Search This Blog

Friday, July 3, 2020

সুন্নাত সালাতসমূহের ফজিলত ও ভ্রান্তি নিরসন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহিহ হাদিসের আলোকে

সুন্নাত সালাতসমূহের ফজিলত ও  ভ্রান্তি নিরসন

প্রত্যেক সজ্ঞান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার সালাত আদায় করা ফরজ। কুরআন ও হাদিসে এ সকল সালাতের ফজিলতের কথা যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনি এর গুরুত্ব ও আবশ্যকীয়তার কথাও উল্লেখ রয়েছে।

ফরয ব্যতীত সকল ছালাতই নফল বা অতিরিক্ত। তবে যেসব নফল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিয়মিত পড়তেন বা পড়তে তাকীদ করতেন, সেগুলিকে ফিক্বহী পরিভাষায়  ‘’সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ’’ বা ‘’সুন্নাতে রাতেবাহ’’ বলা হয়। যেমন ফরয ছালাত সমূহের আগে-পিছের সুন্নাত সমূহ। এই সুন্নাতগুলি কাযা হলে তা আদায় করতে হয়। যেমন যোহরের প্রথম দুই রাকআত বা চার রাকআত সুন্নাত ক্বাযা হলে তা যোহর ছালাত আদায়ের পরে পড়তে হয় এবং ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত ক্বাযা হলে তা ফজরের ছালাতের পরেই পড়তে হয়। (মিশকাত১০৪৩; আবুদাঊদ ১২৬৫-৬৭;  ইবনু মাজাহ, মিশকাত ১০৪৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুহাম্মাদ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ক্বায়স ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে দেখলেন যে, সে ফজরের (ফজরের) সালাতের পর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) বললেন, ভোরের সালাত দু’ রাক্’আত, দু’ রাক্’আত। সে ব্যক্তি বললো, ফজরের (ফজরের) ফরয সালাতের পূর্বের দু’ রাক্’আত সালাত আমি আদায় করিনি। সে সালাতই এখন আদায় করেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৫৪, তিরমিযী ৪২২, আহমাদ ২৩৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এজন্য তাকে বেলা ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না।

২য় প্রকার সুন্নাত হলো ‘গায়ের মুওয়াক্কাদাহ,, যা আদায় করা সুন্নাত এবং যা করলে নেকী আছে, কিন্তু তাকীদ নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘দুই আযানের মধ্যে’ অর্থাৎ আযান ও এক্বামতের মাঝে ছালাত রয়েছে (২ বার)। তৃতীয়বারে বললেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে। (মিশকাত ৬৬২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আছে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেনঃ এই সালাত ওই ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়, ঐ ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৪, ৬২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৮, সুনান আবূ দাঊদ ১২৮৩, সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ৬৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৫, সুনানে ইবনু মাজাহ্ ১১৬২, আহমাদ ১৬৭৯০, ১৬৩৪৮, ২০০২১, ২০০৩৭, ২০০৫১; দারিমী ১৪৪০, ১৪৮০, সহীহ আল জামি ২৮৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেমন আছরের পূর্বে দুই বা চার রাক‘আত সুন্নাত, মাগরিব ও এশার পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত। (মিশকাত ১১৭১-৭২; মিশকাত ১১৬৫, ১১৭৯-৮০; মিশকাত ৬৬২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪২-৪৩)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত  আদায় কর। মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, ‘‘যিনি ইচ্ছা করেন’’ (তিনি তা পড়বেন)। বর্ণনাকারী বলেনঃ তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুষ একে সুন্নাত না করে ফেলে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮৩, সুনান আবূ দাঊদ ১২৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাতের (ফরযের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। এ চার রাক্’আতের মধ্যখানে সালাম ফিরানোর দ্বারা নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা) এবং তাদের অনুসারী মুসলিম ও মু’মিনীনদের মাঝে পার্থক্য করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের পূর্বে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭২, সুনান আবূ দাঊদ ১২৭২)। হাদিসের মানঃ শা'জ।

(ঘ) মুখতার ইবনু ফুলফুল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলাম, ’আসরের পর নফল সালাতের ব্যাপারে। তিনি (উত্তরে) বললেন। ’উমার (রাঃ) ’আসরের পর নফল সালাত আদায়কারীদের হাতের উপর প্রহার করতেন। আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মাগরিবের সালাতের (ফরযের) পূর্বে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতাম। (এ কথা শুনে) আমি আনাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও কি এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদায় করতে দেখতেন। কিন্তু আদায় করতে বলতেন না। আবার বাধাও দিতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মদীনায় ছিলাম। (এ সময়ে অবস্থা এমন ছিল যে, মুয়াযযিন মাগরিবের আযান দিলে (কোন কোন সাহাবা (সাহাবা) ও তাবি’ঈ) মসজিদের খুঁটির দিকে দৌড়াতেন আর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে আরম্ভ করতেন। এমনকি কোন মুসাফির লোক মসজিদে এসে অনেক লোককে একা একা সালাত আদায় করতে দেখে মনে করতেন (ফরয) সালাত বুঝি সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর লোকেরা এখন সুন্নাত পড়ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬৮২)।

তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাগরিবের ব্যাপারে বিশেষভাবে বলেন, ‘তোমরা মাগরিবের ছালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত পড় (২ বার)। তৃতীয়বারে বললেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে’। (মিশকাত হা/১১৬৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত  আদায় কর। মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, ‘‘যিনি ইচ্ছা করেন’’ (তিনি তা পড়বেন)। বর্ণনাকারী বলেনঃ তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুষ একে সুন্নাত না করে ফেলে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮৩, সুনান আবূ দাঊদ ১২৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এর দ্বারা নফল ছালাতের নেকী যেমন পাওয়া যায়, তেমনি মুছল্লী বৃদ্ধি পায়। যাতে জামা‘আতের নেকী বেশী হয়। (মিশকাত হা/১০৬৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সব সালাতের মাঝে এ দু’টি সালাত (ফাজর ও ’ইশা) মুনাফিক্বদের জন্যে খুবই কষ্টসাধ্য। তোমরা যদি জানতে এ দু’টি সালাতের মাঝে কত পুণ্য, তাহলে তোমরা হাঁটুর উপর ভর করে হলেও সালাতে আসতে।

সালাতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাতারের মতো (মর্যাদাপূর্ণ)। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফাযীলাত জানতে তবে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাড়াতাড়ি পৌঁছার চেষ্টা করতে। আর একা একা সালাত আদায় করার চেয়ে অন্য একজন লোকের সঙ্গে মিলে সালাত আদায় করা অনেক সাওয়াব। আর দু’জনের সাথে মিলে সালাত আদায় করলে একজনের সাথে সালাত আদায় করার চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যত বেশী মানুষের সঙ্গে মিলে সালাত আদায় করা হয়, তা আল্লাহর নিকট তত বেশী প্রিয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৬৬, সুনান আবূ দাঊদ ৫৫৫, সুনান আননাসায়ী ৮৪৩, সহীহ আত্ তারগীব ৪১১)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ফরয ও সুন্নাতের জন্য স্থান পরিবর্তন ও কিছুক্ষণ দেরী করে উভয় ছালাতের মাঝে পাথর্ক্য করা উচিৎ। (আবুদাঊদ হা/১০০৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি ফারয সালাত আদায়ের পর সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা ডানে বা বাম সরে নফল সালাত আদায় করতে অপারগ? হাম্মাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, ফারয সালাত আদায়ের পর। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০০৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৭, সুনান আবূ দাঊদ ১০০৬, আহমাদ ৯২১২, ৪২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুন্নাত বা নফল ছালাতসমূহ মসজিদের চেয়ে বাড়ীতে পড়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বাড়ীতে নফল ছালাত অধিক উত্তম আমার এই মসজিদে ছালাত আদায়ের চাইতে; ফরয ছালাত ব্যতীত’। (আবুদাঊদ হা/১০৪৪; মিশকাত হা/১৩০০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মানুষ তার ঘরে ফরয সালাত ব্যতীত যে সালাত আদায় করবে তা এ মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে ভাল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩০০, সুনান আবূ দাঊদ ১০৪৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৪৫০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৯৯৫, সহীহ আল জামি ৩৮১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীতে কিছু ছালাত (অর্থাৎ সুন্নাত-নফল) আদায় কর এবং ওটাকে কবরে পরিণত করো না’। (মিশকাত হা/৭১৪, ১২৯৫, আবুদাঊদ হা/১০৪৩)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে কবরে পরিণত করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৫-১৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ১০৪৩, সুনান আননাসায়ী ১৫৯৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৪৫১, সহীহ আল জামি ১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমাযান) মাসে মসজিদের ভিতর চাটাই দিয়ে একটি কামরা তৈরি করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখানে কয়েক রাত (তারাবীহ) সালাত আদায় করলেন। আস্তে আস্তে তাঁর নিকট লোকজনের ভিড় জমে গেল। এক রাতে তাঁর কণ্ঠস্বর না শুনতে পেয়ে লোকেরা মনে করেছে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে গেছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাকারী দিলো, যাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের যে অনুরাগ আমি দেখছি তাতে আমার আশংকা হচ্ছে এ সালাত না আবার তোমাদের ওপর ফরয হয়ে যায়। তোমাদের ওপর ফরয হয়ে গেলে তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না। অতএব হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের বাড়ীতে সালাত আদায় কর। এজন্য ফরয সালাত ব্যতীত যে সালাত ঘরে পড়া হয় তা উত্তম সালাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৯০, মুসলিম ৭৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম নববী বলেন, বাড়ীতে নফল ছালাত আদায়ে উৎসাহ দানের উদ্দেশ্য এটা হ’তে পারে যে, সেটা গোপনে হয় এবং ‘রিয়া’ মুক্ত হয়, বাড়ীতে বরকত হয়, আল্লাহর রহমত এবং ফেরেশতা মন্ডলী নাযিল হয় ও শয়তান পালিয়ে যায়। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৩৬ পৃঃ)।

সাধারণ নফল ছালাতের জন্য কোন রাক‘আত নির্দিষ্ট নেই; যত খুশী পড়া যায়। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৩৭ পৃঃ; ইরওয়া হা/৪৫৭, ২/২০৯ পৃঃ; ইরওয়া হা/৪৬৯-৭০)।

তবে রাতের বিশেষ নফল অর্থাৎ তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের ছালাত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ১১ রাক‘আতের ঊর্ধ্বে পড়েননি। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়া ২/১৯১ পৃঃ)।

একই নফল ছালাত কিছু অংশ দাঁড়িয়ে ও কিছু অংশ বসে পড়া যায়। (মুসলিম, সুনান, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৩৭ পৃঃ)।

ফজরের সুন্নাত পড়ার পরে ডান কাতে স্বল্পক্ষণ শুতে হয়। (মিশকাত হা/১১৮৮, ১২০৬ ‘রাত্রির ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩১; মির‘আত ৪/১৬৮, ১৯১ পৃঃ)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ফাজ্‌রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত (সুন্নাত) সালাত আদায় করবে। সে যেন (জামা’আত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) ডান পাশে শুয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪২০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১১২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৪৬৮, সহীহ আল জামি ৬৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাতের পর ফাজর (ফজর) পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। প্রতি দু’ রাক্’আত সালাতের পর সালাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্’আত দ্বারা বিতর আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্’আতে এত লম্বা সিজদা্ করতেন যে, একজন লোক সিজদা্ হতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়াযযিনের ফাজ্‌রের (ফজরের) আযানের আওয়াজ শেষে ফজরের (ফজরের) সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু’ রাক্’আত হালকা সালাত  আদায় করতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়াযযিন ইক্বামাত এর অনুমতির জন্যে তাঁর কাছে এলে তিনি মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুন্নাত ও নফলের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

(১) যে ব্যক্তি দিবারাত্রিতে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। যোহরের পূর্বে চার, পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই ও ফজরের পূর্বে দুই’। (মিশকাত হা/১১৫৯)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফারযের পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১৫, সহীহ আল জামি ৬৩৬২, সুনান আননাসায়ী ১৭৯৬-৯৯, ১৮০১-২, ১৮০৪, ১৮০৬, ১৮০৮-১০; আহমাদ ২৬২২৮, ২৬৮৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৬৪, ইসলামীক সেন্টার ১৫৭১, সহীহাহ ২৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনে ওমর (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে যোহরের পূর্বে দু‘রাক‘আত সহ সর্বমোট দশ রাক‘আতের নিয়মিত আমলের কথা এসেছে। (মিশকাত হা/১১৬০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪০-৪১ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 (গ) যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)..আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুহরের পূর্বে দু’ রাকাআত, পরে দু’ রাকাআত, মাগরিবের সালাতের পর দু’ রাকাআত, ইশার সালাতের পর দু’ রাকাআত এবং জুমুআর সালাতের পর দু’ রাকাআত সালাত আদায় করেছি। তবে মাগরিব, ইশা ও জুমু’আর সালাতের পরের দু’ রাকাআত সালাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার বাড়ীতে আদায় করেছি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৮, ১১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

