জুমআর দিনের মর্যাদা ও যে সময়ে দোয়া কবুল হয়
দোয়া হলো "প্রার্থনা" বা
"মিনতি"। এটি সাধারণত আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়া বা সাহায্য প্রার্থনা
করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মুসলিমদের ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে আল্লাহর
কাছে সরাসরি সাহায্য চাওয়া হয়।
দোয়া (আরবি: دُعَاء)
শব্দের আভিধানিক অর্থ ডাকা বা আহ্বান করা। এটি আল্লাহর কাছে বান্দার চাওয়া-পাওয়া
এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা এক প্রকার প্রার্থনা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “দোয়া” হলো ইবাদত’।
নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব
বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯,
ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী
১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল
মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ বলেন,
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো,
আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেবো। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে,
তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (সুরা
আল মুমিন ৪০, আয়াত ৬০)।
রাসুল সাঃ বলেছেন:
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের
অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, সুনান আততিরমিযী ৩৩৭০, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্
দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ ৭১৮, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিকট
দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮২৭, সুনান আততিরমিযী ৩৩৭৩, সহীহাহ ২৬৫৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
দোয়া দুই প্রকারঃ যথাঃ
(এক) দুআউল
ইবাদাহ বা উপাসণামূলক দু'আ। সকল প্রকার ইবাদতকে এ অর্থে দু'আ বলা হয়।
(দুই)
দুআউল মাছআলা অর্থাৎ প্রার্থনাকারী নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা চাবে এবং যা ক্ষতিকর
তা থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ
: ইবনুল কায়্যিম)।
যেমন কেউ সালাত আদায় করল। এ সালাতের মধ্যে
অনেক প্রার্থনামূলক বাক্য ছিল। এগুলোই দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক প্রার্থনা। আবার
সে পরীক্ষা দেবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল হে আল্লাহ! তুমি আমার পরীক্ষা সহজ করে
দাও এবং কৃতকার্য করে দাও! এটা হলো দুআ আল-মাছআলা বা চাওয়া।
মুনাজাত
মুনাজাত (مُنَاجَاةٌ) আরবী শব্দ। সেই থেকে نَاجَى يُنَاجِىْ مُنَاجَاةً ব্যবহার হয়। এর অর্থ
পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা। (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (ইস্তাম্বুল-তুরকী:
আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯৭২খৃঃ/১৩৯২হিঃ), পৃঃ ৯০৫; আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ
ওয়াল আ‘লাম (বৈরুত-লেবানন : আল-মাকতাবাতুশ শারক্বিইয়াহ, ৪১তম প্রকাশ : ২০০৫), পৃঃ ৭৯৩)।
শরী‘আতের পরিভাষায় মোনাজাত হল, ছালাতের মধ্যে
আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুছল্লীর চুপি চুপি কথা বলা। ছহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য
হাদীছ গ্রন্থে উক্ত অর্থেই মোনাজাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই
তোমাদের কেউ যখন তার ছালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মোনাজাত করে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪০৫, ১ম খন্ড, ৫৮, (ইফাবা হা/৩৯৬, ১/২২৭ পৃঃ),
‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৩। এছাড়া দ্রঃ হা/৪১৭, ৫৩১, ৫৩২ ও ১২১৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৯,
৭৬ ও ১৬২)।
হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর নিকট
কষ্টদায়ক মনে হলো। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার
করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে
কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্বিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন
ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে তা ফেলে। অতঃপর
চাদরের আঁচল নিয়ে তাতে তিনি থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন
এবং বললেনঃ অথবা সে এমন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪০, ২৪১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫১, আহমাদ ১২৮০৯)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিন যখন ছালাতের মধ্যে থাকে তখন সে তার
রবের সাথে মোনাজাত করে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪১৩, ১/৫৯ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৪০২, ১/২২৯ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬)।
হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন যখন সালাতে থাকে, তখন সে
তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে,
বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১৩, ২৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরেক হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী তার রবের
সাথে মুনাজাত করে’। (মিশকাত হা/৮৫৬, ১/২৭১ পৃঃ, সনদ ছহীহ;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৯৬, ২/২৮৪ পৃঃ)।
হাদিসঃ
