Friday, March 1, 2019

সহিহ বুখারীর ১০টি বৈজ্ঞানিক হাদিস

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহিহ বুখারীর ১০টি বৈজ্ঞানিক হাদিস

 

(১) জ্বর হওয়া প্রসঙ্গেঃ

(ক) আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭২৫, ৫৭২৩, ৫৭২৬, ৩২৬৩, ৩২৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৫৬৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২১২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ফাতিমাহ বিনত্ মুনযির (রহ.) হতে বর্ণিত যে, আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট যখন কোন জ্বরে আক্রান্ত স্ত্রীলোকদেরকে দু‘আর জন্য নিয়ে আসা হত , তখন তিনি পানি হাতে নিয়ে সেই স্ত্রীলোকটির জামার ফাঁক দিয়ে তার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২১১,আহমাদ ২৬৯৯২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২)  খাবারের উপর মাছি পড়া প্রসঙ্গেঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারও কোন খাবার পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিবে, তারপরে ফেলে দিবে। কারণ, তার এক ডানায় থাকে আরোগ্য, আর আরেক ডানায় থাকে রোগ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৮২, ৩৩২০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গবেষণা

প্রায় ১৪০০ বছর আগে নাযিল হওয়া আল-কুরআনের বিশ্লেষণ করে মানুষ মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) ১৪০০ বছর আগে মাছি প্রসঙ্গে যে কথাটি বলেছিলেন, তা আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে। ছহীহ বুখারীর হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কারো পাত্রে মাছি পতিত হয়, সে যেন উক্ত মাছিটিকে ডুবিয়ে দেয়’। (সহিহ বুখারী হা/৫৭৮২)।

এ বিষয়ে কিং আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ওয়াজিহ বায়েশরী হাদীছটির আলোকে মাছি নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা চালান। জীবাণুমুক্ত কিছু পাত্রের মধ্যে কয়েকটি মাছি ধরে নিয়ে জীবাণুমুক্ত টেস্টটিউবের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন। তারপর নলটি একটি পানির গ্লাসে উপুড় করেন। মাছিগুলো পানিতে পতিত হওয়ার পর উক্ত পানি থেকে কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পান, সেই পানিতে অসংখ্য জীবাণু রয়েছে। তারপর জীবাণুমুক্ত একটি সূঁচ দিয়ে মাছিকে ঐ পানিতেই ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, সেই পানিতে আগের মতো আর জীবাণু নেই, বরং কম। তারপর আবার ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে আবার পরীক্ষা করেন। এমনিভাবে কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখেন যে, যত বার মাছিকে ডুবিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন, ততই জীবাণু কমেছে। অর্থাৎ তিনি প্রমাণ পেলেন যে, মাছির একটি ডানায় রোগজীবাণু রয়েছে এবং অপরটিতে রোগনাশক ওষুধ রয়েছে।

সম্প্রতি সঊদী আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত অষ্টম চিকিৎসা সম্মেলনে কানাডা থেকে দু’টি গবেষণা রিপোর্ট পাঠিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে যে, মাছিতে এমন কোন বস্ত্ত রয়েছে যা জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। একই বিষয়ে জার্মান ও ব্রিটেন থেকে প্রাপ্ত রিসার্চগুলো ধারাবাহিক সংগ্রহের মাধ্যমে সম্প্রতি একটি বই বেরিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, মাছি যখন কোন খাদ্যে বসে, তখন তার জীবাণুযুক্ত ডানাটি খাদ্যে ডুবিয়ে দেয়। অথচ তার অপর ডানায় থাকে প্রতিরোধক ওষুধ। ফলে মাছিকে ঐ খাবারে ডুবিয়ে দেয়া হ’লে অপর ডানার জীবাণু প্রতিরোধক খাদ্যের সঙ্গে মিশে মারাত্মক জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে দেয় এবং সেই খাদ্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অনুকূল থাকে। (আল্লাহর অহি ব্যতীত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) দ্বীন বিষয়ে কোন কথা বলেন না (নাজম ৩-৪)। তাঁর যবান দিয়ে কোন মিথ্যা কথা বের হয় না। অতএব হে মানুষ! সব ছেড়ে ইসলামমুখী হও। কুরআন ও হাদীছ মেনে নাও। দুনিয়া ও আখেরাতে সুখী হও (স.স.)।

