বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত
ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’। (সুরা: বাকারা, আয়াত, ১৯৯)।
আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের আযাব থেকে সুরক্ষিত
রাখতে এবং ক্ষমা প্রার্থীদের অঢেল নেকী প্রদান করতে ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন।
পেন্সিলের ভুল লেখা মুছে ফেলার জন্য যেমন রাবার ব্যবহার করা হয় তেমনই বান্দার ভুলগুলো
আমলনামা থেকে মুছে ফেলার জন্য আল্লাহ তওবার ব্যবস্থা রেখেছেন। কিভাবে তওবা করতে হয়
এবং কিভাবে গুনাহমুক্ত জীবন লাভ করা যায় তা রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে শিখিয়েছেন। সেই সাথে
ক্ষমা প্রার্থীদের পাপরাশি মোচনের সুসংবাদও প্রদান করেছেন।
আবূ
হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন
সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার
ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো
অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ
“কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন
১৪)। (সুনান আততিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩৪২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪২৪৪, আহমাদ ৭৯৫২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৯০৮, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৩, শু‘আবূল ঈমান ৬৮০৮, সহীহ আত্তারগীব ৩১৪১, হাদীস সম্ভার
৩৮০৩, আত-তা’লীকুররাগীব ২/২৬৮)। হাদিসের মানঃহাসান (Hasan)।
বর্তমানে বহু মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে হতাশ!
পাপপূর্ণ জীবনের দিকে লক্ষ্য করে ভাবেন আল্লাহ কি আমার এত গুনাহ ক্ষমা করবেন! কি হবে
আমার শেষ পরিণতি! এই আলোচনা সেই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা নিজেদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে
হতাশায় ভুগছেন। পাপের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যারা জীবনের খেই হারিয়ে ফেলেছেন তাদের উদ্দেশ্যেই
আজকের আমাদের লেখনী।
ক্ষমা প্রার্থনা করার হুকুম
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী দ্বারা বুঝা যায়
যে, সবচেয়ে ভাল মানুষ ঐ ব্যক্তি যে অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চায়। ক্ষমা প্রার্থনা
করা সবচেয়ে বড় ইবাদত। এতে আল্লাহ যত বেশী খুশী হন, অন্য কোন ইবাদতে তিনি তত বেশী খুশী
হন না। এজন্য নবী করীম (ছাঃ) দিনে প্রায় সত্তর বারেরও বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ
তওবা; সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে
দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর মুমিন
বান্দাদেরকে অপদসত্ম করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সন্মুখে ও ডান পার্শ্বে ধাবিত হবে,
তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন। আর আমাদের ক্ষমা
করুন। আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সুরা তাহরীম ৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
‘সুতরাং তুমি জান যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য)
কোন মা‘বূদ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের পাপের জন্য। আল্লাহ
তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্বন্ধে অবগত আছেন’। (সুরা
মুহাম্মাদ ১৯)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা
নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপানি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের দয়া না করেন
তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ততদের অন্ততর্ভুক্ত হব”। (সুরা
আ‘রাফ ২৩)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
“তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার
নিজের প্রতি যুলুম করেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন! অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি
ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। (সুরা কাছাছ ১৬)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
বল, হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন,
দয়ালুদের মধ্যে আপনিই সবচেয়ে বেশী দয়ালু। (সুরা মুমিনূন
১১৮)।
এমর্মে হাদীছে এসেছে,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি
যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক
না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ
যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব,
আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ
করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার
কাছে উপস্থিত হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৬, সুনান
আততিরমিযী ৩৫৪০, সহীহাহ্ ১২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৮২, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৩৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, সবচেয়ে উত্তম
ঐ ব্যক্তি যে অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তরবারেরও
বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ও তওবা্ করি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৩, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, সুনান আততিরমিযী ৩২৫৯, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৮৭৭০,
শু‘আবূল ঈমান ৬৩০, ইবনু হিব্বান ৯২৫, সহীহ আল জামি‘ ৭০৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আগার আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার অন্তরে মরিচা পড়ে, আর (ওই
মরিচা পরিষ্কার করার জন্য) আমি দিনে একশ’বার করে ইস্তিগফার করি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৪, ২৩২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২,
মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৮৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৮১, সুনানুল কুবরা লিল
বায়হাক্বী ১৩৩৩৪১, শু‘আবূল ঈমান ৬৩১, সহীহ আল জামি‘ ২৪১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রাসূল (ছাঃ) এমন একজন নবী যার আগের ও পরের
গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি দিনে ৭০ বারেরও বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন।
তাহলে আমাদের কতবার ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন তা বিবেচনা করা উচিত।
গুণাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে
দেন
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন গুনাহ করার পর তা স্বীকার করে
(অনুতপ্ত হয়) আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯১৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭৭০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৪৮, ইবনু হিব্বান ৪২১২, শু‘আবূল ঈমান ৬৬২৮, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৫৫৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৭৬৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৮১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তা’আলা তার বান্দার তওবা্ করায় অত্যন্ত আনন্দিত হোন
(ক) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার বান্দার তওবা্ করায় অত্যন্ত
আনন্দিত হন যখন সে তাঁর কাছে তওবা্ করে। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তির খুশীর চেয়ে অধিক
খুশী হন, যে ব্যক্তির আরোহণের বাহন মরুভূমিতে তার কাছ থেকে ছুটে পালায়, আর এ বাহনের
উপর আছে তার খাবার ও পানীয়। এ কারণে সে হতাশ-নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আরোহণের বাহন
সম্পর্কে একেবারেই নিরাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এসে সে এর ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এমন সময় সে
হঠাৎ দেখে, বাহন তার কাছে এসে দাঁড়ানো। সে বাহনের লাগাম ধরে আর আনন্দে আবেগআপ্লুত হয়ে
বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু। সে আনন্দের আতিশয্যে এ ভুল
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৫০৩০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭০৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে
আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা’আলা
বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন? যে
’রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে
মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ
করল ও বলল, ’হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ
তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা
এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন,
সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ
করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে,
তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার
বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৭৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭৫৮, আহমাদ ৭৯৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৪, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৮৫,
সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪০, ইবনু হিব্বান ৬২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৩২, ইসলামিক সেন্টার
৬৭৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন,
যে জানে আমি গুনাহ মাফ করে দেয়ার মালিক। আমি তাকে মাফ করে দেবো এবং আমি কারো পরোয়া
করি না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমার সাথে কাউকে শারীক না করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৮, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৬১৫,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬৭৬, শারহুস্ সুন্নাহ ৪১৯১, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৩০। তবে হাকিম-এর
সানাদটি দুর্বল যেমনটি ইমাম যাহাবী (রহ্ঃ) বলেছেন)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান (আল্লাহ তা’আলার কাছে)
বলল, হে মহান প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গুমরাহ
করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার ইজ্জত,
আমার মর্যাদা ও আমার সুউচ্চ অবস্থানের কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা
চাইতে থাকবে, আমি সর্বদা তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৪, আহমাদ ১১২৩৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬৭২, সহীহাহ্ ১০৪, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬১৭, সহীহ আল জামি‘ ১৬৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ক্ষমা প্রার্থনা করার ক্ষেত্রসমূহ
(১) রাসূল (ছাঃ)-এর নিজের ও মুমিন নর-নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা:
নিজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি সকল
মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা কর্তব্য। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে
বলেন,
‘আর
তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার ও মুমিন নর-নারীদের জন্য। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ভালভাবেই
জানেন তোমাদের চলাফেরা ও আশ্রয় সম্পর্কে’। (সুরা মুহাম্মাদ
৪৭/১৯)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন
‘যে ব্যক্তি মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করবে, আল্লাহ সে ব্যক্তির আমলনামায় পৃথিবীর প্রতিটি মুমিন নর-নারীর সংখ্যা পরিমাণ একটি
করে নেকী লিপিবদ্ধ করবেন’। (ত্বাবারাণী, মুসনাদুশ শামিইয়ীন
হা/২১৫৫; ছহুীহুল জামে‘ হা/৬০২৬)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(২) বিগত নবী-রাসূলগণের অধিকহারে ক্ষমা প্রার্থনা করা:
বিগত প্রত্যেক নবী-রাসূল অধিকহারে ক্ষমা প্রার্থনা
করেছেন। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে তাঁদের কিছু দো‘আ উল্লেখ করা হলো।
(ক) আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ
বলেন,
‘তারা
(উভয়ে) বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নিজেদের উপর যুলুম করেছি। এক্ষণে যদি
আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তাহ’লে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাব’। (সুরা আ‘রাফ ৭/২৩)।
(খ) নূহ (আঃ) স্বীয় উম্মতের মুমিন নারী-পুরুষের
জন্য কাতর কণ্ঠে দো‘আ করে বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে,
আর যারা মুমিন হয়ে আমার বাড়ীতে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীদেরকে
ক্ষমা কর। আর তুমি যালেমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করো না’। (সুরা নূহ ৭১/২৮)।
(গ) ইব্রাহীম (আঃ) হাজেরা ও ইসমাঈলকে মক্কার
বিজন মরুভূতিতে রেখে এসে আল্লাহর কাছে নির্জনে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন,
‘হে
আমার প্রতিপালক! আমাকে ছালাত কায়েমকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের
পালনকর্তা! আমার দো‘আ কবুল কর! হে আমাদের প্রভু! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং ঈমানদার
সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে’। (সুরা ইব্রাহীম
১৪/৪১-৪২)।
(ঘ) মূসা (আঃ) ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন,
‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার নিজের
উপর যুলুম করেছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর! তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয়ই
তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’। (সুরা ক্বাছাছ ২৮/১৬)।
(ঙ) দাঊদ (আঃ) একইভাবে আল্লাহর সমীপে প্রণত
হ’লেন। আল্লাহ বলেন,
‘দাঊদ
ধারণা করল যে, এর দ্বারা আমরা তাকে পরীক্ষা করেছি। ফলে সে তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করল এবং সিজদায় পড়ে গেল ও আল্লাহর দিকে প্রণত হ’ল’। (সুরা ছোয়াদ ৩৮/২৪)।
(চ) সারা পৃথিবীর বাদশাহ ও নবী সোলায়মান (আঃ)
দো‘আ করেন,رَ
‘হে
আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান কর, আমার পরে যেন আর
কেউ না পায়। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা’। (সুরা ছোয়াদ ৩৮/৩৫)।
(৩) সকাল-সন্ধ্যায় ক্ষমা প্রার্থনা:
আল্লাহর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা শুধু পাপ মোচনের
মাধ্যমই নয় বরং একটি মহৎ ইবাদত। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,
‘তুমি
তোমার গোনাহের জন্য ক্ষমা চাও এবং সন্ধ্যায় ও সকালে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা
ঘোষণা কর’। (সুরা মুমিন ৪০/৫৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ
তাকে সকাল-সন্ধ্যায় ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যারা পাপের সাগরে হাবুডুবু
খাচ্ছে, তাদের কত বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত, তা সহজেই অনুমেয়।
এজন্য হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,
‘তোমরা
তোমাদের বাড়ীতে, দস্তরখানায়, রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে এবং বৈঠকগুলিতে বেশী বেশী ক্ষমা
প্রার্থনা কর। কেননা তোমরা তো জানো না যে, কখন ক্ষমা নাযিল হবে’। (ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আত-তাওবাহ, ১২৫ পৃ.)।
লোকমান হাকীম তার ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেন,
‘বৎস!
তোমার জিহবাকে ক্ষমা প্রার্থনায় অভ্যস্ত কর। কেননা আল্লাহর নির্ধারিত এমন কিছু সময়
আছে, যখন কোন প্রার্থীর প্রার্থনা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না’। (ইবনু
রজব হাম্বলী, লাত্বাইফুল মা‘আরিফ, ২১৪ পৃ.)।
সুতরাং আমাদেরকেও সকাল-সন্ধ্যায়, সর্বাবস্থায়
ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। জিহবাকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন, আনমনেই ইস্তেগফার উচ্চারিত
হয়।
(৪) প্রতি ছালাতের শেষ বৈঠকে ক্ষমা প্রার্থনা:
আবূ বকর আস্ সিদ্দীক্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন জানালাম, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে এমন একটি দু’আ বলে দিন যা আমি সালাতে (তাশাহুদের পর) পড়ব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দুআ পড়বে,
“আল্লা-হুমা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা।
ওয়ালা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতাম্ মিন ’ইনদিকা ওয়ারহামনী।
ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম।’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আমার নাফসের
উপর অনেক যুলম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আমাকে তোমার পক্ষ থেকে
মাফ করে দাও। আমার ওপর রহম কর। তুমিই ক্ষমাকারী ও রহমতকারী।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৩৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৫, সুনান আননাসায়ী
১৩০২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৮৩৫, আহমাদ ৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৭২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা:
আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থীদের পছন্দ করেন। বিশেষ
করে শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থীদের তিনি অত্যধিক ভালোবাসেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
‘তুমি বল, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চাইতে উত্তম
বস্তুর খবর দিব? (তা হলো) যারা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার
নিকট রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে এবং
থাকবে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তার বান্দাগণের প্রতি সর্বদা
দৃষ্টি রাখেন’। ‘যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের
গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন’। ‘যারা ধৈর্যশীল,
সত্যবাদী, অনুগত, আল্লাহর পথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী’। (সুরা আলে ইমরান ৩/১৫-১৭)।
ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,
‘এতে প্রমাণিত হলো যে, শেষ রাতের ক্ষমা প্রার্থনার
এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে’। (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/২৩ পৃ.)।
হাফেয ইবনু ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
চারটি বিষয় রিযিক্বে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসে- ক্বিয়ামুল
লায়ল, শেষ রাতে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা, নিয়মিত দান-ছাদাক্বা এবং সকাল-সন্ধ্যায়
যিকির করা। আর চারটি বিষয় রিযিক্বকে সংকুচিত করে- সকাল বেলা ঘুমানো, নফল ছালাতের স্বল্পতা,
অলসতা এবং খিয়ানত’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩৭৮)।
যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের
প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা বলবেন,
“তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত
করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে”। (সূরা
আযযারিয়াত আয়াত ১৭-১৮)।
রাসূল (সা.) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর
রহমত নাযিল করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। আবার নিজের স্ত্রীকেও সালাতের
জন্যে জাগায়। যদি স্ত্রী না উঠে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতিও
রহমত করেন যে রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। আবার তার স্বামীকেও তাহাজ্জুদের
সালাত আদায়ের জন্যে উঠায়। যদি স্বামী ঘুম থেকে না উঠে তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটে
দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩০, সুনান আবূ দাঊদ
১৩০৮, সুনান আননাসায়ী ১৬১০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৩৩৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪৮, ইবনু হিব্বান
২৫৬৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৬৪, সুনান আল কুবরা ৪৩১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬২৫, সহীহ আল
জামি‘ ৩৪৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে
তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন
(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতি রাতে রাতের
শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ
কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে?
আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪; মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৭-১৬৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৮, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাতে নিজের হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে দিনের বেলায় গুনাহকারীর তওবা্ করতে পারেন। আবার দিনের বেলায় তিনি তার হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে রাতের বেলায় গুনাহকারীর তওবা্ করতে পারেন। এভাবে তিনি হাত প্রসারিত করতে থাকবেন যতদিন না সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৯, সহীহাহ্ ৩৫১৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৫, সহীহ আল জামি‘ ১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) নফসের উপর যুলুমের পর ক্ষমা প্রার্থনা:
মানুষ পাপ করার মাধ্যমে নিজ নফসের প্রতি যুলুম
করে থাকে। পাপ হয়ে গেলে হতাশ হয়ে বসে না থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। যেমন
আল্লাহ এই ধরণের মানুষের প্রশংসা করে বলেন,
‘যারা কোন অশ্লীল কাজ করার পরে বা নিজের উপর
যুলুম করার পরে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে?’
(সুরা আলে ইমরান ৩/১৩৫)।
তিনি অন্যত্র বলেন,
‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি
অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’।
(সুরা নিসা ৪/১১০)।
সুতরাং ক্ষমা চাওয়ার ব্যপারে বিলম্ব করা যাবে
না। পাপকর্ম হয়ে যাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমা প্রার্থনা করাই আল্লাহর রহমত লাভের
কারণ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন!
যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন
যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ক্ষমা
করে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৯, শু‘আবূল ঈমান ৬৭০০, সহীহাহ্ ১৯৫০,
সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৬৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল
‘আছ (রাঃ) বলেন, সূরা যিলযাল নাযিল হলে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে থাকেন।
যেখানে আল্লাহ বলেন,
‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা সে
দেখতে পাবে’। ‘আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলেও তা সে দেখতে পাবে’। (সুরা যিলযাল ৯৯/৭-৮)।
তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবুবকরকে উপরোক্ত হাদীছ
বর্ণনা করে সান্ত্বনা প্রদান করেন। (হায়ছামী, মাজমাউয
যাওয়ায়েদ হা/১১৫১২; কুরতুবী হা/৬৪৩৬)।
বৈঠকে ক্ষমা প্রার্থনা ও মজলিসের কাফ্ফারা
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা একই মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসতিগফার একশ’বার
গণনা করতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,
“রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ’আলাইয়্যা ইন্নাকা আন্তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’
(অর্থাৎ- হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার
তওবা্ কবূল করো। কেননা তুমি তওবা্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫২, সুনান আবূ দাঊদ ১৫১৬, সুনান
আততিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, আহমাদ ৪৭২৬, ইবনু হিব্বান ৯২৭, সহীহাহ্ ৫৫৬,
সহীহ আল জামি‘ ৩৪৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বৈঠক শেষ করে চলে
যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেনঃ
’’সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা
আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।’’
এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি
যে বাক্য পড়লেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বললেন, মাজলিসে যা কিছু (ভুলত্রুটি)
হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারাহ গণ্য হবে। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৫৯, দারেমী ২৬৫৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সালাতের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা
ক্ষমা প্রার্থনার জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করে
দিন বা রাতে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করা। অতঃপর কৃত গোনাহ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে
তওবা করবে ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
আসমা ইবনুল হাকাম (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি ’আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তি, যখন আমি সরাসরি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কোনো হাদীস শুনি, তখন তার মাধ্যমে মহান আল্লাহ
যতটুকু চান কল্যাণ লাভ করি। কিন্তু যদি তাঁর কোন সাহাবী আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন, আমি
তাকে (সত্যতা যাচাইয়ের জন্য) শপথ করাতাম। তিনি শপথ করলে আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। তিনি
বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে একটি হাদীস বর্ণনা করলেন, মুলতঃ তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যখন কোনো বান্দা
কোনরূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে অযু করে দাঁড়িয়ে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করে এবং আল্লাহর
নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। অতঃপর তিনি
প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ ’’এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের
উপর অত্যাচার করে.....আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরাহ আলে ’ইমরান : ১৩৫)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২১, সুনান আততিরমিযী ৩০০৬, সুনান
ইবনু মাজাহ ১৩৯৫, আহমাদ ৬৫, বায়হাক্বী শো‘আব
৬৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, পাপ যেন মানুষের হক নষ্টের
সাথে সম্পৃক্ত না হয়। কারণ এ ধরণের পাপ আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার পূর্বে ব্যক্তির কাছে
মাফ নিতে হবে।
ক্ষমা প্রার্থনার ফযীলত
ক্ষমা প্রার্থনার অশেষ প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহর
নিকট ক্ষমা প্রার্থীদের দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। যেমন-
(১) ক্ষমা প্রার্থনাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে:
ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ সাইয়্যেদুল
ইস্তেগফার সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করলে জান্নাত পাওয়া যায়।
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাইয়্যিদুল ইসতিগফার এভাবে
পড়বে,
“আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা খলাকতানী, ওয়া আনা-
‘আবদুকা, ওয়া আনা- ‘আলা- ‘আহদিকা, ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্ব’তু, আ’ঊযুবিকা মিন শার্রি
মা- সনা’তু, আবূউলাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ
লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি
ছাড়া কোন মা’বূদ নেই; তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী
তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে
তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি স্বীকার করি, আমার প্রতি তোমার দানকে এবং স্বীকার করি
আমার গুনাহকে। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, যে ব্যক্তি এ সাইয়্যিদুল ইসতিগফারের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে দিনে পড়বে আর সন্ধ্যার
আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে এ দু’আ রাতে পড়বে আর
সকাল হবার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, সুনান আততিরমিযী ৩৩৯৩, সুনান আননাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৭১১১, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব
ত্ববারানী ১০১৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭১৭২, শু‘আবূল ঈমান ৬৫৮, ইবনু হিব্বান
৯৩৩, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৬২০/৪৮৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫০,
সহীহ আল জামি‘ ৩৬৭৪, (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২) ক্ষমা প্রার্থনাকারীগণ সৌভাগ্যবান:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মহা সৌভাগ্যবান সে
ব্যক্তি, যার আমলনামায় সর্বাধিক ইস্তেগফার পাওয়া যাবে’।
আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৌভাগ্যবান হবে সে, যার
’আমলনামায় ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়া বেশি পাওয়া যাবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৮, শু‘আবূল ঈমান ৬৩৮, সহীহ আত্ তারগীব
১৬১৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৯৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি প্রার্থনার সময় বলতেন,
উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয আল আম্বারী (রহঃ).....আবু
মূসা আল আশ’আরী (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত।
তিনি এ দু’আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন,
“আল্ল-হুম্মাগ ফির্লী খতীআতী ওয়া জাহ্লী ওয়া ইসরা-ফী কী আমরী ওয়ামা-
আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী, আল্ল-হুম্মাগ ফিরলী জিদ্দী ওয়া হাযলী ওয়া খতায়ী ওয়া আমদী
ওয়া কুল্লু যালিকা ইন্দী, আল্ল-হুম্মাগ ফিরলী মা- কদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা-
আসরারতু ওয়ামা- আ’লানতু ওয়ামা- আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আন্তাল
মুয়াখখিরু ওয়া আনতা আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর"
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপ, আমার
অজ্ঞতা ও আমার কাজের সীমালঙ্ঘনকে মার্জনা করে দিন। আপনি এ বিষয়ে আমার চেয়ে সর্বাধিক
জ্ঞাত। হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দিন আমার আন্তরিকতাপূর্ণ ও রসিকতামূলক অপরাধ এবং আমার
ইচ্ছাকৃত ও ভুলক্রমে সব রকমের অপরাধগুলো (যা আমি করেছি)। হে আল্লাহ! মাফ করে দিন যা
আমি আগে করে ফেলেছি এবং যা আমি পরে করব, যা আমি গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি।
আর আপনি আমার চাইতে আমার সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনিই একমাত্র অগ্রবর্তী এবং আপনিই
একমাত্র পরবর্তী। আপনি সব বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।" (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৯৮, ৬৩৯৯; মুসলিম ৪৮/১৮, হাঃ ২৭১৯, আহমাদ ১৯৭৫৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৩, ছহীহ ইবনু হিববান ৯৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার
’’আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু’আ পড়তেন-
“আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি
ওয়াল ইকর-ম’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার
পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আয়েশা (রাঃ) বলেন,
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ’আমল করে নিজের রুকূ’ ও সাজদায় এই দু’আ
বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ
“সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি
আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮১৭, ৭৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, সুনান আবূ দাঊদ
৮৭৭, নাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৭৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আসমান ও যমীন ভর্তি পাপও আল্লাহ ক্ষমা করেন:
হাদীসে কুদসীতে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি
যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক
না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ
যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব,
আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ
করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার
কাছে উপস্থিত হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৬, সুনান
আততিরমিযী ৩৫৪০, সহীহাহ্ ১২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৮২, সহীহ আল জামি ৪৩৩৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
অপর হাদীছে কুদসীতে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মহান
আল্লাহ বলেন,
‘হে আমার বান্দারা! তোমরা দিনরাত অনবরত পাপ
করে থাক। আর আমিই সমস্ত পাপ ক্ষমা করি। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি
তোমাদের ক্ষমা করে দিব’।
পূর্নাঙ্গ হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার নাম করে যেসব হাদীস বর্ণনা
করেছেন তার একটি হলো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, আল্লাহ তাবারক
ওয়াতা’আলা বলেনঃ হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার ওপর যুলম করাকে হারাম করে দিয়েছি। (যুলম
করা আমার জন্য যা, তোমাদের জন্যও তা) তাই আমি তোমাদের জন্যও যুলম করা হারাম করে দিয়েছি।
অতঃপর (পরস্পরের প্রতি) যুলম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট।
কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই (সে-ই পথের সন্ধান পায়)। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পথের সন্ধান
কামনা কর, তাহলে আমি তোমাদেরকে পথের সন্ধান দেবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই
ক্ষুধার্ত। কিন্তু আমি যাকে খাবার দেই (সে খাবার পায়)। তাই তোমরা আমার কাছে খাবার চাও।
আমি তোমাদেরকে খাবার দেবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই উলঙ্গ। কিন্তু আমি
যাকে পোশাক পরাই (সে পোশাক পরে)। তাই তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে (পোশাক)
পরাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গুনাহ (অপরাধ) করে থাকো। আর আমি তোমাদের সকল
গুনাহ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা ক্ষতিসাধন করার সাধ্য
রাখো না যে, আমার ক্ষতি করবে। এভাবে তোমরা আমার কোন উপকার করারও শক্তি রাখো না যে,
আমার কোন উপকার করবে। তাই হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল
মানুষ ও জিন্ তোমাদের মধ্যে হতে সর্বাপেক্ষা পরহেযগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়ে
পরহেযগার হয়ে যায়। তাও আমার সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ!
যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অত্যাচারী-অনাচারী
ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়েও অত্যাচার-অনাচার করে তাদের এ কাজও আমার সাম্রাজ্যের
কিছুমাত্র ক্ষতি বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ
পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ একই মাঠে দাঁড়িয়ে একসাথে আমার কাছে প্রার্থনা করে। আর আমি
তোমাদের প্রত্যেককে তাদের চাওয়া জিনিস দান করি তাহলে আমার কাছে যা আছে, তার কিছুই কমাতে
পারবে না। শুধু এতখানি ছাড়া যতটি একটি সূঁই যখন সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়া হলে
যতটুকু সমুদ্রের পানি কমায়। হে আমার বান্দাগণ! এখন বাকী রইল তোমাদের (কৃতকর্মের) ’আমল,
যা আমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করব। অতঃপর এর প্রতিদান আমি পরিপূর্ণভাবে দেবো। সুতরাং যে
ব্যক্তি কোন ভাল (ফল) লাভ করে, সে যেন আল্লাহর শুকর আদায় করে। আর যে মন্দ (ফল) লাভ
করে, সে যেন নিজেকে ছাড়া অন্যকে দোষারোপ না করে (কেননা তা তারই কৃতকর্মের ফল)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৫৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৫, সহীহ
আল জামি‘ ৪৩৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৩৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
শয়তানের চক্রান্তে বান্দা ভুল করে ফেলে। তবে
সে যদি তার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ
তাকে ক্ষমা করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, শয়তান বলল,
‘হে মহান প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! আমি
তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গোমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে।
তখন আল্লাহ বললেন, আমার ইয্যত-সম্মান, আমার মর্যাদার কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ
পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি ততক্ষণ তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব’। (মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭৬৭২, সনদ ছহীহ)।
আল্লাহ তা‘আলার এমন ঘোষণা থাকার পরেও যদি আমরা
ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভুগি তবে আমাদের মত দুর্ভাগা আর কে হতে পারে!
(৪) ক্ষমা প্রার্থী বান্দার উপর আল্লাহ পরম আনন্দিত হন:
প্রার্থনাকারীদের আল্লাহ ভালবাসেন এবং বান্দার
তওবাতে তিনি অত্যধিক আনন্দিত হন।
(ক) ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
আরোহণ করার জন্য তাঁর কাছে একটি আরোহী আনা হলো। তিনি রিকাবে পা রেখে বললেন, “বিসমিল্লা-হ’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে)। যখন এর পিঠে আরোহিত হলেন তখন বললেন, “আলহাম্দুলিল্লা-হ’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর প্রশংসা)। এরপর বললেন, “সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা- হা-যা- ওয়ামা-
কুন্না- লাহূ মুকরিনীন, ওয়া ইন্না- ইলা- রব্বিনা- লামুনক্ব লিবূন’’ (অর্থাৎ- প্রশংসা
আল্লাহর, যিনি [আরোহণের জন্য] এটাকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন)। তারপর তিনি তিনবার
বললেন, “আলহাম্দুলিল্লা-হ’’, তিনবার বললেন, “ওয়াল্ল-হু আকবার’’; এরপর বললেন, “সুবহা-নাকা
ইন্নী যলামতু নাফসী, ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আন্তা’’ (অর্থাৎ- তোমার পবিত্রতা, আমি আমার ওপর যুলম করেছি,
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও)।
অতঃপর তিনি হেসে ফেললেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করা
হলো, হে আমীরুল মু’মিনীন! কি কারণে আপনি হাসলেন? তিনি জবাবে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, আমি যেভাবে করলাম, তিনি ঐভাবে করলেন অর্থাৎ-
হাসলেন। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, কি কারণে আপনি হাসলেন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যখন
সে বলে, “রব্বিগ্ ফিরলী যুনূবী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করো)। আল্লাহ
বলেন, সে বিশ্বাস করে আমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে অপরাধসমূহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৩৪,সুনান আবূ দাঊদ ২৬০২, সুনান আততিরমিযী
৩৪৪৬, ইবনু হিব্বান ২৬৯৮, সহীহ আল জামি‘ ২০৬৯, আহমাদ ৭৫৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৭৩)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, মহান আল্লাহর বাণীঃ
’’তোমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে তওবা করো।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
হারিস ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) বলেন, ’আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) আমাকে দু’টো কথা বলেছেন- একটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পক্ষ থেকে, আর অপরটি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, মু’মিন নিজের গুনাহকে মনে
করে সে যেন কোন পাহাড়ের নীচে বসে আছে, যা তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে। অপরদিকে
গুনাহগার ব্যক্তি নিজের গুনাহকে দেখে একটি মাছির মতো, যা তার নাকের উপর বসল, আর তা
সে হাত দিয়ে নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিলো।
এরপর তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় সে লোকের চেয়ে
বেশি আনন্দিত হন, যে লোক কোন ধ্বংসকারী মরুভূমিতে পৌঁছেছে, আর তার সাথে তার বাহন রয়েছে,
যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সেখানে সে জমিনে মাথা রাখল ও কিছুক্ষণ ঘুমাল। অতঃপর
জেগে দেখল তার বাহন পালিয়ে গেছে। সে তা খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে গরম ও তৃষ্ণা এবং অপরাপর
দুঃখ-বেদনা যা আল্লাহর মর্জি তাকে দুর্বল করে ফেলল। তখন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, আমি
যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে (আমৃত্যু) শুয়ে থাকব। সুতরাং সে সেখানে গিয়ে নিজের বাহুর
উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, যাতে সে মৃত্যুবরণ করে।
হঠাৎ এক সময় জেগে দেখে তার বাহন তার কাছে,
বাহনের উপর তার খাদ্য-সামগ্রীও আছে। তখন সে তার বাহন ও খাদ্য-সামগ্রী ফেরত পাওয়ার আকস্মিকতায়
যেরূপ খুশী হয়, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় এর চেয়েও বেশি খুশী হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)৬৩০৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)৬৮৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৫৫)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(৫) আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্তি:
ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ
লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন,
‘কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছ
না? যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হ’তে পার’। (সুরা নামল
২৭/৪৬)।
তিনি বলেন,‘আর তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’। (সুরা নিসা ৪/১০৬)।
(৬) উত্তম জীবনোপকরণ প্রাপ্তি:
ক্ষমা প্রার্থীদের জন্য দুনিয়াতে আল্লাহ উত্তম
জীবনোপকরণ দান করবেন। যেমন তিনি বলেন,
‘এ মর্মে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁর দিকে ফিরে যাও। তিনি তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন
নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত এবং প্রত্যেক উত্তম আমলকারীকে তার প্রতিদান দিবেন। আর যদি
তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে আমি তোমাদের উপর কঠিন দিবসের শাস্তির আশংকা করছি’। (সুরা হূদ ১১/৩)।
(৭) রহমতের বৃষ্টি প্রাপ্তি:
ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি
সন্তুষ্ট হয়ে আসমানী বাল-মুছীবত আসমানে তুলে নেন এবং উপকারী বৃষ্টি দান করেন। যেমন
হূদ (আঃ)-এর উক্তি কুরআনে এভাবে এসেছে,
‘আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের
নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁরই প্রতি নিবিষ্ট হও। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বারিধারা
প্রেরণ করবেন এবং তোমাদেরকে শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করে দিবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে
মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’। (সুরা হূদ ১১/৫২)।
(৮) সম্পদ, সন্তান ও জান্নাত প্রাপ্তি:
কৃত ভুল স্বীকার করা এমন এক মহৎ গুণ, যার মাধ্যমে
আল্লাহ স্বীয় বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ক্ষমাপ্রার্থীদের দুনিয়াতে সম্পদ ও
সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন এবং পরকালে জান্নাত দান করবেন। যেমন আল্লাহ নূহ (আঃ)-এর
উক্তি উল্লেখ করেন এভাবে,
‘আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল’। ‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর
বারি বর্ষণ করবেন’। ‘তিনি তোমাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের
জন্য বাগিচাসমূহ সৃষ্টি করবেন ও নদীসমূহ প্রবাহিত করবেন’। (সুরা নূহ ৭১/১০-১২)।
(৯) আযাব-গযব থেকে সুরক্ষা প্রাপ্তি:
ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আযাব-গযব থেকে পরিত্রাণ
মেলে। আল্লাহ বলেন,
‘অথচ আল্লাহ কখনো তাদের উপর শাস্তি নাযিল করবেন
না যতক্ষণ তুমি (মুহাম্মাদ) তাদের মধ্যে অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন
না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে’। (সুরা আনফাল
৮/৩৩)।
তাবে শর্ত হল গুনাহ থেকে পরিপূর্ণভাবে নিবৃত্ত
হয়ে খালেছ অন্তরে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
‘আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে শাস্তি দিবেন
না। কিন্তু যে ব্যক্তি পাপের উপর অটল থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, এটা তার প্রকৃত
ক্ষমা প্রার্থনা নয়, ফলে এর মাধ্যমে শাস্তি বিদূরিত হবে না’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ১/৩১৫ পৃ.)।
মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আঃ) কাকুতি-মিনতি
করে আল্লাহকে বলেন,
‘(হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
তুমি পবিত্র। আর নিশ্চয়ই আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’। (সুরা আম্বিয়া ২১/৮৭)।
ফলে তিনি আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তি পান।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাছওয়ালা নবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে গিয়ে
যখন দু’আ পড়েছিলেন তা হলো এই
’’লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’
অর্থাৎ- ’’তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ
নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’- (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭)।
যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু’আ পাঠ
করবে, তার দু’আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২২৯২, সুনান আততিরমিযী ৩৫০৫, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল
ঈমান ৬১১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি‘ ৩৩৮৩)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) তওবা অন্তরের কালিমা দূর করে:
পাপকর্মের কারণে অন্তরে পাপের কালিমা লেপন
হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে
একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে পাপকাজ পরিত্যাগ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার অন্তর পরিচ্ছন্ন
হয়ে যায়। পুনরায় সে গুনাহ করলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায় এবং মরিচা ধরে। এই সেই মরিচা
যা আল্লাহ স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন’।
আল্লাহ বলেন,
‘কখনই না। বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে
মরিচা ধরিয়েছে। (সুরা মুত্বাফফিফীন ৮৩/১৪)’। (সুনান আততিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৩৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪২৪৪, আহমাদ ৭৯৫২,
মুসতাদারাক লিলহাকিম ৩৯০৮, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাক্বী ২০৭৬৩, শু‘আবূল ঈমান ৬৮০৮, সহীহ
আত্তারগীব ৩১৪১, হাদীস সম্ভার ৩৮০৩, আত-তা’লীকুররাগীব ২/২৬৮)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
তবে বান্দা যদি বেশী বেশী তওবা-ইস্তিগফার করে,
তাহ’লে তার অন্তর পরিস্কার ও কোমল হয় এবং আল্লাহর ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রস্ত্তত
হয়ে যায়।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,
‘তোমরা তওবাকারীদের সাথে উঠা-বসা কর, কেননা
তারা সর্বাধিক কোমল হৃদয়ের অধিকারী’। (ইবনুল মুবারাক,
আয-যুহদ ওয়ার রাক্বায়েক্ব, ৪২ পৃ.)।
(১১) ক্ষমা প্রার্থনায় সর্বোচ্চ জান্নাত প্রাপ্তি:
পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কারণে তারা
জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাঁর কোন
নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব!
আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হলো? তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার
জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৭৪০, আহমাদ ১০৬১০, সহীহাহ্ ১৫৯৮,
সহীহ আল জামি‘ ১৬১৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
ইমাম মানাভী (রহঃ) বলেন, ‘ক্ষমা প্রার্থনার
মাধ্যমে পাপরাশি মার্জনা করা হয় এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নেককার সন্তানের ক্ষমা
প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ যদি তার পিতা-মাতাকে এত উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তাহ’লে ক্ষমা
প্রার্থনাকারী সন্তানকে আল্লাহ আরও কত অধিক সম্মানিত করবেন’! (মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর ২/৩৩৯ পৃ.)।
ক্ষমা বা ইস্তেগফার করার দোয়া বা আমলসমূহ
(১) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি)
পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,
“রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম”
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর,
আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ
১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা একই মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসতিগফার একশ’বার
গণনা করতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,
“রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ’আলাইয়্যা ইন্নাকা আন্তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’
(অর্থাৎ- হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার
তওবা্ কবূল করো। কেননা তুমি তওবা্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫২, আবূ দাঊদ ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, ইবনু মাজাহ
৩৮১৪, আহমাদ ৪৭২৬, ইবনু হিব্বান ৯২৭, সহীহাহ্ ৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৮৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে, একাকী দুই হাত
তুলে মুনাজাতে ও সকাল বিকেলে ১০০ বার করে পাঠ করবেন।
(২) সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাছওয়ালা নবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে গিয়ে
যখন দু’আ পড়েছিলেন তা হলো এই
“লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’
অর্থাৎ- ’’তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ
নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’- (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭)।
যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু’আ পাঠ
করবে, তার দু’আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২২৯২, তিরমিযী ৩৫০৫, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল ঈমান
৬১১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি ৩৩৮৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩)
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ পড়বে,
“আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু
অ আতূবু ইলাইহ্”
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৩, সুনান আততিরমিযী
৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে, একাকী দুই হাত
তুলে মুনাজাতে ও সকাল বিকেলে ১০০ বার করে পাঠ করবেন।
(৪) “রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা
লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন ”
অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের
উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।
উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে ও একাকী দুই হাত
তুলে মুনাজাতে পাঠ করবেন।
(৫) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত।
একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে
সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ
জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর
রাহিম”
‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি।
আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন
এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে ও একাকী দুই হাত
তুলে মুনাজাতে পাঠ করবেন।
(৬) রুকুতে গুণাহ মাফ সংক্রান্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহঃ
(ক) যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম রুকু’-সাজদায় এ দু'আ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ
“সুবহ-নাকা আল্লহুম্মা রব্বানা- ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”
অর্থাৎ "হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক!
তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” তিনি
কুরআনের উপর 'আমল করতেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪),
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, মিশকাত ৮৭১, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, আবূ
দাঊদ ৮৭৭, নাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, বুখারী-৪২৯৩)। হাদিসের মান-সহিহ।
(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব
(রহঃ), ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ
"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা
প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন,
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি
বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি
তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ"
সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর)
নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে
কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ
"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল
পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ
মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্
(রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা
তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।”
রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন,
তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের
মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ
পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।
সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য
আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর
দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)।
(সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) গুণাহ মাফ সংক্রান্ত দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আঃ
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ
‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে
রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব দান কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ ৯০০, আবূ দাঊদ ৮৫০, তিরমিযী ২৮৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) এরপর কমপক্ষে ২ বার বলবেন,
হুযাইফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ সিজদার মাঝে বলতেন: “রব্বিগফির লী” (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ-৯০১, আহমাদ ৩৯৭, ৪০০, ইবনু মাজাহ ৮৯৭, আল
কুবরা ৬৫৬, ৭৩১, ১৩৭৮, ১৩৭৯, আবু দাউদ ৮৭৪; তিরমিযী, শামাইল ২৭০, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ
৯১০, বাইহাকী ২/১২১-১২২, আবু দাউদ তায়ালিসী ৪১৬, সুনান আদ-দারেমী ১৩৬০, নাসাঈ, ১০৬৯, ইরওয়া ৩৩৫, দারিমী ১৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) গুণাহ মাফ সংক্রান্ত সিজদার অতিরিক্ত তাসবীহ বা দোয়াসমূহঃ
(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ‘ ও সাজদায় এই
দু‘আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ
‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা
রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি
আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, নাসায়ী, ১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ
মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮,
নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব
(রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ
"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা
প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৩-(২১৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৬, মুসলিম)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আয়িশাহ
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু
আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ
পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ
"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”
অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল
পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" (সহীহ
মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৪-(২১৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্
(রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা
তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।”
(সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,
‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ
ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়,
আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৩, ৯৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে গুণাহ মাফ সংক্রান্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহঃ
(ক) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত
যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) তাঁকে বলেছেন
যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু‘আ করতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা
মিন আযা-বিল ক্ববরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জ-লি, ওয়া আউজুবিকা মিন
ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল
মাগরামি।”
‘‘কবরের আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা
হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে
আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।’’
তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা
হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেনঃ
যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ
করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮৩২,৮৩৩, ২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৬৩৭৫,
৬৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৪, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৩৯, মুসলিম ৫৮৯, আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ
ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু
অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখখিরু
লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর,
যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি,
যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত
কেউ সত্য উপাস্য নেই। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত),
৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু
মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮,মুসলিম ৭৬৯, নাসায়ী ১৬১৯, আবূ দাঊদ
৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক
প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(গ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে (সালাম ফিরাবার আগে) দু‘আ
করতেন। বলতেন,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন
ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি। ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়া ফিতনাতিল মামা-তি।
আল্লা-হুমা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল মা’সামি ওয়াল মাগরামি’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ
চাচ্ছি কবরের ‘আযাব থেকে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। আমি
তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ
চাচ্ছি গুনাহ ও দেনার বোঝা হতে)।
এক ব্যক্তি বলল, হে নবী! আপনি দেনার বোঝা হতে
বড় বেশী পানাহ চেয়ে থাকেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেউ যখন দেনাদার
হয় তখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৩৯, সহীহ বুখারী ৮৩৩, মুসলিম ৫৮৯,
আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) সকাল ও সন্ধ্যায় “সায়্যিদুল ইস্তিগফা” পাঠ করাঃ
শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহুকর্তৃক
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সায়্যিদুল ইস্তিগফার [শ্রেষ্ঠতম
ক্ষমা প্রার্থনার দো’আ] হল বান্দার এই বলা যে,
“আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা খলাকতানী, ওয়া আনা-
’আবদুকা, ওয়া আনা- ’আলা- ’আহদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাত্ব’তু, আ’ঊযুবিকা মিন শার্রি
মা- সনা’তু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা ’আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ
লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা’’
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি
ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার দাস। আমি তোমার প্রতিশ্রুতি
ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি যা করেছি তার মন্দ থেকে তোমার নিকট
আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর তোমার যে সম্পদ রয়েছে তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও
আমি স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ
মার্জনা করতে পারে না।
যে ব্যক্তি দিনে [সকাল] বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের
সাথে এ দুআটি পড়বে অতঃপর সে সেই দিনে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের
অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে [সন্ধ্যায়] এ দুআটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে অতঃপর
সে সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যাবে, তাহলে সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬, ৬৩২৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৫, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৩৯৩, সুনান আননাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৬৬৬২, ১৬৬৮১, ১৭১১১, আল-আদাবুল মুফরাদ
৬২১, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)
১৮৮৪, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১০১৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭১৭২,
শু‘আবূল ঈমান ৬৫৮, ইবনু হিব্বান ৯৩৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫০,
সহীহ আল জামি ৩৬৭৪, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১১) সালাম ফিরানোর পর তিনবার ইস্তেগফার
পাঠ করাঃ
সাওবান
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযান্তে
সালাম ফিরে তিনবার ইস্তিগফার করে এই দো’আ পড়তেন, ’
“আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু অমিন্কাস সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল
জালা-লি অল ইকরা-ম।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি শান্তি [সকল ত্রুটি
থেকে পবিত্র] এবং তোমার নিকট থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমময়, মহানুভব!
এ হাদিসের অন্যতম বর্ণনাকারী ইমাম আওযায়ীকে
প্রশ্ন করা হল, ইস্তিগফার কিভাবে হবে? তিনি বললেন, ’বলবে,
“আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ”
অর্থাৎ“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি”। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন
(রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, সুনান আততিরমিযী
৩০০, সুনান আবূ দাউদ ১৫১২, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৮, আহমাদ ২১৯০২, দারেমী ১৩৪৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উপসংহার: আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে খুব ভালোবেসে সৃষ্টি
করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পুড়াতে চান না। এজন্যই তিনি তওবার
দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন। আমাদের উচিৎ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গুনাহমুক্ত জীবন পরিচালনায়
ব্রতী হওয়া। আমরা যেন ক্ষমা প্রার্থী বান্দাদের ন্যায় আমল করে ইহকালে ও পরকালে আল্লাহর
নৈকট্য অর্জন করতে পারি, মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে
আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’
তখন আল্লাহ তা’আলা
বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’
আছেন? যে ’রব’
গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে
দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল
ও বলল, ’হে রব’!
আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ তা’আলা
বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন
অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন,
সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ
করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা
কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন
অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৮, আহমাদ ৭৯৪৮, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৪, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪০, ইবনু হিব্বান ৬২২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahi।
(সমাপ্ত)
পাপ তওবা ও মুক্তির উপায় নামক বইটি পড়তে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। PMMRC
লেখক ও সংকলকঃ
মো:
ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please
Share On