Friday, August 1, 2025

জুমআর দিনের মর্যাদা ও যে সময়ে দোয়া কবুল হয়

জুমআর দিনের মর্যাদা ও যে সময়ে দোয়া কবুল হয়

 


দোয়া হলো "প্রার্থনা" বা "মিনতি"। এটি সাধারণত আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়া বা সাহায্য প্রার্থনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মুসলিমদের ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে আল্লাহর কাছে সরাসরি সাহায্য চাওয়া হয়।

দোয়া (আরবি: دُعَاء) শব্দের আভিধানিক অর্থ ডাকা বা আহ্বান করা। এটি আল্লাহর কাছে বান্দার চাওয়া-পাওয়া এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা এক প্রকার প্রার্থনা।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “দোয়া” হলো ইবাদত’।

নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ বলেন,

“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেবো। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (সুরা আল মুমিন ৪০, আয়াত ৬০)।

রাসুল সাঃ বলেছেন:

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, সুনান আততিরমিযী ৩৩৭০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ ৭১৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৭, সুনান আততিরমিযী ৩৩৭৩, সহীহাহ ২৬৫৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দোয়া দুই প্রকারঃ যথাঃ

(এক) দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক দু'আ। সকল প্রকার ইবাদতকে এ অর্থে দু'আ বলা হয়।

(দুই) দুআউল মাছআলা অর্থাৎ প্রার্থনাকারী নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা চাবে এবং যা ক্ষতিকর তা থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)।

যেমন কেউ সালাত আদায় করল। এ সালাতের মধ্যে অনেক প্রার্থনামূলক বাক্য ছিল। এগুলোই দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক প্রার্থনা। আবার সে পরীক্ষা দেবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল হে আল্লাহ! তুমি আমার পরীক্ষা সহজ করে দাও এবং কৃতকার্য করে দাও! এটা হলো দুআ আল-মাছআলা বা চাওয়া।

মুনাজাত

মুনাজাত (مُنَاجَاةٌ) আরবী শব্দ। সেই থেকে نَاجَى يُنَاجِىْ مُنَاجَاةً ব্যবহার হয়। এর অর্থ পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা। (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (ইস্তাম্বুল-তুরকী: আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯৭২খৃঃ/১৩৯২হিঃ), পৃঃ ৯০৫; আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আ‘লাম (বৈরুত-লেবানন : আল-মাকতাবাতুশ শারক্বিইয়াহ, ৪১তম প্রকাশ : ২০০৫), পৃঃ ৭৯৩)।

শরী‘আতের পরিভাষায় মোনাজাত হল, ছালাতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুছল্লীর চুপি চুপি কথা বলা। ছহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে উক্ত অর্থেই মোনাজাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন তার ছালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মোনাজাত করে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪০৫, ১ম খন্ড, ৫৮, (ইফাবা হা/৩৯৬, ১/২২৭ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৩। এছাড়া দ্রঃ হা/৪১৭, ৫৩১, ৫৩২ ও ১২১৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৯, ৭৬ ও ১৬২)।

হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর নিকট কষ্টদায়ক মনে হলো। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্বিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে তা ফেলে। অতঃপর চাদরের আঁচল নিয়ে তাতে তিনি থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এমন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০, ২৪১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫১, আহমাদ ১২৮০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে,  ‘নিশ্চয়ই মুমিন যখন ছালাতের মধ্যে থাকে তখন সে তার রবের সাথে মোনাজাত করে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪১৩, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০২, ১/২২৯ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬)।

হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন যখন সালাতে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১৩, ২৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরেক হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী তার রবের সাথে মুনাজাত করে’। (মিশকাত হা/৮৫৬, ১/২৭১ পৃঃ, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৯৬, ২/২৮৪ পৃঃ)।

হাদিসঃ

ইবনু ’উমার (রাঃ) এবং ’আবদুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী সালাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৫৬, আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্ ১০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

 যখন তোমাদের কেউ ছালাতে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ মুছাল্লাতে ছালাত রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৪১৬, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০৫, ১/২৩০ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১২৩০; ১ম খন্ড, পৃঃ ২০৭, ‘মসজিদ ও ছালাতের জায়গা সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৭১০, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৫৮, ২/২১৯ পৃঃ; ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসঃ

ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ...আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে যতক্ষণ তার মুসাল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪১৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১০, আহমাদ ৮২৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৮৩, সহীহাহ্ ৩৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য, হাদীছে উল্লিখিত يُنَاجِى শব্দটি ফে‘ল বা ক্রিয়া। আর তার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হল (مُنَاجَاةٌ) মুনাজাত।

মুছল্লী ছালাতের মধ্যে সারাক্ষণই যে মুনাজাত করে এবং পুরো ছালাতটাই যে তার জন্য মুনাজাত তা উপরিউক্ত হাদীছগুলো থেকে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুছল্লী যখন ছালাত শেষ করে, তখন তার মুনাজাতও শেষ হয়ে যায়। মুছল্লী ছালাতের মাঝে আল্লাহর সাথে কিভাবে মুনাজাত করে তাও হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে-

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করলো কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করলো না তাতে তার সালাত ’’অসম্পূর্ণ’’ রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত আদায় করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ বলেছেন, আমি ’সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়।

বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ’ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (’ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি’আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮২৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব, মুনাজাত বা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হলো ছালাত। (সুরা বাক্বারাহ ৪৫)।

দোয়া ও মুনাজাত বা প্রার্থনার গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “দোয়া” হলো ইবাদত’।

নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদত হতে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়”। এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দো‘আ। (সুরা গাফের/মুমিন ৪০/৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৬৬-এর ব্যাখ্যা, ‘দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৩৫২)।

আল্লাহ আরও বলেন,

“আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন করে এবং আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়”। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৬)।

নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না

 নেক আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন”। (সূরা রা’দ, আয়াত  ৩৯)।

সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৩৯,  সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ভাগ্য পরিবর্তনশীল এটাই সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নিজের প্রচেষ্টায় নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব। ভাগ্য যদি পরিবর্তনশীলই না হবে তাহলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ তওবা ও ইস্তেগফারমূলক কিংবা আরো অসংখ্য দোয়া কেনো নাযিল করে সেগুলো সালাতের মধ্যে ও সালাতের বাহিরে আমল করতে বলা হলো। কদর রাতে আল্লাহ তায়ালা সুরা আল কদর নাযিল করা হয়েছে। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতারা ও রূহ অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। (সুরা আল কদর ৯৭, আয়াত ৪)।

এই রাতে সকল মুসলমান নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ইবাদত বন্দেগী, জিকির ও বিভিন্ন আমল বা দোয়া পাঠ করে থাকে। অতএব ভাগ্য পরিবর্তনশীল। নিজের কৃতকর্ম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা আমলের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।

আপনি যে আমল করছেন, সব সময় জিকির করছেন বা দোয়া পাঠ করছেন এটাও আপনার প্রচেষ্টা।

নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৬৯, ৩২৪৭, ৩৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৭৯, ১৭৮৮৮, ১৭৯১৯, ১৭৯৬৪, আল-আহকাম ১৯৪, রাওদুন নাদীর ৮৮৮, মিশকাত ২৩৩০, সহীহ আবু দাউদ ১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমআর দিনের মর্যাদা ও ফজিলত

(১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠিয়ে) দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ও এ জুমু‘আর দিনেই ক্বায়িম হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৪, আত্ তিরমিযী ৪৮৮, আহমাদ ৯৪০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯৫, সহীহ আল জামি ৩৩৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তূর (বর্তমান ফিলিস্তীনের সিনাই) পর্বতের দিকে গেলাম। সেখানে কা‘ব আহবার-এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। আমি তার কাছে বসে গেলাম। তিনি আমাকে তাওরাতের কিছু কথা বলতে লাগলেন। আমি তার সামনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু হাদীস বর্ণনা করলাম। আমি যেসব হাদীস বর্ণনা করলাম তার একটি হলো, আমি তাঁকে বললাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। জুমু‘আর দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাঁকে জান্নাত থেকে জমিনে বের করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর তওবা্ কবূল করা হয়। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই ক্বিয়ামাত হবে।

আর জিন্ ইনসান ছাড়া এমন কোন চতুষ্পদ জন্তু নেই যারা এ জুমু‘আর দিনে সূর্য উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবার মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা না করে। জুমু‘আর দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে সময় যদি কোন মুসলিম সালাত  আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট কিছু চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন। কা‘ব আহবার এ কথা শুনে বললেন, এ রকম দিন বা সময় বছরে একবার আসে। আমি বললাম, বরং প্রতিটি জুমু‘আর দিনে আসে। তখন কা‘ব তাওরাত পাঠ করতে লাগলেন, এরপর বললেন, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন।’’

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর কা‘ব-এর কাছে আমি যে হাদীসের উল্লেখ করেছি তা তাঁকেও বললাম। এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-কে এ কথাও বললাম যে, কা‘ব বলছেন, ‘এ দিন’ বছরে একবারই আসে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)বললেন, ‘‘কা‘ব ভুল কথা বলেছে।’’ তারপর আমি বললাম, কিন্তু কা‘ব এরপর তাওরাত পড়ে বলেছে যে, এ সময়টা প্রত্যেক জুমু‘আর দিনই আসে। ইবনু সালাম বললেন, কা‘ব এ কথা ঠিক বলেছে। এরপর বলতে লাগলেন, আমি জানি সে কোন সময়? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমাকে বলুন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, সেটা জুমু‘আর দিনের শেষ প্রহর।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন সেটা জুমু'আর দিনের শেষে কি করে হয়, যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মু’মিন বান্দা এ ক্ষণটি পাবে ও সে এ সময়ে সালাত  আদায় করে থাকে.....? (আর আপনি বলছেন সে সময়টি জুমু‘আর দিনের শেষ প্রহর। সে সময় তো সালাত আদায় করা হয় না। সেটা মাকরূহ সময়)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, (এটা তো সত্য কথা কিন্তু) এটা কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নয় যে, যে ব্যক্তি সালাতের অপেক্ষায় নিজের স্থানে বসে থাকে সে সালাত অবস্থায়ই আছে, আবার সালাত পড়া পর্যন্ত। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি এ কথা শুনে বললাম, হ্যাঁ! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তাহলে সালাত অর্থ হলো, সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর দিনের শেষাংশে সালাতের জন্য বসে থাকা নিষেধ নয়। সে সময় যদি কেউ দু‘আ করে, তা কবূল হবে। (মালিক, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; ইমাম আহমাদও এ বর্ণনাটিصَدَقَ كَعْبٌ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৯,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৪, আহমাদ ১০৩০৩, ইবনু হিব্বান ২৭৭২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০২, শু‘আবুল ঈমান ২৭১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আওস ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন হলো তোমাদের সর্বোত্তম দিন। এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁর রূহ কবয করা হয়েছে। এ দিনে প্রথম শিঙ্গা ফুঁৎকার হবে। এ দিন দ্বিতীয় শিঙ্গা ফুঁৎকার দেয়া হবে। কাজেই এ দিন তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করবে। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হবে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে। অথচ আপনার হাড়গুলো পচে গলে যাবে? বর্ণনাকারী বলেন, أَرَمْتَ (আরামতা) শব্দ দ্বারা সাহাবীগণ بَلِيْتَ (বালীতা) অর্থ বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আপনার পবিত্র দেহ পঁচে গলে মাটিতে মিশে যাবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা নবী-রসূলদের শরীর মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন (অর্থাৎ মাটি তাদের দেহ নষ্ট করতে পারবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৭, নাসায়ী ১৩৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৮৫, ১৬৩৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৬৯৭, আহমাদ ১৬১৬২, দারিমী ১৬১৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৩, ইবনু হিব্বান ৯১০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০২৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৩, ইরওয়া ৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯৬, ১৬৭৪, সহীহ আল জামি‘ ২২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) লুবাবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জুমু‘আর দিন’’ সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

(ক) আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।

(খ) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

(গ) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন।

(ঘ) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন।

(ঙ) এ দিনেই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু‘আর দিনকে ভয় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮৪, ইবনু শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি ২২৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন-বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার সকল নি‘আমাত পূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছি’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৩)। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ইয়াহূদী বসা ছিল। সে ইবনু ‘আব্বাসকে বলল, যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হত তাহলে আমরা এ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে খুশীর উদযাপন করতাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ আয়াতটি দু’ঈদের দিন, বিদায় হাজ্জ ও ‘আরাফার জুমু‘আর দিন নাযিল হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) জুমুআহ অর্থাৎ জমায়েত বা সমাবেশ ও সম্মেলনের দিন। এটি মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ ও বিশেষ ইবাদতের দিন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) এই দিনে গুনাহ মাফ হয়ঃ

(ক) উমাইয়্যাহ ইবনু বিস্তাম (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমুআর সালাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সালাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমুআর) সালাত আদায় করল, এতে তার দু' জুমুআর মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করার পর জুমুআর সালাতে এলো, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনল, তার পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক জুমুআহ পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ, যদি না কবীরা গুনাহ করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৯৪৪, ১০১৯৮, ২৭২৯০, সহীহ তারগীব ৬৮৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৮) জুমআর দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করলেঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু‘আর দিন অথবা জুমু‘আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৭৪, আহমাদ ৬৫৮২)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৯)   এক জুমু‘আহ হতে পরবর্তী জুমু‘আহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়ঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর সালাত আদায়ের জন্য উত্তমরূপে অযু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, অতঃপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমু‘আহ হতে (পরবর্তী) জুমু‘আহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, বায়হাক্বী (৩/২২৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০)  জুমআর দিনে দোয়া কবুল হয়

বিভিন্ন সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, জুমার দিনে দোয়া কবুল হয়। জুমার দিনে দোয়া কবুলের দুটি সময়ের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো,

ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়

এই মুহূর্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা হলো ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়।

আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জুমু‘আর দিনের দু‘আ কবূলের সময় সম্পর্কে বলতে শুনেছেনঃ সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের উপর বসার পর সালাত পড়াবার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৩, সুনানুল বায়হাক্বী ৫৯৯৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৯, রিয়াযুস সালিহীন ১১৬৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরেকটি হলো,

আসরের পর যে কোনো একটি সময়। অবশ্য এ প্রসঙ্গে আরো অন্য সময়ের কথাও অনেকে বলেছেন। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৮৯-৩৯০)।

(ক) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন দু‘আ কবূল হবার সময়টির আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন ‘আসরের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় খোঁজে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৮৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭০১, সহীহ আল জামি‘ ১২৩৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহুর্তটি তোমরা ‘আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৮, নাসায়ী ১৩৮৮, হাকিম (১/২৭৯) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৫, ৫২৯৪, ৫২৯৫, ৬৪০০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫৪-১৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০-৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১০৪৬, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪২-৪৩, দারিমী ১৫৬৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৫৭২, আহমাদ ৭১৫১, ৯৮৯২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৮, শু‘আবুল ঈমান ২৭১১, সহীহ আত্ তারগীব ৭০০, সহীহ আল জামে ২১২০, আহমাদ ৭১১১, ৭৪২৩, ৭৬৩১, ৭৭১১, ৭৭৬৪, ৮৯৫৩, ৯৮৭৪, ৯৯২৯-৩০, ৯৯৭০, ১০০৮২, ১০১৬৭, ২৭২৩৪, ২৭২৬৯, ২৭৩৩৫;)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহ্‌র কিতাবে জুমুআহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ্‌র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেনঃ সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সালাতের সময় নয়? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। মুমিন বান্দা এক সালাত শেষ করে বসে বসে অন্য সালাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সালাতের মধ্যেই থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৯, আহমাদ ২৩২৬৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (কুরআনে বর্ণিত) ‘‘ইয়াওমুল মাও‘ঊদ’’ হলো কিয়ামতের দিন। ‘ইয়াওমুল মাশহূদ’ হলো ‘আরাফাতের দিন। আর ‘শাহিদ’ হলো জুমু‘আর দিন। যেসব দিনে সূর্য উদয় ও অস্ত যায় তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘‘জুমু‘আর দিন’’। এ দিনে এমন একটি সময় আছে সে সময়টুকু যদি কোন মু’মিন বান্দা পেয়ে যায়, আর ওই সময়ে সে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে সে কল্যাণ প্রদান করবেন। যে জিনিস থেকে সে আশ্রয় চাইবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৬৪, সহীহ আল জামি ৮২০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জুমআর দিনে করণীয়

 (১) জুমআর ফজরের প্রথম রাকআতে সূরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা দাহ্‌র (ইনসান) পাঠ করা। উভয় সূরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করাই সুন্নত। প্রত্যেক সূরার কিছু করে অংশ পড়া সুন্নত নয়।

অবশ্য অন্য সূরা পড়া দোষাবহ্‌ নয়। বরং কখনো কখনো ঐ দুই সূরা না পড়াই উচিৎ। যাতে সাধারণ মানুষ তা পড়া জরুরী মনে না করে বসে। বরং তা জরুরী মনে করে পড়া এবং কখনো কখনো না ছাড়া বা কেউতা না পড়লে আপত্তি করা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ২৮১পৃ:)।

(২) সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া। আগে আগে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিশেষ মাহাত্ম আছে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন নাপাকীর গোসলের মত গোসল করল। অতঃপর প্রথম সময়ে (মসজিদে গিয়ে) উপস্থিত হল, সে যেন এক উষ্ট্রী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে উপস্থিত হল, সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট মেষ কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি ডিম দান করল। অতঃপর যখন ইমাম (খুতবাদানের জন্য) বের হয়ে যান (মিম্বরে চড়েন), তখন ফিরিশ্‌তাগণ (হাজরী খাতা গুটিয়ে) যিক্র (খুতবা) শুনতে উপস্থিত হন।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০, আহমাদ ৯৯৩৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) জুমআর জন্য প্রস্তুতিস্বরুপ দেহের দুর্গন্ধ দূর করা, সে জন্য গোসল করা, আতর ব্যবহার করাঃ

(ক) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসে সে যেন গোসল করে।  (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৮,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৭৭, ৮৯৪, ৯১৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৩৬-১৮৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯২, ৪৯৪; নাসায়ী ১৩৭৬, ১৪০৫-৭; আহমাদ ৪৪৫২, ৪৫৩৯, ৪৯০১, ৪৯২৩, ৪৯৮৫, ৪৯৮৮, ৫০৫৮, ৫০৬৩, ৫১০৭, ৫১২০, ৫১৪৭, ৫১৮৮, ৫২৮৯, ৫৪২৭, ৫৪৫৮, ৫৪৬৪, ৫৭৪৩, ৫৭৯৪, ৫৯২৫, ৫৯৮৪, ৬২৩১, ৬২৯১, ৬৩৩৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩১, দারিমী ১৫৩৫-৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির গোসল করা কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৫৮, ৮৭৯-৮০, ৮৯৫, ২৬৬৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৬, নাসায়ী ১৩৭৫, ১৩৭৭, ১৩৮৩; আবূ দাঊদ ৩৪১, ৩৪৪, আহমাদ ১০৬৪৪, ১০৮৫৭, ১১১৮৪, ১১২৩১, ১১২৬১; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩০, দারিমী ১৫৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করবে, যতটুকু সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত  (নফল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু‘আহ্ ও আগের জুমু‘আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি ৭৭৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু‘আর সালাত আদায় করতে এসেছে ও যতটুকু সম্ভব হয়েছে সালাত আদায় করেছে, ইমামের খুত্ববাহ্ (খুতবা) শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ রয়েছে। এরপর ইমামের সাথে সালাত (ফরয) আদায় করেছে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ থেকে বিগত জুমু‘আর মাঝখানে, বরং এর চেয়েও তিন দিন আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি ৬১৭৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

গোসল করা ওয়াজেব না হলেও ঈদ, জুমুআহ ও জামাআতের জন্য পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা একটি প্রধান কর্তব্য।

(৪) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করাঃ

দাঁতন ব্রাশ করে দাঁত ও মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত করে নেওয়া জুমআর পূর্বে একটি করণীয় কর্তব্য। মহানবী (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘উবায়দ ইবনু সাব্বাক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক জুমু‘আর দিন বলেছেনঃ হে মুসলিমগণ! এ দিন, যে দিনকে আল্লাহ তা‘আলা ঈদ হিসেবে গণ্য করেছেন। অতএব তোমরা এ দিন গোসল করবে। যার কাছে সুগন্ধি আছে সে তা ব্যবহার করলেও কোন ক্ষতি নেই। তোমরা অবশ্য অবশ্যই মিসওয়াক করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ২১৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৩০১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০১৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) সুন্দর পোশাক পরাঃ

(ক) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাবে, সেখানে (সামনে যাওয়ার জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সালাত আদায় করে ইমামের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে-তাহলে এটা তার জন্য এ জুমু‘আহ্ ও তার পূর্ববর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনহর কাফফারা হয়ে যাবে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা নেক কাজের সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭,  সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ১১৭৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬২, শারহু মা‘আনির আসার ২১৬৪, ইবনু হিব্বান ২৭৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬০, সহীহ আল জামি ৬০৬৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে, সে যেন তার কাজ-কর্মের পোশাক ছাড়া জুমু‘আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৫, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬৫, সুনানুল বায়হাক্বী আল কুবরা ৫৯৫২, সহীহুল জামি ৫৬৩৫, নাসায়ী ১৩৭৪, দারিমী ১৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর দিন লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি তাদেরকে দৈনন্দিনের পোশাক পরিহিত দেখেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কী হলো যে, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে কি তার কাজকর্মের পোশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহর সালাত এর জন্য আরো একজোড়া পোশাক গ্রহণ করতে পারে না? (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৯, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৬৫, সহীহ আবী দাউদ ৯৮৯,  গয়াতুল মারাম ৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমুআহর সালাত এ এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দুজনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমুআহ থেকে পরবর্তী জুমুআহর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ২১০২৯)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জুমআর জন্য সাধারণ আটপৌরে পোশাক বা কাজের কাপড় ছাড়া পৃথক তোলা পোশাক ও কাপড় পরা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু জুমআর দিন মুসলিমদের সমাবেশের দিন। আর এ দিনে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। যাতে অপরের কাছে কেউ ঘৃণার পাত্র না হয়ে যায়। অথবা তার অপরিচ্ছন্নতায় কেউ কষ্ট না পায়।

(৬) বাসা/বাড়ী থেকে ওযু করে মসজিদে গমন করাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়াঃ

 আওস ইবনু আওস আস-সাকাফী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম রাখ ও তার রাত জেগে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সমান সওয়াব রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০, ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, আত্ তিরমিযী ৪৯৬, নাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮, আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, যে ব্যক্তি গাড়ি করে জুমুআহ পড়তে আসে, তার এ সওয়াব লাভ হয় না। বলা বাহুল্য, যে বাসা থেকে ১০০ কদম পায়ে হেঁটে জামে মসজিদে পৌঁছবে, তার আমল-নামায় ১০০ বছরের রোযা-নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে; যাতে একটি গোনাহও থাকবে না। আর তা এখানেই শেষ নয়। এইভাবে সে প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ এবং প্রতি বছরে প্রায় ৫২০০ বছরের নামায-রোযার সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। আর এ হলো মুসলিম বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।

(৮) সূরা কাহ্‌ফ পাঠঃ

(ক) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল-কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)...বারা ইবনু আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি সূরাহ আল কাহফ পড়ছিল। সে সময় তার কাছে মজবুত লম্বা দু'টি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এ সময়ে একখণ্ড মেঘ তার মাথার উপরে এসে হাজির হ’ল। মেঘ খণ্ডটি ঘুরছিল এবং নিকটবর্তী হচ্ছিল। এ দেখে তার ঘোড়াটি ছুটে পালাচ্ছিল। সকাল বেলা সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ঐ বিষয়টি বর্ণনা করল। এসব কথা শুনে তিনি বললেনঃ এটি ছিল (আল্লাহর তরফ থেকে) রহমত বা প্রশান্তি যা কুরআন পাঠের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪১-১৭৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১১, ৩৬১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭২৬, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, জুমআর সময় মসজিদে এই সূরা তেলাওয়াত করলে এমনভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, যাতে অপরের ডিষ্টার্ব না হয়।

জ্ঞাতব্য যে, এ দিনে সূরা দুখান পড়ার হাদীস সহীহ নয়। (যইফ জামে ৫৭৬৭, ৫৭৬৮নং) যেমন আলে ইমরান সূরা পাঠ করার হাদীসটি জাল। (যইফ জামে ৫৭৫৯নং)।

তদনুরুপ জুমআর নামায পড়ে ৭ বার সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে অযীফা করার হাদীসদ্বয়ের ১টি জাল এবং অপরটি দুর্বল হাদীস। (যইফ জামে ৫৭৫৮, ৫৭৬৪, সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৩০নং) সুতরাং এমন অযীফা পাঠ বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ১২২, ৩২৬পৃ:)।

(৯)  বেশী বেশী দরুদ পাঠঃ

জুমআর রাতে (বৃহ্‌স্পতিবার দিবাগত রাতে) ও (জুমআর) দিনে প্রিয়তম হাবীব মহানবী (সাঃ)-এর শানে অধিকাধিক দরুদ পাঠ করা কর্তব্য।

(ক) আওস ইবনু আওস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিনটি উৎকৃষ্ট। কাজেই এ দিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বললো, আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ নবীদের দেহকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) তিনি আরো বলেন, “জুমআর রাতে ও দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ কর। আর যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির উপর আল্লাহ ১০ বার রহ্‌মত বর্ষণ করবেন।” (বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৪০৭)।

(গ) আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) হাজির হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযক্ব  দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৬, ইরওয়াহ ১/৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬৩৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১০) সকাল সকাল মসজিদে আসার ফজিলতঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন হলে মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতাগণ অবস্থান করেন এবং লোকেদের আগমনের ক্রমানুসারে তাদের নাম লিখেন। যেমন প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে। ইমাম যখন খুতবাহ দিতে বের হন, তখন তারা তাদের নথি গুটিয়ে নেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শোনেন। সালাত এ প্রথম আগমনকারীর সাওয়াব একটি উট কুরবানীকারীর সমান, তারপরে আগমনকারীর সওয়াব একটি গরু কুরবানীকারীর সমান, তারপর আগমনকারীর সওয়াব একটি মেষ কুরবানীকারীর সমান, এমনকি তিনি মুরগী ও ডিমের কথা উল্লেখ করেন। সাহল ইবনু আবূ সাহলের রিওয়ায়তে আরো আছেঃ এরপর যে ব্যক্তি আসে, সে কেবল সালাত পড়ার সওয়াব পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৪,   সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯২,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮১, ৯২৯, ৩২১১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, ১৮৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫১,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৪৯৯, নাসায়ী ৮৬৪, ১৩৮৫-৮৮; আহমাদ ৭২১৭, ৭৪৬৭, ৭৭০৮, ৯৬১০, ১০০৯৬, ১০১৯০, ১০২৬৮; শারহু মা‘আনির আসার ৬২৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৬২, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২২৭, দারিমী ১৫৪৩-৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ সকাল সকাল আগমনের একটি উদাহরণ দেনঃ যেমন উট কুরবানীকারী, গরু কুরবানীকারী, বকরী কুরবানীকারী, এমনকি তিনি মুরগী পর্যন্ত উল্লেখ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

Saturday, July 26, 2025

সালাত সম্পর্কিত ২৯৩টি মাসলা মাসায়েল

 কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে

সালাত সম্পর্কিত ২৯৩টি মাসলা মাসায়েল


লেখক ও সংকলক 
মোঃ ইজাবুল আলম

মাসলা মাসায়েলসমূহ

প্রশ্ন (১) : আমার অতীত জীবনে অনেক ফরয ও সুন্নাত ছালাত ক্বাযা হয়েছে। এখন কি সেই ছালাতগুলো পড়তে পারব? পড়তে হলে তার নিয়ম কি?

উত্তর : নির্দিষ্ট কয়েক ওয়াক্ত ছালাত ছুটে গেলে ধারাবাহিক ভাবে ক্বাযা আদায় করে নিবে। তবে অগণিত ওয়াক্ত ছালাত ছুটে গিয়ে থাকলে অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে খালেছ তওবা করবে এবং পরবর্তীতে আর কোন ওয়াক্ত ছালাত যাতে ক্বাযা না হয়, সে বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে। আল্লাহ বলেন, ‘বল, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনিই তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (যুমার ৩৯/৫৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘খালেছ তওবাকারী ব্যক্তি নির্দোষ ব্যক্তির ন্যায়’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০, মিশকাত হা/২৩৬৩)। উল্লেখ্য যে, প্রচলিত ওমরী ক্বাযা পদ্ধতি শরী‘আত সম্মত নয়।

প্রশ্ন (২) : আমি সঠিকভাবে ছালাত আদায়ের চেষ্টা করি। কিন্তু আমার তেলাওয়াতে অনেক ভুল। কখনো হয়ত শব্দও ছুটে যায়। আমার ছালাত কবুল হবে কি?

উত্তর : ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সাধ্যমত সঠিক উচ্চারণে তেলাওয়াত করবে এবং অবশ্যই সূরা ফাতিহা সঠিক ভাবে পাঠ করবে। কেননা এটি ব্যতীত ছালাত হয় না’ (বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪; মিশকাত হা/৮২২; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)।

প্রশ্ন (৩) : তাকবীরে তাহরীমা বা সিজদার সময় হাতের আঙগুল মিলিয়ে রাখতে হবে কি?

উত্তর : তাকবীরে তাহরীমার সময় আঙ্গুল স্বাভাবিক রাখবে (শানক্বীত্বী, শারহু যাদিল মুস্তাক্বনে‘ ১৩/৩৮; নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৩০৭)। আলক্বামা বিন ওয়ায়েল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন রুকূ করতেন তখন তাঁর (হাতের) আঙগুলগুলো পরস্পরে ফাঁক করে রাখতেন এবং যখন সিজদা করতেন তখন মিলিয়ে রাখতেন (হাকেম হা/৮২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৩৩)।

প্রশ্ন (৪) : মাসজিদুল হারামে ছালাত আদায়ের নেকী ১ লাখ গুণ বেশী। এটা কি নারীদের জন্যও প্রযোজ্য? কারণ নারীদের জন্য তো ঘরে ছালাত আদায়ই উত্তম। আমার মা ওমরায় যাচ্ছেন। তার জন্য সেখানে হোটেলে ছালাত আদায় করা উত্তম হবে কি?

উত্তর : নারীরা মসজিদে ছালাত আদায় করতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) তাদের মসজিদে যেতে অনুমতি দিয়েছেন (বুখারী হা/৯০০)। সেজন্য ওমরা পালনকারী নারী বায়তুল্লাহ বা মসজিদে নববীতে গিয়ে ছালাত করতে পারেন। তবে বিদ্বানদের মতে, অতিরিক্ত ছওয়াব প্রাপ্তির বিষয়টি কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। কেননা মসজিদে ছালাত আদায়ের জন্য পুরুষেরা আদিষ্ট; নারীরা নয় (ওছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী ৭/২৮; বিন বায, ফাতাওয়াদ দুরূস)। এজন্য রাসূল (ছাঃ) মহিলা ছাহাবীদের বলতেন, আমি জানি তোমরা আমার সাথে ছালাত আদায় করতে ভালবাস। কিন্তু তোমাদের জন্যে ক্ষুদ্র কুঠুরীতে ছালাত পড়া, বাড়ীতে (প্রশস্ত ঘরের মধ্যে) ছালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। আর বাড়ীতে ছালাত পড়া, বাড়ীর উঠানে ছালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। নিজ বাড়ীর উঠানে ছালাত পড়া মহল্লার মসজিদে ছালাত পড়ার চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে ছালাত পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) ছালাত পড়ার চেয়ে উত্তম (আহমাদ হা/২৭১৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪০)।

অতএব মহিলাগণ হজ্জে বা ওমরায় গিয়ে ত্বাওয়াফ ব্যতীত অন্য সময় ঘরে বা হোটেলে ছালাত আদায় করতে পারেন। এতে তারা হারামে ছালাত আদায়ের ন্যায় ছওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ (ছহীহুত তারগীব হা/৩৪০; ওছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী ৭/২৮)।

প্রশ্ন (৫) : ইমামের সালাম ফিরানোর পরে মাসবূকের সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : মাসবূক্বের ইক্বতিদা করায় দোষ নেই। তবে একা ছালাত আদায় করা উত্তম (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ্দারব ১২/১৮৩; শায়েখ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৫২)। শায়েখ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, মাসবূকের সাথে জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করায় কোন দোষ নেই। তবে মাসবূক্বের ইক্বতিদা না করাই উত্তম। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন আমল পাওয়া যায় না (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ্দারব ৮/২)।

প্রশ্ন (৬) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, ছালাতে মাইক ব্যবহারের কারণে মুকাবিবর প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে একটা সুন্নাতী আমল থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। এর জবাব কি?

উত্তর : মুকাবিবর নিযুক্তির উদ্দেশ্য ছিল মুছল্লীদের নিকট ইমামের আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া। আর মাইক বা বক্স ব্যবহারে সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাচ্ছে। বরং নির্বিঘ্নে মুছল্লীদের নিকট আওয়াজ পৌঁছার ক্ষেত্রে এটি নিরাপদ ও যরূরী মাধ্যম। সুতরাং মাইক ব্যবহারে সুন্নাত বিলুপ্ত হয়েছে এমন ধারণা করা ঠিক নয় (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৭২-৭৫, ১৫/২১০)।

প্রশ্ন (৭) : মসজিদের পার্শ্বেই বাসা হওয়ায় পুরো ছালাত বাড়ি থেকে শোনা যায়। এক্ষণে মহিলারা গৃহাভ্যন্তর থেকে উক্ত জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

উত্তর : বাড়িতে থেকে জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কেননা জামা‘আত হওয়ার জন্য শর্ত হ’ল কাতারের সাথে কাতার মিলে থাকা এবং ইমাম বা অন্য মুছল্লীদের দেখতে পাওয়া অথবা ইমামের আওয়াজ শুনতে পাওয়ার মাধ্যমে স্থানিক ঐক্য সাধিত হওয়া, যা বাড়ির মধ্যে থেকে সম্ভব নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২০০; মুগনী ৩/৪৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩১-৩২)।

প্রশ্ন (৮) : চেয়ারে বসে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সামনে সিজদার পরিমাণ স্থান রাখতে হবে কি?

উত্তর : চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করলেও সুৎরা পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। কারণ সে মাথা নিচু করে ইশারায় হ’লেও রুকূ ও সিজদা করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৬/২১)।

প্রশ্ন (৯) : মাসবূক তথা জামা‘আত শুরুর পর ছালাতে যোগদানকারী কিভাবে ছালাত শুরু করবে?

উত্তর : তাকবীরে তাহরীমার পর মাসবূক ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায় ছালাতে অংশগ্রহণ করবে। ইমামের সাথে যে কয় রাক‘আত পাবে সেগুলো তার প্রথম দিকের রাক‘আত হিসাবে গণ্য করবে এবং ইমাম সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে বাকী রাক‘আতগুলো আদায় করবে। বাকীগুলো পরের রাক‘আত হিসাবে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন ছালাত রুকূ অবস্থায় পাবে তোমরা রুকূতে শামিল হবে। আর যখন সিজদারত অবস্থায় পাবে, তখন তোমরা সিজদায় শামিল হয়ে যাবে। আর দঁাড়ানো অবস্থায় পেলে দঁাড়িয়ে যাবে। তবে রুকূ না পেলে উক্ত সিজদা ছালাতের রাক‘আত হিসাবে গণ্য করবে না’ (ছহীহাহ হা/১১৮৮)। তিনি আরো বলেন, ‘ইমাম নির্ধারণ করা হয় তার অনুসরণের জন্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা ছালাত আদায় করতে আস, তখন ধীরস্থিরভাবে আস। যেটুকু পাও তা পড় আর যেটুকু ছুটে যায় তা পূর্ণ কর’ (বুখারী হা/৬৩৫; মিশকাত হা/৬৮৬)।

প্রশ্ন (১০) : জনৈক ইমাম ভুলবশত জানাযার ছালাতে দ্বিতীয় তাকবীরে জানাযার দো‘আ ও তৃতীয় তাকবীরে দরূদ পাঠ করেছেন। এক্ষণে উক্ত ছালাত হবে কি?

উত্তর : জানাযার ছালাতে নিয়ত, ক্বিয়াম, চার তাকবীর, সূরা ফাতিহা পাঠ, দরূদ পাঠ, মাইয়েতের জন্য জানাযার দো‘আ ও সালামের মাধ্যমে ছালাত সমাপ্ত করা এক একটি রুকন। যার কোন একটি বাদ পড়লে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। কোন কোন বিদ্বান ধারাবাহিকতাকেও রুকন হিসাবে গণ্য করেছেন। তবে ভুলবশত ধারাবাহিকতায় লংঘন হ’লে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (আহমাদ কারামী, দলীলুত ত্বালিব ১/৬৯; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৭)।

প্রশ্ন (১১) : ফরয ছালাতের পর তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠের নিয়ম কি?

উত্তর : এক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।

(১) সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবর ৩৩ বার ও লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর ১ বার মোট ১০০ বার’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭)।

(২) সুবহানাল্লাহ ৩৩, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩, আল্লাহু আকবর ৩৩ মোট ৯৯ বার।

(৩) সুবহানাল্লাহ ২৫ বার, আলহামদুলিল্লাহ ২৫ বার, আল্লাহু আকবর ২৫ বার ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ২৫ বার মোট ১০০ বার’ (আহমাদ হা/২১৬৪০; নাসাঈ হা/১৩৫০; মিশকাত হা/৯৭৩; ছহীহাহ হা/১০১)।

(৪) সুবহানাল্লাহ ১০ বার, আলহামদুলিল্লাহ ১০ বার, আল্লাহু আকবর ১০ বার মোট ৩০ বার হ’লেও মীযানে তা অনেক ভারী’ (বুখারী হা/৬৩২৯; মিশকাত হা/৯৬৫)। অতএব সময় বিবেচনা করে যেকোন একটির উপর আমল করা করবে।

প্রশ্ন (১২) :পরীক্ষার হল থেকে শিক্ষার্থীদের ছালাতের জন্য বের হ’তে দেওয়া হয় না। আবার বের হ’লেও পরীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে হয়। এমতাবস্থায় ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আশংকা থাকলে শিক্ষার্থীর করণীয় কি?

উত্তর : কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছালাতের সময় পরীক্ষা না রাখা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন (নিসা ৪/১০৩)। এক্ষণে পরীক্ষা চলাকালীন ছালাত আদায়ের সুযোগ না পেলে মা‘যূর হিসাবে পরীক্ষা শেষে ছালাত আদায় করে নিবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৬/১৭৪-৭৫; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব, টেপ নং ১০)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)। এছাড়া যোহর ও আছর ওয়াক্তের সময় পরীক্ষা হ’লে যোহরের ছালাতকে পিছিয়ে আছরের সাথে জমা করে পড়ে নিবে অথবা আছরের ছালাতকে এগিয়ে নিয়ে যোহরের সাথে জমা করে পড়ে নিবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৬/১৭৪-৭৫)।

প্রশ্ন (১৩) : হাত তুলে দো‘আ করার সময় দু’হাতের মাঝে ফাঁকা থাকবে, না মিলিয়ে রাখতে হবে?

উত্তর : একাকী দো‘আ করার সময় হাতের পেট আকাশের দিকে মুখ বরাবর রেখে প্রার্থনা করবে। এ সময় এক হাত আরেক হাতের সাথে মিলে থাকবে (নববী, শরহ মুসলিম ৬/১৯০; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৮)। শায়খ ওছায়মীন বলেন, দুই হাত ফাঁকা করে বা আলাদা করে হাত তুলে প্রার্থনা করার পদ্ধতি কিতাব ও সুন্নাহ এবং সালাফদের আমলে নেই (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৮)।

প্রশ্ন (১৪) : জুম‘আর দিন মসজিদে প্রবেশ করার পর আযান শুরু হয়ে গেলে আযান শোনা ও তার জবাব দেওয়া যরূরী, নাকি আযান চলাকালীন অবস্থায় সুন্নাত ছালাত আদায় করা যরূরী?

উত্তর : আযানের জবাব দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পর বসে খুৎবা শ্রবণ করবে (মুগনী ১/৩১১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৩/৩০৫)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন আযান শুনবে, তখন মুওয়াযযিন যা বলে তোমরাও তা বল’ (বুখারী হা/৬১১; মুসলিম হা/৩৮৩)। তবে চাইলে পূর্ণভাবে খুৎবা শোনার জন্য আযান চলাকালীনও তাহইয়াতুল মাসজিদ আদায় করতে পারে (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৯৫; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/৩০৫)।

প্রশ্ন (১৫) : মহিলারা জুম‘আর ছালাতে মসজিদে গেলে বা বাড়িতে যোহর আদায় করলে তাদের জন্য গোসল করা সুন্নাত হবে কি?

উত্তর : নারী বা পুরুষ যারাই জুম‘আর ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসবে তাদের জন্যই গোসল করা সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পুরুষ ও নারীর মধ্য হ’তে যেই জুম‘আর ছালাতের জন্য মসজিদে আসবে, সে যেন গোসল করে। আর যে আসবে না তার জন্য গোসল নেই’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৫২; ছহীহ ইবনু হিববান হা/১২২৬)। ইবনু ওমর (রাঃ) নারীদের লক্ষ্য করে বলতেন, তোমাদের যারা জুম‘আয় আসবে তারা যেন গোসল করে আসে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫০৫১)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ যারাই জুম‘আয় আসবে, তাদের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব (আল-মাজমূ‘ ৪/৪০৫)।

প্রশ্ন (১৬) আমাদের মসজিদে অনেক মুছল্লী ফজরের ছালাতে এসে নিয়মিতভাবে তাহিয়াতুল ওযূ, তাহিয়াতুল মসজিদ এবং ফজরের সুন্নাতসহ মোট ৬ রাক‘আত আদায় করেন। এতে কোন দোষ আছে কি?

উত্তর : বাড়িতে সুন্নাতে রাতেবা দুই রাক‘আত আদায় করলে মসজিদে এসে বসার পূর্বে দুখূলুল মাসজিদ আদায় করতে পারে। আর মসজিদে এসে দুই রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবা পড়লে তাহিইয়াতুল ওযূ ও দুখূলুল মাসজিদের হক আদায় হয়ে যাবে এবং পূর্ণ ছওয়াব পেয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, ফজরের আযানের পরে ও ছালাতের পূর্বে সংক্ষিপ্ত দুই রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবা ব্যতীত অন্য কোন ছালাত নেই। রাসূল (ছাঃ) ফজরের আযানের পর আর কোন ছালাত আদায় করতেন না। তিনি বলেন, যখন ফজর উদয় হয়ে যাবে তখন দুই রাক‘আত ছালাত ব্যতীত অন্য কোন ছালাত নেই (ইরওয়া হা/৪৭৮, সনদ ছহীহ)। একদা সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) ফজরের আযানের পরে জনৈক ব্যক্তিকে দুই রাক‘আত সুন্নাতের বাইরে অতিরিক্ত ছালাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি তাকে অতিরিক্ত ছালাত আদায় করতে নিষেধ করলেন। তখন লোকটি বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! ছালাত আদায়ের জন্য কি আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন? তিনি বললেন, ছালাত আদায় করার কারণে নয় বরং আল্লাহ শাস্তি দিবেন সুন্নাতের খেলাফ আমল করার কারণে (দারেমী হা/৪৩৬; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪৭৫৫; ইরওয়া হা/৪৭৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। তবে বিদ্বানদের মতে, নফল হিসাবে এ সময় কেউ চাইলে ছালাত আদায় করতে পারে। কিন্তু তা নিয়মিত আদায় করা যাবে না (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/২০৪)।

প্রশ্ন (১৭) : ফজরের ছালাতের বেশ কিছুক্ষণ পর তথা সকালের নাশতার পর পায়জামায় মযী দেখতে পাই। কিন্তু বুঝতে পারছি না, যে কখন বের হ’ল। এমতাবস্থায় ফজরের ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ ছালাত আদায়ের সময় উক্ত অপবিত্রতা সম্পর্কে তার জানা ছিল না। রাসূল (ছাঃ) নাপাক জুতা পরে ছালাত আদায় করছিলেন। যখন জিব্রীল (আঃ) তাকে অবহিত করলেন তাঁর জুতার নাপাকী সম্পর্কে, তখন তিনি জুতা খুলে ফেলে দিলেও ছালাত পুনরায় আদায় করেননি (আবূদাউদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬, সনদ ছহীহ; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/২৩২)।

প্রশ্ন (১৮) : মসজিদের বারান্দার ডান পাশে তথা উত্তর-পূর্ব কোণায় সিঁড়ির নীচে কবর রয়েছে। উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা কি ছহীহ হবে? উক্ত মসজিদের জন্য ৪ শতাংশ জমি ওয়াক্ফ করা হয়েছিল। বর্তমানে মসজিদের জন্য নির্ধারিত জায়গা থেকে পূর্ব ও পশ্চিমের দিকে কিছু অংশ ছেড়ে মসজিদটি উত্তর দিকে প্রশস্ত করা হয়েছে। এতে শারঈ দৃষ্টিতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে। কেননা মসজিদটি কবর কেন্দ্রিক নয়। তাছাড়া কবর রয়েছে মসজিদের পিছনে। আর হাদীছে কবর সামনে নিয়ে বা কবরের উপরে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও নেককার ব্যক্তিগণের কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি’ (মুসলিম হা/৫৩২; মিশকাত হা/৭১৩)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না’ (মুসলিম হা/৯৭২; মিশকাত হা/১৬৯৮;ছহীহাহ হা/১০১৬)। এক্ষণে অধিকতর সতর্কতার জন্য কবর ও মসজিদের মধ্যে আলাদা প্রাচীর নির্মাণ করে কবরকে মসজিদ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করা উত্তম (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/৩১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/২৫৪; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৫৭)। উল্লেখ্য যে, কবর কেন্দ্রিক কোন মসজিদে ছালাত আদায় করা জায়েয নয় (মুসলিম হা/৫৩২; মিশকাত হা/৭১৩)। একইভাবে কবরের পিছনে কাতার করে কবরকে সামনে রেখে ছালাত আদায় করাও জায়েয নয়।

উল্লেখ্য যে, ওয়াক্ফের জমি বৃহত্তর কল্যাণার্থে প্রয়োজনে স্থানান্তর করায় কোন বাধা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ইখতিয়ারাত ১/১৭৬; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৯/৫৬০-৫৬১)। সুতরাং মসজিদটি প্রশস্ত করার জন্য প্রশ্নোল্লেখিতভাবে জমিটি সমন্বয় করে নেয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত অংশটিও লিখিতভাবে ওয়াক্বফ করা আবশ্যক, যাতে ভবিষ্যতে কোন বিভ্রান্তি তৈরী না হয়।

প্রশ্ন (১৯) : ওযূ করার সময় যে থুতনী ধুতে হয় তা আমি জানতাম না। ফলে না ধুয়েই এতদিন ছালাত আদায় করেছি। এক্ষণে আমাকে কি আবার সব ছালাত পুনরায় পড়তে হবে? নাকি তওবা করলেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর : তওবা করলেই যথেষ্ট হবে। থুতনিসহ মুখমন্ডল ধৌত করা কর্তব্য। অজ্ঞতাবশত আমল না করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। তবে জানার পর থেকে থুতনিসহ মুখমন্ডল ধৌত করবে এবং পূর্বের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওযূ করার সময় এক কোষ পানি নিয়ে চিবুকের নীচ দিয়ে দাড়িতে প্রবেশ করিয়ে তা খিলাল করে নিতেন এবং বলতেন, আমার রব আমাকে এরূপ করতে নির্দেশ করেছেন (আবূদাউদ হা/১৪৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬৯৬)। অতএব ওযূ করার সময় সুন্নাতী পদ্ধতিতে ওযূর অঙ্গগুলো ধৌত করবে।

প্রশ্ন (২০) : ২ রাক‘আত ছালাত আদায়ের জন্য ছালাত শুরু করে ১ রাক‘আত পড়ার পর যদি কেউ নিয়ত পরিবর্তন করে ৪ রাক‘আত পড়তে চায়, তা জায়েয হবে কি?

উত্তর : নফল ছালাতের ক্ষেত্রে ছালাতরত অবস্থায় প্রয়োজনে রাক‘আত কম বা বেশী করার নিয়ত পরিবর্তন করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘রাতের নফল ছালাত দুই দুই রাক‘আত। অতঃপর যখন তোমাদের কেউ ফজর হয়ে যাবার আশংকা করে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে নেয়। যা তার পূর্বেকার সকল নফল ছালাতকে বিতরে পরিণত করবে’ (বুখারী হা/৯৯০; মুসলিম হা/৭৪৯; মিশকাত হা/১২৫৪)। তিনি বলেন, নফল ছিয়াম পালনকারী স্বেচ্ছাধীন (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৫৪)। তবে কেউ নিয়ত পরিবর্তন ছাড়াই খামখেয়ালীভাবে রাক‘আত কম বা বেশী করলে সর্বসম্মতি-ক্রমে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৪/৫০)। অনুরূপভাবে ফরয থেকে নফলের নিয়ত এবং এক নফল থেকে আরেক নফলের দিকে নিয়ত পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু এক ফরয থেকে আরেক ফরয বা নফল থেকে ফরযে নিয়ত পরিবর্তন করা যাবে না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৪৭-৪৮; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১০/২৯৭)।

প্রশ্ন (২১) : ছালাতরত অবস্থায় ঋতুবতী হয়ে গেলে পরবর্তীতে সেই ছালাতের ক্বাযা আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় কোন নারীর মাসিক শুরু হ’লে ছালাত ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে পবিত্র হ’লে উক্ত ছালাতের ক্বাযা আদায় করবে। কারণ ওয়াক্ত প্রবেশের পর তার মাসিক শুরু হয়েছে (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২১৮)।

প্রশ্ন (২২) : ঈদের ছালাতের জন্য জামা‘আত শর্ত কি? ঈদের ছালাত ছুটে গেলে করণীয় কি?

উত্তর : ঈদের ছালাতের জন্য জামা‘আত শর্ত। কিন্তু ওযরের কারণে জামা‘আত ছুটে গেলে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, সাধারণ ছালাতের উপর ভিত্তি করে একাকী তাকবীরসহ দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিবে। এসময় খুৎবা দেওয়া যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩০৬)। ইমাম বুখারী (রহ.) এর উপরে অধ্যায় রচনা করেছেন এবং ছাহাবী ও তাবেঈগণের আমল ও বাণী জমা করেছেন (বুখারী ৪/১৫৪; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৯০)।

প্রশ্ন (২৩) : মসজিদে জামা‘আত চলাকালে কেউ মাথা ঘুরে বা স্ট্রোক করে পড়ে গেলে পাশে থাকা মুছল্লীদের করণীয় কি?

উত্তর : মসজিদে কোন মুছল্লী অজ্ঞান হয়ে পড়লে পাশের মুছল্লীগণ ছালাত ছেড়ে দিয়ে রোগীর সেবা করবে এবং পরবর্তীতে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করে নিবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)।

প্রশ্ন (২৪) : মসজিদের বাথরুমে গেলে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও মাছি শরীরের এসে পড়ে। তাদের দেহে থাকা নাপাকী শরীরে লাগতে পারে। এজন্য পোষাক পরিবর্তন করে ছালাত আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : এতে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি স্পষ্ট কোন নাপাকি বহন করে আর তা কাপড়ে বা পোষাকে দৃশ্যমান হয় তাহ’লে তা ধুয়ে ফেলতে হবে (আত-তাজ ওয়াল ইক্বলীল ১/২০৬,২১৬; যাকারিয়া আনছারী, আসনাইল মাতালিব ১/১৪)।

প্রশ্ন (২৫) : শেষ বৈঠকে তাশাহদের সময় দৃষ্টি কোন দিকে রাখতে হবে?

উত্তর : শেষ বৈঠকে দৃষ্টি শাহাদত আঙ্গুলি নাড়ানোর প্রতি থাকবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) যখন তাশাহহুদ আদায় করতে বসতেন তখন তাঁর ডানহাত তাঁর ডান উরুর উপর রাখতেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করতেন। আর দৃষ্টি তাঁর ইশারা অতিক্রম করত না (আবুদাঊদ হা/৯৯০; মিশকাত হা/৯১২; ছহীহাহ হা/২২৪৮)। সেজন্য সালাফ বিদ্বানগণ বলেন, তাশাহহুদে মুছল্লীর দৃষ্টি থাকবে তার আঙ্গুল ইশারা করার প্রতি, যেন তা ইখলাছ ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/২৩৫; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/২৪)।

প্রশ্ন (২৬) : ওযূ করার সময় অঙ্গ সমূহ ধৌত করার মধ্যে সময়ের পার্থক্য কতক্ষণ রাখা যায়? অর্ধেক ওযূর পর যরূরী কোন কাজ চলে আসলে সেটা করে বাকি অর্ধেক সম্পন্ন করা যাবে কি?

উত্তর : ওযূ করার সময় ধৌতকৃত অঙ্গগুলো শুকানোর পূর্বে বাকী অঙ্গগুলো ধৌত করতে হবে। যদি কারো অঙ্গ ধৌত করার পর বাকী অঙ্গগুলো ধৌত করার পূর্বে শুকিয়ে যায় তাহ’লে ওযূ বাতিল হয়ে যাবে (শাওকানী, আস-সায়লুল জারার ৫৬ পৃ.; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/২৯৪; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৪২)। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ওযূ করতে তার পায়ের ওপর নখ পরিমাণ অংশ ছেড়ে দেয়। তা দেখে নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যাও পুনরায় ভালভাবে ওযূ করে এসো। লোকটি ফিরে গেল। তারপর (পুনরায়) ওযূ করে ছালাত আদায় করল (মুসলিম হা/২৪৩; আহমাদ হা/১৩৪)। এক্ষণে অর্ধেক ওযূ করে বিশেষ কাজের কারণে ওযূর অঙ্গ শুকিয়ে গেলে পুনরায় ওযূ করতে হবে।

প্রশ্ন (২৭) : জুম‘আর দিন গোসল করা মেয়েদের জন্যও কি সুন্নাত?

উত্তর : যেসব মহিলা জুম‘আর ছালাতের জন্য মসজিদে যেতে চান তাদের জন্য গোসল করা সুন্নাত। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পুরুষ এবং নারীর যে কেউ জুম‘আর ছালাতের জন্য মসজিদে আসবে সে যেন গোসল করে’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৫২)। তিনি বলেন, হে মুসলিমগণ! জুম‘আর দিনকে আল্লাহ ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। অতএব তোমরা গোসল করো’ (মালেক)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতে আসতে চায়, সে যেন গোসল করে’ (ইবনু মাজাহ হা/১০৯৮; মিশকাত হা/১৩৯৮)। উক্ত হাদীছে নারী-পুরুষ সকল মুমিনকে বুঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন (২৮) : আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব কেবল এলাকার মহিলাদের নিয়ে মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করেন। এভাবে আলাদা ছালাত আদায় জায়েয হবে কি?

উত্তর : ঈদের ছালাত নারী-পুরুষ সবাই জামা‘আতের সাথে মাঠে আদায় করবে। এক্ষণে নারীদের জন্য যদি ঈদের ময়দানে ছালাতের ব্যবস্থা না থাকে তাহ’লে তারা কোন পুরুষ ইমামের নেতৃত্বে মসজিদে অথবা নিজেরা মসজিদ বা বাড়িতে আদায় করে নিতে পারে। যাকওয়ান (রাঃ)-এর ইমামতিতে আয়েশা (রাঃ) সহ অন্যান্য নারীরা ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী ৩/১৬৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/২৭৭; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/৩৪৯)।

প্রশ্ন (২৯) :এশার ছালাতের পর বিতর আদায় করলে বিতরের পর বসে নির্ধারিত সূরা দিয়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায়ের কথা হাদীছে এসেছে। এক্ষণে রামাযানে এশার পর তারাবীহ পড়ে উক্ত ছালাত পড়া যাবে কি?

উত্তর : তারাবীহ ছালাতের পরে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা যায়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) রাতে তের রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন। প্রথমে তিনি আট রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। তারপর বিতর আদায় করতেন। সবশেষে বসে বসে আরো দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। ...অতঃপর ফজরের ছালাতের আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়েও দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম হা/৭৩৮; নাসাঈ হা/১৭৮১)। অতএব কেউ চাইলে তাহাজ্জুদ বা তারাবীহর পর মাঝে-মধ্যে বসে দু‘রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতে পারেন (নববী, শরহ মুসলিম ৬/২১; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/১২২)।

প্রশ্ন (৩০) : কোন ব্যক্তি রহমত ও বরকত লাভের আশায় কোন সৎ ব্যক্তিকে ডেকে বা কোন সৎ লোক কারো বাড়িতে বেড়াতে আসলে তাকে সাধারণভাবে নফল ছালাত পড়তে বলতে পারবে কি?

উত্তর : রহমত ও বরকত লাভের আশায় কোন আলেমকে বাড়িতে ছালাত আদায় করতে বলা যাবে না। কারণ বরকত ও রহমত কেবল আল্লাহর নিকট থেকে আসে। তবে রহমত ও বরকতের জন্য দো‘আ করতে বলা যাবে (শায়েখ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৬৫)। উল্লেখ্য যে, বদরী ছাহাবী ইতবান বিন মালেক (রাঃ) তার বাড়িতে ছালাত আদায় করার জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করেন এবং তা উদ্বোধনের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দাওয়াত করেন। রাসূল (ছাঃ) দাওয়াত কবুল করেন এবং তার প্রিয় ছাহাবীদের সাথে গিয়ে সে জায়গায় ছালাত আদায়ের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন (বুখারী হা/৪২৫; মুসলিম হা/৩৩)। তবে উক্ত হাদীছের বিধানটি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ ছিল। কেননা পরবর্তীতে কোন ছাহাবী বা তাবেঈ কারো মাধ্যমে বরকত লাভের আশায় কোন ছাহাবীকে দাওয়াত করে উপরোক্ত আমল করেননি, অথচ তারা ছিলেন দ্বীনের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞানী এবং হিতাকাংখী (ওছায়মীন, আত-তা‘লীক্ব ‘আলা ইকতিযাই ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম ৬২১ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩১) : আমি মসজিদে ফরয ছালাত পড়ার পর সুন্নাত/নফল পড়ার জন্য প্রস্ত্ততি নিচ্ছি। এমন সময় দেখি কয়েকজন লোক এসে ফরয ছালাতের জামা‘আত করছে। এমতাবস্থায় ছহীহ মুসলিমের হাদীছ অনুযায়ী আমি সুন্নাত বাদ দিয়ে জামা‘আতে শরীক হব কি?

উত্তর : ছহীহ মুসলিমের উক্ত হাদীছটি মসজিদে অনুষ্ঠিত প্রথম জামা‘আতের সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং পরবর্তী জামা‘আত চলাকালীন অন্যান্য মুছল্লীদের সুন্নাত ছালাত আদায়ে কোন বাধা নেই। ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীছটি হচ্ছে- রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছালাতের ইক্বামত দেয়া হ’লে তখন ফরয ছালাত ব্যতীত অন্য কোন ছালাত নেই (মুসলিম হা/৭১০; মিশকাত হা/১০৫৮; )।

উল্লেখ্য যে, কেউ একা ছালাত আদায় করলে তাকে জামা‘আতের ছওয়াব লাভের সুযোগ করে দিতে তার সাথে অংশগ্রহণ করা যায়। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদিন এক লোক মসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন, এমন কেউ কি নেই যে তাকে ছাদাক্বা দিবে তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায় করে। তখন একজন দাঁড়ালেন ও তার সঙ্গে ছালাত আদায় করলেন (আবুদাউদ হা/৫৭৪; মিশকাত হা/১১৪৬)।

প্রশ্ন (৩২) : ‘মুমিন বান্দা ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত বর্জন করা। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করল সে অবশ্যই শিরক করল’ হাদীছটির বিশুদ্ধতা ও হুকুম জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ। ছালাত মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য করে। যেমন অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা’ (আবুদাঊদ হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫৬৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে পার্থক্য হ’ল ছালাত। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল’ (তিরমিযী হা/২৬২১; মিশকাত হা/৫৭৪; ছহীহুত তারগীব হা/৫৬৪)। তাবেঈ আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব আল-উক্বায়লী বলেন, ‘ছাহাবায়ে কেরাম ছালাত ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফরী বলে মনে করতেন না’ (তিরমিযী হা/২৬২২; মিশকাত হা/৫৭৯; ছহীহুত তারগীব হা/৫৬৫)।

উল্লেখ্য যে, কিছু হাদীছে ছালাত ত্যাগকারীকে কুফরী আবার কিছু হাদীছে শিরক বলা হয়েছে। এর কারণ দু’টি হ’তে পারে- (১) ছালাত ত্যাগকারী প্রবৃত্তিপূজারী। আর যে প্রবৃত্তির পূজা করে সেতো মুশরিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি তার যিম্মাদার হবে?’ (ফুরক্বান ২৫/৪৩)। (২) এখানে কুফর ও শিরক সমার্থক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন কাফিরকে মুশরিকও বলা হয়। কারণ কাফিরেরাও মুশরিকদের মত শিরকে বিশ্বাস করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তারা কাফের হয়ে গেছে, যারা বলে আল্লাহ তিন উপাস্যের একজন। অথচ এক উপাস্য (আল্লাহ) ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’ (মায়েদাহ ৫/৭৩)।

উল্লেখ্য যে, কুফরী করা ও কাফের হয়ে যাওয়া এক নয়। এক্ষণে কেউ যদি ছালাতকে অস্বীকার করে বা একেবারেই ছেড়ে দেয় তাহ’লে সে বিশ্বাসগতভাবে কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যদি অবহেলা বা অলসতাবশত ছালাত আদায় না করে এবং মাঝে-মধ্যে আদায় করে, তাহ’লে সে বিশ্বাসগত ভাবে কাফের হবে না; বরং কুফরী কর্মের কারণে কবীরা গুনাহগার হবে। তওবা না করলে তাকে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে (আলবানী, হুকমু তারিকিছ ছালাত ১/১০, ৫১; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৫৫-৫৬; ছহীহাহ হা/৩০৫৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

প্রশ্ন (৩৩) : জামা‘আতে ছালাত আদায়কালে রুকূ থেকে দাঁড়ানোর সময় মুক্তাদী সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলবে কি?

উত্তর : রুকূ পরবর্তী যিকিরের তিন অবস্থা- (১) ইমাম তার ইমামতিকালে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ ও ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হামদ...’ উভয়টি বলবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪১৯; মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৪৮; ইবনু রুশদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/১৫১; ইবনুল হুমাম, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/২৯৮)।

(২) মুক্তাদী একা ছালাত আদায়কালীন ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ ও ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হামদ...’ উভয়টি বলবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩৬৬; ফাৎহুল বারী ২/২৮৪; ইবনু আব্দিল বার্র, আল ইস্তিযকার ২/১৭৮; ইবনু রুশদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/১৫১)। কারণ আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলে (রুকূ হ’তে উঠতেন) তখনاللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন, আর তিনি যখন রুকূতে যেতেন এবং রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন, তখন তাকবীর বলতেন এবং উভয় সিজদা হ’তে যখন দাঁড়াতেন, তখন اللهُ أَكْبَرُ বলতেন (বুখারী হা/৭৯৫; আহমাদ হা/৮২৩৬)। এই হাদীছ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ইমাম ও একা ছালাত আদায়কারী উভয়টি বলবে।

(৩) জামা‘আতে ছালাত আদায়কালে মুক্তাদী সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ না বলে কেবল ‘রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ’ বা হাদীছে বর্ণিত দো‘আগুলো পাঠ করবে (ইবনুল হুমাম, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/২৯৮; বাহূতী, কাশশাফুল ক্বেনা‘ ১/৩৪৯; মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৪৭)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইমাম তো নির্ধারণ করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্যে। কাজেই তিনি তাকবীর বললে, তোমরাও তাকবীর বলবে, রুকূ করলে তোমরাও রুকূ করবে, তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। তিনি যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবেন তখন তোমরা বলবে, ‘রাববানা ওয়া লাকাল হামদ’(বুখারী হা/৬৮৯; মিশকাত হা/১১৩৯)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইমাম যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে, তখন তোমরা বলবে, ‘আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ’। কেননা যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলবে, তার পূর্বে কৃত পাপ মাফ করে দেওয়া হবে’ (বুখারী হা/৭৯৬; মুসলিম হা/৪০৯; মিশকাত হা/৮৭৪)। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে যে ছালাত শিক্ষা দিয়েছিলেন তাতে ছিল ইমাম যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে, তোমরা তখন ‘আল্লাহুম্মা রববানা- লাকাল হামদ’ বলবে, আল্লাহ তোমাদের এ কথা শুনবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী (ছাঃ)-এর ভাষায় বলেছেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তাঁর প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনেন) (মুসলিম হা/৪০৪; মিশকাত হা/৮২৬)। এমর্মে একাধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলোতে রুকূর পরে ইমাম এবং মুক্তাদীর আলাদা করণীয় বর্ণিত হয়েছে।

এজন্য শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) এবং শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, মুক্তাদী কেবল ‘রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ’ বা এজাতীয় দো‘আগুলো পাঠ করবে, সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ পাঠ করবে না (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১১/১৭; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২৮৭)। উপরোক্ত বক্তব্যই ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদসহ জুমহূর বিদ্বানের (ইবনুল হুমাম, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/২৯৮; শরহ মুখতাছারুল খলীল ১/২৮১; মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৪৭)।

তবে ইমাম শাফেঈ ও আলবানী (রহঃ) দু’টি ‘আম হাদীছের ভিত্তিতে বলেন, ইমাম ও মুক্তাদী সকলেই ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতে পারে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ছালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৬৮৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৩৯)। অত্র ‘আম হাদীছদ্বয়ের ভিত্তিতে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়েই ‘সামি‘আললাহু লিমান হামিদাহ’ বলতে পারে (বিস্তারিত দ্রঃ মির‘আত ৩/১৮৯ ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১০৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩৪) : আমাদের মসজিদের জমিতে অনেক পুরাতন কবর ছিল। পরে তার উপর ২ তলা বিশিষ্ট পাকা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। কবর নির্দিষ্টভাবে কোথায় আছে তা কেউ জানে না। মসজিদ নির্মাণের সময় জমিদাতার ধারণামত একস্থান থেকে কিছু মাটি উঠিয়েছিলেন, কিন্তু কবরের কোন চিহ্ন পাননি। এক্ষণে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : লাশ বা কবরের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া গেলে সেখানে মসজিদ নির্মাণ বা ছালাত আদায়ে কোন বাধা নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩০৩; মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৩৮৭)। তবে কবর থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হ’লে তার উপর কোনভাবেই মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত সারা পৃথিবীই ছালাত আদায়ের স্থান’ (তিরমিযী হা/১৩১৭; মিশকাত হা/৭৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭৬৭)।

প্রশ্ন (৩৫) : জনৈক আলেম বলেন, ঈদের ছালাতের পর কোলাকুলি করা বিদ‘আত। এক্ষণে কেউ যদি এটাকে সুন্নাত মনে না করে সামাজিক প্রথা হিসাবে করে তবে বিদ‘আত হবে কি?

উত্তর : ঈদের দিনে পারস্পরিক সাক্ষাতে কোলাকুলি করাতে দোষ নেই। কারণ লোকেরা এটা সামাজিক প্রথা হিসাবে করে থাকে, ইবাদত হিসাবে নয়। ঈদে বহু লোক বাইরে থেকে নিজ এলাকায় আগমনে করে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করে। কুশল বিনিময়ের সময় কোলাকুলি করে যা সুন্দর আচরণের বহিঃপ্রকাশ। অতএব ঈদের ছালাতের পরে কোলাকুলি করা দোষণীয় নয়। তবে স্মর্তব্য যে, এটি ঈদের দিনের সুন্নাত নয় এবং আবশ্যকীয় কাজও নয় (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২০৮-২১০)।

প্রশ্ন (৩৬) : ইস্তিস্কার ছালাতে একজন ইমামতি ও অন্যজন খুৎবা প্রদান করতে পারবে কি?

উত্তর : জুম‘আ ও ঈদের মতই ইস্তিস্কার ছালাতের ক্ষেত্রেও সুন্নাত হচ্ছে যিনি ইমামতি করবেন তিনিই খুৎবা দিবেন বা যিনি খুৎবা দিবেন তিনিই ইমামতি করবেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীন নিজেরা খুৎবা দিতেন এবং ইমামতি করতেন। যিনি খুৎবা দিবেন তার জন্যই ইমামতি করা উত্তম হওয়ার বিষয়টি জুমহূর বিদ্বান কর্তৃক স্বীকৃত। তবে বিশেষ কারণে একজন ইমামতি আরেকজন খুৎবা প্রদান করতে পারে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২২৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৩/২২০; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২)।

প্রশ্ন (৩৭) : ছালাত শেষ করার পর যদি দেখি যে মাথায় কয়েকটি চুল বেরিয়ে আছে, সেক্ষেত্রে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : উক্ত ছালাতই যথেষ্ট হবে। পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৪১৪; বাহূতী, কাশশাফুল ক্বেনা‘ ১/২৬৯)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, যদি নারীর চুল বা শরীরের কোন ছোট অংশ উন্মুক্ত হয়ে যায়, তবে তাকে ছালাত পুনরাবৃত্তি করতে হবে না। এটিই অধিকাংশ আলেমের অভিমত (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/১২৩)।

প্রশ্ন (৩৮) : আমাদের এলাকার প্রায় মসজিদে উন্নয়নের জন্য সমাবেশ করা হয় এবং সূদখোর, ঘুষখোর সহ আমভাবে সবার টাকা গ্রহণ করা হয়। আবার উপস্থিত শ্রোতাদের খাবারের ব্যবস্থা উক্ত দানের টাকা থেকেই করা হয়। এক্ষণে সবার টাকা গ্রহণ করা এবং সেই টাকা দিয়ে সবাইকে খাওয়ানো জায়েয হবে কি?

উত্তর : পবিত্র সম্পদ থেকেই দান করা কর্তব্য (বাক্বারাহ ২/২৬৭)। তবে কেউ যদি হারাম উপার্জন থেকে স্বেচ্ছায় দান করে, তবে তা গ্রহণ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) অমুসলিমদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/২৬১৭)। হারাম উপার্জনের জন্য দাতা দায়ী হবেন, গ্রহীতা নন। আল্লাহ বলেন, একের পাপভার অন্যে বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪)। কোন ব্যক্তির সম্পদে যদি হালাল-হারাম মিশ্রিত থাকে, তবে সেই সম্পদ গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে জায়েয (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১)। কিন্তু হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে দান আল্লাহর নিকটে কবুল হয় না এবং এর মাধ্যমে দাতা কোন নেকীও পাবে না (মুসলিম হা/২২৪, মিশকাত হা/৩০১; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৮৫)।

আর এক্ষেত্রে মসজিদের উদ্দেশ্যে দানকৃত টাকা থেকে মসজিদের মুছুল্লীদেরকে মসজিদের কল্যাণ বিবেচনায় খাওয়ানো যাবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন অপচয় না হয় (দ্র. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ৩১/১৮)।

প্রশ্ন (৩৯) : আমি অনেকদিন থেকে মসজিদে একাকী রাফঊল ইয়াদায়েন করি। বর্তমানে মসজিদ কমিটি আমার ক্ষতি করতে চায়। পিতা-মাতাও রাফঊল ইয়াদায়েন করলে মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এক্ষণে আমি বাড়িতে ছালাত পড়ব কি? না পিতা-মাতার নির্দেশনা উপেক্ষা করে মসজিদে ছালাত আদায় করব, নাকি রাফঊল ইয়াদায়েন আপাতত বন্ধ রাখব?

উত্তর : ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সুন্নাত এবং এটা ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। অতএব সবাইকে এই প্রতিষ্ঠিত সুন্নাতটি পালন করার চেষ্টা করতে হবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৭/৯৫; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১০৮ পৃষ্ঠা)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যার নিকট রাসূল (ছাঃ)-এর কোন সুন্নাত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কারু কথায় তা পরিত্যাগ করা আদৌ বৈধ নয় (ইবনু ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/৩১৯)। যদি কেউ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের মহববতে একটি নেকীর কাজ করেন, আল্লাহ বলেন, আমি তার নেকী ১০ থেকে ৭০০ গুণে বর্ধিত করি (বুখারী হা/৪২; মুসলিম হা/১২৯; মিশকাত হা/৪৪)। তবে ‘রাফঊল ইয়াদায়েন’-এর উপর ছালাতের বিশুদ্ধতা নির্ভরশীল নয়। এজন্য পরিস্থিতি বুঝে সাময়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অপরদিকে ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, রাসূলের সুন্নাত পালনে কাউকে বাধা না দিয়ে বরং সহায়তা করা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহরই নাফরমানী করল’ (বুখারী হা/৭১৩৭; মিশকাত হা/৩৬৬১)। আল্লাহ বলেন, ‘তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয়...। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’ (বাক্বারাহ ২/১১৪)।

প্রশ্ন (৪০) : মসজিদের মুছল্লী সংকুলান হয় না। এমতাবস্থায় মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য পার্শ্ববর্তী কবরগুলোকে শামিল করে মসজিদের পিলার দেওয়া হয়েছে। নীচতলায় প্রাচীর দিয়ে কবরগুলোকে মসজিদ থেকে পৃথক করা হয়েছে। তবে উপর তলা কবরস্থানের উপর নির্মিত হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? না গেলে বিকল্প করণীয় কি?

উত্তর : যে মসজিদের নীচে কবর রয়েছে তা পাকা করা হৌক বা ঢালাই করা হৌক তাতে ছালাত আদায় করা জায়েয নয়। কেননা কবরের ব্যাপারে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ- ১. কবরের উপরে ছালাত আদায় করা ২. সরাসরি কবরের দিকে ছালাত আদায় করা ৩. কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মসজিদে ছালাত আদায় করা (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/৪০৬; ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২৭/২৩৪, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সাবধান! তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা তাদের নবীগণ ও নেককার ব্যক্তিগণের কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করছি’ (মুসলিম হা/৫৩২; মিশকাত হা/৭১৩)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হৌক ইহূদী ও নাছারাদের প্রতি, তারা তাদের নবীগণের কবর সমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে’ (বুখারী হা/১৩৩০; মুসলিম হা/৫২৯; মিশকাত হা/৭১২)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না’ (মুসলিম হা/৯৭২; মিশকাত হা/১৬৯৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, তোমরা কবরের দিকে ফিরে এবং কবরের উপরে ছালাত আদায় করো না’ (ছহীহাহ হা/১০১৬)।

প্রশ্ন (৪১) : কোন কারণ ছাড়াই মাঝে মাঝে সাদা স্রাব বেরিয়ে কাপড়ে লাগে। অনেক সময় ছালাতের মধ্যেও বের হয়। উক্ত কাপড়ে ছালাত হবে কি?

উত্তর : সাদা স্রাব বের হওয়ার কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন কোন পুরুষের মযী বের হ’লে ওযূ ভঙ্গ হয়। ছালাতরত অবস্থায় সাদাস্রাব অনুভব করলে ছালাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর লজ্জাস্থান ধৌত করে ওযূ করবে এবং পুনরায় ছালাত আদায় করবে। তবে এটি যদি কারো নিয়মিত ব্যাধি হয় এবং তা চলমান থাকে, তাহ’লে সে প্রত্যেক ছালাতের আগে ওযূ করবে এবং ছালাত আদায় করবে। আর ছালাতরত অবস্থায় বের হ’লে ঐ অবস্থাতেই ছালাত আদায় করবে’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমু‘ঊল ফাতাওয়া ২১/২২১; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২১৪)। আর কাপড়ের যে স্থানে সাদা স্রাব লেগে যাবে সে স্থানও ধুয়ে নেওয়া ভালো। কারণ কোন কোন বিদ্বান সাদা স্রাবকে নাপাক বলেছেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৮৮; ওছায়মীন, আল-মাজমূ‘ ১/৪০৬)।

প্রশ্ন (৪২) : আমাদের মসজিদে মাঝে-মধ্যে কোন মুছল্লী অসুস্থ হ’লে তার সুস্থতার জন্য মসজিদে খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে দো‘আ চাওয়া হয়। এরূপ করা যাবে কি?

উত্তর : মুছল্লীদের খাওয়ানোর মাধ্যমে দো‘আ চাওয়া যাবে। কারণ মুছল্লীদের খাওয়ানো নফল ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা ছাদাক্বার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা কর (ছহীহুত তারগীব হা/৭৭৪)। ছাদাক্বাকারী দো‘আ না চাইলেও মুছল্লীদের জন্য সুন্নাত হ’ল ছাদাক্বাকারীর জন্য বিশেষভাবে দো‘আ করা (তওবা ৯/১০৩; বুখারী হা/১৪৯৭; মিশকাত হা/১৭৭৭)। রাসূল (ছাঃ)-কে একটি ছাগল হাদিয়া দেওয়া হ’লে তিনি তা প্রতিবেশীদের মাঝে বণ্টন করে দিতে বললেন। বণ্টন শেষে আয়েশা (রাঃ) খাদেমকে জিজ্ঞেস করলেন তারা কি বলে দো‘আ করেছে। সে বলল, বারাকাল্লাহ ফীকুম। আয়েশা (রাঃ) বললেন, ওয়া বারাকাল্লাহ ফীহিম। আমরা তাদের দো‘আর জওয়াব দিয়ে দিলাম এবং ছাদাক্বার ছওয়াব অবশিষ্ট রইল (নাসাঈ হা/১০০৬২; আল-কালিমুত ত্বাইয়েব হা/২৩৯, সনদ জাইয়েদ)।

প্রশ্ন (৪৩) : আমার অফিসে টয়লেট ব্যবস্থাপনার ভিন্নতার কারণে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে হয়। বাধ্যগত অবস্থায় দাঁড়িয়ে পেশাব করা যাবে কি? এভাবে পেশাব করলে পানি বা টিস্যু ব্যবহার করলেও কিছু পেশাব থেকে যায় বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় ওযূ করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) একদিন গোত্রের আবর্জনা ফেলার স্থানে আসলেন এবং সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন। অতঃপর পানি আনতে বললেন। আমি তাঁকে পানি এনে দিলে তিনি ওযূ করলেন (বুখারী হা/২২৪; মিশকাত হা/৩৬৪)। অতএব বসার পরিবেশ না থাকলে বা জায়গা নোংরা হ’লে বাধ্যগত কারণে দাঁড়িয়ে পেশাব করা যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন পোষাকে বা শরীরে ছিটা না লাগে।

পানি না পেলে টিস্যূ ব্যবহার করা জায়েয। আর পেশাব আটকে আছে মনে হ’লে তাতে ছালাতের ক্ষতি হয় না, যতক্ষণ না তা বের হয় বা কাপড়ে গড়িয়ে পড়ে (ইবনু কুদামা, মুগনী ১/১০৮; বাহুতী, কাশশাফুল ক্বেনা‘ ১/৬৬)। এজন্য গুপ্তাঙ্গ ধরে ৪০ কদম হাঁটা সুন্নাত বিরোধী এবং চরম বেহায়াপনার কাজ।

প্রশ্ন (৪৪) : ঈদায়নের তাকবীর সমূহ ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত কি?

উত্তর : ঈদায়নের তাকবীর সমূহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশনা ও ছাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হ’ল-‘আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু, আল্ল-হু আকবার আল্ল-হু আকবার ওয়া লিল্লা-হিল হামদ্’ (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৬৭৯)। এছাড়াও পাঠ করা যায়-আল্লাহু আকবার কাবীরা ওয়ালহামদু লিল্লাহি কাছীরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাঁও ওয়া আছীলা(মুসলিম হা/৬০১)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি উপরোক্ত তাকবীরটি বলে উঠল। ছালাত শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ কথাগুলো কে বলল? সবার মধ্যে থেকে একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমি বলেছি। তখন তিনি বললেন, ‘কথাগুলো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল’। ইবনু ওমর বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এ কথাগুলো বলতে শোনার পর থেকে তার ওপর আমল করা কখনো বাদ দেইনি (মুসলিম হা/৬০১)। ইমাম শাফেঈসহ একদল বিদ্বান এই অংশটুকু পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (কিতাবুল উম্ম ১/২৭৬)।

আল্লাহ তা‘আলা যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন ও আইয়ামে তাশরীক্বের দিনগুলোতে অধিকহারে তাঁর যিকির-আযকার করার নির্দেশ দিয়েছেন (হজ্জ ২২/২৮; বাক্বারাহ ২/২০৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও এই দিনগুলোতে তাকবীর, (আল্লাহু আকবার) তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ), তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) অধিকহারে পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন (আহমাদ হা/৫৪৪৬, ৬১৫৪)। আর প্রচলিত তাকবীর এই চারটিকেই শামিল করে। তাছাড়া ঈদের তাকবীরের উক্ত শব্দগুলো ছাহাবায়ে কেরাম থেকে ছহীহ সনদে প্রমাণিত। যেমন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, ইবনু আববাস, আলী ও আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) উক্ত তাকবীর গুলো পাঠ করতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৬৫৩, ৫৬৫১; ইরওয়া হা/৬৫৪-এর আলোচনা, সনদ ছহীহ; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৯৩)। পরবর্তীতে তাবেঈনে ইযাম উক্ত তাকবীর পাঠ করেছেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৬৫০; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৪০ ইবনুল মুনযির, আল- আওসাত্ব ৪/৩৪৯)। তারপরে চার ইমামের তিন ইমামই উক্ত তাকবীর পাঠ করেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩৯; মুগনী ২/২৯৩; ইবনুল হুমাম, ফৎহুল ক্বাদীর ২/৮২)। তবে রাসূলুল্লাহ থেকে সরাসরি শব্দগুলো বর্ণিত না হওয়ায় বিদ্বানগণ তাকবীরগুলো বিভিন্ন শব্দে পাঠ করেছেন। সেজন্য কেউ উক্ত তাকবীরগুলো হুবহু পাঠ না করে তাকবীর, (আল্লাহু আকবার) তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) আকারে পাঠ করলেও তাতে কোন দোষ নেই। মোট কথা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) এই দিনগুলোতে অধিকহারে যিকির, তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করার নির্দেশনা দিয়েছেন (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২১৬; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৩/৩৫৫)।

প্রশ্ন (৪৫) : আমি ঈদের সময় নানা ব্যস্ততায় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অলসতাবশত ১-২ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করিনি। এক্ষণে আমি এর ক্বাযা আদায় করলে আমার গুনাহ মাফ হবে কি? না পুনরায় কালেমা পাঠ করে মুসলিম হ’তে হবে?

উত্তর : নতুন করে মুসলিম হ’তে হবে না। তবে আল্লাহর নিকট উক্ত পাপের জন্য খালেছ তওবা করতে হবে এবং কাযা ছালাতসমূহ আদায় করে নিতে হবে। কারণ ছুটে যাওয়া ছালাতের কাফফারা হচ্ছে উক্ত ছালাত আদায় করে নেওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি কেউ কোন ছালাতের কথা ভুলে যায়, তাহ’লে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে ছালাতের অন্য কোন কাফফারা নেই। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে ছালাত কায়েম কর’ (তোয়াহা ২০/১৪; বুখারী হা/৫৯৭; মিশকাত হা/৬০৩)।

প্রশ্ন (৪৬) : আমি মাগরিবের ছালাতের শেষ বৈঠকে গিয়ে দেখি ইমাম ডান দিকে সালাম ফিরাচ্ছেন। আমি বৈঠকে বসে জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করি। এ ক্ষণে আমার ছালাত হয়েছে কি

উত্তর : ডান দিকে সালাম ফিরানো অবস্থায় ছালাতে অংশ গ্রহণ করলে ছালাত হয়ে যাবে। আর বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় যোগ দিলে জামা‘আতে অংশগ্রহণ হবে না। তখন তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে। কারণ ইমাম সালামের মাধ্যমে ছালাত শেষ করে ফেলেছেন (মারদাভী, আল- ইনছাফ ২/২২২; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৬৯)।

প্রশ্ন (৪৭) : মসজিদে টাইলস ফিটিং, এসি সংযোজন সহ শ্রীবৃদ্ধিমূলক বিবিধ প্রয়োজনে দান করা অথবা গরীব-মিসকীনের জন্য ব্যয় করা উভয়টির মধ্যে কোনটি উত্তম?

উত্তর : মসজিদের শ্রীবৃদ্ধি বা অতি অসহায় দরিদ্রদের ছাদাক্বার মধ্যে যেটি অধিক প্রয়োজন হবে, সেটিই করা উত্তম। প্রয়োজনে বিশুদ্ধ নিয়তে উভয় স্থানেও দিতে পারে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২০/৪৮)।

প্রশ্ন (৪৮) : আমি যেখানে কাজ করি তার আশেপাশে কোন মসজিদ নেই। মসজিদের দূরত্ব প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টার পথ। এক্ষণে আমি অফিস থেকে জুম‘আ মসজিদের খুৎবা লাইভে শুনে জামা‘আতের সাথে জুম‘আ আদায় করতে পারব কি?

উত্তর : মসজিদের খুৎবা লাইভে শুনে জামা‘আতের সাথে জুম‘আ আদায় করা যাবে না। বরং মসজিদ বহু দূরে হ’লে সেক্ষেত্রে একাধিক মুছল্লী থাকলে নিজ কর্মস্থলে খুৎবা দিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করবে। আর একাকী থাকলে বা জুম‘আ কায়েম করা সম্ভব না হ’লে যোহরের ছালাত আদায় করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/১৪৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২৬৩)।

প্রশ্ন (৪৯) : এশার ছালাতের পূর্বে নির্দিষ্টভাবে চার রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করার বিধান রয়েছে কি?

উত্তর : এশার ছালাতের পূর্বে কোন সুন্নাতে রাতেবা নেই। বরং আযানের পরে ও এক্বামতের পূর্বে দুই রাক‘আত সাধারণ নফল ছালাত আদায় করা যায় (বুখারী হা/৬২৮)। অনুরূপভাবে মাগরিবের ছালাতের পর থেকে এশা পর্যন্ত অনির্ধারিতভাবে নফল ছালাত আদায় করা যায় (ছহীহাহ হা/২১৩২; ছহীহুত তারগীব হা/৫৮৯)। অতএব এশার ফরয ছালাতের পূর্বে দুই, চার বা ততোধিক নফল ছালাত আদায় করতে পারে। কিন্তু সেগুলো সুন্নাতে রাতেবা নয়।

প্রশ্ন (৫০) : ফরয ছালাতের পর পরই কিছু মুছল্লীকে দেখা যায় মাথায় হাত বুলিয়ে কি যেন বলে। এটা কি শরী‘আত সম্মত?

উত্তর : মাথায় হাত রেখে দো‘আ পাঠের কোন দলীল নেই। তবে দু’টি সময়ে সূরা পাঠ করে মাথাসহ শরীরে হাত বুলানোর কথা হাদীছে এসেছে- (১) ঘুমানোর সময়। (২) ঝাড়-ফুঁক করার সময়। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যা বা অন্য সময়গুলোতে কেবল সূরা বা দো‘আ পাঠের কথা এসেছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) প্রতি রাতে বিছানায় যাবার সময় দু’হাতের তালু একত্র করতেন। তারপর এতে সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর দু’হাত দিয়ে তিনি তাঁর শরীরের যতটুকু সম্ভব মাসাহ করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন (বুখারী হা/৫০১৭; মিশকাত হা/২১৩২)। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনার তিন সূরা (নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ) পাঠ করে নিজ দেহে ফুঁক দিতেন এবং স্বীয় হাত দ্বারা শরীর মাসাহ করতেন। এরপর যখন মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ হয়ে গেলেন, তখন আমি আশ্রয় প্রার্থনার সূরা তিনটি দিয়ে তাঁর শরীরে ফুঁক দিতাম, যা দিয়ে তিনি ফুঁক দিতেন। আর আমি তাঁর হাত দ্বারা তাঁর শরীর মাসাহ করিয়ে দিতাম (বুখারী হা/৪৪৩৯; মিশকাত হা/১৫৩২)। অতএব ফরয ছালাতের পর নিয়মিত সূরা পড়ে শরীরে হাত বুলানো কিংবা মাথায় হাত দিয়ে দো‘আ পাঠ সুন্নাত সম্মত নয়।

প্রশ্ন (৫১) : ছালাতরত অবস্থায় বায়ুর চাপ এসেছে। কিন্তু আটকে দেয়ার পর নির্গত হয়েছে কি-না নিশ্চিত নই। এক্ষণে আমাকে ছালাত ত্যাগ করতে হবে কি? না নিশ্চিত না হওয়ায় ছালাত অব্যাহত রাখতে হবে?

উত্তর : বায়ুর চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে বায়ুর চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করা সমীচীন নয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (মুসলিম হা/৫৬০; মিশকাত হা/১০৫৭)। বায়ুর অতিরিক্ত চাপ থাকলে ছালাতে খুশূ-খুযূ থাকে না। অতএব এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে প্রয়োজন পূরণ করে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২/৪৩৫)। আর কেবল ওয়াসওয়াসার কারণে ছালাত ছেড়ে দিবে না। বরং নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছালাত অব্যাহত রাখবে। কারণ সন্দেহের দ্বারা পবিত্রতা নষ্ট হয় না (বুখারী হা/১৩৭; মুসলিম হা/৩৬২; মিশকাত হা/৩০৬)।

প্রশ্ন (৫২) : মসজিদের ভিতর জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদের ভিতর জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩, মিশকাত হা/১৬৫৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮২)। কিছু লোক মসজিদে জানাযার ছালাত আদায়ে আপত্তি জানালে আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সুহায়েল ইবনু বায়যা ও তার ভাই সাহলের জানাযা মসজিদে নববীতে আদায় করেছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩; মিশকাত হা/১৬৫৬)। ইমাম আবূদাউদ (রহঃ) অধ্যায় রচনা করেছেন, ‘মসজিদে জানাযার ছালাত আদায়ের বিধান’। অতঃপর উপরোক্ত হাদীছটি পেশ করেন (আবুদাউদ হা/৩১৮৯-৯০)।

প্রশ্ন (৫৩) : ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পুরুষদের সতর কতটুকু? খালি গায়ের উপর কেবল গামছা দিয়ে ছালাত পড়া যাবে কি?

উত্তর : পুরুষদের সতর হচ্ছে হাটু থেকে নাভী পর্যন্ত। ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এর সাথে যোগ হবে দুই কাঁধ। অতএব কেউ লুঙ্গী বা পায়জামার সাথে দুই কাঁধের উপর গামছা ঝুলিয়ে দিয়ে ছালাত আদায় করলে ছালাত হয়ে যাবে। তবে ছালাত হচ্ছে আল্লাহর সাথে গোপন আলাপের মাধ্যম। অতএব এ সময় সুন্দর ঢিলেঢালা পোষাক পরিধান করে ছালাত আদায় করা সমীচীন (আ‘রাফ ৭/৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কাপড় যদি বড় হয়, তাহ’লে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয় তাহ’লে লুঙ্গি হিসাবে ব্যবহার করবে (বুখারী হা/৩৬১)। তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ যেন কাঁধ খোলা রেখে এক কাপড়ে ছালাত আদায় না করে (আবুদাউদ হা/৬২৬; আহমাদ হা/৭৩০৫)।

প্রশ্ন (৫৪) : জুম‘আর ছালাতের পরে সাতবার সূরা ফাতিহা, সূরা নাস ও ফালাক্ব পাঠের বিধান ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত কি?

উত্তর : উক্ত মর্মে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। যার কিছু জাল, কিছু যঈফ এবং মুরসাল (যঈফাহ হা/৪১২৯)। সুতরাং এটা আমলযোগ্য নয়। তবে সাধারণভাবে জুম‘আর ছালাতের পরে অন্যান্য ছালাতের ন্যায় একবার করে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছপাঠ করতে পারে (তিরমিযী হা/৩৫৭৫; আবূদাঊদ হা/৫০৮২)।

প্রশ্ন (৫৫) : হানাফী মসজিদে যোহর ও আছরের ছালাত দেরী করে পড়া হয়। এক্ষণে এ মসজিদে হানাফীদের আযানের পূর্বে কয়েকজন মিলে সঠিক সময়ে নিয়মিতভাবে জামা‘আত করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : নির্ধারিত ইমামের পিছনে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করাই কর্তব্য (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১৫৪)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির নেতৃত্বস্থলে ইমামতি না করে এবং গৃহে তার বিশেষ আসনে তার বিনা অনুমতিতে না বসে (তিরমিযী হা/২৭৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৮১)। তবে কর্তৃপক্ষ বা ইমামের অনুমতি সাপেক্ষে আউয়াল ওয়াক্তের ছওয়াব পেতে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে ওয়াক্ত হওয়ার পর মসজিদে মূল জামা‘আতের পূর্বে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা যায়। যেমন রাসূলুল্লাহ কোথাও চলে গেলে এবং ফিরে আসতে দেরী হ’লে ও ওয়াক্ত চলে যাওয়ার ভয়ে আব্দুর রহমান বিন আউফ রাসূল (ছাঃ)-এর ইমামতির স্থানে নিজে ইমামতি করেন (মুসলিম হা/২৭৪; আবুদাউদ হা/১৪৯)।

প্রশ্ন (৫৬) : মসজিদের ভিতরে বা বাহিরের দেয়ালে আরবী বা বাংলা ক্যালিওগ্রাফি করা শরী‘আত সম্মত হবে কি?

উত্তর : মসজিদের প্রাচীরে কোন কিছু লেখা সমীচীন নয়। বিশেষ করে সামনে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত কোন কিছু লেখা বা টাঙানো মোটেও ঠিক নয়। কারণ এতে মুছল্লীর মনোযোগ বিনষ্ট হ’তে পারে, যা ছালাতের আদবের খেলাফ। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী ছালাতের মধ্যে আল্লাহর সাথে গোপনে আলাপ করে’ (বুখারী হা/৫৩১; মিশকাত হা/৭৪৬)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, নিশ্চয়ই ছালাতের মধ্যে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী হা/১১৯৯; মুসলিম হা/৫৩৮; মিশকাত হা/৯৭৯)। তবে মুছল্লীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় না এমন স্থানে মুছল্লীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ বা প্রয়োজনীয় কথা লিখে টাঙানো যায় (বিন বায, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৮/১৯৭; ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ২/৭৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৯১)।

প্রশ্ন (৫৭) : আমার বন্ধু নিয়মিত ছালাত আদায় করেন, মানুষের অনেক উপকার করেন এবং খুবই ন্যায়পরায়ণ। কিন্তু তিনি নিয়মিত সিগারেটের সাথে গাজা মিশিয়ে সেবন করেন। এটা খেলে নাকি তার মধ্যে পাপবোধ কাজ করে। ফলে গুনাহ থেকে বাঁচা এবং নেকীর কাজ করা সহজ হয়। এ চিন্তাধারা সঠিক কি?

উত্তর : উক্ত চিন্তাধারা ভুল। কেননা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণ করা হারাম এবং এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (বাক্বারাহ ২/১৬৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম বলেছেন। তার একশ্রেণী যারা নেশাদ্রব্য পানকারী (আহমাদ হা/৫১১৭; নাসাঈ, হা/২৫৬২; মিশকাত হা/৩৬৫৫)। অতএব কোন খোঁড়া যুক্তি পেশ না করে যাবতীয় নেশাদার দ্রব্য বর্জন করতে হবে।

প্রশ্ন (৫৮) : ছালাতে দাঁড়িয়ে একটি সিজদা হয়েছে নাকি দু’টি সিজদা হয়েছে এরূপ সন্দেহ হ’লে করণীয় কি? আর সালাম ফেরানোর পর এরূপ মনে হলে করণীয় কি?

উত্তর : একটি বিষয়ের উপর দৃঢ় হ’তে হবে। যদি মনে হয় একটি সিজদা হয়েছে তাহ’লে তৎক্ষণাৎ আরেকটি সিজদা দিবে এবং শেষ বৈঠকে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর যদি মনে হয় দু’টি সিজদাই হয়েছে তাহ’লে তার উপর ভরসা রেখে ছালাত সম্পন্ন করবে। এমতাবস্থায় সহো সিজদা না দিলেও চলবে। উল্লেখ্য, ছালাত শেষ করার পর যদি মনে হয় কোন এক রাক‘আতে একটি মাত্র সিজদা হয়েছে তাহ’লে আরেক রাক‘আত ছালাত আদায় করে সহো সিজদা দিয়ে সালামের মাধ্যমে ছালাত সমাপ্ত করবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৩০; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৩৮৪)।

প্রশ্ন (৫৯) : একটি কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদের দেয়ালে লিখে রেখেছে যে, যোহরের মূল জামা‘আতের আগে কোন প্রকার একক জামা‘আত করা নিষেধ। কিন্তু যোহরের জামা‘আত অনেক দেরী করে আদায় করা হয়, এমতাবস্থায় করণীয় কি?

উত্তর : এভাবে লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা সঠিক নয়। কেননা ওয়াক্ত হয়ে গেলে বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদের মূল জামা‘আতের পূর্বে ছালাত আদায় করায় বাধা নেই। যেমন ছালাতের সময় হয়ে যাওয়ার পরে রাসূল (ছাঃ)-এর অনুপস্থিতিতে আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) জামা‘আতে ইমামতি করেছেন (মুসলিম হা/২৭৪; আবুদাউদ হা/১৪৯)।

প্রশ্ন (৬০) : দিনের নফল ছালাত কি দুই দুই রাক‘আত করে পড়তে হবে?

উত্তর : রাতের নফল ছালাত দুই দুই রাক‘আত করে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই। তবে দিনের ছালাতের ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। কিছু বিদ্বান মনে করেন, দিনের নফল ছালাতও দুই দুই রাক‘আত করে পড়তে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, রাতের ও দিনের (নফল) ছালাত দু’রাক‘আত করে (আবুদাউদ হা/১২৯৫; নাসাঈ হা/১৬৬৬, সনদ ছহীহ)। আর কোন কোন বিদ্বান মনে করেন দিনের নফল ছালাত বিভিন্ন রাক‘আতযুক্ত হ’তে পারে। অর্থাৎ হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবে আমল করতে হবে। দিনের নফল ছালাত যেমন, ইশরাক্ব, যোহা, বা অন্যান্য নফল ছালাত দুই রাক‘আত করে আদায় করবে। আবার যে সকল হাদীছে স্পষ্টভাবে রাসূল (ছাঃ) চার রাক‘আত করে আদায় করেছেন বা আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো চার রাক‘আত করেই আদায় করতে হবে। যেমন যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাত, সূর্য ঢলে পড়ার পরে যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাতুয যাওয়াল এর ছালাত ও এশার পরে চার রাক‘আত নফল ছালাত ও জু‘মআর পরে চার রাক‘আত সুন্নাত ইত্যাদি (ছহীহুত তারগীব হা/৫৮৪-৫৮৯; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭২৭৫)। ইবনু ওমর (রাঃ) দিনের বেলায় যখন নফল ছালাত আদায় করতেন তখন চার রাক‘আত ছালাত এক সালামে আদায় করতেন (ফাতহুল বারী ২/৪৭৯)। অতএব দিনের নফল ছালাত দুই রাক‘আত করে আদায় করা উত্তম হ’লেও চার রাক‘আত করে আদায় করাও জায়েয।

প্রশ্ন (৬১) : নারীরা আলাদা জামা‘আতে ছালাত আদায়কালীন বা মাহরামের সাথে ছালাত আদায়কালীন ইমাম ভুল করলে সুবহানাল্লাহ বলে সতর্ক করতে পারবে কি?

উত্তর : সুন্নাত হচ্ছে নারী পুরুষের সম্মিলিত জামা‘আতে ইমাম ভুল করলে পুরুষেরা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে এবং নারীরা বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাত মারবে (বুখারী হা/১২০৩; মিশকাত হা/৯৮৮)। তবে যদি নারীদের জামা‘আতে নারী ইমাম ভুল করে বা নারী তার পুরুষ মাহরামের সাথে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে নারী ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে লোক্বমা দিতে পারবে (যারকাশী, মুগনীল মুহতাজ ১/৪১৮)।

প্রশ্ন (৬২) : ঠান্ডাজনিত সমস্যা থাকায় এসিযুক্ত মসজিদের ভিতরে কাতার পূরণ না করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে জামা‘আতে অংশগ্রহণ করলে ছালাত কবুল হবে কি?

উত্তর : সর্বাবস্থায় কাতারের সাথে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে। কারণ জামা‘আতের জন্য শর্ত হচ্ছে কাতারের সাথে কাতার মিলে থাকা এবং ইমামের আওয়াজ শুনতে পাওয়া। এক্ষণে বাধ্যগত অবস্থায় মসজিদের বারান্দায় একাধিক মুছল্লী ছালাত আদায় করলে জামা‘আতে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৪০৭; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/২১২)।

প্রশ্ন (৬৩) : ঋতু অবস্থায় ছালাত ও ছিয়াম থেকে বিরত থাকতে হয়। কুরআন তেলাওয়াত থেকেও কি বিরত থাকতে হবে?

উত্তর : ঋতু অবস্থায় মুখস্থ বা কুরআন স্পর্শ না করে দেখে দেখে তেলাওয়াত করা জায়েয। এমনকি ঋতুবর্তী মহিলা হাত মোযা পরে কুরআন স্পর্শ করেও তেলাওয়াত করতে পারবে। কারণ এটা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/২৩৮, ২১/৪৬০; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৯১)। আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও অন্য দু’ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শৌচাগার হ’তে বের হয়ে কুরআন পড়তেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশত খেতেন। অপবিত্র অবস্থা ছাড়া তাঁকে কোন কিছুই কুরআন পাঠ হ’তে বিরত রাখত না (নাসাঈ হা/২৬৫; আহমাদ হা/৮৪০, সনদ হাসান)।

প্রশ্ন (৬৪) : আমার প্রতি মাসে সাত দিন ঋতু হয়। আমি পবিত্র হয়ে নির্ধারিত ইবাদতসমূহ পালন করি। কিন্তু তিন চার দিন পরে আবার রক্ত বের হয়। আমি ইস্তেহাযা ধরে ইবাদতসমূহ পালন করতে থাকি। এমতাবস্থায় স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারব কি?

উত্তর : ইস্তেহাযা অবস্থায় স্বামীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে। কারণ এটা ঋতু বা নেফাস নয়, যে অবস্থায় স্ত্রী মিলন নিষেধ করা হয়েছে (বাক্বারাহ ২/২২২; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৩৭২; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২৪৬)। ফাতেমা বিনতে আবু হুবাইশ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলেন, আমি একজন রক্তপ্রদর রোগীনী, কখনো পবিত্র হই না। আমি কি ছালাত ত্যাগ করব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটা একটি শিরা (হ’তে নির্গত রক্ত), ঋতু নয়। যখন ঋতু হবে তখন ছালাত ছেড়ে দিবে। ঋতুর সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে তোমার রক্ত ধুয়ে (গোসল করে) ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/২২৮; মিশকাত হা/৫৫৭)।

প্রশ্ন (৬৫) : মসজিদ কমিটি জুম‘আর দিন জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের আন্ডার গ্রাউন্ডে মহিলাদের ছালাতের ব্যবস্থা করেছে। এটা জায়েয হবে কি?

উত্তর : মসজিদের অন্তর্গত গ্রাউন্ড ফ্লোরে ইমামের অবস্থান থেকে নীচে বা উপরে, ডানে বা বামে পর্দার সাথে নারীরা ছালাত আদায় করতে পারে। এতে কোন বাধা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে ইমামের সামনে কাতার চলে না যায় (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/২৯৩; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/২১৩; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৩০০)।

প্রশ্ন (৬৬) : আমরা জানি যে, জুম‘আর দিন যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করে তাকে উট কুরবানীর ছওয়াব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হ’ল সময়টা কখন থেকে শুরু হয়?

উত্তর : সূর্যোদয়ের পর ইশরাক্বের ছালাতান্তে জুম‘আর দিনের উত্তম সময় শুরু হয়। কোন ব্যক্তি বা দল এ সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে সে বা তারা উঁট কুরবানী করার ছওয়াব পাবে। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর থেকে খুৎবা পর্যন্ত সময়ের পাঁচটি স্তর থাকবে। প্রথম স্তর শুরু হবে সূর্যোদয় থেকে এবং শেষ স্তরের শেষ হবে ইমাম খুৎবায় উঠলে। এভাবে যারা আসতে থাকবে তারা ক্রমান্বয়ে হাদীছে বর্ণিত ছওয়াব পাবে (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৩৯৯-৪০৭; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/২৪৫; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১৪০)।

উল্লেখ্য, মসজিদে আগে প্রবেশ করা দ্বারা সর্বাগ্রে প্রবেশকারী কোন একক ব্যক্তিকে বুঝানো হয়নি; বরং এর দ্বারা একটি সময়কে বুঝানো হয়েছে। যে সময়টি হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। উক্ত সময়ের মধ্যে যত মুছল্লী প্রবেশ করবে সকলেই ঐ পরিমাণ নেকী লাভ করবে (মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪/৪৬০-৬৪ পৃ.)।

প্রশ্ন (৬৭) : কোন মহিলা ওযূ করার পরে যদি কোন গায়ের মাহরাম পুরুষ তাকে দেখে ফেলে তাহ’লে তার ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে কি?

উত্তর : কোন পুরুষের দৃষ্টিতে পড়া নারীর জন্য ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। এতে ওযূ ভঙ্গ হবে না (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ১১/১৫১১)। তবে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

প্রশ্ন (৬৮) : জামা‘আতে ফরয ছালাতের পর সুন্নাত আদায়ের পূর্বে জানাযার ছালাত পড়া যরূরী কি? না সুন্নাত ছালাত শেষ করেও জানাযা আদায় করা যাবে?

উত্তর: জানাযার ছালাত ফরযে কিফায়া। আর ফরযে কিফায়া সুন্নাতের উপর অগ্রগামী। সুতরাং ফরয ছালাতের পরেই জানাযা শুরু হ’লে তাতে অংশগ্রহণ করবে এবং সুন্নাত ছালাত পরে আদায় করে নিবে। আর সুন্নাতের পর শুরু হ’লে সুন্নাত পড়েই অংশগ্রহণ করবে। তবে সুন্নাতের পূর্বেই জানাযা আদায় করতে হবে এমন কথা সঠিক নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৫৬; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/১৫৮)।

প্রশ্ন (৬৯) : তাসবীহ আঙ্গুলে গণনার ক্ষেত্রে প্রতি দাগে দাগে ১টি করে তাসবীহ গণনা করা কি সুন্নাত? না আঙ্গুলে যেভাবে ইচ্ছা গণনা করা যাবে?

উত্তর : যেভাবে সম্ভব হবে সেভাবে আঙ্গুলে গণনার মাধ্যমে তাসবীহ পাঠ করবে। কারণ হাদীছে আঙ্গুলে গণনার মাধ্যমে তাসবীহ পাঠ করতে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অবশ্যই তোমরা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ) ও তাক্বদীস (সুববুহুন কুদ্দূসুন রাববুনা ওয়া রাববুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ অথবা সুবহানাল মালিকিল কুদ্দূস) আঙ্গুলে হিসাব করে পড়বে। কেননা এগুলোকে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে এবং কথা বলতে আদেশ দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা রহমত (অনুগ্রহের কারণ) সম্পর্কে উদাসীন থেকো না এবং তা ভুলে যেয়ো না (তিরমিযী হা/৩৫৮৩; আহমাদ হা/২৭১৩৪; মিশকাত হা/২৩১৬)। অতএব মুছল্লীর জন্য যেভাবে তাসবীহ গণনা করা সহজ হবে সেভাবে আঙ্গুলে গণনা করে তাসবীহ পাঠ করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২১/২৫৭-৫৮)।

প্রশ্ন (৭০) : ইক্বামতের সময় ইমাম কোনদিকে ঘুরে থাকবে? ক্বিবলার দিকে না মুছল্লীদের দিকে?

উত্তর : ইক্বামতের সময় ইমাম কিবলামুখী হয়ে অথবা মুছল্লীদের দিকে মুখ ফিরে থাকবেন। অতঃপর তিনি কাতার সোজা করার প্রতি নির্দেশনা দিবেন। এ সময় তিনি মুছল্লীদের দিকে মুখ করে থাকবেন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন, তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং আগে-পিছে বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ো না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর বিচ্ছিন্নতায় লিপ্ত হবে। বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এসব বিষয়ে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যায়ক্রমে কাছাকাছি দাঁড়াবে (মুসলিম হা/৪৩২; মিশকাত হা/১০৮৮)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদের মাঝে প্রথম সারিতে এগিয়ে আসতে গড়িমসি লক্ষ্য করে তাদেরকে বললেন, সামনে এগিয়ে এসো। আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা তোমাদের অনুসরণ করবে। এরপর তিনি বললেন, একদল লোক সর্বদাই প্রথম কাতারে দাঁড়াতে দেরী করতে থাকে। পরিণামে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের পিছনে ফেলে রাখবেন (মুসলিম হা/৪৩৮; মিশকাত হা/১০৯০)।

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, আমরা ছালাতে দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (প্রথমে মুখে অথবা হাতে ইশারা করে) কাতারগুলোকে ঠিক করে দিতেন। যখন আমরা ঠিক হয়ে দাঁড়াতাম তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন (আবুদাউদ হা/৬৬৫; মিশকাত হা/১০৯৭)। আনাস (রাঃ) বলেন, একদা ছালাতের তাকবীর বলা হ’ল, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরস্পরে মিলিত হয়ে দাঁড়াও! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হ’তেও দেখে থাকি’ (বুখারী, মিশকাত হা/১০৮৬)।

আনাস (রাঃ) বলেন, (ছালাত শুরু করার পূর্বে) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রথমে তাঁর ডানপাশে ফিরে বলতেন, ঠিক হয়ে দাঁড়াও, কাতারগুলোকে সোজা করো। তারপর তাঁর বামপাশে ফিরে বলতেন, ঠিক হয়ে দাঁড়াও, কাতারগুলোকে সোজা কর’ (আবুদাউদ হা/৬৭০; মিশকাত হা/১০৯৮)।

প্রশ্ন (৭১) : কোন কারণে ওযূ বা তায়াম্মুম করার সুযোগ না হ’লে, ওযূ বা তায়াম্মুম ছাড়াই ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : একমাত্র পানি ব্যবহারে অক্ষম বা তায়াম্মুম করতে অপারগ ব্যক্তিরা ওযূ ও তায়াম্মুম ছাড়াই ছালাত আদায় করবে। কারণ জ্ঞান থাকা পর্যন্ত মুসলিমের উপর থেকে ছালাত রহিত হয় না (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১/৪৪০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৩৭৭; শাওকানী, নায়লুল আওতার ১/৩৩৭)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উসায়েদ ইবনু হুযায়ের (রাঃ) এবং আরো কয়েক ব্যক্তিকে আয়েশা (রাঃ)-এর একটি হার সন্ধানের জন্য পাঠিয়েছিলেন, যেটি তিনি যে স্থানে অবতরণ করেছিলেন সেখানে হারিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় ছালাতের সময় উপস্থিত হ’ল, অথচ লোকেদের ওযূ ছিল না, আর তারা পানিও পাচ্ছিলেন না। তখন তারা ওযূ ব্যতীতই ছালাত আদায় করলেন। তারপর তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট তা বললেন। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন (বুখারী হা/৩৭৭৩; মুসলিম হা/৩৬৭)।

উল্লেখ্য যে, যে সকল বাহনে পানি বা মাটি কিছুই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই সে সকল বাহনে আরোহণকালে তায়াম্মুমের জন্য প্রয়োজনীয় মাটির টুকরো বহন করতে পারে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিয়া ৩৯৬ পৃ.)।

প্রশ্ন (৭২) : মসজিদের পাশে খ্রিষ্টানদের পরিচালিত এনজিও ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’ সংস্থা একটি পানির ট্যাংক স্থাপন করেছে। এর পানি দিয়ে ওযূ করা যাবে কি?

উত্তর : অমুসলিমদের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত ট্যাংক-এর পানি দ্বারা ওযূ করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইহূদী-নাছারাদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/৩১৬১; ইবনু তায়মিয়াহ, ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১/২৫১)। অতএব পানি পবিত্র হ’লে ওযূ করা যাবে।

প্রশ্ন (৭৩) : ছালাতুল ইস্তিস্কায় দাঁড়িয়ে হাত উল্টিয়ে মুনাজাত করা হয়। এরূপ করা সুন্নাহসম্মত কি? এছাড়া এসময় দাঁড়িয়ে কাপড় উল্টিয়ে দিতে হয়। এসবের ব্যাখ্যা কি?

উত্তর : ইস্তিস্কার ছালাতে দু’টি কাজ ভিন্নভাবে বা নতুন আঙ্গিকে করা হয়। (১) ছালাতের মধ্যে চাদর পরিবর্তন করা। এর হিকমত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই ছালাতের মাধ্যমে বৃষ্টির প্রত্যাশা করা হয় এবং বৃষ্টি হ’লে খারাপ অবস্থা থেকে ভালো অবস্থার দিকে প্রত্যাবর্তন করা হয়। যার মাধ্যমে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় ফিরে যাওয়ার লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়। ২. দো‘আর সময় হাতের তালু নিম্নমুখী করা। এর হিকমত হচ্ছে অবস্থার পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করা। ইমাম নববী (রাঃ) বলেন, কেবল ছালাতুল ইস্তিস্কায় প্রার্থনা করার সময় হাতের তালুর পিঠ দিয়ে দো‘আর মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্পর্কে আশাবাদ রয়েছে, যেমনটি পোষাক পরিবর্তনের মধ্যেও রয়েছে (নববী, শরহ মুসলিম ৬/১৮৮)। কেউ কেউ বলেছেন, হাতের তালু নিম্নমুখী করার মাধ্যমে প্রার্থনা করা হয় যে, এভাবে মেঘমালাকে উল্টিয়ে বৃষ্টি বর্ষণ করা হউক। অর্থাৎ হাতের তালু নিম্নমুখী করলে যেমন হাতের পানি পড়ে যায়, তেমনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বৃষ্টি নামার কামনা করা হয় (ফাৎহুল বারী ২/৫১৮; শাওকানী, নায়লুল আওতার ৪/১২)। সর্বোপরি আল্লাহই সর্বাধিক অধিক অবগত।

প্রশ্ন (৭৪) : মসজিদে নববীতে আয়েশা খুঁটি, হান্নানা খুঁটি এরূপ বিভিন্ন খুঁটি রয়েছে। এসব স্থানের পাশে ছালাত আদায় করায় বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?

উত্তর : এসব স্থানে ছালাত আদায় করার পৃথক কোন ফযীলত নেই। মসজিদে নববীর যে কোন স্থানে ছালাত আদায় করলে (মসজিদে হারাম ছাড়া) সে ছালাত অন্য স্থানের এক হাযার ছালাত অপেক্ষা উত্তম হবে (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯২ ‘মসজিদ সমূহ’ অনুচ্ছেদ)। উল্লেখ্য যে, মসজিদে কারু নামে দরজা বা খুঁটি বানানো ঠিক নয়। কারণ তাতে মানুষ ফযীলতের ধোঁকায় পড়ে বিদ‘আতে লিপ্ত হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মসজিদে নববীতে এইসব খুঁটি ছিল না।

প্রশ্ন (৭৫) : আমরা এক জায়গায় পুরুষের ইমামতিতে জুম‘আর ছালাত আদায় করছিলাম। প্রথম রাক‘আতের তেলাওয়াত চলাকালীন মাইক্রোফোন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মহিলাদের মধ্য হ’তে একজন ইমাম হয়ে দু’রাক‘আত ছালাত সম্পন্ন করে সালাম ফিরান। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে গিয়ে যোহরের ছালাত আদায় করি। এক্ষণে আমার ছালাত বা তাদের ছালাত হয়েছে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় তাদের জন্য উচিৎ ছিল বাকী রাকা‘আতটি একাকী সম্পন্ন করা (বুখারী হা/৯০৮)। এর পরিবর্তে একই জামা‘আতে মূল ইমাম থেকে ভিন্ন আলাদা ইমাম নিয়োগ করায় তাদের ছালাত শুদ্ধ হয়নি। তাছাড়া নারীদের জন্য জুম‘আর ছালাতের ইমামতিও জায়েয নয়। কারণ তাদের জন্য জুম‘আর ছালাত ওয়াজিব নয় (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৫৬৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১১১)। অতএব উক্ত নারীদের জন্য পুনরায় যোহরের ছালাত আদায় করতে হবে। আর যিনি একাকী যোহরের ছালাত আদায় করেছেন, তার ছালাত শুদ্ধ হয়েছে।

প্রশ্ন (৭৬) : ফজরের সুন্নাত ও ফরয ছালাতের মাঝে কোন ছালাত বা যিকর-আযকার রয়েছে কি?

উত্তর : ফজরের সুন্নাতের পর ও ফরয ছালাতের পূর্বে কোন ছালাত নেই (তিরমিযী হা/৪১৯; ইরওয়া হা/৪৭৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৮)। তবে সাধারণ যিকর-আযকার করবে। উল্লেখ্য যে, তিরমিযী ও ছহীহ ইবনু খুযায়মাসহ কিছু হাদীছ গ্রন্থে ফজরের সুন্নাতের পর পঠিতব্য দীর্ঘ একটি যিকির বর্ণিত হয়েছে যার সনদ যঈফ হওয়ায় আমলযোগ্য নয় (তিরযিমী হা/৩৪১৯; ইবনু খুযায়মাহ হা/১১১৯; যঈফাহ হা/২৯১৬)।

প্রশ্ন (৭৭) : ওযূ করার সময় কি সালাম আদান-প্রদান করা যাবে?

উত্তর : ওযূ অবস্থায় সালাম দেওয়া ও সালামের জওয়াব দেওয়া জায়েয। তবে ওযূ শেষে জওয়াব দেওয়া উত্তম (আবুদাউদ হা/১৭; মিশকাত হা/৪৬৭; ছহীহাহ হা/ ৮৩৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৫৫)।

প্রশ্ন (৭৮) : কেউ ছালাতে শেষ বৈঠকে ভুলবশতঃ আত্তাহিইয়াতু..., দরূদ না পড়ে সালাম ফিরিয়ে দিলে তার করণীয় কি?

উত্তর : ছালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ফরয (নাসাঈ হা/১২৭৭; ইরওয়া হা/৩১৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৪৮; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৪৪)। সেজন্য যে ব্যক্তি তাশাহহুদ পাঠ ব্যতীত সালাম ফিরিয়েছে তাকে উক্ত দো‘আ ও দরূদ পাঠ করে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাতে হবে। আর যদি সংশ্লিষ্ট ছালাতের ওয়াক্ত অতিবাহিত হওয়ার পরে মনে পড়ে তাহ’লে পুরো ছালাত আদায় করতে হবে (ইবনুল ক্বাইয়িম, জালাউল আফহাম ১/৩৪৯; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৩০৯, ৩১৫, ৩২৩)। আর কেবল দরূদ ছুটে গেলে সহো সিজদা দেওয়া মুস্তাহাব (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৬৭-৬৮; মির‘আত ৩/২৯৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২৯৭)।

প্রশ্ন (৭৯) : কুরআন তেলাওয়াতকালে বা বক্তব্য প্রদানকালে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আযান দিলে আযানের জবাব দান না বক্তব্য বা তেলাওয়াত চালিয়ে যাওয়া কোনটা যরূরী?

উত্তর : এমতাবস্থায় তেলাওয়াত বা বক্তব্য বন্ধ রেখে আযানের জওয়াব দেওয়াই উত্তম। কেননা আযানের জওয়াব পরে দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আর একাধিক আযান হ’লে একটির জওয়াব দিলেই যথেষ্ট হবে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘আযান শুনলে তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের শব্দগুলোর জওয়াব দিবে অতঃপর তেলাওয়াতে ফিরে আসবে’ (আত-তিবইয়ানু ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন ১২৬ পৃ.)। শায়েখ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘সুন্নাত হ’ল যখন কেউ কুরআন তেলাওয়াত করার সময় আযান শুনবে তখন রাসূলের বাণী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুওয়াযযিনের আযানের জওয়াব দিবে’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৫৮)। শায়েখ উছায়মীন বলেন, এমতাবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়াই উত্তম (লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১২/২২)। অতএব আযান শুনে তেলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জওয়াব দিবে এবং দো‘আ শেষে পুনরায় কুরআন তেলাওয়াত বা বক্তব্য শুরু করবে।

প্রশ্ন (৮০) : কতদিন পর্যন্ত ছালাত ক্বাযা হ’লে উক্ত ছালাত আদায় করে নিতে হবে? যেমন কেউ ১ মাস ছালাত আদায় না করলে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে, না তওবা করলেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর : প্রথমতঃ কেউ ইচ্ছা করে ছালাত ত্যাগ করে থাকলে তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। বরং ছালাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করতে হবে এবং পরবর্তী ছালাতগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। সাথে সাথে অধিকহারে ইস্তিগফার করবে এবং অধিক পরিমাণে নফল ছালাত আদায় করবে যাতে ফরযের পরিপূরক হয়ে যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ১/৪০৪; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৮, ১৯/৮৯)। দ্বিতীয়তঃ কেউ অলসতাবশত বা ব্যস্ততার কারণে ছালাত ছেড়ে থাকলে যখনই সুযোগ পাবে তখনই ক্বাযা ছালাত আদায় করে নিবে। সেটি এক বা একাধিক দিনও হ’তে পারে। আর সেটি ওয়াক্ত অনুপাতে ধারাবাহিক ভাবে আদায় করতে হবে (মুসলিম হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৪; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৪৩৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/১৩৯)।

প্রশ্ন (৮১) : ছালাতের মধ্যে উভয় তাশাহহুদে পঠিতব্য দো‘আ সমূহ পাঠ করার বিধান কি? ঘুমের কারণে যদি প্রথম বা শেষ তাশাহহুদের দো‘আ ছুটে যায়, তাহ’লে ছালাত বাতিল হবে কি?

উত্তর : ছালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ফরয (নাসাঈ হা/১২৭৭; ইরওয়া হা/৩১৯; ইবনু কুদামাহ ১/৩৮৭)। তাছাড়া একদল বিদ্বানের মতে শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠও ফরয বা ওয়াজিব (বুখারী হা/৪৭৯৮; মুসলিম হা/৪০৫; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২৯৯ পৃ.)। সেজন্য যে ব্যক্তি তাশাহহুদ ও দরূদ পাঠ ব্যতীত সালাম ফিরিয়েছে তাকে পুনরায় উক্ত দো‘আদ্বয় পাঠ করে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাতে হবে। আর যদি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে মনে পড়ে, তাহ’লে পুরো ছালাত আদায় করতে হবে। আর অন্যান্য মাসনূন দো‘আগুলো ছেড়ে দিলে সহো সিজদা দিতে হবে না (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৩০৯, ৩১৫, ৩২৩)। উল্লেখ্য যে, প্রথম তাশাহ্হুদ ওয়াজিব। কারো ছুটে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। কেউ সহো সিজদা ছাড়া সালাম ফিরালে এবং ওয়াক্তের মধ্যে মনে পড়লে সহো সিজদা দিয়ে নিবে। আর ওয়াক্তের পরে স্মরণ হ’লে কিছু করার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন (৮২) : ছেলেদের ক্ষেত্রে কত বছর বয়স থেকে ছালাত ফরয হয়? ফরয হওয়ার আগে থেকেই কেউ ছালাত আদায় করলে তার নেকী হবে কি?

উত্তর : ছেলেরা বালেগ হ’লে তাদের উপর ছালাত ফরয হয়ে যায়। যদিও ছালাত আদায়ে অভ্যস্ত করতে ১০ বছর বয়স থেকেই তাদেরকে নিয়মিত ছালাত আদায়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এজন্য সে ছওয়াব পাবে (আবুদাউদ হা/৪৩৯৮; মিশকাত হা/৩২৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫১২)। সাধারণতঃ ১৪-১৫ বছর বয়সে ছেলেরা বালেগ হয়। এক্ষণে বালেগ হওয়ার পূর্বে আদায়কৃত ছালাতসহ অন্যান্য ইবাদতের ছওয়াব সে অবশ্যই পাবে। সাথে সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুকে ইবাদতে সহায়তার জন্য তাদের পিতা-মাতাও ছওয়াব পাবেন (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩১৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩৭৭)। বিদ্বানগণ বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের আমলের ছওয়াব লেখা হয়, কিন্তু কোন গোনাহ লিখা হয় না (মাওয়াহিবুল জলীল ১/৪১৩)। তবে বালেগ হওয়ার পর ছালাত ছেড়ে দিলে তাকে গোনাহগার হ’তে হবে।

প্রশ্ন (৮৩) : আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ে দো‘আ কবুল হয়। এটা কি কেবল মসজিদের ইক্বামতের জন্য খাছ? না গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানরত নারীরাও ইক্বামত দিয়ে ছালাত শুরুর আগ পর্যন্ত উক্ত সময় পাবে?

উত্তর : শরী‘আতের প্রতিটি বিধান পুরুষের পাশাপাশি নারীর জন্যও প্রযোজ্য। সুতরাং উক্ত ফযীলত মসজিদের ইক্বামতের সাথে খাছ নয়, বরং বাড়িতেও নারীরা উক্ত সময়ে দো‘আ করলে দো‘আ কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন ছালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং দো‘আ কবুল করা হয় (আহমাদ হা/১৪৭৩০; ছহীহাহ হা/১৪১৩)।

প্রশ্ন (৮৪) : ছালাত শেষে রুকূ-সিজদা কমবেশী হয়েছে কি-না বা তাশাহহুদ পাঠ করা হয়েছে কি-না এরূপ সন্দেহ হ’লে করণীয় কি?

উত্তর : সন্দেহের ক্ষেত্রে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি এটি কোন রুকনের ক্ষেত্রে হয় যেমন রুকূ, সিজদা বা শেষ বৈঠকের তাশাহহুদ, তাহ’লে সে রাক‘আত পুনরায় আদায় করতে হবে এবং শেষ বৈঠকে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। যদি কোন ওয়াজিবের ক্ষেত্রে সন্দেহ হয়, যেমন প্রথম বৈঠকের তাশাহহুদ, তা‘দীলে আরকান ইত্যাদি, তাহ’লে শেষ বৈঠকে অবশ্যই সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর কোন সুন্নাত আমলের ক্ষেত্রে সন্দেহ হ’লে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরানো মুস্তাহাব (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১১৫-১৮; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৪)।

প্রশ্ন (৮৫) : জনৈক আলেম বলেছেন, ছালাতের মধ্যে অর্থ বুঝে সবকিছু না পড়লে ছালাত হবে না এবং ১০টি নেকীও অর্জিত হবে না। এটা সঠিক কি?

উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। ছালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য বা তেলাওয়াতে ছওয়াব পাওয়ার জন্য অর্থ বুঝা শর্ত নয়। তবে দ্বীনকে সঠিকভাবে বুঝা এবং ছালাতে পূর্ণ মনোযোগ আনার জন্য পঠিত সূরা এবং দো‘আগুলির অর্থ সাধ্যমত জানার চেষ্টা করা কর্তব্য (ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ ১/১৮৭; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৫/২)।

প্রশ্ন (৮৬) : ছালাতের পূর্বে মিসওয়াক করলে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়, এ হাদীছের সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলো যঈফ (আহমাদ হা/২৬৩৮৩; যঈফাহ হা/১৫০৩)। তবে ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহ’লে প্রত্যেক ছালাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৭৬)।

প্রশ্ন (৮৭) : কোন কোন বাস প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের সময় মসজিদে বিরতি দেয়। এমতাবস্থায় জমা করা যাবে কি? না কি প্রতি ওয়াক্তে পড়াই উত্তম হবে?

উত্তর : মুসাফিরের জন্য সফরকালীন যোহর-আছর ও মাগরিব-এশার ছালাত জমা ও কছর করা মুস্তাহাব (বুখারী হা/১১১১)। তবে প্রতি ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের সুযোগ থাকলে জামা‘আতের সাথেও ছালাত আদায় করা যায়। কারণ ছালাত নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত (নিসা ৪/১০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১৩৯-৪০ পৃ.)।

প্রশ্ন (৮৮) : সকাল ও বিকালে যে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লহিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করবে, তাকে আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদা দেওয়া হবে, এই হাদীছটি কী ছহীহ?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে একশ’ বার বলবে, ‘সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহি’ এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহ’লে সৃষ্টিকুলের কেউই তার মত মর্যাদা ও ছওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না’ (আবুদাউদ হা/৫০৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪২৫)। উক্ত তাসবীহটি সংক্ষেপে কেবল ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ শব্দে পাঠ করলেও উক্ত মর্যাদা পাবে (মুসলিম হা/২৬৯২; মিশকাত হা/২২৯৭)। তাছাড়া উক্ত তাসবীহটি যতবার পাঠ করবে জান্নাতে ততটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে (তিরমিযী হা/৩৪৬৪; মিশকাত হা/২৩০৪; ছহীহাহ হা/৬৪)। এছাড়া এই তাসবীহটি যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঠ করবে, তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্য হয় (বুখারী হা/৬৪০৫; মিশকাত হা/২২৯৬)।

প্রশ্ন (৮৯) : ছালাতের মধ্যে বায়ুর চাপ আসলে তা আটকে রেখে ছালাত অব্যাহত রাখা যাবে কি?

উত্তর : পেশাব-পায়খানা বা বায়ুর চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে সেটি মাকরূহ। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (মুসলিম হা/৫৬০; মিশকাত হা/১০৫৭)। বায়ুর অতিরিক্ত চাপ থাকলে ছালাতে খুশূ-খুযূ থাকে না। অতএব এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে প্রয়োজন পূর্ণ করে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২/৪৩৫)। কেবল ওয়াসওয়াসার কারণে ছালাত ছেড়ে দিবে না। বরং নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছালাত অব্যাহত রাখবে। কারণ সন্দেহের দ্বারা পবিত্রতা নষ্ট হয় না (বুখারী হা/১৩৭; মুসলিম হা/৩৬২; মিশকাত হা/৩০৬)।

প্রশ্ন (৯০) : কাপড়ে বা দেহের কোন অংশে সাদা স্রাব লেগে গেলে তা সহ ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, সাদাস্রাব অপবিত্র নয়। তবে এটি বের হ’লে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে এবং ছালাতের জন্য পুনরায় ওযূ করতে হবে। আর মযীর মতই সাদাস্রাব কাপড়ে বা শরীরে লেগে থাকলে ধুয়ে নেওয়া আবশ্যক নয়। বরং সে পোষাক পরেই ছালাত আদায় করা যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২২১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/২৮৪-৮৬)। অবশ্য ইবনু তায়মিয়া ও উছায়মীন বলেন, সাদাস্রাব বের হ’লে ওযূ নষ্ট হবে না। কারণ এর স্বপক্ষে কোন দলীল নেই (ইবনু হাযম, মুহাল্লা ১/২৩৬; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত পৃ. ২৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৫০৩)। তবে জমহূর বিদ্বানের অভিমতই অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ।

প্রশ্ন (৯১) : মাইয়েতের জন্য কতদিন পর্যন্ত জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে?

উত্তর : কেউ মারা গেলে এবং তার জানাযায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে তার কবরকে সামনে রেখে একাকী বা জামা‘আতের সাথে মাইয়েতের জন্য যে কোন দিন জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ একাধিক কবরের উপর জানাযার ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী হা/১৩২১; নাসাঈ হা/২০২২; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা

৩/৩৬৬)। এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ যে সকল কবরের উপর জানাযার ছালাত আদায় করেছেন সেগুলোর কোনটি ছিল একদিন পরে, কোনটি তিনদিন পরে আবার কোনটি সাত বছর পরে। এজন্য বিদ্বানগণ মতপার্থক্য করেছেন। বিশুদ্ধ কথা হ’ল, নিজের জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে যে কোন সময় জানাযা পড়া যেতে পারে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ১৬/৩৪-৩৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৪৬)।

প্রশ্ন (৯২) : ঘুমের ভিতরে স্বপ্নদোষ ছাড়াই ধাতু ক্ষয় হয়, বীর্যের মতো আঠালো তরল পদার্থ বের হয়। আমি নিয়মিত ছালাত আদায় করি। কিন্তু এই শীতের ভিতরে রাতে গোসল করে ছালাত পড়াটা অনেক কষ্টের, শরীরের অবস্থাও খারাপ। দেখা যায় সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই সমস্যা হচ্ছে। আমি গোসল না করে শুধু নাপাক জায়গা পরিষ্কার করে ফজর ছালাত আদায় করতে পারব কি?

উত্তর : সাধারণভাবে স্বপ্নের কথা স্মরণ থাক বা না থাক, ঘুম থেকে উঠে কাপড় ভেজা দেখলে গোসল ফরয হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যে স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ করতে পারছে না, অথচ তার কাপড় (বীর্যপাতের কারণে) ভিজা মনে হয়। জবাবে তিনি বলেন, তাকে গোসল করতে হবে। অতঃপর তাঁকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, যার স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু তার কাপড়ে কোন চিহ্ন দেখতে পায় না। জবাবে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির গোসল করার প্রয়োজন নেই (আবূদাঊদ হা/২৩৬; মিশকাত হা/৪৪১, সনদ ছহীহ)। উম্মু সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের স্বপ্নদোষ হ’লে কি গোসল করতে হবে? নবী (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে (বুখারী হা/১৩০; মিশকাত হা/৪৩৩)। এক্ষণে সেটা যদি চিকিৎসকের মতানুসারে কোন রোগের কারণে বের হয়, তাহ’লে ওযূ নষ্ট হবে, তবে গোসল ফরয হবে না। সেক্ষেত্রে অপবিত্র স্থান ধুয়ে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১২৭; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৬৯)।

প্রশ্ন (৯৩) : জানাযার দো‘আর মধ্যে সন্তানগণ ‘রাবিবরহামহুমা কামা...’ দো‘আটি পাঠ করতে পারবে কি? বিশেষত ইমামতির সময় এরূপ করা যাবে কি?

উত্তর : জানাযার ছালাতে তৃতীয় তাকবীরের পর মাইয়েতের জন্য খাছ দো‘আ পাঠের সময় পিতা-মাতার জন্য উক্ত দো‘আ পাঠ করা যায় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৬৫; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৪৭; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১৬৩)।

প্রশ্ন (৯৪) : ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে নিয়মিত আযান ও ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে আযান বা ইক্বামত দেওয়া যাবে না এবং এক ওয়াক্ত ছালাতও আদায় করা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের জন্য নির্দিষ্ট ওয়াক্ত নির্ধারণ করেছেন (নিসা ৪/১০৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন ছালাতের সময় উপস্থিত হবে তখন একজন আযান দিবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৩)। সুতরাং জেনেশুনে সময়ের পূর্বে আযান দিলে গুনাহগার হ’তে হবে এবং সময়ের পূর্বে ছালাত আদায় করলে পুনরায় উক্ত ছালাত আদায় করতে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৮৯; ইবনু কুদামা, মুগনী ১/২৯৭;বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৪১)।

প্রশ্ন (৯৫) : ছালাত শেষ করার পর যদি বুঝা যায় বা সন্দেহ হয় যে কাপড়ে নাপাকী লেগে আছে, উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : এমতবস্থায় ছালাত পুনরায় পড়তে হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/১৮৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/৩০২; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/৮)। কারণ রাসূল (ছাঃ) অজ্ঞাতসারে নাপাক জুতা পায়ে পরে ছালাত আদায় করছিলেন। জিব্রাঈল (আঃ) ছালাতের মধ্যে তাকে অবহিত করলে জুতা খুলে ফেলেন, কিন্তু ছালাত পুনরায় পড়েননি (আবুদাউদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬)।

প্রশ্ন (৯৬) : উটের গোশত খেলে ওযূ করা আবশ্যক কি? এই বিধানের যৌক্তিকতা জানতে চাই।

উত্তর : উটের গোশত খেয়ে ওযূ করা আবশ্যক (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৫)। শরী‘আতের প্রতিটি বিধানের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য করা মুমিনের দায়িত্ব। হিকমত বা কারণ যাই হৌক তা শরী‘আতের বিধান। তবে বিদ্বানগণ কিছু হাদীছের আলোকে এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, (১) উটের স্বভাব-চরিত্র জিনদের মত। আর ওযূর মাধ্যমে সে স্বভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৪৫৩১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/১০-১২)। (২) উট কখনও হিংস্র প্রাণীর মত কঠোর, হিংস্র ও উদ্ধত হয়ে যায়। আর তার গোশত খাওয়ার কারণে ব্যক্তির মধ্যে উক্ত স্বভাব ছড়াতে পারে। এই প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ওযূর মাধ্যমে। এজন্য শরী‘আতে উটের গোশত খেয়ে ওযূ করতে বলা হয়েছে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/১০-১২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২৩৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, উদ্ধত ও দাম্ভিক ভাব রয়েছে উট মালিকদের মধ্যে, আর নম্রতা ও গাম্ভীর্য রয়েছে বকরী মালিকদের মধ্যে (বুখারী হা/৪৩৮৮; মুসলিম হা/৫২; মিশকাত হা/৬২৫৮)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘দেখ কঠোরতা এবং অন্তরের কাঠিন্য ঐ সব বেদুঈনদের মধ্যে, যারা তাদের উট নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যেখান থেকে শয়তানের শিং দু’টি উদয় হয় (বুখারী হা/৩৩০২; মুসলিম হা/৫৩০৩)। রাসূল (ছাঃ) উটের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, তোমরা উটের আস্তাবলে ছালাত পড় না, কারণ উট শয়তানী উপাদান থেকে সৃষ্ট (আবূদাউদ হা/১৮৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৫১)। তাছাড়াও উটের চর্বি অনেক গাঢ় হয়, যার প্রভাব ওযূর মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

প্রশ্ন (৯৭) : অফিসে কর্মকালে কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে নফল ছালাত বা ইবাদত করা যাবে কি?

উত্তর : অফিসের কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে নফল ছালাত আদায় করা যাবে না। বরং নিজ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককেই ক্বিয়ামতের দিন স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)। রাসূল (ছাঃ) অন্যের উপকারে নিয়োজিত থাকার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, ‘মসজিদে নববীতে একমাস ধরে ই’তিকাফ করার চাইতে আমার মুসলিম ভাইয়ের কোন প্রয়োজন মিটাতে যাওয়া আমার নিকট অধিক পসন্দনীয় (ছহীহাহ হা/৯০৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৬২৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৬)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় সে, যে লোকদের জন্য সর্বাধিক উপকারী (ছহীহাহ হা/৪২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৮৯)।

প্রশ্ন (৯৮) : মহিলাগণ গৃহাভ্যন্তরে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে সরবে তেলাওয়াত করতে পারবে কি?

উত্তর : পারবে। কেননা যে সকল ছালাতে পুরুষ সরবে ক্বিরাআত করে, মহিলারাও সেই সকল ছালাতে সরবে তেলাওয়াত করতে পারে। এ বিধান নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে সমান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈকা মহিলাকে তার পরিবারের ইমামতি করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন (আবুদাঊদ হা/৫৯২; ইরওয়া হা/৪৯৩; ইবনু কুদামাহ, মুগনী, ৩/৩৮. নববী, আল মাজমূ ৩/৩৯০)।

প্রশ্ন (৯৯) : কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হ’লে নফল ছালাত আদায় করতে হবে মর্মে শরী‘আতে কোন নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর : শরী‘আতে এরূপ নির্দেশনা রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) যখন কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তেন, তখন তিনি নফল ছালাতে দন্ডায়মান হ’তেন (আবুদাঊদ হা/১৩১৯, মিশকাত হা/১৩২৫, সনদ হাসান)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) যখন কোন দুঃখ বা সংকটের সম্মুখীন হ’তেন, তখন এই দো‘আটি পড়তেন يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীছ’ (হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্বচরাচরের ধারক! আমি আপনার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি) (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৫৪)।

প্রশ্ন (১০০) : জানাযার ছালাতে অতিরিক্ত কাতার করানোতে কোন কল্যাণ আছে কি?

উত্তর : জানাযার ছালাতে প্রথম কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত কাতার করানোতে কল্যাণ রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন মুসলিমের মৃত্যু ঘটলে তিন সারি বিশিষ্ট জামা‘আত দ্বারা জানাযার ছালাত আদায় সম্পন্ন করা গেলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য (জান্নাত ও মাগফিরাত) ওয়াজিব করে দেন। এ কারণে মালেক বিন হুবায়রাহ জানাযার ছালাতে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা কম দেখলে এ হাদীছ অনুযায়ী তাদেরকে তিন সারিতে দাঁড় করাতেন (আবুদাউদ হা/৩১৬৬; মিশকাত হা/১৬৮৭; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১০০)। এজন্য বিদ্বানগণ জানাযার ছালাতের কাতারকে সর্বনিম্ন তিন কাতারে ভাগ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২১৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৩/১৮৭)।

প্রশ্ন (১০১) : পূর্ণ পর্দার সাথে ছালাত শুরু করার পর যদি কোন নারী দেখে যে তার চুলের কিছু অংশ বের হয়ে গেছে, তাহ’লে তাকে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : যদি অসাবধানতাবশত অল্প পরিমাণ চুল বের হয়ে যায়, তাহ’লে তার ছালাত বাতিল হবে না। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যদি কোন মহিলার অল্প পরিমাণে এবং অল্প সময়ের জন্য চুল বা দেহের কোন অংশ প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহ’লে তাকে ছালাত পুনরায় পড়তে হবে না। আর যদি বেশী পরিমাণে বের হয়ে যায়, তাহ’লে তাকে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/১২৩)। এ ব্যাপারে চার ইমামসহ বিদ্বানদের মাঝে ঐক্যমত রয়েছে (আল-মাজমূ‘ ৪/৭৬; মুগনী ২/২৮৭; আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৭৫)।

প্রশ্ন (১০২) : কাপড় কাচার সময় পরনের কাপড়ে সাবানের ফেনা বা কাপড়ের ময়লা পানির ছিটা লাগলে তা পরে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। সাবানের ফেনা বা কাপড়ের সাধারণ ময়লা অপবিত্র নয়। অতএব তা কাপড়ে বা শরীরে লেগে গেলে শরীর অপবিত্র হয় না বা ওযূ ভঙ্গ হয় না। উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মায়মূনাহ (রাঃ) একই পাত্রে গোসল করেছেন, তা এমন পাত্র ছিল যাতে আটার খামীরের চিহ্ন ছিল (নাসাঈ হা/২৪০; মিশকাত হা/৪৮৫; ইরওয়া হা/২৭)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) মাইয়েতকে বরই পাতা এবং কর্ফুর মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করাতে বলেছেন। যা প্রমাণ করে যে, পানির ফেনা বা সাধারণ ময়লা দ্বারা মিশ্রিত হয়ে গেলে সে পানি নাপাক হয়ে যায় না (আল-‘ইনাইয়া শারহুল হেদায়াহ ১/৭১; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ১/১৯৩; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২৫)।

প্রশ্ন (১০৩) : গোসলের ক্ষেত্রে আগে ওযূ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে হবে, না পা ধোয়া বাদ রেখে গোসল শেষে পা ধুতে হবে?

উত্তর : এক্ষেত্রে দু’টি পদ্ধতিই শরী‘আত সম্মত। কেউ চাইলে পুরো ওযূ করে গোসল করবে (বুখারী হা/২৭২; নাসাঈ হা/৪২০)। আবার কেউ চাইলে ওযূর অন্যান্য অঙ্গ ধৈত করে গোসল করে নিবে এবং অবশেষে পা ধৌত করবে (বুখারী হা/২৪৯; মুসলিম হা/৩১৭)। এক্ষেত্রে যদি কোন ব্যক্তি কাদা-মাটির উপর গোসল করে তাহ’লে শেষে পা ধৌত করবে। আর পাকা স্থানে গোসল করলে ওযূর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তারপর গোসল করে নিবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২১৩)।

প্রশ্ন (১০৪) : আমি রাত সাড়ে ৯-টায় ঢাকা থেকে আবুধাবীতে ট্রানজিট হয়ে পরদিন সকাল ১০-টায় আমেরিকা পৌঁছি। এর মধ্যে সবমিলিয়ে ২৫ ঘণ্টা সময় পার হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ফলে মাঝখানে আমি কেবল ফজরের ওয়াক্ত পেয়েছি। এক্ষণে অন্য ওয়াক্তের ছালাতগুলোর ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

উত্তর : দিন-রাত হয় ২৪ ঘণ্টায়। অতএব ২৪ ঘণ্টার হিসাব করে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে নিবে। দাজ্জাল আগমনের সময়কালে যখন একদিন এক বছরের সমান হবে তখনকার ছালাতের ব্যাপারে ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বলেন, না। তোমরা (দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসাবে) অনুমান করে ছালাত আদায় করবে (মুসলিম হা/২৯৩৭; মিশকাত হা/৫৪৭৫)।

প্রশ্ন (১০৫) : ক্বায়লূলা কখন এবং কতক্ষণ যাবৎ করা সুন্নাত? যোহরের ছালাতের আগে না পরে? হাদীছের আলোকে জানতে চাই।

উত্তর : ক্বায়লূলা তথা দুপুরের পর স্বল্প বিশ্রাম করা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্বায়লূলা কর, কারণ শয়তান ক্বায়লূলা করে না’ (ছহীহাহ হা/১৬৪৭)। আর ক্বায়লূলার সময় হচ্ছে যোহর ছালাতের পর। যেমন ছাহাবীগণ বলেন, জুম‘আর (ছালাতের) পরই আমরা ক্বায়লূলা এবং দুপুরের খাবার গ্রহণ করতাম (বুখারী হা/৯৩৯; মিশকাত হা/১৪০২)। অতএব যোহরের পর থেকে আছরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যেকোন সময় ক্বায়লূলা করা মুস্তাহাব (ইবনু কাছীর, সূরা নূর ৫৮ আয়াতের তাফসীর)।

প্রশ্ন (১০৬) : জানাযার ছালাতে শেষ পর্যায়ে যোগদান করলে তার করণীয় কি?

উত্তর : ছালাত পূর্ণ করবে। ইমামের সাথে যে অংশ পাবে সেগুলো তার জন্য প্রথম অংশ হবে (বুখারী হা/৬৩৫; মিশকাত হা/৬৮৬)। আর এজন্য সে প্রথম তাকবীরের সূরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সূরা মিলাবে অতঃপর দরূদ ও জানাযার দো‘আ পাঠ করবে এবং লাশ উঠানোর পূর্বেই ছালাত সমাপ্ত করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩৯৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৪৯)।

প্রশ্ন (১০৭) : ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় যদি অমনোযোগিতা এসে যায় তাহ’লে সূরা ফাতিহা পুনরায় পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : ছালাত আদায়ে খুশূ‘-খুযূ বজায় রাখতে হবে। এক্ষণে তেলাওয়াতের সময় কারো মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হ’লে বা মনোযোগ না থাকলে পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। বরং যখনই ধারণা করবে যে, তার মনোযোগ নেই, তখনই মনোযোগ ফিরিয়ে আনবে (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৯৯; ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১২০/২০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)।

প্রশ্ন (১০৮) : যদি ইমাম ও মুওয়াযযিন নিয়মিত সুন্নাত ও নফল ছালাত আদায় না করে, তাহ’লে তার পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : তার পিছনে ছালাত আদায়ে দোষ নেই। তবে কেবল ইমাম ও মুওয়াযযিনই নয় প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক বর্ণিত সুন্নাত ও নফল ছালাতগুলো গুরুত্ব সহকারে আদায় করা এবং অবহেলা না করা (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ৬/২)।

প্রশ্ন (১০৯) :ওয়াক্তের মধ্যে প্রবেশের পর ছালাত আদায়ের পূর্বেই যদি ঋতু শুরু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে পবিত্র হওয়ার পর উক্ত ছালাতের ক্বাযা আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : এ বিষয়ে বিদ্বানদের মতপার্থক্য থাকলেও ক্বাযা আদায় করাই কর্তব্য এবং অধিক সতর্কতাপূর্ণ। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ছালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছালাত আদায়ের অবকাশ দিয়েছিলেন। অতএব কোন ছালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে হায়েয শুরু হ’লে উক্ত ছালাতের কাযা আদায় করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৩/৩৩৫; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২১৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২০৫)।

প্রশ্ন (১১০) : নারীরা পর্দা ঘেরা স্থানের মধ্যে থেকে জানাযায় ইমামের সাথে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে কি?

উত্তর : মহিলারা পৃথকভাবে পর্দা বজায় রেখে ইমামের সাথে বা পৃথকভাবে জানাযার ছালাত আদায় করতে পারবে। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩, মিশকাত হা/১৬৫৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮২)। অতএব অন্যান্য ছালাতের মত নারীরা আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দার সাথে ছালাতে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু কোনভাবেই পুরুষদের কাতারে দাঁড়াবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৪৬; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৪/২২)। তবে মহিলাদের কবরে মাটি দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে (বুখারী হা/১২৭৮; মুসলিম হা/৯৩৮)।

 

প্রশ্ন (১১১) : ঈদের ময়দানে ইমাম বা মুছল্লীরা ছালাত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতে পারবে কি?

উত্তর : পারবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় চাচা আববাস, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন আববাস, ফযল বিন আববাস, জামাতা আলী, তার ভাই জা‘ফর, নাতি হাসান-হোসায়েন, গোলাম যায়েদ বিন হারেছাহ, তৎপুত্র উসামা বিন যায়েদ ও আয়মান ইবনে উম্মে আয়মান প্রমুখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের দিন সকালে উচ্চস্বরে তাকবীর ও তাহলীলসহ ঈদগাহ অভিমুখে রওয়ানা হ’তেন এবং এইভাবে ঈদগাহ পর্যন্ত পৌঁছতেন। অতঃপর ছালাত শেষ হ’লে তাকবীর শেষ করতেন (ইরওয়া হা/৬৫০, ৩/১২৩ পৃ.; দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই ‘ঈদগাহে গমন’ অনুচ্ছেদ ৫১-৫২ পৃ.)।

প্রশ্ন (১১২) : ইমাম কি তাকবীর পাঠের মাধ্যমে ঈদের খুৎবা শুরু করবেন?

উত্তর : হাম্দ ও ছানার মাধ্যমেই ঈদের খুৎবা শুরু করবে। তাকবীর পাঠের মাধ্যমে খুৎবা শুরুর ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন ওক্ববা (রাঃ) থেকে যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটি তাঁর নিজস্ব আমল (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২২/৩৯৪-৯৫)।

প্রশ্ন (১১৩) : ছালাত আদায় করে না, কিন্তু আচার-ব্যবহার এবং মানুষ হিসাবে অনেক ভালো, এরূপ কারো সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা ও ওঠা-বসা করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ছালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয। ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরী। এক্ষণে কেউ ছালাত পরিত্যাগ করলে তাকে নছীহত করার উদ্দেশ্যে তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন’ (মুমতাহিনা ৬০/০৮)। সুতরাং ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এমন ব্যক্তির সাথে সুন্দর ব্যবহার করা বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখায় বাধা নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে যেন তার দ্বারা সে নিজেই প্রভাবিত হয়ে ভুল পথে না যায়।

প্রশ্ন (১১৪) : ঈদের চাঁদ দেখার পর এবং ঈদের দিন সকালে ছালাতের পূর্ব পর্যন্ত মসজিদের মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় নিদর্শন প্রচারের জন্য এবং মুছল্লীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য চাঁদ দেখার পর থেকে মাইকে তাকবীর পাঠ করা যাবে। ইমাম বা মুওয়াযযিন মাঝে-মধ্যে মাইকে তাকবীর পাঠ করে থেমে যাবে আর মুছল্লীরা একাকী পাঠ করবে। ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বাজারে গিয়ে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন এবং লোকেরা তা শুনে নিজেরা পাঠ করতেন। এতে বাজার তাকবীর ধ্বনিতে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (ইরওয়া হা/৬৫১)। অনুরূপ ওমর (রাঃ) তাঁর তাঁবুতে তাকবীর ধ্বনি দিতেন তাঁর তাকবীর শুনে মিনাবাসীরা তাকবীর দিত। এতে গোটা মিনা গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (ফাৎহুল বারী হা/৯৭০-এর পূর্বে ‘মিনার দিনগুলির তাকবীর’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (১১৫) : ঋতুবতী মহিলাদের জন্য ঈদের ময়দানে গমন করা কি আবশ্যিক?

উত্তর : ঈদের ছালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে নারীদের জন্য মাঠে গমন করা মুস্তাহাব (নববী, শরহ মুসলিম হা/৮৯০-এর আলোচনা ৬/১৭৮; আল-মাজমূ‘ ৫/৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/২১০)। আর ঋতুবতী মহিলারাও ঈদের ময়দানে যেতে পারেন। তবে তারা ছালাতের কাতারে না দাঁড়িয়ে পিছনে বসে থাকবেন। অন্যান্য নারীদের সাথে ঈদের তাকবীর ধ্বনি, খুৎবা ও অন্যান্য দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবেন (মুসলিম হা/৮৯০; আলবানী, ছালাতুল ঈদায়েন ১১-১২ পৃ.)।

প্রশ্ন (১১৬) : ইক্বামতের কোন পর্যায়ে মুছল্লীরা দাঁড়াবে? আমাদের এলাকায় ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ’ বলার পর সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে। এটা সঠিক কি?

উত্তর: মুছল্লীদের দাঁড়ানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময়সীমা হাদীছে বর্ণিত হয়নি। যখনই ইক্বামত শুরু হবে, তখনই মুছল্লীরা দাঁড়াবে। দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট সময়সীমার ব্যাপারে যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো ইমামগণের অভিমত মাত্র (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৬৭; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৬)। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে আসার পূর্বে ইক্বামত দেওয়া হ’ত এবং ছাহাবীগণ দাঁড়িয়ে কাতার ঠিক করে নিতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসে তাঁর স্থানে দাঁড়াতেন। পক্ষান্তরে আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাতের ইক্বামত হ’লে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না’ (বুখারী হা/৬৩৬, ৬৩৮)। উভয় হাদীছের মধ্যে সমন্বয় করে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উক্ত নিষেধাজ্ঞা ছিল মূলতঃ মুছল্লীদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা কষ্টকর হবে- এই দৃষ্টিকোণ থেকে’ (ফাৎহুল বারী ২/১৪১ ও ১৪২ পৃঃ, ‘আযান’ অধ্যায়-১০; অনুচ্ছেদ-২২)।

প্রশ্ন (১১৭) : ওযূসহ ফরয গোসল করার পর লজ্জাস্থানে একাধিকবার হাত লেগে গেছে। এমতাবস্থায় পুনরায় ওযূ করতে হবে কি?

উত্তর: সাধারণভাবে লজ্জাস্থানে স্পর্শে ওযূ ও ছালাত নষ্ট হয় না (আবুদাঊদ হা/১৮২; মিশকাত হা/৩২০)। যে সকল হাদীছে লজ্জাস্থান স্পর্শে ওযূ নষ্ট হবে বা ওযূ করা আবশ্যক হবে বলা হয়েছে (আবুদাঊদ হা/১৮১; মিশকাত হা/৩১৯)। তার ব্যাখ্যা হ’ল, উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করা (টীকা দ্র. মিশকাত হা/৩২০)। সুতরাং সাধারণ স্পর্শে ওযূ ভঙ্গ হবে না এবং পুনরায় ওযূ করতে হবে না।

প্রশ্ন (১১৮) :এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আদায়কারীর কোন বেতন নির্ধারণ না করে আদায়কৃত অর্থের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মজুরী হিসাবে নির্ধারণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর: পারিশ্রমিক হিসাবে আদায়কারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অনুরূপ অর্থ নিতে পারবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তিকে যদি আমরা কোন কাজে নিযুক্ত করি এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক প্রদান করি। অতঃপর যদি সে তার চাইতে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তবে সেটি হবে খেয়ানত’ (আবুদাঊদ হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮)।

প্রশ্ন (১১৯) :পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতের পর নিয়মিতভাবে কোন দো‘আ যেমন সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে তবে তা বিদ‘আত হিসাবে গণ্য হবে কি?

উত্তর : কুরআন বা ছহীহ হাদীছে যে সকল দো‘আ পাঠের নির্দিষ্ট সময়, কাল বা পাত্র উল্লেখ করা হয়নি সে দো‘আগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে পাঠ করা যাবে না। কেউ যদি কোন দো‘আ বা যিকিরকে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ করাকে নিয়ম বানিয়ে নেয়, তাহ’লে তা বিদ‘আত হবে। বরং যে সকল দো‘আ আমভাবে এসেছে সেগুলো নিয়ম না বানিয়ে পাঠ করবে (ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২৯-৩১)।

প্রশ্ন (১২০) : ছালাতরত অবস্থায় মোবাইলে রিং বেজে উঠলে করণীয় কি?

উত্তর : মোবাইল বন্ধ করেই ছালাতে আসবে। ভুলবশতঃ মোবাইল বন্ধ না করে ছালাত শুরু করলে এবং ছালাতরত অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা যাবে। কেননা ছালাতে বিঘ্ন ঘটায় এমন কাজ ছালাত অবস্থায় প্রতিহত করা যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দরজা বন্ধ করে নফল ছালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় আমি এসে দরজায় শব্দ করলে তিনি আমাকে দরজা খুলে দিয়ে পুনরায় ছালাতে ফিরে গেলেন। দরজা ছিল ক্বিবলার দিকে (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০৫)।

প্রশ্ন (১২১) : রাতে বিতর ছালাত আদায় করার পর ক্বিয়ামুল লায়েল বা তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : বিতর হ’ল রাত্রির শেষ ছালাত (বুখারী হা/৯৯৮; মিশকাত হা/১২৫৮)। এক্ষণে কেউ রাতের প্রথম অংশে বিতরের ছালাত আদায় করে নিলে সে ক্বিয়ামুল লায়েল বা তাহাজ্জুদ পড়তে পারে। তবে দ্বিতীয়বার আর বিতর পড়বে না। কেননা এক রাতে দু’বার বিতর পড়া যায় না (আবুদাঊদ হা/১৪৩৯; আহমাদ হা/১৬৩৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৬৭; নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৫১২)।

প্রশ্ন (১২২) : বাসে বা ট্রেনে ভ্রমণকালে কারো স্বপ্নদোষ হ’লে সফর অবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

উত্তর : যদি ওয়াক্তের মধ্যে অবতরণ করে গোসল করে ছালাত আদায়ের সুযোগ থাকে, তাহ’লে তাই করবে। নইলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (নিসা ৪/৪৩; আবুদাঊদ হা/৩৩৪; ইরওয়া হা/১৫৪)।

প্রশ্ন (১২৩) : ফরয ছালাত আদায়কালে নিষিদ্ধ সময় চলে আসলে ছালাত চালিয়ে যেতে হবে না ছেড়ে দিতে হবে?

উত্তর: ছালাত সম্পন্ন করবে। কারণ নিষিদ্ধ সময় কেবল নফল ছালাতের সাথে সম্পর্কিত। অতএব ফরয ছালাতের ক্বাযা বা মসজিদে প্রবেশকালীন ছালাত বা ত্বাওয়াফের ছালাত নিষিদ্ধ সময়েও আদায় করতে পারবে (মুসলিম হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৩; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১১/৪২)।

প্রশ্ন (১২৪) : পায়ের ব্যথার কারণে মসজিদের টাইলসের উপর ছালাত আদায় কষ্টকর হ’লে পৃথক জায়নামাযে (মুছাল্লায়) ছালাত আদায় করায় বাধা আছে কি?

উত্তর : অসুস্থতার কারণে পৃথক জায়নামায (মুছাল্লা) ব্যবহার করে ছালাত আদায় করা যাবে। এতে কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৭৯)।

প্রশ্ন (১২৫) :ক্বিয়ামতের আলামত হ’ল, ‘লোকেরা মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করবে কিন্তু সেখানে দু‘রাক‘আত ছালাত আদায় করবে না’- মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে, লোকেরা মসজিদের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করে চলে যাবে। অথচ তাতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে না এবং পরিচিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে সালাম প্রদান করা হবে না (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩২৬; ছহীহাহ হা/৬৪৯)।

প্রশ্ন (১২৬) : যে রোগীর জন্য দাঁড়ালে বসা কষ্টকর হয়, বসলে দাঁড়াতে কষ্টকর হয়, তিনি কীভাবে ছালাত আদায় করবেন? তিনি কি তার সম্পূর্ণ ছালাতে বসে পড়বেন; নাকি দাঁড়িয়ে পড়বেন?

উত্তর : যিনি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে সক্ষম, কিন্তু বসতে অক্ষম, তিনি দাঁড়িয়েই ছালাত আদায় করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)। তিনি রুকূ ও সিজদা দাঁড়ানো অবস্থাতেই ইশারায় আদায় করবেন। রুকূতে সামান্য মাথা নোয়াবেন এবং সিজদাতে কিছু বেশী মাথা নোয়াবেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১০৭)। কেননা ‘আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৫)। আর দাঁড়াতে অক্ষম হ’লে, বসেই ছালাত আদায় করবেন। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘যখন রাসূল (ছাঃ) ভারী হয়ে গেলেন, তখন তিনি অধিকাংশ (নফল) ছালাত বসে পড়তেন’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৯৮)।

উল্লেখ্য যে, সাময়িক অক্ষমতা, ক্ষতি বৃদ্ধির আশংকা, অতি কষ্টসাধ্য হওয়া সবই অক্ষমতার পর্যায়ভুক্ত (নববী, রওযাতুত ত্বলিবীন ১/২৩৪; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/১০৬)। যেমন রাসূল (ছাঃ) একদা ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তার ডান পাঁজরে আঁচড় লাগে। আনাস বলেন, এ সময় তিনি কোন এক ছালাত আমাদের নিয়ে (ব্যথার কারণে) বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে বসে আদায় করি (বুখারী হা/৭৩২)। এই হাদীছে সুস্পষ্ট যে, তিনি দাঁড়াতে অক্ষম ছিলেন না। কিন্তু দাঁড়ানো কষ্টসাধ্য হওয়ায় তিনি বসে ছালাত আদায় করেন। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) একদা ইমরান বিন হুছায়েনকে বলেন, তুমি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় কর। যদি না পার, বসে আদায় কর। যদি তা-ও না পার তবে শুয়ে আদায় কর (বুখারী হা/১১১৭; মিশকাত হা/১২৪৮)।

অন্য হাদীছে এসেছে রাসূল (ছাঃ) তাঁর এক অসুস্থ ছাহাবীকে দেখতে গেলেন। এমতাবস্থায় আমি তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি তার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন যে, তিনি কাঠের উপর কপাল রেখে ছালাত আদায় করছেন (কাঠের উপর সিজদা করছেন)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইশারা করলে তিনি কাঠটি ছুঁড়ে ফেলে একটি বালিশ নিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি বালিশ সরিয়ে দাও এবং যদি পার মাটিতে সিজদা কর; অন্যথায় ইশারা করে আদায় কর। আর রুকূর তুলনায় সিজদায় মাথা কিছুটা বেশী নীচু কর’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৩০৮২; ছহীহাহ হা/৩২৩)। সুতরাং শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছালাতের যে কোন রুকন সাধ্য মোতাবেক দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে কিংবা ইশারায় আদায় করা যাবে। এতে কোন বাধা নেই।

প্রশ্ন (১২৭) : ছালাতের জন্য ওযূর পানি বা তায়াম্মুমের মাটি পাওয়া না যাওয়ায় সেভেন আপ (কোল্ড ড্রিংক্স) দিয়ে ওযূ করেছি? এটা জায়েয হয়েছে কি?

উত্তর: কোল্ড ড্রিংক্সে পানির রং, স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যায়। অতএব এতে ওযূ করা জায়েয হবে না। এতে ওযূ করে ছালাত আদায় করলে তাকে পুনরায় পবিত্র পানিতে ওযূ করে ছালাত আদায় করতে হবে (মুগনী ১/১১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২৬)। উল্লেখ্য যে, পবিত্র পানি বা তায়াম্মুমের মাটি পাওয়া না গেলে বাধ্যগত অবস্থায় ওযূ বা তায়াম্মুম ছাড়াই ছালাত আদায় করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১৮৪)।           

প্রশ্ন (১২৮) : আমরা সিঙ্গাপুরে কাজ করি। সেখানে জুম‘আর দিনে ছুটি নেই। খুব অল্প সময়ের জন্য ছুটি দেওয়া হয়। মসজিদে গেলে সময় থাকে না। আমরা যেখানে কাজ করি সেখানে সবাই মিলে আযান দিয়ে জুম‘আ আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : জুম‘আ যেমন সমষ্টিগত একটি ইবাদত, তেমনি এটা ইসলামের বড় নিদর্শন। সুতরাং যত্রতত্র জুম‘আ কায়েম করা যাবে না। বরং মসজিদে গিয়ে জুম‘আর ছালাত আদায় করবে। সম্ভব না হ’লে যোহরের ছালাত আদায় করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/১৭৮)। তবে অত্র এলাকায় মসজিদ না থাকলে সবাই মিলে সাময়িকভাবে কোন গৃহে বা স্থানে একজনের আযান ও খুৎবা প্রদানের শর্তে জুম‘আ ক্বায়েম করতে পারে (ফাতাওয়া লাজানা দায়েমাহ ৮/২১০)।

প্রশ্ন (১২৯) : বাড়িতে মসজিদ হিসাবে একটি ঘরকে ছালাতের স্থান হিসাবে নির্দিষ্ট রেখে নিয়মিতভাবে সেখানে আযান দিয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে মসজিদে ছালাত আদায়ের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : সক্ষম পুরুষের জন্য এটি জায়েয হবে না। কারণ ছালাত একটি সমষ্টিগত ইবাদত, যা মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে আদায় করা আবশ্যক (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/২০৫; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৩২৩)। তবে মহিলারা বাড়ির ভিতরে একটি কক্ষ নির্বাচন করে সেখানে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতে পারে বরং সেটি অধিকতর শ্রেয় (আহমাদ হা/২৭১৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪০)।

প্রশ্ন (১৩০) : ছালাতের মধ্যে ক্রন্দন করার বিধান কি? রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এভাবে ক্রন্দন করার দলীল পাওয়া যায় কি?

উত্তর : ছালাতে ক্রন্দন করা অধিক আল্লাহভীরু সৎকর্মশীল লোকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরও বৃদ্ধি পায়’ (ইসরা ১৭/১০৯)। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম ছালাতে ক্রন্দন করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর বর্ণনা করেন, আমি একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। এমতাবস্থায় তিনি ছালাত আদায় করছিলেন এবং ফুটন্ত পানির ডেগের শব্দের ন্যায় কাঁদছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, চাক্কীর শব্দের ন্যায় শব্দ করে কাঁদছিলেন (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১০০০)। আবুবকর (রাঃ) ছালাতে তেলাওয়াতকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন (বুখারী হা/৬৬৪, ৬৮২; মুসলিম হা/৪১৮)। আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ বলেন, আমি ওমরের পিছনে ফজরের ছালাত আদায় করছিলাম। আমি ছিলাম সব পিছনের কাতারে। তিনি সূরা ইউসুফের ৮৬ আয়াত পাঠ করছিলেন আর কাঁদছিলেন (বুখারী ৩/২০৮; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬৫)। ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত মর্মে অধ্যায় রচনা করেছেন। তিনি বলেন, باب إِذَا بَكَى الإِمَامُ فِى الصَّلاَةِ (ইমাম যখন ছালাতে ক্রন্দন করেন সম্পর্কে অধ্যায়)। অতএব আল্লাহর ভয়ে ছালাতে কান্না করা সালাফদের আমল দ্বারা প্রমাণিত (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৩৮)। তবে দুনিয়াবী কোন কারণে ছালাতের ভিতর আওয়ায করে ক্রন্দন করলে ছালাত বিনষ্ট হয়ে যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪১)।

প্রশ্ন (১৩১) : আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব প্রতিদিন ফজরের ছালাতে রুকূর পর হাত তুলে কুনূত পাঠ করে। এভাবে নিয়মিতভাবে করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ফজরে নিয়মিত কুনূত পাঠ করা সমীচীন নয়। কারণ ফজরে নিয়মিত কুনূত পাঠ করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ এবং মুনকার (যঈফাহ হা/১২৩৮)। বরং রাসূল (ছাঃ) যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তখন ফরয ছালাতে কুনূত পাঠ করেছেন। কখনও একমাস ব্যাপীও কুনূত পাঠ করেছেন (বুখারী হা/১০০২)। তবে একে কেবল ফজর ছালাতের সাথে খাছ করা যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৪২-৪৫)। আর কোন ইমাম যদি ফজরের ছালাতে নিয়মিত কুনূত পাঠ করেন তাহ’লে তার পিছনে মুছল্লীরা তাকে অনুসরণ করে ছালাত আদায় করায় বাধা নেই (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)। তবে ইমামকে সঠিক বিষয়টি জানানো মুছল্লীদের দায়িত্ব। কারণ কতিপয় বিদ্বান ফজরে নিয়মিত কুনূত পাঠ করাকে বিদ‘আত বলেছেন (তিরমিযী হা/৪০২; মিশকাত হা/১২৯২; ইরওয়া হা/৪৩৫)।

প্রশ্ন (১৩২) : মহিলাদের জন্য বাড়িতে থাকা অবস্থায় ফরয ছালাত জামা‘আতে না একাকী পড়া উত্তম?

উত্তর : বাড়িতে একাধিক মহিলা থাকলে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা উত্তম। উম্মে সালামা ও আয়েশা (রাঃ) জামা‘আতের সাথে বাড়িতে ছালাত আদায় করতেন এবং তাঁরা কাতারের মাঝে দাঁড়িয়ে ইমামতি করতেন (বায়হাক্বী হা/৫৩৫৫; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪৯৫৩; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১৫৩-৫৪ পৃ.)। আর কোন মহিলা পর্দা সহকারে মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না (আবুদাউদ হা/৫৬৭; মিশকাত হা/১০৬২)। কারণ এর মাধ্যমে সেখানে তারা ইসলামের বিধি-বিধান এবং আদব -আখলাক শিখতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২১৩)।

প্রশ্ন (১৩৩) : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে মসজিদে শিরনী বা শিন্নী দেওয়া হ’লে তা খাওয়া যাবে কি?

উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে শিরনী নামে কোন পরিভাষা নেই। বরং কেউ মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজন মাইয়েতের পরকালীন মুক্তির জন্য দো‘আ করবে এবং ছাদাক্বা করবে। যা গোপনে করাই উত্তম। আর প্রকাশ্যে করলে ফকীর-মিসকীনরাই তার বেশী হকদার (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৪/৩০৬; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৯/০২)। মসজিদে মাইয়েতের জন্য শিন্নী দেওয়ার প্রথা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের যুগে ছিল না। অতএব এগুলি পরিতাজ্য।

প্রশ্ন (১৩৪) : আমাদের মসজিদে জুম‘আর পূর্বে বয়ান করা হয়। তারপর সুন্নাত ছালাতের জন্য সময় দেওয়া হয়। এটা কি শরী‘আতসম্মত?

উত্তর : এটি শরী‘আতসম্মত নয়। কারণ খুৎবার পূর্বে কোন বয়ান নেই। এতে দু’টি বিদ‘আত রয়েছে- ১. জুম‘আর সুন্নাতী খুৎবার পূর্বে একটি বিদ‘আতী খুৎবা চালু করা এবং ২. জুম‘আর পূর্বে সুন্নাতে রাতেবা চালু করা। (দারব ১৩/২৭৮; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)। বরং খুৎবার আগ পর্যন্ত মুছল্লী যত রাক‘আত খুশী নফল ছালাত আদায় করতে পারে। আর কেউ খুৎবা অবস্থায় উপস্থিত হ’লে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ পড়ে বসবে (মুসলিম হা/৮৭৫)।

প্রশ্ন (১৩৫) : স্কুল মাঠে যেখানে ঈদের ছালাত অনুষ্ঠিত হয়, তার সামনে বা কোন পার্শ্বে শহীদ মিনার থাকলে সেখানে ঈদের ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না এবং তার উপর বসো না (মুসলিম হা/৯৭২; মিশকাত হা/১৬৯৮)। শহীদ মিনার সরাসরি কবর নয়। সেটাকে কবর মনে করে শ্রদ্ধা জানানো শিরক। অতএব সামনে বা পার্শ্বে শহীদ মিনার থাকলে ছালাতের ক্ষতি হবে না।

প্রশ্ন (১৩৬) : আমি ছালাতরত অবস্থায় যদি বুঝতে পারি যে আমার জুতাসহ মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে, তাহ’লে আমি কি ছালাত ছেড়ে চোরকে প্রতিহত করতে পারব?

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় কোন মুছল্লী তার জুতা চুরি হয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারলে ছালাত ছেড়ে নিজের সম্পদ রক্ষা করবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ০৮/০২)। অতঃপর ছালাতে দাঁড়িয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) জান ও মালের ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য ছালাতে সাপ বা বিচ্ছু মারার বৈধতা দিয়েছেন (আবুদাউদ হা/৯২১; মিশকাত হা/১০০৪, ছহীহুল জামে‘ হা/১১৪৭)। ক্বাতাদা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল কোন মুছল্লী যদি বুঝতে পারে যে, শিশু কূপে পড়ে যাচ্ছে তাহ’লে সে কি করবে? তিনি বললেন, ছালাত ছেড়ে তাকে রক্ষা করবে। আর যদি তার জুতা চুরি হ’তে দেখে তাহ’লে কী করবে? তিনি বললেন, ছালাত ছেড়ে দিবে এবং সম্পদ রক্ষা করবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৩২৯১)।

প্রশ্ন (১৩৭) : মাগরিবের ছালাতের সুন্নাত শেষ করার পর নিয়মিতভাবে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : মাগরিব ছালাতের পরে দু’রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবা রয়েছে। এর পরে কেউ নফল ছালাত আদায় করতে চাইলে নিয়মিতভাবে নয়, বরং অনিয়মিতভাবে দুই দুই রাক‘আত করে অনির্ধারিত রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতে পারে (শাওকানী, নায়লুল আওতার ৩/৬৮; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২)। রাসূল (ছাঃ) মাঝে মধ্যে মাগরিব থেকে এশা অবধি অনির্ধারিত রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন (তিরমিযী হা/৬০৪; মিশকাত হা/৬১৬২; ছহীহাহ হা/২৫৮৫)।

প্রশ্ন (১৩৮) : ছালাতের সময় মুওয়াযযিন বা যিনি ইক্বামত দিবেন তাকে ইমামের পিছনে দাঁড়ানো আবশ্যক কি?

উত্তর : মুওয়াযযিন বা যিনি ইক্বামত দিবেন তাকে ইমামের পিছনে দাঁড়ানো আবশ্যক নয়। তবে দায়িত্বশীল হিসাবে তিনি ইমামের পিছনে দাঁড়াতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞজন (ছালাতে) আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। তারপর দাঁড়াবে তাদের নিকটবর্তী স্তরের লোক। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চস্বরে বললেন। আর তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না (মুসলিম হা/৪৩২; মিশকাত হা/১০৮৯)।

প্রশ্ন (১৩৯) : ভুলে গিয়ে ফরয গোসল না করেই কয়েক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেছি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : কেউ অপবিত্র অবস্থায় ছালাত আদায় করলে তার ছালাত হবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাক-পবিত্রতা ছাড়া ছালাত এবং হারাম ধন-সম্পদের দান-খয়রাত কবূল হয় না (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১)। তিনি আরো বলেন, যার ওযূ ছুটে গেছে তার ছালাত কবূল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওযূ করে (বুখারী, মিশকাত হা/৩০০)। এক্ষণে যে কয় ওয়াক্ত ছালাত পবিত্রতা ব্যতীত আদায় করা হয়েছে সেগুলো পুনরায় আদায় করতে হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২৩০)।

প্রশ্ন (১৪০) : কেউ ১ ওয়াক্ত ছালাত ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করলে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে বলে জানি। কিন্তু কেউ এরূপ কাজ করে আবার ফিরে আসলে তার জন্য কি তওবা, কালেমা পাঠ ও গোসল করা আবশ্যক হবে?

উত্তর : ছালাতের ফরয হুকুমের প্রতি বিশ্বাস রেখে কেউ অলসতাবশত ছালাত পরিত্যাগ করলে সে কবীরা গুনাহগার হবে। যা থেকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। আর এর মাধ্যমে আমলগতভাবে সে কুফরী কাজ করলেও বিশ্বাসগত- ভাবে সে কাফির হবে না, যদিও সে নিয়মিত ছালাত আদায় না করে বা এ ব্যাপারে সীমালংঘনকারী হয়। কেননা সে ছালাতের ফরয হুকুম অস্বীকারকারী নয় (ইবনু রুশদ, আল-বায়ান ওয়াত তাহছীল ১৭/২৩৩)। আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘সারকথা হ’ল, ছালাত ত্যাগ করা ব্যক্তি ফাসেক। আর তার পরিণতির বিষয়টি আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন এবং চাইলে ক্ষমা করবেন (আলবানী, ছহীহাহ হা/৩০৫৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; হুকমু তারিকিছ ছালাত ১/৫১)। অতএব ছালাত পরিত্যাগকারীর বিধান সরাসরি কাফিরের মত নয়। তাই তার জন্য তওবা করে নিয়মিত ছালাত আদায় করাই যথেষ্ট হবে।

প্রশ্ন (১৪১) : জনৈক বক্তা বলেন, মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে যেমন ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি বাড়িতে সুন্নাত ছালাত আদায় করলে ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত বক্তব্য শব্দে শব্দে সঠিক নয়, তবে মর্মের দিক দিয়ে সঠিক। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, বাড়িতে একাকী নিভৃতে সুন্নাত বা নফল ছালাত আদায় করলে অনুরূপ ছওয়াব পাওয়া যায়, যেরূপ ফরয ছালাত একাকী আদায়ের চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করলে পাওয়া যায় (ছহীহাহ হা/৩১৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৫৩)। তাছাড়া সাধারণভাবে নফল ছালাত বাড়িতে আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তির ফরয ছালাত ছাড়া অন্যান্য ছালাত আমার এ মসজিদে আদায়ের চাইতে তার নিজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম (মুসলিম হা/৭৮১)। তবে বাড়ীতে সুন্নাত পড়ার সুযোগ না থাকলে মসজিদেই সুন্নাত পড়বে।

প্রশ্ন (১৪২) : ছালাত আদায়কালে লজ্জাস্থানে হালকা পানি অনুভব হ’লে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে কি?

উত্তর : লজ্জাস্থান থেকে হালকা পানি বের হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ। সুতরাং ওযূ করার পর কারো লজ্জাস্থান থেকে কোন তরল পদার্থ বের হ’লে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় সে ছালাত ছেড়ে দিয়ে লজ্জাস্থান ধুয়ে পুনরায় ওযূ করবে এবং কাপড়ের উপরে পানির ছিটা দিয়ে ছালাত আদায় করবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১৪৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২২/৬৬-৬৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৩১)।

প্রশ্ন (১৪৩) : কাতারের ডানে দাঁড়ানোর বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?

উত্তর : ছালাতে কাতারের ডানে দাঁড়ানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীছগুলি যঈফ (তামামুল মিন্নাহ ১/২৮৮; যঈফ আবুদাউদ হা/১০৪; সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, টেপ নং ১৬৯)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, একাধিক মুছল্লী থাকা অবস্থায় ইমামের ডানে দাঁড়ালে বিশেষ ফযীলতের কোন দলীল নেই (ফাৎহুল বারী ২/২১৩; বিস্তারিত: মারবিয়াতু ফী ফাযলে মায়মানাতিছ ছাফ গ্রন্থ)। তবে একজন মুক্তাদী হলে তাকে ইমামের ডান পাশে দাঁড়াতে হয় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১০৬)। সে হিসাবে পিছনের কাতার ইমাম বরাবর ডানে-বামে সোজা রেখে ডান দিকে কিছুটা বেশী রাখা যায়।

প্রশ্ন (১৪৪) : ছালাত অবস্থায় কোন কারণে ইমাম পরিবর্তন হ’লে সহো সিজদা ওয়াজিব হবে কি?

উত্তর : যেকোন ওযরে ছালাতের ভিতর প্রথম ইমাম মুছল্লীদের মধ্য হ’তে পিছন থেকে যে কাউকে ইমাম বানাতে পারেন। ওমর (রাঃ) ছালাতে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হ’লে তিনি আব্দুর রহমান বিন ‘আওফকে ইমাম বানিয়ে পিছনে সরে যান এবং আব্দুর রহমান ছালাত শেষ করেন। কিন্তু তিনি সহো সিজদা করেননি (বুখারী হা/৩৭০০; ফাৎহুল বারী ৭/৬৪)। অতএব ছালাতে ইমাম পরিবর্তনের জন্য কোন সহো সিজদা দিতে হবে না।

প্রশ্ন (১৪৫) : সকাল বেলার যিকরগুলো ফজরের ছালাতের পূর্বে বা ছালাতের পর হাঁটাহাঁটির সময় করা যাবে কি? অনুরূপভাবে সন্ধ্যার যিকরগুলো বাদ এশা করা যাবে কি?

উত্তর : সকাল ও সন্ধ্যার যিকিরগুলো পাঠের সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য মত হ’ল, সন্ধ্যার যিকিরসমূহ আছরের পর থেকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত এবং সকালের যিকিরসমূহ ফজর উদয় থেকে ইশরাকের ছালাতের ওয়াক্ত পর্যন্ত পাঠ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তোমার গোনাহের জন্য ক্ষমা চাও এবং সন্ধ্যায় ও সকালে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা কর’ (গাফের ৪০/৫৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর সন্ধ্যায় ও সকালে’ (রূম ৪০/১৭)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা কর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে’ (ক্বাফ ৫০/৩৯)। অন্য আয়াতে রয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর মনে মনে কাকুতি-মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়। আর তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। সবগুলো আয়াতের সমন্বয় করে বিদ্বানগণ বলেন, সকাল-সন্ধ্যার যিকির ও দো‘আসমূহ পাঠের সময়সীমার ব্যাপারে প্রশস্ততা রয়েছে। তবে উত্তম সময় হ’ল ফজর ও মাগরিব ছালাতের পর (নববী, আল-আযকার ১/১৫৭; ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২৪/০২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/২০১)।

প্রশ্ন (১৪৬) : প্রতি ওয়াক্ত ছালাত বা যেকোন নফল ছালাত শুরুর পূর্বে বিশেষ কোন দো‘আ আছে কি?

উত্তর : নফল বা ফরয কোন ছালাত শুরুর পূর্বে বিশেষ কোন দো‘আ বর্ণিত হয়নি। বরং ছালাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ছানা হিসাবে বিভিন্ন দো‘আ বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর কোন একটি পাঠ করলে যথেষ্ট হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/১৬৫, ৮/১৬৭, ১০/১২)।

প্রশ্ন (১৪৭) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, যোহরের সুন্নাত বাড়ীতে আদায় করলে ২ রাক‘আত এবং মসজিদে আদায় করলে ৪ রাক‘আত পড়তে হবে। উভয়ের নেকী সমান হবে। একথার সত্যতা আছে কি?

উত্তর : এরূপ বক্তব্য সঠিক নয়। বরং যোহরের সুন্নাত বাড়ীতে বা মসজিদে যেখানেই হোক চার বা দুই রাক‘আত আদায় করবে (বুখারী হা/৯৩৭; মিশকাত হা/১১৬০; আবুদাউদ হা/১২৬৯; মিশকাত হা/১১৬৭)। উভয় আমলই শরী‘আত সম্মত।

প্রশ্ন (১৪৮) :জামা‘আতে ছালাতের মধ্যে ওযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে বিশেষত সামনের কাতারে যেসব ব্যক্তি থাকেন তাদের পক্ষে ছালাত ছেড়ে ১০-১৫ কাতার মুছল্লী ডিঙিয়ে বাইরে আসা কঠিন ও লজ্জাকর হয়। এক্ষণে ওযূ ছাড়া ছালাত চালিয়ে গিয়ে পরে পুনরায় ছালাত আদায় করলে শারঈ কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : ‘ওযূ ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না’ (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১)। ওযূ ভঙ্গের কারণে কাতার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের সুতরা। অতএব মুক্তাদীদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে আসা দোষের নয়। এক্ষণে যদি কাতার থেকে বের হওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহ’লে বাধ্যগত অবস্থায় ইমামের সালাম ফিরানো পর্যন্ত কাতারে বসে বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরালে বেরিয়ে এসে ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব টেপ নং ২৯৬)।

প্রশ্ন (১৪৯) : ফজরের ছালাতের সময় গোসল ফরয হয়েছে; কিন্তু বিদ্যুৎ নেই ও পানিও নেই। প্রতিবেশী থেকে পানি আনাও বেশ কঠিন। এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়ার সম্ভবনা না থাকলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (মায়েদাহ ৫/৬; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৫/৩৪২)। আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, ‘যাতুস সালাসিল’ যুদ্ধে শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতার আশংকায় গোসল না করে তায়াম্মুম করে সাথীদের নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। পরে সাথীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই ঘটনা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি কি অপবিত্র অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেছ? তখন আমি গোসল না করার কারণ ব্যাখ্যা করলাম এবং বললাম আল্লাহ বলেছেন, ‘নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং চুপ থাকলেন (আবুদাঊদ হা/৩৩৪ ‘ঠান্ডা লাগার ভয় থাকলে অপবিত্র ব্যক্তি কি করবে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ; ইরওয়া হা/১৫৪)। এছাড়া আহত ব্যক্তিও গোসল না করে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করতে পারবে (আবুদাঊদ হা/৩৩৬, ৩৬৭, ‘আহত ব্যক্তির তায়াম্মুম করা’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (১৫০) : জুম‘আর দিন আখেরী যোহর পড়তেই হবে, না পড়লে জুম‘আ আদায় হবে না। একথার কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : জুম‘আর দিনে আখেরী যোহর নামে কোন ছালাত নেই। বরং জুম‘আর পরে সুন্নাত ছালাত রয়েছে। তা দুই, চার বা ছয় রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন জুম‘আর ছালাত আদায় করে, তখন সে যেন তারপরে চার রাকা‘আত (সুন্নাত) ছালাত আদায় করে’ (মুসলিম হা/৮৮১; ইবনু মাজাহ হা/১১৩২)। রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর ছালাত আদায় করে তাসবীহ ও যিকির পাঠ করে তারপর বাড়িতে গিয়ে দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম হা/৮৮২)। এজন্য ইবনু ওমর (রাঃ) সহ সালাফগণ জুম‘আর দিনে মসজিদে সুন্নাত আদায় করলে চার রাক‘আত পড়তেন এবং বাড়িতে গিয়ে পড়লে দুই রাক‘আত পড়তেন (তিরমিযী হা/৫২৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

‘আখেরী যোহর’ নামে জুম‘আর ছালাতের পরে পুনরায় যোহরের চার রাক‘আত একই ওয়াক্তে পড়ার যে রেওয়াজ চালু আছে, তা নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। কারণ জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। এক্ষণে যে ব্যক্তি জুম‘আ আদায়ের পর যোহর পড়ে, তার পক্ষে কুরআন, সুন্নাহ এবং কোন বিদ্বানের সমর্থন নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ)। গ্রামে জুম‘আ হবে কি হবে না, এই সন্দেহে পড়ে কিছু লোক দু’টিই পড়ে থাকে।

 

প্রশ্ন (১৫১) : ছালাতের শেষ রাক‘আতে নারীদের সাদাস্রাব দেখা দিলে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে কি? সেক্ষেত্রে ওযূ করে কেবল শেষ রাক‘আত আদায় করলেই চলবে, না পুরো ছালাত আদায় করতে হবে?

উত্তর: ছালাতের ভিতরে নারীর সাদাস্রাব শুরু হ’লে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে দিয়ে ওযূ করে নতুনভাবে ছালাত আদায় করবে (দারেমী হা/১১৪১; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৪)। উল্লেখ্য যে, যে হাদীছে বলা হয়েছে যে, আগের ছালাতের সাথে মিলিয়ে ছালাত সম্পূর্ণ করবে তা যঈফ (যঈফুল জামে‘ হা/৫৪২৬)।

প্রশ্ন (১৫২) : মসজিদে যাওয়ার পথে অপবিত্র পানি অতিক্রম করে যেতে হয়। সবসময় পা ধোয়ারও উপায় থাকে না। এমতাবস্থায় পা না ধুয়ে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : অপবিত্র পানি বা তরল কোন বস্ত্ত শরীরে বা কাপড়ে লেগে গেলে সিক্ত স্থান সাধ্যমত ধুয়ে ছালাত আদায় করবে। তবে এতে ওযূ নষ্ট হবে না (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২৫৩)।

প্রশ্ন (১৫৩) : নানা অসুবিধার কারণে তাহাজ্জুদের ছালাত নিয়মিতভাবে আদায় করা সম্ভব হয় না। এভাবে অনিয়মিত হলে গুনাহ হবে কি?

উত্তর : ‘তাহাজ্জুদ শুরু করলে আর ছাড়া যাবে না এবং ছাড়লে গুনাহ হবে’ মর্মে প্রচলিত কথাটি ভিত্তিহীন। তবে নিয়মিত পড়াই উত্তম। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা রাতের ছালাত ছেড়ে দিয়ো না। কারণ রাসূল (ছাঃ) এ ছালাত ছাড়তেন না। যখন তিনি অসুস্থ বা দুর্বল বোধ করতেন তখন তা বসে আদায় করতেন (আহমাদ হা/২৬১৫৭; আবুদাঊদ হা/১৩০৭, সনদ ছহীহ)। এছাড়া আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল তাই, যা অল্প হ’লেও নিয়মিত করা হয় (বুখারী হা/৬৪৬৫; মুসলিম হা/৭৮৩; মিশকাত হা/১২৪২)।

প্রশ্ন (১৫৪) : চোখে চশমা লাগিয়ে সিজদা দিলে সিজদার হক আদায় হবে কি?

উত্তর : চোখে চশমা থাকাকালীন নাক ও কপাল মাটিতে স্পর্শ করিয়ে সিজদা করা সম্ভব হ’লে চশমা পরে সিজদা দেওয়ায় কোন দোষ নেই। তবে চশমা কপাল ও নাক মাটিতে স্পর্শ করাতে বাধা হয়ে দাঁড়ালে চশমা খুলে  ছালাত আদায় করবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৮৬)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তির ছালাত বিশুদ্ধ হয় না যে কপালের মত করে নাক মাটিতে ঠেকায় না (দারাকুৎনী হা/১৩১৯; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী ১৪২ পৃ. সনদ ছহীহ)। তিনি আরো বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছি যেন আমরা সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করি, যা হচ্ছে- কপাল আর এ বলে তিনি স্বীয় হাত দ্বারা নাক, হস্তদ্বয় (অপর শব্দে হাতের তালুদ্বয়) হাঁটুদ্বয়, উভয় পায়ের অগ্রভাগের দিকে ইঙ্গিত করেন (বুখারী হা/৮১২; মুসলিম হা/৪৯০; মিশকাত হা/৮৮৭)।

প্রশ্ন (১৫৫) : ফজরের ছালাতের পর ইশরাক্বের ছালাতের আগ পর্যন্ত কোন নফল ছালাত আদায় করা যাবে কি? সূর্যোদয় শুরু হওয়ার পর নফল ছালাত আদায়ের জন্য কত মিনিট অপেক্ষা করা উচিৎ?

উত্তর : ফজরের ফরয ছালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন নফল ছালাত নেই (আবুদাউদ হা/১২৭৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৫৩; ইরওয়া হা/৪৭৮)। তবে যদি কারো ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত কাযা থাকে তাহ’লে সেটা আদায় করবে (আবুদাউদ হা/১২৭৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৫৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৫১)। আর সূর্যোদয়ের পর ইশরাক্বের ছালাতের ওয়াক্ত হ’তে দশ থেকে পনের মিনিট সময় লাগে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১৭১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/১২২)। পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে ৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ড সময় লাগে। সে হিসাবে সূর্যোদয়ের ১০ মিনিট পরে ইশরাক্বের ছালাত আদায় করা যায়।

প্রশ্ন (১৫৬) : ওযূ করার পর নারীদের জরায়ুর রাস্তা দিয়ে হালকা শব্দে বায়ু বের হ’লে ওযূ ভেঙ্গে যাবে কি?

উত্তর : ওযূর পর জরায়ুর রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হ’লে বিশুদ্ধ মতে ওযূ ভেঙ্গে যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৪; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/১২৫)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, স্পষ্টভাবে বায়ূর শব্দ বা গন্ধ না পেলে ওযূ করতে হবে না (ইবনু মাজাহ হা/৫১৫; মিশকাত হা/৩১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৭২)। আর এটা হাদীছে উল্লিখিত বায়ুর অন্তর্গত। সুতরাং এমতাবস্থায় ওযূ ভেঙ্গে যাবে। তবে হানাফী-মালেকী বিদ্বানগণ, শায়খ উছায়মীন ও শায়খ বিন বায মনে করেন, জরায়ু থেকে নির্গত বাতাসে ওযূ ভঙ্গ হবে না। কারণ এটি কোন অপবিত্র স্থান থেকে বের হয় না। তাছাড়া হাদীছে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন দলীল নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৮০; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৯৭; রাদ্দুল মুহতার ১/১৩৬ পৃ.)। তবে অধিকতর সতর্কতার জন্য ওযূ করাই কর্তব্য। কারণ যে স্থান থেকে বীর্য বের হ’লে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়; হায়েয, নিফাস বা ইস্তিহাযা বের হ’লে অপবিত্র হয়ে যায়; সে স্থান থেকে বায়ু বের হ’লে একই বিধান কার্যকর হওয়াই বিধেয়।

প্রশ্ন (১৫৭) : মসজিদে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বা সফরে অনেক সময় পৃথক ওযূখানা বা পর্দার মধ্যে পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকেনা। ফলে মেয়েদের জন্য ওযূ করা সম্ভব হয় না। এমন অবস্থায় তাদের তায়াম্মুম করা যাবে কি?

উত্তর : এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা যাবে না। বরং কোন ওযূখানায় বা কোন বাড়িতে পর্দার পরিবেশ খুঁজে নিয়ে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। কোনভাবেই ব্যবস্থা না করা গেলে বাধ্যগত অবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৫/১৩১ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৫৮) : ছালাতে ইমামতি করার সময় একসাথে তিনবার সূরা ইখলাছ পাঠ করলে পূর্ণ কুরআন পাঠের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি? এসময় মুছললীগণও কি একই ছওয়াব পাবে?

উত্তর : পবিত্র কুরআন মূলতঃ তিনটি বিষয়ে বিভক্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরা ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। অর্থাৎ সূরা ইখলাছ একবার পাঠে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠের ছওয়াব অর্জিত হয়, যদিও তা এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করার নামান্তর নয় (বুখারী হা/৬৬৪৩; মুসলিম হা/৮১১-১২; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ১৭/১৩৭-১৩৯)। আর মুছল্লীরা মনোযোগ দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করলে তেলাওয়াতকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব তারাও পাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/২৯৬)। দ্বিতীয়তঃ এরূপ আমল করা যাবে, তবে নিয়মিত নয়। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন আমলের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন (১৫৯) : ওযূর ক্ষেত্রে মাথা মাসাহ করার সময় মহিলাদের মাথায় খোপা বা ব্যান্ডজাতীয় কিছু থাকলে তা খুলে রাখতে হবে কি?

উত্তর : সুযোগ থাকলে এগুলি খুলে রেখে ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। আর সহজ না হ’লে বা পর্দার পরিবেশ না থাকলে মাথার উপরে ওড়নাসহ খোপা বা ব্যান্ড রেখে মাথা মাসাহ করবে। রাসূল (ছাঃ) নিজে মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন (মুসলিম হা/২৭৫; তিরমিযী হা/১০১)। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ কর’ (আহমাদ হা/২৩৯৩৯ সনদ ছহীহ)। অতএব শারঈ কারণে নারী-পুরুষ সবার জন্য ওড়না বা পাগড়ীর উপর মাসাহ করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ‘উমদাহ ১/২৬৫-৬৬; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৩৯)।

প্রশ্ন (১৬০) : কোন ব্যক্তি মসজিদের আযান ও ইক্বামতের দায়িত্ব পালন করে ইমামতির দায়িত্বও পালন করতে পারবেন কি?

উত্তর : একই ব্যক্তি আযান, ইক্বামত ও ইমামতির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে আযান ও ইক্বামত আলাদা ব্যক্তি দেওয়াই উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৮০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৩৯)।

প্রশ্ন (১৬১) : ছালাতের সিজদায় কুরআনে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : রুকূ ও সিজদায় কুরআনের সূরা ও আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! আমাকে রুকূ-সিজদায় কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূতে তোমাদের রবের মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের সাথে দো‘আ কর। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ কবূল করা হবে’ (মুসলিম হা/৪৭৯-৪৮০; মিশকাত হা/৮৭৩)। ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, এটা এজন্য হ’তে পারে যে, রুকূ ও সিজদায় বান্দার মস্তক অবনত থাকে। এ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা আদবের খেলাফ (মাজমু‘উল ফাতাওয়া ৫/৩৩৮)। তবে মর্ম ঠিক রেখে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে পড়া যাবে। যেমন রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া... (বাক্বারাহ ২০১)-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা পাঠ করা (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩৪-১৩৫ পৃ.)। তাছাড়া একদল বিদ্বানের মতে, কেবল দো‘আর উদ্দেশ্যে পাঠ করলে তা জায়েয হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪৪৩; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে’ ৩/১৩৩)।

প্রশ্ন (১৬২) : বেশীরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল কক্ষেই শিক্ষা উপকরণ হিসাবে নানা রকম জীবজন্তু ও মানুষের ছবি দিয়ে সাজানো থাকে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদেরকে এই সব কক্ষেই ছালাত আদায় করতে হয়। এটা জায়েয হবে কি?

উত্তর : প্রাণীর ছবি নেই এমন কক্ষে ছালাত আদায় করার চেষ্টা করবে এবং ছবি অপসারণ করার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নছীহত করবে। সম্ভব না হ’লে উক্ত কক্ষেই সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে ছালাত আদায় করবে। এমন বাধ্যগত পরিস্থিতিতে সেখানে ছালাত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৫০-৫১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১/৩১০, ৭/২৮১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৬০)।

প্রশ্ন (১৬৩) : ছালাতে সিজদা দেওয়ার সময় আগে নাক ঠেকবে না কপাল ঠেকবে, আর সিজদা থেকে উঠার সময় কপাল আগে উঠবে না নাক উঠাতে হবে?

উত্তর : সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে প্রথমে কপাল রাখবে এরপর নাক রাখবে। আর উঠানোর সময় সুবিধামত উঠাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩৭০ পৃ.)।

 

প্রশ্ন (১৬৪) : যরূরী কোন কাজ করার ক্ষেত্রে ছালাত ক্বাযা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই ছালাত আদায় করে নেওয়া যাবে কি?

উত্তর : আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত (নিসা ৪/১০৩)। অতএব নির্ধারিত সময়েই ছালাত আদায় করতে হবে। কেউ ইচ্ছা করে সময়ের পূর্বে ছালাত আদায় করলে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং গুনাহগার হবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৯৬)। কারণ ওয়াক্ত হওয়া ছালাতের পূর্বশর্ত। তবে বিশেষ শারঈ ওযর বশতঃ মুক্বীম অবস্থাতেও কেবল আছর ও এশার ছালাত ‘জমা তাক্বদীম’ তথা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে যোহর এবং মাগরিবের সাথে আদায় করা যায়। যেমন পৃথক এক্বামতের মাধ্যমে যোহর ও আছর (৪+৪=৮ রাক‘আত) এবং মাগরিব ও এশা (৩+৪=৭ রাক‘আত) (বুখারী হা/১১৭৪; মুসলিম হা/১৬৩৩-৩৪; নায়লুল আওত্বার ৪/১৩৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৮৮ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৬৫) : যোহরের চার রাক‘আত ছালাতের স্থানে আমি পাঁচ রাক‘আত পড়িয়েছি। সহো সিজদা না দিয়ে আমি সালাম ফিরিয়ে ছালাত সমাপ্ত করেছি। মুছল্লীরা পরে আমাকে অবগত করলে আমি তাদের নিয়ে কেবল দু’টো সহো সিজদা দিয়েছি, সালাম ফিরাইনি। এক্ষণে আমাদের ছালাত হয়েছে কী?

উত্তর : প্রথম সালাম ফিরানোর মাধ্যমে ছালাত সমাপ্ত করায় ছালাত শুদ্ধ হয়েছে (বুখারী হা/৭১৫; জাছছাছ, শারহু মুখতাছারুত ত্বাহাবী ২/১৭)। তবে সহো সিজদার পরে সালাম না ফিরানো ভুল হয়েছে। কারণ সহো সিজদার পর সালাম ফিরানো সুন্নাত (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১০১৬, দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সিজদায়ে সহো’ অধ্যায় ১৫২ পৃ.)।  যদিও এটি পরিত্যাগ করা ছালাত ভঙ্গের কারণ নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৭৪)

প্রশ্ন (১৬৬) : জনৈক ব্যক্তি কুরআনের অনুসরণে প্রতিদিন ৩ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে। সে কি কাফের হিসাবে গণ্য হবে?

উত্তর : নবুঅত প্রাপ্তির পর থেকেই ছালাত ফরয হয়। তবে তখন ছালাত ছিল কেবল ফজরে ও আছরে দু’ দু’ রাক‘আত করে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ- ‘তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন কর আছরে ও ফজরে’ (মুমিন ৪০/৫৫; মির‘আত ২/২৬৯)। মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫)। উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা (আবুদাঊদ হা/৩৯১, ৩৯৩)।  তাছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত প্রমাণিত (বাক্বারাহ ২/২৩৮; ইসরা ১৭/৭৮; নূর ২৪/৫৮; ক্বাফ ৫০/৩৯-৪০)।

দ্বিতীয়তঃ একাধিক ছহীহ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের নির্ধারিত সময় প্রমাণিত (মুসলিম হা/৬১২; আবুদাউদ হা/৪২৫; মিশকাত হা/৫৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৭০)। এক্ষণে কেউ যদি কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত ফরয বিধান অস্বীকার করে তিন ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে এবং দুই ওয়াক্ত ছেড়ে দেয় তাহ’লে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তিরমিযী হা/২৬২২; মিশকাত হা/৫৭৯; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২৪/৫২ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৬৭) : জামা‘আত চলাকালীন সময়ে ইমাম ছাহেব তেলাওয়াতে কোন ভুল করলে বা কোন আয়াতাংশ ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি? এছাড়া মুছল্লীদেরকেও কি এই সিজদা দিতে হবে?

উত্তর : তেলাওয়াতে কোন ভুল হ’লে সহো সিজদা যেমন ইমামকে দিতে হবে না, তেমনি মুছল্লীকেও দিতে হবে না। বরং ছালাতের রাক‘আতে কম-বেশী হ’লে বা কোন ফরয-ওয়াজিব-সুন্নাত ছুটে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। তবে সূরা ফাতিহার বিষয়টি স্বতন্ত্র। কেননা এটি ফরয। কেউ যদি ভুল করে পাঠ না করে বা কোন আয়াত ছেড়ে দেয়, তবে সূরাটি পুনরায় পাঠ করবে। আর পরে মনে হ’লে এক রাক‘আত মিলিয়ে নিয়ে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৩৯৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২৫৩ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৬৮) : ফরয গোসল আবশ্যক হওয়া অবস্থায় দো‘আ-দরূদ পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : পাঠ করা যাবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন (বুখারী ২/৩১; মুসলিম হা/৩৭৩; মিশকাত হা/৪৫৬)।

প্রশ্ন (১৬৯) : ছালাতে বা ছালাতের বাইরে কুরআন তেলাওয়াতের সময় সাধারণত আলিফ-এর টানগুলো সেভাবে অনুসরণ করা হয় না। জনৈক ক্বারী বলেন, এতে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে। একথা সঠিক কি?

উত্তর : সঠিক নয়। আলিফ না টেনে পড়লে ছালাতের কোন ক্ষতি বা গুনাহ হবে না (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১০/১৭৯)। তবে তাজবীদ, মাখরাজ ও ছিফাতসহ সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সর্বোত্তম ক্বারী সেই, যার তেলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করছে’ (দারেমী হা/৩৪৮৯; মিশকাত হা/২২০৯)।

প্রশ্ন (১৭০) : আমাদের মসজিদে কয়েকজন মুরববী চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করেন। তারা ইচ্ছামত বিভিন্ন কাতারে বিভিন্ন স্থানে বসার কারণে কয়েকটি কাতারে মুছল্লীদের ধারাবাহিকতা বিনষ্ট হয়। পিছনের মুছল্লীরও সিজদা দিতে সমস্যা হয়। এভাবে কাতার বিনষ্ট করে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ছালাতের কাতার ঠিক রেখেই অসুস্থ ব্যক্তিকে চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করতে হবে। চেয়ারে ছালাত আদায়কারীর তিনটি অবস্থা রয়েছে। প্রথমতঃ মসজিদের প্রথম কাতার মুছল্লী দ্বারা পূর্ণ হ’লে চেয়ারে ছালাত আদায়কারীরা কাতারের যেকোন এক পার্শ্বে ছালাত আদায় করবে। কারণ চেয়ারে বসে কাতারের মাঝে ছালাত আদায় করলে কাতারের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। দ্বিতীয়তঃ চেয়ারে বসে ছালাত আদায়কারী যদি পুরো ছালাত বসে আদায় করে, তাহ’লে মুছল্লীর পা বরাবর কাতারে চেয়ার রেখে বসে ছালাত আদায় করবে। কারণ মুছল্লীর দাঁড়ানো অবস্থা কাতারের মৌলিক অবস্থা।

তৃতীয়তঃ মুছল্লী যদি ক্বিয়াম দাঁড়িয়ে করে ও রুকূ-সিজদা চেয়ারে বসে করে, তাহ’লে এমন চেয়ার ব্যবহার করবে যা পিছনের মুছল্লীর কোন ক্ষতি করবে না, আবার কাতারের সমতাও বিনষ্ট হবে না। যদি এমন চেয়ার না থাকে তাহ’লে মুছল্লী কাতারে দাঁড়িয়ে চেয়ার হালকা পিছনে রাখবে এবং নিজে কাতার বরাবর দাঁড়াবে। পিছনের মুছল্লীর সিজদার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে রুকূ এবং সিজদা করার সময় চেয়ার কাতারে টেনে বসে রুকূ ও সিজদা করবে। এভাবেই পুরো ছালাত সম্পাদন করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৬/২১; উছায়মীন ও আব্দুর রহমান বাররাক, মাওক্বা‘উল ইসলাম, সওয়াল ওয়া জওয়াব ৫/৭৬২, ১৭৯৫)।

প্রশ্ন (১৭১) : হাফ মোজার উপর মাসাহ করা যাবে কি?

উত্তর : গোঁড়ালী ঢাকে এমন যে কোন মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয। হাফ মোজার মাধ্যমে গোঁড়ালী ঢেকে গেলে তার উপর মাসাহ করা যাবে। আর গোঁড়ালী খোলা থাকলে মাসাহ করা যাবে না (তিরমিযী হা/৯৯; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১১১,২৯/৬৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৬৩)।

প্রশ্ন (১৭২) : জুম‘আর ছালাতের পূর্বের সুন্নাত কোন কারণে বাদ গেলে ছালাতের পর তার ক্বাযা আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : জুম‘আর ছালাতের পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাতে রাতেবা নেই। বরং সময় সাপেক্ষে দুই দুই রাক‘আত করে নফল ছালাত আদায় করতে থাকবে। যেহেতু পূর্বে কোন সুন্নাত নেই, সেজন্য কোন ক্বাযা আদায় করতে হবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৮৬)।

প্রশ্ন (১৭৩) : ছালাতরত অবস্থায় পেশাব বা বায়ুর চাপ আসলে তা চেপে রাখায় কোন দোষ আছে কি?

উত্তর : পেশাব বা পায়খানার চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (মুসলিম হা/৫৬০; মিশকাত হা/১০৫৭)। এছাড়া এর ফলে ছালাতে খুশূ-খুযূ থাকে না। অতএব এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে প্রয়োজন পূর্ণ করে পুনরায় ছালাত আদায় করবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১২/৪৩৫)।

প্রশ্ন (১৭৪) : ৪ রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাত আদায়ের সময় ২ রাক‘আতে পঠিতব্য আত্তাহিইয়াতু পাঠ করতে ভুলে গেলে করণীয় কি? উক্ত ২ রাক‘আত আবার পড়তে হবে না সহো সিজদা দিলেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর : ছালাতের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ওয়াজিব।

এক্ষণে কেউ যদি তাশাহহুদ পাঠ করতে ভুলে যায় তাহ’লে শেষ বৈঠকে দু’টি সহো সিজদাহ দিয়ে সালাম ফিরাবে। এজন্য পুরো ছালাত আদায় করতে হবে না (বুখারী হা/৮২৯; মিশকাত হা/১০১৮; ইবনু কুদামাহ, আল-কাফী ১/২৭৩; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/৩৯৩)।

প্রশ্ন (১৭৫) : আমার বয়স ১২ হ’লেও বালেগ হওয়ায় মসজিদে পাঁচওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে চাই। কিন্তু পিতা-মাতা মসজিদে বিশেষত মাগরিবের ছালাতে যেতে দিতে চায় না। প্রহার করে। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর : পিতা-মাতাকে বুঝিয়ে ছালাতের জামা‘আতে যেতে হবে। কেননা সন্তান বালেগ বা বয়ঃপ্রাপ্ত হ’লে তার জন্য জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা ওয়াজিব। কেউ যদি আযান শোনার পরেও ওযর ছাড়া বাড়িতে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে সে গুনাহগার হবে (নাসাঈ হা/৮৫০; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৯)। এমনকি রাসূল (ছাঃ) বিনা ওযরে বাড়িতে ছালাত আদায়কারীদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনেছে, অথচ জামা‘আতে হাযির হয়নি, তার ছালাত নেই; যদি তার কোন গ্রহণীয় ওযর না থাকে’ (দারাকুৎনী হা/১৫৫৫; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৬)। এক্ষণে কেউ যদি বাড়িতে ছালাত আদায় করে তাহ’লে তার ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। তবে সে ওয়াজিব পরিত্যাগ করার জন্য গুনাহগার হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭০)। অতএব পিতা-মাতার উচিৎ বাধা না দিয়ে বরং সন্তানকে সাথে করে মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা। আর নিরাপত্তাজনিত বিশেষ কোন কারণ থাকলে সেটি স্বতন্ত্র এবং তা শারঈ ওযরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত (বাক্বারাহ ২/২৮৬)।

প্রশ্ন (১৭৬) : আমাদের মসজিদের ইমাম আরবীতে খুৎবা দেওয়ায় আমি কিছু বুঝতে পারি না। তাই এ সময় আমি নিজে নিজে তাসবীহ-তাহলীল করতে পারব কি? নাকি বুঝতে না পারলেও মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে?

উত্তর : ইমামের খুৎবা চলাকালীন মুক্তাদী চুপ থেকে খুৎবা শুনবে যদিও সে ভাষা না বুঝে। কারণ খুৎবায় হাযির হওয়া জুম‘আর দিনের বিশেষ ইবাদতের অংশ (জুম‘আ ৬২/০৯)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, জুম‘আর দিন ইমাম খুৎবারত অবস্থায় যদি তুমি তোমার পাশের মুছল্লীকে ‘চুপ কর’ বল, তাহ’লে তুমি অনর্থক কথা বললে’ (বুখারী হা/৯৩৪; মিশকাত হা/১৩৮৫)। একদা রাসূল (ছাঃ) খুৎবায় একটি আয়াত পাঠ করলে আবুদ্দারদা (রাঃ) উবাই বিন কা‘বকে এর শানে নুযূল সম্পর্কে জানতে চান। একাধিকবার জিজ্ঞেস করার পরেও তিনি কোন জওয়াব দেননি। খুৎবা শেষে উবাই আবুদ্দারদা (রাঃ)-কে বলেন, তুমি এত অনর্থক কথা বলছিলে কেন? ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, উবাই বিন কা‘ব সত্য বলেছে। ইমামের খুৎবাকালীন সময়ে তুমি চুপ থাকবে (আহমাদ হা/২১৭৭৮; ইবনু মাজাহ হা/১১১১; ছহীহাহ হা/২২৫১)। সুতরাং ভাষা না বুঝলেও জুম‘আর দিন সময়মত মসজিদে উপস্থিত হবে এবং খুৎবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে (খারশী, মুখতাছার খলীল ১/২৮০২; যায়লাঈ, তাবীঈনুল হাক্বায়েক্ব ১/১৩২; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩৫)।

প্রশ্ন (১৭৭) : কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি সাময়িকভাবে নিফাক্বী চলে আসে বা কিছুদিনের জন্য সে ছালাত পরিত্যাগ করে। এমতাবস্থায় তার স্ত্রী কি তালাক হয়ে যাবে? যদি পরবর্তীতে সে আবার ঈমানের হালতে ফিরে আসে, তাহ’লে তালাক হয়ে গেলে কি তাকে পুনরায় বিবাহ করতে হবে?

উত্তর : সাধারণ আমলগত নিফাকীর কারণে ছালাত পরিত্যাগ করে থাকলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হবে না এবং স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদও হবে না। এমতাবস্থায় সে কবীরা গুনাহগার হবে। আর যদি আক্বীদাগত নিফাকী তথা কুফরীর পর্যায়ের যায় এবং ছালাতের বিধানকে অস্বীকার করে, তাহ’লে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং স্ত্রীও তালাক হয়ে যাবে। তবে তওবা করলে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই (ইবনু কুদামা, মুগনী ৮/১০-১১; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৫/১৩৩-৪০' উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১০/২৮৮-২৯১)। অবশ্য একদল বিদ্বান মনে করেন, ইদ্দতের সময়কাল অতিবাহিত হয়ে গেলে নতুন বিবাহের মাধ্যমেই সংসার করতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৪৯; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ২৭৯ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৭৮) : ওযূ শেষে আসমানের দিকে তাকিয়ে দো‘আ পাঠ করা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এসময় কোন দিকে ফিরে দো‘আ পাঠ করতে হবে?

উত্তর : ওযূ শেষে দো‘আ পাঠকালে আকাশের দিকে তাকাতে হবে মর্মে বর্ণিত অতিরিক্ত অংশটুকু ‘মুনকার’। উক্ত মর্মে বহু ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হ’লেও আকাশের দিকে তাকানোর বিষয়টি নেই (আহমাদ হা/১৭৪০১; ইরওয়া হা/৯৬, সনদ যঈফ)। অতএব ওযূ শেষে যে কোন দিকে ফিরে দো‘আ পাঠ করা যাবে।

প্রশ্ন (১৭৯) : এশার পর বিতর ছালাত আদায় করে নিলে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়ে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : এশার ছালাতের সাথে বিতর পড়ে নিলেও তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করতে পারবে। তবে তাহাজ্জুদ শেষে দ্বিতীয়বার বিতর পড়া যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, এক রাতে দু’বার বিতর ছালাত নেই (আবুদাউদ হা/১৪৩৯; ছহীহুল জামে হা/৭৫৬৭)।

প্রশ্ন (১৮০) : ছালাতের মধ্যে ‘জান্নাতুল ফেরদাঊস’ প্রার্থনার জন্য মাসনূন কোন দো‘আ আছে কি?

উত্তর : নির্দিষ্ট কোন দো‘আ নেই। তবে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করা যেতে পারে।- আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)। ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও’!  (তিরমিযী হা/২৫৭২; নাসাঈ হা/৫৫২১; মিশকাত হা/২৪৭৮)। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যেহেতু বলেছেন, তোমরা জান্নাত চাইলে ফেরাদাঊস জান্নাত চাও’ (বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭), সেহেতু ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতাল ফেরদাঊস’ (হে আল্লাহ আমি আপনার নিকটে জান্নাতুল ফেরদাঊস প্রার্থনা করছি) বলা যেতে পারে।

প্রশ্ন (১৮১) : আমরা কয়েকজন বন্ধু ঢাকার একটি ভবনের ৬ তলায় থাকি। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত ছালাত সিঁড়ি ভেঙ্গে মসজিদে গিয়ে আদায় করা কঠিন হয়। সেক্ষেত্রে ঘরে জামা‘আতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করলে জামা‘আতে ছালাতের নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : ঘরে জামা‘আত করলে জামা‘আতের নেকী পাওয়া গেলেও মসজিদে যাওয়ার নেকী থেকে মাহরূম হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) দূরের বাসিন্দা অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূমকেও মসজিদে জামা‘আতে না আসার ব্যাপারে অনুমতি দেননি (মুসলিম হা/৬৫৩; মিশকাত হা/১০৫৪, ১০৭৮)। তিনি বলেন, ‘ঐ মুছল্লী সবচেয়ে বেশী ছওয়াবের অধিকারী হবে, যে সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসে এবং ঐ মুছল্লী অধিক পুরস্কৃত হবে, যে আগে মসজিদে আসে এবং অপেক্ষা করে। অতঃপর ইমামের সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করে’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’ (বুখারী হা/৬৬২; মুসলিম হা/৬৬৯; মিশকাত হা/৬৯৮)। তিনি বলেন, ‘যখন কোন মুছল্লী সুন্দরভাবে ওযূ করে ও স্রেফ ছালাতের উদ্দেশ্যে ঘর হ’তে বের হয়, তখন তার প্রতি পদক্ষেপে আল্লাহর নিকটে একটি করে নেকী হয় ও একটি করে মর্যাদার স্তর উন্নীত হয় ও একটি করে গোনাহ ঝরে পড়ে। যতক্ষণ ঐ ব্যক্তি ছালাতরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করতে থাকে ও বলে যে, ‘হে আল্লাহ! তুমি তার উপরে শান্তি বর্ষণ কর’। ‘তুমি তার উপরে অনুগ্রহ কর’। যতক্ষণ সে কথা না বলে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা আরও বলতে থাকে, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর’ ‘তুমি তার তওবা কবুল কর’ (মুসলিম হা/৬৫৪ (২৫৭); মিশকাত হা/১০৭২)।

প্রশ্ন (১৮২) : ঋতু অবস্থায় শুকরিয়ার সিজদা করা যাবে কি?

উত্তর : সিজদায়ে তেলাওয়াতের ন্যায় এখানেও একটি সিজদা হবে এবং এই সিজদাতে ওযূ বা ক্বিবলা শর্ত নয়। অতএব ঋতু অবস্থায় এই সিজদা দেওয়া এবং দো‘আ পাঠ করায় কোন দোষ নেই (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৫ পৃ.; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২২৪;)।

প্রশ্ন (১৮৩) : ওযূ করে ছালাত আদায়ের পর কাপড় ভেজা বা সেখানে আঠালো পদার্থ দেখতে পেলে ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : ছালাতের পর স্পষ্ট পেশাব বা আঠালো পদার্থের কারণে কাপড় ভেজা অনুভব করলে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করে ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করবে। সাথে সাথে পেশাবে ভেজা স্থান ধুয়ে ফেলবে এবং মযী দ্বারা ভেজা স্থানে পানি ছিটিয়ে দিবে। কারণ পেশাব বের হওয়া বা মযী নির্গত হওয়া ওযূ ভঙ্গের অন্যতম কারণ (আবুদাঊদ হা/২১০-১১; মুগনী ১/১৪৯)।

প্রশ্ন (১৮৪) : নারীদের মসজিদে ছালাত আদায়ের চেয়ে নিজ গৃহে ছালাত আদায়ে ছওয়াব বেশী কি?

উত্তর : নারীদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা জায়েয। তবে তাদের বাড়িতে ছালাত আদায় করাই উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম (আবুদাউদ হা/৫৬৭; মিশকাত হা/১০৬২; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন নারী যদি নিজ গৃহের অন্ধকারাচ্ছন্ন নির্জন স্থানে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে সেই ছালাতের চেয়ে এমন কোন স্থানের ছালাত পাওয়া যাবে না যা আল্লাহ্র নিকট বেশী পসন্দনীয় হবে’ (ত্বাবারাণী কাবীর, ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৭)। এ সংক্রান্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় শায়খ বিন বায বলেন, ‘নারীরা বাড়িতে ছালাত আদায় করলে মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায়ের সমপরিমাণ বা তার থেকে অধিক ছওয়াব পাবে। এমনকি মসজিদে হারামে ছালাত আদায় অপেক্ষা নারীদের জন্য বাড়িতে ছালাত আদায় উত্তম (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)।

প্রশ্ন (১৮৫) : ওযূ করার সময় কানের কতটুকু পরিমাণ মাসাহ করতে হবে?

উত্তর : কান মাসাহ করার পরিমাপ ও পদ্ধতি সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) কানের ভিতরাংশ নিজের দুই শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ও উপরিভাগ বৃদ্ধাঙগুলি দ্বারা মাসাহ করেছেন (নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩)। অর্থাৎ ভেজা হাতের শাহাদাত অঙ্গুলী কানের ভিতর প্রবেশ করাবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী কানের বহিরাংশে ঘুরিয়ে মাসাহ করবে (নববী, আল মাজমূ‘ ১/৪৪৩; আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪৩/৩৬৬; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৫৯)।

প্রশ্ন (১৮৬) : আমাদের মসজিদের ইমাম তাবীয লিখেন, গণকের কাজ করেন এবং নতুন বাড়ি বন্ধ করার জন্য আগুন জ্বালিয়ে বাড়ির কোণায় কোণায় আযানের কতিপয় বাক্য উচ্চারণ করেন। উক্ত ইমামের পিছনে ছালাত পড়া জায়েয হবে কি? তার ব্যাপারে মসজিদ কমিটির করণীয় কি?

উত্তর : যে ইমাম তাবীয লেখার মত শিরকী কাজ এবং ভাগ্য গণনার মত কুফরী কাজে লিপ্ত, তার পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে না। কমিটির দায়িত্ব হবে অনতিবিলম্বে তাকে সরিয়ে বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন কোন আলেমকে ইমাম নিযুক্ত করা (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া ক্রমিক ২৯৪৮ পৃ. ১/৫৯৯-৬০০)। আল্লাহ বলেন, ‘গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানেনা’ (আন‘আম ৬/৫৯; নামল ২৭/৬৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বেই আল্লাহ স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীরসমূহ লিপিবদ্ধ করেছেন’ (মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯)।

তাবীয লটকানো শিরক। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো সে শিরক করল’ (আহমাদ হা/১৭৪৪০; ছহীহাহ হা/৪৯২, ৩৩১)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকালো তার উপরেই তাকে সোপর্দ করা হ’ল’ (তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬)।

প্রশ্ন (১৮৭) : বাম হাত দ্বারা তাসবীহ গণনা করা যাবে কী?

উত্তর : ডান হাত দ্বারা তাসবীহ গণনা করা মুস্তাহাব। কারণ রাসূল (ছাঃ) প্রতিটি ভালো কাজ ডান দিক দিয়ে শুরু করা পসন্দ করতেন (বুখারী হা/১৬৮, ৫৯২৬; মিশকাত হা/৪০০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তাসবীহ সমূহ আঙ্গুলে গণনা কর। কেননা আঙ্গুল সমূহ ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে এবং তারা কথা বলবে’ (আবুদাঊদ হা/১৫০১; তিরমিযী হা/৩৫৮৩; মিশকাত হা/২৩১৬)। তবে ওযরবশতঃ বাম হাতের আঙ্গুল দ্বারাও জায়েয। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।

প্রশ্ন (১৮৮) : আমি আমার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে নফল, তাহাজ্জুদ বা অন্য কোন ছালাত আদায় করলে ছালাত হবে কি?

উত্তর : একই সাথে জামা‘আতে কোন ছালাত আদায় করলে নারী পুরুষের পিছনের সারিতে দাঁড়াবে, পাশাপাশি নয়। চাই সে মা হৌক বা স্ত্রী হৌক। তবে জামা‘আত ব্যতীত পৃথকভাবে যেকোন ছালাত পাশে দাঁড়িয়ে ব্যবধান রেখে আদায় করলে বাধা নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৩৩১)।

প্রশ্ন (১৮৯) : এক্বামতের জওয়াব দেওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়েছে কি?

উত্তর : এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে নবী করীম (ছাঃ) বলেন, মুওয়াযযিন যা বলেন তোমরাও তাই বল (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭)। উক্ত হাদীছে থেকে এক্বামতের উত্তর দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয় (আলবানী, মিশকাত হা/৬৭০-এর টীকা দ্রঃ)। তাছাড়া অন্য হাদীছে আযান ও এক্বামত দু’টিকেই আযান বলা হয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৬২; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ৭৬)। এজন্য অধিকাংশ বিদ্বান এক্বামতের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব বলেছেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩১০)।

প্রশ্ন (১৯০) : আমি যে মসজিদে মুওয়াযযিন এবং ইমাম হিসাবে দায়িত্ব পালন করি, বর্ষাকালে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে মাঝে মাঝে সেখানে যেতে ভয় লাগে। ফলে সেই সব ওয়াক্তে মসজিদে আযান ও ছালাত হয় না। এতে কি আমি গুনাহগার হব?

উত্তর : মসজিদে আযান হওয়া ফরযে কিফায়াহ। সেজন্য প্রত্যেক মসজিদে আযান হওয়া আবশ্যক। এক্ষণে ইমামসহ যে কেউ বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণে জামা‘আতে ছালাত আদায় পরিত্যাগ করলে কোন দোষ নেই। তবে মসজিদের প্রতিবেশীরা একজন হ’লেও আযান ও এক্বামত দিয়ে ছালাত আদায়ের মাধ্যমে মসজিদ সাধ্যমত আবাদ রাখবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩৬৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৫৪)।

প্রশ্ন (১৯১) : আযান চলাকালে মসজিদে প্রবেশ করলে বা জামা‘আত শুরুর পূর্বে তাহিইয়াতুল মাসজিদ পড়ে শেষ করা যাবে না, এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে বসা যাবে কি? বসলে গুনাহ হবে কি?

উত্তর : ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। সুতরাং মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসবে না (বুখারী হা/৪৪৪; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪)। এমনকি জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন সময়েও কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে রাসূল (ছাঃ) ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন একদিন তিনি খুৎবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় সুলাইক গাত্বফানী (রাঃ) এসে ছালাত না পড়ে বসে পড়েন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, হে সুলাইক! দাঁড়াও এবং সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর (মুসলিম হা/৮৭৫)। তবে বাধ্যগত বিষয়টি আলাদা।

প্রশ্ন (১৯২) : রুকূ থেকে উঠার পরের দো‘আ এবং দুই সিজদার মাঝের দো‘আ সরবে না-কি নীরবে পড়তে হবে? জোরে পড়া বিদ‘আত বলে গণ্য হবে কি?

উত্তর : উক্ত দো‘আগুলি অনুচ্চস্বরে পাঠ করা সুন্নাত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাক, বিনীতভাবে ও চুপে চুপে’ (আ‘রাফ ৭/৫৫; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/২৮৪-৮৫)। তবে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তি কেবল শুনতে পায় এমন শব্দে সিজদা ও রুকূ পরবর্তী দো‘আ পাঠ করা যায় (মুসলিম হা/৪৮৬; নাসাঈ হা/১০৬২; মিশকাত হা/৮৭৭)।

প্রশ্ন (১৯৩) : মসজিদ আল্লাহর ঘর, তিনিই এর হেফাযত করে থাকেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা যুদ্ধের সময় দেখা যায় যে অনেক মসজিদও বিলীন হয়ে যায়। এর ব্যাখ্যা কী?

উত্তর : মসজিদের হেফাযত অর্থ তার সম্মানের হেফাযত। তার চার দেওয়ালের হেফাযত নয়। খোদ রাসূল (ছাঃ) কা‘বাগৃহকে ভেঙ্গে ইব্রাহীমী ভিতের উপরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করেননি (মুসলিম হা/১৩৩৩)। এতে বুঝা যায় যে, যেকোন কারণে মসজিদ ভাঙ্গা-গড়া হ’তে পারে। কিন্তু এর সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দাদের উপর। যেমন আল্লাহ কা‘বাগৃহ নির্মাণকালে ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে বলেন, তোমরা একে মুক্বীম-মুসাফির, ত্বাওয়াফকারী ও ই‘তিকাফকারীদের জন্য সর্বদা ‘পবিত্র’ রাখ’ (বাক্বারাহ ২/১২৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ওযূ করল, অতঃপর মসজিদে এল, সে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী। অতএব আল্লাহর দায়িত্ব তাঁর মেহমানদের সম্মান করা’ (ছহীহাহ হা/১১৬৯)। আর তিনি ঐসব মেহমানদের সম্মান করবেন, যারা তাঁর গৃহের সম্মান বজায় রাখবে।

অতএব যে কোন দূর্যোগে মসজিদ আক্রান্ত বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তা রক্ষা করার দায়িত্ব আল্লাহ নেননি। বরং মসজিদের সম্মানের হেফাযত করার দায়িত্ব বান্দাদের।

প্রশ্ন (১৯৪) : মাস বয়সী ছেলে রাতে আমার পোষাকে পেশাব করেছিল। সকালে ফজরের ছালাত আদায়ের পর বিষয়টি মনে এসেছে। এক্ষণে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : অজ্ঞতা বা ভুলবশতঃ অপবিত্র কাপড়ে ছালাত সম্পাদন করার পর অপবিত্রতার বিষয়টি স্মরণ হ’লে বিশুদ্ধ মতে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে না। একদা রাসূল (ছাঃ) অপবিত্র লেগে থাকা জুতা পরে ছালাত আদায় করছিলেন। ছালাতের ভিতরে জিব্রাঈল (আঃ) বিষয়টি অবহিত করলে তিনি জুতা খুলে ফেলে দেন। কিন্তু ছালাত পুনরায় আদায় করেননি (আবুদাঊদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬)।

প্রশ্ন (১৯৫) : ওযূর পর লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটানো আবশ্যক কি? এটা কি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য?

উত্তর : ওযুর পরে সন্দেহ দূরীকরণের জন্য লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটানো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য মুস্তাহাব (আহমাদ হা/১৭৫১৫; মিশকাত হা/৩৬৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১১২)।

প্রশ্ন (১৯৬) : ক্বিবলা ভুল করে ছালাত আদায়ের পর ভুল বুঝতে পারলে উক্ত ছালাত কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর : পূর্ণ চেষ্টার পরেও যদি ক্বিবলা ভুল হয়ে যায়, তবে পুনরায় তা আদায় করতে হবে না। একদা কতিপয় ছাহাবী অন্ধকার রাতে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে ছালাত আদায় করার সময় ভুলে ক্বিবলার বিপরীত দিকে ফিরে ছালাত আদায় করেন। অতঃপর তারা রাসূল (ছাঃ)-কে ঘটনাটি বর্ণনা করলে তিনি তা পুনরায় আদায়ের নির্দেশ না দিয়ে বললেন, তোমাদের ছালাত আদায় হয়ে গেছে। অতঃপর আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন, ‘আর আল্লাহর জন্যই পূর্ব ও পশ্চিম। অতএব যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও সেদিকেই রয়েছে আল্লাহর চেহারা’ (বাক্বারাহ ১১৫; তিরমিযী হা/২৯৫৭, ইরওয়া হা/২৯১, সনদ হাসান)।

উল্লেখ্য যে, যদি ক্বিবলা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হালকা কমবেশী হয় তাতে কোন ক্ষতি নেই। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানে (আমাদের জন্য উত্তর ও দক্ষিণের মাঝখানে) ক্বিবলা অবস্থিত (তিরমিযী হা/৩৪২; মিশকাত হা/৭১৫; ইরওয়া হা/২৯২; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৪২০)।

প্রশ্ন (১৯৭) : জুম‘আর ছালাতে যেকোন সমস্যা নিয়ে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : যেকোন ফরয ছালাতে কোন জাতীয় সমস্যার প্রতিকারার্থে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যায়। সুতরাং জুম‘আর ছালাতেও কুনূতে নাযেলা পাঠে বাধা নেই। তবে খুৎবায় দো‘আ পাঠের সুযোগ থাকায় জুম‘আর ছালাতে কূনূতে নাযিলা পাঠ করাকে অনেক বিদ্বান অপসন্দ করেছেন। অতএব জুম‘আর ছালাতে কুনূত পাঠ না করে বরং দ্বিতীয় খুৎবাতে দো‘আ পাঠ করা উত্তম (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/১৭৫; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৫/২৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৯৬-৯৭)।

প্রশ্ন (১৯৮) : মোবাইল এ্যাপে প্রতি ওয়াক্তে আযান হয়। মসজিদের আযানের মত এই আযানেরও জবাব দিতে হবে কি?

উত্তর : মোবাইল এ্যাপস বা টেলিভিশনের রেকর্ডকৃত আযান শ্রবণকালে আযানের জওয়াব দিতে হবে না। কেননা এগুলো মৌলিক আযান নয়। বরং সরাসরি আযান শোনার সময়ই কেবল জওয়াব দিতে হবে। আর একাধিক আযান শোনার ক্ষেত্রে যেকোন একটি আযানের জওয়াব দিলেই যথেষ্ঠ হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৯৬)। 

প্রশ্ন (১৯৯) : জুম‘আর দিন ভোরে ফরয গোসল করার পর জুম‘আর সুন্নাত হিসাবে পুনরায় গোসল করতে হবে কি?

উত্তর : ফরয গোসলই জুম‘আর জন্য যথেষ্ট হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫৩৬)।

প্রশ্ন (২০০) : এশার ছালাতের পর ৪ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করলে ক্বদরের ছালাতের ন্যায় ছওয়াব পাওয়া যায় কি?

উত্তর : এশার ছালাতের পরে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা (বুখারী হা/১১৬৫; মুসলিম হা/৭২৮; মিশকাত হা/১১৫৯)। এরপরে বাড়িতে গিয়ে কেউ চাইলে চার রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতে পারে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৯৬)। উল্লেখ্য যে, এই চার রাক‘আত ছালাত বিশেষ কোন ছালাত নয় এবং এশার ছালাতের সাথেও সংশ্লিষ্ট নয়। বরং এটি তাহাজ্জুদের ছালাতের অংশ হিসাবে গণ্য (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৯৬)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি আমার খালা নবী করীম (ছাঃ)-এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রাঃ)-এর ঘরে এক রাতে ছিলাম। নবী করীম (ছাঃ)ও সেই রাতে সেখানে ছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) জামা‘আতে এশার ছালাত আদায় করে তাঁর ঘরে চলে গেলেন এবং চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন (বুখারী হা/১১৭; মুসলিম হা/৯০১)। উল্লেখ্য যে, উক্ত চার রাক‘আত ছালাতের ফযীলতে বলা হয়েছে যে, তা ক্বদর রাতের ছালাতের সমতুল্য (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৩৫১-৭৩৫৭; মারওয়াযী, মুখতাছার ক্বিয়ামুল লায়েল হা/১৯২)। উক্ত মর্মে বর্ণিত মারফূ হাদীছগুলোর সবই অত্যন্ত ‘যঈফ’। তবে প্রায় একই মর্মে ছহীহ সূত্রে আয়েশা, ইবনু আববাস, ইবনু মাসঊদ ও আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর সহ বেশ কিছু ছাহাবী থেকে মওকূফ হাদীছ বর্ণিত হওয়ায় আলবানী (রহঃ) বলেন, এই আমলের ফযীলত সম্পর্কিত বর্ণনাটি মারফূর পর্যায়ভুক্ত (যঈফাহ হা/৫০৬০-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। অতএব কেউ চাইলে এশার ছালাতের পরে একই সালামে চার রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতে পারে।

প্রশ্ন (২০১) : জুম‘আর দিন খুৎবা শ্রবণ করা ওয়াজিব এবং ২ রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাত। এক্ষণে ওয়াজিব বাদ দিয়ে ২ রাক‘আত ছালাত আদায় না করে খুৎবার পর ২ রাক‘আত ছালাত আদায়ের সুযোগ দেওয়াই কি সুন্নাত সম্মত হবে না?

উত্তর : জুম‘আর খুৎবা শ্রবণ করা যেমন ওয়াজিব, তেমনি মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। তাই জনৈক ব্যক্তি খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে রাসূল (ছাঃ) তাকে সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে বসার নির্দেশ দেন (মুসলিম হা/৮৭৫; মিশকাত হা/১৪১১)। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে।

প্রশ্ন (২০২) : ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী... দো‘আটি ছালাতের কোন কোন স্থানে পড়া যাবে?

উত্তর : উক্ত দো‘আটি ছানা হিসাবে তাকবীরে তাহরীমার পর পড়া যাবে (মুসলিম হা/৭৭১; মিশকাত হা/৮১৩)। এটাকে এদেশে ‘জায়নামাযের দো‘আ’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে পাঠ করা হয়। যা ভুল।

প্রশ্ন (২০৩) : ছালাতরত অবস্থায় ইস্তিহাযার রক্ত আসলে করণীয় কি? এছাড়া ইস্তিহাযার রক্ত কাপড়ে লাগলে ঐ কাপড়ে ছালাত হবে কি?

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় ইস্তিহাযার রক্ত বের হ’লেও ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না। ফাতেমা বিনতে আবু হুবাইশ রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন, আমার রক্তস্রাব হ’তেই থাকে এবং আমি কখনো পবিত্র হ’তে পারি না। আমি কি ছালাত ছেড়ে দিব? তিনি বলেন, না। এটা হায়েযের রক্ত নয় বরং এক প্রকার শিরাজনিত রোগ। তুমি হায়েযের মেয়াদকালে ছালাত থেকে বিরত থাক। অতঃপর গোসল করো এবং প্রতি ওয়াক্তে ওযূ করে ছালাত আদায় করো। যদিও তোমার মুছল্লায় রক্ত পড়তে থাকে (বুখারী হা/২২৮; ইবনু মাজাহ হা/৬২৪)।

উল্লেখ্য যে, কাপড়ে ইস্তিহাযার রক্ত লেগে গেলে ছালাতের পর সেই জায়গা ধুয়ে ফেলবে। কারণ তা নাপাক। আর এ সময় প্রতি ওয়াক্তে ওযূ করে লজ্জাস্থান ধুয়ে প্রয়োজনীয় কাপড় বা প্যাড ব্যবহার করে ছালাত আদায় করবে (শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/৬৭; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৫৭৬; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ‘উমদাহ ১/১০৫)।

প্রশ্ন (২০৪) : ছালাতে ইমাম ছাহেব এক রাক‘আতে তিনটি সিজদা দিয়েছেন। কিন্তু সহো সিজদা দেননি। উক্ত ছালাত সঠিক হয়েছে কি?

উত্তর : উক্ত ছালাত সঠিক হয়েছে। ইমাম শাওকানী বলেন, ওয়াজিব তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ ওয়াজিব হবে এবং সুন্নাত তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ সুন্নাত হবে (শাওকানী, আস-সায়লুল জাররা-র ১/২৭৪ পৃ.)। প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় ভুলক্রমে সিজদা একটি বেশী হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ছালাতে কমবেশী যাই-ই হৌক সালামের আগে বা পরে দু’টি ‘সিজদায়ে সহো’ দিবেন (মুসলিম হা/১২৮৭ (৫৭২), ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-১৯; নায়লুল আওত্বার ৩/৪১১ পৃ.; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সিজদায়ে সহো’ অনুচ্ছেদ)। তবে যদি সিজদায়ে সহো দিতে দেরী হয়ে যায়, তাহ’লে তা আর দিতে হবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩০-৩১)। এমতাবস্থায় ভুলের জন্য কেবল ইস্তেগফার করলেই যথেষ্ট হবে।

প্রশ্ন (২০৫) : জামা‘আতে থাকা অবস্থায় কোন মুছল্লী বাধ্য হয়ে ছালাত ত্যাগ করলে পার্শ্ববর্তী মুছল্লীকে সরে এসে উক্ত খালি স্থান পুরণ করতে হবে কি?

উত্তর : ছালাত চলাকালে কোন মুছল্লী কাতার থেকে বের হয়ে গেলে সে স্থান পূরণ করা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন’ (ছহীহাহ হা/১৮৯২)। এক্ষেত্রে পাশের মুছল্লী সরে এসে ফাঁক পূরণ করবে। অথবা সরাসরি পিছনের কাতার থেকে এগিয়ে গিয়ে ফাঁকা পূর্ণ করবে (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২০২)।

প্রশ্ন (২০৬) : ছালাতরত অবস্থায় মহিলাদের মুখমন্ডল ঢেকে নেকাব পরা যাবে কি?

উত্তর : নারীদের জন্য ছালাতরত অবস্থায় মুখমন্ডল খোলা রাখা কর্তব্য। তবে গায়ের মাহরাম পুরুষ উপস্থিত থাকলে বা পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা থাকলে মুখমন্ডল ঢেকে ছালাত আদায় করতে পারে (বায়হাক্বী হা/৮৮৩২; ইরওয়া হা/১০২৩;  মিশকাত হা/২৬৯০, ইবনু কুদামা, মুগনী ১/৪৩০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২৭১)।

প্রশ্ন (২০৭) : কোন হাফেয যদি অবহেলা, অলসতা বা দুনিয়াবী ব্যস্ততার কারণে কুরআন ভুলে যায়, তার পরকালীন কোন শাস্তি আছে কি?

উত্তর : কুরআন ভুলে যাওয়া মন্দ কাজ। বিশেষতঃ অলসতা বশতঃ এরূপ হলে তা আরো নিন্দনীয়। আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) বলেন, আমরা কোন ব্যক্তির কুরআন শিক্ষার পর তা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখার কারণে ভুলে যাওয়াকে বড় পাপ হিসাবে গণ্য করতাম’। ইবনু সীরীন বলেন, কেউ কুরআন ভুলে গেলে লোকেরা তাকে কঠিন ভাষায় ভৎর্সনা করত’ (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী হা/৫০৩৮-এর আলোচনা, সনদ ছহীহ)। তবে চেষ্টা সত্ত্বেও যদি ভুলে যায়, তবে সে গুনাহগার হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কুরআনের প্রতি যথাযথভাবে যত্নবান হও। আল্লাহর কসম! উট যেমন বাঁধন ছিঁড়ে চলে যায়, কুরআন তার চেয়ে বেশী দ্রুত চলে যায়’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২১৮৭)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কষ্টের সাথে কুরআন মুখস্ত করে, সে দ্বিগুণ ছওয়াব পায়’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২১১২)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে যে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং সে যেন বলে, আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২১৮৮)।

উল্লেখ্য যে, দু’টি কারণে মানুষ কুরআন ভুলে যায়। (১) মানবীয় স্বভাবজাত কারণ তথা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে। এভাবে ভুলে গেলে সে গুনাহগার হবে না। রাসূল (ছাঃ) নিজে মাঝে-মধ্যে কুরআন ভুলে যেতেন এবং ছাহাবীগণের তেলাওয়াত শুনে স্মরণ করে নিতেন (বুখারী হা/৫০৩২, ৫০৪২; মুসলিম হা/৭৮৮, ৭৯০; মিশকাত হা/২১৮৮)। (২) অলসতা বা অবহেলার কারণে। এমন কোন কারণে কুরআন ভুলে গেলে গোনাহগার হ’তে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ১৩/৪২৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৪/৯৯; উছায়মীন, কিতাবুল ইলম ৯৬-৯৭ পৃ.)।

উল্লেখ্য যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন পড়ে ভুলে যাওয়া ব্যক্তির মুখের চামড়া থাকবে না’ মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ভুলে যাবে সে ক্বিয়ামতের দিন অঙ্গহানী অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ হা/১৪৭৪; মিশকাত হা/২২০০; যঈফুল জামে‘ হা/৫১৩৬, ৫১৫৩)। এছাড়া ‘কুরআন বা কুরআনের কোন আয়াত ভুলে যাওয়া সবচেয়ে বড় গোনাহ‘ মর্মে বর্ণিত হাদীছটিও যঈফ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৭২০, যঈফুল জামে‘ হা/৩৭০০)।

প্রশ্ন (২০৮) : বাড়িতে কয়েকজন একত্রে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : বাড়িতে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে জামা‘আতের নেকী পাওয়া যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, একাকী ছালাত আদায়কারীর চেয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায়কারী ২৭ গুণ বেশী নেকী পাবে’ (বুখারী হা/৬৪৫; মুসলিম হা/৬৫০; মিশকাত হা/১০৫২)। তবে মসজিদে আদায়ের নেকী পাওয়া যাবে না। মসজিদে ছালাত আদায়ের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’ (বুখারী হা/৬৬২; মুসলিম হা/৬৬৯; মিশকাত হা/৬৯৮)। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করে একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসবে, তার প্রতি পদক্ষেপে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে পাপ মোচন করা হয় ও একটি করে নেকী লেখা হয় (বুখারী হা/৪৭৭; মুসলিম হা/৬৪৯, ৬৫৪; মিশকাত হা/৭০২, ১০৭২)।

এছাড়া বিনা কারণে মসজিদে ছালাত আদায় থেকে বিরত থাকা জায়েয নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি আযান শুনলো এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামা‘আতে উপস্থিত হ’ল না, তার ছালাত নেই (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; মিশকাত হা/১০৭৭)। জনৈক অন্ধ ব্যক্তি তাকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার মত লোক না থাকার ওযর পেশ করার পরেও রাসূল (ছাঃ) তাকে বাড়ীতে ছালাত আদায়ের অনুমতি দেননি (মুসলিম হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১০৫৪)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ ছেড়ে বাড়ীতে ছালাত আদায় করল সে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত পরিত্যাগ করল। আর যে ব্যক্তি নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ করল সে পথভ্রষ্ট হ’ল (আবুদাঊদ হা/৫৫০)।

প্রশ্ন (২০৯) : জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠের পর ইমাম যখন অন্য সূরা পাঠ করেন তখন কি মুছল্লীকে চুপ থাকতে হবে? একেবারে চুপ না থেকে তাসবীহ পাঠ করা, আয়াতগুলো ইমামের সাথে সাথে আওড়ানো বা আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যাবে কি?

উত্তর : সূরা ফাতিহা ব্যতীত ইমামের অন্য সূরা পাঠকালীন মুছল্লীরা মনোযোগ সহকারে ইমামের তেলাওয়াত শুনবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২২১, ২৩৪)। কারণ আল্লাহ বলেন, আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হ’তে পার (আ‘রাফ ৭/২০৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আর যখন ইমাম তেলাওয়াত করবে তখন তুমি চুপ থাকবে (মুসলিম হা/৪০৪; মিশকাত হা/৮৫৭)। তবে আয়াতের অর্থ মনে মনে অনুধাবন করা যাবে। বরং ছালাতে মনোযোগী হওয়ার জন্য ইমামের তেলাওয়াত অনুধাবন করে শোনা যরূরী (হাকেম হা/২৪৪১; ছহীহাহ হা/২৯৬৫; গাযালী, আল-ইহইয়া ১/২৮২)। আর ফরয ছালাতে তেলাওয়াতের সময় যিকির বা তাসবীহের বিষয়ে কোন স্পষ্ট দলীল পাওয়া যায় না। তবে নফল ছালাতের তেলাওয়াতে রাসূল (ছাঃ) কোন রহমতের আয়াতে পৌঁছলে আল্লাহর রহমত চাইতেন, আযাবের আয়াত আসলে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, তাসবীহের আয়াত আসলে তাসবীহ পাঠ করতেন (মুসলিম হা/২০৩; আবূদাউদ হা/৮৭৩; নাসাঈ হা/১১৩৩)। অতএব নফল ছালাতে অনুচ্চ স্বরে প্রাসঙ্গিক তাসবীহ বা দো‘আ পাঠ করতে কোন বাধা নেই বরং তা সুন্নাত। আর ফরয ছালাতে জায়েয হ’লেও না পড়াই উত্তম (আ‘রাফ ৭/২০৪; আল-মুগনী ১/৩৯৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২৮৯-৯০)।

প্রশ্ন (২১০) : আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে ছালাত ক্বছর করতে চাচ্ছি। কিন্তু কোন ব্যস্ততা না থাকায় এবং পাশেই মসজিদ থাকায় প্রতি ওয়াক্ত ছালাত জামা‘আতে পড়েছি এবং সাথে সুন্নাত ছালাতগুলোও পড়েছি। এক্ষণে ক্বছর করা এবং জামা‘আতে ছালাত আদায় কোনটি যরূরী? আর সুন্নাত আদায় করলে গুনাহ হবে কি?

উত্তর : সফরে ছালাত ক্বছর করা উত্তম (নিসা ৪/১০১; বুখারী হা/১১০২; মুসলিম হা/৬৮৯; মিশকাত হা/১৩৩৮)। তবে মুক্বীম-মুসাফির উভয় অবস্থাতেই জামা‘আতে ছালাত আদায় করা ওয়াজিব (বুখারী হা/৬১৮; আহমাদ হা/১৮৬২; ছহীহাহ হা/২৬৭৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/২৫২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৯৭)। অতএব সফরে গিয়ে স্থানীয় মসজিদে মুক্বীম ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করলে পূর্ণ ছালাত আদায় করবে। তবে সফরকালে একাকী ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিংবা মুসাফির ইমামের পিছনে ছালাত ক্বছর করবে। ইবনু ওমর, ইবনু আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী সফরে জামা‘আতে পুরা পড়তেন ও একাকী ক্বছর করতেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৩৪৭-৪৮; আহমাদ হা/১৮৬২)।

এছাড়া সফরে সুন্নাতে রাতেবাগুলো ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। রাসূল (ছাঃ) সফরে সেগুলো আদায় করতেন না (বুখারী হা/১৬৭৩; মিশকাত হা/২৬০৭; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৪৫৬)। তবে ফজরের পূর্বের সুন্নাত, বিতরের ছালাত ও তাহাজ্জুদ, যোহা সহ অন্যান্য নফল ছালাত আদায় করা যায় (ইবনুল কাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৪৫৬-৫৭; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১০/৩৮১)। মোটকথা সফরে ছালাত ক্বছর করা ও সুন্নাতে রাতেবা ছেড়ে দেওয়া মুস্তাহাব। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়। কেউ চাইলে গ্রহণ করতে পারে, নাও পারে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৯৭-১৯৮)।

প্রশ্ন (২১১) : এক্বামত দেওয়ার ছালাতে সময় ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ’ বলার পর মুছল্লীগণ দাঁড়াবেন এবং আগে দাঁড়ানো যাবে না, শরী‘আতে এরূপ কোন নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর : এরূপ কোন নির্দেশনা শরী‘আতে নেই। এটি কতিপয় বিদ্বানের বক্তব্য মাত্র (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/২৩৩)। বরং মসজিদে ইমাম উপস্থিত থাকলে বা প্রবেশ করলে এবং সময় হয়ে গেলে মুছল্লীরা স্বাভাবিকভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যখন ছালাতের এক্বামত দেওয়া হবে, তখন আমাকে বের হয়ে আসতে না দেখে তোমরা দাঁড়াবে না’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৬৮৫)। এতে বুঝা যায় যে, ইমাম আসার আগে দাঁড়ানো যাবে না। এখানে ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ’ বলার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন (২১২) : ছালাতের ভিতরে মনোযোগী হওয়ার জন্য বার বার মৃত্যু বা পরকালের কথা স্মরণ করলে ছওয়াব কমে যাবে কি?

উত্তর : ছালাতের ভিতরে পরকাল বা মৃত্যুর কথা স্মরণ করলে ছওয়াব কমবে না। বরং মনোযোগী হওয়ার জন্য অধিকহারে মৃত্যু ও পরকালকে স্মরণ করাই উত্তম। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সফলকাম হবে মুমিনগণ। যারা তাদের ছালাতে ভীত-বিনয়ী (মুমিনূন ২৩/১-২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি তোমার ছালাতে মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ মানুষ যখন তার ছালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন যথার্থই সে তার ছালাতকে সুন্দর করে। আর তুমি সেই ব্যক্তির মত ছালাত পড়, যে মনে করে যে, এটাই তার জীবনের শেষ ছালাত। তুমি প্রত্যেক সেই কর্ম থেকে দূরে থাক, যা সম্পাদনের কারণে তোমাকে (অপরের নিকটে) ক্ষমা চাইতে হয় (ছহীহাহ হা/২৮৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৮৪৯)। অতএব ছালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করা ছালাতে মনোযোগী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম।

প্রশ্ন (২১৩) : আল্লাহ তা‘আলার কোন ছিফাত বা গুণবাচক নামের মাধ্যমে কিছু প্রার্থনা করা যাবে কি? যেমন কেউ বলল, হে আল্লাহর কালাম! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ইত্যাদি।

উত্তর : আল্লাহ তা‘আলার কোন গুণবাচক নামের কাছে কোন কিছু চাওয়া যাবে না। বরং যিনি এই সকল ছিফাত বা গুণবাচক নামের মালিক তথা আল্লাহ তা‘আলার নিকট বা গুণবাচক নাম ধরে যাবতীয় প্রার্থনা করতে হবে। যেমন হে কালামের মালিক! হে ক্ষমতার মালিক! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও বা আমার প্রতি রহম কর ইত্যাদি (ইবনু তায়মিয়াহ, তালখীছুল ইগাছাহ ১৮১; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৩০/২৩৪)।

প্রশ্ন (২১৪) : ছালাতের মধ্যে কোন তাকবীর বা রুকূ-সিজদা বেশী হয়ে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে কি?

উত্তর : ছালাতের মধ্যে তাকবীর, রাক‘আত বা কোন কিছু নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশী হয়ে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। একবার রাসূল (ছাঃ) যোহরের ছালাত ৫ রাক‘আত আদায় করে সালাম ফিরালে মুছল্লীরা তাঁকে ভুল ধরিয়ে দেন। তখন তিনি সহো সিজদা আদায় করেন (বুখারী হা/৪০৪; মিশকাত হা/১০১৬)।

প্রশ্ন (২১৫) : মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলার বিধান কি? ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলবে তার ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?

উত্তর : মসজিদে অপ্রয়োজনীয় দুনিয়ারী কথা-বার্তা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াবী কথাবার্তা বলবে। অতএব তোমরা এসব লোকদের গল্প-গুজবে বসবে না। আল্লাহ তা‘আলার এমন লোকের প্রয়োজন নেই (বায়হাক্বী, শুআব হা/২৯৬২; ছহীহাহ হা/১১৬৩; মিশকাত হা/৭৪৩)। ওমর ফারূক (রাঃ) দুনিয়াবী কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকার জন্য মসজিদে নববীর পার্শ্বে বুতাইহা নামক একটি চত্বর তৈরী করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি অনর্থক কথা, কবিতা পাঠ কিংবা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে চায়, সে যেন ঐ স্থানে চলে যায়’ (মুওয়াত্ত্বা মালেক, মিশকাত হা/৭৪৫)। তবে ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলবে তার ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, আবুল ফযল আল-মাক্বদেসী, ৩৯ পৃঃ, হা/৪০)।

প্রশ্ন (২১৬) : মসজিদে কোন একটি স্থানকে নিজের জন্য নির্ধারণ করে নেওয়া শরী‘আতসম্মত হবে কি?

উত্তর : মসজিদে কোন স্থানকে নির্দিষ্ট করে নেওয়া শরী‘আতসম্মত নয়। আব্দুর রহমান বিন শিবল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। সিজদায় কাকের ন্যায় ঠোকর মারতে, হিংস্র প্রাণীর ন্যায় হাত বিছিয়ে দিতে এবং মসজিদের কোন স্থানকে নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে। উট যেভাবে নিজের জন্য স্থান নির্ধারণ করে নেয়’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯০২)। এ বিষয়ে হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এ ধরনের কাজ মুছল্ল-ীকে রিয়া-য় উপনীত করে (মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/২২৩ পৃঃ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অধ্যায়)। অতএব প্রত্যেক মুছল্ল-ীর উচিত মসজিদে বিশেষ স্থান নির্বাচন থেকে বিরত থেকে পুরো মসজিদকে ছালাতের স্থান হিসাবে গণ্য করা। তবে নফল ছালাত নির্দিষ্ট স্থানে নিয়মিতভাবে আদায় করায় দোষ নেই (বুখারী হা/৫০২; মুসলিম হা/৫০৯)।

প্রশ্ন (২১৭) : কোন কোন মসজিদে মাগরিবের আযানের পর ইমাম ছাহেবগণ ছোট ছোট হাদীছ বর্ণনা করেন। এসময় নিয়মিতভাবে এরূপ করা যাবে কি?

উত্তর : মাগরিবের আযানের পর ছালাতের পূর্বে এরূপ আমল  নিয়মিত করা যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) মাগরিবের আযানের পর ও ফরয ছালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে উৎসাহ দিতেন। রাসূল (ছাঃ) একদিন তিনবার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর। তবে যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১১৬৫; ছহীহাহ হা/২৩২-এর আলোচনা)। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে মাগরিবের ছালাতের পূর্বে সূর্য ডোবার পর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতাম। তাঁকে বলা হ’ল, তিনি কি সেই দুই রাক‘আত পড়তেন? আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি আমাদেরকে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে দেখতেন, তিনি আদেশ করতেন না, নিষেধও করতেন না (মুসলিম হা/৩০৩)।

আনাস (রাঃ) আরো বলেন, আমরা মদীনায় ছিলাম। মুওয়াযযিন মাগরিবের ছালাতের আযান দিলে তারা তাড়াহুড়া করে স্তম্ভের নিকট গিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। এমনকি কোন আগন্তুক মসজিদে প্রবেশ করলে অধিক সংখ্যক ছালাত আদায়কারীর কারণে তার মনে হ’ত যে, (ফরয) ছালাত শেষ হয়ে গেছে (মুসলিম হা/৮৩৭; মিশকাত হা/১১৮০)। নির্দেশটি তিনবার বলার মধ্যেই উক্ত নফল ছালাতের গুরুত্ব বুঝা যায়। অতএব এসময় হাদীছ পাঠ বা অন্য কোন আলোচনার পরিবর্তে সুযোগ ও সাধ্যমত নফল দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।

প্রশ্ন (২১৮) : জনৈক আলেম বলেন, ‘জামা‘আতে ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি মারা গেলে সে জান্নাতী’-উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক। কারণ এ সময় মুছল্লী আল্লাহর  যিম্মায় থাকে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছয়টি এমন আমল রয়েছে, কোন মুসলমান যদি তার একটির উপরও আমলরত অবস্থায় মারা যায়, তবে আল্লাহ তার জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য যিম্মাদার হবেন- (১) যে ব্যক্তি মুজাহিদ হিসাবে বাড়ি থেকে বের হয় এবং ঐ অবস্থাতেই মারা যায় (২) যে ব্যক্তি কোন জানাযায় অংশগ্রহণ করে এবং ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (৩) যে ব্যক্তি কোন রোগীর সেবা বা তাকে দেখতে যাওয়া অবস্থায় মারা যায় (৪) যে ভালভাবে ওযূ করে ছালাত আদায়ের জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং মারা যায় (৫) যে ইমাম বা শাসকের নিকট কেবল তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য বের হয়ে মৃত্যুবরণ করে (৬) যে ব্যক্তি নিজ গৃহে অবস্থান করে, কোন মুসলমানের নিন্দা করে না, তাদের প্রতি ক্রোধ প্রদর্শন করে না, প্রতিশোধও নেয় না। উক্ত ৬টি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করানোর যিম্মাদার হবেন’ (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৮২২; ছহীহাহ হা/৩৩৮৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৩৯)।

প্রশ্ন (২১৯) : মসজিদে অনেক সময় মুছল্লী পাওয়া যায় না। দেখা যায়, মুওয়াযযিন আযান দিয়ে একা ছালাত পড়ে সময়ের পূর্বেই বাসায় চলে গেছেন। সেক্ষেত্রে মসজিদে একাই ছালাত আদায় করতে হয়। এভাবে একাকী ছালাত আদায় করলে জামা’আতের নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় মুছাল্লী জামা‘আতের ছওয়াব পেয়ে যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/২৪৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে মসজিদে গিয়ে দেখতে পেল লোকেরা ছালাত আদায় করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ তাকেও জামা‘আতে শামিল হয়ে ছালাত আদায়কারীদের সমান ছওয়াব দান করবেন। অথচ তাদের ছওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না (আবুদাউদ হা/৫৬৪; মিশকাত হা/১১৪৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৬৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে ওযূ করে ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন সে তার ডান পা উঠাতেই মহান আল্লাহ তার জন্য একটি ছওয়াব লিখে দেন। এরপর বাম পা ফেলার সাথে সাথেই মহা সম্মানিত আল্লাহ তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এখন তোমাদের ইচ্ছা হ’লে মসজিদের নিকটে থাকবে অথবা দূরে। অতঃপর সে যখন মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করে, তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। যদি জামা‘আত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মসজিদে উপস্থিত হয় এবং অবশিষ্ট ছালাতে শামিল হয়ে ছালাতের ছুটে যাওয়া অংশ পূর্ণ করে, তাহ’লেও তাকে অনুরূপ (জামা‘আতে পূর্ণ ছালাত আদায়কারীর সমান ছওয়াব) দেয়া হয়। আর যদি সে (মসজিদে এসে) জামা‘আত সমাপ্ত দেখে একাকী ছালাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে ঐরূপ (ক্ষমা করে) দেয়া হয় (আবুদাউদ হা/৫৬৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩০১)। উল্লেখ্য যে, মুওয়াযযিন বিনা ওযরে আগে চলে গেলে তিনি জামা‘আতের ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন। বরং দায়িত্বহীনতার কারণে গোনাহগারও হ’তে পারেন।

প্রশ্ন (২২০) : ফরয ও নফল ছালাত শেষে একাকী নিয়মিতভাবে হাত তুলে দো‘আ করা যাবে কি?

উত্তর : ফরয বা নফল ছালাত শেষে নিয়মিত হাত তুলে দো‘আ করা সুন্নাতসম্মত নয়। তবে মাঝে-মধ্যে একাকী হাত তুলে দো‘আ করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ অত্যধিক লজ্জাশীল ও দাতা। যখন কোন ব্যক্তি তার দরবারে দুই হাত তুলে (প্রার্থনা করে), তখন তিনি তার হাত শূন্য বা বঞ্চিত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন (তিরমিযী হা/৩৫৫৬; মিশকাত হা/২২৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৩৫)। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, যেকোন সময় হাত তুলে আল্লাহর নিকট দো‘আ করা যায়। কিন্তু এটাকে নির্দিষ্ট নিয়ম বানিয়ে নেওয়া যাবে না। কেননা ছালাতই হ’ল দো‘আ কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়।

প্রশ্ন (২২১) : মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি যেভাবে সালাম ও দরূদ পাঠ করা হয় অন্যান্য নবী-রাসূলগণের প্রতিও কি সেভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে?

উত্তর : শেষ নবীর মতই অন্যান্য নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। তবে গুরুত্বের দিক থেকে রাসূল (ছাঃ) দরূদের সর্বাধিক হকদার। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের প্রতি দরূদ পাঠ কর। কারণ আমার মতই তাদেরকে নবুঅত দিয়ে পাঠানো হয়েছিল’ (ছহীহাহ হা/২৯৬৩)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের প্রতি দরূদ পাঠ করা শরী‘আতসম্মত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে (জালাউল আফহাম ৪৬৩ পৃ.)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের প্রতি দরূদ পাঠ করা জায়েয (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ৪/০২)।

প্রশ্ন (২২২) : অর্থ, মর্ম কিছু না বুঝে উদ্দেশ্য ছাড়াই আরবী ভাষায় মুনাজাত করলে উক্ত দো‘আ কবুল হবে কি?

উত্তর : কুরআন বা হাদীছে বর্ণিত দো‘আর অর্থ না জেনেও কেউ দো‘আ করলে আললাহ তার নিয়ত ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে দো‘আ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ দো‘আর উৎস থাকে হৃদয়ে। আর জিহবা তার অনুগামী (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৪৮৯)। তবে অর্থ বুঝে দো‘আ করলে তা মানসিক  প্রশান্তির কারণ হয়।  সেকারণ দো‘আর অর্থ বুঝা প্রয়োজন এবং আমরা আল্লাহর নিকট কী প্রার্থনা করছি সেটাও জানা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সারগর্ভ দো‘আগুলি পাঠ করা উত্তম। যেমন রববানা আ-তেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ...। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) অত্র দো‘আটি অধিকাংশ সময় পড়তেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৪৮৭)।

প্রশ্ন (২২৩) : ওযূতে ঘাড় মাসাহ করলে ওযূ বাতিল হয়ে যাবে কি?

উত্তর : ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা সুন্নাতও নয়, মুস্তাহাবও নয়।  কারণ এর স্বপক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১০২)। আবূদাঊদে এ সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা যঈফ (আবূদাঊদ হা/১৩২, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯-এর আলোচনা দ্রঃ)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এটি সুন্নাত বা মুস্তাহাব নয়। আর এটিই সঠিক মত (আল-মাজমূ‘ ১/৪৬৪)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি (মাজমূূঊল ফাতাওয়া ২১/১২৭)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘ঘাড় মাসাহ-এর ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) হ’তে কোন ছহীহ হাদীছ নেই’ (যাদুল মা‘আদ ১/১৮৭)। উল্লেখ্য যে, ‘যে ব্যক্তি ওযূতে ঘাড় মাসাহ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবে না’ বলে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সেটি মওযূ‘ বা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪)। এক্ষণে যে ব্যক্তি ভিত্তিহীন জানার পরেও এর উপর আমল করবে তার ওযূ ত্রুটিপূর্ণ হবে এবং সে গুনাহগার হবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৩/৭)।

প্রশ্ন (২২৪) : বাড়ি থেকে সফরের উদ্দেশ্যে ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে বের হ’তে হ’লে আযানের আগেই ছালাত আদায় করে নেওয়া যাবে কি?

উত্তর : যাবে না। কারণ সময়ের পূর্বে ছালাত আদায় যথেষ্ট নয়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত (নিসা ৪/১০৩)। অতএব ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরেই ফজরের ছালাত আদায় করতে হবে। যদি রাস্তায় ওয়াক্ত হয়, তবে সেখানেই পড়বে। সেই সুযোগ না থাকলে পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করবে (উছায়মীন, মাজমু‘উল ফাতাওয়া ১২/২১৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ  ৮/১২০, ১২৬)। আর পরিবহনে ক্বিবলামুখী না হ’লেও চলবে (বাক্বারাহ ২/২৩৮; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়া হা/৫৮৮; ইবনু মাজাহ হা/১০২০)। তবে ক্বিবলামুখী হয়ে ছালাত শুরু করা বাঞ্ছনীয় (আবূদাঊদ হা/১২২৪-২৮; নায়ল ২/২৯১ পৃঃ)।

স্মর্তব্য যে, যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশা একত্রে জমা তাক্বদীম অথবা জমা তাখীর করা যায়। অর্থাৎ পরের ছালাত আগে এনে বা আগের ছালাত পরে নিয়ে জমা করা যায় (আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৪৪)।

প্রশ্ন (২২৫) : ওযূ করার পর কিছু খেলে কুলি করা আবশ্যক কি?

উত্তর : ওযূ করার পরে কিছু খেলে কুলি করা মুস্তাহাব। কারণ কোন কোন সময় দু’দাঁতের মাঝে খাবার আটকে থাকে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) একবার দুধ পান করার পর পানি আনালেন। এরপর কুলি করলেন এবং বললেন, এতে তৈলাক্ত পদার্থ রয়েছে (মুসলিম হা/৩৫৮; মিশকাত হা/৩০৭)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘দুধ পান করার পর কুলি করা মুস্তাহাব। অনুরূপ যেকোন খাবার গ্রহণ করার পর কুলি করা মুস্তাহাব। যাতে ছালাতরত অবস্থায় মুখের ভিতর কোন খাবার আটকে না থাকে’ (শরহ নববী ৪/৪৬)। স্মর্তব্য যে, ওযূর পরে উটের গোশত খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে (মুসলিম হা/৩৬০; মিশকাত হা/৩০৫)।

প্রশ্ন (২২৬) : ছালাতরত অবস্থায় কোন বিশেষ কারণে কয়েক ধাপ স্থান পরিবর্তন করতে হ’লে ছালাত হবে কি?

উত্তর : ছালাত অবস্থায় অকারণ নড়াচড়া করা বা হাটাহাটি করা নিষিদ্ধ। কিন্তু কাতার পূরণ করার জন্য বা ফাঁকা জায়গা পূরণ  করার জন্য স্থান পরিবর্তন করা মুস্তাহাব (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৭, ৩১০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১১২-১৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি (কাতারের মাঝে) কোন ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন (ছহীহাহ হা/১৮৯২; ছহীহুত তারগীব হা/৫০৫)। এক্ষণে ফাঁকা জায়গা পূরণ করার ক্ষেত্রে উত্তম হ’ল পিছন থেকে সামনে গিয়ে পূরণ করা। এমন কেউ না করলে পাশের মুছল্লীরা  ফাঁকা জায়গা পূরণ করে নিবে (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩১২)।

প্রশ্ন (২২৭) : তাহাজ্জুদ ও বিতরের ছালাতে ক্বিরাআত নীরবে না সরবে পাঠ করতে হবে?

উত্তর : রাতের নফল ছালাতে কিরাআত সরবে পাঠ করা উত্তম। তবে নীরবেও পাঠ করা যায় (আবূদাউদ হা/১৩২৯; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪১৯৯; মিশকাত হা/১২০৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১২৪-২৬)। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু কায়েস বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর রাতের ছালাতের ক্বিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, তিনি কি ক্বিরাআত নীরবে পড়তেন, না সরবে? তিনি বললেন, উভয়টিই করতেন। কখনো নীরবে পড়তেন, আবার কখনো সরবে পড়তেন। আমি বললাম, আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি এ ব্যাপারে দু’ধরনেরই সুযোগ রেখেছেন (তিরমিযী হা/৪৪৯; আবুদাউদ হা/১৪৩৭; আহমাদ হা/২৪৪৯৭, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (২২৮) : স্বপ্নদোষ হওয়ার পর ভুলে যাওয়ায় একাধিক ওয়াক্তের ছালাত গোসল না করেই আদায় করেছি। দু’দিন পর মনে আসলে করণীয় কী?

উত্তর : উক্ত ছালাতগুলি পুনরায় ক্বাযা আদায় করতে হবে। কারণ অপবিত্র অবস্থার ছালাত আল্লাহ কবুল করেন না (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৭৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১২/১৪৭; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)। উল্লেখ্য যে, পূর্বসময়ে অজ্ঞতা বা না জানার কারণে কেউ যদি অগণিত ছালাত এমন অবস্থায় আদায় করে থাকে, তাহ’লে খালেছ নিয়তে তওবা করবে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

প্রশ্ন (২২৯) : কিছু মসজিদে দেখা যাচ্ছে ফরয ছালাতের সালাম ফিরানোর পরেই উচ্চ আওয়াযে হাদীছ পাঠ শুরু হচ্ছে। অন্যদিকে মাসবূক মুছল্লীরা ফরযের বাকী অংশ আদায় করছেন। উচ্চ আওয়াযের কারণে মাসবূকের সূরা বা দো‘আ পাঠ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আবার সব মাসবূকের ছালাত শেষ হ’তেও অন্য মুছল্লীদের সুন্নাত পড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। এক্ষণে হাদীছ পাঠ কিভাবে এবং কোন সময়ে করতে হবে?

উত্তর : মাসবূকের ছালাত শেষ হওয়ার পর হাদীছ পাঠ করাই উত্তম। মসজিদে মুছল্লীদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন কোন কাজ করা সমীচীন নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই ছালাতের মধ্যে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী হা/১১৯৯; মুসলিম হা/৫৩৮; মিশকাত হা/৯৭৯)।

এক্ষণে যদি কোন মাসবূকের ছালাত শেষ করতে অধিক বিলম্ব হওয়ার কারণে মুছল্লীদের সুন্নাত আদায়ের সময় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির বিবেচনায় হাদীছ পাঠ শুরু করতে পারে। কারণ হাদীছ শোনাও দ্বীন শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

প্রশ্ন (২৩০) : মসজিদে বহুমূল্যের টাইলস্ সহ নানা বিলাসবহুল জিনিস ব্যবহারে প্রচুর ব্যয় করা বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে শারঈ কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?

উত্তর : সাধারণভাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কোন বাধা নেই। যাতে মুছল্লীরা প্রশান্তির সাথে ছালাত আদায় করতে পারেন। ওছমান (রাঃ) মসজিদে নববীর সৌন্দর্য বর্ধন করেছিলেন (বুখারী ফাৎহসহ হা/৪৪৬, ১/৬৪৩)। তবে সাজ-সজ্জার প্রতিযোগিতা এবং গর্ব-অহংকার প্রকাশের জন্য মসজিদের জাঁকজমক করা নিষিদ্ধ। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল এই যে, লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে’ (নাসাঈ হা/৬৮৯; মিশকাত হা/৭১৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৯৫)। ওমর (রাঃ) মসজিদে নববীর সংস্কারের হুকুম দিয়ে বলেন, আমি লোকদেরকে বৃষ্টি হ’তে রক্ষা করতে চাই। মসজিদে লাল বা হলুদ রং লাগানো হ’তে সাবধান থাক, এতে মানুষকে তুমি ফিৎনায় ফেলবে। আনাস (রাঃ) বলেন, লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে অথচ তারা একে কমই (ইবাদতের মাধ্যমে) আবাদ রাখবে (বুখারী ২/২৭০)। আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, তোমরা যখন মসজিদের চাকচিক্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন তোমরা পরাজিত হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে (ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৫; ছহীহাহ হা/১৩৫১)। আলবানী (রহঃ) এই হাদীছকে মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব মসজিদের চাকচিক্যে বাড়াবাড়ি থেকে সতর্ক হ’তে হবে।

প্রশ্ন (২৩১) : তাশাহহুদের সময় ডান পায়ের আংগুল কেবলামুখী করে রাখা আবশ্যক কি? পায়ের ব্যথার কারণে কেউ না রাখলে গুনাহগার হবে কি?

উত্তর : তাশাহহুদের সময় ডান পায়ের আংগুল কেবলামুখী করে রাখা সুন্নাত (মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯১)। অসুস্থতা বা দৈহিক স্থূলতার কারণে যদি কেউ আংগুল কেবলামুখী করতে না পারে বা পায়ের পাতা দাঁড় করিয়ে রাখতে না পারে, তাহ’লে কোন দোষ নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪৪৬)।

প্রশ্ন (২৩২) : পিতা আমাকে সবসময় আমাদের মসজিদে জুম‘আর খুৎবা ও ছালাত আদায় করানোর জন্য জোর করেন। কিন্তু মসজিদে আমার চেয়ে জ্ঞানী ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিগণ উপস্থিত থাকায় আমি তা অপসন্দ করি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : নির্দিষ্ট ইমাম থাকলে তিনিই ইমামতির সর্বাধিক হকদার। তার অনুমতিক্রমে অন্যে ইমামতি করতে পারবে। আর নির্ধারিত না থাকলে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকেই ইমামতির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘জামা‘আতের ইমামতি ঐ ব্যক্তি করবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল কুরআন পড়তে জানে (যার বেশী মুখস্থ)। যদি তারা তেলাওয়াতে সমান হয়, তাহ’লে তাদের মধ্যে যে সুন্নাহ বেশী জানে সে (ইমামতি করবে)...’ (মুসলিম হা/৬৭৩; মিশকাত হা/১১১৭)। তবে সাময়িকভাবে ইমামতি বা জুম‘আর খুৎবার প্রশিক্ষণের জন্য এরূপ করা হ’লে তাতে কোন দোষ নেই।

প্রশ্ন (২৩৩) : জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নতুন স্থানে নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্ষণে পুরাতন মসজিদের ভৌত কাঠামো এবং জমি বিক্রি করে তা নতুন মসজিদের কাজে লাগানো যাবে কি?

উত্তর : পুরাতন মসজিদের জিনিসপত্র নবনির্মিতব্য মসজিদে ব্যবহার করা যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৭৬-৭৭; ইবনুল হুমাম, ফাৎহুল ক্বাদীর ৬/২২৮)। তাছাড়া পুরাতন মসজিদের জমি বিক্রয় করেও তার অর্থ নতুন মসজিদে লাগানো যাবে। কূফার মসজিদে রক্ষিত বায়তুল মাল চুরি হওয়ায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খলীফা ওমর (রাঃ)-এর নিকট একটি পত্র লিখেন। তখন ওমর (রাঃ) অন্যত্র মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। এরপর  উক্ত স্থানকে খেজুরের বাজারে পরিণত করা হয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ৩১/২১৫-২০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৩১২-১৩)।

প্রশ্ন (২৩৪) : মেয়েদের জন্য ছালাতের সময় চুল ছেড়ে রাখা আবশ্যক কি? বের হয়ে যাওয়ার আশংকায় কেউ বেণী বেঁধে রাখতে পারবে কি?

উত্তর : ছালাতে মেয়েরা চুল বেণী বা খোপা করে রাখবে। কারণ মেয়েদের চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত। যা ঢেকে রাখা ওয়াজিব। মেয়েদের চুল যাতে বাইরে বের হয়ে না যায় সেদিকে যেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, তেমনি তাদের চুলের খোপা যেন উটের কুঁজের মত উঁচু হয়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/১২৭; আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর টেপ নং ৫৩৪)।

উল্লেখ্য যে, ছালাতে চুল বাঁধা নিষেধের বিষয়টি পুরুষ মুছল্লীদের জন্য খাছ, নারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। হাফেয ইরাকী বলেন, এটি পুরুষের জন্য খাছ, মেয়েদের জন্য নয়। কেননা তাদের চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা ছালাত অবস্থায় ঢেকে রাখা ওয়াজিব। যদি সে বেণী বা খোপা খুলে দেয় এবং চুল ছড়িয়ে পড়ে ও তা বেরিয়ে যায়, তাহ’লে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে (নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৬-২৩৭ ‘পুরুষের জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ)। আলবানী বলেন, ‘এটা প্রকাশ্য যে, সিজদাকালে চুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য নয়’ (ছিফাতু ছালাতিন্নবী পৃ: ১২৫)। অতএব নারীরা চুল বেণী/খোপা করে ছালাত আদায় করবে।

প্রশ্ন (২৩৫) : কোন ঋতুবতী মহিলার স্বপ্নদোষ হ’লে তাকে ফরয গোসল করতে হবে কি?

উত্তর : কোন ঋতুবতী মহিলার স্বপ্নদোষ হ’লে সে ফরয গোসল করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তাহ’লে গোসলের মাধ্যমে ভালভাবে পবিত্র হও’ (মায়েদাহ ৫/০৬)। ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, যদি কেউ ঋতুকালীন নাপাকীর গোসল করে, তাহ’লে তার গোসল শুদ্ধ হবে ও নাপাকী দূর হয়ে যাবে (মুগনী ১/৫৪; বাস্সাম, তাওযীহুল আহকাম ১/২৯৭)। তবে হায়েয বন্ধ না হ’লে পুরোপুরি পবিত্র হ’তে পারবে না। এর কারণ সম্পর্কে বিদ্বানগণ বলেন, হায়েয অবস্থায় স্পর্শ ছাড়া দেখে দেখে বা মুখস্থ কুরআন পাঠ করা যায়। কিন্তু স্ত্রী সহবাস বা স্বপ্নদোষের কারণে নাপাক হ’লে কুরআন পাঠ করা নাজায়েয। নারীরা যাতে কুরআন তেলাওয়াত করার সুযোগ পায়, সেজন্য তারা নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়ার গোসল করে নিবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৯/২৩৮, ২১/৪৬০; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২/০৭,২২)।

প্রশ্ন (২৩৬) : ছালাতুয যাওয়াল-এর বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : ‘ছালাতুয যাওয়াল’ বা বা সূর্য ঢলে পড়ার ছালাত মূলতঃ ৪ রাক‘আত বিশিষ্ট নফল ছালাত। আব্দুল্লাহ ইবনুস সায়েব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূর্য ঢলার পর হ’তে যোহরের পূর্ব পর্যন্ত ৪ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, এ সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। আমার একান্ত ইচ্ছা, এ সময় আমার কোন সৎকর্ম আল্লাহর দরবারে পৌঁছাক (তিরমিযী হা/৪৭৮; আহমাদ হা/২৩৫৯৭; মিশকাত হা/১১৬৯)। অন্য হাদীছে আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) সূর্য ঢলে পড়লে ৪ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সূর্য হেলে গেলে (গুরুত্বের সঙ্গে) ৪ রাক‘আত ছালাত আদায় করেন কেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সূর্য ঢলার পর আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং যোহরের সময় পর্যন্ত তা খোলা থাকে। আমি চাই এ সময় আমার কোন ভালো কাজ আকাশে পৌঁছাক। আমি বললাম, এর প্রতি রাক‘আতেই কি ক্বিরাআত পড়তে হয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, ২ রাক‘আতের পর সালাম ফিরাতে হয় কি? তিনি বললেন, না (তিরমিযী, মুখতাছারুশ শামায়েল হা/২৪৯; আহমাদ হা/২৩৫৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১৫৩২)। একদল বিদ্বানের মতে এই ছালাত ছিল যোহরের পূর্বের ৪ রাক‘আত সুন্নাত ছালাত (মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর ১/৪৬৭)। তবে ইবনুল ক্বাইয়িম, ইরাক্বী ও মুবারকপুরী সহ কতিপয় বিদ্বানের মতে এটি স্বতন্ত্র ছালাত, যাকে ‘ছালাতুয যাওয়াল’ বা সূর্য ঢলে পড়ার ছালাত বলা হয়। এটি যোহরের ছালাতের পূর্বের চার রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ নয় (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/২৯৮-৯৯; মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/১৪৬; আওনুল মা‘বুদ ৪/১০৪; তোহফাহ ২/৪৭৯)। অতএব কেউ চাইলে নফল ছালাত হিসাবে এটি আদায় করতে পারে।

প্রশ্ন (২৩৭) : ছালাতের মধ্যে আশেপাশে দৃষ্টি দেওয়ার ব্যাপারে শারঈ নির্দেশনা কি? প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে আশপাশে দৃষ্টি দিলে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে কি?

উত্তর : ছালাতে বিনা কারণে ইলতেফাত বা এদিক-ওদিক দেহ বা দৃষ্টি ফিরানো নিষেধ, কেননা তা ছালাতে খুশূ-খুযূর বিপরীত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ছালাতের মধ্যে এদিক-সেদিক দেখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এটা শয়তানের ছোঁ মারা। শয়তান ছোঁ মেরে বান্দার ছালাতের কিছু অংশ নিয়ে যায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮২)। তবে বিশেষ প্রয়োজনে দৃষ্টি দেয়া বা হালকা অবস্থান পরিবর্তন করা জায়েয আছে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থায় (প্রয়োজনে) ডানে-বাঁয়ে তাকাতেন কিন্তু পিছনের দিকে ঘাড় ফিরাতেন না (তিরমিযী হা/৫৮৭, ছহীহ)। সাহল বিন হানযালা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতের ইক্বামত দেয়া হ’লে ছালাত আদায় করতে লাগলেন এবং ছালাতের অবস্থাতেই তিনি গিরিপথের দিকে তাকাচ্ছিলেন (আবূদাঊদ হা/৯১৬, ছহীহ)। অনুরূপভাবে আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নফল ছালাত আদায় করছিলেন, তখন দরজা বন্ধ ছিল। আমি এসে দরজা খোলার জন্য বললাম। তিনি (ক্বিবলার দিকে) সামান্য হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। তারপর ছালাতের স্থানে ফিরে গেলেন (আবূদাঊদ হা/৯২২)। অতএব বিশেষ প্রয়োজনে আশেপাশে দৃষ্টিপাত করলে ছালাত বাতিল হবে না (নাসাঈ হা/১২০১; মিশকাত হা/১০০৫, ৫৯৩২; ছহীহাহ হা/৩৭৮; মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/৩৭৯ পৃঃ; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/২২৮)।

প্রশ্ন (২৩৮) : তাশাহহুদের সময় হস্তদ্বয় উরুর উপর রাখার সঠিক নিয়ম কি? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : ডান পায়ের রান বা হাঁটুর উপর ডান হাত রেখে মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে। আর বাম পায়ের উরু বা হাঁটুর উপর বাম হাত বিছিয়ে ক্বিবলামুখী করে রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) বলেন, ছালাত আদায়ের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন তাশাহহুদ পাঠের জন্য বসতেন তখন ...বাম হাত বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাটুর উপর বিছিয়ে রাখতেন (মুসলিম হা/৫৭৯; মিশকাত হা/৯০৮; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৯৫)।

প্রশ্ন (২৩৯) : বৃষ্টির সময় আযানে ‘আছ-ছালাতু ফী রিহালিকুম’ বলার বিধান কি? কখন এবং কয়বার এটি বলতে হবে?

উত্তর : প্রচন্ড বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, ঠান্ডা ইত্যাদি কারণে আযানে ‘আছ-ছালাতু ফী রিহালিকুম বা বুয়ূতিকুম’ (তোমরা তোমাদের অবস্থানস্থল বা বাড়িতে ছালাত আদায় কর) বলা জায়েয (নববী, শারহু মুসলিম ৫/২০৭; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ২/১১৩)। আর এই বাক্যটি দু’টো স্থানে বলা যায়। প্রথমতঃ হাইয়া আলাছ-ছালাহ না বলে তদস্থলে উক্ত বাক্য দুই বার বলবে (মুসলিম হা/৬৯৭; আবুদাউদ হা/১০৬২)। দ্বিতীয়তঃ আযান সম্পন্ন করে সাধারণভাবে উক্ত বাক্য বলবে। তবে শেষে বলাই উত্তম (বুখারী হা/৬৩২; মুসলিম হা/৬৯৭; মিশকাত হা/১০৫৫; ইবনে হাজার, ফাৎহুল বারী ২/১১৩)।

প্রশ্ন (২৪০) : ওযূ করার পর কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন খাওয়া যাবে কি? এতে ওযূ ভেঙ্গে যাবে কি?

উত্তর : যাবে। এটা ওযূ ভঙ্গেরও কারণ নয়। তবে কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে মসজিদে যাওয়া নিষেধ। জাবের (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছ খাবে সে যেন মসজিদে না আসে। কারণ মানুষ যাতে কষ্ট পায় ফেরেশতাগণও তাতে কষ্ট পায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০৭)। তবে রান্না করে খেলে অথবা মুখ পরিষ্কার করে দুর্গন্ধ দূর করে মসজিদে গেলে কোন দোষ নেই (মুসলিম হা/৫৬১)।

প্রশ্ন (২৪১) : আমাদের মসজিদের ইমামের পিতা সূদের সাথে জড়িত। যদিও তিনি তা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে ইমাম ছাহেব কোন উপার্জন করেন না। বরং পিতার উপার্জনেই জীবনযাপন করেন। উক্ত ইমামের পিছনে ছালাত হবে কি?

উত্তর : উক্ত ইমামের পিছনে ছালাত আদায়ে দোষ নেই। কারণ কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪, ইসরা ১৫/১৫, ফাত্বির ৩৫/১৮, যুমার ৩৯/৭, নাজম ৫৩/৩৮)। আর হারাম মিশ্রিত থাকলেও পিতার উপার্জিত সম্পদ সন্তানের জন্য মৌলিকভাবে হালাল (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৯/৩২৩; উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৮৮, ১৯/১৮১)। অতএব উক্ত ইমামের পিছনে ছালাত আদায়ে বাধা নেই। তবে সন্তানের উচিৎ পিতাকে দ্রুত হারাম থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাকীদ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্টতা লাভ করবে, ঐ দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৮৭)। আর এমতবস্থায় সামর্থবান সন্তান যদি রিযিকের ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারে, তবে সেটাই তাকওয়াপূর্ণ হবে।

প্রশ্ন (২৪২) : বুধবার যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ে দো‘আ কবুল করা হয় এই মর্মে হাদীছটি কি আমলযোগ্য? শায়েখ আলবানী হাদীছটিকে হাসান বললেও অন্য মুহাক্কিকগণ যঈফ বলেছেন। এক্ষণে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কি?

উত্তর : প্রতি বুধবারের যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়টুকু দো‘আ কবুলের সময় বলে একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই মসজিদে অর্থাৎ মসজিদুল ফাৎহ (বিজয়ের মসজিদ)-এ সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার দো‘আ করলেন এবং বুধবার ছালাতের মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর দো‘আ কবুল হ’ল। জাবের (রাঃ) বলেন, যখনই আমার কোন গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ উপস্থিত হয়েছে, তখনই আমি উক্ত সময়ে (যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ে) প্রার্থনার ইচ্ছা করেছি এবং বুধবার এই সময়ে দো‘আ করেছি। অতঃপর তা যে কবুল হয়েছে তা বুঝতে পেরেছি (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭০৪; আহমাদ হা/১৪৬০৩, সনদ হাসান)। বর্ণনাটি অনেক মুহাদ্দিছ যঈফ বললেও শায়েখ আলবানী এর সনদকে হাসান বলেছেন (ছহীহুত তারগীব হা/১১৮৫)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীছ দ্বারা দো‘আ কবুলের সময়ের কথা প্রমাণিত হয়, কোন স্থান নয়। আমাদের সাথী একদল বিদ্বান এই হাদীছের উপর আমল করে উক্ত সময়ে প্রার্থনা করেন (ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাকীম ২/৩৪৪)।

প্রশ্ন (২৪৩) : ছালাতের সময় ব্যক্তির ছায়া দেখা গেলে তাতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কি?

উত্তর : মানুষের ছায়া পরিলক্ষিত হ’লে ছালাতের ক্ষতি হয় না। নবী করীম (ছাঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) রাতে উঠে ছালাতে দাঁড়াতেন আর আমি তাঁর ও কিবলার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে তাঁর পরিজনদের বিছানায় শুয়ে থাকতাম (বুখারী হা/৫১৫)।

প্রশ্ন (২৪৪) : হানাফী মসজিদে ফজরের ছালাত কিছুটা বিলম্বে আদায় করা হয়। এক্ষণে আমি উক্ত ছালাত বাড়িতে আদায় করব কি?

উত্তর : না। বরং মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনলো এবং কোন ওযর ছাড়াই জামা‘আতে উপস্থিত হ’ল না, তার ছালাত নেই (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; মিশকাত হা/১০৭৭)। জনৈক অন্ধ ব্যক্তি তাকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার মত লোক না থাকার ওযর পেশ করার পরেও রাসূল (ছাঃ) তাকে বাড়ীতে ছালাত আদায়ের অনুমতি দেননি (মুসলিম হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১০৫৪)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ ছেড়ে বাড়ীতে ছালাত আদায় করল সে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত পরিত্যাগ করল। আর যে ব্যক্তি নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ করল সে পথভ্রষ্ট হ’ল (আবুদাঊদ হা/৫৫০)। তবে যদি অধিক বিলম্ব করে, তাহ’লে আউয়াল ওয়াক্তে বাড়িতে ছালাত আদায় করে পরবর্তীতে মসজিদে জামা‘আতে অংশগ্রহণ করতে পারে।

প্রশ্ন (২৪৫) : বিবাহের পর বাসরপূর্ব যে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হয় তা জামা‘আতে আদায় করা যাবে কি? এখানে তেলাওয়াত সশব্দে করতে হবে কি?

উত্তর : বাসরপূর্ব দুই রাক‘আত ছালাত স্বামী-স্ত্রী জামা‘আতের সাথে আদায় করতে পারবে। তবে পাশাপাশি দাঁড়াবে না। বরং স্বামী সামনে ও স্ত্রী পিছনে দাঁড়াবে (মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭১৫৬; আলবানী, আদাবুয যিফাফ হা/৯৬ পৃ.)। আর ছালাত রাতে হ’লে সরবে, আর দিনে হ’লে নীরবে তেলাওয়াত করাই উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৩৫৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১২৬)।

প্রশ্ন (২৪৬) : ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে ছুটে যাওয়া ছালাতের ক্বাযা আদায়ের ক্ষেত্রে কি বলে নিয়ত করতে হবে? এছাড়া পূর্বের ওয়াক্তের ছালাত আদায়ের আগেই পরের ওয়াক্তে ছালাতের আযান হয়ে গেলে কোন ওয়াক্ত আগে আদায় করতে হবে?

উত্তর : ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে ছুটে যাওয়া ছালাত ওয়াক্তের মধ্যে আদায় করলে সেই ছালাত আদায়ের নিয়ত করে ছালাত আদায় করবে। কারণ ওয়াক্ত এখনো অবশিষ্ট। আর ওয়াক্ত অতিক্রম করলে ক্বাযা ছালাত আদায় করার নিয়ত করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৫৭; মির‘আতুল মাফাতীহ ২/৩১২)। আর পরবর্তী ওয়াক্তের আযান হয়ে গেলেও পূর্বের ওয়াক্তের ছালাতের ক্বাযা আদায় করে নিবে। অতঃপর জামা‘আতে বর্তমান ওয়াক্তের ছালাত আদায় করবে। কিন্তু জামা‘আত শুরু হয়ে গেলে উক্ত ওয়াক্তের ছালাত আগে পড়ে নেবে এবং জামা‘আত শেষে পূর্ববর্তী ছালাতের ক্বাযা আদায় করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪২/৮৪-৮৬)।

প্রশ্ন (২৪৭) : জুম‘আর দিনে ইমাম ছাহেবকে খুৎবা দেয়ার জন্য এসে তাহিইয়াতুল মসজিদ বা জুম‘আ পূর্ব সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : ইমাম ছাহেব মসজিদে আসার পর পর্যাপ্ত সময় থাকলে তাহিয়াতুল মসজিদ ও সাধারণ নফল ছালাত আদায় করতে পারেন। নইলে সরাসরি খুৎবায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সময়াভাবে সরাসরি খুৎবার মিম্বারে এসে বসতেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৪০১; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১২৩/৩০৯)।

প্রশ্ন (২৪৮) : শীতের কারণে মাফলার বা চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ছালাত আদায় করলে ছালাত হবে কি?

উত্তর : যেকোন সময় ছালাত আদায়কালে মুখ বা মুখমন্ডল খোলা রাখবে। কারণ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থায় মুখমন্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/৬৪৩; ইবনু মাজাহ হা/৯৬৬, সনদ ছহীহ)। তবে কারণবশত সাময়িকভাবে মুখমন্ডলের কিছু অংশ আবৃত করলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইনছাফ; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১১৪)।

প্রশ্ন (২৪৯) : গোসলের সময় বিসমিল্লাহ বলে গোসল করলে ছালাতের জন্য ওযূ করতে হবে কি?

উত্তর : গোসলের পূর্বে ওযূ করলে এবং ওযূ ভঙ্গের কারণ না ঘটলে গোসলের পর আর ওযূ করতে হবে না। আর পূর্বে ওযূ না করলে গোসলের পরে ওযূ করতে হবে। কারণ ওযূ ব্যতীত ছালাত হবে না’ (আবূদাঊদ হা/৬১; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৭৫-৭৬; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৪২৩)।

প্রশ্ন (২৫০) : ক্বিরাআত শেষে সিজদার আয়াত হ’লে আগে রুকূ করতে না-কি সিজদায়ে তেলাওয়াত আগে দিতে হবে?

উত্তর : তিলাওয়াতের জন্য সিজদা দেওয়া সুন্নাত। সুতরাং ইমাম সিজদা দিতে চাইলে তেলাওয়াত শেষেই সিজদায় চলে যাবে। সিজদা থেকে উঠে রুকূতে যাবে এবং ছালাত সম্পন্ন করবে। তবে এরূপ ক্ষেত্রে মুছল্লীদের অগ্রিম জানিয়ে রাখা ভালো। তাছাড়া ইমাম সিজদা থেকে উঠে অন্য সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূতে যাবে তাহ’লে মুছল্লীদের মাঝে সন্দেহের উদ্রেক হবে না (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫৮; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৪৪৬)। ওমর (রাঃ) বলতেন, হে লোক সকল! আমরা যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করি, তখন যে সিজদা করবে সে ঠিকই করবে, যে সিজদা করবে না তার কোন গুনাহ নেই (বুখারী হা/১০৭৭)।

প্রশ্ন (২৫১) : কেউ যদি ৬ তলায় বাসা হওয়ার কারণে উঠানামা কষ্টকর হওয়ায় ফজর ও এশার ছালাত এবং যোহর, আছর ও মাগরিবের ছালাত মাঝে-মধ্যে জামা‘আতে এবং মাঝে-মধ্যে একাকী আদায় করে তাহ’লেও কি সে মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত হবে?

উত্তর : জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা সাবালক পুরুষের জন্য ওয়াজিব। প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ প্রতি ওয়াক্ত ছালাত জামা‘আতের সাথে মসজিদে আদায় করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনল, অথচ জামা‘আতে এলো না, তার ছালাত হ’ল না। তবে বিশেষ ওযর ব্যতীত’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২০৬৪; মিশকাত হা/১০৭৭)। এক্ষণে গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। অন্যথায় বিনা ওযরে কেউ বাড়িতে, দোকানে বা অন্য কোথাও ফরয ছালাত আদায় করলে তার ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হ’লেও ওয়াজিব ত্যাগ করার কারণে সে গোনাহগার হবে (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মুওয়াযযিনের আযান শুনেছে এবং কোন ওযর বা অসুবিধা তাকে তার অনুসরণ করতে বাধা দেয়নি, তার (একাকী) আদায়কৃত ছালাত আল্লাহ কবুল করবেন না (আবুদাউদ হা/৫৫১; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৬)। এক্ষণে কারো উঠানামা অতি কষ্টকর হ’লে বিকল্প পথ অবলম্বন করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)।

প্রশ্ন (২৫২) : বিতর ছালাতের শেষ রাক‘আতে দো‘আ কুনূতের সাথে আর কি কি দো‘আ পড়া যাবে?

উত্তর : হাদীছে বর্ণিত কুনূতের দো‘আটি পাঠ করার পর কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত যেকোন দো‘আ পাঠ করা জায়েয। কারণ স্থানটি দো‘আ করার। এসময় ব্যক্তির যেকোন প্রার্থনাকে দো‘আর সাথে যোগ করতে পারে। তাছাড়া মুসলমানদের সাফল্য চেয়ে ও কাফেরদের হেদায়াত প্রার্থনা কিংবা ধ্বংস কামনা করে দো‘আ করা যায় (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/১৭১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিকহিয়া ৩৪/৬৩; ওছায়মীন, আ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৫২)।

প্রশ্ন (২৫৩) : সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের সময় পড়েছেন কি? এটা ঘুম থেকে উঠে পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘুম থেকে উঠে সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তেলাওয়াত করেছেন, অতঃপর ওযূ করে তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করেছেন। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর সহধর্মিণী ও আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর নিকট রাত্রি যাপন করলাম। এরপরে আমি বিছানায় আড়াআড়ি শুয়ে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবার লম্বা দিকে শয়ন করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিদ্রামগ্ন হ’লেন। অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামান্য আগে কিংবা অল্প সময় পরে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন এবং মুখ থেকে ঘুমের ভাব মুছতে মুছতে বসলেন। তারপর সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের নিকট গিয়ে তাত্থেকে উত্তমরূপে ওযূ করলেন। এরপর ছালাতে দন্ডায়মান হ’লেন (বুখারী হা/১৮৩; মুসলিম হা/৭৬৩)। অতএব কেউ চাইলে ঘুম থেকে উঠে উক্ত দশ আয়াত তেলাওয়াত করতে পারে (নববী, শরহু মুসলিম ৬/৪৬)।

প্রশ্ন (২৫৪) : কা‘বায় চবিবশ ঘন্টা ছালাত ও তাওয়াফ চলছে। সুতরাং ছালাতের নিষিদ্ধ সময় কি সেখানকার জন্য প্রযোজ্য নয়?

উত্তর : নিষিদ্ধ সময় কা‘বা ঘর বা যে কোন মসজিদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এসময়ে কোন নফল ছালাত আদায় করা যাবে না। তবে তাহিইয়াতুল মসজিদ বা ক্বাযা ছালাত আদায় করতে পারে। কারণ এই ছালাতগুলোর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৯০)। অন্যদিকে তাওয়াফের কোন নিষিদ্ধ সময় নেই। বরং দিন ও রাতের যেকোন অংশে তাওয়াফ করতে পারে (বুখারী হা/১১৯২)। অবশ্য কা‘বায় কোন প্রকার ছালাত ও তাওয়াফের জন্য নিষিদ্ধ সময় নেই বলে বর্ণনা করেছেন শাফেঈ বিদ্বানগণ। এই অভিমতই অগ্রগণ্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কাউকে রাত বা দিনের যে কোন সময়ে এই ঘরের তাওয়াফ করতে ও ছালাত আদায় করতে বাধা দিবে না’ (বুখারী হা/১১৯২; আবুদাউদ হা/১৮৯২)। তিনি আরো বলেন, ‘হে বনী আবদে মানাফ, হে বনী আব্দিল মুত্ত্বালিব! তোমরা যেই পরিস্থিতির মধ্যে থাক না কেন আমি অবশ্যই যেন দিন বা রাতের যে কোন মুহূর্তে এই ঘরে ছালাত আদায়ে বাধা দেওয়ার কথা শুনতে না পাই’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১২৮০; আহমাদ হা/১৬৮২২, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (২৫৫) :শুক্রবারে সূরা কাহফ পাঠের ফযীলত কি? অন্যদিনে সূরাটি পাঠ করলে একই ফযীলত পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : শুক্রবারে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দিনে এর প্রথম দশ আয়াত বা শেষ দশ আয়াত মুখস্থ ও পাঠ করার বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহ্ফ তেলাওয়াত করবে, তার ঈমানী জ্যোতি এক জুম‘আ হ’তে আরেক জুম‘আ পর্যন্ত বিকশিত হবে’ (বায়হাক্বী হা/৬২০৯; মিশকাত হা/২১৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৭০)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর রাতে সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য তার ও বায়তুল আতীক্ব (কা‘বা)-এর মধ্যবর্তী জায়গা নূরে আলোকিত হয়ে যাবে’ (দারেমী হা/৩৪৫০; ছহীহুত তারগীব হা/৭৩৬)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা হ’তে নিরাপদ থাকবে’ (মুসলিম হা/৮০৯; মিশকাত হা/২১২৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের শেষ দশ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে’ (আহমদ হা/২৭৫৫৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭৮৬, সনদ ছহীহ)। অন্যত্র এসেছে, ‘এক ব্যক্তি সূরা কাহ্ফ তেলাওয়াত করছিল। আর তার পার্শ্বে তার ঘোড়া বাঁধা ছিল দুইটি রশি দ্বারা। এসময় এক খন্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিল এবং তার নিকটতর হ’তে লাগল। তখন তার ঘোড়া লাফাতে লাগল। সে যখন ভোরে উঠল, তখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে তা উল্লেখ করল। তিনি বললেন, তা ছিল রহমত, যা নেমে এসেছিল কুরআনের কারণে’ (বুখারী হা/৫০১১; মুসলিম হা/৮০৯; মিশকাত হা/২১১৭)।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহ্ফ যেভাবে নাযিল করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই তেলাওয়াত করবে, তার জন্য সেটা নিজের স্থান হ’তে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত হবে এবং সূরা কাহফের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলে দাজ্জালের ফেৎনা হ’তে মুক্ত থাকবে এবং দাজ্জাল তার উপর কোনরূপ মন্দ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না’ (হাকেম হা/২০২৭; নাসাঈ কুবরা হা/১০৭৮৮; ছহীহাহ হা/২৬৫১)।

প্রশ্ন (২৫৬) :কোন ব্যক্তির আমলনামা সমান সমান হয়ে গেলে সে আ‘রাফ নামক স্থানে থাকবে কি? সে কি সেখানেই থাকবে না একসময় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে?

উত্তর: যাদের আমলনামায় নেকী ও পাপ সমান হবে তাদেরকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে ‘আ‘রাফবাসী’। আ‘রাফ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি উঁচু স্থানের নাম। যা প্রাচীর স্বরূপ। যাদের নেকী সেই পরিমাণ হবে না যাতে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং গোনাহও সেই পরিমাণ হবে না যাতে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের স্থান হবে এই আ‘রাফে। অর্থাৎ গোনাহ ও নেকী সমান সমান হওয়ার কারণে না জাহান্নামে যাবে, না তারা জান্নাতে যাবে (আ‘রাফ-মাক্কী ৭/৪৬-৪৭)। আ‘রাফবাসী শেষে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হুযায়ফা ও ইবনু মাসঊদসহ অন্যান্য ছাহাবীগণ বলেন, আ‘রাফের লোকেরা এমন এক সম্প্রদায় যাদের ভালো কাজ তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং মন্দ কাজ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। আর যখন জাহান্নামবাসীদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তখন তারা (আ‘রাফবাসীরা) বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথী করো না (আ‘রাফ ৭/৪৭)। তারা যখন এই অবস্থায় থাকবে, তখন তাদের প্রতিপালক তাদের সামনে উপস্থিত হবেন এবং বলবেন, ‘ওঠো, জান্নাতে প্রবেশ কর, ‘আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি’ (হাকেম হা/৩২৪৭; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৭৫; ইবনুল মুবারক, আয-যুহ্দ ওয়ার রাক্বায়েক্ব ২/১২৩)।

প্রশ্ন (২৫৭) : আযানের সময় বা আযানের পর দো‘আ কবুল হয় কি? সেক্ষেত্রে আযানের সময় আযানের উত্তর প্রদান ও দো‘আ করার মধ্যে সমন্বয় হবে কিভাবে?

উত্তর : আযানের সময় আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দো‘আ কবুল হয় (ছহীহাহ হা/১৪১৩)। অনুরূপভাবে একামতের সময় আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয় ও দো‘আ কবুল হয়, প্রত্যাখ্যান করা হয় না বলে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৯২৪৮, সনদ হাসান)। এজন্য আযানের সময় আযানের জওয়াব দেওয়া এবং আযান শেষে দো‘আ করা উচিৎ। কারণ রাসূল (ছাঃ) অন্য হাদীছে স্পষ্টভাবে বলেছেন, আযান ও একামতের মাঝের সময় দো‘আ কবুল হয় এবং তা প্রত্যাখ্যান করা হয় না (আহমাদ হা/১২৬০৬, ১৩৬৯৩, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (২৫৮) : তারাবীহ ছালাতের ক্বিরাআত কেমন হওয়া উচিৎ? বিশেষ করে লম্বা তেলাওয়াতে তারাবীহ সম্পন্ন করা জায়েয কি?

উত্তর : দীর্ঘ তেলাওয়াতে তারাবীহ ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। কারণ রাসূল (ছাঃ) যে তিন দিন তারাবীহ ছালাত আদায় করেছিলেন তাতে তিনি লম্বা তেলাওয়াত করেছিলেন।

বরং একই রাক‘আতে তিনি সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান ও নিসা পাঠ করেছিলেন (বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম হা/৭৭২; নাসাঈ হা/১৬০৫)। সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ওমর (রাঃ) ওবাই বিন কা‘ব ও তামীম দারীকে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রামাযান মাসের রাতের এগার রাক‘আত তারাবীহর ছালাত আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহর ছালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। ক্বিয়াম দীর্ঘ হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফজরের নিকটবর্তী সময়ে ছালাত শেষ করতাম (মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৩০২)।

‘খতম তারাবীহ’ বলে কোন নিয়ম শরী‘আতে নেই এবং তারাবীহর ছালাতে কুরআন খতম করার বিশেষ কোন ফযীলত নেই। বরং ক্বিরাআত দীর্ঘ হৌক বা সংক্ষিপ্ত হৌক ছালাতে খুশূ-খুযূই হ’ল প্রধান বিষয়। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি জানিনা যে, আল্লাহর নবী (ছাঃ) কখনো এক রাত্রিতে সমস্ত কুরআন খতম করেছেন কিংবা ফজর অবধি সারা রাত্রি ব্যাপী (নফল) ছালাত আদায় করেছেন (মুসলিম হা/৭৪৬; মিশকাত হা/১২৫৭)। আজকাল খতম তারাবীহতে হাফেযগণ ক্বিরাআত এমন দ্রুত পড়েন, যা কুরআন অবমাননার শামিল। মুছল্লীরা যা বুঝতে সক্ষম হন না। অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন ও চুপ থাকো’ (আ‘রাফ ৭/২০৪)। যার অর্থ কুরআন শোনা ও অনুধাবন করা। দ্রুত খতম করার ফলে অনুধাবন করার বিষয়টি উধাও হয়ে যায়। অনেকে খতম তারাবীহর ভয়ে তারাবীহর জামা‘আতেই আসেন না। অতএব মুছল্লীদের আগ্রহ বুঝে হাফেয ছাহেবগণ তারাবীহর ক্বিরাআত দীর্ঘ অথবা সংক্ষিপ্ত করবেন।

প্রশ্ন (২৫৯) : যে ব্যক্তি তেলাওয়াত জানা সত্ত্বেও কুরআন তেলাওয়াত পরিত্যাগ করবে তার কি গুনাহ হবে?

উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত পরিত্যাগ করা যাবেনা। বাধ্যগত অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত না করতে পারলে গুনাহ হবে না। তবে কুরআন তেলাওয়াত একেবারেই ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে। আল্লাহর বাণী- ‘সেদিন রাসূল বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার উম্মত এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছিল’ (ফুরক্বান ২৫/৩০)। আর যে সকল কর্ম পরিত্যাগ করলে কুরআন পরিত্যাগকারী হিসাবে গণ্য হবে তা হ’ল- ১. ইচ্ছা করে অবহেলাবশত কুরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ না করা (ফুছছিলাত ৪১/২৬)। ২. কুরআন বা এর বিধান নিয়ে বিদ্রুপ করা (লোকমান ৩১/৬-৭)। ৩. কুরআনের বিধানুযায়ী জীবন পরিচালনা না করা। ৪. কুরআন নিয়ে গবেষণা এবং এর মর্ম বুঝতে অবহেলা প্রকাশ করা। ৫. কুরআন তেলাওয়াত একেবারেই ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ৮২)। অতএব কুরআন তেলাওয়াত নিয়মিত করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে (আল্লাহর নৈকট্য পেতে) তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট থেকে যা এসেছে তার চেয়ে অর্থাৎ কুরআনের চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই (ছহীহাহ হা/৯৬১)। সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, ‘সর্বোত্তম যিকর ছালাতের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত, এরপর ছালাতের বাইরে কুরআন তেলাওয়াত। এরপর ছিয়াম। এরপরে অন্যান্য যিকর’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া ৭/৬৭)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনকে ভালোবাসে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)ও তাকে ভালোবাসেন’ (জামেঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম, পৃ. ৩৬৪)।

প্রশ্ন (২৬০) : জুম‘আর পূর্বে অনেক সময় ওয়ায-মাহফিল করা হয় এবং বলা হয়ে থাকে যে এরূপ আমল অনেক ছাহাবীর আমল দ্বারা প্রমাণিত। এটা কি সঠিক?

উত্তর : জুম‘আর খুৎবার পূর্বে মসজিদে প্রচলিত খুৎবা-পূর্ব বয়ান বলে কিছু শরী‘আতে নেই। বরং এটিই নিষিদ্ধ। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর দিন ছালাতের পূর্বে বৃত্তাকারে বসতে (মজলিস করতে) এবং মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/১০৭৯; মিশকাত হা/৭৩২, সনদ হাসান)। ছাহাবায়ে কেরাম জুম‘আর দিন হাদীছে বর্ণিত বিভিন্ন প্রাণী কুরবানী দেওয়ার ছওয়াব পাওয়ার জন্য এবং দো‘আ কবুলের আশায় সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে বিভিন্ন ইবাদতে মশগূল থাকতেন। তবে সাধারণভাবে দ্বীন শিক্ষার প্রসারে দারসের আয়োজনে দোষ নেই। বহু ছাহাবী থেকে এমর্মে আমল পাওয়া যায় (মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৫৪৭; খতীব বাগদাদী, আল ফক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ ২/২৭২)।

প্রশ্ন (২৬১) : অনেক সময় অলসতার কারণে পরবর্তী ওয়াক্তের ছালাতের জন্য পেশাব আটকে ওযূ ধরে রাখা হয়। এরূপ করায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : পেশাবের চাপ যদি এমন পর্যায়ের হয় যা ছালাতের একাগ্রতা ও খুশূ‘ খুযূ‘ বিনষ্ট করতে পারে তাহ’লে সে চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করা যাবে না এবং পেশাব আটকিয়ে রাখাও যাবে না। কারণ এটি যেমন শরী‘আত নিষিদ্ধ কাজ তেমনি এর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। আর চাপ চূড়ান্ত পর্যায়ের না হ’লে পরবর্তী ছালাত পর্যন্ত ওযূ ধরে রাখা জায়েয (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১০৫; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৪৫০-৫১; ছান‘আনী, সুবুলুস সালাম ১/২২৭)।

প্রশ্ন (২৬২) : ওযূতে পায়ের গোড়ালী শুষ্ক থাকলে ওযূ হবে কি?

উত্তর : ওযূতে পায়ের গোড়ালী বা দুই টাখনু ধৌত করা ফরয। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হবে, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মক্কা হ’তে মদীনায় ফিরে যাবার পথে একটি পানির কূপের কাছে পৌঁছলাম। আমাদের কেউ কেউ আছরের ছালাতের সময় তাড়াতাড়ি ওযূ করতে গেলেন এবং তাড়াহুড়া করে ওযূ করলেন। অতঃপর আমরা তাদের কাছে পৌঁছলাম, দেখি, তাদের পায়ের গোড়ালি শুকনা, চকচক করছে। সেখানে পানি পৌঁছেনি। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সর্বনাশ! (শুকনা) গোড়ালির লোকেরা জাহান্নামে যাবে, তোমরা পূর্ণরূপে ওযূ কর (মুসলিম হা/২৪১; মিশকাত হা/৩৯৮)। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি ওযূ করে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হ’ল। কিন্তু (ওযূতে) তার পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুকনা ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, ‘ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে ওযূ করে এসো’ (মুসলিম হা/২৪৩; আহমাদ হা/১৩৪)। অতএব ওযূতে গোড়ালী ভালভাবে ধৌত করতে হবে। নইলে ওযূ হবে না। আর ওযূ না হলে ছালাত হয় না।

প্রশ্ন (২৬৩) : রাতে কাজ শেষ করতে করতে ১২টা কখনো ১টা পার হয়ে যায়। এসময় তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : তাহাজ্জুদের ছালাত আদায়ের মুস্তাহাব সময় হ’ল রাতের শেষাংশ (আবুদাউদ হা/১২৭৭, সনদ ছহীহ)। কারণ এসময় আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের আহবান শোনার জন্য প্রথম আকাশে অবতরণ করেন (বুখারী হা/১১৪৫)। তবে কেউ মধ্যরাতে আদায় করতে চাইলে আদায় করা যাবে। বরং যারা রাতে জাগ্রত হ’তে পারবে না বলে আশঙ্কা করে তাদের জন্য প্রথম বা মধ্যরাতেই আদায় করা উত্তম (তাবারাণী কাবীর হা/৬৭৯; ওছায়মীন, শরহে রিয়াযুছ ছালেহীন ২/২১২)। উল্লেখ্য যে, এশার ছালাতের পর থেকে ফজর পর্যন্ত পুরোটা সময় ক্বিয়ামুল লাইল বা রাতের ছালাতের সময়।

প্রশ্ন (২৬৪) : সফর থেকে বাসায় ফিরে গিয়ে যদি এশার ছালাতের ওয়াক্ত থাকবে বলে অনুমান করা যায় সেক্ষেত্রে এশার ছালাত মাগরিবের সাথে জমা‘ ও ক্বছর করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। সফরে থাকা অবস্থায় মুসাফির ছালাত জমা‘ ও কছর করতে পারবে যদিও বাড়ি গিয়ে এশার ছালাতের ওয়াক্ত থাকবে বলে মনে হয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১৮০; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২০৭; ফৎওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/১৫২)। তবে কেউ যদি ওয়াক্তের মধ্যে বাড়িতে এসে পূর্ণ ছালাত আদায় করে তাহ’লে তাতেও দোষ নেই (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৪২২)।

প্রশ্ন (২৬৫) : কোন ব্যক্তি জুম‘আ ব্যতীত ছালাত আদায় করত না। ছালাতের ব্যাপারে তার মধ্যে অলসতা ও অবহেলা ছিল বলে অনুমিত হয়। এক্ষণে তার মৃত্যু হ’লে তার জানাযার ছালাত পড়া যাবে কি?

উত্তর : মতপার্থক্য থাকলেও এরূপ ব্যক্তির জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করা জায়েয (ইবনুল ক্বাইয়িম, আছ-ছালাত ওয়া আহকামু তারিকিহা পৃ. ৩১)। কারণ সে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী বলে অনুমিত হয়। এরূপ ছালাত ত্যাগকারী কবীরা গুনাহগার। এজন্য তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। তবে খালেছ তাওহীদে বিশ্বাস থাকার কারণে এক সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫৫৭৩)। উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য ছালাত ছেড়ে দেওয়া’ (আবুদাঊদ হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫৬৯, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় আছে, মানুষ ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ছালাত। কোন বর্ণনায় আছে, ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ছালাত (ছহীহুত তারগীব হা/৫৬৩)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বান্দা, কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ছালাত। যখন সে ছালাত পরিত্যাগ করল, তখন সে শিরক করে ফেলল’ (ছহীহুত তারগীব হা/৫৬৬)। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক হচ্ছে ছালাতের ব্যাপারে পূর্ণ যত্নবান হওয়া এবং কোন অবস্থাতেই ছালাতের ব্যাপারে শিথিলতা না দেখানো।

প্রশ্ন (২৬৬) : যে ব্যক্তি সব মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য দো‘আ বা ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে প্রতিটি মুমিন পুরুষ ও নারীর পরিবর্তে একটি করে নেকী দিবেন মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ ‘হাসান’ (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৭৫৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০২৬)। অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতের দো‘আ করা। আব্দুল্লাহ ইবনু সারজিস বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি এবং তাঁর সাথে গোশত ও রুটি খেয়েছি কিংবা বলেছেন, সারদ খেয়েছি। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যঁা তোমার জন্যও। অতঃপর এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন, ‘তোমার পাপের জন্য মার্জনা চাও এবং ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের জন্য’ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। আব্দুল্লাহ বলেন, এরপর আমি ঘুরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে গেলাম। আর মোহরে নবুঅত দেখলাম, যা দু’কাঁধের মধ্যবর্তী বাম দিকের বাহুর হাড়ের নিকট অঙগুলির ন্যায়, যাতে তিলক ছিল (মুসলিম হা/২৩৪৬)। তবে একদল বিদ্বান মাগফিরাতের বিনিময়ে ছওয়াব প্রাপ্তির হাদীছকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। কারণ এর সনদে ঈসা বিন সিনান নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন (তাহযীবুত তাহযীব ৮/২১২)।

প্রশ্ন (২৬৭) : অনেক বুঝানোর পরও স্ত্রী অলসতাবশত ছালাত আদায় করে না। এমতাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয়া আবশ্যক কি?

উত্তর : স্ত্রীকে তালাক দেওয়া আবশ্যক নয়। বরং আবশ্যক হচ্ছে স্ত্রীকে সর্বদা নছীহত করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হ’ল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহ’লে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহ’লে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও’ (বুখারী হা/৩৩৩১; মিশকাত হা/৩২৩৯)। তবে অব্যাহত নছীহত করেও কোন পরিবর্তন না আসলে উভয় পরিবারের সদস্যরা বসে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করবে। এতেও সমাধান না হ’লে তালাক প্রদানের পথ বেছে নিবে (তাফসীর ইবনু কাছীর ৮/১৬৭)।

প্রশ্ন (২৬৮) :আমার স্ত্রী অনলাইনে কুরআন শিখায়। এক্ষণে আমার আপন চাচার ১২ বছর বয়সী ছেলে তার কাছে কুরআন শিখতে চায়। এটা জায়েয হবে কি?

উত্তর : সাধারণভাবে পুরুষরা পুরুষ শিক্ষকের নিকট কুরআন শিখবে। আর মেয়েরা ছেলে কিংবা মেয়ে উভয় শিক্ষকের নিকট কুরআন শিখতে পারে। তবে প্রয়োজনে নারীদের কাছেও পুরুষরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সর্বক্ষেত্রে মৌলিক বিবেচ্য হ’ল শারঈ পর্দার সীমারেখা বজায় রাখা। পর্দার পূর্ণ পরিবেশ থাকলে এবং ফিৎনার আশংকা না থাকলে পাঠদান বা গ্রহণ জায়েয (বাহূতী, কাশশাফুল কুরআন ৫/১৫; মুগনিল মুহতাজ ৪/২১০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১২/১৫৬)। অসংখ্য ছাহাবী পর্দার আড়াল থেকে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকটে দ্বীন শিক্ষা করেছেন (বুখারী হা/৩৫৬৮; মুসলিম হা/৩৩২)।

প্রশ্ন (২৬৯) : মসজিদ ছাড়া অন্যত্র একাকী ছালাত আদায়কারী মুছল্লী নিজে তাঁর সামনে সুৎরা রেখে ছালাত আদায় করতে পারবেন কি? মসজিদ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এরূপ বানিয়ে রাখা যাবে কি? অন্য কেউ সুৎরা ছাড়া ছালাত শুরু করলে সম্মুখে থাকা কেউ তার সামনে সুৎরা দিয়ে তাকে অতিক্রম করতে পারবে কি?

উত্তর : একাকী ছালাত আদায়কালেও মুছল্লী সূৎরা ব্যবহার করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কিছু দিয়ে লোকেদের আড়াল করে ছালাত আদায় করে; এমতাবস্থায় যদি কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চায় সে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। যদি সে বিরত হ’তে অস্বীকার করে তবে সে (ছালাত আদায়কারী) যেন তার বিরুদ্ধে লড়াই করে তথা তাকে প্রতিহত করে। কেননা সে একটা শয়তান’ (মুসলিম হা/৫০৫; মিশকাত হা/৭৭৭ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ)। মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুৎরা বানিয়ে রাখতে পারে। এতে মুছল্লীদের উপকার হবে। এছাড়া পিছনে ছালাতরত ব্যক্তির সামনে সিজদার স্থানের সমান নির্ধারিত দূরত্বে সুৎরা রেখে চলে যাওয়া যেতে পারে। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম কোন মুছল্লীর সামনে লোকের অতিক্রমের আশঙ্কা করলে তার সামনে সুৎরা হয়ে বসে পড়তেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৭৬; বাহূতী, কাশশাফুল কেনা‘ ১/৩৭৬)।

প্রশ্ন (২৭০) : হাফ প্যান্ট বা সতর খোলা অবস্থায় ওযূ করলে বা ওযূ করার পর সতর উন্মুক্ত হ’লে ওযূ ভঙ্গ হবে কি?

উত্তর : সতর উন্মুক্ত হওয়া বা সতরের কিছু অংশ খোলা অবস্থায় ওযূ করা ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। অতএব এমতবস্থায় ওযূ করলে ওযূ হয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৭০, ২৮৩)।

প্রশ্ন (২৭১) : আমার ফরয ছালাতে ভুল হয়েছে। সালাম ফিরানোর পরে মনে হ’ল আমার সহো সিজদা করা হয়নি। ততক্ষণে আমার ওযূ নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষণে আমার করণীয় কী?

উত্তর : কোন ওয়াজিব কাজ ছুটে যাওয়ার কারণে সহো সিজদা ওয়াজিব হয়ে থাকলে ছালাত শেষে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। এক্ষণে কেউ সহো সিজদা দিতে ভুলে গেলে এবং নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে মনে পড়লে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। যদি ওযূ ছুটে যায়, তবে ওযূ করে এসে সহো সিজদা দিবে। আর যদি দেরীতে মনে পড়ে তাহ’লে সহো সিজদা দেওয়া লাগবে না। বরং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য যে, সহো সিজদার জন্য ওযূ শর্ত (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৫০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৮)।

প্রশ্ন (২৭২) : জামা‘আত চলাকালে মহিলারা সশব্দে আমীন বলতে পারবে কি?

উত্তর : সশব্দে নয়, তবে অনুচ্চ স্বরে আমীন বলবে। কেননা ‘যখন ইমাম আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বল’ (বুখারী হা/৭৮০) হাদীছের এই নির্দেশনা নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য। তবে পুরুষদের শ্রবণের সম্ভাবনা থাকলে নিচু স্বরে আমীন বলবে। ওছায়মীন বলেন, আমীন বলা সুন্নাত এবং তা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। তবে নারীরা যেন উচ্চস্বরে না বলে, বিশেষত যদি তাদের আশেপাশে বেগানা পুরুষ থাকে (শারহুল মুমতে‘ ৩/২৮৭)। আলবানী (রহ.)ও একই মত পোষণ করেছেন (ছহীহাহ হা/৮৭২-এর আলোচনা)।

প্রশ্ন (২৭৩) : এক রাক‘আত বিতর ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : এক রাক‘আত বিতরের ছালাত যেমন একাকী আদায় করা জায়েয তেমনি জামা‘আতের সাথেও আদায় করা জায়েয। জামা‘আতে ইমাম যত রাক‘আত পড়াবেন তত রাক‘আতে ইমামের অনুসরণ করবে তাহ’লে ক্বিয়ামুল লাইলের ছওয়াব পেয়ে যাবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/৪৬২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য পুরো রাত ক্বিয়ামুল-লাইল আদায় করার ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন (নাসাঈ হা/১৬০৫; মিশকাত হা/১২৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৪১৭)।

প্রশ্ন (২৭৪) : ইমাম যদি কোন এক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ ছাড়াই ছালাত সম্পন্ন করেন, তাহ’লে মুছল্লীদের ছালাত হবে কি?

উত্তর : মুছল্লীগণ ছালাতের শর্ত ও রুকনগুলো সঠিকভাবে পালন করে থাকলে তাদের ছালাত হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘অচিরেই এমন কিছু লোক আসবে যারা ছালাতে তোমাদের ইমামতি করবে, যদি তারা পরিপূর্ণভাবে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে তোমরা ছওয়াব পাবে এবং তারাও ছওয়াব পাবে। আর যদি তারা কোন ভুল করে তাহ’লে তার গুনাহ সে ভোগ করবে, ছালাতের ছওয়াব তোমরা পেয়ে যাবে (আহমাদ হা/৮৬৪৮; ছহীহাহ হা/১৭৬৭)। এই হাদীছে ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু তায়মিয়া, ইবনু হাজার, ইবনু মুনযির, ইবনু ওছায়মীনসহ বিদ্বানগণ বলেন, এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, ইমামের ভুলের কারণে মুছল্লীর ছালাতের ক্ষতি হয় না। বরং ইমামের ভুল ইমামের উপরেই বর্তাবে (ফাৎহুল বারী ২/১৮৮; মাজমূউল ফাতাওয়া ২৩/৩৭২; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৪৫১)।

প্রশ্ন (২৭৫) : ফরয ও নফল ছালাতে অথবা জামা‘আতে বা একাকী ছালাতের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর দাঁড়ানোর নিয়ম কি?

উত্তর : জামা‘আতে ছালাত আদায় করার ক্ষেত্রে পুরুষ বা স্বামী সামনে দাঁড়াবে এবং নারী/স্ত্রী পিছনে দাঁড়াবে। সে জামা‘আত ফরয ছালাতের হৌক বা নফল ছালাতের হৌক (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭৪৪১, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭, সনদ ছহীহ)। আর যেকোন ছালাত আলাদাভাবে আদায়কালে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়ালে সমস্যা নেই। কিন্ত গায়র মাহরাম হ’লে সর্বদা পিছনে দাঁড়াবে বা পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/৩৮০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৭)।

প্রশ্ন (২৭৬) : ঈদের ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : ঈদের ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না। কারণ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/১৫০)। তবে ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘হঠাৎ করে মুসলমানদের উপর কোন বিপদ চলে আসলে ঈদের ছালাতেও কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যেতে পারে’ (কিতাবুল উম্ম ১/২৭২)।

প্রশ্ন (২৭৭) : যদি কোন ব্যক্তির ওযূ করার শেষ পর্যায়ে এসে ওযূ নষ্ট হয় এবং তাৎক্ষণিক দ্বিতীয় বার ওযূ করতে হয়, তাহ’লে সে কি তার অঙ্গগুলো তিনবার করেই ধৌত করবে, নাকি কমবেশী করতে পারবে?

উত্তর : ওযূর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধৌত করা সুন্নাত এবং মুস্তাহাব (বুখারী হা/১৫৯)। তবে ওযূতে অঙ্গগুলো একবার করে ধুলেও যথেষ্ট হবে (বুখারী হা/১৫৭)। দুইবার করে ধৌত করাও যথেষ্ট হবে (বুখারী হা/১৫৮)। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিটি অঙ্গে পানি পৌঁছানো। কোন স্থান শুকনো থেকে গেলে ওযূ হবে না।

প্রশ্ন (২৭৮) : বিতর ছালাত জামা‘আতে চলাকালে দ্রুত শেষ করার জন্য মসজিদের পিছনে একাকী বিতর ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : বিতর ছালাত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটা একাকী ও জামা‘আতে এক বা তিন রাক‘আত পড়া যায়। সুতরাং কেউ একাকী এক রাক‘আত বিতর আদায় করে চলে গেলে দোষণীয় নয়। তবে ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত ছালাত আদায় করার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ক্বিয়ামুল লায়েল করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য পুরো রাত ক্বিয়ামুল লায়েল করার ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন’ (নাসাঈ হা/১৬০৫; মিশকাত হা/১২৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৪১৭)।

প্রশ্ন (২৭৯) : ফজরের আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, পরে স্মরণ হ’লে বলেছি। আমার আযান শুদ্ধ হয়েছে কি?

উত্তর : ফজরের আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ বলা সুন্নাত। অতএব কেউ ভুলে উক্ত বাক্য ছেড়ে দিলে আযান শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৭৬)। তবে আযান শেষেই মনে পড়লে উক্ত বাক্য পাঠ করে আযানের বাকী অংশ পাঠ করে আযান শেষ করবে। আবার কেউ চাইলে পুনরায় আযানও দিতে পারে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৬/৩৪১)।

প্রশ্ন (২৮০) : এক মসজিদে প্রথম রাতে তারাবীহ এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ জামা‘আত সহকারে আদায় হয়। যে মুছল্লীর যখন সুবিধা বা ইচ্ছা তিনি সেসময় আদায় করেন। কেউ উভয় সময়ে আদায় করেন না। এভাবে একই মসজিদে মুছল্লীদের সুবিধার্থে আলাদা আলাদাভাবে জামা‘আত করা বৈধ হবে কি?

উত্তর : একই মসজিদে একাধিকবার নফল ছালাতের জামা‘আত করাতে দোষ নেই। অর্থাৎ কোন মসজিদে প্রথম রাতে আট রাক‘আত আবার শেষ রাতে আট রাক‘আত নফল ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা করা যায় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৮২; ছালেহ ফাউযান, ইত্তিহাফু আহলিল ঈমান ৬৮-৬৯ পৃ.)। মুছল্লীদের জন্য যে কোন একবার আদায়ই যথেষ্ট।

প্রশ্ন (২৮১) :আমি এমন সময় মসজিদে গেলাম যখন ইমাম তারাবীহর ছালাতে ইমামতি করছেন বলে মনে হ’ল। এক্ষণে আমি কি আগে এশার ছালাত আদায় করব, নাকি জামা‘আতে অংশগ্রহণ করে পরে এশার ছালাত আদায় করব?

উত্তর : এ অবস্থায় দুটো পদ্ধতিই জায়েয। কেউ চাইলে প্রথমে একাকী এশার ফরয ছালাত আদায় করে তারাবীহর জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করতে পারে। আবার চাইলে তারাবীহর জামা‘আতে এশার নিয়তে অংশ গ্রহণ করে ইমামের সালাম শেষে বাকী ছালাত আদায় করে নিবে। অতঃপর তারাবীহর জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/৩০)।

প্রশ্ন (২৮২) : সকালে নিয়মিতভাবে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার কোনফযীলত আছে কি?

উত্তর : সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইয়াসীন পাঠের ফযীলতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেটি ছহীহ নয়। ফলে উক্ত ফযীলত পাওয়ার নিয়তে সূরা ইয়াসীন পাঠ করা যাবে না। বরং সাধারণভাবে তেলাওয়াতের নেকী পাওয়ার জন্য সূরা ইয়াসীন যে কোন সময় পাঠ করতে পারে (ইবনুয যারীস, ফাযায়েলুল কুরআন হা/২১৮; লিসানুল মীযান ৩/২২৪)।

প্রশ্ন (২৮৩) : যদি আছরের ছালাত ক্বাযা হয়ে যায় এবং মাগরিবের ছালাত এক রাক‘আত চলমান থাকা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করি, তাহ’লে আগে আছরের ফরয পড়বো নাকি মাগরিবের জামা‘আতে শরীক হব?

উত্তর : মাগরিবের নিয়তেই জামা‘আতে অংশগ্রহণ করবে এবং ইমামের সাথে মাগরিবের ছালাত আদায় করবে। অতঃপর আছরের ছালাত আদায় করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/১০৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/২৭১-৭২)।

প্রশ্ন (২৮৪) : ছালাতের সময় মুছল্লীর সামনে দিয়ে শিশু চলাচল করলে করণীয় কি? হাদীছে কেউ সামনে দিয়ে গেলে বাধা দিতে বলা হয়েছে। এক্ষণে শিশুদেরও বাধা দিতে হবে কি?

উত্তর : ছালাতের সময় মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে শিশু চলাচল করলে বা কোলে উঠে বসলে তাতে বাধা নেই (বুখারী হা/৫১৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩২১, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/৩৪৮)। তবে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে শিশুদেরকে বাধা দেয়া যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মে সালামার বাড়িতে ছালাত আদায়কালে তার সামনে দিয়ে দুই শিশু অতিক্রমের চেষ্টা করলে তিনি তাদের ইশারা করে নিষেধ করেন (ইবনু মাজাহ হা/৯৪৮, সনদ যঈফ)।

প্রশ্ন (২৮৫) : যদি আমি ফজরের সময় না উঠতে পারি এবং অনেক দেরী হয়ে যায় (যেমন সকাল ৮টা বেজে যায়), তাহ’লে কি আমাকে তখনই পবিত্র হয়ে ছালাত আদায় করতে হবে, না যোহরের সময় পড়তে পারব?

উত্তর : ঘুম থেকে যখনই জাগ্রত হবে তখনই পবিত্রতা অর্জন করে ছালাত আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্ফারা হ’ল যখনই তা স্মরণ হবে তখনই ছালাত আদায় করে নিবে (বুখারী হা/৫৯৭)। অন্য বর্ণনায় আছে, ঐ ছালাত আদায় করে নেয়া ছাড়া তার কোন প্রতিকার নেই (মুসলিম হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৩)। তবে ইচ্ছা করে বা অবহেলাবশত নিয়মিত এমন কাজ করা যাবে না।

প্রশ্ন (২৮৬) : পুরুষ বা মহিলা সিজদারত অবস্থায় দু’পা মিলিত না পৃথক রাখবে?

উত্তর: নারী-পুরুষ উভয়ে সিজদাকালীন তাদের পা মিলিয়ে বা পৃথক রাখতে পারে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘এক রাত্রিতে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিছানায় না পেয়ে আমার হাত দিয়ে খুঁজতে থাকলাম। অতঃপর আমার হাত তাঁর দু’পায়ের উপর পতিত হয়। তখন তিনি সিজদারত ছিলেন এবং তাঁর পা দু’টি খাঁড়া ছিল’ (মুসলিম হা/৪৮৬; মিশকাত হা/৮৯৩, ‘সিজদা ও সিজদার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এ সময় তাঁর গোড়ালীদ্বয় মিলানো ছিল এবং পায়ের অঙ্গুলি সমূহ কিবলার দিকে ছিল’ (মুস্তাদরাক হাকেম ১/৩৪০ পৃঃ, হা/৮৩২; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৬৫৪; ইবনু হিববান হা/১৯৩৩)। ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি। নাকসহ চেহারা, দু’হাত, দু’হাটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭)। এখানে ‘দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’-এর ব্যাখ্যায় ছাহেবে মির‘আত বলেন, দু’পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী থাকবে এবং দু’গোড়ালি খাড়া থাকবে’ (মির‘আত ৩/২০৪)।

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, দু’গোড়ালীর মাঝে এক বিঘত ফাঁক থাকবে (নায়ল ৩/১২১)। মূলত দাঁড়ানো অবস্থায় যেমন দু’পা ফাঁক থাকে, সিজদা অবস্থায়ও সেভাবে থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক অবস্থা। এক্ষণে ইবনু হিববান, ইবনু খুযায়মা ও হাকেম বর্ণিত আয়েশা (রাঃ)-এর দু’গোড়ালি মিলানো সম্পর্কে যে বর্ণনাটি এসেছে, সে সম্পর্কে ইমাম হাকেম বলেন, ‘এই হাদীছ ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ গোড়ালী মিলানোর কথা বর্ণনা করেছেন বলে আমি জানি না (হাকেম ১/৩৫২)। তাই ছহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীছে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত দু’গোড়ালি খাড়া রাখার হাদীছই অগ্রাধিকারযোগ্য। সর্বোপরি বিষয়টি মুস্তাহাব। অতএব খাড়া বা মিলানো যেভাবে সহজ হবে সেভাবেই রাখবে। এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

প্রশ্ন (২৮৭) : কুরআন তেলাওয়াত করলে যেমন ছওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি কেউ যদি মনোযোগ সহকারে কুরআনের তেলাওয়াত শ্রবণ করে একই ছওয়াব পাবে কি?

উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত করার মতই তেলাওয়াত শ্রবণে দশ গুণ বা ততোধিক ছওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে এটি নির্ভর করবে শ্রবণকারীর মনোযোগের উপর (তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৩৭; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মনোযোগ সহকারে শুনার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের উপর রহমত নাযিল হয়’ (আ‘রাফ ৭/২০৪)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করবে এর বিনিময়ে তার জন্য দশটি নেকী রয়েছে’ (আন‘আম ৬/১৬০)। রাসূল (ছাঃ) ইবনু মাসঊদ, উবাই ইবনু কা‘ব, আবু মূসা আশ‘আরীসহ অন্যান্য ছাহাবীদের নিকট থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনতেন। ছাহাবায়ে কেরামও একত্রিত হ’লে একে অপরের নিকট থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনতেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১১/৬২৬; তাফসীরুস সা‘দী ১/৩১৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের দশগুণ হ’তে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হয়..’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৯/১৯৫৯)।

প্রশ্ন (২৮৮) : আমাদের মসজিদে পুরুষের পিছনে নারীদের খোলা স্থানে ছালাত আদায় করতে হয়। পুরুষরা সরাসরি তাদেরকে দেখতে পায়। এক্ষেত্রে মসজিদের দায়িত্বশীলগণ নববী যুগে নারীদের ছালাত আদায় এবং বর্তমানে মসজিদুল হারামে নারী-পুরুষ একই স্থানে ছালাত আদায়ের যুক্তি পেশ করেন। এক্ষণে এভাবে ছালাত আদায় জায়েয হবে কি?

উত্তর : উক্ত পদ্ধতি জায়েয হ’লেও বর্তমান ফিৎনার যুগে নারী-পুরুষের মাঝে স্বতন্ত্র পর্দা টাঙিয়ে বা প্রতিবন্ধক দেয়াল রেখে ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা করাই উত্তম (বুখারী হা/৩৮০; মুসলিম হা/৬৫৮; আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, শরহ সুনান আবু দাউদ ৪/৮৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন, ‘ছালাতে পুরুষদের জন্যে সবচেয়ে উত্তম কাতার হচ্ছে প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট হ’ল পিছনের কাতার। আর মহিলাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কাতার হ’ল পিছনের কাতার এবং সবচেয়ে অনুত্তম হচ্ছে প্রথম কাতার’ (ছহীহ মুসলিম হা/৪৪০; মিশকাত হা/১০৯২)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘পুরুষদের কাতারসমূহের যে বর্ণনা হাদীছে দেয়া হয়েছে তা স্বাভাবিকভাবে প্রযোজ্য তথা পুরুষদের জন্য প্রথম কাতার সর্বদাই উত্তম এবং শেষ কাতার সর্বদাই কম ছওয়াব অর্জনের কারণ। পক্ষান্তরে নারীদের কাতারসমূহের যে বিবরণ হাদীছে এসেছে তা মূলত ঐ সকল নারীদের কাতার যারা পুরুষদের সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করে। অন্যদিকে যদি তারা পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করে তাহ’লে তাদের জন্যও প্রথম কাতারে ছালাত আদায় করা অধিক ছওয়াবের কারণ। আর শেষ কাতারে ছালাত আদায় করা ছওয়াব কম হওয়ার কারণ (নববী, শরহে মুসলিম ৪/১৫৯)। এখান থেকে বুঝা যায়, মসজিদে জামা‘আতে পুরুষ ও নারীর মাঝে ব্যবধান ও আড়াল রাখাই কাম্য এবং অধিকতর নিরাপদ। উল্লেখ্য যে, হজ্জের সময়েও বর্তমানে মহিলাদের কাতার পৃথক করা হচ্ছে।

প্রশ্ন (২৮৯) : আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব সালাম ফিরানোর পর নিয়মিতভাবে ১ মিনিটও অপেক্ষা না করে নানা বক্তব্য শুরু করেন। ফলে ছালাত পরবর্তী তাসবীহ পাঠ এবং মাসবূকদের বাকী ছালাত আদায় কষ্টকর হয়। এভাবে বক্তব্য দেয়া জায়েয কি?

উত্তর : ছালাতান্তে বক্তব্য প্রদানকালে মাসবূকের বিষয়টি খেয়াল রাখা কর্তব্য। কারণ এতে ফরয ছালাত আদায়রত মুছল্লীদের ছালাতে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে, যা অনুচিৎ। একদা রাসূল (ছাঃ) মসজিদে ই‘তিকাফকালে ছাহাবীদেরকে উচ্চ স্বরে ক্বিরাআত করতে শুনে পর্দা উঠিয়ে বলেন, ‘জেনে রাখ! তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের রবের সাথে গোপনে আলাপরত আছ। অতএব তোমরা (উচ্চ স্বরে তেলাওয়াত দ্বারা) একে অন্যকে কষ্ট দিয়ো না’ (আবুদাউদ হা/১৩৩২; ছহীহাহ হা/১৫৯৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের প্রত্যেকেই তার রবের সাথে মুনাজাত করে। অতএব একজন অন্যজনের চেয়ে তেলাওয়াতে জোরে আওয়ায করে যেন মুমিনদের কষ্ট না দেয়া (ছহীহাহ হা/৩৪০০)। এজন্য ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলতেন, ইমাম ও মুক্তাদীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে সালাম শেষে যিকিরগুলো নীরবে পাঠ করা। তবে এক দিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য সামান্য জোরে পাঠ করার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তোমার ছালাতের ক্বিরাআতে স্বর অধিক উঁচু করো না বা একেবারে নীচু করো না। বরং দু’য়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর (ইসরা ১৭/১১০)। অতএব মাসবূকের ছালাত শেষ হ’লে ইমাম প্রয়োজনীয় কথা বলতে বা বক্তব্য দিতে পারেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) দিতেন (বুখারী হা/৮৪৬; মুসলিম হা/৪২৬; মিশকাত হা/৪৫৯৬)।

প্রশ্ন (২৯০) : ছালাতের প্রথম তাকবীর বলতে কি বুঝানো হয়েছে? সফরে থাকাবস্থায় একাকী বা দু’জন মিলে ছালাত আদায় করলে তাকবীরে ঊলায় অংশ গ্রহণের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : বিশুদ্ধ মতে, ইমামের তাকবীরে তাহরীমা পাঠরত অবস্থায় যে ছালাতে অংশ গ্রহণ করবে, সে তাকবীরে ঊলা পেয়েছে বলে গণ্য হবে এবং হাদীছে বর্ণিত ফযীলত লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ১/৩৪২; ইবনু রজব, ফাৎহুল বারী ৭/৯৩; ইবনু মুফলেহ, আল-ফুরূ‘ ১/৫২১; ওছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২/১৯২)। পরে যারা অংশগ্রহণ করবে তারা জামা‘আত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। এক্ষণে কেউ চল্লিশ দিন জামা‘আতে ছালাত আদায় করার নিয়ত করার পর সফরে বের হয়ে গেলে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করার চেষ্টা করবে। এরপরে সম্ভব না হ’লে সফর সঙ্গীদের সাথে বা একাকী ছালাত আদায় করবে তাকবীরে উলায় অংশ গ্রহণের ছওয়াব পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মানুষ রোগে অসুস্থ হ’লে অথবা সফরে থাকলে তার আমালনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হ’ত’ (বুখারী হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/১৫৪৪)।

উল্লেখ্য যে, কেউ যদি চল্লিশ দিন জামা‘আতের সাথে প্রতি ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে থাকে তাহ’লে হাদীছে বর্ণিত ছওয়াব পেয়ে যাবে বলেও হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যদিও সে ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পরে ছালাতে অংশ গ্রহণ করে। কারণ হাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকেরা যাতে নিয়মিত জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করে (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/২৬১৪)।

প্রশ্ন (২৯১) : হাতের ইশারায় সালাম প্রদান করা জায়েয কি?

উত্তর : সম্বোধিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দূরে থাকায় মুখে সালাম উচ্চারণের পাশাপাশি হাতের ইশারায় সালাম দেয়া জায়েয। যেমন বিভিন্ন জনসভা বা বড় মজলিসে করা হয়ে থাকে। হাদীছে এসেছে, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে একদল মহিলা বসা ছিল। তিনি হাত উঠিয়ে তাদেরকে সালাম দিলেন (তিরমিযী হা/২৬৯৭; আহমাদ হা/২৭৬৩০)। তবে সালাম মুখে উচ্চারণ না করে কেবল ইশারা করে সালাম আদান-প্রদান করা নাজায়েয (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৪৪৪)। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইহূদী ও খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য করো না। কেননা ইহূদীরা অঙগুলির ইশারায় সালাম দেয়, আর খ্রিষ্টানরা হাতের তালু দ্বারা সালাম করে (তিরমিযী হা/২৬৯৫; মিশকাত হা/৪৬৪৯; ছহীহাহ হা/২১৯৪)।

প্রশ্ন (২৯২) : ছালাতের ক্বিয়াম, রুকূ, সিজদা এবং তাশাহহুদে দৃষ্টি কোথায় থাকবে?

উত্তর : ছালাতে সাধারণভাবে দৃষ্টি থাকবে সিজদার স্থানে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কা‘বা ঘরে ঢুকে ছালাত আদায় করলেন, তখন তাঁর দৃষ্টি ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সিজদার স্থান থেকে সরেনি (হাকেম হা/১৭৬১; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩০১২; ছিফাতু ছালাতিন নবী (ছাঃ) ১/৬৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন রুকূ করতেন, মাথা উপরেও করতেন না এবং নীচুও করতেন না। বরং তার মাঝামাঝি রাখতেন (মুসলিম হা/৪৯৮, মিশকাত হা/৭৯১)। আর তাশাহহুদে বসা অবস্থায় রাসূল (ছাঃ) তর্জনী আঙগুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং তাঁর দৃষ্টি আঙগুলের ইশারা বরাবর থাকত, তার বাইরে যেত না (আবুদাউদ হা/৯৮৮, ৯৯০; নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, তাশাহহুদের সময় দৃষ্টি আঙগুলের উপর রাখাই সুন্নাত (নববী, শারহ মুসলিম হা/৯১০, নায়লুল আওত্বার ২/৩১৭)।

প্রশ্ন (২৯৩) : ছালাতে যদি দুনিয়াবী চিন্তা চলে আসে, তাহ’লে ছালাত সঠিক হবে কি?

উত্তর : ছালাতে খুশূ‘-খুযূ তথা একাগ্রতা থাকা যরূরী। কারো ছালাতে খুশূ‘-খুযূ তথা একাগ্রতার ঘাটতি থাকলে ছালাত হয়ে গেলেও ছওয়াব কমে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, এমন লোকও আছে যারা ছালাত শেষ করে ফিরে যায়, অথচ তার ছালাতের পূর্ণ ছওয়াব তার জন্য লেখা হয় না (অর্থাৎ ছালাতের রুকন ও শর্তগুলো পূরণ না করায় এবং খুশূ‘-খুযূ না থাকায় পূর্ণ ছওয়াব পায় না)। বরং কেউ পায় এক দশমাংশ, কেউ নবমাংশ, কেউ অষ্টমাংশ, কেউ সপ্তমাংশ, কেউ ষষ্ঠাংশ, কেউ পঞ্চমাংশ, কেউ চতুর্থাংশ, কেউ তৃতীয়াংশ, আবার কেউ পায় অর্ধেক (আবুদাউদ হা/৭৯৬; ছহীহুত তারগীব হা/৫৩৭)। উল্লেখ্য যে, লোকেরা ছালাতে দাঁড়ালে শয়তান মনোযোগ নষ্ট করে ছওয়াব থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে। ওছমান ইবনু আবূল ‘আছ (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! শয়তান আমার, আমার ছালাত ও ক্বিরাআতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, এটা এক (প্রকারের) শয়তান যার নাম খিনযাব। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন (আউযুবিল্লাহ পড়ে) তার অনিষ্ট হ’তে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তোমার বাম পাশে তিনবার থুক মারবে। তিনি বলেন, তারপরে আমি তা করলাম। ফলে আল্লাহ আমার হ’তে তা দূর করে দিলেন (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭)।

গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু মাসলা মাসায়েল

প্রশ্ন (১) : আমি আমার খালাতো বোনের মেয়েকে ভালোবাসি। সেও আমাদের পসন্দ করে। আমরা বিবাহ করতে চাই। কিন্তু উভয় পরিবার কোনভাবেই রাযী নয়। এক্ষণে আমরা শরী‘আতসম্মত উপায়ে বিবাহ বন্ধনে কিভাবে আবদ্ধ হ’তে পারি?

উত্তর : খালাতো বোনের মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয। আলী (রাঃ) তার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে ফাতেমা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন। একজন মেয়ের বিবাহের জন্য তার পিতার অনুমতি শর্ত। পিতা বা বৈধ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন মেয়ের বিবাহ জায়েয নয় (আবূদাউদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে হা/২৭০৯)। সেজন্য পিতা-মাতার কর্তব্য উভয় পরিবারের সাথে আলোচনা করে বিবাহের ব্যবস্থা করা। তাহ’লে সমাজে ফিৎনা কমে যাবে। সাথে সাথে ছেলের কর্তব্য হবে পিতা-মাতাকে রাযী করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। পিতা-মাতা সন্তুষ্ট না থাকলে অন্য কোন দ্বীনদার মেয়েকে খুঁজে বিবাহ করবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/২৪)। কারণ পিতা-মাতাকে খুশী করার জন্য দুনিয়াবী কিছু স্বার্থ ত্যাগ করলে আল্লাহ খুশী হন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯)। তিনি বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ (নাসাঈ হা/৩১০৪)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কিছু ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ তার প্রতিদান হিসাবে তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন’ (আহমাদ হা/২০৭৫৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮১২৮)।

প্রশ্ন (২) : আপন ভাগনীর মেয়ে তথা নাতনীকে বিবাহ করা যাবে কী?

উত্তর : বোনের নাতনী নিজ নাতনী সমতুল্য, যে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী’ (নিসা ৪/২৩)। উক্ত আয়াতে বোনের নাতনী ভাগিনেয়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৬৫; সারাখ্সী, আল-মাবসূত্ব ৩০/২৯১; আল-ফিক্বহুল ইসলামী ৯/১২০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/৩৮৪, ৩৮৭)।

প্রশ্ন (৩) : যে সকল দেশে ইসলামী আইন পুরোপুরি নেই, সে সকল দেশের বিচারক হওয়া জায়েয কি?

উত্তর : বিচার ব্যবস্থা দুই প্রকারের। ১. শারঈ বিচার ব্যবস্থা ২. দুনিয়াবী বিচার ব্যবস্থা। আর দুনিয়াবী বিচার ব্যবস্থা আবার দুইভাগে বিভক্ত। ১. শরী‘আত সম্মত। ২. শরী‘আত বিরোধী। এক্ষণে কোন মুসলিম দেশে যদি শরী‘আত বিরোধী আইন না থাকে, তাহ’লে তাতে চাকুরী করায় দোষ নেই। তবে এমন বিচার ব্যবস্থায় নিযুক্ত হ’লে সর্বক্ষেত্রে শারঈ বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৭৯৩-৯৪; শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম, তাহকীমুল কাওয়ানীন ৭ পৃ.)।

প্রশ্ন (৪) : অবৈধ মেলামেশা করে এক মেয়ে গর্ভবতী হয়। কিছু দিনের মধ্যে তা প্রকাশ পেলে সমাজের লোক এর সমাধান হিসাবে ঐ দু’জনের বিয়ে দেয়। এই সমাধান কি শরী‘আতসম্মত? এরকম পরিস্থিতির সঠিক সমাধান কি?

উত্তর : যেনা-ব্যভিচার হদযোগ্য কবীরা গুনাহ। এথেকে বেঁচে থাকা মুসলমানের জন্য আবশ্যক। তাদের হদ কায়েম করবে সরকার ও প্রশাসন। তারা সে দায়িত্ব পালন না করলে তারা দায়ী হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই বিবাহ জায়েয নয়। জমহূর বিদ্বান এর বিরোধিতা করেছেন। কেননা গর্ভবতী নারীর সাথে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বৈধ নয় এবং যেনার সন্তান হওয়ায় উক্ত সন্তানও বৈধ নয় (ওছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/৩৩০)। তবে বর্ণিত পরিস্থিতিতে সামাজিক বিশৃংখলা রোধে সমাজ প্রধানদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত বিবাহ বৈধ হয়েছে। এমতাবস্থায় বিবাহের পূর্বে অবশ্যই উভয়কে তওবা করাতে হবে এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মতে সন্তানও পিতা-মাতার দিকে সম্পৃক্ত হবে। কারণ এই সন্তানের দাবীদার অন্য কেউ নয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৯/১২২; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৫/৩৮১-৮২)। এরূপ পরিস্থিতিতে বিবাহ বৈধ হওয়ার পক্ষে কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈ থেকে আছার বর্ণিত হয়েছে (বায়হাক্বী হা/২১২৬৩; মুওয়াত্ত্বা হা/২২, ২৮৮৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৭৪১৭; মাওয়ার্দী, আল-হাবিল কাবীর ৯/১৮৯)। ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) প্রমুখও উক্ত অভিমত সমর্থন করেছেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১০; যাদুল মা‘আদ ৫/৩৮১-৮২; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/১২৭)। আল্লাহ অধিক অবগত।

প্রশ্ন (৫) : পুরুষরা নারীদের মাঝে অফলাইন বা অনলাইনে দাওয়াতী কাজ করতে পারবে কি? এক্ষেত্রে কি কি আদব রক্ষা করা যরূরী?

উত্তর : পুরুষরা নারীদের মাঝে অফলাইন বা অনলাইনে দাওয়াতী কাজ করতে পারে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কেবলমাত্র পুরুষেরাই আপনার হাদীছ শোনার সৌভাগ্য লাভ করছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত করুন। আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব, আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দিবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও (বুখারী হা/৭৩১০; মিশকাত হা/১৭৫৩)। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই নারী-পুরুষদের জন্য বর্ণিত শারঈ বিধান মেনে চলতে হবে। যেমন নির্জনে কথা বলবে না, কমনীয় কন্ঠে কথা বলবে না এবং শারঈ পর্দার বিধান মেনে চলবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২৪০; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৮/৩৩৬)। উল্লেখ্য যে, দাওয়াতী কাজের সূত্র ধরে যেন কোনরূপ অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে না ওঠে, সে ব্যাপারে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর ফিৎনার আশংকা থাকলে বিরত থাকতে হবে।

প্রশ্ন (৬) : অমুসলিম কেউ মুসলিম হ’তে চাইলে একাকী কালেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করতে পারবে কি?

উত্তর : ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রাথমিক শর্ত তিনটি। (১) ইসলাম গ্রহণের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা (নিসা ১২৫; লোকমান ২২), (২) জেনে-বুঝে কালেমায়ে শাহাদত তথা-‘আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু’ পাঠ করা (হুজুরাত ৪৯/১৫; মুসলিম হা/১৭৬৪, ৮৬৮; মিশকাত হা/৩৯৬৪, ৫৮৬০)। (৩) ইসলামের বিধি-বিধানসমূহ পালন করা (বুখারী হা/২৫; মুসলিম হা/২২)। এক্ষণে ইসলাম গ্রহণকালে সাক্ষী রাখা ও তা সামাজিকভাবে প্রকাশ করা মৌলিক শর্ত নয়; বরং মুস্তাহাব। বিশেষত আইনগতভাবে কার্যকর করার জন্য কোন মুত্তাক্বী আলেমের নিকট ইসলাম কবুল করা ও আদালতে এফিডেভিট করা উত্তম। তবে আত্মরক্ষা বা শারঈ ওযর থাকলে প্রয়োজনে ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখা দোষণীয় নয়। যেমন বাদশাহ নাজাশীর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন ছিল। এরূপ ক্ষেত্রে একাকী কালেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণে বাধা নেই।

প্রশ্ন (৭) : আমি স্কুলে শিক্ষাদান করার সময় প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত সব বয়সের মেয়ে শিক্ষার্থীরা থাকে। এসময় প্রাপ্তবয়স্কদের দিকে তাকিয়ে পাঠদান করা যাবে কি? মাঝে মাঝে মনের অজান্তে দৃষ্টি চলে যায়, এতে কোন পাপ হবে কি?

উত্তর : নারী-পুরুষের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এই ব্যবস্থা না থাকলে সাধ্যমত দৃষ্টি নত রেখে পাঠদান করবে (নূর ২৪/৩০-৩১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে বলেন, ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য মাফ। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়’ (আবুদাঊদ হা/২১৪৯ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১১০)। তবে প্রয়োজনে বা বাক্যালাপকালে দৃষ্টি প্রদানে সাধারণভাবে বাধা নেই, যদি তা কামনামুক্ত থাকে। কিন্তু কামনাপূর্ণ কুদৃষ্টি সর্বাবস্থায় হারাম (নববী, শরহ মুসলিম হা/৩৩৮-এর আলোচনা ৪/৩১ পৃ.)।

প্রশ্ন (৮) : হযরত আলী (রাঃ)-এর স্ত্রী এবং দাসীর সংখ্যা মোট কতজন ছিল?

উত্তর : ফাতেমা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর আলী (রাঃ) পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে আরো আট জন মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণ হ’লেন- (১) উম্মুল বানীন বিনতে হিযাম, (২) লায়লা বিনতে মাসঊদ, ৩. আসমা বিনতে উমায়েস, ৪. উম্মে হাবীবা বিনতে রাবী‘আ, ৫. উমামা বিনতে ‘আছ, ৬. খাওলা বিনতে জা‘ফর, ৭. উম্মে সাঈদ বিনতে ওরওয়া, ৮. মাহইয়া বিনতে ইমরিল ক্বায়েস (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/৩৬৬-৩৬৮)। তবে কেউ একসঙ্গে ছিলেন না। কারণ ইসলামে চার জনের বেশী স্ত্রী একসঙ্গে রাখার বিধান নেই। তাঁর দাসদাসীর ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না। কেবল এটুকু জানা যায় যে, ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় তাঁর কোন দাস-দাসী ছিল না (বুখারী হা/৫৩৬২; মিশকাত হা/২৩৮৭)।

প্রশ্ন (৯) : কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে বৈধ কর্মকান্ডের সাথে সাথে নাচ-গানের মত শরী‘আতবিরোধী কাজও হবে। জেনে-শুনে এরূপ অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা দেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : জেনে-শুনে অন্যায় কাজে দৈহিক বা আর্থিক কোনভাবে সহযোগিতা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না (মায়েদাহ ৫/২)। তবে বাধ্যগত কারণে অন্তরে ঘৃণা রেখে চাঁদা প্রদান করলে গোনাহ হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ আমার নিকট থেকে প্রয়োজন পূর্ণ করে যায়। অথচ তা গোপন করে (অর্থাৎ সে হারাম কাজে লিপ্ত হয়)। অথচ এর বদলা হ’ল জাহান্নাম। ওমর (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আপনি তাদের দেন কেন? তিনি বললেন, তারা না পেলে যাবে না (এজন্য দেই)। আর আল্লাহ আমার জন্য কৃপণতা পসন্দ করেন না’ (আহমাদ হা/১১১৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/৮৪৪)।

প্রশ্ন (১০) : আমার স্বামী কথিত আহলে কুরআন মতাদর্শে বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন যে, প্রত্যেক ওয়াক্তে ফরয ছালাত দু’রাক‘আত করে। তার মতে, প্রচলিত হাদীছগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষণে আমি কি তার সাথে সংসার করতে পারব?

উত্তর : যারা কুরআনের সাথে হাদীছকে শরী‘আতের দলীল হিসাবে বিশ্বাস করে না, তারা সুস্পষ্ট কাফির। কারণ হাদীছ অনুসরণ করা কুরআনেরই নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও’ (হাশর ৫৯/৭)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)। এরূপ অসংখ্য আয়াত আছে যেখানে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ অনুসরণ করাকে অপরিহার্য বলা হয়েছে। কেননা রাসূল (ছাঃ) নিজের মনগড়া কোন কথা বলতেন না, বরং তার ওপর যা অহী নাযিল হ’ত, তা-ই বলতেন (নাজম ৩-৪)। রাসূল (ছাঃ) হাদীছ অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছলে সে বলবে যে, আমি এসব কিছু জানি না। যা আল্লাহর কিতাবে পাব, তারই আমরা অনুসরণ করব’ (আবুদাউদ হা/৪৬০৫; মিশকাত হা/১৬২)। তিনি আরো বলেন, ‘জেনে রাখো! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত। সাবধান! এমন এক সময় আসছে যখন বিলাসী মানুষ তার গদিতে বসে বলবে, তোমাদের জন্য এ কুরআনই যথেষ্ট। সেখানে যা হালাল পাবে, তাকে হালাল জানবে। আর

 সেখানে যা হারাম পাবে, তোমরা তাকে হারাম জানবে। অথচ আল্লাহর রাসূল যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার ন্যায়’ (আবুদাউদ হা/৪৬০৪; মিশকাত হা/১৬৩)। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা মযবূতভাবে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৩৩৩৮; মিশকাত হা/১৮৬; হাকেম হা/৩১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৩৭)।

সুতরাং যারা হাদীছকে অস্বীকার করে, তারা কুরআনের নির্দেশ অমান্য করার কারণে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতার কারণে সকল বিদ্বানের ঐক্যমতে সুস্পষ্ট কাফির এবং মুরতাদ হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষণে কোন স্বামী যদি হাদীছকে অস্বীকার করে তাহ’লে স্ত্রী প্রথমে স্বামীকে সঠিক ইসলামের দাওয়াত দিবে। অতঃপর স্বামী কোনভাবেই তা মেনে না নিলে তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা কোন মুসলমান ব্যক্তি কাফিরের জন্য হালাল নয় (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৪/৩১৫)।

প্রশ্ন (১১) : মানুষ ও পাথরকে জাহান্নামের ইন্ধন হিসাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষণে কোন পাথর বা মানুষকে জাহান্নামের ইন্ধন হিসাবে ব্যবহার করা হবে?

উত্তর : পাপী মানুষ ও পাথরকে জাহান্নামের অন্যতম ইন্ধন হিসাবে ব্যবহার করা হবে। মানুষের মধ্যে যারা আল্লাহতে অবিশ্বাসী, বিদ্রোহী এবং পাথরের মধ্য হ’তে ঐ সকল পাথরকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হবে, যে সকল পাথর দ্বারা মূর্তি বানিয়ে আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়। এর উদ্দেশ্য পাথরকে শাস্তি দেওয়া নয় বরং মূর্তিপূজারীদের পুজিত বস্ত্তর হীনকর অবস্থা বর্ণনা করা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা কাফের, তারা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন’ (জিন ৭২/১৫)। তিনি আরো বলেন, বস্ত্ততঃ তোমরা এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তোমরা পূজা কর, সবই তো জাহান্নামের ইন্ধন। তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে (আম্বিয়া ২১/৯৮)। আর পাথরের মূর্তিগুলোকে জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিরাটকায় দুর্গন্ধযুক্ত কঠিন কালো (সালফার) পাথরও জাহান্নামের ইন্ধন হিসাবে ব্যবহার করা হবে, যা বহুগুণে দাহ্যকর (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/১১০)।

প্রশ্ন (১২) : পিতা ছূফীবাদী আক্বীদাসহ নানা শিরকী আক্বীদায় বিশ্বাসী। নিয়মিত ছালাতও আদায় করেন না। তিনি আমার বিয়ের ওলী হ’তে পারবেন কি?

উত্তর : সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার অবস্থান। সেজন্য পিতা-মাতার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করবে এবং নছীহত করবে। এক্ষণে পিতা যদি স্পষ্ট শিরকী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং তার মাঝে সংশোধনের ইচ্ছা না থাকে, তবে তিনি মেয়ের বিবাহের অভিভাবকত্ব হারাবেন এবং পরবর্তী অভিভাবকগণ তথা দাদা, চাচা, ভাই প্রমুখ দায়িত্ব পালন করবেন (ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/১৪৮-৪৯, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৮৪ প্রভৃতি)।

প্রশ্ন (১৩) : মেয়েরা পর্দার মধ্যে থেকে তোলা ছবি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করতে পারবে কি? বিশেষতঃ যে পেজের ফ্রেন্ড লিস্টে অনেক গায়ের মাহরাম পুরুষ রয়েছে?

উত্তর: পর্দার সাথে হ’লেও ফেসবুকে অপ্রয়োজনীয় ও যথেচ্ছ ছবির ব্যবহার থেকে নারীদের সতর্ক থাকা উচিৎ। কারণ এতেও ফিৎনা ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (আন‘আম ৬/১৫১)।

প্রশ্ন (১৪) : আমাদের দেশে কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একসাথে ছেলে-মেয়েদের ক্লাস নিতে হয়। এমন প্রতিষ্ঠানে কোন নারী কি পর্দার সাথে শিক্ষিকা হিসাবে চাকুরী করতে পারবে?

উত্তর : এমন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা পর্দার সাথে হ’লেও নারীদের জন্য সমীচীন নয়। কারণ এমন কর্মস্থলে নারী-পুরুষের বাধাহীন সহাবস্থানের কারণে ফিৎনার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এজন্য নারীবান্ধব কর্মস্থল খুঁজে নিতে হবে। কোন বিকল্প না থাকলে শারঈ পর্দার বিধান যথাযথভাবে মেনে পাঠদান বা চাকুরী করবে (আহযাব ৩৩/৩২; তওবা ৯/৭১; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)। স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মেনে মহিলারা এরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে পারে। (১) চক্ষু অবনমিত রাখা (নূর ২৪/৩১)। (২) শারঈ পর্দার পোষাক পরিধান করা (নূর ২৪/৩১; আহযাব ৩৩/৫৯)। (৩) অন্যকে আকৃষ্ট না করা (আহযাব ৩৩/৩২; নূর ২৪/৩১)। (৪) নিজে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট না হওয়া (মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪)। (৫) সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা (ছহীহাহ হা/১০৩১)। (৬) কারো সাথে নির্জনে অবস্থান না করা (ছহীহাহ হা/৪৩০)। (৭) পরপুরুষদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকা (আহযাব ৩৩/৫৩)।

প্রশ্ন (১৫) : সব পশু-পাখি বা জিনিসপত্র কি আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে?

উত্তর : আল্লাহর সকল সৃষ্টি তথা জীব ও জড় সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। আল্লাহ বলেন, ‘সাত আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যেকার সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা বর্ণনা তোমরা বুঝতে পারো না’ (ইসরা ১৭/৪৪)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই স্ব স্ব দো‘আ ও তাসবীহ জানে’ (নূর ২৪/৪১)। এই আয়াতের তাফসীরে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এটা জীব-জন্তু, উদ্ভিদ এবং জড়পদার্থসহ সকল কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/৭৯, ৬/৭২)। ইমাম নাখাঈ বলেন, ‘যার মধ্যে রূহ আছে সেটাও তাসবীহ পাঠ করে এবং যার মধ্যে রূহ নেই সেটাও তাসবীহ পাঠ করে এবং দরজার চৌকাঠও’ (আল-জামে‘ লি আহকামিল কুরআন ১০/২৬৮)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে খাবার খেতাম এবং খাদ্যের তাসবীহ পাঠ শুনতে পেতাম’ (বুখারী হা/৩৫৭৯; তিরমিযী হা/৩৬৩৩; মিশকাত হা/৫৯১০)।

প্রশ্ন (১৬) : দশ বছরের বাচ্চাদের বিছানা পৃথক করে দিতে হবে। কিন্তু মাঝে মাঝে কি মা ছেলেকে নিয়ে ঘুমাতে পারবে? নাকি এটা একেবারেই নিষিদ্ধ?

উত্তর : শিশুর বয়স দশ বছর হয়ে গেলে বিছানা আলাদা করতে হবে। যেমন ছেলে শিশু থেকে মায়ের বিছানা, মেয়ে শিশু থেকে পিতার বিছানা কিংবা ভাই-বোন পরস্পরের বিছানা আলাদা হওয়া আবশ্যক। এক্ষণে জায়গার সংকটের কারণে কখনও মা তার ছেলে সন্তানকে নিয়ে একই বিছানায় ঘুমাতে বাধ্য হ’লে সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং মাঝে বালিশ বা প্রতিবন্ধকতা রাখবেন (মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর ৫/৫২১; ইবনুল আবেদীন, রাদ্দুল মুহতার ৬/৩৮২)।

প্রশ্ন (১৭) : আমার স্ত্রীকে আমি শারঈ নিয়ম অনুযায়ীই বিবাহ করেছি। কিন্তু তার পূর্বের স্বামী তাকে তালাক দেয়নি। আমাদের সন্তানও আছে। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?

উত্তর : পূর্বের স্বামী তালাক না দেওয়া পর্যন্ত এবং তালাক শেষে ইদ্দত পালন সম্পন্ন না হ’লে আরেকজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে না। তবে স্ত্রী যদি স্বামীর নিকট হ’তে খোলা‘ নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এক ঋতুকাল ইদ্দত পালন করে তাহ’লে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে। উপরোক্ত দু’টি পদ্ধতির একটিও না হয়ে থাকলে দ্বিতীয় বিয়ে শরী‘আতসম্মত হয়নি (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/১০৮; বিন বায, ফাতাওয়াত-তালাক ১/৩৫)। এক্ষণে দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ করতে হ’লে স্ত্রী আদালত বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দারস্থ হবে এবং খোলা‘ তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হবে। অতঃপর এক ঋতুকাল ইদ্দত পালন শেষে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। আর পূর্বের পাপের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/০২)।

প্রশ্ন (১৮) : মনের যেনা বলতে কি বুঝায়? উদাহরণ সহ জানতে চাই।

উত্তর : হাদীছে বর্ণিত মনের যেনা বলতে যেনার পরিকল্পনাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে কারো সাথে যেনা করার সংকল্প করে এবং বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে তাহ’লে সে রূপক অর্থে যেনাকার হিসাবে গুনাহগার হবে (নববী, শরহ মুসলিম ১৬/২০৬)। যেমন কেউ কাউকে হত্যার পরিকল্পনা করে লড়াইয়ে লিপ্ত হ’লে এবং তাতে নিজে নিহত হ’লেও জাহান্নামে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পরে যুদ্ধ করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কি? তিনি বললেন, সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদ্যত ছিল (বুখারী হা/৩১; মুসলিম হা/২৮৮৮)।

তবে কেবল মনে পরনারীর কামনা আসা গুনাহের কারণ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অসৎকর্মের সংকল্প করে, কিন্তু বাস্তবে তা না করে, আল্লাহ তার জন্য একে একটি পূর্ণ নেকীর কাজ হিসাবে লিখে নেন। আর যদি অসৎ কর্মের সংকল্প করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তাহ’লে আল্লাহ এর জন্য তার একটি গুনাহ লিখেন (বুখারী হা/৬৪৯১; মিশকাত হা/২৩৭৪)।

প্রশ্ন (১৯) : জঘন্য পাপ করে ফেলে পরে তওবা করেছি। কিন্তু তার ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। বার বার তওবা করছি। কিন্তু কেউ দেখে ফেলার ভয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : নিজের একাউন্ট থেকে ছবি ও ভিডিও মুছে করে ফেলুন এবং যার কাছে আছে, সেও যেন মুছে ফেলে। নইলে অশ্লীলতা প্রচারের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে (নূর ২৪/১৯)। মনে রাখতে হবে যে, অনুতপ্ত হওয়ার সাথে আন্তরিক তওবা আল্লাহ কবুল করেন এবং পিছনের সকল পাপ ক্ষমা করে দেন (যুমার ৩৯/৫৩)।

প্রশ্ন (২০) : বিয়ের জন্য ঘটককে পাত্রীর ছবি দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : ঘটককে নয় বরং সরাসরি বর বা কনেকে দেখা বা অভিভাবকের মাধ্যমে ছবি আদান প্রদান করা যাবে। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, আমি আনছারদের এক মেয়েকে বিবাহ করতে চাই। তিনি বললেন, তুমি তাকে প্রথমে দেখে নাও। কারণ আনছার মহিলাদের চোখে দোষ থাকে (মুসলিম হা/১৪২৪, মিশকাত হা/৩০৯৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর (ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮)। তিনি আরো বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোন পাত্রীকে প্রস্তাব দিবে সম্ভব হ’লে সে যেন পাত্রীকে দেখে। যা বিবাহের জন্য সহায়ক হবে (আবুদাউদ হা/২০৮২; মিশকাত হা/৩১০৬; ছহীহাহ হা/৯৯)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাত্রী দর্শনে পরস্পরে মহববত সৃষ্টি হয়’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৬৫; মিশকাত হা/৩১০৭; ছহীহাহ হা/৯৬)। সুতরাং বিবাহের উদ্দেশ্যে ছবি দেখা জায়েয। তবে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন- ছবি শারঈ পর্দার সীমারেখা মেনে হ’তে হবে এবং ছবি অন্য কোন গায়ের মাহরাম ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা যাবে না (আওনুল মা‘বুদ ৬/৬৯)।

প্রশ্ন (২১) : ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে কী জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে? করা হ’লে তাদের অপরাধ কী?

উত্তর : ক্বিয়ামতের দিন চন্দ্র ও সূর্যকে ভাঁজ করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে মর্মে বিশুদ্ধ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ছহীহাহ হা/১২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৪৩)। তবে এটি শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়। কারণ এই দু’টো আল্লাহর অনুগত সৃষ্টি। আল্লাহ বলেন, তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও বহু মানুষ? (হজ্জ ২২/১৮)। বরং দু’টি কারণে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে- (১) জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে। যেমন পাথর জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার হবে। (২) চন্দ্র ও সূর্যের উপাসকদের লজ্জা দেওয়ার জন্য। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, দুনিয়ায় তারা যাদের উপাসনা করেছিল তা বাতিল ছিল (আলবানী, ছহীহাহ হা/১২৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

প্রশ্ন (২২) : ইবাদতের উদ্দেশ্য না রেখে কেবল সম্মানের উদ্দেশ্যে কাউকে সিজদা করা যাবে কি? ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) কি এটাকে জায়েয বলেছেন?

উত্তর : পূর্বের কোন কোন নবীর যুগে সম্মানের উদ্দেশ্যে সিজদা করা জায়েয থাকলেও শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩; ছহীহাহ হা/৩৪৯০; আবুদাঊদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৭০; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৩৬)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)  সিজদাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। এক- ইবাদতের সিজদা। যা আল্লাহর জন্য খাছ। দুই- সম্মানের সিজদা। যা ফেরেশতাগণ আল্লাহর হুকুমে আদম (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে করেছিলেন। তিনি বলেন, দুই সিজদা কখনোই এক নয়। অতএব তিনি সম্মানের সিজদাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য জায়েয বলেননি (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৪/৩৬১ পৃ.)।

প্রশ্ন (২৩) : জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী দু’বার অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ করে ঘর ছেড়েছে। এক্ষণে সে পুনরায় মূল স্বামীর কাছে ফিরতে চায়। এরূপ নারীকে বিবাহ করে ঘরে আনা যাবে কি?

উত্তর : প্রশ্ন অনুযায়ী উক্ত নারী দু’বার ‘খোলা’ করে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আর ‘খোলা’র মাধ্যমে স্ত্রী স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হ’লে এবং পুনরায় উভয়ে সংসার করতে চাইলে নতুন বিবাহ ও মোহরের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারে (বাক্বারাহ ২/২৩২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৩০৬)। তবে বিষয়টি ছাগীকে বার বার পাঠা দেখানোর মতো।

প্রশ্ন (২৪) : বুখারীতে এসেছে আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি।... যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় চায়, তাহ’লে আমি তাকে আশ্রয় দেই।- এ হাদীছের ব্যাখ্যা কি? কারণ এ হাদীছ থেকে বাতিলপন্থীরা দলীল গ্রহণ করে।

উত্তর : প্রথমতঃ এই হাদীছে মুমিন বান্দারা যে আল্লাহর অলী বা বন্ধু, তা বর্ণিত হয়েছে। যারা এসকল বান্দার সাথে শত্রুতা পোষণ করে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই ব্যবস্থা নেন। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর নৈকট্য লাভের যে সকল মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে ফরয ইবাদতই প্রথম। তবে নফলের গুরুত্বও কম নয়। তৃতীয়তঃ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ ভালোবাসা অর্জন করা যায়। আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবাসেন তখন তিনি তার হাত, পা, চোখ ও কান হয়ে যান। অর্থাৎ আল্লাহ যে আমলগুলো ভালোবাসেন সে ব্যক্তি কেবল সেই আমলগুলো দেখা, শোনা এবং করার তাওফীক লাভ করে। আল্লাহর অপসন্দনীয় কোন আমল সে দেখতে-শুনতে পায় না এবং তা করতেও পারে না। কারণ তার সমস্ত অঙ্গ আল্লাহর ইচ্ছার অনুবর্তী হয়ে যায়। মূলত: আল্লাহ এভাবে তাকে দ্বীনের উপর হেফাযত করেন। চতুর্থত: যখন আল্লাহ তা‘আলা কাউকে ভালোবাসেন আর সে দো‘আ করে তখন আল্লাহ তা কবুল করেন (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১১/৩৪৪; ইবনু বাত্তাল, শারহুল বুখারী ১০/২১২; মির‘আত ৭/৩৮৯; মিরকাত ৪/১৫৪৫ পৃ.)। অতএব উক্ত হাদীছ থেকে বিশেষ ব্যক্তি বা দলের ফায়েদা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।

প্রশ্ন (২৫) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, পিতা-মাতা মারা গেলেও তারা জীবিত ছেলে-মেয়েদের পাপের ভাগীদার হবে এবং কবরে শাস্তি পাবে। কথাটির সত্যতা আছে কি?

উত্তর : যদি পিতামাতা কোন পাপের সূচনা করে যান এবং সন্তানেরা সেই পাপকর্ম করতে থাকে তাহ’লে সেই পাপের বোঝা পিতামাতাকে বহন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন ওরা পূর্ণমাত্রায় বহন করবে ওদের পাপভার এবং তাদের পাপভার যাদেরকে ওরা অজ্ঞতাবশে বিভ্রান্ত করেছে’ (নাহল ১৬/২৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না’ (মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮)। আর যদি সন্তানেরা নিজ থেকেই কোন পাপ করে থাকে তাহ’লে তাদের পাপের বোঝা পিতামাতা বহন করবে না। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের দ্বারা নিজেকেই দায়ী করে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা যাবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৬৬৯, ৩০৫৫)।

প্রশ্ন (২৬) : কোন নারীকে জোর করে ধর্ষণ করা হ’লে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে কী? আর ধর্ষণের কারণে পেটে বাচ্চা চলে আসলে উক্ত বাচ্চা নষ্ট করা যাবে কী?

উত্তর : এক্ষেত্রে উক্ত নারী অত্যাচারিতা ও নিরপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। জনৈক পুরুষ একজন নারীকে ধর্ষণ করলে তাদেরকে উভয়কে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আনা হ’লে তিনি মহিলাকে বললেন, তুমি চলে যাও। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি ঐ ধর্ষণকারী পুরুষকে রজম করার আদেশ দেন’ (আবুদাঊদ হা/৪৩৭৯; তিরমিযী হা/১৪৫৪, মিশকাত হা/৩৫৭২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২৬/১৮৭)।

আর ধর্ষণের ফলে পেটে বাচ্চা চলে আসলে এবং চল্লিশ দিন অতিক্রান্ত হ’লে তা নষ্ট করা যাবেনা (ইবনু রজব, জামে‘উল ঊলূম ওয়াল হিকাম ১/১৫৭, ১৬১; ফাৎওয়া লাজনা দায়েমাহ ২১/৪৫০)।

প্রশ্ন (২৭) : ছেলেরা নার্সিং পেশায় নিয়োজিত হ’তে পারবে কি? দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী নারী-পুরুষ উভয়কেই অনেক সময় স্পর্শের মাধ্যমেই সেবা দিতে হয়। এছাড়া চোখের হেফাযত করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। সব মিলিয়ে আমার করণীয় কি?

উত্তর : নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। এর মাধ্যমে মানব সেবা করার উত্তম সুযোগ পাওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপকারী (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৩৬৬৪৬; ছহীহাহ হা/৯০৬)। সাধারণভাবে পুরুষ নার্স পুরুষদের সেবা করবে এবং নারী নার্স নারীদের সেবা করবে। তবে বাধ্যগত অবস্থাতে পুরুষ নারীকে বা নারী পুরুষকে সেবা দিতে পারে (ইবনুল মুফলেহ, আল মুবদে‘ ৬/৮৭; খত্বীব শারবীনী, আল-ইক্বনা‘ ২/৪০৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/২০; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/০২)। আর এমতবস্থায়ও সাধ্যমত দৃষ্টিকে হেফাযতে রেখে শারঈ সীমারেখা মেনে চলতে হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর (তাগাবুন ৬৪/১৬)।

প্রশ্ন (২৮) : কুরআন বা হাদীছে আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মধ্যে কত বছরের ব্যবধান সে ব্যাপারে কিছু বর্ণিত আছে কি? আজ থেকে ৩ লাখ বছর পূর্বেও পৃথিবীতে মানুষ ছিল মর্মে বিজ্ঞানীদের দাবী বিশ্বাস করা যাবে কি?

উত্তর : সুনির্দিষ্টভাবে কুরআন বা ছহীহ হাদীছে আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাঝের ব্যবধান বর্ণিত হয়নি। সেজন্য সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না যে, এত বছর পূর্বে মানব সৃষ্টির সূচনা হয়েছে। তবে কোন কোন নবী-রাসূলের আগমনের ব্যবধান সম্পর্কে কিছু হাদীছ পাওয়া যায়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আদম ও নূহ (আঃ)-এর মাঝে দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল (হাকেম হা/৩৬৫৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬১৯০; ছহীহাহ হা/২৬৬৮)। নূহ (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ)-এর মাঝে দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল (হাকেম হা/৪০১৬; ছহীহাহ হা/৩২৮৯)। মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর মাঝে ব্যবধান এক হাযার সাতশত বছর (তাফসীরে কুরতুবী ৬/১৬)। আবার মুহাম্মাদ (ছা্ঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর মাঝে ছয়শ’ বছরের ব্যবধান (বুখারী হা/৩৯৪৮)। এক্ষণে এই সময়ের ব্যবধান সুনির্দিষ্টভাবে বলা সমীচীন হবে না। যা আল্লাহ তা‘আলা গোপন রেখেছেন তার মধ্যে রয়েছে বিশেষ হিকমত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং ‘আদ, ছামূদ, কূয়াবাসীগণ এবং তাদের মধ্যবর্তী বহু যুগ সমাজকে (ফুরক্বান ২৫/৩৮)। এভাবে এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী-রাসূলের ধারা শেষ হয়েছে এবং হাযার হাযার বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। সুতরাং ৩ লাখ বছর পূর্বেও মানুষ ছিল বিজ্ঞানীদের এমন ধারণা সত্যও হ’তে পারে, আবার মিথ্যাও হ’তে পারে। এটি তাদের নিকটও কেবল ধারণা; কোন সুনিশ্চিত বা প্রামাণ্য তথ্য নয়। ফলে এতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন নেই।

প্রশ্ন (২৯) : প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে উভয় স্বামী যদি জান্নাতী হয়, তাহ’লে আমি কোন স্বামীকে পাব?

উত্তর : কোন জান্নাতী ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী জান্নাতী হ’লে সবাই উক্ত স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে। পক্ষান্তরে একাধিক জান্নাতী স্বামীর অধিকারী জান্নাতী মহিলা তার সর্বশেষ স্বামীর সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে। আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রী উম্মে দারদাকে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর সাথে বিবাহের প্রস্তাব করা হ’লে তিনি বলেন, আমি অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে রাযী নই। কারণ আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মহিলাগণ তাদের শেষ স্বামীর সাথে থাকবে। অতএব আমি আমার স্বামী আবুদ্দারদার পরিবর্তে কাউকে চাই না। একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হ’তে। অনুরূপভাবে হুযায়ফা (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীকে বলেন, যদি তুমি আমার সাথে জান্নাতে থাকতে চাও, তাহ’লে আমার পরে অন্যত্র বিবাহ করো না (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩১৩০; বায়হাক্বী হা/১৩৪২১; ছাহীহাহ হা/১২৮১)।

প্রশ্ন (৩০) : নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ফাউন্ডেশন ইত্যাদির সাথে জড়িত থেকে দ্বীনী কাজ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : দাওয়াতের দায়িত্ব নারী ও পুরুষের উপর সমান। তবে নারীদের ক্ষেত্র আলাদা। তারা  পর্দার মধ্যে থেকে নারী সমাজের মধ্যে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবেন’ (সূরা তওবা ৯/৭১; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২৪০; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৩৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের সাথে মিলেমিশে বসবাস করে এবং তাদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে, সে ঐ মুসলিমের চেয়ে উত্তম, যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের দেওয়া কষ্ট সহ্য করে না’ (তিরমিযী হা/২৫০৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৩২; ছহীহাহ হা/৯৩৯)। জামাআ‘তবদ্ধভাবে কাজ করলে সে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেয়ার মতো দু’টি ফরয কাজ সহজে সম্পাদন করতে পারে। এর পাশাপাশি সে তাদের সাথে সদাচরণের সুযোগ পায়। যে ব্যক্তি সমাজ জীবনে মানুষের সাথে লেনদেনে ও আচার-অনুষ্ঠানে মেলামেশা করেনি তথা পার্থিব জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও জ্বালা-যন্ত্রণায় পতিত হয়নি, এমন ব্যক্তির চেয়ে যে ব্যক্তি এসব কিছুতে পতিত হয়ে ধৈর্যের সাথে সেটাকে অতিক্রম করে, সে অনেক উত্তম মুমিন (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/১৭৮)। তবে এ কাজে অবশ্যই স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিবে এবং পূর্ণ পর্দার বিধান মেনে চলবে।

প্রশ্ন (৩১) : বিবাহের তিন মাসের মাথায় আলট্রাসনোগ্রাম-এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীর পেটে ছয় মাসের বাচ্চা রয়েছে। তখন স্বামী তাকে তালাক দেয়। মেয়েটি এখন পিতার বাড়ীতে অবস্থান করছে। এক্ষণে মেয়ের পিতা-মাতার করণীয় কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় পিতা-মাতা অভিযুক্ত ছেলেকে খুঁজে বের করে তার সাথে ঐ মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি অভিযুক্ত মাহরাম হয় বা বিয়ে দেওয়া অসম্ভব হয়, তাহ’লে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর অন্যত্র মেয়েকে বিয়ে দিবে (আবুদাউদ হা/২১৫৭; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৭৪)। উক্ত নবজাতকের যাবতীয় দায়দায়িত্ব তার মায়ের উপর বর্তাবে এবং শিশুটি মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে (বুখারী হা/২০৫৩; মিশকাত হা/৩৩১২; ওছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৩৭০)। এক্ষণে বিয়ের পর মেয়ের পরবর্তী স্বামী উক্ত শিশুর দায়িত্ব না নিলে শিশুর নানা-নানী দায়িত্ব নিবেন। কেউ না থাকলে রাষ্ট্র বা তার প্রতিনিধি শিশুটির অভিভাবক হবে (আবুদাঊদ হা/২০৮৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/১৭৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২২/০৭)।

প্রশ্ন (৩২) : প্রচলিত স্বাধীনতা দিবস বা কোন জাতীয় দিবস পালন করা বা এ উপলক্ষ্যে বৈধ কোন আয়োজন করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ইসলামে এ ধরনের কোন দিবস পালনের বিধান নেই। এগুলো বিজাতীয় অপসংস্কৃতির অনুকরণ মাত্র। যা নিষিদ্ধ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; তিরমিযী হা/২৬৯৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৯৪)। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে বড় বড় ঐতিহাসিক বিজয় সংঘটিত হয়েছিল। অথচ সালাফে ছালেহীন বা তাদের পরবর্তী কেউ কোন দিবস পালন করেননি। অতএব দিবস পালন ইসলামী সংস্কৃতির কোন অংশ নয় এবং সাধারণভাবেও তা পালন করা জায়েয হবে না (আবু শামাহ, আল-বা‘এছ আলা ইনকারিল বিদা‘ ৭৭ পৃ.; ইবনুল কাইয়িম, ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/১৯০-৯১)। আর যেগুলো ইসলাম সমর্থন করে না সেগুলোতে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা যাবে না (মায়েদাহ ৫/৩)।

প্রশ্ন (৩৩) : মালাকুল মউত তথা মৃত্যুর ফেরেশতা কি একজন? যদি তিনি একজন হন তবে কিভাবে একই সময়ে পুরো বিশ্বের হাযারো মানুষের জান কবয করেন?

উত্তর : মৃত্যুর ফেরেশতা মূলতঃ একজন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে’ (সাজদাহ ৩২/১১)। তবে মালাকুল মউত ফেরেশতার অসংখ্য সহযোগী রয়েছে যারা তার নির্দেশে বহু প্রাণীর জান কবয করে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘পরিশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন আমাদের দূতগণ (ফেরেশতাগণ) তার আত্মা হরণ করে নেয়’ (আন‘আম ৬/৬১)। তিনি আরো বলেন, ‘অতঃপর তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন ফেরেশতারা তাদের মুখে ও পিঠে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মৃত্যু পথযাত্রী সৎকর্মশীল মুমিনের নিকট ফেরেশতারা হাযির হয়ে বলেন, বেরিয়ে এস হে পবিত্র আত্মা! যা পবিত্র দেহে ছিল। বেরিয়ে এস প্রশংসিতভাবে। সুসংবাদ গ্রহণ কর শান্তি ও সুগন্ধির এবং সেই প্রতিপালকের যিনি ক্রুদ্ধ নন (ইবনু মাজাহ হা/৪২৬২; মিশকাত হা/১৬২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৬৮)। বিদ্বানদের বক্তব্যের সারমর্ম হ’ল মালাকুল মউত আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জান কবযের মূল দায়িত্বশীল ফেরেশতা (যুমার ৩৯/৪২)। আর তাকে এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছে (তাফসীরে ত্বাবারী ৯/২৮৯; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩/২৩৯; ইবনু উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১১৪)।

প্রশ্ন (৩৪) : সূরা বাক্বারার ২৩০ আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চাই?

উত্তর : উক্ত আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়) তালাক দেয়, তাহ’লে সে যতক্ষণ তাকে ব্যতীত অন্য স্বামী গ্রহণ না করে, ততক্ষণ উক্ত স্ত্রী তার জন্য সিদ্ধ হবে না। অতঃপর যদি উক্ত স্বামী তাকে তালাক দেয়, তখন তাদের উভয়ের পুনরায় ফিরে আসায় কোন দোষ নেই, যদি তারা মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা বজায় রাখতে পারবে। এগুলি আল্লাহর সীমারেখা। যা তিনি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বর্ণনা করে থাকেন’ (বাক্বারাহ ২/২৩০)।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক স্বেচ্ছায় তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে তার প্রথম স্বামীর নিকট পুনরায় ফিরে আসার অনুমতি প্রদান আল্লাহর পক্ষ হ’তে একটি বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা তাওরাতের বিধান মতে তারা আর বিবাহ করতে পারে না। ইনজীলের বিধান মতে তাদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ। কিন্তু ইসলামী শরী‘আত বান্দার কল্যাণার্থে তিন তালাকের পরও পুনরায় ঐ স্বামীর সাথে বিবাহের সুযোগ রেখেছে’ (ই‘লামুল মু‘আক্কিঈন ২/৫৬-৫৭)। অর্থাৎ সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বিদায় করার পর যদি উক্ত নারী দ্বিতীয় স্বামীও গ্রহণ করে, তবে সেই স্বামী কর্তৃক স্বেচ্ছায় তালাকপ্রাপ্তা হ’লে কিংবা মারা গেলে নির্দিষ্ট ইদ্দত পালনের পর পুনরায় প্রথম স্বামী বিবাহের মাধ্যমে তাকে গ্রহণ করতে পারে’ (বাক্বারাহ ২/২৩০)।

তবে এক্ষেত্রে কোন অপকৌশলের আশ্রয় নিলে দ্বিতীয় স্বামী ‘ভাড়াটে ষাঁড়’ হবে, যা হারাম। এটা হানাফী মাযহাবে এখনও চালু আছে (ইবনু মাজাহ হা/১৯৩৬; হাকেম হা/২৮০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৯৬)। হালালাকারীর ঐ বিয়ে বাতিল হবে এবং পূর্ব স্বামীর জন্যও তা হালাল হবে না (ছালেহ বিন ফাওযান, আল-মুলাখখাছুল ফিক্বহী ৩১৭-১৮ পৃ.; বিস্তারিত দ্র. ‘তালাক ও তাহলীল’ বই ‘হিন্দু ধর্মে তালাক’ অনুচ্ছেদ)। উক্ত আয়াতে মূলত হিল্লা বিবাহ হারাম করা হয়েছে, যদিও হানাফী মাযহাবে তা এখনও প্রচলিত।

প্রশ্ন (৩৫) : দুনিয়ার জীবনে যারা স্বামী-স্ত্রী, জান্নাতেও তারা জান্নাতী হ’লে কি অনুরূপ সম্পর্ক থাকবে?

উত্তর : দুনিয়ার জীবনের ন্যায় জান্নাতেও সম্পর্ক থাকবে। কোন জান্নাতী ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী জান্নাতী হ’লে সবাই উক্ত স্বামীর স্ত্রী হিসাবে জান্নাতে থাকবে এবং স্বামী হূরের অধিকারী হ’লেও দুনিয়ার স্ত্রীই তাদের নেত্রী হবে। পক্ষান্তরে একাধিক স্বামীর অধিকারী জান্নাতী মহিলা তার সর্বশেষ জান্নাতী স্বামীর সাথে থাকবে। আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রী উম্মে দারদাকে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর সাথে বিবাহের প্রস্তাব করা হ’লে তিনি বলেন, আমি অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে রাযী নই। কারণ আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মহিলাগণ তাদের শেষ স্বামীর সাথে থাকবে। অতএব আমি আমার স্বামী আবুদ্দারদার পরিবর্তে কাউকে চাই না। একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হ’তে। অনুরূপভাবে হুযায়ফা (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীকে বলেন, যদি তুমি আমার সাথে জান্নাতে থাকতে চাও, তাহ’লে আমার পরে অন্যত্র বিবাহ কর না (ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী, ছহীহাহ হা/১২৮১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৯১)।

প্রশ্ন (৩৬) : স্ত্রী পরপুরুষে আসক্ত হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়ে ঐ পুরুষকে বিবাহ করেছে। কিন্তু ১ম স্বামী তা গ্রহণ করেনি। তালাকও দেয়নি। এক্ষণে দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ হয়েছে কি?

উত্তর : শারঈ ওযর ব্যতীত স্ত্রী স্বামীর নিকট তালাক চাইতে পারে না। কোন কারণ ছাড়াই যদি কেউ স্বামীর কাছে তালাক চায়, তাহ’লে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবূদাঊদ হা/২২২৬; মিশকাত হা/৩২৭৯; ছহীহুত তারগীব হা/২০১৮)। অন্য বর্ণনায় বিনা কারণে তালাকপ্রার্থী নারীকে মুনাফিক বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/১১৮৬; মিশকাত হা/৩২৯০; ছহীহাহ হা/৬৩২)। তবে স্ত্রী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ডিভোর্স লেটার পাঠালে তা খোলা হিসাবে গণ্য হবে। উক্ত নারী এক হায়েয ইদ্দত পালন শেষে শারঈ পদ্ধতিতে বিয়ে করে থাকলে বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে। আর এক হায়েয ইদ্দত পালনের পূর্বে বিবাহ করে থাকলে বিবাহ হয়নি। উল্লেখ্য যে, শারঈ কারণে স্ত্রী যেকোন সময়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। যাকে শরী‘আতে ‘খোলা’ বলে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ৩২/৩০৩)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ছাবেত ইবনু ক্বায়েসের স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি ছাবেত ইবনে কায়েসের দ্বীনদারী এবং চাল-চলনের নিন্দা করি না, তবে আমি মুসলিম নারী হয়ে (তার অসুন্দর হবার কারণে) তার নফরমানী করব, এটা চাই না। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, তুমি কি তার মোহর বাবদ বাগান ফেরত দিবে? মহিলা বলল, হ্যাঁ দিব। নবী করীম (ছাঃ) ছাবেতকে বললেন, বাগান গ্রহণ কর এবং তাকে ‘খোলা’ হিসাবে এক তালাক প্রদান কর (বুখারী, মিশকাত হা/৩২৭৪)।

প্রশ্ন (৩৭) : তওবা-ইস্তেগফার করার ফযীলত এবং এর পদ্ধতি জানতে চাই?

উত্তর : প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা মুমিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন’ (নূহ ৭১/১০-১২)। তিনি আরো বলেন, ‘তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ কর্ম করে, আশা করা যায় সে সফলকাম হবে’ (ক্বাছাছ ২৮/৬৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তুু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না’ (মারিয়াম ১৯/৬০)। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘এক বান্দা গোনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গোনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গোনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন? (সে যদি জেনে-বুঝে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে) তাহ’লে আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল বিরত থাকার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হ’ল এবং একইভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তখন আল্লাহ একই জবাব দিয়ে আবারো তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তার কিছুদিন পর তৃতীয়বারের মত গোনাহ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা‘আলা সেবারও তার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করলেন’ (বুখারী হা/৭৫০৭; মুসলিম হা/২৭৫৭; মিশকাত হা/২৩৩৩)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেছেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬)।

এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নিকট সঠিক পথ, খাদ্য, বস্ত্র ও ক্ষমা চাইতে বলেছেন। আর এসব কিছু তিনি প্রদান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। কাজেই তাঁর কাছে আমাদের চাওয়া কর্তব্য। এরূপ বহু হাদীছ রয়েছে। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, বান্দা যদি একশ’ বার বা হাযার বার বা ততোধিকবার পাপ করে আর প্রত্যেকবার তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ (নববী, শরহ মুসলিম হা/২৭৫৭, ১৭/৭৫; ফাৎহুল বারী ১৩/৪৭২)। আর দিনে কমপক্ষে একশত বার ইস্তেগফার করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দিনে ৭০ বারেরও বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর নিকট তওবা করি (বুখারী, মিশকাত হা/২৩২৩)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেছেন, ‘হে মানব সকল! আল্লাহর নিকট তওবা কর। আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)। আর বিশেষভাবে কোন পাপ থেকে তওবার জন্য দিনে বা রাতে ২ রাক‘আত ছালাত আদায় করে অনুতপ্ত হৃদয়ে একনিষ্ঠভাবে তওবা করবে।

প্রশ্ন (৩৮) : কোন কোন পাপে লিপ্ত হলে মানুষের রিযিকে বরকত কমে যেতে পারে?

উত্তর : বেশ কিছু পাপ রয়েছে যাতে লিপ্ত হ’লে মানুষের রিযিকে বরকত কমে যায়। যেমন- (১) যেনায় লিপ্ত হওয়া (ইবনু মাজাহ হা/৪০১৯; ছহীহুত তারগীব হা/৭৬৫)। (২) মাপে বা ওযনে কম দেওয়া (ছহীহাহ হা/১০৬)। ৩. আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার না করা (ছহীহাহ হা/৪০০৯)। ৪. যাকাত না দেওয়া (ছহীহাহ হা/৪০০৯)। (৫) সূদ খাওয়া (বাক্বারাহ ২/২৭৬)। ৬. মিথ্যা কসম করা (ছহীহাহ হা/৯৭৮)। ৭. মিথ্যা কথা বলা (বুখারী হা/২০৭৯)। (৮) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা (ছহীহাহ হা/৯৭৮)। (৯) হজ্জ ও ওমরা না করা (তিরমিযী হা/৮১০; ছহীহাহ হা/১১৮৫)। (১০) হারাম ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া (ত্বোয়াহা ২০/১২৪)। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু অপকর্ম রয়েছে যার কারণে সম্পদ কমে যেতে পারে।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

জুমআর দিনের মর্যাদা ও যে সময়ে দোয়া কবুল হয়

জুমআর দিনের মর্যাদা ও যে সময়ে দোয়া কবুল হয়   দোয়া হলো "প্রার্থনা" বা "মিনতি"। এটি সাধারণত আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চা...