(৩) কালো জিরা প্রসঙ্গেঃ

খালিদ ইবনু সাদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ’আতীক। তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালো জিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা, ’আয়িশাহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো জিরা ’সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ ’সাম’ কী? তিনি বললেনঃ মৃত্যু। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৮৭, সুনান সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৪৯,  আহমাদ ২৪৫৪৬, ২৪৬০৯, সহীহাহ ৮৬৩, আধুনিক প্রকাশনী ৫২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কালো জিরার ব্যাখ্যা

মূলতঃ বিষয়টি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। যখন আল্লাহর হুকুম হয়, তখনই এর কার্যকারিতা প্রকাশ পায়, নতুবা নয়। উল্লেখ্য যে, কালোজিরার সঠিক ব্যবহারের নিয়ম জানা না থাকার কারণেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। তাছাড়া কারো যদি কোন রোগে মৃত্যু নির্ধারিত থাকে তাহ’লে কোন ঔষধই কাজ করবে না। (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৮/৬১)।

কোন কোন বিদ্বান বলেন, এটি সর্বরোগের জন্য নয়, মূলত ঠান্ডাজনিত যে কোন রোগের মহৌষধ। (ফাৎহুল বারী ১০/১৪৪-৪৫; যাদুল মা‘আদ ৪/২৯৭)।

ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, আম দ্বারা খাছ উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে। কারণ পৃথিবীতে এমন কোন উদ্ভিদ নেই যার মধ্যে সকল প্রকারের ঔষধি গুণ রয়েছে। (ফাৎহুল বারী ১০/১৪৫)।

কালোজিরা যেকোন মৌসুমী রোগেও উপকার করে। আর এজন্য জানতে হবে সঠিক ব্যবহার। (ফাৎহুল বারী ১০/১৪৫; ঊমদাতুল কারী ২১/২৩৭; তোহফাতুল আহওয়াযী ৬/১৬৩-৬৪)।

কালোজিরা রোগ ভেদে বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়া যায়। কখনো শুধুই দানা, কখনো ৫/৭টি বা ২১টি দানা পিষে মধুর সাথে, কখনো যয়তুন তেলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া বা ড্রপ হিসাবে নাকে  দেওয়া ইত্যাদি রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে। (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১০/১৪৪)।

এজন্য অধিকতর গবেষণা করে এর সঠিক প্রয়োগ ও পদ্ধতি আবিষ্কার করা যরূরী। একটি যুদ্ধাভিযানে গালিব বিন আবজার অসুস্থ হ’লে ইবনু আবী আতীক তাঁকে দেখতে আসেন। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা এই কালোজিরা সাথে রেখ। এথেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যায়তুনের কয়েক ফোটা তেল ঢেলে দিয়ে তা নাকের উভয় ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবেশ করাবে। কেননা আয়েশা (রাঃ) আমার নিকটে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘এই কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ঔষধ’। (বুখারী হা/৫৬৮৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৪৯; ছহীহাহ হা/১০৬৯)।

অতএব আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রেখে ঔষধ হিসাবে বিভিন্ন উপায়ে কালোজিরা ব্যবহার করতে হবে। তাহ’লেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

(৪) রৌপ্যের বাসনে পান করা প্রসঙ্গেঃ

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)...নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক রৌপ্যের বাসনে পান করে সে যেন তার পেটের ভিতরে জাহান্নামের আগুন প্রবেশ করায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৫, আহমাদ ২৬৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২১২, ইসলামিক সেন্টার ৫১১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫)  জাহান্নামের নিঃশ্বাস প্রসঙ্গেঃ

জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট এ বলে নালিশ করেছিলো, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচন্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচন্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৭, ৩২৬০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৮২-৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১, আহমাদ ৭২৫১, ৭২৪৭, সুনান আততিরমিযী ২৫৯২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪৩১৯, দারেমী ২৮৮৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০৪ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১০ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬)  হাঁচি প্রসঙ্গেঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তির হাই উঠলে সে যেন তা যথাসম্ভব রোধ করে। কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তার প্রতি হাসে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২২৬, ৩২৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ৫০২৮, সুনান আত তিরমিযী ২৭৪৭, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০০৪৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭)  ভালো স্বপ্ন ও মন্দ স্বপ্ন প্রসঙ্গেঃ