ইবনু ’উমার (রাঃ) এবং ’আবদুল্লাহ ইবনু আনাস
আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী সালাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে
একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের
কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৫৬, আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্ ১০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
যখন
তোমাদের কেউ ছালাতে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ মুছাল্লাতে
ছালাত রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে’। (মুত্তাফাক্ব
আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৪১৬, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০৫, ১/২৩০ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১২৩০;
১ম খন্ড, পৃঃ ২০৭, ‘মসজিদ ও ছালাতের জায়গা সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৭১০, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৬৫৮, ২/২১৯ পৃঃ; ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ)।
হাদিসঃ
ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ...আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাতে
দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে যতক্ষণ তার মুসাল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান
আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন
ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪১৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৭১০, আহমাদ ৮২৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৮৩, সহীহাহ্ ৩৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উল্লেখ্য, হাদীছে উল্লিখিত يُنَاجِى শব্দটি ফে‘ল বা ক্রিয়া।
আর তার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হল (مُنَاجَاةٌ)
মুনাজাত।
মুছল্লী ছালাতের মধ্যে সারাক্ষণই যে মুনাজাত
করে এবং পুরো ছালাতটাই যে তার জন্য মুনাজাত তা উপরিউক্ত হাদীছগুলো থেকে পরিষ্কার ফুটে
উঠেছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুছল্লী যখন ছালাত শেষ করে, তখন তার মুনাজাতও শেষ হয়ে
যায়। মুছল্লী ছালাতের মাঝে আল্লাহর সাথে কিভাবে মুনাজাত করে তাও হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত
হয়েছে-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করলো কিন্তু
এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করলো না তাতে তার সালাত ’’অসম্পূর্ণ’’
রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত আদায় করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন,
হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ বলেছেন, আমি ’সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার
মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু’আ বান্দার
জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়।
বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত
জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা
বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো।
বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা
আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ’ইবাদাত
করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার
মধ্যকার ব্যাপার (’ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে
তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর।
সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি’আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার
গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটা আমার বান্দার
জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ
৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব, মুনাজাত বা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা
করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হলো ছালাত। (সুরা বাক্বারাহ ৪৫)।
দোয়া ও মুনাজাত বা প্রার্থনার গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “দোয়া” হলো ইবাদত’।
নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব
বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯,
ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী
১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল
মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের
ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদত হতে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ
করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়”। এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দো‘আ। (সুরা
গাফের/মুমিন ৪০/৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৬৬-এর ব্যাখ্যা, ‘দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৩৫২)।
আল্লাহ আরও বলেন,
“আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে
জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া
দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন করে এবং আমার
প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়”। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৬)।
নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না
নেক
আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা
করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন”। (সূরা রা’দ, আয়াত ৩৯)।
সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের
লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২১৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
ভাগ্য পরিবর্তনশীল এটাই সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন ও নিজের প্রচেষ্টায় নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব। ভাগ্য যদি পরিবর্তনশীলই
না হবে তাহলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ তওবা ও ইস্তেগফারমূলক কিংবা আরো অসংখ্য দোয়া কেনো
নাযিল করে সেগুলো সালাতের মধ্যে ও সালাতের বাহিরে আমল করতে বলা হলো। কদর রাতে আল্লাহ
তায়ালা সুরা আল কদর নাযিল করা হয়েছে। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতারা
ও রূহ অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। (সুরা আল কদর
৯৭, আয়াত ৪)।
এই রাতে সকল মুসলমান নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে
ইবাদত বন্দেগী, জিকির ও বিভিন্ন আমল বা দোয়া পাঠ করে থাকে। অতএব ভাগ্য পরিবর্তনশীল।
নিজের কৃতকর্ম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা আমলের মাধ্যমে নিজের
ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।
আপনি যে আমল করছেন, সব সময় জিকির করছেন বা
দোয়া পাঠ করছেন এটাও আপনার প্রচেষ্টা।
নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত
করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া
দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৬৯, ৩২৪৭, ৩৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৭৯,
১৭৮৮৮, ১৭৯১৯, ১৭৯৬৪, আল-আহকাম ১৯৪, রাওদুন নাদীর ৮৮৮, মিশকাত ২৩৩০, সহীহ আবু দাউদ
১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জুমআর দিনের মর্যাদা ও ফজিলত
(১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে
সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে
জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠিয়ে)
দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ও এ জুমু‘আর দিনেই ক্বায়িম হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৪, আত্ তিরমিযী ৪৮৮, আহমাদ ৯৪০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৬০০৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯৫, সহীহ আল জামি ৩৩৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি তূর (বর্তমান ফিলিস্তীনের সিনাই) পর্বতের দিকে গেলাম। সেখানে কা‘ব আহবার-এর সঙ্গে
আমার দেখা হলো। আমি তার কাছে বসে গেলাম। তিনি আমাকে তাওরাতের কিছু কথা বলতে লাগলেন।
আমি তার সামনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু হাদীস বর্ণনা করলাম।
আমি যেসব হাদীস বর্ণনা করলাম তার একটি হলো, আমি তাঁকে বললাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমু‘আর
দিন। জুমু‘আর দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাঁকে জান্নাত থেকে জমিনে বের করা
হয়েছে। এ দিনেই তাঁর তওবা্ কবূল করা হয়। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই ক্বিয়ামাত
হবে।
আর জিন্ ইনসান ছাড়া এমন কোন চতুষ্পদ জন্তু
নেই যারা এ জুমু‘আর দিনে সূর্য উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবার মুহূর্তের
জন্য অপেক্ষা না করে। জুমু‘আর দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে সময় যদি কোন মুসলিম সালাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট কিছু চায়, আল্লাহ তাকে
অবশ্যই তা দান করেন। কা‘ব আহবার এ কথা শুনে বললেন, এ রকম দিন বা সময় বছরে একবার আসে।
আমি বললাম, বরং প্রতিটি জুমু‘আর দিনে আসে। তখন কা‘ব তাওরাত পাঠ করতে লাগলেন, এরপর বললেন,
‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন।’’
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ
ইবনু সালাম (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর কা‘ব-এর কাছে আমি যে হাদীসের উল্লেখ করেছি
তা তাঁকেও বললাম। এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-কে এ কথাও বললাম যে, কা‘ব বলছেন,
‘এ দিন’ বছরে একবারই আসে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)বললেন, ‘‘কা‘ব ভুল কথা বলেছে।’’
তারপর আমি বললাম, কিন্তু কা‘ব এরপর তাওরাত পড়ে বলেছে যে, এ সময়টা প্রত্যেক জুমু‘আর
দিনই আসে। ইবনু সালাম বললেন, কা‘ব এ কথা ঠিক বলেছে। এরপর বলতে লাগলেন, আমি জানি সে
কোন সময়? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমাকে বলুন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম
বললেন, সেটা জুমু‘আর দিনের শেষ প্রহর।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন সেটা জুমু'আর দিনের
শেষে কি করে হয়, যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মু’মিন
বান্দা এ ক্ষণটি পাবে ও সে এ সময়ে সালাত আদায়
করে থাকে.....? (আর আপনি বলছেন সে সময়টি জুমু‘আর দিনের শেষ প্রহর। সে সময় তো সালাত
আদায় করা হয় না। সেটা মাকরূহ সময়)।
‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, (এটা তো সত্য
কথা কিন্তু) এটা কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নয় যে, যে ব্যক্তি
সালাতের অপেক্ষায় নিজের স্থানে বসে থাকে সে সালাত অবস্থায়ই আছে, আবার সালাত পড়া পর্যন্ত।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি এ কথা শুনে বললাম, হ্যাঁ! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তাহলে সালাত অর্থ হলো, সালাতের জন্য
অপেক্ষা করা। আর দিনের শেষাংশে সালাতের জন্য বসে থাকা নিষেধ নয়। সে সময় যদি কেউ দু‘আ
করে, তা কবূল হবে। (মালিক, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; ইমাম আহমাদও এ বর্ণনাটিصَدَقَ كَعْبٌ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।)
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৬, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৪, আহমাদ ১০৩০৩, ইবনু হিব্বান ২৭৭২,
মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০২, শু‘আবুল ঈমান ২৭১৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আওস ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন হলো তোমাদের সর্বোত্তম
দিন। এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁর রূহ কবয করা হয়েছে। এ দিনে প্রথম
শিঙ্গা ফুঁৎকার হবে। এ দিন দ্বিতীয় শিঙ্গা ফুঁৎকার দেয়া হবে। কাজেই এ দিন তোমরা আমার
উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করবে। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হবে। সাহাবীগণ আরয
করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে। অথচ আপনার হাড়গুলো
পচে গলে যাবে? বর্ণনাকারী বলেন, أَرَمْتَ
(আরামতা) শব্দ দ্বারা সাহাবীগণ بَلِيْتَ
(বালীতা) অর্থ বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আপনার পবিত্র দেহ পঁচে গলে মাটিতে মিশে যাবে। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা নবী-রসূলদের শরীর মাটির জন্য
হারাম করে দিয়েছেন (অর্থাৎ মাটি তাদের দেহ নষ্ট করতে পারবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৫, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৭, নাসায়ী ১৩৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৮৫, ১৬৩৬, ইবনু আবী শায়বাহ্
৮৬৯৭, আহমাদ ১৬১৬২, দারিমী ১৬১৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৩, ইবনু হিব্বান ৯১০, মুসতাদরাক
লিল হাকিম ১০২৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৩, ইরওয়া ৪,
সহীহ আত্ তারগীব ৬৯৬, ১৬৭৪, সহীহ আল জামি‘ ২২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) লুবাবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জুমু‘আর দিন’’ সকল দিনের
সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল
আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
(ক) আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।
(খ) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে
পাঠিয়েছেন।
(গ) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন।
(ঘ) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা
আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন।
(ঙ) এ দিনেই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর
নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু‘আর দিনকে ভয়
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ
১০৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮৪, ইবনু শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি ২২৭৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন-বিধানকে পরিপূর্ণ
করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার সকল নি‘আমাত পূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে
ইসলামকে মনোনীত করেছি’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৩)। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ইয়াহূদী
বসা ছিল। সে ইবনু ‘আব্বাসকে বলল, যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হত তাহলে আমরা এ দিনটিকে
ঈদের দিন হিসেবে খুশীর উদযাপন করতাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ আয়াতটি দু’ঈদের দিন,
বিদায় হাজ্জ ও ‘আরাফার জুমু‘আর দিন নাযিল হয়েছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৬) জুমুআহ অর্থাৎ জমায়েত বা সমাবেশ ও সম্মেলনের
দিন। এটি মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ ও বিশেষ ইবাদতের দিন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে
মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে
আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।
(সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(৭) এই দিনে গুনাহ মাফ হয়ঃ
(ক) উমাইয়্যাহ ইবনু বিস্তাম (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে
জুমুআর সালাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সালাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবাহ
শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমুআর) সালাত আদায় করল, এতে তার
দু' জুমুআর মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করার পর জুমুআর সালাতে
এলো, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনল, তার পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত
তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক,
বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করল। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক
জুমুআহ পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ, যদি না