.‘ক্বিয়ামতের দিন (মীযানের পাল্লায়) ফরয ইবাদতের কমতি হলে প্রতিপালক আল্লাহ বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল ইবাদত আছে কি-না। তখন নফল দিয়ে তার ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর তার অন্যান্য সকল আমল সম্পর্কেও অনুরূপ করা হবে (যেমন ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদিতে)। (আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; মিশকাত হা/১৩৩০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে ’আমলের হিসাব হবে, তা হলো সালাত। যদি তার সালাত সঠিক হয় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট সব ’আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩০, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৩, নাসায়ী ৪৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫৪০, সহীহ আল জামি ২০২০; সুনান আবূ দাঊদ ৮৬৪, ৮৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি বলেন, তোমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রির ন্যায় ঘনঘোর ফিৎনাসমূহে পতিত হবার আগেই নেক আমল সমূহের প্রতি দ্রুত ধাবিত হও। যখন লোকেরা মুমিন অবস্থায় সকালে উঠবে ও কাফের অবস্থায় সন্ধ্যা করবে এবং মুমিন অবস্থায় সন্ধ্যা করবে ও কাফির অবস্থায় সকালে উঠবে। সে দুনিয়াবী স্বার্থের বিনিময়ে তার দ্বীনকে বিক্রি করবে। (মিশকাত হা/৫৩৮৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা ভালো ’আমলের দিকে দ্রুত অগবর্তী হও ঘুটঘুটে তিমির রাত্রির অংশ সদৃশ ফিতনার পতিত হওয়ার পূর্বেই যখন কোন লোক ভোরে উঠবে ঈমানদার হয়ে আর সন্ধ্যা করবে কুফরী অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে মু’মিন অবস্থায় আর প্রভাতে উঠবে কাফির হয়ে। সে ইহকালীন সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দীন ও ঈমানকে বিক্রয় করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৯৫, সহীহুল জামি ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব) সিলসিলাতুস সহীহাহ ৭৫৮, মুসনাদে আহমাদ ৮০১৭, আবূ ইয়া'লা ৬৫১৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭০৪, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৫৫৮, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২৭৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ২২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ চারিদিকে অন্যায় ছেয়ে যাবে। সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর হবে। নেক কাজের পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেমন আজকাল শিরক ও বিদআতযুক্ত আমলকে নেক আমল বলা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ছহীহ সুন্নাহভিত্তিক আমলকে বাতিল বলা হচ্ছে।

(৩) খাদেম রবীআহ বিন কাব একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট দাবী করেন যে, আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি বেশী বেশী সিজদার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য কর’। অনুরূপ একটি প্রশ্নে আরেক খাদেম ছাওবানকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তুমি অধিকহারে সিজদা কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রতিটি সিজদার মাধ্যমে আল্লাহ তোমার সম্মানের স্তর একটি করে বৃদ্ধি করবেন ও তোমার থেকে একটি করে গোনাহ দূর করে দিবেন। (মিশকাত হা/৮৯৬-৯৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মা’দান ইবনু ত্বলহাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যে কাজ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি খামোশ থাকলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি খামোশ (নীরব) রইলেন। তৃতীয়বার তাকে আবার একই প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজেও এ বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা্ করতে থাকবে। কেননা আল্লাহকে তুমি যত বেশি সিজদা্ করতে থাকবে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা বাড়াতে থাকবেন। তোমার অতটা গুনাহ উক্ত সিজদা্ দিয়ে কমাতে থাকবেন। মা’দান বলেন, এরপর আবুদ্ দারদার সাথে দেখা করে তাকেও আমি একই প্রশ্ন করি। তিনিও আমাকে সাওবান (রাঃ)যা বলেছিলেন তাই বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৭,  ৮৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২০, সুনান আননাসায়ী ১১৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪২৩, আহমাদ ২২৩৭৭, সুনান আততিরমিযী ৩৮৮, ১১৩৯; আহমাদ ২১৮৬৫, ১১৯০৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমার বান্দা যে সমস্ত ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে থাকে, তার মধ্যে ঐ ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় আর কোন ইবাদত নেই যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি-না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫০২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নফল সালাত ঘরে আদায় করা ভাল

ফরয সালাত বিধিবদ্ধ হয়েছে দ্বীনের প্রচার ও তার প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে। তাই ফরয সালাত প্রকাশ্যভাবে লোক মাঝে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পক্ষান্তরে নফল সালাত বিধিবদ্ধ হয়েছে নিছক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর নৈকট্য লাভ করার লক্ষ্যে। সুতরাং নফল সালাত যত গুপ্ত হবে, তত লোকচক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ তথা ‘রিয়া’ থেকে অধিক দূর ও পবিত্র হবে। (ফাইযুল ক্বাদীর ৪/২২০)। আর সে জন্যই নফল সালাত  স্বগৃহে গোপনে পড়া উত্তম।

তাছাড়া নফল সালাত  ঘরে পড়লে নামাযের তরীকা ও গুরুত্ব পরিবার-পরিজনের কাছে প্রকাশ পায়। আর এ জন্য হুকুম হল, “তোমরা ঘরে সালাত পড় এবং তা কবর বানিয়ে নিও না।” (বুখারী ৪৩২, মুসলিম, সহীহ ৭৭৭, আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৮, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৩৭৮৪নং) ।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২, ১১৮৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৫-১৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৭, আহমাদ ৪৬৫৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ, কবরে বা কবরস্থানে যেমন সালাত  নেই বা হয় না সেইরুপ নিজের ঘরকেও সালাত বিহীন করে রেখো না।

মহানবী () আরো বলেন, “তোমরা স্বগৃহে সালাত  পড় এবং তাতে নফল পড়তে ছেড়ো না।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯১০, জামে ৩৭৮৬নং)।

আল্লাহর রসূল () বলেন, “তোমাদের কেউযখন মসজিদে (ফরয) সালাত  সম্পন্ন করে তখন তার উচিৎ, সে যেন তার নামাযের কিছু অংশ (সুন্নত সালাত) নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে পড়া ঐ কিছু সালাতের  মধ্যে আল্লাহ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।” (মুসলিম, সহীহ ৭৭৮নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মসজিদে সালাত আদায় করবে তখন সে যেন বাড়ীতে আদায় করার জন্যও তার সালাতের কিছু অংশ রেখে দেয়। কেননা তার সালাতের কারণে আল্লাহ তা’আলা তার বাড়ীতে বারাকাত ও কল্যাণ দান করে থাকেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯২, ইসলামীক সেন্টার ১৬৯৯)। সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)।

মহানবী () বলেন, “হে মানবসকল! তোমরা স্বগৃহে সালাত আদায় কর। যেহেতু ফরয সালাত  ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম সালাত হল তার স্বগৃহে পড়া সালাত ।” (নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭নং)।

নবী মুবাশ্শির () বলেন, “যেখানে লোকে দেখতে পায় সেখানে মানুষের নফল সালাত  অপেক্ষা যেখানে লোকে দেখতে পায় না সেখানের সালাত  ২৫ টি সালাতের  বরাবর।” (আবূ য়্যা’লা, জামে ৩৮২১নং)।

আল্লাহর রসূল () বলেন, “লোকচক্ষুর সম্মুখে (নফল) সালাত  পড়া অপেক্ষা মানুষের স্বগৃহে নামায পড়ার ফযীলত ঠিক সেইরুপ, যেরুপ নফল সালাত  অপেক্ষা ফরয নামাযের ফযীলত বহুগুণে অধিক।” (বায়হাকী, সহিহ তারগিব ৪৩৮নং)।

এমন কি মদ্বীনাবাসীর জন্যও মসজিদে নববীতে নফল সালাত  পড়ার চাইতে নিজ নিজ ঘরে পড়া বেশী উত্তম। (আবূদাঊদ, সুনান, জামে ৩৮১৪নং)। (উৎসঃ  স্বালাতে মুবাশ্শির )।

নফল সালাতে লম্বা কিয়াম করা উত্তম

নফল সালাত  সাধারণত: একার নামায। তাই তাতে ইচ্ছামত লম্বা ক্বিরাআত করা যায়। বরং এই সালাতে কিয়াম লম্বা করা মুস্তাহাব। মহানবী ()-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, সবচেয়ে উত্তম সালাত  কি? উত্তরে তিনি বললেন, “লম্বা কিয়াম বিশিষ্ট সালাত ।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৯নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

’আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন সাদাকা উত্তম? তিনি বলেনঃ নিজ শ্রমে উপার্জিত সামান্য সম্পদ হতে যে দান করা হয় সেটা। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন হিজরত উত্তম? তিনি বলেনঃ আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু হতে দূরে থাকা। জিজ্ঞেস করা হলো, কোন জিহাদ উত্তম? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের জান ও মাল দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ধরনের হত্যা মর্যাদা সম্পন্ন? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি (যুদ্ধের ময়দানে) নিজের ঘোড়া সহ নিহত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী () তাহাজ্জুদের নামাযে এত লম্বা কিয়াম করতেন যে, তাতে তাঁর পা ফুলে যেত। সাহাবাগণ বলেছিলেন, আল্লাহ আপনার আগের-পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন তবুও আপনি কেন অনুরুপ সালাত পড়েন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হ্ব না?” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২২০নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুগীরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত্রে সালাত আদায় করতে পড়তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি কেন এত কষ্ট করছেন। অথচ আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, আমি কী কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী বান্দা হবো না? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ১২২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০১৬, ৭০১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুন্নাত সালাতসমূহের ভ্রান্তি নিরসন

(বিস্তারিত আলোচনা)

 ফজরের ছালাতের জামা‘আত চলা অবস্থায় সুন্নাত পড়তে থাকা ইক্বামত হওয়ার পর এবং রীতি মত জামা‘আত চলছে এমতাবস্থায় বহু মসজিদে ফজর ছালাতের সুন্নাত আদায় করতে দেখা যায়। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘জামাআত শুরু হওয়ার পর কোন নফল নামায শুরু করা জায়েয নয়। তবে ফজরের সুন্নত এর ব্যতিক্রম’। (তালীমুস্-সালাত, পৃঃ ১৭৭)।

অথচ উক্ত দাবী সুন্নাত বিরোধী। কারণ যখন ফরয ছালাতের ইক্বামত হয়ে যায়, তখন সুন্নাত পড়া যাবে না।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন, ‘যখন ছালাতের ইক্বামত দেওয়া হবে তখন ফরয ছালাত ব্যতীত আর কোন ছালাত নেই’। (মুসলিম হা/১৬৭৮-১৬৭৯ ও ১৬৮৪, ১/২৪৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫১৪ ও ১৫২১) ‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; বুখারী হা/৬৬৩, ১/৯১ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৩০, ২/৬৪ পৃঃ) ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৮; মিশকাত হা/১০৫৮, পৃঃ ৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৯১, ৩/৪৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তখন ফরয সালাত  ব্যতীত অন্য কোন সালাত নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৫২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, ‘ফজর ছালাতের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত ছালাত নেই’। (বুখারী হা/৫৮৬, ১/৮৩ পৃঃ; মিশকাত হা/১০৪১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৭৪, ৩/৩৭ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের পর সূর্য উদিত হয়ে (একটু) উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং ‘আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত নেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৬, ১১৮৮, ১১৯৭, ১৮৬৪, ১৯৯২, ১৯৯৫; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২৭, আহমাদ ১১০৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৫৯) ।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এই ব্যাপক ভিত্তিক হাদীছের আলোকে বলা হয়, ফজর ছালাতের সুন্নাত আগে পড়তে না পারলে, সূর্য উঠার পর পড়তে হবে। সেকারণ উক্ত আমল সমাজে চালু আছে। অথচ উক্ত হাদীছের উদ্দেশ্য অন্য যেকোন ছালাত। কারণ ফজরের পূর্বে সুন্নাত পড়তে না পারলে ছালাতের পরপরই পড়ে নেয়া যায়। উক্ত মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

ক্বায়েস ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাতের পর এক ব্যক্তিকে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, ফজরের ছালাত দুই রাক‘আত। তখন ঐ ব্যক্তি বলল, আমি ফজরের পূর্বের দুই রাক‘আত আদায় করিনি। তাই এখন সেই দুই রাক‘আত আদায় করলাম। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) চুপ থাকলেন। (আবুদাঊদ হা/১২৬৭, ১/১৮০ পৃঃ; মিশকাত হা/১০৪৪, পৃঃ ৯৫ সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৭৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুহাম্মাদ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ক্বায়স ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে দেখলেন যে, সে ফজরের (ফজরের) সালাতের পর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) বললেন, ভোরের সালাত দু’ রাক্’আত, দু’ রাক্’আত। সে ব্যক্তি বললো, ফজরের (ফজরের) ফরয সালাতের পূর্বের দু’ রাক্’আত সালাত আমি আদায় করিনি। সে সালাতই এখন আদায় করেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১২৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৫৪, আহমাদ ২৩৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব প্রচলিত অভ্যাস পরিত্যাগ করে সুন্নাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, বহু মসজিদে লেখা থাকে লাল বাতি জ্বললে সুন্নাত পড়বেন না। উক্ত লেখা সুন্নাত বিরোধী হলেও সব ছালাতের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়, কিন্তু ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে তা অনুসরণ করা হয় না। কারণ এটা সুন্নাত তাই।

মাগরিবের পূর্বের দুই রাক‘আত ছালাতকে অবজ্ঞা করা

যেকোন ছালাতের আযানের পর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা যায়। উক্ত মর্মে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (ছহীহ বুখারী হা/৬২৭, ১/৮৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৯৯, ২/৫০ পৃঃ); মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশকাত হা/৬৬২, পৃঃ ৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত আছে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেনঃ এই সালাত ওই ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়, ঐ ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৪, ৬২৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৮, সুনান আবূ দাঊদ ১২৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৬২, সুনান আননাসায়ী ৬৮১, সুনান আততিরমিযী ১৮৫, আহমাদ ১৬৭৯০, দারেমী ১৪৮০, সহীহ আল জামি ২৮৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এছাড়াও নির্দিষ্টভাবে মাগরিবের পর দুই রাক‘আত ছালাতের কথা বলা হয়েছে। কেউ চাইলে পড়তে পারে। কিন্তু উক্ত ছালাতকে বর্তমান মসজিদগুলোতে অবজ্ঞা করা হয়। এমনকি উক্ত ছালাত সম্পর্কে অধিকাংশ মুছল্লী খবরই রাখে না। অবশ্য এর পিছনেও একটি ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে।

আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দাহ (রাঃ) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় প্রত্যেক আযানের পর দুই রাক‘আত ছালাত রয়েছে। তবে মাগরিব ব্যতীত। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৪৬৬৯)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মুনকার। ‘মাগরিব ব্যতীত’ শেষের অংশটুকু ভুলক্রমে সংযোজিত হয়েছে। ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এর অতিরিক্ত অংশের সনদ ও মতন উভয়েই ভুল রয়েছে। কিভাবে ছহীহ হতে পারে?’। অতঃপর তিনি বলেন, ইবনু বুরায়দা নিজেই মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। (বায়হাক্বী, সুনানুস ছুগরা হা/৫৬৮; সনদ ছহীহ, ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৫৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৬২)।

মাগরিবের পূর্বে সুন্নাত পড়ার ছহীহ দলীল

আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর, তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর। তৃতীয়বার বলেন, যার ইচ্ছা সে পড়বে। এজন্য যে লোকেরা যেন তাকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ না করে। (বুখারী হা/১১৮৩, ১/১৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১২ ও ১১১৩, ২/৩২৩ পৃঃ); মুসলিম হা/১৯৭৫, ১/২৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০৮); মিশকাত হা/১১৬৫, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৭, ৩/৯২ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত  আদায় কর। মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, ’’যিনি ইচ্ছা করেন’’ (তিনি তা পড়বেন)। বর্ণনাকারী বলেনঃ তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুষ একে সুন্নাত না করে ফেলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮৩, ৭৩৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদ্বীনায় থাকতাম তখন এমন হত যে, মুয়াযযিন মাগরিবের ছালাতের যখন আযান দিত, তখন লোকেরা কাতারে দাঁড়িয়ে যেত। অতঃপর তারা দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করত। এমনকি কোন অপরিচিত লোক মসজিদে প্রবেশ করলে ধারণা করত, অবশ্যই মাগরিবের ছালাত হয়ে গেছে। এত মানুষ উক্ত দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করত। (মুসলিম হা/১৯৭৬, ১/২৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০৯); মিশকাত হা/১১৮০, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মদীনায় ছিলাম। (এ সময়ে অবস্থা এমন ছিল যে, মুয়াযযিন মাগরিবের আযান দিলে (কোন কোন সাহাবা (সাহাবা) ও তাবি’ঈ) মসজিদের খুঁটির দিকে দৌড়াতেন আর দু’ রাক্’আত সালাত  আদায় করতে আরম্ভ করতেন। এমনকি কোন মুসাফির লোক মসজিদে এসে অনেক লোককে একা একা সালাত আদায় করতে দেখে মনে করতেন (ফরয) সালাত বুঝি সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর লোকেরা এখন সুন্নাত পড়ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮০৯, ইসলামীক সেন্টার ১৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অনুধাবনযোগ্য : স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ থাকতে একটি ভুল ও মিথ্যা বর্ণনার উপরে ভিত্তি করে উক্ত সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যায় কি?

মাগরিবের পর ছালাতুল আউয়াবীন পড়া

মাগরিবের পর ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ পড়ার প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা পাওয়া যায়, তার সবই জাল বা মিথ্যা।

(ক) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পর ৬ রাক‘আত ছালাত পড়বে কিন্তু মাঝে কোন ত্রুটিপূর্ণ কথা বলবে না, তার জন্য উহা ১২ বছরের ইবাদতের সমান হবে’। (তিরমিযী হা/৪৩৬, ১/৯৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১১৬৭; মিশকাত হা/১১৭৩, পঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১০৫, ৩/৯৫ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সালাতের পর ছয় রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং এর মধ্যখানে কোন অশালীন কথাবার্তা বলবে না। তাহলে এ (ছয়) রাক্’আতের সাওয়াব তার জন্যে বারো বছরের ’ইবাদাতের সাওয়াবের পরিমাণ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭৩, আত্ তিরমিযী ৪৩৫, ইবনু মাজাহ্ ১১৬৭, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৩৩১, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৬৬১, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ৪৩৯। কারণ এর সানাদের রাবী ‘উমার ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ খায়সাম-কে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেছেন। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেন। তার বর্ণিত দু’টি মুনকার হাদীস রয়েছে তন্মধ্যে এটি একটি)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। ইমাম তিরমিযী বলেন,

আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীছটি গরীব। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। কারণ এ হাদীস ’উমার ইবনু খাস্’আম-এর সূত্র ছাড়া আর কোন সূত্রে জানা যায়নি। আর আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা’ঈল বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, ’উমার ইবনুল খাস’আম মুনকারুল হাদীস। তাছাড়াও তিনি হাদীসটিকে যথেষ্ট য’ঈফ বলেছেন।) (যঈফ তিরমিযী হা/৬৬, পৃঃ ৪৮-৪৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৬৬১)।

(খ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ২০ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (তিরমিযী হা/৪৩৬, ১/৯৮ পৃঃ; মিশকাত হা/১১৭৪, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১০৬, ৩/৯৫ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সালাত শেষের পর বিশ রাক্’আত সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্যে জান্নাতে একটি বাড়ী বানাবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭৪, আত্ তিরমিযী ৪৩৫, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৩৩২, য‘ঈফ আল জামি ৫৬৬২, য‘ঈফাহ্ ৪৬৭)। হাদিসের মানঃ জাল (Fake)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে ইয়াকূব ইবনু ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন রাবী আছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) তাকে বড় মিথ্যুক বলে অবহিত করেছেন। ইমাম ইবনু মা‘ঈন এবং আবূ হাতিম (রহঃ)-ও তাকে মিথ্যুক বলেছেন। (তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৭৪-এর টীকা দ্রঃ)।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত ছালাত আদায় করবে সেটা তার জন্য ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ হবে। (ইবনু মুবারক, কিতাবুয যুহদ, পৃঃ ১৪; ইবনু নছর, কিতাবুল কিয়াম, পৃঃ ৪৪)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ছাখর নামে যঈফ রাবী আছে। সে মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির-এর যুগ পায়নি। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬১৭)।

জ্ঞাতব্যঃ মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান বলেন, ‘মাগরিবের পরে ছয় রাকআত, একে আওয়াবীনও বলা হয়।...আওয়াবীন নামাযের সর্বাধিক রাকআত সংখ্যা বিশ। দু’ কিংবা চার রাকআতও জায়েয। নবী (সা.) আওয়াবীনের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন’। (তালীমুস্-সালাত, পৃঃ ১৭৬-১৭৭)।

‘নবীজীর নামায’ শীর্ষক বইয়ে ড. ইলিয়াস ফায়সাল মাগরিবের পর অতিরিক্ত ছালাত আদায় করার দাবী করেছেন। তার প্রমাণে একটি উদ্ভট বর্ণনা পেশ করেছেন। (ঐ, পৃঃ ২৮২)।

এটা বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়। অবশ্য মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী (রহঃ) লিখেছেন, ‘মাগরিবের পরের ছয় রাকআতের নাম ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বলিয়া কোন হাদীসে উল্লেখ নাই’। (বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৫৫)।

সহিহ হাদিসের আলোকে  ছালাতুল আউয়াবীন

(ছালাতুল ইশরাক্ব,  ছালাতুয যোহা বা চাশতের ছালাত,  ছালাতুল আউয়াবীন)

‘শুরূক্ব অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। ‘ইশরাক্ব অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা অর্থ সূর্য গরম হওয়া। হাদীছে একই ছালাতকে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার সাথে সাথে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’, সূর্য একটু উপরে উঠার পর আদায় করলে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত এবং আরো একটু উপরে উঠার পর আদায় করলে তাকে ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বা ‘আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনশীল বান্দাদের ছালাত’ বলা হয়েছে। যেকোন একটি পড়লেই চলবে। যেমন-

(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত জামা’আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হাজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ ’উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪, তা’লীকুর রাগীব- (১/১৬৪, ১৬৫),)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অন্য হাদীছে এসেছে,

(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে ’যুহার (চাশ্ত/চাশত) দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)১৩১৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৪২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২২৬, শু‘আবুল ইমান ১০৬৫০, ইরওয়া ৮৬০, আহমাদ ২২৯৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৬, ২৯৭১, সহীহ আল জামি ৪২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি দলকে ’যুহার’ সময় সালাত  আদায় করতে দেখে বললেন, এসব লোকে জানে না, এ সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সালাত আদায় করা অনেক ভাল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নিবিষ্টচিত্তে লোকদের সালাতের সময় হলো উষ্ট্রীর দুধ দোহনের সময়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৮, আহমাদ ১৯৩১৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৩৯, সহীহ আল জামি ৩৮১৫, সহীহাহ্ ১১৬৮, ইরওয়া ৪৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব মাগরিবের পর ছালাতুল আউয়াবীন নামে কোন ছালাত নেই। তাই উক্ত তিন সময়ের মধ্যে যেকোন এক সময়ে উক্ত ছালাত আদায় করলেই যথেষ্ট হবে। কিন্তু সূর্য উঠার পর পরই পড়লে ফযীলত অনেক বেশী। সুতরাং জাল ও যঈফ হাদীছ পরিত্যাগ করে ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়াই একজন মুছল্লীর কর্তব্য।

জ্ঞাতব্যঃ ‘ছালাতুল আউয়াবীন’-এর রাক‘আত সংখ্যা সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ আট। (বুখারী হা/১১৭৬, ১/১৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১০৬, ২/৩২১ পৃঃ), ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩১; মুসলিম হা/১৭০৪; মিশকাত হা/১৩১১, ১৩০৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৩৪ ও ১২৩৬, ৩/১৫৫-৫৬ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

’আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসম আয যুবাঈ (রহঃ) ....আবূ যার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি অস্থি-বন্ধনী ও গিটের উপর সাদাকা ওয়াজিব হয়। সুতরাং প্রতিটি তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানাল্ল-হ’ বলা সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিটি তাহমীদ অর্থাৎ আলহমদুলিল্লা-হ’ বলা তার জন্য সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিটি ’আল্ল-হু আকবার’ তার জন্য এবং নাহী আলিন মুনকার অর্থাৎ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রতিটি প্রয়াসও তার জন্য অনুরূপ সাদাকা বলে গণ্য হয়। তবে ’যুহা’ বা চাশ্তের মাত্র দু’ রাকাআত সালাত যদি সে আদায় করে তাহলে তা এ সবগুলো সমকক্ষ হতে পারে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১১, আহমাদ ২১৪৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৮৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৫, সহীহ আল জামি ৮০৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৪১, ইসলামীক সেন্টার ১৫৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