আমর আন নাকিদ (রহঃ), ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) .... আবূ সালামাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যাতে ভয় পেয়ে জ্বর জ্বর ভাব অনুভব করতাম। তবে আমাকে কম্বল দিয়ে ঢাকতে হতো না। অবশেষে আমি আবূ কাতাদাহ্ (রাযিঃ) এর সঙ্গে দেখা করলাম এবং এ বিষয়টি তার নিকট বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি الرُّؤْيَا সু-স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে, আর الْحُلْمُ খারাপ স্বপ্ন শাইতানের তরফ হতে। অতএব তোমাদের কেউ যখন এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন যেন সে তার বাম পাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে (অর্থাৎ- আউয়ুবিল্লাহ্ পড়ে), তাহলে সেটি তার ক্ষতি করবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৮৪, ৩২৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭০০, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম:

এক. ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।

দুই. খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে এসে থাকে।

তিন. খারাপ স্বপ্ন দেখলে সাথে সাথে তিনবার বাম দিকে থুথু ফেলে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বলতে হবে। তবে সত্যিকার থুথু ফেলবে না। মানে মুখ থেকে পানি নির্গত হবে না। শুধু আওয়ায করবে। কেননা হাদীসে নাফাস শব্দ এসেছে। যার অর্থ এমন হাল্কা থুথু যাতে পানি বা শ্লেষ্মা নেই।

চার. এই আমলটুকু করলে খারাপ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।

পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না।

ছয়. ভালো স্বপ্ন দেখলে তার কাছেই বর্ণনা করবে যে তাকে ভালোবাসে। শত্রু ভাবাপন্ন বা হিংসুক ধরনের কারো কাছে ভালো স্বপ্নও বর্ণনা করতে নেই। কারণ, হতে পারে ভালো স্বপ্নটির একটি খারাপ ব্যাখ্যা সে শুনিয়ে দেবে। ফলে অস্থিরতা, দুঃচিন্তা ও উদ্বেগ বেড়ে যাবে।

দেখুন ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখেছিলেন:

“যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা, আমি দেখেছি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়।’ সে বলল, হে আমার পুত্র, তুমি তোমার ভাইদের নিকট তোমার স্বপ্নের বর্ণনা দিও না, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু”। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪-৫)।

এ আয়াতে আমরা দেখলাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখে তার পিতাকে বর্ণনা করলেন। আর পিতা আল্লাহ তা‘আলার নবী ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাকে স্বপ্নের কথা নিজ ভাইদের বলতে নিষেধ করলেন। কারণ, ভাইয়েরা তাকে ভালোবাসত না, বরং হিংসা করত।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৮৩, ৬৯৯৪, আধুনিক প্রকাশনী- ,৬৪৯৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

’উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।

সাবিত, হুমায়দ, ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ্ ও শুআয়ব (রহ.) আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একই রূপ বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬৪, আহমাদ ১২০৩৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যেখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এ জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে এবং অন্যের কাছে তা বর্ণনা করে। আর যদি এর বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়। আর কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৮৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখে তখন যেন তার থেকে আশ্রয় চায় এবং বাম দিকে থু থু ফেলে। তাহলে সে স্বপ্ন আর তার কোন ক্ষতি করবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৮৬, ৩২৭২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮)  ঘুমন্ত ব্যক্তির কানে শয়তানের পেশাব করা প্রসঙ্গেঃ

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল। তখন তিনি বললেন, সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বললেন, তার কানে শয়তান পেশাব করেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৭০, ১১৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) সূর্য উদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় করা প্রসঙ্গেঃ

আমর ইবনু আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় তাশরীফ আনলে আমিও মদীনায় চলে আসলাম। তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমাকে সালাত  সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করো। এরপর সালাত হতে বিরত থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঠে উপরে না আসে। কেননা, সূর্য উদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে। আর এ সময় কাফিরগণ (সূর্য পূজারীরা) একে সিজদা্  করে। তারপর সালাত পড়ো। কেননা এ সময়ে (আল্লাহর কাছে বান্দার) সালাতের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া বর্শার উপর উঠে না আসে ও জমিনের উপর না পড়ে (অর্থাৎ ঠিক দুপুরের সময়), এ সময়ও সালাত হতে বিরত থাকো। এজন্য যে এ সময় জাহান্নামকে গরম করা হয়। তারপর ছায়া যখন সামান্য ঢলে যাবে তখন সালাত আদায় করো। সালাতের সময়টা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) উপস্থিতি ও সাক্ষ্য দেয়ার সময় যে পর্যন্ত তুমি ’আসরের সালাত আদায় না করবে। তারপর আবার সালাত হতে বিরত থাকবে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কারণ সূর্য শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায়। এ মুহূর্তে সূর্য পূজক কাফিররা সূর্যকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে।