কবীরা গুনাহ করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৬, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৩৩, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৯৪৪, ১০১৯৮, ২৭২৯০, সহীহ তারগীব ৬৮৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) জুমআর দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ
করলেঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু‘আর দিন
অথবা জুমু‘আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা
করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৭, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১০৭৪, আহমাদ ৬৫৮২)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(৯) এক জুমু‘আহ হতে পরবর্তী জুমু‘আহ
পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়ঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর সালাত আদায়ের জন্য উত্তমরূপে
অযু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, অতঃপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমু‘আহ
হতে (পরবর্তী) জুমু‘আহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, বায়হাক্বী (৩/২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) জুমআর দিনে দোয়া কবুল হয়
বিভিন্ন সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, জুমার
দিনে দোয়া কবুল হয়। জুমার দিনে দোয়া কবুলের দুটি সময়ের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো,
ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়
এই মুহূর্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা হলো
ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়।
আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
জুমু‘আর দিনের দু‘আ কবূলের সময় সম্পর্কে বলতে শুনেছেনঃ সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের
উপর বসার পর সালাত পড়াবার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৩,
ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৩, সুনানুল বায়হাক্বী ৫৯৯৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৯,
রিয়াযুস সালিহীন ১১৬৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরেকটি হলো,
আসরের পর যে কোনো একটি সময়। অবশ্য এ প্রসঙ্গে আরো অন্য সময়ের কথাও অনেকে
বলেছেন। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৮৯-৩৯০)।
(ক) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন দু‘আ কবূল হবার সময়টির
আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন ‘আসরের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় খোঁজে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৮৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭০১, সহীহ আল জামি‘ ১২৩৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে
এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে
মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহুর্তটি তোমরা ‘আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান
করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৮, নাসায়ী ১৩৮৮,
হাকিম (১/২৭৯) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন,
এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর
নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত
করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৫, ৫২৯৪, ৫২৯৫, ৬৪০০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫৪-১৮৫৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০-৩২,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১০৪৬, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪২-৪৩, দারিমী ১৫৬৯, মুসান্নাফ
‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৫৭২, আহমাদ ৭১৫১, ৯৮৯২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৫৯৯৮, শু‘আবুল ঈমান ২৭১১, সহীহ আত্ তারগীব ৭০০, সহীহ আল জামে ২১২০, আহমাদ ৭১১১, ৭৪২৩,
৭৬৩১, ৭৭১১, ৭৭৬৪, ৮৯৫৩, ৯৮৭৪, ৯৯২৯-৩০, ৯৯৭০, ১০০৮২, ১০১৬৭, ২৭২৩৪, ২৭২৬৯, ২৭৩৩৫;)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম,
আমরা আল্লাহ্র কিতাবে জুমুআহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে,
সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে,
তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই
বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেনঃ সেটি হলো
দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সালাতের সময় নয়? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। মুমিন বান্দা
এক সালাত শেষ করে বসে বসে অন্য সালাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সালাতের মধ্যেই থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৯, আহমাদ ২৩২৬৯)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (কুরআনে বর্ণিত) ‘‘ইয়াওমুল মাও‘ঊদ’’
হলো কিয়ামতের দিন। ‘ইয়াওমুল মাশহূদ’ হলো ‘আরাফাতের দিন। আর ‘শাহিদ’ হলো জুমু‘আর দিন।
যেসব দিনে সূর্য উদয় ও অস্ত যায় তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘‘জুমু‘আর দিন’’। এ দিনে এমন
একটি সময় আছে সে সময়টুকু যদি কোন মু’মিন বান্দা পেয়ে যায়, আর ওই সময়ে সে আল্লাহর কাছে
কোন কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে সে কল্যাণ প্রদান করবেন। যে
জিনিস থেকে সে আশ্রয় চাইবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৩৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৬৪, সহীহ আল জামি ৮২০১)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