১২ রাক‘আত পড়ার যে হাদীছ রয়েছে তা যঈফ। (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮০, পৃঃ ৯৮; তিরমিযী হা/৪৭৩; মিশকাত হা/১৩১৬, পৃঃ ১১৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বার রাকআত চাশতের সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি স্বর্ণের ইমারত নির্মাণ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৮০, তিরমিযী ৪৭৩)।হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ যঈফ। তাখরীজ আলবানী: জামি সগীর ৪৬৫৮, তিরমিযী ৪৭৩, মিশকাত ১৩১৬, যঈফ তারগীব ৪০৩, ৪০৫ সকল বর্ণনায়, রওয়ুন লাসীর ১১১, মিশকাত ১৩১৬। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তিনি সালিহ। ২. মুসা বিন (ফুলান বিন) আনাস সম্পর্কে ইমামগণ বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত।

এর সনদে মূসা ইবনু ফুলান ইবনু আনাস নামে অপরিচিত রাবী আছে। (আলবানী, মিশকাত হা/১৩১৬-এর টীকা দ্রঃ, ১/৪১৩ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক যুহার বারো রাক্’আত সালাত  আদায় করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্যে জান্নাতে সোনার বালাখানা তৈরি করবেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। এজন্য এ সূত্র ব্যতীত আর কোন সূত্রে এ বর্ণনা পাওয়া যায়নি।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১৬, আত্ তিরমিযী ৪৭৩, ইবনু মাজাহ্ ১৩৮০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০০৬, য‘ঈফ আল জামি ৫৬৫৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

উল্লেখ্য যে, দুপুরের পূর্বের এই ছালাতকেই ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলে। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২; মির‘আত ৪/৩৫১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি একটি দলকে ’যুহার’ সময় সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, এসব লোকে জানে না, এ সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সালাত আদায় করা অনেক ভাল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নিবিষ্টচিত্তে লোকদের সালাতের সময় হলো উষ্ট্রীর দুধ দোহনের সময়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৮, আহমাদ ১৯৩১৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৩৯, সহীহ আল জামি ৩৮১৫, সহীহাহ্ ১১৬৮, ইরওয়া ৪৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাগরিবের পরের ছয়, বিশ বা যে কোন পরিমাণ নফল ছালাতকে আউওয়াবীন বলার হাদীছগুলি যঈফ। (তিরমিযী, মিশকাত ১১৭৩-৭৪, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯, ৪৬৭, ৪৬১৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সালাতের পর ছয় রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং এর মধ্যখানে কোন অশালীন কথাবার্তা বলবে না। তাহলে এ (ছয়) রাক্’আতের সাওয়াব তার জন্যে বারো বছরের ’ইবাদাতের সাওয়াবের পরিমাণ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭৩, আত্ তিরমিযী ৪৩৫, ইবনু মাজাহ্ ১১৬৭, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৩৩১, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৬৬১, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ৪৩৯। কারণ এর সানাদের রাবী ‘উমার ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ খায়সাম-কে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেছেন। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেন। তার বর্ণিত দু’টি মুনকার হাদীস রয়েছে তন্মধ্যে এটি একটি)।হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। ইমাম তিরমিযী বলেন,

আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীছটি গরীব। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। কারণ এ হাদীস ’উমার ইবনু খাস্’আম-এর সূত্র ছাড়া আর কোন সূত্রে জানা যায়নি। আর আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা’ঈল বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, ’উমার ইবনুল খাস’আম মুনকারুল হাদীস। তাছাড়াও তিনি হাদীসটিকে যথেষ্ট য’ঈফ বলেছেন।) (যঈফ তিরমিযী হা/৬৬, পৃঃ ৪৮-৪৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৬৬১)।

মাগরিব ছালাতের পর চার রাক‘আত সুন্নাত পড়া

মাগরিবের পর কেবল দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হবে। এরপর দাঁড়িয়ে বা বসে আরো দুই রাক‘আত ছালাত আদায়ের ছহীহ কোন দলীল নেই।

মাকহূল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ছালাতের পর কোন কথা বলার পূর্বেই দুই রাক‘আত অন্য বর্ণনায় এসেছে, চার রাক‘আত পড়বে তার ছালাতকে ‘ইল্লীইনে’ উঠানো হবে। (রাযীন, ইবনু নছর, ক্বিয়ামুল লাইল, পৃঃ ৩১; মিশকাত হা/১১৮৪, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১৬, ৩/৯৮ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মাকহূল (রহঃ) এ হাদীসটির বর্ণনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সালাত  আদায় করার পর কথাবার্তা বলার আগে দু’ রাক্’আত। আর এক বর্ণনায় আছে, চার রাক্’আত সালাত আদায় করবে, তার সালাত ’ইল্লীয়্যিনে পৌঁছে দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫৯৩৫, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৩৩৫। কারণ হাদীসটি মুরসাল তথা মুরসালুত্ তাবি‘ঈ)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ যঈফ। এর সনদে আবু ছালেহ নামে একজন যঈফ রাবী আছে। (তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৮৪-এর টীকা দ্রঃ, ১/৩৭১ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৩৩৫)।

ফরয ছালাতের স্থানে সুন্নাত ছালাত আদায় করা

সুন্নাত ছালাত আদায় করার সময় স্থান পরিবর্তন করা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ। কিন্তু অধিকাংশ মসজিদে মুছল্লীরা ফরয ছালাতের স্থানেই সুন্নাত ছালাত আদায় করে থাকে। স্থান পরিবর্তন করার প্রয়োজন মনে করেন না।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছঃ) বলেছেন, তোমরা কি সক্ষম হবে যখন সে ছালাত আদায় করবে তখন সামনে বা পিছনে কিংবা ডানে বা বামে সরে যাবে? অর্থাৎ সরে গিয়ে সুন্নাত আদায় করবে। (ইবনু মাজাহ হা/১৪২৭, পৃঃ ১০৩; আবুদাঊদ হা/১০০৬, ১/১৪৪ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সুন্নাত ছালাত ফরয ছালাতের স্থান থেকে সরে গিয়ে পড়া’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ (ফরয) সালাত পড়ার পর একটু সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা তার ডানে বা বাঁমে সরে (নফল) সালাত আদায় করতে কি অপরাগ হবে? (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৭, সুনান আবূ দাঊদ ১০০৬, আহমাদ ৯২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীছে স্থান পরিবর্তন করে সুন্নাত ছালাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি ইমামকেও তার স্থানে সুন্নাত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। (আবুদাঊদ হা/৬১৬, ১/৯১; ইবনু মাজাহ হা/১৪২৮, পৃঃ ১০৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইমাম যে স্থানে দাঁড়িয়ে ফরয সালাত  পড়ে, সেই স্থান থেকে না সরে সে যেন (নফল) সালাত না পড়ে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাতুত তাসবীহ আদায় করা

যিকরের মূল চারটি বাক্য হলে তাসবীহ ‘সুবহানাল্লাহ’ , তাহমীদ ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ , তাহলীল ‘লা- ইলাহা ইল্লল্লাহ’ এবং তাকবীর ‘আল্লাহু আকবার’। এই বাক্যগুলি জপ করে বা যিকর করে মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা, প্রশংসা, একত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করে। সালাতের মধ্যে এই যিকরগুলি অধিক পাঠের কারণে এই ছালাতকে ‘ছালাতুত তাসবীহ’ বলা হয়। এটি ঐচ্ছিক ছালাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। ছালাতুত তাসবীহ সম্পর্কে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে। (আবুদাঊদ হা/১২৯৭; ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৭; মিশকাত হা/১৩২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৫২, ৩/১৬৪ পৃঃ)।

সেগুলোকে অধিকাংশ মুহাদ্দিছ যঈফ ও মুনকার বলেছেন। বরং আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত এ সম্পর্কিত হাদীছকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘মওকূফ’ কেউ ‘যঈফ’ কেউ ‘মওযূ’ বা জাল বলেছেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস (রাঃ) ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) কে বললেনঃ হে আব্বাস! হে প্রিয় চাচাজান! আমি কি আপনাকে কিছু দান করবো না, আমি কি আপনার সাথে আত্নীয় সম্পর্ক বজায় রাখবো না, আমি কি আপনার অবাধ্য হতে বিরত থাকবো না, আমি কি আপনাকে এমন কলেমা বলে দিব না, যা পড়লে আল্লাহ আপনার আগের-পরের, নতুন-পুরান, ভুলক্রমে, স্বেচ্ছায়, ছোট-বড়, গোপন-প্রকাশ্য সব ধরনের গুনাহ মাফ করে দিবেন? সেই দশটি কলেমা হলোঃ

আপনি চার রাকআত সালাত পড়ুন এবং তার প্রতি রাকআতে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ পড়ুন। প্রথম রাকআতের কিরাআত পাঠ শেষ হলে দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি পনের বার বলুনঃ

আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান। অতঃপর আপনি রুকূ করুন এবং রুকূ অবস্থায় তা দশবার বলুন, অতঃপর রুকূ থেকে আপনার মাথা তুলে তা দশবার বলুন। অতঃপর আপনি সিজদায় যান এবং সিজদাবনত অবস্থায় তা দশবার বলুন, অতঃপর সিজদা থেকে আপনার মাথা তুলে তা দশবার বলুন, অতঃপর সিজদায় গিয়ে আবার তা দশবার বলুন, অতঃপর সিজদা থেকে আপনার মাথা তুলে তা দশবার বলুন। এভাবে তা প্রতি রাকআতে পঁচাত্তর বার হলো।

এ নিয়মে আপনি চার রাকআত সালাত পড়ুন। আপনি প্রতিদিন একবার এ সালাত আদায় করতে সক্ষম হলে তাই করুন। আপনি তাতে সক্ষম না হলে প্রতি সপ্তাহে তা একবার পড়ুন। আপনি তাতেও সক্ষম না হলে প্রতি মাসে তা একবার পড়ুন। আপনি তাতেও সক্ষম না হলে অন্তত জীবনে তা একবার পড়ুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৮৭, আবূ দাঊদ ১২৯৭, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, সহীহুত তারগীব ১/৩৫৩-৩৫৫।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহক্বীক্বঃ সহিহ। মিশকাত, ১৩২৮, তালীক ইবনু খুযাইমাহ ১২১৬, সহীহ আবী দাউদ ১১৭৩। উক্ত হাদিসের রাবী মুসা বিন উবায়দাহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সা'দ বলেন, তিনি সিকাহ তবে হুজ্জাহ নয়। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিত নয়। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, মুনকারুল হাদিস। ২. সুওয়ায়াদ বিন আবু সাঈদ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।

 সঊদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ মন্তব্য করেছেন,

‘ছালাতুত তাসবীহ’ বিদ‘আত। এর হাদীছ প্রমাণিত নয়; বরং মুনকার বা অস্বীকৃত। কোন কোন মুহাদ্দিছ জাল হাদীছের মধ্যে একে উল্লেখ করেছেন। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/১৬৪ পৃঃ)।

এ সম্পর্কিত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘মওকূফ’ কেউ ‘যঈফ’ এবং কেউ ‘মওযূ’ বা জাল বলেছেন। যদিও শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের যঈফ সূত্রসমূহ পরস্পরকে শক্তিশালী মনে করে তাকে হাসান ছহীহ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসক্বালানী ‘হাসান’ স্তরে উন্নীত বলে মন্তব্য করেছেন। এরূপ বিতর্কিত ও সন্দেহযুক্ত হাদীছ দ্বারা ইবাদত সাব্যস্ত করা যায় না (দ্রঃ ইবনু হাজার আসক্বালানী বিস্তারিত আলোচনা; আলবানী, মিশকাত পরিশিষ্ট, ৩ নং হাদীছ ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাক্বী ৩/৫২; আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলু ইমাম আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৩, ২/২৯৫ পৃঃ)।

অন্যান্য সালাতসমূহ

ছালাতুল হাজত

বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল হাজত’ বলা হয়। (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আপনি আল্লাহ্‌র কাছে আমার জন্য দুআ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি দান করেন। তিনি বলেনঃ তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর। আর তুমি চাইলে আমি দুআ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার পর দু রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে এ দুআ করতে বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ! আমার চাহিদা পূরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লাহ্! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবুল করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৮৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৭৮, তালীক ইবনু খুযাইসাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সঙ্গত কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা স্বীয় প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩)।

এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দো‘আটি পাঠ করবে। (আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র)। ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’। (সূরা আল-বাকারাহ ২/২০১)। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় এ দো‘আটিই পড়তেন’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৯, ৪৫২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০, আহমাদ ১৩৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৩৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দো‘আটি সিজদায় পড়লে বলবে, اَللَّهُمَّ آتِنَا... আল্লা-হুম্মা আ-তিনা...। কেননা রুকূ-সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়া চলে না। (মিশকাত হা/৮৭৩, নায়ল ৩/১০৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ’তে তোমাদের ’রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু’আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হতেন’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩১৯ , ছহীহুল জামে‘ ৪৭০৩, মিশকাত ১৩১৫, আহমাদ (৫/৩৮৮)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত বিষয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারা’র ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলেন ও অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে গেল, তখন তিনি ওযূ করে ছালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা’। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল। তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে বিবি সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদি সহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমের নিকট পাঠিয়ে দেয়। (বুখারী হা/২২১৭, আহমাদ হা/৯২৩০, সনদ ছহীহ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মু’মিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারাহ (রাযি.) ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তা‘আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২১৭, ২৬৩৫, ২৩৫৭, ২৩৫৮, ৫০৮৪, ৬৯৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ছালাত

সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ ঘটে যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ এমন অবস্থানে আসে যখন চাঁদ সূর্যের আলোকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়।

তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য (কখনও কখনও এমনকি কয়েক মিনিটের জন্যও) আকাশ এতই অন্ধকার হয়ে যায় যে মনে হয় সেটা রাতের আকাশ।

নাসার কথায়, "মহাজাগতিক একটা সমন্বয় ঘটলেই একমাত্র সূর্যের পূর্ণ গ্রহণ সম্ভব হয়": সূর্য চাঁদের তুলনায় ৪০০ গুণ চওড়া এবং চাঁদ পৃথিবী থেকে যত দূরে, সূর্য তার চেয়ে আরও ৪০০ গুণ বেশি দূরে।

"এই ভৌগলিক অবস্থানের অর্থ হল, চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একই লাইনে একেবারে সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছয়, তখন সূর্য পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ হয়," বলছে নাসা।

পৃথিবী পৃষ্ঠে যে লাইন বরাবর চাঁদের ছায়া পড়ে তাকে বলা হয় "পূর্ণ গ্রাসের পথ"। আর এই ছোট পথের মধ্যেই পুরো অন্ধকার নেমে আসার চোখ ধাঁধানো প্রক্রিয়াটি দেখা যায়। যে অংশে আলোর উৎস পুরো ঢেকে যায়, ছায়ার সেই ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশকে লাতিন ভাষায় বলে 'আমব্রা'।

এই পথের দুপাশে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত গ্রহণ দেখা যায় আংশিকভাবে।

পুরো অন্ধকারে ঢেকে যাবার এই পথ থেকে পৃথিবীতে আপনার অবস্থান যত দূরে হবে, তত আপনি দেখবেন সূর্যের অপেক্ষাকৃত ছোট অংশ চাঁদে ঢাকা পড়েছে।

আর গ্রহণ কতক্ষণ থাকবে "সেটা নির্ভর করে, সূর্য থেকে পৃথিবীর অবস্থান, পৃথিবী থেকে চাঁদের অবস্থান আর পৃথিবীর কোন্ অংশ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে তার ওপর।

তত্ত্বগতভাবে, সূর্যের গ্রহণ সর্বোচ্চ ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে," বলেছেন চিলের এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

আমরা অনেক সময় ভাবি সূর্যগ্রহণ বেশ বিরল একটা প্রক্রিয়া। তা কিন্তু নয়। প্রতি প্রায় ১৮ মাস অন্তর সূর্যগ্রহণ হয়।

যেটা আসলে খুবই বিরল সেটা হল একই স্থান থেকে সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে পাওয়া। ঠিক একই জায়গা থেকে সূর্যের পূর্ণ গ্রহণ দেখা যায় গড় হিসাবে প্রতি ৩৭৫ বছরে একবার।

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণকালে যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ছালাতুল কুসূফ ও খুসূফ বলা হয়। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহর অপার কুদরতের অন্যতম নিদর্শন। এই গ্রহণ শুরু হলে আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভীতি সহকারে এর ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে জামাআতসহ দুই রাকআত ছালাত দীর্ঘ ক্বিরাআত ও ক্বিয়াম সহকারে আদায় করতে হয় এবং শেষে খুৎবা দিতে হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৮২-৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৯৭, ১০৪৪, ১০৫৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯০৭, ৯০৩, ৯১২, নাসায়ী ১৪৯৩, ১৪৭৪, ১৫০৩,  মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৪০, ৬৩৯,  মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৪৯২৫, আহমাদ ২৭১১, দারিমী ১৫২৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৮৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৩৭৭, ১৩৭১, ইবনু হিব্বান ২৮৩২, ২৮৫৩, ২৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৩০২, ৬৩৫৯, ৬৩৬৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৪০,১১৪২, ১১৩৬, মুসনাদ আল বায্যার ৫২৮৬, শারহু মা‘আনির আসার ১৯৫০, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই ছালাতের বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যাতে দুই রাকআত ছালাতে (২+২) ৪টি রুকূ হয় এবং এটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮০, ৮২, টীকা-আলবানী দ্রঃ পৃঃ ১/৪৬৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

’আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি একজন আহবানকারীকে, সালাত প্রস্তুত মর্মে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন। (লোকজন একত্র হলে) তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে দু’ দু’ রাক্আত সালাত আদায় করালেন। এতে চারটি রুকূ’ ও চারটি সিজদা্ করলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এ দিন যত দীর্ঘ রুকূ’ সিজদা্ আমি করেছি এত দীর্ঘ রুকূ সিজদা্  আর কোন দিন করিনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১০, নাসায়ী ১৪৭৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পদ্ধতিঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময়ে একবার সূর্য গ্রহণ হলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করেন ও লোকেরাও তাঁর সাথে ছালাত আদায় করে। প্রথমে তিনি ছালাতে দাঁড়ালেন এবং সূরা বাক্বারাহর মত দীর্ঘ ক্বিরাআত করলেন। অতঃপর

(১) দীর্ঘ রুকূ করলেন। তারপর মাথা তুলে ক্বিরাআত করতে লাগলেন। তবে প্রথম ক্বিরাআতের চেয়ে কিছুটা কম ক্বিরাআত করে,

(২) রুকূতে গেলেন। এবারের রুকূ প্রথম রুকূর চেয়ে কিছুটা কম হলো। তারপর তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে সিজদা করলেন। অতঃপর সিজদা শেষে তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং লম্বা ক্বিরাআত করলেন। তবে প্রথমের তুলনায় কিছুটা ছোট। এরপর তিনি,

(৩) রুকূ করলেন, যা আগের রুকূর চেয়ে কম ছিল। রুকূ থেকে মাথা তুলে পুনরায় ক্বিরাআত করলেন। যা প্রথমের তুলনায় ছোট ছিল। অতঃপর তিনি

(৪) রুকূ করলেন ও মাথা তুলে সিজদায় গেলেন। পরিশেষে সালাম ফিরালেন।

ইতিমধ্যে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। অতঃপর ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে তিনি খুৎবা দিলেন এবং হামদ ও ছানা শেষে বললেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি বিশেষ নিদর্শন। কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে এই গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দিবে, ছালাত আদায় করবে ও ছাদাক্বা করবে। ... আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহ’লে তোমরা অল্প হাসতে ও অধিক ক্রন্দন করতে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অতএব যখন তোমরা সূর্য গ্রহণ দেখবে, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফারে রত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৮২-৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৯৭, ১০৪৪, ১০৫৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯০৭, ৯০৩, ৯১২, নাসায়ী ১৪৯৩, ১৪৭৪, ১৫০৩,  মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৪০, ৬৩৯,  মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৪৯২৫, আহমাদ ২৭১১, দারিমী ১৫২৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৮৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৩৭৭, ১৩৭১, ইবনু হিব্বান ২৮৩২, ২৮৫৩, ২৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৩০২, ৬৩৫৯, ৬৩৬৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৪০,১১৪২, ১১৩৬, মুসনাদ আল বায্যার ৫২৮৬, শারহু মা‘আনির আসার ১৯৫০, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(উল্লেখ্য যে, ঘটনাক্রমে সূর্য গ্রহণের দিন নবীপুত্র ইবরাহীম ১৮ মাস বয়সে মদীনায় ইন্তেকাল করেন (১০ম হিজরী ২৯ শাওয়াল সোমবার ২৭শে জানুয়ারী ৬৩২ খৃঃ)। সে সময় আরবদের মধ্যে ধারণা প্রচলিত ছিল যে, উচ্চ সম্মানিত কোন মানুষের মৃত্যুর কারণেই সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বকরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। তিনি বের হয়ে তাঁর চাদর টেনে টেনে মসজিদে পৌঁছলেন এবং লোকজনও তাঁর নিকট সমবেত হল। অতঃপর তিনি তাঁদের নিয়ে দু‘রাক‘আত সালাত আদায় করেন। অতঃপর সূর্যগ্রহণ মুক্ত হলে তিনি বললেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যুর কারণে এ দু’টোর গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন গ্রহণ হবে, তা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে এবং দু‘আ করতে থাকবে। এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণেই বলেছেন যে, সেদিন তাঁর পুত্র ইব্রাহীম (রাযি.)-এর ওফাত হয়েছিল এবং লোকেরা সে ব্যাপারে পরস্পর বলাবলি করছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬৩, ১০৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৮৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিজ্ঞানের যুক্তিঃ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি বেশী মাত্রায় পৃথিবীর উপরে পতিত হয়। এর প্রচন্ড টানে অন্য কোন গ্রহ থেকে পাথর বা কোন মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে পৃথিবী ধ্বংসের একটা কারণও হতে পারে। ১৯০৮ সালের ৩০ শে জুন ১২ মেগাটন টিএনটি ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশালাকার জ্বলন্ত পাথর (মিটিওরাইট) রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জঙ্গলে পতিত হয়ে ৪০ মাইল ব্যাস সম্পন্ন ধ্বংসগোলক সৃষ্টি করেছিল। আগুনের লেলিহান শিখায় লক্ষ লক্ষ গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। (ঢাকা, দৈনিক ইনকিলাব, ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০০, পৃঃ ১১। উল্লেখ্য যে, ১০ লাখ টনে এক মেগাটন হয়)।

‘কুসূফ’ ও ‘খুসূফ’ এর ছালাত আদায়ের মাধ্যমে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব হতে আল্লাহর নিকটে পানাহ চাওয়া হয়। এই ছালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর এই সব সৃষ্টিকে পূজা না করা এবং ভয় না করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক’। (হা-মীম সাজদাহ/ফুছসালাত ৪১/৩৭)।

সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই নানারকম 'ধারণা বা কুসংস্কার' চালু রয়েছে। যেমন,

(১) রান্না করা, খাবার খাওয়াঃ

এরকম একটি কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় কোনো ধরণের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

অনেক জায়গায় এরকমও ধারণা রয়েছে যে সূর্যগ্রহণের সময় রান্না করা হলে সেটিও অমঙ্গলজনক।

কিন্তু এরকম ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিজ্ঞানীরা কখনোই পাননি।

(২) গর্ভবতী নারীদের বাইরে বের হওয়াঃ

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা ঘরের বাইরে বের হলে গর্ভের সন্তানের শরীরে বিশেষ ধরণের জন্মদাগ থাকতে পারে। এমনকি সন্তানের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র থাকা বা বিকলঙ্গতা নিয়েও সন্তান জন্ম নিতে পারে।

তাই, 'সংস্কার' আছে, সূর্যগ্রহণের সময়ে গর্ভবতী নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।

এই ধারণাও বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে অনেক আগেই।

(৩) ভ্রমণ না করাঃ

সূর্যগ্রহণ চলাকালীন ভ্রমণ করলে তা অমঙ্গলজনক - এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে অনেক মানুষের মধ্যেই।

আরেকটি ধারণা রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় ভ্রমণ করলে গ্রহণের সময় সূর্য থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর রশ্মি গায়ে লেগে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসান বলেন গ্রহণের সময় সূর্য থেকে আলাদা কোনো ক্ষতিকর রশ্মি নিঃসরণ হয় না, কাজেই আলাদাভাবে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

(৪) গ্রহণের পর গোসল করাঃ

সূর্যগ্রহণের ফলে তথাকথিত যেসব ক্ষতিকর রশ্মি শরীরের সংষ্পর্শে আসে, সেসব রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে গ্রহণের শেষে গোসল করার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে কিছু ক্ষেত্রে।

এই ধারণাটিও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক নওরীন আহসান।

"সাধারণ অবস্থায় সূর্যের রশ্মি গায়ে লাগলে যতটা ক্ষতি হোতো, সূর্যগ্রহণের সময় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কাজেই সূর্যগ্রহণের সময় যে আলাদাভাবে অতিরিক্ত ক্ষতি হবে, এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।"

ছালাতুল ইস্তিস্তক্বা

ইস্তিস্‌ক্বা অর্থঃ পান করার জন্য পানি প্রার্থনা করা। শারঈ পরিভাষায় ব্যাপক খরা ও অনাবৃষ্টির সময় বিশেষ পদ্ধতিতে ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে পানি প্রার্থনা করাকে ‘ছালাতুল ইস্তিস্ক্বা’ বলা হয়। ৬ষ্ঠ হিজরীর রামাযান মাসে সর্বপ্রথম মদ্বীনায় ইস্তিসক্বার ছালাতের প্রবর্তন হয়। (মির‘আত ৫/১৭০)।

বিবরণঃ মলিন ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে চাদর গায়ে দিয়ে বিনয়-নম্র চিত্তে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবে। সাথে ইমামের জন্য মিম্বর নিতে পারবে। অতঃপর নিম্নের যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বনে ইস্তিসক্বার ছালাত আদায় করবে।

পদ্ধতি-১: ঈদের ছালাতের ন্যায় আযান ও ইক্বামত ছাড়াই প্রথমে জামাআতসহ দুই রাকআত ছালাত আদায় করবে। (আবুদাঊদ হা/১১৬১, ৬৫; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৯৭; মির‘আত ৫/১৭৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির জন্য লোকজন নিয়ে ঈদগাহতে গেলেন। তাদের নিয়ে তিনি দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। উচ্চস্বরে করে তিনি উভয় রাক্’আতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর তিনি ক্বিবলা মুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। ক্বিবলা মুখী হবার সময় তিনি তাঁর চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০২৫, ১০০৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৬১, সুনান আত্ তিরমিযী ৫৫৬, সুনান আননাসায়ী ১৫১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম সরবে ক্বিরাআত করবেন। প্রথম রাকআতে সূরা আলা ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়াহ কিংবা অন্য যে কোন সূরা পড়বেন। অতঃপর ছালাত শেষে ইমাম মিম্বরে বসে বা দাঁড়িয়ে অথবা মিম্বর ছাড়াই মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লা-হু আকবর, আলহামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আলামীন ওয়াছ ছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারী বলে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ শেষে মুছল্লীদের প্রতি ইস্তিস্ক্বার গুরুত্ব সম্পর্কে ঈমান বর্ধক উপদেশসহ সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ অনুচ্ছেদ পৃষ্ঠা ৪২৬ ও ৪২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ ৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর ইমাম ও মুক্তাদী সকলে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে স্ব স্ব চাদর উল্টাবে। অর্থাৎ চাদরের নীচের অংশ উপরের দিকে উল্টে নিবেন এবং চাদরের ডান পাশ বাম কাঁধে ও বাম পাশ ডান কাঁধে রাখবে। অতঃপর দু’হাত উপুড় অবস্থায় সোজাভাবে চেহারা বরাবর উঁচু রাখবে, যেন বগল খুলে যায়।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬১; মির‘আত ৫/১৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর নিম্নের দো‘আ সমূহ পাঠ করবেন-

(১) উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, আররহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ইয়াফ‘আলু মা ইউরীদু। আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আনতাল গানিইয়ু ওয়া নাহ্নুল ফুক্বারা-উ। আনঝিল ‘আলায়নাল গায়ছা ওয়াজ‘আল মা আনঝালতা ‘আলায়না কুউওয়াতাঁও ওয়া বালা-গান ইলা হীন।

অনুবাদ: সকল প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। যিনি করুণাময় ও কৃপানিধান। যিনি বিচার দিবসের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই-ই করেন। হে প্রভু! আপনি আল্লাহ। আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আপনি মুখাপেক্ষীহীন ও আমরা সবাই মুখাপেক্ষী। আমাদের উপরে আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন! যে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তা যেন আমাদের জন্য শক্তির কারণ হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসকা’ অনুচ্ছেদ-৫২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকজন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে মিম্বার আনার জন্য নির্দেশ দিলেন। বস্তুতঃ মিম্বার আনা হলো। তিনি লোকজনদেরকে একদিন ঈদগাহে আসার জন্য সময় ঠিক করে দিলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নির্দিষ্ট দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যকিরণ দেখা দেবার সাথে সাথে ঈদগাহে চলে গেলেন। মিম্বারে আরোহণ করে তাকবীর দিলেন। আল্লাহর গুণকীর্তন বর্ণনা করে বললেন, তোমরা তোমাদের শহরের আকাল, সময় মতো বৃষ্টি না হবার অভিযোগ করেছ। আল্লাহ তা’আলা এখন তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমরা তাঁর কাছে দু’আ করো। তিনি তোমাদের দু’আ কবূল করবেন বলে ওয়া’দা করেছেন। তারপর তিনি বললেন,

‘‘আলহামদু লিল্লা-হি রব্ববিল ’আ-লামীন, আর্ রহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ইয়াফ্’আলু মা- ইউরীদুল্ল-হুম্মা আন্‌তাল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তাল গনিয়্যু ওয়া নাহনুল ফুক্বারা-উ, আনযিল ’আলায়নাল গয়সা ওয়াজ্’আল মা- আনযালতা লানা- ক্যুওয়াতান ওয়াবালা-গান ইলা- হীন’’

(অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা, মেহেরবান ও ক্ষমাকারী। প্রতিদান দিবসের মালিক। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি যা চান তা-ই করেন। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি অমুখাপেক্ষী। আর আমরা কাঙ্গাল, তোমার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যে জিনিস (বৃষ্টি) তুমি অবতীর্ণ করবে তা আমাদের শক্তির উপায় ও দীর্ঘকালের পাথেয় করো।)।

এরপর তিনি তাঁর দু’হাত উঠালেন। এত উঠালেন যে, তাঁর বগলের উজ্জ্বলতা দেখা গেল। তারপর তিনি জনগণের দিকে পিঠ ফিরিয়ে নিজের চাদর ঘুরিয়ে নিলেন। তখনো তার দু’ হাত ছিল উঠানো। আবার লোকজনের দিকে মুখ ফিরালেন এবং মিম্বার হতে নেমে গেলেন। দু’ রাক্’আত সালাত  আদায় করলেন। আল্লাহ তা’আলা তখন মেঘের ব্যবস্থা করলেন। মেঘের গর্জন শুরু হলো। বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে বর্ষণ শুরু হলো। তিনি তাঁর মাসজিদ পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই বৃষ্টির ঢল নেমে গেল। এ সময় তিনি মানুষদেরকে বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য দৌড়াতে দেখে হেসে ফেললেন। এতে তাঁর সামনের দাঁতগুলো দৃষ্টিগোচর হতে থাকল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আর আমি এ সাক্ষীও দিচ্ছি যে, আমি তাঁর বান্দা ও রসূল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৭৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪০৯, সহীহ আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫২, শারহু মা‘আনীর আসার ১৯০৬, ইবনু হিব্বান ৯৯১, ইরওয়া ৬৬৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (২) উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মাসক্বি ’ইবা-দাকা ওয়াবাহী মাতাকা ওয়ানশুর রহমতাকা ওয়াআহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পান করান আপনার বান্দাদেরকে ও জীবজন্তু সমূহকে এবং আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন ও আপনার মৃত জনপদকে পুনর্জীবিত করুন’। (মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসক্বা’ অনুচ্ছেদ-৫২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আমর ইবনু শু’আয়ব হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাদা বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু’আ করার সময় বলতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মাসক্বি ’ইবা-দাকা ওয়াবাহী মাতাকা ওয়ানশুর রহমতাকা ওয়াআহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে, তোমার পশুদেরকে পানি দান করো। তাদের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। তোমার মৃত জমিনকে জীবিত করো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৬, আবূ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৭৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৪৯, আদ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫৫০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৪১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাসক্বেনা গায়ছাম মুগীছাম মারীআম মারী‘আ, না-ফে‘আন গায়রা যা-র্রিন ‘আ-জেলান গায়রা আ-জেলিন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দান করুন, যা চাহিদা পূরণকারী, পিপাসা নিবারণকারী ও শস্য উৎপাদনকারী। যা ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং যা দেরীতে নয় বরং দ্রুত আগমনকারী’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইসতিসক্বার সালাতে হাত বাড়িয়ে এ কথা বলতে দেখেছি ’’হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি দাও। যে পানি সুপেয়, ফসল উৎপাদনকারী, উপকারী, অনিষ্টকারী নয়। দ্রুত আগমনকারী। বিলম্বকারী নয়।’’ (বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা বলতে না বলতেই) তাদের ওপর আকাশ বর্ষণ শুরু করে দিলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৬৯, সহীহ আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

এই সময় বৃষ্টি দেখলে বলবে, “আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন” (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। (বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আকাশে বৃষ্টি দেখতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি পর্যাপ্ত ও কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৩২, আহমাদ ২৪১৪৪, সহীহ আল জামি ৪৭২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বৃষ্টিতে চাদর ভিজিয়ে আল্লাহর বিশেষ রহমত মনে করে আগ্রহের সাথে তা বরণ করে নিতে হবে।  (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫০১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণত। তিনি বলেন, একবার আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর গায়ে বৃষ্টি পড়ার জন্য নিজের গায়ের কাপড় খুলে ফেললেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এরূপ করলেন কেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সদ্য বর্ষিত পানি তাঁর রবের নিকট হতে আসলো তাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১০০, আহমাদ ১২৩৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৫৬, ইরওয়া ৬৭৮)। মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)।

পদ্ধতি-২ : প্রথমে সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবেন। (আবুদাঊদ হা/১১৬৫, ৭৩; মিশকাত হা/১৫০৮; মির‘আত ৫/১৭৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকজন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে মিম্বার আনার জন্য নির্দেশ দিলেন। বস্তুতঃ মিম্বার আনা হলো। তিনি লোকজনদেরকে একদিন ঈদগাহে আসার জন্য সময় ঠিক করে দিলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নির্দিষ্ট দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যকিরণ দেখা দেবার সাথে সাথে ঈদগাহে চলে গেলেন। মিম্বারে আরোহণ করে তাকবীর দিলেন। আল্লাহর গুণকীর্তন বর্ণনা করে বললেন, তোমরা তোমাদের শহরের আকাল, সময় মতো বৃষ্টি না হবার অভিযোগ করেছ। আল্লাহ তা’আলা এখন তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমরা তাঁর কাছে দু’আ করো। তিনি তোমাদের দু’আ কবূল করবেন বলে ওয়া’দা করেছেন। তারপর তিনি বললেন,

‘‘আলহামদু লিল্লা-হি রব্ববিল ’আ-লামীন, আর্ রহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ইয়াফ্’আলু মা- ইউরীদুল্ল-হুম্মা আন্‌তাল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তাল গনিয়্যু ওয়া নাহনুল ফুক্বারা-উ, আনযিল ’আলায়নাল গয়সা ওয়াজ্’আল মা- আনযালতা লানা- ক্যুওয়াতান ওয়াবালা-গান ইলা- হীন’’

(অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা, মেহেরবান ও ক্ষমাকারী। প্রতিদান দিবসের মালিক। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি যা চান তা-ই করেন। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি অমুখাপেক্ষী। আর আমরা কাঙ্গাল, তোমার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যে জিনিস (বৃষ্টি) তুমি অবতীর্ণ করবে তা আমাদের শক্তির উপায় ও দীর্ঘকালের পাথেয় করো।)।

এরপর তিনি তাঁর দু’হাত উঠালেন। এত উঠালেন যে, তাঁর বগলের উজ্জ্বলতা দেখা গেল। তারপর তিনি জনগণের দিকে পিঠ ফিরিয়ে নিজের চাদর ঘুরিয়ে নিলেন। তখনো তার দু’ হাত ছিল উঠানো। আবার লোকজনের দিকে মুখ ফিরালেন এবং মিম্বার হতে নেমে গেলেন। দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। আল্লাহ তা’আলা তখন মেঘের ব্যবস্থা করলেন। মেঘের গর্জন শুরু হলো। বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে বর্ষণ শুরু হলো। তিনি তাঁর মাসজিদ পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই বৃষ্টির ঢল নেমে গেল। এ সময় তিনি মানুষদেরকে বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য দৌড়াতে দেখে হেসে ফেললেন। এতে তাঁর সামনের দাঁতগুলো দৃষ্টিগোচর হতে থাকল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আর আমি এ সাক্ষীও দিচ্ছি যে, আমি তাঁর বান্দা ও রসূল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৭৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪০৯, সহীহ আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫২, শারহু মা‘আনীর আসার ১৯০৬, ইবনু হিব্বান ৯৯১, ইরওয়া ৬৬৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতঃপর দাঁড়িয়ে পূর্বে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী দো‘আ করতে থাকবেন।

তাৎপর্যঃ চাদর উল্টানোর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যেন খরা উল্টে গিয়ে বৃষ্টিপাত হয়। (হাকেম, বায়হাক্বী, মির‘আত ৫/১৭৬)।

এছাড়াও রয়েছে রাজাধিরাজ আল্লাহর সামনে বান্দার পরিবর্তিত অসহায় অবস্থার ইঙ্গিত। দাঁড়িয়ে দু’হাত উপুড় ও সোজাভাবে ধরে রাখার মধ্যে রয়েছে পালনকর্তা আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ ও একান্তভাবে আত্মনিবেদনের ইঙ্গিত। ময়দানে বেরিয়ে একত্রিত হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে একই বিষয়ে হাযারো বান্দার ঐকান্তিক প্রার্থনার গুরুত্ববহ ইঙ্গিত।

ছালাত ব্যতীত অন্যভাবে বৃষ্টি প্রার্থনা

(ক) জুমআর খুৎবা দানের সময় খত্বীব দুই হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করবেন। একই সাথে মুছল্লীগণ হাত উঠিয়ে দো‘আ করবেন (অথবা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন)। এ সময়ের সংক্ষিপ্ত দোআ হলো اَللَّهُمَّ اَغِثْنَا আল্লা-হুম্মা আগিছনা (হে আল্লাহ! আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন) কমপক্ষে ৩ বার। (বুখারী হা/১০১৪, ১০২৯ ‘ইস্তিসক্বা’ অধ্যায়-১৫, অনুচ্ছেদ-৭, ২১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি জুমু’আহ’র দিন দারুল কাযা (বিচার করার স্থান)-এর দিকের দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। এ সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন।তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন।

আনাস (রাযি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মেঘ নেই, মেঘের সামান্য টুকরা ও নেই। অথচ সাল’আ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। তিনি বলেন, হঠাৎ সাল’আর ওপাশ হতে ঢালের মত মেঘ উঠে এল এবং মধ্য আকাশে এসে ছড়িয়ে পড়লো। অতঃপর প্রচুর বর্ষণ হতে লাগল। আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সূর্য দেখতে পাইনি। এর পরের জুমু’আয় সে দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন।

আনাস (রাযি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দু’ হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ্! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন। আনাস (রাযি.) বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বেরিয়ে রোদে চলতে লাগলাম। (রাবী) শরীক (রহ.) বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কি আগের সেই লোক? তিনি বললেন, আমি জানি না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০১৪, ৯৩২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা اَللَّهُمَّ اسْقِنَا আল্লা-হুম্মাস্ক্বেনা (হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি পান করান) কমপক্ষে ৩ বার। (বুখারী হা/১০১৩, অনুচ্ছেদ-৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জুমু’আহ’র দিন মিম্বরের সোজাসুজি দরওয়াজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। সে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন। আনাস (রাযি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বা কিছুই দেখতে পাইনি। অথচ সাল’আ (মদিনার একটি পাহাড়) পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। আনাস (রাযি.) বলেন, হঠাৎ সাল’আ পর্বতের পিছন হতে ঢালের মত মেঘ বেরিয়ে এল এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। অতঃপর বর্ষণ শুরু হল। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সূর্য দেখতে পাইনি। অতঃপর এক ব্যক্তি পরবর্তী জুমু’আহ’র দিন সে দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি বন্ধের জন্য দু’আ করুন। আনাস (রাযি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়; টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন। আনাস (রাযি.) বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মাসজিদ হতে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। শরীক (রহ.) (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কি আগের সেই লোকটি? তিনি বললেন, আমি জানি না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০১৩, ৯৩২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জুমআ ও ইস্তিসক্বার ছালাত ছাড়াই স্রেফ দোআর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। এ সময় দুই হাত তুলে বর্ণিত ৩নং দোআটি ও অন্যান্য দোআসমূহ পাঠ করবে।  (ইবনু মাজাহ হা/১২৬৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

শুরাহবীল ইবনুস সিমত (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি কাব (রাঃ) কে বলেন, হে কাব ইবনু মুররা! আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করুন এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আল্লাহ্র নিকট বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুহাত তুলে দুআ করেনঃ আল্লাহুম্মা আসকিনা গাইছান মারীআন মারীআন তবাকান আজিলান গাইরা রাইছিন নাফিআন গাইরা দাররিন (হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এমন বৃষ্টির পানি দান করুন যা সুপেয়, ফসল উৎপাদক, পর্যাপ্ত, বিলম্বে নয়, অবলম্বনে, উপকারী এবং ক্ষতিকর নয়)।

কাব (রাঃ) বলেন, জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ না হতেই বৃষ্টি হয়ে গেলো। পরে লোকেরা তাঁর নিকট এসে অতিবৃষ্টির অভিযোগ করলো এবং বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! বাড়িঘর ধ্বসে যাচ্ছে। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমাদের উপর নয়, আমাদের আশেপাশে বর্ষিত হোক। রাবী বলেন, তৎক্ষণাৎ মেঘমালা টুকরা টুকরা হয়ে ডানে-বামে সরে গেলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১২৬৯, আহমাদ ২৭৬৮৯, ইরওয়াহ ১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যান্য জ্ঞাতব্য

(ক) জীবিত কোন মুত্তাক্বী পরহেযগার ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে ওমর (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। (বুখারী হা/১০১০, মিশকাত হা/১৫০৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ), লোকেরা অনাবৃষ্টির কবলে পতিত হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা ’আব্বাস ইবনু ’আবদুল মুত্ত্বালিব-এর ওয়াসীলায় আল্লাহর নিকট বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! তোমার নিকট এতদিন আমরা আমাদের নবীর মধ্যমতা পেশ করতাম। তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়ে পরিতৃপ্ত করতে। এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর চাচার ওয়াসীলা পেশ করছি। তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০১০, ৩৭১০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪২৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিন্তু কোন মৃত ব্যক্তির দোহাই বা অসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবেনা। কারণ এটি হলো সবচেয়ে বড় শিরক।

(খ) ইস্তিস্ক্বার খুৎবা সাধারণ খুৎবার মত নয়। এটির সবটুকুই কেবল আকুতিভরা দোআ আর তাকবীর মাত্র।  (আবুদাঊদ হা/১১৬৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

হিশাম ইবনু ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কিনানা (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (পিতা) বলেন, কোন এক শাসক ইস্তিস্কার সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট পাঠান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, সরাসরি আমার নিকট জিজ্ঞেস করতে তাকে কিসে বাধা দিলো! তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনয়ী ও নরমভাবে, সাধারণ পোশাক পরে, ভীত বিহ্বল হয়ে রওয়ানা করে ধীরপদে (মাঠে) পৌঁছে দু রাকআত সালাত পড়লেন, যেভাবে তিনি ঈদের সালাত পড়েন। কিন্তু তিনি তোমাদের এই খুতবাহর ন্যায় খুতবাহ দেননি। (সুনান ইবনু মাজাহ ১২৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৫, সুনান আততিরমিযী ৫৫৮, ১৫০৮; সুনান আননাসায়ী ১৫০৬, ১৫২১; সুনান আবূ দাঊদ ১১৬৫, ইরওয়াহ ৬৬৫, ৬৬৯; তাবলীক ইবনু খুযাইম ১৪০১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৪৮৯৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৩৩৬, আহমাদ ২০৩৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৪০৫, দারাকুত্বনী ১৮০৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৩৮৭, ইরওয়া ৬৬৯।)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) অতিবৃষ্টি হলে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। (বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আকাশে বৃষ্টি দেখতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি পর্যাপ্ত ও কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৩২, আহমাদ ২৪১৪৪, সহীহ আল জামি ৪৭২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর তাতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করে বলবে, اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَاআল্লা-হুম্মা হাওয়া-লায়না অলা ‘আলায়না (হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও। আমাদের উপর দিয়ো না)। (বুখারী হা/৯৩৩, ১০২১; আবুদাঊদ হা/১১৭৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯০২, অধ্যায়-২৯, অনুচ্ছেদ-৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজুর (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি জুমুআর দিন মসজিদে নবাবীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনাবৃষ্টির ফলে) মাল সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন,

“আল্ল-হুম্মা আগিসনা- আল্ল-হুম্মা আগিসনা-, আল্ল-হুম্মা আগিসনা-”

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।)। [৩ বার]

আনাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! এ সময় আসমানে কোন মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিল না। আর আমাদের ও সালই পাহাড়ের মাঝে কোন ঘর-বাড়ী কিছুই ছিল না। (ক্ষণিকের মধ্যে) তার পেছন থেকে ঢালের ন্যায় অখণ্ড মেঘ উদিত হ’ল। একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হ’ল। বর্ণনাকার বলেন, এরপর আল্লাহর শপথ আমরা সপ্তাহকাল যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি।

অতঃপর পরবর্তী জুমুআয় আবার এক ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন,

“আল্ল-হুম্মা হাওলানা- ওয়ালা- আলায়না- আল্ল-হুম্মা ’আলাল আ-কা-মি ওয়ায় যিরা-বি ওয়া বুতনিল আওদিয়াত ওয়া মানা-বিতিশ শাজার”

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিও না। হে আল্লাহ! পাহাড়ী এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানো স্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।)।

এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বের হয়ে সূর্য তাপের মধ্যে চলাচল করতে লাগলাম। শারীক বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি? আনাস বললেন, আমার জানা নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৩, ৯৩২, আহমাদ ১৩৬৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাতুত তাওবাহ

অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুত তাওবাহ’ বলা হয়। আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে। অতঃপর উঠে দাঁড়ায় ও পবিত্রতা অর্জন করে এবং দুই রাকআত ছালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, তিরমিযী, হাদীছ হাসান; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৫৯; মিশকাত হা/১৩২৪ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯; আলে ইমরান ৩/১৩৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)আমাকে বলেছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সত্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন লোক অন্যায় করার পর (লজ্জিত হয়ে) উঠে গিয়ে উযূ  করে ও সালাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত পড়লেন (মূল আয়াত হাদীসে আছে) ’’এবং যেসব লোক এমন কোন কাজ করে বসে যা বাড়াবাড়ি ও নিজেদের ওপর যুলম, এরপর আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, তখন নিজেদের গুনাহের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৩৫)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৫, সুনান আত্ তিরমিযী ৪০৬, আহমাদ ২, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ত্বাবারাণী কাবীরে ‘হাসান’সনদে আবুদ্দারদা (রাঃ) হতে ‘মরফূ’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত ছালাত দুই বা চার রাকআত ফরয কিংবা নফল পূর্ণ ওযূ ও সুন্দর রুকূ-সিজদা সহকারে হতে হবে। (ত্বাবারাণী কাবীর, আহমাদ হা/২৭৫৮৬; ছহীহাহ হা/৩৩৯৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩০)।

তওবার জন্য নিম্নের দোআটি বিশেষভাবে সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে পাঠ করা উচিৎ।-

উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে।

অনুবাদঃ ‘আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকটে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক এবং তাঁর দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’। (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘দোসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত করা গোলাম বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। যে ব্যক্তি বলল, ’

"আস্‌তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি"

(অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তওবা্ করি।)।

আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন, যদিও সে যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে যেয়ে থাকে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ১৫১৭, সুনান আততিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih

‘সাইয়েদুল ইস্তেগফার’ দোআটিও এর সাথে যোগ করা ভাল।

সাইয়েদুল ইস্তেগফারঃ-

আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপ সমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২৩, ৬৩০৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৫,  সুনান আততিরমিজি ৩৩৯৩, সুনান আননাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৭১১১, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১০১৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭১৭২, শু‘আবূল ঈমান ৬৫৮, ইবনু হিব্বান ৯৩৩, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৬২০/৪৮৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫০, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৭৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাতুল ইস্তেখারাহ

আল্লাহর নিকট থেকে কল্যাণ ইঙ্গিত প্রার্থনার জন্য যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল ইস্তেখা-রাহ’ বলা হয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় কোন্ শুভ কাজটি করা মঙ্গলজনক হবে, সে বিষয়ে আল্লাহর নিকট থেকে ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে এই ছালাত আদায় করা হয়। কোন দিকে ঝোঁক না রেখে সম্পূর্ণ নিরাবেগ ও খোলা মনে ইস্তেখারার ছালাত আদায় করবে। অতঃপর যেদিকে মন টানবে, সেভাবেই কাজ করবে। এ জন্য ফরয ছালাত ব্যতীত ইস্তেখারার নিয়ত সহ দুই রাকআত নফল ছালাত দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে পড়া যায়।

ইস্তেখারার দোআ এক রাকআত বিশিষ্ট বিতর ছালাতে পড়া উচিৎ নয়। বরং এক-এর অধিক রাক‘আত বিশিষ্ট বিতরে বা যে কোন সুন্নাত-নফলে পড়া যায়। (নায়লুল আওত্বার ৩/৩৫৪, ‘ইস্তেখা-রাহ্’র ছালাত’ অনুচ্ছেদ)।

জাবির (রাঃ) ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (আল্লাহর নিকট) ’ইস্তিখারাহ্’ করার নিয়ম ও দু’আ এ রকম শিখাতেন, যেভাবে আমাদেরকে তিনি কুরআনের সূরাহ্ শিখাতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কোন লোক কোন কাজ করার সংকল্প করলে সে যেন ফরয সালাত ব্যতীত দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় করে। তারপর এ দু’আ পড়ে-

’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্‌তাখীরুকা বি’ইলমিকা ওয়া আস্‌তাক্বদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আস্আলুকা মিন ফাযলিকাল ’আযীমি ফাইন্‌নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা- আক্বদিরু ওয়া তা’লামু ওয়ালা- আ’লামু ওয়া আন্‌তা ’আল্লা-মুল গুয়ূব, আল্ল-হুম্মা ইন্ কুনতা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা খয়রুল লী ফী দীনী ওয়ামা ’আ-শী ওয়া ’আ-ক্বিবাতি আমরী আও ক্বা-লা ফী ’আ-জিলি আমরী ওয়া আ-জিলিহী ফাক্বদুরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী সুম্মা বা-রিক লী ফীহি ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফী দীনী ওয়ামা ’আ-শী ওয়া ’আ-ক্বিবাতি আমরী আও ক্বা-লা ফী ’আ-জিলি আমরী ওয়া আ-জিলিহী ফাসরিফহু ’আন্নী ওয়াসরিফনী ’আনহু ওয়াক্ব দুরলিয়াল খয়রা হায়সু কা-না সুম্মা আরযিনী বিহী’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জানার ভিত্তিতে তোমার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। তোমার কুদরতের দ্বারা তোমার নিকট নেক ’আমল করার শক্তি প্রার্থনা করছি। তোমার নিকট তোমার মহা ফজল চাই। এজন্য তুমিই সকল কাজের শক্তি দাও। আমি তোমার ইচ্ছা ব্যতীত কোন কাজ করতে পারব না। তুমি সব কিছুই জানো। আমি কিছুই জানি না। সব গোপন কথা তোমার জানা। হে আল্লাহ! তুমি যদি ইচ্ছা করো এ কাজটি (উদ্দেশ্য) আমার জন্যে আমার দীনে, দুনিয়ায়, আমার জীবনে, আমার পরকালে অথবা বলেছেন, এ দুনিয়ায় ঐ দুনিয়ার ভাল হবে, তাহলে তা আমার জন্যে ব্যবস্থা করে দাও। আমার জন্য তা সহজ করে দাও। তারপর আমার জন্য বারাকাত দান করো। আর তুমি যদি এ কাজকে আমার জন্য আমার দীন, আমার জীবন, আমার পরকাল অথবা বলেছেন, আমার ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর মনে করো, তাহলে আমাকে তার থেকে, আর তাকে আমার থেকে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্যে যা কল্যাণকর তা করে দাও। অতঃপর এর সঙ্গে আমাকে রাজী করো।)।

হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, ’এ কাজটি’ বলার সময় দরকারের ব্যাপারটি স্মরণ করতে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৬২, ৬৩৮২, ৭৩৯০, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৩৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৮০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৩৮৩, নাসায়ী ৩২৫২, আহমাদ ১৪৭০৭, ইবনু হিব্বান ৮৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯২১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০১৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮২, সহীহ আল জামি ৮৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোআর সময়কাল

এখানে দোআটি কখন পড়বে, সে বিষয়ে দুটি বিষয় প্রতিভাত হয়।

(ক) জাবের (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীছে এসেছে ثُمَّ لْيَقُلْ ‘অতঃপর সে যেন বলে’। এতে বুঝা যায় যে, সালাম ফিরানোর পরে দোআ করবে।

(খ) একই রাবী বর্ণিত আবুদাঊদের হাদীছে এসেছে وَلْيَقُلْ ‘এবং সে যেন বলে’। এতে বুঝা যায় যে, ছালাতের মধ্যে দোআ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৬২, ৬৩৮২, ৭৩৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২৩, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৩৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৮০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৩৮৩, নাসায়ী ৩২৫২, আহমাদ ১৪৭০৭, ইবনু হিব্বান ৮৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯২১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০১৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮২, সহীহ আল জামি ৮৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যান্য ছহীহ হাদীছে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের মধ্যেই বিশেষ করে সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বিশেষ দোআ সমূহ করতেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪, ৮১৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সে হিসাবে ইস্তেখারাহর দোআটিও শেষ বৈঠকে বসে ধীরে-সুস্থে করা বাঞ্ছনীয়। আর যদি সালাম ফিরানোর পরে উক্ত দো‘আ করেন, তাহলে বেশী দেরী না করে এবং অহেতুক কোন কথা না বলে সত্বর দুহাত উঠিয়ে দোআ করবেন এবং শুরুতে হাম্দ ও দরূদ পাঠ করবেন। যেমন আল-হামদুলিল্লাহি রব্বিল ‘আ-লামীন, ওয়াছছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহিল কারীম, অতঃপর দোআ পাঠ করবেন। (আবুদাঊদ হা/১৪৮১, ৮৮-৯০; নায়ল ৩/৩৫৪-৫৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৫৮; মির‘আত ৪/৩৬২, ৬৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী ফাদালাহ ইবনু ’উবাইদ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সালাতের মধ্যে দু’আকালে আল্লাহর বড়ত্ব ও গুণাবলী বর্ণনা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে শুনলেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ ব্যক্তি তাড়াহুড়া করেছে। অতঃপর তিনি ঐ ব্যক্তিকে অথবা অন্য কাউকে বললেনঃ তোমাদের কেউ সালাত আদায়কালে যেন সর্বপ্রথম তার প্রভূর মহত্ব ও প্রশংসা বর্ণনা করে এবং পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূপ পাঠ করে, অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দু’আ করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৮১, সুনান আত তিরমিযী ৩৪৭৬, সুনান আননাসায়ী ১২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছাহেবে মির‘আত বলেন, ইস্তেখারাহর পরে যেটা প্রকাশিত হয় বা ঘটে যায়, সেটাই করা উচিৎ। এজন্য তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং স্বপ্ন দেখা বা কাশ্ফ হওয়া অর্থাৎ হৃদয় খুলে যাওয়া শর্ত নয়। (মির‘আত ৪/৩৬৫)।

একটি বিষয়ের জন্য একবার ব্যতীত একাধিকবার ‘ছালাতুল ইস্তেখা-রাহ’আদায়ের কথা স্পষ্টভাবে কোন ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো দোআ করলে একই সময়ে তিনবার করে দোআ করতেন এবং কিছু চাইলে তিনবার করে চাইতেন। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৪৭, ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, অনুচ্ছেদ-৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) কা’বার কাছে সালাত আদায় করছিলেন। এ সময় কুরায়শদের একদল লোক সেখানে বসা ছিল। তখন তাদের মধ্য হতে একজন বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উটের নাড়িভুড়ি এনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, অতঃপর এ লোক [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল] যখন সিজদায় যাবে তখন তা তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। অতঃপর তাদের মধ্য হতে সর্বাপেক্ষা বড় পাপিষ্ঠটি উঠে গেল। যখন নবী (সা.) সিজদায় গেলেন তখন সে তা তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। এমতাবস্থায় নবী (সা.) সিজদারত রইলেন। সেই পাপিষ্ঠরা খুব হাসাহাসি করতে লাগল, এমনকি হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর ঢলে পড়ল। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি [ইবনু মাসউদ (রাঃ)] ফাতিমাহ’র নিকট গিয়ে বললেন, তিনি দৌড়িয়ে আসলেন। অথচ নবী (সা.) তখনো পূর্ববৎ সিজদায় রয়েছিলেন। ফাতিমাহ (রাঃ) নাড়িভুঁড়িটি নবী (সা.) -এর ওপর হতে সরিয়ে ফেললেন এবং ঐ সকল পাপিষ্ঠ কাফিরদের লক্ষ্য করে গালমন্দ করলেন। বর্ণনাকারী ইবনু মাউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষ করে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি কুরায়শদেরকে ধরাশয়ী কর। আর রাসূল (সা.) -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন বিষয়ে দু’আ বা বদদু’আ করতেন কিংবা আল্লাহর কাছে চাইতেন, তখন তিন তিনবার বাক্যগুলো উচ্চারণ করতেন। অতঃপর তিনি (সা.) (কাফিরদের নাম ধরে) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ১. ’আমর ইবনু হিশাম (আবূ জাহল), ২. ’উতবাহ্ ইবনু রবী’আহ্, ৩, শায়বাহ্ ইবনু রবী’আহ, ৪. ওয়ালীদ ইবনু ’উতবাহ, ৫. উমাইয়্যাহ ইবনু খালফ, ৬. ’উকবাহ্ ইবনু আবূ মু’আয়ত্ব এবং ৭. ’উমারাহ্ ইবনুল ওয়ালীদেরকে পাকড়াও কর।

বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (সা.) যে সকল লোকের নাম নিয়ে বদদু’আ করেছিলেন, আমি বদরের যুদ্ধে তাদের লাশ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। অতঃপর তাদেরকে টেনে বদরের একটি অনাবাদ কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঐ কূপে যাদেরকে নিক্ষেপ করা হলো, তাদের ওপর লা’নাতের পর লা’নাত রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২০, ২৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৫৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৯৪, মুসনাদে আহমাদ ২২২৫, আবূ ইয়া'লা ২৬০৪, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১০৬১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৮১৮৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ৩৪৭২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই ছহীহ হাদীছের উপরে ভিত্তি করে ইস্তেখারাহর দোআ পাঠের উদ্দেশ্যে অত্র ছালাত ইস্তিসক্বার ছালাতের ন্যায় একাধিকবার পড়া যায় বলে ইমাম শাওকানী মন্তব্য করেছেন। ইমাম নববী বলেন, উক্ত দো‘আ পাঠের সময় হৃদয়কে যাবতীয় ঝোঁক প্রবণতা হ’তে খালি করে নিতে হবে এবং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করতে হবে। নইলে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে কল্যাণপ্রার্থী না হয়ে বরং নিজের প্রবৃত্তির পূজারী হিসাবে গণ্য হবে। (নায়লুল আওত্বার ৩/৩৫৬, ‘ইস্তেখা-রাহর ছালাত’ অনুচ্ছেদ)।

সিজদায়ে শোকর

কোন খুশীর ব্যাপার ঘটলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সিজদায় পড়ে যেতেন। (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৪৯৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 আবূ বকরাহ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন আনন্দের ব্যাপার সংঘটিত হলে অথবা কোন ব্যাপার তাঁকে খুশী করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশে সাজদায় নুয়ে পড়তেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৭৭৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্, ৭৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায়ে তেলাওয়াতের ন্যায় এখানেও একটি সিজদা হবে এবং এই সিজদাতেও ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। হাদীছে তাকবীর দেওয়ার স্পষ্ট বক্তব্য নেই। তবে সম্ভবতঃ অন্যান্য সিজদার উপরে ভিত্তি করে ছাহেবে ‘বাহরুর রায়েক্ব’ তাকবীর দেওয়ার কথা বলেছেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৮ পৃঃ)।

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা,  এখানে ফরজ সালাতের পর অন্যান্য তথা সুন্নাত বা নফল সালাত সমূহের সহিহ হাদিস ভিত্তিক ফজিলত, গুরুত্ব ও সহিহ নিয়মাবলী আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পূর্বের জাল/জঈফ হাদিস ভিত্তিক আমল বাদ দিয়ে সহিহ হাদিস ভিত্তিক আমল করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...