‘আমর ইবনু ’আবাসাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি আবার আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! উযূর ব্যাপারে কিছু বয়ান করুন। তিনি বললেন, তোমাদের যে লোক উযূর পানি তুলে নিবে, কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে নেবে। তাতে তার চেহারার, মুখের ও নাকের ছিদ্রের পাপরাশি ঝরে যায়। সে যখন তার চেহারাকে আল্লাহর নির্দেশ মতো ধুয়ে নেয় তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর সে যখন তার দু’টি হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেয় তখন দু’হাতের পাপ তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে বের হয়ে পানির ফোটার সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে যখন তার মাথা মাসেহ করে তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর যখন সে তার দু’ পা গোছাদ্বয়সহ ধৌত করে তখন তার দু’ পায়ের পাপ তার আঙ্গুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে উযূ  সমাপ্ত করে যখন দাঁড়ায় ও সালাত  আদায় করে এবং আল্লাহর উপযুক্ত প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে, আল্লাহর জন্যে নিজের মনকে নিবেদিত করে, তাহলে সালাতের শেষে তার অবস্থা তেমন (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৭৩,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩২, আহমাদ ৪৬১২ ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮০০, ইসলামীক সেন্টার ১৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

হাদীছটিতে বলা হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ফজরের ছালাত পড়বে, অতঃপর সূর্যোদয়কালে ছালাত আদায় করবে না, যতক্ষণ না তা কিছুটা উপরে উঠে। কেননা, যখন তা উদিত হয়, তখন শয়তানের দুই শিং-এর মধ্য দিয়ে উদিত হয় এবং এসময় কাফেররা তাকে সিজদা করে। ...অতঃপর ছালাত থেকে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না সূর্য ডুবে যায়। কেননা তা শয়তানের দুই শিং-এর মধ্য দিয়ে অস্তমিত হয় এবং এসময় কাফেররা তাকে সিজদা করে। (বুখারী হা/৩২৭৩; মুসলিম হা/৮৩২; মিশকাত হা/১০৪২)।

কাফের-মুশরিকরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যের পূজা করে। এসময় শয়তান সূর্যের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সে চায় যে, কাফেররা যেন তারই পূজা করে। এসময় শয়তান এমনভাবে দাঁড়ায়, যেন সূর্য তার মাথার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। সেকারণ হাদীছে বলা হয়েছে যে, ‘সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে উদিত হয়’। এ সময় ছালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়ার এটাই মূল কারণ। (ফাৎহুল বারী ২/৬০)।

হাদীছে শয়তানের শিং বলতে তার মাথার উভয় পার্শ্বকে বুঝানো হয়েছে। (নববী, শরহ মুসলিম ৬/১১২)।

উল্লেখ্য যে, কারণবশতঃ ছালাত সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন ক্বাযা ছালাত, তাহিইয়াতুল মসজিদ, তাহিইয়াতুল ওযূ ও জুম‘আর সুন্নাত। কারণ এগুলির ব্যাপারে নির্দিষ্ট দলীল রয়েছে।

(১০) আজওয়া উৎকৃষ্ট খেজুর খাওয়া প্রসঙ্গেঃ

সা’দ তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাতটি আজওয়া উৎকৃষ্ট খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪৪৫, ৫৭৬৮, ৫৭৬৯, ৫৭৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৪৭,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৯০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৭৬, মুসনাদে আহমাদ ১৫৭১, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৮৭, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৩৪৭৭, সহীহুল জামি‘ ১১০৩০, আল মুজামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৩১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আপনি কি জান্নাতী হুরদের বিয়ে করতে চান?

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আপনি কি জান্নাতী হুরদের বিয়ে করতে চান?   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো ক...