জুমআর দিনে করণীয়
(১)
জুমআর ফজরের প্রথম রাকআতে সূরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা দাহ্র (ইনসান) পাঠ
করা। উভয় সূরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করাই সুন্নত। প্রত্যেক সূরার কিছু করে অংশ
পড়া সুন্নত নয়।
অবশ্য অন্য সূরা পড়া দোষাবহ্ নয়। বরং কখনো
কখনো ঐ দুই সূরা না পড়াই উচিৎ। যাতে সাধারণ মানুষ তা পড়া জরুরী মনে না করে বসে। বরং
তা জরুরী মনে করে পড়া এবং কখনো কখনো না ছাড়া বা কেউতা না পড়লে আপত্তি করা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ২৮১পৃ:)।
(২) সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া। আগে আগে
মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিশেষ মাহাত্ম আছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর
রসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন নাপাকীর গোসলের মত গোসল করল। অতঃপর প্রথম সময়ে
(মসজিদে গিয়ে) উপস্থিত হল, সে যেন এক উষ্ট্রী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে
উপস্থিত হল, সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি
শিং-বিশিষ্ট মেষ কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি মুরগী দান
করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি ডিম দান করল। অতঃপর যখন ইমাম (খুতবাদানের
জন্য) বের হয়ে যান (মিম্বরে চড়েন), তখন ফিরিশ্তাগণ (হাজরী খাতা গুটিয়ে) যিক্র (খুতবা)
শুনতে উপস্থিত হন।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০, আহমাদ ৯৯৩৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) জুমআর জন্য প্রস্তুতিস্বরুপ দেহের
দুর্গন্ধ দূর করা, সে জন্য গোসল করা, আতর ব্যবহার করাঃ
(ক) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর
সালাত আদায় করতে আসে সে যেন গোসল করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৮,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৭৭, ৮৯৪, ৯১৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮৩৬-১৮৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯২, ৪৯৪; নাসায়ী
১৩৭৬, ১৪০৫-৭; আহমাদ ৪৪৫২, ৪৫৩৯, ৪৯০১, ৪৯২৩, ৪৯৮৫, ৪৯৮৮, ৫০৫৮, ৫০৬৩, ৫১০৭, ৫১২০,
৫১৪৭, ৫১৮৮, ৫২৮৯, ৫৪২৭, ৫৪৫৮, ৫৪৬৪, ৫৭৪৩, ৫৭৯৪, ৫৯২৫, ৫৯৮৪, ৬২৩১, ৬২৯১, ৬৩৩৩; মুওয়াত্ত্বা
মালিক ২৩১, দারিমী ১৫৩৫-৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির গোসল করা
কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৮৫৮, ৮৭৯-৮০, ৮৯৫, ২৬৬৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮৪৬, নাসায়ী ১৩৭৫, ১৩৭৭, ১৩৮৩; আবূ দাঊদ ৩৪১, ৩৪৪, আহমাদ ১০৬৪৪, ১০৮৫৭, ১১১৮৪,
১১২৩১, ১১২৬১; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩০, দারিমী ১৫৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করবে, যতটুকু
সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে
সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে
ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত (নফল) আদায়
করবে। চুপচাপ বসে ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু‘আহ্ ও আগের জুমু‘আর মাঝখানের
সব (সগীরাহ্) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৩৮১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ
আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি ৭৭৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু‘আর সালাত আদায় করতে
এসেছে ও যতটুকু সম্ভব হয়েছে সালাত আদায় করেছে, ইমামের খুত্ববাহ্ (খুতবা) শেষ হওয়া পর্যন্ত
চুপচাপ রয়েছে। এরপর ইমামের সাথে সালাত (ফরয) আদায় করেছে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ থেকে
বিগত জুমু‘আর মাঝখানে, বরং এর চেয়েও তিন দিন আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে
উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ
জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের।
আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সুনান ইবনু মাজাহ
১০৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু
খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল
ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি ৬১৭৯, ইসলামী
ফাউন্ডেশন ১৮৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের
ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন
গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬)।হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
গোসল করা ওয়াজেব না হলেও ঈদ, জুমুআহ ও জামাআতের
জন্য পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা একটি প্রধান কর্তব্য।
(৪) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করাঃ
দাঁতন ব্রাশ করে দাঁত ও মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত
করে নেওয়া জুমআর পূর্বে একটি করণীয় কর্তব্য। মহানবী (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালকের
জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।”
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৮৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
‘উবায়দ ইবনু সাব্বাক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক জুমু‘আর দিন বলেছেনঃ হে মুসলিমগণ!
এ দিন, যে দিনকে আল্লাহ তা‘আলা ঈদ হিসেবে গণ্য করেছেন। অতএব তোমরা এ দিন গোসল করবে।
যার কাছে সুগন্ধি আছে সে তা ব্যবহার করলেও কোন ক্ষতি নেই। তোমরা অবশ্য অবশ্যই মিসওয়াক
করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ
১০৯৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ২১৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৩০১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০১৬,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) সুন্দর পোশাক পরাঃ
(ক) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে সুগন্ধি
থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাবে, সেখানে (সামনে যাওয়ার
জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সালাত আদায় করে ইমামের খুতবার
জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে-তাহলে এটা তার জন্য
এ জুমু‘আহ্ ও তার পূর্ববর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনহর কাফফারা হয়ে যাবে। আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা নেক কাজের
সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৪৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭, সুনান
ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ১১৭৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬২, শারহু মা‘আনির আসার ২১৬৪, ইবনু
হিব্বান ২৭৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬০, সহীহ আল জামি ৬০৬৭)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে,
সে যেন তার কাজ-কর্মের পোশাক ছাড়া জুমু‘আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৫, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬৫, সুনানুল বায়হাক্বী আল কুবরা ৫৯৫২,
সহীহুল জামি ৫৬৩৫, নাসায়ী ১৩৭৪, দারিমী ১৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর দিন লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি তাদেরকে দৈনন্দিনের
পোশাক পরিহিত দেখেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কী
হলো যে, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে কি তার কাজকর্মের পোশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহর
সালাত এর জন্য আরো একজোড়া পোশাক গ্রহণ করতে পারে না? (সুনান
ইবনু মাজাহ ১০৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৯, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৬৫, সহীহ আবী দাউদ
৯৮৯, গয়াতুল মারাম ৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা
অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির
ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমুআহর সালাত এ এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং
দুজনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমুআহ থেকে পরবর্তী জুমুআহর মধ্যবর্তী
সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭,
আহমাদ ২১০২৯)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
জুমআর জন্য সাধারণ আটপৌরে পোশাক বা কাজের কাপড়
ছাড়া পৃথক তোলা পোশাক ও কাপড় পরা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু জুমআর দিন মুসলিমদের সমাবেশের দিন।
আর এ দিনে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। যাতে অপরের কাছে কেউ ঘৃণার পাত্র
না হয়ে যায়। অথবা তার অপরিচ্ছন্নতায় কেউ কষ্ট না পায়।
(৬) বাসা/বাড়ী থেকে ওযু করে মসজিদে গমন করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে
উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ
জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের।
আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু
খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল
ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়াঃ
আওস
ইবনু আওস আস-সাকাফী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ
যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল
সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে
খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম রাখ ও তার
রাত জেগে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সমান সওয়াব রয়েছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৭, ইবনু
আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০, ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, আত্ তিরমিযী ৪৯৬, নাসায়ী
১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮, আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
প্রকাশ থাকে যে, যে ব্যক্তি গাড়ি করে জুমুআহ
পড়তে আসে, তার এ সওয়াব লাভ হয় না। বলা বাহুল্য, যে বাসা থেকে ১০০ কদম পায়ে হেঁটে জামে
মসজিদে পৌঁছবে, তার আমল-নামায় ১০০ বছরের রোযা-নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে; যাতে
একটি গোনাহও থাকবে না। আর তা এখানেই শেষ নয়। এইভাবে সে প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০
এবং প্রতি বছরে প্রায় ৫২০০ বছরের নামায-রোযার সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। আর এ হলো
মুসলিম বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
(৮) সূরা কাহ্ফ পাঠঃ
(ক) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ
পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল-কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে
দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৩২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(গ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)...বারা ইবনু
আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি সূরাহ আল কাহফ পড়ছিল। সে সময়
তার কাছে মজবুত লম্বা দু'টি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এ সময়ে একখণ্ড মেঘ তার
মাথার উপরে এসে হাজির হ’ল। মেঘ খণ্ডটি ঘুরছিল এবং নিকটবর্তী হচ্ছিল। এ দেখে তার ঘোড়াটি
ছুটে পালাচ্ছিল। সকাল বেলা সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ঐ বিষয়টি
বর্ণনা করল। এসব কথা শুনে তিনি বললেনঃ এটি ছিল (আল্লাহর তরফ থেকে) রহমত বা প্রশান্তি
যা কুরআন পাঠের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৭৪১-১৭৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫০১১, ৩৬১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭২৬, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উল্লেখ্য যে, জুমআর সময় মসজিদে এই সূরা তেলাওয়াত
করলে এমনভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, যাতে অপরের ডিষ্টার্ব না হয়।
জ্ঞাতব্য যে, এ দিনে সূরা দুখান পড়ার হাদীস
সহীহ নয়। (যইফ জামে ৫৭৬৭, ৫৭৬৮নং) যেমন আলে ইমরান সূরা
পাঠ করার হাদীসটি জাল। (যইফ জামে ৫৭৫৯নং)।
তদনুরুপ জুমআর নামায পড়ে ৭ বার সূরা ফাতিহা,
ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে অযীফা করার হাদীসদ্বয়ের ১টি জাল এবং অপরটি দুর্বল হাদীস। (যইফ জামে ৫৭৫৮, ৫৭৬৪, সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৩০নং) সুতরাং
এমন অযীফা পাঠ বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ১২২, ৩২৬পৃ:)।
(৯) বেশী বেশী দরুদ পাঠঃ
জুমআর রাতে (বৃহ্স্পতিবার দিবাগত রাতে) ও
(জুমআর) দিনে প্রিয়তম হাবীব মহানবী (সাঃ)-এর শানে অধিকাধিক দরুদ পাঠ করা কর্তব্য।
(ক) আওস ইবনু আওস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর
দিনটি উৎকৃষ্ট। কাজেই এ দিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে। কেননা তোমাদের
দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ
আপনার কাছে কিভাবে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? বর্ণনাকারী
বলেন, লোকেরা বললো, আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ নবীদের দেহকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) তিনি আরো বলেন, “জুমআর রাতে ও দিনে তোমরা আমার
উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ কর। আর যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির
উপর আল্লাহ ১০ বার রহ্মত বর্ষণ করবেন।” (বায়হাকী, সিলসিলাহ
সহীহাহ ১৪০৭)।
(গ) আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশী
পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) হাজির
হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে
পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির
জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযক্ব দেয়া হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৬, ইরওয়াহ ১/৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬৩৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭২)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১০) সকাল সকাল মসজিদে আসার ফজিলতঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন হলে মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতাগণ
অবস্থান করেন এবং লোকেদের আগমনের ক্রমানুসারে তাদের নাম লিখেন। যেমন প্রথম আগমনকারীর
নাম প্রথমে। ইমাম যখন খুতবাহ দিতে বের হন, তখন তারা তাদের নথি গুটিয়ে নেন এবং মনোযোগ
সহকারে খুতবাহ শোনেন। সালাত এ প্রথম আগমনকারীর সাওয়াব একটি উট কুরবানীকারীর সমান, তারপরে
আগমনকারীর সওয়াব একটি গরু কুরবানীকারীর সমান, তারপর আগমনকারীর সওয়াব একটি মেষ কুরবানীকারীর
সমান, এমনকি তিনি মুরগী ও ডিমের কথা উল্লেখ করেন। সাহল ইবনু আবূ সাহলের রিওয়ায়তে আরো
আছেঃ এরপর যে ব্যক্তি আসে, সে কেবল সালাত পড়ার সওয়াব পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৪,
সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯২, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮১, ৯২৯, ৩২১১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, ১৮৬৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮৫০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৯, নাসায়ী ৮৬৪, ১৩৮৫-৮৮; আহমাদ ৭২১৭, ৭৪৬৭, ৭৭০৮,
৯৬১০, ১০০৯৬, ১০১৯০, ১০২৬৮; শারহু মা‘আনির আসার ৬২৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৫৮৬২, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২২৭, দারিমী ১৫৪৩-৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ সকাল সকাল আগমনের একটি উদাহরণ দেনঃ
যেমন উট কুরবানীকারী, গরু কুরবানীকারী, বকরী কুরবানীকারী, এমনকি তিনি মুরগী পর্যন্ত
উল্লেখ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
লেখক ও সংকলকঃ
মো:
ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment