শোক ও মাতম প্রকাশের দিন হিসেবে সুসজ্জিত ভাবে তুলে
ধরেছে। যার কারণে এ সব লোক আশুরা আসলে কান্নাকাটি, দুঃখের কাওয়ালী গাওয়া, বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী
বর্ণনা ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু করে দেয়। এতে কি কিছু লাভ হয়? যা হয় তা হল, মানুষের
মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ এবং গোঁড়ামির বিষ বাষ্প ছড়ানো, মুসলমানদের মাঝে ফেতনা-ফ্যাসাদ জাগ্রত
করা এবং অতীত মানুষদের গালাগালি করা। এভাবে দ্বীনের মধ্যে অসংখ্য ফেতনা ছড়ানো হয় এবং
মিথ্যার পরিচর্যা করা হয়।
ইসলামের
ইতিহাসে এত ফেতনা-ফ্যাসাদ, দ্বীনের নামে মিথ্যাচার এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে
সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে এ শিয়া সম্প্রদায়টির চেয়ে অগ্রগণ্য আর কোন মানুষ দেখা য়ায় নি।
(সমাপ্ত)
(১৭৭) প্রশ্ন: শিয়া সম্প্রদায়
যে প্রতি বছর ১০ মুহররমে মাতম করে, তাজিয়া মিছিল করে, নিজেদের শরীরে আঘাত করে-এ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে চাই। এ কাজগুলো কি শরিয়ত সম্মত?
উত্তর:
৬১
হিজরির মুহররম মাসের দশ তারিখে হুসাইন বিন আলী রা. রাজনৈতিক কারণে ফিতনায় পতিত হয়ে
ইরাকের কারবালার প্রান্তরে তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা ইয়াজিদ বিন মুআবিয়া এর
সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার প্রতি সমবেদনার বর্হি:প্রকাশ
হিসেবে শিয়া সম্প্রদায় প্রতি বছর ১০ম মুহররমে নিজেদের শরীরকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত
করে, মাথা মুণ্ডন করে, রাস্তায় রাস্তায় ‘হায় হুসাইন..হাই হুসাইন’ বলে কান্নাকাটি ও
মাতম করে, কালো ব্যাচ ধারণ করে, তাজিয়া মিছিল বের করে।
ইসলামের
দৃষ্টিতে এগুলো সব, বিদআত, জাহেলিয়াত পূর্ণ ও হারাম কাজ। নিম্নাক্ত আলোচনা থেকে তা
প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মৃত্যুশোকে কান্নাকাটি
করা, মাতম করা, শরীরে আঘাত করা ইত্যাদির বিধান কি?
মানুষ
মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার
দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
تَدْمَعُ الْعَيْنُ
وَيَحْزَنُ الْقَلْبُ
وَلاَ نَقُولُ
إِلاَّ مَا
يَرْضَى رَبُّنَا
وَاللَّهِ يَا
إِبْرَاهِيمُ إِنَّا
بِكَ لَمَحْزُونُونَ
“চক্ষু
অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট
করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।” [সহীহ বুখারী: অনুচ্ছেদ:
সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭,মাকতাবা শামেলা]
তবে
চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া, কাপড় ছেড়া
ইত্যাদি হারাম। এ সম্পর্কে নিন্মোক্ত হাদিস সমূহ দেখুন:
সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
لَيْسَ مِنّا
مَنْ ضَرَبَ
الْخُدُودَ، وَشَقَّ
الْجُيُوبَ، وَدَعا
بِدَعْوى الْجاهِلِيَّةِ
যে
ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত আহবান করে আমাদের দলভুক্ত
নয়।” (মজমু ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ২৫/৩০২, ৩০৭)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
أَنا بَرِيءٌ
مِمَّنْ بَرئَ
رَسُولُ اللهِ
صلى الله
عليه وسلم
إِنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى
الله عليه
وسلم بَرِئَ
مِنَ الصَّالِقَةِ
وَالْحالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ
“যে
মহিলা (বিপদ-মুসিবতে) চিৎকার করে, মাথা মুণ্ডন করে, কাপড় ছিঁড়ে তার থেকে আমি সম্পর্ক
মুক্ত।” (সহীহ মুসলিম)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
النَّائِحَةُ إذا
لَمْ تَتُبْ
قَبْلَ مَوْتِها،
تُقامُ يَومَ
القِيامَةِ وعليها
سِرْبالٌ مِن
قَطِرانٍ، ودِرْعٌ
مِن جَرَبٍ
“বিলাপকারীনী
মহিলা যদি তওবা করার আগে মৃত্যু বরণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন আলকাতরা মাখানো পায়জামা
আর ঘা বিশিষ্ট বর্ম পরিহিত অবস্থায় উঠবে।” (সহীহ মুসলিম, জানাইয অধ্যায়)
সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন:
ما مِن
عبدٍ تُصيبُه
مُصيبةٌ، فيقولُ:
إنَّا لله
وإنَّا إليه
راجعونَ، اللهُمَّ
أْجُرْني في
مُصِيبتِي، وأَخْلِفْ
لي خيرًا
منها، إلَّا
أَجَرَه اللهُ
في مُصِيبته،
وأَخْلَفَ له
خيرًا منها
“যে
আল্লাহর বান্দা বিপদে আপতিত হলে বলে: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাইহি রাজিঊন,
“আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লাহু খাইরান মিনহা” অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর
জন্য নিবেদিত এবং তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর
থেকে উত্তম বিকল্প দান কর।”
তাকে
আল্লাহ তাকে তার বিপদে উত্তম প্রতিদান দিবেন এবং তারচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।”
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أَرْبَعٌ في
أُمَّتي مِن
أمْرِ الجاهِلِيَّةِ،
لا يَتْرُكُونَهُنَّ:
الفَخْرُ في
الأحْسابِ، والطَّعْنُ
في الأنْسابِ،
والاسْتِسْقاءُ بالنُّجُومِ،
والنِّياحَةُ
“আমার
উম্মতের মধ্যে চারটি জিনিস জাহেলিয়াতের কাজ যেগুলো তারা ছাড়বে না। বংশ আভিজাত্য নিয়ে
গর্ব করা, অন্যের বংশকে দোষারোপ করা, তারকার সাহায্যে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং মানুষের
মৃত্যুতে বিলাপ করা। (সহীহ মুসলিম, বিতাবুল জানাইয)
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিয়া সম্প্রদায়ের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
(১৭৮) প্রশ্ন: বিভিন্ন
স্থানে এবং সামাজিক মিডিয়ায় অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর রেখে যাওয়া বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন: তাঁর জামা, জুতা, চুল, চাদর, তলোয়ার ইত্যাদি)
প্রদর্শন করে চলেছে। সরলমনা মানুষ সেগুলো বিশ্বাস করছে এবং সেগুলোর প্রতি ভক্তি ও বিনয়
প্রকাশ করছে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
আসলেই কি এগুলো রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যবহৃত আসবাব-সমগ্রী?
উত্তর:
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যেমন তা বিশুদ্ধ সনদে
প্রমাণিত হওয়া জরুরি ঠিক তদ্রূপ তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, জুতা, জামা, জুব্বা, চাদর, পাগড়ি,
মাথার চুল, লাঠি, ঘটি-বাটি ও অন্যান্য ব্যবহৃত আসবাব-পত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তা বিশুদ্ধ
সূত্রে প্রমাণিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে
যে সব বস্তুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ করা হচ্ছে সেগুলোর
পেছনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই যে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ছবির
ক্ষেত্রেও একই কথা।
সুতরাং
সু সাব্যস্ত দলিল ছাড়া এ সব স্মৃতি চিহ্ন বা সেগুলোর ছবিকে শতভাগ বিশ্বাস করার কোনো
সুযোগ নাই। সঠিকও হতে পারে; বেঠিকও পারে।নিশ্চিতভাবে কোনো কিছুই বলা যাবে না। ছবির
ব্যাপারটা আরও অনিশ্চিত। কারণ বর্তমানে ইডিটিং এর মাধ্যমে ইন্টারনেট জগতে শত শত ফেইক
ছবি ছড়িয়ে পড়েছে- যেগুলোর সত্যতা নিরূপণ খুবই দু:সাধ্য বিষয়।
যাহোক,
ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন, যুগের বিবর্তনে বিভিন্ন বড় বড় যুদ্ধ ও ফেতনা-ফ্যাসাদের
কবলে পড়ে (যেমন, তাতারদের বাগদাদ আক্রমণ, তৈমুরলং এর ঘটনা ইত্যাদিতে) রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট বা নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।
✪ শাইখ আলবানী
রহ. বলেন:
نحن نعلم
أن آثاره
صلى الله
عليه وسلم،
من ثياب،
أو شعر،
أو فضلات،
قد فقدت،
وليس بإمكان
أحد إثبات
وجود شيء
منها على
وجه القطع
واليقين
“আমরা
জানি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্ন যেমন, কাপড়,
চুল বা ব্যবহৃত বস্তু-সামগ্রী হারিয়ে গেছে। এখন এগুলো থেকে কোনো কিছু অবশিষ্ট রয়েছে
তা কারো দ্বারাই সুনিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।” (আত তাওয়াসসুল,পৃষ্ঠা ১৪৬)
✪ ‘আল আসার
আন নববিয়া’ তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতিচিহ্ন শীর্ষক বইয়ের
লেখক উসমানী খেলাফতের রাজধানী কুসতুনতুনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) এর যাদুঘরে সংরক্ষিত রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ কৃত বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন উল্লেখ করার
পর বলেন:
”
এ কথা স্পষ্ট যে , কিছু স্মৃতিচিহ্ন সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা এমন কোনো
নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে দেখি নি যে, এগুলোকে সঠিক বা বেঠিক বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং
আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আর এমন কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে যে ব্যাপারে
এ কথা গোপনের কোনো সুযোগ নাই যে, এগুলোর ব্যাপারে মনের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের দোলাচল
ঘুরপাক খায়।” (গ্রন্থ: আল আসার আন নববিয়া, লেখক: আহমদ তৈমুর বাশা, পৃষ্ঠা নং ৭৩)
অতএব,
ভারতের কেরালায় কতগুলো লম্বা লম্বা চুলকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
‘চুল মোবারক’ বলে ধুয়ে পানি বিক্রয়ের ব্যবসায় প্রতারিত হওয়া বা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লাঠি, পাগড়ি, তলোয়ার, ঘটি-বাটি ইত্যাদির ছবি বিক্রয় করা বা সেগুলো
কিনে এনে ঘরে ঝুলিয়ে রেখে বরকতের আশা করা, কথিত ‘নালাইন শরীফ’ তথা ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেন্ডেল/খড়ম শরিফ’ ইত্যাদির ছবি তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলানোর ফযিলতে
বিশ্বাস করা নেহায়েত বাড়াবাড়ি, অজ্ঞতা ও শরিয়ত বহির্ভূত কাজ ছাড়া কিছু নয়।
মনে
রাখতে হবে, প্রকৃত বরকত ও কল্যাণ রয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা, তার হাদিস ও সুন্নতের প্রতি সম্মান জানানো, তার সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ
করা, তাঁর নিষেধ থেকে দুরে থাকা এবং তাঁর আদর্শের আলোকে আমাদের সামগ্রিক জীবন ঢেলে
সাজানোর মধ্যে।
সুতরাং
আসুন, আমরা এ সব স্মৃতিচিহ্ন ও ছবি (যা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়) এর পেছনে না ছুটে
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত সুন্নাহর
আলোকে আমাদের ঈমান, আকীদা, চরিত্র, আচার-আচরণ তথা পুরো জীবনকে ঢেলে সাজাই। এতেই রয়েছে
অবারিত কল্যাণ ও সফলতা। আল্লাহ তৌফিক দান করুন।আমীন।
(১৭৯) প্রশ্নঃ কুরআন
তিলাওয়াতে উদ্দেশ্যে ওযু করা হলে সে ওযু দ্বারা কি ফরয সালাত আদায় করা বৈধ হবে?
উত্তর:
কুরআন
তিলাওয়াত বা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে ওযু করা হলে উক্ত ওযু দ্বারা ফরয, সুন্নত, নফল ইত্যাদি
সালাত আদায় করা বৈধ। কেননা, সালাতের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করা শর্ত। আর এখানে তা বিদ্যমান
রয়েছে।
সুতরাং
কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য কৃত ওযু দ্বারা সালাত আদায় করতে কোনো বাধা নেই। আল হামদুলিল্লাহ।
দেনমোহর ও কাবিননামা
(১৮০) প্রশ্ন: আমি জানতে
চাই কাবিননামা এবং দেনমোহর কি এক? যদি এক না হয় তাহলে পার্থক্য কি?
উত্তর:
দেনমোহর এবং কাবিননামা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। নিম্নে এ দুটি জিনিসের পরিচয় ও পার্থক্য
প্রদান করা হল:
দেনমোহর কী?
মুসলিম
আইন অনুযায়ী দেনমোহর হল বিয়ের অন্যতম শর্ত। এই শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে
বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পায় বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে। দেনমোহর বিয়ের সময়ই
ধার্য বা ঠিক করা হয়। এটি স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার।
আল্লাহ
কুরআনে বলেন:
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
ۚ فَإِن
طِبْنَ لَكُمْ
عَن شَيْءٍ
مِّنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيئًا
مَّرِيئًا
“আর
তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশী মনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ
ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” (সূরা নিসা: ৪)
কাবিননামা কী?
কাবিননামা
বলতে বিবাহ সম্পাদনের লিখিত চুক্তি বোঝায়। একে নিকাহনামা বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিবাহ
সম্পাদনের জন্য বা বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’ অপরিহার্য নয়। কাবিননামা একটি
আইনি বাধ্যবাধকতা।
বাংলাদেশের
আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে
থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের
পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিননামা একটি আইনি দলিল। (বাংলাদেশ
সরকারের জাতীয় ই-তথ্যকোষ)
নির্যাতনে মৃত ব্যক্তির
শহিদি মর্যাদা লাভ, অন্যায়ভাবে হত্যা করার ভয়াবহ পরিণতি এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম
হত্যাকাণ্ড
(১৮১) প্রশ্ন: কোনও ব্যক্তি
যদি অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে কি শহিদ হিসেবে
গণ্য হবে? অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করার ভয়াবহতা কতটুকু? পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম
কে হত্যাকাণ্ডের সূচনা করেছিলো এবং তার পরিণতি কী হবে?
উত্তর:
নিন্মে
উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের সংক্ষেপে উত্তর প্রদান করা হল: و
بالله التوفيق
ক. কোনও ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনের
শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে কি শহিদ হিসেবে গণ্য হবে?
হ্যাঁ,
যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে অন্যায়ভাবে নির্যাতিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে আখিরাতে আল্লাহর
নিকট শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَنَسِ
بْنِ مَالِكٍ
رضي الله
عنه قَالَ
: صَعِدَ النَّبِيُّ
صلى الله
عليه وسلم
إِلَى ” أُحُدٍ
” وَمَعَهُ أَبُو
بَكْرٍ وَعُمَرُ
وَعُثْمَانُ فَرَجَفَ
بِهِمْ ،
فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ
، قَالَ
: (اثْبُتْ أُحُدُ
، فَمَا
عَلَيْكَ إِلاَّ
نَبِيٌّ ،
أَوْ صِدِّيقٌ
، أَوْ
شَهِيدَان- رواه
البخاري
আনাস
বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আবু বকর রা. উমর রা.
ও উসমান রা. সহকারে ওহুদ পাহাড়ে উঠলে তা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। তখন তিনি পাহাড়ের গায়ে
পদাঘাত করে বললেন:
“হে
ওহুদ, তুমি স্থির হও। কারণ তোমার উপরে আছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং দু জন শহিদ।”
(সহিহ বুখারী হা/ ৩৪৮৩)
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আল্লাহর ওহির মারফতে অগ্রিম ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে,
সে দিন ওহুদ পাহাড়ে তাঁর সাথে থাকা তিন জন অতি সম্মানিত সাহাবীর মধ্যে দু জন শহিদ হবেন।
ইতিহাস
সাক্ষী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সালাম এর ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হয়েছে।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর তিরোধানের পর মুসলিম জাহানের ২য় খলিফা উমর ইবনুল
খাত্তাব রা. ফজর সালাতে ইমামতি করা অবস্থায় আবু লুলু নামক এক অগ্নিপূজক ঘাতক কর্তৃক
পেছন থেকে অতর্কিত বর্শাঘাতে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। আর ৩য় খলিফা উসমান বিন
আফফান রা. তাঁর খিলাফতকালে একদল খারেজী বিদ্রোহী জঙ্গিদের হাতে মাজলুম অবস্থায় শাহাদত
বরণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আমীন।
এ
কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শহিদি মর্যাদা লাভের জন্য শর্ত হল, ইমানদার হওয়া এবং
ঈমানের মৌলিক দাবী পূরণ করা। যেমন: তাওহীদের উপর চলা, শিরক থেকে দূরে থাকা, পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত আদায় করা, মানুষের হক নষ্ট না করা ইত্যাদি।
খ. অন্যায়ভাবে রক্তপাত ও হত্যা করার কঠিন পরিণতি:
ইসলামের
দৃষ্টিতে অন্যায়ভাবে রক্তপাত করা বা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা অত্যন্ত ভয়াবহ অপরাধ। এ
মর্মে কুরআন ও হাদিসে পর্যাপ্ত আলোচনা এসেছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত ও হাদিস
তুলে ধরা হল:
১) আল্লাহ তাআলা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানব হত্যার
ভয়াবহ পরিণতিত কথা ঘোষণা করে বলেন:
وَمَنْ يَقْتُلْ
مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا
فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ
خَالِدًا فِيْهَا
وَغَضِبَ اللّهُ
عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ
وَأَعَدَّ لَه
عَذَابًا عَظِيْمًا
“আর
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই
সে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হবেন, তার উপর অভিসম্পাত করবেন
এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সূরা নিসা: ৯৩)
২) যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাআলা তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এবং তার নেকিগুলো নিহত ব্যক্তিকে
দিবেন আর নেকি যদি কম থাকে তাহলে নিহত ব্যক্তির গুনাহগুলো হত্যাকারীর কাঁধে চাপিয়ে
দিবেন। পরিণতিতে সে দুনিয়াতে নামায, রোযা, হজ, যাকাত ইত্যাদি অনেক নেকির কাজ করার পরও
নিঃস্ব অবস্থায় জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে:
এ
মর্মে হাদিস হল, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম জিজ্ঞেস করলেন:
أَتَدْرُونَ ما
المُفْلِسُ؟ قالوا:
المُفْلِسُ فِينا
مَن لا
دِرْهَمَ له
ولا مَتاعَ،
فقالَ: إنَّ
المُفْلِسَ مِن
أُمَّتي يَأْتي
يَومَ القِيامَةِ
بصَلاةٍ، وصِيامٍ،
وزَكاةٍ، ويَأْتي
قدْ شَتَمَ
هذا، وقَذَفَ
هذا، وأَكَلَ
مالَ هذا،
وسَفَكَ دَمَ
هذا، وضَرَبَ
هذا، فيُعْطَى
هذا مِن
حَسَناتِهِ، وهذا
مِن حَسَناتِهِ،
فإنْ فَنِيَتْ
حَسَناتُهُ قَبْلَ
أنْ يُقْضَى
ما عليه
أُخِذَ مِن
خَطاياهُمْ فَطُرِحَتْ
عليه، ثُمَّ
طُرِحَ في
النَّارِ
“তোমরা
কি জান নি:স্ব কে?”
সাহাবায়ে
কেরাম বললেন: “আমাদের মধ্যে নি:স্ব তো সে যার কোন দিনার-দিরহাম বা অর্থ-সম্পদ নেই।”
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন: “আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার নি:স্ব হল সেই
ব্যক্তি যে, কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ
দুনিয়াতে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল,
কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল। ফলে তার থেকে নেক আমলগুলো নিয়ে তার দ্বারা
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে।
এভাবে
যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন
তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে। ফলে সে (নিঃস্ব অবস্থায়) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
(সহিহ মুসলিম)
৩) কিয়ামতের দিন বান্দাদের পারস্পারিক অধিকার সংক্রান্ত
ব্যাপারে সর্ব প্রথম রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিচার-ফয়সালা করা হবে।
যেমন:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সালাম বলেছেন:
أَوَّلُ مَا
يُقْضَى بَيْنَ
النَّاسِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ فِي
الدِّمَاءِ
‘‘কিয়ামতের
দিন সর্ব প্রথম যে বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করা হবে তা হল রক্তপাত বা খুন-হত্যার
বিষয়।’’ (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
এছাড়াও
কুরআন-হাদিসে অন্যায় রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতার ব্যাপারে অনেক কঠিন কঠিন বক্তব্য
বিবৃত হয়েছে।
গ. পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম কে হত্যাকাণ্ডের
সূচনা করেছিলো এবং তার পরিণতি কী হবে?
মানব
ইতিহাসে সর্বপ্রথম খুন করে আদম আলাইহিস সালামের এক ছেলে কাবিল। সে তার আপন ভাই হাবিলকে
হত্যা করে। যার কারণে পৃথিবীতে যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে তার সবগুলোর পাপের একটা অংশ
কাবিলের আমলনামায় জমা হবে। কারণ সেই সর্ব প্রথম এ পথ উন্মুক্ত করেছিলো।
এ
ব্যাপারে আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন:
لاَ تُقْتَلُ
نَفْسٌ ظُلْمًا
إِلاَّ كَانَ
عَلَى ابْنِ
آدَمَ الأَوَّلِ
كِفْلٌ مِنْ
دَمِهَا وَذَلِكَ
لأَنَّهُ أَوَّلُ
مَنْ سَنَّ
الْقَتْلَ
“অন্যায়ভাবে
কাউকে হত্যা করা হলে রক্তে একটা অংশ (হত্যাকাণ্ডে গুনাহে অংশ) প্রথম আদম সন্তান (কাবিল)
এর উপর বর্তাবে। কারণ সে প্রথম ব্যক্তি যে হত্যাকাণ্ডের প্রথা চালু করেছে।”
[সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) হাদিস নম্বরঃ [1284] অধ্যায়ঃ ২৩/ জানাযা (كتاب الجنائز)]
পরিশেষে
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে জুলুম-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করুন, যারা নির্যাতনের
শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহন করেছেন তাদেরকে দয়া করে শহিদী মর্যাদা দান করুন
এবং অন্যায়ভাবে কারো প্রতি অস্ত্র ধারণ তো দূরে থাক একটি কটুকথাও যেন মুখ দিয়ে উচ্চারিত
না হয় আমাদেরকে সে তাওফিক দান করুন। আমীন।
জিন ও শয়তান: পরিচয়,
প্রকারভেদ ও পার্থক্য
(১৮২) প্রশ্ন: জিন ও
শয়তান কি একই না কি তাদের মাঝে পার্থক্য আছে?
উত্তর:
নিন্মে
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শয়তানের পরিচয়, প্রকারভেদ এবং জিন ও শয়তানের মাঝে পার্থক্য
তুলে ধরা হল:
শয়তান কাকে বলে?
শয়তান
বলতে কী বুঝায় সে ব্যাপারে আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
◈
বিশিষ্ট ভাষাবিদ, ফিকাহ বিদ ও হাদিস বিদ আবু উবাইদ কাসেম বিন সাল্লাম [জন্ম: ১৫৭ হি:-২২৪
হি:] বলেন:
الشيطان كل
عات متمرد
من إنس,
أو جن
“প্রত্যেক
অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘণকারীকে শয়তান বলা হয়।” (বাহরুল উলুম লিস সামারকান্দি ১/২৭৭)
◈
আবু বকর মুহাম্মদ বিন ইসহাক [জন্ম ৮৫ হি:-মৃত্যু: ১৫১ হি;] বলেন:
إنما سمي
شيطاناً لأنه
شطن عن
أمر ربه،
والشطون البعيد
النازح
“শয়তানকে
এই জন্যই শয়তান বলা হয় যে, সে আল্লাহর নির্দেশ পালন থেকে দূরে থাকে। কেননা আরবিতে الشطون-শাতূন শব্দের অর্থ হল, দূরে অবস্থানকারী ও পলাতক।” [আয
যীনাহ ফিল কালিমাতুল ইসলামিয়্যাতিল আরাবিয়াহ ২/১৭৯]
◈
কোন কোনো আলেম বলেন: যে নিজে আল্লাহর অবাধ্যতা করে এবং নানা অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত থাকার
পাশাপাশি অন্যকে আল্লাহর আনুগত্য করতে বাধা দেয় এবং দ্বীন ও কল্যাণের পথ থেকে দূরে
রাখার চেষ্টা করে তাকেই ইসলামের পরিভাষায় শয়তান বলা হয়-চাই সে জিনের মধ্য থেকে হোক
অথবা মানুষের মধ্য থেকে হোক।
শয়তান দু প্রকার। যথা:
◉
ক. জিন রূপী শয়তান।
◉
খ. মানুষ রূপী শয়তান।
জিন দু প্রকার। যথা:
◉
ক. ভালো, দ্বীনদার, আল্লাহ ভীরু, আল্লাহর আনুগত্য শীল ও সৎ কর্মপরায়ন জিন।
◉
খ. খারাপ, ইবলিসের অনুসারী, অবাধ্য, সীমালঙ্ঘণকারী ও দুষ্কৃতিকারী জিন। এই দ্বিতীয়
প্রকার হল, জিন রূপী শয়তান।
জিনদের মত মানুষও ভালো ও মন্দ দু প্রকার।
মানুষের
মধ্যেও যারা খারাপ, আল্লাহর অবাধ্য, ইবলিসের অনুসারী ও দুষ্কৃতিকারী তারা হল, মানুষ
রূপী শয়তান।
◆
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا
لِكُلِّ نَبِيٍّ
عَدُوًّا شَيَاطِينَ
الْإِنسِ وَالْجِنِّ
يُوحِي بَعْضُهُمْ
إِلَىٰ بَعْضٍ
زُخْرُفَ الْقَوْلِ
غُرُورًا
“এমনিভাবে
আমি প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিন শয়তাদেরকে শত্রু নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরা একে
অপরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় কথাবার্তা শিখিয়ে দেয় যেন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে পারে ।” (সূরা
আনআম: ১১২)
◆
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উভয় প্রকার দু প্রকার শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। আল্লাহ
তাআলা বলেন:
الَّذِي يُوَسْوِسُ
فِي صُدُورِ
النَّاسِ مِنَ
الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
“(আমি
আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই শয়তান থেকে যে) কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।”
(সূরা
নাস: ৫ ও ৬)
◆
আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
يا أبا
ذر تعوذ
بالله من
شر شياطين
الجن والإنس،
قال: يا
نبي الله،
وهل للإنس
شياطين؟ قال:
نعم: ((شَيَاطِينَ الإِنسِ
وَالْجِنِّ يُوحِي
بَعْضُهُمْ إِلَى
بَعْضٍ زُخْرُفَ
الْقَوْلِ غُرُورًا))
[الأنعام: 112]
“হে
আবু যর, জিন ও মানুষ শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।”
তিনি
বললেন: হে আল্লাহর নবী, মানুষের মধ্যেও কি শয়তান আছে?
তিনি
বললেন: হ্যাঁ। (তারপর এই আয়াতটি পাঠ করলেন):
شَيَاطِينَ الإِنسِ
وَالْجِنِّ يُوحِي
بَعْضُهُمْ إِلَى
بَعْضٍ زُخْرُفَ
الْقَوْلِ غُرُورًا
“এমনিভাবে
আমি প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিন শয়তাদেরকে শত্রু নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারা একে
অপরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় কথাবার্তা শিখিয়ে দেয় যেন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে পারে।” (সূরা
আনআম: ১১২)
সুতরাং
জিন রূপী হোক আর মানুষরূপী হোক-উভয় প্রকার শয়তান থেকে আমাদেরকে বাঁচতে হবে এবং আল্লাহর
নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের
সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান
(১৮৩) প্রশ্ন: হিজড়াদের
সংগে মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া করা যাবে কি? এবং তাদের কাছে টাকা ধার নিয়ে হালাল ব্যবসা
করা যাবে কি?
উত্তর:
প্রথমত:
আমাদের জানা আবশ্যক যে, একজন হিজড়া এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মৌলিক কোন পার্থক্য নাই
যৌন সংক্রান্ত তারতম্য এবং এ সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধান ছাড়া। তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান-কুফরি,
আল্লাহর আনুগত্য-নাফরমানি, ইবাদত-বন্দেগি, ইসলামের বিধিবিধান পালন এবং সামাজিক সম্মান-মর্যাদার
ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই। তারাও ইসলাম, ঈমান, তাকওয়া-পরহেযগারিতা, হালাল-হারাম
ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত। তারা যদি নেকির কাজ করে তাহলে আখিরাতে
আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত হবে এবং যদি কোন অন্যায় করে আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন
হবে।
কিন্তু
দুর্ভাগ্য হল, হিজড়াদেরকে আমাদের সমাজে ভিন্ন চোখে দেখা হয় এবং সামাজিকভাবে তাদেরকে
মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে তারাও জীবন-জীবিকার তাগিদে এমন কিছু কাজ করে যা অনেক
ক্ষেত্রে অন্যায়-জুলুম এবং অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর।
সুতরাং
তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে এবং
তাদের প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূর করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাও জরুরি যে, বর্তমানে
হিজড়া হিসেবে পরিচিত কিছু মানুষ প্রকৃত হিজড়া নয় বরং তারা কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া
বেশ ধারণ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে আবার কিছু মানুষকে দুষ্কৃতিকারীরা বাধ্য করে
হিজড়া বানিয়ে রেখেছে বিশেষ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
আমীন।
যাহোক,
যারা সৃষ্টিগতভাবে প্রকৃতই হিজড়া ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের সাথে সাধারণ মেলামেশা, উঠবস,
লেনদেন, খাওয়া- দাওয়া করতে কোন আপত্তি নেই এবং তাদের নিকট টাকা ধার নিয়ে হালাল ব্যবসা
করতেও কোন বাধা নেই। আল্লাহু আলাম।
হিজড়াদের প্রতি আমাদের
দায়িত্ব-কর্তব্য এবং তাদের পক্ষ থেকে অন্যায় আচরণের শিকার হলে করণীয়ঃ
(১৮৪) প্রশ্ন: বর্তমানে
আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ হিজড়া দেখা যায়। এরা ট্রেনে চলাচলের সময় যাত্রীদের বিভিন্ন
ভাবে সমস্যা করে থাকে এবং অনেক সময় শরীরেও হাত দিয়ে দেয়। এর জন্য কী আমাদের গুনাহ হবে?
এদের কবল থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করব?
হিজড়াদের
প্রতি আমাদের কী দায়িত্ব-কতর্ব্য আছে দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
মনে
রাখতে হবে, হিজড়ারা আর দশজন মানুষের মতই মানুষ-আশরাফুল মাখলুকাত-সৃষ্টির সেরা জীব।
তারাও আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান, সৎকর্ম, ইবাদত-বন্দেগি ও হালাল-হারাম মেনে চলার
ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত। কারণ আল্লাহ তাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন।
তারা আল্লাহর বিধান পালন করলে যেভাবে সওয়াব অর্জন করবে তেমনি আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করলে
গুনাহগার হবে।
অত:এব
তারা যদি কারো উপর জুলুম-অবিচার করে বা কারো সাথে অন্যায় আচরণ করে তাহলে তাদেরকে আখিরাতে
আল্লাহর কাঠগড়ায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন)
হিজড়া এবং আমাদের সামাজিক বাস্তবতা:
দুর্ভাগ্য
হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে হিজড়ারা মারাত্মক অবহেলা, অনাদর ও বৈষম্যের শিকার। তারা
অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে জ্ঞানার্জন ও পড়ালেখার সুযোগ পায় না। ইসলাম শিক্ষার সুযোগ পায়
না। সামাজিক মর্যাদা পায় না। মানুষ তাদেরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার কারণে তারা মনে কষ্ট
পায়। মানুষের আচার-আচরণে বৈষম্যের শিকার হয়। এ সব কারণে তারা তারা পরিবার ও সমাজ থেকে
দূরে সরে যায়। ফলশ্রুতিতে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মানুষে তাদেরকে একত্রিত করে সমাজে
তাদের মাধ্যমে নানা অপরাধ মূলক কার্যক্রম করে থাকে।
হিজড়াদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
তারা
ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার হকদার। তাদের মধ্যে বিপথগামীদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
করতে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিয়ে সমাজে অন্যান্য
মানুষের মতই সুন্দরভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দিতে হবে। কোনোভাবেই তাদের প্রতিপন্ন করা
যাবে না। সর্বোপরি হিজড়াদের প্রতি সর্বস্তরের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
যা
হোক, রাস্তা-ঘাট, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদিতে চলার সময় কখনো যদি তাদের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্খীতভাবে
খারাপ আচরণের সম্মুখীন হতে হয় তাহলে যথাসাধ্য প্রতিবাদ করতে হবে, তা সম্ভব না হলে সাধ্যানুযায়ী
নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে তৎসঙ্গে সম্ভব হলে পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে সব ধরণের খারাপি ও অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন। আমীন
(১৮৫) প্রশ্ন: একজন মুসলিমের জন্য হঠাৎ মৃত্যু ভালো
না কি খারাপ?
উত্তর:
হঠাৎ
মৃত্যু ভালো ও মন্দ উভয়টাই হতে পারে। তা নির্ভর করছে ব্যক্তির অবস্থার উপরে।
➤ সে যদি
দ্বীনদার, সৎকর্মশীল ও তাকওয়াবান হয় তাহলে যে অবস্থায়ই মৃত্যু হোক না এটি তার জন্য
কল্যাণকর। বরং হঠাৎ মৃত্যু (যেমন: দুর্ঘটনা বশত: মৃত্যু) তার জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত।
কারণ এতে তাকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট পোহাতে হল না, রোগ-ব্যাধিতে পড়ে বিছানায় কাতরাতে
হল না, অবস্থা নাজেহাল হল না, কারো প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হল না। এতে আল্লাহর
কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, গুনাহ মোচন হয় এবং দুনিয়ার সকল কষ্ট-ক্লেশকে বিদায় জানিয়ে
সে রবের সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে এগিয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ
يَسْتَرِيحُ مِنْ
نَصَبِ الدُّنْيَا
وَأَذَاهَا،
“মুমিন
ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে এখন সে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায়।” (সুনানে নাসাঈ,
অধ্যায়: জানাযা, অনুচ্ছেদ: মৃত্যুতে মুমিনের নিষ্কৃতি প্রাপ্তি. হা/১৯৩০-সহিহ)
➤ পক্ষান্তরে
সে যদি আল্লাহর নাফরমান ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে যে অবস্থায় মৃত্যু হোক কেন তা তার জন্য
মহা বিপদের কারণ। বিশেষ করে হঠাৎ মৃত্যুর কারণে সে পাপাচার থেকে তওবা করার সুযোগ পেলো
না, নিজের অবস্থা সংশোধন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল, মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে পারলো
না এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবের দিকে ধাবিত হল।
আয়েশা
রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে তারা বলেন:
أسف على
الفاجر وراحة
للمؤمن
“(হঠাৎ
মৃত্যু) পাপীর জন্য আফসোস আর মুমিনের জন্য নিষ্কৃতির কারণ।” (মুসাননাফে ইবনে আবি শায়বা
৩/৩৭০ ও বায়হাকী ৩/৩৭৯)
উল্লেখ্য
যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ মৃত্যু থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন
মর্মে বর্ণিত হাদিসের সনদ সহিহ নয়।
ফিরোযাবাদি
রহ. বলেন: “এ বিষয়ে কোন সহিহ হাদিস নেই।” (সাফারুস সাআদাহ, পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)
উল্লেখ্য
যে, হঠাৎ মৃত্যু কিয়ামতের একটি আলামত। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
حديث أنس
بن مالك
رضي الله
عنه أن
النبي -صلى
الله عليه
وسلم- قال
: (إن من
أمارات الساعة
أن يظهر
موت الفجأة)،
رواه الطبراني
وحسّنه الألباني.
আনাস
বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“কিয়ামতের
একটি আলামত হল, ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রকাশ পাওয়া।” (ত্বাবারানী, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান
বলেছেন) আ্ল্লাহু আলাম।
পরিশেষে
আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন, আমাদেরকে এমন ঈমান ও আমলের উপর মৃত্যু দান করেন যা
দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা অর্জন করতে পারি। নিশ্চয় তিনি পরম করুণাময় ও
অতিশয় ক্ষমাশীল।
পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়:
যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
(১৮৬) প্রশ্ন: যখন মনের
মধ্যে পাপ করার প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হয় তখন তা দমন করার জন্য কী করণীয়?
উত্তর:
মানুষ
সৃষ্টিগতভাবে পাপ প্রবণ। শয়তান ও কু প্রবৃত্তি তাকে প্রায়ই পাপাচার, অন্যায় ও আল্লাহর
নিষিদ্ধ কাজের দিকে তাড়িত করে। সব মানুষের মধ্যেই এমন পাপের মনোবৃত্তি জাগ্রত হয়। কিন্তু
সফল তো সে ব্যক্তি যে সুযোগ থাকার পরও আল্লাহর আযাবের ভয়ে পাপ ও অন্যায় থেকে আত্ম সংবরণ
করে আর হতভাগ্য ও ধ্বংস প্রাপ্ত তো সে ব্যক্তি যে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে কিংবা কামনা-বাসনার
ডাকে সাড়া দিয়ে পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَدْ أَفْلَحَ
مَن زَكَّاهَا
– وَقَدْ خَابَ
مَن دَسَّاهَا
“যে
নিজের আত্মাকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্র করে সেই সফল হয় আর যে তাকে কলুষিত করে ধ্বংস
হয়।” (সূরা শামস: ও ১০)
যা
হোক যখন অন্তরে অন্যায় ও পাপকাজের চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখন কী করণীয় সে ব্যাপারে
কিছু আইডিয়া পেশ করা হল। এগুলো থেকে এক বা একাধিক আইডিয়া কাজে লাগালে আশা করা যায় যে,
মহান আল্লাহ পাপ পঙ্কিলতায় ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
আমাকে সহ প্রতিটি মুসলিমকে আল্লাহর নাফরমানী ও পাপাচার থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
১)
মনে পাপের চিন্তা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম’ “বিতাড়িত
শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি” পাঠ করা। আল্লাহ তাআলা এ মর্মে বলেন:
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ
مِنَ الشَّيْطَانِ
نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ
بِاللَّـهِ ۚ
“আর
যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।”
(সূরা আ’রাফ: ২০০)
২)
মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। অর্থাৎ এই চিন্তা করা যে, আল্লাহর অবাধ্যতা করলে তিনি ক্রোধান্বিত
হবেন এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
আমাদের
ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, পৃথিবীর কোনও মানুষ না দেখলেও আল্লাহর চোখকে কোনোভাবেই ফাঁকি
দেয়া সম্ভব নয়। তিনি অবশ্যই বান্দার গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু দেখেন এবং প্রতিটি কর্ম
সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
তাছাড়া
আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত আমাদের কাঁধের ফেরেশতা দ্বয় আমাদের প্রতিটি কর্ম দিনরাত
অবিরামভাবে লিখে চলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ
لَحَافِظِينَ كِرَامًا
كَاتِبِينَ يَعْلَمُونَ
مَا تَفْعَلُونَ
“অবশ্যই
তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা
কর।” (সূর ইনফিতার: ১০, ১১ ও ১২)
৩)
মহান আল্লাহর নিকট অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহ ভীতির জন্য দুআ করা।
যেমন:
নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন:
اَللَّهُمَّ آتِ
نَفْسِي تَقْوَاهَا
وَزَكِّهَا أَنْتَ
خَيْرُ مَنْ
زَكَّاهَا أَنْتَ
وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا
– اللَّهُمَّ إِنِّي
أَعُوذُ بِكَ
مِنْ عِلْمٍ
لاَ يَنْفَعُ
وَمِنْ قَلْبٍ
لاَ يَخْشَعُ
وَمِنْ نَفْسٍ
لاَ تَشْبَعُ
وَمِنْ دَعْوَةٍ
لاَ يُسْتَجَابُ
لَهَا
বাংলা
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আতি নাফসী তাকওয়াহা ওয়া যাক্কিহা আন্তা খাইরু মান যাককাহা আনতা
ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলাহা। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন ‘ইলমিন লা ইয়ানফা‘উ ওয়া
কালবিন লা ইয়াখশাউ ওয়া নাফসিন লা তাশবা‘উ ওয়া মিন দাওয়াতিন লা ইউসতাজাবু লাহা।
অর্থ:
“হে আল্লাহ, তুমি আমার মনে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) দান করো, আমার মনকে পবিত্র কর, তুমিই
তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী। তুমিই তো হৃদয়ের মালিক ও অভিভাবক।” “হে আল্লাহ, আমি তোমার
নিকট আশ্রয় চাই এমন ‘ইলম (জ্ঞান) থেকে যা কোনও উপকার দেয় না, এমন হৃদয় থেকে যা (তোমার
ভয়ে) ভীত হয় না, এমন আত্মা থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে যা কবুল করা হয়
না।” (সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: দুআ, তওবা-ইস্তিগফার হা/২৭২২)
৪)
মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। হাদিসে এসেছে, গুনাহরত অবস্থায় যদি মৃত্যু সংঘটিত হয় তাহলে
কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্তোলন করা হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)
যেমন:
জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
يُبعَثُ كلُّ
عبدٍ على
ما مات
عليه المُؤمِنُ
على إيمانِه
والمُنافِقُ على
نِفاقِه
“প্রত্যেক
বান্দাকে ঐ অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠানো হবে যে অবস্থার উপর সে মৃত্যু বরণ করেছে। মুমিনকে
উঠানো হবে ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে উঠানো হবে নিফাকির উপর।” ( সহীহ ইবনে হিব্বান,হা/৭৩১৩)
৫)
মনে রাখতে হবে,পাপের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তার ক্ষতি ও করুণ পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী।
পাপের উন্মাদনা সাময়িক কিন্তু তার অনুতাপ দীর্ঘ মেয়াদি।
৬)
কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামী বই-পুস্তক পাঠ, নফল সালাত আদায় এবং বিভিন্ন ধরণের
দুআ, জিকির, তাসবিহ, ইস্তিগফার ইত্যাদি পাঠ করা।
৭)
নির্জন স্থান ত্যাগ করে মা, বাবা, ভাই, বোন, দ্বীনদার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে
অথবা ভালো কোনও আলেমের সান্নিধ্যে অথবা মসজিদে গিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করা। পরিবার
থেকে দূরে থাকলে তাদের সাথে ফোনে কথা বলা বা ফোনে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের খোঁজ-খবর
নেয়া অথবা দীর্ঘ দিন যোগাযোগ হয় নি এমন দীনী ভাই ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা।
৮)
করতে ভালো লাগে এমন কোনও দুনিয়াবি উপকারী কাজ করা, শরীর চর্চা করা বা বাইরে খোলাস্থানে
ঘুরতে যাওয়া। ঘরে চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকা ঠিক নয়। কারণ কথায় বলে: “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের
কারখানা।”
৯)
সিনেমা, নাটক ইত্যাদি দেখা, গান-বাদ্য শোনা বা অশ্লীল গল্প, উপন্যাস পাঠ করা থেকে দূরে
থাকা। কারণ এগুলো মনের সুপ্ত বাসনা ও কু প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে।
অনুরূপভাবে
যে সব উপকরণ হাতের কাছে থাকার কারণে পাপের দিকে মন ছুটে যায় সে সব উপকরণকে ঘর থেকে
বের করা বা নষ্ট করে ফেলা।
১০)
পাপের দিকে মনে প্রচণ্ড ঝোঁক সৃষ্টি হলেও ধৈর্য ধারণ করা এবং পাপ থেকে আত্ম সংবরণ করা
ফরয। কেউ পাপ কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা করার পর যদি আল্লাহর ভয়ে তা পরিত্যাগ করে তাহলে আল্লাহ
তাআলা তার আমলনামায় গুনাহের পরিবর্তে সওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত
হয়েছে,
وإنْ هَمَّ
بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ
يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا
اللهُ تَعَالَى
عِنْدَهُ حَسَنَةً
كَامِلةً
“আর
সে যদি কোনও পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে তাহলে আল্লাহ
তাআলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করে দেন।” (সহিহ বুখারী হা/৬৪৯১ ও সহিহ মুসলিম
হা/১৩১)
উল্লেখ্য
যে, পাপকর্ম হয়ে গেলে করণীয় হল, অনতিবিলম্বে অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া
(নিবিষ্ট চিত্তে দু রাকআত নফল সালাত পড়ার পর আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার বা ক্ষমা চেয়ে
দুআ করা অধিক উত্তম) এবং বেশি বেশি নেকির কাজ সম্পাদন করা। তাহলে আল্লাহ তাআলা সকল
গুনাহ মোচন করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ
আমাদেরকে শয়তানের প্ররোচনা এবং কু প্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়া
থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
শালী-দুলাভাই,
দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা
১৭
নভেম্বর, ২০১৯ by Asad Rony
প্রশ্ন:
আমি জানি, আমার ছোট বোনের স্বামী আমার জন্য নন মাহরাম। তার সাথে আমার মেসেঞ্জারে কথা
বলা জায়েজ আছে কি? তার সাথে কথা না বলার কারণে সে আমার বোনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে
চায় এবং কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এটা কি ঠিক? এ ক্ষেত্রে আমার কী করণীয়?
উত্তর:
শালী-দুলাভাই,
দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদি শ্বশুর গোষ্ঠির নন মহরাম নিকটাত্মীয়কে হাদিসের ভাষায়
‘মৃত্যু’ সমতুল্য বলা হয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ عُقْبَةَ
بْنِ عَامِرٍ،
أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى
الله عليه
وسلم قَالَ
”
إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ
عَلَى النِّسَاءِ
”
.
فَقَالَ رَجُلٌ
مِنَ الأَنْصَارِ
يَا رَسُولَ
اللَّهِ أَفَرَأَيْتَ
الْحَمْوَ قَالَ
”
الْحَمْوُ الْمَوْتُ
”
উকবা
ইবনে আমির রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: সাবধান! মহিলাদের সাথে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না।
আনসারদের
এক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, শ্বশুর গোষ্ঠির নিকটাত্মীয় (যেমন: দেবর-ভাবী,
শালী-দুলাভাই, বেয়ায়-বেয়াইন ইত্যাদি ব্যক্তিগণ যারা পরষ্পরের জন্য মাহরাম নয়) সম্পর্কে
আপনার মত কি?
তিনি
বললেন: “সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)।”
(বুখারী
ও মুসলিম। সুনান আত তিরমিজী [তাহকীক কৃত] হাদিস নম্বর: [1171] অধ্যায়ঃ ১০/ শিশুর দুধ
পান (كتاب الرضاع)
পরিচ্ছদ: ১৬. যার স্বামী অনুপস্থিত তার সাথে দেখা করা নিষেধ)
ইমাম
নওবী রাহ. বলেন:
فمعناه: أن
الخوف منه
أكثر من
غيره، والشر
يُتوقع منه
والفتنة أكثر
لتمكُّنه من
الوصول إلى
المرأة والخلوة
من غير
أن يُنكَر
عليه بخلاف
الأجنبي
(স্বামীর
নন মাহরাম নিকটাত্মীয়কে ‘মৃত্যু সমতুল্য’ বলার) অর্থ হল: অন্যদের তুলনায় তার ব্যাপারে
ভয় বেশি। তার মাধ্যমে ক্ষতি ও ফেতনার সম্ভাবনা অধিক। কারণে সে বিনা বাদ-প্রতিবাদে যেভাবে
একজন নারীর কাছে পৌঁছুতে পারে এবং একাকী তার কাছে যেতে সক্ষম হয় বাইরের অন্য কারো দ্বারা
তা সম্ভব নয়।” (শরহে মুসলিম-ইমাম নওবী রহ.)
সুতরাং
এ সকল নন মাহরাম নিকটাত্মীয়দের মাঝে পর্দা বিহীনভাবে দেখা-সাক্ষাৎ, অবাধে উঠাবসা, হাসি-কৌতুক,
দুষ্টুমি, নির্জনে বসে গল্প করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন, মেসেঞ্জার বা সরাসরি কথা
বলা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কথা বললেও কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠ পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ
তাআলা বলেন:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ
فَلَا تَخْضَعْنَ
بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ
الَّذِي فِي
قَلْبِهِ مَرَضٌ
وَقُلْنَ قَوْلًا
مَّعْرُوفًا
“যদি
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না।
ফলে কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।”(সূরা
আহযাব: ৩২)
আপনি
তার সাথে মেসেঞ্জারে কথা না বলার কারণে যদি আপনার বোন (তার স্ত্রী) এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ
করতে চায় বা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে এটা নি:সন্দেহে আল্লাহর বিধান অমান্য
করার শামিল। এতে সে দু দিক থেকে গুনাহগার হবে। যথা:
এক.
বিনা প্রয়োজনে নন মাহরাম মেয়ের সাথে কথা বলা।
দুই.
হালাল স্ত্রীর সাথে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কথা বন্ধ করা বা তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের হুমকি
দেয়া।
এগুলো
স্পষ্ট ফাসেকি কাজ। সুতরাং এমন ব্যক্তির শরিয়া বিরোধী দাবী পূরণ করে গুনাহের কাজে সহযোগিতা
করার সুযোগ নাই। অন্যের কারণে নিজে গুনাহগার হতে যাবেন না। বরং সে যদি আপনার সাথে ফোন
বা মেসেঞ্জারে কথা বলার জন্য জোরাজোরি করতে চায় তাহলে বিষয়টি আপনার বাবা-মা, পরিবার
বা যার মাধ্যমে সম্ভব তাকে জানিয়ে প্রতিকার করা উচিৎ।
আল্লাহ
হেফাজত করুন। আমীন।
(১৮৮) প্রশ্ন: কুরআনের
এর মধ্যে বিভিন্ন শব্দের সংখ্যাতাত্ত্বিক যে মিলের কথা বলা হয়ে থাকে-যেমন জান্নাত যে
কয়বার উল্লেখ আছে, জাহান্নাম সে কয়বার উল্লেখ আছে। ঠিক এভাবে পুরুষ-মহিলা, জন্ম-মৃত্যু,
শীত-গ্রীষ্ম এভাবে শব্দের সংখ্যা মিলের যে অলৌকিকতা বহুল প্রচলিত আছে। দয়া করে, এ সম্পর্কে
একটু বিস্তারিত বলবেন।
উত্তর:
এ
কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব ও জিন জাতির
নিকট অবতরণকৃত একটি স্পষ্ট মুজিযা ও বিস্ময়কর গ্রন্থ। সাহিত্যের বিচারে কুরআনের ভাষা
অত্যন্ত উঁচু অলঙ্কার পূর্ণ। কুরআন প্রদত্ত প্রতিটি তথ্যই চূড়ান্ত সত্য। এতে সামান্যতম
ভুল নাই বা সন্দেহের অবকাশ নাই। মানব ও জিন জাতি সকলে মিলে যদি কুরআনের মত একটি সুরা
তো দুরে থাক একটি আয়াতও রচনা করার চেষ্টা চালায় তবুও কিয়ামত পর্যন্ত তা সম্ভব নয়।
সুতরাং
কুরআনের সত্যতা প্রমাণের জন্য কুরআনের এই সংখ্যাতত্ত্বের কোন প্রয়োজন নাই। সালাফ বা
পূর্বসূরি আলেমদের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোন প্রচেষ্টা আছে বলে জানা নাই। তাই এ সংখ্যাতত্ত্ব
নিয়ে কৃত্রিম গবেষণা কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
তবে
কোন কোন আলেম সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণকে জায়েয বলেছেন কিছু শর্ত সাপেক্ষে। সেগুলো
হল:
শর্তাবলী:
১) সূরা, আয়াত, অক্ষর, হিযব, রুকু ইত্যাদি গণনার
ক্ষেত্রে তা অবশ্যই কুরআনের ‘রসমে উসমানী’ এর সাথেে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
২) এ সংখ্যা নির্ধারণ ও নাম্বারিং পদ্ধতি অবশ্যই
প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সূক্ষ্ম নীতিমালা ও সূত্র অনুসারে হতে হবে।
অপ্রচলিত
বা বৈজ্ঞানিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত নীতিমালা বা সূত্রের বিপরীত কোন নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. এই সংখ্যাতত্ত্ব ‘মুতাওয়াতির’ভাবে প্রচলিত কিরাআতের
উপর ভিত্তি করে হতে হবে। ‘শায’ কিরআত গ্রহণযোগ্য নয়।
৪. এমন সু দৃঢ়ভাবে অলৌকিকত্ব প্রমাণ করতে হবে যা
কোন মানুষ দ্বারা তৈরি করা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়।
কিন্তু
বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমানে পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল আর ইন্টারনেটে কুরআনের সত্যতা
ও অলৌকিকত্ব প্রমাণের জন্য অনেক মানুষ সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে অতি ব্যস্ততায় ডুবে রয়েছে।
তাদের অনেকেই এমন সব তত্ত্ব আবিষ্কার করছে যেগুলো আসলে কুরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণের
পরিবর্তে কুরআনকে অমুসলিমদের নিকট হাস্যকর বস্তুতে পরিণত করছে। (নাউযুবিল্লাহি মিন
যালিক)
যেমন,
কেউ কুরআনের আয়াত ও সংখ্যা দিয়ে আমেরিকার টুইনটাওয়ার ধ্বংসের তত্ত্ব আবিষ্কার করেছে,
কেউ ইজরাইলের পতনের ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছে, কেউ কিয়ামত দিবস কখন সংঘটিত হবে তার সুনির্দিষ্ট
দিন-তারিখের সন্ধান পেয়ে গেছে!! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
মোটকথা
হল, উপরোক্ত নীতিমালার যথাযথ অনুসরণে যদি কুরআনের সূরা, আয়াত, রুুক, পারা, হিযব, অক্ষর
ইত্যাদি সংখ্যা থেকে কুরআনের বিস্ময়কারিতা প্রমাণ করা সম্ভব হয় তাহলে তাতে দোষ নেই।
কিন্তু তা যেন অবশ্যই সঠিক ও নির্ভূল হয়। অন্যথায় কুরআনের বিস্ময়কারিতার পরিবর্তে কুরআনের
প্রতি অমুসলিম ও সন্দেহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সন্দেহও অবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিবে।
তাই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহু আলাম।
মহিলাদের কি আযান ও ইকামত
নেই?
(১৮৯) প্রশ্ন: যেহেতু
মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই সেহেতু পুরুষরা যেমন আযান-ইকামত দিয়ে নামাজ
শুরু করে তেমনি মহিলারাও কি আযান ও ইকামত দিবে (একাকী পড়লেও)?
কোনো কোনো আলেম বলেন
যে, মহিলারা যদি আযান শুনতে না পায় তাহলে তারাও আযান দিবে পরে ইকামত দিয়ে নামাজ শুরু
করবে (যদি আযান শুনতে পায় তাহলে শুধু ইকামত দিবে এবং গায়রে মাহরামের কণ্ঠ শুনার আশঙ্কা
থাকলে অল্প আওয়াজে দিবে) এবং তারা এই হাদিসটি উল্লেখ করে থাকে। হাদিসটা হল: ইবনে ওমর
রা.কে মহিলাদের আযান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন: “আমি কি
আল্লাহর জিকির করা থেকে মানুষকে নিষেধ করতে পারি?”
এ
ব্যাপারে সঠিক মাসআলাটি জানেত চাই।
উত্তর:
সঠিক
মতানুযায়ী সালাতের কিয়াম, কিরাআত, রুকু, সেজদা, হাশাহুদ, সালাম ইত্যাদি পদ্ধতিগতভাবে
নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু সালাত সংক্রান্ত কিছু বিষয়ের পার্থক্য
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন: আযান, একামত, মসজিদে গিয়ে জামাআতে শরিক হওয়া , জুমার
সালাত ইত্যাদি। অনুরূপভাবে নামাযে পর্দা, ইমামতি, ইমামের ভুল সংশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে
নারী-পুরুষের পার্থক্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
মহিলাদের জন্য আযান ও একামত:
মহিলাদের
জন্য আযান ও একামত নেই-তারা নিজেরা জামাআতে সালাত আদায় করুক অথবা একাকী করুক। এ ব্যাপারে
জুমহুর বা অধিকাংশ আলেম একমত। কারণ এর পক্ষে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা পাওয়া যায়।
যেমন:
আয়েশা রা. বলেন, كنا
نصلي بغير
إقامة “আমরা একামত ছাড়া নামায আদায় করতাম।”
(সুনানে বায়হাকী ২/১১৭)
উম্মে ওয়ারাকা বিনতে আব্দুল্লাহ আল হারিস আল আনসারিয়া
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
كانَ رسولُ
اللَّهِ صلَّى
اللَّهُ علَيهِ
وسلَّمَ يَزورُها
في بَيتِها
، وجعلَ
لَها مؤذِّنًا
يؤذِّنُ لَها
، وأمرَها
أن تؤمَّ
أهلَ دارِها
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাড়িতে দেখা করতে যেতেন এবং তার জন্য একজন মুআযযিন
ঠিক করে দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন, তিনি যেন তার বাড়ির লোকদের (মহিলাদের) ইমামতি করেন।”
(সহিহ আবু দাউদ, শাইখ আলবানী রহ. এটিকে হাসান বলেছেন)
এখানে
দেখা যাচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে ওয়ারাকা রা. কে ইমামতির
নির্দেশ দিলেও তাকে বা তার বাড়ির অন্য কোনো মহিলাকে আযান দেয়ার অনুমতি দেন নি। বরং
আলাদা পুরুষ মুআযযিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। সুতরাং যদি মহিলাদের আযান দেয়া বৈধ হত, তাহলে
আলাদা পুরুষ মুআযযিন নির্ধারণ করতেন না।
ইবনে উমর রা. থেকে দু ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এক
বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন: ليس على
النساء أذان
ولا إقامة
“মহিলাদের জন্য আযান ও একামত নেই।” (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী,ইবনে হাজার আসকালানী
আত তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলেছেন ১/৫২১)
অন্য
বর্ণনায় রয়েছে,
عن ابن
عمر أنه
سئل هل
على النساء
أذان فغضب،
وقال: أنا
أنهى عن
ذكر الله
ইবনে
উমর রা.কে মহিলাদের আযান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি রাগান্বিত হয়েছিলেন বলেছিলেন”
আমি কি আল্লাহর জিকির করা থেকে মানুষকে নিষেধ করতে পারি?” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা,
ওহাব ইবনে কায়সান হতে বর্ণিত, শাইখ আলবানী বলেন, এর সনদ ভালো-তামামুল মিন্নাহ পৃষ্ঠা
১৫৩)
তাহলে
দেখা যাচ্ছে, ইবনে উমর থেকে দু ধরণের মত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কথা হল, যদি
মহিলাদের আযান-একামত থাকত তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন হাদিস
পাওয়া যেত। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ার পরেও এ ব্যাপারে কোন হাদিস পাওয়া যায়
না।
♦ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন:
لا يشرع
للمرأة أن
تؤذن أو
تقيم في
صلاتها إنما
هذا من
شأن الرجال،
أما النساء
فلا يشرع
لهن أذان
ولا إقامة
بل يصلين
بدون أذان
ولا إقامة،
وعليهن العناية
بالوقت
“মহিলাদের
সালাতের জন্য আযান ও একমত কোনটাই শরিয়ত সম্মত নয়। এগুলো পুরুষদের কাজ। মহিলাদের জন্য
আযান ও একামত কোনটাই শরিয়ত সম্মত নয়। বরং তারা আযান-একামত ছাড়াই সালাত আদায় করবে। তারা
সালাতের সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে।” (বিন বায রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)
অবশ্য
মহিলাদের আযান ও ইকামতের বৈধতার পক্ষে একদল আলেম মত প্রকাশ করেছেন। আর হানাফি মাজহাবে
তা মাকরূহ। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের মতে মহিলাদের আযান
ও ইকামত শরিয়ত সম্মত নয়। এগুলো কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। আর উপরোল্লিখিত সাহাবীদের
বক্তব্য থেকে এমতই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। আল্লাহু আলাম।
ওযুর পর দু রাকআত নফল
সালাতের ফযিলত ও বিধিবিধান
(১৯০) প্রশ্ন: ওযুর দু
রাকআত সালাতের ফযিলত কি? এ সংক্রান্ত বিধিবিধানগুলো জানতে চাই।
আর অনেকের মুখে শুনেছি
যে, ‘ওযুর দু রাকআত সালাত না পড়লে নাকি ফরয ও সুন্নত সালাত পূর্ণাঙ্গতা পায় না।’ এই
কথাটার সত্যতা কতটুকু?
উত্তর:
নিন্মে
এ সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল: وبالله التوفيق
♦ ওযুর পরে দু রাকআত সালাত আদায় করা
অত্যন্ত ফযিলত পূর্ণ আমল:
ওযুর
পর দু রাকআত নফল সালাত আদায় কতটা ফযিলত পূর্ণ আমল তা বুঝা যায় নিন্মোক্ত হাদিসগুলো
থেকে:
◈◆
ওযুর পরে নিবিষ্ট চিত্তে দু রাকআত নফল সালাত আদায় করলে পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করে
দেয়া হয়:
উসমান
ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَوَضَّأَ
نَحْوَ وُضُوئِي
هَذَا ثُمَّ
قَامَ فَرَكَعَ
رَكْعَتَيْنِ لاَ
يُحَدِّثُ فِيهِمَا
نَفْسَهُ غُفِرَ
لَهُ مَا
تَقَدَّمَ مِنْ
ذَنْبِهِ
“যে
ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকআত সালাত আদায়
করবে, সে ব্যক্তির অতীতের সকল (সগিরা বা ছোট) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”
(সহিহ
বুখারী হা/১৬০, সহীহ মুসলিম, হা/৪২৬, অধ্যায়: তাহারাহ (পবিত্রতা) (كتاب الطهارة), পরিচ্ছদ: ওযু করার নিয়ম ও ওযুর
পূর্ণতা।)
ইবনে
হাজার আসকালানী রহ. বলেন: فيه استحباب
صلاة ركعتين
عقب الوضوء
“এ
হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ওযুর পরে দু রাকআত সালাত পড়া মুস্তাহাব (উত্তম)।”
◈◆
ওযুর করার পর দেহমন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করে দু রাকআত সালাত আদায় জান্নাতে
প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম:
উকবা
ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার ওপর উট চরানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা
এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথাটি শুনতে পেলাম:
مَا مِنْ
مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ
فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ
ثُمَّ يَقُومُ
فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ
مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا
بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ
إِلاَّ وَجَبَتْ
لَهُ الْجَنَّةُ
“যে
মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহমনকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নিবদ্ধ রেখে
দু রাকআত সালাত আদায় করে তার জন্য জান্নাত অবধারিত (ওয়াজিব) হয়ে যায়।”
উকবা
রা. বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম: বাহ! হাদিসটি কত চমৎকার!
তখন
আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন: আগের কথাটি আরও উত্তম। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি
উমর রা.।
তিনি
আমাকে বললেন: তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছ। রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর আগে বলেছেন:
مَا مِنْكُمْ
مِنْ أَحَدٍ
يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ
– أَوْ فَيُسْبِغُ
– الْوُضُوءَ ثُمَّ
يَقُولُ أَشْهَدُ
أَنْ لاَ
إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ وَأَنَّ
مُحَمَّدًا عَبْدُ
اللَّهِ وَرَسُولُهُ
إِلاَّ فُتِحَتْ
لَهُ أَبْوَابُ
الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ
يَدْخُلُ مِنْ
أَيِّهَا شَاءَ
,
“তোমাদের
মধ্য থেকে যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযু করে এ দুআ পড়বে:
أَشْهَدُ أَنْ
لاَ إِلَهَ
إِلاَّ اللَّهُ
وَأَنَّ مُحَمَّدًا
عَبْدُ اللَّهِ
وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ:
আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহু”
অর্থ:
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা
ও রসূল”। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৪১)
➤ উল্লেখ্য
যে, উক্ত দুআটি সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় একটু ভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তা হল:
أَشْهَدُ أَنْ
لاَ إِلَـهَ
إِلاَّ اللهُ
وَحْدَهُ لاَ
شَرِيْكَ لَهُ
وَأَشْهَدُ أَنَّ
مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُوْلُهُ.
উচ্চারণঃ
আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্’দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহা’ম্মাদান
আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থঃ
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক
নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর
বান্দা ও রাসূল।”
(মুসলিম
১/২০৯, মিশকাতঃ ২৮৯।)
◈◆
কেউ যদি ওযুর পর নিয়মিতভাবে কমপক্ষে দু রাকআত নফল সালাত আদায় করে তাহলে সে জান্নাতবাসী
হবে:
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ رضى
الله عنه
قَالَ قَالَ
رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله
عليه وسلم
لِبِلَالٍ عِنْدَ
صَلَاةِ الْغَدَاةِ
«يَا بِلَالُ
حَدِّثْنِي بِأَرْجَى
عَمَلٍ عَمِلْتَهُ
فِي الْإِسْلَامِ
منفعة فاني
فَإِنِّي سَمِعْتُ
اللليلة خشف
نَعْلَيْكَ بَيْنَ
يَدَيَّ فِي
الْجَنَّةِ » قَالَ
بلال مَا
عَمِلْتُ عَمَلًا
أَرْجَى عِنْدِي
منفعة من
أَنِّي لَمْ
أَتَطَهَّرْ طَهُورًا
تَامًّا فِي
سَاعَةِ مِنْ
لَيْلٍ أَوْ
نَهَارٍ إِلَّا
صَلَّيْتُ بِذَلِكَ
الطُّهُورِ مَا
كُتِبَ لِي
أَنْ أُصَلِّيَ
“আবু
হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন
ফজরের নামাযের পর বেলাল রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল, ইসলাম গ্রহণের পর তুমি যত
আমল করেছো তার মধ্যে তোমার কাছে সবচেয়ে আশা বঞ্চক আমল কোনটি? কেননা আজ রাতে (মিরাজের
রাতে) আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি।
বেলাল
রা. বললেন: আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো দেখছি না যে, দিনে বা রাতে যখনই আমি ওযু করি
তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায় করি। (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
♦ কতিপয় মাসায়েল:
১. দিন-রাতের যে কোনও সময় ওযুর পর দু রাকআত নফল
সালাত পড়া জায়েজ; এমনকি নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে হলেও:
দিন-রাতের
যে কোনও সময় ওযুর পর দু রাকআত নফল সালাত পড়া জায়েজ আছে-এমনকি নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে হলেও।
কারণ উপরোক্ত বেলাল রা. বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে: “দিনে বা রাতে যখনই আমি ওযু করি তখনই
যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায় করি।” সুতরাং এখান থেকে বুঝা যায়,
দিন-রাতের যখন ইচ্ছা তখনই এই নামায পড়া যাবে-যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে হয়।
এ
ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:
”
وَيُسْتَحَبُّ أَنْ
يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
عَقِبَ الْوُضُوءِ
وَلَوْ كَانَ
وَقْتَ النَّهْيِ
، وَقَالَهُ
الشَّافِعِيَّةُ ” انتهى
))الفتاوى الكبرى
5 / 345((
“ওযুর
পরে দু রাকআত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে হয়। শাফেয়ীরাও
এ কথা বলেছেন।” (ফাতাওয়া কুবরা ৫/৩৪৫)
২. ওযুর দু রাকআত নফরের সাথে তাহিয়াতুল মসজিদের
দু রাকআত এবং যোহরের পূর্বের দু রাকআত একসাথে নিয়ত করে পড়লে সবগুলোর জন্যই যথেষ্ট হবে:
এ
ব্যাপারে সৌদি আরবের বড় আলেমদের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া নিন্মরূপ:
”
إذا توضأ
المسلم ودخل
المسجد بعد
أذان الظهر
وصلى ركعتين
ناويا بهما
تحية المسجد
وسنة الوضوء
وسنة الظهر
أجزأه ذلك
عن الثلاث
؛ لقول
النبي صلى
الله عليه
وسلم : (إنما الأعمال بالنيات
، وإنما
لكل امرئ
ما نوى)
إلا أنه
يسن له
أن يصلي
ركعتين أخريين
إتماماً لسنة
الظهر الراتبة
القبلية ؛
لأن النبي
صلى الله
عليه وسلم
كان يحافظ
على صلاة
أربع ركعات
قبل الظهر
” انتهى .
“فتاوى اللجنة الدائمة”
(7 / 248-24
“কোন
মুসলিম যদি যোহরের আযানের পরে ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করে অত:পর তাহিয়াতুল মসজিদ, ওযুর
সুন্নত ও যোহরের সুন্নত একসাথে নিয়ত করে দু রাকআত সালাত আদায় করে তাহলে তা সবগুলোর
জন্য যথেষ্ট হবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সমস্ত আমল নিয়তের
উপর নির্ভরশীল। মানুষ তাই পায় যা সে নিয়ত করে।” তবে এর পরে আরও দু রাকআত সালাত পড়া
সুন্নত যেন, যোহরের পূর্বের চার রাকআত পূর্ণ হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যোহরের পূর্বে চার রাকআত সুন্নত নামাযের প্রতি যত্নশীল ছিলেন।” (ফাতাওয়া লাজনাহ
দায়েমাহ ৭/২৪ ও ২৪৮)
৩. ওযুর দু রাকআত নফল সালাত কি ওযু করার সাথেই পড়তে
হবে না কি বিলম্ব পড়লেও চলবে?
উত্তর:
উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে বুঝা যায়, ওযু করার পর সাথে সাথেই উক্ত দু রাকআত সালাত আদায়
করতে হবে। দীর্ঘ সময় বিলম্ব হলে তার সময় শেষ বলে গণ্য হবে।
৪. ওযুর দু রাকআত সালাত না পড়লে ফরয ও সুন্নত সালাত
পরিপূর্ণ হয় না’-এ কথা কি ঠিক?
না,
এ কথা ঠিক নয়। কারণ ওযুর পরে দু রাকআত সালাত নফল। আর নফল, সুন্নত, ফরয প্রতিটি স্বতন্ত্র।
একটি পূর্ণতার উপর আরেকটি নির্ভরশীল নয়। যে ব্যক্তি ওযুর দু রাকআত সালাত পড়বে সে সওয়াব
পাবে; যে পড়বে না সে সওয়াব পাবে না। এর সাথে অন্য নামাযের কোনো সম্পর্ক নাই। আল্লাহু
আলাম।।
আল্লাহ
তাআলা আমাদেরকে এই মৃতপ্রায় সুন্নতটিকে পুনর্জীবিত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
টয়লেটে ওযু করা এবং দুআ,
তাসবীহ, যিকির ইত্যাদি পাঠ করার বিধান
(১৯১) প্রশ্ন : বাথরুম
বা টয়লেটে অবস্থানকালে মুখে উচ্চারণ করে বা মনে মনে দুআ, তাসবীহ, যিকির, ইস্তিগফার
ইত্যাদি পাঠ করা জায়েয কি এবং বাথরুমের বেসিনে ওযু করলে কিভাবে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে?
উত্তর
:
টয়েলট
নাপাক ও নোংরা স্থান। তাই এখানে অবস্থান কালীন সময় মহান আল্লাহর প্রতি তাযিম ও সম্মানের
স্বার্থে মুখে উচ্চারণ করে আল্লাহর যিকির, দুআ, তাসবীহ-তাহলীল, ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত
ইত্যাদি সমীচীন নয়। এমনকি খোলা স্থানে পেশাব-পায়খানারত অবস্থায়ও এমনটি করা মহান আল্লাহর
শান ও মর্যাদার পরিপন্থী। যে কারণে টয়লেট বা গোসলখানায় সালাত আদায় করাও বৈধ নয়। যেমন:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي
سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ
رضي الله
عنه قَالَ
: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ : الْأَرْضُ
كُلُّهَا مَسْجِدٌ
إِلَّا الْمَقْبَرَةَ
وَالْحَمَّامَ – قال
شيخ الإسلام
رحمه الله
: إسناده جيد
. “اقتضاء الصراط
المستقيم” (ص
332) ، وصححه
الألباني في
“الإرواء” (1/320)
আবু
সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াইহিস সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহ বলেন:
“পৃথিবীর
সর্বত্র সালাত আদায় করা যাবে গোরস্থান ও বাথরুম বা টয়লেট ছাড়া।” (ইবনে তাইমিয়া রহ.
বলেন, এর সনদ জাইয়েদ (ভালো), ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম, পৃষ্ঠা নং ৩৩২ এবং শাইখ আলবানী
রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, আল ইরওয়া ১/৩২০)
(অবশ্য,
গোরস্থানে কেবল জানাযার সালাত আদায় করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে ভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে।)
সুতরাং
মুসলিম ব্যক্তির করণীয় হল, টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে টয়লেটে প্রবেশের দুআ পাঠ করা এবং
প্রবেশের পর চুপ থাকা। তবে সেখানে মনে মনে কোন বিষয় চিন্তা-ভাবনা করা, দীনী বিষয়, দুয়া-তাসবীহ
ইত্যাদি স্মরণ করলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। প্রখ্যাত তাবেঈ ইকরিমা রহ. বলেন,
لا يذكر
الله وهو
على الخلاء
بلسانه ولكن
بقلبه
“টয়লেটে
থাকা অবস্থায় মুখে উচ্চারণ করে যিকির করবে না তবে মনে মনে করতে পারে।” (আল আওসাত. ১/৩৪১)
তদ্রূপ
টয়লেটের বেসিনে ওযু করার প্রয়োজন হলে মনে মনে বিসমিল্লাহ পড়াই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ;
সশব্দে তা পড়া ঠিক নয়। আল্লাহু আলাম।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি:
এ
প্রসঙ্গে সৌদি আরবের বড় আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত স্থায়ী ফতোয়া কমিটি বলেছে:
من آداب
الإسلام أن
يذكر الإنسان
ربه حينما
يريد أن
يدخل بيت
الخلاء أو
الحمَّام ،
بأن يقول
قبل الدخول
: ” اللهم إني
أعوذ بك
من الخبث
والخبائث ” ،
ولا يذكر
الله بعد
دخوله ،
بل يسكت
عن ذكره
بمجرد الدخول
“ইসলামের শিষ্টাচার হল, মানুষ যখন টয়লেট বা গোসলখানায় প্রবেশ করবে তখন তাদের প্রতিপালককে
স্মরণ করবে এভাবে যে, প্রবেশের পূর্বে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي
أَعُوذُ بِكَ
مِنْ الْخُبْثِ
وَالْخَبَائِثِ
“আল্লাহুম্মা
ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস”
“হে
আল্লাহ, তোমার নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।” (বুখারি ও
মুসলিম)
প্রবেশ
করার পর মুখে যিকির পাঠ করবে না বরং প্রবেশ করার সাথে সাথে যিকির পাঠ করা করা বাদ দিয়ে
নীরবতা অবলম্বন করবে।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৯৩)
(১৯২) প্রশ্নঃ ইসলামের দৃষ্টিতে হাসি-মস্করা ও কৌতুক করার বিধান কী?
ইসলামে
হাসি-মস্করা, আনন্দ ও বিনোদনকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত সে জন্য মিথ্যা বলা বৈধ করা
হয় নি।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে হাসি-মস্করা করতেন, কিন্তু মিথ্যা পরিহার করতেন।
সাহাবীগণও হাসি-মস্করা করতেন, তবে মিথ্যা বর্জন করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ
بِالحَدِيثِ لِيُضْحِكَ
بِهِ القَوْمَ
فَيَكْذِبُ، وَيْلٌ
لَهُ وَيْلٌ
لَهُ»
‘‘যে
ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!’’
(তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৫৫৭; হাদীস নং ২৩১৫; আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৯৭; হাদীস নং ৪৯৯০)
❑ হাসির
ছলেও মিথ্যা বলা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ
فِي رَبَضِ
الْجَنَّةِ لِمَنْ
تَرَكَ الْمِرَاءَ
وَإِنْ كَانَ
مُحِقًّا، وَبِبَيْتٍ
فِي وَسَطِ
الْجَنَّةِ لِمَنْ
تَرَكَ الْكَذِبَ
وَإِنْ كَانَ
مَازِحًا وَبِبَيْتٍ
فِي أَعْلَى
الْجَنَّةِ لِمَنْ
حَسَّنَ خُلُقَهُ»
‘‘যে
ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বর্জন করে, মস্করা বা কৌতুক করতেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য জান্নাতের
মধ্যদেশে একটি বাড়ির জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’’ (আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৫৩; হাদীস
নং ৪৮০০)
❑ এখন প্রশ্ন
হল, মিথ্যা কাকে বলে? বা কিভাবে বললে মিথ্যা হবে?
এর
উত্তর হল, আপনি যদি নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করে এমন কথা বলেন বাস্তবে যা সে
করে নি বা বলে নি তাহলে তা মিথ্যা হবে। কিন্তু কাউকে নির্দিষ্ট না করে উদাহরণ হিসেবে
কথা বললে তা মিথ্যার অন্তর্ভূক্ত হবে না। যেমন এভাবে উদাহরণ পেশ করা যে, এক লোক এটা
করেছে বা এটা বলেছে তার পরিণতিতে এটা ঘটেছে। এমন উদহারণ আল্লাহ কুরআনে দিয়েছেন। আল্লাহ
কুরআনে বলেন:وَاضْرِبْ لَهُم
مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ
جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا
جَنَّتَيْنِ مِنْ
أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا
بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا
بَيْنَهُمَا زَرْعًا
“আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের
বাগান দিয়েছি।” (সূরা কাহাফ: ৩২)
আল্লাহ
আরও বলেন:
ضَرَبَ اللَّـهُ
مَثَلًا رَّجُلًا
فِيهِ شُرَكَاءُ
مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا
سَلَمًا لِّرَجُلٍ
هَلْ يَسْتَوِيَانِ
مَثَلًا
“আল্লাহ
এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়জন মালিক রয়েছে, আরেক
ব্যক্তির প্রভু মাত্র একজন-তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান?” (সূরা যুমার: ২৯)
আল্লাহ
তাআলা উক্ত আয়াতদ্বয়ে উদাহরণ হিসেবে দু জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা বাস্তবিক
কোন ঘটনা নয়। (আল্লামা উসাইমীন রহ. এর বক্তব্য থেকে সংক্ষেপিত)
মোটকথা,
দুটি শর্ত সাপেক্ষে হাসি-মস্করা করা জায়েয রয়েছে। যথা:
১) নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নিয়ে বা তার দিকে ইঙ্গিত
করে এমন কোন কথা বলা যাবে না যা সে বাস্তবে করে নি বা বলে নি। কেননা তা মিথ্যা। আর
ইসলামে মিথ্যা বলা মারাত্মক বড় অন্যায়; হাসির ছলে হলেও। সেটা মুখে বলে হোক বা লিখুনির
মাধ্যমে হোক বা অভিনয়ের মাধ্যমে হোক। সুতরাং তা দেখা বা পড়া কোনটাই ঠিক নয়।
২) শুধু মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলা
যাবে না। বরং বাস্তব সম্মত কথা বলে মাঝে-মধ্যে মানুষকে হাসানো বা মানুষের সাথে হাসি-মস্করা
করা জায়েয রয়েছে। কেননা, এটি উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভূক্ত। তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়।
অতিরিক্ত হাসি-মস্করায় মানুষের ব্যক্তিত্ব কমে যায় এবং অন্তর মরে যায়। আল্লাহু আলাম।
(১৯৩) মহিলাদের পর্দা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর?
প্রশ্ন:
★ক. মহিলার
জন্য নিজ বাড়িতে মাথায় কাপড় দিয়ে রাখা কি জরুরি?
★খ. অনেকে
বলে যে, মাথায় কাপড় না দিলে সংসারে বরকত হয়না, এটা কি ঠিক?
★গ. আমরা
মুসলিম মহিলাদের সামনে শরীরের কতটুকু খোলা রাখতে পারবো?
★ঘ. আর অমুসলিম
মহিলাদের সামনে কি পর্দা করা জরুরি? দয়া করে জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর:
ক.বাড়িতে থাকা অবস্থায় যদি তাকে কোন গাইরে মাহরাম
পুরুষ (যাদের সাথে বিবাহ বৈধ ) দেখার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার সামনে মাথা ও মুখ মণ্ডল
সহ সারা শরীর আবৃত রাখা আবশ্যক। আর কোন মাহরাম পুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকলে মাথা
ও মুখমণ্ডল ঢাকা আবশ্যক নয়।
খ. বাড়িতে থাকা অবস্থায় মাথায় কাপড় না দিলে
সংসারে বরকত হয় না-এটি একটি ভিত্তিহীন ও বাতিল কথা।
গ. মুসলিম মহিলার সামনে চেহারা, মাথা, গলা, দু হাতের
কবজী, দুহাতের বাহু, দু পায়ের পাতা ও দুপায়ের নলা ছাড়া সবার্ঙ্গ ঢেকে রাখা জরুরী।
ঘ. অমুসলিম মহিলার নিকট মুসলিম মহিলা পর্দা করা
জরুরি কি না এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে সঠিক কথা হল, এ ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম নারীর
একই বিধান। অর্থাৎ শরীরের যে সমস্ত অঙ্গ মুসলিম নারীর সামনে খোলা জায়েয আছে, অমুসলিম
মহিলার সামনেও সেগুলো খোলা জায়েয রয়েছে।
তবে
যদি আশংকা থাকে যে, কোন মহিলা তার স্বামীর নিকট এই মহিলার রূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করবে
তাহলে তার নিকট পর্দা করতে হবে। চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক।
গোসল সংক্রান্ত যে সকল
বিষয় প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জানা জরুরি
(১৯৪) গোসল ফরয (আবশ্যক) হওয়ার
কারণ সমূহ:
নিম্ন
লিখিত কারণগুলোর যে কোন একটির মাধ্যমে গোসল ফরয (আবশ্যক) হয়:
১)
স্বপ্নদোষ বা অন্য কোন কারণে (ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়-পুরুষ বা মহিলার) বীর্যপাত
হওয়া। (বুখারী ও মুসলিম)
২)
পুরুষ ও মহিলার লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলেই উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়- বীর্যপাত হোক
বা না হোক। (আহমাদ, মুসলিম)
৩)
মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস তথা মাসিক ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব বন্ধ হলে গোসলের
মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। । (সূরা বাকারা: ২২২)
৪)
যুদ্ধ ময়দানের শহীদ ব্যতীত মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে গোসল দেয়া জীবিতদের উপর ফরয।
৫)
ইহুদী বা খৃষ্টান বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল ফরয না কি মুস্তাহাব-
এ বিষয়ে মহামতি ইমামদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের অভিমত হল, কোন কাফের
ইসলামে প্রবেশ করলে তার জন্য গোসল করা ফরয। পক্ষান্তরে জুমহুর (অধিকাংশ) ইমাম তথা ইমাম
আবু হানিফা, মালেক ও শাফেঈ প্রমূখের অভিমত হল, ইসলাম গ্রহণের পর গোসল করা মুস্তাহাব;
ওয়াজিব নয় এবং এটি অধিক নির্ভরযোগ্য মত।
গোসলের পদ্ধতি:
প্রথমে
নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। লজ্জা স্থানে
পানি ঢেলে উহা পরিষ্কার করবে। অতঃপর পূর্ণরূপে ওযু করবে। মাথায় পানি ঢেলে আঙ্গুল চালিয়ে
চুল খিলাল করবে। যখন বুঝবে যে, চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছে গেছে তখন মাথায় তিন বার পানি
ঢালবে এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে। এ ক্ষেত্রে ডান পার্শ্ব থেকে কাজ আরম্ভ করবে।
মা
আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোসলের পদ্ধতি এভাবেই
এসেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
গোসলের ফরয দু’টি। যথা:
১.
নিয়ত করা।
খ.
সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা (মুখ ও নাখের ভেতর পানি পৌঁছানোও এর অন্তর্ভূক্ত)
যে সকল ক্ষেত্রে গোসল ফরয (আবশ্যক) নয় বরং মুস্তাহাব:
১)
জুম’আর দিন গোসল করা। (সহীহ মুসলিম)
২)
ঈদের দিন গোসল করা।
৩)
হজ্জ বা উমরাহ্র জন্য ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (জামে তিরমিযী, সুনানে দারাকুত্বনী)
৪)
হজ্জ বা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
৫)
সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে গোসল করা।
৬)
ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল মুস্তাহাব
(অধিক নির্ভরযোগ্য মতানুসারে)
গোসলের ক্ষেত্রে কতিপয় ত্রুটিঃ
১)
চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া।
উল্লেখ্য
যে, মহিলার জন্য চুলের ঝুঁটি খোলার প্রয়োজন নেই। তবে প্রতিটি চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানো
আবশ্যক। (মুসলিম)
২)
শরীরের প্রতিটি অংশে পানি দিয়ে তা ভালোভাবে ভেজানোর ব্যাপারে অলসতা করা।
৩)
গোসলে পানি অপচয় করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র এক সা’ তথা প্রায়
তিন লিটার পানি দ্বারা গোসল করতেন।
৪)
সবার সামনে হয়ে বেপর্দা হয়ে গোসল করা।
গোসল ফরয হয়েছে এমন নাপাক ব্যক্তির উপর যে সব কাজ
করা হারাম:
১)
সালাত আদায় করা।
২)
কা’বা ঘরের তওয়াফ করা।
৩)
কুরআন স্পর্শ করা (অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে)।
৪)
কুরআন তিলাওয়াত করা (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
৫)
মসজিদে অবস্থান করা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্)
গোসল
ফরয অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়া আর কোন কিছুই হারাম নয়। যেমন, ঘুমানো, রান্না-বান্না,
খাওয়া-দাওয়া, গৃরস্থালীর কাজ..ইত্যাদি।
কী করলে নিজের দোষত্রুটি
নিজের কাছেই ধরা পড়বে?
(১৯৫) প্রশ্ন: কী করলে
নিজের দোষত্রুটি নিজের কাছেই ধরা পড়বে? (নিজেকে সংশোধনের উপায়)
উত্তর:
মানুষের
দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা এবং অন্যকে সংশোধন করার পূর্বে নিজের দোষত্রুটি সংশোধন
করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অধিকাংশ মানুষ নিজে ভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকলেও অন্যকে
সংশোধন করাতে বেশি উদগ্রীব! এটি কোনো ঈমানদারের নিকট কাম্য নয়।
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ
بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ
أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ
تَتْلُونَ الْكِتَابَ
ۚ أَفَلَا
تَعْقِلُونَ
“তোমরা
কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব
পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?” (সূরা বাকারা: ৪৪)
আল্লাহ
তাআলা আরও বলেন:
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا
عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ
ۖ لَا
يَضُرُّكُم مَّن
ضَلَّ إِذَا
اهْتَدَيْتُمْ
“হে
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে
তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই।” সূরা মায়িদা: ১০৫)
সুতরাং
সংশোধনীটা শুরু করুন নিজেকে দিয়ে। আমি, আপনি সবাই যদি নিজেকে পরিবর্তন করি তাহলে পাল্টে
যাবে সমাজ ব্যবস্থা।
কিভাবে আমরা নিজেদের দোষত্রুটি খুঁজে পাবো?
সাধারণত:
আমরা অন্যের দোষত্রুটি সহজে দেখতে পেলেও নিজের দোষগুলো দেখতে পাই না! অথচ সামান্য একটু
চেষ্টায় তা সম্ভব। আর সে চেষ্টাটার নাম হল, আত্ম সমালোচনা।
কেউ
যদি আত্ম সমালোচনা করে অর্থাৎ নির্জনে-একান্ত একাকীত্বে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয়-বর্জনীয়,
সফলতা-ব্যর্থতা এবং দোষত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব-নিকাশ করে তাহলে তার কাছে
তার নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়বে। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে বিবেক নামক এটি
আয়না দিয়েছেন। মানুষ যদি সে আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করায় তাহলে তার মধ্যে কোথায় কী
সমস্যা আছে তা সে পরিষ্কার দেখতে পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
بَلِ الْإِنسَانُ
عَلَىٰ نَفْسِهِ
بَصِيرَةٌ
”বরং
মানুষ নিজেই নিজের ব্যাপারে খুব ভালো জানে।” (সূরা কিয়ামা: ১৪)
তাই
তো উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলতেন:
حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ
قَبْلَ أَنْ
تُحَاسَبُوا وَزِنُوا
أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ
أَنْ تُوزَنُوا
فَإِنَّهُ أَهْوَنُ
عَلَيْكُمْ فِي
الْحِسَابِ غَدًا
أَنْ تُحَاسِبُوا
أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ
، وَتَزَيَّنُوا
لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ
، يَوْمَئِذٍ
تُعْرَضُونَ لا
تَخْفَى مِنْكُمْ
خَافِيَةٌ
”তোমরা
নিজরা নিজেদের হিসাব নাও (পরকালে) হিসেবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে এবং তোমরা নিজেরা
নিজেদের মেপে নাও (পরকালে) তোমাদেরকে মাপার পূর্বে। কেননা, আজকের তোমার এই নিজে নিজে
হিসাব-নিকাশ করাটা আগামী কালকে হিসাব দেয়ার চেয়ে অনেক সহজ। আর তোমরা বড় পরীক্ষা দেয়ার
সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। (আল্লাহ বলেন):
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ
لا تَخْفَى
مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
“সেদিন
তোমাদেরকে (আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদান প্রদানের জন্য) পেশ করা হবে, তখন
তোমাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না” (সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত নং ১৮)।”
(দ্রষ্টব্য
: মুহাসাবাতুন নাফস-ইবনু আবিদ দুনিয়া, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২/ আয-যুহুদ লিল ইমাম আহমাদ,
১২০ পৃষ্ঠা/ আবু নাঈম-হিলইয়া, ১ম খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা/ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, ১৩
খণ্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা/ মুআত্তা ইমাম মালিক, ২য় খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা প্রভৃতি)
আরবিতে
একটা প্রবাদ আছে:
أبصر الناس
من نظر
إلى عيوبه
”সবচেয়ে
দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বা বিচক্ষণ মানুষ হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের দোষ-ত্রুটি দেখে।”
তাই
আমাদের কর্তব্য, নিজেদের দোষগুলো অনুসন্ধান করা এবং মৃত্যু দূত আমাদের দরজায় করাঘাত
করার পূর্বে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করা।
সত্যি
যদি প্রত্যেেই নিজেদের ভুল-ত্রুটি, অজ্ঞতা ও অন্যায়-অকর্ম অনুসন্ধান ও সংশোধনে ব্যস্ত
থাকতাম তাহলে আমাদের জীবনটা আরও সুন্দর হত, দুনিয়ায় সাফল্য ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করতে
পারতাম এবং মানুষের দোষ ধরা, সমালোচনা করা এবং অন্যের পেছনে লেগে থাকার সময় পেতাম না।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমীন।
আত্মসমালোচনা: গুরুত্ব
ও পদ্ধতি
(১৯৬) প্রশ্ন: নিজে নিজের
সমালোচনা ও পর্যালোচনার গুরুত্ব কতটুকু এবং কিভাবে করব?
উত্তর:
নিন্মে
আত্মসমালোচনার গুরুত্ব ও পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
ক. আত্মসমালোচনার গুরুত্ব:
আত্ম
সংশোধনের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল, আত্মসমালোচনা বা আত্মপর্যালোচনা। অর্থাৎ কেউ যদি
নির্জনে-একান্ত একাকীত্বে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয়-বর্জনীয়, সফলতা-ব্যর্থতা এবং
দোষত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব-নিকাশ করে তাহলে তার কাছে তার নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি
ধরা পড়বে।
আল্লাহ
তাআলা প্রতিটি মানুষকে বিবেক নামক এটি আয়না দিয়েছেন। মানুষ যদি সে আয়নার সামনে নিজেকে
দাঁড় করায় তাহলে তার মধ্যে কোথায় কী সমস্যা আছে তা সে পরিষ্কার দেখতে পায়।
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
بَلِ الْإِنسَانُ
عَلَىٰ نَفْسِهِ
بَصِيرَةٌ
“বরং
মানুষ নিজেই নিজের ব্যাপারে খুব ভালো জানে।” (সূরা কিয়ামাহ: ১৪)
তাই
তো উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলতেন:
حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ
قَبْلَ أَنْ
تُحَاسَبُوا وَزِنُوا
أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ
أَنْ تُوزَنُوا
فَإِنَّهُ أَهْوَنُ
عَلَيْكُمْ فِي
الْحِسَابِ غَدًا
أَنْ تُحَاسِبُوا
أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ
، وَتَزَيَّنُوا
لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ
، يَوْمَئِذٍ
تُعْرَضُونَ لا
تَخْفَى مِنْكُمْ
خَافِيَةٌ
“তোমরা
নিজরা নিজেদের হিসাব নাও (পরকালে) হিসেবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে এবং তোমরা নিজেরা
নিজেদের মেপে নাও (পরকালে) তোমাদেরকে মাপার পূর্বে। কেননা, আজকের তোমার এই নিজে নিজে
হিসাব-নিকাশ করাটা আগামী কালকে হিসাব দেয়ার চেয়ে অনেক সহজ। আর তোমরা বড় পরীক্ষা দেয়ার
সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। (আল্লাহ বলেন):
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ
لا تَخْفَى
مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
“সেদিন
তোমাদেরকে (আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদান প্রদানের জন্য) পেশ করা হবে, তখন
তোমাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না” (সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত নং ১৮)।”
(দ্রষ্টব্য
: মুহাসাবাতুন নাফস-ইবনু আবিদ দুনিয়া, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২/ আয-যুহুদ লিল ইমাম আহমাদ,
১২০ পৃষ্ঠা/ আবু নাঈম-হিলইয়া, ১ম খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা/ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, ১৩
খণ্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা/ মুআত্তা ইমাম মালিক, ২য় খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা প্রভৃতি)
আরবিতে
একটা প্রবাদ আছে:
أبصر الناس
من نظر
إلى عيوبه
“সবচেয়ে
দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বা বিচক্ষণ মানুষ হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের দোষ-ত্রুটি দেখে।”
তাই
আমাদের কর্তব্য, নিজেদের দোষগুলো অনুসন্ধান করা এবং মৃত্যু দূত আমাদের দরজায় করাঘাত
করার পূর্বে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করা।
খ. আত্মসমালোচনা বা পর্যালোচনা করার পদ্ধতি:
১. যে কোন আমল করার পূর্বে নিশ্চিত হওয়া যে, উক্ত
আমলটা শরিয়ত সম্মত কি না বা এ পেছনে সহিহ দলিল আছে কি না। দলিল না থাকলে তা হতে বিরত
থাকা। কারণ দলিল বিহীন আলম বিদআত হিসেবে আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হবে।
২. আমল করার সময় মনে মনে ভাবা যে, আমলটি করার পেছনে
আমার উদ্দেশ্য কি? আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন না কি লোকদেখানো? লোক দেখানো নিয়ত থাকলে
নিয়তকে খালিস ভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। কেননা, কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির
নিয়ত ছাড়া কোনো আমল করে তাহলে তা রিয়া হিসেবে আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হবে। (এটি
শিরকে আসগার বা ছোট শিরক)।
৩. আমল করার পর পর্যালোচনা করা যে, আমি কি আল্লাহর
হক যথাযথভাবে আদায় করতে পেরেছি? বা আমলটা কি যেভাবে করা দরকার সেভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে?
অত:পর এ ক্ষেত্রে যদি ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে তাহলে আল্লাহর নিকট তওবা করে তা সংশোধন
করা এবং পরবর্তীতে আরও সতর্ক হওয়া।
৪.এ ছাড়া সামগ্রিক জীবনের দোষত্রুটি, পাপাচার, আল্লাহর
নাফরমানী, দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয়-বর্জনীয় ইত্যাদি নিজে নিজে হিসাব করার পর দোষত্রুটি
সংশোধন করা, সে জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং আগামী দিনে আরও
যত্মসহকারে
ও সুন্দরভাবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
পরিশেষ
বলব, প্রতিটি মানুষ তার নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানে এবং প্রতিটি মানুষ তার বিবেকের
কাছে দায়বদ্ধ। সুতরাং মানুষ যদি নিজ কর্মের হিসাব-নিসাব নিজে নিজে করে আত্মশুদ্ধি করে
তাহলে নিশ্চিতভাবে আশা যায়, তার দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হবে ঠিক তেমনি আখিরাতের জীবন
হবে আরও বেশি সাফল্যমণ্ডিত এবং রক্ষা পাওয়া যাবে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে।
আল্লাহু
তাওফিক দান করুন। আমীন।
সন্ধ্যার সময় ঘরের দরজা
খোলা না কি বন্ধ রাখা উচিৎ
(১৯৭) প্রশ্ন: অনেকেই
বলে যে, সন্ধ্যার আযানের সময় ঘরের দরজা খোলা রাখতে হয়। কারণ তখন নাকি ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ
করে। কথাটি কি শরিয়ত সম্মত?
উত্তর:
“সন্ধ্যা
(মাগরিব) এর আযানের সময় দরজা খোলা রাখলে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে।” এটি হাদিস বিরুদ্ধ
বাতিল কথা। বরং হাদিসে শয়তানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সন্ধ্যা বা রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করতে
বলা হয়েছে। যেমন:
عَنْ جَابِرٍ
– رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ – قَالَ
: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ – صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ : إِذَا
كَانَ جِنْحُ
اللَّيْلِ أَوْ
أَمْسَيْتُمْ فَكُفُّوا
صِبْيَانَكُمْ ،
فَإِنَّ الشَّيْطَانَ
يَنْتَشِرُ حِينَئِذٍ
، فَإِذَا
ذَهَبَ سَاعَةً
مِنَ اللَّيْلِ
فَخَلَّوهُمْ وَأَغْلِقُوا
الْأَبْوَابَ وَاذْكُرُوا
اسْمَ اللَّهِ
، فَإِنَّ
الشَّيْطَانَ لَا
يَفْتَحُ بَابًا
مُغْلَقًا ،
وَأَوْكُوا قِرَبَكُمْ
وَاذْكُرُوا اسْمَ
اللَّهِ ،
وَخَمِّرُوا آنِيَتَكُمْ
، وَاذْكُرُوا
اسْمَ اللَّهِ
، وَلَوْ
أَنْ تَعْرِضُوا
عَلَيْهِ شَيْئًا
، وَأَطْفِئُوا
مَصَابِيحَكُمْ . مُتَّفَقٌ
عَلَيْهِ
জাবির
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন
রাতের আঁধার নেমে আসে অথবা বলেছেন:
যখন
সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের শিশুদেরকে (বাইরে যাওয়া থেকে) আটকে রাখো। কেননা সে সময় শয়তান
ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তাদেরকে ছেড়ে দাও এবং বিসমিল্লাহ
বলে ঘরের দরজাসমূহ বন্ধ করো। কারণ শয়তান বদ্ধদ্বার খুলতে পারে না। আর বিসমিল্লাহ পড়ে
তোমাদের মশকগুলো (চামড়ার তৈরি পানির পাত্র বিশেষ) এর মুখ বন্ধ করো এবং বিসমিল্লাহ বলে
তোমাদের পাত্রগুলোও ঢেকে রাখো। (ঢাকার কিছু না পেলে) কোন কিছু আড়াআড়িভাবে হলেও পাত্রের
উপর রেখে দাও। (আর ঘুমানোর সময়) বাতিগুলো নিভিয়ে দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)
আর
ফেরেশতাদের ঘরে প্রবেশের ব্যাপারে কথা হল, ঘরের দরজা খোলা থাক আর বন্ধ থাক যে কোনো
অবস্থায় নূরের তৈরি ফেরেশতাগণ মানুষের ঘরে প্রবেশ করতে পারে। তবে সহিহ হাদিস অনুযায়ী,
যে ঘরে ছবি, মূর্তি বা কুকুর থাকে সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাগণ প্রবেশ করে না।
অনুরূপভাবে
নির্দিষ্টভাবে ‘সন্ধ্যার সময় ফেরেশতাগণ ঘরে প্রবেশ করে’ এমন কথাও ভিত্তিহীন।
আল্লাহু
আলাম।
নির্জন ও জনমানবহীন এলাকায়
তিনজনের কমে ভ্রমণ নয়
(১৯৮) প্রশ্ন: সফর করার
সময় কি সর্বনিম্ন তিনজন থাকা জরুরি?
উত্তর:
মানবতার
সবচেয়ে কল্যাণকামী বন্ধু ও পথপ্রদর্শক প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনজনের কমে ভ্রমণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এ মর্মে নিন্মে দুটি হাদিস তুলে ধরা
হল:
❑ আমর ইবনে
শু‘আইব রা. থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ،
وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ،
وَالثَّلَاثَةُ رَكْبٌ
“একাকী
সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দু’ জন সফরকারী দু’টি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন
সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা।”
(সুনান
আবু দাউদ (তাহকিককৃত) অধ্যায়ঃ ৯/ জিহাদ (كتاب الجهاد),
পরিচ্ছদঃ একাকী সফর করা, হাদিস নম্বরঃ [2607]
এখানে
‘শয়তান’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাফরমান বা অবাধ্য। (ইবনে খুযাইমা রহ.)
❑ ইবনে উমর
রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
لَوْ يَعْلَمُ
النَّاسُ مَا
فِي الْوَحْدَةِ
مَا أَعْلَمُ
مَا سَارَ
رَاكِبٌ بِلَيْلٍ
وَحْدَهُ
“যদি
লোকেরা একা সফরে কী ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী সফর
করত না।”
(সহিহ
বুখারী, অধ্যায়: জিহাদ, অধ্যায়: নিঃসঙ্গ ভ্রমণ, হা/২৯৯৮)
এ
সকল হাদিসের আলোকে আলেমগণ বিজন মরু প্রান্তর বা নির্জন পথ দিয়ে একান্ত বাধ্য না হলে
এক বা দু ব্যক্তির ভ্রমণকে অ পছন্দনীয় বলেছেন। কেননা এতে তার/তাদের নানা সমস্যা, ক্ষয়-ক্ষতি
ও বিপদাপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে শয়তানের চক্রান্তে
ফেঁসে যাওয়ার ও বিপথগামী হওয়ার। বিশেষ করে রাতের বলায় বিপদের আশঙ্কা আরও বেশি থাকে।
তবে তিন বা ততোধিক ব্যক্তির একসাথে ভ্রমণ তুলনা মূলক নিরাপদ। অবশ্য একান্ত জরুরি হলে
অর্থাৎ যদি সফর সঙ্গী না পাওয়া যায় তাহলে ভিন্ন কথা।
◈
বর্তমান যুগের ভ্রমণ এবং হাদিসের প্রয়োগ:
বর্তমান
যুগে যে সব রাস্তায় প্রচুর মানুষ বা যানবাহন চলাচল করে অথবা যে সকল যানবাহনে একসাথে
অনেক মানুষ থাকে (যেমন: বাস, রেল, উড়োজাহাজ, পানি জাহাজ ইত্যাদি) সে ক্ষেত্রে একাকী
বা দুজন একসাথে ভ্রমণ করা উক্ত হাদিসের আওতায় পড়বে না। কারণ, তা মূলত: নি:সঙ্গ ভ্রমন
নয়। এ সব পথে চলাচলের সময় মানুষ বিপদে পড়লে সাধারণত: অন্যান্য মানুষ ও রাস্তার নিরাপত্তায়
নিয়োজিত পুলিশ ইত্যাদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।
আধুনিক
যুগে শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায়
বলেন:
”
ولعل الحديث
أراد السفر
في الصحارى
والفلوات التي
قلما يرى
المسافر فيها
أحدا من
الناس ،
فلا يدخل
فيها السفر
اليوم في
الطرق المعبدة
الكثيرة المواصلات
. والله أعلم
” انتهى
“সম্ভবত:
হাদিসের উদ্দেশ্য হল, মরু প্রান্তর বা নির্জন পথে ভ্রমণ করা-যেখানে একজন ভ্রমণকারী
খুব কমই অন্য কাউকে দেখতে পায়। সুতরাং বর্তমানে ব্যাপক জনবহুল ও প্রচুর যানবাহন চলাচল
করে এমন পথ দিয়ে ভ্রমণ করা এর আওতাভুক্ত নয়। আল্লাহু আ’লাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।”
(সিলসিলা সহিহাহ)
শাইখ
মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ. সহ অনেক আধুনিক যুগের আলেম প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত
করেন। আল্লাহু আলাম।
(১৯৯) দু’আর আদব এবং
কবুল হওয়ার উপায় সমূহঃ
নিম্নে
দুআর কতিপয় আদব এবং তা কবুল হওয়ার উপায় তুলে ধরা হল:
১. সফর অস্থায় দুআ করা:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির দু’আ কবুল হয়-এতে কোন সন্দেহ নেই।
যথা:
(ক) মজলুমের দু’আ,
(খ) মুসাফির ব্যক্তির দু’আ,
(গ) সন্তানের উপর পিতার বদ্ দু’আ। (সুনান তিরমিজী,অধ্যায়ঃ
পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ,আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ নামায।)
সফর
অবস্থায় দু’আ কবুল হওয়ার কারণ হল, ক্লান্তিবোধ, কষ্ট-পরিশ্রম ও একাকিত্বের কারণে মানুষের
মন সাধারণত: নরম থাকে। আর নরম দিলে দুআ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। কেননা অন্তরের বিনম্রতা
দু’আ কবুলের অন্যতম মাধ্যম।
২. বেশ-ভুষা ও পোশাক-পরিচ্ছদে মলিনতা প্রকাশ করা:
হাদীসে
বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “এক ব্যক্তি দীর্ঘ
সফর করে ধুলো মলিন অবস্থায় আল্লাহকে ডাকে।“ (সহীহ মুসলিম, হা/1015, আবু হুরাইরা রা.
হতে বর্ণিত)
তিনি
আরও বলেন,
رُبَّ أَشْعَثَ
مَدْفُوعٍ بِالْأَبْوَابِ
لَوْ أَقْسَمَ
عَلَى اللَّهِ
لَأَبَرَّهُ
“উষ্ক-খুষ্ক
ও এলোমলো চুল বিশিষ্ট এমন অনেক আল্লাহর বান্দা আছেন, যাকে বিভিন্ন দরজা থেকে ফিরিয়ে
দেয়া হয়।( অর্থাৎ সে লোকসমাজে খুবই অবহেলিত ও গুরুত্বহীন মানুষ) অথচ তিনি যদি আল্লাহর
উপর কসম কসম দিয়ে কোন কথা বলেন তবে আল্লাহ তা পূরণ করেন।” (সহীহ মুসলিম, আবু হুরায়রা
রা. হতে বর্ণিত)
৩. দুআয় দু হাত উত্তোলন করা:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ
حَيِيٌّ كَرِيمٌ
يَسْتَحْيِي إِذَا
رَفَعَ الرَّجُلُ
إِلَيْهِ يَدَيْهِ
أَنْ يَرُدَّهُمَا
صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ
“নিঃসন্দেহে
আল্লাহ তা’আলা অতি মহানুভব ও লজ্জাশীল। বান্দা যদি দু’হাত তুলে তাঁর নিকট প্রার্থনা
করে তবে নিরাশার করে শুণ্যহস্তে তাকে ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন।” (তিরমিজী, আবু
দাউদ, ইবনে মাজাহ, ইমাম আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামে, ১/১৭৫৭, আত
তারগীব ওয়াত তারহীব,২/ ২৭২)।
তাছাড়া
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তিস্কা বৃষ্টি প্রার্থনা ও বদরের প্রান্তরে
হাত তুলে দু’আ করেছেন।
হাত তুলে দু’আ করার কয়েকটি
পদ্ধতি রয়েছে তম্মধ্যেঃ
শুধুমাত্র তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করা। খুবতা
দেয়ার সময় মিম্বারে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতেন।
দু’হাত উত্তোলন করে হাতের পৃষ্ঠদেশ কিবলার দিকে রাখা।
ইস্তেকার দু’আয় এ পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত
হয়েছে।
দু
হাত উত্তোলন করে হাতের পৃষ্ঠদেশ আসমানের দিকে রাখা। এ পদ্ধতি আনাস রা. থেকে বর্ণিত
হয়েছে।
৪.
নিতান্ত করুণভাবে একই দুয়া বার বার করা এবং মজবুতভাবে চাওয়া:
আবদুল্লাহ্
ইবনে মাসউদ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দু’আ করতেন তখন এক দু’আ
তিনবার বলতেন। যখন কোন কিছু চাইতেন তখন তিন বার চাইতেন।
৫. পানাহার এবং পোশাক-পরিচ্ছদ হালাল উপার্জন থেকে
হওয়া:
খাদ্য-পানীয়
ও পোশাক-পরিচ্ছদ হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে হওয়া দু’আ কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত। এই
কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ومطعمُه حرامٌ
، ومشربُه
حرامٌ ،
وملبَسُه حرامٌ
، وغُذِيَ
بالحرام . فأَنَّى
يُستجابُ لذلك
؟
“কিভাবে
তার দুআ কবুল হবে? তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম? (সহীহ মুসলিম,
হা/1015, আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত)
আল্লাহু
আলাম।
বিউটি পার্লার খোলা বা
তাতে কাজ করার বিধান
(২০০) প্রশ্ন: স্বামীর
আর্থিক অনটনের কারণে তাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে কোন মহিলার জন্য বিউটি পার্লার খোলা
বা তাতে কাজ করা বৈধ কি?
উত্তর:
বিউটি
পার্লারগুলোতে সাধারণত নানা ধরণের শরিয়া বিরোধী ও গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়। এ সকল শরীয়ত
বিরোধী কার্যক্রম থেকে মুক্ত হলে (শর্ত সাপেক্ষে) মহিলাদের বিউটি পার্লার খোলা বা তাতে
কাজ করা জায়েজ রয়েছে।
যেমন:
১)
কেবল মেয়েরাই মেয়েদের জন্য কাজ করবে। সেখানে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
২)
সাজসজ্জার ক্ষেত্রে ইসলামে নারীদের জন্য যে সকল বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো থেকে
অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যেমন: ভ্রু প্লাগ, মাথায় কৃত্রিম চুল সংযোজন, শরীরে উল্কি
অংকন, দাঁত চিকন করা, আতর সুগন্ধি লাগানো, মাথার উপরে উঁচু করে চুলের খোপা বাধা ইত্যাদি।
৩)
কৃত্রিম নখ, ভ্রূ, ও চোখে কালার লেন্স ইত্যাদি না লাগানো। কেননা একদিকে এগুলো মানবদেহের
জন্য ক্ষতিকারক অন্যদিকে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর।
৪)
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক বা হারাম উপাদান থেকে তৈরি কেমিক্যাল ও রং ব্যবহার না করা।
৫)
মহিলাকে সাজানোর সময় তার লজ্জা স্থানের দিকে না তাকানো বা তার স্পর্শকাতর স্থান স্পর্শ
না করা।
৬)
কাফের-ফাসেক নায়িকা-গায়িকা বা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে মাথার চুল খাটো
না করা। (এই উদ্দেশ্য না হলে প্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল ছোট করা জায়েজ রয়েছে)
৭)
যে সকল মহিলা পর্দা বিহীন ভাবে চলাফেরা করে বা যারা বোরকা পরে কিন্তু মুখমণ্ডল খোলা
রাখে তাদের অঙ্গসজ্জা না করা। কেননা এতে তাদেরকে এ সকল গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়-
যা ইসলামে নাজায়েজ।
৮)
ফেতনা থেকে মুক্ত থাকা।
উপরোক্ত
শর্তাবলী সাপেক্ষে মহিলাদের জন্য বিউটি পার্লার খোলা, তাতে কাজ করা এবং এই উদ্দেশ্যে
ঘর ভাড়া দেওয়া ইত্যাদিতে কোন বাধা নেই। কিন্তু এসকল শর্তাবলী লঙ্ঘন হলে অবশ্যই তা
বৈধ নয়।
দুর্ভাগ্য
হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই সকল শর্তাবলী পালন করে বিউটি পার্লার চালানো প্রায় অসম্ভব।
সুতরাং
স্বামীর আর্থিক দুর্বলতায় একান্ত জরুরি অবস্থায় তাকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে (স্বামী
না থাকলে নিজের বা পরিবারের আর্থিক দুর্গতি লাঘবের উদ্দেশ্যে) একজন মহিলার অর্থ কামানোর
জন্য এই পথে না গিয়ে ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে ভিন্ন বৈধ উপায় অনুসন্ধান
করা উচিত। যেমন: পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে এবং ফিতনা থেকে দূরে থেকে কেবল মহিলা অঙ্গনে
হালাল জব করা, বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশে কেবল ছাত্রীদের জন্য কোচিং করা, বাড়িতে হাঁসমুরগি
বা গবাদিপশু পালন করা, অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ধরণের হালাল ব্যবসা করা, ফ্রিল্যান্সিং
করা, হস্তশিল্প, পোশাক তৈরি, কাপড় সেলাই ইত্যাদি কাজ করা। আল্লাহু আলাম
আল্লাহ
সাহায্য করুন। আমীন।
মহিলাদের যুদ্ধে অংশ
গ্রহণ কি জায়েজ যদি সেনাবাহিনীর সৈনিক প্রয়োজন হয়
(২০১) প্রশ্ন: মহিলাদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ কি জায়েজ যদি
সেনাবাহিনীর সৈনিক প্রয়োজন হয়?
উত্তর:
মহিলাদেরকে
কোনো অবস্থায় সৈনিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া (Recruiting) জায়েজ নাই। অবশ্য তারা যদি আহত
যোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে সৈনিকদের সাথে বের হয় তাহলে তাতে অসুবিধা
নেই। কিছু কিছু মহিলা (মাহরাম সহকারে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে
যুদ্ধে গিয়েছিলেন পানির ব্যবস্থা, আহতদের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ ও সেবা-শুশ্রুষা করার
উদ্দেশ্যে।
কিন্তু
তাদেরকে সৈনিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া জায়েজ নাই। এটা কাফেরদের কাজ; মুসলিমদের কাজ নয়। যুদ্ধ-শান্তি
কোনো অবস্থায় মহিলাদেরকে সৈনিক বানানো জায়েজ নাই। মহিলারা পর্দায় থাকবে। তারা দুর্বল।
তারা ধৈর্য, দৃঢ়তা ও শক্তিমত্তায় পুরুষদের মত ক্ষমতাশীল নয়।
তারা
দুর্বল হওয়ায় তাদের দ্বারা মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় না। হাদিসে এসেছে, “সে জাতী
সফল হবে না যারা তাদের দায়িত্ব নারীদের হাতে অর্পণ করেছে।” এটা সকল প্রকার দায়িত্বের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবশ্য কেবল নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় হলে ভিন্ন কথা। কেবল মহিলা
সংক্রান্ত বিষয়ে তাদেরকে দায়িত্বশীল বানানো হলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তারা
পুরুষদের উপর কর্তৃত্ব করবে বা পুরুষদের সাথে অংশ গ্রহণ করবে বা পুরুষদের সাথে মিলেমিশে
থাকবে কিংবা তারা পুরুষদের কাজগুলো সম্পাদন করবে…এটা বৈধ নয়।
জিহাদ,
অস্র ধারণ, যুদ্ধ করা এগুলো পুরুষদের কাজ। মহিলারা যদি এগুলো করে তাহলে তারা পুরুষদের
সাদৃশ্য অবলম্বন করল। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষবেশী নারীদেরকে
অভিসম্পাত করেছেন এবং ঐ সকল নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন
করে।
নারীদের পুলিশ ও আর্মি
হিসেবে চাকুরী করার বিধান
(২০২) প্রশ্ন:
মহিলার জন্য পুলিশ হিসেবে কাজ করা কি জায়েজ না কি হারাম?
উত্তর:
الحمد لله
والصلاة والسلام
على رسول
الله وعلى
آله وصحبه،
أما بعـد
মহিলার
জন্য দ্বীনের দিক দিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত ও নিরাপদ হল, বাড়িতে অবস্থান করা-যেমনটি মহান
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
وَقَرْنَ فِي
بُيُوتِكُنَّ وَلَا
تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ
الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
“আর
তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করবে; মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।”
(সূরা আহযাব: ৩৩)
এতদসত্বেও
যদি তার কাজ করার দরকার হয় এবং সমাজ তার প্রয়োজন অনুভব করে তাহলে সে এমন কাজ করতে পারে
যা তার স্বভাব-প্রকৃতি ও নারীত্বের জন্য উপযোগী। যেমন: মহিলাদের জন্য ডাক্তার, গার্লস
স্কুলের শিক্ষিকা ইত্যাদি। কিন্তু পুলিশ বিভাগে কাজ করার ব্যাপারে কথা হল, এটি এমন
একটি পেশা যেখানে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ ঘটে। কারণ অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তারা পুরুষ।
তাছাড়া পুলিশি কার্যক্রম, তদন্ত ইত্যাদি সাধারণত পুরুষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেই হয়ে থাকে।
এ কারণে আমরা তা বৈধ মনে করি না। কারণ এতে করে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয় অথচ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ফিতনার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিন ভাবে সতর্ক করেছেন।
◆
সহিহ বুখারী ও মুসলিমে উসামা বিন যায়েদ রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন:
ما تركت
بعدي فتنة
أضر على
الرجال من
النساء
“আমার
পরে আমি পুরুষদের জন্য মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর ফিতনা রেখে যাই নি।” (বুখারী ও মুসলিম)
◆
আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
اتقوا الدنيا
واتقوا النساء,
فإن أول
فتنة بني
إسرائيل كانت
في النساء
وقد سألت
أمنا عائشة
رضي الله
عنها فقالت
: يا رسول
الله هل
على النساء
جهاد؟ قال:
نعم جهاد
لا قتال
فيه؛ الحج
والعمرة رواه
أحمد وأصله
في البخاري
“তোমরা
দুনিয়ার (ধোঁকা) থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিতনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ইসরাইলের সর্বপ্রথম
ফিতনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।
আমি
আমাদের মা-জননী আয়েশা রা.কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, (আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহিস সালাম কে জিজ্ঞেস করলাম): হে আল্লাহর রাসূল, মহিলাদের জন্য কি জিহাদ আছে?
তিনি
বললেন: “হ্যাঁ, এমন জিহাদ যাতে লড়াই নেই। তা হল হজ ও ওমরা।” (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ,
হা/৩৯১০, হাদিসটি সহিহ। হাদিসের মূল বক্তব্য সহিহ বুখারীতেও বর্ণিত হয়েছে)
এ
কথায় কোনো সন্দেহ নাই যে, পুলিশ প্রশাসনে কর্মরত একজন মহিলার সর্বনিম্ন পরিস্থিতি হবে,
পর্দা হীনতা। সাথে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা-যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান
আল্লাহ নিকট দুআ করি, তিনি যেন মুসলিম নারীদেরকে তাদের বাড়িতে ফিরে আসার তাওফিক দান
করেন এবং মুসলিম উম্মাহর অবস্থার পরিবর্তন করেন। নিশ্চয় তিনি এর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহু
আলাম।
(২০৩) সামাজিক অবক্ষয়ে
ক্যাসিনোর ভয়াবহতাঃ
ভূমিকা:
প্রিয়
পাঠক, মানুষ সামাজিক জীব। মহান আল্লাহ মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এই
সামাজিক জীবন যাপনে মানুষ নানারকম সুবিধা-অসুবিধা ভোগ করে থাকে আর এই সুবিধা-অসুবিধার
ক্ষেত্রেও এই সমাজেরই এক শ্রেণির মানুষের হাত থাকে। ভাল মানুষগুলো সমাজকে ভাল কিছু
উপহার দেয়ার চেষ্টা করে। বিপরীতে মন্দ লোকগুলো সমাজে মন্দ বিস্তারের চেষ্টা করে।
আজকের
এই পরিসরে আমি এই লিখনিতে তুলে ধরতে চাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পাপাচারের এক গোপন
জগত ক্যাসিনো নিয়ে।
❑ ক্যাসিনো কি?
মূলত:
ক্যাসিনো (Casino) শব্দটি ইংরেজি যার বাংলা অর্থ হয়: নাচ বা জুয়াঘর।
মুক্ত
বিশ্বকোষ-উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে:
“ক্যাসিনো
হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের জুয়া খেলার একটি নির্দিষ্ট স্থান যাকে বাংলায় জুয়ার আড্ডা বা
আসর বলা যায়। কিন্তু সেটা হয় সুবিশাল পরিসরে। সাধারণত ক্যাসিনো এমনভাবে বানানো হয়
যে এর সাথে কিংবা পাশাপাশি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, আনন্দভ্রমণ জাহাজ এবং অন্যান্য
পর্যটন আকর্ষণ থাকে৷ কিছু কিছু ক্যাসিনোয় সরাসরি বিনোদন প্রদান যেমন স্ট্যান্ড আপ
কমেডি, কনসার্ট, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।”
❑ সামাজিক অবক্ষয়ে ক্যাসিনো:
এটি
আধুনিক যুগের এলিটদের বিলাসিতার একটি মাধ্যম। ক্যাসিনোর মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বিশেষকরে
আয়োজক এবং ব্যবস্থাপকরা গাণিতিক হারে লাভবান হচ্ছে। পক্ষান্তরে অধিকাংশ গ্রাহক সব হারিয়ে
পথে নেমে যাচ্ছে, এতেকরে সমাজের মানুষের মাঝে সামাজিক বৈষম্যতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং এক
পর্যায়ে পুঁজি হারা লোকগুলো নানান রকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে সমাজের শান্তিময় পরিবেশকে
বিনষ্ট করছে।
❑ ইসলামের আলোকে ক্যাসিনো:
◈
ইসলামের দৃষ্টিতে ক্যাসিনা বা জুয়া খেলা হারাম:
ইসলাম
শান্তির ধর্ম। অতএব মানব জীবনের প্রতিটি স্তরেই ইসলাম শান্তির দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
তাই সমাজ অবক্ষয়ের এই ক্যান্সারকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।
মহাগ্রন্থ
আল কুরআনের সূরা মায়েদায় এরশাদ হয়েছে:
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا
إِنَّمَا الْخَمْرُ
وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ
وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ
مِّنْ عَمَلِ
الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ
لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
إِنَّمَا يُرِيدُ
الشَّيْطَانُ أَن
يُوقِعَ بَيْنَكُمُ
الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ
فِي الْخَمْرِ
وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ
عَن ذِكْرِ
اللَّـهِ وَعَنِ
الصَّلَاةِ ۖ
فَهَلْ أَنتُم
مُّنتَهُونَ
“হে
মুমিনগণ, যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য
বৈ তো নয় । অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে করে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।
শয়তান
তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে
এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনো কি নিবৃত্ত
হবে?” (সূরা মায়েদা: ৯০ ও ৯১)
◈
ক্যাসিনোর জন্য আহ্বান করা একটি কাফফারা যোগ্য অপরাধ:
সহীহ
বুখারী এবং মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
قالَ لِصاحِبِهِ:
تَعالَ أُقامِرْكَ،
فَلْيَتَصَدَّقْ
“যে
ব্যক্তি তার সাথীকে এই বলে ডাকবে যে আস, আমি তোমার সাথে জুয়া খেলি-সে যেন (কাফফারা
সরূপ) সদকা করে।” (বুখারী: ৪৮৬০ মুসলিম: ১৬৪৭)
◈
ক্যাসিনো খেলা শুকরের রক্তে হাত রক্তাক্ত করার অন্তর্ভুক্ত:
সুলাইমান
বিন বুরাইদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
مَنْ لَعِبَ
بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا
صَبَغَ يَدَهُ
فِي لَحْمِ
خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ
“যে
ব্যক্তি লুডু দিয়ে খেলা-ধুলা করল সে যেন স্বীয় হাতকে শুকরের রক্তে রক্তাক্ত করল।”
(মুসলিম: ২২৬০ আবু দাউদ: ৪৯৩৯ ইবনে মাজাহ: ৩৭৬৩)
উল্লেখ্য
যে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: “দাবা এবং লুডু খেলা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত (ইবনে আবি
শাইবা)
❑ সাহাবীগণের
দৃষ্টিতে ক্যাসিনোঃ
●
ক. আবদুল্লাহ ইবনে ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যদি কাউকে জুয়া খেলতে দেখতেন তাহলে তাকে
প্রহার করতেন এবং জুয়ার সরঞ্জাম ভেঙ্গে চুরমার করে দিতেন। (সহীহুল আদাবিল মুফরাদ-৯৬০)
●
খ. ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) শাসনামলে তিনি মিম্বরে আরোহণ করে ঘোষণা করলে যে হে মানব
মণ্ডলী কারো ঘরে যদি জুয়ার সরঞ্জাম থাকে সেযেন তা বাহিরে বের করে ভেঙ্গে ফেলে। (বাইহাকী
১০খণ্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা)
●
গ. আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ঘর থেকে বের হয়ে কাওকে জুয়া খেলতে দেখলে তাকে সকাল থেকে
নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্দি করে রাখতেন।(আদাবুল মুফরাদ-১২৬৮)
❑ বাঁচার উপায়:
◉
আল্লাহভীরুতা:
মানুষের
মাঝে যখন আল্লাহ ভীরুতা আসবে তখন সে সর্বপ্রকার অন্যায় এবং অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত
রাখবে।
◉
সময়কে কাজে লাগানো:
অবসর
সময়কে কোন না কোন কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। কেন না অবসর সময়ে শয়তান মানুষকে বিপথগামী
করা চেষ্টা করে। তাই এসময়টাকে কোন না কোন ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হবে।
◉
দায়িত্বশীলদের সজাগ দৃষ্টি: যারা সমাজের অভিভাবক তারা স্বীয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন
করা।
❑ উপসংহার:
প্রিয়
পাঠক! এই পৃথিবী আমাদের ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা। তাই আমাদের উচিত আমাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা
তথা পরকালকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং পাপের পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সর্বপ্রকার
পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করা।
আল্লাহ
তাওফিক দান করুন। আমীন।
(২০৪) প্রশ্ন: আমি শুনেছি,
প্রত্যেক মানুষের সাথে একটি করে জিন থাকে। তাকে না কি ‘কারীন জিন’ বল হয়। আরও বলা হয়ে
থাকে: ‘কোন ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে সে সাথী হারা হয়ে পড়ে এবং মৃত ব্যক্তির রূপ নিয়ে
মানুষকে ভয় দেখায়।” এটা কতটুকু সঠিক? আর যাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাদের কারীন জিন
এর অবস্থান কোথায় থাকে?
আর
কারীন জিন এর কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে কি সকাল সন্ধ্যার আমলেই যথেষ্ট?
উত্তর:
কারীন
((قرين)) আরবি শব্দ। এর অর্থ হল: সঙ্গী, সাথী
ও সহচর।
কুরআন
ও সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, প্রতিটি মানুষের নিকট একজন করে জিন-শয়তান নিযুক্ত
করা আছে। তার কাজ মানুষকে পথভ্রষ্ট করা, অন্যায়, অশ্লীল ও কুকর্মে প্ররোচিত করা এবং
ভালো কাজে নিরুৎসাহিত করা বা বাধা দেয়া। একেই কারীন বা সহচর শয়তান বলা হয়।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটও এই জিন-শয়তান ছিল কিন্তু সে ইসলাম কবুল করেছিলো।
যার কারণে সে নবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুমন্ত্রণা দিতে সক্ষম হত
না। যেমন:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা.
হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
ما مِنكُم
مِن أحَدٍ،
إلَّا وقدْ
وُكِّلَ به
قَرِينُهُ مِنَ
الجِنِّ قالوا:
وإيَّاكَ؟ يا
رَسولَ اللهِ،
قالَ: وإيَّايَ،
إلَّا أنَّ
اللَّهَ أعانَنِي
عليه فأسْلَمَ،
فلا يَأْمُرُنِي
إلَّا بخَيْرٍ.
غَيْرَ أنَّ
في حَديثِ
سُفْيانَ وقدْ
وُكِّلَ به
قَرِينُهُ مِنَ
الجِنِّ وقَرِينُهُ
مِنَ المَلائِكَةِ.
“তোমাদের
মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার সহচর জিন (শয়তান) নিযুক্ত করে দেয়া হয়নি।
সাহাবীগণ
জিজ্ঞেস করলেন: আপনার সাথেও কি হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি
বললেন: আমার সাথেও তবে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ফলে সে ইসলাম
গ্রহণ করেছে ( বা আমার অনুগত হয়ে গেছে)। ফলে সে আমাকে কেবল ভাল কাজেরই পরামর্শ দেয়।”
সুফিয়ানের
বর্ণনায় আছে:
وقد وكِّل
به قرينُه
من الجنِّ
وقرينُه من
الملائكة
“(তোমাদের
মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে) তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেয়া
হয় নি।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৮২৪]
কুরআনেও আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন মানুষের সার্বক্ষণিক
সঙ্গী
এই
শয়তান এবং মানুষের মাঝে বাক-বিতণ্ডার কথা উল্লেখ করেছেন:
قَالَ قَرِينُهُ
رَبَّنَا مَا
أَطْغَيْتُهُ وَلَكِنْ
كَانَ فِي
ضَلَالٍ بَعِيدٍ
* قَالَ لَا
تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ
وَقَدْ قَدَّمْتُ
إِلَيْكُمْ بِالْوَعِيدِ
“তার
কারীন বা সঙ্গী শয়তান বলবে: হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি।
বস্তুত: সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেন: আমার সামনে বাকবিতণ্ডা
করো না। আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আজাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম।” (সূরা ক্বাফ:
২৭ ও ২৮)
ইবনে
আব্বাস রা. এর ব্যাখ্যায় বলেন:
هو الشيطان
الذي وُكِّل
به
”এটাই
হল, নিয়োগ কৃত শয়তান।”
ইকরিমা,
মুজাহিদ প্রমুখ তাফসীর কারকগণও একই কথা বলেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
إِذَا كَانَ
أَحَدُكُمْ يُصَلِّي
فَلاَ يَدَعْ
أَحَدًا يَمُرُّ
بَيْنَ يَدَيْهِ
فَإِنْ أَبَى
فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّ
مَعَهُ الْقَرِينَ
“তোমাদের
কেউ যখন সালাত পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার
করে (বাধা মানতে না চায়) তবে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কেননা তার সাথে তার সঙ্গী শয়তান
রয়েছে।” (সহিহ মুসলিম, হা/৫০৬)
মানুষ
মারা যাওয়ার পর তার কারীন (সহচর শয়তান) কি সঙ্গী হারা হয়ে উক্ত মৃত মানুষের রূপ ধরে
অন্যদেরকে ভয় দেখায়? বা পরিণতি কী হয়?
“মানুষ
মারা যাওয়ার পর তার কারীন (সহচর শয়তান)
উক্ত
মৃত মানুষের রূপ ধরে অন্যদেরকে ভয় দেখায়”-এ কথা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
বরং হাদিস থেকে বুঝা যায়, মানুষের সাথে নিযুক্ত শয়তানের কাজ তাকে বিপথগামী করার জন্য
প্ররোচিত করা এবং পাপাচার ও নানা অন্যায়-অপকর্মের রাস্তা দেখানো।
সুতরাং
সে ব্যক্তি যখন মারা যায় -চাই তার স্বাভাবিক মৃত্যু হোক অথবা অস্বাভাবিক অথবা আত্মহত্যা
হোক- তখন তার কাজ শেষ হয়ে যায়। তবে মানুষ মৃত্যুর পর তার সহচর শয়তান কোথায় থাকে বা
তার পরিণতি কী হয় সে ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় কিছু বলা হয় নি। সুতরাং আমরা সে ব্যাপারে
কিছু জানি না। অবশ্য মানুষ এটাও বলে থাকে যে, সে মানুষের কবর পর্যন্ত যায় কিন্তু এটাও
ভিত্তিহীন কথা। এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় কোনো বক্তব্য আসে নি।
তাই
বলব, আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
কারীন
বা সঙ্গী জিন-শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে কী সকাল সন্ধ্যার আমলেই যথেষ্ট?
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে সকাল-সন্ধ্যা ও দৈনন্দিন জীবনে যে সকল
দুআ, জিকির ও আমল শিক্ষা দিয়েছেন (যেমন: টয়লেটে প্রবেশ ও টয়লেট থেকে বের হওয়ার দুআ,
বাড়ি থেকে বের হওয়া, বাড়িতে প্রবেশ, কাপড় পরিধান, কাপড় খুলে রাখা, পানাহার করা, স্ত্রী
সহবাস করা ইত্যাদি) সে সকল দুআ ও জিকির পাঠ করলে সর্বপ্রকার শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট
থেকে আল্লাহ তাআলা হেফাজত করবেন।
উপরের
আলোচনা থেকে বুঝা গেল, আমাদের চিরন্তন দুশমন একটি জিন শয়তান (কারীন) আমাদের সাথে নিযুক্ত
করে দেয়া হয়েছে। সে সার্বক্ষণিক আমাদের সাথে বসবাস করে এবং সর্বদা আমাদেরকে অন্যায়-অপকর্মের
দিকে প্ররোচিত করে। আমরা যখন দুনিয়াবি কর্ম ব্যস্ততায় আল্লাহকে ভুলে থাকি তখন আমাদের
এই অসচেতনতার সুযোগে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিতে পারে, টেনে নিয়ে যেতে পারে অন্যায়,
অশ্লীলতা ও পাপাচারের অন্ধকার জগতে।
সুতরাং
আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি এবং আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনার পাশাপাশি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক শেখানো সকাল-সন্ধ্যার দুআ জিকির পাঠ ও নির্দেশনা
মেনে চলা অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
তার স্বামী বর্তমানে
জেলে প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়
(২০৫) প্রশ্ন: তার স্বামী বেনামাজি, নেশাখোর, খুব
অত্যাচার করে। বোনটির তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তার স্বামী
উক্ত ভাই কে খুন করে। ভাই খুন হওয়ার পর বোনটির স্বামী এখন জেলে। এখন সমস্যা হচ্ছে,
বোনকে তার বাপের বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। বলছে, তোর জন্য তোর ভাই খুন হয়েছে। তুই আমাদের
মেয়ে না।
এমনকি
শ্বশুর বাড়িতেও কোনও ঠাঁই নেই।
বোনটি
বর্তমানে দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে একাকী তাদের বাড়িতে থাকে। তার সংসার চলে খুব কষ্টে।
সে যুবতী হওয়ায় প্রতিবেশী ছেলেরা তার সাথে জিনায় জড়াতে চায়। অনেকে সাহায্য করতে চায়
কিন্তু তার বদলে জিনা করতে চায়।
এর
মধ্যে একটা ছেলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং টাকাকড়ি দিয়ে তার সংসার চালায়। যেহেতু
ছেলেটি তার সংসারের খরচ চালাচ্ছে তাই সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার মন কাঁদে
তার স্বামীর জন্য। বোনটি চায়, তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে যতক্ষণ না তার স্বামী
জেল থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু সমাজের ছেলেরা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এখন তার
কী করা উচিত?
উত্তর:
আপনার
বিবরণ অনুযায়ী, উক্ত বোনের সাথে তার বাবা ও শ্বশুরের পক্ষ থেকে যা করা হচ্ছে তা জুলুম
ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি খুবই দু:খ জনক এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণ। তাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয়
করা এবং একজন অসহায় নারীর প্রতি সদয় হওয়া। মেয়েটি অভিভাবক তথা পিতার জন্য অপরিহার্য
দায়িত্ব হল, তার অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেয়া এবং বিপদে সাহায্য করা। তিনি রাগ বা জেদের
বশবর্তী হয়ে এ দায়িত্ব পালন না করে তার
অসহায়
মেয়েকে অনিশ্চিত গন্তব্য ও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলে তাকে আখিরাতে অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায়
দাঁড়াতে হবে।
অনুরূপভাবে
শ্বশুরেরও উচিৎ, তার ছেলের বউকে ছেলের অনুপস্থিতিতে হেফাজতের ব্যবস্থা করা। এটি মানবিক
ও সামাজিক উভয় দিক থেকে তার উপর কর্তব্য। বিশেষ করে বাবা যদি তার মেয়েকে আশ্রয় না দেয়।
বাবা
কিংবা শ্বশুর কেউ তাকে আশ্রয় না দিলে সমাজের নেতৃস্থানীয় বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি
বা প্রশাসন তার নিরাপত্তা বিধান করবে।
যাহোক,
স্বামী জেলে থাকা অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে তার উচিৎ, আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত
রেখে নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম হেফাজত করা, পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা, বাড়ির বাইরে গেলে
আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা, কোনো পর পুরুষকে তার বাড়িতে আসার সুযোগ না দেয়া এবং তাদের
সাথে বিনা প্রয়োজনে কথাবার্তা এড়িয়ে চলা।
আর
যদি সম্ভব হয় তাহলে তার নিকটাত্মীয় কোনো মাহরাম ছেলে অথবা কমপক্ষে কোনো নিকটাত্মীয়
মহিলাকে তার বাড়িতে রাখা। সেই সাথে যে সব মানুষ তাকে খারাপ প্রস্তাব দেয় এবং নানাভাবে
ডিস্টার্ব করে তাদের ব্যাপারটি স্থানীয় সৎ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে জানানো।
আর
যেহেতু সে এখনো আরেকজনের স্ত্রী-তার স্বামী থেকে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় নি সেহেতু অন্য কোনো
ব্যক্তি সাথে বিয়ে শরিয়ত সম্মত নয়।
সুতরাং
হয় সে তার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অথবা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হতে চাইলে আইনগত ভাবে কোর্টের মাধ্যমে খোলা তালাকের ব্যবস্থা করবে।
আল্লাহ
তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমরা সকলেই তার জন্য দুআ করি। নিশ্চয় আল্লাহ হেফাজত
কারী।
নির্যাতনে মৃত ব্যক্তির
শহিদি মর্যাদা লাভ, অন্যায়ভাবে হত্যা করার ভয়াবহ পরিণতি এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম
হত্যাকাণ্ড
(২০৬) প্রশ্ন: কোনও ব্যক্তি
যদি অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে কি শহিদ হিসেবে
গণ্য হবে? অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করার ভয়াবহতা কতটুকু? পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম
কে হত্যাকাণ্ডের সূচনা করেছিলো এবং তার পরিণতি কী হবে?
উত্তর:
নিন্মে
উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের সংক্ষেপে উত্তর প্রদান করা হল: و
بالله التوفيق
ক. কোনও ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনের
শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে কি শহিদ হিসেবে গণ্য হবে?
হ্যাঁ,
যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে অন্যায়ভাবে নির্যাতিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে আখিরাতে আল্লাহর
নিকট শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَنَسِ
بْنِ مَالِكٍ
رضي الله
عنه قَالَ
: صَعِدَ النَّبِيُّ
صلى الله
عليه وسلم
إِلَى ” أُحُدٍ
” وَمَعَهُ أَبُو
بَكْرٍ وَعُمَرُ
وَعُثْمَانُ فَرَجَفَ
بِهِمْ ،
فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ
، قَالَ
: (اثْبُتْ أُحُدُ
، فَمَا
عَلَيْكَ إِلاَّ
نَبِيٌّ ،
أَوْ صِدِّيقٌ
، أَوْ
شَهِيدَان- رواه
البخاري
আনাস
বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আবু বকর রা. উমর রা.
ও উসমান রা. সহকারে ওহুদ পাহাড়ে উঠলে তা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। তখন তিনি পাহাড়ের গায়ে
পদাঘাত করে বললেন:
“হে
ওহুদ, তুমি স্থির হও। কারণ তোমার উপরে আছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং দু জন শহিদ।”
(সহিহ বুখারী হা/ ৩৪৮৩)
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আল্লাহর ওহির মারফতে অগ্রিম ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে,
সে দিন ওহুদ পাহাড়ে তাঁর সাথে থাকা তিন জন অতি সম্মানিত সাহাবীর মধ্যে দু জন শহিদ হবেন।
ইতিহাস
সাক্ষী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সালাম এর ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হয়েছে।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর তিরোধানের পর মুসলিম জাহানের ২য় খলিফা উমর ইবনুল
খাত্তাব রা. ফজর সালাতে ইমামতি করা অবস্থায় আবু লুলু নামক এক অগ্নিপূজক ঘাতক কর্তৃক
পেছন থেকে অতর্কিত বর্শাঘাতে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। আর ৩য় খলিফা উসমান বিন
আফফান রা. তাঁর খিলাফতকালে একদল খারেজী বিদ্রোহী জঙ্গিদের হাতে মাজলুম অবস্থায় শাহাদত
বরণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আমীন।
এ
কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শহিদি মর্যাদা লাভের জন্য শর্ত হল, ইমানদার হওয়া এবং
ঈমানের মৌলিক দাবী পূরণ করা। যেমন: তাওহীদের উপর চলা, শিরক থেকে দূরে থাকা, পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত আদায় করা, মানুষের হক নষ্ট না করা ইত্যাদি।
খ. অন্যায়ভাবে রক্তপাত ও হত্যা করার কঠিন পরিণতি:
ইসলামের
দৃষ্টিতে অন্যায়ভাবে রক্তপাত করা বা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা অত্যন্ত ভয়াবহ অপরাধ। এ
মর্মে কুরআন ও হাদিসে পর্যাপ্ত আলোচনা এসেছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত ও হাদিস
তুলে ধরা হল:
১) আল্লাহ তাআলা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানব হত্যার
ভয়াবহ পরিণতিত কথা ঘোষণা করে বলেন:
وَمَنْ يَقْتُلْ
مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا
فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ
خَالِدًا فِيْهَا
وَغَضِبَ اللّهُ
عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ
وَأَعَدَّ لَه
عَذَابًا عَظِيْمًا
“আর
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই
সে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হবেন, তার উপর অভিসম্পাত করবেন
এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সূরা নিসা: ৯৩)
২) যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাআলা তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এবং তার নেকিগুলো নিহত ব্যক্তিকে
দিবেন আর নেকি যদি কম থাকে তাহলে নিহত ব্যক্তির গুনাহগুলো হত্যাকারীর কাঁধে চাপিয়ে
দিবেন। পরিণতিতে সে দুনিয়াতে নামায, রোযা, হজ, যাকাত ইত্যাদি অনেক নেকির কাজ করার পরও
নিঃস্ব অবস্থায় জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে:
এ
মর্মে হাদিস হল, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম জিজ্ঞেস করলেন:
أَتَدْرُونَ ما
المُفْلِسُ؟ قالوا:
المُفْلِسُ فِينا
مَن لا
دِرْهَمَ له
ولا مَتاعَ،
فقالَ: إنَّ
المُفْلِسَ مِن
أُمَّتي يَأْتي
يَومَ القِيامَةِ
بصَلاةٍ، وصِيامٍ،
وزَكاةٍ، ويَأْتي
قدْ شَتَمَ
هذا، وقَذَفَ
هذا، وأَكَلَ
مالَ هذا،
وسَفَكَ دَمَ
هذا، وضَرَبَ
هذا، فيُعْطَى
هذا مِن
حَسَناتِهِ، وهذا
مِن حَسَناتِهِ،
فإنْ فَنِيَتْ
حَسَناتُهُ قَبْلَ
أنْ يُقْضَى
ما عليه
أُخِذَ مِن
خَطاياهُمْ فَطُرِحَتْ
عليه، ثُمَّ
طُرِحَ في
النَّارِ
“তোমরা
কি জান নি:স্ব কে?”
সাহাবায়ে
কেরাম বললেন: “আমাদের মধ্যে নি:স্ব তো সে যার কোন দিনার-দিরহাম বা অর্থ-সম্পদ নেই।”
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন: “আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার নি:স্ব হল সেই
ব্যক্তি যে, কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ
দুনিয়াতে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল,
কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল। ফলে তার থেকে নেক আমলগুলো নিয়ে তার দ্বারা
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে।
এভাবে
যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন
তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে। ফলে সে (নিঃস্ব অবস্থায়) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
(সহিহ মুসলিম)
৩) কিয়ামতের দিন বান্দাদের পারস্পারিক অধিকার সংক্রান্ত
ব্যাপারে সর্ব প্রথম রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিচার-ফয়সালা করা হবে।
যেমন:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সালাম বলেছেন:
أَوَّلُ مَا
يُقْضَى بَيْنَ
النَّاسِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ فِي
الدِّمَاءِ
‘‘কিয়ামতের
দিন সর্ব প্রথম যে বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করা হবে তা হল রক্তপাত বা খুন-হত্যার
বিষয়।’’ (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
এছাড়াও
কুরআন-হাদিসে অন্যায় রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতার ব্যাপারে অনেক কঠিন কঠিন বক্তব্য
বিবৃত হয়েছে।
গ. পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম কে হত্যাকাণ্ডের
সূচনা করেছিলো এবং তার পরিণতি কী হবে?
মানব
ইতিহাসে সর্বপ্রথম খুন করে আদম আলাইহিস সালামের এক ছেলে কাবিল। সে তার আপন ভাই হাবিলকে
হত্যা করে। যার কারণে পৃথিবীতে যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে তার সবগুলোর পাপের একটা অংশ
কাবিলের আমলনামায় জমা হবে। কারণ সেই সর্ব প্রথম এ পথ উন্মুক্ত করেছিলো।
এ
ব্যাপারে আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন:
لاَ تُقْتَلُ
نَفْسٌ ظُلْمًا
إِلاَّ كَانَ
عَلَى ابْنِ
آدَمَ الأَوَّلِ
كِفْلٌ مِنْ
دَمِهَا وَذَلِكَ
لأَنَّهُ أَوَّلُ
مَنْ سَنَّ
الْقَتْلَ
“অন্যায়ভাবে
কাউকে হত্যা করা হলে রক্তে একটা অংশ (হত্যাকাণ্ডে গুনাহে অংশ) প্রথম আদম সন্তান (কাবিল)
এর উপর বর্তাবে। কারণ সে প্রথম ব্যক্তি যে হত্যাকাণ্ডের প্রথা চালু করেছে।”
[সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) হাদিস নম্বরঃ [1284] অধ্যায়ঃ ২৩/ জানাযা (كتاب الجنائز)]
পরিশেষে
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে জুলুম-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করুন, যারা নির্যাতনের
শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহন করেছেন তাদেরকে দয়া করে শহিদী মর্যাদা দান করুন
এবং অন্যায়ভাবে কারো প্রতি অস্ত্র ধারণ তো দূরে থাক একটি কটুকথাও যেন মুখ দিয়ে উচ্চারিত
না হয় আমাদেরকে সে তাওফিক দান করুন। আমীন।
(২০৭) প্রশ্ন: অমুসলিমদের দেশে বসবাসের বিধান কী?
উত্তর:
অমুসলিম-কাফিরদের দেশে বসবাস করা মুসলিমের দ্বীন, চরিত্র, চলাফেরা ও শিষ্টাচারের জন্য
খুবই বিপজ্জনক। আমরা নিজেরা এবং আমরা ছাড়া আরও অনেকেই এটা প্রত্যক্ষ করেছি যে, যারা
সেখানে বসবাসের জন্য গিয়েছে, তাদের অনেকেই বিপথগামী হয়েছে, ফলে তারা সেখানে যা নিয়ে
গিয়েছিল, তার বিপরীত জিনিস নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেছে। তারা সেখান থেকে পাপাচারী হয়ে
এসেছে। এমনকি তাদের কেউ কেউ নিজের দ্বীন পরিত্যাগ করে সকল ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস (নাস্তিকতা)
নিয়ে ফিরে এসেছে। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ (আল্লাহ’র কাছে এ থেকে পানাহ চাই)।
এক
পর্যায়ে তারা নিরেট অবিশ্বাসের দিকে চলে যায় এবং ধর্ম ও পূর্ববর্তী-পরবর্তী ধর্মপালনকারীদের
দিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ শুরু করে। তাই সকলের জন্য এ থেকে সতর্ক থাকা এবং এ জাতীয় ধ্বংসাত্মক
বিষয়ে নিপাতিত হওয়া থেকে নিরোধকারী শর্ত আরোপ করা বাঞ্ছনীয়।
কাফির
রাষ্ট্রে বসবাসের জন্য অবশ্যই দুটো প্রধান শর্ত পূরণ হতে হবে। যথা:
প্রথম শর্ত: বসবাসকারীকে স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে
আশঙ্কামুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ তার এমন ‘ইলম, ঈমান ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে, যা
তাকে দ্বীনের ওপর অটল থাকার মতো এবং বক্রতা ও বিপথগামিতা থেকে বেঁচে থাকার মতো আত্মবিশ্বাসের
জোগান দেয়। আর কাফিরদের প্রতি তার অন্তরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকতে হবে। অনুরূপভাবে
কাফিরদের সাথে মিত্রতা ও তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে। কেননা তাদের
সাথে মিত্রতা স্থাপন করা এবং তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের পরিপন্থি।
মহান
আল্লাহ বলেছেন, لَا تَجِدُ
قَوْمًا يُؤْمِنُونَ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ يُوَادُّونَ
مَنْ حَادَّ
اللَّهَ وَرَسُولَهُ
وَلَوْ كَانُوا
آبَاءَهُمْ أَوْ
أَبْنَاءَهُمْ أَوْ
إِخْوَانَهُمْ أَوْ
عَشِيرَتَهُمْ “তুমি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন
কোনো জাতিকে পাবে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে;
যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, কিংবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়।” [সূরাহ মুজাদালাহ:
২২]
মহান
আল্লাহ আরও বলেছেন, يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا
لَا تَتَّخِذُوا
الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ
أَوْلِيَاءَ ۘ
بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ
بَعْضٍ ۚ
وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ
مِنْكُمْ فَإِنَّهُ
مِنْهُمْ ۗ
إِنَّ اللَّهَ
لَا يَهْدِي
الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ.
فَتَرَى الَّذِينَ
فِي قُلُوبِهِمْ
مَرَضٌ يُسَارِعُونَ
فِيهِمْ يَقُولُونَ
نَخْشَىٰ أَنْ
تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ
ۚ فَعَسَى
اللَّهُ أَنْ
يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ
أَوْ أَمْرٍ
مِنْ عِنْدِهِ
فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ
مَا أَسَرُّوا
فِي أَنْفُسِهِمْ
نَادِمِينَ “হে মু’মিনগণ, ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে
তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে
বন্ধুত্ব করবে, সে অবশ্যই তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন
না। সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের
জন্য) ছুটছে। তারা বলে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোনো বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে।’
অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা
তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে।” [সূরাহ মা’ইদাহ: ৫১-৫২]
নাবী
ﷺ বলেছেন, الْمَرْءُ مَعَ
مَنْ أَحَبَّ
“মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথেই থাকবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬১৬৯; সাহীহ
মুসলিম, হা/২৬৪০]
আল্লাহ’র
শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ। কেননা তাদেরকে
ভালোবাসলে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করা এবং তাদের অনুসরণ করা, কিংবা কমপক্ষে তাদের
কর্মের বিরোধিতা না করা—জরুরি হয়ে যায়। একারণে নাবী ﷺ
বলেছেন, “মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথেই থাকবে।”
দ্বিতীয়
শর্ত: নিজের দ্বীনকে প্রকাশ করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ, বসবাসকারী ব্যক্তি
কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ইসলামের নিদর্শনাবলি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন। নামাজ, জুমু‘আহ
ও জামা‘আত—যদি তার সাথে জামা‘আতে নামাজ ও জুমু‘আহ প্রতিষ্ঠা করার মতো কেউ থেকে থাকেন—প্রতিষ্ঠা
করতে বাধাগ্রস্ত হবেন না। অনুরূপভাবে জাকাত, রোজা, হজ ও অন্যান্য শার‘ঈ নিদর্শন প্রতিষ্ঠা
করতে বাধাগ্রস্ত হবেন না। যদি এসব কাজ করার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তখন হিজরত ওয়াজিব
হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে বসবাস করা জায়েজ হবে না।
ইমাম
ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) “মুগনী” গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের ৪৫৭ পৃষ্ঠায় হিজরতের ব্যাপারে
মানুষের প্রকারভেদ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “যার ওপর হিজরত করা ফরজ: যে ব্যক্তির
হিজরত করার মতো সক্ষমতা আছে, আর তার জন্য স্বীয় দ্বীনকে প্রকাশ করা এবং কাফিরদের মধ্যে
বাস করে দ্বীনের ওয়াজিব বিষয়াদি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না, সে ব্যক্তির ওপর হিজরত
করা ওয়াজিব। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় যারা নিজেদের প্রতি জুলুমকারী, ফেরেশতারা
তাদের জান কবজ করার সময় বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?’ তারা বলে, ‘আমরা জমিনে দুর্বল
ছিলাম।’ ফেরেশতারা বলে, ‘আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা তাতে হিজরত করতে?’
সুতরাং ওরাই তারা, যাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তা মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল।” (সূরাহ
নিসা: ৯৭) এটা হলো কঠিন হুঁশিয়ারি, যা হিজরতের আবশ্যকিয়তা প্রমাণ করে। কেননা দ্বীনের
আবশ্যকীয় বিষয় পালন করা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব। হিজরত একটি গুরুত্বপূর্ণ
ওয়াজিব; এটি এমন একটি বিধান, যা আবশ্যকীয় কর্মাবলিকে পূর্ণতা দান করে। আর যা ব্যতিরেকে
ওয়াজিব কাজ পূর্ণ হয় না, সেটাও ওয়াজিব।” [উদ্ধৃতি সমাপ্ত]
উল্লিখিত
প্রধান শর্ত দুটি পূরণ হওয়ার পর কাফির রাষ্ট্রে বসবাস করার বিষয়টিকে কয়েক প্রকারে বিভক্ত
করা যায়। যথা:
প্রথম
প্রকার: ইসলামের দিকে দা‘ওয়াত এবং ইসলামের প্রতি উৎসাহ প্রদানের জন্য বসবাস করা। এটি
এক প্রকার জিহাদ। সক্ষম ব্যক্তির ওপর এ কাজ করা ফরজে কিফায়াহ (যে ফরজ কতিপয় আদায় করলে
বাকিদের ওপর থেকে তা আদায় না করার পাপ ঝরে যায় – অনুবাদক)। তবে শর্ত হলো—দা‘ওয়াত বাস্তবায়িত
হতে হবে এবং দা‘ওয়াত প্রদান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকা যাবে না। কেননা
ইসলামের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া দ্বীনের আবশ্যকীয় বিধিবিধানের অন্তর্ভুক্ত। আর এটিই রাসূলগণের
পথ। নাবী ﷺ সর্ব জায়গা ও সর্ব সময়ে ইসলামের তাবলীগ
(প্রচার) করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ﷺ বলেছেন, بَلِّغُوْا عَنِّى
وَلَوْ اَيَةً
“আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও।” [সাহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১]
দ্বিতীয়
প্রকার: কাফিরদের অবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য এবং তারা যে ভ্রান্ত ‘আক্বীদাহ, বাতিল
ইবাদত, নষ্ট চরিত্র ও নৈরাজ্যপূর্ণ চলাফেরার ওপর রয়েছে—তা জানার জন্য সেখানে অবস্থান
করা। যাতে করে মানুষকে তাদের মাধ্যমে ধোঁকাগ্রস্ত হওয়া থেকে সতর্ক করা যায়, আর যারা
তাদেরকে ভালো মনে করে, তাদের কাছে ওদের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করা যায়। এ ধরনের বসবাসও
জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু এর মাধ্যমে কুফর ও কাফিরদের থেকে সতর্ক করা হয়, যা ইসলাম
ও তার আদর্শের প্রতি উৎসাহপ্রদানের মতো বিষয়কে ধারণ করে। কেননা কুফরির অনিষ্টতাই ইসলামের
সঠিকতার প্রমাণ। তাইতো বলা হয়, “বস্তুর প্রকৃতত্ব তার বিপরীত বিষয়ের মাধ্যমেই স্পষ্ট
হয়।”
কিন্তু
এক্ষেত্রেও একটি অবশ্য পালনীয় শর্ত আছে। আর তা হলো—ওই কাজের ভালো ফলের চেয়ে বড়ো কোনো
ক্ষতির আনয়ন ব্যতিরেকেই উক্ত কাজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হতে হবে। যদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত
না হয়, তথা কাফিররা যে মতাদর্শের ওপর রয়েছে তা প্রচার করতে এবং তা থেকে সতর্ক করতে
বাধা দেওয়া হয়, তাহলে সেখানে অবস্থান করার কোনো ফায়দা নেই। আবার যদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত
হওয়ার সাথে সাথে তার চেয়ে বড়ো কোনো ক্ষতি অর্জিত হয়, তাহলে উক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা
আবশ্যক। যেমন: কাফিররা প্রচারকারী ব্যক্তির কাজের মোকাবেলায় ইসলামকে এবং ইসলামের রাসূল
ও ইমামগণকে গালিগালাজ করা শুরু করল (তাহলে উক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক)।
যেহেতু
মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَا تَسُبُّوا
الَّذِينَ يَدْعُونَ
مِنْ دُونِ
اللَّهِ فَيَسُبُّوا
اللَّهَ عَدْوًا
بِغَيْرِ عِلْمٍ
ۗ كَذَٰلِكَ
زَيَّنَّا لِكُلِّ
أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ
ثُمَّ إِلَىٰ
رَبِّهِمْ مَرْجِعُهُمْ
فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا
كَانُوا يَعْمَلُونَ
“আর তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা আহ্বান করে, ফলে তারা বিদ্বেষ
ও অজ্ঞতাবশত গালি দিবে আল্লাহকে। এভাবেই আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য তাদের কর্মকে শোভিত
করেছি। তারপর তাদের রবের কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম
সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন।” [সূরাহ আন‘আম: ১০৮]
এই
প্রকারটি কাফির রাষ্ট্রে মুসলিমদের গুপ্তচর হিসেবে অবস্থান করার মতো। যাতে সে জানতে
পারে যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তারা কী গুপ্ত ষড়যন্ত্র করছে, ফলে তাদের থেকে মুসলিমরা
সতর্ক থাকতে পারে। যেমন নাবী ﷺ খন্দক যুদ্ধে হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান
(রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে মুশরিকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তাদের খবর জানার জন্য।
তৃতীয়
প্রকার: মুসলিম রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এবং কাফির রাষ্ট্রের সাথে মুসলিম রাষ্ট্রের সম্পর্ক
বজায় রাখতে সেখানে বসবাস করা। যেমন: দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ। এক্ষেত্রে যে কাজের
জন্য এখানে অবস্থান করতে হচ্ছে, সে কাজের বিধান যা, এখানে বসবাসের বিধানও তা। উদাহরণস্বরূপ
কোনো কালচারাল অ্যাটাশে ছাত্রদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং তাদেরকে ইসলাম ধর্ম
এবং ইসলামে বর্ণিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও শিষ্টাচার পালন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার জন্য
সেখানে বসবাস করছেন। তাঁর সেখানে বসবাস করার ফলে অর্জিত হয় বিরাট কল্যাণ এবং নিশ্চিহ্ন
হয় বড়ো ধরনের অকল্যাণ।
চতুর্থ
প্রকার: কোনো বিশেষ বৈধ কাজের জন্য বসবাস করা। যেমন: ব্যবসা, চিকিৎসা প্রভৃতি। এক্ষেত্রে
প্রয়োজন অনুযায়ী বসবাস করা জায়েজ। ‘আলিমগণ (রাহিমাহুল্লাহ) ব্যবসা করার জন্য কাফির
রাষ্ট্রে প্রবেশ করা বৈধ—বলে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাঁরা বিষয়টি কিছু সাহাবী
(রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) থেকেও বর্ণনা করেছেন।
পঞ্চম
প্রকার: পড়াশোনার জন্য বসবাস করা। এটি পূর্বোক্ত—প্রয়োজন অনুযায়ী বসবাস করা বৈধ—প্রকারটিরই
অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটি বসবাসকারীর দ্বীন ও আখলাকের জন্য পূর্বোক্ত বিষয়ের চেয়েও বিপজ্জনক
ও ভয়াবহ। কেননা এতে ছাত্র নিজের নিচু মর্যাদা এবং তার শিক্ষকদের উঁচু মর্যাদা অনুভব
করে। ফলে সে তাদেরকে শ্রদ্ধা করে এবং তাদের মতাদর্শ ও লাইফ স্টাইলে পরিতুষ্ট হয়। এক
পর্যায়ে সে তাদের অনুকরণ শুরু করে। আল্লাহ যাকে হেফাজত করতে চান, সে ছাড়া কেউ এ থেকে
বাঁচতে পারে না; আর তাদের (বেঁচে যাওয়া ছাত্রদের) সংখ্যা খুবই নগন্য।
এতদ্ব্যতীত
ছাত্র স্বীয় শিক্ষকের কাছে নিজের প্রয়োজন অনুভব করে, যা তাকে (কাফির) শিক্ষকের প্রতি
ভালোবাসা পোষণ করা এবং শিক্ষকের ভ্রষ্ট মতাদর্শের ব্যাপারে তাঁর মোসাহেবি করার দিকে
ঠেলে দেয়। এছাড়াও ছাত্র যে ছাত্রাবাসে থাকে, সেখানে তার সহপাঠীরাও থাকে। তাদের মধ্য
থেকে সে কতিপয়কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে ভালোবাসে এবং তাদের কাছ থেকে শিক্ষা
লাভ করে। এই প্রকার বসবাসের ভয়াবহতার কারণে এক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কে থাকা ওয়াজিব।
তাই এক্ষেত্রে প্রধান শর্ত দুটোর পাশাপাশি আরও কিছু শর্ত যুক্ত হয়। যথা:
১ম
শর্ত: ছাত্রকে বিবেকগত পক্বতার দিক থেকে উঁচু স্তরের হতে হবে, যার মাধমে সে কল্যাণকারী
ও অকল্যাণকারীকে আলাদা করতে পারবে এবং অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবে। পক্ষান্তরে
কমবয়সী এবং কম বুদ্ধিসম্পন্ন ছাত্রদেরকে কাফির রাষ্ট্রে পাঠানো তাদের দ্বীন, চরিত্র
ও শিষ্টাচারের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এরপর এটা তাদের জাতির লোকের জন্যও বিপদের কারণ হয়ে
দাঁড়ায়, যখন তারা নিজেদের জাতির কাছে ফিরে যায় এবং তাদের মধ্যে ওই বিষ উৎক্ষেপণ করে,
যা সে ওই কাফিরদের নিকট থেকে পান করে এসেছে। যেমনটি ইতঃপূর্বে ঘটেছে এবং বাস্তবতাও
এর সাক্ষ্য দিচ্ছে। ওই সকল ছাত্রদের অনেকেই যা নিয়ে সেখানে গিয়েছিল, তার বিপরীত বিষয়
নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেছে। তারা তাদের ধার্মিকতা, চরিত্র ও শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে বিপথগামী
হিসেবে ফিরে এসেছে। আর এসব ক্ষেত্রে তারা নিজেরা এবং তাদের সমাজ অর্জন করেছে ভয়াবহ
অনিষ্ট, যা এখন সুবিদিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে সেখানে পড়তে পাঠানো মূলত হিংস্র
কুকুরের কাছে ভেড়ী বা দুম্বী পেশ করার নামান্তর।
২য়
শর্ত: ছাত্রের এমন শার‘ঈ ‘ইলম থাকতে হবে, যার দ্বারা সে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য
করতে পারে এবং হক দিয়ে বাতিলকে প্রতিহত করতে পারে। যাতে করে কাফিররা যে বাতিল মতাদর্শের
ওপর আছে, সে তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হয়ে ওই মতাদর্শকে হক মনে করে না বসে, অথবা তা তার
কাছে গোলমেলে হয়ে না যায়, কিংবা তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ না হয়। অন্যথায় সে দিশেহারা
হয়ে যাবে, কিংবা বাতিলের অনুসরণ করতে শুরু করবে। হাদীসে বর্ণিত দু‘আয় বলা হয়েছে, اللهم أرني الحق
حقاً وارزقني
اتباعه، وأرني
الباطل باطلاً
وارزقني اجتنابه،
ولا تجعله
ملتبساً علي
فأضل “হে আল্লাহ, আপনি আমার কাছে হককে হক
হিসেবেই দেখান এবং আমাকে তা অনুসরণ করার সামর্থ্য দিন। আপনি আমার কাছে বাতিলকে বাতিল
হিসেবেই দেখান এবং আমাকে তা বর্জন করার সামর্থ্য দিন। আর আপনি বাতিলকে আমার ওপর গোলমেলে
করে তুলিয়েন না, যার দরুন আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাই!”
৩য়
শর্ত: ছাত্রের এমন ধার্মিকতা থাকতে হবে, যা তাকে হেফাজত করবে এবং যার মাধ্যমে সে কুফর
ও পাপাচারিতা থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। ধর্মপালনে দুর্বল ব্যক্তির জন্য ওখানে বসবাস
করা নিরাপদ নয়, তবে আল্লাহ যাকে নিরাপদ রাখতে চান তার কথা স্বতন্ত্র। কেননা ওখানে প্রতিরোধকারী
দুর্বল, আর আক্রমণকারী শক্তিশালী। ওখানে কুফর ও পাপাচারিতার অসংখ্য শক্তিশালী মাধ্যম
রয়েছে। যখন এসব মাধ্যম কোনো দুর্বল প্রতিরোধকারীর সম্মুখে এসে পড়ে, তখন সেগুলো তাদের
কাজ করে চলে যায়।
৪র্থ
শর্ত: সে যে বিদ্যা অর্জনের জন্য সেখানে বসবাস করছে, সেই বিদ্যার প্রয়োজন থাকতে হবে।
যেমন ওই বিদ্যা অর্জনের মধ্যে মুসলিমদের কল্যাণ নিহিত থাকা এবং উক্ত বিদ্যার অস্তিত্ব
মুসলিমদের দেশে না থাকা। কিন্তু তা যদি অতিরিক্ত বা উদ্বৃত্ত বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত হয়,
কিংবা সেই বিদ্যার অস্তিত্ব মুসলিম দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকে, তাহলে উক্ত বিদ্যা
অর্জনের জন্য কাফির রাষ্ট্রে বসবাস করা জায়েজ নয়। যেহেতু সেখানে বসবাসের মধ্যে রয়েছে
দ্বীন ও আখলাকের ক্ষতি এবং কোনো ফায়দা ছাড়াই বিপুল পরিমাণ সম্পদের অপচয়।
ষষ্ঠ
প্রকার: (স্থায়ীভাবে) বসবাসের জন্য অবস্থান করা। এটি পূর্বের প্রকারগুলোর চেয়ে বিপজ্জনক
ও ভয়াবহ। কেননা এতে অনেক ক্ষতি রয়েছে। যেমন: কাফিরদের সাথে পূর্ণরূপে সংমিশ্রিত হওয়া,
এবং তার এই উপলব্ধি হওয়া যে, সে একজন নাগরিক, যে কি না দেশ যা দাবি করে—তথা ভালোবাসা,
মিত্রতা প্রভৃতি—তা মেনে চলে। এছাড়াও এতে রয়েছে কাফিরদের দল ভারি করার মতো ক্ষতিকর
বিষয়। এরকম ব্যক্তি নিজের পরিবারকে কাফিরদের মধ্যে লালনপালন করে। ফলে তার পরিবারের
সদস্যরা কাফিরদের চরিত্র ও সংস্কৃতির অনেক বিষয় গ্রহণ করে এবং কখনো কখনো ‘আক্বীদাহ
ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণও করে!
একারণে
হাদীসে এসেছে, নাবী ﷺ বলেছেন, مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ
وَسَكَنَ مَعَهُ
فَإِنَّهُ مِثْلُهُ
“যে ব্যক্তি কোনো মুশরিকের সাহচর্যে থাকে এবং তার সাথে বসবাস করে, সে মূলত তারই মতো।”
[আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৭; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
এই
হাদীস যদিও দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে, তথাপি এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আর তা
হলো—একত্রে বসবাস একই রকম হওয়ার দিকে আহ্বান করে।
ক্বাইস
বিন আবূ হাযিম থেকে বর্ণিত, তিনি জারীর বিন ‘আব্দুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে
বর্ণনা করেছেন যে, নাবী ﷺ বলেছেন, أَنَا بَرِيءٌ مِنْ
كُلِّ مُسْلِمٍ
يُقِيمُ بَيْنَ
أَظْهُرِ الْمُشْرِكِينَ.
قَالُوا: يَا
رَسُولَ اللَّهِ
لِمَ؟ قَالَ:
لَا تَرَاءَى
نَارَاهُمَا “আমি ওই সকল মুসলিম থেকে দায়মুক্ত,
যারা মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল, এরূপ
কেন?’ তিনি বললেন, ‘যাতে করে তাদের দুজনের আগুনকে এক দৃষ্টিতে দেখা না যায়’।” [আবূ
দাঊদ, হা/২৬৪৫; তিরমিযী, হা/১৬০৪; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
অধিকাংশ
রাবি (বর্ণনাকারী) হাদীসটিকে ক্বাইস বিন আবূ হাযিম কর্তৃক নাবী ﷺ
থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, “আমি মুহাম্মাদকে—অর্থাৎ ইমাম
বুখারীকে—বলতে শুনেছি, সঠিক কথা হলো নাবী ﷺ থেকে ক্বাইসের বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল।”
তাহলে
কীভাবে একজন মু’মিনের অন্তর কাফিরদের দেশে বসবাস করার প্রতি সম্মত হতে পারে? অথচ সেসব
দেশে কুফরের নিদর্শনাবলি প্রকাশমান, সেসব দেশে শাসন করা হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আইন
ব্যতীত অন্য আইন দিয়ে! আর সে তার দু চোখ দিয়ে এসব দেখে, দু কান দিয়ে এসব শোনে, এবং
তাতে সম্মত হয়। এমনকি সে ওই সকল দেশের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। সেসব দেশে সে স্বীয়
পরিবার ও সন্তানসন্ততি নিয়ে বসবাস করে এবং সেসব দেশে শান্তি খুঁজে পায়, যেমনভাবে মুসলিমদের
দেশে থেকে প্রশান্তি লাভ করা হয়। অথচ সেখানে বসবাস করা তার নিজের জন্য এবং তার পরিবারপরিজন
ও সন্তানসন্ততির দ্বীন ও আখলাকের জন্য খুবই বিপজ্জনক।
কাফিরদের
দেশে বসবাসের বিধানের আলোচনায় আমরা এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছি। আমরা আল্লাহ’র কাছে
প্রার্থনা করি, যেন উক্ত সিদ্ধান্ত হক ও সঠিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
তথ্যসূত্র:
ইমাম
‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৫-৩০; দারুল
ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৩ (সর্বশেষ প্রকাশ)।
(২০৮) ঋতুবতি মহিলাগণ
কিভাবে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে?
উত্তর:
মহিলাদের
মাসিক ঋতুস্রাব কদর রাত পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। তাই ঋতুবতি মহিলাগণ এ রাতে
নামায, কুরআন তিলাওয়াত ও কাবা শরীফের ত্বওয়াফ ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার ইবাদত করতে
পারে।
যেমন:
বেশি বেশি দরুদে ইব্রাহীম পাঠ করা,
তাসবীহ,
যিকর-আযকার, যেমন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আল্ হামদু ল্লিল্লাহ” “সুবহানাল্লাহ”,
“আল্লাহুআকবার” “আস্তাগফিরুল্লাহ”, “লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লা বিল্লাহ”।
দুআ-মুনাজাত,
বিশেষ করে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল্ আফওয়া ফা’ফু আন্নী” দুআটি বেশী বেশী
পাঠ করবে।
হাদিসে
আছে, মা আয়েশা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আল্লাহর
রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর লাভ করি, তাহলে কি দুআ করবো? তিনি (সাঃ) বলেনঃ বলবে:
আল্লাহুম্মা
ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল্ আফওয়া ফা’ফু আন্নী”।
অর্থ,
হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা পছন্দ কর, তাই আমাকে ক্ষমা কর”।[আহমদ,৬/১৮২]
অনুরূপভাবে
তারা কুরআন তিলাওয়াত শ্রবন, কুরআনের তাফসীর পাঠ (আয়াতগুলোর আরবী বাদ দিয়ে),
হাদীস
পাঠ, ইসলামী বই-পুস্তক পাঠ
দান-সদকা
ইত্যাদি ইবাদতগুলো করার চেষ্টা করবে।
আল্লাহ
তাওফিক দান করুন।
(২০৯) ইতিকাফের গুরুত্ব,
উপকারিতা ও ফযিলতঃ
ইতিকাফ
করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ (গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
প্রতি রমাযানে ১০ দিন ইতি-কাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে বছর একটানা
২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইতি-কাফ, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত)
ইতিকাফের কতিপয় উপকারিতা:
ঈমানদারের
জন্য ইতিকাফে অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
❖ ১. এর
মাধ্যমে কিছু দিনের জন্য দুনিয়া থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবল আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে
লিপ্ত থেকে মহান আল্লাহ নৈকট্য হাসিলের বিশাল সুযোগ পাওয়া যায়।
❖ ২. এ সময়
অধিক পরিমাণে নফল সালাত, জিকির-আজকার, দুআ, তাসবীহ, তাকবীরে উলা তথা ইমামের প্রথম তাকবীরে
সাথে জামাআতে সালাত, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন তথা কবর আখিরাত, হাশর-নশর, আল্লাহর দরবারে
হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, কুরআন
তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামী জ্ঞানার্জন ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য
লাভ করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়।
❖ ৩. এ ছাড়াও
ইতিকাফের ফলে দৃষ্টি হেফাজত, অশ্লীল, অনর্থক ও মিথ্যা কথা থেকে মুখ হেফাজত, গীবত-পরনিন্দা,
চুগলখোরি ইত্যাদি অসংখ্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
❖ ৪. রমাযান
মাসে ইতিকাফ করার সবচেয়ে বড় ফায়দা হল, শেষ দশকের রাত জেগে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ
তাওফিক দান করলে ‘লাইলাতুল কদর’ বা শবে কদর লাভ করা সম্ভব হয়-যা এক হাজার মাসের চেয়েও
উত্তম। নি:সন্দেহে এটি জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।
❖ ৫. ইতিকাফ
এর মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আদায়
করা হয়- যা বর্তমানে মুসলিম সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত।
ইতিকাফের ফযিলতে বর্ণিত হাদিসগুলো সহীহ নয়:
ইতিকাফের
ফযিলতে কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনটি জঈফ আর কোনটি জাল। হাদিসগুলোর
আরবি টেক্সট (সেগুলোর সনদ সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য সহকারে) নিম্নে প্রদান করা
হল:
1-
روى ابن
ماجه (1781) عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ
أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ
فِي الْمُعْتَكِفِ
: ( هُوَ يَعْكِفُ
الذُّنُوبَ ،
وَيُجْرَى لَهُ
مِنْ الْحَسَنَاتِ
كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ
كُلِّهَا ) . ضعفه الألباني في
ضعيف ابن
ماجه .
(
يَعْكِفُ الذُّنُوب
) أي : يَمْنَع
الذُّنُوب. قاله
السندي .
2-
روى الطبراني
والحاكم والبيهقي
وضعفه عن
ابن عباس
قال قال
رسول الله
صلى الله
عليه وسلم
: ( من اعتكف
يوما ابتغاء
وجه الله
جعل الله
بينه وبين
النار ثلاث
خنادق أبعد
مما بين
الخافقين ) . ضعفه الألباني في
السلسلة الضعيفة
(5345). والخافقان المشرق
والمغرب .
3-
روى الديلمي
عن عائشة
أن النبي
صلى الله
عليه وسلم
قال : ( من اعتكف إيمانا
واحتسابا غفر
له ما
تقدم من
ذنبه ) ضعفه
الألباني في
ضعيف الجامع
(5442) .
4-
روى البيهقي
وضعفه عن
الحسين بن
علي رضي
الله عنهما
قال: قال
رسول الله
صلى الله
عليه وسلم
: ( من اعتكف
عشرا في
رمضان كان
كحجتين وعمرتين
) . ذكره الألباني
في “السلسلة
الضعيفة” “. (518) وقال : موضوع .
(২১০) প্রশ্ন: রামাযান
মাসে হায়েয এসে গেলে করণীয় ও বর্জনীয় আমল কি কি??
উত্তর
:
হায়েয
অবস্থায় একজন মহিলার জন্য যে সকল কাজ করা বৈধ নয় সেগুলো হল:
একান্ত
প্রয়োজন ছাড়া কুরআত তিলাওয়াত করা বা আবরণ ছাড়া কুরআন স্পর্ষ করা।
কাবা
শরীফের তাওয়াফ।
মসজিদে
দীর্ঘ সময় অবস্থান করা।
স্বামীর
সাথে সহবাস করা।
সালাত
ও সিয়াম। সালাত কাজা করার প্রয়োজন নাই তবে সিয়ামগুলো পরবর্তীতে কাজা করা আবশ্যক।
এ
ছাড়া যত প্রকার ইবাদত আছে সবই করা জায়েয আছে। যেমন: কুরআনের তাফসীর পড়া (তবে কুরআনে
মূল টেক্সগুলো পড়া যাবে না), হাদিসের বই পড়া, ইসলামী বই-পুস্তক পড়া, ইসলামী জ্ঞানার্জন
করা, কুরআন তিলাওয়াত শুনা, ইসলামী আলোচনা শুনা, দুআ ও যিকির সমূহ পাঠ করা। এমন কি দুআ
ও যিকির হিসেবে বা রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) এর প্রয়োজনে কুরআনের আয়াত ও সূরা (যেমন সূরা ইখলাস,
ফালাক, নাস, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি) পড়াও জায়েয আছে।
(২১১) প্রশ্ন: অমুসলিমদেরকে
ভাই-বোন বলে সম্বোধন করা জায়েয আছে কি?
উত্তর:
আমাদের
জানা প্রয়োজন যে, প্রকৃত ভাতৃত্ব হল, ঈমানি ভ্রাতৃত্ব। অর্থাৎ প্রতিটি মুমিন-মুসলিম
পরস্পরে ভাই-ভাই। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ
إِخْوَةٌ
“মুমিনরা
তো পরস্পর ভাই-ভাই।” (সূরা হুজুরাত: ১০)
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
الْمُسْلِمُ أَخُو
الْمُسْلِمِ
“একজন
মুসলিম আরেক জন মুসলিমের ভাই।” (সহীহ বুখারী হা/২৪৪২ ও মুসলিম হা/২৫৮০)
ঈমানদারগণ
সকলেই আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর সন্তান ও মানুষ হিসেবে ভাই-বোন হওয়ার পাশাপাশি
ঈমানের বন্ধনে আবদ্ধ দীনী ভাই-বোন। আর এটাই প্রকৃত ভাতৃত্ব।
তবে
অমুসলিমদের অন্তর জয় করে তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে মাঝে-মধ্যে ভাইবোন
বলে সম্বোধন করা জায়েয আছে। কেননা মুসলিম-অমুসলিম সকলের আদি পিতা একই। এরা দীনী সম্পর্কের
দিক দিয়ে ভাই-বোন না হলেও বংশ পরম্পরায় একই পিতামাতার সন্তান এবং মানুষ হিসেবে সকলের
উৎস একটাই।
অবশ্য
এ সকল অমুসলিম তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, অগ্নিপূজক, মাজার পূজারী, নাস্তিক, শিয়া-রাফেযীদেরকে
সব সময় ভাইবোন বলে সম্বোধন করা ঠিক নয়। কারণ এতে তাদের মিথ্যা ও বাতিল ধর্মের প্রতি
মনে প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। এর পরিবর্তে ফ্রেন্ড-দোস্ত-বন্ধু ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার
করা যেতে পারে। আল্লাহু আলাম।
(২১২) প্রশ্ন:-শবে কদর
কি শুধু রামাযানের সাতাইশ রাতের জন্য নির্দিষ্ট?
উত্তর
:-আমাদের দেশে সাধারণত: মানুষ শুধু রামাযানের সাতাইশ তারিখে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী
করে এবং ধারণা করে এ রাতেই শবে কদর হবে। কিন্তু এ ধারণা সুন্নতের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ
নয়। কারণ, আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«
تَحَرَّوْا لَيْلَةَ
الْقَدْرِ فِى
الْوِتْرِ مِنَ
الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ
مِنْ رَمَضَانَ
“তোমরা
রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর।”
(সহীহ
বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: রোযা।)
আবু
হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«
أُرِيتُ لَيْلَةَ
الْقَدْرِ ثُمَّ
أَيْقَظَنِى بَعْضُ
أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا
فَالْتَمِسُوهَا فِى
الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ
»
স্বপ্নে
আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায়
আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।”
(সহীহ
বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত)
তবে
২৭ তারিখকে অনেক সালাফ লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাময় রাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু
তা নিশ্চিত নয়। অর্থাৎ তা হতেও পারে নাও পারে। তাই লাইলাতুল কদর পেতে হলে, রামযানের
শেষ দশকের সবগুলো রাত জাগার চেষ্টা করা উচিৎ। তা সম্ভব না হলে কমপক্ষে বেজড় পাঁচটি
রাত। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
(২১৩) প্রশ্ন: আমাদের
এলাকায় বা আশেপাশের এলাকায় ঈদগায়ে গিয়ে মহিলাদের ঈদের সালাত আদায়ের ব্যবস্থা নেই। এখন
আমরা কি ঘরে একাকি তা আদায় করতে পারব বা পরিবারের মহিলা সদস্যরা একত্রিত হয়ে জামাতে
সালাত আদায় করতে পারব?
উত্তর:
মহিলাদের
জন্য ঘরে একাকি বা শুধু মহিলারা আলাদাভাবে জামাআতে ঈদের সালাত আদায় করা শরিয়ত সম্মত
নয়।
ঈদ
মুসলমিদে জাতীয় উৎসব। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
সকলকে নিয়ে ঈদের সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন:
((لِيَخْرُجْ الْعَوَاتِقُ
ذَوَاتُ الْخُدُورِوَالْحُيَّضُ وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ
الْمُصَلَّى وَلْيَشْهَدْنَ
الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ
الْمُؤْمِنِينَ))
“কর্তব্য
হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা, এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবতী মহিলাগণ
নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরিক হবে।”
(বুখারী, হাদীস নং ৯২৭)
عَنْ أُمِّ
عَطِيَّةَ، قَالَتْ
أَمَرَنَا رَسُولُ
اللَّهِ ـ
صلى الله
عليه وسلم
ـ أَنْ
نُخْرِجَهُنَّ فِي
يَوْمِ الْفِطْرِ
وَالنَّحْرِ .
قَالَ قَالَتْ
أُمُّ عَطِيَّةَ
فَقُلْنَا أَرَأَيْتَ
إِحْدَاهُنَّ لاَ
يَكُونُ لَهَا
جِلْبَابٌ قَالَ
“
فَلْتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا
مِنْ جِلْبَابِهَا
”
.
উম্মু
আতিয়্যাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঈদের মাঠে) মহিলাদের নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
উম্মু আতিয়্যাহ রা. বলেন, আমরা বললাম, তাদের কারও যদি চাদর না থাকে, তার ব্যাপারে আপনার
কি মত? তিনি বলেন, তার বোন নিজ চাদর থেকে তাকে পরাবে।” (বুখারী ৩২৪, ৩৫১, ৯৭১, ৯৭৪,
৯৮০-৮১, ১৬৫২; মুসলিম ৮৯০/১-৩)
এ
বিষয়ে আরও অনেক বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে।
এ
সুন্নত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় আজও প্রচলিত আছে আল
হামদুলিল্লাহ। তবে আফসোসের বিষয়, বাংলাদেশে অধিকাংশ স্থানে এই সুন্নতটির অস্তিত্ব খুঁজে
পাওয়া যায় না!
সুতরাং
যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের
কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই
আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা।
তবে
নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য
আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী।
মহিলাগণ
যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে
বিরত থাকবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
(((أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ
فَمَرَّتْ عَلَى
قَوْمٍ لِيَجِدُوا
مِنْ رِيحِهَا
فَهِيَ زَانِيَة))ٌ
“যে
মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে অন্য মানুষের নিকট দিয়ে গমন করার ফলে তারা তার ঘ্রাণ পেল
সে মহিলা ব্যভিচারিণী।” (নাসাঈ, হাদীস নং ৫০৩৬)
উল্লেখ্য যে, অধিক বিশুদ্ধ মতে ঈদের সালাত সুন্নতে
মুয়াক্কাদা। সুন্নাত হচ্ছে, পুরুষের সাথে মহিলারাও ঈদের সালাতে অংশ গ্রহণ করা। তবে
ঈদগাহ বা যে মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হয় তা অনেক দূরে হওয়ার কারণে যাতায়াত সমস্যা
হলে অথবা সেখানে মহিলাদের জন্য সুব্যবস্থা না থাকলে বা অন্য কোনো কারণে ঈদের সালাত
পড়তে না পারলেও কোনো গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ এবং মহিলারা একাকি অথবা আলাদাভাবে ঈদের
সালাত আদায় করাও শরিয়ত সম্মত নয়।
আল্লাহু
আলাম।
ইফতারের পূর্বে দুআ কবুলের
সম্ভাবনা বেশি
(২১৪) প্রশ্ন: “ইফতারের
পূর্বে কি দুআ কবুল হয়” এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি কি সহীহ?
উত্তর:
রোযা
অবস্থায় দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না এ ব্যাপারে সহীহ হাদিস রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ
لاَ تُرَدُّ
دَعْوَةُ الْوَالِدِ،
وَدَعْوَةُ الصَّائِمِ،
وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ
‘‘তিন
ব্যক্তির দুআ অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দুআ, রোজাদারের দুআ এবং
মুসাফিরের দুআ।’’ (বাইহাকী ৩/৩৪৫, প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৭৯৭নং)
সুতরাং
রোজাদারের জন্য ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোন সময় দুআ কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ
সময়। বিশেষ করে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে মানুষ ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর ও ক্লান্ত-শ্রান্ত
থাকে। তাই সে সময় দুয়া কবুলের সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ এ ধরণের দুর্বল ও কষ্টকর অবস্থায়
দুআ করা হলে তা কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সেই
সাথে এ মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা হল:
إنَّ للصائمِ
عندَ فِطرِه
لَدعوةً ما
تُرَدُّ
“ইফতারের
সময় রোজাদারের জন্য এমন একটি দুআ রয়েছে যা ফিরিয়ে দেয়া হয় না।” (ইবনে মাজাহ, হাকিম)
এ
হাদিসটি সহীহ না কি জঈফ এ বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। আল্লামা আলবানী রহ.
এটিকে সনদগতভাবে জঈফ সাব্যস্ত করলেও ইমাম বূসীরী, ইবনে হাজার আসকালানী, আহমদ শাকের
সহ কতিপয় মুহাদ্দিস সহীহ/হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
মোটকথা,
এ হাদিসটিকে জঈফ ধরে নিলেও রোযা অবস্থায় দুআ কবুলের সহীহ হাদিস অনুযায়ী এবং ইফতারের
আগে রোজাদারদের দুর্বল অবস্থায় থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ইফতারের পূর্বে দুআ করলে কবুল হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে ইনশাআল্লাহ। তাই রোজাদারের উচিৎ, সারা দিন রোযা অবস্থায় দুয়া করার সুযোগকে
হাত ছাড়া না করা। বিশেষ করে ইফতারে আগের সময়টিকে দুআর জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া। আল্লাহু
আলাম।
(২১৫) রোযা অবস্থায় বিশেষ করে ইফতারের পূর্বে দুআ কবুলের সম্ভাবনা
বেশি
রোযা
অবস্থায় দুআ করলেও তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন:
ثلاث دعوات
لا ترد
: دعوة الوالد
لولده ،
ودعوة الصائم
ودعوة المسافر
“তিন
ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। সন্তানদের জন্য পিতার দুআ, রোজাদারের দুআ ও মুসাফিরের
দুআ।” (বায়হাকী, সহীহুল জামে হা/২০৩২)
তবে
বিশেষকরে ইফতারে পূর্বে দুআ কবুলের সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন:
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إنَّ للصائمِ
عندَ فِطرِه
لَدعوةً ما
تُرَدُّ قال
سمِعتُ عبدَ
اللهِ يقولُ
عندَ فِطرِه
: اللهم إني
أسألُكَ برحمتِكَ
التي وسِعَتْ
كلَّ شيءٍ
أن تغفِرَ
لي – زاد
في روايةٍ
: ذُنوبي
“রোজাদারের
ইফতারের সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।” তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. কে
ইফতার করার সময় বলতে শুনেছি:
اللهم إني
أسألُكَ برحمتِكَ
التي وسِعَتْ
كلَّ شيءٍ
أن تغفِرَ
لي
”হে
আল্লাহ, তোমার সর্বব্যাপী দয়ার ওসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
অন্য বর্ণনায়: “আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।”
ইমাম
বুসীরী তার ইতহাফুল মাহারা গ্রন্থে (৩/১০২) উক্ত হাদিসটির ব্যাপারে বলেন, হাদিসটি সহীহ।
আর এর সমর্থনে আরও হাদিস রয়েছে।
ইবনে
হাজার রহঃ “রোজাদারের ইফতারের সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।” হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলে
সাব্যস্ত করেছেন। [ আল ফাতুহাত আর রাব্বানিয়াহ ৪/৩৪২)]
আহমদ
শাকিরও উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। [উমদাতুত তাফসীর ১/২২৫)০
তবে
ইমাম আলবানী হাদিসটিকে জঈফ বা দুর্বল বলেছেন। (জঈফ ইবনে মাজাহ হা/৩৪৫)
মোটকথা,
হাদিসটি সহীহ/জঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ইফতারের
সময় মানুষ ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকে, ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর থাকে। এমন কষ্টকর পরিস্থিতিতে
দুআ করলে তা কবুলের সম্ভাবনা থাকে-যেমনটি বলেছেন আল্লামা উসাইমীন রহ.।
সুতরাং
রোযা অবস্থায় সারাদিন বেশী বেশী দুআ করার চেষ্টা করার উচিৎ। বিশেষ করে ইফতারে সময়।
হতে পারে, দয়াময় আল্লাহ আমাদের দুআ কবুল করবেন। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
(সমাপ্ত)
(১) প্রথম পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(২) দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৩) তৃতীয় পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
(৪) চতুর্থ পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই
শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ
কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে
ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে,
আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের
প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর
তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও
একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে
বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment